Thread Rating:
  • 6 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সাজু ভাই- সিরিজ নম্বর -০৩(গল্প:- সরি আব্বাজান)( সমাপ্ত গল্প)
#1
সাজু ভাই -সিরিজ- নম্বর-০৩

গল্প:-সরি আব্বাজান। 

পর্বঃ- ০১ 


লেখা:- মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)


---------------------------


রাত তিনটা। বাবা কল দিয়ে বললো " তোর মাকে এইমাত্র খুন করেছি আমিও আত্মহত্যা করব। যদি পারিস তাে আমাকে ক্ষমা করে দিস। সকালে এসে আমাদের লাশ দুটো দাফনের ব্যবস্থা করিস, এই পৃথিবীতে তুই একা হয়ে গেলি, চিন্তা করিস না দুরের ওই আকাশ থেকে তোকে আশীর্বাদ সর্বদা করবো। " 

- আমি কান্না জড়িত কণ্ঠে বললাম, বাবা তুমি এসব কি বলছো? মাকে কেন খুন করছো? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না, নাকি মজা করছো? "

- বেশি কথা বলে সময় নষ্ট করবো না, তোর মা এতক্ষণে পরপারে অনেকদূর চলে গেছে। আমি এখনই আত্মহত্যা করে তার সঙ্গে হাঁটতে শুরু করবো নাহলে সে হারিয়ে যাবে। 

- বাবা প্লিজ, মায়ের কাছে মোবাইল দাও আমি তার সঙ্গে কথা বলবো। 

- সে তো গলা কাটা অবস্থায় নিশ্চুপ হয়ে ঘুমিয়ে আছে, তুই সকাল বেলা তাড়াতাড়ি গ্রামের বাড়িতে চলে আয়। আমাদের দুজনের লাশ যেন পুলিশ পোস্টমর্টেম করে কাটাছেঁড়া না করে। 

মোবাইল কেটে গেল, সঙ্গে সঙ্গে বাবার নাম্বার আবারও কল দিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ। মায়ের নাম্বারে কল দিলাম, রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। বিছানায় বসে কান্না করতে লাগলাম, আমার রুমমেট তৌহিদ ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে আমার কাছে এলো। তারপর আমি তাকে বললাম আর সে বললো বাড়ির আশেপাশে কারো কাছে কল দিয়ে খবর নিতে। 

সঙ্গে সঙ্গে চাচাতো ভাই মনিরুলের কাছে কল দিলাম, প্রায় পাঁচবার কল করার পরে চাচাতো ভাই ঘুমঘুম জড়িত কণ্ঠে বললো " কিরে লিমন? এতরাতে কেউ কল করে? নাকি জরুরি কিছু? "

- আমি কান্না করতে করতে বললাম, মনির ভাই আমাদের বাড়িতে একটু দেখবা মা-বাবা কেমন আছে? 

- কেন? চাচা চাচীর কি হয়েছে? 

- বাবা নাকি মাকে খুন করেছে আর সে নিজেও এখন আত্মহত্যা করবে। আমাকে কল দিয়ে এসব বলে কল কেটে দিয়েছে, আমি তো শহরে আছি তাই তুমি একটু যাবে? 

- বলিস কি? আমি এক্ষুনি যাচ্ছি, হায় আল্লাহ চাচা কেন চাচিকে খুন করবে? 

- তুমি একটু তাড়াতাড়ি যাও, আর গিয়ে আমাকে কল দিয়ে জানিও। আমি বরং ততক্ষণে সবকিছু গুছিয়ে রওনা দিচ্ছি, প্লিজ তাড়াতাড়ি যাও। 

- আচ্ছা ঠিক আছে।  

আমি খাট থেকে নেমে তাড়াতাড়ি প্যান্ট শার্ট পরা শুরু করেছি, তৌহিদ কি করবে বুঝতে না পেরে আমাকে বললো " আমিও তোর সঙ্গে যাবো। "

- তুই কেন যাবি? 

- সত্যি সত্যি যদি চাচা চাচির বিপদ হয়ে যায় তবে তো... 

- প্লিজ এমন বলিস না, পৃথিবীতে আমার মা-বাবা ছাড়া কেউ নেই। 

- আচ্ছা মাথা ঠান্ডা কর আর চল তাড়াতাড়ি। 

রুম থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছি, কোন ধরনের গাড়ি দেখতে পাচ্ছি না। মেইন রাস্তার দিকে গিয়ে কিছু একটা পাওয়া যেতে পারে, তাই স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছি। মুজগুন্নি বাসস্ট্যান্ডে এসে একটা মাহিন্দা পেলাম, রাতের বেলা দু'একটা গাড়ি চলে জানতাম তাই উঠে বসলাম। মাহিন্দার মধ্যে বসা অবস্থায় মনির ভাই কল দিলেন। 

- হ্যাঁ মনির ভাই? 

- লিমন তোদের রুমের দরজা তো ভিতর থেকে বন্ধ করা, ভিতরে বাতি জ্বলে। কিন্তু ডাকাডাকি করে কোন শব্দ পাচ্ছি না, এখন কি করবো? 

- আপনি দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করুন, তাড়াতাড়ি করুন মনির ভাই। 

- সত্যি সত্যি যদি তেমন কিছু হয়ে যায় তাহলে আবার পুলিশের ঝামেলা হবে না তো? কারণ পুলিশ যদি তখন বলে যে আমি দরজা কেন ভেঙ্গে প্রবেশ করলাম? 

- না কিছু হবে না, আমি তখন বলবো যে আমার নির্দেশে আপনারা দরজা ভেঙ্গেছেন। 

- আচ্ছা ঠিক আছে। 

কল কেটে দিয়ে এক অস্থিরতার মধ্যে হাহুতাশ করতে লাগলাম। ভিতরে ঢুকে তারা কি খবর দেয় সেটা অনুমান করতে কষ্ট হচ্ছে, আমার মা-বাবার মধ্যে তো কোন রাগারাগি দেখিনি কোনোদিন তাহলে কেন এমন করবে বাবা? 

- মিনিট দশেক পরে মনির ভাই কল দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো " লিমন তুই কোথায়? "

- আমি চিৎকার করে বললাম, মনির ভাই আমি গাড়িতে আছি, কিন্তু মা-বাবা ঠিক আছে তো? 

- কিছু ঠিক নেই লিমন, চাচা চাচী দুজনের লাশ হয়ে গেছে লিমন, তুই তাড়াতাড়ি আয় তোর বাবা মা আর দুনিয়ায় নেই। 

আমি তখন একটা চিৎকার করে আর কিছু বলতে পারি নাই, তৌহিদ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইল। মাহিন্দার মধ্যে আরও দুজন যাত্রী ছিল তারা কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইল। 

রূপসা নদীর ঘাটে গিয়ে কোন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না, কিছুক্ষণ পর তৌহিদ বললো " আমাদের বন্ধু পারভেজের তো বাইক আছে, তাকে কল দিয়ে কি আসতে বলবো? "

- হ্যাঁ চেষ্টা কর। 

পারভেজের বাসা টুটপাড়া কবরস্থানের কাছেই, সে শুনেই সঙ্গে সঙ্গে বাইক নিয়ে বেরিয়ে এলো। আধা ঘণ্টা পরে সে যখন আমাদের কাছে এসে পৌঁছাল তখন তিনজনে মিলে রূপসা ব্রিজের দিকে যাচ্ছি। আমাকে মাঝখানে বসিয়ে তৌহিদ শক্ত করে ধরে রেখেছে, পারভেজ তখন যতটা সম্ভব সাবধানে বাইক চালাচ্ছে। 

পিরোজপুরে গ্রামের বাড়িতে যখন পৌছলাম তখন দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে। এরমধ্যে আমাদের বাড়ি ভর্তি মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে, ভোররাত থেকে যারা শুনেছে তারা সবাই চলে এসেছে। থানা থেকে পুলিশ এখনো আসেনি তাই লাশ ঠিক সেভাবেই পরে আছে। 

মা-বাবার শোবার ঘরে ফ্লোরে গলাকাটা মরদেহ অবস্থায় পরে আছে আমার প্রিয় মা। তারই কাছে গলাকাটা অবস্থায় পরে আছে বাবা, আর বাবার হাতের কাছেই একটা ছুরি। দেখেই মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে যে বাবা নিজেই নিজের গলা কেটে ফেলেছে। 

কিন্তু কেন? কিসের জন্য? 
বাবার মনে তো এমন কোন কষ্ট ছিল না, যাতে করে সে এভাবে মাকে খুন করে নিজে আত্মহত্যা করতে পারে। তাহলে কারণ কি? 

আমার চিৎকারে তখন ঘরের দরজাজানালা সব ভেঙ্গে যাবার উপক্রম, মনির ভাই, পারভেজ ও তৌহিদ মিলে আমাকে ধরে রাখতে ব্যস্ত। এমনটা কেন হয়ে গেল? আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো? কে আমাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে আর কে আমার জন্য বাজারের শ্রেষ্ঠ মাছ কিনে নিয়ে আসবে? হঠাৎ করে চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সবকিছু চোখের সামনে ঘুরছে, মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাচ্ছি। 

|

যদি কেউ চোখ মেলে তাকালাম তখন আমি শুয়ে আছি ঘরের সম্মুখের বারান্দায়। এই বিছানায় আমি বাড়িতে এলে ঘুমাতাম, আর বাড়িতে যখন থাকতাম না তখন বাবা বিকেলে বিকেলে এখানে দুপুরের পরে বিশ্রাম করতো। বাবার শরীরের সেই পানখাওয়া গন্ধ নাকে আসছে, ধুম করে বিছানায় উঠে বসলাম। 

- তৌহিদকে বললাম " মা-বাবা কোই? "

- পুলিশ এসে নিয়ে গেছে, ময়নাতদন্তের পরে নাকি আমাদের কাছে নিয়ে আসবে। 

- অসম্ভব, আমার বাবা বলে গিয়েছে যেন তাদের লাশ কাটাছেঁড়া না করা হয়। 

- কিন্তু তুই হয়তো চাইলে রাখতে পারতি, তবে তুই অজ্ঞান থাকার কারণে কিছু করতে পারি নাই। আর পুলিশের কাছে আমি আর মনির ভাই যতটা জানি ততটা বললাম। তোর কাছে আঙ্কেল কল দিয়ে যা যা বলেছে তারপর আমরা দুজন রওনা দিলাম, আর মনির ভাইদের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করার সবকিছু বললাম। 

- এখন আমি আমার মা-বাবার লাশ কাটাছেঁড়া থেকে রক্ষা করবো কীভাবে? 

- তুই চাইলে একবার চেষ্টা করতে পারো, আঙ্কেল নিজে যদি আন্টিকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হয় তাহলে আর কাটাছেঁড়া করে কি হবে? আর বাহিরে দুজন পুলিশ এখনো আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারো। 

পুলিশের সঙ্গে আমি আবার সবকিছু বললাম, তারা চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে খবর দিতে বলে দিল। আমি চেয়ারম্যানকে কল দিলাম মনির ভাই এর কাছ থেকে নাম্বার নিলাম। 

চেয়ারম্যান সাহেব কিছুক্ষণ পর আমাদের বাড়িতে এলেন, তারপর আমি তাকে বললাম যে মা-বাবার লাশ ময়নাতদন্তের দরকার নেই। তিনি বললেন যে তাহলে এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং তিনি থানায় বলে দেবেন। 

মানসিকতার এতটা খারাপ অবস্থা তবুও অনেক ঝামেলার মাধ্যমে মা-বাবার লাশ ময়নাতদন্তের হাত থেকে রক্ষা করলাম। কিন্তু মনের মধ্যে সেই একটা প্রশ্ন ঘুরছে " বাবা এমনটা কেন করলো? "

মাগরিবের কিছুক্ষণ আগেই মা-বাবার দাফন করা শেষ হয়ে গেল, বাড়ি থেকে বের হবাে পথে গেটের কাছে রাস্তার পাশেই ডানহাতে একটু ফাঁকা জমি আছে। বছর খানিক আগে একদিন সেখানে কিছু শুপাড়ি গাছের চারা রোপণ করার সময় মা আমার সঙ্গে বলেছিল 

" তোর বাবা আর আমি মারা গেলে আমাদেরকে এখানে কবর দিস লিমন, আমরা তো মানুষ বেশি নয়। তুই বাড়ি থেকে বের হবার সময় আমাদের কবরে সালাম দিয়ে বের হতে পারবি। আবার যখন বাড়িতে ফিরবি তখনও আমাদের সালাম দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করবি। রাস্তা দিয়ে যখন মসজিদ এর ইমাম কিংবা কোন ভালো মানুষ হেঁটে যাবে তখন আমাদের জন্য দোয়া করবে। "

আমি সেদিন হেসেছিলাম, কারণ আমার বিশ্বাস ছিল আমার মা-বাবা এখনো অনেকদিন বাচবে। আসলে পৃথিবীর প্রতিটি মায়ের সন্তানেরা চায় তাদের মা-বাবা চিরকাল বেঁচে থাকুক। 

মা-বাবাকে সেখানেই কবর দিলাম, এখন আর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে না। দাফনকাজ শেষ করে সবাই চলে গেছে, শুধু আশেপাশের কিছু মানুষ আছে। মনির ভাই বরাবরই আমার কাছে বসে কান্না করছে, বাবা তাকে খুব পছন্দ করতো। 

পাশের ঘরের প্রতিবেশী এক চাচি আমাকে মাথায় তেল দিয়ে দিল, কপালে আর আর মুখে হাত দিয়ে আদর করে বললো " এভাবে ওরা চলে যাবে তা কখনো ভাবিনি, যা হবাে হয়ে গেছে মনকে শক্ত কর। আমরা তো আছিই। "

সারাদিনে মোবাইল বের করার সুযোগ হয়নি, সেই যে সকাল বেলা পকেটে রেখেছি সেভাবেই পকেটে পরে আছে। বের করে দেখি মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে, চালু করতে গিয়ে দেখি চার্জ আছে। তাহলে মনে হয় চাপ লেগে বন্ধ হয়েছে কারণ মোবাইলের ব্যাটারি একটু লুজ তাই মাঝে মাঝে ধাক্কা লেগে বন্ধ হয়ে যায়। কাগজ দিয়ে জাম করে রাখি। 

মোবাইল চালু করলাম, তারপর কললিস্টে গিয়ে বাবার নাম্বারের দিকে তাকিয়ে রইলাম। গতকাল রাতেও এমন সময় খাবার খেয়ে কল দিয়ে কথা বলেছিলাম, মাত্র ২৪ ঘন্টা ইসসসস। 

হঠাৎ করে চোখ গেল উপরে মেসেজের চিন্হের উপর, মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখি অনেক গুলো মেসেজ। সচারাচর সিম কোম্পানির অজস্র অপ্রয়োজনীয় মেসেজের জন্য এখন মেসেজ চেক না করে ডিলিট করতাম। 

কিন্তু সেগুলোর মধ্যে বাবার নাম্বার দিয়ে একটা মেসেজ দেখে অবাক হলাম। গতকাল রাত ২:৫৩ মিনিটে মেসেজ এসেছে, আর বাবা আমাকে কল করেছিল রাত ৩:০৯ মিনিটে। 

মেসেজ পড়ে আমার হাত কাঁপছে। লেখা আছে:- 

" তোকে বাঁচাতে গিয়ে তোর মা'কে খুন করলাম এইমাত্র, ২৫ বছরের সংসার জীবনে যাকে আমি কখনো একটা চড় মারিনি। তাকেই একটু আগে নিজের হাতে জবাই করেছি, এখন আমার নিজের গলাও কাটবো। ওরা সবাই এখন আমর চারদিকে দাঁড়িয়ে আছে, তোকে কল দিয়ে বাড়িতে আসার জন্য আমাকে বলছে। আমি সেই ফাঁকে তোকে কল না দিয়ে আগে মেসেজ দিচ্ছি, ওদের বলছি যে নাম্বার খুঁজে পাচ্ছি না। তোকে কল দিয়ে আমি হয়তো নিরুপায় হয়ে বাড়িতে আসতে বলবো, কিন্তু খবরদার তুই আসবি না। কারা এসব করছে সেটা তোর জানার দরকার নেই, কিন্তু তুই আর কোনদিন গ্রামের বাড়িতে আসবি না বাবা। তাহলে ওরা তোকেও খুন করে ফেলবে, আমি চাইনা যে আমাদের মৃত্যুর জন্য তুই প্রতিশোধ নিস তাই সেই খুনিদের নাম বললাম না। আমি আর তোর মা তোর জন্য জীবন দিয়ে গেলাম, আমাদের স্বপ্ন ছিল তুই অনেক বড় হবি রে, আমাদের স্বপ্ন তুমি পুরণ করিস বাবা। আকাশে বসে যেন তোকে দেখে আমি আর তো মা হাসতে পারি। "

বাবার মেসেজ দেখে শরীর কাঁপছে, আমি তো এই মেসেজ গতকাল দেখিনি। বাবা আমাকে গ্রামের বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছে কিন্তু আমি তো না জেনে চলে এসেছি। তাহলে কি আমাকে এখন তারা খুন করবে? কিন্তু কারা খুন করবে? 

.
চলবে...? 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 3 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
বাহ!!! চমৎকার
[+] 1 user Likes Jibon Ahmed's post
Like Reply
#3
(09-01-2023, 12:29 PM)Jibon Ahmed Wrote: বাহ!!! চমৎকার



ধন্যবাদ  Namaskar
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#4
#সরি আব্বাজান > পর্ব:-০২

শেষরাতের দিকে আমাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় শত্রুরা, আমার তিনজন তখন ঘুমাচ্ছিলাম ঠিক তখনই তৌহিদ "আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে লাগলো। " 

আচ্ছা আরেকটু খুলে বলিঃ-

তৌহিদ ও পারভেজ দুজনেই মেসেজ পরে চমকে গেল, তৌহিদ আস্তে করে কানে কানে বললো "এই কথা কাউকে কিছু বলিস না, কারণ এখন তোর আশেপাশের সবাইকে শত্রু মনে করতে হবে! "

মনিরুল ভাইদের বাড়ি থেকে রাতের খাবার রান্না করে পাঠানো হয়েছে, তৌহিদ ও পারভেজ সেই খাবার খেয়েছে। আমাকেও তৌহিদ নিজের হাতে ভাত মেখে দু লোকমা খাইয়ে দিল, সমস্ত ঘরের মধ্যে মা-বাবার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। রাতের বেলা আমি তৌহিদ ও পারভেজ একসঙ্গে ঘুমালাম। মনির ভাই থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমরা নিষেধ করেছি। রাত দশটার দিকে আমার কলেজের শিক্ষক এসেছিলেন দেখা করতে, অনেক কিছু উপদেশ দিয়ে ২৫/৩০ মিনিট পরে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। 

কারা হতে পারে সেই খুনের আসামি? আমাকে মারার জন্য কেন তাদের পরিকল্পনা? বাবা কেন আমাকে এসব থেকে আলাদা হতে বললো?

- পারভেজ বললো, লিমন তুই ঘুমানোর চেষ্টা কর বন্ধু, আমি আর তৌহিদ জেগে আছি। যদি সত্যিই কেউ তোদের শত্রু থাকে তাহলে অবশ্যই হামলা করতে পারে। 

- আমি বললাম, কিন্তু কেন করবে এমন? আমার তো কোন শত্রু নেই আর তাছাড়া আমরা কারো ক্ষতি করিনি কোনদিন। 

- তৌহিদ বললো, দোস্ত আজকাল ভালো মানুষ দের ধ্বংস করার জন্য পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে। নিশ্চয়ই এখানে অনেক বড় কিছু ঘটনা আছে তাই সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। 

- কিন্তু বাবা তো আমাকে গ্রামে আসতে নিষেধ করেছে, তাহলে কি বাবার শেষ অনুরোধ রাখতে পারবো না? 

- তুই নিজে গ্রাম ত্যাগ করবি কিন্তু গোয়েন্দা বা সিআইডি মোতায়েন করতে হবে। তারা অবশ্যই এই রহস্যের উন্মোচন করতে সক্ষম হবে, তখন সবকিছু পরিষ্কার হবে। 

এরপরই আমরা চুপচাপ শুয়ে রইলাম, বাহিরে ও ঘরের মধ্যে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে৷ মা-বাবার কত স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছে, চোখ বেয়ে অজান্তেই অগোচরে পানি বের হয়ে আসছে। এভাবেই কখন চোখ বন্ধ করেছিলাম জানি না কিন্তু হঠাৎ করে তৌহিদের মুখে আগুন আগুন চিৎকার শুনে খুব ভয় পেয়ে বিছানায় বসলাম। 

পারভেজ বললো " দোস্ত তাড়াতাড়ি বের হতে হবে নাহলে সবাই আগুনে পুড়ে মারা যাবো। "

কিন্তু আমরা যখন দরজা খুলে বের হতে যাবো তখন দেখি দরজা বাহির থেকে বন্ধ করা। তিনটা দরজা দিয়ে বাহির হওয়া যায় কিন্তু সবগুলোই বাহির থেকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গতকাল যেই পিছনের দরজা ভেঙ্গে মনির ভাই প্রবেশ করেছিল সেটা আজকে একদম ভালো করে পেরেক ঠুকে বন্ধ করে দিয়েছি। কিছু বাকি দুটি দরজা কারা বন্ধ করলো? আমাকে যারা খুন করতে চায় তারা কি এসব করছে? 

পশ্চিমে একটা নড়বড়ে জানালা ছিল সেটাই এক ধাক্কা দিয়ে ভেঙ্গে দিল পারভেজ। তারপর আমি পারভেজ ও তৌহিদ বেরিয়ে গেলাম, আগুন সেই সময় প্রায় সমস্ত টিনের চালে ছড়িয়ে গেছে। ইটের দেয়াল হলেও কাঠ আর টিনের চালের ছাউনি দিয়ে ঘেরা ঘরটা চোখের সামনে পুড়ছে। তৌহিদ ও পারভেজ দুজনেই সামনের দরজা বাহির থেকে খুলে পারভেজের বাইক বের করলো। আরও কিছু জিনিসপত্র বের করতে চেয়েছিল কিন্তু পরিস্থিতি খুবই অস্বাভাবিক। 

আবারও সেই চিৎকার চেচামেচি শুনে গভীর রাতে অনেকেই ছুটে এসেছে, পানি ঢেলে আগুন নিভে যাবে তাই পানি নিয়ে ব্যস্ত অনেকে। আমি শুধু ঘরের সামনের আমগাছের গোড়ায় ঘাপটি মেরে বসে রইলাম। 

সকাল বেলা পুলিশ এসেছে আবার, চেয়ারম্যান সাহেব নিজেও উপস্থিত হয়েছেন কিন্তু মা-বাবার স্মৃতিবিজড়িত ঘরটা দাঁড়িয়ে আছে পোড়া এক বিভৎস রূপ ধরে। 

- দারোগা বললেন, আপনারা তখন কোথায় ছিলেন? আগুনের ঘটনা প্রথম কে দেখে? 

- তৌহিদ বললো, জ্বি স্যার আমি প্রথমে দেখতে পেয়েছি। আমার কান খুব পাতলা, ঘুমের মধ্যে পাতা নড়ার শব্দটাও কানে আসে। আমি যখন শুনি যে টিন পুড়ছে আর আর স্ক্রু একটা করে পটপট করে ছুটছে তখন চিৎকার করছি। 

- আপনারা বাহিরে বের হবার পর কেউ কি তখন এখানে ছিল বা আক্রমণ করতে চেয়েছিল? 

- না স্যার তেমন কিছু নয়, আমরা তো এখানে সম্পুর্ণ ফাঁকা দেখেছি। 

- আচ্ছা লিমন সাহেব, আপনার মা-বাবার সঙ্গে কারো শত্রুতা ছিল? যেহেতু এখন একটা আক্রমণ হয়েছে তাই আমরা কিছু শত্রুদের সন্দেহ করি। 

- তেমন কোন শত্রু নেই যারা খুন করবে, আমরা সবসময় ঝামেলা এড়িয়ে চলতাম। 

- জমিজমা নিয়ে কারো সঙ্গে কোন বিবাদ ছিল? নিজেদের মধ্যে বংশগত ব্যাপারে? 

- জলিল চাচার সঙ্গে পূর্বপাড়ায় একটা রাস্তার পাশের জমি নিয়ে মামলা চলে। তবে বাবা সপ্তাহ খানিক আগে বলেছিল যে জলিল চাচা নাকি আমাদের জমি ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়েছে। 

- এমন তো হতে পারে সেই জলিল পরিকল্পনা করে ইচ্ছে করেই জমি ছেড়েছে কারণ মনে মনে একদম খুন করার ষড়যন্ত্র ছিল। 

- আমি সেটা জানি না। 

- আপনার কি ধারণা? আপনার মা-বাবা দুজনেই আত্মহত্যা করেছে নাকি খুন করা হয়েছে? 

- তৌহিদ বললো, স্যার খুন করা হয়েছে। 

- আপনি নিশ্চিত? 

- হ্যাঁ স্যার, লিমনের বাবা ওকে কল করার আগে একটা মেসেজ দিয়েছিল। কিন্তু সেই মেসেজ চেক করা হয় নাই বলে জানতাম না, তাকে কেউ খুব ভয় দেখিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। 

- ও মাই গড, বলেন কি? 

