Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 2.58 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সাজু ভাই সিরিজ (সিরিজ নম্বর-০২) (গল্প:- হারিকেন) (সমাপ্ত গল্প)
#1
Tongue 
- ডিভোর্সের পাঁচ বছর পরে প্রাক্তন স্ত্রী কল দিয়ে বললো " আমার স্বামীর অপারেশন করতে হবে, তোমার রক্তের সঙ্গে ওর রক্তের গ্রুপ মিল আছে, প্লিজ এক ব্যাগ রক্ত দেবে? "

- আমি প্রথমে কি বলবো বুঝতে পারছি না, কিন্তু সে যখন আবারও বললো " তুমি তো অনেক সময় কত মানুষের জন্য রক্ত দাও, এবার নাহয় আমার বিধবা জীবন থেকে রক্ষা করবা। প্লিজ সাজু, চুপ করে থেকো না তুমি, তোমার কাছে হাতজোড় করে আবেদন জানাচ্ছি। "

- আমি বললাম, তোমার স্বামী এখন কোথায়? 

- চট্টগ্রাম " মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল " এ ভর্তি আছে, একটু দয়া করো। আমি তোমার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব, এমনিতেই তুমি আজও আমার কাছে একজন আদর্শ মানুষ। 

- কিন্তু আমি তো ঢাকায়। 

- ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসতে পাঁচ ঘন্টার বেশি সময় লাগবে না, অপারেশন আগামীকাল সকাল দশটায়। এখন বাজে মাত্র সন্ধ্যা সাতটা, তুমি যদি এখনই রওনা দাও তাহলে সকাল হবার আগেই পৌঁছে যাবে। 

- অবস্থা কি বেশি সিরিয়াস? 

- হ্যাঁ সাজু, মারাত্মক এক্সিডেন্ট করেছে তাই এই মুহূর্তে মাথায় অপারেশন করতে হবে। মাথার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে ইনফেকশন হয়েছে আর সেজন্য রক্তের দরকার। 

- ঠিক আছে আমি বের হচ্ছি। 

- মেলা মেলা ধন্যবাদ সাজু। 

- বাহহ তুমিও? 

- সবাই আজ তোমার বলা এই কথাটা পরিচিত বানিয়ে ফেলেছে তাই আমিও বললাম। 

- আচ্ছা আমি রাখছি। 

কল কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম, এ জীবন কেন এমন অদ্ভুত? যে মানুষটার জন্য আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, সেই মানুষ এর জীবন বাঁচাতে আমাকে রক্ত দিতে হবে। হায় আল্লাহ, তুমি পৃথিবীতে কত বিচিত্র ঘটনার জন্ম দাও বোঝা বড় মুশকিল গো আল্লাহ। 

রকি আর সজীব দুজনেই চট্টগ্রামে, আমাকে ওরা বেশ কিছুদিন ধরে যেতে বলছে। কিন্তু আমি যাবো যাবো করে যাওয়া হয়ে ওঠে না, তাই এখন তবে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এছাড়া অবশ্য আগামীকাল সকালে আমি ঠিকই চট্টগ্রামে যেতাম কারণ আজ দুপুরে রকির কাছে অপরিচিত একটা নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। লোকটা নাকি আমাদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু শফিকের সন্ধান জানে। শফিক নাকি মারা যায় নাই, তাকে ফেরত পেতে হলে কিছু টাকা দিতে হবে। কক্সবাজারে নাকি সেই অপরিচিত লোকটা থাকে এবং সেখানেই দেখা করতে হবে। তাই সজীব ও রকি দুজনেই আমাকে সেখানে যেতে বলেছে। যদিও আমাদের ধারণা এটা একটা মিথ্যা চক্রের কাজ তবুও গিয়ে তো দেখি। 

আমার স্ত্রীর নাম ছিল মারিয়া, মাত্র মাত্র সাত মাস পরে আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছিল তাই মারিয়ার পছন্দের কেউ থাকতে পারে সেটা জানা হয়নি। বাসর ঘরে যখন মারিয়া আমাকে বলেছিল যে তার পছন্দের কেউ আছে, তখন অবাক হয়েছিলাম। নিজেকে তখন বেশি অপরাধী মনে হয়েছিল কারণ আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে পারতাম। 

মা মারা গেছে আমার জন্মের তিন বছর পরে, তার পর থেকে দাদা-দাদীর কাছে বড় হয়েছি। বাবা থাকেন লন্ডনে, বিয়ের আগে থেকে বাবা সেখানে থাকতেন। ইচ্ছে ছিল আমার বয়স ৫/৭ বছর হলে তারপর মাকে ও আমাকে সেখানে নিয়ে যাবেন। কিন্তু মা মারা যাবার পরে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেল, মৃত্যুর সময় মা দাদা-দাদীর কাছে বলেছেন আমাকে যেন তারা তাদের সঙ্গে রাখে। বাবা আর দেশে আসেননি, সেখানেই দ্বিতীয় বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে সুখে শান্তিতে আছে। এখন তার আরো দুটি মেয়ে আছে, তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়, এবং তারা আমাকে বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করে।

দাদা-দাদীর পছন্দের মেয়ে বিয়ে করেছিলাম তাই নিজে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। বাবা বাংলাদেশে না এসেই ওখান থেকে শুধু টাকা দিয়ে দায়িত্ব পালন করে গেছে। মা-বাবার ভালবাসা না পেলেও, টাকা নিয়ে কোনদিন কোন সমস্যার মধ্যে পরিনি। 

★★

" ইউনিক "পরিবহনের বাসের মধ্যে করে চট্টগ্রামে রওনা দিলাম, এ বাসটা ননএসির মধ্যে মোটামুটি ভালো সার্ভিস দেয়। বাসে উঠে আগেই সজীবের কাছে কল দিয়ে আমার যাবার কথা জানালাম। 

কুমিল্লা হোটেল পর্যন্ত আসার মধ্যে মারিয়া মোট চারবার কল করেছে, যে মানুষটা মাত্র সাত মাস আমার সঙ্গে প্রচুর খারাপ ব্যবহার করেছে সেই আজকে কত খবর নিচ্ছে। পৃথিবীতে স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, আচ্ছা আমার এই যাবার পিছনে কোন স্বার্থ আছে? 

হোটেল থেকে বের হয়ে বাসে বসে টিকটকের মধ্যে গেলাম, মাস খানিক ধরে টিকটিকে একটা মেয়েকে খুব ভালো লেগেছে। মেয়েটা কখনো তার সম্পুর্ন মুখ বের করে ভিডিও বানায় না, হিজাব স্কার্ফ বা ওড়না দিয়ে খুব সুন্দর মুখ ঢেকে শুধুমাত্র চোখ দুটি বের করা থাকে। তার চোখদুটো অসম্ভব সুন্দর লাগে, আমি সাজু টিকটিকে শুধু ঐ একটা মেয়েকে ফলো করে রেখেছি। যখনি সুযোগ হয় তখনই তার ভিডিও দেখি, ভালো লাগে তাই দেখি তবে কখনো কথা হয়নি। বহুবার কমেন্ট করেছি তার মুখটা দেখার জন্য কিন্তু দেখতে পারিনি। 
তার করা টিকটিক ভিডিওর লোকেশন দেখলে বোঝা যায় তিনি ঢাকা শহরে থাকে। কিন্তু কখনো যদি ঠিকানা বের করতে পারি তাহলে অবশ্যই তার সামনে যাবার ইচ্ছে আছে। 

চট্টগ্রামের জিইসি মোড় নামলাম রাত তিনটায়, সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে সরাসরি আগ্রাবাদ শিশু হাসপাতালে চলে গেলাম। মারিয়ার সঙ্গে এর আগেই কথা হয়েছে তাই সে স্বামীকে রেখে নিচে এসে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আমি সিএনজি ভাড়া দেবার সময়ই সে আমার কাছে ঘেঁষে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। ভাড়া পরিশোধ করার পরেই সে বললো:-

- কোন অসুবিধা হয়নি তো? 

তাকিয়ে দেখি মারিয়া দাঁড়িয়ে আছে, হয়তো স্বামী অসুস্থ তাই টেনশনে চেহারার অবস্থা ভালো নয়। ডিভোর্সের পরে আর কখনো আমাদের দেখা হয়নি, আমার নাম্বার তার কাছে ছিল তাও আমার জানা ছিল না। 

- বললাম, না কোন সমস্যা নেই, কিন্তু তুমি তো একবারে কাছে এসে দাঁড়ালে চিনতে অসুবিধা হয়নি? 

- না সাজু, তুমি ঠিক আগের মতো আছো তাই চিনতে কষ্ট হয়নি। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কখনো না হলেও আমরা একসাথে এক বিছানায় কিন্তু প্রায় অনেকদিন থেকেছি। প্রতিটি মানুষের শরীরে ঠিক আলাদা একটা ঘ্রাণ থাকে, তোমার শরীরে আজও সেই ঘ্রাণ আছে। 

- হাহাহা। 

- হাসলে কেন? 

- তুমি কি ঘ্রাণ দিয়ে আমাকে চিনলে? 

- না এমনিতেই কথা প্রসঙ্গে বললাম। 

- আচ্ছা বাদ দাও, চলো তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে কি কি করতে হবে দেখা যাক। 

- আমার শশুর সবকিছুর ব্যবস্থা করে রেখেছেন, তুমি একটু বিশ্রাম করেই রক্ত দেবে। তারপর সেই রক্ত ফ্রিজে রাখা হবে, আর রক্ত দিয়ে তুমি আবার বিশ্রাম করবে। 

প্যাথলজি ল্যাবের মধ্যে সবকিছু ব্যবস্থা করা, শুধু আমাকে আগে দুটো পরীক্ষা করলো। তারপর এক নার্স এসে আমাকে ভিতরে নিয়ে রক্ত নিলেন, পূর্বে অভিজ্ঞতা আছে তাই নার্ভাস নই। 

রক্ত দেবার পরে আমি যখন মারিয়ার সামনে আর একবার এলাম তখন ভোর পাঁচটা। পৃথিবীর বুকে তখন আলো ফুটতে শুরু করেছে, কাছেই কোথাও দোয়েল পাখির শিশ শোনা যাচ্ছে। 

- মারিয়া বললো, তুমি এখন আমার শশুরের সঙ্গে বাসায় গিয়ে ঘুমাবে। ঠিক আছে? 

- আরে না না, আমার বন্ধুদের বাসা আছে এখানে তাই তাদের বলে রেখেছি। ওরা এসে আমাকে নিয়ে যাবে বা আমি যেতে পারবো, তোমরা বরং তোমার স্বামীর অপারেশনের প্রস্তুতি গ্রহণ করো। 

- কিন্তু তুমি তো আমার অতিথি, তাই না? 

- তাতে কি হয়েছে? অপারেশনের সময় আবার আসবো, এখন আপাতত ওদের কাছে যাই। 

- জোর করবো না, তোমার মতো মানুষকে জোর করার ইচ্ছে নেই, একটা কথা বলবো? 

- বলো। 

- কিছু মনে করবে না তো? 

- না, বলো তুমি। 

- তোমার সঙ্গেই যে আমার বিয়ে হয়েছিল সেকথা কাউকে বলবে না। 

- কাকে বলবো? কে জিজ্ঞেস করবে? 

- এখানে আমার শশুর শাশুড়ী সবাই আছে তাই যে কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে, তাই আগে থেকে সাবধান করে দিচ্ছি। 

- আচ্ছা কাউকে বলবো না, যদিও কারো সঙ্গে তেমন কথা হবার সম্ভবনা নেই তবুও যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে কি বলবো? 

- আমি তাদের বলেছি তুমি আমার মামাতো ভাইর বন্ধু, আমি আমার মামাতো ভাইকে বলার পরে তিনি তার বন্ধুকে পাঠিয়েছে, সেটাই বলবে। 

- ঠিক আছে। 

- কিছু মনে করোনি তো? 

- আরে না না। 

- মেলা মেলা ধন্যবাদ সাজু ভাই। 

- আচ্ছা তোমার স্বামী তো আমাকে চেনে তাই সে দেখলে তো চিনতে পারবে। 

- ওকে নিয়ে সমস্যা নেই, কিন্তু আমার শশুর আর শাশুড়ির জন্য সমস্যা কারণ তারা তাদের ছেলের জন্য একটা বিবাহিতা মেয়ে কখনো আশা করে নাই। কিন্তু রাহাতের (মারিয়ার স্বামী) জন্য তারা সামনাসামনি কিছু বলে না কিন্তু উঠতে বসতে যা বলে সেগুলো শোনার মতো নয়। 

- বুঝতে পারছি। 

- রাহাতের সঙ্গেও মাঝে মাঝে এসব নিয়ে ঝগড়া ওঠে জানো? তখন খুব কষ্ট হয়, কিন্তু পৃথিবীতে আর কাউকে কিছু বলতে পারি না। 

- তোমার পরিবার সবকিছু মেনে নিয়েছে? 

- এখনো মানেননি, তারা এখনো তোমাকেই তাদের জামাই হিসাবে মানে। আমার স্বামীকে নাকি কোনদিন তারা মানবে না, এমনকি এতবড় এক্সিডেন্টের পরও কেউ আসবে না। 

- একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, আচ্ছা আমি তাহলে গেলাম আর কোন সমস্যা হলে আমাকে কল দিও। আর আমি দশটার দিকে আরেকবার এসে দেখা করে যাবো, অপারেশন কি হয়। 

- ঠিক আছে। 

★★

সজীব আর রকি বড়পোল এলাকার কাছেই এল-ব্লক আবাসিক এলাকায় থাকে। আমি একটা সিএনজি নিয়ে সরাসরি ওদের বাসার সামনে এসে নামলাম। সিলভার বেলস গার্লস স্কুলের পাশেই মসজিদুস সালাম জামে মসজিদ, তার কাছেই ওরা বাসা নিয়েছে। 

বাসায় পৌঁছে প্রথমে ফ্রেশ হলাম, রকি ঘুমিয়ে আছে আর সজীব জাগ্রত। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে সজীব বললো:-

- হঠাৎ করে সাজু সাহেব চট্টগ্রামে? 

- এমনিতেই চলে এলাম, সারপ্রাইজ, তাছাড়া শফিকের ব্যাপারটা সহজে হজম হচ্ছে না। তাই মনে করলাম যে একবার গিয়ে দেখে আসি সেই লোকটা কি বলতে চায়? 

- কিন্তু তোর মুখ দেখে মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই অন্য কোন কারণ আছে, জলদি বল। 

- আর কিছু কারণ নেই ভাই। 

- তোর জন্য একটা গরম খবর আছে। 

- আগে থেকে গরম নাকি আগুন জ্বালিয়ে গরম করা হয়েছে? 

- কি দিবি তাই বল? 

- খবরের উপর নির্ভর করছে। 

- তুই বলেছিলি এরপরে আমার ছুটি হলে আমরা তিনজনে নেপালে বেড়াতে যাবো। 

- আচ্ছা ডানন। 

- তোর লামিয়ার খোঁজ বের করেছি। ( ঠিকটকের সেই মেয়েটার নাম লামিয়া মুনতাহা) 

- মানে কি? সত্যি বলছিস তুই? 

- হ্যাঁ, সে গতকাল রাতে কক্সবাজার গিয়েছে, খুব টেকনিক করে তার সঙ্গে ইনবক্সে কথা হয়েছে। সপ্তাহ খানিকের মতো সে কক্সবাজারে থাকবে তারপর আবার ঢাকায় ফিরবে। 

- কিন্তু কক্সবাজার গেলে নতুন টিকটিকে ভিডিও দেখলাম না কেন? 

- এই রাত্রে তো গেল এখনো হয়তো করতে পারে নাই তাই নতুন ভিডিও নেই। 

- তাহলে আমি আজকেই কক্সবাজার যাবো, এক কাজে দুই কাজ হবে। 

- কিন্তু আমাদের তো অফিস আছে। 

- তোরা ছুটি নিয়ে দুদিন পরে আয় অথবা যদি না যাও তাহলে সমস্যা নেই। আমি শফিকের ব্যাপার আর লামিয়ার খোঁজ দুটোই করবো। 

- কিন্তু এটা যদি কারো বিছানো জাল হয়? তোর তো শত্রুদের অভাব নেই সাজু। 

- আল্লাহ আছে রে, কিছু হবে না, আচ্ছা এখন একটু ঘুমাবো খুব ঘুম পাচ্ছে। 

- ঠিক আছে শুয়ে পর। 

★★

মোবাইলের রিংটোনে ঘুম ভেঙ্গে গেল, সজীব রকি দুজনেই অফিসে চলে গেছে। আমি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি মারিয়া কল দিয়েছে, তাই তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বললাম:-

- হ্যালো। 

- মারিয়া কান্না করে দিল, তারপর নিজেকে ঠিক রেখে বললো " সাজু তুমি কোথায়? "

- আমি তো বাসায়, কেন কি হয়েছে? অপারেশন কি হয়ে গেছে নাকি? তোমার স্বামী ভালো আছে? 

- অপারেশন হয়নি সাজু, যে ডাক্তার অপারেশন করবে বলে ঠিক ছিল তিনি একটু আগেই এখানে খুন হয়েছে। 

- মানে...? 

- বাসা থেকে এসে তিনি হাসপাতালের নিজের রুমে ঢুকেছেন, তারপর অনেকক্ষণ ধরে বের হচ্ছে না তাই একজন ভিতরে ঢুকে দেখে তিনি ফ্লোরে মৃত পরে আছে। 

- হাসপাতালের মধ্যে নিজের কেবিনে খুন? 

- হ্যাঁ সাজু, তুমি একটু তাড়াতাড়ি আসো, ওরা বলে এখন নাকি অন্য কোন ডাক্তার অপারেশন করতে পারে না। আমার স্বামীর কি হবে? 

- তুমি শান্ত হও আমি আসছি। 

- আচ্ছা। 

বিদ্যুৎ গতিতে বাসা থেকে বের হয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম, আধা ঘণ্টার মধ্যে সেখানে পৌঁছে সরাসরি মারিয়ার কাছে গেলাম। 

মারিয়া তখন কান্না করতে করতে ক্লান্ত, তার সঙ্গে তার শশুর শাশুড়ী সবাই আছে। আমি মারিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। তিনি অলরেডি মৃত ডাক্তারের কাছ থেকে এসেছেন, পুলিশও এসে গেছে। 

আমি পথ ঘুরে কিছুক্ষণ পুলিশের সঙ্গে গিয়ে যেই রুমে খুন হয়েছে সেখানে চোখ বুলিয়ে নিলাম। লাশটা মনোযোগ দিয়ে দেখে আগে গেলাম কথা বলতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে। 

- বললাম, স্যার ক্ষমা করবেন প্লিজ। আসলে এই মুহূর্তে আপনাদের অবস্থা বুঝতে পারছি কিন্তু এটা যেহেতু হাসপাতাল তাই রোগীদের কাজটা অন্তত বন্ধ করবেন না। 

- জ্বি আমি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি, আশা করি ঠিক হবে। 

- আমার একটা রোগী আছে, এখনই অপারেশন হবার কথা। যিনি খুন হয়েছে তার অপারেশন করার কথা ছিল কিন্তু... 

- হ্যাঁ বিষয়টা আমার কানে এসেছে কিন্তু আমার হাসপাতালে ওই ক্রিটিকাল অপারেশন করার জন্য তিনজন অভিজ্ঞ ডাক্তার আছে। তাদের মধ্যে একজন দেশের বাইরে আছে, আরেকজন ছুটিতে কক্সবাজার গেছে, আর তৃতীয়জন তো একটু আগেই খুন হয়েছে। 

- তাহলে কক্সবাজারে যিনি আছে তাকে একটু আনা যায় না? নাহলে অন্য কোন হসপিটাল হতে ডাক্তার আনার ব্যবস্থা করবেন প্লিজ? 

- কক্সবাজারে যে গিয়েছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না, দেখি কি করা যায়। 

পরিচালকের রুম থেকে বের হয়ে সজীবের সঙ্গে কথা বললাম, তারপর আবার মৃত ডাক্তারের লাশ দেখতে গেলাম। ধারালো ছুরি দিয়ে সরাসরি গলা কেটে দিয়েছে, তবে যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু। 

একটু পরে মারিয়া দৌড়ে এসে বললো পরিচালক নাকি আমাকে ডাকছে। আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। 

- তিনি বললো, আমাদের আরেকটা সর্বনাশ হয়ে গেছে। 

- কি হয়েছে? 

- কক্সবাজার যে বেড়াতে গেছে তাকেও সকাল বেলা হোটেল রুমের মধ্যে খুন করা হয়েছে। 

আমি সচারাচর অবাক হইনা কিন্তু এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম, এটা কি সম্ভব? 

এমন সময় মারিয়ার শাশুড়ি দৌড়ে এসে বললো, বৌমা রাহাত কেমন যেন করছে। ডাক্তার কোথায়? তুমি তাড়াতাড়ি চলো, তোমার শাশুড়ি তো চিৎকার করে কান্না শুরু করেছে। 

.
.

চলবে... 

গল্প:- হারিকেন (সাজু ভাই সিরিজ) 
পর্ব:- ০১ 

লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)



সিরিজ নম্বর-০১ (গল্প সাজু ভাই)  এর লিংক।

===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 5 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
দাদা আপনার গল্পগুলো খুব সুন্দর কিন্তু  পড়তে খুব অসুবিধা হয় কারণ আপনি text  এলাইনমেন্ট মাঝখানে ( center )  রাখেন।

দয়া করে লেফট  এলাইনমেন্ট করে দিন যেরকম নরমাল লেখা হয়ে থাকে।   Namaskar
  
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#3
পর্ব:-০২

মনে মনে ভাবলাম, মারিয়া স্বামী যদি মারা যায় তাহলে মারিয়ার কি হবে? আমিও মারিয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাহাত সাহেবের কাছে দেখা করতে গেলাম যেহেতু আমি ডাক্তার নই তাই কিন্তু বুঝতে পারছি না। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনি উপস্থিত হয়েছে দেখে ভালো লাগলো। 

এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে না, মূলত হাসপাতালে আমার তেমন ভালো লাগে না। কারণ চারিদিকে প্রচুর অসুস্থ মানুষ দেখে খুব কষ্ট লাগে তাই হাসপাতালে আসতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু এই ধরনের কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয় হাসপাতালকে ত্যাগ করতে পারি না। কেবিন থেকে বেরিয়ে বেড এর দিকে এসে অনেক মানুষ দেখে অবাক হলাম। যদিও নাম "মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল" কিন্তু এখানে সকল প্রকার মানুষের চিকিৎসা হয়। 

আপাতত খুনের স্থান ভালো করে দেখার জন্য আমি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছি, কেবিনের সামনে কোন সিসিটিভি ফুটেজ নেই। তবে তার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো যিনি সেই লোকটা কিছু দেখেছে কিনা জিজ্ঞেস করতে হবে। কিন্তু লখানে কাকে কি জিজ্ঞেস করবো? 

একটু পরে দেখি পুলিশের লোকজন একজায়গায় জড় হয়ে আছে, আমিও তাদের কাছাকাছি গেল আলোচনা শোনার জন্য কান খাড়া করলাম। 

- আমি আগ বাড়িয়ে বললাম, স্যার আমি কি কিছু প্রশ্ন করতে পারি? 

- একজন পুলিশ, যাকে দেখে ওসি মনে হচ্ছে তিনি বললেন " আপনি কে? "

- জ্বি আমার নাম সাজু, আমি এখানে একজন রোগীর সঙ্গে এসেছি। 

- কি বলতে চান? বলেন। 

- আমি যার সঙ্গে এসেছি তার আজ অপারেশন হবার কথা, এবং যিনি খুন হয়েছে সেই ডাক্তারই অপারেশন করার কথা ছিল। 

- মানে? এটা তো জানতাম না। 

- স্যার আমার মনে হচ্ছে সেই অপারেশনের সঙ্গে এই মৃত্যুর কোন হাত আছে। 

সবাই গুনগুন বন্ধ করে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইল আমার দিকে, আর সেই ওসি সাহেব বললো,

- কি বলছেন? কেন মনে হচ্ছে এমনটা? 

- আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে উক্ত অপারেশন করার জন্য এই হাসপাতালে তিনজন ডাক্তার আছে। তাদের মধ্যে কিন্তু দুজনকেই এক দিনে খুন করা হয়েছে, একজন এখানে আরেকজন কক্সবাজারে। 

- হ্যাঁ বুঝতে পারছি, কিন্তু মিঃ সাজু কক্সবাজারে যিনি ছিলেন তিনি মারা যান নাই। সকাল বেলা যখন খবর এসেছিল তখন সবাই ভেবেছিল সে মারা গেছে, কিন্তু তিনি বেঁচে আছে। তাকে এখন এম্বুল্যান্স করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আনা হচ্ছে। 

আমি অবাক হলাম, একটু আগেই মৃত্যুর খবর শুনলাম কিন্তু এখন সেটা মিথ্যা? 

