Posts: 86
Threads: 6
Likes Received: 114 in 59 posts
Likes Given: 15
Joined: Jan 2023
Reputation:
6
11-01-2023, 09:19 PM
(This post was last modified: 11-01-2023, 09:20 PM by Manjarul Haque. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দিনশেষে যখন সবাই ক্লান্ত হয়ে নীড়ে ফেরে তখন বুঝি গোধূলি টাকে এত সুন্দর লাগে।
সবে সূর্য ডুবেছে।চারিদিকে এখনো সূর্যের লাল আভা বিদ্যমান।
---- আফরা!
বিকেলে ছাদে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।তখনই রাহাকে দেখে বেশ অবাক হলাম।
---- রাহা,তুই এসময়।
---- তুই এমন কেন রে?
---- কেমন!
---- নিবির ভাইয়া তো তোকে জন্মেও কোনোদিন পাত্তা দেয়নি।অথচ তার পিছনে তো আঠার মতো লেগে থাকতি। আর প্রহর ভাইয়া এতদিন ধরে তোর সাথে শুধু একটু কথা বলতে চাচ্ছে । আর তুই তার সাথে কথা তো বলিসনি উল্টো ফোনটাকেও বন্ধ করে রেখেছিস।
---- আমি এখন এসব নিয়ে ভাবতে চায়না,রাহা।
---- আসলে কী জানিস তো, তুই প্রচন্ড বড় একটা ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছিস।হতে পারে নিবির ভাইয়া তোর প্রথম প্রেম কিন্তু সে কখনোই তোকে বোঝেনি।তুই শুধু তাকে ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছিস।তুই তো একবার প্রহর ভাইয়ার ব্যাপারে ভাবতে পারিস।
---- আমি প্রচন্ড ক্লান্ত, রাহা।এই ভালোবাসা,প্রেম এগুলো যে আমার জন্য না।
---- তোর সাথে তো কথা বলাই বৃথা।
--------------
রাত প্রায় দশটা বেজে গেছে।ভাইয়া এখনো আসেনি।ভাইয়া কখনোই এত রাত করে বাড়ি ফেরেনা।কিন্তু আজ এত লেট কেন করছে?
হাসপাতালে কোনো ইমার্জেন্সি থাকলে আমাকে ফোন করে বলে দেয়।কিন্তু আজ ভাইয়ার ফোনটাও বন্ধ দেখাচ্ছে।
প্রায় এগারোটার দিকে ভাইয়া আসল।
---- তুই কিরে ভাইয়া,এত রাত করে ফিরবি একবার ফোন করে বলতে তো পারতি।
---- সরি বনু, ফোনটা না বন্ধ হয়ে গেছে।আমি একটা ঝামেলায় পড়ে গেছিলাম।আমি ফোনটা চার্জিং এ দিয়ে আসি।
---- তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি খাবার গরম করে আনছি।
রান্নাবান্না কখনোই পারতাম না।একমাত্র মেয়ে বলে কখনোই কিছু করতে হয়নি।তবে এখন টুকটাক পারি।ভাইয়া একটা মেয়েকে রেখেছে।সে রান্নাসহ ঘরের সব কাজ করে দিয়ে যায়।
আমি আর ভাইয়া বসে খাবার খাচ্ছিলাম।তখনই ভাইয়ার ফোনটা বেজে উঠল।আমি চার্জিং থেকে ফোনটা নিয়ে এলাম।
ওপাশ থেকে কী বললো তা শুনিনি তবে ভাইয়ার কথাটা এমন ছিল
---- লিসেন,আমারও একটা পরিবার আছে, পারসোনাল লাইফ আছে।আপনার মেয়ের জন্য তো আমি সেগুলো স্পয়েল করতে পারবনা।
বেশ রেগে কথাগুলো বলে ভাইয়া ফোনটা কেটে দিল।
---- কী হয়েছে ভাইয়া।
---- আরে আমাদের হাসপাতালে একটা মেয়ে এসেছে নতুন।এবছর ই চাকরিতে ঢুকেছে।মেয়েটা তো একদম পিছনে পড়ে আছে। আজ তো আমাকে সবার সামনে প্রোপোজ করছিল। রিজেক্ট করেছি বলে সুইসাইডই করে নিয়েছে।
---- মেয়েটা ভালো হলে তো বিয়ে করে নিতে পারিস।
---- আর যাই হোক ঐ সাইকো মেয়েটাকে তো আমি বিয়ে করব না।
-------------
রাতে শুয়ে বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি।ঘুম আসছেনা।
বারবার বিকেলে রাহার বলা কথাগুলো মাথায় ঘুরছে।ভালোবাসার মানুষের থেকে অবহেলা পাওয়ার কষ্টটা আমি জানি, সেই একই কষ্ট কী আমি প্রহরকেও দিচ্ছি।
অবশেষে সবকিছু সাইডে রেখে প্রহরকে একটা মেসেজ করলাম।উনি দেখলেন ঠিকই কিন্তু কিছু বললেন না।
এবার আমি উনাকে কল করলাম।উনি খুব দ্রুত ফোনটা ধরলেন,যেন এটারই অপেক্ষায় ছিলেন।
আমি সরাসরি উনাকে বললাম
---- আমার সাথে একবার দেখা করবেন, প্লিজ।আমি লোকেশন বলে দিবো।
উনাকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম।আমি জানি উনি আসবেন।
আজ ভার্সিটি নেই।তাই ঠিক করেছি বিকেলে প্রহরের সাথে দেখা করতে যাবো।
কিছুক্ষন আগে ভাইয়া ফোন করেছিল, একটা ফাইল রেখে গেছে সেটা যেন হাসপাতালে দিয়ে আসি।
আমিও ফাইলটা নিয়ে গেলাম।উদ্দেশ্য ঐ মেয়েটাকে দেখা।
ভাইয়ার কেবিনের সামনে দাড়িয়ে আছি।ভেতরে কিছু লোক আছে।যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা বুঝতেছি না।ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি ধরছেও না।
অবশেষে ঢুকেই গেলাম।কতক্ষন এভাবে থাকব।
---- ভাইয়া আসব।
কথাটা বলা মাত্রই ওখানে উপস্থিত সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি একটা এলিয়েন।
---- হুম,আয়।
ভাইয়া সবাইকে বাইরে চলে যেতে বলতেই সবাই চলে গেলো।
---- ওরা আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলো কেন ভাইয়া।
---- তুই তো জানিস আমি কাজের ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস।তাই এরা আমাকে ভয় পায়।তুই এতটা ফ্রি হয়ে কথা বলায় একটু অবাক হয়েছে।
---- একটা কথা বলব, ভাইয়া।
---- বল।
---- আমাকে কালকের ঐ আপুটার সাথে দেখা করাবি।
---- তুই পাগল নাকি,আমি এখন ওখানে গেলে ও আবার পাগলামি শুরু করবে।
---- তোর যাওয়া লাগবেনা।আমি একাই যাবো।আর এটাও বলব না যে আমি তোর বোন।
---- কিন্তু,,,
---- কোনো কিন্তু না।
---- আচ্ছা, ৩০২ নাম্বার কেবিনে আছে।
আমি ভাইয়ার রুম থেকে বেড়িয়ে ৩০২ নং রুমে ঢুকলাম।ওখানে ঐ আপুটা আর একজন ছিল।আপুটা বেশ সুন্দর, ভাইয়ার জন্য একদম পারফেক্ট।
ওরা আমায় দেখে বেশ অবাক হলো।আমায় বলল
---- তুমি কাউকে খুঁজছো?
---- না,আমি আসলে একজনের সাথে এখানে এসেছিলাম।সে তার কাজে ব্যস্ত তাই আমি ভাবলাম কারো সাথে গল্প করে আসি।তাই এখানে এলাম।আপনাদের সমস্যা হলে চলে যাচ্ছি।
---- না না।চলে যাবে কেন?
বসো আমরা গল্প করি।
বেশ খানিকক্ষন ওদের সাথে বসে গল্প
করলাম। আপুটার নাম অনন্যা।আমার তো ওকে বেশ ভালোলেগেছে।
কেবিন থেকে বেড়িয়ে ভাইয়ার রুমের সামনে আসতেই একজনের সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে গেলাম।পাশে থাকা টেবিলে লেগে কপালে বেশ খানিকটা কেটে গেলো।মৃদ্যু আর্তনাদ করে উঠলাম।তখনই ভাইয়া রেড়িয়ে এলো।
ছোটোবেলা থেকে শারীরিক আঘাতটা পায়নি বললেই চলে।আমার কপালে রক্ত দেখে ভাইয়া পুরো হাসপাতাল মাথায় তুলল।
" চাকরির পাশাপাশি আব্বু একটা বিজনেসও করত।কিন্তু ভাইয়ার পক্ষে হাসপাতাল, বিজনেস একসাথে মেনটেইন করা সম্ভব নয় বলে, ঐ বিজনেসের সব টাকা এই হাসপাতালে ইনভেস্ট করেছে।তাই এখানে ভাইয়ার যথষ্ট পাওয়ার আছে।"
ভাইয়া রাগী হলেও ভাইয়াকে কেউ এরআগে এতটা রেগে যেতে দেখেনি।
-----------
ভাইয়া আমায় নিয়ে বাসায় চলে এলো।বাসা থেকে বেড়োতে একদম নিষেধ করছে।
তাই আর প্রহরের সাথেও দেখা করতে যাওয়া হবেনা।তাই উনাকে ফোন করলাম।
---- আমি আজ আপনার সাথে দেখা করতে পারবনা।
---- কেন শুভ্রপরী,কী হয়েছে?
---- আসলে, আমি পড়ে গিয়ে একটু আঘাত পেয়ে,,,,,
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।উনার এই ছোট ছোট কেয়ারগুলো আমার বেশ ভালোলাগে।
রাতে বসে বসে নিউজফিড স্ক্রল করছিলাম।তখনই নিবির ভাইয়া আর কথা আপুর একটা ছবি সামনে এলো।
মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু এই মন খারাপকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবেনা।নিজেকে শক্ত হতে হবে।
অনেকদিন প্রহর কোনো মেসেজ দেয়না।অবশ্য আমি না করেছিলাম।সে আবার আমার সবকথা খুব মানে।
মাঝরাতে ঘুমটা ভেঙে গেল।আজ আব্বু- আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।রাতে আব্বু দুই-তিনবার দেখতে আসতো আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা।
কেনো আব্বু- আম্মু আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।
--------------
পরদিন সকালে ভার্সিটি যাচ্ছিলাম।সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা।কীভাবে যে একবছর কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি।
বাড়ি থেকে বেড়োতেই যাচ্ছিলাম তখনই নিবির ভাইয়া এসে বললেন-
---- কোথায় যাচ্ছিস, আফরা।
---- ভার্সিটি।
---- ভার্সিটি যেতে হবেনা।আমার সাথে হাসপাতালে চল।
----হাসপাতালে কেন, ভাইয়া।
---- আম্মুর শরীরটা খারাপ।তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।
----মামির আবার কী হয়েছে।
হাসপাতালে মামির কাছে বসে আছি।মামির একটা ছোটখাটো হার্টএটাক হয়েছে।তবে এখন সুস্থ।মামি আমার হাতটা ধরে বলল
---- আমার একটা কথা রাখবি, আফরা।নিবিরকে বিয়ে করবি?
মামির কথার উত্তরে কী বলা উচিত বুঝতে পারলাম না।তখনই,,,,
(চলবে)
পর্ব-০১
•
Posts: 1,152
Threads: 0
Likes Received: 1,380 in 926 posts
Likes Given: 3,549
Joined: Apr 2022
Reputation:
145
একই গল্প একই পর্ব বারবার আপলোড পিসি কি হেং হয়ে গেছে নাকি ।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
•
Posts: 86
Threads: 6
Likes Received: 114 in 59 posts
Likes Given: 15
Joined: Jan 2023
Reputation:
6
পর্ব-০২
তখনই মামি আবারও বলল
---- আমি জানি আফরা তুই নিবিরকে ভালোবাসিস। কিন্তু আমি চায়না তুই ওকে বিয়ে কর।ওর সাথে তুই কখনো ভালো থাকবিনা আফরা।
---- তুমি কী করে জানলে,মামি।
---- আমি সব বুঝিরে,মা।কথা যে খারাপ মেয়ে না সেটা আমি জানি কিন্তু ইদানিং ও যেটা করছে সেটা ও ঠিক করছেনা।
---- কথা আপু কী করেছে, মামি।
---- আমার ছেলেটার মাথাটা খারাপ করে দিয়েছে ও। দেখলিনা আমার এমন সময় ও ছেলেটা কেমন কথার সাথে চলে গেলো।
মামির সাথে কিছুক্ষন কথা বললাম।
---- আফরা,দুপুর তো হয়ে গেলো তুই বরং বাড়ি চলে যা। দাঁড়া আমি প্রহরকে বলি ও তোকে দিয়ে আসবে।
---- উনি এখানে আছে।
---- হুম।
------------
প্রহরের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।
যেহেতু এসেছি তাই ভাবলাম কথা বলেই যাই।
---- কী খাবে বল, শুভ্রপরী।
---- আমাকে আফরা বলে ডাকলে ভালো হতো।
---- আচ্ছা।কী খাবে বল।
---- কফি।
---- এখন তো দুপুর।দুপুরবেলা কে কফি খায়।
---- আমি।কোল্ড কফি ওর্ডার করেন।
---- আচ্ছা।
তুমি কাল কিছু বলতে চেয়েছিলে তাইনা।
---- হুম,সরি।
---- সরি কেন?