দারোগা সাহেব মেসেজটি জোরে জোরে পড়লেন, চেয়ারম্যান সাহেব গভীর চিন্তার মধ্যে হারিয়ে গেল সেটা বোঝা যাচ্ছে। জলিল মিয়াকে ভালো করে জিজ্ঞেস করতে হবে বলে দারোগা সাহেব বাজারে চলে গেলেন। 

দুপুর পর্যন্ত অনেকেই আমাদের বাড়িতে ছিলেন, দুপুরে খাবার খেলাম প্রতিবেশী মনোয়ার কাকার বাড়িতে। কাকিমা রান্না করে ডেকেছিল কিন্তু আমি যাইনি বলে পাঠিয়ে দিয়েছে। 

বিকেলের দিকে পারভেজ খুলনা চলে গেল, তবে আমাকে নিয়ে যাবার খুব চেষ্টা করেছে। 

- পারভেজ বললো, তুই এখানে থাকলে কিন্তু অনেক বিপদে পরবি লিমন। তারচেয়ে খুলনা বরং শহরে চল তাড়াতাড়ি, তাহলে সেখানে মোটামুটি নিরাপত্তা আছে। কিন্তু যেখানে আঙ্কেল নিজেই তোকে আসতে নিষেধ করেছে সেখানে তুই কি করবি দোস্ত? নিজের জীবনের বিপদ ডেকে এনে ভুল করিস না বন্ধু, চল আমার সঙ্গে। 

- আমি বললাম, আমি রহস্যের শেষ দেখে যেতে চাই পারভেজ, কারা আমার মা-বাবার সর্বনাশ করেছে? আমি সেই গোপনীয় সবকিছু পরিষ্কার করতে চাই নাহলে শান্তি নেই। 

- তুই বরং সাজু ভাইয়ের সাহায্য নিতে পারিস, তোর মনে আছে সাজু ভাইয়ের কথা? 

- হ্যাঁ মনে আছে, কিন্তু তিনি কি আসবেন আমার মা-বাবার খুনের রহস্য বের করতে? আমাকে কে বা কারা খুন করতে চায়, সেই রহস্যের উন্মোচন কি সাজু ভাই করতে পারবে? 

- আমার বিশ্বাস তিনি পারবেন, কারণ সাজু ভাই হচ্ছে ঠান্ডা মাথার এক রোমান্টিক মানুষ। সকলের সঙ্গে কত সুন্দর মিল তাই না? সেবার যখন তিনি খুলনা এসেছিলেন তোদের মেসের মধ্যে তখন তো আমরা সবাই গেছিলাম দেখা করতে। 

- তৌহিদ বললো, সাজু ভাই, সজীব ভাই, শফিক ভাই ও রকি ভাই এরা সবাই যেই রুমে থাকতো এখন আমরা সেই রুমে থাকি। 

- বললাম, ঠিক আছে পারভেজ তুই বরং এখন সন্ধ্যা হবার আগেই চলে যা। আমি আর তৌহিদ আগামীকাল সকালে খুলনা আসবো, তারপর সাজু ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবকিছু তাকে জানাবো। 

- তাহলে রাতে থাকতে হবে কেন? 

- মনির ভাই বললেন যে আজকে নাকি রাতের বেলা তিনি কিছু জরুরি কাগজপত্র দেখাবেন। সবকিছু আমাদের জমিজমার বিষয়ে আর সেই সঙ্গে কিছু গোপনীয় কথা জানাতে চায়। 

- তাহলে এখন দিনের বেলা সমস্যা কি? আমরা যে কতটা বিপদের মধ্যে তা কি সে জানে না? 

- তাদের বাড়িতে সমস্যা হবে না পারভেজ, আর শুধু শুধু চিন্তা করিস না তো। 

- ঠিক আছে সাবধানে থাকিস আর আগামীকাল সকালে উঠে রওনা দিস লিমন। 

- আচ্ছা ঠিক আছে।

সন্ধ্যার খানিকটা আগে বাজারের মধ্যে গেলাম আমি আর তৌহিদ। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একদম কর্নারের হোটেলের মালিক শাহজাহান কাকা আমাকে ডাকলেন। আমি তার কাছে যেতেই তিনি আমাকে নিয়ে হোটেলের পিছনে গেলেন, তার সঙ্গে সঙ্গে আমিও গেলাম। 

- কাকা বললেন, তোমার মা-বাবার ঘটনার জন্য সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে তাই সান্ত্বনা দেবার ভাষা জানা নেই। কিন্তু তোমাকে কিছু গোপনীয় কথা জানাতে চাই, মনোযোগ দিয়ে শুনবা তবে আমার কথা কাউকে বলবা না। 

- কি কথা শাহজাহান কাকা? 

- তোমার জলিল চাচার সঙ্গে ওপাড়ে যে জমি নিয়ে মামলা ছিল সেটা কেন শেষ হয়েছে জানো? 

- না তো। 

- তোমার বাবা জলিল মিয়াকে ওই জমির জন্য টাকা দিয়েছে নতুন করে। 

- কিন্তু ওটা তো আমাদের জমি তাহলে কেন বাবা আবার টাকা দেবে? 

- কারণ জমিটা নাকি তোমার খুব পছন্দের, তুমি নাকি সেখানে একটা পার্কের মতো মনোরম স্থান বানিয়ে বাগান করতে চাও? 

- হ্যাঁ কিন্তু...

- তোমার বাবা আমাকে বলেছিলেন যে তোমার নাকি খুব ইচ্ছে ওখানে বাগান করবে। তাই তিনি অনেক চেষ্টা করেও জমিটা রক্ষা করতে চেয়েছে কিন্তু নিজেই... 

- জমির বিনিময়ে যদি জলিল চাচা টাকা নিয়ে থাকে তাহলে আবার ঝামেলা কিসের? 

- সেখানেই ঝামেলা লিমন, আমি তো হোটেলের মানুষ তাই অনেককিছু জানি কারণ বাংলাদেশের মধ্যে হোটেলে বা চায়ের দোকানে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়। দলীয় বা বিরোধীদলীয় সকল পক্ষের কথা জানা যায়, সকালে এক গ্রুপ আবার বিকেলে অন্য গ্রুপ। 

- আপনি কি তেমন কিছু জানেন? 

- না বাবা, তবে আমারও পরিবার আছে তাই বেশি কিছু বলে বিপদ বাড়াতে চাই না। যতটুকু বললাম ততটুকু দিয়ে খুঁড়তে আরম্ভ করো, কেঁচো খুঁড়তে আরম্ভ করো সাপ এমনিতেই বের হবে। 

এতটুকু লিখে একটু দম নিল লিমন, তারপর আবারও লিখতে আরম্ভ করলো। 

বাজার থেকে আমি তৌহিদ আর মনিরুল ভাই ফিরে আসলাম। জলিল চাচার কথা কাউকে কিছু বলিনি এখনো, সাজু ভাই আমি শুধু আপনার কাছে এগুলো জানিয়ে দিচ্ছি। বাড়িতে ফিরে এসে বারবার মনে হচ্ছে যে বিকেলে পারভেজের সঙ্গে চলে গেলে ভালো হতো। কারণ রাত যতই গভীর হচ্ছে ততই ভয় লাগছে, সবাই খাবার খেয়ে এখন ঘুমিয়ে আছে। রাত এগারোটা পেরিয়ে গেছে আর গ্রামের বাড়িতে রাত এগারোটা মানে হচ্ছে অনেক রাত্রি। 

আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আজকে রাতের মধ্যে আমারও কিছু একটা হয়ে যাবে। তেমন কোন কারণ নেই তবে বারবার সেটাই মনে হচ্ছে, হয়তো মনের ভয় কিন্তু মনে হচ্ছে সেটা সত্যি। তাছাড়া ক্ষুদ্র একটা কারণ আছে, একটু আগে হঠাৎ করে জানালার পর্দার আড়ালে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। আমি আস্তে আস্তে জানালার কাছে গেলাম আর তখন কারো পায়ের শব্দ দ্রুত সরে যেতে শুনতে পেলাম। 

তৌহিদকে সেই কথা বললা কিন্তু সে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ঘুমিয়ে আছে, গতকাল আর পরশু রাতে বেচারা ভালো ঘুমাতে পারে নাই। তাই এখন মনে হয় তাকে ঘুমে গ্রাস করেছে, আমি অবশ্য চাইলে ঘুমাতে পারি না। তাছাড়া জানালার ঘটনাটা খুব ভাবাচ্ছে আমাকে, তাই যতক্ষণ সম্ভব জাগ্রত হয়ে থাকতে চাই। 

পরশু রাত তিনটায় বাবার সেই কল করার পর থেকে যা যা ঘটেছে সবকিছু সাজিয়ে লিখে দিলাম সাজু ভাই। সত্যি বলছি আমার খুব ভয় করছে, যদি রাতের মধ্যে বা যেকোনো সময় আমি খুন হয়ে যাই তাহলে সেই খুন আর মা-বাবার খুনের রহস্য বের করার দায়িত্ব আপনার। আপনার এক ছোটভাই হয়ে সেই দায়িত্ব আপনাকে দিলাম, আশা করি আপনি আসবেন। 

আমার বন্ধু পারভেজ তৌহিদ ও আমার নিজের নাম্বার দিয়ে রাখলাম। যদি তৌহিদ ও আমার নাম্বারে না পান তাহলে পারভেজের নাম্বারে কল দেবার অনুরোধ রইল। 

ইতি, 
মোঃ লিমন। 
পিরোজপুর। 

★★

গতকাল রাতে সাজু ভাইয়ের শরীর অসুস্থ ছিল তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছিল। আর সকাল বেলা অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে, তারপর ফ্রেশ হয়ে মোবাইলের মেসেঞ্জারে আসতে প্রায় দুপুর বারোটা। অনেক পাঠক পাঠিকার মেসেজ এসে জমা হয়েছে, কেউ কেউ এখনো এ্যাক্টিভ আবার অনেকে আনএ্যাক্টিভ। সবগুলোর একটু সংক্ষিপ্ত রিপ্লাই করতে করতে হঠাৎ করে গতকাল রাত বারোটার মেসেজ চোখে পরলো। 

"Md Limon" আইডি দিয়ে এতবড় একটা মেসেজ এসেছে, সম্পুর্ন ঘটনা এখানে বর্ননা করা। সেই রাত তিনটায় কল দিয়ে কথা বলা শুরু থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ননা। 

খুব মনোযোগ সহকারে সম্পুর্ণ ঘটনা পড়লো সাজু ভাই, তারপর বেশ কিছু সময় চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবতে লাগলো। তৌহিদ ও লিমন দুজনের নাম্বার সত্যি সত্যি বন্ধ দেখাচ্ছে, তাই পারভেজের নাম্বারে কল দিল সাজু ভাই। বেলা তখন দুপুর ১২ঃ৩৪ 

- রিসিভ করে পারভেজ বললো, আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন? 

- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, সাজু ভাই বলছি, তুমি কি লিমনের বন্ধু পারভেজ? 

- জ্বি ভাই, কেমন আছেন ভাইজান? আপনার কথা গতকাল রাতেও লিমনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু আপনি নিজেই আজকে আমাকে কল দিলেন, ভাইজান আমার বন্ধুর খুব বিপদ একটু সাহায্য করবেন? 

- সাজু ভাই বললেন, তোমার বন্ধু লিমন গতকাল রাতে আমাকে সম্পুর্ণ ঘটনা টেক্সট করেছে। কিন্তু আমি একটু অসুস্থ তাই রাতে রিপ্লাই করতে পারি নাই আর সকালেও অনলাইনে ছিলাম না। তোমার বন্ধু লিমন কেমন আছে? 

- ভাই একটুও ভালো না। 

- কেন? আজকে সকালে তো তৌহিদ আর লিমন শহরে যাবার কথা, যায় নাই? 

- না ভাই, গতকাল রাতেই ওদের দুজনকে কারা যেন গায়েব করে দিয়েছে। সরাসরি খুন করেনি কিন্তু ধরে নিয়ে গেছে, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা আছে। কিন্তু সেই বাড়িটা মাটি দিয়ে উঁচু করে তার উপর কাঠ দিয়ে নির্মান করা তাই কাঠের নিচ থেকে মাটি খুঁড়ে রুমে ঢুকেছে। মাটি খোঁড়ার চিন্হ এখনো পরে আছে, কিন্তু ওদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

- তাহলে কি সেই মনিরুল লোকটার মধ্যে কোন গন্ডগোল আছে? 

- না সাজু ভাই, কারণ সকাল বেলা পুকুরের মধ্যে পানিতে ভাসমান অবস্থায় মনিরুল ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। মনিরুল ভাইকে খুন করে ওদেরকে কিডন্যাপ করেছে, এলাকা ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে। 

- তাহলে কি...? 

- আরেকটা কথা সাজু ভাই। 

- কি? 

- লিমনের মা-বাবা দুজনের কবরের মাঝখানে একটা কাগজ পাওয়া গেছে। সেই কাগজে লেখা আছে " সরি আব্বাজান "। 

.

চলবে...? 
.

কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন, আর আপনারা উৎসাহ দিবেন তাহলে লেখার আগ্রহ শতগুণ বেড়ে যাবে। গতকাল প্রথম পর্ব পোস্ট করার পর বিভিন্ন ব্যক্তিরা গল্পটা কপি করে তাদের নিজের নামে পোস্ট করছে। আপনাদের কাছে অনুরোধ রইল, আমার নাম ছাড়া যদি কোথায় গল্পটা দেখতে পান তাহলে সেখানে প্রতিবাদ করবেন। তাহলে হয়ত লজ্জিত হতেও পারে। 

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#5
পর্ব:-০২

শেষরাতের দিকে আমাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় শত্রুরা, আমার তিনজন তখন ঘুমাচ্ছিলাম ঠিক তখনই তৌহিদ "আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে লাগলো। " 

আচ্ছা আরেকটু খুলে বলিঃ-

তৌহিদ ও পারভেজ দুজনেই মেসেজ পরে চমকে গেল, তৌহিদ আস্তে করে কানে কানে বললো "এই কথা কাউকে কিছু বলিস না, কারণ এখন তোর আশেপাশের সবাইকে শত্রু মনে করতে হবে! "

মনিরুল ভাইদের বাড়ি থেকে রাতের খাবার রান্না করে পাঠানো হয়েছে, তৌহিদ ও পারভেজ সেই খাবার খেয়েছে। আমাকেও তৌহিদ নিজের হাতে ভাত মেখে দু লোকমা খাইয়ে দিল, সমস্ত ঘরের মধ্যে মা-বাবার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। রাতের বেলা আমি তৌহিদ ও পারভেজ একসঙ্গে ঘুমালাম। মনির ভাই থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমরা নিষেধ করেছি। রাত দশটার দিকে আমার কলেজের শিক্ষক এসেছিলেন দেখা করতে, অনেক কিছু উপদেশ দিয়ে ২৫/৩০ মিনিট পরে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। 

কারা হতে পারে সেই খুনের আসামি? আমাকে মারার জন্য কেন তাদের পরিকল্পনা? বাবা কেন আমাকে এসব থেকে আলাদা হতে বললো?

- পারভেজ বললো, লিমন তুই ঘুমানোর চেষ্টা কর বন্ধু, আমি আর তৌহিদ জেগে আছি। যদি সত্যিই কেউ তোদের শত্রু থাকে তাহলে অবশ্যই হামলা করতে পারে। 

- আমি বললাম, কিন্তু কেন করবে এমন? আমার তো কোন শত্রু নেই আর তাছাড়া আমরা কারো ক্ষতি করিনি কোনদিন। 

- তৌহিদ বললো, দোস্ত আজকাল ভালো মানুষ দের ধ্বংস করার জন্য পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে। নিশ্চয়ই এখানে অনেক বড় কিছু ঘটনা আছে তাই সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। 

- কিন্তু বাবা তো আমাকে গ্রামে আসতে নিষেধ করেছে, তাহলে কি বাবার শেষ অনুরোধ রাখতে পারবো না? 

- তুই নিজে গ্রাম ত্যাগ করবি কিন্তু গোয়েন্দা বা সিআইডি মোতায়েন করতে হবে। তারা অবশ্যই এই রহস্যের উন্মোচন করতে সক্ষম হবে, তখন সবকিছু পরিষ্কার হবে। 

এরপরই আমরা চুপচাপ শুয়ে রইলাম, বাহিরে ও ঘরের মধ্যে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে৷ মা-বাবার কত স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছে, চোখ বেয়ে অজান্তেই অগোচরে পানি বের হয়ে আসছে। এভাবেই কখন চোখ বন্ধ করেছিলাম জানি না কিন্তু হঠাৎ করে তৌহিদের মুখে আগুন আগুন চিৎকার শুনে খুব ভয় পেয়ে বিছানায় বসলাম। 

পারভেজ বললো " দোস্ত তাড়াতাড়ি বের হতে হবে নাহলে সবাই আগুনে পুড়ে মারা যাবো। "

কিন্তু আমরা যখন দরজা খুলে বের হতে যাবো তখন দেখি দরজা বাহির থেকে বন্ধ করা। তিনটা দরজা দিয়ে বাহির হওয়া যায় কিন্তু সবগুলোই বাহির থেকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গতকাল যেই পিছনের দরজা ভেঙ্গে মনির ভাই প্রবেশ করেছিল সেটা আজকে একদম ভালো করে পেরেক ঠুকে বন্ধ করে দিয়েছি। কিছু বাকি দুটি দরজা কারা বন্ধ করলো? আমাকে যারা খুন করতে চায় তারা কি এসব করছে? 

পশ্চিমে একটা নড়বড়ে জানালা ছিল সেটাই এক ধাক্কা দিয়ে ভেঙ্গে দিল পারভেজ। তারপর আমি পারভেজ ও তৌহিদ বেরিয়ে গেলাম, আগুন সেই সময় প্রায় সমস্ত টিনের চালে ছড়িয়ে গেছে। ইটের দেয়াল হলেও কাঠ আর টিনের চালের ছাউনি দিয়ে ঘেরা ঘরটা চোখের সামনে পুড়ছে। তৌহিদ ও পারভেজ দুজনেই সামনের দরজা বাহির থেকে খুলে পারভেজের বাইক বের করলো। আরও কিছু জিনিসপত্র বের করতে চেয়েছিল কিন্তু পরিস্থিতি খুবই অস্বাভাবিক। 

আবারও সেই চিৎকার চেচামেচি শুনে গভীর রাতে অনেকেই ছুটে এসেছে, পানি ঢেলে আগুন নিভে যাবে তাই পানি নিয়ে ব্যস্ত অনেকে। আমি শুধু ঘরের সামনের আমগাছের গোড়ায় ঘাপটি মেরে বসে রইলাম। 

সকাল বেলা পুলিশ এসেছে আবার, চেয়ারম্যান সাহেব নিজেও উপস্থিত হয়েছেন কিন্তু মা-বাবার স্মৃতিবিজড়িত ঘরটা দাঁড়িয়ে আছে পোড়া এক বিভৎস রূপ ধরে। 

- দারোগা বললেন, আপনারা তখন কোথায় ছিলেন? আগুনের ঘটনা প্রথম কে দেখে? 

- তৌহিদ বললো, জ্বি স্যার আমি প্রথমে দেখতে পেয়েছি। আমার কান খুব পাতলা, ঘুমের মধ্যে পাতা নড়ার শব্দটাও কানে আসে। আমি যখন শুনি যে টিন পুড়ছে আর আর স্ক্রু একটা করে পটপট করে ছুটছে তখন চিৎকার করছি। 

- আপনারা বাহিরে বের হবার পর কেউ কি তখন এখানে ছিল বা আক্রমণ করতে চেয়েছিল? 

- না স্যার তেমন কিছু নয়, আমরা তো এখানে সম্পুর্ণ ফাঁকা দেখেছি। 

- আচ্ছা লিমন সাহেব, আপনার মা-বাবার সঙ্গে কারো শত্রুতা ছিল? যেহেতু এখন একটা আক্রমণ হয়েছে তাই আমরা কিছু শত্রুদের সন্দেহ করি। 

- তেমন কোন শত্রু নেই যারা খুন করবে, আমরা সবসময় ঝামেলা এড়িয়ে চলতাম। 

- জমিজমা নিয়ে কারো সঙ্গে কোন বিবাদ ছিল? নিজেদের মধ্যে বংশগত ব্যাপারে? 

- জলিল চাচার সঙ্গে পূর্বপাড়ায় একটা রাস্তার পাশের জমি নিয়ে মামলা চলে। তবে বাবা সপ্তাহ খানিক আগে বলেছিল যে জলিল চাচা নাকি আমাদের জমি ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়েছে। 

- এমন তো হতে পারে সেই জলিল পরিকল্পনা করে ইচ্ছে করেই জমি ছেড়েছে কারণ মনে মনে একদম খুন করার ষড়যন্ত্র ছিল। 

- আমি সেটা জানি না। 

- আপনার কি ধারণা? আপনার মা-বাবা দুজনেই আত্মহত্যা করেছে নাকি খুন করা হয়েছে? 

- তৌহিদ বললো, স্যার খুন করা হয়েছে। 

- আপনি নিশ্চিত? 

- হ্যাঁ স্যার, লিমনের বাবা ওকে কল করার আগে একটা মেসেজ দিয়েছিল। কিন্তু সেই মেসেজ চেক করা হয় নাই বলে জানতাম না, তাকে কেউ খুব ভয় দেখিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। 

- ও মাই গড, বলেন কি? 

দারোগা সাহেব মেসেজটি জোরে জোরে পড়লেন, চেয়ারম্যান সাহেব গভীর চিন্তার মধ্যে হারিয়ে গেল সেটা বোঝা যাচ্ছে। জলিল মিয়াকে ভালো করে জিজ্ঞেস করতে হবে বলে দারোগা সাহেব বাজারে চলে গেলেন। 

দুপুর পর্যন্ত অনেকেই আমাদের বাড়িতে ছিলেন, দুপুরে খাবার খেলাম প্রতিবেশী মনোয়ার কাকার বাড়িতে। কাকিমা রান্না করে ডেকেছিল কিন্তু আমি যাইনি বলে পাঠিয়ে দিয়েছে। 

বিকেলের দিকে পারভেজ খুলনা চলে গেল, তবে আমাকে নিয়ে যাবার খুব চেষ্টা করেছে। 

- পারভেজ বললো, তুই এখানে থাকলে কিন্তু অনেক বিপদে পরবি লিমন। তারচেয়ে খুলনা বরং শহরে চল তাড়াতাড়ি, তাহলে সেখানে মোটামুটি নিরাপত্তা আছে। কিন্তু যেখানে আঙ্কেল নিজেই তোকে আসতে নিষেধ করেছে সেখানে তুই কি করবি দোস্ত? নিজের জীবনের বিপদ ডেকে এনে ভুল করিস না বন্ধু, চল আমার সঙ্গে। 

- আমি বললাম, আমি রহস্যের শেষ দেখে যেতে চাই পারভেজ, কারা আমার মা-বাবার সর্বনাশ করেছে? আমি সেই গোপনীয় সবকিছু পরিষ্কার করতে চাই নাহলে শান্তি নেই। 

- তুই বরং সাজু ভাইয়ের সাহায্য নিতে পারিস, তোর মনে আছে সাজু ভাইয়ের কথা? 

- হ্যাঁ মনে আছে, কিন্তু তিনি কি আসবেন আমার মা-বাবার খুনের রহস্য বের করতে? আমাকে কে বা কারা খুন করতে চায়, সেই রহস্যের উন্মোচন কি সাজু ভাই করতে পারবে? 

- আমার বিশ্বাস তিনি পারবেন, কারণ সাজু ভাই হচ্ছে ঠান্ডা মাথার এক রোমান্টিক মানুষ। সকলের সঙ্গে কত সুন্দর মিল তাই না? সেবার যখন তিনি খুলনা এসেছিলেন তোদের মেসের মধ্যে তখন তো আমরা সবাই গেছিলাম দেখা করতে। 

- তৌহিদ বললো, সাজু ভাই, সজীব ভাই, শফিক ভাই ও রকি ভাই এরা সবাই যেই রুমে থাকতো এখন আমরা সেই রুমে থাকি। 

- বললাম, ঠিক আছে পারভেজ তুই বরং এখন সন্ধ্যা হবার আগেই চলে যা। আমি আর তৌহিদ আগামীকাল সকালে খুলনা আসবো, তারপর সাজু ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবকিছু তাকে জানাবো। 

- তাহলে রাতে থাকতে হবে কেন? 

- মনির ভাই বললেন যে আজকে নাকি রাতের বেলা তিনি কিছু জরুরি কাগজপত্র দেখাবেন। সবকিছু আমাদের জমিজমার বিষয়ে আর সেই সঙ্গে কিছু গোপনীয় কথা জানাতে চায়। 

- তাহলে এখন দিনের বেলা সমস্যা কি? আমরা যে কতটা বিপদের মধ্যে তা কি সে জানে না? 

- তাদের বাড়িতে সমস্যা হবে না পারভেজ, আর শুধু শুধু চিন্তা করিস না তো। 

- ঠিক আছে সাবধানে থাকিস আর আগামীকাল সকালে উঠে রওনা দিস লিমন। 

- আচ্ছা ঠিক আছে।

সন্ধ্যার খানিকটা আগে বাজারের মধ্যে গেলাম আমি আর তৌহিদ। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একদম কর্নারের হোটেলের মালিক শাহজাহান কাকা আমাকে ডাকলেন। আমি তার কাছে যেতেই তিনি আমাকে নিয়ে হোটেলের পিছনে গেলেন, তার সঙ্গে সঙ্গে আমিও গেলাম। 

- কাকা বললেন, তোমার মা-বাবার ঘটনার জন্য সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে তাই সান্ত্বনা দেবার ভাষা জানা নেই। কিন্তু তোমাকে কিছু গোপনীয় কথা জানাতে চাই, মনোযোগ দিয়ে শুনবা তবে আমার কথা কাউকে বলবা না। 

- কি কথা শাহজাহান কাকা? 

- তোমার জলিল চাচার সঙ্গে ওপাড়ে যে জমি নিয়ে মামলা ছিল সেটা কেন শেষ হয়েছে জানো? 

- না তো। 

- তোমার বাবা জলিল মিয়াকে ওই জমির জন্য টাকা দিয়েছে নতুন করে। 

- কিন্তু ওটা তো আমাদের জমি তাহলে কেন বাবা আবার টাকা দেবে? 

- কারণ জমিটা নাকি তোমার খুব পছন্দের, তুমি নাকি সেখানে একটা পার্কের মতো মনোরম স্থান বানিয়ে বাগান করতে চাও? 

- হ্যাঁ কিন্তু...

- তোমার বাবা আমাকে বলেছিলেন যে তোমার নাকি খুব ইচ্ছে ওখানে বাগান করবে। তাই তিনি অনেক চেষ্টা করেও জমিটা রক্ষা করতে চেয়েছে কিন্তু নিজেই... 

