Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
08-01-2023, 12:23 PM
(This post was last modified: 14-06-2023, 12:36 AM by Bangla Golpo. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
সাজু ভাই -সিরিজ- নম্বর-০৩
গল্প:-সরি আব্বাজান।
পর্বঃ- ০১
লেখা:- মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)
---------------------------
রাত তিনটা। বাবা কল দিয়ে বললো " তোর মাকে এইমাত্র খুন করেছি আমিও আত্মহত্যা করব। যদি পারিস তাে আমাকে ক্ষমা করে দিস। সকালে এসে আমাদের লাশ দুটো দাফনের ব্যবস্থা করিস, এই পৃথিবীতে তুই একা হয়ে গেলি, চিন্তা করিস না দুরের ওই আকাশ থেকে তোকে আশীর্বাদ সর্বদা করবো। "
- আমি কান্না জড়িত কণ্ঠে বললাম, বাবা তুমি এসব কি বলছো? মাকে কেন খুন করছো? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না, নাকি মজা করছো? "
- বেশি কথা বলে সময় নষ্ট করবো না, তোর মা এতক্ষণে পরপারে অনেকদূর চলে গেছে। আমি এখনই আত্মহত্যা করে তার সঙ্গে হাঁটতে শুরু করবো নাহলে সে হারিয়ে যাবে।
- বাবা প্লিজ, মায়ের কাছে মোবাইল দাও আমি তার সঙ্গে কথা বলবো।
- সে তো গলা কাটা অবস্থায় নিশ্চুপ হয়ে ঘুমিয়ে আছে, তুই সকাল বেলা তাড়াতাড়ি গ্রামের বাড়িতে চলে আয়। আমাদের দুজনের লাশ যেন পুলিশ পোস্টমর্টেম করে কাটাছেঁড়া না করে।
মোবাইল কেটে গেল, সঙ্গে সঙ্গে বাবার নাম্বার আবারও কল দিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ। মায়ের নাম্বারে কল দিলাম, রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। বিছানায় বসে কান্না করতে লাগলাম, আমার রুমমেট তৌহিদ ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে আমার কাছে এলো। তারপর আমি তাকে বললাম আর সে বললো বাড়ির আশেপাশে কারো কাছে কল দিয়ে খবর নিতে।
সঙ্গে সঙ্গে চাচাতো ভাই মনিরুলের কাছে কল দিলাম, প্রায় পাঁচবার কল করার পরে চাচাতো ভাই ঘুমঘুম জড়িত কণ্ঠে বললো " কিরে লিমন? এতরাতে কেউ কল করে? নাকি জরুরি কিছু? "
- আমি কান্না করতে করতে বললাম, মনির ভাই আমাদের বাড়িতে একটু দেখবা মা-বাবা কেমন আছে?
- কেন? চাচা চাচীর কি হয়েছে?
- বাবা নাকি মাকে খুন করেছে আর সে নিজেও এখন আত্মহত্যা করবে। আমাকে কল দিয়ে এসব বলে কল কেটে দিয়েছে, আমি তো শহরে আছি তাই তুমি একটু যাবে?
- বলিস কি? আমি এক্ষুনি যাচ্ছি, হায় আল্লাহ চাচা কেন চাচিকে খুন করবে?
- তুমি একটু তাড়াতাড়ি যাও, আর গিয়ে আমাকে কল দিয়ে জানিও। আমি বরং ততক্ষণে সবকিছু গুছিয়ে রওনা দিচ্ছি, প্লিজ তাড়াতাড়ি যাও।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি খাট থেকে নেমে তাড়াতাড়ি প্যান্ট শার্ট পরা শুরু করেছি, তৌহিদ কি করবে বুঝতে না পেরে আমাকে বললো " আমিও তোর সঙ্গে যাবো। "
- তুই কেন যাবি?
- সত্যি সত্যি যদি চাচা চাচির বিপদ হয়ে যায় তবে তো...
- প্লিজ এমন বলিস না, পৃথিবীতে আমার মা-বাবা ছাড়া কেউ নেই।
- আচ্ছা মাথা ঠান্ডা কর আর চল তাড়াতাড়ি।
রুম থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছি, কোন ধরনের গাড়ি দেখতে পাচ্ছি না। মেইন রাস্তার দিকে গিয়ে কিছু একটা পাওয়া যেতে পারে, তাই স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছি। মুজগুন্নি বাসস্ট্যান্ডে এসে একটা মাহিন্দা পেলাম, রাতের বেলা দু'একটা গাড়ি চলে জানতাম তাই উঠে বসলাম। মাহিন্দার মধ্যে বসা অবস্থায় মনির ভাই কল দিলেন।
- হ্যাঁ মনির ভাই?
- লিমন তোদের রুমের দরজা তো ভিতর থেকে বন্ধ করা, ভিতরে বাতি জ্বলে। কিন্তু ডাকাডাকি করে কোন শব্দ পাচ্ছি না, এখন কি করবো?
- আপনি দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করুন, তাড়াতাড়ি করুন মনির ভাই।
- সত্যি সত্যি যদি তেমন কিছু হয়ে যায় তাহলে আবার পুলিশের ঝামেলা হবে না তো? কারণ পুলিশ যদি তখন বলে যে আমি দরজা কেন ভেঙ্গে প্রবেশ করলাম?
- না কিছু হবে না, আমি তখন বলবো যে আমার নির্দেশে আপনারা দরজা ভেঙ্গেছেন।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
কল কেটে দিয়ে এক অস্থিরতার মধ্যে হাহুতাশ করতে লাগলাম। ভিতরে ঢুকে তারা কি খবর দেয় সেটা অনুমান করতে কষ্ট হচ্ছে, আমার মা-বাবার মধ্যে তো কোন রাগারাগি দেখিনি কোনোদিন তাহলে কেন এমন করবে বাবা?
- মিনিট দশেক পরে মনির ভাই কল দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো " লিমন তুই কোথায়? "
- আমি চিৎকার করে বললাম, মনির ভাই আমি গাড়িতে আছি, কিন্তু মা-বাবা ঠিক আছে তো?
- কিছু ঠিক নেই লিমন, চাচা চাচী দুজনের লাশ হয়ে গেছে লিমন, তুই তাড়াতাড়ি আয় তোর বাবা মা আর দুনিয়ায় নেই।
আমি তখন একটা চিৎকার করে আর কিছু বলতে পারি নাই, তৌহিদ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইল। মাহিন্দার মধ্যে আরও দুজন যাত্রী ছিল তারা কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইল।
রূপসা নদীর ঘাটে গিয়ে কোন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না, কিছুক্ষণ পর তৌহিদ বললো " আমাদের বন্ধু পারভেজের তো বাইক আছে, তাকে কল দিয়ে কি আসতে বলবো? "
- হ্যাঁ চেষ্টা কর।
পারভেজের বাসা টুটপাড়া কবরস্থানের কাছেই, সে শুনেই সঙ্গে সঙ্গে বাইক নিয়ে বেরিয়ে এলো। আধা ঘণ্টা পরে সে যখন আমাদের কাছে এসে পৌঁছাল তখন তিনজনে মিলে রূপসা ব্রিজের দিকে যাচ্ছি। আমাকে মাঝখানে বসিয়ে তৌহিদ শক্ত করে ধরে রেখেছে, পারভেজ তখন যতটা সম্ভব সাবধানে বাইক চালাচ্ছে।
পিরোজপুরে গ্রামের বাড়িতে যখন পৌছলাম তখন দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে। এরমধ্যে আমাদের বাড়ি ভর্তি মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে, ভোররাত থেকে যারা শুনেছে তারা সবাই চলে এসেছে। থানা থেকে পুলিশ এখনো আসেনি তাই লাশ ঠিক সেভাবেই পরে আছে।
মা-বাবার শোবার ঘরে ফ্লোরে গলাকাটা মরদেহ অবস্থায় পরে আছে আমার প্রিয় মা। তারই কাছে গলাকাটা অবস্থায় পরে আছে বাবা, আর বাবার হাতের কাছেই একটা ছুরি। দেখেই মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে যে বাবা নিজেই নিজের গলা কেটে ফেলেছে।
কিন্তু কেন? কিসের জন্য?
বাবার মনে তো এমন কোন কষ্ট ছিল না, যাতে করে সে এভাবে মাকে খুন করে নিজে আত্মহত্যা করতে পারে। তাহলে কারণ কি?
আমার চিৎকারে তখন ঘরের দরজাজানালা সব ভেঙ্গে যাবার উপক্রম, মনির ভাই, পারভেজ ও তৌহিদ মিলে আমাকে ধরে রাখতে ব্যস্ত। এমনটা কেন হয়ে গেল? আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো? কে আমাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে আর কে আমার জন্য বাজারের শ্রেষ্ঠ মাছ কিনে নিয়ে আসবে? হঠাৎ করে চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সবকিছু চোখের সামনে ঘুরছে, মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাচ্ছি।
|
যদি কেউ চোখ মেলে তাকালাম তখন আমি শুয়ে আছি ঘরের সম্মুখের বারান্দায়। এই বিছানায় আমি বাড়িতে এলে ঘুমাতাম, আর বাড়িতে যখন থাকতাম না তখন বাবা বিকেলে বিকেলে এখানে দুপুরের পরে বিশ্রাম করতো। বাবার শরীরের সেই পানখাওয়া গন্ধ নাকে আসছে, ধুম করে বিছানায় উঠে বসলাম।
- তৌহিদকে বললাম " মা-বাবা কোই? "
- পুলিশ এসে নিয়ে গেছে, ময়নাতদন্তের পরে নাকি আমাদের কাছে নিয়ে আসবে।
- অসম্ভব, আমার বাবা বলে গিয়েছে যেন তাদের লাশ কাটাছেঁড়া না করা হয়।
- কিন্তু তুই হয়তো চাইলে রাখতে পারতি, তবে তুই অজ্ঞান থাকার কারণে কিছু করতে পারি নাই। আর পুলিশের কাছে আমি আর মনির ভাই যতটা জানি ততটা বললাম। তোর কাছে আঙ্কেল কল দিয়ে যা যা বলেছে তারপর আমরা দুজন রওনা দিলাম, আর মনির ভাইদের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করার সবকিছু বললাম।
- এখন আমি আমার মা-বাবার লাশ কাটাছেঁড়া থেকে রক্ষা করবো কীভাবে?
- তুই চাইলে একবার চেষ্টা করতে পারো, আঙ্কেল নিজে যদি আন্টিকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হয় তাহলে আর কাটাছেঁড়া করে কি হবে? আর বাহিরে দুজন পুলিশ এখনো আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারো।
পুলিশের সঙ্গে আমি আবার সবকিছু বললাম, তারা চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে খবর দিতে বলে দিল। আমি চেয়ারম্যানকে কল দিলাম মনির ভাই এর কাছ থেকে নাম্বার নিলাম।
চেয়ারম্যান সাহেব কিছুক্ষণ পর আমাদের বাড়িতে এলেন, তারপর আমি তাকে বললাম যে মা-বাবার লাশ ময়নাতদন্তের দরকার নেই। তিনি বললেন যে তাহলে এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং তিনি থানায় বলে দেবেন।
মানসিকতার এতটা খারাপ অবস্থা তবুও অনেক ঝামেলার মাধ্যমে মা-বাবার লাশ ময়নাতদন্তের হাত থেকে রক্ষা করলাম। কিন্তু মনের মধ্যে সেই একটা প্রশ্ন ঘুরছে " বাবা এমনটা কেন করলো? "
মাগরিবের কিছুক্ষণ আগেই মা-বাবার দাফন করা শেষ হয়ে গেল, বাড়ি থেকে বের হবাে পথে গেটের কাছে রাস্তার পাশেই ডানহাতে একটু ফাঁকা জমি আছে। বছর খানিক আগে একদিন সেখানে কিছু শুপাড়ি গাছের চারা রোপণ করার সময় মা আমার সঙ্গে বলেছিল
" তোর বাবা আর আমি মারা গেলে আমাদেরকে এখানে কবর দিস লিমন, আমরা তো মানুষ বেশি নয়। তুই বাড়ি থেকে বের হবার সময় আমাদের কবরে সালাম দিয়ে বের হতে পারবি। আবার যখন বাড়িতে ফিরবি তখনও আমাদের সালাম দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করবি। রাস্তা দিয়ে যখন মসজিদ এর ইমাম কিংবা কোন ভালো মানুষ হেঁটে যাবে তখন আমাদের জন্য দোয়া করবে। "
আমি সেদিন হেসেছিলাম, কারণ আমার বিশ্বাস ছিল আমার মা-বাবা এখনো অনেকদিন বাচবে। আসলে পৃথিবীর প্রতিটি মায়ের সন্তানেরা চায় তাদের মা-বাবা চিরকাল বেঁচে থাকুক।
মা-বাবাকে সেখানেই কবর দিলাম, এখন আর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে না। দাফনকাজ শেষ করে সবাই চলে গেছে, শুধু আশেপাশের কিছু মানুষ আছে। মনির ভাই বরাবরই আমার কাছে বসে কান্না করছে, বাবা তাকে খুব পছন্দ করতো।
পাশের ঘরের প্রতিবেশী এক চাচি আমাকে মাথায় তেল দিয়ে দিল, কপালে আর আর মুখে হাত দিয়ে আদর করে বললো " এভাবে ওরা চলে যাবে তা কখনো ভাবিনি, যা হবাে হয়ে গেছে মনকে শক্ত কর। আমরা তো আছিই। "
সারাদিনে মোবাইল বের করার সুযোগ হয়নি, সেই যে সকাল বেলা পকেটে রেখেছি সেভাবেই পকেটে পরে আছে। বের করে দেখি মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে, চালু করতে গিয়ে দেখি চার্জ আছে। তাহলে মনে হয় চাপ লেগে বন্ধ হয়েছে কারণ মোবাইলের ব্যাটারি একটু লুজ তাই মাঝে মাঝে ধাক্কা লেগে বন্ধ হয়ে যায়। কাগজ দিয়ে জাম করে রাখি।
মোবাইল চালু করলাম, তারপর কললিস্টে গিয়ে বাবার নাম্বারের দিকে তাকিয়ে রইলাম। গতকাল রাতেও এমন সময় খাবার খেয়ে কল দিয়ে কথা বলেছিলাম, মাত্র ২৪ ঘন্টা ইসসসস।
হঠাৎ করে চোখ গেল উপরে মেসেজের চিন্হের উপর, মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখি অনেক গুলো মেসেজ। সচারাচর সিম কোম্পানির অজস্র অপ্রয়োজনীয় মেসেজের জন্য এখন মেসেজ চেক না করে ডিলিট করতাম।
কিন্তু সেগুলোর মধ্যে বাবার নাম্বার দিয়ে একটা মেসেজ দেখে অবাক হলাম। গতকাল রাত ২:৫৩ মিনিটে মেসেজ এসেছে, আর বাবা আমাকে কল করেছিল রাত ৩:০৯ মিনিটে।
মেসেজ পড়ে আমার হাত কাঁপছে। লেখা আছে:-
" তোকে বাঁচাতে গিয়ে তোর মা'কে খুন করলাম এইমাত্র, ২৫ বছরের সংসার জীবনে যাকে আমি কখনো একটা চড় মারিনি। তাকেই একটু আগে নিজের হাতে জবাই করেছি, এখন আমার নিজের গলাও কাটবো। ওরা সবাই এখন আমর চারদিকে দাঁড়িয়ে আছে, তোকে কল দিয়ে বাড়িতে আসার জন্য আমাকে বলছে। আমি সেই ফাঁকে তোকে কল না দিয়ে আগে মেসেজ দিচ্ছি, ওদের বলছি যে নাম্বার খুঁজে পাচ্ছি না। তোকে কল দিয়ে আমি হয়তো নিরুপায় হয়ে বাড়িতে আসতে বলবো, কিন্তু খবরদার তুই আসবি না। কারা এসব করছে সেটা তোর জানার দরকার নেই, কিন্তু তুই আর কোনদিন গ্রামের বাড়িতে আসবি না বাবা। তাহলে ওরা তোকেও খুন করে ফেলবে, আমি চাইনা যে আমাদের মৃত্যুর জন্য তুই প্রতিশোধ নিস তাই সেই খুনিদের নাম বললাম না। আমি আর তোর মা তোর জন্য জীবন দিয়ে গেলাম, আমাদের স্বপ্ন ছিল তুই অনেক বড় হবি রে, আমাদের স্বপ্ন তুমি পুরণ করিস বাবা। আকাশে বসে যেন তোকে দেখে আমি আর তো মা হাসতে পারি। "
বাবার মেসেজ দেখে শরীর কাঁপছে, আমি তো এই মেসেজ গতকাল দেখিনি। বাবা আমাকে গ্রামের বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছে কিন্তু আমি তো না জেনে চলে এসেছি। তাহলে কি আমাকে এখন তারা খুন করবে? কিন্তু কারা খুন করবে?