---- আপনাকে এতদিন ধরে এত বাজে ভাবে ইগনোর করার জন্য।আর মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে খারাপ বিহেব করার জন্য।
উনি খানিকক্ষন চুপ থেকে বললেন
---- নিবিরকে তুমি খুব ভালোবাসো, তাইনা।
---- হয়তো বা। কিন্তু আমি খুব চেষ্টা করছি তাকে ভুলে যাওয়ার।
---- লিসেন আফরা, সব মানুষের লাইফেই প্রথম ভালোবাসাটা স্পেশাল হয়।কিন্তু তাই বলে যে মানুষ দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসতে পারেনা, সেটা নয়।আমি তোমাকে বলছিনা যে তুমি আমাকে একটা চান্স দাও।আমি বলছি তুমি নিজেকে একটা চান্স দাও।
তোমার লাইফে সত্যি এমন একজনের দরকার যে তোমাকে অন্তত মেন্টাল সাপোর্ট দিবে।
----আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি,কিন্তু আমি সত্যি নিজের মনকে বোঝাতে পারিনা।
---- তুৃমি টাইম নাও।নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলে দেন বিয়ে নিয়ে ভেবো।বাট এখন তোমার সত্যি একজনকে দরকার।
---- আমরা কী বন্ধু হতে পারি।
---- সিরিয়াসলি?
---- হুম।
---- আমাকে তুমি বন্ধু হিসেবে সবসময় নিজের পাশে পাবে।আমি নিবিরের মতো তোমার ফিলিংস নিয়ে কখনো অবহেলা করব না।
তার কথার উত্তরে আমি শুধু মুচকি হাসলাম।তারপর বললাম
----আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?
---- বলো না।
---- আপনি আমায় প্রথম কোথায় দেখেছিলেন?
---- নিবিরদের বাসায়।
---- কিন্তু আপনার সাথে যেদিন আমার দেখা হয়েছিল তারও অনেক আগে থেকেই তো আপনি আমায় মেসেজ পাঠাতেন।
---- আমি সেদিনের কথা বলিনি।তোমার মনে আছে নিবিরের বার্থডের কথা।যেদিন তোমার থেকে কথার গায়ে পানি পড়েছিল।ঐদিন দেখেছিলাম।
---- আপনি তখন ওখানে ছিলেন।
---- হুম। আমি তখন এখানেই ছিলাম।বাবা- মা পরে এসেছিল।
---- ওহ্।আমার মনেহয় এখন বাড়ি ফেরা উচিত।
---- হুম,চলো তোমাকে রেখে আসি।
প্রহর আমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গেলেন।কেন জানি এই মানুষটার সাথে কথা বললেই আমার মনটা ভালো হয়ে যায়।বারবার এই মানুষটাকে বিশ্বাস করতে মন চায়।এটা কী নতুন কোনো অনুভূতির সূচনা?
----------------
বাসায় এসেছি দীর্ঘক্ষন। দুপুরে ভাইয়া বাসায় আসেনি।রাতেও ফিরতে দেরি হবে।
বিকেলে এককাপ কফি নিয়ে সোফায় বসে মাত্র টিভিটা অন করেছি।তখনই দরজায় বেল বেজে উঠল।
দরজা খুলে দেখি নিবির ভাইয়া।প্রচন্ড বিধ্বস্ত চেহারা উনার।চোখ মুখ ফুলে একদম লাল হয়ে আছে।
ভেতরে ঢুকেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।
---- নিবির ভাইয়া,কী হয়েছে আপনার।
---- আফরা,কথা আমাকে ঠকিয়েছে।
---- মানে?
---- কথা অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে।
----কিন্তু কথা আপু এটা কেন করল।
---- কারন ই ছেলের প্রচুর টাকা।তুই তো জানিস কথা একটা মিডিলক্লাস ফ্যামিলি থেকে আসে।ওর বাবা,মা ওর পড়ার খরচ দেয় না।এতদিন আমি ওর সব খরচ দিতাম।এখন ওর পড়া শেষ তাই নাকি আমাকে আর লাগবেনা ওর।
কথাটা বলেই নিবির ভাইয়া ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।ঠিক কতটা কষ্ট পেলে একটা ছেলে এভাবে কাঁদে তা আমার জানা নেই।
---- আমায় বিয়ে করবি, আফরা।
---- এসব আপনি কী বলছেন?
---- আমিও কথাকে দেখাতে চাই যে আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে বাঁচতে পারি।
---- বেশ সুন্দর একটা কারণ দেখালেন।আপনি আমাকে কী মনে করেন বলুনতো যখন আপনার প্রয়োজন হয় তখন আমাকে কাছে টেনে নেন।আর যখন মনে হয় ছুড়ে ফেলে দেন।
যখন আপনার কাছে কথা আপু ছিল তখন আমাকে আপনার প্রয়োজন হয়নি।আজ কথা আপু নেই বলেই আপনি এমন করছেন।
---- আফরা!
---- একদম আমাকে দুর্বল করার চেষ্টা করবেন না, নিবির ভাই।
---- আফরা তুই,,,
---- আপনি খুব ভালো করেই জানেন নিবির ভাইয়া যে আপনার সামনে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা।গত তিন বছর তো কম কষ্ট, অবহেলা দেননি আমায়।আজ যখন আপনার ভালোবাসা আপনাকে ফিরিয়ে দিয়েছে তখন আপনার আমার কথা মনে পড়ছে।
আপনি হয়ত ভাববেন যে আমি স্বার্থপর।তবে তাই।একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আপনার পেছনে কীভাবে ঘুরেছি আমি।আর আপনি কী করেছেন আমার সাথে।
---- আমাকে কী একটা সুযোগ দেওয়া যায়না?
---- না।আপনি এখন থেকে চলে যান।কেউ দেখলে ভুল ভাববে।
,,,,,,,,,,,,
মনটা আজ বড্ড পুড়ছে।যত যাই হোক নিবির ভাইয়ার কষ্ট যে আমি সহ্য করতে পারিনা।প্রথম ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়।আমি কী কখনো নিবির ভাইয়াকে ভুলতে পারব।
রাত হয়ে গেছে।খুব জানতে ইচ্ছে করছে নিবির ভাইয়া এখন কী করছে।
একাএকা থাকতে ভালোলাগছিল না।তাই আরশিকে ডেকে পাঠালাম।
আরশির সাথে অনেকক্ষন গল্প করলাম।কেন জানি এখন আরশির এখানে আসাটা ওর মা পছন্দ করেনা।তবুও ও আসে।
রাতে আমি আর ভাইয়া একসাথে খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলাম।
একদম ঘুম আসছেনা।যত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে পারি ততই ভালো।ঘুম না আসলে বারবার বাবা- মায়ের সাথে কাটানো দিনগুলো মনে পড়ে।বড্ড কষ্ট হয় তখন।আচ্ছা কেমন হতো যদি সন্তানের আগে বাবা মা মারা না যেতো।
তখনই প্রহরেরর ফোন এলো।না চাইতেও মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল।এখন আমার মন ভালো করতে এটাই দরকার।
---- কী ব্যাপার ম্যাডাম,মন খারাপ নাকি?
---- নাতো।
---- তাহলে যে অন্য দিনের মতো বকা দিলেন না।
---- এমনি।আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?
---- বলো।
---- আপনার কাছে ভালোবাসা মানে কী?
---- ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যেটা মুখে বলে বোঝানো যায় না।ভালোবাসা ফিল করে নিতে হয়।
---- আপনি কী আমাকে ভালোবাসেন নাকি আপনার আমাকে ভালোলাগে।
---- আমার তোমাকে ভালোলাগে এটা ঠিক তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা।কিন্তু তোমার প্রতি আমার ফিলিংটা ভালোবাসার থেকেও অনেক বেশি কিছু।
---- আপনি কী কোনো জন্মে সাহিত্যিক ছিলেন।
---- সাহিত্যিক হতে যাবো কেন আমি তো ডাক্তার।
---- আপনিও ডাক্তার!
---- হুম।
---- আচ্ছা আমার ঘুম পাচ্ছে রাখি।
---- গুড নাইট।
---------------
সকালে ঘুম থেকে উঠে রুমের বাইরে এসে দেখি চারিদিকে রক্ত ছিটিয়ে আছে।সামনে তাকিয়ে দেখি,,,,
( চলবে)
পর্ব-০৩
সামনে তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার হাতেও রক্ত লেগে আছে।
আমাকে দেখে ভাইয়া বলল
---- ভয় পাসনা, বনু।এগুলো এমনি রক্ত।
---- মানে?
---- ব্লাডগুলো একটা টেস্টের জন্য হসপিটালে এসেছিল।আমি একটা দরকারে বাসায় নিয়ে আসছিলাম।কিন্তু কীভাবে যেন পড়ে গেল।
---- টেস্টর জন্য এত ব্লাড?
---- হুম।
--- আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
---- তুই যা। আমি এগুলো পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
---- আচ্ছা।
-----------------
ভার্সিটি যাওয়ার সময় রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম।একটাও রিক্সা পাচ্ছি না।তখন ই একটা গাড়ি এসে থামল আমার সামনে।গাড়িটা প্রহরের ছিল।
---- আমি নামিয়ে দিয়ে আসি।
---- আপনি?
---- হুম।আসতে পারো, খেয়ে ফেলবোনা তোমায়।
---- আচ্ছা।
---- আচ্ছা তুমি কী সত্যি আফরা না তার জমজ বোন।
---- মানে?
---- আমি তো জানতাম আফরা অনেক বাঁচাল আর চঞ্চল ছিল।
---- আফরা চঞ্চল ছিল।কিন্তু এখন নেই।
---- ভালো।আমার কিন্তু শান্ত বাচ্চা পছন্দ।তুমি শান্ত হলেই তো আমার বাচ্চা শান্ত হবে।
---- আমার সাথে আপনার বাচ্চার সম্পর্ক কী?
---- মা যেমন বাচ্চা তো তেমনই হবে।
---- আপনার কী এসব কথা বলতে বাধে না।
---- অবিয়েসলি না।বাধঁলে তো আর বোলতাম না।
যাইহোক আপনার ভার্সিটি এসে গেছে।
---- হুম।বাই।
----------------
ভার্সিটিতে এসেই দেখি সবার মুখে একই কথা " কথা আপুর বিয়ে"।ইতিমধ্যে পুরো ভার্সিটি জানাজানি হয়ে গেছে।
রাহা এসে বলল
---- আমি অনেক খুশি হয়েছি জানিস।বেশ হয়েছে, এবার নিবির ভাইয়া বুঝবে মজা।
---- এভাবে বলিস না, রাহা।
---- রাখ তো তোর আবেগ।এখন বুঝবে ভালোবাসা না পাওয়ার কী কষ্ট।
---- আচ্ছা রাখ এসব। চল ক্লাসে যায়।
---- চল।
ভার্সিটি শেষে আমি রাহাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম।আজ নাকি ভাইয়া আমাদের ট্রিট দিবে।খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে আছি।দেখলাম পাশের একটা টেবিলে অনন্যা আপু ও আরো অনেকে বসে আছে।আমাদেরকে ভাইয়ার সাথে ওরা বারবার কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছিল।
তখন ভাইয়ার একটা ফোন আসায় ভাইয়া বাইরে চলে গেলো।
তখনই অনন্যা আপুর কিছু ফ্রেন্ড আমাদের কাছে এসে বলল
---- এইযে পিচ্চি বাবুরা একদম আবির ভাইয়ার থেকে দূরে থাকবে।এইযে এই মেয়েটাকে দেখছো না ও অনন্যা।আবিরের ওয়াইফ।
কথাটা শোনা মাত্র আমার আর রাহার রিয়েকশনটা যাদুঘরে তুলে রাখার মতো।
"অনন্যা আপু যেহেতু আমায় আগে থেকে চিনতো তাই ও বারবার সবাইকে নিষেধ করছে এসব বলতে কিন্তু ওরা তো বলেই যাচ্ছে।"
তখন ভাইয়াও এসে গেছে।আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
---- দ্যাট'স নট ফেয়ার, ভাইয়া। তুই বিয়ে করে ফেললি একবার বললিও না।কেন রে তোর বউকে কী আমি খেয়ে ফেলতাম।
---- আমার বউ! তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে,আফরা।
---- আরে না,দেখো ওরাই তো বলল যে এই অনন্যা আপু তোমার বউ।
রাহার কথায় ভাইয়া অনন্যা আপুর দিকে তাকাতেই তার সব ফ্রেন্ডরা হাওয়া হয়ে গেলো।
অনন্যা আপু তো রীতিমতো ঘামতে শুরু করছে।অনেক সাহস সঞ্চার করে ভাইয়াকে প্রশ্ন করল
---- আফরা আপনার কেমন বোন লাগে?