- জমির বিনিময়ে যদি জলিল চাচা টাকা নিয়ে থাকে তাহলে আবার ঝামেলা কিসের? 

- সেখানেই ঝামেলা লিমন, আমি তো হোটেলের মানুষ তাই অনেককিছু জানি কারণ বাংলাদেশের মধ্যে হোটেলে বা চায়ের দোকানে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়। দলীয় বা বিরোধীদলীয় সকল পক্ষের কথা জানা যায়, সকালে এক গ্রুপ আবার বিকেলে অন্য গ্রুপ। 

- আপনি কি তেমন কিছু জানেন? 

- না বাবা, তবে আমারও পরিবার আছে তাই বেশি কিছু বলে বিপদ বাড়াতে চাই না। যতটুকু বললাম ততটুকু দিয়ে খুঁড়তে আরম্ভ করো, কেঁচো খুঁড়তে আরম্ভ করো সাপ এমনিতেই বের হবে। 

এতটুকু লিখে একটু দম নিল লিমন, তারপর আবারও লিখতে আরম্ভ করলো। 

বাজার থেকে আমি তৌহিদ আর মনিরুল ভাই ফিরে আসলাম। জলিল চাচার কথা কাউকে কিছু বলিনি এখনো, সাজু ভাই আমি শুধু আপনার কাছে এগুলো জানিয়ে দিচ্ছি। বাড়িতে ফিরে এসে বারবার মনে হচ্ছে যে বিকেলে পারভেজের সঙ্গে চলে গেলে ভালো হতো। কারণ রাত যতই গভীর হচ্ছে ততই ভয় লাগছে, সবাই খাবার খেয়ে এখন ঘুমিয়ে আছে। রাত এগারোটা পেরিয়ে গেছে আর গ্রামের বাড়িতে রাত এগারোটা মানে হচ্ছে অনেক রাত্রি। 

আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আজকে রাতের মধ্যে আমারও কিছু একটা হয়ে যাবে। তেমন কোন কারণ নেই তবে বারবার সেটাই মনে হচ্ছে, হয়তো মনের ভয় কিন্তু মনে হচ্ছে সেটা সত্যি। তাছাড়া ক্ষুদ্র একটা কারণ আছে, একটু আগে হঠাৎ করে জানালার পর্দার আড়ালে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। আমি আস্তে আস্তে জানালার কাছে গেলাম আর তখন কারো পায়ের শব্দ দ্রুত সরে যেতে শুনতে পেলাম। 

তৌহিদকে সেই কথা বললা কিন্তু সে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ঘুমিয়ে আছে, গতকাল আর পরশু রাতে বেচারা ভালো ঘুমাতে পারে নাই। তাই এখন মনে হয় তাকে ঘুমে গ্রাস করেছে, আমি অবশ্য চাইলে ঘুমাতে পারি না। তাছাড়া জানালার ঘটনাটা খুব ভাবাচ্ছে আমাকে, তাই যতক্ষণ সম্ভব জাগ্রত হয়ে থাকতে চাই। 

পরশু রাত তিনটায় বাবার সেই কল করার পর থেকে যা যা ঘটেছে সবকিছু সাজিয়ে লিখে দিলাম সাজু ভাই। সত্যি বলছি আমার খুব ভয় করছে, যদি রাতের মধ্যে বা যেকোনো সময় আমি খুন হয়ে যাই তাহলে সেই খুন আর মা-বাবার খুনের রহস্য বের করার দায়িত্ব আপনার। আপনার এক ছোটভাই হয়ে সেই দায়িত্ব আপনাকে দিলাম, আশা করি আপনি আসবেন। 

আমার বন্ধু পারভেজ তৌহিদ ও আমার নিজের নাম্বার দিয়ে রাখলাম। যদি তৌহিদ ও আমার নাম্বারে না পান তাহলে পারভেজের নাম্বারে কল দেবার অনুরোধ রইল। 

ইতি, 
মোঃ লিমন। 
পিরোজপুর। 

★★

গতকাল রাতে সাজু ভাইয়ের শরীর অসুস্থ ছিল তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছিল। আর সকাল বেলা অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে, তারপর ফ্রেশ হয়ে মোবাইলের মেসেঞ্জারে আসতে প্রায় দুপুর বারোটা। অনেক পাঠক পাঠিকার মেসেজ এসে জমা হয়েছে, কেউ কেউ এখনো এ্যাক্টিভ আবার অনেকে আনএ্যাক্টিভ। সবগুলোর একটু সংক্ষিপ্ত রিপ্লাই করতে করতে হঠাৎ করে গতকাল রাত বারোটার মেসেজ চোখে পরলো। 

"Md Limon" আইডি দিয়ে এতবড় একটা মেসেজ এসেছে, সম্পুর্ন ঘটনা এখানে বর্ননা করা। সেই রাত তিনটায় কল দিয়ে কথা বলা শুরু থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ননা। 

খুব মনোযোগ সহকারে সম্পুর্ণ ঘটনা পড়লো সাজু ভাই, তারপর বেশ কিছু সময় চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবতে লাগলো। তৌহিদ ও লিমন দুজনের নাম্বার সত্যি সত্যি বন্ধ দেখাচ্ছে, তাই পারভেজের নাম্বারে কল দিল সাজু ভাই। বেলা তখন দুপুর ১২ঃ৩৪ 

- রিসিভ করে পারভেজ বললো, আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন? 

- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, সাজু ভাই বলছি, তুমি কি লিমনের বন্ধু পারভেজ? 

- জ্বি ভাই, কেমন আছেন ভাইজান? আপনার কথা গতকাল রাতেও লিমনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু আপনি নিজেই আজকে আমাকে কল দিলেন, ভাইজান আমার বন্ধুর খুব বিপদ একটু সাহায্য করবেন? 

- সাজু ভাই বললেন, তোমার বন্ধু লিমন গতকাল রাতে আমাকে সম্পুর্ণ ঘটনা টেক্সট করেছে। কিন্তু আমি একটু অসুস্থ তাই রাতে রিপ্লাই করতে পারি নাই আর সকালেও অনলাইনে ছিলাম না। তোমার বন্ধু লিমন কেমন আছে? 

- ভাই একটুও ভালো না। 

- কেন? আজকে সকালে তো তৌহিদ আর লিমন শহরে যাবার কথা, যায় নাই? 

- না ভাই, গতকাল রাতেই ওদের দুজনকে কারা যেন গায়েব করে দিয়েছে। সরাসরি খুন করেনি কিন্তু ধরে নিয়ে গেছে, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা আছে। কিন্তু সেই বাড়িটা মাটি দিয়ে উঁচু করে তার উপর কাঠ দিয়ে নির্মান করা তাই কাঠের নিচ থেকে মাটি খুঁড়ে রুমে ঢুকেছে। মাটি খোঁড়ার চিন্হ এখনো পরে আছে, কিন্তু ওদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

- তাহলে কি সেই মনিরুল লোকটার মধ্যে কোন গন্ডগোল আছে? 

- না সাজু ভাই, কারণ সকাল বেলা পুকুরের মধ্যে পানিতে ভাসমান অবস্থায় মনিরুল ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। মনিরুল ভাইকে খুন করে ওদেরকে কিডন্যাপ করেছে, এলাকা ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে। 

- তাহলে কি...? 

- আরেকটা কথা সাজু ভাই। 

- কি? 

- লিমনের মা-বাবা দুজনের কবরের মাঝখানে একটা কাগজ পাওয়া গেছে। সেই কাগজে লেখা আছে " সরি আব্বাজান "। 

.

চলবে...? 
.

কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন, আর আপনারা উৎসাহ দিবেন তাহলে লেখার আগ্রহ শতগুণ বেড়ে যাবে। গতকাল প্রথম পর্ব পোস্ট করার পর বিভিন্ন ব্যক্তিরা গল্পটা কপি করে তাদের নিজের নামে পোস্ট করছে। আপনাদের কাছে অনুরোধ রইল, আমার নাম ছাড়া যদি কোথায় গল্পটা দেখতে পান তাহলে সেখানে প্রতিবাদ করবেন। তাহলে হয়ত লজ্জিত হতেও পারে। 

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#6
ভাই আপডেট কি আর দেবেন না
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
Like Reply
#7
(18-06-2023, 02:47 PM)Naim_Z Wrote: ভাই আপডেট কি আর দেবেন না

হুম দিবো।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#8
পর্বঃ- ০৩


কেউ ভাবছে লিমন আর তৌহিদ খুন করে এখান থেকে পালিয়ে গেছে। আবার কেউ বলছে তাহলে ওভাবে দরজা না খুলে মাটি খুঁড়ে বের হবাে তো উপযুক্ত কারণ পাচ্ছি না। কিন্তু সকল মানুষের কথা কানে না নিয়ে সশরীরে গিয়ে সাজু দেখতে চাচ্ছে। কবিতার কাছে কল দিয়ে বললো " জরুরি কাজে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি, পৌঁছে তারপর কথা হবে তোমার সঙ্গে। "

সাজুদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট, যেহেতু তাদের পাশের জেলা হচ্ছে পিরোজপুর তাই সরাসরি সে আগে বাড়িতে যাবে। তারপর সেখান থেকে নিজস্ব বাইক নিয়ে পিরোজপুর যাওয়া যাবে। গুলিস্তান থেকে "দোলা পরিবহন" এর লঞ্চ পারাপারের গাড়ির টিকিট সংগ্রহ করলো। অনেকদিন পর সে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে, দাদা-দাদীর সঙ্গে কতদিন তার দেখা হয় না। 

যেহেতু লঞ্চ পারাপারের গাড়ি তাই ফেরির মধ্যে অপেক্ষা করার ঝামেলা নেই। কবে যে স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে? 

|

গ্রামের মধ্যে এখন এক অস্থিরতা তৈরি হয়ে গেছে যেটা কল্পনার মধ্যে ছিল না। পুলিশ সারাক্ষণ শুধু আনাগোনা করছে, প্রায় সবাইকে কিছু না কিছু জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। মনিরুলের পরিবারের কান্না আর আহাজারিতে সবচেয়ে বেশি আকাশ ভারি হয়ে যাচ্ছে। পুকুরের পাড়ে এমন কিছু নেই যেটা খুনির কাছে পৌঁছাতে পারে। দারোগা সাহেব যখন সাজুর কথা শুনলেন তখন একটু ভ্রু কুঁচকে যেন কিছু ভাবলেন। 

সাজু যখন লিমনদের গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়িতে ফিরে কোনরকমে ফ্রেশ হয়ে বাইক নিয়ে চলে এসেছে। সাজু স্থানীয় বাজারে এসে পারভেজকে কল দিল, পারভেজ তখন বাজারেই ছিল। বাজারের একপার্শ্বে বিশাল জটলা, সেখানে সবাই ঘিরে আছে এবং পুলিশ ও দেখা যাচ্ছে। 

সাজু সেখানে এগিয়ে গিয়ে পারভেজের সঙ্গে সরাসরি হাত মিলিয়ে নিল। তারপর যখন জানতে পারলো যে তৌহিদ ফিরে এসেছে তখন অবাক হয়ে নিজেই সেদিকে এগিয়ে গেল। 

প্রায় ঘন্টা খানিক পরে পুলিশ তৌহিদকে নিয়ে থানায় রওনা দিল। তার আগে সাজু ভাই একবার মনিরুল আর লিমনদের ঘর দেখে এসেছেন। সব মোটামুটি ঠিক আছে কিন্তু মনিরুলদের বাড়িতে যে ঘরে লিমন আর তৌহিদ ছিল সেখানে মাটি খুঁড়ে বের হবার স্থান দেখে প্রশ্ন জাগলো। তখন সে বুঝতে পারছে যে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর তৌহিদের কাছে পাওয়া যাবে। 

পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে সাজুও গিয়েছে থানার, কারণ পুলিশ বলছে, যা কিছু জিজ্ঞেস করার সব থানায় গিয়ে করবে। 

- সাজু ভাই তৌহিদকে বললো, লিমন এখন কোন যায়গা আছে? আর সেদিন রাতে তোমরা কীভাবে কি করেছো? 

- তৌহিদ আস্তে আস্তে বললো, সাজু ভাই আমি এখন জানি না লিমন কোথায়। কারণ আমাকে ওরা পিরোজপুরের সি অফিস মোড়ে এসে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। তারপর সেখান থেকে আমি একাই এসেছি এখানে, লিমনের মধ্যে পশু ভর করেছে। ও কাউকে ছাড়বে না। 

- মনিরকে কে খুন করেছে? 

- লিমন। 

- তুমি তখন কোথায় ছিলে? 

- আমাকে আরও দুটো লোক ধরে রেখেছিল। 

- মানে কি? সেখানে আবার আরও দুটো লোক কীভাবে এসেছে? 

- আমি জানি না। 

- তুমি আর লিমন যে ঘরে ছিলে সেই ঘরের মধ্যে মাটি সিধ কেটেছে কে? আমি সেখানে গিয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে ভিতর থেকে মাটি খুঁড়ে বের হয়েছ তোমরা। 

- হ্যাঁ সাজু ভাই, লিমন নিজে মাটি খুঁড়ে বের হবার ব্যবস্থা করেছে। আমার এমনিতেই কান পাতলা তাই যখন ধুপধাপ শব্দ হলো তখন তাকিয়ে দেখি লিমন মাটি কাটছে। কিন্তু ভাই আপনি কীভাবে বুঝতে পেরেছেন? 

- খুবই স্বাভাবিক, মাটি কেটে কেটে ভিতরের দিকে কাটা মাটি জমানো হয়েছে। যদি বাহির হতে কেউ আসতো তাহলে তো বাহিরে মাটির স্তুপ জমা থাকতো। 

- হ্যাঁ ঠিক তাই, আমি বিছানা থেকে নেমে তখন বললাম " কিরে লিমন কি হয়েছে? " লিমন তখন আমাকে চুপ করতে বললো, তারপর জানলা দিয়ে বাহিরে তাকাতে বলছে। আমি তাকিয়ে দেখি যে সম্মুখে পুকুর পাড়ে কারা যেন দাঁড়িয়ে আছে। 

- কীভাবে দেখলে? 

- তাদের একজনের হাতে সিগারেট ছিল আর সেই সিগারেটের আগুন ওঠানামা করছে। তবে সামান্য আস্তে আস্তে কথাও কানে বাজছিল। 

- তারপর? 

- আমরা সেখান থেকে গর্ত দিয়ে আস্তে করে বের হলাম। 

- দরজা খুলে বের হলে না কেন? 

- কারণ দরজা বাহির থেকে বন্ধ ছিল। 

- তাহলে কি মনির...? 

- হ্যাঁ। লিমন সেজন্যই বাহিরে গিয়েছে এবং আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম কারণ দুটো লোক লিমনের পরিচিত। তারা তখন মনিরকে হাত পা আর মুখ বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে, লিমন সেখানে গিয়েই ওদের একজনের হাত থেকে একটা বড় ছুরি নিয়ে মনিরুল ভাইয়ের গলা কেটে দিল। 

- কি বলছো তুমি? এতটা সহজ? আর লিমনের সঙ্গে তাদের কিসের সম্পর্ক? 

- আমি জানি না, আমি এতটা হতভম্ব হয়ে গেছি যে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে মাথা ঘুরে পরলাম। আর তারপর যখন হুঁশ হয়েছে তখন আমি একটা টিন দিয়ে ছাউনি করা ঘরের মধ্যে বন্দী। 

- লিমন সেখানে ছিল না? 

- না, তবে আরেকটা লোক এসেছিল কিছুক্ষণ পরে আর তিনি বলেছেন যে আমাকে নাকি তারা পাঠিয়ে দেবে। তবে শহরের মধ্যে ছেড়ে দেবে কারণ গ্রামের মধ্যে নিয়ে গেলে প্রচুর ঝামেলা হতে পারে। 

- লিমনের কথা জিজ্ঞেস করোনি? 

- হ্যাঁ, তারা বললো, আমি লিমনের বন্ধু তাই তারা আমাকে বাঁচতে দিচ্ছে নাহলে আমাকেও শেষ করে দিত। আমি যেন পিরোজপুর থেকে সরাসরি খুলনা শহরে চলে যাই আর কাউকে কিছু না বলি। যদি কিছু বলি তাহলে আমারও প্রচুর বিপদের মুখে পরতে হবে। লিমন নাকি তার মা-বাবার খুনী কে সেটা জানতে পেরেছে তাই এক এক করে সবাইকে হত্যা করতে চায় ও। আর যেহেতু তার বাবা তাকে এসব খুনোখুনি করতে নিষেধ করেছে তাই "সরি আব্বাজান" ব্যবহার করবে। 

- কিছুটা বুঝতে পারছি, কিন্তু এখনো অনেক কিছু জানার বাকি। তবে লিমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা আমার খুব দরকার, যিনি আমাকে এখানে আসার জন্য অনুরোধ করছে সে নিজেই এখন...?

- আমি এসব বলতে চাই নাই কিন্তু গ্রামের সবাই আর পুলিশ আমাকেও সন্দেহ করছে তাই এখন বাধ্য হয়ে বলছি। 

- ঠিক আছে তুমি আপাতত পুলিশ হেফাজতে থাকো তারপর দেখি কি করা যায়। 

- আচ্ছা ঠিক আছে সাজু ভাই, কিন্তু লিমন যে এভাবে পরিবর্তন হবে কখনো ভাবিনি। মাত্র কিছু সময়ের মধ্যে কীভাবে কি হয়ে গেল? আর তার সঙ্গে লোক দুটো যুক্ত আছে, কি ভয়ঙ্কর। 

★★

থানা থেকে বের হয়ে সাজু নিজের এলাকায় চলে এসেছে, রাতের মধ্যে সেই গ্রামে থাকার কোন মানে হয় না, আর পারভেজ তো থানায় আসার আগেই বিদায় নিয়ে চলে গেছে। রাত দশটার দিকে বাড়িতে ফিরে ডিনার করে নিজের বিছানায় শুয়ে সজীব এর কাছে কল দিল। আসার পথে সজীব কল দিছিল কিন্তু তখন কথা বলতে পারে নাই। 

- হ্যাঁ সজীব, কি খবর? 

- বেশি ভালো না সাজু। 

- কেন? 

- রুহির মা অসুস্থ, তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রুহি এখন সেই হাসপাতালে আছে, আমি তো চট্টগ্রামে আছি আর তুইও আজকে নাকি বাড়িতে গেলি। 

- হ্যাঁ পিরোজপুরে একটা মামলার মধ্যে জড়িয়ে যাবার সম্ভবনা আছে, তবে আগের চেয়ে এটা বেশ জটিল মনে হচ্ছে। 

- কিরকম? 

- ছেলেটা খুলনায় আমরা যেই মেসে ছিলাম সেই মেসেই থাকে, ওর মা-বাবা দুজনেই যেকোনো অদৃশ্য কারণে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সেগুলোর পিছনে একটা চক্র কাজ করছে, তাদের সন্দেহ করে এখন ওই ছেলে খুন করা শুরু করেছে। 

- বেশ জটিল সমস্যা। 

- হ্যাঁ, আর একা একা ভালো লাগে না, রকি বা তুই যেকোনো একজন সঙ্গী হলে ভালো হতো। 

- তাহলে ছুটি নিয়ে আসবো নাকি? 

- যদি পারিস তবে বেশ ভালো হবে। 

- ঠিক আছে কালকে অফিসে গিয়ে দেখি। 

- মেলা মেলা ধন্যবাদ বন্ধু। 

- আচ্ছা তুই একটু সময় করে রুহির কাছে কল দিয়ে কথা বলিস, বেচারির বাবার তো তোর জন্য ফাঁসি হয়ে গেল। এখন তার মা অসুস্থ হয়ে গেছে তাই খুব কান্না করছে। 

- আচ্ছা ঠিক আছে। 

তিন-চারদিন ধরে শরীরে হালকা জ্বর, গতকাল রাতে তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছিল। আজকে ভ্রমণ করে আরও বেশি ক্লান্ত লাগছে, তাই বিছানায় শুয়ে একটু পরেই ঘুমিয়ে গেল সাজু ভাই। 

সকাল বেলা সাড়ে দশটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাও আবার দাদির ডাকাডাকিতে। দাদির কাছে জানতে পারলো যে, কে যেন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। 

বাহিরে এসে সাজু তাকে চিনতে পারছে না, তবে লোকটা বেশ বয়স্ক। বসে বসে তারা দাদার সঙ্গে গল্প করছে, সাজু মনে মনে ভাবলাে " দাদা আবার নতুন করে বিয়ে দেবে নাকি? "

- সাজু বললো, আসসালামু আলাইকুম। 

- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন আপনি? 

- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন? আর আপনি কিন্তু আমার দাদার বয়সী তাই নাতি হিসেবে তুমি করে বললে খুশি হবো। 

- ঠিক আছে তাই হবে, আর আমি লিমনের নানা তাই সম্পর্ক ঠিকই আছে। 

- কোন লিমন? 

- যার মা-বাবা দুজনই খুন হয়েছে, আর লিমন নিজে এখন কোথায় আছে কেউ জানে না। 

- আপনি তার নানা? 

- হ্যাঁ, তবে আপন নানা নয়, ওর মায়ের সম্পর্কে চাচা হই আমি। লিমনের নানা মারা গেছে অনেক আগেই, তারপর থেকে ওর মাকে আমিই মানুষ করেছিলাম। 

- বুঝতে পেরেছি কিন্তু... 

- আমি গতকালই লিমনের সেই মোটরসাইকেল ওয়ালা বন্ধুর কাছে শুনেছি যে সাজু নামের এক গোয়েন্দা আসবে। সারাদিন অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু যখন এলে তখন দেখা করতে পারলাম না। 

- কিন্তু কেন? 

- আজকে সকালে থানায় গিয়ে তোমার বিষয় জানতে পারি, তবে গতকালই লিমনের বন্ধুর কাছে শুনেছি তোমার বাসা বাগেরহাট আর এই উপজেলায়। আমি একসময় পিরোজপুর জেলা কলেজের শিক্ষক ছিলাম, আমার এক ছাত্র আছে তোমাদের এই গ্রামের মধ্যে। আজকে সকালে যখন তাকে তোমার নাম করে জিজ্ঞেস করেছি তখন সে তোমার ঠিকানা দিয়েছে। 

- আমাকে এতটা জরুরি ভিত্তিতে খুঁজে বের করার কারণ কি? 

- লিমনের মা-বাবার বিপদের আশঙ্কা আমি আগে করেছিলাম, আর তারাও জানতো। 

- মানে? 

- লিমনের বাবার কাছে একটা স্বর্নের পুতুল আছে খাঁটি স্বর্নের পুতুল। 

- বলেন কি? কীভাবে কি? 

এমন সময় সাজুর মোবাইল বেজে উঠল, নাম্বার দেখেই চিনতে পারলো সাজু। গতকাল রাতে থানা থেকে বের হবার সময় সাজু ভাই থানার দারোগা সাহেবের নাম্বার নিয়ে এসেছেন এবং তার নিজের নাম্বারও দিয়ে এসেছে। 

- হ্যালো... স্যার? 

- সাজু সাহেব আপনি কোথায়? 

- আমি তো বাড়িতে, আপনি? 

- আমি এখন সেই লিমনদের গ্রামের মধ্যে তাদের স্থানীয় বাজারে আছি। লিমন তো আজকে রাতে এই বাজারের হোটেল মালিক শাহজাহান নামের লোকটাকে খুন করেছে। 

- কি...? আর কীভাবে নিশ্চিত হলেন খুনটা যে লিমন করেছে? 

- লাশের পাশে চিরকুট ছিল "সরি আব্বাজান" আর আপনাকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা লেখা। 

- আমাকে উদ্দেশ্য করে? 

- হ্যাঁ সাজু সাহেব। 

- কি লেখা আছে সেখানে? 

- লেখা আছে, " সাজু ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ, আপনাকে যখন আমি ডেকেছি তখনও আমি রহস্য জানতাম না। কিন্তু এখন আমার চোখের সামনে সবকিছু পরিষ্কার, তাই আপনার কোন সাহায্যের দরকার নেই। আমার মা-বাবার হত্যার বিচার আমি নিজেই করবো, খুব ভালো হয় যদি আপনি আর আমাদের গ্রামে না আসেন। কারণ আপনি থাকলে আমার ঝামেলা হবে, তাই আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি। আমার পথের মধ্যে যদি কোন বাঁধা হয়ে দাঁড়ান তাহলে কিন্তু আপনাকেও বিপদে পরতে হবে। তৌহিদকে মেরে ফেলা উচিত ছিল, শালাকে বন্ধু ভেবে ছেড়ে দিছি আর সে সবকিছু বলে দিয়েছে। ভেবেছিলাম যে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিশোধ নিতে পারবো কিন্তু ওর জন্য আর হলো না। তৌহিদকে সাবধানে থাকতে বলবেন কারণ ওকে নিষেধ করার পরও যখন সবকিছু বলে দিয়েছে তখন কিছুটা মূল্য দিতে হবে তাকে। এই শাহজাহান কাকা আমার বাবার সঙ্গে বেঈমানী করেছে, বাবার কাছ থেকে পুতুলের কথা জেনে সেটা আরেকজনকে বলে দিয়েছে তাই একে ঘুম পারিয়ে দিলাম। এখনো অনেক কিছু ঘটনার বাকি আছে তবে খেলাটা আমিই  চাই। " 

;

চলবে...? 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#9
পর্বঃ- ০৪

- সাজু বললো, দারোগা সাহেব আমার মনে হচ্ছে যে লিমন এগুলো করছে না। আপনি কি লিমনের বন্ধু তৌহিদকে ছেড়ে দিয়েছেন নাকি আপনার হেফাজতে আছে? 

- আমার কাছে আছে। 

- তাকে আটকে রাখুন, নিশ্চয়ই তৌহিদ কোনকিছু লুকাচ্ছে কারণ একটা অদৃশ্য মেঘ চোখের সামনে ঘুরছে। 

- দেখুন সেটা হয়তো সম্ভব না, উপরমহল থেকে সকাল বেলা কল এসেছে তাই তৌহিদকে ছেড়ে দিতে হবে। 

- মানে..? তৌহিদের উপরে লোক আছে? 