.
চলবে...?
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 248
Threads: 0
Likes Received: 195 in 171 posts
Likes Given: 340
Joined: May 2022
Reputation:
10
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
(09-01-2023, 12:29 PM)Jibon Ahmed Wrote: বাহ!!! চমৎকার
ধন্যবাদ
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
#সরি আব্বাজান > পর্ব:-০২
শেষরাতের দিকে আমাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় শত্রুরা, আমার তিনজন তখন ঘুমাচ্ছিলাম ঠিক তখনই তৌহিদ "আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে লাগলো। "
আচ্ছা আরেকটু খুলে বলিঃ-
তৌহিদ ও পারভেজ দুজনেই মেসেজ পরে চমকে গেল, তৌহিদ আস্তে করে কানে কানে বললো "এই কথা কাউকে কিছু বলিস না, কারণ এখন তোর আশেপাশের সবাইকে শত্রু মনে করতে হবে! "
মনিরুল ভাইদের বাড়ি থেকে রাতের খাবার রান্না করে পাঠানো হয়েছে, তৌহিদ ও পারভেজ সেই খাবার খেয়েছে। আমাকেও তৌহিদ নিজের হাতে ভাত মেখে দু লোকমা খাইয়ে দিল, সমস্ত ঘরের মধ্যে মা-বাবার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। রাতের বেলা আমি তৌহিদ ও পারভেজ একসঙ্গে ঘুমালাম। মনির ভাই থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমরা নিষেধ করেছি। রাত দশটার দিকে আমার কলেজের শিক্ষক এসেছিলেন দেখা করতে, অনেক কিছু উপদেশ দিয়ে ২৫/৩০ মিনিট পরে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
কারা হতে পারে সেই খুনের আসামি? আমাকে মারার জন্য কেন তাদের পরিকল্পনা? বাবা কেন আমাকে এসব থেকে আলাদা হতে বললো?
- পারভেজ বললো, লিমন তুই ঘুমানোর চেষ্টা কর বন্ধু, আমি আর তৌহিদ জেগে আছি। যদি সত্যিই কেউ তোদের শত্রু থাকে তাহলে অবশ্যই হামলা করতে পারে।
- আমি বললাম, কিন্তু কেন করবে এমন? আমার তো কোন শত্রু নেই আর তাছাড়া আমরা কারো ক্ষতি করিনি কোনদিন।
- তৌহিদ বললো, দোস্ত আজকাল ভালো মানুষ দের ধ্বংস করার জন্য পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে। নিশ্চয়ই এখানে অনেক বড় কিছু ঘটনা আছে তাই সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
- কিন্তু বাবা তো আমাকে গ্রামে আসতে নিষেধ করেছে, তাহলে কি বাবার শেষ অনুরোধ রাখতে পারবো না?
- তুই নিজে গ্রাম ত্যাগ করবি কিন্তু গোয়েন্দা বা সিআইডি মোতায়েন করতে হবে। তারা অবশ্যই এই রহস্যের উন্মোচন করতে সক্ষম হবে, তখন সবকিছু পরিষ্কার হবে।
এরপরই আমরা চুপচাপ শুয়ে রইলাম, বাহিরে ও ঘরের মধ্যে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে৷ মা-বাবার কত স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছে, চোখ বেয়ে অজান্তেই অগোচরে পানি বের হয়ে আসছে। এভাবেই কখন চোখ বন্ধ করেছিলাম জানি না কিন্তু হঠাৎ করে তৌহিদের মুখে আগুন আগুন চিৎকার শুনে খুব ভয় পেয়ে বিছানায় বসলাম।
পারভেজ বললো " দোস্ত তাড়াতাড়ি বের হতে হবে নাহলে সবাই আগুনে পুড়ে মারা যাবো। "
কিন্তু আমরা যখন দরজা খুলে বের হতে যাবো তখন দেখি দরজা বাহির থেকে বন্ধ করা। তিনটা দরজা দিয়ে বাহির হওয়া যায় কিন্তু সবগুলোই বাহির থেকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গতকাল যেই পিছনের দরজা ভেঙ্গে মনির ভাই প্রবেশ করেছিল সেটা আজকে একদম ভালো করে পেরেক ঠুকে বন্ধ করে দিয়েছি। কিছু বাকি দুটি দরজা কারা বন্ধ করলো? আমাকে যারা খুন করতে চায় তারা কি এসব করছে?
পশ্চিমে একটা নড়বড়ে জানালা ছিল সেটাই এক ধাক্কা দিয়ে ভেঙ্গে দিল পারভেজ। তারপর আমি পারভেজ ও তৌহিদ বেরিয়ে গেলাম, আগুন সেই সময় প্রায় সমস্ত টিনের চালে ছড়িয়ে গেছে। ইটের দেয়াল হলেও কাঠ আর টিনের চালের ছাউনি দিয়ে ঘেরা ঘরটা চোখের সামনে পুড়ছে। তৌহিদ ও পারভেজ দুজনেই সামনের দরজা বাহির থেকে খুলে পারভেজের বাইক বের করলো। আরও কিছু জিনিসপত্র বের করতে চেয়েছিল কিন্তু পরিস্থিতি খুবই অস্বাভাবিক।
আবারও সেই চিৎকার চেচামেচি শুনে গভীর রাতে অনেকেই ছুটে এসেছে, পানি ঢেলে আগুন নিভে যাবে তাই পানি নিয়ে ব্যস্ত অনেকে। আমি শুধু ঘরের সামনের আমগাছের গোড়ায় ঘাপটি মেরে বসে রইলাম।
সকাল বেলা পুলিশ এসেছে আবার, চেয়ারম্যান সাহেব নিজেও উপস্থিত হয়েছেন কিন্তু মা-বাবার স্মৃতিবিজড়িত ঘরটা দাঁড়িয়ে আছে পোড়া এক বিভৎস রূপ ধরে।
- দারোগা বললেন, আপনারা তখন কোথায় ছিলেন? আগুনের ঘটনা প্রথম কে দেখে?
- তৌহিদ বললো, জ্বি স্যার আমি প্রথমে দেখতে পেয়েছি। আমার কান খুব পাতলা, ঘুমের মধ্যে পাতা নড়ার শব্দটাও কানে আসে। আমি যখন শুনি যে টিন পুড়ছে আর আর স্ক্রু একটা করে পটপট করে ছুটছে তখন চিৎকার করছি।
- আপনারা বাহিরে বের হবার পর কেউ কি তখন এখানে ছিল বা আক্রমণ করতে চেয়েছিল?
- না স্যার তেমন কিছু নয়, আমরা তো এখানে সম্পুর্ণ ফাঁকা দেখেছি।
- আচ্ছা লিমন সাহেব, আপনার মা-বাবার সঙ্গে কারো শত্রুতা ছিল? যেহেতু এখন একটা আক্রমণ হয়েছে তাই আমরা কিছু শত্রুদের সন্দেহ করি।
- তেমন কোন শত্রু নেই যারা খুন করবে, আমরা সবসময় ঝামেলা এড়িয়ে চলতাম।
- জমিজমা নিয়ে কারো সঙ্গে কোন বিবাদ ছিল? নিজেদের মধ্যে বংশগত ব্যাপারে?
- জলিল চাচার সঙ্গে পূর্বপাড়ায় একটা রাস্তার পাশের জমি নিয়ে মামলা চলে। তবে বাবা সপ্তাহ খানিক আগে বলেছিল যে জলিল চাচা নাকি আমাদের জমি ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়েছে।
- এমন তো হতে পারে সেই জলিল পরিকল্পনা করে ইচ্ছে করেই জমি ছেড়েছে কারণ মনে মনে একদম খুন করার ষড়যন্ত্র ছিল।
- আমি সেটা জানি না।
- আপনার কি ধারণা? আপনার মা-বাবা দুজনেই আত্মহত্যা করেছে নাকি খুন করা হয়েছে?
- তৌহিদ বললো, স্যার খুন করা হয়েছে।
- আপনি নিশ্চিত?
- হ্যাঁ স্যার, লিমনের বাবা ওকে কল করার আগে একটা মেসেজ দিয়েছিল। কিন্তু সেই মেসেজ চেক করা হয় নাই বলে জানতাম না, তাকে কেউ খুব ভয় দেখিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে।
- ও মাই গড, বলেন কি?
দারোগা সাহেব মেসেজটি জোরে জোরে পড়লেন, চেয়ারম্যান সাহেব গভীর চিন্তার মধ্যে হারিয়ে গেল সেটা বোঝা যাচ্ছে। জলিল মিয়াকে ভালো করে জিজ্ঞেস করতে হবে বলে দারোগা সাহেব বাজারে চলে গেলেন।
দুপুর পর্যন্ত অনেকেই আমাদের বাড়িতে ছিলেন, দুপুরে খাবার খেলাম প্রতিবেশী মনোয়ার কাকার বাড়িতে। কাকিমা রান্না করে ডেকেছিল কিন্তু আমি যাইনি বলে পাঠিয়ে দিয়েছে।
বিকেলের দিকে পারভেজ খুলনা চলে গেল, তবে আমাকে নিয়ে যাবার খুব চেষ্টা করেছে।
- পারভেজ বললো, তুই এখানে থাকলে কিন্তু অনেক বিপদে পরবি লিমন। তারচেয়ে খুলনা বরং শহরে চল তাড়াতাড়ি, তাহলে সেখানে মোটামুটি নিরাপত্তা আছে। কিন্তু যেখানে আঙ্কেল নিজেই তোকে আসতে নিষেধ করেছে সেখানে তুই কি করবি দোস্ত? নিজের জীবনের বিপদ ডেকে এনে ভুল করিস না বন্ধু, চল আমার সঙ্গে।
- আমি বললাম, আমি রহস্যের শেষ দেখে যেতে চাই পারভেজ, কারা আমার মা-বাবার সর্বনাশ করেছে? আমি সেই গোপনীয় সবকিছু পরিষ্কার করতে চাই নাহলে শান্তি নেই।
- তুই বরং সাজু ভাইয়ের সাহায্য নিতে পারিস, তোর মনে আছে সাজু ভাইয়ের কথা?
- হ্যাঁ মনে আছে, কিন্তু তিনি কি আসবেন আমার মা-বাবার খুনের রহস্য বের করতে? আমাকে কে বা কারা খুন করতে চায়, সেই রহস্যের উন্মোচন কি সাজু ভাই করতে পারবে?
- আমার বিশ্বাস তিনি পারবেন, কারণ সাজু ভাই হচ্ছে ঠান্ডা মাথার এক রোমান্টিক মানুষ। সকলের সঙ্গে কত সুন্দর মিল তাই না? সেবার যখন তিনি খুলনা এসেছিলেন তোদের মেসের মধ্যে তখন তো আমরা সবাই গেছিলাম দেখা করতে।
- তৌহিদ বললো, সাজু ভাই, সজীব ভাই, শফিক ভাই ও রকি ভাই এরা সবাই যেই রুমে থাকতো এখন আমরা সেই রুমে থাকি।
- বললাম, ঠিক আছে পারভেজ তুই বরং এখন সন্ধ্যা হবার আগেই চলে যা। আমি আর তৌহিদ আগামীকাল সকালে খুলনা আসবো, তারপর সাজু ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবকিছু তাকে জানাবো।
- তাহলে রাতে থাকতে হবে কেন?
- মনির ভাই বললেন যে আজকে নাকি রাতের বেলা তিনি কিছু জরুরি কাগজপত্র দেখাবেন। সবকিছু আমাদের জমিজমার বিষয়ে আর সেই সঙ্গে কিছু গোপনীয় কথা জানাতে চায়।
- তাহলে এখন দিনের বেলা সমস্যা কি? আমরা যে কতটা বিপদের মধ্যে তা কি সে জানে না?