---- নিজের বোন লাগে, তাতে তোমার কোনো সমস্যা আছে?
---- না,না।আমার তো ভালোই লেগেছে। বিয়ের পর তো আপনার বাড়িতে একা থাকা লাগবেনা।
আপুর কথার বিপরীতে ভাইয়া আপুর দিকে তাকাতেই আপু দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে গেলো।
---------------
বিকেলে বাসায় বাসে বোর হচ্ছিলাম তাই রাহাকে নিয়ে ফুচকা খেতে বেড়োলাম।
রাহাকে প্রহরের ব্যাপারে অল্প কিছু বলছি আজ ভাবলাম ওকে সবকিছুই বলব।ওর থেকেই জানতে চাইব যে আমার কী প্রহরের ব্যাপারে ভাবা উচিৎ।
ফুসকার দোকানে ফুসকা খেয়ে রাহাকে নিয়ে একটা মলে গেলাম।টুকটাক কিছু কেনার জন্য।
মলে একটা চুড়ির দোকানে প্রহরকে দেখলাম।ওকে ওখানে দেখে খুশি হয়েও যেন হতে পারলামনা। কারন ওর সাথে একটা মেয়েও ছিলো।দুজন পছন্দ করে চুড়ি কিনছিল।
এতদিনে প্রহরের প্রতি যে বিশ্বাস জন্মেছিল তা যেন নিমিষেই ভেঙে গেল।সব ছেলেরা বুঝি একই রকম হয়?
ওখান থেকে সরে আসছিলাম তখনই প্রহর আমাদের দেখে নেয়।ও আমাকে বলে
---- আফরা তুমি ভুল বুঝছো।আমি তোমাকে সবটা,,,,
ওর কোনো কথা না শুনেই বাইরে চলে এলাম।প্রহর ও আমার পিছন পিছন বাইরে চলে এলো।
বাইরে ভাইয়া আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।আমি কোনো কথা না বলেই গাড়িতে উঠে গেলাম।
ভাইয়া রাহাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি আমাদের বাড়ির রাস্তায় ঘুরিয়ে নিলো।কিছুক্ষন পর আমায় বলল
---- ছেলেটা কে ছিল, আফরা।
---- আমি ভাইয়াকে প্রহরের ব্যাপারে সবটা খুলে বললাম একদম শুরু থেকে।
ভাইয়া আমায় শুধু বলল
---- তোর মনে হয় ওকে একটা চান্স দেওয়া উচিত।আর নিবিরকে মনে রাখাটা তোর বোকামি হবে।
---------------
পরেরদিন ভার্সিটি তে ঢোকা মাত্র নিবির ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে বলল
----আফরা, প্লিজ আমার তোর সাথে কিছু কথা আছে।
---- হাতটা ছাড়ুন , নিবির ভাইয়া।
ইতি মধ্যে মাঠে প্রচুর লোক জমা হয়েছে। সবাই তামাশা দেখতে ব্যস্ত।আমি অনেক চেষ্টা করেও যখন হাত ছাড়াতে পারলাম না তখন নিবির ভাইয়াকে একটা চড় মেরে ওখান থেকে চলে এলাম।
নিবির ভাইয়া যেন এটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
প্রচন্ড খারাপ লাগছিল কাজটা করে।মনটাই খারাপ হয়েগেছিল। তাই ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলাম।রিক্সা না পাওয়ায় হেঁটেই যাচ্ছিলাম।তখনই আমায় পেছন থেকে কেউ ডাকল।
লোকটাকে চিনতে আমার বেশ সময় লাগলেও ঠিকই চিনলাম।ও রাফাত, আমার ক্লাসমেট ছিল একসময়।নিহানের বেস্টফ্রেন্ডও ছিল।
---- আমাকে চিনতে পেরেছিস, আফরা।
---- রাফাত, তুই এখানে।
---- আমি তো ভেবেছিলাম তুই আমায় চিনবিনা।
---- না তা কেন।
কথা বলতে বলতে দুজন রাস্তা ধরে এগোচ্ছিলাম তখনই একটা গাড়ি আমাদের সামনে দিয়ে গিয়ে াা জোরে ব্রেক কসল। গাড়িরা প্রহরের।কিন্তু উনি এখানে কেন?
উনি গাড়ি থেকে নেমে আমার সামনে এসে বললেন
---এই ছেলেটা কে?
---- আমার ফেন্ড রাফাত।
উনি রাফাতের দিকে তাকিয়ে বললেন
---- হ্যালো।আমি প্রহর,,আফরার উডবি।আমার একটু কাজ আছে ওর সাথে তাই ওকে নিয়ে যাচ্ছি।
বলেই উনি হাত টেনে আমায় গাড়িতে বসালেন।
---- আপনি আমার কোন জন্মের উডবি হন।
---- স্টপ।
---- স্টপ কী হ্যা।আপনি আমার নামে এগুলা কী বলে বেড়ান হ্যা।
---- আর একটাও বাজে কথা বললে সোজা কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলব।বুঝলে।
---- আপনি তো খুব ডেঞ্জারাস।
---- সেটা আজ বুঝলে।আমি কিন্তু খুব রোমান্টিকও।ডেমো দেখাবো নাকি।
---- একদম না।আমরা কোথায় যাচ্ছি?
---- আমার শ্বশুরবাড়ি।
---- মানে?
---- তোমাকে বাসায় রাখতে যাচ্ছি, ইডিয়েট।আর তুমি ঐ ছেলেটার সাথে কী করছিলে?ও নিহানের ফ্রেন্ড ছিল না, যদি তোমার কোনো ক্ষতি করে দিত।
---- ও এমন ছেলেনা।
---- তবুও তোমার ব্যাপারে আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই, না আফরা।
উনার এই একটা কথায় আমার সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।এ যে এক নাম না জানা অদ্ভুত অনুভূতুি।
(চলবে)
Posts: 86
Threads: 6
Likes Received: 114 in 59 posts
Likes Given: 15
Joined: Jan 2023
Reputation:
6
পর্ব-৪
প্রথম ভালোবাসাকে ভুলে যাওয়া খুব কঠিন একটা কাজ জানি।তবুও আমি তোকে বলব তুই নিবিরকে ভুলে যা।ও তোর জন্য ঠিক না।
---- কিন্তু ভাইয়া প্রহর কী আমার জন্য ঠিক।
---- বনু, সেটা নাহয় তুই নিজেই দেখে নে।ওর সাথে টাইম স্পেন্ড কর, ওকে বোঝার চেষ্টা কর।
---- হুম।
---- আমি যাচ্ছি।
---- আচ্ছা।
আজ ভাইয়ার কথা শুনে ঠিক করলাম আমি প্রহরকে একটা চান্স দিব।হয়ত সে ভালোবাসার প্রতি আমার ধারনাটাই পাল্টে দিবে।
রেডি হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।প্রহর নাকি আজ আমায় নিয়ে কোথাও যাবে।প্রায় দশ মিনিট পর উনি আসলেন।
---- উঠে এসো।
---- আমাকে নিয়ে কোথায় যাবেন?
---- তোমাকে মেরে ড্রেনে ফেলে দিব আজ।
---- এগুলা কেমন কথা!
---- তো এমন বিহেব করছ কেন।আমি কী তোমাকে কিডনাপ করে নিয়ে যাচ্ছি।
---- আমি তো নরমালি,,,
---- পুরো রাস্তা যদি আর একটাও কথা বলেছো তো,,,,
---- আচ্ছা একদম চুপ করে থাকব।
---------------
ঘন্টাখানিক পরে উনি আমায় একটা নদীর পাড়ে নিয়ে এলেন।জায়গাটা বেশ সুন্দর,নিরিবিলি।অনেকটা গ্রাম টাইপ।
এতদিন পরে এমন খোলা হাওয়া পেয়ে মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো।
---- ধন্যবাদ, আমার মনটা ভালো করে দেওয়ার জন্য। এই ভালোটা কতক্ষন স্থায়ী হবে জানিনা তবে ধন্যবাদ।
---- সারাজীবন এভাবে তোমার মনটা ভালো রাখার অধিকার দিবে আমায়,আফরা।
তার কথার পরিপেক্ষিতে আমি চুপ রইলাম।
---- ভয় পেয়োনা,আফরা।তুমি আমার ক্ষণিকের মোহ নও। তুমি আমার ভালোবাসা।তোমাকে আমি ভালোবাসি, আফরা।প্রচন্ড ভালোবাসি।
---- এত কম সময়ে কী কাউকে এতটা ভালোবাসা যায়?
---- ভালোবাসা মন থেকে আসে।এখানে সময়টা ফ্যাক্ট না।
তুমি কি এখনো আমায় বিশ্বাস করতে পারছোনা, আফরা। তোমার কী আমার প্রতি এ কদিনে একটুও ফিলিংস জন্মায়নি?
---- হ্যা জন্মেছে তবে সেটা ভালোবাসা কিনা তা আমি জানি না।আপনার সাথে থাকতে আমার ভালোলাগে।আপনাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।আর আপনি যদি আমাকে এতটাই ভালোবাসেন তাহলে কাল ঐ মেয়েটা,,,,
---- মেয়েটা রাহি ছিল।আমার কাজিন।তোমার জন্য চুড়ি কিনতে গিয়েছিলাম কিন্তু একটাও চয়েস হচ্ছিল না।তাই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম।আর ও অনেক ছোট।
---- সরি।
---- আমি কিন্তু আবার কাজিনকে ভালোবেসে বাঁশ খায়না।
---- আপনি সবকিছুতে নিবির ভাইয়াকে কেন টানেন বলুনতো।
---- আচ্ছা সরি।আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তরটা পায়নি।
---- আমার একটু সময় লাগবে।
---- তুমি সময় নাও কিন্তু এতটাও সময় নিও না যেন পরে পস্তাতে হয়।
---- হুম।
----------------
একটু আগে মামি ফোন করেছিল।নিবির ভাইয়া আর প্রহরের মাঝে যেন ঝামেলা হয়েছে। তারা নাকি মারপিট ও করেছে।
আমি ঠিকই বুঝলাম যে ঝামেলাটা আমার কারনেই হয়েছে।
এতকিছু না ভেবে আমি নিবির ভাইয়াকে ফোন করলাম।
---- বল,আফরা।
---- আপনার সমস্যাটা কী, নিবির ভাই।
---- মানে?
----প্রহরের সাথে ঝামেলা বাধিয়েছেন কেন?
---- ওর জন্য কষ্ট লাগছে বুঝি।ও কোন সাহসে আমার থেকে তোকে কেড়ে নিতে চাই।
----আমি কখনো আপনার ছিলাম না নিবির ভাইয়া।তাই আপনার থেকে আমাকে কেড়ে নেওয়ার প্রশ্ন আসে না।
---- কিন্তু আমি তো তোকে আমার বানাতে চাই।
----কিন্তু আমি আপনার হতে চায়না।একটা সময় তো আপনার হতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি কী করেছিলেন।
---- প্রতিশোধ নিচ্ছিস।
---- হয়ত।নিবির ভাই প্লিজ নতুন করে আর কোনো ঝামেলা করেন না।আপনি নিজেও ভালো থাকেন আর আমাকেও ভালো থাকতে দেন।
ফোনটা রেখেই দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে বিছানায় বসে পড়লাম।আর নিতে পারছিনা এসব।আজ যদি বাবা- মা থাকত তাহলে হয়ত এত কষ্ট পেতে হতো না।
একটা ভুল মানুষকে ভালোবাসলে বুঝি এত কষ্ট পেতে হয়।
পরেদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে মামার বাসায় গেলাম।মামি ফোন দিয়েছিল, নিবির ভাইয়া নাকি কী পাগলামি শুরু করেছে।
মামির বাসায় গিয়ে সোজা নিবির ভাইয়ার রুমে গেলাম।চারিদিকে সবকিছু উল্টোপাল্টা হয়ে পড়ে আছে।মেঝেতে কাচের টুকরো ছিটানো।নিবির ভাইয়ার হাত থেকেও রক্ত ঝরছে।
---- এসব কী নিবির ভাইয়া।
---- আফরা, প্লিজ আমার হয়ে যা।তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবনা।
---- হঠাৎ এতো ভালোবাসা কই থেকে এলো, নিবির ভাই।আপনি এসব শুধু মাত্র জেদের বসে করছেন।কথা আপুকে নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য আমার সাথে এমন কেন করছেন?