- হ্যাঁ, তার এক আঙ্কেলের সঙ্গে এমপি সাহেবের খুব ভালো সম্পর্ক আছে তাই এমপি সাহেবের সুপারিশে ছাড়তে হবে। 

- নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা আছে, নাহলে তো এমন ছোট্ট বিষয় নিয়ে এমপি সাহেবের মাথাব্যথা হবার কোন কারণ নেই। 

- আরেকটা কথা সাজু সাহেব। 

- জ্বি বলেন।  

- আপনাকে আর এই মামলার বিষয়ে এদিকে আসতে হবে না, আমরা সবাই লিমনকে ধরার চেষ্টা করছি। 

- কিন্তু কেন? 

- এখানে কোন রহস্য নেই, সকাল বেলা আমরা অর্ডার পেয়েছি যে লিমনকে যেকোনো মূল্যে ধরে ফেলতে হবে। কারণ নিজের মা-বাবার জন্য সে এখন হিংস্র মরিয়া হয়ে গেছে, সেজন্য তাকে এই মুহূর্তে থামানো দরকার। 

- আপনি কি লিমনের বাবার কাছে একটা পুতুল ছিল সেই বিষয় কিছু জানেন? 

- কিসের পুতুল? 

- স্বর্নের পুতুল। 

- না জানতাম না, কিন্তু লিমনের চিঠিতে পুতুলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনা কি? 

- আমিও সঠিক জানিনা তবে সত্যি সত্যি যদি লিমনের বাবার কাছে স্বর্নের পুতুল থাকে তাহলে সেটা তিনি কোথায় পেলেন সেটা আগে জানতে হবে আমাদের। তারপর সেই পুতুল এখন কোথায় আছে, আর তার সঙ্গে লিমনের নিজের জীবনের কোন বিপদ আছে নাকি সেটা বের করতে হবে। 

- কিন্তু আপনাকে তো এখন এসবের মধ্যে থেকে দুরে থাকতে বলা হয়েছে। 

- এটা অন্যায়, আমি আমার নিজের মতো কাজ করে যাবো সেখানে বেআইনীভাবে কেউ কিছু যদি বলে তবে মানবো কেন? 

- সেটা আপনার ইচ্ছে তবে আমাদের কাছ থেকে আপনি কোন তথ্য বা সাহায্য পাবেন না। 

- আপনাদের কাছ থেকে না পেতে পারি কিন্তু যদি আপনার কাছে চাই? 

- মানে? 

- মানে হচ্ছে সমগ্র পুলিশের সাহায্য দরকার নেই শুধু আপনার সহোযোগিতা কামনা করছি। আশা করি আপনি আমার অনুরোধ রাখবেন, কারণ আপনার মধ্যে আমি সততা দেখেছি। 

- হাহাহা, পুলিশের আবার সততা? 

- আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চাই এবং এই মামলার রহস্য বের করতে চাই। 

- আমি চেষ্টা করবো আপনাকে সাহায্য করতে, কিন্তু একটা পরামর্শ দেবো? 

- জ্বি বলেন। 

- এখানে অনেক বড় রাজনৈতিক নেতাদের দল জড়িত আছে, তারা কিন্তু যেকোনো সময় যেকোন কিছু করতে পারে। আপনি নিজের জীবন ঝুঁকিতে না ফেললে আপনার জন্য মঙ্গল হবে। 

- আমার কাজই এসব নিয়ে থাকা, নিজের জীবন নিয়ে মায়া করে বেঁচে থাকার চেয়ে স্বাধীনভাবে কোনকিছু লড়াই করে বাঁচার মধ্যে আনন্দ আছে। 

- বুঝতে পারছি সাজু সাহেব, আচ্ছা বাদ দেন তো এসব কথা। আপনার যখন যা দরকার সবকিছুই আমাকে বলবেন আমি আপনাকে সাহায্য করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবো।

- অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার। 

মোবাইলে কথা বলা শেষ করে সাজু ভাই আবার বুড়ো লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো, 

- লিমন তো আরেকটা খুন করেছে, বাজারের সেই শাহজাহান নামের লোকটাকে। 

- বলো কি? 

- দারোগা সাহেব তো সেটাই বলেন, কিন্তু লিমন এটা করে ভুল করছে। কারণ সে যেহেতু মা-বাবার খুনের জন্য দায়ী লোকদের চিনতে পেরেছে তখন তার উচিত ছিল আইনের আশ্রয় নেয়া। 

- আমিও বুঝতে পারছি না। 

- আপনি কি আমাকে সেই পুতুলের রহস্যের কি কি কারণ আছে সেটা বলবেন? 

- সেটা বলার জন্য আমি এসেছি। 

- একটু তাড়াতাড়ি বলবেন প্লিজ, আমি খুব অসুস্থ আমার বসতে কষ্ট হচ্ছে। 

- ঠিক আছে সংক্ষিপ্ত করে বলি। 
মাসখানেক হবে, লিমনের বাবা সুন্দরবন গেছিল খাঁটি মধুর জন্য। সেখানে যারা সচারাচর জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে খাঁটি মধু কেনার জন্য গেল। একটা লোকের সঙ্গে আমাদের পিরোজপুরে পরিচয় হয়েছে তার, তিনি এখানে মধু বিক্রি করতে এসেছিলেন। কিন্তু মধু বিক্রি যখন শেষ ঠিক সেই সময় তার সঙ্গে দেখা হয়েছে লিমনের বাবার। তারপর সেই লোকটা বলেন যে তার বাড়িতে গেলে বা কিছুদিন পরে সে আবার মধু নিয়ে আসবে। লিমনের বাবা তখন তার ফোন নাম্বার রেখে দিয়েছিল এবং নিজেই সশরীরে গিয়ে মধু আনবে সেটাও জানিয়ে দিল। তারপর যখন সেই লোকটার বাড়িতে গেল তখন সেই লোকটার বাচ্চা মেয়েটির হাতে একটা পুতুল দেখতে পায়। ফাজলামো করে সে ওই বাচ্চার হাত দিয়ে পুতুলটা নিয়েছিল, কিন্তু সেটা ধরার পরে হাতের অনুভবে কেমন খটকা লাগলো। 

লিমনের বাবা একসময় স্বর্নের কারিগর ছিল জানো তো তুমি? 

- না, জানতাম না। 

- প্রায় পনের বছর সে কারিগর ছিল তাই সেই স্বর্নের পুতুল ধরে কেমন যেন অনুভূত হচ্ছে। সে তখন ওই লোকটার কাছে জিজ্ঞেস করে পুতুলটা কোথায় পেয়েছে তারা? " লোকটা বলে যে, তিনি নাকি জঙ্গলের মধ্যে পেয়েছেন তারপর লুঙ্গির ভাজে নিয়ে এসে মেয়েকে দিয়েছেন। " তখন সেই লোকটাকে বলে লিমনের বাবা পুতুলটা নিজের সঙ্গে করে নিয়ে আসে। তারপর পিরোজপুর এসে নিজের পরিচিত পুরনো এক বন্ধুর কাছে গিয়ে সেটা পরীক্ষা করে। আর সেটাই ছিল তার চরম একটা ভুল। 

- চরম ভুল কেন? 

- কারণ সে যেহেতু কারিগর ছিল তাই চাইলেই নিজের ঘরে বসে পরীক্ষা করতে পারতো। কিন্তু যখন প্রমাণিত হয়েছে যে ওটক খাঁটি স্বর্ন তখন তার সেই স্বর্নকার বন্ধুর মনে শয়তানী আরম্ভ হয়ে গেল। 

- কিরকম? 

- এতবড় একটা স্বর্নের পুতুল দেখে যে কেউ তো লোভে পরতে পারে, স্বাভাবিক। 

- তারপর? 

- লিমনের বাবা তখন তার বন্ধুর কাছে সেই মধু বিক্রেতার কথা বলে দেয়। এটা ছিল দ্বিতীয় ভুল কিন্তু বিশ্বস্ত বন্ধু তাই বলতে দ্বিধা করে নাই। সেই বন্ধু তখন পরদিনই মধু বিক্রেতার কাছে চলে গেল কারণ যেখানে ওটা পাওয়া গেছে সেখানে গিয়ে আরও সন্ধান করার জন্য। 

- তারপর? 

- মধু বিক্রেতা তখন কৌতুহলী হয়ে গেল আর বারবার কাহিনি জানতে চাইল। তখন তিনি সেই পুতুলটা যে স্বর্নের পুতুল সেটা তাকে বলে দেয়। 

- হায় আল্লাহ... 

- তখন মধু বিক্রেতা চলে এলো লিমনদের গ্রামের বাড়িতে এবং খুঁজে বের করলো তাদের বাড়ি। কিন্তু লিমনের বাবা পুতুলের কথা অস্বীকার করেন এবং তাকে চলে যেতে বলে। তখন লোকটা গিয়ে সরাসরি চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে সবকিছু খুলে বলে। এবার আরেক লোভীর জিহবা চকচক করা শুরু করেছে, তিনি তখন লিমনের বাবাকে বাজারে ডেকে পাঠালেন। এবং এই খুন হওয়া শাহজাহান বেপারীর হোটেলে বসে সবকিছু তাকে জিজ্ঞেস করে। আস্তে আস্তে কথাটা ছড়িয়ে গেল দু একজন বড় বড় মানুষের কাছে। আর তারা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রাতের আধারে দেখা করতে আসতো। কেউ কেউ হুমকি দিতো আবার কেউ বা ছলেবলে কৌশলে কথা বের করতে চাইতেন।  

- এসব নিয়ে তিনি টেনশন করতেন? 

- হ্যাঁ, একদিন আমার কাছে গিয়ে বিস্তারিত সব খুলে বলে, আর পুতুলটা আমাকে দেখায়। তখন সে বলেছিল তার বিপদের কথা, তাকে যেকোনো মুহূর্তে কিছু করে ফেলতে পারে সেই কথা। 

- তাহলে তো লিমনের বাবাও লোভী মানুষ কারণ তিনি এটা একা একা হজম করতে চায়। 

- হ্যাঁ ঠিক, আমি তাকে সেটাই বোঝাতে চেষ্টা করছি কিন্তু সে আমাকে ভুল বুঝে চলে আসে। 
তারপর এর মাত্র তিনদিনের মাথায় এমন একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল। 

- সেই পুতুল কোথায়? কেউ জানে? 

- এখন পর্যন্ত না, লিমনের বাবা সেটা নিজে মনে হয় লুকিয়ে রেখেছে। 

- এই সমস্ত ঘটনা পুলিশের কাছে না বলে কেন আমাকে বলতে এসেছেন, জানতে পারি? 

- পুলিশের উপর বিশ্বাস নেই, আর তোমার বিষয় যখন জানলাম যে তুমি মোটামুটি বড়লোক বাবার সন্তান। তোমার বাবা লন্ডনে থাকে আর তাছাড়া তুমি গোয়েন্দা, তাই বলতে ইচ্ছে করছিল। হয়তো সেই খুনের রহস্য উন্মোচন করতে পারবে, তার তোমাকে সেই পুতুলের রহস্য নিয়ে এগোতে হবে। 

- সেটাই তো বুঝতে পারছি না। 

- আমি এখন আসি, বেলা প্রায় দুপুর পেরিয়ে গেল। 

- না না দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে যান। 

- না, আমি চলে যাবো কিন্তু অবশ্যই আবারও তোমার সঙ্গে দেখা হবে। 

- ঠিক আছে। 

★★

এখন থেকে সবসময় সবার আগে আমার এই ব্যক্তিগত পেইজেই গল্প পোস্ট করা হবে। তাই যারা যারা পড়তে ইচ্ছুক কিন্তু পেইজে এড নেই তারা এড হতে পারেন। 
পেইজ মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব 

★★

লিমনের যখন ফিরেছে তখন সে একটা বন্ধ রুমে বন্দী, সম্পুর্ণ নতুন স্থান। এমন ঘরের মধ্যে সে কীভাবে এসেছে সেটাই তো বুঝতে পারছে না। বিছানার পাশে একটা চেয়ারে লাল গেঞ্জি পরে একটা লোক বসে আছে। তাকে চোখ মেলে যখন নড়াচড়া করতে দেখলো তখন শরীর ঝাড়া দিয়ে বললো:-

- ডাক্তারের কথা তাহলে মিলে গেছে। 

- কে আপনি? আর আমি এখানে কেন? 

- আমি কে সেটা তোমার না জানলেও চলবে, তবে তুমি এখানে আছো কারণ তোমাকে এখন পুলিশের লোকজন হন্যে হয়ে খুঁজচ্ছে। 

- পুলিশ? আমাকে..? কিন্তু কেন? 

- মনির ও শাহজাহান নামের হোটেল মালিককে খুন করার অপরাধে তুমি এখন মোস্ট ওয়ান্টেড আসামী। 

- আমি কখন খুন করেছি? সেদিন রাতে আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম, তারপর তো কিছু মনে নেই। 

- হাহাহা, তোমাকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছিল কারণ তোমার স্থানে অন্য কেউ খুন করবে। আর সেই খুনের দায় পরবে তোমার উপর, তারপর হতে তুমি হবে নিরুপায়। এবং সেই নিরুপায় জীবন থেকে বাঁচতে হলে তোমাকে আমাদের বসের কথা মেনে চলতে হবে। 

- বসসস? বস কে? 

- সেটা তো বলা যাবে না, আমাকে যতটুকু বলতে বলা হয়েছে ততটুকু বললাম। তোমার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী লোকদের মধ্যে দুজন অলরেডি কবরে চলে গেছে। তোমার অবর্তমানে আমাদের বস নিজেই অন্য কাউকে দিয়ে কাজটা করেছেন। 

- তাতে আপনার বসের লাভ কি? 

- তোমার বাবার কাছে একটা স্বর্নের ছিল, তিনি সেটা কোথায় রেখে দিয়েছে সেটা জানতে হবে। 

- স্বর্নের পুতুল? 

- হ্যাঁ। 

এমন সময় একটা মেয়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো, তার হাতে ট্রে তে চায়ের কাপ নাস্তার ব্যবস্থা আছে। লোকটা তখন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো:- 

- আমি একটু বসের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে আসি, তুমি ততক্ষণে একে নাস্তা করতে দাও। আর ভয় নেই আমি দরজার বাইরে আছি, যদি সে পালাতে চায় তাহলে...

লোকটা বেরিয়ে গেল, মেয়েটা লিমনের দিকে তাকিয়ে বললো:- 

- আমার নাম নাসরিন জাহান, তোমার নাম কি? 

- কে আপনি? 

- হিহিহিহি, এটা আবার কারো নাম হয় নাকি? 

- একদম হাসবেন না, আপনি কে? আমাকে কেন এখানে আটক করা হয়েছে? 

- আমি জানি না, তবে আপনাকে দিয়ে খারাপ কাজ করানো হবে এতটুকু জানি। 

- আমার অপরাধ? 

- আপনার কোন অপরাধ নেই কিন্তু এরা যা করে সবকিছুই অপরাধ। 

এমন সময় লাল গেঞ্জি পরা লোকটা রুমে ঢুকে মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললো:- 

- বসের সঙ্গে কথা বলো। 

লিমন মোবাইল কানের কাছে নিয়ে অপরপ্রান্তের কণ্ঠ শুনে চমকে গেল। বিস্মিত হয়ে বললোঃ-

- কাকা আপনি...?

সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের লাইনটা কেটে গেল। 

★★

সন্ধ্যার খানিকটা পর লিমনদের গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলো সাজু ভাই। তার সঙ্গে আছে তাদের গ্রামের একটা ছোটভাই যার নাম রাজু, রাজুর অনেক সখ সে সাজুর সঙ্গে যেকোনো একটা মামলার সময় সঙ্গী হবে। যেহেতু এই মামলার মধ্যে রকি বা সজীব এখনো কেউ সঙ্গে নেই তাই রাজুকে নিয়ে আজকে এসেছে। 

নিজের বাইক না নিয়ে সাজু ভাই এসেছে কারণ বাইক আনলে সমস্যা হতে পারে। লিমনদের বাড়ি গিয়ে সে গোপনে আস্তে আস্তে বাগানের মধ্যে প্রবেশ করলো। চারিদিকে তখন এশার আজান দিচ্ছে, বেশ কিছুক্ষণ পর সাজু সেখান থেকে বের হবার জন্য উঠে দাঁড়াল। কিন্তু এখানে আসার কোন কারণ বুঝতে পারলো না রাজু। হঠাৎ করে সেই অন্ধকার বাগানের মধ্যে কারো কথার শব্দ শুনতে পেল। 

কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শোনার পরে হঠাৎ করে সেই ফিসফিস করে কথা বলতে থাকা স্থান থেকে একটা জোরে কাশি বের হলো। 

আর সেই কাশির শব্দ শুনেই সাজু বিড়বিড় করে বললো " চেয়ারম্যান সাহেব? " 

চলবে...? 

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#10
পর্বঃ- ০৫

বাগানের মধ্যে চেয়ারম্যান সাহেবের কাশির শব্দ পেয়ে থমকে গেল সাজু ভাই। যদিও সে এখানে একটা আশঙ্কা নিয়ে এসেছে কিন্তু চেয়ারম্যান যে নিজে উপস্থিত হবে সেটা বুঝতে পারে নাই। তবে নিজেকে কিছুটা ভাবনার মধ্যে নিয়ে গেল কারণ সে চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে মাত্র একবারই দেখা করেছে। আর তখনই এই চেয়ারম্যানের কাশির শব্দ মগজে গেঁথে গেছে কারণ সেদিন এই কাশিটা খুব বিরক্ত লাগছিল। একটু পরে চেয়ারম্যান সাহেব বাগান থেকে বের হয়ে গেল, সাজু ভাই ও রাজু দুজনেই আস্তে আস্তে বের হলো। এই মুহূর্তে মুখোমুখি হওয়া যাবে না, মনের সকল প্রশ্ন চেপে রেখে অনুসন্ধান করতে হবে গভীরভাবে। 

নিজেদের এলাকায় ফেরার পথে রাজু জিজ্ঞেস করলো " আমরা এখানে কেন এসেছিলাম সাজু ভাই? আর ওই লোকটা এখানে কেন? "

- সাজু ভাই বললো, যেহেতু একটা পুতুল নিয়ে সবকিছুর গন্ডগোল তাই সেটা অবশ্যই কেউ না কেউ অনুসন্ধান করবে। তাছাড়া যিনি এখানে এসেছেন তিনি এলাকার চেয়ারম্যান, তবে আমার অনুমান মিথ্যাও হতে পারে। 

- তাহলে কি চেয়ারম্যান জড়িত? 

- জড়িত হতে পারে কিন্তু মূল নয়, কারণ এমন করে পরিকল্পনা করার সাহস তিনি একা নিতে পারবে না। 

- লিমনের সঙ্গে কি কোনভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন ভাই? 

- না, কীভাবে করবো? 

- আমি তো জানি না। 

- আচ্ছা ভেবে দেখি। 

রাতে ডিনার করে সাজু কিছুক্ষণ বিছানায় বসে বসে ভাবতে লাগলো। সবকিছু যেন জট পাকিয়ে আছে, চেইন সেলাইয়ের মতো একবার খুলতে পারলে একটানে সবটা খুলে যাবে। কিন্তু যদি গিট্টু লেগে যায় তাহলে মেলা মেলা সময় লাগবে। 

(১) তৌহিদ কেন মিথ্যা বলেছে? 
(২) লিমনের বাবার সেই পুতুল এখন কোথায়? 
(৩) মনিরুল লোকটাকে খুন করলো কেন? 

★★

রাত প্রায় গভীর, বিছানায় শুয়ে অন্ধকার রুমের মধ্যে কান্না করছে লিমন। মা-বাবার কথা বড্ড মনে পরছে তার, সন্ধ্যা বেলা ঘুমিয়েছিল তখনই বাবাকে স্বপ্ন দেখলো। অনেক কিছু উপদেশ দিয়ে চলে গেল, ঘুম থেকে উঠে সেই সময় ধরে চোখের পানি পরছে। নিজে এখন অপরাধী হয়ে সবকিছুর জন্য দায়ী অথচ সে কিছু জানেই না। 

দরজা খোলার ক্যাঁৎ করে শব্দ হলো, অন্ধকারে কেউ একজন দরজা খুলে প্রবেশ করলো। যিনি প্রবেশ করেছে তিনি হয়তো লুকিয়ে এসেছে কারণ সে বাতি অন করে নাই। আস্তে করে বিছানার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল, তারপর একটা হাত এগিয়ে দিল লিমনের কপালে। 

মনে হচ্ছে সেই নাসরিন মেয়েটা এসেছে, লিমনের কপালে হাত দিয়ে কিছু বুঝতে চেষ্টা করলো। কিন্তু গালের কাছে হাত পরতেই গাল ভেজা অনুভব করে মেয়েটা আস্তে করে বললো:-

- আপনি কি জেগে আছেন? 

- হ্যাঁ জেগে আছি কিন্তু আপনি এত রাতে এখানে কেন? কি হয়েছে? 

- দিনের বেলা স্বাধীনভাবে আসতে পারি না তাই রাতের আঁধারে লুকিয়ে এসেছি। 

- আপনারা খুব খারাপ, আপনাদের সঙ্গে কথাই বলতে ইচ্ছে করে না। 

- আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো? 

- করেন। 

- আপনিই কি সেই? যার মা-বাবাকে পুতুলের জন্য পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে। 

- আমার মা-বাবা মারা গেছে এটা সত্যি কিন্তু কি কারণে মারা গেছে জানি না। আমি সেটা জানার জন্য চেষ্টা করবো কিন্তু আমি তো বন্দী এখানে। 

- আমিও একসময় আপনার মতো একটা খুবই সাধারণ মেয়ে ছিলাম, কিন্তু এদের চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে আজ কতটা খারাপ। 

- আপনারা আমাকে মুক্তি দেবেন কবে? 

- জানি না, আমি শুধু এখানে রান্না করি আর সবার জন্য চা-নাস্তা তৈরী করি। 

- আপনাকেও কি কিডন্যাপ করেছে? 

- হ্যাঁ, আমি ওদের এখানে বছর খানিক ধরে বন্দী আছি, কতটা কষ্ট হচ্ছে জানেন? কতদিন পেরিয়ে গেল কিন্তু খোলা রাস্তায় হাঁটতে পারি না। 

- আমারও বারবার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে, খুব খারাপ লাগছে। 

- এটা ভুলেও মুখে আনবেন না, সময় সবকিছুই সমাধান করে দেবে। শুধু ধৈর্য ধরতে হবে আর নিজেকে সৎ রাখতে হবে, তাহলে ঠিকই একদিন নতুন সূর্যের সাথে দেখা হবে। 

- আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লেগেছে, তবে আপনাদের বসের পরিচয় জানতে চাই।

- সেটা আমিও জানি না, এরা সবসময় বস বস করে কিন্তু আজও তাকে চিনতে পারিনি। 

- নাকি মিথ্যা বলছেন? 

- যা সত্যি তাই বললাম, আচ্ছা আপনি মনে হয় বিরক্ত হচ্ছেন, পরে আবার কথা হবে। 

★★

ভোরবেলা নামাজ পড়ে বারান্দার চেয়ারে বসে সামনে মাঠের দিকে তাকিয়ে আছে সাজু ভাই। বেশ চিন্তিত, মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে, একটু আগে সজীব আর রুহি দুজনের নাম্বারে কল দিয়েছে কিন্তু কেউ রিসিভ করে নাই। দুজনেই গতকাল রাতে তাকে কল দিয়েছে, যেহেতু রুহির মা অসুস্থ তাই চিন্তা হচ্ছে। তাছাড়া দুজনেই যখন কল দিয়েছে তখন নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। কিন্তু সকাল বেলা উঠে দুজনের নাম্বারেই ট্রাই করা হয়েছে কেউই রিসিভ করে না। 

অসুস্থ দুর্বল শরীর নিয়ে বসে আছে, দাদি এসে চা দিয়ে গেছে, সেই চা একটা চুমুক দিয়ে সে রেখে দিয়েছে। চিনি একটু বেশি হয়েছে তাই খেতে ইচ্ছে করে না, আবার ডাক দিয়ে নতুন এক কাপ নিয়ে আসতেও বলছে না। 

মোবাইলে রুহির কল এসেছে। 

- আসসালামু আলাইকুম সাজু ভাই। 

- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছো রুহি আর তোমার মা কেমন আছেন? 

- মোটামুটি ভালো, হাসপাতালেই আছি। 

- গতকাল রাতে তুমি কল করেছিলে আর সজীব ও কল দিয়েছে, কিন্তু আমার শরীর অসুস্থ তাই মোবাইল সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে গেছিলাম। 

- আপনি কি বেশি অসুস্থ? কাল রাতে সজীবকে আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন সজীব বললো আপনি অসুস্থ। আর সজীব আপনাকে কল দিয়েই আমাকে কল করেছে, যখন বললো আপনি রিসিভ করেননি। তখন আমার আরও চিন্তা হতে লাগলো, এদিকে আপনি গতকাল গল্প পোস্ট করেন নাই। 

- তুমি কি হাসপাতালে বসেও গল্প পড়ো? 

- তাহলে? পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে একটু সুযোগ করে পড়া শুরু করি, কিন্তু গতকাল পোস্ট করেন নাই তাই মেলা মেলা মন খারাপ। 

- নতুন মামলার মধ্যে এমনিতেই একটু ব্যস্ততা আর তাছাড়া অসুস্থ। 

- হুম বুঝলাম, সেজন্য সজীব এর সঙ্গে কথা শেষ করে আপনাকে কল দিছিলাম কিন্তু রিসিভ করতে পারেননি আপনি। 

- ভাবছি গল্প লেখা বন্ধ রাখবো। 

- কেন? কেন? 

- কপি করে করে অনেকেই নিজের নামে পোস্ট করে, তখন আসল লেখক খুঁজে বের করা যায় না। 

- সবাই তো জানে, মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে সাজু ভাই হচ্ছে আসল লেখক, তাহলে সেখানে আবার সমস্যা কি? 