- বললাম, তবুও স্যার যেহেতু আক্রমণ করা হলো সেহেতু কানেকশন আছে মনে হচ্ছে। 

- আমরা অবশ্যই বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করবো, আর আপনার রোগী এখন কোথায়? তার অপারেশনের কি কোন ব্যবস্থা করা হয়েছে? 

- আপাতত নয় কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলেছেন তারা খুব শীঘ্রই অন্য হাসপাতাল থেকে ডাক্তার আনবে। 

- আপনার সেই রোগী কি করে? মানে পেশা? 

- খুব সম্ভবত চাকরি। 

- ওসি সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললেন " খুব সম্ভবত? " 

- জ্বি, আসলে স্যার আমি তাকে রক্ত দেবার জন্য এখানে এসেছি তাই বিস্তারিত জানা নেই। 

- তার পরিবারের কারো সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে হবে, চলুন আমাদের সঙ্গে। 

সবাই কে নিয়ে রাহাত সাহেবের কেবিনের সামনে এলাম, মারিয়া প্রথমে আমার দিকে তাকিয়ে রইল তারপর ওর শশুর বললো,

- কি ব্যাপার স্যার? 

- যার অপারেশন করা হবে তিনি আপনার কে? 

- আমার ছেলে। 

- আচ্ছা, আপনার ছেলের এখন কি অবস্থা? মানে অপারেশন হবে? 

- এই মাত্র একজন নার্স এসে বলে গেল বাহির থেকে ডাক্তার আসবে আধা ঘণ্টার মধ্যে। তারপর নাকি অপারেশন আরম্ভ হবে, দোয়া করবেন প্লিজ আমার সন্তান যেন বেঁচে যায়। 

- জ্বি আমরা সবাই দোয়া করি আপনার সন্তান খুব শীঘ্রই সুস্থতা লাভ করুক। 

- আসলে স্যার ওর অপারেশনের জন্য কতটা খারাপ পরিস্থিতি হচ্ছে। প্রথমে রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না, পরপর তিন ব্যাগ রক্ত দেবার পরও গতকাল ডাক্তার বললেন অপারেশন করার সময় আরও এক ব্যাগ রক্ত লাগবে। চট্টগ্রাম থেকে মোটামুটি 
আগেই তিন ব্যাগ যোগাড় হলো কিন্তু আজকের জন্য পাওয়া যাচ্ছিল না। তারপর বৌমা গতকাল রাতে এনাকে (আমাকে দেখিয়ে) ঢাকা থেকে ব্যবস্থা করে আনলো। কিন্তু কপাল খারাপ, সকাল বেলা ডাক্তার সাহেব খুন হয়ে গেল। 

- আপনারা বেশি টেনশন করবেন না, আচ্ছা আমি আপনার ছেলের বিষয় কিছু জানতে চাই। 

- জ্বি স্যার বলেন। 

- আপনার ছেলে কি করে? পেশা? 

- আমার ছেলে রাহাত চট্টগ্রাম ইপিজেডের মধ্যে একটা গার্মেন্টসে চাকরি করে। 

- ফ্যাক্টরীর নাম কি? 

- H.R.B এপ্যারেলস লিমিটেড, রাহাত সেখানে কোয়ালিটি ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করত। 

- আপনার সন্তানের সঙ্গে কি অফিসের মধ্যে কোন মানুষের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে? মানে তেমন কিছু কি আপনারা জানেন? 

- না স্যার জানি না, রাহাত এ বিষয়ে তেমন কিছু বলে নাই আমাদের। 

- দেখুন আমাদের বা আপনার এই রক্তদানদাতা সাজু সাহেবের ধারণা হচ্ছে " নিশ্চয়ই আপনার সন্তানের সঙ্গে এই খুনের সম্পর্ক আছে। "

- মানে কি স্যার? আমার সন্তানের সঙ্গে ডাক্তারের মৃত্যুর সম্পর্ক কি স্যার? আমি জানি রাহাত খুব সাধারণ ছেলে, সকাল থেকে অফিস করে আর রাতে বাসায় ফেরে। 

- দেখুন এটা আমাদের ধারণা কেবল, কিন্তু এমন হতে পারে যে, খুনি আপনার সন্তানের অপারেশন চায় না। তাই সে অপারেশন করতে পারা দুজন ডাক্তারকেই খুন করতে চেয়েছে, কিন্তু ভাগ্যক্রমে কক্সবাজারের ডাক্তার এখনো বেঁচে আছে কিন্তু এখানের ডাক্তার মারা গেছে। 

- হায় আল্লাহ, আমার সন্তানের এমন শত্রু কেন আসবে? কি ক্ষতি করেছে আমার ছেলে? 

- আচ্ছা আপনার সন্তান কীভাবে এক্সিডেন্ট করে সেটা কি জানেন? 

- বৌমা আর রাহাত গত শুক্রবার বাইরে থেকে রিক্সা করে বাসায় ফিরছিল, হঠাৎ করে পিছন থেকে আসা একটা পিকআপ ওদের রিক্সা ধাক্কা মারে। 

- ওসি সাহেব এবার মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, আপনাদের সঙ্গে তখন কি হয়েছিল? আর কোন যায়গা এক্সিডেন্ট হয়েছিল? 

- মারিয়া বললো, আমরা দুজনেই ফ্রি পোর্ট মোড়ে বে-শপিং সেন্টার থেকে কিছু কেনাকাটা করে বন্দরটিলার দিকে যাচ্ছিলাম। বন্দরটিলার একটু আগে বড় মসজিদের সামনে যেতেই হঠাৎ করে একটা পিকআপ আমাদের পিছনে ধাক্কা মারে। 

- হুম বুঝলাম, তারপর? 

- এখন তো ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলে তাই রাস্তার খুব খারাপ অবস্থা, রিক্সার ধাক্কার জন্য আমি আগে থেকেই দু'হাতে রিক্সার রড ও সিট ধরে বসেছিলাম। আমার স্বামীর হাতে শপিং করার ব্যাগগুলো ছিল, তাই ও তখন ধাক্কা সামলাতে পারে নাই। পিছনের ধাক্কায় একদম ছিটকে গিয়ে রাস্তায় পরলো, আর আমি রিক্সার সঙ্গে রাস্তায় উল্টে পরে গেলাম। 

- বুঝতে পারছি, মিঃ সাজু সাহেবের ধারণা মনে হচ্ছে মোটামুটি ঠিক আছে। কারণ এটা হতে পারে কোন পরিকল্পনা করে ধাক্কা, খুনি তখনই হয়তো আপনার স্বামীকে বা আপনাদের দুজনকেই খুন করতে চেয়েছে। কিন্তু আপনি বা আপনার স্বামী দুজনেই বেঁচে গেছেন তাই এখন হয়তো আপনার স্বামীর অপারেশন বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। 

- কিন্তু স্যার তাহলে আমি কেন বাদ যাবো? কোই আমার উপর তো আক্রমণ হচ্ছে না। 

- দেখুন এখনো কিছু পরিষ্কার করে বলা সম্ভব হচ্ছে না, আমরা আপাতত আপনার স্বামীর যেই অফিসে চাকরি করতেন সেখানে যাবো। তারপর সেখানে গিয়ে কিছু অনুসন্ধানের চেষ্টা করবো। 

এমন সময় পুলিশের মধ্যে থেকে একটা পুলিশ বলে উঠলো " স্যার আমি সাজু সাহেবকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। "

- কি প্রশ্ন করবা? 

এবার সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 

- আপনি কি সাজু ভাই নামে পরিচিত? মানে বিভিন্ন খুনের রহস্য বের করার কারণে আপনার মোটামুটি অভিজ্ঞতা আছে তাই না? 

- আমি বললাম, হ্যাঁ আমি সাজু ভাই নামে বেশি পরিচিত, রহস্য নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে আমার মেলা মেলা ভালো লাগে। 

- দেখছেন স্যার, আমার ধারণা একদম সঠিক, আমি তখন থেকেই ভাবছি যে সাজু নামটা খুবই চেনা চেনা লাগে। 

- ওসি সাহেব বললো, মিঃ সাজু ওরফে সাজু ভাই আপনি তাহলে গোয়েন্দা? সেজন্যই খুন হবার সঙ্গে সঙ্গে রোগী রেখে রহস্যের পিছনে ছুটতে আরম্ভ করেছেন তাই না? 

- অনেকটা সেরকমই স্যার। 

- তাহলে আমিও সাজু ভাই বলে ডাকবো, আচ্ছা আপনার সন্দেহ কিন্তু মোটামুটি কাজে দিচ্ছে। তবে এখন আপনি কি আমাদের সঙ্গে অফিসে যাবেন? 

- না স্যার, আমি এখন বাসায় যাবো তারপর তারপর সম্পুর্ন ঘটনা আমার নোটবুকে লিখবো। 

- কেন কেন? 

- স্যার আমার একটু সমস্যা আছে, আমি ইদানিং চলমান ঘটনা বড্ড ভুলে যাচ্ছি। এখনকার ঘটনা দেখা গেল কালকে বা পরশু অনেককিছুই আমি মনে করতে পারবো না। তখন আবার নোটবুক পড়ে নেবো শুরু থেকে, আর সবকিছু জেনে কাজ করবো। 

- আপনার তো যথেষ্ট বুদ্ধি। 

- সামান্য একটু রাখতে হয় স্যার। 

পুলিশের টিম ৬/৭ জন হাসপাতালে রইল আর বাকি সবাই ওসি সাহেবের সঙ্গে বের হয়ে গেল। ওসি সাহেব তার নিজের নাম্বার আমাকে দিয়ে গেল আর আমিও তার নাম্বার রাখলাম। রাহাত সাহেবকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়ে গেছে, একটু পরে অপারেশন শুরু হবে। পুলিশ এখন অপারেশন থিয়েটারের চারিদিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে পাহারা দিচ্ছে। ওসি সাহেব হুকুম করে গেছেন, নতুন করে যেন কোনভাবে খুনি আক্রমণ করতে না পারে। 

অপারেশন শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে আমি মারিয়ার কাছে বিদায় নিয়ে বের হলাম। কারণ আজকের এই সম্পুর্ণ ঘটনা তাড়াতাড়ি লিপিবদ্ধ না করলে রহস্যের উন্মোচন করতে কষ্ট হবে। অনেককিছুই আছে যেগুলো আমি সন্দেহ করে রাখি কিন্তু সেই কথা কাউকে বলি না। তাই সেগুলো ভুলে গেলে তো বিপদের শেষ নেই, কি আর করা? 

★★★

এতক্ষণ ধরে সাজু ভাইয়ের লেখা নোটবুক খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল সাজু ভাইয়ের বন্ধু রকি। সবটুকু পড়ে সে মন খারাপ করে বসে রইল। 

বাথরুম থেকে গোসল করে বের হয়ে সাজু ভাই দেখলো যে রকি মুখ গম্ভীর করে বিছানায় বসে আছে। সাজু ভাই তখন আশ্চর্য হয়ে রকির কাছে প্রশ্ন করলো:-

- মুখ এমন কেন তোর? 

- তুই তোর প্রাক্তন স্ত্রীর স্বামীকে রক্ত দেবার জন্য চট্টগ্রামে আসছো, আগে বলিসনি কেন? 

- তারমানে তুই আমার নোটবুক পড়ছিস? 

- কেন নিষেধ আছে নাকি? 

- না না নিষেধ করবো কেন? কিন্তু তোদের বলি নাই কারণ নিজের কাছে খারাপ লাগবে। 

- তো তুই এতটা মহান কেন সাজু? যার সঙ্গে তোর ডিভোর্স হয়ে গেছে তার বর্তমান স্বামীর জন্য রক্ত দেবার জন্য নাচতে নাচতে আসছো? 

- এখন বাদ দে রকি। 

- আচ্ছা সজীব আগে অফিস থেকে আসুক আর তারপর তোর ব্যবস্থা হবে। 

- ঠিক আছে তাই হবে। 

- এখন কি করবি? রাহাত সাহেবকে খুনের চেষ্টা ও ডাক্তারের খুনের রহস্য যেহেতু মাথার মধ্যে তাই সেটা তো বের করতে হবে। 

- হ্যাঁ। 

- সন্দেহের তালিকায় কে আছে? 

- সেটা পরে বলবো, কিন্তু সজীব আসার সঙ্গে সঙ্গে তুই আর আমি কক্সবাজার যাবো। 

- কেন কেন? ওহ্ আচ্ছা লামিয়ার খোঁজে? তুই তো আগে রহস্যের গন্ধ পেলে পৃথিবীর সবকিছু ভুল যেতি কারণ রহস্যই প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু এখন রহস্য বাদ দিয়ে হঠাৎ লামিয়ার পিছনে যাচ্ছ কেন বন্ধু? কুচ কুচ হোতা হে? 

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সজীব শুনে বললো, রকি রে তোর বন্ধু তো লামিয়ার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আহারে আহারে, সাজু ভাই এখন কারো প্রেমে পরে গেল রে। 

- রকি বললো, এইতো সজীব এসে গেছে বাহহ অসাধারণ। 

- সাজু ভাই বললেন, তোরা প্লিজ বন্ধ কর তো। আমি কক্সবাজারে ডাক্তারের খুনের রহস্য বের করার জন্য যাচ্ছি। 

- মানে? 

- সাজু ভাই বললো, দুজনেই শোন " আজকে যে ডাক্তার খুন হয়েছে তার একজন পারসোনাল সেক্রেটারি ছিল। তিনি সবসময় ডাক্তারের কক্ষে আর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কিন্তু হঠাৎ করে গতকাল রাতে তিনি কক্সবাজার চলে গেছে, আজকে সকালে তাকে হাসপাতালে দেখা যায় নাই। 

- বলিস কি? কিন্তু কেন? 

- আমি ওই সেক্রেটারির সন্ধান করছিলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না, পরে ওখানে একজন সিকিউরিটির কাছে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি কিছু জানেন না, পরে তাকে দিয়ে ওই সেক্রেটারির কাছে কল দিয়ে কথা বলালাম। আর তখনই জানতে পারি যে তার কক্সবাজার চলে গেছে, আগে থেকে তার কোন পরিকল্পনা ছিল না কারণ হাসপাতালে কিংবা ডাক্তারের কাছে ছুটি নেন নাই। 

- তাহলে কি কক্সবাজার হোটেলে আহত হওয়া ডাক্তারের উপর সেই সেক্রেটারি হামলা করেছে? 

- সেটা জানার জন্য কক্সবাজার যেতে হবে। 

আলোচনা বন্ধ হয়ে গেল, রকি ও সাজু দুজনেই তৈরি হয়ে নিল। সজীব যেতে চাইলো কিন্তু সাজু ভাই বললেন " তিনজনে একসঙ্গে গেলে কাজ হবে না সজীব, কারণ তিনজনে যদি বিপদে পরি তাহলে রক্ষা করবে কে? টাঙ্গাইলের সেই রুহির বান্ধবীদের কথা মনে আছে? " 

- সজীব বললো, হ্যাঁ আছে। 

- তখন যদি তুই না যেতিস তাহলে কিন্তু রহস্যের উন্মোচন করতে কষ্ট হতো। 

সাজু ভাইয়ের মোবাইল বেজে উঠল, বের করে দেখলো মারিয়া কল করেছে। হাসপাতাল থেকে এসে তার সঙ্গে কথা বলতে মনে ছিল না, আসলে নোটবুক লিখতে গিয়ে সবকিছু ভুলে গেছে। অপারেশন কেমন হয়েছে সেটাই জানা হলো না। 

- হ্যালো মারিয়া? 

- মারিয়া কিছু না বলে শুধু ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো, এবং তার পাশে অন্য কারো কান্নার শব্দ খুব জোরে শোনা যাচ্ছে। 

- সাজু ভাই বললো, মারিয়া রাহাত সাহেব ঠিক আছে তো? 

.

বি:দ্র:- চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে পুরুষ মানুষেরও চিকিৎসা হয়। কিন্তু এটা হয়তো বা চট্টগ্রামের বাইরের অনেকেই জানেন না। গতকাল প্রথম পর্বে অনেক মানুষের এই বিষয় নিয়ে খুব হাসাহাসি করতে দেখলাম। কেন ভাই? আমি তো জেনেশুনেই লিখলাম, যদি আপনার সন্দেহ থাকে তাহলে একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন। 

.
গল্প কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। 

.
চলবে...
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 4 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#4
পর্ব:০৩




অপারেশন সাকসেসফুল, ডাক্তার বলেছে রাহাত সম্পুর্ণ বিপদমুক্ত। তোমার কাছে জীবনের দ্বিতীয় বার ঋণী হয়ে গেলাম, জানিনা কোনদিন তোমার ঋণের শোধ করতে পারবো কিনা। তবে কোনদিন যদি কোন দরকারে চুল পরিমাণ সহোযোগিতায় আমার দরকার হয় তবে জানাবে কিন্তু। 

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো মারিয়া। 

- সাজু ভাই বললো, আমি তোমার জন্য স্পেশাল কিছু করিনি অন্য কোন অপরিচিত মানুষের জন্য ঠিক এতটুকু করতাম। কিন্তু দ্বিতীয়বার ঋণী হলে কীভাবে? 

- প্রথমবার বিয়ে করেও তুমি আমাকে রাহাতের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছ, আর এখন দ্বিতীয়বার তার জীবন বাঁচিয়ে ফিরিয়ে দিলে। 

- জীবন বাঁচানোর মালিক আল্লাহ, আচ্ছা তুমি হাসপাতালে থাকো আমি একটু পরে বের হবো। কক্সবাজার যাচ্ছি তাই যাবার সময় তোমার সঙ্গে দেখা করে যাবো। আচ্ছা তোমার আশেপাশে কেউ কি কান্না করছে নাকি? 

- হ্যাঁ একটা মহিলা কান্না করছে, হাসপাতালের সবারই তো আপনজন অসুস্থ। কিন্তু হঠাৎ করেই কক্সবাজার কেন যাও? 

- ডাক্তারের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে একটু তদারকির দায়িত্ব নিতে চাই, সেখানে গিয়ে হোটেলের কিছু পর্যবেক্ষণ করবো। তাছাড়া যিনি মারা গেছে তার সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করতে হবে। তোমরা কিন্তু সাবধানে থাকবে কারণ সত্যি সত্যি যদি খুনির মূল টার্গেট রাহাত সাহেব আর তুমি হও তাহলে তো আবারও আক্রমণ হবে। 

- আমাদের কেবিনের সামনে ও হাসপাতালের মধ্যে পুলিশ পাহারায় আছে। আল্লাহর রহমতে আমাদের কিছু হবে না, কিন্তু আমি তোমার জন্য খুব টেনশনে আছি সাজু। 

- কেন? 

- আমি তোমাকে চট্টগ্রামে ডেকে এনেছি, এখন আমার জন্য চট্টগ্রামে এসে তুমি যদি এখন খুনের বিষয় জড়িয়ে যাও। তারপর যদি ডাক্তারের মতো তোমার উপর কোন হামলা হয় তাহলে তো আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। 

- আমি তো এগুলো নিয়ে কাজ করি, আমার তো এসব করতে ভালো লাগে মারিয়া। আমাকে নিয়ে টেনশন না করে তুমি বরং রাহাত সাহেবের ভালো যত্ন করো। 

- সাবধানে থেকো সাজু। 

- আচ্ছা আমি আসতেছি হাসপাতালে। 

- ঠিক আছে। 

★★★

রকি আর সাজু ভাই দুজনেই ব্যাগ গুছিয়ে সন্ধ্যা বেলা বেরিয়ে গেল, সজীব তাদের সিএনজিতে উঠিয়ে দিতে এসেছে। অনলাইন থেকে সাজু ভাই টিকেট সংগ্রহ করেছে, জিইসি মোড় থেকে গাড়ি ছাড়বে রাত নটায়। 

সিএনজিতে ওঠার সময় সাজু বললো:-

- কিরে সজীব? রুহির খবর কি? কোনকিছু তো জানতে পারি নাই। 

- চলছে মোটামুটি, কথা হয় তো।

- রাস্তা পরিষ্কার নাকি ধোঁয়াশা? 

- মোটামুটি পরিষ্কার, তবুও টুকটাক ঝামেলা। 

- এখন কোথায় থাকে ওরা? 

- রুহির বড় মামার সঙ্গে পাবনার ঈশ্বরদী স্টেশনে থাকে তারা। 

- রেলস্টেশন? 

- হুম। 

সাজু ভাই কিছু বলতে চাইলো কিন্তু সিএনজি দাঁড় করিয়ে এসব আলোচনা করা ঠিক নয় তাই পরে এসব নিয়ে কথা হবে বলে বিদায় নিল। সিএনজি তাদের নিয়ে এক্সেস রোড দিয়ে আগ্রাবাদ শিশু হাসপাতালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

হাসপাতালে ঢুকেই সিঁড়িতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। 

- আরে সাজু সাহেব, কি অবস্থা? আপনার রোগী তো বিপদমুক্ত। 

- জ্বি শুনেছি, বাহির থেকে ডাক্তার এনে চিকিৎসা করানোর জন্য মেলা মেলা ধন্যবাদ। 

- কি যে বলেন, হাসপাতাল পরিচালনা করি তাই ওটা আমার দায়িত্ব, ধন্যবাদ দিবেন না। 

- আমি একটু খুন হওয়া ডাক্তারের কেবিন থেকে ঘুরে আসতে চাই। 

- ওটা অবশ্য ওসি সাহেব বন্ধ করতে বলেছেন তবে আপনি যেহেতু চাচ্ছেন তাহলে চলুন। 

- আবারও মেলা মেলা ধন্যবাদ। 

কেবিনে ঢুকে সাজু ভাই অনেকক্ষণ ধরে চারিদিক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল, মাঝে মাঝে পরিচালকের দিয়ে আড় চোখে তাকাচ্ছে। লোকটার আচরণ কেমন স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না, তার উপর নজর রাখতে হবে। যেহেতু হাসপাতালের মধ্যে খুন হয়ে গেছে সেহেতু ভিতরের কারো নিশ্চয়ই যোগাযোগ থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। 

বিশ মিনিটের মতো পর্যবেক্ষণ শেষ করে সাজু ভাই রকি ও পরিচালক কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। সাজু ভাই বললেন:-

- যিনি খুন হয়েছে তার নাম কি জাফর চৌধুরী? 

- হ্যাঁ। 

- আর আপনার নাম এনামুল হাসান? 

- জ্বি। 

- আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থাকবেন, পরে আবার আপনার সঙ্গে দেখা হবে। 

রাহাত সাহেবের বেডের উপর চুপচাপ বসে আছে মারিয়া, সাজু ভাইকে দেখেই একটা শুষ্ক হাসির ঝলক বের হয়ে গেল। মারিয়া শশুর শাশুড়ী তারা দুজনেই বাসায় গেছেন, অপারেশন হবার পর সামান্য নিশ্চিত হয়েছে সবাই। কিন্তু খুনের বিষয় নিয়ে আবারও তারা চিন্তিত কারণ যদি আবারও আক্রমণ করে? 

- সাজু ভাই বললেন, এখন কেমন আছে? 

- হ্যাঁ ভালো, জ্ঞান ফিরেছে। 

- আপাতত মনে হয় কথা বলতে পারবে না তাই কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই না। তুমি তাকে দ্রুত সুস্থ করার চেষ্টা করো, তারপর দেখি কি করা যায়। 

- আমাদের জন্য তো ২৪ ঘন্টা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে কিন্তু তুমি নিজের খেয়াল রেখো। 

- তোমার হাতে কনুইয়ে তো বেশ কেটেছে। 

- হ্যাঁ, রাহাতের এক্সিডেন্টের সময় যখন রিক্সার মধ্যে থেকে পরে গেছিলাম তখন কেটেছিল। 

- হাসপাতালে তো আছো, নার্সের কাছ থেকে একটু বেন্ডেজ বা মলম নিয়ে নিও। 

- আমার জন্য এত চিন্তা? সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে সাজু।

- আচ্ছা ঠিক আছে, বের হচ্ছি কারণ রাস্তায় জ্যাম তাই জিইসি মোড় যেতে সময় লাগবে। 

- সাবধানে থেকো। 

তাদের দুজনের শেষের কথাগুলো একসময়ের স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের একটা টান বের করে দিল সেটা হয়তো অসুস্থ রাহাত সাহেব বুঝতে পারে নাই কিন্তু রকি ঠিকই বুঝতে পেরেছে। 

সাজু ভাই আে রকি কেবিন থেকে বের হবার সময় কেউ একজন দরজার সামনে থেকে দ্রুত ওদিকে সরে গেল। সাজু ভাই তাড়াতাড়ি বের হয়ে দেখলো পুরো বারান্দা ফাঁকা, গেল কোথায়? আর লোকটা কি সাজু ভাইকে ফলো করেছে নাকি? কে হতে পারে সে? বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় বারান্দার বাইরে আর তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না, শুধু দুজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে কি ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হাসান তাদের দিকে লক্ষ্য রাখছেন? পুলিশের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক নয় তাই বাদ দিল। 

হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সাজু ভাই ও রকি দুজনে সিএনজি নিয়ে জিইসি মোড়ে গিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। নির্দিষ্ট সময়ে বাস ছাড়লো, পৃথিবীর দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে বাসের প্রতিটি মানুষ। 

চকরিয়া উপজেলা একটু আগে যখন বাস পৌঁছে গেল তখন বাসের প্রায় সকল যাত্রী ঘুমে কাতর। সাজু ভাই তখন রকিকে ডেকে বললো চল আমরা নেমে যাবো। রকি অবাক হয়ে গেল কিন্তু প্রশ্ন করে নাই কারণ সে জানে সাজু ভাই কারণ ছাড়া কোন কাজ করবে না। তাছাড়া কারণ জিজ্ঞেস করে সময় নষ্ট না করে পরে জিজ্ঞেস করা যাবে। 

সাজু ভাই বাসের সুপারভাইজারকে বললো, ভাই আমরা এখানে নামবো। 

- সে বললো, কেন ভাই? 

- আসলে ভাই জরুরি একটা কাজে আবার এখন চট্টগ্রামে ফিরতে হবে। ভেবেছিলাম কক্সবাজার গিয়ে ঘুরবো কিন্তু চাকরি করলে যা হয়। 

- ওহ্ আচ্ছা, ওস্তাদ গাড়ি স্লো করেন। 

সাজু ভাই গাড়ি থেকে নামার সময় ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বললো, দয়া করে সাবধানে যাবেন আপনারা। আর গাড়ির স্পিড কমিয়ে দেন, যাতে যেকোনো সমস্যা হলে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।  

এ কথা বলে তারা দুজনেই গাড়ি থেকে নামলো। "শ্যামলী পরিবহনের" গাড়ি শ্যামল বেগে রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গেল। 

- রকি বললো, চট্টগ্রামে কিসের কাজ? 

- মিথ্যা বলেছি, আমরা কক্সবাজার যাবো ঠিকই কিন্তু অন্য বাসে। 

- কেন? 

- পরে বলবো, এখন অপেক্ষা করে কক্সবাজার যাবার অন্য গাড়ি সিগনাল দিতে হবে। 

প্রায় পঁচিশ মিনিট পরে "সৌদিয়া পরিবহনের" একটা বাস তাদের সিগনালে থামলো। দুজনেই বাসে উঠে বসলাে, যদিও এভাবে যাত্রী উঠানো ঠিক না কিন্তু এটা হচ্ছে সুপারভাইজার ও ড্রাইভার সাহেবের বাড়তি ইনকাম। একদম পিছনের সিটে গিয়ে তারা বসলো, এবং চোখ বন্ধ করে রাখলো। 

ঈদগাঁ পার হবার সামান্য পরে গাড়ি জ্যাম আটকে গেল, সাজু ভাই ও রকি তখন অবাক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর সাজু ভাই সামনের দিকে এসে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো 

- ভাই কিসের জ্যাম? 

- ড্রাইভার বললো, শুনেছি সামনে নাকি শ্যামলী পরিবহনের একটা বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সিডেন করেছে। এখন রাস্তা ব্লক তাই গাড়ি যেতে সমস্যা হচ্ছে, চিন্তা করবেন না আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। 

সাজু ভাই ও রকি আবারও বাস থেকে নেমে গেল, সামনে হাঁটতে হাঁটতে এক্সিডেন হওয়া গাড়ির সামনে গিয়ে রকির চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সে শুধু বললো " সাজু এটা তো ওই গাড়ি যেটাতে আমরা উঠেছিলাম। " কিন্তু সাজু ভাই তখন মোবাইল বের করে কাউকে কল করতে ব্যস্ত। 

হাসপাতালে খুন হওয়া ডাক্তার জাফর চৌধুরীর সেক্রেটারির নাম্বার সাজু ভাই আগেই সংগ্রহ করে রেখেছিল। সেই নাম্বারে কল দিল বারবার, চতুর্থ বারে রিং হতে রিসিভ হলো। 

- সাজু ভাই বললেন, তুমি কি ডাক্তার জাফর চৌধুরীর সেক্রেটারি? 

- হ্যাঁ কিন্তু আপনি কে? 

- আমি সাজু ভাই, তুমি এখন কোথায়? 

- আমি তো চট্টগ্রামে, কিন্তু কোন সাজু ভাই? আমি তো চিনতে পারছি না। 

- তোমার ডাক্তার স্যার খুনের বিষয় আমি একটু খোঁজ করছি, আজকে সন্ধ্যা থেকে তোমার উপর বিপদের সম্ভবনা ছিল এবং এখনো আছে। দরজা জানালা বন্ধ করে তুমি বাড়ির মধ্যে থাকবে, আমি এখনই ওসি সাহেবকে পাঠাচ্ছি। 

- বিশ্বাস করুন স্যার আমার কোন দোষ নাই। 

- আচ্ছা তুমি একটা সত্যি কথা বলবে? 

- কি স্যার? 

- তুমি গতকাল রাতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার কেন গেলে? 

- চুপচাপ। 

- চুপ করে থেকো না, তোমার সত্যি কথা বলতে হবে নাহলে বিপদের শেষ নাই। 

- আমাকে একটা লোক টাকার লোভ দেখিয়ে বলেছিল যে, আমি যদি কালকে রাতে কক্সবাজার যাই তাহলে সে আমাকে ৫০ হাজার টাকা দেবো। আমি কিছুক্ষণ ভেবে রাজি হলাম, আমার খুব অন্যায় হয়ে গেছে। এদিকে স্যার খুন হয়ে গেল, বিশ্বাস করুন আমি কিছু জানি না। 

- টাকা আছে তোমার কাছে? 

- হ্যাঁ, 

- কে দিয়েছে? 

- আমি তাকে চিনি না। 

- আমি কালকে দুপুরের পরে তোমার সঙ্গে দেখা করবো, আর ততক্ষণ তুমি ওসি সাহেবের সঙ্গে থাকবে। আমি এখনই তাকে তোমার কাছে যেতে বলে দিচ্ছি। 

- স্যার আমি নির্দোষ, তবুও পুলিশ কেন? 

- তুমি বুঝবা না, রাখলাম। 

জ্যাম শেষ হয়ে গেছে, তারা আবারও কক্সবাজার যেতে লাগলো, ওসি সাহেবের কাছে কল দিয়ে বলা হয়েছে কিন্তু ভাব বোঝা যাচ্ছে তিনি সকাল হবার আগে হয়তো যাবেন না। 

- রকি বললো, সাজু তুই কি জানতিস যে গাড়ি এক্সিডেন্ট করবে? 

- না তবে ধারণা ছিল বা সন্দেহ। 

- কীভাবে? 

- হাসপাতালে রাহাত সাহেবের কেবিন থেকে বের হয়ে কাউকে যেন সরতে দেখলাম তখনই মনে হচ্ছিল কেউ অনুসরণ করে। ভাবলাম যে সে যদি আমাকে ফলো করে বাসের মধ্যে কোন ধরনের গন্ডগোল করে তাহলে তো বিপদ। সেজন্যই তো ড্রাইভারকে সাবধানে যেতে বললাম রে রকি। 

দুজনেই চুপচাপ, বাস যখন কক্সবাজার গিয়ে পৌঁছাল তখন সকাল হয়ে গেছে। জ্যামে আটকা পরে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি একটা হোটেলে যেতে হবে। 

আগে একবার যে হোটেলে থেকেছিল সাজু সেই হোটেলে গেল, রকি পিছনে পিছনে হাঁটছে। সাজু ভাই ভিতরে গিয়ে রিসিপশনে রুমের বিষয় নিয়ে কথা বলছে, লোকটা তাকে আগেরবার মনে হতে মনে রেখেছে তাই দশ মিনিটের মতো কথা হলো। 

কিন্তু তারপর রকি পিছনে তাকিয়ে দেখে রকি নেই, আশ্চর্য সে গেল কোন যায়গা? চারিদিকে তাকিয়ে না পেয়ে সাজু ভাই মোবাইল বের করে দেখে সাজুর নাম্বার থেকে চারবার কল এসেছে কিন্তু সে রিসিভ করতে পারে নাই। 

মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে কি হয়ে গেল? আবার কল করেছে, ঘটনা কি? সাজু ভাই কলব্যাক করলো কিন্তু নাম্বার বন্ধ, সাজুর মনটা খারাপ হয়ে গেল আবার ভয়ও পাচ্ছে। তাহলে কি রকি...? নিজের উপর রাগ হচ্ছে, পকেটে মোবাইল বাজলো কিন্তু সে টের পেল না, কপাল। 

এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল কিন্তু রকির কল নয়, ওসি সাহেব কল করেছে। 

- হ্যালো স্যার। 

- সাজু সাহেব সর্বনাশ হয়ে গেছে। 

- মানে? 

- ডাক্তার জাফর চৌধুরীর সেক্রেটারিকে খুনি খুন করে পালিয়েছে। 

- বলেন কি? আপনি রাতে আসেননি? আর তার মোবাইল টা একটু চেক করে নিজের কাছে রাখুন তো। 

- আমি রাতে আসতে পারি নাই কিন্তু সকালে উঠে চলে এসেছি, তবে তাকে রাতেই খুন করা হয়েছে।

সাজু ভাই মোবাইল কেটে দিয়ে দিকবিদিকশুন্য হয়ে গেল, এদিকে রকির সন্ধান নেই। ওদিকে সেই সেক্রেটারি খুন হয়েছে, তাহলে কি কক্সবাজারের আসার পথে তাদের উপর নজর আছে এখনো? 

.

সারাদিন কাজ শেষে মাগরিবের পরে গোসল করে গল্পটা লিখে পোস্ট করলাম। আশা করি সবাই নিজের মতামত প্রকাশ করবেন। 
.

চলবে...?
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 4 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#5
চমৎকার আপডেট
[+] 1 user Likes Jibon Ahmed's post
Like Reply
#6
(08-01-2023, 11:36 PM)Jibon Ahmed Wrote: চমৎকার আপডেট





ধন্যবাদ আপনাকে
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#7
গল্পের প্লট খুবই ভালো লেগেছে।
চালিয়ে যান, সাথেই আছি।
yourock     clps
Like Reply
#8
(12-01-2023, 12:50 AM)Lajuklata Wrote: গল্পের প্লট খুবই ভালো লেগেছে।
চালিয়ে যান,  সাথেই আছি।




ধন্যবাদ আপনাকে সাথে থাকবার জন্য।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#9
পর্ব-০৪



রকির কথা ভাবতে গিয়ে বুকটা ধুকধুক করে ওঠে সাজু ভাইয়ের, সত্যি সত্যি যদি বিপদের মুখে পরে তাহলে তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। সে নিজেই তাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে, তাই এখন তো সবকিছু তার নজর রাখা উচিৎ ছিল। 

হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ এদিক সেদিক তাকিয়ে মাথা ঠান্ডা করলো, বাস থেকে নামার পর কে কে তাদের দেখেছে সেটা মনে করতে চেষ্টা করছে সাজু ভাই। হোটেলের রিসিপশনের লোকটা তার পিছনে এসে বললো, 

- কোন সমস্যা ভাই? 

- আমার সঙ্গে আমার বন্ধু ছিল কিন্তু এখন তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। আমি এমনিতেই একটা সমস্যার সমাধান করতে ঘুরছি তাই আমার পদে পদে বিপদ। 

- তাহলে তো সমস্যা মনে হচ্ছে, আচ্ছা আপনি কি তার নাম্বারে কল দিয়েছেন? 

- রকি নিজে আমাকে কল করেছে কিন্তু আমি তো রিসিভ করতে পারি নাই, এখন নাম্বার বন্ধ। 

- খুবই টেনশনের বিষয়। 

- আচ্ছা কক্সবাজারে গতকাল একটা হোটেলে একজন ডাক্তারের উপর আক্রমণ হয়েছে। ভই আপনি কি সেই হোটেলের লোকেশান বলবেন প্লিজ? 

- এখান থেকে দশ মিনিটের মতো হাঁটলে আপনি সেই হোটেলে যেতে পারবেন। হোটেল "রুমিলা"

- আমি একটু সেখানে যেতে চাই। 

- কিন্তু আপনার বন্ধু নিখোঁজ এদিকে আপনার সারারাত জার্নি করে ক্লান্ত, যদি বিশ্রাম করতেন তাহলে কিন্তু খুব ভালো হতো। আর আপনার বন্ধু ফিরে আসবে বলে মনে হচ্ছে, আমার মনের কথা সবসময় মিলে যায়। 

সাজু ভাই কিছু একটা বলবে ঠিক তখনই অদুরে রকিকে আসতে দেখা গেল। সাজু ভাই দ্রুত রকির কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো:-

- তুই ঠিক আছিস রকি? 

- হ্যাঁ, কেন কি হয়েছে? আর তোকে কল দিলাম তুই রিসিভ করলি না কেন? 

- দেখতে পাইনি কিন্তু যখন দেখেছি তখন তো তোকে পাচ্ছি না, কল দিলাম নাম্বার বন্ধ। কোথায় গেয়েছিলি? আর নাম্বার বন্ধ কেন? 

- মোবাইলে মাত্র ২% চার্জ ছিল, তাই কল দেবার পরে বন্ধ হয়ে গেছে। 

- সারারাত বাসের মধ্যে না ঘুমিয়ে মোবাইলে শুধু অনলাইনে গেমস খেলবি তাহলে কোনদিন চার্জ শেষ হবে না। 

- রাগিস কেন ভাই? 

- কোই ছিলি তুই? 

- একজনকে ফলো করতে করতে একদম তার সঙ্গে অনেকদূর চলে গেলাম। 

- কার পিছনে? আগে রুমে গিয়ে মোবাইল চার্জে দেবো, তারপর বাথরুমে যাবো, তারপর বিষয়টা নিয়ে কথা বলবো। 

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাজু ভাই কৌতূহল দমন করে রকিকে নিয়ে রুমে গেল। তারপর ফ্রেশ হয়ে রকির কাছে জিজ্ঞেস করলো, 

- এবার বল। 

- দোস্ত তুই যখন গেইট দিয়ে ঢুকছিলি তখন হঠাৎ করে রাস্তায় তিনটা মেয়ে একসঙ্গে হাঁটতে দেখি। খুব পরিচিত মনে হচ্ছিল বলে আরেকটু নিকটে সরে গেলাম, তারপর কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারছি ওটা টিকটকের সেই লামিয়া মুনতাহা। আর তার সঙ্গে তার দুই বান্ধবী, যারা প্রায় সময় লামিয়ার সঙ্গে ভিডিও করে। 

- তুই জানিস আমি কতটা টেনশনের মধ্যে পরে গেছিলাম? 

- সরি বন্ধু। 

- আচ্ছা তৈরি হয়ে নে, এখনই নিচে গিয়ে নাস্তা করে ডাক্তার সাহেবের আক্রমণ হওয়া হোটেলে যাবো।

- এখনই? 

- হ্যাঁ, কারণ বেশিক্ষণ সময় কক্সবাজারে থাকা হবে না রকি, চট্টগ্রামে কাজ আছে। 

- আজকেই ফিরতে হবে?

- এখনো বলতে পারি না, কিন্তু হোটেলে গিয়ে সেখানে কিছু তথ্য নেবো। সিসিটিভি ফুটেজ যদি থাকে তাহলে সেগুলো চেক করবো, তারপর যদি প্রয়োজন মনে হয় তবে থাকবো নাহলে আজকেই চট্টগ্রামে ব্যাক করবো। 

- আমি আরও ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে একটু "হোটেল রুমিলায়" যাবো। 

- কোন হোটেল? 

- হোটেল রুমিলা। 

- আমি তো সেখানেই যাবো কারণ সেই হোটেলেই ডাক্তারের উপর আক্রমণ হয়েছে। 

- বলিস কি? কিন্তু লামিয়া ও তার বান্ধবীরাও তো সেই হোটেলে আছে। আমি তাদের পিছনে পিছনে হোটেল পর্যন্ত গেছিলাম, তখন হোটেলের নাম লেখা দেখলাম। 

- এতো সকালে তারা বাইরে ছিল? 

- হ্যাঁ,। 

- দেখতে কেমন? 

- চেহারা দেখতে পারি নাই, সেই টিকটিকের মতো বোরকা পরে হিজাব দিয়ে মুখ ঢাকা। 

- তুই চিনলি কীভাবে? 

- তাদের সেই বোরকা আর হিজাবের স্টাইল সব দেখে মোটামুটি নিশ্চিত। 

- তাহলে আর দেরি না করে চুপচাপ রুমিলা যেতে হবে, চল তাড়াতাড়ি। 

নাস্তা করে দুজনেই একসাথে হাঁটতে লাগলাে, সব কেমন আতঙ্কিত মনে হচ্ছে। সাজু ভাইয়ের কাছে বারবার মনে হচ্ছে তাকে কেউ গভীরভাবে চোখে চোখে রাখছে, কিন্তু আশেপাশের কাউকেই তার সন্দেহ হচ্ছে না। যখনই কাউকে সন্দেহ করতে যায় ঠিক তখনই সে গায়েব হয়ে যায়। 

হোটেলের সামনে আসতেই রকি ব্যস্ত হয়ে সাজু ভাইকে বললো " দোস্ত ওই যে লামিয়া "

সাজু ভাই দেখলো সত্যি সত্যি সত্যি পরিচিত চোখ জোড়া হিজাবের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে। আরো কিছু কাছে গিয়ে মাত্র ৫/৬ ফিট স্থান দুরত্ব রেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। লামিয়া এবং তার বান্ধবীরা অবাক হয়ে গেল, নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে লামিয়া বললো:-

- কিছু বলবেন? 

- সাজু ভাই বললো, কতকিছুই তো বলার জন্য অপেক্ষা করে আছি সেগুলো শোনার কি সময় হবে তোমার? 

- সরি, বুঝতে পারছি না। 

- তোমার নাম লামিয়া মুনতাহা, তাই না? 

- হ্যাঁ কিন্তু আপনি কে? 

- আমার নাম সাজু, সবাই সাজু ভাই হিসেবে চেনে আমাকে। 

- কিন্তু আমার কাছে কি? 

- কতমাস ধরে তোমাকে টিকটকের মধ্যে দেখে আমি তোমাকে খুঁজছি, জানো? 

- আজব তো, আমি কীভাবে জানবো? 

- ওহ্ হ্যাঁ তাই তো, তুমি কীভাবে জানবে? 

- আর কিছু বলবেন মিঃ সাজু ভাই? 

- গানে গানে বলবো? 

- মানে কি? আচ্ছা বলেন, শুনি। 

- তোমার প্রেমে, পরেছি আমি... দোষ হলে ক্ষমা করে দিও। যদি নির্দোষ হই তবে ভাললো..বেসে, আমায়.. আপন করে নিও। 

- কি পাগলের কবলে পরলাম রে বাবা, এমন করে আজব কর্মকান্ড আর কেউ করে নাই। 

- হ্যাঁ করে নাই এবং করবেও না, কারণ তোমার জন্য একজনই পাগলামি করবে আর সে হচ্ছে সাজু, ওরফে সাজু ভাই। 

- মাথা পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে। 

- আমি তোমার প্রতিটি ভিডিও দেখি, সবসময় সুন্দর মন্তব্য করে তোমার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করি, শুধু তোমার সন্ধান পাবো বলে। 

- তো? এখন তো পেয়েছেন, সাধ মিটেছে? 

- যদি সারাজীবন একসঙ্গে থাকার জন্য হাতটা বাড়িয়ে দেই, গ্রহন করবে? 

- আশ্চর্য ব্যাপার, আপনাকে চিনি না জানি না, আর হুট করে এসে পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনি আমাকে সারাজীবন একসঙ্গে থাকার প্রস্তাব দেন? 

- আচ্ছা সরি, তাহলে পরিচয় যখন হয়েছে তখন ঠিকই তোমার সঙ্গে বারবার দেখা হবে। আমরা একটা কাজের জন্য তোমাদের হোটেলে যাচ্ছি, কাজ শেষ করে আবারও তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে। 

- আমাদের হোটেলে গতকাল একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে তাই বাহিরের কেউ এখন ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। 

- কোন সমস্যা নেই কারণ আমি পারবো, কারণ সেই ঘটনার রহস্য বের করার জন্য মাঠে নেমেছি আমি সাজু ভাই। 

- ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে লামিয়া বললো, আপনি কি তাহলে গোয়েন্দা নাকি? 

- পেশাগত নয় বা কোন লাইসেন্সও নেই কিন্তু সখের জন্য করি, এ পর্যন্ত ৩/৪ টা মামলার ঠিক সমাধান করতে পেরেছি। 

- বাহহ অসাধারণ, আমার কাছে অবশ্য গোয়েন্দা কাহিনি পড়তে ভালো লাগে কিন্তু বাস্তবে কখনো কোন গোয়েন্দার সঙ্গে কথা হয়নি। 

- আচ্ছা ভালো থেকো, আবার দেখা হবে। 

শেষ মুহূর্তে একটা ভাব নিয়ে লামিয়ার সামনে থেকে চলে এলো সাজু ভাই ও রকি। লামিয়া মনে হয় কিছুটা অবাক হয়েছে, না না অনেকটা অবাক হয়ে গেছে সে। তার এই জীবনে সে এভাবে কোন ছেলেকে তার সঙ্গে কথা বলতে দেখেনি। দেখবে কীভাবে? কারণ সে বিগত চারবছর ধরে কখনো মুখ খোলা রেখে বাহিরে আসে না। 

★★★

চট্টগ্রামে ওসি সাহেবের কাছে কল দিয়ে তারপর কক্সবাজারের এক পুলিশের সাহায্য নিল সাজু ভাই। সেই দারোগার সঙ্গে হোটেলের মধ্যে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ চতুর্দিকে হাটলো তারপর তারা ঘটনাস্থলের রুমের মধ্যে গিয়ে দরজার সামনে বা কতটুকু দুরে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে সেটা লক্ষ্য করলো। 

- দারোগা বললেন, সাজু সাহেব আমাদের কাছে সেই মুহূর্তের ভিডিও ফুটেছে আছে। আমরা তো গতকালই দেখেছি, আপনি চাইলে এখনই সেটা দেখতে পারেন। 

- অবশ্যই দেখতে চাই। 

- সেখানে স্পষ্ট দেখা গেছে হোটেলের এক কর্মী তার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নক করে। তারপর ডাক্তার সাহেব দরজা খুলে দিলে কর্মী ভিতরে প্রবেশ করে। দুই মিনিট পরে কর্মী রুম থেকে বের হয়ে যায় কিন্তু দরজা কেউ বন্ধ করতে আসে না। আর পাঁচ মিনিট পরেই ডাক্তার সাহেবের স্ত্রীর আহাজারি দরজার সামনে দেখা যায়। কিন্তু সেই কর্মীর আকৃতি অনুযায়ী এই হোটেলে তেমন কেউ কাজ করে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এক কর্মীকে কেউ একজন মাথার পিছনে আঘাত করে পোশাক নিয়ে গেছে। 

- সাজু ভাই বললেন, স্যার তবুও আমি সেইটা দেখতে চাই। আর সেই আহত কর্মীর সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই, ব্যবস্থা করতে পারবেন? 

- হ্যাঁ অবশ্যই। 

খুব মনোযোগ দিয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখলো সাজু ভাই, পরপর তিনবার দেখে সে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো:- "এতো বুদ্ধি ছিল তার? "

- দারোগা বললেন, ঠিক বুঝলাম না। 

- দারোগা সাহেব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন ওটা কোন ছেলে নয়, ওটা একটা মেয়ে। পুরুষের পোশাক পরে পুরুষ আকৃতি নিয়ে একটা মেয়ে ডাক্তারের কাছে গেছিল। 

- বলেন কি? 

- হ্যাঁ স্যার, আচ্ছা আমার হাতে সময় তেমন নেই, আমি সেই আহত কর্মীর সঙ্গে কথা বলবো। 

আহত কর্মীকে জিজ্ঞেস করে যতটুকু জানা গেল তা হচ্ছে, সে একটা রুমের মধ্যে তালা দেবার জন্য এসেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ একজন পিছন থেকে আঘাত করে তারপর তার কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন তার চারিদিকে অনেক মানুষ এবং তার পোশাক পাশেই পরে আছে এবং সে পরে আছে সেই খালি রুমে যেটা সে তালা দিতে এসেছে। তার জ্ঞান ফেরার আগেই ডাক্তার সাহেবের উপর আক্রমণ হয়েছে। 

★★★

সাজু ভাই রকিকে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামলো, তারপর দুজনেই হাঁটতে হাঁটতে তারা যে হোটেলে উঠেছে সেখানে গেল। 

- রকি তখন বললো, আমরা কি চট্টগ্রামে যাচ্ছি? 

- না রকি। 

- কেন? 

- খুনি একজন নয় বরং ২ বা তার বেশি। আর কক্সবাজারে এখনো খুনির বড় একটা অংশ আছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। 

- কীভাবে বুঝলি? 

- শুধুমাত্র মারিয়া স্বামী রাহাত সাহেবকে যদি খুন করার টার্গেট থাকতো তাহলে তো ডাক্তারকে খুন করার দরকার ছিল না। অসুস্থ মারিয়ার স্বামীকে খুন করলেই বেশ হতো। 

- তাহলে তাদের কোন সম্পর্ক নেই? 

- অবশ্যই আছে, কারণ রাহাত সাহেব এখানে খুব ভালো করে জড়িত আছে। 

- কীভাবে? 

- খুজতে হবে রকি, খুঁজতে হবে। শোন, বিকেলে আমি বের হবো, তুই রুমের মধ্যে থাকবি, আমি না ফেরা পর্যন্ত তুই রুম থেকে বের হবি না। 

- কেন রে? 

- রাতে ফিরে সবকিছু বলবো। 

কিন্তু দুপুরের পরে আকাশে মেঘ জমতে দেখতে পাচ্ছে সাজু ভাই, আবহাওয়া কেমন একটু যেন পরিবর্তন হচ্ছে। তবু আসরের দিকে রুম থেকে বের হয়ে গেল সাজু ভাই, আর রুমের দরজা বাহির থেকে তালা দিয়ে বন্ধ করে গেল। রাস্তায় নেমে সে চা বিস্কুট বিক্রি করা পিচ্চি ছেলেটার কাছে কল দিল। তারপর সেই ছেলের বলা স্থানের উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলাে সাজু ভাই। 

সকাল বেলা লামিয়ার সঙ্গে দেখা হবার পরেই সাজু ভাই ওই চা বিস্কুট বিক্রি করা পিচ্চিকে ডেকে বলেছিল যে " সারাদিন ওই মেয়েটা ও তার বান্ধবী সবার দিকে নজর রাখতে হবে। এক হাজার টাকা দিয়ে তাকে পিছনে লাগানো হয়েছে, আর পিচ্চি সেই সকাল থেকে লামিয়া যেখানে যায় সেখানেই আশেপাশে গিয়ে চা চা, এই চা... বলে ডাকে। 

সমুদ্রের পাড় থেকে অনেকটা দুরে এসে নির্জন স্থানে লামিয়াকে পাওয়া গেল। আকাশের অবস্থা ভালো না বলে সন্ধ্যা হবার আগেই এদিকটায় মানুষ একটু কম। পিচ্চিকে ছুটি দিয়ে লামিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াল সাজু ভাই। 

- লামিয়া বললো, আরে মিঃ গোয়েন্দা যে, তা সারাদিন পরে খুঁজে বের করলেন আমাকে? 

- আমি তোমার সঙ্গে একা একা কিছু কথা বলতে চাই, সময় হবে? 

- কি কথা? আমার জীবনের কোন গোপনীয় তথ্য নেই যেগুলো এই দুই বান্ধবী জানে না। তাই যা বলার তাদের সামনে বলেন সমস্যা নেই, আমরা সবাই একই আত্মা। 

- তোমাকে আমি অনেক খুঁজেছি শুধু নিজের জীবনে জড়াতে চাই বলে, বিশ্বাস করো এমনটা কখনো ভাবিনি কাউকে নিয়ে। আমি একটা মেয়ে বিয়ে করেছিলাম কিন্তু সে তার পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে চলে গেল। তবুও তেমন কষ্ট পাইনি কিন্তু তোমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে ছিল খুব। আজও তোমার সম্পুর্ণ চেহারা দেখতে পারি নাই কিন্তু তবুও ভালবাসা তোমাকে। 

- আপনি তো শুধু আমাদের ভিডিও দেখেছেন কিন্তু আমাদের আসল পরিচয় জানেন? আপনি যদি জানতেন তাহলে ভালবাসা তো দুরের কথা বরং ফিরেও তাকাতেন না। 

- তাহলে বলো, তারপর বিবেচনা করি। 

- দরকার নেই, ক্ষমা করবেন প্লিজ। 

- তোমার জীবনে কেউ আছে? 

- স্পেশাল কেউ নেই কিন্তু তবুও অনেক মানুষ জড়িয়ে আছে। 

- তবুও তোমাকে চাই। 

- বললাম তো আমার আসল পরিচয় পেলে খুব ঘৃণা করবেন আমাকে। 

- একটুও ঘৃণা আসবে না কথা দিচ্ছি। 

- এতটা কনফিডেন্স? 

- হ্যাঁ নিজের উপর বিশ্বাস। 

- যদি সত্যি পরিচয় পাবার পরে আপনার চোখে ঘৃণা দেখা যায় তাহলে কি করবেন? 

- কোনদিন সামনে আসবো না, আর তোমার টিকটক আইডি দিয়ে বের হয়ে যাবো। 

লামিয়া তখন তার বান্ধবীদের সামনে যেতে বলে নিজে দাঁড়িয়ে রইল, সাজু ভাই বললো:- 

- বলো কি বলতে চাও? 

- আমি কোনদিন নিজের মুখ বের করে ভিডিও করিনা কেন জানেন? 

- না তো। 

- কারণ এই ভদ্রসমাজ আমাকে তাহলে চিনে ফেলবে। 

- মানে? 

- সমাজের যত ভদ্রলোকের সারি আছে তাদের মধ্যে কিছু কিছু মুখোশধারী আছে। তারা রাতের আঁধারে নিভৃতে টাকার বিনিময়ে কিছু মেয়েদের কিনে নেয়। সারারাত তাদের নিয়ে ফুর্তি করে আর সকাল হলে তাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ভদ্রতার মুখোশ পরে মিশে যায় ভদ্রসমাজে। আমি সেই মুখোশধারীর রাতের টাকায় কেনা পণ্য, তারা যেন দিনের বেলা অনলাইনে আমাদের মুখ চিনতে না পারে তাই মুখ ঢাকা থাকে। আমিও তাদের মতো মুখোশ পরে চলাচল করি, কেউ জানে না রাতের আধারে আমাকে নিয়ে কত পুরুষ মেতে ওঠে আনন্দে। 

একটানা কথাগুলো বলে সাজু ভাইয়ের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে রইল লামিয়া। সাজু ভাই তখন যেন হারিয়ে গেল ভিন্ন জগতের মধ্যে, তারপর অনেক কষ্টে বললো:-

- তারমানে তুমি পতিতাবৃত্তি করো? 

- হ্যাঁ, আপনার চোখে অজস্র ঘৃণা দেখতে পাচ্ছি তাই আশা করি আপনার কথা রাখবেন। আপনি ভালো থাকবেন সবসময়, আর যদি কখনো কোন সময় রাতের আঁধারে দরকার হয় তাহলে ডেকে নিবেন, টাকার রেড একটু বেশি। 

- তুমি কি সকল পেশার মানুষের সঙ্গে থাকো? 

- হ্যাঁ, ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে ডাক্তার বলো, ইঞ্জিনিয়ার বলো, প্রফেসর বলো, পুলিশ বলো, আর যত মানুষ বলো। 

- ডাক্তারের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়? 

- হতেই পারে, হাহাহা হাহাহা, আসি। 

লামিয়া চলে গেল, একা একা মন খারাপ করে যেন নিজেকে অবিশ্বাস হচ্ছে সাজু ভাইয়ের। সে কি সত্যি ভাবছে নাকি ভুল? মাগরিবের আজান দিয়েছে আগেই, চারিদিকে কেমন ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে। হঠাৎ করে একটা মাইক্রো এসে থামলো তার পাশে, হুটহাট করে ৪/৫ জন লোক কালো মুখোশ পরে বেরিয়ে গেল। তাদের হাতে বড় লাঠি জাতীয় কিছু, সাজু ভাই কিছু বলার আগেই তারা ঘিরে ধরলো। 

একজন তাকে হাত ধরে পিছনে মুড়ে রাখলো আর আরেকজন একটা কাপড় দিয়ে মুখ চেপে ধরছে। বাকি দুজন হাতের লাঠি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করে যাচ্ছে, প্রচুর ব্যথায় চিৎকার করতে গিয়েও চিৎকার দিতে পারলো না। তীব্র কষ্টগুলো তখন চোখের পানি দিয়ে বের হতে লাগলো, একসময় থমকে গেল লাঠিচার্জ। ততক্ষণে বালুতে লুটিয়ে পরেছে সাজু ভাইয়ের শরীর। 

.

চলবে...? 

.

বানান ভুল হতেই পারে সেটা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ রইল। 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#10
পর্ব-০৫

মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে গেল, জ্ঞান হারাবার আগে সাজু ভাই শুধু একবার মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেছে " রকি...! "

যারা আক্রমণ করতে এসেছে তারা তাদের কাজ করে চলে গেল, সাজু ভাইয়ের অচেতন শরীরটা বালুতে পরে রইল। 

----

রাত বেরে গিয়েছে কিন্তু সাচুর কোন খোঁজ নাই বলে রকির টেনশন হচ্ছে কিন্তু রুমের দরজা তো বন্ধ, তাহলে কি করবে? বারবার কল দিয়ে যখন সাজুর নাম্বার রিসিভ হচ্ছে না তখন রাত দশটার দিকে রকি হোটেলের রুমের মধ্যে একটা স্লিপে নাম্বার পেয়ে সেই নাম্বারে কল দিল। হোটেলের ম্যানেজার নিজে রুমের ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে দিল, কিন্তু সাজু ভাইয়ের খবর কেউ জানে না। 

সেই রাতেই পুলিশের কাছে খবর দিয়ে কয়েকটা গাড়ি নিয়ে সাজু ভাইয়ের সন্ধান করা হলো কিন্তু কোথাও কেউ নেই। রাত প্রায় দুইটার দিকে রকি এবং পুলিশ মিলে সাজু ভাইয়ের সেই আক্রমণ করার স্থানে এলো। একটা ঘড়ির উপর লাইটের আলো পরতেই সেখানে তারা গাড়ি ব্রেক করলো। গাড়ি থেকে নেমে রকি সেই ঘড়ি হাতে নিয়ে যেন অবাক হয়ে গেল, কারণ ঘড়িটা সাজু ভাইয়ের। 

তারপর সেখানে ভালো করে অনুসন্ধান করে কিছু রক্তের ফোঁটা এবং ধস্তাধস্তির চিহ্ন পেল। কিন্তু আশেপাশের কোথাও সাজুকে পাওয়া গেল না, ক্লান্ত ও হতাশা নিয়ে হোটেলে ফিরে গেল রকি।
হোটেলে বসে রকি যখন কল করেছে তখন সাজুর নাম্বার খোলা ছিল কিন্তু তারপর বন্ধ। 

 চট্টগ্রামে সজীবের কাছে কল দিয়ে কান্না করতে করতে সাজুর নিখোঁজের খবর দিল। সজীব সেই সময়ই রওনা দিতে চাইলো কিন্তু রকি সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছে। 

★★★

সাজুর যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন সে একটু সাদা ধবধবে বিছানায় কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছে। কিন্তু কে তাকে এখানে নিয়ে এসেছে? মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে দিয়েছে, রুমটা দেখে অনুমান করা যায় যে এটাও একটা হোটেল রুম। নড়তে গিয়ে মাথা ভারি হয়ে গেল, রুমের মধ্যে কাউকে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু বাথরুমে পানির শব্দ হচ্ছে। 

সাজু ভাই তখন আস্তে আস্তে উঠে বসে খাটের সঙ্গে একটা বালিশ দিয়ে পিঠ এলিয়ে হেলান দিয়ে রইল। জানালা দিয়ে প্রচুর আলো এসে চোখ ঝিম ধরার উপক্রম করছে তাই চোখ বন্ধ করলো। ঠিক তখনই বাথরুমে দরজা খোলার শব্দ হলো, কিন্তু চোখ মেলতে ইচ্ছে করছে না তাই চোখ সেভাবেই বন্ধ করে রইল। 

কেউ একজন গুনগুন করে গান গাইছে, আর সে একটা মেয়ে সেটাও বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু মাথার তীব্র ব্যথা আর চোখের যন্ত্রণায় চোখ মেলে সে তাকাতে পারলো না। 

- হঠাৎ করে মেয়েটা বললো, তোমার জ্ঞান ফিরে গেছে? আলহামদুলিল্লাহ, এখন কেমন লাগে? 

- চোখ বন্ধ রেখেই সাজু বললো, কে আপনি? 

- চোখ মেলে তাকিয়ে যদি পারো তো নিজেই চিনে 
নাও, আমি কেন বলতে যাবো? 

- এবার কণ্ঠ পরিচিত মনে হচ্ছে, কৌতূহল নিয়ে বহুকষ্টে চোখ খুললো সাজু। তারপর মেয়েটাে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, যতটুকু দেখছে ততটুকু যথেষ্ট। 

ঢিলেঢালা একটা নীল রঙের প্লাজু আর একদম কুচকুচে কালো একটা গেঞ্জি পরে অত্যন্ত সুন্দরী রূপবতী তরুণী দাঁড়িয়ে আছে। চেহারার মধ্যে কোথাও কোন দাগ নেই, এতটা নিখুঁত সৌন্দর্য তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আশ্চর্য। চেহারাটা তার কাছে বেশ পরিচিত লাগলো কিন্তু মনে করতে গিয়ে মাথা আবারও ব্যথা করতে লাগলো। আর তারপরে চোখ বন্ধ করে বললো,

- তুমি আমাকে কোন যায়গা আনলে আমাকে?

- আগে বলো চিনতে পারো আমাকে? 

- তোমার চোখদুটো অসম্ভব সুন্দর, আর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বুঝতে পারছি লামিয়া। 

- ১০০ মার্কের মধ্যে মাত্র ২৮ নাম্বার পেলে, এখন বাকি উত্তর দাও। 

- কিসের বাকি উত্তর? 

- লামিয়ার বাইরে আমার আরেকটা আসল নাম আছে এবং সেটা তুমি জানো, কিন্তু তোমাকে সেই নাম মনে করতে হবে, মনে করো। 

- আমি চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না, আচ্ছা এসব বাদ দিয়ে বলো আমাকে কীভাবে পেলে? 

- তোমার সামনে এসে যখন গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল তখন আমরা অনেকটা পথ এসেছিলাম। আমার সঙ্গের বান্ধবীদের পাঠিয়ে দিয়ে আমি আবারও তোমার দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দুরে দাঁড়িয়ে যখন তোমাকে আঘাত করার শব্দ পেলাম তখন জোরে হাঁটতে লাগলাম কিন্তু আমি যাবার আগেই তারা চলে গেল। 

- খুব ভালো হয়েছে, নাহলে তারা তোমাকেও আহত করতো আর আমি এতটা সেবা যত্ন পেতাম না লামিয়া। 

- আমার নাম লামিয়া নয়, আরেকটা নাম আছে সেটা তোমাকে বের করতে হবে।

- তুমি কি আমাকে আগে থেকে চিনতে? 

- হ্যাঁ অনেক আগে চিনতাম, কিন্তু গতকাল সকাল বেলা তোমাকে দেখে অবাক হলাম এবং সেই পুরনো কথা মনে পরে গেল।

- একটু সহজ করে দাও। 

- চোখ মেলে আমার চেহারার দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে দেখো, ঠিকই চিনবে। 

এবার সত্যি সত্যি সাজু ভাই লামিয়ার মুখের দিকে খুব মনোযোগ দিল। সত্যি সত্যি বেশি পরিচিত মনে হচ্ছে কিন্তু, কে হতে পারে? 

পাঁচ মিনিট কাটলো তারপর মুখের মধ্যে হতাশা নিয়ে অস্ফুটে বললো, " কবিতা .....? "

- হাহাহা, চিনতে পারছো সাজু? 

- কবিতা তুমি? সত্যি সত্যি আগে চিনতে পারি নাই একদমই না, কেমন আছো? 

- আমি কিন্তু গতকাল সকাল বেলা তোমাকে দেখেই চিনতে পেরেছি, কিন্তু তুমি আমাকে ঠিকই ভুলে গেলে সাজু। 

- কমপক্ষে ১০/১১ বছর আগের কথা তাই আমি ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। 

- তাহলে আমি ভুলিনি কেন? 

- জানি না, কিন্তু তুমি তো বিয়ে করে ঢাকা শহরে চলে গেলে, তাহলে গতকাল সকালে অমন সব আবোলতাবোল কথা বললে কেন? 

- একটা নিঃশ্বাস ফেলে কবিতা (লামিয়া) বললো, আমি কোনকিছু মিথ্যা বলিনি, যা বলেছি সবকিছু সত্যি বলছি। 

- মানে কি? তোমার স্বামী কোথায়? তুমি তো সেই মারুফের সঙ্গে পড়াশোনা ছেড়ে পালিয়ে গেলে। 

- মারুফের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়নাই সাজু, বিয়ে না করে সে আমাকে বিক্রি করেছিল। 

- একটু ক্লিয়ার করো তো, তুমি আর মারুফ তো দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসতে তাহলে সে তোমাকে বিক্রি করবে কেন? 

এরপর কান্না করতে করতে সাজুকে জড়িয়ে ধরে থেমে থেমে কবিতা যা বললো সেগুলো গুছিয়ে লিখলে জানা যায়:- 

ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই মারুফের সঙ্গে সে পালিয়েছিল ঠিকই কিন্তু সংসার করতে পারে নাই। সাজু অবশ্য জানতো তাদের সম্পর্কের কথা কারণ সাজু আর কবিতা একসাথে কলেজে ভর্তি হয়েছিল, কিন্তু কিছুদিন পরেই সাজু যখন পলিটেকনিকে ভর্তি হলো তখন তাদের যোগাযোগ কমতে লাগলো। মাত্র মাসখানেক একসাথে ক্লাস করে খুব ভালো বন্ধু হয়েছিল তারা, আর তখনই মারুফের কথা জেনেছিল সাজু। কিন্তু কবিতার অন্ধ ভালবাসা দেখে সাজু তাকে বারবার সাবধান করতো, এতটা পাগলামি করা ঠিক নয় সেটা সে বোঝাতে চাইতো। কিন্তু কবিতা সেগুলো শোনার পাত্রী ছিল না তাই সাজু নিজেও আর বেশি কিছু বলে নাই। 

হঠাৎ করে মারুফ কবিতাকে বিয়ে করার জন্য খুব মানসিক চাপ দিচ্ছিল। মারুফ ঢাকায় চাকরি করতো, এসএসসি পরীক্ষার পরে তাদের পরিচয় হয়েছিল এই শহরের মধ্যে। 

মারুফের কথা ছিল সে তাকে বিয়ে করতে চায় নাহলে সে বাঁচবে না, কিন্তু কবিতার পরিবারের কেউ তার সম্পর্কের কথা জানতো না। এমনকি তাকে সেই মুহূর্তে বিয়ে দিতে চায় না তারা, তাই মারুফের মানসিক চাপে কবিতা সবকিছু বাদ দিয়ে মারুফের সঙ্গে পালিয়ে যায়। সাজুকে বলতে চেয়েছিল কিন্তু সাহস হয়নি, কারণ বেশি পাগলামি যে সহ্য করতে পারে না সে কীভাবে পালিয়ে গেলে সাপোর্ট করবে? 

----

এতটুকু বলার পরে সাজু ভাই বললো, " আমার পানি পিপাসা অনুভূত হচ্ছে, এক গ্লাস পানি দাও তো "

- কবিতা তখন পানি দিল, তারপর তাকে ধরে আস্তে করে আবার শুইয়ে দিয়ে বললো " এখন আর কোন কথা নয়, বাকিটা পরে বলবো কারণ আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না তাই না? "

- আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু মনের মধ্যে আমার তো মেলা মেলা কৌতূহল। 

- বললাম তো পরে বলবো। 

- ঠিক আছে, আমার মোবাইল কোথায়? 

- আছে তবে বন্ধ করে রেখেছি, কারণ আমি তো তোমাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাই না। তাই তুমি জ্ঞান ফিরে সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছি, আর এটা কিন্তু সেই হোটেল নয়। আমি তোমাকে নিয়ে আরেকটা হোটেলে উঠেছি আর সকল চিকিৎসা রুমের মধ্যে ব্যবস্থা করেছি। 

কবিতা মোবাইল বের করে দিল, চালু করে সাজু ভাই প্রথমে রকির কাছে কল দিল কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। তারপর সে সজীবকে কল না দিয়ে চট্টগ্রামে ওসি সাহেবের কাছে কল দিল। 

- ওসি সাহেব বললো, আপনি ভালো আছেন তো সাজু সাহেব? ঠিক আছেন? আপনাকে নিয়ে কিন্তু অনেক টেনশনে আছি। 

- জ্বি স্যার আমি ভালো আছি, আপনার ওখানে কি অবস্থা তাই বলেন। 

- বেশি ভালো না। 

- কেন স্যার? কি হয়েছে? 

- হাসপাতালের সেই তৃতীয় ডাক্তারের উপর তো প্রচুর সন্দেহ হচ্ছে কারণ তার সঙ্গে আহত ও নিহত ডাক্তারের শত্রুতা ছিল। এদিকে গোপনীয় প্রতিবেদনে জানা গেছে আপনার সেই রোগী রাহাত সাহেব ইয়াবা ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত। 

- বলেন কি স্যার? 

- হ্যাঁ সাজু সাহেব, কিন্তু রাহাত সাহেব অসুস্থ বলে কিছু করা যাচ্ছে না, এদিকে সিটি করপোরেশনের মেয়র বারবার আমাকে বকাঝকা করে। উপর থেকে প্রচুর চাপ যাচ্ছে আমার। 

- তাহলে কি রাহাত সাহেবের সঙ্গে তার মাদকদ্রব্য বিষয় নিয়ে কোন গন্ডগোল? 

- জানি না আমি,....... 

সাজু ভাই কিছু বলতে পারলো না কারণ রুমের দরজা খুলে ৭/৮ জন যুবক প্রবেশ করলো। আর কবিতা কখন যে বাইরে গেল সেটা সে জানতেই পারলো না। 

তারা সবাই সাজুর দিকে তাকিয়ে আবার নিজেদের মধ্যে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো একসঙ্গে। সাজু ভাই ভয়ে একদম বিছানায় মিশে গেল.... 

.
চলবে... 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#11
পর্ব-০৫

মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে গেল, জ্ঞান হারাবার আগে সাজু ভাই শুধু একবার মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেছে " রকি...! "

যারা আক্রমণ করতে এসেছে তারা তাদের কাজ করে চলে গেল, সাজু ভাইয়ের অচেতন শরীরটা বালুতে পরে রইল। 

----

রাত বেরে গিয়েছে কিন্তু সাজুর কোন খোঁজ নাই বলে রকির টেনশন হচ্ছে কিন্তু রুমের দরজা তো বন্ধ, তাহলে কি করবে? বারবার কল দিয়ে যখন সাজুর নাম্বার রিসিভ হচ্ছে না তখন রাত দশটার দিকে রকি হোটেলের রুমের মধ্যে একটা স্লিপে নাম্বার পেয়ে সেই নাম্বারে কল দিল। হোটেলের ম্যানেজার নিজে রুমের ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে দিল, কিন্তু সাজু ভাইয়ের খবর কেউ জানে না। 

সেই রাতেই পুলিশের কাছে খবর দিয়ে কয়েকটা গাড়ি নিয়ে সাজু ভাইয়ের সন্ধান করা হলো কিন্তু কোথাও কেউ নেই। রাত প্রায় দুইটার দিকে রকি এবং পুলিশ মিলে সাজু ভাইয়ের সেই আক্রমণ করার স্থানে এলো। একটা ঘড়ির উপর লাইটের আলো পরতেই সেখানে তারা গাড়ি ব্রেক করলো। গাড়ি থেকে নেমে রকি সেই ঘড়ি হাতে নিয়ে যেন অবাক হয়ে গেল, কারণ ঘড়িটা সাজু ভাইয়ের। 

তারপর সেখানে ভালো করে অনুসন্ধান করে কিছু রক্তের ফোঁটা এবং ধস্তাধস্তির চিহ্ন পেল। কিন্তু আশেপাশের কোথাও সাজুকে পাওয়া গেল না, ক্লান্ত ও হতাশা নিয়ে হোটেলে ফিরে গেল রকি।
হোটেলে বসে রকি যখন কল করেছে তখন সাজুর নাম্বার খোলা ছিল কিন্তু তারপর বন্ধ। 

 চট্টগ্রামে সজীবের কাছে কল দিয়ে কান্না করতে করতে সাজুর নিখোঁজের খবর দিল। সজীব সেই সময়ই রওনা দিতে চাইলো কিন্তু রকি সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছে। 

★★★

সাজুর যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন সে একটু সাদা ধবধবে বিছানায় কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছে। কিন্তু কে তাকে এখানে নিয়ে এসেছে? মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে দিয়েছে, রুমটা দেখে অনুমান করা যায় যে এটাও একটা হোটেল রুম। নড়তে গিয়ে মাথা ভারি হয়ে গেল, রুমের মধ্যে কাউকে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু বাথরুমে পানির শব্দ হচ্ছে। 

সাজু ভাই তখন আস্তে আস্তে উঠে বসে খাটের সঙ্গে একটা বালিশ দিয়ে পিঠ এলিয়ে হেলান দিয়ে রইল। জানালা দিয়ে প্রচুর আলো এসে চোখ ঝিম ধরার উপক্রম করছে তাই চোখ বন্ধ করলো। ঠিক তখনই বাথরুমে দরজা খোলার শব্দ হলো, কিন্তু চোখ মেলতে ইচ্ছে করছে না তাই চোখ সেভাবেই বন্ধ করে রইল। 

কেউ একজন গুনগুন করে গান গাইছে, আর সে একটা মেয়ে সেটাও বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু মাথার তীব্র ব্যথা আর চোখের যন্ত্রণায় চোখ মেলে সে তাকাতে পারলো না। 

- হঠাৎ করে মেয়েটা বললো, তোমার জ্ঞান ফিরে গেছে? আলহামদুলিল্লাহ, এখন কেমন লাগে? 

- চোখ বন্ধ রেখেই সাজু বললো, কে আপনি? 

- চোখ মেলে তাকিয়ে যদি পারো তো নিজেই চিনে 
নাও, আমি কেন বলতে যাবো? 

- এবার কণ্ঠ পরিচিত মনে হচ্ছে, কৌতূহল নিয়ে বহুকষ্টে চোখ খুললো সাজু। তারপর মেয়েটাে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, যতটুকু দেখছে ততটুকু যথেষ্ট। 

ঢিলেঢালা একটা নীল রঙের প্লাজু আর একদম কুচকুচে কালো একটা গেঞ্জি পরে অত্যন্ত সুন্দরী রূপবতী তরুণী দাঁড়িয়ে আছে। চেহারার মধ্যে কোথাও কোন দাগ নেই, এতটা নিখুঁত সৌন্দর্য তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আশ্চর্য। চেহারাটা তার কাছে বেশ পরিচিত লাগলো কিন্তু মনে করতে গিয়ে মাথা আবারও ব্যথা করতে লাগলো। আর তারপরে চোখ বন্ধ করে বললো,

- তুমি আমাকে কোন যায়গা আনলে আমাকে?

- আগে বলো চিনতে পারো আমাকে? 

- তোমার চোখদুটো অসম্ভব সুন্দর, আর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বুঝতে পারছি লামিয়া। 

- ১০০ মার্কের মধ্যে মাত্র ২৮ নাম্বার পেলে, এখন বাকি উত্তর দাও। 

- কিসের বাকি উত্তর? 

- লামিয়ার বাইরে আমার আরেকটা আসল নাম আছে এবং সেটা তুমি জানো, কিন্তু তোমাকে সেই নাম মনে করতে হবে, মনে করো। 

- আমি চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না, আচ্ছা এসব বাদ দিয়ে বলো আমাকে কীভাবে পেলে? 

- তোমার সামনে এসে যখন গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল তখন আমরা অনেকটা পথ এসেছিলাম। আমার সঙ্গের বান্ধবীদের পাঠিয়ে দিয়ে আমি আবারও তোমার দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দুরে দাঁড়িয়ে যখন তোমাকে আঘাত করার শব্দ পেলাম তখন জোরে হাঁটতে লাগলাম কিন্তু আমি যাবার আগেই তারা চলে গেল। 

- খুব ভালো হয়েছে, নাহলে তারা তোমাকেও আহত করতো আর আমি এতটা সেবা যত্ন পেতাম না লামিয়া। 

- আমার নাম লামিয়া নয়, আরেকটা নাম আছে সেটা তোমাকে বের করতে হবে।

- তুমি কি আমাকে আগে থেকে চিনতে? 

- হ্যাঁ অনেক আগে চিনতাম, কিন্তু গতকাল সকাল বেলা তোমাকে দেখে অবাক হলাম এবং সেই পুরনো কথা মনে পরে গেল।

- একটু সহজ করে দাও। 

- চোখ মেলে আমার চেহারার দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে দেখো, ঠিকই চিনবে। 

এবার সত্যি সত্যি সাজু ভাই লামিয়ার মুখের দিকে খুব মনোযোগ দিল। সত্যি সত্যি বেশি পরিচিত মনে হচ্ছে কিন্তু, কে হতে পারে? 

পাঁচ মিনিট কাটলো তারপর মুখের মধ্যে হতাশা নিয়ে অস্ফুটে বললো, " কবিতা .....? "

- হাহাহা, চিনতে পারছো সাজু? 

- কবিতা তুমি? সত্যি সত্যি আগে চিনতে পারি নাই একদমই না, কেমন আছো? 

- আমি কিন্তু গতকাল সকাল বেলা তোমাকে দেখেই চিনতে পেরেছি, কিন্তু তুমি আমাকে ঠিকই ভুলে গেলে সাজু। 

- কমপক্ষে ১০/১১ বছর আগের কথা তাই আমি ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। 

- তাহলে আমি ভুলিনি কেন? 

- জানি না, কিন্তু তুমি তো বিয়ে করে ঢাকা শহরে চলে গেলে, তাহলে গতকাল সকালে অমন সব আবোলতাবোল কথা বললে কেন? 

- একটা নিঃশ্বাস ফেলে কবিতা (লামিয়া) বললো, আমি কোনকিছু মিথ্যা বলিনি, যা বলেছি সবকিছু সত্যি বলছি। 

- মানে কি? তোমার স্বামী কোথায়? তুমি তো সেই মারুফের সঙ্গে পড়াশোনা ছেড়ে পালিয়ে গেলে। 

- মারুফের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়নাই সাজু, বিয়ে না করে সে আমাকে বিক্রি করেছিল। 

- একটু ক্লিয়ার করো তো, তুমি আর মারুফ তো দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসতে তাহলে সে তোমাকে বিক্রি করবে কেন? 

এরপর কান্না করতে করতে সাজুকে জড়িয়ে ধরে থেমে থেমে কবিতা যা বললো সেগুলো গুছিয়ে লিখলে জানা যায়:- 

ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই মারুফের সঙ্গে সে পালিয়েছিল ঠিকই কিন্তু সংসার করতে পারে নাই। সাজু অবশ্য জানতো তাদের সম্পর্কের কথা কারণ সাজু আর কবিতা একসাথে কলেজে ভর্তি হয়েছিল, কিন্তু কিছুদিন পরেই সাজু যখন পলিটেকনিকে ভর্তি হলো তখন তাদের যোগাযোগ কমতে লাগলো। মাত্র মাসখানেক একসাথে ক্লাস করে খুব ভালো বন্ধু হয়েছিল তারা, আর তখনই মারুফের কথা জেনেছিল সাজু। কিন্তু কবিতার অন্ধ ভালবাসা দেখে সাজু তাকে বারবার সাবধান করতো, এতটা পাগলামি করা ঠিক নয় সেটা সে বোঝাতে চাইতো। কিন্তু কবিতা সেগুলো শোনার পাত্রী ছিল না তাই সাজু নিজেও আর বেশি কিছু বলে নাই। 

হঠাৎ করে মারুফ কবিতাকে বিয়ে করার জন্য খুব মানসিক চাপ দিচ্ছিল। মারুফ ঢাকায় চাকরি করতো, এসএসসি পরীক্ষার পরে তাদের পরিচয় হয়েছিল এই শহরের মধ্যে। 

মারুফের কথা ছিল সে তাকে বিয়ে করতে চায় নাহলে সে বাঁচবে না, কিন্তু কবিতার পরিবারের কেউ তার সম্পর্কের কথা জানতো না। এমনকি তাকে সেই মুহূর্তে বিয়ে দিতে চায় না তারা, তাই মারুফের মানসিক চাপে কবিতা সবকিছু বাদ দিয়ে মারুফের সঙ্গে পালিয়ে যায়। সাজুকে বলতে চেয়েছিল কিন্তু সাহস হয়নি, কারণ বেশি পাগলামি যে সহ্য করতে পারে না সে কীভাবে পালিয়ে গেলে সাপোর্ট করবে? 

----

এতটুকু বলার পরে সাজু ভাই বললো, " আমার পানি পিপাসা অনুভূত হচ্ছে, এক গ্লাস পানি দাও তো "

- কবিতা তখন পানি দিল, তারপর তাকে ধরে আস্তে করে আবার শুইয়ে দিয়ে বললো " এখন আর কোন কথা নয়, বাকিটা পরে বলবো কারণ আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না তাই না? "

- আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু মনের মধ্যে আমার তো মেলা মেলা কৌতূহল। 

- বললাম তো পরে বলবো। 

- ঠিক আছে, আমার মোবাইল কোথায়? 

- আছে তবে বন্ধ করে রেখেছি, কারণ আমি তো তোমাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাই না। তাই তুমি জ্ঞান ফিরে সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছি, আর এটা কিন্তু সেই হোটেল নয়। আমি তোমাকে নিয়ে আরেকটা হোটেলে উঠেছি আর সকল চিকিৎসা রুমের মধ্যে ব্যবস্থা করেছি। 

কবিতা মোবাইল বের করে দিল, চালু করে সাজু ভাই প্রথমে রকির কাছে কল দিল কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। তারপর সে সজীবকে কল না দিয়ে চট্টগ্রামে ওসি সাহেবের কাছে কল দিল। 

- ওসি সাহেব বললো, আপনি ভালো আছেন তো সাজু সাহেব? ঠিক আছেন? আপনাকে নিয়ে কিন্তু অনেক টেনশনে আছি। 

- জ্বি স্যার আমি ভালো আছি, আপনার ওখানে কি অবস্থা তাই বলেন। 

- বেশি ভালো না। 

- কেন স্যার? কি হয়েছে? 

- হাসপাতালের সেই তৃতীয় ডাক্তারের উপর তো প্রচুর সন্দেহ হচ্ছে কারণ তার সঙ্গে আহত ও নিহত ডাক্তারের শত্রুতা ছিল। এদিকে গোপনীয় প্রতিবেদনে জানা গেছে আপনার সেই রোগী রাহাত সাহেব ইয়াবা ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত। 

- বলেন কি স্যার? 

- হ্যাঁ সাজু সাহেব, কিন্তু রাহাত সাহেব অসুস্থ বলে কিছু করা যাচ্ছে না, এদিকে সিটি করপোরেশনের মেয়র বারবার আমাকে বকাঝকা করে। উপর থেকে প্রচুর চাপ যাচ্ছে আমার। 

- তাহলে কি রাহাত সাহেবের সঙ্গে তার মাদকদ্রব্য বিষয় নিয়ে কোন গন্ডগোল? 

- জানি না আমি,....... 

সাজু ভাই কিছু বলতে পারলো না কারণ রুমের দরজা খুলে ৭/৮ জন যুবক প্রবেশ করলো। আর কবিতা কখন যে বাইরে গেল সেটা সে জানতেই পারলো না। 

তারা সবাই সাজুর দিকে তাকিয়ে আবার নিজেদের মধ্যে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো একসঙ্গে। সাজু ভাই ভয়ে একদম বিছানায় মিশে গেল.... 

.
চলবে... 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#12
 পর্ব -০৬


সাজু ভাবলো, এখন যদি তাকে খুন করে চলে যায় তাহলে তো কতকিছু অজানা থেকে যাবে। কিন্তু মনের মধ্যে সাহস রেখে সে সোজা হয়ে বসলো তবে শক্তি নেই, দুর্বল শরীর। 

- আগন্তুক যুবকদের মধ্যে একজন বললো, সরি ভাইয়া ক্ষমা করবেন প্লিজ, আসলে আমরা এই পাশের রুমেই আছি। কিন্তু সবাই মিলে গল্প করতে করতে না দেখে আপনার রুমে ঢুকে গেছি, আশা করি ভুলটা মাফ করবেন। 

সাজু এবার অবাক হয়ে গেল, আর ছেলেগুলো এক এক করে বেরিয়ে যেতে লাগলো। মাথা মোটা বলে নিজেকে নিজে একটু বিদ্রুপ করলো, আর তারপরই চোখ বন্ধ করে পরে রইল। 

অনেকগুলো ফলমূল নিয়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো কবিতা, সেগুলো টেবিলে রেখে দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর একটা কাটা ছুরি দিয়ে কাটতে কাটতে বললো:-

- ডাক্তার বলেছেন যে তোমাকে আরো বেশ কিছু দিন বিশ্রাম করতে হবে, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তোমাকে আমার সঙ্গে ঢাকা নিয়ে যাবো৷ 

- কেন? আর তাছাড়া আমি কিন্তু একটা মামলার ঠিক মাঝপথে আছি। 

- নিজের জীবন বিপন্ন করে রহস্যের পিছনে তুমি কেন যাও? এ জীবনে একবার যখন দেখা হয়েছে তখন আর তোমাকে হাতছাড়া করবো না। 

- আমি কিন্তু তোমার চোখের প্রতি আজও মায়া অনুভব করি, কি মিষ্টি তোমার চোখ। 

- হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না, আমি ভাবছি আর কখনো ভিডিও বানাবো না। 

- কেন? 

- তোমার মতো আর কেউ যেন চোখের প্রেমে না পরে সেজন্য, হিহিহিহি। 

- তাহলে ঠিক আছে, আমি কিন্তু মারুফের সঙ্গে পরবর্তী ঘটনা এখনো শুনিনি। 

- এতো অস্থির কেন? আগে খাবার খেয়ে নাও তারপর ওষুধ আছে, ঔষধ খেয়ে বিশ্রাম করবে তারপর নাহয় বলবো। কিন্তু আমি জানি, সবকিছু জেনে তুমি এখন যেভাবে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছো সেভাবে আর কথা বলবে না। 

- সেটা নাহয় সবকিছু শুনেই সিদ্ধান্ত নেবো। 

এবার কবিতা, চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে সাজু ভাইর পাশে বসে ডান হাতটা ধরে বললো, কথা দিচ্ছি সবকিছু বলবো কিন্তু খারাপ করে বকা দিতে পারবে না, সমাজের মানুষ যেভাবে আমাদের ঘৃণা করে সেভাবে ঘৃণা করতে পারবে না, কারণ তুমি যদি ঘৃণা করো তবে কষ্ট পাবো। 

- ঠিক আছে তাই হবে। 

- একটা প্রশ্ন করবো সাজু? 

- করো। 

- আমি যখন মারুফের সঙ্গে রিলেশনে ছিলাম সেই সময় তুমি আমাকে পছন্দ করতে? 

- যদি হ্যাঁ বলি? 

- তাহলে তো আমি কপাল পোড়া তাই তোমার মত মানুষের সঙ্গী হতে পারিনি।

- কি হয়েছে তোমার জীবনে? 

- মারুফের সঙ্গে আমি ধানমন্ডি কলাবাগানের একটা ফ্ল্যাটে উঠলাম। মারুফ বলেছিল ওটা নাকি ওর এক বন্ধুর বাসা, তারা নাকি এখন সপরিবারে দেশের বাইরে তাই আমরা আপাতত সেখানেই থাকবো। সকাল বেলা মারুফ বিয়ের ব্যবস্থা করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেল, আর সেটাই আমাদের শেষ যোগাযোগ। দুপুর পেরিয়ে বিকেল আর বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা, কিন্তু তবুও তার আর ফেরার নাম নেই এবং মোবাইল বন্ধ। যাবার সময় দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে রেখে দিয়েছে কারণ কেউ যেন প্রবেশ না করে। গভীর রাত হয়ে গেল তবুও মারুফের আসা হয়ে ওঠে না, আমার তো চিন্তায় চিন্তায় জীবন শেষ। সারারাত জাগ্রত থেকে একা একা ফাঁকা বাসার মধ্যে কান্না করতে লাগলাম। 

চারদিন পরে রুমের দরজা খুলে অন্য কেউ প্রবেশ করলো, ৩৫/৩৬ বছর বয়সী একটা সুদর্শন পুরুষ দেখে ভয়ে অবাক হয়ে গেলাম। তার দিকে আমি করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়ে থমকে গেলাম। 

- লোকটা স্বাভাবিক ভাবে সোফায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার নাম কি? 

- আমি বললাম, কবিতা। 

- তুমি কি জানো যে তোমাকে বিক্রি করা হয়েছে? 

- আমি তখন আকাশ থেকে পরার মতো মুমূর্ষু হয়ে বললাম, কি বলছেন আপনি? আমি তো এই বাসায় মারুফের সঙ্গে এসেছি, ও নিশ্চয়ই কোন বিপদে পরেছে। 

- ওহ্ আচ্ছা, তাহলে তুমি যার ধোঁকায় পরে এই খাঁচায় বন্দী হলে তার নাম মারুফ? 

- আমি কান্না করে বললাম, মানে? 

- আমি তোমাকে বা সেই মারুফকে চিনি না, তবে আমি একজনকে বলেছিলাম আমার জন্য একটা ফ্রেশ মেয়ে যোগাড় করতে। 

- কেন? 

- তুমি কি চা বানাতে পারো? 

- হ্যাঁ পারি। 

- তাহলে দুকাপ চা বানিয়ে আনো, আর আমাকে নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। চা নিয়ে আসো তারপর গল্প করবো, আমার হাতে ঘন্টা খানিক সময় আছে। রান্নাঘরে চা চিনি থাকার কথা, চেক করে দেখো। 

আমি জানতাম যে চা চিনি আছে কারণ সেখানে তো রান্না করে একা একা চারদিন বেঁচে আছি। কিন্তু এই অপরিচিত ভয়ঙ্কর লোকটার জন্য চা তৈরি করতে হবে ভেবে কষ্ট হচ্ছিল। তাছাড়া মারুফ যদি সত্যি সত্যি আমাকে বিক্রি করে দিয়ে থাকে তাহলে কাকে ভালবাসলাম আমি? 

চা নিয়ে আসার পরে আবারও বসলাম। 

- সে বললো, আমি আমার স্ত্রীকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম আজ থেকে আট বছর আগে। কিন্তু বিয়ের বছর খানিক পরে একটা এক্সিডেন্টে ওর একটা পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তাছাড়া তার শরীরে অনেক যায়গা ক্ষত হয়েছে, আর সেজন্য তারপর থেকে তার সঙ্গে রাতের বেলা ভালবাসা বৃদ্ধি করতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু আমার শশুরের প্রচুর টাকা এবং আমার স্ত্রী ছিল সেই সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী। আমি তাই ভালবাসার অভিনয় করে তার সঙ্গেই মিশে আছি, আমার স্ত্রী এক পা না থাকলেও হুইলচেয়ারে বসে বসে নিজের হাতে রান্না করে। তার এতবড় এক্সিডেন্ট করার পরেও আমি যখন তাকে ছাড়িনি তখন আমার শশুর আমাকে খুব বিশ্বাস করেন তারপর আমি হলাম বিশ্বস্ত। গতবছর আমার শশুর মারা গেছে, কিন্তু সকল সম্পত্তি আমার আর তার মেয়ে শান্তনার নামে লিখে দিয়েছেন। এখন তো আমি অনেক টাকার মালিক, বিগত আট বছরের মধ্যে আমি অনেক পতিতা-দের সঙ্গে থেকেছি। বাহির থেকে শরীরের চাহিদা পুরণ করে বাসায় গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ভালবাসার নাটক করতাম। কিন্তু হঠাৎ করে তোমার মতো কাউকে রাখতে ইচ্ছে করলো কারণ যে থাকবে শুধু আমার জন্য। আমার স্ত্রী বেঁচে থাকতে আমি কাউকে বিয়ে করতে পারবো না তাই তোমাকে এখানে রাখবো বলে কিনেছি। এই ফ্ল্যাট আমি গোপনে কিনেছি, তারপর আমি তোমার বিষয় কথা বলি। তোমার ছবি দেখে খুব ভাল লেগেছিল তাই পাঁচ লক্ষ টাকা নগদ দিয়ে দিলাম। 

**

আমি তার কথা শুনে কাঁদতে লাগলাম সাজু, যে মানুষের জন্য সবকিছু ত্যাগ করে আসলাম সেই মারুফ আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে। ভদ্রলোক সেদিন আমার সঙ্গে গল্প করে চলে গেলেন, আর দ্বিতীয়বার এলেন আরো একুশ দিন পর। আমার খাবারের সকল বাজারের ব্যবস্থা করতো বাড়ির কেয়ারটেকার, তাকে ওই ভদ্রলোক টাকা দিত অনেক। আমি তো আত্মহত্যা করতে চাইতাম কিন্তু মরতে বড্ড ভয় করছে সাজু। 

.
.

মনোযোগ দিয়ে শুনছিল সাজু ভাই, মনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন জমা হচ্ছে কিন্তু সে চায় কবিতা নিজে থেকে সবকিছু বলুক। 

- কবিতা বললো, পাঁচ বছর ধরে আমি সেভাবেই তার ফ্ল্যাটে থাকতাম, মাস খানিকের মধ্যে আমি সারাদিন একা একা থাকার মধ্যে অভ্যস্ত হলাম। সপ্তাহে একবার লোকটা আসতো, আমি তোমাকে তার পরিচয় বলবো না সাজু। তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না, আমাকে সেখানে রাখার প্রায় ছয়মাস পরে একদিন সে একটা হুজুর নিয়ে এসে আমাকে বিয়ে করে। আমিও তিনবার কবুল বলে বিয়ে করলাম, সেদিনই সে আমার শরীর স্পর্শ করেছিল। আমাকে বললেন " তোমাকে বৈধ করে নিলাম, কারণ তুমি যেন নিজেকে পাপী ভাবতে না পারো। আজ থেকে আমি তোমার স্বামী তাই আমি তোমাকে স্পর্শ করতেই পারি। " এরপর আমার সেই অদ্ভুত বৈবাহিক জীবন শুরু হয়ে গেল, কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে সে আমার স্বামী হলেও মাসে একবারই শুধু আমরা দুজন দুজনকে আলিঙ্গন করতাম। তার নাকি আমার সঙ্গে শুধু গল্প করতে ভালো লাগে, আর সে জন্য সপ্তাহে একবার এসে অনেকক্ষণ গল্প করে চলে যেতো। 

এভাবে কেটে গেল দেড় বছর। 
একবার এসে আমাকে বললেন যে শরীর অসুস্থ তাই দেশের বাইরে যাবে চিকিৎসা করতে। আমার জন্য ব্যাঙ্কে কিছু টাকা জমা দিয়ে গেছে, ব্যাবসার অবস্থা ভালো না তাই বেশি দিতে পারে নাই। ফ্ল্যাট আমার নামে লিখে দিয়েছে মাস তিনেক আগে, আর নগদ টাকা দিয়ে যেন চলতে পারি। লোকটা বুঝতে পেরেছিল সে মারা যাবে তাই হয়তো আমার কথা ভেবে এতকিছু করে গেল। বিদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়ে সে লাশ হয়ে ফিরে এলো, আমার স্বামী হওয়া স্বত্বেও আমি তাকে মৃত্যুর পরে স্পর্শ করতে পারি নাই। একটা বিশ্বস্ত লোক সব জানতো, সে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল তার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে। তারপর থেকে সেই ফাঁকা ফ্ল্যাটে একা একা আছি আর মাস শেষে ব্যাঙ্কের টাকা তুলে নিয়ে আসি। মা-বাবার জন্য মনটা খারাপ লাগে কিন্তু নিজের ইচ্ছেতেই আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চাই নাই। 

- সাজু ভাই বললো, তাহলে গতকাল সকাল বেলা যে-সব বললা? 

- হাহাহা, আমি তোমাকে দেখেই চিনতে পেরেছি সাজু সাহেব, তাই ওভাবে মিথ্যা বললাম। তোমার সঙ্গে একটু রসিকতাও বলতে পারো, তবে আমার সঙ্গে যে দুটি বান্ধবী ছিল ওরা খুব ভালো। 

- এতবড় মিথ্যা বলে মজা করা ঠিক না। 

- আচ্ছা সরি, কান ধরবো? 

- না থাক, কিন্তু তোমার সব ভিডিওর মধ্যে তারা থাকে কীভাবে? 

- ওদের মধ্যে একজনের নাম রিজিয়া, আর অন্য মেয়েটা হচ্ছে তার বান্ধবী হাফসা। রিজিয়া আমি যে ফ্ল্যাটে থাকি সেই বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় থাকে। তাই একসঙ্গে আমরা ভিডিও করি, আর আমরা তিনজনেই এসেছি কক্সবাজার। 

- বুঝলাম। 

- ঘৃণা হচ্ছে? 

- মোটেই না, বরং তুমি আমাকে বেশি ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। 

- হাহাহা, আমি একবার হিসাব করেছিলাম যে আমার স্বামীর সঙ্গে মোট এগারোবার আমার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। 

- আশ্চর্য। 

★★★

সন্ধ্যা বেলা অসুস্থ শরীরে কক্সবাজার থেকে সাজু ভাই চট্টগ্রামে যেতে প্রস্তুতি নিল। রকির কাছে বিকেলেই খবর পাঠানো হয়েছে এবং সে এসেছে মাত্র আধা ঘণ্টা মধ্যে। পুলিশ এসেছে সবকিছু জানার জন্য, 

- দারোগা বললো, যেহেতু আপনার উপর হামলা করা হয়েছে সেহেতু খুনি কক্সবাজার আছে। 

- সাজু ভাই বললো, কিন্তু চট্টগ্রামে যাওয়া বেশি জরুরি দারোগা সাহেব, কারণ আমি কক্সবাজার ত্যাগ করলে সেও কক্সবাজার ত্যাগ করবে। 

- আপনি কি নিশ্চিত? 

- হ্যাঁ, আরেকটা কথা, আহত ডাক্তারের উপর আক্রমণ করা সেই মেয়েটা আমাকে আক্রমণ করার সময়ও গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। আর কিছু না জানলেও, সেই মেয়েটা সবমসময় বাম হাত দিয়ে প্রধান কাজ করে। আমরা যেমন প্রায় সচারাচর ডানহাতে শক্তি বেশি পাই, সে মেয়ের শক্তি হচ্ছে বামহাতে। 

- কীভাবে জানলেন? 

- হোটেলের ভিডিও ফুটেজে সে বাম হাত দিয়ে দরজা খুলছিল, বারান্দার একটা ফুলের টব বাম হাত দিয়ে তুলেছিল, আে সেদিন আমাকে আহত করার সময় বাম হাতে স্টিক নিয়ে দুটো বারি মেরে আঘাত করেছিল। 

- বলেন কি?

- আসি দারোগা সাহেব, আবার দেখা হবে আর প্রয়োজন হলে আপনাকে জানবো। 

রাত সাড়ে বারোটার গাড়িতে অসুস্থ শরীর নিয়ে সাজু ভাই রকি আর কবিতা চট্টগ্রামে রওনা দিল। কবিতার বান্ধবীরা আগামীকাল ঢাকা চলে যাবে কিন্তু সে সাজুর সঙ্গে থাকবে বলে শপথ করেছে। সাজু তাকে বারবার বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে তাই সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। মারিয়ার সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা কথা হয়েছে, পুলিশ তার স্বামীকে মাদকদ্রব্যের বিষয় সন্দেহ করাতে সে বেশ আপসেট। 

সারারাত কবিতার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভোরবেলা চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে পৌঁছাল তারা তাদের বাস। বাস থেকে নেমেই রকি কাচুমাচু করে বললো:-

- সাজু একটা মেয়ের সঙ্গে একটু দেখা করবি? 

- কিসের মেয়ে? 

- তোর একজন পাঠিকা, তোর লেখা গল্প সবসময় নাকি পড়ে, আমি তো তোর ক্লোজ বন্ধু তাই সে আমাকে নক করেছিল অনেক আগে। 

- তারপর? 

- গতকাল রাতে তাকে বলেছি যে আমরা চট্টগ্রাম আসতেছি, আর তুই অসুস্থ শুনে তার খুব খারাপ লাগছে। আর সে এখন আশেপাশেই আছে কারণ আমি তাকে অনেকক্ষণ আগে কল দিয়ে বলেছি যে আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি। তাই তুই যদি একটু দেখা করতি, মেলা মেলা খুশি হতো মেয়েটা। 

কবিতার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছিল, তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাজু রাজি হয়ে গেল। বোরকা পরা একটা মেয়ে দশ মিনিটের মধ্যে তাদের ঠিক সামনে এসে দাঁড়াল। সাজুর মাথায় বেন্ডেজ করা, হাতে শরীরে বিভিন্ন স্থানে এখনো ব্যথা করে। 

মেয়েটার সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল, এমন সময় একটা লোক পাশ দিয়ে যাবার সময় একটা গন্ধ নাকে এলো। সাজু রকি দুজনেই কাশতে লাগলো, আর তখনই মেয়েটা তার হাতের পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো, " পানি খান সাজু ভাই "

সাজু কিছু না ভেবেই পানি মুখে দিল, রাস্তার মধ্যে একটা কিছু ব্লাস্ট হবার শব্দ হলো। সবাই তখন চারিদিকে দৌড়ে যাচ্ছে, সাজু ভাই নিজের মাথা ঘুরতে অনুভব করলো। প্রচুর থুতু আসতে শুরু করলো মুখে, হাতপা শক্তিহীন হয়ে পরে যাচ্ছে দেখে তাড়াতাড়ি তাকে ধরে ফেললো কবিতা। 

সাজু ভাই তখন চারিদিকে তাকিয়ে সেই মেয়েটা খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও নেই সে। সাজুর কাশি বাড়তে লাগলো, থুতুর সঙ্গে সাদা সাদা কিছু বের হচ্ছে। রকিকে হাত দিয়ে ইশারা করে মুখের কাছে নিয়ে গেল। 

- রকি তার কান সাজুর মুখের কাছে নিল। 

সাজু ভাই বললো, পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হবে রকি, খুনির মূল টার্গেট আমি নিজেই। এখন জানি না বাঁচতে পারবো কিনা, বিষাক্ত কোন বিষ পানির বোতলে মেয়েটা আমাকে দিয়েছে। বোকার মতো সেটা খেয়ে নিলাম, এটাই কিন্তু সেই বামহাতি মেয়ে, তার বোতল নড়াচড়া আর কিছু বিষয় দেখে সেটা বুঝতে পারছি। খুনি একজন নয় আর তুই বা সজীব কিছু করতে পারবি না। আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আফসোস করবি না, কিন্তু আমাকে এখন হাসপাতাল নেবার আগেই তুই সিলেটে হাসান ভাইয়ের কাছে কল দিয়ে চট্টগ্রামে আসতে বলবি। আমার ব্যাগের নোটবুকের সতেরো নাম্বার পাতায় সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে কিছু লেখা আছে। হাসান ভাই সেই সবকিছু বুঝতে পারবে, আশা করি তিনি রহস্যের উন্মোচন করতে পারবে। 

- কবিতা কান্না করে বললো, তোমার কিছু হবে না সাজু, তুমি সুস্থ হবে। 

সাজু চোখ বন্ধ করলো। 

.

কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন, যদি খারাপ লাগে তাহলে বলবেন, আমি শেষ করে দেবো। 
.

চলবে.... 

.
.
 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#13
 
পর্ব:- ০৭

চকবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যখন সাজুকে নিয়ে এলো তখন সাজুর কোন সাড়াশব্দ নেই। পুলিশকে জানানো হয়েছে আগেই তাই তো ডাক্তার সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেল। কবিতা ও রকি দুজনেই বাহিরে দাড়িয়ে চোখের পানি দিয়ে গাল ভাসাচ্ছে। ঘন্টা খানিক পরে যখন ডাক্তার বের হয়ে বললো, " আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, তিনি ছাড়া এখন আর কিছু করার নেই। "

★★

হাসান সাহেব যখন চট্টগ্রামে আসলেন তখন রাত দশটা বেজে গেছে, সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে সাজুর অবস্থা দেখে নিলেন। ডাক্তার সন্ধ্যা বেলা বলেছেন যে মোটামুটি বিপদ কাটতে শুরু করেছে সবাই দোয়া করুন। কবিতার দিকে তাকানো যায় না, যদিও মাত্র দুটো দিন তারা একসঙ্গে থেকেছে কিন্তু মেয়েটার দিকে তাকালে মনে হয় সে সাজুর জীবনসঙ্গী বা তারচেয়ে বেশি কিছু। 

সজীব আজকে অফিসে না গিয়ে সারাদিন রকির সঙ্গে হাসপাতালে ছিল। রকি বারবার নিজেকেই অপরাধী করছে কারণ তার মাধ্যমে বামহাতি মেয়ে সাজুর সর্বনাশ করেছে। ওসি সাহেবের কাছে সাজু অজ্ঞান হবার আগে বলা কথা গুলো জানানো হয়েছে তাই তিনি এখানেও পুলিশ পাহারার ব্যাবস্থা করেছেন। আইসিইউতে চিকিৎসায় থেকে সাজু এখন জীবন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। 

সাড়ে বারোটার দিকে হাসপাতালের বারান্দায় বসেই সাজুর নোটবুক বের করা হয়েছে। সতেরো নাম্বার পাতা বের করা হলো, লেখা আছে:-.

আমার বাড়ি যাইও বন্ধু 
সঙ্গে নিও হুধারে,  
আমার কথা কোইও তাদের 
জিজ্ঞেস করবা দাদারে। 

পাঞ্জাবি পরে সাজলাম 
যাদের বাড়ির লাগিয়া, 
তাদের সকল সন্ধান লইও 
মানুষ দেখবা খুঁটিয়া। 

দ্বিতীয় জনের কে কে আছে, 
সবার মুখ বাড়াইয়া, 
হুধার সামনে ধোইরো তবে 
ঢাকনা যাইবো খুলিয়া। 

সজীব, রকি, কবিতা, হাসান সাহেব ও ওসি সাহেব সবাই এক এক করে পড়লেন। কিন্তু কারো মাথায় কিছু আসছে না, স্বয়ং হাসান সাহেব নিজে মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে আর একটু পর পর নোটবুক পড়ে দেখছে। 

ওসি সাহেব চলে গেলেন, রকি সজীব আর কবিতা হাসপাতালে অপেক্ষা করছে। যেই লামিয়ার খোঁজ করার জন্য তারা তিন বন্ধু অনেক চেষ্টা করেছে আজ সেই মেয়ে তাদের সঙ্গে। কিন্তু নির্মম বাস্তব মুখোমুখি হয়ে এখন ওই বিষয় কারো মাথার মধ্যে আসছে না। ওরা সবাই শুধু সাজুর জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছে। 

শুধুমাত্র হাসান সাহেব একা একা নোটবুক নিয়ে বসে আছেন, সবকিছু জট পাকিয়ে আছে কিন্তু খোলার উপায় নেই। হাসান সাহেব জানেন, তিনি অবশ্যই এই ছন্দের অর্থ বের করতে পারবে কারণ তা-না হলে সাজু কখনো তার কথা বলতো না। 

ভোর চারটা বাজে। 
চেয়ারে বসে দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রকি ও সজীব। কবিতা ঘুমে টলছে কিন্তু ঠিকমতো সস্তি হচ্ছে না তাই অস্বস্তি নিয়ে আছে। এমন সময় হাসান সাহেব তাদের সামনে দাঁড়িয়ে একপ্রকার চিৎকার করে বললেন " পেয়ে গেছি। "

এমন জোরে চিৎকার করলেন, পাশেই আরেক ভদ্রলোক ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে গেল, তারপর আবার বিরক্তি নিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুম কে ডাকতে লাগলো। 

- সজীব বললো, হাসান ভাই কি হয়েছে? 

- আমি ছন্দের সমাধান পেয়েছি। 

- আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে তাড়াতাড়ি বলেন। 

- রকি তোমার গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলাে দামুড়হুদা, তাই না? 

- হ্যাঁ হাসান ভাই। 

- তাহলে শোনো, সাজু তার নিজের গ্রামের বাড়ি যেতে বলেছে এবং রকিকে সঙ্গে নিতে বলেছে। কারণ সঙ্গে নিও হুধারে মানে দামুড়হুদার রকিকে সঙ্গে নিতে বলেছে। তারপর তার দাদা-দাদির কাছে তার শশুর বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করতে বলেছে, শশুর বাড়ি হচ্ছে যাদের জন্য পাঞ্জাবি পরে সাজলাম এটা। দ্বিতীয় জনের কে কে আছে মানে হচ্ছে, তার স্ত্রীর কে কে আছে? তাদের সকল মুখ দেখতে বলেছে। তারপর রকি তাদের মধ্যে যদি কাউকে চিনতে পারে বা আগে দেখেছে এমন কেউ থাকে তাহলেই খুনি ধরা সহজ হবে। 

- রকি বললো, ওয়াও হাসান ভাই আপনাকে তো মেলা মেলা ধন্যবাদ দিতে হবে। 

- হাসান সাহেব বললো, সজীব তোমার আার সাজুর বাড়ি তো বাগেরহাটে তাহলে তো তুমিই জানো তোমাদের এলাকার বাস কখন পাবো? 

- সজীব বললো, প্রতিদিন বিকেলে অলংকার বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ে আর পরদিন ভোরে বা শেষরাত্রে গিয়ে পৌঁছে। 

- এতো সময় আমাদের হাতে নেই, আমরা বরং এখনই ঢাকা রওনা দেবো। তারপর সেখান থেকে কালকে বিকেলে বা সন্ধ্যা বেলা পৌঁছে যাবো। 

- কিন্তু আমার বাড়ি যেহেতু বাগেরহাট সেহেতু আমি আপনার সঙ্গে গেলে অনেক ভালো হতো। তবে সাজু যেহেতু আপনাকে আর রকিকে যাবার জন্য বলেছে সেহেতু নিশ্চয়ই কারণ আছে। 

- হ্যাঁ ঠিক তাই। 

★★

দুপুরের দিকে সজীব কবিতার কাছে এসে বললো, আপনি কিন্তু আমার বাসায় যেতে পারেন। যদিও আমরা ব্যাচেলর তবে বাড়িওয়ালার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো আছে তাই সমস্যা হবে না। আপনি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হলে খুব ভালো হতো, একটা মেয়ে হয়ে এভাবে কষ্ট করতে হচ্ছে। 

- কবিতা বললো, ঠিক আছে সমস্যা নেই তবে আজকে নয়। আজকের রাতটা কেটে যাক তবে দেখি সাজুর শারীরিক অবস্থা কেমন হয়। 

- আচ্ছা ঠিক আছে। 

- আপনারা দুই বন্ধু সাজুকে খুব ভালবাসেন তাই না ভাইয়া? 

- হ্যাঁ, আমরা তিনজন খুব ভালো বন্ধু আরেকজন ছিল কিন্তু সে মারা গেছে। 

- ওহ্, দুঃখিত আমি। 

রুহির কাছে সাজুর অসুস্থতার কথা বলতেই রুহি অনেক অস্থির হয়ে গেল। যদিও সাজুর জন্য তার বাবার ফাঁসি হয়েছে কিন্তু তবুও সাজু ভাইয়ের প্রতি তার প্রচুর শ্রদ্ধা। মোবাইলে কথা বলার সময় সে বারবার সুস্থতা কামনা করতে লাগলো। 

সাজু ভাইর দাদাবাড়ী যখন রকি ও হাসান সাহেব পৌঁছালেন তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। রকি আগেও দুবার এসেছে সাজুর সঙ্গে তাই তেমন অসুবিধা ছিল না। সাজুর বন্ধুরা এসেছে দেখে তার দাদা দাদী সবাই আনন্দিত, কিন্তু সাজু হাসপাতালে ভর্তি সে খবর শুনে তার দাদী কাঁদতে লাগলাে। 

- হাসান সাহেব বললো, সাজু আমাদেরকে তার প্রাক্তন স্ত্রী মারিয়ার বাড়ির সকলের সঙ্গে দেখা করতে বলেছে। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করে কিছু একটা সনাক্ত করতে হবে। 

- দাদা বললো, কিন্তু সেটা কি? 

- সেটা পরিষ্কার করে বলে নাই তবে যেহেতু সাজু নোটবুকে লিখে গেছে তাই নিশ্চয়ই কারণ আছে। 

- আচ্ছা ঠিক আছে, এখন তো রাত হয়ে গেছে আর তোমরা শহর থেকে আসছো। আগামীকাল সকাল বেলা আমি তোমাদের সঙ্গে একজনকে দেবো, সে তোমাদের নিয়ে যাবে। 

- ঠিক আছে দাদু। 

রাতের খাবার খেয়ে পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে কথা বলছিলেন হাসান সাহেব ও রকি। হাসান তার মনের মধ্যে একটা বিষয় নিয়ে খুবই চিন্তিত কারণ সাজু একজন ডিটেকটিভ টাইপের মানুষ হয়ে কেন অপরিচিত মানুষের পানি খাবে? 

- রকির কাছে বললো, তুমি তো সাজুর সঙ্গে ছিলে তাহলে বলো তো সাজু ওই মেয়ের পানি পান করে বোকামি করলো কেন? 

- হাসান ভাই, সেই সময় আমাদের সামনে বিষাক্ত কোন গ্যাস ছাড়া হয়েছে বলে আমরা তিনজনই কাশতে থাকি। লামিয়া মানে সাজুর পুরনো বান্ধবী কবিতার হাতেও পানির বোতল ছিল আর দুজনেই একসাথে বোতল এগিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সাজু হয়তো এতটা বুঝতে পারে নাই যে কার হাতের বোতল সে গ্রহণ করেছে। 

- বুঝতে পারছি, কিন্তু কি যে হবে। সজীব এর সঙ্গে কি কথা হয়েছে? 

- হ্যাঁ একটু আগে কল দিলাম, ডাক্তার বলেছে যে মোটামুটি ভালো কন্ডিশন চলছে। 

- আলহামদুলিল্লাহ, ঠিক আছে ঘুমাও তাহলে।  

★★★

পরদিন দুপুরের দিকে সজীব আবারও কবিতার কাছে বাসায় যাবার প্রস্তাব করে। কবিতা যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছে কিন্তু ডাক্তার বলেছে সাজুর সঙ্গে কথা বলা যাবে একটু পরে। তাই সে অপেক্ষা করছে কথা বলার জন্য। কথা বলতে পারলেই সে বাসায় যেতে পারে। 

- হঠাৎ করে কবিতা বললো, একটা প্রশ্ন করতে চাই সজীব ভাই। 

- জ্বি নিশ্চয়ই। 

- সাজু বিয়ে করেনি? 

- হ্যাঁ করেছিল। 

- করেছিল মানে? তাহলে সেই স্ত্রী কোথায়? 

- তার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে, সেই মেয়ের স্বামী অসুস্থ আর সেজন্যই সাজু এই মামলায় জড়িয়ে গেছে। 

- ডিভোর্স কেন হলো? আর সেই মেয়ে এখন কি নতুন করে বিয়ে করেছে? 

- হ্যাঁ, মারিয়া আগে একটা ছেলেকে পছন্দ করত তাই তার জন্য সাজুকে ডিভোর্স দিয়েছে। 

এমন সময় একটা নার্স দ্রুত তাদের সামনে এসে বললো, সাজু সাহেবের কে আছেন? 

- জ্বি আমরা। 

- আপনারা তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন তবে বেশি কথা বলবেন না। 

- সত্যি বলছেন? 

- হ্যাঁ ডাক্তার এই মাত্র দেখে গেল আর তিনি বলে গেছেন আপনারা দেখা করতে পারবেন। 

আইসিইউ থেকে কেবিনে রাখা হয়েছে সাজুকে, সজীব বললো " আপনি আগে গিয়ে দেখা করে আসুন তাহলে সাজু বেশ খুশি হবে। "

কোনরকম সঙ্কোচ না করে কবিতা কেবিনের মধ্যে ঢুকে গেল, বিছানায় শুয়ে তার দিকে তাকিয়ে যেন কতকিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে সাজু ভাই। 

- সাজু খুব আস্তে করে বললো, হিজাব পরে যদি আসতে তাহলে খুব ভালো লাগতো। 

- তুমি এখন কেমন আছো? 

- ডাক্তার কি বলেছে? 

- বলেছে তুমি বিপদমুক্ত। 

- তাহলে তো ভালো হয়ে যাবো।

- তবুও নিজের অনুভূতি কেমন? এমনিতেই মার খেয়ে তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে তারমধ্যে আবার ওই মেয়ে কি থেকে কি করে দিল? 

- সবই কপাল। 

- তুমি যখন ওই মেয়ের হাত দিয়ে পানির বোতল নিয়ে মুখে দিচ্ছিলে তখন আমার খারাপ লাগছিল অনেক খারাপ লাগলো। কারণ তুমি আমার হাত দিয়ে পানির বোতল না নিয়ে তার হাতের বোতল নিয়েছ। কিন্তু যখনই দেখলাম একটু পরে তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে তখন সেই অভিমান দুর হয়ে কষ্টে কান্না আসছিল। 

- চেহারা দেখে সেটা বোঝা যাচ্ছে। 

- আর কি বোঝা যায়? 

- আচ্ছা তুমি এতটা কষ্ট না করে ঢাকা চলে যাও নাহলে তোমার উপরও বিপদ আসতে পারে। 

- আমি তোমার রেখে যাবো না, আরেকটু সুস্থ হলেই আমি তোমাকে নিয়ে আমার বাসায় চলে যাবো। 

- হাহাহা, পাগল নাকি? আমি তোমার সঙ্গে কেন যাবো বলে দাও। 

- কেন? আমি বিধবা বলে কি আমার সঙ্গে যাওয়া যাবে না? 

- আমি কিন্তু সেভাবে কিছু বলিনি। 

- থাক বলতে হবে না কিছু। 

- রাগ করলা? আচ্ছা আমাকে নিয়ে এতটা চিন্তা করার কি হয়েছে? তোমার সঙ্গে তো মাত্র এই কদিনের পরিচয়। 

- জানি না আমি, আমার পূর্ব পরিচিত সকল চেনা মানুষের সঙ্গে কতবছর যোগাযোগ নেই। হঠাৎ করে তোমার সঙ্গে দেখা হলো আর তাই কেমন করে যেন খুব পাগল লাগে নিজেকে। 

- মাথা ঠান্ডা করো, সজীব এর সঙ্গে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হলো আমি ঠিক আছি। 

একটু পরে সজীব যখন প্রবেশ করলো তখন সাজু ভাই হাসান সাহেব ও রকির কথা জানতে চাইলো। কিন্তু তারা তার গ্রামের বাড়িতে গেছে শুনে সাজু খুব রেগে গেল, বললো:-

- আমি তো মারিয়ার স্বামীর পরিবারে কে কে আছে সেটা জানতে বলেছি। হাসপাতালে এমন কেউ ছিল যে লোকটা কোন কথা বলেনি কিন্তু চুপ করে অনেক কিছু প্রকাশ করেছে। রকিকে সঙ্গে নিয়ে গেলে সে চিনতে পারবে কারণ রকি আমার সঙ্গে ওই হাসপাতালে গেছিল। 

- সজীব বললো, ঠিক আছে তাহলে আমি তাদের কল দিয়ে সবকিছু জানাচ্ছি, তুই শান্ত হ। 

রাত আটটার দিকে বাসা থেকে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে হাসপাতালে আসলো সজীব ও কবিতা। আর এসেই কেবিনের সামনের চেয়ারে একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেল সজীব। মনে হয় অপরিচিত কেউ তাই আশ্চর্য হচ্ছে, তাছাড়া মেয়েটার ঠোঁটের উপর ব্যান্ডেজ করা। 

- কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ বললো, ইনি নাকি আপনাদের রোগীর পরিচিত তাই দেখা করতে এসেছে। কিন্তু আমরা চিনিনা বলে তাকে বসিয়ে রেখেছি, আপনি কি তাকে চেনেন? 

- না, কতক্ষণ ধরে বসে আছে? 

- মিনিট পাঁচেক হবে, আর সাজু সাহেব ঘুমাচ্ছেন বলে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি নাই। 

- ঠিক আছে আমি কথা বলছি। 

তারপর সেই মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে বললো:-

- আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না। 

- মারিয়ার ঠোঁটে ব্যান্ডেজ থাকার জন্য তার কথা অস্পষ্ট আর বেঁধে বেঁধে শোনা যাচ্ছে। সে তার মুখ দিয়ে বহুকষ্টে বললো, আমার নাম মারিয়া। 

- কি...? অনেকদিন, সেই পাঁচ বছর আগে তাকে দেখেছিল সজীব তাই চিনতে পারে নাই। তারপর স্বাভাবিক হয়ে বললো:- আসলে আমি আপনাকে চিনতে পারিনি, কখন এসেছেন? 

- আবারও অস্পষ্ট করে বললো, বেশিক্ষণ হয়নি তবে সাজুর সঙ্গে দেখা করেই চলে যাবো। আমার স্বামীও তো হাসপাতালে তাই তার কাছে থাকতে হয় আমাকে। বিকেলে হাসপাতালের ফ্লোরে পা পিছলে পরে গিয়ে ঠোঁট কেটে গেছে তাই আমিও অসুস্থ। 

- সাজুর ই অবস্থায় দেখা করা ঠিক হবে না, তাই আপনি বরং চলে যান। 

- প্লিজ ভাইয়া, আমি শুধু একবার দেখেই চলে যাবো, এত কষ্ট করে আসলাম। 

- আচ্ছা আমি ভিতরে ঢুকে দেখি সাজুর ঘুম ভেঙ্গেছে নাকি? 

সাজু জেগে আছে, সজীবের কাছে মারিয়া আসার কথা শুনে ভিতরে প্রবেশ করতে বললো। মারিয়া ও কবিতা দুজনেই প্রবেশ করলো, কবিতা বারবার শুধু মারিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। 

মারিয়া এসে দাঁড়াল, আর সজীব তখন বললো:- বিকেলে ঠোঁট কেটে গেছে তাই সেলাই করতে হয়েছে মনে হয়। তোকে দেখতে এসেছে কারণ তুই তো তার জন্যই এতো ঝামেলার মধ্যে। 

- সাজু বললো, সজীব তোর পকেটে কলম আছে? 

- না পকেটে নিয়ে কিন্তু তোর ফাইলের মধ্যে আছে, বিভিন্ন রিপোর্টের ফাইলে। 

- আচ্ছা সেখানে থেকে একটা রিপোর্টের কাগজ দে যেটার অপর পৃষ্ঠে কিছু লেখা যাবে, আর কলমটা দে। 

সাজু মনোযোগ দিয়ে কি যেন লিখছে, সজীব কবিতা আর মারিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মারিয়া বেশ কিছুটা দুরত্বে নিয়ে সাজুর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে। কেবিনের এক কোণে একটা ভারি চেয়ার ছিল, মারিয়া সেটা তুলে এনে কাছে রাখল আর তখন মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে রইল সাজু। কারণ এই মারিয়ার বাম হাতটা বেশি কাজ করে এবং তার হাতের কনুইতে কোন কাটা দাগ নেই। 

পাঁচ মিনিট পরে সাজু তার লেখা কাগজটা সজীব এর হাতে দিয়ে বললো, "এই ওষুধটা নিয়ে আয়।" 

কাগজ নিয়ে বাইরে এসে সজীব দেখে অবাক হয়ে গেল কারণ সেখানে লেখা আছে;-

" এটা মারিয়া নয়, তুই তাড়াতাড়ি ওসি সাহেবকে কল দিয়ে আসতে বল আর বাহিরের পুলিশকে বল মেয়েটাকে গ্রেপ্তার করতে। মনে হয় মা ও শিশু হাসপাতালে মারিয়া কিডন্যাপ হয়েছে, আর তার মতোই মারিয়া সেজে এখানে এসেছে। মারিয়ার হাতের রহস্যের উন্মোচনের দারপ্রান্তে আমরা পৌঁছে গেলাম, তুই তাড়াতাড়ি এই মেয়েকে ধরার ব্যবস্থা কর। " 

সজীব তাড়াতাড়ি পুলিশ নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখ কপালে উঠে গেল। চকচকে একটা ছুরি নিয়ে সাজুর মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে নকল বেশধারী মারিয়া। 

.
.
চলবে....

.
বানান ভুল ক্ষমা করবেন। 
মনে হয় আর ২ পর্বে অর্থাৎ নবম পর্বে সমাপ্ত হতে পারে, তাই ধৈর্য ধরুন। 

.
.

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#14
পর্ব:- ০৮

মেয়েটা বললো, সামনে বাড়ালে সাজুর গলা কেটে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। আমি এতটা বোকা নই যে বুদ্ধি করে আমাকে ধরা হবে। 

- সজীব বললো, তুমি কিন্তু অনেক খেলা খেলছো এখন বন্ধ করে নিজে আত্মসমর্পণ করো নাহলে কিন্তু পরিমাণ ভয়াবহ। 

- তাহলে আমাকে যেতে দাও, আমি যদি এখান থেকে যেতে পারি তবে তাকে কিছু করবো না। 

- পুলিশ বললো, সেটা সম্ভব না তোমার জন্য খুব ভালো হবে তুমি যদি আত্মসমর্পণ করো। 

- ধরা যদি পরতেই হয় তাহলে সাজু সাহেবকে খুন করে তারপর আত্মসমর্পণ করবো, সাজু সাহেব আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। 

মেয়েটা যখন সজীব আর পুলিশের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল তখন সাজু আস্তে আস্তে নিজের হাত দিয়ে বালিশ সরিয়ে মুখের উপর দিল। আর দেয়ালের সঙ্গে মিশে দাঁড়িয়ে থাকা কবিতা সেটা দেখতে পেয়ে নিজের হাতের ভাতের বাটিটা তার সজোরে মারলো মেয়েটা হাঁটু বরাবর। মেয়েটা তখন ধুম করে না দেখেই সেকেন্ডের মধ্যে হাত রাখলো সাজুর মুখের দিকে কিন্তু ছুরিসহ হাতটা পরলো বালিশের উপর। আর এই দুই সেকেন্ডের মধ্যে সজীব এক লাফ দিয়ে মেয়েটার কোমড়ের কাছে ধরে এক জাটকা মের ফেলে দিল ফ্লোরে। দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ দুজনেই তাদের দায়িত্ব পালন করতে ভুলেন নাই, তারাও সঙ্গে সঙ্গে ওই মেয়েকে ধরে হাত পিছনে করে ফেললো। 

মেয়েটা অসহায় হয়ে কেঁদে উঠলো, আর সাজু ভাই তখন মুখের উপর দিয়ে বালিশ সরিয়ে আস্তে আস্তে উঠে বসতে চাইলো। কবিতা সেটা লক্ষ্য করে নিজেই এগিয়ে গিয়ে সাজুকে ধরে বসতে সাহায্য করলো। 

- সজীব বললো, তুই ঠিক আছিস তো সাজু? 

- হ্যাঁ ঠিক আছি, সজীব তাড়াতাড়ি কেবিনের দরজা বন্ধ করে দে কাজ আছে। 

দরজা বন্ধ করে সজীব সাজুর দিকে তাকিয়ে রইল আর সাজু তখন আস্তে করে বললো:-

- বাহিরে প্রচার করে দিবি যে সাজু ভাই একটা অপরিচিত মেয়ের ছুরিকাঘাতে মারা গেছে। 

- কিন্তু কেন? 

- বলছি একটু পরে। 

এরপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো, 

- ইন্ডিয়ান বাংলা একটা সিনেমার মধ্যে একজন ভিলেনকে বলতে শুনেছিলাম " হারামির সঙ্গে গেইম খেলতে গেলে জাত হারামি হতে হয়। " তবে তুমি বা তোমার মূল কারিগর কেউ কিন্তু আমার মতো নয়, তাই মারিয়ার মাধ্যমে আমাকে এখানে ডেকে ভুল করছো। নাম কি তোমার? 

- মেয়েটা চুপচাপ। 

- সজীব বললো, ওই ছেমরি নাম বল। 

- মেয়েটা জড়ানো কণ্ঠে বললো, জুলি। 

- সাজু বললো, আমার ধারণা যদি ভুল নাহয় তবে তোমার সঙ্গে মারিয়ার স্বামী রাহাত সাহেবের ছোট ভাই রোহানের সম্পর্ক আছে, তাই না? 

মেয়েটা তার চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল, আর সজীব নিজেও অবাক হয়ে গেল। কবিতা শুধু সাজু ভাইয়ের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে তবে কিছু বলছে না। 

- মেয়েটা মাথা নেড়ে বললো, রোহান নামে কেউ আমার পরিচিত নেই। কে সে? 

- ওসি সাহেব কিন্তু চিকন রড গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে আপ্যায়ন করতে পারে। সেই আপ্যায়ন শেষে তোমার চেয়ে অনেক বড় বড় অপরাধীরাও সবকিছু টেলিভিশনের খবরের মতো হড়হড় করে বলে দেয়। 

- জুলি মেয়েটা চুপচাপ। 

- সাজু বললো, আর চিকন নিডেল হাতের দশটা আঙ্গুলের প্রতিটি আঙ্গুলে একটা করে গাঁথা হয়। তবুও যদি মুখ দিয়ে উচ্চারণ বের না হয় তাহলে নিস্তব্ধ রাতের থেরাপি চলে। যদি সকল আপ্যায়ন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চাও তাহলে আমার কথা অনুযায়ী কাজ করো। রোহানের কথা মেনে তো বহু অন্যায় করলে কিন্তু ফলাফল কি হলো? 

- আমি কিছু জানি না। 

- বাচ্চাদের মতো কথা বলতে নেই, তোমাকে তো ধরা হয়েছে এখন রোহানকেও ধরা হবে। তারপর ডাক্তার জাফর চৌধুরীকে হত্যার কারণে রোহানের ফাসি হবে, তুমি তাকে নিয়ে বিয়ে করে সংসার করার যে স্বপ্ন দেখো সেটা স্বপ্নই থাকবে। একটা কথা মনে রেখো, ভুল রাস্তা যতই ভালো কিংবা পরিষ্কার হোকনা কেন সেটা সবসময় তোমাদের ভুল গন্তব্যে নিয়ে যাবে।

- মেয়েটা চুপচাপ। 

কেবিনের সামনে নার্স ও ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে, ভিতরে কিছু একটা হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে বলে কোন শব্দ করে না। ওসি সাহেবকে শুরতেই খবর দেয়া হয়েছে তাই তিনিও এখন প্রায় অর্ধেক পথ চলে এসেছে। এতবড় হাসপাতালের মধ্যে সবাই যে যার রোগীর সঙ্গে ব্যস্ত, আর এদিকে সাজু ভাই তার রহস্য নিয়ে ব্যস্ত। 

- মিনিট পাঁচেক চুপ থেকে হঠাৎ করে জুলি নামের মেয়েটা বললো, আমাকে বাঁচতে হলে কি করতে হবে আমার? 

- সাজু বললো, রোহানকে কল দিয়ে বলবে যে তুমি আমাকে খুন করতে সক্ষম হয়েছ। আর সে এখন কোথায় আছে সেটা জানবে, মারিয়াকে সে কোথায় বন্দী করেছে সেটাও জিজ্ঞেস করবে৷ 

- তাহলে আমাকে ছেড়ে দিবেন? 

- বিবেচনায় থাকবে। 

- আমি যদি কল করি তাহলে মারিয়াকে রোহার এমনিতেই ছেড়ে দেবে তাই তাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই। 

- হ্যাঁ করো। 

- আপনি রোহানকে কীভাবে জানলেন? 

- অনুমান করে। 

- মানে...? 

- হাসপাতালে দাঁড়িয়ে রাহাত সাহেবের কাছে যখন রোহানকে দেখেছি তখনই কিছুটা সন্দেহ ছিল আমার। আমি সেজন্য তার কথা আমার নোটবুকে লিখেছিলাম, কিন্তু তুমি যখন আমাকে জিইসি মোড়ে গিয়ে বিষাক্ত পানির বোতল দিয়ে আহত করলে। তখন সেখানে রাস্তার ওপারে সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারের গেইটের কাছে রোহান দাঁড়িয়ে ছিল। আমি কিছুক্ষণ অসুস্থ হয়ে থাকার পরে ওরা যখন আমাকে সিএনজির মধ্যে তুললো তখনও আমার চেতনা ছিল। আমি চোখ মেলে তাকিয়ে আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে যখন সেই দিকে তাকালাম তখন তোমাকে তার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি বোরকা পরে। তুমি সেই মেয়ে, যে কিনা আমাকে কক্সবাজার বসে যারা আক্রমণ করেছে তাদের সঙ্গে ছিলে। 

- মেয়েটা চুপচাপ। 

ওসি সাহেব পৌঁছে গেছেন, হাসপাতালের মধ্যে সাজু ভাইয়ের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে গেল। মেয়েটা ওসি সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মোবাইল বের করে রাহাতের ভাই রোহানকে কল দিয়ে বললো যে সাজুকে সে খুন করেছে। রোহান তখন খুব আনন্দের একটা হাসি দিল আর সঙ্গে সঙ্গেই জুলির হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হলো। 

★★

সাজুকে লাশ সাজিয়ে হাসপাতাল থেকে বাহির করে নিয়ে যাওয়া হলো ওসি সাহেবের বাড়িতে। সঙ্গে গেল কবিতা, আর সেই খালি এম্বুলেন্সটাক পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ঢাকার দিকে। কারণ সেই রোহান যদি অন্য লোক পিছু লাগিয়ে দেয় তবে সে যেন সত্যিটা বুঝতে না পারে। আর জুলিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো হাজতে। 

চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের নিচে দাঁড়িয়ে টিভিতে খবরের মধ্যে সদ্য পাওয়া একটা " ব্রেকিং নিউজ " মনোযোগ দিয়ে সবাই দেখছে। সাজু ভাই নামের যে লোকটা এই হাসপাতালের মধ্যেও এসেছিল সে একটু আগেই খুন হয়েছে চকবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর এমনিতেই হাসপাতালের এই ঘটনা নিয়ে চলছে এক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি, তাই উক্ত খবরের জন্য সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। 

মারিয়ার শশুর এই খবর দেখে দৌড়ে দৌড়ে তিনি কেবিনে গেলেন, কেবিনে ঢুকেই সামনে বসে থাকা মারিয়া রাহাত ও রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো, 

- সাজু নামের যে ছেলেটা রক্ত দিয়েছিল সেই ছেলে একটু আগে খুন হয়েছে, একটা মেয়ে নাকি খুন করেছে। মেয়েটা ধরা পরেছে ঠিকই কিন্তু সাজু কে নাকি বাঁচাতে পারা যায় নাই। 

সাজুর মৃত্যুর খবর শুনে মারিয়া ও রোহানের মুখে কোন ভাবান্তর ঘটে নাই কিন্তু শেষের বলা সেই মেয়ে নাকি ধরা পরেছে এটা শুনে চমকে গেল। মারিয়া ও রোহান দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল অবাক চোখে। তারপর রোহান তার চোখ দিয়ে ইশারা করতেই হঠাৎ করে মারিয়া নাটক করার সুরে বললো:-

- কি বলেন বাবা? আল্লাহ গো এটা কি হয়ে গেল? এ কথা বলে কেবিনের দরজা খুলে বের হয়ে গেল মারিয়া।

আর রোহান তখন " ভাবি কোথায় যাচ্ছেন? কোই যান আপনি? " এগুলো বলতে বলতে পিছনে পিছনে বেরিয়ে গেল। মারিয়ার শশুর তখন রাহাত সাহেবের পাশে বসে রইল, কি করবেন যেন কিছু বুঝতে পারছেন না। তবে মারিয়া ও রোহানের চোখের ইশারা দেখে ফেলেছিল রাহাত সাহেব, আর তিনি তখন ভাবছেন " ঘটনা কি? "

.

- হাসপাতালের এক সাইডে দাড়িয়ে চিন্তিত হয়ে মারিয়া রোহানকে বললো, তুমি তো একটু আগে বললে যে সাজুকে খুন করে মেয়েটা পালিয়ে গেছে তাহলে ধরা পরেছে কীভাবে? এখন ওই মেয়ে যদি আমাদের কথা পুলিশের কাছে বলে দেয় তাহলে কি বাঁচতে পারবো? 

- ভাবি চুপ করো, সবকিছু গন্ডোগোল হয়ে গেল কীভাবে? জুলি তো একটু আগে কল দিয়ে বললো সে খুন করে চলে এসেছে। 

- এজন্য তোমাকে বলেছিলাম যে আমি গিয়ে নিজ হাতে কাজটা করে আসবো। কিন্তু তুমি কেন তাকে পাঠাতে গেলে? 

- আমি তো তোমার ভালোর জন্য করেছি ভাবি, আর তাছাড়া তোমার সাহস কম। কিন্তু জুলি তো অনেক সাহসী, কক্সবাজার গিয়ে ওই দ্বিতীয় ডাক্তার আর সাজুকে যেভাবে আক্রমণ করলো। 

- সেসব বলে লাভ কি এখন? এখন এসব চিন্তা বাদ দিয়ে চলো আমরা পালিয়ে যাই, টাকার জন্য আর মায়া করে লাভ নেই রোহান। রাহাতের তো সই লাগবে সেই টাকা তুলতে, আর টাকার জন্য যদি লোভ করি তাহলে ধরা পরবো। 

- কিন্তু যে টাকার জন্য এতকিছু করলাম, তুমি আর আমি অনেকদূর গিয়ে টাকা দিয়ে নতুন করে জীবন সাজাতে চাইলাম। সেই টাকা ছাড়া তুমি আমি কোথায় যাবো ভাবি? 

- তাহলে কি আত্মসমর্পণ করবো?

- ভেবেছিলাম সাজুকে হত্যা করতে পারলেই সেই জুলিকে খুন করে পথ থেকে সরিয়ে দেবো কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল? সাজু ঠিকই মরলো কিন্তু আমাদেরকে মেরে তারপর মরছে। 

- শুরুতেই তোমাকে বলেছিলাম সাজুকে এসবের মধ্যে জড়িয়ে বিপদ নিয়ে এসো না কিন্তু তোমার নিজের পুরনো শত্রুতা মেটাতে তুমি তাকে টেনে এনে খাল কেটে কুমির ডাকলে। 

- আগে তো বুঝতে পারিনি ভাবি, নাহলে তো সেই কক্সবাজারে ওকে জুলিকে দিয়ে খুন করাতাম। 

- আচ্ছা তুমি তো চেয়েছিলে সাজুকেও হত্যা করে দেবে, তাহলে সেদিন কেন তাকে একদম হত্যা না করে বাঁচিয়ে রাখতে বললে? 

- সেটা কিন্তু তুমিও ভালো করে জানো ভাবি। 

- কি জানি আমি? 

- আমাদের এই হাসপাতালে যিনি খুন হয়েছে সে আমাদের হাতে খুন হয়নি, তাহলে তাকে কে খুন করেছে? কক্সবাজারে জুলি আক্রমণ করেছে সত্য কিন্তু এখানে কে খুন করেছে? 

- তাই তো, আমি নিজেও এটা নিয়ে ভাবছি জানো তুমি? আমি কিন্তু সেদিন ঠিকই খুন করতে গিয়ে চমকে গেলাম, কারণ আমাদের পরিকল্পনা ছিল তাকে খুন করবো। কিন্তু আমাদের আগেই তাকে কে খুন করেছে সেটাই তো জানি না। 

- আমি সেটাই তদন্ত করার জন্য সাজুকে খুন করতে নিষেধ করেছি ভাবি, সাজু নিশ্চয়ই তাকে খুঁজে বের করবে। আর তার ফাঁকে ফাঁকে আমি আর তুমি ভাইয়ের কাছ থেকে চেক সই করিয়ে সব টাকা নিয়ে পালাবো। কিন্তু এখন.... 

- রোহান আমার মনে হচ্ছে যেকোনো সময় এই হাসপাতালে ওসি সাহেব আসবে। আর না এলেও এখানে যারা পাহারায় রয়েছে তাদের হুকুম করে আমাদের ধরতে বলবে। 

- তাহলে কি করবা ভাবি? 

- জানি না। 

- চলো পালিয়ে যাই। 

- সত্যি তো? 

- হ্যাঁ।  

★★

ওসির বাড়িতে বসে সাজু ভাই ও ওসি সাহেব বসে আছে মুখোমুখি, ওসি সাহেব বললো:-

- আপনি রোহানকে গ্রেপ্তার করতে নিষেধ করে তার পিছনে লোক লাগাতে কেন বললেন? 

- স্যার খুবই সহজ, আমি জানি রোহান আর জুলি দুজনে এখানে জড়িত নয় বরং আরও অনেকে জড়িত আছে। তাই আমার মৃত্যুর খবর শুনে রোহান কার কার সঙ্গে যোগাযোগ বা আলোচনা করে সেটা জানতে হবে। 

.
.
কেমন হয়েছে জানাবেন, আর সারাদিন কাজের জন্য প্রচুর টেনশনে থাকি তাই ভালো করে রহস্য ম সাজানো যাচ্ছে না। আপনারা যেহেতু পাঠক পাঠিকা আছেন তাই সবাই ভুল গুলো ধরিয়ে দেবেন। 
.
.
চলবে... 

.

লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#15
 পর্ব:- ০৯

- রোহান ছেলেটাকে আগেভাগে সন্দেহ করিনি কারণ তার মধ্যে তেমন বৈশিষ্ট্য ছিল না। কিন্তু সে এমন কাজ করে দিব্যি পরিস্কার হয়ে সকলের সম্মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক শ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন ওসি সাহেব। 

- সাজু বললো, আপনি এখন শুধু রোহানের উপর নজর রাখুন তারপর দেখবেন বাকি সদস্যরা সব এমনিতেই সনাক্ত হবে। 

- চারিদিকে তোমার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে গেছে বলে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে গেছে। তুমি এখন ওষুধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করো আমি আবার একটু থানায় যাবো। 

- কবিতাকে ডাক দিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলেন, আর আমার জন্য একটা কাগজ কলমের ব্যবস্থা করুন। আমি কিছু প্রশ্ন লিখে দিচ্ছি, আর থানায় গিয়ে সেগুলো সব জুলির কাছে জিজ্ঞেস করবেন। 

- আচ্ছা ঠিক আছে। 

- ওসি সাহেব এবার একটু আমতাআমতা করে বললো, একটা কথা বলবো সাজু সাহেব? 

- জ্বি বলেন। 

- কবিতা মেয়েটার সঙ্গে তোমার কিরকম সম্পর্ক তা জানি না, কিন্তু যেহেতু তুমি অসুস্থ তাই ঘুমাতে গিয়ে দুজনে কি একরুমে থাকবে নাকি আলাদা? না মানে হঠাৎ করে তোমার কিছু দরকার হলে তো তখন ডাকলেও পাবে না। 

- আচ্ছা আপনি চিন্তা করবেন না, আপনি আমার আর কবিতার জন্য একটা রুমই ব্যবস্থা করুন। সে তো হাসপাতালে কেবিনে আমার সঙ্গে একা একা থাকতো তাহলে এখানে সমস্যা কি? 

- আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে। 

★★

মারিয়া আর রোহানের মধ্যে এখনো আলোচনা চলছে, তারা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে না। মারিয়া বারবার পালিয়ে যাবার কথা বলে কিন্তু রোহান সেটা এড়িয়ে যায়। 

- মারিয়া রেগে গিয়ে বললো, দুই কোটি টাকার জন্য এখন নিজেদের দুজনের জীবন রিস্কের মুখে ঠেলে দিতে চাই না। তারচেয়ে বরং আমরা দুজন পালিয়ে যাই, পার্টি যেহেতু পরিচিত আছে সেহেতু টাকা অবশ্যই আসবে। 

- রোহান বললো, তাহলে তুমি বরং হাসপাতালে থাকো তারপর আমি বের হয়ে গেলে তুমি কালকে সকালে বের হবে। একসঙ্গে বের হলে আমাদের সন্দেহ করতে পারে, আর এখান থেকে এমনিতেই লুকিয়ে বের হতে হবে। বলা তো যায় না, এতক্ষণে নিশ্চয়ই জুলি সবকিছু বলে দিয়েছে। 

- অসম্ভব, তুমি এটা কীভাবে বলতে পারো রোহান সেটাই বুঝতে পারছি না। তুমি একা পালিয়ে গিয়ে আমাকে কেন ধরা পরতে বলছো? আমাকে তুমি বিপদে রেখে নিজে কেন সরে যাবে? 

- ওহ তুমি বুঝতে পারছো না ভাবি। 

- আমি কিছু বুঝতে চাই না, তোমার ভাইয়ের জন্য নয় বরং তোমার জন্য কিন্তু আমি এতদিন তোমার পরিবারের সঙ্গে আছি। নাহলে বছর খানিক আগে সেই চাঁদপুরের মোসাদ্দেকের সঙ্গে চলে যেতাম, তার কিন্তু এসব জমজমাট ব্যাবসা। 

- রোহান রাগান্বিত হয়ে বললো, তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও তোমার মোসাদ্দেকের কাছে গিয়ে থাকো, আমাকে বলো কেন? 

- এভাবে কথা বলো কেন রোহান? 

- তুমি আমার কোন কথা শোননা তাহলে এভাবে না বলে উপায় আছে? 

- আমি তোমার কথা শুনি না? 

- মোটেই না। 

- তুমি কি ভুলে গেছো তোমার কথামতো তোমার ভাই রাহাতকে আমি রিক্সা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিছিলাম। পিছন থেকে গাড়ি আসছে দেখে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিছিলাম কিন্তু কপাল ভালো বলে বেঁচে গেল। 

- সেই সময় মরে গেলেই ভালো হতো, তাহলে এই ডাক্তারের মৃত্যুর ঘটনা শুরু হতো না। কারা যে ডাক্তারকে খুন করেছে আর তাদের জন্য সকল প্ল্যান ভেস্তে যাচ্ছে। 

- রাহাতকে শেষ করে দিলে সবচেয়ে ভালো হতো কিন্তু তোমার জন্য সম্ভব হলো না। নাহলে তো তাকে আমি নিজেই কেবিনে বসে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে পারি। 

- তোমার সবসময় মাথা মোটা, রাহাত ভাই মারা গেলে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা উঠাবে কীভাবে? 

- আর এখন বিপদ ঘনিয়ে আসছে সেটা থেকে মুক্তি পাবে কীভাবে? 

- তুমি একটু কথা কম বলো তো। 

★★

হাজতের মধ্যে জুলির মুখোমুখি বসে আছে ওসি সাহেব, তার হাতে সাজুর করা কিছু প্রশ্নের কাগজ। জুলিকে খুব ভালো করে এক কাপ কফি খেতে দেওয়া হয়েছে, কফি শেষ হলেই তাকে সিরিয়াল অনুযায়ী প্রশ্ন করা হবে। 

শরীরে ক্লান্তি আর কান্না করতে করতে চোখগুলো লাল করে বসে ছিল জুলি, তাই কফি সামনে পেয়ে সবকিছু ভুলে কফি খেতে লাগলো। 

- ওসি সাহেব বললো, আমি কি তোমাকে এবার প্রশ্ন করতে পারি? মানে সবকিছু সঠিক উত্তর দেবে তো তুমি? 

- মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো জুলি। 

- ভেরি গুড, তুমি আর রোহান সাহেব মিলে রাহাত সাহেবকে হত্যা করতে চাও কেন? নিশ্চয়ই এতে তোমাদের স্বার্থ আছে, সেই স্বার্থটা কি? 

- আমি জানি না। 

ওসি সাহেব তখন একটা হাতুড়ি নিচ থেকে তুলে টেবিলের উপর রেখে বললো:-

- শুনতে পারিনি আবার বলো। 

- রাহাত ভাই, রোহান এবং মারিয়া এরা সবাই মিলে মাদকদ্রব্যের ব্যাবসা করে গোপনে। 

- কি...? মারিয়া...? 

- জ্বি স্যার, মারিয়াও যুক্ত আছে। কিছুদিন আগে ওরা মিয়ানমারের এক ব্যাবসায়ীর সঙ্গে বেঈমানী করে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সবগুলো টাকা ব্যাঙ্কে রাখার কথা ছিল কিন্তু সেটা নাকি রাহাত ভাই একাই হজম করতে চায়। 

- দুই কোটি টাকা...? 

- জ্বি স্যার, আমি রোহানকে ভালবাসি, আমরা দুজন মিলে পরিকল্পনা করেছি ওই টাকা আমরা যেভাবেই হোক হাতিয়ে নেবো তারপর আমরা পালিয়ে যাবো অন্য কোন শহরে কিংবা ভারতের বর্ডার পার হয়ে। 

- তাহলে ডাক্তারের খুন করেছ কেন? 

- মারিয়া জানে যে টাকা ব্যাঙ্কে রাখা হয়েছে কিন্তু আসলে তা নয়, রাহাত ভাই একদিন মোবাইলে কার সঙ্গে যেন বলছিলেন যে " টাকা তালা মেরে চাবিটা 'হারিকেন' এর মধ্যে লুকিয়ে রাখ। " সেই কথা রোহান শুনে ফেলেছিল এবং তখনই বুঝতে পারে যে টাকা ব্যাঙ্কে নেই। আর এতগুলো টাকা হঠাৎ করে ব্যাঙ্কে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব না। 

- তারপর? 

- প্ল্যান করে রাহাত ভাইকে খুন করার চেষ্টা করে মারিয়া, কারণ দেড় বছর ধরে রাহাত ভাইয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশি ভালো নয়। কিন্তু রাহাত ভাই যখন বেঁচে গেল তখন পরিকল্পনা করতে গিয়ে রোহানের হঠাৎ মনে পরে টাকার কথা। ভাই যদি মারা যায় তাহলে টাকা বের করার আর কোন ব্যবস্থা নেই। সেজন্য ডাক্তারের কাছে আমরা গেছিলাম একটা প্রস্তাব নিয়ে, রোগী অপারেশন থিয়েটারে রেখে তাকে ভয় দেখিয়ে টাকার সন্ধান বের করতে বলা হলো ডাক্তারকে। 

- তারপর? 

- কিন্তু ডাক্তার রাজি হলো না, কারণ তিনি যদি অপারেশন করতে জান সেখানে তখন অনেকেই থাকবে। সেই সময় এসব জিজ্ঞেস করার কথা তিনি অস্বীকার করেন এবং বেশি বাড়াবাড়ি যদি করি তাহলে পুলিশে দেবে এমন হুমকি। রোহানের মনে ভয় ঢুকে গেল এবং সে শেষ রাতের দিকে প্ল্যান করলো সকাল বেলা অপারেশন হবার আগে ডাক্তারকে খুন করা হবে। আমি তখন কক্সবাজার ছিলাম কারণ দ্বিতীয় ডাক্তারকে রাজি করানোর চেষ্টা করছি। রােহান বলেছিল যে যদি কক্সবাজার এর ডাক্তার রাজি হয় তাহলে চট্টগ্রামের জাফর চৌধুরীকে কিডন্যাপ করা হবে। 

- তাহলে জাফর চৌধুরীকে খুন করেছে কে? 

- আমরা জানি না স্যার, পরিকল্পনা অনুযায়ী খুন করার কথা ছিল মারিয়ার। কিন্তু তার আগেই কে যেন খুন করে চলে গেছে, আমরা সবাই তখন খুব অবাক হলাম। 

- সাজু সাহেবকে এসবের মধ্যে জড়াবার কোন দরকার ছিল কি? তোমরা তো রাহাতকে খুন করে দেবে তাহলে রক্তের জন্য নিশ্চয়ই তাকে এখানে ডাকোনি। 

- না, রোহানের এক বন্ধু মাস তিনেক আগে সাজু ভাইয়ের জন্য ধরা পরেছে নরসিংদী শহরে। তার জন্য প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে রোহান ও অন্যান্য কে। সেজন্য সাজু যেহেতু মারিয়ার প্রক্তন স্বামী তাই তাকে কৌশলে আনা হয়েছে। 

- মারিয়া কি রোহানকে নিয়ে পালাতে চায়? 

- হ্যাঁ, মারিয়ার ইচ্ছে হচ্ছে সে রোহানকে নিয়ে ওই টাকাসহ পালিয়ে যাবে। কিন্তু রোহান সেই কখনো করবে না, কারণ আমরা অন্য পরিকল্পনা করি। 

- কি পরিকল্পনা? সাজুকে খুন করে আর রাহাত ভাইকে খুন করে সকল দোষ মারিয়ার ঘাড়ে দিয়ে আমি আর রোহান পালিয়ে যাবো। 

- ও মাই গড, তোমরা মারিয়াকে ব্যবহার করে তারপর তাকেই ফাঁসিয়ে দিতে চাও? 

- আমার এতটা সাহস ছিল না, রোহানকে খুব ভালবাসি বলে সে আমাকে দিয়ে এতকিছু করায়। 

- তোমরা তিনজন যদি হাসপাতালে ডাক্তার খুন না করে থাকো, তাহলে কাজটা করলো কে? 

- আমি সত্যি সত্যি জানি না। 

★★

হাসপাতাল থেকে চুপিচুপি বের হয়ে যখন একটা সিএনজি নিয়ে রোহান ও মারিয়া রওনা দিল তখন পুলিশও পিছনে তাড়া করেছিল। কিন্তু আগ্রাবাদ পার হয়ে চৌমুহনী মোড়ে এসে কোনদিকে গেছে সেটা আর বুঝতে পারলো না। 

রাত 1:00 am. 
একটা ফাঁকা রুমের মধ্যে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে মারিয়া। তার পাশেই হাতে একটা "হারিকেন" নিয়ে বসে আছে তার স্বামীর ছোটভাই বা তার দেবর রোহান। রোহানের মুখের মধ্যে পিচাশের মতো হাসি দিয়ে ভর্তি, পুরনো একটা প্লাস্টিকের হারিকেন হাতে নিয়ে বারবার নড়াচড়া করছে। মারিয়া মুখ তারই ওড়না দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিয়েছে রোহান, যন্ত্রনায় চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পরছে। 

রোহান তখন ডানহাতে হারিকেন ও বাম হাত দিয়ে মারিয়া বুকে হাত দিয়ে বললো:-

- মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছে কি ভাবি? 

- মুখ বন্ধ তাই গোঙানির শব্দ হচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে সে কিছু বলার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। 

- রোহান আবার বললো, এই হারিকেনের মধ্যে তোমার স্বামী দুই কোটি টাকার চাবি লুকিয়ে রেখেছে ভাবি। আমি অনেক আগেই মানে যেদিন অপারেশন হয়েছে সেদিনই টাকার খোঁজ পেয়ে গেছি। কিন্তু তোমার প্রাক্তন স্বামী সাজুকে দেখে তাকে মারার পরিকল্পনা এসে গেল। এখন তো সে মরে ভুত হয়ে গেছে ভাবি, আর ভাইও এখন মনে হয় সুস্থ হচ্ছে। আর আমি এই ফাঁকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাবো, হাহাহা। 

মারিয়া গোঙানির শব্দ দেখে রোহান তার মুখের ওড়নার বাঁধন খুলে দিল। 

- মারিয়া বহুকষ্টে বললো, বিশ্বাসঘাতক। 

- হাহাহা, ভাবি এটা তোমার মুখে মানায় না কারণ যে মেয়ে নিজের স্বামীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। তার সঙ্গে যদি আমিও একটু করি তাহলে ক্ষতি নেই, বরং লাভ আছে। 

- তুমি আমাকে অন্য কিছু বলেছিলে। 

- আমি তো জুলিকে নিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম ভাবি, তোমাকে? কখখনো নিতাম না। সাজুর বাচ্চা সাজু মরছে, আমি মেলা মেলা খুশি। আচ্ছা ভাবি, হাসপাতালের ডাক্তারকে তুমি খুন করেছ তাই না? 

- না না না, আমি তাকে খুন করিনি। 

- তাহলে কে করেছে? 

এমন সময় দরজায় ঠকঠক করে জোরে জোরে শব্দ হতে লাগলো, রুমের মধ্যে বিছানায় বসে দুজনেই একসাথে আঁতকে উঠল। 

কে এসেছে? কে? 

.
.
আজকে সমাপ্ত করার কথা ছিল কিন্তু ঠিকমতো পয়েন্ট গুলো মিলানো সম্ভব হয়নি তাই সমাপ্ত করা হয়নি। 

গল্প পড়ার পরে ভুলগুলো তুলে ধরবেন প্লিজ। 

.
.

চলবে... 

লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#16
 পর্ব:- ১০ (সমাপ্ত) 

মারিয়াকে জোর করে পাশের রুমে রেখে রোহান যখন দরজা খুলে দিল তখন সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ দেখে সে চুপসে গেল। তাকে এক সেকেন্ড সময় না দিয়ে তারা সঙ্গে সঙ্গে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো। রোহান তখন অসহায়ের মতো চারদিকে তাকিয়ে পালানোর সুযোগ খুঁজছে। পাশের রুম থেকে মারিয়াকে বের করে এনে হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিল পুলিশের মধ্যে একজন। 

- মারিয়া বললো, আপনারা ঠিক সময়ে এসেছেন অফিসার কারণ একটু দেরি হলেই ওই শয়তানটা আমাকে মেরে ফেলতো। ওকে তাড়াতাড়ি এরেস্ট করুন, আমার অসুস্থ স্বামী হাসপাতালে আর সে আমাকে এখানে তুলে এনে অত্যাচার করছে। 

- একজন পুলিশ বললো, আপনাকে সহকারে নিয়ে যাচ্ছি কোন চিন্তা করবেন না। 

- মানে? 

- আপনাদের দুজনের জন্য সাজু সাহেব এবং ওসি সাহেব দুজনেই অপেক্ষা করে আছে। 

- মানে? সাজু বেঁচে আছে? 

- জ্বি মেডাম। 

- কিন্তু কীভাবে? তাকে খুন করেছে না জুলি? 

- এতকিছু বিশ্লেষণ করলে তো চলে না মেডাম, তাড়াতাড়ি চলুন। 

রোহান তখন অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হয়তো ভাবেনি এমন কিছু হবে। সাজু ভাই বেঁচে আছে এটা তাকে বেশি অবাক করছে, এতক্ষণে বুঝতে পারছে সাজুর প্ল্যান। সাজুর প্ল্যান অনুযায়ী পুলিশ তাহলে তাদেরকে ফলো করতে করতে এখানে চলে এসেছে, ইসস সে আগে টের পেল না কেন? 

★★

বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে কবিতার কথা নিয়ে ভাবছিল সাজু, কিন্তু এমন সময় মোবাইলে তার বাবার নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরার জন্য একটু পর পর পরিচিত নাম্বার দিয়ে পরিচিতজনরা কল দিচ্ছে। সাজু তাদের সবার সঙ্গে একই জবাব দিচ্ছে, সাজুর মনে হচ্ছে যে খুব তো বিপদ হয়ে গেল। 

- হ্যাঁ বাবা? 

- কিরে সাজু? বাংলাদেশের মধ্যে তোর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে গেছে কেন? 

- বাহহ তুমিও লন্ডনে বসে পেয়ে গেলে? 

- ফাজলামো বন্ধ কর, কেন এমন ছড়িয়ে গেছে? 

- একটা জরুরি কাজ আছে তাই খবরটা ছড়িয়ে দেবার দরকার ছিল। 

- কিন্তু এটা অন্যায়, মানুষের মনের মধ্যে ব্যাপার নিয়ে খুব আতঙ্ক হতে পারে। যদিও তুমি তো আর দেশব্যাপী পরিচিত কেউ নয় কিন্তু যারা তোমার রিলেটিভ তারা তো ভয় পেয়েছে। যেমন আমাকে আমার এক বন্ধু কল দিয়ে বললো যে তুমি নাকি মারা গেছ। 

- সরি বাবা, আমি এখনই সকল চ্যানেলে সত্যি কথা প্রচার করতে বলছি। 

- তুই কি অসুস্থ সাজু? 

- হ্যাঁ বাবা একটু অসুস্থ। 

- আর কতবার বলবো যে এসব একঘেয়ে জীবন বাদ দিয়ে এখানে চলে আয়। 

- আমার দেশ ছাড়তে ইচ্ছে করে না বাবা। 

- তাহলে ঘুরতে আয়, কতদিন হয়ে গেল তোর সঙ্গে দেখা হয়না। 

- আচ্ছা এবার এই মামলার নিষ্পত্তি হলেই দেখি একবার ইউরোপ থেকে ঘুরে আসবো। 

- সত্যি তো? 

- তোমার সঙ্গে আমি কখনো মিথ্যা কথা বলি? 

- কিন্তু এই মৃত্যুর খবর? 

- হাহাহা, বাবা তুমিও না। 

- আচ্ছা এখনই খবর পরিবর্তন করতে বল নাহলে কিন্তু যারা এখনো জানে না তারাও জেনে যাবে৷ 

- একটা কথা বলতে তোমাকে আমি নিজেই কল দিতাম বাবা। 

- কি কথা? 

- আমার এক বন্ধু কলেজ জীবনে মারা গেছে মনে আছে? শফিক নাম তার। 

- হ্যাঁ। 

- ও মারা যায় নাই, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নড়াইলের একটা গ্রামের মধ্যে আছে। সেখানে সবকিছু ঠিক আছে কাজকর্ম করতে পারে কিন্তু কথা বলতে পারে না আর কাউকে চিনতে পারছে না। 

- বলিস কি? কীভাবে জানলি? 

- কিছুদিন আগে আমার বন্ধু সজীব এর কাছে একজন কল দিয়ে বলেছিল। আমি কক্সবাজার গিয়ে সেখানে দেখা করেছিলাম, ব্যস্ততার জন্য বেশি আলোচনা করিনি। আর এখনো রকি সজীব কারো কাছে বলিনি, এখন আমি শফিকের জন্য বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চাই। তুমি একটু সাহায্য করলেই কিন্তু আমি সফল হবো, জানো তো সবকিছু? 

- আচ্ছা ঠিক আছে, তুই বরং বাংলাদেশের কোন ভালো হসপিটালে আগে ভর্তি কর। তারপর তারা কি বলে সেগুলো জেনে আমাকে জানাস, আমি ব্যবস্থা করবো। 

- মেলা মেলা ধন্যবাদ বাবা। 

ওসি সাহেবকে বলে যে যে চ্যানেলে মৃত্যুর খবর প্রচার হয়েছে তাদেরকে সত্যিটা বলা হলো। মানে সাজু মারা যায় নাই বরং বেশি অসুস্থ, আর সেটাই প্রচার হতে লাগলো সবজায়গা। 

- কবিতা বললো, এবার একটু চোখ বন্ধ করবেন প্লিজ? আপনি তো অসুস্থ সাজু সাহেব। 

- হঠাৎ করে আপনি? 

- তো কি করবো? অসুস্থ শরীরে এভাবে কেউ কি রাত জাগে নাকি? 

- আজকে রাতে বের হতে হবে, তাই ঘুমিয়ে গেলে চলবে না। 

- মানে? কোথায় যাবে? 

- যিনি ডাক্তার সাহেবকে খুন করেছে। 

- মারিয়া আর রোহান নয়? 

- না আরেকজন আছে। 

- কে সে? 

- তুমিও সঙ্গে যাবে তাই তখনই দেখবে। 

- এখন বলো। 

- না। 

★★

রোহান আর মারিয়াকে জেলে নেবার পর বিভিন্ন কিছু সামলাতে রাত প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ওসি সাহেব যখন বাসায় ফিরলেন তখন রাত সাড়ে তিনটা বেজে গেছে। তিনি ভেবেছিলেন সাজু হয়ত ঘুমিয়ে গেছে, কিন্তু তিনি ফ্রেশ হয়ে বসতেই যখন সাজু তৈরী হয়ে বের হয়ে এলো তখন অবাক হয়ে বললো:- 

- আপনি ঘুমাননি? 

- স্যার আপনি সবসময় আমাকে তুমি আর আপনি বলে ঘুলিয়ে যাচ্ছেন কেন? 

- মনে থাকে না। 

- থানার খবর কি? 

- একদম ফাটাফাটি, উঁহ অনেকদিন পর মাথার মধ্যে থেকে চাপ কমলো। 

- ডাক্তারের সাহেবের সেক্রেটারিকে কে খুন করেছে সেটা কি জানা গেছে? 

- হ্যাঁ রোহান স্বীকার করেছে, কিন্তু জাফর ডাক্তার কে খুন করার কথা তারা তিনজনের মধ্যে কেউই স্বীকার করে না। 

- আচ্ছা সমস্যা নেই, আপনি চলুন আমার সঙ্গে। 

- কোথায়? আর আপনি তো অসুস্থ। 

- কিছু হবে না স্যার, আমি ঠিক আছি। কিন্তু এখন দেরি হলে আরেকজনকে ধরতে কষ্ট হবে। 

- কোথায় যেতে হবে আমাদের? 

- ডাক্তারের সেক্রেটারির বাড়িতে। 

- সেখানে কেন? 

- আপনি সেই সেক্রেটারির এবং তার স্ত্রীর সিমের কল লিস্ট যোগাড় করেছেন, মনে আছে? 

- হ্যাঁ, কিন্তু? 

- কাউকে বলিনি তাই তো? 

- হ্যাঁ। 

- আচ্ছা চলুন তারপর বলছি, অবশ্য সে কোথাও পালাতে পারবে না কারণ সজীব অলরেডি তার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। 

- পাহারা দিচ্ছে? আপনি তো আমাকেই বলতে পারতেন। 

- দরকার হলে অবশ্যই বলতাম, আর তাছাড়া সেই রেকর্ডস তো আজকে সন্ধ্যা বেলা দিলেন তাই তীর ছোড়ার সময় লাগে। 

- বুঝলাম না। 

- রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে, চলুন। 

★★★

থানার মধ্যে এখন চারজন আসামিকে মুখোমুখি বসিয়ে রাখা হয়েছে। ওসি সাহেব, সাজু ও সজীব তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু চেয়ার আছে তবুও বসছে না কেউ। 

- সাজু তখন সেক্রেটারির স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো, যার জন্য আপনি আপনার স্বামীর বদলে নিজেই খুন করলেন। সেই কিন্তু আপনার স্বামীকে খুন করেছে, কত অদ্ভুত তাই না? 

- চুপচাপ। 

- আপনি ডাক্তার সাহেবকে কেন হত্যা করেছেন বলবেন? সবাই আমরা আগ্রহী। 

- টাকার জন্য। 

- কে টাকা দিয়েছে? 

- রোহান সাহেব। 

- কীভাবে যোগাযোগ হলো? ফোনে কথা হয়েছে? 

- জ্বি, আমার স্বামীকে প্রথম ইনি কল দিয়ে বলে যে সকালে অপারেশন হবার আগেই ডাক্তারকে খুন করতে হবে। বিনিময়ে টাকা দেবে, অনেক অনেক টাকা, ২০ লাখ টাকা। কিন্তু আমার স্বামী রাজি হচ্ছিল না, তারপর সেই ভদ্রলোক আমার স্বামীকে বলে যে সে যদি রাতের মধ্যে কক্সবাজার যেতে পারে তাহলে ৫০,০০০ টাকা দেবে। তখন আমার হাসবেন্ড রাজি হয়ে গেল। 

- কিন্তু আপনি তার মোবাইল থেকে নাম্বার বের করে রেখে দিলেন, তারপর আপনার স্বামী চলে যাবার পরে আপনি কল দিলেন ওই নাম্বারে। এটা কিন্তু আমরা আপনার ও আপনার স্বামীর নাম্বারে কললিস্ট দিয়ে বের করছি। আর দুজনেই একই নাম্বারে কথা বলেছেন, যেহেতু আপনার স্বামী আমাকে আগেই বলেছি যে তাকে কল করা হয়েছে এবং তিনি টাকা গ্রহণ করার সময় তাকে ভালো করে দেখতে পারে নাই। তাই ওটাই খুনির নাম্বার ভেবে নিয়েছি আমরা, কিন্তু সেই নাম্বারে আপনার কল দেখে অবাক হলাম। 

- কিন্তু ও আমার স্বামীকে হত্যা করবে ভাবতে পারিনি, বিশ্বাস করুন। 

- আপনি যদি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের স্বামীকে খুন করতে পারেন তাহলে ইনি পুরুষ হয়ে কেন পারবে না? 

- চুপচাপ। 

- আপনার স্বামী যেদিন খুন হয়েছে সেদিন এই রোহান নামের ভদ্রলোক আপনার বাসায় গিয়ে কথা বলেছিল তাই না? 

- জ্বি।

- তখন কি তাকে চিনতেন আপনি? 

- আগে চিনতাম না, কিন্তু তিনি কল দিয়ে যখন বললেন যে পুলিশ আমার কাছে পৌঁছে যাবে বা আমাকে সে ধরিয়ে দেবে। তখন আমি তাকে আমার বাড়িতে প্রবেশ করতে দেই, আমার স্বামী ঘুমিয়ে ছিলাম। 

- আপনি আপনার স্বামী হত্যার বিরুদ্ধে কোন মামলা করতে চাননি। 

- ইনি বলেছিলেন যে আমি যদি কিছু করি তবে আমার খুনের কথা বলে দেবে। 

- আপনি খুন করতে এতটা সহজে রাজি হয়ে গেলেন কীভাবে? 

- আমার একটা সন্তান ছিল, সে মারা গেছে ওই জাফর ডাক্তারের অবহেলার কারণে। 

- সেজন্য জানের বদলে জান? আপনি কি এখন আপনার পরিণাম ধারণা করতে পারেন? 

- জ্বি পারি। 

- ঠিক আছে, অপেক্ষা করুন বাকিটা আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। 

★★★

থানা থেকে বের হয়ে গেল সাজু সজীব কবিতা। রকি ও হাসান সাহেব একটু আগে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে কিন্তু এখন তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি। মামলার বিষয় এখনো অনেককিছু ধোয়াশা হয়ে আছে, সেটা নাহয় আদালত খুঁজে দেখবে। 

রাহাত সাহেবকেও গ্রেফতার করা হয়েছে কারণ তিনি মাদকদ্রব্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। দুই কোটি টাকার জন্য তাদের নিজেদের মধ্যে চলেছে এক অদ্ভুত ষড়যন্ত্র। মাঝখানে সাজু লোকটা মার খেয়ে ভর্তা হয়ে গেল আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। 

একটা বিষয় ভালো হয়েছে, কবিতার সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে। লামিয়া নামটা হারিয়ে গিয়ে সেই পুরনো সম্পর্ক উঠে এসেছে। তারা দুজনেই কি একসঙ্গে থাকবে? নাকি দুজনেই এভাবে আলাদা থাকবে, কে জানে? 

ভাগ্যে কি আছে? 

#সমাপ্ত (হ-য-ব-র-ল) 

এতো সুন্দর একটা গল্প এভাবে শেষ হয়না, তবুও শেষ করতে হয়েছে। আরও অনেক চমৎকার এক সমাপ্তি হতে পারতো, সময় নিয়ে উপস্থাপন করতে পারলে ভালো হতো। সময় চেয়েছিলাম পাইনি, কারণ আপনারা ধৈর্য ধরতে নারাজ। আমার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা আছে, ব্যস্ততার সকল গ্লানি শেষ করে ফ্রেশ মন নিয়ে লিখতে বসা লাগে। নাহলে গল্প লেখা যায় ঠিকই কিন্তু..... 

যাইহোক, খারাপ ভাবে শেষ করার জন্য সবাই মাফ করবেন। আমি জানি খারাপ হয়েছে তবুও বলতে চাই "আমি নিরুপায়" । 

লেখা:- মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#17
গল্পটা এভাবে শেষ করলেন কেনো কবিতা আর সাজুর কি হবে এটা জানতে চাই আমি
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
[+] 1 user Likes Naim_Z's post
Like Reply
#18
(18-06-2023, 05:33 PM)Naim_Z Wrote: গল্পটা এভাবে শেষ করলেন কেনো কবিতা আর সাজুর কি হবে এটা জানতে চাই আমি


সাজু ভাই সিরিজের সব গুলো গল্প পরতে থাকুন পেয়ে যাবেন।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)