---- আফরা!
---- বাস্তবে ফিরে আসুন নিবির ভাই।বাস্তবতা বড় কঠিন।বুঝতে শিখুন।শুধু অন্যের কাছে নিজেকে জাহির করার জন্য অন্যের লাইফ নিয়ে খেলা বন্ধ করুন প্লিজ।
---- তুই ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবি, আফরা।
----এখানে চলে যাওয়ার কোনো কথা আসছেনা ভাইয়া।আপনার জীবনে যার কেনো অস্তিত্ব নেই তার চলে যাওয়া নিয়েও আপনার কোনো প্রবলেম হবে না।
দ্বিতীয়বার আর ভাইয়ার দিকে তাকানোর সাহস হলোনা।ঐ চোখে যে আমাকে মেরে ফেলার বিষ আছে।
আমি সরাসরি মামির কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম
---- নিবির ভাইয়া এসব কেন করছে, মামি।
মামি আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
---- প্রহরের মা ফোন করেছিল।বলল ওদের নাকি তোকে খুব পছন্দ। ওরা তোকে প্রহরের বউ বানাতে চায়।প্রহর ও নাকি তোকে পছন্দ করে।আমাদের কোনো সমস্যা ছিলনা এটাতে।
কিন্তু নিবিরকে জানানোর পর থেকেই ও এসব উল্টোপাল্টা কাজ করছে।
---- তুমি একটু নিবির ভাইয়াকে বোঝাও।
---- আমার ছেলেটার আজ ঐ অবস্থা শুধু কথার জন্য।ঐ মেয়েটা কখনো ভালো থাকবেনা দেখিস।
---- মামি,এখন তুমিও যদি তার খারাপ চাও তবে তোমার আর তার মধ্য পার্থক্য রইল কই।
---- তুই হয়ত ঠিকই বলেছিস।
---- আমি আসছি, মামি।
---- সাবধানে যাস।
---- হুম।
----------------
নিবির ভাইয়াদের বাসা থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় এসেই দেখলাম কথা আপুকে।সাথে একটা ছেলেও আছে।হয়ত ওর হাসবেন্ট হবে। দুজন কী সুন্দর হাসছে।
মানুষকে ঠকানো মানুষগুলোই বুঝি দিনশেষে ভালো থাকে।নিবির ভাইয়া তো সত্যি কথা আপুকে খুব ভালোবাসতো।তাহলে কথা আপু এমনটা কেন করল?
আর নিবির ভাইয়া এমন পাগলামি কেন করছে।আমার জন্য নিবির ভাইয়া আর প্রহরের সম্পকর্টা খারাপ হয়ে গেল।এরপর এসব কতদিন চলবে।
এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম তখনই কেউ" আফরা " বলে চিৎকার করে উঠল।
তার চিৎকারে ধ্যান ভাঙল আমার। সামনে তাকিয়ে দেখি একটা ট্রাক খুব দ্রুতগতিতে আমার দিকেই আসছে।
আমার চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে গেলো।এই বুঝি আফরা নামক মানুষটার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেলো।এবার বুঝি সব সমস্যা মিটে যাবে।
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রাকটা আমার,,,,,
(চলবে)
Posts: 86
Threads: 6
Likes Received: 114 in 59 posts
Likes Given: 15
Joined: Jan 2023
Reputation:
6
পর্ব-০৫
ট্রাকটা আমার কাছে আসতেই কেউ আমায় টেনে সরিয়ে নিলো।
আমিও টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম।
মাথা তুলে সামনের দিকে তাকানো মাত্রই একটা থাপ্পর পড়ল আমার গালে।
অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকাতেই সামনে প্রহরকে দেখলাম।আমি কিছু বার আগেই সে বলা শুরু করল
---- তোমার কী কোনো সেন্স নেই।এভাবে কেউ রাস্তায় হাঁটে। মন কোথায় থাকে তোমার।
---- আমি,,,,,
---- জাস্ট সাটআপ।আর কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি।চলো আমার সাথে চলো, হসপিটালে যেতে হবে।
---- হহহ,,,হসপিটালে কেন যাবো।
---- সাধে কী তোমাকে ইডিয়েট বলি।হাতটা যে কতটা কেটে গেছে দেখেছো।
" আসলেই হাতটা অনেকটা কেটে গেছে।খুব যন্ত্রনাও হচ্ছিল।আমার প্রতি উনার এত কেয়ার ভালোলাগলেও আজ উনার ওপর খুব অভিমান হলো।এমন অবস্থায় উনি আমায় থাপ্পর মারতে পারল।"
--------------
প্রহর আমাকে একটা হসপিটালে নিয়ে গেল।
---- এত হাসপাতাল থাকতে এখানেই নিয়ে আসা লাগল আপনার।
---- এখানে কী প্রবলেম?
----ভাইয়া আমায় এ অবস্থায় দেখলে খুব রেগে যাবে।
---- তাহলে তো ঠিকই আছে।তোমার ভাইয়ারও জানা উচিত যে তুমি রাস্তায় কেমনে হাঁটো।
---- ধুর।
ভেতরে গিয়ে একটা নার্স আমার ড্রেসিং করতে নিলেই প্রহর বললেন
---- গিয়ে ভালো কোনো ডাক্তারকে ডেকে আনুন।
---- এইটুকু তো উনি করে নিতে পারবেন।
---- স্টপ,আফরা আমি তোমার ব্যাপারে কোনো রিস্ক নিতে চায় না।
"নার্স গিয়ে একটা ডাক্তারকে নিয়ে এলো।ওটা অনন্যা আপু ছিল।"
অনন্যা আপু খুব সুন্দর করে আমার ড্রেসিং করে দিলো।এখানে কম-বেশি সবাই আমাকে চিনে।
আমিও অনন্যা আপুকে বলে দিয়েছি যেন ভাইয়াকে কিছু না বলে।
কিন্তু ঐ নার্সটা গিয়ে ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে এসেছে।আমার তো নার্সটাকে কাচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে।
---- কী হয়েছে, বনু।
----কিছু হয়নি ভাইয়া, হাটতে গিয়ে পা স্লিপ করে পড়ে গেছিলাম।
আমার কথা শুনে প্রহর আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর বলল
---- একদম মিথ্যে বলছে, ভাইয়া।আজ রাস্তায় এক্সিডেন্ট করতে মরতে বসেছিল।আমি না থাকলে এতক্ষণ স্বর্গে চলে যেতো।
---- এসব কী, আফরা। তুই এতটা বেখেয়ালি হয়ে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করিস।
---- ভাইয়া আমি আসলে,,,
---- তুই রাস্তায় কী করছিলি?
---- আরে ভাইয়া আপনার বোনের মনে হয় বাসায় থাকতে ভালোলাগেনা।তাই এইভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেন।
প্রহরের কথায় ভাইয়া সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাট দিকে তাকালো।এতক্ষন অনন্যা আপু শুধু নিরব দর্শক থাকলেও এবার বলল
---- একদম না।ও শ্বশুরবাড়ি চলে গেলে আমি গিয়ে কার সাথে থাকবো।
" অনন্যা আপুর কথায় ভাইয়া আপুর দিকে তাকাতেই আপু একদম মুখে আঙ্গুল দিয়ে দাড়িয়ে গেলো।"
ভাইয়া প্রহরকে বলল
---- প্রহর, আমার না এখন একটা ওটি আছে।তুমি কী একটু আফরাকে বাসায় পৌছে দিবে।
---- অবশ্যই।
--------------
প্রহর আমাকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেলো।
বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।এত টেনশন আর নিতে পারছিনা।
বিকেলে ঘুম ভাঙল রাহার ডাকে।ওকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলাম।
---- তুই এখানে।
---- কেন আসতে পারি না?
---- সেটা কখন বললাম।
---- তোকে খুব ভালো একটা খবর দিতে এলাম।
---- কী খবর?
---- তুই জানিস কথা আপুর হাজবেন্ডকে আজ পুলিশ এরেস্ট করেছে। তাও মাদকের মামলায়।
---- তো! দেখবি পুলিশকে টাকা খায়িয়ে যে কোনো সময় বেড়িয়ে আসবে।
---- তো কী?জানিস আজ কথা আপুর মুখটা দেখার মতো ছিল।
---- তুই আবার উনাকে দেখতে গিয়েছিলি।
---- হুম।তুই তো জানিস আপুর শ্বশুরবাড়ি আমাদের বাড়ির কাছে।
---- হুম।
---- তুই নাকি আজ মরতে মরতে বেঁচে গেছিস।
---- তোকে কে বললো এসব।
---- কেন প্রহর ভাইয়া। আর প্রহর ভাইয়া এলাকার সবাইকে ও বলেছে যেন তোকে একটু দেখে রাখে।আর তোকে দেখলেই যেন সাবধানে চলাফেরা করতে বলে।
---- কীহহহহ।
---- হুম।কত ভালোবাসে তোকে দেখেছিস।
---- এই লোকটা আমায় নির্ঘাত পাগল বানিয়ে ফেলবে।
---------------
কেটে গেছে সপ্তাহখানেক।এর মাঝে প্রহরের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে আমার।নিবির ভাইয়াও এখন নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে।
কথা আপুর হাজবেন্টের দশ বছরের জেল হয়েছে।কথা আপু আবার নিবির ভাইয়ার কাছে ব্যাক করতে চাইলেও নিবির ভাইয়া না করে দিয়েছে।
ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে দেখলাম বাইরে গাড়ি নিয়ে নিবির ভাইয়া দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখেই বললো
---- আমি ড্রপ করে দিয়ে আসি, আফরা।
আমি বেশি কিছু না বলে গাড়িতে উঠে পড়লাম।
---- সরি, আফরা।এতদিন তোর সাথে এমন বিভেব করার জন্য।
---- ঠিক আছে, ভাইয়া।একটা কথা বলব আপনাকে?
----বল।
---- আপনার কাছে পাত্তা পায়নি বলেই তো আমি প্রহরকে সুযোগ দিয়েছি।তেমনি আপনারও উচিৎ নিজের জন্য পারফেক্ট কাউকে খুঁজে নেওয়া।
আমার কথাটা একটু ভেবে দেখবেন, ভাইয়া।
---- হুম।
----------------
নিবির ভাইয়া বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।বাড়িত গেলোনা।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে প্রহরকে ফোন দিলাম।আজ সকাল থেকে উনি একবারও ফোন দেয়নি।তাই আমি দিলাম।আজকাল উনার সাথে কথা না বললে ভালোই লাগেনা।
---- কী ব্যাপার! আজ তুমি নিজে থেকে ফোন করলে।
---- হুম।আপনি দিলেন না তাই আমি দিলাম।
---- তুমি কতদিন গোসল করোনা বলোতো,আফরা।
---- এসব কী প্রশ্ন?
---- না তোমার শরীর থেকে অনেক গন্ধ আসছে।
---- কী! আপনি মোবাইলে গন্ধ পাচ্ছেন।
---- হুম।
---- তা কেমন গন্ধ পাচ্ছেন।
---- প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি।
---- আপনি তো প্রচন্ড অসভ্য লোক।
----সেটা তো তুমি জানোই।
---- ধুরর।আপনাকে আর জীবনেও ফোন দিবোনা।
প্রহরকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম।তখনই দরজায় বেল বেজে উঠল।
এখন আবার কে এলো?
নিচে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম খালামণি আর আংকেল।ওরা আবার এখন কেন এলো।
আমি উনাদেরকে ভিতরে আসতে বললাম। কিছুক্ষণ পর মামা - মামিও চলে এলো।তারপর ভাইয়া আর নিবির ভাইয়াও চলে এলো।
মামি বলল," আংকেল নাকি সবাইকে এখানে ডেকেছে,আংকেলের নাকি আমার ব্যাপারে সবার সাথে কোনো কথা আছে।"
উনি আবার আমার ব্যাপারে কী বলবে?
(চলবে)
Posts: 86
Threads: 6
Likes Received: 114 in 59 posts
Likes Given: 15
Joined: Jan 2023
Reputation:
6
পর্ব-০৬
লোভ! বড্ড খারাপ এটা।লোভে পড়ে যে মানুষ কত কী করতে পারে তা আজ আংকেল কে না দেখলে বুঝতাম না।
মাথায় আপাতত কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটায় ঘুরছে।
কিছুক্ষণ আগে,,,,
---- আমার আপনাদের সাথে কিছু কথা আছে।
তোমরা তো জানোই রাদিফ আর আফরার সম্পর্কটা কত ভালো।জানি ওরা এখন ছোট তবুও আমি চাই ওদের বিয়ে দিতে।
" আংকেলের কথায় সবাই অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলে।মামা বলে উঠল"
---- তুমি যে এতটা নিচে নেমে যাবে আমি ভাবিনি।তুমি এইসব আফরার ভাগের সম্পত্তির জন্য করছো, তাইনা।
আংকেল প্রথমে মামার কথা মানতে নারাজ হলেও পরে উনি স্বীকার করেন।আমার বাবার সম্পত্তির পাশাপাশি আমার মায়ের ভাগের যে সম্পত্তি আমি পায় সেটাও তাদের চায়।আর এজন্য এরা এমন করছে।
আংকেল না বাইরের লোক কিন্তু খালামণি কেন আমার সাথে এমন করছে।
অনেক কথা কাটাকাটির পর আংকেলরা চলে গেলেন।পরে বাকি সবাই ও চলে গেলো।মামি আমাকে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চাইল কিন্তু আমি যায়নি।
বাসায় ভালো লাগছিল না তাই রাহাদের বাসায় চলে গেলাম।
----------------
রাহার ঘরে বসে আছি।ও কোথায় যেন গেছে।ফোন করেছিলাম, বলল আসছে।
রাহার টেবিলে দেখলাম বেশ কিছু গল্পের বই।সেগুলো দেখতে গিয়েই ওখান থেকে একটা ডাইরি নিচে পরে গেলো।ডাইরির ভেতর থেকে কতগুলো ছবি বের হলো।ছবিগুলো নিবির ভাইয়ার ছিল।
এখানে নিবির ভাইয়ার ছবি দেখে অবাক হলেও আরো বেশি অবাক হলাম ডাইরির লেখাগুলো পড়ে।
পুরো ডাইরি জুড়ে খুব গভীর আবেগের প্রকাশ।সবটাই নিবির ভাইয়াকে ঘিরে।
আর এই লেখাটা যে রাহার সেটা বুঝতে অসুবিধা হলোনা।আমি ডাইরির কয়েক পেজ পড়ে ডাইরিটা রেখে দিলাম।
---- আরে আফরা,সরি ইয়ার এতক্ষন ওয়েট করানোর জন্য।তুই আর একটু ওয়েট কর আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
---- হুম,যা।
---- কিরে আফরা,কিছু বলছিস না যে।
---- নিবির ভাইয়াকে এতটা পছন্দ করতি?
" আমার কথাশুনে রাহা একদম চুপ করে গেলো
ওর উত্তর না পেয়ে আমি আবার বললাম"
---- যখন নিবির ভাইয়াকে এতটাই পছন্দ করিস তাহলে বলিসনি কেন। শুধু আমি তাকে পছন্দ করতাম বলে।তুই এমনটা কী করে করতে পারলি।
---- আফরা,তুই আমাকে প্লিজ ভুল বুঝিস না,প্লিজ।আমি তোকে সবটা,,,
---- আমি কিছু শুনতে চায়না।আমি এতদিন আমার সব কথা তোর সাথে শেয়ার করেছি আর তুই এতবড় একটা কথা আমার থেকে লুকিয়ে গেলি।
---- আমি মানে,,,,
---- আমি কিন্তু তোর জায়গায় থাকলে মোটেও এটা লুকিয়ে রাখতাম না।নিজের ভালোলাগাটা প্রকাশ করতে শিখ, রাহা।
আমার কথা শুনে যেন রাহার দেহে প্রাণ ফিরল।ও ভেবেছিল হয়ত আমি এটা জানলে রাগ করব। ও বলল
---- প্রকাশ করেই বা কী হতো।উনার থেকে তো তুই পাত্তা পাসনি আর আমি?
----আমি পায়নি বলে যে তুইও পাবিনা, এটা কেমন কথা।
----থাক বাদ দে এসব।তুই আগে বল তোর আংকেল কেন এসেছিল?
" রাহাকে সবটাই খুলে বললাম।"
---- সত্যিরে,বাবা-মা না থাকলে যে দুনিয়া কতটা কঠিন সেটা তোকে না দেখলে বুঝতাম না।
আরো কিছুক্ষন রাহাদের বাসায় থাকলাম।তারপর বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
বেশ খানিকটা রাস্তা আসতেই আমার পথ আটকালো প্রহর।হঠাত উনাকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলাম।
---- আপনি এখানে?
---- তোমায় দেখতে এলাম।
---- আপনি প্লিজ আমার পেছনে আসবেন না।রাস্তার মানুষ দেখলে খারাপ ভাববে।
---- সো হোয়াট! আমি মানুষের কথা শুনি না।
---- কিন্তু আমাকে শুনতে হয়।
---- আচ্ছা, বাবা রেগে যাচ্ছো কেন?যাবো না তোমার সাথে।ওকে।তুমি সাবধানে বাসায় যাও।
---- হুম।
------------------
বাসায় এসে দেখলাম পুরো বাসাটা একদম অন্ধকার। আমি বুঝলাম না এমন কেন?
দুপা এগোতেই সব লাইট একসাথে জ্বলে উঠল।সবাই একসাথে বলে উঠল" হ্যাপি বার্থডে, আফরা।"
আনন্দে আমার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেলো।
সবাই আছে এখানে এমনকি রাহা আর প্রহরও। এরা কখন এলো।আর আমার আগেই বা কী করে এলো?
ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল
---- আজ আর কাঁদিস না বনু।চল কেকটা কাটবি।
বাবা- মা থাকতে তারা সব সময় আমার বার্থডে পালন করতেন।তারা চলে যাওয়ার পরেও এমন একটা সারপ্রাইজ পাবো ভাবিনি।আজ যে আমার জন্মদিন সেটা আমার মাথায় ছিলনা।মামা- মামি এমনকি প্রহরের মা- বাবাও ছিলেন।ভাইয়া নাকি তাদের ইনভাইট করেছিল।প্রহরের বাবা ভারি রাসিক মানুষ।উনি একাই সবাইকে মাতিয়ে রাখলেন।
সবাই মিলে একসাথে অনেক মজা করলাম। গত একবছর পর আজ প্রাণখুলে হাসলাম।
নিবির ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল
---- এই সবকিছু কিন্তু প্রহরের জন্য হয়েছে।সবটাই ওর প্ল্যান ছিল।
---- তাহলে উনি রাস্তায় কী করছিলেন?
---- আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই তুই চলে আসতি তাই ও তোকে আটকাতে গেছিল।
--- ও।
নিবির ভাইয়া আর প্রহরের মাঝে সব ঝামেলা মিটে গেছে দেখে ভালো লাগল।নিবির ভাইয়া মানুষটা ওতটাও খারাপ না।যদি রাহা আর নিবির ভাইয়া এক হতো তাহলে হয়ত সব ঝামেলা মিটে যেতো।
----------------
রাতে শুয়ে শুয়ে তখনকার কথা ভাবছিলাম।অনেকদিন পরে যেন একটু স্বস্তি পেয়েছি আজ।ভাবলাম এতকিছুর জন্য প্রহরকে আমার একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।
তাই উনাকে ফোন করলাম।
---- কী ব্যাপার,সেদিন তো খুব বললে আর ফোন করবেনা তাহলে
---- আপনাকে ফোন করাটাই ভুল হয়েছে আমার।
---- সরি, রাগ করোনা।কেন ফোন করেছে বলো।
---- ধন্যবাদ।অনেকগুলো ধন্যবাদ।আমাকে এত সুন্দর একটা সন্ধ্যা উপহার দেওয়ার জন্য।
---- শুধু এটাতেই এত খুশি।তোমার জন্য তো আরো অনেক সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে,ডিয়ার।
---- মানে?
---- এত মানে বুঝতে হবেনা। অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমাও।
---- আজ আর কথা বলবেন না।
---- নাহ।তোমার সাথে যত কথা বলব তত তোমার মায়ায় জড়িয়ে যাবো।এমনিতেই তোমার মায়ায় ডুবে আছি।এবার নির্ঘাত মরে যাবো।
"তোমার ঐ কথার মায়ায় পড়লে যে আমার আর নিস্তার নেই।"
প্রহর ফোনটা কেটে দিলো।অন্যদিন তো কথা বলার জন্য পাগল হয়ে থাকে। আজ এত তাড়াতাড়ি কেটে দিলো।
আমি আর এটা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
---------------
সকালে ফ্রেশ হয়ে বাইরে গিয়ে দেখলাম ভাইয়ার ঘরে কিছু ভাঙার আওয়াজ হলো।
আমি দ্রুত ভাইয়ার ঘরে ঢুকতে গেলেই দরজার সামনে থাকা কাঁচের টুকরোয় লেগে পা কেটে যায়।আমি মৃদ্যু আর্তনাদ করে উঠি।সামনে তাকিয়ে দেখি পুরো ঘরে সবকিছু ভেঙেচুরে পরে আছে।
আমার চিৎকার শুনে ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এলো
---- কী হয়েছে, আফরা।একটু দেখে চলবি তো,কতটা পা কেটে গেছে।
ভাইয়া আমাকে ঘরে নিয়ে করে সুন্দর করে ড্রেসিং করে দিলো।ভাইয়ার মুখ দেখেই বুঝলাম সে খুব রেগে আছে।সাথে অনেক টেনশনেও আছে।
ভাইয়া হসপিটালে ফোন করে বলে দিলো যে আজ সে যাবেনা।
আজ কাজের মেয়েটাও আসেনি।তাই ভাইয়া রান্না করবে।ভাইয়া রান্নাবান্না মোটামুটি পারে।
ভাইয়া আমার জন্য আমার পছন্দের আলুর পরোটা বানালো।দুজনেই একসাথে নাস্তা করে কিছুক্ষন আড্ডা দিলাম।ধীরে ধীরে যেন সেই আগের দিনগুলো ফিরে পাচ্ছিলাম।
সারাদিন ভাইয়া বাসায় ছিল।আমাকে তো একদম বিছানা থেকে নামতে নিষেধ করে দিয়েছে।আমিও একজায়গায় বসে বসে বোর হচ্ছিলাম।
বিকেলের দিকে হসপিটাল থেকে ভাইয়ার একটা কল এলো।খুব নাকি ইমার্জেন্সি আছে।ভাইয়া যেতে না চাইলেও আমি জোর করে পাঠিয়ে দিলাম।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে।মাগরিবের আজানও দিয়ে দিয়েছে।
কিছুক্ষন পরেই কারেন্ট চলে গেলো।এখানে তেমন লোডশেডিং হয়না।হঠাত মনে হলো দরজার কাছে কেউ দাড়িয়ে আছে।
---- কে ওখানে? কে?