- সবাই জানে না তবে অনেকেই জানে। 

- আপনি তাদের কথা বাদ দিয়ে লেখা চালিয়ে যান সাজু ভাই, আর আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন প্লিজ। 

- সবসময়ই দোয়া রইল, আর আমি ঢাকা থাকলে অবশ্যই দুবেলা দেখা করতাম। 

- সজীব বলেছে সে নাকি আসবে। 

- ওর নাকি ছুটি নেই। 

- হ্যাঁ ভাই, তবে বলেছে যে বৃহস্পতিবার রাতের বাসে করে আসবে, সারাদিন হাসপাতালে থেকে আবার বিকেলে চলে যাবে। 

- বাহহ বাহহ রুহি সজীবের কি অসাধারণ প্রেম। 

- আপনি না হলে কিন্তু আমাদের পরিচয় সম্ভব ছিল না সাজু ভাই। 

- কপালে লেখা ছিল তাই তোমাদের পরিচয় হয়ে গেছে, সেখানে আমি কেবল অছিলা। তবে দোয়া করি দুজনেই বিয়ে করে সারাজীবন একসঙ্গে যেন ভালবাসা নিয়ে থাকতে পারো। সকল বিপদের দিনগুলো যেন ধৈর্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে পার সেই কামনা রইল। 

- মেলা মেলা ধন্যবাদ সাজু ভাই। 

- হাহাহা, আর দিতে হবে না। 

★★

সকাল নয়টার দিকে দারোগা সাহেব কল দিয়ে বললো, " সাজু সাহেব, একটু আগে তৌহিদকে ছেড়ে দিতে হয়েছে, সে এখন জেলের বাইরে তাই তার দিকে লক্ষ্য রাখবেন। " 

তারপর সাজু ভাই পারভেজের নাম্বারে কল দিয়ে তৌহিদের নাম্বার নিল। তৌহিদকে যখন কল দিল তখন তৌহিদ বাসের মধ্যে বসে আছে। 

- হ্যালো কে? 

- তৌহিদ আমি সাজু ভাই বলছি, তুমি এখন কোন যায়গা আছো? 

- ভাই আমি বাসের মধ্যে বসে আছি। 

- কোথায় যাও? বাড়িতে নাকি? 

- না ভাই খুলনায় মেসে যাচ্ছি, আমার গ্রামের বাড়িতে অলরেডি সবাই জেনে গেছে আমি জেলে ছিলাম। এই মুহূর্তে গ্রামের বাড়িতে যেতে লজ্জা করছে তাই মেসের মধ্যে যাবো। 

- তুমি একটু সাবধানে থেকো সবসময়, বাহিরের মধ্যে ঘোরাঘুরি কম করবা। 

- কেন সাজু ভাই? 

- এমনিতেই বললাম, আর যদি কখনো মনে হয় যে তুমি বিপদে পরতে যাচ্ছ তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে কল দিয়ে জানাবে। 

- ঠিক আছে ভাই। 

- রাখি তাহলে? 

- আচ্ছা ঠিক আছে সাজু ভাই। 

আজকে আর কোথাও বের হতে ইচ্ছে করছে না, তাছাড়া যেহেতু লিমনদের গ্রামে গিয়ে তার জন্য অনুসন্ধান করা নিষিদ্ধ। তাই নতুন কোন উপায় সেই গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করতে হবে। আসরের কিছুক্ষণ পর সাজু ভাই নিজেদের পুকুরের পাড়ে হাঁটছিল, এমন সময় তৌহিদ কল দিল, সাজু খানিকটা অবাক হয়েই রিসিভ করলো।

- তৌহিদ কল দিয়ে বললো, সাজু ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ। 

- মানে কি? কি হয়েছে হঠাৎ? 

- আমার মনে হচ্ছে ওরা আমাকে শেষ করবে, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। 

- কারা খুন করবে? 

- আমি তাদের চিনিনা, আমার সঙ্গে শুধু দুজন মানুষের দেখা হয়েছে, তাও সেদিন রাতে, কিন্তু তাদের দলনেতা আমি চিনি না। 

- কোনদিন রাতে? 

- যেদিন মনিরুল ভাইয়ের খুন হয়েছে। 

- মানে? 

- ভালো আমি আপনার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেছি সেদিন জেলের মধ্যে। 

- তাহলে সত্যি কি? 

- সেদিন রাতে সজীব ঘুমিয়েছিল, জানালার পাশে আমি...

দুপুরবেলা পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরা হয়েছে আর সেই মাছ ছাড়ানো হয়েছে এখানে। তাই কাঁদা আর পানি এখনো খানিকটা জমে ছিল, সেই কাঁদা আর পিছল পানিতে পা পিছলে পরে গেল সাজু ভাই। হাত থেকে মোবাইল ছিটকে পরলো পুকুরের মধ্যে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আফসোস করতে লাগলো, এ বছরই বৈশাখ মাসে পুকুরের সকল পানি সেঁচে নতুন করে কাটানো হয়েছে। অনেক গভীরতা এখন, তাই সেখানে মোবাইল কতটা গভীরে গেছে আর কোথায় গেছে? 

তৌহিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কথা আর শোনা হলো না সাজু ভাইয়ের। 

দাদাকে বলে দুজন লোক এনে তাড়াতাড়ি করে পুকুরে নামানো হলো। তারা প্রায় ঘন্টা খানিক ধরে নাকানিচুবানি খেয়েও উদ্ধার করতে পারলো না। মাগরিবের আজান দিচ্ছে চারিদিকে, হতাশ হয়ে সাজু ভাই বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলো। 

★★

রাত সাড়ে দশটা। 
রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছে তৌহিদ, ভয়ে আতঙ্কে তার মুখের অবস্থা একদম খারাপ। এমন সময় দরজা ধাক্কার শব্দ শুনে সে বললো, 

- কে ওখানে? 

- আমি লিমন, দরজা খোল তৌহিদ। 

- তৌহিদ বিব্রত হয়ে গেল, কিন্তু বারবার দরজা ধাক্কায় সে দরজা খুলে দেখে সত্যি সত্যি সেখানে লিমন দাঁড়িয়ে আছে। " কিরে তুই? ভালো আছো বন্ধু? তোকে আমরা কত খুঁজেছি তুই জানো? "

- কেমন আছো তৌহিদ? 

- ভালো না বন্ধু, খুব খারাপ। 

- কেন তৌহিদ? বিশ্বাসঘাতকতা যারা করে তারা তো খারাপ থাকার কথা নয়। 

তৌহিদ দেখলো, লিমন ততক্ষণে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, সে ভাবছে চিৎকার করবে। কিন্তু লিমন ততক্ষণে তাদের রুমে তার নিজের সাউণ্ডবক্স অন করে ফুল ভলিউম বাড়িয়ে দিল। এতরাতে এখন মেসের অন্যরা কি মনে করবে তাতে লিমনের কিছু যায় আসে না। 

- তৌহিদ বললো, তুই কি বলছিস এসব? 

- দেখ তৌহিদ, পৃথিবীর ইতিহাসে মীরজাফর হচ্ছে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে অধিক পরিচিত। কিন্তু সেই বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরকে কিন্তু ইংরেজরা আবার হত্যা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য তারা তাকে ব্যবহার করেছে, কাজ শেষ করে কিন্তু তাকেও সরিয়ে দিয়েছে। তোকেও যারা ব্যবহার করেছে তারা আবার আমাকেই এখন তোকে খুন করতে পাঠিয়েছে। তুই আমার অনেক ভালো বন্ধু, কিন্তু তবুও হাসতে হাসতে তোকে এখন খুন করবো। 

রুমের মধ্যে চারিদিক কাপিয়ে বক্সে ডিজে গান হচ্ছে, তৌহিদ পিছনে সরতে গিয়ে খাটের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বসে পরলো। লিমনের হাতে এতক্ষণ যে লাঠির মতো ছিল সেটা কাভার খুলে সে একটা চকচকে ছুরি বের করলো। 

মুহুর্তের মধ্যে তৌহিদ বিছানা থেকে উঠে তাকে আঘাত করতে যাবে তার আগেই লিমন বাম হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ডান হাতের ছুরি পেটে চালান করে দিল। আহত তৌহিদ বিছানায় শুয়ে এখন কাতরাতে লাগলো আর তার মুখ চেপে ধরে গলা কাটায় ব্যস্ত রইল লিমন। 

তৌহিদের লাশটা ভালো করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে একটা কাঁথা দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে দিল। দেখলে মনে হয় যেন কেউ ঘুমিয়ে আছে, তারপর নিজের রক্তমাখা গেঞ্জি খুলে আরেকটা গেঞ্জি পরে গান বন্ধ করলো। 

তৌহিদের মোবাইল বের করে সাজুর নাম্বারে কল দিল লিমন কিন্তু নাম্বার তো বন্ধ। কারণ পুকুরে মোবাইল পরে গেছে তাতো কেউ জানে না। 

দরজা খুলে দেখে মেসের দুজন সদস্য দাঁড়িয়ে আছে, মাহিম ও তমাল। 

- তমাল বললো, কিরে লিমন তুই? 

- হ্যাঁ আসলাম মাত্র, কিন্তু তৌহিদের তো অনেক জ্বর এসেছে, তোরা থাক আমি ডাক্তার নিয়ে আসি। 

- সন্ধ্যা বেলা দেখেছি মন খারাপ করে বসে আছে তখনই বুঝেছি শরীর অসুস্থ। 

- তোরা একটু থাক আমি ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখি কি করা যায়। 

- আচ্ছা ঠিক আছে। 

লিমন চলে গেল, ওরা দুজন রুমে প্রবেশ করে দাঁড়িয়ে রইল একটু পরেই খাটের পাশে রক্তমাখা গেঞ্জি ও ছুরি দেখে দুজনেই আৎকে উঠেছে। মাহিম ভয়ে ভয়ে তৌহিদের শরীর থেকে কাঁথা সরিয়ে দুজনেই চিৎকার করে ওঠে। 

গলা ও পেটে ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করা তৌহিদের লাশটা পরে আছে। মাহিম দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দেখে সমস্ত রাস্তা ফাঁকা, কোথাও কেউ নেই। 

.

চলবে...?



.
লাইক বা রিয়্যাক্ট দিয়ের হাজিরা প্রকাশ করে যাবে, মেলা মেলা ধন্যবাদ। 
আপনাদের মতামত ও আগ্রহ দেখার অপেক্ষায় রইলাম। 

.
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#11
ভাই এই গল্পটা শেষ করলেন না কেন? যদি সম্ভব হয় শেষ করে দিয়েন। শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ রইল।
[+] 1 user Likes Chachamia's post
Like Reply
#12
পর্বঃ- ০৬

তৌহিদকে খুন করে লিমন পালিয়ে গেছে এটা ছড়িয়ে গেছে মুহূর্তেই। থানায় খবর দেওয়া হয়েছে মেসের মধ্যের সকল সদস্য জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকলের মনে একটা আতঙ্ক, কিন্তু খুনটা যে লিমন করেছে সেটা নিয়ে অনেকের মনে যেন সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে। 

যেহেতু লিমন নিখোঁজ, তাছাড়া তাকে আসতে বা যেতে কেউ দেখেনি তাহলে কীভাবে লিমন এসে খুন করেছে? তাছাড়া তমালের সঙ্গে মাগরিবের পরে তৌহিদের খানিকটা ঝগড়া হয়েছে। তৌহিদ কিছু টাকা পাবে তমালের কাছে, সেই টাকার জন্য একটু কথা কাটাকাটি। তমাল এমনিতেই একটু উশৃংখল টাইপের ছেলে, গাজা-টাজা খায় আবার স্থানীয় কিছু বাজে ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা দেয়। 

পুলিশ আসার পরে যখন জিজ্ঞেসাবাদ করা হয় তখন সবাই তমালের কথাটা বলে। কিন্তু পরক্ষণে যখন রক্তমাখা গেঞ্জিটা মাহিম পুলিশের সামনে দেখিয়ে দেয় তখন মোটামুটি চুপ করে সবাই। 

" পুলিশ তমালকে বললো, তোমরা কি নিশ্চিত যে ওই ছেলেটা লিমনই ছিল? "

" হ্যাঁ স্যার, রুমের মধ্যে গান বাজছিল, আমরা সামান্য কৌতুহল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তার একটু পরেই দরজা খুলে লিমন বের হলো, আমাদের দেখে স্বাভাবিক ভাবেই বললো যে তৌহিদ অসুস্থ তাই সে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা রুমে ঢুকে যখন দেখি তৌহিদের লাশটা পরে আছে তখন রাস্তায় নেমে কোথাও দেখিনি। " 

" লিমন রক্তমাখা গেঞ্জি রেখে গেল কেন? পরনে কি কিছু ছিল? "

" স্যার লিমনও তো এই রুমে থাকতো আর রুমে তার অনেক কাপড়চোপড় আছে। রক্তমাখা গেঞ্জি পরিবর্তন করে ফ্রেশ একটা পরে গেছে হয়তো, যেন কিছু বুঝতে না পারি। "

" লিমনের সঙ্গে তৌহিদের সম্পর্ক কেমন ছিল? মানে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে নাকি মনকষাকষি? "

" স্যার.. খুব ভালো বন্ধু ছিল ওরা, যেদিন রাতে লিমনের মা-বাবা খুন হয়েছে সেদিন সেই গভীর রাতে তৌহিদ সঙ্গে গেছে। "

" লিমনের মা-বাবা কীভাবে মারা গেছে? "

" শুনেছি খুন করা হয়েছে, কিন্তু কারা জড়িত বা কিসের জন্য তা জানি না। "

" ঠিক আছে, আমরা লাশ নিয়ে যাচ্ছি, যেকোনো সময় যেকোনো মুহূর্তে আসতে পারি। মেসের কোন সদস্য খুলনা থেকে বের হবে না, পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া পর্যন্ত মেসে থাকবে। 

★★

সাজু ভাই তাদের স্থানীয় বাজারে গিয়ে সিমকার্ড রিপ্লেস করে এনেছে। জরুরি প্রয়োজনে নাম্বার চালু রাখা একান্ত জরুরি, রাজু তাকে বলেছে যে সকল সিম নাকি রিপ্লেস করা যায় তাদের বাজারে তাই রিপ্লেস করে এনেছে। 

বাড়িতে ফিরে দাদার মোবাইলে নিজের সিম লাগিয়ে নিল, তার দাদার কাছেও এন্ড্রয়েড ফোন কারণ সাজুর বাবার সঙ্গে ও সাজুর সঙ্গে সবসময় ভিডিও কলে কথা হতো। 

সিম চালু করে সে অপেক্ষা করতে লাগলো, যদি তৌহিদ আবারও কল দেয়? তবে তখন ছিল রাত এগারোটার মতো, ততক্ষণে তৌহিদ খুন হয়ে গেছে কিন্তু সাজু জানে না। 

ডিনার করে বিছানায় শুয়ে কবিতার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল, আর তাই মুখস্থ নাম্বারটা ডায়াল করলো। 

" কবিতা রিসিভ করে বললো, যে মানুষটা বাড়িতে গিয়েই সঙ্গে সঙ্গে কল দেবার কথা সে আজকে কল দিল। তারমানে কি মাত্র বাড়িতে গেছে? "

" তুমিও তো খবর নিলে না, অসুস্থ শরীর নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসলাম। একটা কল দিয়ে তো জিজ্ঞেস করলে না, কেমন আছেন সাজু ভাই? "

" আমি যে কারো উপর মেলা মেলা অভিমান করে আছি, সেটা বোঝার ক্ষমতা কি তার আছে? "

" অসুস্থ মানুষের উপর রাগ করতে নেই, কারণ হুট করে মরে গেলে আফসোস করতে হবে। "

" একদম মুখ ভেঙ্গে দেবো। "

" কেন? মানুষ মরতে পারে না? "

" তুমি আমাকে বিয়ে করবে তারপর আমরা দুজন একসঙ্গে সংসার করবো, আমাদের বাচ্চা হবে, তারপর দুজনেই মারা যাবো। "

" মৃত্যু কি কখনো সংবাদ দিয়ে আসে? "

" তবুও মানুষ কিন্তু স্বপ্ন আর আশায় বেঁচে থাকতে চায়, তাই না সাজু? "

" আমার শরীর সত্যি সত্যি খুব খারাপ, কিন্তু এমন একটা মামলায় জড়িয়ে গেলাম যে অসমাপ্ত রেখে কোথাও যাওয়া যাবে না। "

" বেঁচে থাকলে এমন অসংখ্য মামলার রহস্য বের করতে পারবে, তুমি কিন্তু আমার নিষেধ করা সত্ত্বেও ওই মামলায় জড়িয়ে গেছ। আর সেজন্যই কিন্তু তোমার প্রতি আমার অসংখ্য অভিমান আর মনের মধ্যে কষ্ট। "

" কষ্ট কেন? "

" এখনো আমার কোন কথার গুরুত্ব তোমার কাছে নেই তাই কষ্ট লাগে। "

" তুমি তো ভালো করে জানো যে আমি তোমাকে কতটা সময় দেই। "

" জানি, সেটা আমার পরম সৌভাগ্য। হতভাগা এই কবিতার জীবনে তোমার মতো মানুষের ভালবাসা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের। "

" পৃথিবী বড্ড অদ্ভুত কবিতা, যে মানুষটা অনেক সাধনা করে তার প্রিয় মানুষটাকে চার, আল্লাহ সেই মানুষটাকে তাকে দেয় না। নিষ্ঠুর পৃথিবী যেন আজকাল আর কারো কষ্ট বোঝে না, একজনের ভালবাসা নিয়ে যায় অন্য কেউ। "

" তুমি আমাকে সারাজীবন একসঙ্গে রাখবে তো? শুধু তোমার হয়ে থাকতে চাই। "

" যদি কোনদিন বিয়ে নাও করি তবুও তোমাকে আমার মনের মধ্যে রাখবো আজীবন। আর যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে তো স্বপ্ন পূরণ হবে, তাহলে তো সমস্যা নেই। "

" এখনো আমাকে যদির মধ্যে থাকতে হবে? "

" কথার কথা বললাম। "

" খেয়েছ রাতে? "

" হ্যাঁ, তুমি? "

" না খাবো একটু পরে। সন্ধ্যার পরে ঘুমিয়েছিলাম আর একটু আগে ঘুম থেকে উঠে এশার নামাজ পড়লাম তাই দেরি হচ্ছে। "

দুজনের মধ্যেই কথা চলে অজস্র, সবকিছু হয়ত আমাদের জানার দরকার নেই তাই আপাতত তাদের কথোপকথন বন্ধ রাখলাম। 

দেড় ঘন্টা কথা শেষ করে সাজু অনলাইনে গেল, বেশ কিছু মেসেজ জমা আছে। সেই মেসেজের ভিড়ে লিমনের আইডি দিয়ে মেসেজ দেখে সাজু অবাক হয়ে গেল। 

লিমন লিখেছে:- 
সাজু ভাই, 
আসসালামু আলাইকুম, আর কেমন আছেন সাজু ভাই? আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এই কিছুক্ষণ আগে আপনার নাম্বারে কল দিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ। আমি এখন ভৈরব নদীর তীরে সেই চরেরহাট এলাকায় রাতের উত্তাল ঢেউ খেলানো শব্দের কাছে দাঁড়িয়ে আছি। একটু আগে তৌহিদ কে খুন করে এলাম, হয়তো সামনে আরও বেশি বাড়তে পারে। আগের দুটো খুন আমি করিনি তবু আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, তৌহিদ আমার সঙ্গে বেঈমানী করেছে সাজু ভাই। আপনি কখনো সেই চিরকুট পেয়ে বিশ্বাস করবেন না, কারণ আমি যাদের খুন করবো তাদের কথা আপনাকেই শুধু জানাবো। কখনো চিরকুট লিখবো না। 

|

কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইল সাজু, সামান্য কিছু সময় মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে মাথাব্যথা শুরু করেছে। কিন্তু তৌহিদ খুন হয়েছে সেটা তাকে খুব ব্যথিত করছে, কিছু কিছু যায়গায় কল দিতে হবে কিন্তু কারো নাম্বার নেই। 

তৌহিদ নাকি বেঈমানী করেছে, গতকাল বিকেলে তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে মোবাইল পানিতে পরে গেছিল। তৌহিদ তাকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু বলতে পারে নাই। সে হয়তো বুঝতে পেরেছিল তাকে খুন করা হবে তাই একদম শেষ মুহূর্তে স্মরণ করেছিল। 

কিন্তু সেই বেঈমানীটা কি...? 
কিসের জন্য তাকে খুন হতে হয়েছে..? 

★★

গল্পটা নিয়মিত সবার আগে পড়তে আমার এই পেইজেরই সঙ্গে থাকুন। 
পেইজ মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব 

★★

খুব সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ির সামনে হাঁটছিল সাজু। মোবাইলে যদি কারো কল আসে সেই অপেক্ষায় আছে কিন্তু কোই কেউ তো কল দিচ্ছে না। অন্তত পারভেজ নিশ্চয়ই কল দেবে কারণ তৌহিদ খুন হয়েছে। 

সাড়ে সাতটার দিকে নাস্তা করার একটু পরেই একটা অপরিচিত নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। সাজু প্রথমে নাম্বার চেনার চেষ্টা করছে কারণ এমন হতে পারে যে আগে চিনতো। কিন্তু না.. চিনে না। 

" সাজু ভাই বললো, আসসালামু আলাইকুম। "

" একটা মেয়ে অপরপ্রান্তে বললো, ওয়া আলাইকুম আসসালাম, আপনি কি সাজু ভাই? "

" জ্বি আমি সাজু, কিন্তু তোমাকে ঠিক... "

" ভাইয়া আমার নাম 'সোহাগি' আমাকে আপনি চিনবেন না, তবে আমি আপনাকে কিছুটা চিনি। "

" ওহ্ আচ্ছা। "

" সাজু ভাই আমি একটা জরুরি কথা বলতে কল করেছি আপনার কাছে। "

" হ্যাঁ বলো। " 

" আপনি লিমনকে তো চিনেন? কিছুদিন আগে যার মা-বাবা খুন হয়েছে আর সে নিজেও এখন খুন করে পলাতক। "

" হ্যাঁ চিনি, কিন্তু... "

" আমি লিমনের গার্লফ্রেন্ড, আমরা দুজনেই দুজনকে পছন্দ করি। লিমনের মা-বাবা আমার আর ওর সম্পর্ক জানতেন,। "

" আচ্ছা। "

" আপনি কি আমাদের গ্রামে আজকে আসতে পারবেন? একটু জরুরি কাজ আছে। "

" কি কাজ? "

" আপনাকে একটা জিনিস দিতে চাই, যেটা নিয়ে খুব টেনশনে আছি আমি। "

" কি জিনিস? "

" একটা স্বর্নের পুতুল, লিমনের বাবা আমাকে দিয়েছিল খুন হবার দুদিন আগে। "

" কি....? সেই পুতুল তোমার কাছে? "

" হ্যাঁ ভাই, পৃথিবীতে আমি ছাড়া কেউ জানে না, লিমনের বাবা জানতো কিন্তু তিনি তো পৃথিবীতে নেই এখন। "

" সেটা তুমি আমার কাছে দেবে? "

" হ্যাঁ, কারণ এটার জন্য খুব সমস্যা হচ্ছে। "

" ঠিক আছে আমি আজকের মধ্যে তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবো। "

" মেলা মেলা ধন্যবাদ সাজু ভাই। "

কল কেটে দিয়ে সাজু গভীর চিন্তার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে, সোহাগি নামের মেয়েটা সত্যি বলছে? নাকি তাকে ফাঁসানোর জন্য কেউ কিছু প্ল্যান করেছে? 

....