- তাদের বাড়িতে সমস্যা হবে না পারভেজ, আর শুধু শুধু চিন্তা করিস না তো।
- ঠিক আছে সাবধানে থাকিস আর আগামীকাল সকালে উঠে রওনা দিস লিমন।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
সন্ধ্যার খানিকটা আগে বাজারের মধ্যে গেলাম আমি আর তৌহিদ। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একদম কর্নারের হোটেলের মালিক শাহজাহান কাকা আমাকে ডাকলেন। আমি তার কাছে যেতেই তিনি আমাকে নিয়ে হোটেলের পিছনে গেলেন, তার সঙ্গে সঙ্গে আমিও গেলাম।
- কাকা বললেন, তোমার মা-বাবার ঘটনার জন্য সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে তাই সান্ত্বনা দেবার ভাষা জানা নেই। কিন্তু তোমাকে কিছু গোপনীয় কথা জানাতে চাই, মনোযোগ দিয়ে শুনবা তবে আমার কথা কাউকে বলবা না।
- কি কথা শাহজাহান কাকা?
- তোমার জলিল চাচার সঙ্গে ওপাড়ে যে জমি নিয়ে মামলা ছিল সেটা কেন শেষ হয়েছে জানো?
- না তো।
- তোমার বাবা জলিল মিয়াকে ওই জমির জন্য টাকা দিয়েছে নতুন করে।
- কিন্তু ওটা তো আমাদের জমি তাহলে কেন বাবা আবার টাকা দেবে?
- কারণ জমিটা নাকি তোমার খুব পছন্দের, তুমি নাকি সেখানে একটা পার্কের মতো মনোরম স্থান বানিয়ে বাগান করতে চাও?
- হ্যাঁ কিন্তু...
- তোমার বাবা আমাকে বলেছিলেন যে তোমার নাকি খুব ইচ্ছে ওখানে বাগান করবে। তাই তিনি অনেক চেষ্টা করেও জমিটা রক্ষা করতে চেয়েছে কিন্তু নিজেই...
- জমির বিনিময়ে যদি জলিল চাচা টাকা নিয়ে থাকে তাহলে আবার ঝামেলা কিসের?
- সেখানেই ঝামেলা লিমন, আমি তো হোটেলের মানুষ তাই অনেককিছু জানি কারণ বাংলাদেশের মধ্যে হোটেলে বা চায়ের দোকানে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়। দলীয় বা বিরোধীদলীয় সকল পক্ষের কথা জানা যায়, সকালে এক গ্রুপ আবার বিকেলে অন্য গ্রুপ।
- আপনি কি তেমন কিছু জানেন?
- না বাবা, তবে আমারও পরিবার আছে তাই বেশি কিছু বলে বিপদ বাড়াতে চাই না। যতটুকু বললাম ততটুকু দিয়ে খুঁড়তে আরম্ভ করো, কেঁচো খুঁড়তে আরম্ভ করো সাপ এমনিতেই বের হবে।
এতটুকু লিখে একটু দম নিল লিমন, তারপর আবারও লিখতে আরম্ভ করলো।
বাজার থেকে আমি তৌহিদ আর মনিরুল ভাই ফিরে আসলাম। জলিল চাচার কথা কাউকে কিছু বলিনি এখনো, সাজু ভাই আমি শুধু আপনার কাছে এগুলো জানিয়ে দিচ্ছি। বাড়িতে ফিরে এসে বারবার মনে হচ্ছে যে বিকেলে পারভেজের সঙ্গে চলে গেলে ভালো হতো। কারণ রাত যতই গভীর হচ্ছে ততই ভয় লাগছে, সবাই খাবার খেয়ে এখন ঘুমিয়ে আছে। রাত এগারোটা পেরিয়ে গেছে আর গ্রামের বাড়িতে রাত এগারোটা মানে হচ্ছে অনেক রাত্রি।
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আজকে রাতের মধ্যে আমারও কিছু একটা হয়ে যাবে। তেমন কোন কারণ নেই তবে বারবার সেটাই মনে হচ্ছে, হয়তো মনের ভয় কিন্তু মনে হচ্ছে সেটা সত্যি। তাছাড়া ক্ষুদ্র একটা কারণ আছে, একটু আগে হঠাৎ করে জানালার পর্দার আড়ালে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। আমি আস্তে আস্তে জানালার কাছে গেলাম আর তখন কারো পায়ের শব্দ দ্রুত সরে যেতে শুনতে পেলাম।
তৌহিদকে সেই কথা বললা কিন্তু সে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ঘুমিয়ে আছে, গতকাল আর পরশু রাতে বেচারা ভালো ঘুমাতে পারে নাই। তাই এখন মনে হয় তাকে ঘুমে গ্রাস করেছে, আমি অবশ্য চাইলে ঘুমাতে পারি না। তাছাড়া জানালার ঘটনাটা খুব ভাবাচ্ছে আমাকে, তাই যতক্ষণ সম্ভব জাগ্রত হয়ে থাকতে চাই।
পরশু রাত তিনটায় বাবার সেই কল করার পর থেকে যা যা ঘটেছে সবকিছু সাজিয়ে লিখে দিলাম সাজু ভাই। সত্যি বলছি আমার খুব ভয় করছে, যদি রাতের মধ্যে বা যেকোনো সময় আমি খুন হয়ে যাই তাহলে সেই খুন আর মা-বাবার খুনের রহস্য বের করার দায়িত্ব আপনার। আপনার এক ছোটভাই হয়ে সেই দায়িত্ব আপনাকে দিলাম, আশা করি আপনি আসবেন।
আমার বন্ধু পারভেজ তৌহিদ ও আমার নিজের নাম্বার দিয়ে রাখলাম। যদি তৌহিদ ও আমার নাম্বারে না পান তাহলে পারভেজের নাম্বারে কল দেবার অনুরোধ রইল।
ইতি,
মোঃ লিমন।
পিরোজপুর।
★★
গতকাল রাতে সাজু ভাইয়ের শরীর অসুস্থ ছিল তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছিল। আর সকাল বেলা অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে, তারপর ফ্রেশ হয়ে মোবাইলের মেসেঞ্জারে আসতে প্রায় দুপুর বারোটা। অনেক পাঠক পাঠিকার মেসেজ এসে জমা হয়েছে, কেউ কেউ এখনো এ্যাক্টিভ আবার অনেকে আনএ্যাক্টিভ। সবগুলোর একটু সংক্ষিপ্ত রিপ্লাই করতে করতে হঠাৎ করে গতকাল রাত বারোটার মেসেজ চোখে পরলো।
"Md Limon" আইডি দিয়ে এতবড় একটা মেসেজ এসেছে, সম্পুর্ন ঘটনা এখানে বর্ননা করা। সেই রাত তিনটায় কল দিয়ে কথা বলা শুরু থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ননা।
খুব মনোযোগ সহকারে সম্পুর্ণ ঘটনা পড়লো সাজু ভাই, তারপর বেশ কিছু সময় চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবতে লাগলো। তৌহিদ ও লিমন দুজনের নাম্বার সত্যি সত্যি বন্ধ দেখাচ্ছে, তাই পারভেজের নাম্বারে কল দিল সাজু ভাই। বেলা তখন দুপুর ১২ঃ৩৪
- রিসিভ করে পারভেজ বললো, আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?
- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, সাজু ভাই বলছি, তুমি কি লিমনের বন্ধু পারভেজ?
- জ্বি ভাই, কেমন আছেন ভাইজান? আপনার কথা গতকাল রাতেও লিমনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু আপনি নিজেই আজকে আমাকে কল দিলেন, ভাইজান আমার বন্ধুর খুব বিপদ একটু সাহায্য করবেন?
- সাজু ভাই বললেন, তোমার বন্ধু লিমন গতকাল রাতে আমাকে সম্পুর্ণ ঘটনা টেক্সট করেছে। কিন্তু আমি একটু অসুস্থ তাই রাতে রিপ্লাই করতে পারি নাই আর সকালেও অনলাইনে ছিলাম না। তোমার বন্ধু লিমন কেমন আছে?
- ভাই একটুও ভালো না।
- কেন? আজকে সকালে তো তৌহিদ আর লিমন শহরে যাবার কথা, যায় নাই?
- না ভাই, গতকাল রাতেই ওদের দুজনকে কারা যেন গায়েব করে দিয়েছে। সরাসরি খুন করেনি কিন্তু ধরে নিয়ে গেছে, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা আছে। কিন্তু সেই বাড়িটা মাটি দিয়ে উঁচু করে তার উপর কাঠ দিয়ে নির্মান করা তাই কাঠের নিচ থেকে মাটি খুঁড়ে রুমে ঢুকেছে। মাটি খোঁড়ার চিন্হ এখনো পরে আছে, কিন্তু ওদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
- তাহলে কি সেই মনিরুল লোকটার মধ্যে কোন গন্ডগোল আছে?
- না সাজু ভাই, কারণ সকাল বেলা পুকুরের মধ্যে পানিতে ভাসমান অবস্থায় মনিরুল ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। মনিরুল ভাইকে খুন করে ওদেরকে কিডন্যাপ করেছে, এলাকা ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে।
- তাহলে কি...?
- আরেকটা কথা সাজু ভাই।
- কি?
- লিমনের মা-বাবা দুজনের কবরের মাঝখানে একটা কাগজ পাওয়া গেছে। সেই কাগজে লেখা আছে " সরি আব্বাজান "।
.
চলবে...?
.
কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন, আর আপনারা উৎসাহ দিবেন তাহলে লেখার আগ্রহ শতগুণ বেড়ে যাবে। গতকাল প্রথম পর্ব পোস্ট করার পর বিভিন্ন ব্যক্তিরা গল্পটা কপি করে তাদের নিজের নামে পোস্ট করছে। আপনাদের কাছে অনুরোধ রইল, আমার নাম ছাড়া যদি কোথায় গল্পটা দেখতে পান তাহলে সেখানে প্রতিবাদ করবেন। তাহলে হয়ত লজ্জিত হতেও পারে।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্ব:-০২
শেষরাতের দিকে আমাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় শত্রুরা, আমার তিনজন তখন ঘুমাচ্ছিলাম ঠিক তখনই তৌহিদ "আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে লাগলো। "
আচ্ছা আরেকটু খুলে বলিঃ-
তৌহিদ ও পারভেজ দুজনেই মেসেজ পরে চমকে গেল, তৌহিদ আস্তে করে কানে কানে বললো "এই কথা কাউকে কিছু বলিস না, কারণ এখন তোর আশেপাশের সবাইকে শত্রু মনে করতে হবে! "
মনিরুল ভাইদের বাড়ি থেকে রাতের খাবার রান্না করে পাঠানো হয়েছে, তৌহিদ ও পারভেজ সেই খাবার খেয়েছে। আমাকেও তৌহিদ নিজের হাতে ভাত মেখে দু লোকমা খাইয়ে দিল, সমস্ত ঘরের মধ্যে মা-বাবার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। রাতের বেলা আমি তৌহিদ ও পারভেজ একসঙ্গে ঘুমালাম। মনির ভাই থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমরা নিষেধ করেছি। রাত দশটার দিকে আমার কলেজের শিক্ষক এসেছিলেন দেখা করতে, অনেক কিছু উপদেশ দিয়ে ২৫/৩০ মিনিট পরে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
কারা হতে পারে সেই খুনের আসামি? আমাকে মারার জন্য কেন তাদের পরিকল্পনা? বাবা কেন আমাকে এসব থেকে আলাদা হতে বললো?
- পারভেজ বললো, লিমন তুই ঘুমানোর চেষ্টা কর বন্ধু, আমি আর তৌহিদ জেগে আছি। যদি সত্যিই কেউ তোদের শত্রু থাকে তাহলে অবশ্যই হামলা করতে পারে।
- আমি বললাম, কিন্তু কেন করবে এমন? আমার তো কোন শত্রু নেই আর তাছাড়া আমরা কারো ক্ষতি করিনি কোনদিন।
- তৌহিদ বললো, দোস্ত আজকাল ভালো মানুষ দের ধ্বংস করার জন্য পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে। নিশ্চয়ই এখানে অনেক বড় কিছু ঘটনা আছে তাই সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
- কিন্তু বাবা তো আমাকে গ্রামে আসতে নিষেধ করেছে, তাহলে কি বাবার শেষ অনুরোধ রাখতে পারবো না?
- তুই নিজে গ্রাম ত্যাগ করবি কিন্তু গোয়েন্দা বা সিআইডি মোতায়েন করতে হবে। তারা অবশ্যই এই রহস্যের উন্মোচন করতে সক্ষম হবে, তখন সবকিছু পরিষ্কার হবে।
এরপরই আমরা চুপচাপ শুয়ে রইলাম, বাহিরে ও ঘরের মধ্যে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে৷ মা-বাবার কত স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছে, চোখ বেয়ে অজান্তেই অগোচরে পানি বের হয়ে আসছে। এভাবেই কখন চোখ বন্ধ করেছিলাম জানি না কিন্তু হঠাৎ করে তৌহিদের মুখে আগুন আগুন চিৎকার শুনে খুব ভয় পেয়ে বিছানায় বসলাম।
পারভেজ বললো " দোস্ত তাড়াতাড়ি বের হতে হবে নাহলে সবাই আগুনে পুড়ে মারা যাবো। "
কিন্তু আমরা যখন দরজা খুলে বের হতে যাবো তখন দেখি দরজা বাহির থেকে বন্ধ করা। তিনটা দরজা দিয়ে বাহির হওয়া যায় কিন্তু সবগুলোই বাহির থেকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গতকাল যেই পিছনের দরজা ভেঙ্গে মনির ভাই প্রবেশ করেছিল সেটা আজকে একদম ভালো করে পেরেক ঠুকে বন্ধ করে দিয়েছি। কিছু বাকি দুটি দরজা কারা বন্ধ করলো? আমাকে যারা খুন করতে চায় তারা কি এসব করছে?