কেউ সাড়া দিলো না।ছায়ামুর্তিটা আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।
আমি বিছানা থেকে নেমে সেদিকে এগিয়ে যেতে নিলেই স্লিপ করে পড়ে গেলাম।প্রচন্ড ব্যাথা পেলাম পায়ে।আবার ব্লিডিং শুরু হয়েছে।জানালা দিয়ে দূরের আবছা আলো আসছে কিন্তু সেটা দিয়ে কিছু ভালোমতো বোঝা যাচ্ছেনা।মানুষটা ক্রমেই আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
আমি ওঠার শক্তিও পাচ্ছিনা।এবার যেন প্রচন্ড ভয় হচ্ছে।
আমি অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়াতে গিয়েও পড়ে গেলাম।অসহ্য যন্ত্রনায় চোখ- মুখ খিঁচে আছি।এবার লোকটা আমার একদম কাছাকাছি চলে এলো।আবছা বলোয় লোকটাকে দেখে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো।জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলো। চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসার আগেই অস্ফুষ্ট সুরে বললাম
" নিহান "
( চলবে)
•
Posts: 86
Threads: 6
Likes Received: 114 in 59 posts
Likes Given: 15
Joined: Jan 2023
Reputation:
6
পর্ব-০৭(স্পেশাল)
সময় চলেছে তার আপন গতিতে।দিনও কারো জন্য থেমে থাকেনা।সেও তার আপন গতিতে এগিয়ে চলেছে।
আমার পায়ের ক্ষত অনেকটাই সেরে গিয়েছে।সেদিন অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার কারনেই এতটা সময় লাগল।
সেদিন আমি অযথাই এত ভয় পেয়েছিলাম।আমার মাথায় সেদিন এটা আসেইনি যে ওটা নিহান না হয়ে রুহানও হতে পারে।রুহান হলো নিহানের ছোট ভাই।রুহান ছোটো হলেও ওর চেহারা একদম নিহানের মতো।খুব কাছে থেকে কেউ না দেখলে ওদের পার্থক্য করতে পারত না।
ওনাকি নিহানের ঘরে আমার কিছু জিনিস পেয়েছিল তাই দিতে এসেছিল।তবে সেগুলো এতদিন পরে দিতে আসার কারণটা ধরতে পারিনি।
মাঝে কেটেছে তিনদিন।একদিন আমার প্রহরের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি।ফোনটাও বন্ধ।মামির থেকে জেনেছি সে নাকি দেশের বাইরে গেছে।
মামির কথা শুনে একটু খারাপ লেগেছিল, সে আমায় বলে তো যেতে পারতো।
---------------
সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা তাই মনপ্রাণ দিয়ে পড়ছি।আপাতত দুনিয়ার সবকিছু মাথা থেকে বের করে দিছি।
পরীক্ষা শেষ হতে প্রায় দুইসপ্তাহ লেগে গেলো।একদিন প্রহরের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি।উনিও কোনো যোগাযোগের চেষ্টা করেননি।
পরীক্ষা শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে একটা লম্বা ঘুম দিলাম।একদিন টেনশনে একদম ঘুম হয়নি।
এখন একটা লম্বা ঘুম দরকার।
ঘুমের মাঝেও আজ বারবার প্রহরকে দেখতে পারছি।এই লোকটা এখন স্বপ্নেও এসে জ্বালায় আমায়।অসহ্য লোক একটা।
ঘুম থেকে উঠে কিচেনে যাচ্ছিলাম কফি বানাতে।ড্রয়িংরুমে এসে দোখি এখানেও প্রহর বসে আছে।এখন তো জেগে জেগে ও উনাকে দেখতে পাচ্ছি।
----কী ম্যাডাম, এত কী ভাবেন।
----আপনি কি এখানে সত্যি আছেন।
----বাহ,মাথার সাথে কী এখন চোখটাও খারাপ হয়ে গেছে।
" উনার এই রসকসহীন কথা শুনে বুঝলাম যে উনি সত্যি আছেন।তবে উনি এখানে কেন?"
---- আপনি কখন এসেছেন?
---- তিনঘন্টা আগে।
---- তো এতক্ষন কী করলেন আর আমায় ডাকেননি কেন?
---- তোমায় ডাকতে ডাকতে গলা ব্যাথা হয়ে গেছে আমার অথচ তোমার ঘুম ভাঙার নামই নেই।
শেষে বিরক্ত হয়ে নিচে নেমে এলাম।কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে খেলাম।তারপর টিভি দেখলাম।তারপর ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম খেলাম। আর এখন অবশেষে তোমার ঘুম ভাঙল।
---- কীহহ! আপনি আইসক্রিম কেন খেয়েছেন হ্যা,ওগুলো তো ভাইয়া আমার জন্য এনেছিল।
---- এই মেয়ে এত ছোটোলোকি করো কেন তুমি।তোমাকে আমি পুরো আইসক্রিমের দোকান কিনে দিবো।
----আপনি কেন এসেছেন? আর একদিন কই ছিলেন? আমার সাথে যোগাযোগ কেন করেননি?
---- তোমার এক্সাম কেমন হয়েছে?
---- খুব ভালো।
---- আমি তোমার কাছাকাছি থাকলে তুমি কখনো এতটা ভালোমতো পরীক্ষা দিতে পারতে না।আর আমি এখানে থাকলে তোমার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারতাম না।তাই চলে গিয়েছিলাম।
---ওহ। তাহলে আজ কেন এলেন?
---- তোমাকে দেখার তীব্র আকাঙ্খাটা আর দমিয়ে রাখতে পারিনি।
যাইহোক তুমি রেডি হয়ে নাও।
---- কোথায় যাবো?
---- সেটা সারপ্রাইজ।
---- আমি যাবনা।যদি আমায় নিয়ে গিয়ে আপনি আমায় মেরে ফেলে।
---- আমি পাপ করিনা।জানোতো আত্মহত্যা মহাপাপ।আর তোমাকে মেরে ফেলা মানে নিজেকে নিজে মেরে ফেলা।আর এই কাজ আমি কখনো করতে পারব না।আর তুমি স্টুপিটের মতো সারাদিন এসব উল্টোপাল্টা চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘোরো কেন?
---- আচ্ছা বাবা,আপনি দাঁড়ান আমি তৈরি হয়ে আসছি।
_________
অন্যদিকে "
---- নিবির ভাইয়া, আমার কথাটা একটু শোনেন না।
---- রাহা প্লিজ,তোমাকে না নিষেধ করেছি আমার পিছনে আসবেনা।তোমার কী সেলফ রেসপেক্ট বলতে কিছু নেই।তোমার এই ধরনের কাজে আমি প্রচন্ড বিরক্ত, রাহা।দয়াকরে আর আমার পেছনে এসোনা।আমাকে একটু শান্তিতে বাঁচতো দাও, প্লিজ।
" কথাগুলো বলেই চলে যায় নিবির।নিবিরের এহেন কথায় খুব কষ্ট পেলো রাহা।ও তো ওর ভালোবাসা গোপনই রাখতে চেয়েছিল।শুধু মাত্র আফরার কথায় ও নিবিরকে ওর মনের কথাটা বলেছিল, বাকিটা তো জানেনই।"
রাহাও বাড়ি চলে যায়।ও ঠিক করেছে আর কখনো ও নিবিরের সামনে যাবেনা।
_________
----আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
---- ভয় পাচ্ছো নাকি,আফরা।
---- মোটেও না। আমি তো এমনি বললাম রাত হয়ে যাচ্ছে তাই। আর ভাইয়াও তো টেনশন,,,
---- করবে না।তোমার ভাইয়াকে বলেই এসেছি।
---- ওহ।
প্রহর আমাকে একটা ফাঁকা মাঠে নিয়ে এলো। চারিদিকে অন্ধকার।আমি একটু সামনে এগিয়ে গেলাম।একটু পরে পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রহর নেই।
খানিকক্ষণ পরেই আকাশে অনেক গুলো ফানুস দেখতে পেলাম।চারিদিকে আলো ছড়িয়ে গেলো।অনেকগুলো আতসবাজি একসাথে ফুটে উঠল।আমার চারপাশে অনেক বেলুন উড়ে উঠল।কিন্তু এগুলো কীভাবে হচ্ছে।আর কে করছে?
পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রহর আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে আছে।উনি আমার হাতটা ধরে বললেন
---- আর পাঁচজনের মতো কথার মায়ায় জড়িয়ে তোমাকে প্রপোজ করার সাধ্য আমার নেই।তবু শুধু তোমাকে নিজের বলে দাবি করার অধিকারটা চাইব তোমার থেকে।মানুষের জন্য নিঃশ্বাস যতটা জরুরী আমার কাছে তুমিও ঠিক তেমনই অপরিহার্য।তোমাকে ছাড়া নিজেরে অস্তিত্ব কল্পনা করতে গেলেও আমি ভয় পায়।
জানি না আমি মানুষটা কেমন তবুও তোমাকে ভালোরাখতে বিন্দুমাত্র কার্পন্য করব না।আমি তোমাকে শুধু একটাই অনুরোধ করব,আমার ভালোবাসাটাকে একটু অনুভব করো, আফরা।ভালোবাসা বোঝাবুঝির ব্যাপার না।এটা অনুভবের ব্যাপার।
"উনার কথায় আমি বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম।খানিক থেমে উনি আবারও বলতে লাগলেন"
---- আমি জানি তোমার বয়সটা কম।তবুও তোমাকে ছাড়া আর একটা দিনও কাটানো আমার পক্ষে সম্ভবনা।তোমার একটু ইগনোরেন্স যে আমাকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে, আফরা।তোমাকে একদিন সামনাসামনি না দেখলে যে দম বন্ধ হয়ে আসে।তোমার মাঝে আমি আমার নিজের অস্তিত্বটা অনুভব করতে চাই,আফরা।আমাকে বুঝি আজ তুমি ফিরিয়ে দিবে।
তোমার কাছে আমি কী সেটা আমি জানিনা। কিন্তু আমার কাছে তুমি এমনকিছু যা আমি বলে বোঝাতে পারব না।জানি প্রথমপ্রেম স্পেশাল হয়।প্রথম প্রেম ভুলেও কিন্তু ভালো থাকা যায়।তুমিও তো আমার প্রথম প্রেম।তোমার প্রেমটা পূর্ণতা পায়নি বলে কী তুমি আমার প্রেমটাকেও পূর্ণতা দিবেনা,আফরা।
" উনার প্রতিটি কথা যেন আমার শিঁরা- উপসিরায় প্রবেশ করছে।শরীর- মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছে।সত্যি কী প্রথম প্রেমকে এত সহজে ভুলে যাওয়া যায়।
আমার প্রথম প্রেম পূর্ণতা পায়নি।তাই বলে কী প্রহরের প্রথম প্রেমকে তার থেকে কেড়ে নেওয়ার কোনো অধিকার আছে আমার?"
---- তোমার মৌনতায় কী তোমার সম্মতির লক্ষণ?
---- হয়ত বা।আপনার ভালোবাসটাকে আমিও অনুভব করতে চাই, প্রহর।প্রথম প্রেম নয়, সত্যিকার ভালোবাসা চায় আমার।
" আমার উত্তরে প্রহর যে কী পরিমান খুশি হয়েছে তা বলে বোঝানোর মতো না।কোনো মানুষ বুঝি কাউকে সত্যি এতটা ভালোবাসতে পারে।"
প্রহর আমার হাতে একটা আংটি পড়িয়ে দিলেন।আর বললেন
---- তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেখার তীব্র আকাঙ্খা জাগে আমার মনে।কিন্তু এখননা।খুব শীঘ্রই তা হবে।সেদিন তুমি সম্পূর্ণরূপে আমার হবে।একদম হালাল ভাবে।
" এই মানুষটাকে যে এখন আমার বড্ড প্রয়োজন।বড্ড বেশি প্রয়োজন।সবাই তো আমায় ছেড়ে চলে যায়।কিন্তু এই মানুষটা নাহয় একান্তই আমার থাকল।তাতে ক্ষতি কী?
----চলো তোমাকে বাসায় রেখে আসি।অনেক রাত হয়ে গেছে।
---- হুম চলেন।
----------------
বাসায় এসে দেখি ন'টা বাজে।কিন্তু ভাইয়া এখনো আসেনি।
অনেকবার কল করলাম কিন্তু ধরল না।হয়ত বিজি আছে।
মাঝে কেটে গেছে চারদিন।এই চারদিন আমার কাছে খুব দীর্ঘ একটা সময় লেগেছে।ইদানিং সবকিছুই খুব ভালোলাগে।রংহীন জিনিসগুলো রঙিন লাগে।মনে ভালোবাসার রং লেগেছে যে।
বসে বসে কার্টুন দেখছিলাম তখনই নিবির ভাইয়ার ফোন এলো।দেরি না করে ফোনটা ধরলাম।
---- কেমন আছিস,আফরা।
---- ভালোই আছি।
---- ওহহ।তোর বান্ধবী রাহার কী খবর।
---- আপনি আবার ওর খবর কেন নিচ্ছেনন।
---- না মানে ওর ফোনটা বন্ধ তো, তাই।
---- আপনি আবার ওকে ফোনও করেন। কী কেস বলেনতো।
---- তুই তো সবই জানিস, আফরা।চারদিন ধরে ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
---- টেনশনে ছিলেন বুঝি।যাইহোক, আমি ওর খবর নিয়ে তোমাকে জানাচ্ছি।
---- আচ্ছা।
নিবির ভাইয়া ফোন রাখতেই দরজার বেল বেজে উঠল।আমি দরজা খুলে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
দেখলাম ভাইয়া,,,,
( চলবে)
Posts: 86
Threads: 6
Likes Received: 114 in 59 posts
Likes Given: 15
Joined: Jan 2023
Reputation:
6
পর্ব-০৮
এসব কী ভাইয়া!
তুই বিয়ে করে ফেললি। আমাকে একবার বললিও
না।তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিসনা।
---- আফরা,এমন করিসনা প্লিজ।এমনিতেই প্রচুর ঘেটে আছি।
---- তুই বিয়ে কেন করলি।
---- না হলে আজ জেলে চলে যেতাম।এই স্টুপিটটা আজ আবার মরতে বসে ছিল।
---- এভাবে বলিসনা ভাইয়া, অনন্যা আপু সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসে।
আচ্ছা তুই ঘরে যা আমি আপুকে নিয়ে ভেতরে যাচ্ছি।
---- হুম।
" আমি অনন্যা আপুকে নিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম।'
---- থ্যাংক গড! আমি তো ভেবেছিলাম তুমি ভয়ে সব গুলিয়ে ফেলবে।
---- সিরিয়াসলি, তোমার আইডিয়া যে এভাবে কাজ করবে বুঝতেই পারিনি।
কিন্তু এখন কী হবে।
---- তুমি একদম চিন্তা করো না।ভাইয়া যে তোমায় পছন্দ করে সেটা আমি জানি।কিন্তু ও জীবনেও এটা স্বীকার করত না।বিয়েটা তো হয়ে গেছে, বাকিটা আমি দেখে নিবো।
---- লাইক সিরিয়াসলি, আমি তো ভাবতেও পারিনি যে তুমি মাথায় এত দুস্টু বুদ্ধি মাথায় নিয়ে ঘোরো।
----- আমি কিন্তু এমনই।
---- তাই নাকি!
---- হুম।
---- তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি ভাইয়াকে দেখে আসি।
---- আচ্ছা।
"আসলে অনন্যা আপুকে এসব করতে আমি বলেছিলাম। নাহলে ভাইয়া যা মানুষ কখনোই নিজের মনের কথা বলতোনা।"
---- আসব, ভাইয়া।
---- হুম আয়।
---- মুখটাকে এমন করে রেখেছিস কেন? নতুন নতুন বিয়ে করেছিস একটু চিল মুডে থাকতে পারিস না।
---- আফরা"
---- তুই তো অনন্যা আপুকে পছন্দ করতি তাহলে বিয়ে কেন করতে চাসনি।
---- তোর জন্য।বাবা-মা চলে যাওয়ার পর তোকে ভালোরাখার দায়িত্ব আমার।আমি চায়না অন্য কারোর জন্য তোর কোনো কষ্ট হোক।
অনন্যা তোকে কেমন ভাবে এক্সেপ্ট করবে সেটা আমি সত্যি বুঝতে পারছিনা।
" বাবা- মা চলে যাওয়াট পর ভাইয়া ই আমাকে আগলে রেখেছে।আমার সব ভুল গুলোকে দুনিয়ার থেকে লুকিয়ে রেখেছে।ছোটোবেলা থেকেই ভাইয়া সবসময় আমায় বেস্ট জিনিসটাই দিয়েছে।আজ আমিও তাকে তার পছন্দের জিনিসটা দিলাম।আমার কষ্ট হলে হবে তবুও সে তো খুশি হবে।আর আমি জানি অনন্যা আপু এমন মেয়ে না।"
---- তুই চিন্তা করিস না ভাইয়া।অনন্যা আপু আমাকে একদম তার নিজের বোনের মতোই দেখবে।
" নিচে দরজায় বেল বাজার শব্দ হলো।আমি নিচে চলে গেলাম সাথে ভাইয়াও এলো।"
দরজা খুলে দেখি মামা - মামি আর প্রহরের বাবা,মা।
---- তোমরা সবাই এখানে।
---- আবিরের বউ দেখতে এলাম।
---- তোমাদের কে বলল এসব?
---- কেন প্রহর।
---- উনি কীভাবে জানলেন?
----ও তো আবিরের বিয়েতে সাক্ষী ছিল।
" মামির কথা শুনে কটমট দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।"
---- এটা কী ঠিক হলো, ভাইয়া।তুই উনাকে বিয়ের সাক্ষী বানালি আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলিনা।
ভাইয়া আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
---------------
দুপুরবেলা মাত্রই একটু ঘুমিয়েছিলাম তখনই ফোন বেজে উঠল।না দেখেই ফোনটা তুললাম।
---- কে?
----কে কী হ্যা,তুই কী রে আফরা।বললি যে রাহার সাথে কথা বলাবি অথচ এখনও কিছু করলি না।
---- নিবির ভাইয়া, রাহা আপনার সাথে কথা বলতে চায়না তো আমি কী করতে পারি।
---- প্লিজ আফরা,কিছু একটা কর।আমি সত্যি সেদিনের বিহেবের জন্য দুঃখিত। একবার কথা বলানোর ব্যবস্থা করে দে।
---- আচ্ছা দেখছি।
ভর দুপুরবেলা যাচ্ছি রাহাদের বাড়ি।মহারানীকে কত ফোন করলাম ধরলোনা।আর এদিকে তো নিবির ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে পাগল করে দিচ্ছে।
রাহাকে অনেক বুঝিয়ে নিয়ে গেলাম নিবির ভাইয়ার সাথে দেখা করাতে।ওরা দুজন কথা বলছে।আমি খানিকটা দূটে দাঁড়িয়ে আছি।ইদানিং নিবির ভাইয়ার সাথে কাউকে দেখলে আর খারাপ লাগেনা।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোর হচ্ছিলাম তাই প্রহরকে ফোন করলাম।উনি মহারাজ ফোন তো ধরলেন না উল্টো কেটে দিলেন।প্রচন্ড রাগ হলো উনার এমন কাজে।
অসহ্য লোক একটা।এদিকে এরা দুজন এমনভাবে কথা বলছে যা আজ আর শেষ হবেনা।
ওদেরকে বলে আমি সামনের লেকটার দিকে গেলাম।
বিকেল হয়ে এসেছে, চারিদিকে সুন্দর বাতাস।বাতাসে কিছু একটার মিষ্টি গন্ধ ভাসছে।
একা একা হাঁটতে মাঝেমধ্যে ভালোও লাগে।কিন্তু এমন জনসমাগমের জায়গায় একা হাঁটা মানে লোকের বিনোদনের মাধ্যম।
হঠাতই কেউ পিছন থেকে আমার চুল টেনে ধরল।প্রচন্ড রাগ নিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি " রাদিফ"।
---- তুই? এখানে কীভাবে। আর এভাবে পাবলিক প্লেসে চুল টেনে ধরে,মাথাটা ধরে গেলো আমার।
---- আরে, চুপ কর, মা। এতকথা একবারে কেউ বলে। তুই তো বাচালই থেকে গেলি।
---- তুই হঠাৎ এখানে কেন?
---- আবির ভাইয়ার বউ দেখতে আসছি।বাই দ্যা ওয়ে,আমি কিন্তু সব জানি।
---- কী জানিস।
---- এটাই যে সবকিছু তোর প্ল্যান ছিল।প্রহর ভাইয়া আমাকে সব বলে দিয়েছে।
---- তুই প্রহরকে চিনিস?
---- হুম।আমার একটা মাত্র দুলাভাই বলে কথা।তাকে না চিনলে হয়।আর যাই বলিসনা কেন মানুষটা কিন্তু তোর জন্য একদম পারফেক্ট।
---- কী বলিস তুই এসব।
" আমি আর রাদিফ কথা বলছিলাম তখনই রাহা ফোন করে বলল নিবির ভাইয়া নাকি ওর প্রোপোজালটা নিয়ে ভেবে দেখবে বলেছেন।ওরা নাকি বাসায় চলে গেছে।আমি আর রাদিফও বাসায় চলে এলাম।"
------------------
দিন চলেছে তার আপন গতিতে।আজ আমার ফাস্ট ইয়ারের রেজাল্ট দিবে।বসেবসে নখ কামড়াচ্ছি।সামনে অনন্যা আপু খাবার নিয়ে বসে আছে।আর ভাইয়া আমাকে টেনশন করতে মানা করছে।
খানিকক্ষন পরে রেজাল্ট জানতে পারলাম।প্রথম হয়নি কিন্তু বেশ ভালো পজিশনে আছি।
মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো।ভাইয়া আর অনন্যা আপুর সম্পর্ক বেশ ভালো চলছে সাথে রাহা আর নিবির ভাইয়াও।প্রথমে অনন্যা আপুর বাড়ির লোক না মানলেও পড়ে তারা সব মেনে নেয়।
কিন্তু ইদানিং প্রহর আমাকে খুব কম টাইম দেয়।
চারদিন পর আজ দেখা করবে বলেছে।
কতক্ষন ধরে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।অথচ উনার আসার নাম নেই।
---- সরি, একটু লেট হয়ে গেছে।
---- এতদিন কই ছিলেন?
----চাকরি খুঁজছিলাম।বউকে মেনটেন করার জন্য তো একটা চাকরি দরকার।
---- তো চাকরি পেয়ে গেছেন।
---- হুম।একটা হসপিটালে জেনারেল সার্জন এর।
---- ও আপনি কী নিবির ভাইয়ার চেয়ে বড়।
---- হুম। দুই বছরের।
---- তাহলে তো আপনি বুড়ো। শেষ পর্যন্ত একটা বুড়ো বড় জুটল আমার কপালে।
---- আর আমার কপালে যে একটা পিচ্চি বউ জুটল তার কী।
---- আহারে।
---- চলো আজ তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো।
---- কোথায়?
---- আমাদের বাড়ি, মা নিয়ে যেতে বলেছে তোমায়।
প্রহরদের বাসায় এসেছি।প্রহরের মা খুব ভালো মানুষ একদম নিজের মেয়ের মতো দেখে আমায়।
আমি ওদের পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখছিলা।প্রহরের রুমে ঢুকেই আমার চোখ আটকে গেলো সামনের দেয়ালের দিকে।পুরো দেয়াল জুড়ে আমার বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি।কিন্তু এত ছবি উনি কোথায় পেয়েছেন।
ছবিগুলো খুব সুন্দর আর যত্ন করে রাখা।সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।উনার রুমের সবকিছু খুব সুন্দর সাজানো গোছানো।নরমালি ছেলেদের ঘর এতটা পরিপাটি হয়না।আমি খুব মনোযোগ দিয়ে ঘরের সবকিছু দেখছিলাম।তখনই প্রহর রুমে এলো আর বলল
---- ভালো করে দেখো কিছু পছন্দ না হলে বদলে ফেলবো।তাছাড়া বিয়ের পর তো এখানে শুধু তোমার সাজগোজের জিনিসই থাকবে।
---- আমি মোটেও এত সাজিনাএত কী আমি তো একটুও সাজিনা।
" প্রহর বিছানায় বসে একটান দিয়ে আমাকে উনার কোলে বসিয়ে বললেন"
---- তোমার যা রূপ আছে তা কারো হৃদয় ঝলসে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর কিসের দরকার বলো।
---- হু হয়েছে,আর তেল দিতে হবেনা।আমি জানি আমি কতটা সুন্দর।
---- হোয়াট! তুমি সুন্দর, লাইক সিরিয়াসলি। তোমার মতো পেত্মীকে সুন্দর কে বলেছে।
" উনার এই সেকেন্ডে সেকেন্ডে রং বদলানোর স্বভাবটা আমার মোটেও পছন্দ না।আমি রাগ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলাম।"
আন্টি রান্না ঘরে ছিল।আমি উনার কাছে গিয়ে উনাকে সাহায্য করতে চাইলও উনি না করে দেন।
উনি আমাকে উনার ঘরে নিয়ে গেলেন।খুব সুন্দর একটা চেন আমার গলায় পড়িয়ে দিলেন আর বললেন
---- এটা আমার মেয়ের ছিলো।কিন্তু এটা বেশিদিন পড়ার সৌভাগ্য ওর হয়নি।তাই তোমায় দিলাম।আমার ছেলের মতো এটাকেও আগলে রেখো,আফরা।
---- আপনার একটা মেয়েও আছে।প্রহর তো কখনো বলেনি আমায়।
---- আমার মেয়ে ছিলো।এখন নেই।আমার পরি আর নেই আমার কাছে।
---- মানে?
---- চারবছর আগে ও মারা গেছে।আমাদের একটা ভুল সিদ্ধান্ত ওকে শেষ করে দিয়েছে।
আমি চাইনা আমার পরির মতো প্রহরও আমাদের ছেড়ে চলে যাক।তাই ওর কোনো কাজে ওকে না করিনা।
---- আপনার মেয়ে কী মারা গেছে, আন্টি।
---- না ও মারা যায়নি।শুধু আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।
---- মানে?
---- মানে চারবছর আগে,,,,,
(চলবে)
Posts: 86
Threads: 6
Likes Received: 114 in 59 posts
Likes Given: 15
Joined: Jan 2023
Reputation:
6
পর্ব-০৯(শেষ)
আমার মেয়েটা চারবছর আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।সে আর কখনো ফিরবেনা আমার কাছে।
---- আপনি যে বললেন উনি মারা যাননি।তাহলে,,,
---- ও তো মারা যায়নি,ওকে মেরে ফেলা হয়েছিল। জানোতো ও একটা ছেলেকে ভালোবাসতো।ছেলেটা ভালো ছিল না।অনেকগুলো সম্পর্ক ছিল ওর।এজন্য তোমার আংকেল তাকে মেনে নেয়নি।কিন্তু পরি লুকিয়ে সেই ছেলেটাকে বিয়ে করে নিয়েছিল।
" কথাগুলো বলতে গিয়ে প্রহরের মা বারবার কেঁপে উঠছেন।উনার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ছে।উনি আবারও বলতে শুরু করলেন"
----বিয়ের কিছুদিন ভালো গেলেও তারপর থেকেই ঝামেলা শুরু হয়।খুব অত্যাচার করত আমার মেয়েটাকে ওরা।ওকে কত বললাম তুই ফিরে আয়।এলো না।ওর একটাই কথা ও কোন মুখে ফিরে যাবে।
টানা তিনবছর ওদের অত্যাচার সহ্য করে চারমাস আগে আমার পরিটা সুইসাইড করেছিল।কিন্তু আমি জানি ওদের জন্যেই আমার মেয়েটা এমন করতে বাধ্য হয়েছে।
এখানে থেকে আর এসব সহ্য করতে পারিনি বলে তোমার আংকেল আমাদের এখানে নিয়ে এলো। অবশ্য এখানে না এলে তোমার মতো আরেকটা মিষ্টি মেয়ে পেতাম নাকি।
---- আচ্ছা আন্টি, আপনারা কোনো পুলিশকেস করেননি।
---- করেছিলাম কিন্তু ওরা খুব প্রভাবশালী ছিল বলে সব চাপা পড়ে যায়।
আরো কিছুক্ষন আন্টির সাথে কথা বলে বাসায় চলে এলাম।আন্টির কথাগুলো শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো।
--------------------
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ অনন্যা আপুর সাথে গল্প করলাম। তারপর রুমে গিয়ে বই নিয়ে বসলাম।
রাতে ভাইয়া এলে সবাই একসাথে খাবার খেতে বসলাম।তখন ভাইয়া বলল
---- আফরা!আসলে প্রহরের বাবা- মা চাচ্ছিলো তোদের বিয়েটা খুব শীঘ্রই দিতে।
আমি জানি তোর বয়সটা কম।আমি তোর ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে চায়না। তোরর যা ভালোমনে হয় তুই সেটাই করবি।
আর ওরা এখন শুধু কাবিন করিয়ে রাখবে।বাকি তুই যেখানে থাকতে চাস সেখানেই থাকবি।
---- আমাকে একটু টাইম দে ভাইয়া।আমি ভেবে তোকে বলল।
---- হুম।কোনো চাপ নিস না, বনু।তোর যেটা ভালো মনে হবে তুই সেটাই করবি।
---- হুম।
" ভাইয়াকে আর কিছু না বলে চলে এলাম।আমার এটা নিয়ে ভাবার জন্য সত্যি একটু টাইম দরকার।"
রাতে অনেক ভাবার পরও আমি কোনো ডিসিশন নিতে পারলাম না। আমার আসলে কী করা উচিৎ?
পরদিন সকালে উঠে ভার্সিটি গেলাম।আজ রাহার সাথে বিয়ের কথাটা শেয়ার করব।
কিন্তু রাহা আজ ভার্সিটি এলোই না।
আমিও দুটো ক্লাস করেই চলে এলাম।
ভাইয়া আর অনন্যা আপু দুজনেই হাসপাতালে গেছে।অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম বিয়েটা আমার করে নেওয়া উচিত।আমি প্রহরকে ছাড়া ভালোথাকতে পারব না।
রাতে ভাইয়াকেও বলে দিলাম আমি বিয়েটাতে রাজি।
ভাইয়াও সে মতো প্রহরের বাবা- মায়ের সাথে কথা বলল।
রাতে নিবির ভাইয়া ফোন দিলো।এতরাতে নিবির ভাইয়ার কল দেখে বেশ অবাক হলাম।বেশিকিছু না ভেবে ফোনটা তুললাম।
---- বিয়ে করছিস, আফরা!
---- নিবির ভাইয়া আসলে,,,
---- কী জানিসতো আফরা,কথাকে আমি হয়ত সত্যি ভালোবাসতাম।ও আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল হয়ত প্রথম প্রেম ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। তখন আমি তোকে চেয়ে ছিলাম শুধু কথাকে ভুলে থাকার জন্য।তুই ঠিকই বলে ছিলি, তোর প্রতি আমার যা ছিল তা শুধুই মোহ ছিল।কিন্তু রাহা আমার লাইফে আসার পট বুঝেছি মানুষ প্রথম প্রেম ভুলেও নতুন করে প্রেমে পড়তে পারে।
তোর হয়ত মনে হতে পারে আমি এত রং কেন বদলায়।কিন্তু বিশ্বাস কর ভালোবাসা মন থেকে আসে।সেটা জোর করে হয়না।
---- আমি জানি ভাইয়া,ভালোবাসা মন থেকে হয়।আমি যেমন প্রহরকে ভালোবেসে তাকে নিয়ে খুশি থাকি আর তুমিও রাহাকে নিয়ে খুশি থাকবে।
---- হুম।ভালো থাকিস, আফরা।আর মাঝের ঘটনাগুলোর জন্য ক্ষমা করে দিস।প্রহর খুব ভালো ছেলে, তোকে খুব ভালো রাখবে।
---- হুম।
নিবির ভাইয়ার সাথে কথা বলতে গিয়ে অনেক রাত হয়ে গেলো।আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম।আজ আর প্রহরের সাথে কথা হলোনা।
-----------------
প্রহরের বাড়ির লোক আগামী শুক্রবার বিয়েটা সেরে নিতে চাই।কালই শুক্রবার।বাড়িতে তোড়জোর শুরু হয়ে গেছে।ভাইয়া আর অনন্যা আপুও ছুটি নিয়েছে।
ভাইয়া তো খুব ব্যস্ত। তার একমাত্র বোনের বিয়েতে সে কোনে ত্রুটি রাখতে চায় না।
সকাল থেকেই রাহা আমার পিছনে পড়ে আছে।তার সাথে নাকি পার্লারে যেতে হবে।কিন্তু সকাল থেকেই মনটা বড্ড খারাপ।
আজ যদি বাবা - মা থাকত তাহলে তারা কত খুশি হতো।তারা থাকলে হয়ত আজকের দিনটা অন্যরকম হতে পারত।
সকাল থেকে বিশবার প্রহর ভিডিও কল করেছে।এত লোকের মাঝে কল ধরাটা মোটেও ভালো লাগেনি আমার।তাি ধরিনি।
কিন্তু এবার ধরেই ফেললাম।যতক্ষণ না ধরব ততক্ষণ কল করতেই থাকবে।
---- কী চাই?
---- তোমাকে।একটু দেখতেই তো চায়ছি তোমাকে।
---- রোজই তো দেখেন। আজ আবার নতুন করে দেখার কী আছে।
---- এতদিন তোমাকে শুধু আফরা হিসেবে দেখেছি কিন্তু এখন তো মিসেস প্রহর হিসেবে দেখবো।
---- তাই নাকি।আচ্ছা আমাকে না নিচে ডাকছে ।
আমি পরে কথা বলছি, বাই।
---- ওকে।
বিকেল হয়ে এসেছে।সন্ধ্যেবেলা কাবিন।খুব সাধারণভাবে সব হবে।বাসায় খুব অল্প মানুষই আছে।
খালামণিদেরও বলা হয়েছিল কিন্তু আসেনি।তবে আরাব ভাইয়া ফোন করে বলেছিল আসবে।
কিছুক্ষন পর রাদিফ আর আরাব ভাইয়া এলো।আরাব ভাইয়ার সাথে একটা মেয়েও এসেছিল।হয়ত আরাব ভাইয়ার ওয়াইফ হবে।
ভাইয়া মেয়েটার সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিলো।ওর নাম প্রীতি।প্রীতি ভাবি প্রচুর মিশুক মানুষ।খুব সহজেই আমাদের সাথে মিশে গেলো।
আমি রাদিফকে জিঙ্গেস করলাম
---- তোরা যে এখানে এলি, আংকেল রাগ করবেনা।
---- তোকে এতকিছু নিয়ে ভাবতে হবেনা।তুই শুধু তোর ফিউচার নিয়ে ভাব।বাই দ্যা ওয়ে, তোর কোনো ননদ থাকলে বলিস কিন্তু।ট্রাই করে দেখতাম আরকি।ভেবেছিলাম তোর ঐ বোন আরশিকে একটি পটাবো। কিন্তু সে তো আমাকে পাত্তায় দেয় না।
---- সিরিয়াসলি, রাদিফ। ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।
---- তো ব্রেকআপ করিয়ে দে না।
---- রাদিপ!
সন্ধ্যেবেলা প্রহররা এলো।অল্প কিছু লোক এলো ওদের সাথে।তবে আন্টি আসেনি।আংকেলকেও খুব হাসিখুশি লাগছে।উনাদের ভিতরে যে এতো কষ্ট লুকানো আছে তা উনাদের দেখলে বোঝায় যায়না।
সব নিয়ম ঠিকমতোই হলো।কাজী সাহেব প্রহরকে কবুল বলতে বললেই সে কবুল বলে দিলো।যেন এই মুহূর্তেরর জন্য উনি কতযুগ অপেক্ষা করতেছিল।
আমি প্রায় ঘন্টা খানিক সময় নিয়ে কবুল বলে দিলাম।"কবুল" এই ছোট্টো শব্দটার মধ্যে যে ঠিক কতটা প্রশান্তি লুকিয়ে আছে তা আজ বুঝলাম।হয়ত পবিত্র জিনিসের ক্ষমতা এটাই।
দুটি মন আজ এক হলো।প্রহরের মুখে আজ খুব সুন্দর একটা হাসি দেখলাম।এতদিন কখনো তাকে এভাবে মন খুলে হাসতে দেখিনি।
রাতের খাবার খেয়ে বাকি সবাই চলে গেলো।শুধু প্রহর আর ওর দুটো কাজিন থেকে গেলো।
আমাদের বাড়িতে বাসরের আয়োজন করা হয়েছে।
রাতে প্রহর আমাকে নিয়ে ছাদে গেলো।
---- এতরাতে আমরা ছাদে কেন এসেছি।
---- এই রাতের নিস্তব্ধ পরিবেশে তোর হৃদস্পন্দন টাকে অনুভব করতে চাই।
জানো তো আফরা, সবার জীবনেই প্রথম প্রেমটা স্পেশাল হয়।জানি প্রথম প্রেম ভুলে যাওয়া কঠিন।তবুও প্রথম প্রেম ভুলে কিন্তু মানুষ ভালো থাকতে পারে।নতুন ভাবে কাউকে ভালোবেসে ভালো থাকার মাঝে কিন্তু কোনো ভুল নেই।
---- আমার প্রথম প্রেমম পূর্ণতা পায়নি তো কী আপনার প্রথম প্রেম তো পূর্ণতা পায়নি।
আর আমি তো আমার আসল ভালোবাসা পেয়েছি।
---- উহু,,, আপনি না তুমি।
---- আচ্ছা,তুমি।আমার তুমি।
---- হুম।খুব ভালোবাসবো তোমায় দেখেনিও।তোমার আমার ভালোবাসা দেখে লোকেরা জ্বলবে দেখো।
---- হুম।জানেন তো প্রথম প্রথম নিবির ভাইয়ার বিহেবে খুব খারাপ লাগত। কিন্তু যখন আমি আপনার সাথে থাকতাম তখন সেগুলো মনেই থাকত না।আমার জন্য তো তোমার আর রাহার প্রথম প্রেমটা পূর্ণতা পেলো।এটাই আমার আনন্দ।
---- প্রথম প্রেমটা আসল না ভালোবাসাটাই আসল।
---- হুম।খুব ভালোবাসি তোমায়।
----আমিও।সারাজীবন এভাবেই আমার হয়ে থেকো।যদি কখনো ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেছো তো।
---- একদম না,,, জানি তুমি কতটা ফাজিল পিচ্চি বউ।
---- কীহহ,,আমি ফাজিল।আবার পিচ্চি।
---- হুম।আমার পিচ্চি বউ।
আমি নিঃশব্দে উনার কাঁধে মাথা রাখলাম।একটা শান্তির হাসি দিলাম।অবশেষে কেউ তো আমার হলো।একান্তই আমার হলো।যাকে আমার বড্ড প্রয়োজন।
জীবনে প্রথম প্রেম না আসল ভালোবাসার দরকার।
( সমাপ্ত)
পুরো গল্পটা নিয়ে গঠনমুলক মন্তব্য চাচ্ছিলাম।ভালো - খারাপ দিকগুলো ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।ধন্যবাদ।)
|