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#13
(17-11-2025, 09:13 PM)Chachamia Wrote: ভাই এই গল্পটা শেষ করলেন না কেন? যদি সম্ভব হয় শেষ করে দিয়েন। শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ রইল।

ধন্যবাদ ভাই আপনাকে। banana
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#14
 পর্বঃ- ০৭

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লিমন, তার পিছনে দাঁড়িয়ে রাগান্বিত হয়ে নানাধরণের প্রশ্ন করে যাচ্ছে নাসরিন। লিমন সবগুলো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে, কিন্তু নাসরিন তাকে কথা বলেই যাচ্ছে। 

" কি হলো চুপ করে আছো কেন? তোমাকে কিন্তু আমি ভালো ভেবেছিলাম, কিন্তু তুমিও ওদের কথা মতো খুন করতে গেলে? "

" যথেষ্ট কারণ আছে, আমি লিমন কারণ ছাড়া কোনকিছু করি না। "

" কি কারণ জানতে পারি? "

" ওর জন্যই আজকে আমি অপরাধী, সেদিন সেই রাতে তৌহিদ যদি এদের সাহায্য না করতো তবে তো এভাবে আমি ফেঁসে যেতাম না। "

" টাকার লোভ সবারই থাকে, তোমার বন্ধু ভুল করেছে কিন্তু তুমি মূল খুনিদের না মেরে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজের বন্ধুাে খুন করলে? "

" বেশ করেছি, তুমি একটু চুপ করবে? "

" তোমাকেও কিন্তু এরা ব্যবহার করছে, একদিন তোমাকেও তারা স্বার্থ শেষে মেরে ফেলবে। "

" তবুও তার আগে আমার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী লোকদের আমি খুন করতে চাই। তারপর যদি আমাকে তারা সরিয়ে দেয় তাতে আমার কোন আফসোস নেই। " 

" নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারো না? "

" কিছুদিন আগেও খুব স্বপ্ন দেখতাম, মা-বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সব শেষ হয়ে গেছে। তাদেরকে যখন কবরে দাফন করলাম তখনই মনে হয় সব স্বপ্ন দাফন হয়ে গেছে। " 

- তুমি কিন্তু আগের দুটো খুন করোনি, তাই তুমি নির্দোষ প্রমাণ হতে পারতে। কিন্তু তোমার বন্ধুকে খুন করে এখন তুমি খুনি হয়ে গেলে, ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে এই বন্দী থেকে বের হবো। কিন্তু তুমিও...! "

" তুমি এখন যাও, বিরক্ত লাগছে। "

" ভালো কথা কারোরই ভালো লাগে না, সবাই শুধু এই নরপিশাচদের দলে যোগ দেয়। কেউ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় না, আর এভাবেই ওরা দিনে দিনে অপরাধের পাহাড় গড়ছে। " 

" একটা কথা বলবো? "

" বলো। "

" আমি আমার মা-বাবার খুনিদের শেষ করে যদি এদেরকে শেষ করতে চাই তাহলে কি তোমার সহোযোগিতা পাবো? " 

" কিন্তু ততদিনে ওরা তোমাকেও সরিয়ে দেবে। "

" ওরা যেভাবে পরিকল্পনা করবে, আমি তার ঠিক উল্টো পরিকল্পনা করবো, আচ্ছা তুমি বলো তো এদের বসের সঙ্গে এরা কীভাবে যোগাযোগ করে সবসময় ? "

" নিজাম ভাইয়ের সঙ্গে বসের সরাসরি যোগাযোগ আর বাকি সবাই শুধু কলে কথা বলে আর লিখিত নোটিশ পায়। "

" আচ্ছা ঠিক আছে। "

" তোমাকে একটা কথা বলতে চাই লিমন। "

" বলো "

" তুমি চাইলেই কিন্তু পালিয়ে যেতে পারবে কারণ তোমাকে ওরা খুন করার জন্য বাইরে পাঠাবে। কিন্তু আমি চাইলেই পালাতে পারবো না, তাই যদি পারো তাহলে আমাকে মুক্ত করে দিও! "

" আমি চেষ্টা করবো, তবে আমার প্রধান লক্ষ্য আমার মা-বাবার খুনিরা। "

★★

সামান্য একটা স্বর্নের পুতুলের জন্য সবকিছু যেন খুবই রহস্যময় হয়ে গেছে। হতে পারে সাজুর কাছে যেটা সামান্য, সেটা অন্যের কাছে অসামান্য হতে পারে, কিংবা অন্যকিছু। 

রাজু আসলো একটু পরে, সাজু তখনও নিজের রুমের বারান্দায় বসে আছে। রাজু আসতেই সে তাকে বললো:-

" কি খবর রাজু? তোমাকে মনে মনে স্মরণ করি আর তুমি এসে হাজির। "

" আলহামদুলিল্লাহ ভাই, কিন্তু আমাকে হঠাৎ করে খুঁজছিলেন? "

" হ্যাঁ একটা কাজ করে দিতে হবে। "

" কি কাজ ভাই? "

" আমার সিমের যত নাম্বার সবগুলো আমি একটা ডায়েরিতে লিখে রাখি, তাই সেগুলো সব একটা একটা করে সেইভ করে দিতে হবে। " 

" ভাইজান, গুগলের মধ্যে কিন্তু নাম্বার সেইভ করে রাখা যায়, আপনি সেখানে রাখেননি? "

" না, কেন যেন ইচ্ছে করে না। তাই সবসময় আমি ডায়েরিতে লিখে রাখতে পছন্দ করি, এখন তুমি সেগুলো একটু সময় নিয়ে সেইভ করে দিও। " 

" ঠিক আছে ভাই। "

" আমি গতকাল রাত থেকে নাম্বারগুলোর জন্য অনেক মন খারাপ করেছি। কিন্তু জ্বরে অচেতন আর মাথাব্যথার জন্য মনেই ছিল না যে আমার ডায়েরিতে লিখে রেখেছি। "

" ভাই আমি তো জানতাম যে আপনি অনেককিছু ভুলে যান, তাই যেকোনো মামলার বিষয় নিয়ে আপনি সবকিছু লিখে রাখেন। "

" হ্যাঁ, এই মামলার মধ্যেও তাই করছি। আচ্ছা রাজু, আরেকটা প্রশ্ন করবো তোমাকে? " 

" হ্যাঁ ভাই নিশ্চয়ই, তাতে অনুমতি লাগে নাকি? "

" তুমি তো মোটামুটি এখন রাজনীতির সঙ্গে মনে হয় জড়িয়ে গেছো, কিন্তু আগে তো এমন ছিলে না তাই না? আমি যেবার খুলনা থেকে পাশ করে বের হলাম সেবার তুমি ভর্তি হলে। "

" হ্যাঁ ভাই। "

" গ্রামের মধ্যে রুবিনা নামের একটা মেয়ের সঙ্গে তোমার রিলেশন ছিল, তাই না? "

" জ্বি, কিন্তু তার সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই, সে আমাকে ভুলে গেছে। অনেক ভালবেসেছিলাম কিন্তু কোন মূল্য পেলাম না, পাগলের মতো তার জন্য ভালবাসা রেখেছিলাম। "

" আজকে সন্ধ্যা বেলা চা খেতে খেতে তোমার আর রুবিনার প্রেমের কাহিনী শুনবো, যদি তুমি বলতে চাও। "

" সত্যি বলছেন? আচ্ছা ভাই আপনি কি আমার বাস্তবতাটা আপনার লেখার মধ্যে তুলে ধরবেন? "

" আগে শুনি তারপর দেখি। " 

" ঠিক আছে ভাই। " 

★★

পিরোজপুরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে রিক্সা নিয়ে বলেশ্বর সেতুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সাজু ভাই। রাজুকে সঙ্গে আনা হয়নি, কেন যেন মনে হয়েছে তাকে আনার দরকার নেই। কারণ পুতুলটা যে সাজুর কাছে থাকবে সেটা যেন সোহাগি নামে সেই মেয়ে আর সে জানে। যদি তৃতীয় কানে পৌঁছে যায় তাহলে সমস্যা হতে পারে তাই একাই এসেছে সাজু ভাই। নিজের বাইকটা বাসস্ট্যান্ডে রেখে এসেছে কারণ কেউ যদি ফলো করে তবে যেন কিছু বাহানা করা যায়। 

ব্রিজের ঠিক মাঝখানে কালো * পরে মুখ আটকে ছাতা মেলে দাঁড়িয়ে আছে সোহাগি। তাকে সনাক্ত করতে খুব বেশি অসুবিধা হয়নি সাজুর, সামনে দাঁড়িয়ে বললো:-

" কেমন আছো তুমি? "

" জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। "

" দুঃখিত! তোমাকে খানিকটা অপেক্ষা করতে হয়েছে, আসলে আসরের নামাজ জামাতে আদায় করে আসলাম বাসস্ট্যান্ডে। "

" কোন সমস্যা নেই, আমি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে আর অপেক্ষা করতে চাই না। আপনাকে ওই পুতুলটা দিয়ে আমি চলে যাবো, বাকি সব কথা মোবাইলে বলবো। "

" পুতুল গ্রহণ করার আগে আমি তোমার কাছে কিছু প্রশ্ন করবো। নাহলে আমি পুতুল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবো, কারণ খুবই স্বাভাবিক। "

" আচ্ছা বলেন। "

" লিমনের বাবা পুতুলটা দেবার সময় তোমাকে কি বলেছিল? নিশ্চয়ই কিছু না বলে এমনি এমনি সে দিয়ে আসেনি! "

" আমি এগুলো বিস্তারিত মোবাইলে বলবো, সে অনেক কথা সাজু ভাই, প্লিজ কিছু মনে করবেন না দয়া করে। " 

" তোমাকে আমি কতটা বিশ্বাস করতে পারি? যদি তুমি আমার সঙ্গে কোন গেইম খেলতে যাও তবে কি পরিণাম হবে জানো? "

- আপনি ভুল বুঝবেন না, আঙ্কেল এটা দেবার সময় আমাকে বলেছিলেন 

" তুমি তো আমার লিমনকে খুব ভালবাসো, যদি বেঁচে থাকি তাহলে তোমাকেই আমার ছেলের বউ করবো। আর যদি মারা যাই তাহলে তোমরা যেভাবেই হোক তোমার মা-বাবাকে রাজি করিয়ে বিয়ে করবে। " 

তারপর ব্যাগ থেকে পুতুলটা বের করে বলেন যে, 
" এটা হচ্ছে স্বর্নের পুতুল, তোমাদের দুজনের উজ্জ্বল এক ভবিষ্যত তৈরি হবে। " 

আমি বললাম " কিন্তু আমাকে কেন দিচ্ছেন? " 
তিনি বললেন, " এটার পিছনে অনেক শত্রুদের নজর পরেছে, সারাক্ষণ এটা নিয়ে বিপদে আছি। তাই তোমার কাছে রাখতে চাই, যদিও মাটির নিচে কিংবা কোথাও রাখতে পারি। কিন্তু যদি সঠিক সময়ে না থাকি তাহলে তো তোমরা এর সন্ধান বের করতে পারবে না। তুমি যত্ন করে রেখো। "

" সাজু ভাই বললেন, আঙ্কেল তাহলে নিজের সব বিপদ অনুভব করতে পেরেছিল, কিন্তু তার ভুল ছিল তিনি এটা অন্য কারো কাছ থেকে এনে নিজে স্বার্থপরের মতো ভোগ করতে চেয়েছিলেন। " 

" আপনি এটা নিয়ে যান সাজু ভাই, নাহলে আমি সবসময় আতঙ্কে থাকবো। "

" তুমি যে এটা আমার কাছে দিচ্ছ সেটা পৃথিবীর কাউকে বলার দরকার নেই। এমনকি লিমনের কাছেও তুমি বলবে না, কারণ লিমন নিজে এখন অপরাধী হয়ে গেছে। " 

" আমি কাউকে বলবো না, তবে আপনার কাছে একটা অনুরোধ রইল, লিমনকে যেভাবেই হোক বাঁচিযে দেবেন, আমি ওকে চাই। "

" চেষ্টা করবো, কিন্তু সে গতকাল রাতে তার বন্ধু তৌহিদকে খুন করেছে। আমি আজকে সেখানে যেতাম কিন্তু তোমার জন্য যাইনি, আগামীকাল সকালে খুলনায় সেই মেসে যাবো। " 

" ভালো থাকবেন সাজু ভাই। "

" তুমিও "

পুতুল নিয়ে আবারও রিক্সা করে পিরোজপুরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে এসে নিজের বাইক নিয়ে সরাসরি চলে এলো সাজু ভাই। তাদের গ্রামের স্থানীয় বাজারে যখন এসেছে তখন বাজারের মসজিদে মাগরিবের নামাজ শুরু হয়ে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি অযু করে নামাজ পড়তে গেল। 

★★

গল্প যেহেতু আমি লিখি তাই আমার এই পেইজে এড হয়ে থাকার দাওয়াত রইল। 
পেইজ মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব 

★★

নামাজ শেষ করে বাজার থেকে রাজুকে নিয়ে বাড়িতে ফিরলো সাজু, রাজু তার দায়িত্ব পালন করে রেখেছে। সাজু ভাই মোবাইলের ডাটা চালু করে কিছুক্ষণ অনলাইনে হাটাহাটি করছে। হঠাৎ করে চোখে পরলো বেশ কিছু মেসেজ রিকোয়েস্ট জমা হয়ে গেছে। গতকালও ছিল, লেখালেখির জন্য অনেকেই মেসেজ করে, সাজু সময় নিয়ে তাদের সঙ্গে গল্প করতে পছন্দ করে। অনেকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে, সাজুর রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ডিভোর্স দেখে অনেক প্রশ্ন করে। সাজুর সেই জবাব দিতে মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত লাগে তবুও সে যতটুকু সম্ভব রিপ্লাই করে। 

এক এক করে মেসেজ রিকোয়েস্ট চেক করেই হঠাৎ " সাদিকুল ইসলাম তৌহিদ " আইডি দেখে থমকে গেল। অনেক মেসেজ দিয়েছে তাও ২৬ ঘন্টা আগে, তারমানে গতকাল সন্ধ্যা বেলা। 

" সাজু ভাই, হঠাৎ করে লাইন কেটে গেল আর আপনার নাম্বার বন্ধ। আপনার কাছে তাই মেসেজ করতে বাধ্য হলাম, আশা করি আপনার দৃষ্টিতে পরবে। আমি ভুল করেছি সাজু ভাই, সেদিন রাতে লিমন মনিরুল ভাইয়ের বাসায় মাটি খুঁড়ে বের হয়নি। আমিই মাটি খুঁড়ে বের হয়েছিলাম তবে তার আগেই লিমনকে অজ্ঞান করেছিলাম। আর সবকিছুর ব্যবস্থা করেছিল বাহির থেকে অজ্ঞাত তিনটা মানুষ। আমি তাদের চিনি না কিন্তু আমার ছাত্রজীবনে পাঁচ লাখ টাকার মালিক হবার লোভ সংবরণ করতে পারিনি। যার জন্য এখন জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে আছি, তাই নিজের খানিকটা ভুলের কারণে লিমন বিপদে পরেছে আর আমি হলাম পাপী। মনির ভাইকে খুন করেছে বাহিরে কিছু মানুষ, আর লিমন তখন অজ্ঞান ছিল। খুনের মধ্যে লিমনের এলাকার চেয়ারম্যান সাহেবের হাত আছে। আর,,,, 

বাকিটা শেষ করার আগেই সাজুর দাদি মোবাইল টান দিয়ে নিয়ে গেল। সাজু অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইল, আর দাদি বললো:-

" কতক্ষন ধরে চা খেতে ডাকছি, সবসময় শুধু মাথাব্যথা বলে চেচামেচি করো। আর মোবাইলের দিকে এতো তাকিয়ে থাকো কেন? তাড়াতাড়ি চা শেষ করো নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে। "

" গুরুত্বপূর্ণ একটা খবর পড়ছি দাদি। "

" আগে চা তারপর গুরুত্বপূর্ণ সবকিছু। "

বাধ্য হয়ে সাজু ভাই সামনে রাখা প্লেট থেকে দুটো বিস্কুট তুলে নিল, রাজুর দিকে তাকিয়ে বললো 
" শুরু করো রাজু। "

★★

এদিকে, 
মাগরিবের একটু পরে নিজের বিছানায় শুয়ে ছিল লিমন, আর তখনই নিজাম উদ্দিন রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো। লিমন আস্তে করে বিছানায় উঠে বসলাে, নিজাম উদ্দিন বলল:-

" আজকে রাতে তোমার এলাকার চেয়ারম্যানকে চিরনিদ্রায় শায়িত করতে হবে। তিনিও তোমার মা-বাবার সঙ্গে জড়িত, তোমাকে চেয়ারম্যান বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে। তারপর তুমি কীভাবে খুন করে ফিরে আসবে সেটা তোমার দায়িত্ব। আর যদি উল্টাপাল্টা কিছু করো তাহলে কিন্তু তোমার জন্য জেলের দরজা খোলা। " 

" লিমন শুধু বললো, চেয়ারম্যানকেও খুন করতে হবে? "

.

 
.
 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#15
 পর্বঃ- ০৮ 

- হ্যাঁ চেয়ারম্যানকে খুন করতে হবে, নাহলে তো তোমার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী অপরাধীদের শাস্তি সম্পন্ন হবে না। তুমি তো নিজের হাতে খুনের সঙ্গে জড়িত সবাই কে খুন করতে চাও আর সেই ব্যবস্থা আমরা তোমাকে করে দিচ্ছি। 

- কিন্তু এতকিছু করে আপনাদের লাভ কি? আমি আপনাদের কেউ না কিন্তু তবুও আপনারা আমার সহোযোগিতা করছেন কেন? পৃথিবীতে স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু করে না, বাচ্চা যদি কান্না না করে তবে কিন্তু মা কখনো দুধ পান করায় না। 

- হ্যাঁ আমাদের কিছু স্বার্থ আছে। 

- কিসের স্বার্থ? আমি কি জানতে পারি? 

- তোমার বাবার কাছে একটা স্বর্নের পুতুল ছিল, সেটা এখন কোথায় আছে সেই তথ্য তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে। তবে সেটা এখন নয়, তুমি আগে তোমার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী সকল অপরাধী খুন করবা তারপর। 

- একের পর এক হত্যা করাচ্ছেন আপনারা, তবে আমি নিশ্চিত এদের সঙ্গে আপনাদের ব্যক্তিগত কিছু ঝামেলা হয়েছে। 

- তুমি কিন্তু বেশি কথা বলো, ভুলে যেও না যদি তোমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেই তাহলে কিন্তু তোমার ফাঁসি হবে। তাই বেশি কৌতুহল না করে চুপচাপ যা বলা হয়েছে তাই করো, আমাদের কাজ শেষ হলে আমরা তোমাকে দেশ ছাড়তে সাহায্য করবো। 

- বিশ্বাস হয় না। 

- কেন? আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে আপনারা সব কাজ শেষ হলে আমাকেও শেষ করবেন। আপনি বা আপনার বস খুব ভালো খেলোয়াড়, নিজেদের স্বার্থের জন্য যখন যাকে দরকার তাকে ব্যবহার করেন। কিন্তু পরে ঠিকই তাদের সরিয়ে দেন এই পৃথিবী থেকে অনেক দুরে। 

- কি বলতে চাও তুমি? 

- কিছু না। তৌহিদকে খুন করে আমার অনেক খারাপ লেগেছে, ও ছিল আমার সবচেয়ে ভালো একটা বন্ধু। 

- কিন্তু সে তোমার সঙ্গে বেঈমানী করেছে। 

- কিন্তু তার কোন প্রমাণ নেই, আপনার কথার উপর ভিত্তি করে তাকে হত্যা করেছি। 

- এখন চেয়ারম্যানকেও ঠিক সেভাবেই হত্যা করা হবে, এবং তার আগে তার মুখ দিয়ে পুতুলের বিষয় কিছু জানে নাকি সেটা জিজ্ঞেস করবে। 

- আচ্ছা ঠিক আছে, আমি জানি আমার খুবই করুণ পরিণতি হবে সামনে। যদি আপনাদের কথা মেনে চলি তাহলে দিনদিন খুনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, আর যদি কথা না শুনি তাহলে তো আমি হবো আইনের চোখে অপরাধী। তাই যতদিন বাঁচি ততদিন ও খুনিদের শেষ করতে চাই, তারপর যা হবার হোক। 

- তৈরি থেকো। 

নিজাম উদ্দিন রুম থেকে বের হয়ে গেল, এতক্ষণ দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সবকিছু শুনছিল সেই নাসরিন। লিমনের কথাগুলো শুনে তার চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পরছে, নিজাম চলে যাবার পরে সে রুমের মধ্যে ঢুকে লিমনের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। 

- লিমন বললো, কিছু বলবে? 

- অনেক কিছু বলতে চাই, আমি বললেই কি তুমি আমার কথা শুনবে? 

- বলে তো দেখতে পারো, তাই না? 

- তুমি ওদের কথা মতো খুন না করে নিজে এখান থেকে পালিয়ে যাও প্লিজ প্লিজ। 

- কেন? 

- তুমি খুব ভালো একটা ছেলে, পড়াশোনা করে অনেক ভালো ভবিষ্যত তোমার সামনে। কিন্তু এই ভাগ্যের উত্থানপতনের জন্য আজ তুমি কতটা খারাপ হয়ে গেলে। তাই তোমার কাছে অনুরোধ রইল তুমি যখন বের হবে তখন যশোর থেকে বডার পার হয়ে ইন্ডিয়া চলে যাও। 

- কিন্তু তাহলে তো আমার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী লোকদের চিনতে পারবো না। সবাই তখন দিব্যি সুন্দর জীবনযাপন করবে, কিন্তু যেখানে আমার মা-বাবা মারা গেছে সেখানে আমাকেই পালিয়ে যেতে হবে। 

- নিজের জীবন বিপদে না ফেলে সেটাই করতে হবে লিমন, জানি না তোমার দিকে তাকালে কেন যেন খুব কষ্ট লাগে। আচ্ছা চলো-না তুমি আর আমি পরিকল্পনা করে পালিয়ে যাই। দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে কোন একটা প্রদেশে জীবন পার করে দেবো। 

- সেটা সম্ভব না। 

- কেন? 

- আমি একজনকে ভালবাসি। 

- ওহ্ আচ্ছা, কে সে? 

- আমাদের গ্রামের মেয়ে, নাম সোহাগি। আমার জন্য সে সারাজীবন অপেক্ষা করবে, যদি মারা যাই সেটা ভিন্ন কথা। 

- একটা কথা বলবো কিছু মনে করবে না তো? 

- বলো। 

- তুমি এখন তোমার এলাকার মানুষের চোখে একটা খারাপ ছেলে তাই সবকিছু জেনে এখনও কি সেই মেয়ের মা-বাবা তোমার সঙ্গে তাদের মেয়ে বিয়ে দেবে? 

- সেটা তাদের ইচ্ছে, কিন্তু আমি তাকে ছাড়া কিছু ভাবিনি কখনো, তাছাড়া তোমার সঙ্গে আমার কোন তেমন পরিচয় নেই। 

- ঠিক আছে। 

★★★

চা-নাস্তা শেষ করে সাজু ভাই তৌহিদের বাকিটা মেসেজ পড়লো। আর চেয়ারম্যান সাহেব পরবর্তী টার্গেট সেটা মোটামুটি করে পরিষ্কার বুঝতে পারা গেল। কিন্তু এই রাতে আঁধারে এখনই কি সে ওই গ্রামের মধ্যে যাবে? শরীর অসুস্থ, কিন্তু তবুও গিয়ে যদি চেয়ারম্যানকে বাঁচানো যায় তাহলে তো খুব ভালো হতো। 

দারোগা সাহেবের কাছে কল দিয়ে তাকে গ্রামের মধ্যে আসতে বলে সাজু ভাই নিজের বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল। রাজুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে কারণ সঙ্গী হিসেবে কাউকে ভিষণ দরকার। 

|
|

লিমন যখন তাদের গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলো তখন রাত সাড়ে দশটার বেশি। যে গ্রামের মধ্যে সে ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছে সেই গ্রামের মোটামুটি সবকিছু তার মুখস্থ। চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে গিয়ে আকাশ থেকে পরার মতো ধাক্কা লাগলো লিমনের চোখে। বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি, নিশ্চয়ই কিছু একটা হচ্ছে বাড়ির মধ্যে নাহলে পুলিশ কেন আসবে? 

বাড়ির পিছনে বড় বাগানের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করে আস্তে আস্তে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। ভিতরে কিছু আলোচনা হচ্ছে যেটা বোঝা যাচ্ছে না, সাজু ভাই কি এখানে আছে নাকি? 

যেহেতু লিমন কোন পেশাদার খুনি নয় তাই এখন এই পরিস্থিতিতে কীভাবে খুন করবে সেটাই বুঝতে পারছে না। মোবাইল বের করে নিজাম উদ্দিনের কাছে কল দিয়ে বিস্তারিত জানালো। 

নিজাম উদ্দিন বললো, " তাহলে আর তোমাকে রিস্ক নিতে হবে না, সময় বহুত পাবে তুমি বরং ফিরে আসো। " 

আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লিমন সামান্য চিন্তা করে সোহাগির কথা মনে পরলো। তারা মা-বাবা মারা যাবার দিন সোহাগি এসেছিল, তাকে বারবার সে শান্তনা দিয়েছিল। কিন্তু শোকাহত সেই সময় কথা বলা হয়নি তাই তারপর তো পরদিনই তার অপহরণ। আজকে সোহাগির সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করছে, তাই চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠে নামলো লিমন। 

অন্ধকারে হাঁটতে লাগলো সে, মা-বাবার কবর দেখতে ইচ্ছে করছে। এখান থেকে সোহাগিদের বাড়িতে গেলে নিজেদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে হবে। তাই আগে মা-বাবার কবরের দিকে যাবার পরিকল্পনা করলো লিমন। আজকে তার সঙ্গে ছিল পিস্তল, কারণ নিজাম উদ্দিন বলছিল যে চেয়ারম্যানকে কাছাকাছি গিয়ে হয়তো মারা যাবে না তাই দুর থেকে গুলি করবে। 

মা-বাবার কবরের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ কান্না করে সোহাগিদের বাড়িতে গেল লিমন। সোহাগি যেই রুমে থাকে সেই রুমে একটা জানালা আছে, আর লিমন যখন শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে আসতো তখন রাতের বেলা সেই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অনেক রাত পর্যন্ত তারা কথা বলতো। লিমন সেই জানালার কাছে গিয়ে দেখে জানালা বন্ধ করা, রাত বারোটার বেশি বেজে গেছে তাই ঘুমিয়ে গেছে হয়তো। জানালা ধরে সামান্য ধাক্কা দিল, তিনটা ধাক্কা দেবার পরে সোহাগির নাম ধরে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলো।

মাত্র দুটো ডাক দিতেই ধুম করে জানালা খুলে গেল, আর তখনই জানালার সামনে দাঁড়িয়ে সোহাগি বললো,

- লিমন তুমি? 

- কেমন আছো সোহাগি? 

- আমার আর থাকা না থাকা কিছু নেই, তোমার জন্য চিন্তা করতে করতে আমার রাতদিন সমান হয়ে গেছে লিমন। তুমি কেমন আছো? 

- আমি ভালো আছি, তুমি কি ঘুমাও নি? ডাক দিতেই জানালা খুলে দিলে। 

- জেগে ছিলাম, জানালা ধাক্কার শব্দ শুনেছি কিন্তু ভাবিনি তুমি আসবে। তারপর যখন ডাকলে তখন বুঝতে পারছি এটা আমার লিমন। 

- তোমার মা-বাবা আমার বিষয় কিছু বলে না? 

- খুব খারাপ খারাপ কথা বলে জানো? আমার সামনে যখন বলে তখন খুব কান্না আসে, আমি তোমার কোন বদনাম শুনতে পারিনা। 

- কিন্তু সত্যি তো মানতে হবে। 

- বাবা বলেছে তোমাকে ভুলে যেতে হবে। 

- তাহলে ভুলে যাও। 

- মরে যাবো, তবুও পারবো না। তুমি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে? 

- সবকিছু বাড়িঘর ছেড়ে যদি পালিয়ে যাই তাহলে খাবো কি শহরে? শহরের মধ্যে দুমুঠো ভাতের কত মূল্য তা জানো? 