পশ্চিমে একটা নড়বড়ে জানালা ছিল সেটাই এক ধাক্কা দিয়ে ভেঙ্গে দিল পারভেজ। তারপর আমি পারভেজ ও তৌহিদ বেরিয়ে গেলাম, আগুন সেই সময় প্রায় সমস্ত টিনের চালে ছড়িয়ে গেছে। ইটের দেয়াল হলেও কাঠ আর টিনের চালের ছাউনি দিয়ে ঘেরা ঘরটা চোখের সামনে পুড়ছে। তৌহিদ ও পারভেজ দুজনেই সামনের দরজা বাহির থেকে খুলে পারভেজের বাইক বের করলো। আরও কিছু জিনিসপত্র বের করতে চেয়েছিল কিন্তু পরিস্থিতি খুবই অস্বাভাবিক।
আবারও সেই চিৎকার চেচামেচি শুনে গভীর রাতে অনেকেই ছুটে এসেছে, পানি ঢেলে আগুন নিভে যাবে তাই পানি নিয়ে ব্যস্ত অনেকে। আমি শুধু ঘরের সামনের আমগাছের গোড়ায় ঘাপটি মেরে বসে রইলাম।
সকাল বেলা পুলিশ এসেছে আবার, চেয়ারম্যান সাহেব নিজেও উপস্থিত হয়েছেন কিন্তু মা-বাবার স্মৃতিবিজড়িত ঘরটা দাঁড়িয়ে আছে পোড়া এক বিভৎস রূপ ধরে।
- দারোগা বললেন, আপনারা তখন কোথায় ছিলেন? আগুনের ঘটনা প্রথম কে দেখে?
- তৌহিদ বললো, জ্বি স্যার আমি প্রথমে দেখতে পেয়েছি। আমার কান খুব পাতলা, ঘুমের মধ্যে পাতা নড়ার শব্দটাও কানে আসে। আমি যখন শুনি যে টিন পুড়ছে আর আর স্ক্রু একটা করে পটপট করে ছুটছে তখন চিৎকার করছি।
- আপনারা বাহিরে বের হবার পর কেউ কি তখন এখানে ছিল বা আক্রমণ করতে চেয়েছিল?
- না স্যার তেমন কিছু নয়, আমরা তো এখানে সম্পুর্ণ ফাঁকা দেখেছি।
- আচ্ছা লিমন সাহেব, আপনার মা-বাবার সঙ্গে কারো শত্রুতা ছিল? যেহেতু এখন একটা আক্রমণ হয়েছে তাই আমরা কিছু শত্রুদের সন্দেহ করি।
- তেমন কোন শত্রু নেই যারা খুন করবে, আমরা সবসময় ঝামেলা এড়িয়ে চলতাম।
- জমিজমা নিয়ে কারো সঙ্গে কোন বিবাদ ছিল? নিজেদের মধ্যে বংশগত ব্যাপারে?
- জলিল চাচার সঙ্গে পূর্বপাড়ায় একটা রাস্তার পাশের জমি নিয়ে মামলা চলে। তবে বাবা সপ্তাহ খানিক আগে বলেছিল যে জলিল চাচা নাকি আমাদের জমি ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়েছে।
- এমন তো হতে পারে সেই জলিল পরিকল্পনা করে ইচ্ছে করেই জমি ছেড়েছে কারণ মনে মনে একদম খুন করার ষড়যন্ত্র ছিল।
- আমি সেটা জানি না।
- আপনার কি ধারণা? আপনার মা-বাবা দুজনেই আত্মহত্যা করেছে নাকি খুন করা হয়েছে?
- তৌহিদ বললো, স্যার খুন করা হয়েছে।
- আপনি নিশ্চিত?
- হ্যাঁ স্যার, লিমনের বাবা ওকে কল করার আগে একটা মেসেজ দিয়েছিল। কিন্তু সেই মেসেজ চেক করা হয় নাই বলে জানতাম না, তাকে কেউ খুব ভয় দেখিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে।
- ও মাই গড, বলেন কি?
দারোগা সাহেব মেসেজটি জোরে জোরে পড়লেন, চেয়ারম্যান সাহেব গভীর চিন্তার মধ্যে হারিয়ে গেল সেটা বোঝা যাচ্ছে। জলিল মিয়াকে ভালো করে জিজ্ঞেস করতে হবে বলে দারোগা সাহেব বাজারে চলে গেলেন।
দুপুর পর্যন্ত অনেকেই আমাদের বাড়িতে ছিলেন, দুপুরে খাবার খেলাম প্রতিবেশী মনোয়ার কাকার বাড়িতে। কাকিমা রান্না করে ডেকেছিল কিন্তু আমি যাইনি বলে পাঠিয়ে দিয়েছে।
বিকেলের দিকে পারভেজ খুলনা চলে গেল, তবে আমাকে নিয়ে যাবার খুব চেষ্টা করেছে।
- পারভেজ বললো, তুই এখানে থাকলে কিন্তু অনেক বিপদে পরবি লিমন। তারচেয়ে খুলনা বরং শহরে চল তাড়াতাড়ি, তাহলে সেখানে মোটামুটি নিরাপত্তা আছে। কিন্তু যেখানে আঙ্কেল নিজেই তোকে আসতে নিষেধ করেছে সেখানে তুই কি করবি দোস্ত? নিজের জীবনের বিপদ ডেকে এনে ভুল করিস না বন্ধু, চল আমার সঙ্গে।
- আমি বললাম, আমি রহস্যের শেষ দেখে যেতে চাই পারভেজ, কারা আমার মা-বাবার সর্বনাশ করেছে? আমি সেই গোপনীয় সবকিছু পরিষ্কার করতে চাই নাহলে শান্তি নেই।
- তুই বরং সাজু ভাইয়ের সাহায্য নিতে পারিস, তোর মনে আছে সাজু ভাইয়ের কথা?
- হ্যাঁ মনে আছে, কিন্তু তিনি কি আসবেন আমার মা-বাবার খুনের রহস্য বের করতে? আমাকে কে বা কারা খুন করতে চায়, সেই রহস্যের উন্মোচন কি সাজু ভাই করতে পারবে?
- আমার বিশ্বাস তিনি পারবেন, কারণ সাজু ভাই হচ্ছে ঠান্ডা মাথার এক রোমান্টিক মানুষ। সকলের সঙ্গে কত সুন্দর মিল তাই না? সেবার যখন তিনি খুলনা এসেছিলেন তোদের মেসের মধ্যে তখন তো আমরা সবাই গেছিলাম দেখা করতে।
- তৌহিদ বললো, সাজু ভাই, সজীব ভাই, শফিক ভাই ও রকি ভাই এরা সবাই যেই রুমে থাকতো এখন আমরা সেই রুমে থাকি।
- বললাম, ঠিক আছে পারভেজ তুই বরং এখন সন্ধ্যা হবার আগেই চলে যা। আমি আর তৌহিদ আগামীকাল সকালে খুলনা আসবো, তারপর সাজু ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবকিছু তাকে জানাবো।
- তাহলে রাতে থাকতে হবে কেন?
- মনির ভাই বললেন যে আজকে নাকি রাতের বেলা তিনি কিছু জরুরি কাগজপত্র দেখাবেন। সবকিছু আমাদের জমিজমার বিষয়ে আর সেই সঙ্গে কিছু গোপনীয় কথা জানাতে চায়।
- তাহলে এখন দিনের বেলা সমস্যা কি? আমরা যে কতটা বিপদের মধ্যে তা কি সে জানে না?
- তাদের বাড়িতে সমস্যা হবে না পারভেজ, আর শুধু শুধু চিন্তা করিস না তো।
- ঠিক আছে সাবধানে থাকিস আর আগামীকাল সকালে উঠে রওনা দিস লিমন।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
সন্ধ্যার খানিকটা আগে বাজারের মধ্যে গেলাম আমি আর তৌহিদ। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একদম কর্নারের হোটেলের মালিক শাহজাহান কাকা আমাকে ডাকলেন। আমি তার কাছে যেতেই তিনি আমাকে নিয়ে হোটেলের পিছনে গেলেন, তার সঙ্গে সঙ্গে আমিও গেলাম।
- কাকা বললেন, তোমার মা-বাবার ঘটনার জন্য সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে তাই সান্ত্বনা দেবার ভাষা জানা নেই। কিন্তু তোমাকে কিছু গোপনীয় কথা জানাতে চাই, মনোযোগ দিয়ে শুনবা তবে আমার কথা কাউকে বলবা না।
- কি কথা শাহজাহান কাকা?
- তোমার জলিল চাচার সঙ্গে ওপাড়ে যে জমি নিয়ে মামলা ছিল সেটা কেন শেষ হয়েছে জানো?
- না তো।
- তোমার বাবা জলিল মিয়াকে ওই জমির জন্য টাকা দিয়েছে নতুন করে।
- কিন্তু ওটা তো আমাদের জমি তাহলে কেন বাবা আবার টাকা দেবে?
- কারণ জমিটা নাকি তোমার খুব পছন্দের, তুমি নাকি সেখানে একটা পার্কের মতো মনোরম স্থান বানিয়ে বাগান করতে চাও?
- হ্যাঁ কিন্তু...
- তোমার বাবা আমাকে বলেছিলেন যে তোমার নাকি খুব ইচ্ছে ওখানে বাগান করবে। তাই তিনি অনেক চেষ্টা করেও জমিটা রক্ষা করতে চেয়েছে কিন্তু নিজেই...
- জমির বিনিময়ে যদি জলিল চাচা টাকা নিয়ে থাকে তাহলে আবার ঝামেলা কিসের?
- সেখানেই ঝামেলা লিমন, আমি তো হোটেলের মানুষ তাই অনেককিছু জানি কারণ বাংলাদেশের মধ্যে হোটেলে বা চায়ের দোকানে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়। দলীয় বা বিরোধীদলীয় সকল পক্ষের কথা জানা যায়, সকালে এক গ্রুপ আবার বিকেলে অন্য গ্রুপ।
- আপনি কি তেমন কিছু জানেন?
- না বাবা, তবে আমারও পরিবার আছে তাই বেশি কিছু বলে বিপদ বাড়াতে চাই না। যতটুকু বললাম ততটুকু দিয়ে খুঁড়তে আরম্ভ করো, কেঁচো খুঁড়তে আরম্ভ করো সাপ এমনিতেই বের হবে।
এতটুকু লিখে একটু দম নিল লিমন, তারপর আবারও লিখতে আরম্ভ করলো।
বাজার থেকে আমি তৌহিদ আর মনিরুল ভাই ফিরে আসলাম। জলিল চাচার কথা কাউকে কিছু বলিনি এখনো, সাজু ভাই আমি শুধু আপনার কাছে এগুলো জানিয়ে দিচ্ছি। বাড়িতে ফিরে এসে বারবার মনে হচ্ছে যে বিকেলে পারভেজের সঙ্গে চলে গেলে ভালো হতো। কারণ রাত যতই গভীর হচ্ছে ততই ভয় লাগছে, সবাই খাবার খেয়ে এখন ঘুমিয়ে আছে। রাত এগারোটা পেরিয়ে গেছে আর গ্রামের বাড়িতে রাত এগারোটা মানে হচ্ছে অনেক রাত্রি।
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আজকে রাতের মধ্যে আমারও কিছু একটা হয়ে যাবে। তেমন কোন কারণ নেই তবে বারবার সেটাই মনে হচ্ছে, হয়তো মনের ভয় কিন্তু মনে হচ্ছে সেটা সত্যি। তাছাড়া ক্ষুদ্র একটা কারণ আছে, একটু আগে হঠাৎ করে জানালার পর্দার আড়ালে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। আমি আস্তে আস্তে জানালার কাছে গেলাম আর তখন কারো পায়ের শব্দ দ্রুত সরে যেতে শুনতে পেলাম।
তৌহিদকে সেই কথা বললা কিন্তু সে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ঘুমিয়ে আছে, গতকাল আর পরশু রাতে বেচারা ভালো ঘুমাতে পারে নাই। তাই এখন মনে হয় তাকে ঘুমে গ্রাস করেছে, আমি অবশ্য চাইলে ঘুমাতে পারি না। তাছাড়া জানালার ঘটনাটা খুব ভাবাচ্ছে আমাকে, তাই যতক্ষণ সম্ভব জাগ্রত হয়ে থাকতে চাই।
পরশু রাত তিনটায় বাবার সেই কল করার পর থেকে যা যা ঘটেছে সবকিছু সাজিয়ে লিখে দিলাম সাজু ভাই। সত্যি বলছি আমার খুব ভয় করছে, যদি রাতের মধ্যে বা যেকোনো সময় আমি খুন হয়ে যাই তাহলে সেই খুন আর মা-বাবার খুনের রহস্য বের করার দায়িত্ব আপনার। আপনার এক ছোটভাই হয়ে সেই দায়িত্ব আপনাকে দিলাম, আশা করি আপনি আসবেন।
আমার বন্ধু পারভেজ তৌহিদ ও আমার নিজের নাম্বার দিয়ে রাখলাম। যদি তৌহিদ ও আমার নাম্বারে না পান তাহলে পারভেজের নাম্বারে কল দেবার অনুরোধ রইল।
ইতি,
মোঃ লিমন।
পিরোজপুর।
★★
গতকাল রাতে সাজু ভাইয়ের শরীর অসুস্থ ছিল তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছিল। আর সকাল বেলা অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে, তারপর ফ্রেশ হয়ে মোবাইলের মেসেঞ্জারে আসতে প্রায় দুপুর বারোটা। অনেক পাঠক পাঠিকার মেসেজ এসে জমা হয়েছে, কেউ কেউ এখনো এ্যাক্টিভ আবার অনেকে আনএ্যাক্টিভ। সবগুলোর একটু সংক্ষিপ্ত রিপ্লাই করতে করতে হঠাৎ করে গতকাল রাত বারোটার মেসেজ চোখে পরলো।
"Md Limon" আইডি দিয়ে এতবড় একটা মেসেজ এসেছে, সম্পুর্ন ঘটনা এখানে বর্ননা করা। সেই রাত তিনটায় কল দিয়ে কথা বলা শুরু থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ননা।
খুব মনোযোগ সহকারে সম্পুর্ণ ঘটনা পড়লো সাজু ভাই, তারপর বেশ কিছু সময় চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবতে লাগলো। তৌহিদ ও লিমন দুজনের নাম্বার সত্যি সত্যি বন্ধ দেখাচ্ছে, তাই পারভেজের নাম্বারে কল দিল সাজু ভাই। বেলা তখন দুপুর ১২ঃ৩৪
- রিসিভ করে পারভেজ বললো, আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?
- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, সাজু ভাই বলছি, তুমি কি লিমনের বন্ধু পারভেজ?
- জ্বি ভাই, কেমন আছেন ভাইজান? আপনার কথা গতকাল রাতেও লিমনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু আপনি নিজেই আজকে আমাকে কল দিলেন, ভাইজান আমার বন্ধুর খুব বিপদ একটু সাহায্য করবেন?
- সাজু ভাই বললেন, তোমার বন্ধু লিমন গতকাল রাতে আমাকে সম্পুর্ণ ঘটনা টেক্সট করেছে। কিন্তু আমি একটু অসুস্থ তাই রাতে রিপ্লাই করতে পারি নাই আর সকালেও অনলাইনে ছিলাম না। তোমার বন্ধু লিমন কেমন আছে?
- ভাই একটুও ভালো না।
- কেন? আজকে সকালে তো তৌহিদ আর লিমন শহরে যাবার কথা, যায় নাই?
- না ভাই, গতকাল রাতেই ওদের দুজনকে কারা যেন গায়েব করে দিয়েছে। সরাসরি খুন করেনি কিন্তু ধরে নিয়ে গেছে, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা আছে। কিন্তু সেই বাড়িটা মাটি দিয়ে উঁচু করে তার উপর কাঠ দিয়ে নির্মান করা তাই কাঠের নিচ থেকে মাটি খুঁড়ে রুমে ঢুকেছে। মাটি খোঁড়ার চিন্হ এখনো পরে আছে, কিন্তু ওদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
- তাহলে কি সেই মনিরুল লোকটার মধ্যে কোন গন্ডগোল আছে?
- না সাজু ভাই, কারণ সকাল বেলা পুকুরের মধ্যে পানিতে ভাসমান অবস্থায় মনিরুল ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। মনিরুল ভাইকে খুন করে ওদেরকে কিডন্যাপ করেছে, এলাকা ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে।
- তাহলে কি...?
- আরেকটা কথা সাজু ভাই।
- কি?
- লিমনের মা-বাবা দুজনের কবরের মাঝখানে একটা কাগজ পাওয়া গেছে। সেই কাগজে লেখা আছে " সরি আব্বাজান "।
.
চলবে...?
.
কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন, আর আপনারা উৎসাহ দিবেন তাহলে লেখার আগ্রহ শতগুণ বেড়ে যাবে। গতকাল প্রথম পর্ব পোস্ট করার পর বিভিন্ন ব্যক্তিরা গল্পটা কপি করে তাদের নিজের নামে পোস্ট করছে। আপনাদের কাছে অনুরোধ রইল, আমার নাম ছাড়া যদি কোথায় গল্পটা দেখতে পান তাহলে সেখানে প্রতিবাদ করবেন। তাহলে হয়ত লজ্জিত হতেও পারে।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 181
Threads: 2
Likes Received: 181 in 112 posts
Likes Given: 202
Joined: Mar 2023
Reputation:
1
ভাই আপডেট কি আর দেবেন না
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
•
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
(18-06-2023, 02:47 PM)Naim_Z Wrote: ভাই আপডেট কি আর দেবেন না
হুম দিবো।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্বঃ- ০৩
কেউ ভাবছে লিমন আর তৌহিদ খুন করে এখান থেকে পালিয়ে গেছে। আবার কেউ বলছে তাহলে ওভাবে দরজা না খুলে মাটি খুঁড়ে বের হবাে তো উপযুক্ত কারণ পাচ্ছি না। কিন্তু সকল মানুষের কথা কানে না নিয়ে সশরীরে গিয়ে সাজু দেখতে চাচ্ছে। কবিতার কাছে কল দিয়ে বললো " জরুরি কাজে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি, পৌঁছে তারপর কথা হবে তোমার সঙ্গে। "
সাজুদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট, যেহেতু তাদের পাশের জেলা হচ্ছে পিরোজপুর তাই সরাসরি সে আগে বাড়িতে যাবে। তারপর সেখান থেকে নিজস্ব বাইক নিয়ে পিরোজপুর যাওয়া যাবে। গুলিস্তান থেকে "দোলা পরিবহন" এর লঞ্চ পারাপারের গাড়ির টিকিট সংগ্রহ করলো। অনেকদিন পর সে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে, দাদা-দাদীর সঙ্গে কতদিন তার দেখা হয় না।
যেহেতু লঞ্চ পারাপারের গাড়ি তাই ফেরির মধ্যে অপেক্ষা করার ঝামেলা নেই। কবে যে স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে?
|
গ্রামের মধ্যে এখন এক অস্থিরতা তৈরি হয়ে গেছে যেটা কল্পনার মধ্যে ছিল না। পুলিশ সারাক্ষণ শুধু আনাগোনা করছে, প্রায় সবাইকে কিছু না কিছু জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। মনিরুলের পরিবারের কান্না আর আহাজারিতে সবচেয়ে বেশি আকাশ ভারি হয়ে যাচ্ছে। পুকুরের পাড়ে এমন কিছু নেই যেটা খুনির কাছে পৌঁছাতে পারে। দারোগা সাহেব যখন সাজুর কথা শুনলেন তখন একটু ভ্রু কুঁচকে যেন কিছু ভাবলেন।
সাজু যখন লিমনদের গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়িতে ফিরে কোনরকমে ফ্রেশ হয়ে বাইক নিয়ে চলে এসেছে। সাজু স্থানীয় বাজারে এসে পারভেজকে কল দিল, পারভেজ তখন বাজারেই ছিল। বাজারের একপার্শ্বে বিশাল জটলা, সেখানে সবাই ঘিরে আছে এবং পুলিশ ও দেখা যাচ্ছে।
সাজু সেখানে এগিয়ে গিয়ে পারভেজের সঙ্গে সরাসরি হাত মিলিয়ে নিল। তারপর যখন জানতে পারলো যে তৌহিদ ফিরে এসেছে তখন অবাক হয়ে নিজেই সেদিকে এগিয়ে গেল।
প্রায় ঘন্টা খানিক পরে পুলিশ তৌহিদকে নিয়ে থানায় রওনা দিল। তার আগে সাজু ভাই একবার মনিরুল আর লিমনদের ঘর দেখে এসেছেন। সব মোটামুটি ঠিক আছে কিন্তু মনিরুলদের বাড়িতে যে ঘরে লিমন আর তৌহিদ ছিল সেখানে মাটি খুঁড়ে বের হবার স্থান দেখে প্রশ্ন জাগলো। তখন সে বুঝতে পারছে যে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর তৌহিদের কাছে পাওয়া যাবে।
পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে সাজুও গিয়েছে থানার, কারণ পুলিশ বলছে, যা কিছু জিজ্ঞেস করার সব থানায় গিয়ে করবে।
- সাজু ভাই তৌহিদকে বললো, লিমন এখন কোন যায়গা আছে? আর সেদিন রাতে তোমরা কীভাবে কি করেছো?
- তৌহিদ আস্তে আস্তে বললো, সাজু ভাই আমি এখন জানি না লিমন কোথায়। কারণ আমাকে ওরা পিরোজপুরের সি অফিস মোড়ে এসে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। তারপর সেখান থেকে আমি একাই এসেছি এখানে, লিমনের মধ্যে পশু ভর করেছে। ও কাউকে ছাড়বে না।
- মনিরকে কে খুন করেছে?
- লিমন।
- তুমি তখন কোথায় ছিলে?
- আমাকে আরও দুটো লোক ধরে রেখেছিল।
- মানে কি? সেখানে আবার আরও দুটো লোক কীভাবে এসেছে?
- আমি জানি না।
- তুমি আর লিমন যে ঘরে ছিলে সেই ঘরের মধ্যে মাটি সিধ কেটেছে কে? আমি সেখানে গিয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে ভিতর থেকে মাটি খুঁড়ে বের হয়েছ তোমরা।
- হ্যাঁ সাজু ভাই, লিমন নিজে মাটি খুঁড়ে বের হবার ব্যবস্থা করেছে। আমার এমনিতেই কান পাতলা তাই যখন ধুপধাপ শব্দ হলো তখন তাকিয়ে দেখি লিমন মাটি কাটছে। কিন্তু ভাই আপনি কীভাবে বুঝতে পেরেছেন?
- খুবই স্বাভাবিক, মাটি কেটে কেটে ভিতরের দিকে কাটা মাটি জমানো হয়েছে। যদি বাহির হতে কেউ আসতো তাহলে তো বাহিরে মাটির স্তুপ জমা থাকতো।
- হ্যাঁ ঠিক তাই, আমি বিছানা থেকে নেমে তখন বললাম " কিরে লিমন কি হয়েছে? " লিমন তখন আমাকে চুপ করতে বললো, তারপর জানলা দিয়ে বাহিরে তাকাতে বলছে। আমি তাকিয়ে দেখি যে সম্মুখে পুকুর পাড়ে কারা যেন দাঁড়িয়ে আছে।
- কীভাবে দেখলে?
- তাদের একজনের হাতে সিগারেট ছিল আর সেই সিগারেটের আগুন ওঠানামা করছে। তবে সামান্য আস্তে আস্তে কথাও কানে বাজছিল।
- তারপর?
- আমরা সেখান থেকে গর্ত দিয়ে আস্তে করে বের হলাম।
- দরজা খুলে বের হলে না কেন?
- কারণ দরজা বাহির থেকে বন্ধ ছিল।
- তাহলে কি মনির...?
- হ্যাঁ। লিমন সেজন্যই বাহিরে গিয়েছে এবং আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম কারণ দুটো লোক লিমনের পরিচিত। তারা তখন মনিরকে হাত পা আর মুখ বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে, লিমন সেখানে গিয়েই ওদের একজনের হাত থেকে একটা বড় ছুরি নিয়ে মনিরুল ভাইয়ের গলা কেটে দিল।
- কি বলছো তুমি? এতটা সহজ? আর লিমনের সঙ্গে তাদের কিসের সম্পর্ক?
- আমি জানি না, আমি এতটা হতভম্ব হয়ে গেছি যে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে মাথা ঘুরে পরলাম। আর তারপর যখন হুঁশ হয়েছে তখন আমি একটা টিন দিয়ে ছাউনি করা ঘরের মধ্যে বন্দী।
- লিমন সেখানে ছিল না?
- না, তবে আরেকটা লোক এসেছিল কিছুক্ষণ পরে আর তিনি বলেছেন যে আমাকে নাকি তারা পাঠিয়ে দেবে। তবে শহরের মধ্যে ছেড়ে দেবে কারণ গ্রামের মধ্যে নিয়ে গেলে প্রচুর ঝামেলা হতে পারে।
- লিমনের কথা জিজ্ঞেস করোনি?
- হ্যাঁ, তারা বললো, আমি লিমনের বন্ধু তাই তারা আমাকে বাঁচতে দিচ্ছে নাহলে আমাকেও শেষ করে দিত। আমি যেন পিরোজপুর থেকে সরাসরি খুলনা শহরে চলে যাই আর কাউকে কিছু না বলি। যদি কিছু বলি তাহলে আমারও প্রচুর বিপদের মুখে পরতে হবে। লিমন নাকি তার মা-বাবার খুনী কে সেটা জানতে পেরেছে তাই এক এক করে সবাইকে হত্যা করতে চায় ও। আর যেহেতু তার বাবা তাকে এসব খুনোখুনি করতে নিষেধ করেছে তাই "সরি আব্বাজান" ব্যবহার করবে।
- কিছুটা বুঝতে পারছি, কিন্তু এখনো অনেক কিছু জানার বাকি। তবে লিমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা আমার খুব দরকার, যিনি আমাকে এখানে আসার জন্য অনুরোধ করছে সে নিজেই এখন...?
- আমি এসব বলতে চাই নাই কিন্তু গ্রামের সবাই আর পুলিশ আমাকেও সন্দেহ করছে তাই এখন বাধ্য হয়ে বলছি।
- ঠিক আছে তুমি আপাতত পুলিশ হেফাজতে থাকো তারপর দেখি কি করা যায়।
- আচ্ছা ঠিক আছে সাজু ভাই, কিন্তু লিমন যে এভাবে পরিবর্তন হবে কখনো ভাবিনি। মাত্র কিছু সময়ের মধ্যে কীভাবে কি হয়ে গেল? আর তার সঙ্গে লোক দুটো যুক্ত আছে, কি ভয়ঙ্কর।
★★
থানা থেকে বের হয়ে সাজু নিজের এলাকায় চলে এসেছে, রাতের মধ্যে সেই গ্রামে থাকার কোন মানে হয় না, আর পারভেজ তো থানায় আসার আগেই বিদায় নিয়ে চলে গেছে। রাত দশটার দিকে বাড়িতে ফিরে ডিনার করে নিজের বিছানায় শুয়ে সজীব এর কাছে কল দিল। আসার পথে সজীব কল দিছিল কিন্তু তখন কথা বলতে পারে নাই।
- হ্যাঁ সজীব, কি খবর?
- বেশি ভালো না সাজু।
- কেন?
- রুহির মা অসুস্থ, তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রুহি এখন সেই হাসপাতালে আছে, আমি তো চট্টগ্রামে আছি আর তুইও আজকে নাকি বাড়িতে গেলি।
- হ্যাঁ পিরোজপুরে একটা মামলার মধ্যে জড়িয়ে যাবার সম্ভবনা আছে, তবে আগের চেয়ে এটা বেশ জটিল মনে হচ্ছে।
- কিরকম?
- ছেলেটা খুলনায় আমরা যেই মেসে ছিলাম সেই মেসেই থাকে, ওর মা-বাবা দুজনেই যেকোনো অদৃশ্য কারণে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সেগুলোর পিছনে একটা চক্র কাজ করছে, তাদের সন্দেহ করে এখন ওই ছেলে খুন করা শুরু করেছে।
- বেশ জটিল সমস্যা।
- হ্যাঁ, আর একা একা ভালো লাগে না, রকি বা তুই যেকোনো একজন সঙ্গী হলে ভালো হতো।
- তাহলে ছুটি নিয়ে আসবো নাকি?
- যদি পারিস তবে বেশ ভালো হবে।
- ঠিক আছে কালকে অফিসে গিয়ে দেখি।
- মেলা মেলা ধন্যবাদ বন্ধু।
- আচ্ছা তুই একটু সময় করে রুহির কাছে কল দিয়ে কথা বলিস, বেচারির বাবার তো তোর জন্য ফাঁসি হয়ে গেল। এখন তার মা অসুস্থ হয়ে গেছে তাই খুব কান্না করছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
তিন-চারদিন ধরে শরীরে হালকা জ্বর, গতকাল রাতে তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছিল। আজকে ভ্রমণ করে আরও বেশি ক্লান্ত লাগছে, তাই বিছানায় শুয়ে একটু পরেই ঘুমিয়ে গেল সাজু ভাই।
সকাল বেলা সাড়ে দশটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাও আবার দাদির ডাকাডাকিতে। দাদির কাছে জানতে পারলো যে, কে যেন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।
বাহিরে এসে সাজু তাকে চিনতে পারছে না, তবে লোকটা বেশ বয়স্ক। বসে বসে তারা দাদার সঙ্গে গল্প করছে, সাজু মনে মনে ভাবলাে " দাদা আবার নতুন করে বিয়ে দেবে নাকি? "
- সাজু বললো, আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন আপনি?
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন? আর আপনি কিন্তু আমার দাদার বয়সী তাই নাতি হিসেবে তুমি করে বললে খুশি হবো।
- ঠিক আছে তাই হবে, আর আমি লিমনের নানা তাই সম্পর্ক ঠিকই আছে।
- কোন লিমন?
- যার মা-বাবা দুজনই খুন হয়েছে, আর লিমন নিজে এখন কোথায় আছে কেউ জানে না।
- আপনি তার নানা?
- হ্যাঁ, তবে আপন নানা নয়, ওর মায়ের সম্পর্কে চাচা হই আমি। লিমনের নানা মারা গেছে অনেক আগেই, তারপর থেকে ওর মাকে আমিই মানুষ করেছিলাম।
- বুঝতে পেরেছি কিন্তু...
- আমি গতকালই লিমনের সেই মোটরসাইকেল ওয়ালা বন্ধুর কাছে শুনেছি যে সাজু নামের এক গোয়েন্দা আসবে। সারাদিন অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু যখন এলে তখন দেখা করতে পারলাম না।
- কিন্তু কেন?
- আজকে সকালে থানায় গিয়ে তোমার বিষয় জানতে পারি, তবে গতকালই লিমনের বন্ধুর কাছে শুনেছি তোমার বাসা বাগেরহাট আর এই উপজেলায়। আমি একসময় পিরোজপুর জেলা কলেজের শিক্ষক ছিলাম, আমার এক ছাত্র আছে তোমাদের এই গ্রামের মধ্যে। আজকে সকালে যখন তাকে তোমার নাম করে জিজ্ঞেস করেছি তখন সে তোমার ঠিকানা দিয়েছে।
- আমাকে এতটা জরুরি ভিত্তিতে খুঁজে বের করার কারণ কি?
- লিমনের মা-বাবার বিপদের আশঙ্কা আমি আগে করেছিলাম, আর তারাও জানতো।
- মানে?
- লিমনের বাবার কাছে একটা স্বর্নের পুতুল আছে খাঁটি স্বর্নের পুতুল।
- বলেন কি? কীভাবে কি?
এমন সময় সাজুর মোবাইল বেজে উঠল, নাম্বার দেখেই চিনতে পারলো সাজু। গতকাল রাতে থানা থেকে বের হবার সময় সাজু ভাই থানার দারোগা সাহেবের নাম্বার নিয়ে এসেছেন এবং তার নিজের নাম্বারও দিয়ে এসেছে।
- হ্যালো... স্যার?
- সাজু সাহেব আপনি কোথায়?
- আমি তো বাড়িতে, আপনি?
- আমি এখন সেই লিমনদের গ্রামের মধ্যে তাদের স্থানীয় বাজারে আছি। লিমন তো আজকে রাতে এই বাজারের হোটেল মালিক শাহজাহান নামের লোকটাকে খুন করেছে।
- কি...? আর কীভাবে নিশ্চিত হলেন খুনটা যে লিমন করেছে?
- লাশের পাশে চিরকুট ছিল "সরি আব্বাজান" আর আপনাকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা লেখা।
- আমাকে উদ্দেশ্য করে?
- হ্যাঁ সাজু সাহেব।
- কি লেখা আছে সেখানে?
- লেখা আছে, " সাজু ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ, আপনাকে যখন আমি ডেকেছি তখনও আমি রহস্য জানতাম না। কিন্তু এখন আমার চোখের সামনে সবকিছু পরিষ্কার, তাই আপনার কোন সাহায্যের দরকার নেই। আমার মা-বাবার হত্যার বিচার আমি নিজেই করবো, খুব ভালো হয় যদি আপনি আর আমাদের গ্রামে না আসেন। কারণ আপনি থাকলে আমার ঝামেলা হবে, তাই আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি। আমার পথের মধ্যে যদি কোন বাঁধা হয়ে দাঁড়ান তাহলে কিন্তু আপনাকেও বিপদে পরতে হবে। তৌহিদকে মেরে ফেলা উচিত ছিল, শালাকে বন্ধু ভেবে ছেড়ে দিছি আর সে সবকিছু বলে দিয়েছে। ভেবেছিলাম যে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিশোধ নিতে পারবো কিন্তু ওর জন্য আর হলো না। তৌহিদকে সাবধানে থাকতে বলবেন কারণ ওকে নিষেধ করার পরও যখন সবকিছু বলে দিয়েছে তখন কিছুটা মূল্য দিতে হবে তাকে। এই শাহজাহান কাকা আমার বাবার সঙ্গে বেঈমানী করেছে, বাবার কাছ থেকে পুতুলের কথা জেনে সেটা আরেকজনকে বলে দিয়েছে তাই একে ঘুম পারিয়ে দিলাম। এখনো অনেক কিছু ঘটনার বাকি আছে তবে খেলাটা আমিই চাই। "
;
চলবে...?
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্বঃ- ০৪
- সাজু বললো, দারোগা সাহেব আমার মনে হচ্ছে যে লিমন এগুলো করছে না। আপনি কি লিমনের বন্ধু তৌহিদকে ছেড়ে দিয়েছেন নাকি আপনার হেফাজতে আছে?
- আমার কাছে আছে।
- তাকে আটকে রাখুন, নিশ্চয়ই তৌহিদ কোনকিছু লুকাচ্ছে কারণ একটা অদৃশ্য মেঘ চোখের সামনে ঘুরছে।
- দেখুন সেটা হয়তো সম্ভব না, উপরমহল থেকে সকাল বেলা কল এসেছে তাই তৌহিদকে ছেড়ে দিতে হবে।
- মানে..? তৌহিদের উপরে লোক আছে?
- হ্যাঁ, তার এক আঙ্কেলের সঙ্গে এমপি সাহেবের খুব ভালো সম্পর্ক আছে তাই এমপি সাহেবের সুপারিশে ছাড়তে হবে।
- নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা আছে, নাহলে তো এমন ছোট্ট বিষয় নিয়ে এমপি সাহেবের মাথাব্যথা হবার কোন কারণ নেই।
- আরেকটা কথা সাজু সাহেব।
- জ্বি বলেন।
- আপনাকে আর এই মামলার বিষয়ে এদিকে আসতে হবে না, আমরা সবাই লিমনকে ধরার চেষ্টা করছি।
- কিন্তু কেন?
- এখানে কোন রহস্য নেই, সকাল বেলা আমরা অর্ডার পেয়েছি যে লিমনকে যেকোনো মূল্যে ধরে ফেলতে হবে। কারণ নিজের মা-বাবার জন্য সে এখন হিংস্র মরিয়া হয়ে গেছে, সেজন্য তাকে এই মুহূর্তে থামানো দরকার।
- আপনি কি লিমনের বাবার কাছে একটা পুতুল ছিল সেই বিষয় কিছু জানেন?
- কিসের পুতুল?
- স্বর্নের পুতুল।
- না জানতাম না, কিন্তু লিমনের চিঠিতে পুতুলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনা কি?
- আমিও সঠিক জানিনা তবে সত্যি সত্যি যদি লিমনের বাবার কাছে স্বর্নের পুতুল থাকে তাহলে সেটা তিনি কোথায় পেলেন সেটা আগে জানতে হবে আমাদের। তারপর সেই পুতুল এখন কোথায় আছে, আর তার সঙ্গে লিমনের নিজের জীবনের কোন বিপদ আছে নাকি সেটা বের করতে হবে।
- কিন্তু আপনাকে তো এখন এসবের মধ্যে থেকে দুরে থাকতে বলা হয়েছে।
- এটা অন্যায়, আমি আমার নিজের মতো কাজ করে যাবো সেখানে বেআইনীভাবে কেউ কিছু যদি বলে তবে মানবো কেন?
- সেটা আপনার ইচ্ছে তবে আমাদের কাছ থেকে আপনি কোন তথ্য বা সাহায্য পাবেন না।
- আপনাদের কাছ থেকে না পেতে পারি কিন্তু যদি আপনার কাছে চাই?
- মানে?
- মানে হচ্ছে সমগ্র পুলিশের সাহায্য দরকার নেই শুধু আপনার সহোযোগিতা কামনা করছি। আশা করি আপনি আমার অনুরোধ রাখবেন, কারণ আপনার মধ্যে আমি সততা দেখেছি।
- হাহাহা, পুলিশের আবার সততা?
- আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চাই এবং এই মামলার রহস্য বের করতে চাই।
- আমি চেষ্টা করবো আপনাকে সাহায্য করতে, কিন্তু একটা পরামর্শ দেবো?
- জ্বি বলেন।
- এখানে অনেক বড় রাজনৈতিক নেতাদের দল জড়িত আছে, তারা কিন্তু যেকোনো সময় যেকোন কিছু করতে পারে। আপনি নিজের জীবন ঝুঁকিতে না ফেললে আপনার জন্য মঙ্গল হবে।
- আমার কাজই এসব নিয়ে থাকা, নিজের জীবন নিয়ে মায়া করে বেঁচে থাকার চেয়ে স্বাধীনভাবে কোনকিছু লড়াই করে বাঁচার মধ্যে আনন্দ আছে।
- বুঝতে পারছি সাজু সাহেব, আচ্ছা বাদ দেন তো এসব কথা। আপনার যখন যা দরকার সবকিছুই আমাকে বলবেন আমি আপনাকে সাহায্য করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবো।
- অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার।
মোবাইলে কথা বলা শেষ করে সাজু ভাই আবার বুড়ো লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো,
- লিমন তো আরেকটা খুন করেছে, বাজারের সেই শাহজাহান নামের লোকটাকে।
- বলো কি?
- দারোগা সাহেব তো সেটাই বলেন, কিন্তু লিমন এটা করে ভুল করছে। কারণ সে যেহেতু মা-বাবার খুনের জন্য দায়ী লোকদের চিনতে পেরেছে তখন তার উচিত ছিল আইনের আশ্রয় নেয়া।
- আমিও বুঝতে পারছি না।
- আপনি কি আমাকে সেই পুতুলের রহস্যের কি কি কারণ আছে সেটা বলবেন?
- সেটা বলার জন্য আমি এসেছি।
- একটু তাড়াতাড়ি বলবেন প্লিজ, আমি খুব অসুস্থ আমার বসতে কষ্ট হচ্ছে।
- ঠিক আছে সংক্ষিপ্ত করে বলি।
মাসখানেক হবে, লিমনের বাবা সুন্দরবন গেছিল খাঁটি মধুর জন্য। সেখানে যারা সচারাচর জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে খাঁটি মধু কেনার জন্য গেল। একটা লোকের সঙ্গে আমাদের পিরোজপুরে পরিচয় হয়েছে তার, তিনি এখানে মধু বিক্রি করতে এসেছিলেন। কিন্তু মধু বিক্রি যখন শেষ ঠিক সেই সময় তার সঙ্গে দেখা হয়েছে লিমনের বাবার। তারপর সেই লোকটা বলেন যে তার বাড়িতে গেলে বা কিছুদিন পরে সে আবার মধু নিয়ে আসবে। লিমনের বাবা তখন তার ফোন নাম্বার রেখে দিয়েছিল এবং নিজেই সশরীরে গিয়ে মধু আনবে সেটাও জানিয়ে দিল। তারপর যখন সেই লোকটার বাড়িতে গেল তখন সেই লোকটার বাচ্চা মেয়েটির হাতে একটা পুতুল দেখতে পায়। ফাজলামো করে সে ওই বাচ্চার হাত দিয়ে পুতুলটা নিয়েছিল, কিন্তু সেটা ধরার পরে হাতের অনুভবে কেমন খটকা লাগলো।
লিমনের বাবা একসময় স্বর্নের কারিগর ছিল জানো তো তুমি?
- না, জানতাম না।
- প্রায় পনের বছর সে কারিগর ছিল তাই সেই স্বর্নের পুতুল ধরে কেমন যেন অনুভূত হচ্ছে। সে তখন ওই লোকটার কাছে জিজ্ঞেস করে পুতুলটা কোথায় পেয়েছে তারা? " লোকটা বলে যে, তিনি নাকি জঙ্গলের মধ্যে পেয়েছেন তারপর লুঙ্গির ভাজে নিয়ে এসে মেয়েকে দিয়েছেন। " তখন সেই লোকটাকে বলে লিমনের বাবা পুতুলটা নিজের সঙ্গে করে নিয়ে আসে। তারপর পিরোজপুর এসে নিজের পরিচিত পুরনো এক বন্ধুর কাছে গিয়ে সেটা পরীক্ষা করে। আর সেটাই ছিল তার চরম একটা ভুল।
- চরম ভুল কেন?
- কারণ সে যেহেতু কারিগর ছিল তাই চাইলেই নিজের ঘরে বসে পরীক্ষা করতে পারতো। কিন্তু যখন প্রমাণিত হয়েছে যে ওটক খাঁটি স্বর্ন তখন তার সেই স্বর্নকার বন্ধুর মনে শয়তানী আরম্ভ হয়ে গেল।
- কিরকম?
- এতবড় একটা স্বর্নের পুতুল দেখে যে কেউ তো লোভে পরতে পারে, স্বাভাবিক।
- তারপর?
- লিমনের বাবা তখন তার বন্ধুর কাছে সেই মধু বিক্রেতার কথা বলে দেয়। এটা ছিল দ্বিতীয় ভুল কিন্তু বিশ্বস্ত বন্ধু তাই বলতে দ্বিধা করে নাই। সেই বন্ধু তখন পরদিনই মধু বিক্রেতার কাছে চলে গেল কারণ যেখানে ওটা পাওয়া গেছে সেখানে গিয়ে আরও সন্ধান করার জন্য।
- তারপর?
- মধু বিক্রেতা তখন কৌতুহলী হয়ে গেল আর বারবার কাহিনি জানতে চাইল। তখন তিনি সেই পুতুলটা যে স্বর্নের পুতুল সেটা তাকে বলে দেয়।
- হায় আল্লাহ...
- তখন মধু বিক্রেতা চলে এলো লিমনদের গ্রামের বাড়িতে এবং খুঁজে বের করলো তাদের বাড়ি। কিন্তু লিমনের বাবা পুতুলের কথা অস্বীকার করেন এবং তাকে চলে যেতে বলে। তখন লোকটা গিয়ে সরাসরি চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে সবকিছু খুলে বলে। এবার আরেক লোভীর জিহবা চকচক করা শুরু করেছে, তিনি তখন লিমনের বাবাকে বাজারে ডেকে পাঠালেন। এবং এই খুন হওয়া শাহজাহান বেপারীর হোটেলে বসে সবকিছু তাকে জিজ্ঞেস করে। আস্তে আস্তে কথাটা ছড়িয়ে গেল দু একজন বড় বড় মানুষের কাছে। আর তারা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রাতের আধারে দেখা করতে আসতো। কেউ কেউ হুমকি দিতো আবার কেউ বা ছলেবলে কৌশলে কথা বের করতে চাইতেন।
- এসব নিয়ে তিনি টেনশন করতেন?
- হ্যাঁ, একদিন আমার কাছে গিয়ে বিস্তারিত সব খুলে বলে, আর পুতুলটা আমাকে দেখায়। তখন সে বলেছিল তার বিপদের কথা, তাকে যেকোনো মুহূর্তে কিছু করে ফেলতে পারে সেই কথা।
- তাহলে তো লিমনের বাবাও লোভী মানুষ কারণ তিনি এটা একা একা হজম করতে চায়।
- হ্যাঁ ঠিক, আমি তাকে সেটাই বোঝাতে চেষ্টা করছি কিন্তু সে আমাকে ভুল বুঝে চলে আসে।
তারপর এর মাত্র তিনদিনের মাথায় এমন একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল।
- সেই পুতুল কোথায়? কেউ জানে?
- এখন পর্যন্ত না, লিমনের বাবা সেটা নিজে মনে হয় লুকিয়ে রেখেছে।
- এই সমস্ত ঘটনা পুলিশের কাছে না বলে কেন আমাকে বলতে এসেছেন, জানতে পারি?
- পুলিশের উপর বিশ্বাস নেই, আর তোমার বিষয় যখন জানলাম যে তুমি মোটামুটি বড়লোক বাবার সন্তান। তোমার বাবা লন্ডনে থাকে আর তাছাড়া তুমি গোয়েন্দা, তাই বলতে ইচ্ছে করছিল। হয়তো সেই খুনের রহস্য উন্মোচন করতে পারবে, তার তোমাকে সেই পুতুলের রহস্য নিয়ে এগোতে হবে।
- সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
- আমি এখন আসি, বেলা প্রায় দুপুর পেরিয়ে গেল।
- না না দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে যান।
- না, আমি চলে যাবো কিন্তু অবশ্যই আবারও তোমার সঙ্গে দেখা হবে।
- ঠিক আছে।
★★
এখন থেকে সবসময় সবার আগে আমার এই ব্যক্তিগত পেইজেই গল্প পোস্ট করা হবে। তাই যারা যারা পড়তে ইচ্ছুক কিন্তু পেইজে এড নেই তারা এড হতে পারেন।
পেইজ মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব
★★
লিমনের যখন ফিরেছে তখন সে একটা বন্ধ রুমে বন্দী, সম্পুর্ণ নতুন স্থান। এমন ঘরের মধ্যে সে কীভাবে এসেছে সেটাই তো বুঝতে পারছে না। বিছানার পাশে একটা চেয়ারে লাল গেঞ্জি পরে একটা লোক বসে আছে। তাকে চোখ মেলে যখন নড়াচড়া করতে দেখলো তখন শরীর ঝাড়া দিয়ে বললো:-
- ডাক্তারের কথা তাহলে মিলে গেছে।
- কে আপনি? আর আমি এখানে কেন?
- আমি কে সেটা তোমার না জানলেও চলবে, তবে তুমি এখানে আছো কারণ তোমাকে এখন পুলিশের লোকজন হন্যে হয়ে খুঁজচ্ছে।
- পুলিশ? আমাকে..? কিন্তু কেন?
- মনির ও শাহজাহান নামের হোটেল মালিককে খুন করার অপরাধে তুমি এখন মোস্ট ওয়ান্টেড আসামী।
- আমি কখন খুন করেছি? সেদিন রাতে আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম, তারপর তো কিছু মনে নেই।
- হাহাহা, তোমাকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছিল কারণ তোমার স্থানে অন্য কেউ খুন করবে। আর সেই খুনের দায় পরবে তোমার উপর, তারপর হতে তুমি হবে নিরুপায়। এবং সেই নিরুপায় জীবন থেকে বাঁচতে হলে তোমাকে আমাদের বসের কথা মেনে চলতে হবে।
- বসসস? বস কে?
- সেটা তো বলা যাবে না, আমাকে যতটুকু বলতে বলা হয়েছে ততটুকু বললাম। তোমার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী লোকদের মধ্যে দুজন অলরেডি কবরে চলে গেছে। তোমার অবর্তমানে আমাদের বস নিজেই অন্য কাউকে দিয়ে কাজটা করেছেন।
- তাতে আপনার বসের লাভ কি?
- তোমার বাবার কাছে একটা স্বর্নের ছিল, তিনি সেটা কোথায় রেখে দিয়েছে সেটা জানতে হবে।
- স্বর্নের পুতুল?
- হ্যাঁ।
এমন সময় একটা মেয়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো, তার হাতে ট্রে তে চায়ের কাপ নাস্তার ব্যবস্থা আছে। লোকটা তখন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো:-
- আমি একটু বসের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে আসি, তুমি ততক্ষণে একে নাস্তা করতে দাও। আর ভয় নেই আমি দরজার বাইরে আছি, যদি সে পালাতে চায় তাহলে...
লোকটা বেরিয়ে গেল, মেয়েটা লিমনের দিকে তাকিয়ে বললো:-
- আমার নাম নাসরিন জাহান, তোমার নাম কি?
- কে আপনি?
- হিহিহিহি, এটা আবার কারো নাম হয় নাকি?
- একদম হাসবেন না, আপনি কে? আমাকে কেন এখানে আটক করা হয়েছে?
- আমি জানি না, তবে আপনাকে দিয়ে খারাপ কাজ করানো হবে এতটুকু জানি।
- আমার অপরাধ?
- আপনার কোন অপরাধ নেই কিন্তু এরা যা করে সবকিছুই অপরাধ।
এমন সময় লাল গেঞ্জি পরা লোকটা রুমে ঢুকে মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললো:-
- বসের সঙ্গে কথা বলো।
লিমন মোবাইল কানের কাছে নিয়ে অপরপ্রান্তের কণ্ঠ শুনে চমকে গেল। বিস্মিত হয়ে বললোঃ-
- কাকা আপনি...?
সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের লাইনটা কেটে গেল।
★★
সন্ধ্যার খানিকটা পর লিমনদের গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলো সাজু ভাই। তার সঙ্গে আছে তাদের গ্রামের একটা ছোটভাই যার নাম রাজু, রাজুর অনেক সখ সে সাজুর সঙ্গে যেকোনো একটা মামলার সময় সঙ্গী হবে। যেহেতু এই মামলার মধ্যে রকি বা সজীব এখনো কেউ সঙ্গে নেই তাই রাজুকে নিয়ে আজকে এসেছে।
নিজের বাইক না নিয়ে সাজু ভাই এসেছে কারণ বাইক আনলে সমস্যা হতে পারে। লিমনদের বাড়ি গিয়ে সে গোপনে আস্তে আস্তে বাগানের মধ্যে প্রবেশ করলো। চারিদিকে তখন এশার আজান দিচ্ছে, বেশ কিছুক্ষণ পর সাজু সেখান থেকে বের হবার জন্য উঠে দাঁড়াল। কিন্তু এখানে আসার কোন কারণ বুঝতে পারলো না রাজু। হঠাৎ করে সেই অন্ধকার বাগানের মধ্যে কারো কথার শব্দ শুনতে পেল।
কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শোনার পরে হঠাৎ করে সেই ফিসফিস করে কথা বলতে থাকা স্থান থেকে একটা জোরে কাশি বের হলো।
আর সেই কাশির শব্দ শুনেই সাজু বিড়বিড় করে বললো " চেয়ারম্যান সাহেব? "
চলবে...?
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্বঃ- ০৫
বাগানের মধ্যে চেয়ারম্যান সাহেবের কাশির শব্দ পেয়ে থমকে গেল সাজু ভাই। যদিও সে এখানে একটা আশঙ্কা নিয়ে এসেছে কিন্তু চেয়ারম্যান যে নিজে উপস্থিত হবে সেটা বুঝতে পারে নাই। তবে নিজেকে কিছুটা ভাবনার মধ্যে নিয়ে গেল কারণ সে চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে মাত্র একবারই দেখা করেছে। আর তখনই এই চেয়ারম্যানের কাশির শব্দ মগজে গেঁথে গেছে কারণ সেদিন এই কাশিটা খুব বিরক্ত লাগছিল। একটু পরে চেয়ারম্যান সাহেব বাগান থেকে বের হয়ে গেল, সাজু ভাই ও রাজু দুজনেই আস্তে আস্তে বের হলো। এই মুহূর্তে মুখোমুখি হওয়া যাবে না, মনের সকল প্রশ্ন চেপে রেখে অনুসন্ধান করতে হবে গভীরভাবে।
নিজেদের এলাকায় ফেরার পথে রাজু জিজ্ঞেস করলো " আমরা এখানে কেন এসেছিলাম সাজু ভাই? আর ওই লোকটা এখানে কেন? "
- সাজু ভাই বললো, যেহেতু একটা পুতুল নিয়ে সবকিছুর গন্ডগোল তাই সেটা অবশ্যই কেউ না কেউ অনুসন্ধান করবে। তাছাড়া যিনি এখানে এসেছেন তিনি এলাকার চেয়ারম্যান, তবে আমার অনুমান মিথ্যাও হতে পারে।
- তাহলে কি চেয়ারম্যান জড়িত?
- জড়িত হতে পারে কিন্তু মূল নয়, কারণ এমন করে পরিকল্পনা করার সাহস তিনি একা নিতে পারবে না।
- লিমনের সঙ্গে কি কোনভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন ভাই?
- না, কীভাবে করবো?
- আমি তো জানি না।
- আচ্ছা ভেবে দেখি।
রাতে ডিনার করে সাজু কিছুক্ষণ বিছানায় বসে বসে ভাবতে লাগলো। সবকিছু যেন জট পাকিয়ে আছে, চেইন সেলাইয়ের মতো একবার খুলতে পারলে একটানে সবটা খুলে যাবে। কিন্তু যদি গিট্টু লেগে যায় তাহলে মেলা মেলা সময় লাগবে।
(১) তৌহিদ কেন মিথ্যা বলেছে?
(২) লিমনের বাবার সেই পুতুল এখন কোথায়?
(৩) মনিরুল লোকটাকে খুন করলো কেন?
★★
রাত প্রায় গভীর, বিছানায় শুয়ে অন্ধকার রুমের মধ্যে কান্না করছে লিমন। মা-বাবার কথা বড্ড মনে পরছে তার, সন্ধ্যা বেলা ঘুমিয়েছিল তখনই বাবাকে স্বপ্ন দেখলো। অনেক কিছু উপদেশ দিয়ে চলে গেল, ঘুম থেকে উঠে সেই সময় ধরে চোখের পানি পরছে। নিজে এখন অপরাধী হয়ে সবকিছুর জন্য দায়ী অথচ সে কিছু জানেই না।
দরজা খোলার ক্যাঁৎ করে শব্দ হলো, অন্ধকারে কেউ একজন দরজা খুলে প্রবেশ করলো। যিনি প্রবেশ করেছে তিনি হয়তো লুকিয়ে এসেছে কারণ সে বাতি অন করে নাই। আস্তে করে বিছানার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল, তারপর একটা হাত এগিয়ে দিল লিমনের কপালে।
মনে হচ্ছে সেই নাসরিন মেয়েটা এসেছে, লিমনের কপালে হাত দিয়ে কিছু বুঝতে চেষ্টা করলো। কিন্তু গালের কাছে হাত পরতেই গাল ভেজা অনুভব করে মেয়েটা আস্তে করে বললো:-
- আপনি কি জেগে আছেন?
- হ্যাঁ জেগে আছি কিন্তু আপনি এত রাতে এখানে কেন? কি হয়েছে?
- দিনের বেলা স্বাধীনভাবে আসতে পারি না তাই রাতের আঁধারে লুকিয়ে এসেছি।
- আপনারা খুব খারাপ, আপনাদের সঙ্গে কথাই বলতে ইচ্ছে করে না।
- আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো?
- করেন।
- আপনিই কি সেই? যার মা-বাবাকে পুতুলের জন্য পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে।
- আমার মা-বাবা মারা গেছে এটা সত্যি কিন্তু কি কারণে মারা গেছে জানি না। আমি সেটা জানার জন্য চেষ্টা করবো কিন্তু আমি তো বন্দী এখানে।
- আমিও একসময় আপনার মতো একটা খুবই সাধারণ মেয়ে ছিলাম, কিন্তু এদের চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে আজ কতটা খারাপ।
- আপনারা আমাকে মুক্তি দেবেন কবে?
- জানি না, আমি শুধু এখানে রান্না করি আর সবার জন্য চা-নাস্তা তৈরী করি।
- আপনাকেও কি কিডন্যাপ করেছে?
- হ্যাঁ, আমি ওদের এখানে বছর খানিক ধরে বন্দী আছি, কতটা কষ্ট হচ্ছে জানেন? কতদিন পেরিয়ে গেল কিন্তু খোলা রাস্তায় হাঁটতে পারি না।
- আমারও বারবার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে, খুব খারাপ লাগছে।
- এটা ভুলেও মুখে আনবেন না, সময় সবকিছুই সমাধান করে দেবে। শুধু ধৈর্য ধরতে হবে আর নিজেকে সৎ রাখতে হবে, তাহলে ঠিকই একদিন নতুন সূর্যের সাথে দেখা হবে।
- আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লেগেছে, তবে আপনাদের বসের পরিচয় জানতে চাই।
- সেটা আমিও জানি না, এরা সবসময় বস বস করে কিন্তু আজও তাকে চিনতে পারিনি।
- নাকি মিথ্যা বলছেন?
- যা সত্যি তাই বললাম, আচ্ছা আপনি মনে হয় বিরক্ত হচ্ছেন, পরে আবার কথা হবে।
★★
ভোরবেলা নামাজ পড়ে বারান্দার চেয়ারে বসে সামনে মাঠের দিকে তাকিয়ে আছে সাজু ভাই। বেশ চিন্তিত, মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে, একটু আগে সজীব আর রুহি দুজনের নাম্বারে কল দিয়েছে কিন্তু কেউ রিসিভ করে নাই। দুজনেই গতকাল রাতে তাকে কল দিয়েছে, যেহেতু রুহির মা অসুস্থ তাই চিন্তা হচ্ছে। তাছাড়া দুজনেই যখন কল দিয়েছে তখন নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। কিন্তু সকাল বেলা উঠে দুজনের নাম্বারেই ট্রাই করা হয়েছে কেউই রিসিভ করে না।
অসুস্থ দুর্বল শরীর নিয়ে বসে আছে, দাদি এসে চা দিয়ে গেছে, সেই চা একটা চুমুক দিয়ে সে রেখে দিয়েছে। চিনি একটু বেশি হয়েছে তাই খেতে ইচ্ছে করে না, আবার ডাক দিয়ে নতুন এক কাপ নিয়ে আসতেও বলছে না।
মোবাইলে রুহির কল এসেছে।
- আসসালামু আলাইকুম সাজু ভাই।
- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছো রুহি আর তোমার মা কেমন আছেন?
- মোটামুটি ভালো, হাসপাতালেই আছি।
- গতকাল রাতে তুমি কল করেছিলে আর সজীব ও কল দিয়েছে, কিন্তু আমার শরীর অসুস্থ তাই মোবাইল সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে গেছিলাম।
- আপনি কি বেশি অসুস্থ? কাল রাতে সজীবকে আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন সজীব বললো আপনি অসুস্থ। আর সজীব আপনাকে কল দিয়েই আমাকে কল করেছে, যখন বললো আপনি রিসিভ করেননি। তখন আমার আরও চিন্তা হতে লাগলো, এদিকে আপনি গতকাল গল্প পোস্ট করেন নাই।
- তুমি কি হাসপাতালে বসেও গল্প পড়ো?
- তাহলে? পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে একটু সুযোগ করে পড়া শুরু করি, কিন্তু গতকাল পোস্ট করেন নাই তাই মেলা মেলা মন খারাপ।
- নতুন মামলার মধ্যে এমনিতেই একটু ব্যস্ততা আর তাছাড়া অসুস্থ।
- হুম বুঝলাম, সেজন্য সজীব এর সঙ্গে কথা শেষ করে আপনাকে কল দিছিলাম কিন্তু রিসিভ করতে পারেননি আপনি।
- ভাবছি গল্প লেখা বন্ধ রাখবো।
- কেন? কেন?
- কপি করে করে অনেকেই নিজের নামে পোস্ট করে, তখন আসল লেখক খুঁজে বের করা যায় না।
- সবাই তো জানে, মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে সাজু ভাই হচ্ছে আসল লেখক, তাহলে সেখানে আবার সমস্যা কি?
- সবাই জানে না তবে অনেকেই জানে।
- আপনি তাদের কথা বাদ দিয়ে লেখা চালিয়ে যান সাজু ভাই, আর আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন প্লিজ।
- সবসময়ই দোয়া রইল, আর আমি ঢাকা থাকলে অবশ্যই দুবেলা দেখা করতাম।
- সজীব বলেছে সে নাকি আসবে।
- ওর নাকি ছুটি নেই।
- হ্যাঁ ভাই, তবে বলেছে যে বৃহস্পতিবার রাতের বাসে করে আসবে, সারাদিন হাসপাতালে থেকে আবার বিকেলে চলে যাবে।
- বাহহ বাহহ রুহি সজীবের কি অসাধারণ প্রেম।
- আপনি না হলে কিন্তু আমাদের পরিচয় সম্ভব ছিল না সাজু ভাই।
- কপালে লেখা ছিল তাই তোমাদের পরিচয় হয়ে গেছে, সেখানে আমি কেবল অছিলা। তবে দোয়া করি দুজনেই বিয়ে করে সারাজীবন একসঙ্গে যেন ভালবাসা নিয়ে থাকতে পারো। সকল বিপদের দিনগুলো যেন ধৈর্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে পার সেই কামনা রইল।
- মেলা মেলা ধন্যবাদ সাজু ভাই।
- হাহাহা, আর দিতে হবে না।
★★
সকাল নয়টার দিকে দারোগা সাহেব কল দিয়ে বললো, " সাজু সাহেব, একটু আগে তৌহিদকে ছেড়ে দিতে হয়েছে, সে এখন জেলের বাইরে তাই তার দিকে লক্ষ্য রাখবেন। "
তারপর সাজু ভাই পারভেজের নাম্বারে কল দিয়ে তৌহিদের নাম্বার নিল। তৌহিদকে যখন কল দিল তখন তৌহিদ বাসের মধ্যে বসে আছে।
- হ্যালো কে?
- তৌহিদ আমি সাজু ভাই বলছি, তুমি এখন কোন যায়গা আছো?
- ভাই আমি বাসের মধ্যে বসে আছি।
- কোথায় যাও? বাড়িতে নাকি?
- না ভাই খুলনায় মেসে যাচ্ছি, আমার গ্রামের বাড়িতে অলরেডি সবাই জেনে গেছে আমি জেলে ছিলাম। এই মুহূর্তে গ্রামের বাড়িতে যেতে লজ্জা করছে তাই মেসের মধ্যে যাবো।
- তুমি একটু সাবধানে থেকো সবসময়, বাহিরের মধ্যে ঘোরাঘুরি কম করবা।
- কেন সাজু ভাই?
- এমনিতেই বললাম, আর যদি কখনো মনে হয় যে তুমি বিপদে পরতে যাচ্ছ তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে কল দিয়ে জানাবে।
- ঠিক আছে ভাই।
- রাখি তাহলে?
- আচ্ছা ঠিক আছে সাজু ভাই।
আজকে আর কোথাও বের হতে ইচ্ছে করছে না, তাছাড়া যেহেতু লিমনদের গ্রামে গিয়ে তার জন্য অনুসন্ধান করা নিষিদ্ধ। তাই নতুন কোন উপায় সেই গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করতে হবে। আসরের কিছুক্ষণ পর সাজু ভাই নিজেদের পুকুরের পাড়ে হাঁটছিল, এমন সময় তৌহিদ কল দিল, সাজু খানিকটা অবাক হয়েই রিসিভ করলো।
- তৌহিদ কল দিয়ে বললো, সাজু ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ।
- মানে কি? কি হয়েছে হঠাৎ?
- আমার মনে হচ্ছে ওরা আমাকে শেষ করবে, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত।
- কারা খুন করবে?
- আমি তাদের চিনিনা, আমার সঙ্গে শুধু দুজন মানুষের দেখা হয়েছে, তাও সেদিন রাতে, কিন্তু তাদের দলনেতা আমি চিনি না।
- কোনদিন রাতে?
- যেদিন মনিরুল ভাইয়ের খুন হয়েছে।
- মানে?
- ভালো আমি আপনার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেছি সেদিন জেলের মধ্যে।
- তাহলে সত্যি কি?
- সেদিন রাতে সজীব ঘুমিয়েছিল, জানালার পাশে আমি...
দুপুরবেলা পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরা হয়েছে আর সেই মাছ ছাড়ানো হয়েছে এখানে। তাই কাঁদা আর পানি এখনো খানিকটা জমে ছিল, সেই কাঁদা আর পিছল পানিতে পা পিছলে পরে গেল সাজু ভাই। হাত থেকে মোবাইল ছিটকে পরলো পুকুরের মধ্যে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আফসোস করতে লাগলো, এ বছরই বৈশাখ মাসে পুকুরের সকল পানি সেঁচে নতুন করে কাটানো হয়েছে। অনেক গভীরতা এখন, তাই সেখানে মোবাইল কতটা গভীরে গেছে আর কোথায় গেছে?
তৌহিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কথা আর শোনা হলো না সাজু ভাইয়ের।
দাদাকে বলে দুজন লোক এনে তাড়াতাড়ি করে পুকুরে নামানো হলো। তারা প্রায় ঘন্টা খানিক ধরে নাকানিচুবানি খেয়েও উদ্ধার করতে পারলো না। মাগরিবের আজান দিচ্ছে চারিদিকে, হতাশ হয়ে সাজু ভাই বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলো।
★★
রাত সাড়ে দশটা।
রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছে তৌহিদ, ভয়ে আতঙ্কে তার মুখের অবস্থা একদম খারাপ। এমন সময় দরজা ধাক্কার শব্দ শুনে সে বললো,
- কে ওখানে?
- আমি লিমন, দরজা খোল তৌহিদ।
- তৌহিদ বিব্রত হয়ে গেল, কিন্তু বারবার দরজা ধাক্কায় সে দরজা খুলে দেখে সত্যি সত্যি সেখানে লিমন দাঁড়িয়ে আছে। " কিরে তুই? ভালো আছো বন্ধু? তোকে আমরা কত খুঁজেছি তুই জানো? "
- কেমন আছো তৌহিদ?
- ভালো না বন্ধু, খুব খারাপ।
- কেন তৌহিদ? বিশ্বাসঘাতকতা যারা করে তারা তো খারাপ থাকার কথা নয়।
তৌহিদ দেখলো, লিমন ততক্ষণে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, সে ভাবছে চিৎকার করবে। কিন্তু লিমন ততক্ষণে তাদের রুমে তার নিজের সাউণ্ডবক্স অন করে ফুল ভলিউম বাড়িয়ে দিল। এতরাতে এখন মেসের অন্যরা কি মনে করবে তাতে লিমনের কিছু যায় আসে না।
- তৌহিদ বললো, তুই কি বলছিস এসব?
- দেখ তৌহিদ, পৃথিবীর ইতিহাসে মীরজাফর হচ্ছে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে অধিক পরিচিত। কিন্তু সেই বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরকে কিন্তু ইংরেজরা আবার হত্যা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য তারা তাকে ব্যবহার করেছে, কাজ শেষ করে কিন্তু তাকেও সরিয়ে দিয়েছে। তোকেও যারা ব্যবহার করেছে তারা আবার আমাকেই এখন তোকে খুন করতে পাঠিয়েছে। তুই আমার অনেক ভালো বন্ধু, কিন্তু তবুও হাসতে হাসতে তোকে এখন খুন করবো।
রুমের মধ্যে চারিদিক কাপিয়ে বক্সে ডিজে গান হচ্ছে, তৌহিদ পিছনে সরতে গিয়ে খাটের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বসে পরলো। লিমনের হাতে এতক্ষণ যে লাঠির মতো ছিল সেটা কাভার খুলে সে একটা চকচকে ছুরি বের করলো।
মুহুর্তের মধ্যে তৌহিদ বিছানা থেকে উঠে তাকে আঘাত করতে যাবে তার আগেই লিমন বাম হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ডান হাতের ছুরি পেটে চালান করে দিল। আহত তৌহিদ বিছানায় শুয়ে এখন কাতরাতে লাগলো আর তার মুখ চেপে ধরে গলা কাটায় ব্যস্ত রইল লিমন।
তৌহিদের লাশটা ভালো করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে একটা কাঁথা দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে দিল। দেখলে মনে হয় যেন কেউ ঘুমিয়ে আছে, তারপর নিজের রক্তমাখা গেঞ্জি খুলে আরেকটা গেঞ্জি পরে গান বন্ধ করলো।
তৌহিদের মোবাইল বের করে সাজুর নাম্বারে কল দিল লিমন কিন্তু নাম্বার তো বন্ধ। কারণ পুকুরে মোবাইল পরে গেছে তাতো কেউ জানে না।
দরজা খুলে দেখে মেসের দুজন সদস্য দাঁড়িয়ে আছে, মাহিম ও তমাল।
- তমাল বললো, কিরে লিমন তুই?
- হ্যাঁ আসলাম মাত্র, কিন্তু তৌহিদের তো অনেক জ্বর এসেছে, তোরা থাক আমি ডাক্তার নিয়ে আসি।
- সন্ধ্যা বেলা দেখেছি মন খারাপ করে বসে আছে তখনই বুঝেছি শরীর অসুস্থ।
- তোরা একটু থাক আমি ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখি কি করা যায়।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
লিমন চলে গেল, ওরা দুজন রুমে প্রবেশ করে দাঁড়িয়ে রইল একটু পরেই খাটের পাশে রক্তমাখা গেঞ্জি ও ছুরি দেখে দুজনেই আৎকে উঠেছে। মাহিম ভয়ে ভয়ে তৌহিদের শরীর থেকে কাঁথা সরিয়ে দুজনেই চিৎকার করে ওঠে।
গলা ও পেটে ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করা তৌহিদের লাশটা পরে আছে। মাহিম দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দেখে সমস্ত রাস্তা ফাঁকা, কোথাও কেউ নেই।
.
চলবে...?
.
লাইক বা রিয়্যাক্ট দিয়ের হাজিরা প্রকাশ করে যাবে, মেলা মেলা ধন্যবাদ।
আপনাদের মতামত ও আগ্রহ দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
.
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
|