- আমরা ওই স্বর্নের পুতুল বিক্রি করবো তাহলে তো আমাদের মেলা মেলা টাকা হবে। 

- কি বললা? তুমি সেই পুতুলের কথা জানো? 

- হ্যাঁ জানি, পুতুলটা আমার কাছেই ছিল। কিন্তু তোমার কোন খোঁজ নেই এদিকে ওটা নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তা হচ্ছিল তাই আমি সাজু ভাইয়ের কাছে কল দিয়ে দেখা করলাম। তারপর তাকে সবকিছু বলে তার হাতে পুতুলটা দিয়ে দিছি। 

- এখন সেই পুতুল কার কাছে? সাজু ভাইয়ের কাছে আছে? 

- হ্যাঁ। 

- আমার ওই পুতুল যেভাবেই হোক ছিনিয়ে নিতে হবে সোহাগি। 

- কোথায় যাচ্ছ? 

- সাজু ভাইয়ের এলাকায়, আজকে রাতের মধ্যে আমি সাজু ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে পুতুল নিয়ে নেবো। 

- মাথা ঠান্ডা করো প্লিজ, আচ্ছা আমি যেহেতু তার কাছে দিয়েছি সেহেতু আমি তাকে বলে যদি চাই তাহলে তো দিয়ে দেবে। 

- পাগল নাকি তুমি? সাজু ভাই গোয়েন্দা মানুষ তাই তিনি অজস্র প্রশ্ন করবে তোমাকে। 

- কিন্তু তুমি ওটা দিয়ে কি করবে? আমার তো মনে হচ্ছে না যে তুমি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সেটা হাত করতে চাচ্ছ। 

- সোহাগি শোনো, ওই পুতুলের জন্য অনেক কিছু ঘটছে, একজন করে খুন করে আরেকজনকে দিয়ে সেই খুনিকে খুন করানো হচ্ছে। মানে কাটা দিয়ে আবার কাটা নির্মুল করা হচ্ছে, আমিও এখন একটা কাটা। আমাকেও যেকোনো সময় তারা কাটা দিয়ে তুলে ফেলবে তাই তার আগেই আমি সেই আসল পরিকল্পনাকারীর কাছে পৌঁছাতে চাই। আর তারজন্য দরকার সেই পুতুল, পুতুলটা হলে আমি আসল প্ল্যানকারীর নিকটে যেতো পারবো সোহাগি। 

জানলা ধরে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সোহাগি আর অন্ধকারে বাগান চিড়ে বের হয়ে হাঁটতে লাগলো লিমন। সোহাগি ভাবছে কেন যে লিমনের সঙ্গে পুতুলের কথা বলতে গেল? এখন যদি সেই কারণে সাজু ভাইয়ের কোন ক্ষতি করে? 

মোবাইল বের করে কল দিল কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। 

★★

সবসময় পেইজে আগে পোস্ট করা হচ্ছে তাই যারা যারা এড নেই সবাই এড হয়ে নিন এবং আপনার পরিচিতদের এড করুন। 

পরইজ মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব 

★★

চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বাড়িতে ফিরে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত দুটি বেজে গেছিল। তাড়াতাড়ি করে বিছানায় শুয়ে মোবাইল সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে গেছিল সাজু ভাই। কিন্তু ফজরের খানিকটা আগে কারো মৃদু ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল, রুমটা অন্ধকার তবে তার বিছানার সামনে অন্ধকারে কেউ যে দাঁড়িয়ে আছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে উঠতে পারলো না কারণ তার হাত পা খাটের সঙ্গে বাঁধা। 

- কে ওখানে? 

- সাজু ভাই আমি লিমন, কেমন আছেন? 

- লিমন তুমি? এখানে কীভাবে আসলে আর তুমি আমার হাতপা বেঁধে রাখছো কেন? 

- সবকিছু বলবো, আগে বলেন সেই পুতুলটা কোথায়? 

- কিসের পুতুল? 

- স্বর্নের পুতুল, সোহাগি যেটা আপনাকে দিয়েছে আমি সেই পুতুলের কথা বলছি। 

- সোহাগি আমাকে কোন পুতুল দেয় নাই। 

- কেন শুধু শুধু মিথ্যে কথা বলছেন? ভাই আমি কিন্তু এখন খুব খারাপ, আমার সঙ্গে একটা খুব ছোট্ট একটা পিস্তল আছে। রাত দশটার দিকে চেয়ারম্যানকে খুন করতে গেছিলাম কিন্তু সেখানে নিশ্চয়ই আপনি গেছিলেন তাই না? আপনার জন্য আমি আমার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী একটা অপরাধীকে মারতে পারিনি। 

- তাহলে তুমি সত্যি সত্যি গেছিলে? 

- হ্যাঁ গেছিলাম, এবার আপনি তাড়াতাড়ি পুতুলের সন্ধান বলেন নাহলে কিন্তু আমার পিস্তলের গুলি খরচ করার পরিকল্পনা করতে হবে। জানেন তো আমি এখন পাক্কা হারামজাদা হাহাহা হাহাহা। 

.

  
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#16
 পর্বঃ- ০৮ 

- হ্যাঁ চেয়ারম্যানকে খুন করতে হবে, নাহলে তো তোমার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী অপরাধীদের শাস্তি সম্পন্ন হবে না। তুমি তো নিজের হাতে খুনের সঙ্গে জড়িত সবাই কে খুন করতে চাও আর সেই ব্যবস্থা আমরা তোমাকে করে দিচ্ছি। 

- কিন্তু এতকিছু করে আপনাদের লাভ কি? আমি আপনাদের কেউ না কিন্তু তবুও আপনারা আমার সহোযোগিতা করছেন কেন? পৃথিবীতে স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু করে না, বাচ্চা যদি কান্না না করে তবে কিন্তু মা কখনো দুধ পান করায় না। 

- হ্যাঁ আমাদের কিছু স্বার্থ আছে। 

- কিসের স্বার্থ? আমি কি জানতে পারি? 

- তোমার বাবার কাছে একটা স্বর্নের পুতুল ছিল, সেটা এখন কোথায় আছে সেই তথ্য তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে। তবে সেটা এখন নয়, তুমি আগে তোমার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী সকল অপরাধী খুন করবা তারপর। 

- একের পর এক হত্যা করাচ্ছেন আপনারা, তবে আমি নিশ্চিত এদের সঙ্গে আপনাদের ব্যক্তিগত কিছু ঝামেলা হয়েছে। 

- তুমি কিন্তু বেশি কথা বলো, ভুলে যেও না যদি তোমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেই তাহলে কিন্তু তোমার ফাঁসি হবে। তাই বেশি কৌতুহল না করে চুপচাপ যা বলা হয়েছে তাই করো, আমাদের কাজ শেষ হলে আমরা তোমাকে দেশ ছাড়তে সাহায্য করবো। 

- বিশ্বাস হয় না। 

- কেন? আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে আপনারা সব কাজ শেষ হলে আমাকেও শেষ করবেন। আপনি বা আপনার বস খুব ভালো খেলোয়াড়, নিজেদের স্বার্থের জন্য যখন যাকে দরকার তাকে ব্যবহার করেন। কিন্তু পরে ঠিকই তাদের সরিয়ে দেন এই পৃথিবী থেকে অনেক দুরে। 

- কি বলতে চাও তুমি? 

- কিছু না। তৌহিদকে খুন করে আমার অনেক খারাপ লেগেছে, ও ছিল আমার সবচেয়ে ভালো একটা বন্ধু। 

- কিন্তু সে তোমার সঙ্গে বেঈমানী করেছে। 

- কিন্তু তার কোন প্রমাণ নেই, আপনার কথার উপর ভিত্তি করে তাকে হত্যা করেছি। 

- এখন চেয়ারম্যানকেও ঠিক সেভাবেই হত্যা করা হবে, এবং তার আগে তার মুখ দিয়ে পুতুলের বিষয় কিছু জানে নাকি সেটা জিজ্ঞেস করবে। 

- আচ্ছা ঠিক আছে, আমি জানি আমার খুবই করুণ পরিণতি হবে সামনে। যদি আপনাদের কথা মেনে চলি তাহলে দিনদিন খুনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, আর যদি কথা না শুনি তাহলে তো আমি হবো আইনের চোখে অপরাধী। তাই যতদিন বাঁচি ততদিন ও খুনিদের শেষ করতে চাই, তারপর যা হবার হোক। 

- তৈরি থেকো। 

নিজাম উদ্দিন রুম থেকে বের হয়ে গেল, এতক্ষণ দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সবকিছু শুনছিল সেই নাসরিন। লিমনের কথাগুলো শুনে তার চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পরছে, নিজাম চলে যাবার পরে সে রুমের মধ্যে ঢুকে লিমনের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। 

- লিমন বললো, কিছু বলবে? 

- অনেক কিছু বলতে চাই, আমি বললেই কি তুমি আমার কথা শুনবে? 

- বলে তো দেখতে পারো, তাই না? 

- তুমি ওদের কথা মতো খুন না করে নিজে এখান থেকে পালিয়ে যাও প্লিজ প্লিজ। 

- কেন? 

- তুমি খুব ভালো একটা ছেলে, পড়াশোনা করে অনেক ভালো ভবিষ্যত তোমার সামনে। কিন্তু এই ভাগ্যের উত্থানপতনের জন্য আজ তুমি কতটা খারাপ হয়ে গেলে। তাই তোমার কাছে অনুরোধ রইল তুমি যখন বের হবে তখন যশোর থেকে বডার পার হয়ে ইন্ডিয়া চলে যাও। 

- কিন্তু তাহলে তো আমার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী লোকদের চিনতে পারবো না। সবাই তখন দিব্যি সুন্দর জীবনযাপন করবে, কিন্তু যেখানে আমার মা-বাবা মারা গেছে সেখানে আমাকেই পালিয়ে যেতে হবে। 

- নিজের জীবন বিপদে না ফেলে সেটাই করতে হবে লিমন, জানি না তোমার দিকে তাকালে কেন যেন খুব কষ্ট লাগে। আচ্ছা চলো-না তুমি আর আমি পরিকল্পনা করে পালিয়ে যাই। দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে কোন একটা প্রদেশে জীবন পার করে দেবো। 

- সেটা সম্ভব না। 

- কেন? 

- আমি একজনকে ভালবাসি। 

- ওহ্ আচ্ছা, কে সে? 

- আমাদের গ্রামের মেয়ে, নাম সোহাগি। আমার জন্য সে সারাজীবন অপেক্ষা করবে, যদি মারা যাই সেটা ভিন্ন কথা। 

- একটা কথা বলবো কিছু মনে করবে না তো? 

- বলো। 

- তুমি এখন তোমার এলাকার মানুষের চোখে একটা খারাপ ছেলে তাই সবকিছু জেনে এখনও কি সেই মেয়ের মা-বাবা তোমার সঙ্গে তাদের মেয়ে বিয়ে দেবে? 

- সেটা তাদের ইচ্ছে, কিন্তু আমি তাকে ছাড়া কিছু ভাবিনি কখনো, তাছাড়া তোমার সঙ্গে আমার কোন তেমন পরিচয় নেই। 

- ঠিক আছে। 

★★★

চা-নাস্তা শেষ করে সাজু ভাই তৌহিদের বাকিটা মেসেজ পড়লো। আর চেয়ারম্যান সাহেব পরবর্তী টার্গেট সেটা মোটামুটি করে পরিষ্কার বুঝতে পারা গেল। কিন্তু এই রাতে আঁধারে এখনই কি সে ওই গ্রামের মধ্যে যাবে? শরীর অসুস্থ, কিন্তু তবুও গিয়ে যদি চেয়ারম্যানকে বাঁচানো যায় তাহলে তো খুব ভালো হতো। 

দারোগা সাহেবের কাছে কল দিয়ে তাকে গ্রামের মধ্যে আসতে বলে সাজু ভাই নিজের বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল। রাজুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে কারণ সঙ্গী হিসেবে কাউকে ভিষণ দরকার। 

|
|

লিমন যখন তাদের গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলো তখন রাত সাড়ে দশটার বেশি। যে গ্রামের মধ্যে সে ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছে সেই গ্রামের মোটামুটি সবকিছু তার মুখস্থ। চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে গিয়ে আকাশ থেকে পরার মতো ধাক্কা লাগলো লিমনের চোখে। বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি, নিশ্চয়ই কিছু একটা হচ্ছে বাড়ির মধ্যে নাহলে পুলিশ কেন আসবে? 

বাড়ির পিছনে বড় বাগানের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করে আস্তে আস্তে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। ভিতরে কিছু আলোচনা হচ্ছে যেটা বোঝা যাচ্ছে না, সাজু ভাই কি এখানে আছে নাকি? 

যেহেতু লিমন কোন পেশাদার খুনি নয় তাই এখন এই পরিস্থিতিতে কীভাবে খুন করবে সেটাই বুঝতে পারছে না। মোবাইল বের করে নিজাম উদ্দিনের কাছে কল দিয়ে বিস্তারিত জানালো। 

নিজাম উদ্দিন বললো, " তাহলে আর তোমাকে রিস্ক নিতে হবে না, সময় বহুত পাবে তুমি বরং ফিরে আসো। " 

আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লিমন সামান্য চিন্তা করে সোহাগির কথা মনে পরলো। তারা মা-বাবা মারা যাবার দিন সোহাগি এসেছিল, তাকে বারবার সে শান্তনা দিয়েছিল। কিন্তু শোকাহত সেই সময় কথা বলা হয়নি তাই তারপর তো পরদিনই তার অপহরণ। আজকে সোহাগির সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করছে, তাই চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠে নামলো লিমন। 

অন্ধকারে হাঁটতে লাগলো সে, মা-বাবার কবর দেখতে ইচ্ছে করছে। এখান থেকে সোহাগিদের বাড়িতে গেলে নিজেদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে হবে। তাই আগে মা-বাবার কবরের দিকে যাবার পরিকল্পনা করলো লিমন। আজকে তার সঙ্গে ছিল পিস্তল, কারণ নিজাম উদ্দিন বলছিল যে চেয়ারম্যানকে কাছাকাছি গিয়ে হয়তো মারা যাবে না তাই দুর থেকে গুলি করবে। 

মা-বাবার কবরের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ কান্না করে সোহাগিদের বাড়িতে গেল লিমন। সোহাগি যেই রুমে থাকে সেই রুমে একটা জানালা আছে, আর লিমন যখন শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে আসতো তখন রাতের বেলা সেই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অনেক রাত পর্যন্ত তারা কথা বলতো। লিমন সেই জানালার কাছে গিয়ে দেখে জানালা বন্ধ করা, রাত বারোটার বেশি বেজে গেছে তাই ঘুমিয়ে গেছে হয়তো। জানালা ধরে সামান্য ধাক্কা দিল, তিনটা ধাক্কা দেবার পরে সোহাগির নাম ধরে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলো।

মাত্র দুটো ডাক দিতেই ধুম করে জানালা খুলে গেল, আর তখনই জানালার সামনে দাঁড়িয়ে সোহাগি বললো,

- লিমন তুমি? 

- কেমন আছো সোহাগি? 

- আমার আর থাকা না থাকা কিছু নেই, তোমার জন্য চিন্তা করতে করতে আমার রাতদিন সমান হয়ে গেছে লিমন। তুমি কেমন আছো? 

- আমি ভালো আছি, তুমি কি ঘুমাও নি? ডাক দিতেই জানালা খুলে দিলে। 

- জেগে ছিলাম, জানালা ধাক্কার শব্দ শুনেছি কিন্তু ভাবিনি তুমি আসবে। তারপর যখন ডাকলে তখন বুঝতে পারছি এটা আমার লিমন। 

- তোমার মা-বাবা আমার বিষয় কিছু বলে না? 

- খুব খারাপ খারাপ কথা বলে জানো? আমার সামনে যখন বলে তখন খুব কান্না আসে, আমি তোমার কোন বদনাম শুনতে পারিনা। 

- কিন্তু সত্যি তো মানতে হবে। 

- বাবা বলেছে তোমাকে ভুলে যেতে হবে। 

- তাহলে ভুলে যাও। 

- মরে যাবো, তবুও পারবো না। তুমি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে? 

- সবকিছু বাড়িঘর ছেড়ে যদি পালিয়ে যাই তাহলে খাবো কি শহরে? শহরের মধ্যে দুমুঠো ভাতের কত মূল্য তা জানো? 

- আমরা ওই স্বর্নের পুতুল বিক্রি করবো তাহলে তো আমাদের মেলা মেলা টাকা হবে। 

- কি বললা? তুমি সেই পুতুলের কথা জানো? 

- হ্যাঁ জানি, পুতুলটা আমার কাছেই ছিল। কিন্তু তোমার কোন খোঁজ নেই এদিকে ওটা নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তা হচ্ছিল তাই আমি সাজু ভাইয়ের কাছে কল দিয়ে দেখা করলাম। তারপর তাকে সবকিছু বলে তার হাতে পুতুলটা দিয়ে দিছি। 

- এখন সেই পুতুল কার কাছে? সাজু ভাইয়ের কাছে আছে? 

- হ্যাঁ। 

- আমার ওই পুতুল যেভাবেই হোক ছিনিয়ে নিতে হবে সোহাগি। 

- কোথায় যাচ্ছ? 

- সাজু ভাইয়ের এলাকায়, আজকে রাতের মধ্যে আমি সাজু ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে পুতুল নিয়ে নেবো। 

- মাথা ঠান্ডা করো প্লিজ, আচ্ছা আমি যেহেতু তার কাছে দিয়েছি সেহেতু আমি তাকে বলে যদি চাই তাহলে তো দিয়ে দেবে। 

- পাগল নাকি তুমি? সাজু ভাই গোয়েন্দা মানুষ তাই তিনি অজস্র প্রশ্ন করবে তোমাকে। 

- কিন্তু তুমি ওটা দিয়ে কি করবে? আমার তো মনে হচ্ছে না যে তুমি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সেটা হাত করতে চাচ্ছ। 

- সোহাগি শোনো, ওই পুতুলের জন্য অনেক কিছু ঘটছে, একজন করে খুন করে আরেকজনকে দিয়ে সেই খুনিকে খুন করানো হচ্ছে। মানে কাটা দিয়ে আবার কাটা নির্মুল করা হচ্ছে, আমিও এখন একটা কাটা। আমাকেও যেকোনো সময় তারা কাটা দিয়ে তুলে ফেলবে তাই তার আগেই আমি সেই আসল পরিকল্পনাকারীর কাছে পৌঁছাতে চাই। আর তারজন্য দরকার সেই পুতুল, পুতুলটা হলে আমি আসল প্ল্যানকারীর নিকটে যেতো পারবো সোহাগি। 

জানলা ধরে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সোহাগি আর অন্ধকারে বাগান চিড়ে বের হয়ে হাঁটতে লাগলো লিমন। সোহাগি ভাবছে কেন যে লিমনের সঙ্গে পুতুলের কথা বলতে গেল? এখন যদি সেই কারণে সাজু ভাইয়ের কোন ক্ষতি করে? 

মোবাইল বের করে কল দিল কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। 

★★

সবসময় পেইজে আগে পোস্ট করা হচ্ছে তাই যারা যারা এড নেই সবাই এড হয়ে নিন এবং আপনার পরিচিতদের এড করুন। 

পরইজ মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব 

★★

চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বাড়িতে ফিরে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত দুটি বেজে গেছিল। তাড়াতাড়ি করে বিছানায় শুয়ে মোবাইল সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে গেছিল সাজু ভাই। কিন্তু ফজরের খানিকটা আগে কারো মৃদু ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল, রুমটা অন্ধকার তবে তার বিছানার সামনে অন্ধকারে কেউ যে দাঁড়িয়ে আছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে উঠতে পারলো না কারণ তার হাত পা খাটের সঙ্গে বাঁধা। 

- কে ওখানে? 

- সাজু ভাই আমি লিমন, কেমন আছেন? 

- লিমন তুমি? এখানে কীভাবে আসলে আর তুমি আমার হাতপা বেঁধে রাখছো কেন? 

- সবকিছু বলবো, আগে বলেন সেই পুতুলটা কোথায়? 

- কিসের পুতুল? 

- স্বর্নের পুতুল, সোহাগি যেটা আপনাকে দিয়েছে আমি সেই পুতুলের কথা বলছি। 

- সোহাগি আমাকে কোন পুতুল দেয় নাই। 

- কেন শুধু শুধু মিথ্যে কথা বলছেন? ভাই আমি কিন্তু এখন খুব খারাপ, আমার সঙ্গে একটা খুব ছোট্ট একটা পিস্তল আছে। রাত দশটার দিকে চেয়ারম্যানকে খুন করতে গেছিলাম কিন্তু সেখানে নিশ্চয়ই আপনি গেছিলেন তাই না? আপনার জন্য আমি আমার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী একটা অপরাধীকে মারতে পারিনি। 

- তাহলে তুমি সত্যি সত্যি গেছিলে? 

- হ্যাঁ গেছিলাম, এবার আপনি তাড়াতাড়ি পুতুলের সন্ধান বলেন নাহলে কিন্তু আমার পিস্তলের গুলি খরচ করার পরিকল্পনা করতে হবে। জানেন তো আমি এখন পাক্কা হারামজাদা হাহাহা হাহাহা। 

.

  
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#17
 পর্ব:- ০৯

- সাজু ভাই বললো 'তুমি কিন্তু ভুল করছো লিমন কারণ এভাবে কেউ ভালো পথে থাকতে পারে না।'

- আমি জানি আপনার অনেক জ্ঞান, আপনি যে আমাকে অনেক কিছু বলবেন সেটাও জানি। আর আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আপনার কথাগুলো সম্পুর্ন সঠিক। কিন্তু ওই যে "সাক্ষী মানি কিন্তু তাল গাছটা আমার" আমার সিদ্ধান্ত আমি নিজে গ্রহণ করবো। 

- তুমি আমার কথা মতো চললে আমি নিজে কিন্তু তোমাকে সহযোগিতা করবো, ভুলে যেওনা যেন যে তোমার উপকার করতে আমি এসেছি। 

- আপনি বড্ড কথা ঘোরাচ্ছেন সাজু ভাই, সময় থাকতে তাড়াতাড়ি বলেন পুতুল কোথায়? কারণ একটু পরে আকাশ পরিষ্কার হবে তখন কিন্তু আমি ফিরতে পারবো না। 

- আমি কিছুতেই তোমাকে সেই পুতুলের সন্ধান দেবো না লিমন। 

- ঠিক আছে আমিই খুঁজে বের করবো। 

লিমন তখন চারিদিকে খুঁজতে লাগলো, রুমের মধ্যে সবকিছু ওলট-পালট করে তন্নতন্ন করে সে পুতুল খুঁজতে মরিয়া হয়ে গেল। প্রায় বিশ মিনিট খোঁজার পরে হঠাৎ করে রুমের মধ্যে বাথরুমের ফলছাদে চোখ গেল। সাজু ভাইয়ের রুমের সঙ্গে এডজাস্ট বাথরুম আছে আর তারই ছাদে উঠে গেল লিমন। তারপর একটু পরে সেখান থেকেই কালো কাপড়ে মোড়ানো পুতুলটা নিয়ে বেরিয়ে এলো লিমন। 

- সাজু ভাই বললো, খবরদার ওটা তুমি সঙ্গে করে নেবে না তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে বেশি খারাপ আর কেউ হবে না। 

- আচ্ছা ঠিক আছে সাজু ভাই আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। 

- একটা কথা বলবো লিমন? 

- বলেন ভাই। 

- পুতুলটা রেখে যাও। 

- আসি ভাই, বেয়াদবি ক্ষমা করবেন আর আমার অপরাধ নিবেন না। 

সাজু ভাইকে সেভাবেই বেঁধে রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেল লিমন, ড্রইং রুমে সাজুর দাদা এখনো বসে আছে। লিমন তাকে দেখে বললো:- 

- ধন্যবাদ দাদু। 

- ভুত দেখার মতো চমকে গেল লিমন, তারপর বললো " কে আপনি? আর ঘরের মধ্যে কীভাবে প্রবেশ করলেন আপনি? "

- আপনি একটু আগে বাহিরে গেলেন তখনই আমি ঢুকেছি, আর সেজন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি বরং তাড়াতাড়ি গিয়ে সাজু ভাইর বাঁধন খুলে দেন, তাকে বেঁধে রেখেছি কিন্তু সত্যি বলছি কোন ক্ষতি করিনি। 

হাতে পিস্তল ঘোরাতে ঘোরাতে দরজা খুলে বের হয়ে গেল লিমন, আর সোফা চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠেই সাজুর রুমে গেল দাদা। রুমের মধ্যে গিয়ে তাড়াতাড়ি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাঁধন খুলতে লাগলো। হাতের বাঁধন থেকে মুক্তি পেয়ে সাজু ভাই বাড়ির সামনে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। ছোট্ট একটা মুচকি হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে রুমে প্রবেশ করলো, সাজুর মুখের হাসি দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তার দাদা। 

ফজরের নামাজ পড়ে সাজু ভাই মোবাইল বের করে দারোগার কাছে কল দিল। দারোগা সাহেব নিজেও তখন ফজরের নামাজ পড়ে মাত্র চায়ের জন্য বসে অপেক্ষা করছিল। 

- আসসালামু আলাইকুম সাজু সাহেব। 

- জ্বি ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন দারোগা সাহেব? 

- গতকাল রাতে বাসায় ফিরতে তো রাত পেরিয়ে গেল, চোখে এখনো ঘুম টলমল করে। কিন্তু ভাই আপনি তো বলেছিলেন যে লিমন নাকি আসার সম্ভবনা আছে কিন্তু কোই? 

- লিমন এসেছিল দারোগা সাহেব। 

- বলেন কি? কখন? আর চেয়ারম্যান এখন ঠিক আছে তো? 

- হ্যাঁ, কারণ লিমন চেয়ারম্যান বাড়িতে যায়নি, সে আমাদের উপস্থিতি জানতে পেরেছে তাই সেখানে গিয়ে নিজের বিপদ ডাকেনি। 

- যাক আলহামদুলিল্লাহ। 

- পুতুলটা আমি রক্ষা করতে পারি নাই দারোগা সাহেব, আমি ব্যর্থ হয়েছি। 

- কিসের পুতুল? সেই স্বর্নের পুতুল নাকি? 

- হ্যাঁ দারোগা সাহেব। লিমনের বাবা সেই পুতুল মৃত্যুর দুদিন আগে লিমনের গার্লফ্রেন্ড সোহাগির কাছে দিয়ে গেছিল। সোহাগি সেদিন আমাকে সেই পুতুল দিয়েছিল, আমি কাউকে কিছু বলিনি কারণ আমি অনুসন্ধান করছিলাম। 

- তারপর? 

- আজকে ফজরের কিছুক্ষণ পূর্বে আমার দাদা বাহিরে বের হইছিল, তখন দরজা খোলা দেখে লিমন প্রবেশ করেছে। 

- আপনার দাদা তখন কেন বের হয়েছে? আর আপনি ঠিক আছেন তো? 

- আমি ঠিক আছি। দাদার একটা গাভী আছে, গতকাল বিকেল থেকে ওটা নাকি কেমন কেমন করছিল। শেষরাতের দিকে গাভীর ৩/৪ টা ডাক কানে যেতেই দাদা বের হয়ে গেল। 

- পুতুলটা দিয়ে সে কি করবে? 

- সেটাও বুঝতে পারেন না? আচ্ছা বাদ দেন, আর আপনাকে তৈরী থাকতে হবে। আমি যখনই ডাক দেবো তখন আপনার বাহিনী নিয়ে আমার সঙ্গে যেতে হবে। আমরা মোটামুটি আসল খুনির নিকট ঘেঁষে দাঁড়াবার অপেক্ষায় আছি। 

- সত্যি বলছেন আপনি? 

- সত্যি সত্যি সত্যি। 

- কথাটা শুনে অনেক ভালো লাগছে। 

- রাখলাম তাহলে। 

★★

বেলা দশটার দিকে লিমন সোহাগির কাছে কল দিয়ে বললো, 

- আমি যদি তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাই তাহলে কি আমার সঙ্গে যাবে? "

- ১০০ বার যাবো, সত্যি আমাকে নেবে? 

- হ্যাঁ সোহাগি, আমি সাজু ভাইয়ের কাছ থেকে সেই পুতুল নিয়ে এসেছি। তুমি সবসময় শুধু তৈরি থাকবে, যেকোনো সময় আমরা দুজন মিলে এই শহর গ্রাম ছেড়ে বহুদূর চলে যাবো। 

- তুমি এখন কোথায়? 

- যেখানে ছিলাম, যাদের কথায় তৌহিদকে খুন করেছি সেই তাদের কাছে আছি। 

- ওরা তোমাকে কিছু করবে না তো? 

- জানি না তবে করতে পারে, কারণ সেই পুতুল যেহেতু আমার কাছে তাই বিপদ আমার পাশেই ঘোরাঘুরি করবে। 

- কেন ওদের কাছে ফিরে গেলে? 

- কিছু অসমাপ্ত কাজ এখনো বাকি আছে তাই সেগুলো শেষ করতে হবে। 

- কবে শেষ হবে? 

- আমি পুতুল নিয়ে এসেছি সেটা শুনে নিশ্চয়ই আসল গুটিবাজ সামনে আসতে পারে। তখন নিজের জীবনের পরোয়া না করে ওকে তো আমি বিনাশ করবোই করবো। 

- সাবধানে থেকো আমার খুব ভয় করছে। 

★★

রুমের মধ্যে বিছানায় শুয়ে আছে লিমন, গতকাল রাতে ঘুমাতে পারেনি তাই চোখ ভর্তি ঘুম ঘনিয়ে আসছে। চোখের উপর হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে ছিল, এমন সময় রুমের মধ্যে নিজাম উদ্দিন ও আরও ৪ জন প্রবেশ করলো। 

- নিজাম বললো, তুমি নাকি পুতুল নিয়ে আসছো লিমন? সেই পুতুল কোথায়? 

- আপনি জানলেন কীভাবে? 

- তোমার কি ধারণা যে আমরা কোন খবর রাখি না তাই না? 

- তা ঠিক আছে কিন্তু... 

- কোন কিন্তু নেই, বলো পুতুল কোথায়?

লিমনের কাছে বারবার জিজ্ঞেস করার পরও যখন পুতুলের হদিস পাওয়া গেল না তখন নিজাম উদ্দিনের আদেশে লিমনেকে বাঁধা হলো। এতটা দ্রুত হয়ে গেল যে লিমন তার সঙ্গে থাকা পিস্তল ব্যবহার করা বা বের করারই সুযোগ পেল না। 

|
|

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে বাহিরে বকুল গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে সাজু ভাই। বকুল গাছটার ডালে একটা রঙিন পাখি, পাখির নামটা মনে আসছে না। রহস্যের গন্ধ ক্রমশ তার নাকের সামনে উপস্থিত কিন্তু সবটা সাজিয়ে যে কীভাবে প্রকাশ করা যায় সেটাই ভাবছেন। 

- পিছন থেকে সাজুর দাদা এসে বললো, দাদু একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? 

- হ্যাঁ দাদা করো। 

- ভোরবেলা ওই ছেলেটার পিছনে বাইক নিয়ে না গিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বসে রইলে কেন? 

- দাদাজান, ওই ছেলে একটা স্বর্নের পুতুল নিতে এসেছিল আমার কাছে? 

- কি..? 

- হ্যাঁ, সেদিন লিমনের নানা যেই পুতুলের কথা বলেছিল সেটা আমার কাছে ছিল। আজকে সেই পুতুল নিয়ে গেল ঠিকই কিন্তু আসল পুতুল নয়। 

- মানে? 

- আমি আগেই ধারণা করেছিলাম যেহেতু লিমন এর গার্লফ্রেন্ডের হাত থেকে পুতুল আমার কাছে এসেছে সেহেতু এ কথা অবশ্যই জানাজানি হবে। তাই একটা নকল পুতুল আমি সংগ্রহ করে নিজের কাছে রেখেছি আর আসল পুতুল তোমাদের ঘরে দাদির পুরাতন পুঁটলির মধ্যে। 

- আচ্ছা বুঝতে পারছি কিন্তু নকল পুতুল দেখে কি ওরা বুঝতে পারবে না? মানে দেখতে কি একই রকম নাকি? 

- না দাদা, পুতুল দুটোই আলাদা, আর লিমন বা সেই মূল পরিকল্পনাকারী কিন্তু সেই পুতুল আগে দেখে নাই। আর লিমনের পিছনে পিছনে বাইক নিয়ে তাড়া করিনি কারণ ওই নকল পুতুল যেখানে থাকবে সেই স্থানের লোকেশন আমি দেখতে পারবো। 

- কীভাবে? 

- পরে বলবো দাদাজান, এখন একটু ভাবতে হবে তাই পরে কথা বলবো। 

- হুম। 

★★

লিমন বিছানায় হাত পা বাঁধা অবস্থায় পরে আছে আর মনে মনে হাসছে। কয়েক ঘন্টা আগেই সে সাজু ভাইকে এভাবেই বেঁধে রেখেছিল, আর এখন সে নিজেই বন্দী। নিজাম উদ্দিন বারবার তাকে পুতুলের কথা জিজ্ঞেস করছে আর লিমন শুধু বারবার মাথা নেড়ে না বলছে। 

হঠাৎ করে দরজা খুলে কালো টিশার্ট পরে একটা ছেলে প্রবেশ করলো, মুহূর্তের মধ্যে হাতের পিস্তল নিজাম উদ্দিনের দিকে তাক করে পরপর তিনটা গুলি করলো। নিজাম উদ্দিন আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে ঢলে পরলেন। 

- কালো টিশার্ট পরা লোকটা বিড়বিড় করে তখন বললো " ক্ষমা করবেন নিজাম ভাই, বসের সঙ্গে আপনি বেঈমানী করতে চেয়েছিলেন তাই বসের নির্দেশে আপনাকে মারতে বাধ্য হলাম। "

.....

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#18
 পর্ব:- ১০ (সমাপ্ত)


নিজামের লাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল লিমন, তারপর স্বাভাবিক ভাবে মাথা উঁচু করে ডান পাশে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল। দুজন ব্যক্তি এসে নিজামের লাশ নিয়ে গেল, আর সেই খুনিটা তখন লিমনকে বললো:- 

" তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আমাদের বস এখানে আসছেন, তুমি তার সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত থেকো। " 

আচমকা শক্ত হয়ে লোকটার দিকে অবাক হয়ে তাকাল লিমন, তার চোখে মুখে স্পষ্ট আশ্চর্য হবার ছাপ। 

" লিমন বললো, সত্যি সত্যি কি তিনি আসবেন নাকি তার পরিবর্তে অনেক কাউকে পাঠাবে? "

" বস নিজেই আসবে, কিন্তু তার আগে তোমার চোখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা হবে। " 

" চোখ বাধা হবে কেন? "

" কারণ তিনি তোমার পরিচিত। " 

আরও কিছুটা বিচলিত হয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। যদি পরিচিত কেউ হয় তবে আজকে কেন সামনে আসবে? তাহলে কি তিনিও পুতুলের লোভে? পুতুল তারর কাছে জেনে তিনি সামনে আসতে চাচ্ছেন, কিন্তু কীভাবে জানলো যে পুতুল লিমনের কাছে? লিমন তো শুধু সোহাগির কাছে সকাল বেলা বলেছিল, তাহলে কি...

আরও ঘন্টা খানিক পরে লিমনের চোখ সত্যি সত্যি বেঁধে দিল, কিছুক্ষণ পর রুমের মধ্যে নতুন কারো আগমন অনুভব করলো। নতুন কেউ প্রবেশ করেছে সেটা বুঝতে পারছে কারণ আলাদা একটা ঘ্রাণ আসছে নাকের ডগায়। 

" লিমন নিজেই বললো, আপনি তাহলে আমার সামনে এসেই গেলেন? তা বলেন আমি আপনার জন্য কি করতে পারি? "

" গম্ভীর কণ্ঠে জবাব এলো, এতদিনে তোমারও নিশ্চয়ই ধারণা হয়ে গেছে যে এতকিছুর পিছনে কোন জিনিস দায়ী হতে পারে। "

কণ্ঠ বেশ পরিচিত, ঠিক মনে আসছে না। লিমন কিছু বলার চেয়ে চুপ করে কণ্ঠ শুনে চিনতে চেষ্টা করছে। 

" অদৃশ্য থেকে আবারও বললো, কিছু বলছো না যে তুমি? বলো তো কারণ কি? "

" চেয়ারম্যান সাহেব...? "

" হো হো হো, বাহ চোখ বন্ধ তবুও তো বেশ চিনে গেছো আমাকে, বুদ্ধি আছে। সুপার। "

" তাহলে কি আপনিই সেই অদৃশ্য বস? "

" রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখতে হয় লিমন, তোমার বাবাকে অনেক অনুরোধ করেছি পুতুলের জন্য কিন্তু সে কথা শোনেনি। আচ্ছা বাদ দাও তো, এবার বলো সেই পুতুল কোথায়? নাহলে তোমার মা-বাবার মতো তুমিও...! "

" মেরে ফেলবেন? তাহলে পুতুল পাবেন? "

" তোমার মা-বাবার মৃত্যুর পরে কিন্তু পুতুলের সন্ধান ঠিকই বের হয়ে গেছে। তুমি মরলেও ওটা ঠিকই বের হবে, এমনিতেই তোমার কাছে ধরা পরে গেছি। তাই তোমার এ জীবনে কোনদিন তুমি আর বাহিরের জগৎ দেখতে পাবে না। "

" পুতুলের সন্ধান আমি দেবো, কিন্তু আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। আমি জানি আমাকেও আপনি খুন করাবেন, কারণ এতকিছুর পরে যে আমাকে বাঁচিয়ে রেখে কোন রিস্ক নেবেন না সেটা ভালো করে জানি। " 

" বেশ, বলো তোমার কথা। "

" আমার মা-বাবাকে খুন করেছে কে কে? "

" নিজাম ছিল, আরো ৩/৪ জন ছিল তবে তোমার চাচাতো ভাই মনিরুলও ছিল। "

" মনির ভাই? " 

" হ্যাঁ, নিজাম ওরা গেলে তো তোমার বাবা দরজা খুলবে না তাই মনিরুলের সাহায্য নিতে হয়েছে। মনিরুল তোমার বাবাকে ডেকে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করার পথ সুগম করেছে। "

" তাহলে মনির ভাইকে খুন করালেন কেন? "

" সাক্ষীদের বাঁচিয়ে রাখতে নেই, তাহলে পরবর্তী সময়ে নিজের বিপদ হয়ে যায়। তবে তোমার বন্ধু তৌহিদকে এতো সহজে রাজি করাতে পারবো সেটা ধারণা ছিল না। "

" তৌহিদ...? "

" তোমার বাড়িতে সেদিন রাতে তৌহিদ নিজেই আগুন লাগিয়েছে, কথা ছিল তোমাকে সেখানে পুড়িয়ে ফেলা। কিন্তু তোমার আরেকটা বন্ধু আগে জাগ্রত হয়ে গেছিল তাই তৌহিদ নিজেই চিৎকার করেছিল। তারপর মনিরুলের বাড়িতে তোমাকে অজ্ঞান করে মনিরুলকে খুন করে আমার লোকে আর দোষ হয়ে যায় তোমার। তোমার বাবার কবরের কাছে "সরি আব্বাজান" চিরকুট লিখে দিলাম। "

" লিমন চুপচাপ। "

" এবার বলো পুতুল কোথায়? "

" তৌহিদ বেঈমানী করেছে আমার সঙ্গে, কিন্তু সে তো আপনার কথা মতো চলছিল। "

" পাঁচ লাখ টাকার লোভ দিছিলাম, আর তৌহিদ নিজে ভয় পেয়েছে সাজু সাহেবকে দেখে। কিন্তু এ পরিকল্পনার মধ্যে সাজু সাহেব কিছুই করতে পারে নাই হাহাহা হাহাহা। "

" সাজু ভাই খুবই অসুস্থ নাহলে ঠিকই এতদিনে সবকিছু বের করতে পারতেন, গতকাল রাতে তার কাছ থেকে পুতুল আনতে গিয়ে বুঝতে পারছি। "

" কথা বেশি হয়ে যাচ্ছে, বলো পুতুল কোথায়? "

" শেষ প্রশ্ন, নিজামকে সরালেন কেন? "

" তুমি গতকাল রাতে আমাকে খুন করার জন্য কেন গিয়েছিলে? "

" নিজাম উদ্দিন বলেছিল তাই। " 

" তাহলে এবার ভাবো, আমার লোক হয়ে নিজাম আমাকে খুন করার জন্য তোমাকে পাঠায়। তার পরিকল্পনা ছিল তোমাকে দিয়ে আমাকে হত্যা করতে চাইবে, তারপর সে পুতুলটা ভোগদখল করবে। কিন্তু আমার সঙ্গে চালাকি? "

" আপনি গতকাল রাতে সাজু ভাইয়ের জন্যই বেঁচে গেছেন নাহলে ঠিকই এখন লাশ হয়ে মরার খাটে থাকতেন। "

" সামনে এমপি নির্বাচন করার ইচ্ছে করছে তাই প্রচুর টাকার দরকার, এই সন্ত্রাসী গ্রুপের জন্যও আমার মাসে মাসে অনেক খরচ। পুতুলটা বিক্রি করে আমি আমার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাবো, সে পথে কারো বাঁধা মানবো না। সকাল বেলা দারোগা যখন কল দিয়ে বললো যে তুমি নাকি পুতুল নিয়ে এসেছ সাজুর কাছ থেকে তখন তো আমার আনন্দের সীমা নেই। " 

" ভুল পথে চললে কোনদিন গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না চেয়ারম্যান সাহেব। সঠিক পথে কষ্ট হলেও চলা উচিৎ, কারণ সেখানে সফলতা আছে, কিন্তু ভুল পথে যতটা সামনে যাবেন ততটাই কিন্তু ভুলের গভীরে তলিয়ে যাবেন। " 

" জ্ঞান হজম করার কোন সময় নেই, তাড়াতাড়ি পুতুলের ঠিকানা... "

সম্পুর্ণ কথা শেষ হবার আগেই রুমের মধ্যে হুট করে কয়েকটা গুলির শব্দ হলো। রুমের মধ্যে হঠাৎ কেমন হট্টগোল হতে লাগলো, হাতপা বাঁধা লিমন কিছুই বুঝতে পারলো না। রুমের মধ্যে যারা ছিল তাদের গোঙানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে কিন্তু মারলো কে? 

বেশিক্ষণ ভাবতে হলোনা তার, ততক্ষণে নাসরিন তার চোখের কাপড় খুলে দিল। এরপর এক এক করে হাতপায়ের বাধন খুলে বললো,

" তাড়াতাড়ি পালাতে হবে, নাহলে কিন্তু আবার কেউ আসতে পারে। "

রুমের মধ্যে তিনটা লাশ পরে আছে, চেয়ারম্যান সাহেবের দিকে তাকিয়ে লিমন খানিকটা ভাবনার মধ্যে হারিয়ে গেল। নাসরিনের দিকে তাকিয়ে সে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলো, মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী সবাই শেষ। 

★★

মাঝখানে খুশির খবরটা জানাই, 
আমার বোনের মেয়ে বাবু হয়েছে, বাচ্চা একটু অসুস্থ তাই সবাই দোয়া করবেন। মা ও সন্তান দুজনেই যে ভালো থাকে। 

★★

বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে বাসের মধ্যে পাশাপাশি বসে আছে নাসরিন ও লিমন। লিমনের মুখে মাস্ক আর নাসরিন * পরিহিত, দুজনেই একসাথে খুলনার দিকে যাচ্ছে। প্রচুর পিপাসা অনুভূত হচ্ছে লিমনের, নাসরিন তার ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে এগিয়ে দিয়ে বললো,

" বাসায় ফ্রিজে লেবুর সরবত বানানো ছিল, তাই নিয়ে আসলাম সঙ্গে করে, খাবে তুমি? "

" খুব পিপাসা লেগেছে। "

" তাহলে খাও। " 

বাস চলছে, পাশাপাশি বসে আছে নাসরিন ও লিমন। বাসের ধাক্কায় কিংবা গতকাল রাতে ভালো ঘুম না হবার জন্য চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নাসরিন এর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেল লিমন, শরীর বেশ দুর্বল মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে সে শুনছে তার কানের কাছে নাসরিন ফিসফিস করে বলছে, 

" এটা তোমার জীবনের শেষ ঘুম, তুমিও তোমার মা-বাবার কাছে চলে যাচ্ছ। এতদিন পর আমি আমার পরিকল্পনায় সফল হলাম, কিন্তু আফসোস হচ্ছে কারণ নিজামকে ওরা মেরে ফেলেছে। "

লিমনের তখন চিৎকার করে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না, বাস ভর্তি মানুষ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাসটা। চারিদিকে কত মানুষ বসে কিংবা দাঁড়িয়ে, কিন্তু লিমন তাদের সাহায্য নিতে পারছে না। তারমানে নাসরিন নিজেও পুতুলটা আত্মসাৎ করতে চেয়েছে? নিজাম উদ্দিন আর সে একসঙ্গে আলাদা পরিকল্পনা করেছে। 


লিমন যখন চোখ মেলে তাকালাে তখন সে শুয়ে আছে হাসপাতালের বিছানায়। তার সামনেই বসে আছে সাজু ভাই, একজন পুলিশও দাঁড়িয়ে আছে সাজু ভাইয়ের সঙ্গে। 

" সাজু ভাই বললেন, কি খবর লিমন? "

" জ্বি ভাই, আপনি এখানে? "

" তুমি আমাকে হাত-পা বেঁধে রেখে আসছো বলে তো আমি পিছিয়ে যেতে পারি না তাই না? "

" কিন্তু...! "

" আমি কীভাবে পৌছলাম? "

" হ্যাঁ। "

" নাসরিন মেয়েটা এখন পুলিশের কাছে বন্দী আছে, তোমাকেও গ্রেফতার করা হবে। "

" জানি। "

" তুমি কি নাসরিনের চালাকি বুঝতে পারো নাই! "

" কিরকম? "

" ঝড়ে আম পরে, আর সেই আম বাহিরের কেউ কুড়াতে আসলে যেমন হয়, সেরকম। "

" মানে? "

" তুমি যে পুতুল আমার কাছ থেকে এনেছিলে সেই পুতুলটা নকল, আসল পুতুল এখনো আমার কাছেই আছে। আমি ওই নকল পুতুলের মধ্যে লোকেশন ট্র্যাকিং করার ছোট্ট মেশিন সেট করে দিছিলাম। যদিও সেটা আমার ঘরে বসে তৈরি করা ছিল ডিজিটাল হাতঘড়ির মাধ্যমে। তারপর থেকে অপেক্ষায় ছিলাম ওটা কোথায় থাকে সেটা জানার জন্য। কিন্তু তুমি তো চালাকি করে ওটা বাসস্ট্যান্ডের অদূরে ডাস্টবিনের পাশে লুকিয়ে রেখে গেলে। "

" হ্যাঁ সাজু ভাই, আমার ইচ্ছে ছিল ওদের হত্যা করে পালিয়ে চলে যাবো তাই এখানেই রেখে গেছিলাম। তারপর নাসরিনের সঙ্গে এসে পুতুল বের করে দুজনেই বাসে উঠে বসলাম। "

" কিন্তু নাসরিন নিজেও পুতুলের লোভে ছিল, তার কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞেসা করে জানলাম যে, সে আর নিজাম উদ্দিন পরিকল্পনা করেছিল পুতুল নিজেরা দখল করবে। তারপর সেই পুতুল নিয়ে তারা পালিয়ে যাবে, মূলত তোমাকে চেয়ারম্যান সাহেব ও আইনের চোখে অপরাধী করে তারা নীরবে পালাতে চাইছে। কিন্তু...! 

" কিন্তু সবকিছু আপনার জন্য ভেঙ্গে গেল কারণ সেদিন আপনি চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে পুলিশ নিয়ে গেলেন। আর আমি তাকে খুন করতে পারি নাই, চেয়ারম্যান জেনে গেল যে তাকেই নিজাম উদ্দিন আমাকে দিয়ে হত্যা করতে চায়। "

" হ্যাঁ, আর সেজন্য তার হুকুমে নিজাম উদ্দিন খুন হয়ে গেল, এদিকে নাসরিন কিছু করতে পারছিল না তাহলে তাকেও মরতে হবে। সেজন্যই নাসরিন সুযোগ খুঁজে বের করে, আর তোমার সঙ্গে তারা কথা বলার সময় পিছন থেকে ঢুকে মুহূর্তের মধ্যে সবাইকে শুইয়ে দেয়। "

" আমি নিজের জন্য ভাবছি না সাজু ভাই, কিন্তু তৌহিদের জন্য খুব খারাপ লাগছে। শত্রুদের সঙ্গে মিলে বেঈমানী করেছে ঠিকই কিন্তু তবুও কেন যেন খুব খারাপ লাগছে। "

" তৌহিদ আমাকে অনেককিছুই বলে গেছিল, সেদিন বিকেলে আমার মোবাইল পুকুরে না পরে গেলে হয়তো তাকে বাঁচাতে পারতাম। মনিরুল আর তোমার বাড়ি আগুন লাগানোর কথা সে নিজে আমাকে লিখে জানিয়ে গেছে। আর সেই কারণে সেদিন রাতে চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ি গেছিলাম। "

" বুঝতে পারছি। "

" তুমি বিশ্রাম করো, যা হবার তা হইবে, আপাতত সুস্থ হয়ে ওঠো। "

" সুস্থ হয়ে লাভ কি? দুদিন পরে তো ফাঁসি হয়ে যাবে কারণ আমি খুনি। "

" সেটা নাহয় আইন ঠিক করবে। " 

সাজু ভাই বেরিয়ে গেল, লিমন আবার তার চোখ বন্ধ করে রাখলো। বন্ধ চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার বাবা, কল্পনার মধ্যে নিজের বাবার সঙ্গে কথা বলছে। বাবা তাকে বকাবকি করছে, হঠাৎ করে কান্না করছে, কেন সে নিজের হাতে খুন করেছে? হঠাৎ করে বাবার পাশে অদৃশ্য কিছু দেখা যাচ্ছে, এটা কি তার মা? মা, ও মা..? 

শোয়া থেকে উঠে বসলাে লিমন, চারিদিকে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেল না। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল, বাবার মুখটা স্মরণ করে বিড়বিড় করে বললো 

" আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নাই বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দিও * সরি আব্বাজান *। 

সমাপ্ত। 


{লেখকের কিছু কথা}

গল্পটা সাজু ভাই সিরিজের মধ্যে হয়তো বেশি পরে না কারণ রহস্য খুবই কম ছিল। কিন্তু সত্যি বলতে আমি এটা এভাবেই পরিকল্পনা করে রেখেছি তাই সেভাবেই শেষ করলাম। যেহেতু সাজু ভাইয়ের উপস্থিতি আছে তাই সাজু ভাই সিরিজের মধ্যে রাখলাম। আসলে রহস্য গল্প লিখতে গেলে সেটা একসঙ্গে লেখা উচিৎ, এতদিন ধরে লিখলে সেই গল্পের অনেক পয়েন্ট ভুলে যাই। সারাদিন কত ব্যস্ততা যায়, তবুও চেষ্টা করা হয়েছে। 

আমি রহস্য গল্প লিখতে খুবই কাঁচা, তাই বেশি রহস্য আনতে পারি না। আস্তে আস্তে সবকিছু পারবো বলে আমার বিশ্বাস, দোয়া করবেন যেন আরও গভীর চিন্তা করতে পারি। 

 
লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#19
Darun
[+] 1 user Likes Saj890's post
Like Reply
#20
(21-11-2025, 05:09 PM)Saj890 Wrote: Darun

Thank you. Heart
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply




Users browsing this thread: