14-11-2022, 10:19 AM
(This post was last modified: 14-11-2022, 11:06 AM by Fardin ahamed. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আজ সাবিহার বাসর রাত। ছোট বেলা থেকেই এ রাতের
ব্যাপারে শুনতে শুনতে আর নিজের বন্ধু বান্ধব এর মুখে
শুনতে শুনতে নিজেরই আজ কেমন ঘোর লাগছে, কেমন
যেন কি হয় কি হয় অবস্থা। তাছাড়া আজ বিয়ের পর মিঃ মেহবুব ই ওর
লাইফে প্রথম পুরুষ। ও হ্যা, মেহবুব ওর হাজবেন্ড এর নাম।
মেডিকেল এর পড়ার দরুন কোন দিন প্রেম ভালবাসা নিয়ে ভাবার
সময় হয় নি সারাক্ষণ শুধু পড়া আর পড়া। কিন্তু অন্য সবার মত প্রকাশ না
করলেও ও ঠিকই এই দিনটির জন্য অনেক অপেক্ষা করছে। .
মেহবুব পেশায় একজন সেনাবাহিনী কর্মকর্তা। মা ববাবার ছোট
ছেলে। সাবিহাও ছোট। উনি সাবিহার মেডিকেলের প্রফেসর
এর ভাইয়ের ছেলে। সাবিহার বাবা স্যারের মুখে ছেলের
বায়োডাটা শুনে আর তাদের পরিবার পরিজনের সাথে দেখা করে
খুব পছন্দ করেছেন। স্যার সাবিহাকে ওর মেডিকেল লাইফ
থেকেই খুবই স্নেহ করত তো সাবিহাও স্যারের কথার অন্যথা না
করেই ও বিয়ের মত দে আর যেহেতু ওর নিজস্ব কোন
পছন্দও ছিল না তাই অমতের কারনও ছিল না। আর যতটুকু
মেহবুবকে দেখেছে ওর ভালই মনে হয়েছে।বাসায় যে দিন
দেখতে গিয়েছিল শুধু ওর শাশুড়ি আর বড় ননদ ই কথা বলছে। ওর
দুলাভাই ওদের কথা বলতে বলেছিল কিন্তু সে রাজি হয় নি তো
সাবিহার মনে যে টুকু আশা ছিল তাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে
ভাবল যাক বেটা বিয়ের পর তো কথা বলবিই আগেই না হয় একটু
ভাব ধর। . বিছানায় বসে বসে আকাশ পাতাল ভাবছিল ও এরই মেধ্য ওর
বড় জা আর ননদ ঢুকল মেহবুবকে নিয়ে। বেটা রুমে ঢুকেই
ওয়াশরুমে চলে গেল আর ওর জা আর ননদ ওর সাথে গল্প করা
শুরু করল। -কি ভাবি কেমন লাগছে? দেখ আমি কিন্তু তোমার
থেকে ছোট তো তুমি করেই বলব। – তোমার যা ইচ্ছে
ডাকতে পার কোন সমস্যা নেই। -ভাবি আমার ভাই কিন্ত বিশিষ্ট ভাবিস্ট
সে কিন্তু ভাব ধরবে তুমি তার ভাবের কোন পাত্তা দিবা না। সাবিহা
মনে মনে ভাবল যাহ বাবা ও মেহবুব সম্পর্কে যা ভাবছিল তাই ই যাই
হোক একটু পর তার প্রমাণ পাওয়া যাবে যে সে কতটুকু ভাব
নেয়। -ওই বেটা মেহবুব আমাকে ওনেক জালাতন করছে
ছোটবেলা থেকে। এর শোধ কিন্তু আমি তোমার উপর
থেকে নিব। বড় ভাবি হাসতে হাসতে বলল – আচ্ছা তুই থাম এবার।
বেচারিকে একটু রিলাক্স হতে দে। আচ্ছা সাবিহা আমরা গেলাম তুমি
ফ্রেশ হয়ে নাও আর হ্যা সকালে কিন্তু সব গল্প বলতে হবে।
একথা শুনে সাবিহা হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। তারা
চলে যাবার পর একা একা খাটে বসে আছে। ডাক্তারি লাইফে
অনেক ক্রিটিকাল সমস্যা ফেস করছে কিন্তু এমন দিশেহারা হয় নি
কিন্তু আজ কেমন জানি ফিলিংস হচ্ছে। আরও একা, মা বাবাকে
ছেড়ে আসার কষ্ট তো আছেই। মনে হল যেন দুনিয়া হঠাৎ
পালটে গেছে, সব থমকে গেছে। গত কয়েক দিনের কর্ম
ব্যস্ততা পুরো শরীরে ভর করছে, একটু শুতে পারলে বাচেঁ
কিন্তু ওই লোক এসে দেখে ও ঘুম তাহলে কেমন লাগবে
এই ভাবতে ছিল ওমনি সে ওয়াশরুম হতে ফিরে এল। ওর মুখে
ঘোমটা দেয়া তাই লোকটাকে পুরোপুরি দেখাও যাচ্ছিল না।
পরে কিছু একটা আলমারি থেকে খুলে নিয়ে বারান্দায় গেল।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর একসময় এসে বসল
বিছানায়, একটু কেশে নিয়ে মাতালে স্বরে বলল অনেক রাত হল
তুমি সোফায় গিয়ে শোও অথবা কোন সমস্যা না থাকলে বিছানায়
ও শুতে পার। . সাবিহা কথাটা শুনে যত না অবাক তার থেকে বেশি হল
তার গায়ের গন্ধ পেয়ে। মদের গন্ন্ধ!!!! সাবিহা বলল – আপনি
ড্রিংকস করেছেন???? অমনি মেহবুব রেগে গিয়ে বলল –
খবরদার বিয়ে করেছি বলে আমার উপর কখনই অধিকার প্রয়োগ
করবা না। সোফায় গিয়ে শুতে বলেছি গিয়ে শোও। . কথাটা শুনার
পর ওর মনে হল ওর দুনিয়াটা পুরো অন্ধকার হয়ে গেছে। ভয়ে
না লজ্জায় কাঁপতে কাঁপতে ও সোফায় কোন মতে গিয়ে
শোয়। শুধু ভাবছে -এ কি হল???? আল্লাহ কেন ওর সাথে এমন
করল ও তো কাউকে ঠকায় নি তাহলে!!!! সে দিনের রাত ওর
কেমন কাটল তা ওই আর ঐ সোফার বালিশটাই জানল।ওর
জীবনের সব থেকে অভিশপ্ত রাত।
সাবিহা একসময় হাত দিয়ে দেখল ওর চোখের পানিতে সোফার
কুশন ভিজে গেছে, ওপাশ ভয়ে ভয়ে ফিরে দেখল মেহবুব
খাটে উলটো হয়ে ঘুমিয়ে আছে পুরো বিছানা জুড়ে।
লোকটার উপর ওর রাগ ক্রমশ বাড়ছে তারথেকে রাগ হচ্ছে ওর
স্যারের উপর। সে জেনেশুনে কিভাবে ওকে ওর হাতে
তুলে দিল। এখন ওর কি হবে, মা বাবাকে কি বলবে? তাদের কত
স্বপ্ন ওকে নিয়ে, ওর নিজের কত স্বপ্ন ওর ছোট একটা সংসার
হবে, বাচ্চাকাচ্চা হবে, সারাদিন কাজ সেরে রাতে স্বামীর বুকে
মাথা এলিয়ে ঘুমাবে, হসপিটালের গল্প বলবে, কোন রূগী কি
বলছে তা বলবে, তার উপর ডাক্তারি করবে আরও কত কি,ওর সব
ভালবাসা, ওর দেহ মন সব রেখে ছিল ওর স্বামীর জন্য কিন্তু
আজ একটা রাতের মধ্যে কি থেকে কি হল!!!!
এসব ভাবতে
ভাবতে ও কখন ঘুমিয়ে পরছিল নিজেই জানে না। . সকালে ঘুম
ভাঙল একটা গম্ভীর আওয়াজে, চোখ খুলে দেখল মেহবুব
তাকিয়ে আছে আর ওকে ডাকছে। ও ধরফর করে উঠে
বসতেই আহ্ করে উঠল, সোফায় ঘুমানোর জন্য পুরো
শরীর ব্যাথা হয়ে আছে। মেহবুব দেখেও না দেখার ভান
করে আরেকদিকে ফিরে বলল -নাস্তার টেবিলে যাও, সবাই
অপেক্ষা করছে। এই হুকুম শুনে রাগে ওর পুরো শরীরে
আগুন লেগে গেল কিছু বলতে যাবে তখনি ওর জা এল। . -সাবিহা
এখনও উঠো নি?? একি তুমি সোফায়? তখন ভাবি আর কিছু বলল না
মনে হয় কিছু একটা আঁচ করেছে, বলল -ফ্রেশ হয়ে খেতে
আস, তারপর তোমার হাতে আজ রান্না করাব দেখব আমার
ডা.দেবরানী কি কি রান্না করে খাওয়ায়। . ওদিকে মেহবুবের মন
খুবই খারাপ। কি হতে কি হচ্ছে আসলে ও তো এমনটা চায় নি।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতেছিল। চাচার আবদারেই এই মেয়েটাকে
বিয়ে করেছে নইলে ও কখনই চায় নি রিতার পর ওর লাইফে
কেউ আসুক, ও ওর ভালবাসা নিয়েই একা একা থাকতে চেয়েছিল
থাকনা রিতা আজ অন্য জায়গায় সুখি, একটা অভিমান নিয়েই ও বাচঁতে
চাইছিল। দীর্ঘ ৪/৫টা বছর ও এমন ভাবে আছে। ও তো লাইফটা
কবেই শেষ করত যদি না ওর মা বাবা বেঁচে না থাকত। দিনের পর
দিন ও ভিতরে আর বাহিরে কঠিন থেকে কঠিন হইছে এখন আর
কোন মেয়ে জাতিয় অনূভুতি ওকে স্পর্শ করে না হয়ত এটা
সহজে পারছে ওর প্রফেশন এর জন্যই, যেখানে সব কিছু
সিরিয়াস। আর ও চাইতই রিতাকে ভুলতে দিন রাত ব্যস্ত থাকতে আর
যে জবে আছে এতে চাইলেই যে কেউ দিন রাত কাজের
মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারে তো তেমন কষ্ট হত না কিন্তু রাতটা
ছিল অসহ্য ওর জন্য। অনেক বিয়েই ও ইচ্ছে করে ভাঙছে
কিন্তু এটা আর পারে নি চাচার জন্য আর মাও দিন দিন দূর্বল হয়ে
যাচ্ছে শুধুমাএ পরিবার এর দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছে। তারপরও
আশা ছিল মেয়েটার পরিবার রাজি হবে না কারন ওর বয়স টা ৩৫পার
হয়ে গিয়েছে, পরিবার চাইলেও এ যুগের মেয়েরা এত বয়সী
স্বামী চায় না আরও সে একজন ডা., শিক্ষিত রিজেক্ট করাটা
স্বাভাবিক ছিল কিন্তু না মেয়ে রাজি হয়েছে। আর ও জানে এর
পিছনে ওর চাচারই হাত আছে। পরে ও চাইছিল মেয়েটার সাথে
কথা বলতে কিন্তু ওর চাচা দেয় নি কারন চাচা জানত ও কথা বলতেই
চায় বিয়ে ভাঙার জন্য। রাগ গিয়ে পড়ল সব মেয়েটার উপর। যখন ও
কাবিন নামায় সই করছিল তখন মনে মনে বলছিল -মেয়ে রাজি তো
হয়েছ সবার কথা মত, এবার এই মেজরের পুড়ে যাওয়া লাইফে
ঝলসানোর জন্য রেডি হও, ওয়েলকাম টু দ্যা হেল।
সাবিহা বাথরুমে গিয়ে অনেক কাঁদল,
আয়নায় তাকিয়ে
দেখল চোখ নাক মুখ ফুলে গেছে, চোখের
নিচে কালি জমেছে।খুব খুধাও লাগছে। ফ্রেশ
হয়ে
বের হয়ে দেখল মেহবুব বিছানায় বসা, ওর
দিকে
তাকালোও না। ও আয়নার সামনে গিয়ে মাথা
আচঁড়াতে
ছিল তখনি লোকটার ফোন আসল, রুম দিয়ে বের
হয়ে গেল যাওয়ার আগে দরজাটা জোরে শব্দ
করে আটকিয়ে গেল যেন খুবই বিরক্ত। ডাইনিং
রুমে
যাবার পর সবাই ঘিরে ধরল, কত খাবার কিছুই
খেতে
ইচ্ছে করছিল না আড় চোখে তাকিয়ে দেখল
মেহবুব কার সাথে যেন সোফায় বসে কথা
বলছে
হঠাৎ চোখাচোখি হল। এমন অবস্থা হল যেন
খাবার
গলায় আটকে যাবে। ওর শাশুড়ি বলল- মা
আস্তে খাও।
আহারে একদিনেই কেমন চেহারা হলে গেল।
মহিলার দিকে তাকাল সাবিহা, এত ভাল
একজন মহিলার
ছেলে এতটা বেয়াদব কিভাবে হয়??? . সারা
দিন কয়
একবার ফোনটা হাতে নিয়েও আব্বু আম্মুকে
ফোন দেয় নি, দুপুরবেলা কথা হবার সময় বলল ও
ভাল
আছে তারা যেন টেনশন না করে এছাড়া আর
কি বা
বলবে!!!? যদি শুনে তাদের নুতন জামাই বিয়ের
রাতেই
মদ খেয়ে ওর সাথে এমন ব্যবহার করেছে তারা
মরে যাবে ওর টেনশন এ। কিভাবে ও বাচঁবে
তখন??জীবনটা তো শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে
গেল। এবাড়ির প্রতিটা মানুষ খুব ভাল বিশেষ
করে ওর
শাশুড়ি, সব কিছু একটা দিনের মধ্যেই খুবই আপন
ভাবে
সবার সম্পর্কে বলল,সবার সাথে পরিচয় করিয়ে
দিল।
তবে মানুষটা খুবই অসুস্থ কিন্তু তার কথা শুনবে
কি সাবিহার
জীবনটা যে একটা অসুস্থ মানুষ শেষ করে দিল
তার
কি হবে!!!?ওর খুবই খারাপ লাগছিল যে ও
মহিলার সাথে
ঠিকমত কথাও বলছে না দেখে। . দুপুরবেলা
খাবারের
পরে ও রুমে গেল দেখল লোকটা নেই তো
ও পুরো রুম ঘুরে ফিরে দেখল। কিছু ছবি
দেয়ালে টানানো। মেহবুবের ক্যাডেট
কলেজের,কেমন যেন পার্সোনালিটি সম্পন্ন
চেহারা লোকটার।আলমারি খুলল এরই মেধ্য
মেহবুব
রুমে আসল, বলল-আমার পার্সোনাল জিনিসে
তুমি হাত
দাও কেন? এগুলা মোটেই লাইক করি না আমি
আর তুমি
কে?? শুধু কাগজ কলমের বিয়ে আমাদের
এছাড়া আর
কিছুই না। সাবিহা এই প্রথম কথা বলল -আপনি
আমার সাথে
এভাবে বাজে বিহেব কেন করছেন? আমি আগে
জানলে কোনদিন এই বিয়েতে রাজি হতাম না।
আপনি
কি আমাকে বলবেন কি সমস্যা? মেহবুব কিছু
একটা
বলতে যাবে ওমনি ওর বোন এসে চিৎকার করে
বলল-ভাইয়া মায়ের কি যেন হইছে। তুই
তাড়াতারি আয়।
মেহবুব ওর দিকে একটা রাগী দৃস্টি দিয়ে রুম
থেকে বেরিয়ে গেল, সাবিহাও পিছন পিছন
গেল।
গিয়ে দেখে ওর মা বিছানায় শোয়া। সবাই
জানে যে
ও ডা. তাই ওকেই দেখতে বলল। ও প্রথম
দেখাতেই বুঝল যে এটা হার্ট অ্যাটাক। বলল
তাড়াতারি
হসপিটালে নিতে।তখন ও, ওর শ্বশুর আর
মেহবুবরা দুই
ভাই ওর মাকে নিয়ে হসপিটালে নিল।
হসপিটালে নেবার
পর,ওর শাশুড়ি কে ভর্তি করা হল প্রায় রাত ২
পর তাকে
শংকামুক্ত বলা হল। ওর শ্বশুর ওকে বার বার
ধন্যবাদ
দিচ্ছিল আজ ও না থাকলে কি না কি হত কে
জানে কিন্তু
ও এক বার যার ধন্যবাদ পেতে চাচ্ছিল সে
ওকে
দেখে বরং উলটো দিকে ফিরে তাকিয়ে
ছিল।
প্রতিবার ও মেহবুবের দিকে তাকায় আর ওর
কষ্টে
বুকটা চৌচির হয়ে যাচ্ছিল। কি করবে, কি
বলবে কাকেই
বা বলবে!!! একটা দিনের মধ্যে এত করুন অবস্থা
ও
নিতেই পারছিল না। তারপরও ও ওর শাশুড়ির
সেবায়
কোন এুটি করে নি। ওর কলিগরা এসে দেখা
করে
গেছে ওদের সাথে তারা মেহবুবের সাথে কথা
বলতে চাচ্ছিল। -কি রে তোমার মেজরের
সাথে
আলাপ করিয়ে দাও। কিন্তু ওই নিষেধ করল,
বলল- ওনার
মা আসুস্থ ত এখন পরিচয় করানো থাক পরে
দিবো।
আসলে ও চাচ্ছিল না এখনি সব সমস্যা সবাই
জানুক।
আগে ওর শাশুড়ি সুস্থ হোক। তার ছেলের কোন
ভাল মন্দ বোধ না থাকতে পারে কিন্তু ওর তো
আছে। একজন ডা. হিসেবে হোক বা মানুষ
হিসেবে। টানা এক সপ্তাহ পর ওর শাশুড়ি কে
বাসায় আনা
হয়। সাবিহা এই সময়টা ওনার পাশেই ছিল
সারাদিন ডিউটি করত
আর ফাকে ফাকে ওনার কাছে এসে বসত,
অনেক
গল্প করত মাঝে মধ্যে ওর ননদ আর জা আসত।
বাসায়
যেত যখন মেহবুব থাকত না রাতে আবার ফিরে
আসত। মেহবুব আসত প্রতিদিন আফিসের পর
রাতে,যতক্ষন থাকত মায়ের হাত ধরে বসে
থাকত। ওর
দিকে তাকাতোও না। তখন ও রুমের বাইরে চলে
যেত। ওর শাশুড়ি ডাকত বলত ওর ডিউটি আছে।
বিয়ের
পর থেকে ওর উপর দিয়ে যে ধকল যাচ্ছে
তাতে
যে অ সুস্থ আছে তার প্রধান কারন এই মহিলার
ভালবাসা
ও যতক্ষণ না খেত সেও খেত না। এই পরিবারের
সবাই ওর প্রতি কেয়ারি শুধু মেহবুব ছাড়া।
আর মেহবুবের বিয়ের প্রায়১মাস চলছে। ওর
শাশুড়ির
অসুস্থতার খবরে ওর বাবার বাড়ি হতে লোকজন
আসল তাকে দেখতে। ও ওর মা বাবাকে দেখে
কেঁদেছে খুব, তারা বার বার ওকে বুঝিয়েছে
যে
বিয়ের পরে এমন একটু কষ্ট হয় প্রথম প্রথম।
ওকে সবার সাথে মানিয়ে নিতে বলল তারা। ও
কিভাবে
বুঝাবে আসলে সমস্যাটা কোথায়!! আসলে ও
এখনই এই পরিস্থিতিতে কাউকে কিছুই বলতে
চায় না। ও
শুধু একটা কথাই জানে যে ও ওর মা বাবার
অনেক
আদরের ছোট মেয়ে। ওর কোন খারাপ অবস্থা
তারা সহ্য করতে পারবে না। তারা মরে যাবে
ওর
টেনশনে আর ওর বড় বোন পাগল হয়ে.
রুমে গিয়ে ফোন দিল মেহবুবকে ওপাশ হতে
কিছুক্ষণ পর ফোন ধরল ও। -হ্যালো, আপনি কি
মেহবুব বলছেন? -জি, কে আপনি? -আমি
সাবিহা।
আপনার সাথে কথা বলার ছিল। বাবা
আপনাকে ফোন
দিতে বলেছে। -তুমি আমার নাম্বার কিভাবে
পেলে?
আর তোমার সাহস কিভাবে হয় আমাকে ফোন
দেয়ার? কথাটা শুনার সাথে সাথে ওর চোখে
পানি
চলে আসল। কিছু বলতে যাবে ওমনি দেখে ওর
শাশুড়ি দরজায় দাঁড়িয়ে, ও সাথে সাথে ফোন
কেটে
দিল।ওর চোখে পানি দেখেই সে বুঝে
নিয়েছে। বলল- মা শোন মেহবুব আসলে ওকে
বলবি আমার রুমে আসতে। আর ও বকা দিলে তুই
কাঁদবি
কেন? আসলে ব্যস্ত থাকে তো তাই রাগ করছে।
বাসায় ফিরলে তুই উলটো ওকে বকা দিয়ে
দিবি। ওর
শাশুড়ি যাবার কিছুক্ষণ পর ওর জা আসল বুঝল
ওর মন ঠিক
করতে সেই পাঠিয়েছে। -এই সাবিহা আসো
তোমার প্যাকিং করে দেই। আরে উঠ তো। মুখ
কাল করে বসে থেক না। ও দৌড়ে গিয়ে দরজা
বন্ধ
করে দিয়ে ভাবিকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদল।
আসলে ও এ একটা মাস যতটা কষ্ট পেয়েছে তা
মুখ
ফুটে কাউকে বলতে পারেনি আজ একটা
সান্ত্বনার
কাধ পেয়ে সব দুঃখ গুলো চেপে ধরেছে। সব
এখন পর্যন্ত যা যা হয়েছে সব বলল। ভাবি বলল-
দেখ
সাবিহা এটা ঠিক তোমার বয়স কম আর
মেহবুবের উচিৎ
ছিল তোমাকে সময় দিয়ে সব সমস্যাগুলো বলে
ফেলা। ও যদি সংসার নাই করতে চায় তাহলে
শুধু শুধু
তোমার জীবনটা কেন নষ্ট করল, তার মা আর
বাবাকে দেখানোর জন্য??? -ভাবি আমি কিছুই
বুঝতে
পারছি না। আজ এতটা খারাপ বিহেভ করল
ফোনে। আমি
কোনদিনও এতটা অপমানিত হই নি কারও
কাছে।তুমিই বল
আমি কি করব? -তুমি ধৈর্য হারা হয়ো না,
শান্ত হও।আমি
এব্যাপারে তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলব। –
উনি যদি রাগ
করে? -রাগ করলে করবে, তুমি একটা
এস্টাবলিসড
মেয়ে তুমি কেন ওকে ভয় পাবা?? ওর কোন
অধিকার নেই তোমার লাইফ নষ্ট করার। -আচ্ছা
ভাবি তুমি
যা ভাল মনে করার কর। কিন্তু আমি ঐ লোকের
সাথে কোথাও যাব না। -সাবিহা, পাগলের মত
কথা বল না।
যেহেতু একটা সময় পেয়েছ একটু কাছাকাছি
থেকে নিজেদের জানার সুযোগটা হাত ছাড়া
কর না।
আমি তো তোমাকে বলেছিই, আমার দেবর
ওতটাও
খারাপ না যতটা তুমি ভাবছ, তুমি নিজেই
একদিন আমাকে
বলবা দেখ। এই বলে ভাবি চলে গেল।সাবিহা
বিছানায়
বসে মনে মনে বলল-এটা তোমার ভুল ধারনা
ভাবি
তোমরা তো এই লোকের বাইরেরটা দেখ আর
আমি তো বন্ধ রুমে খারাপ আচারন গুলো দেখি।
সে কোনদিন বদলাবে না। নিজের মনেই একটা
দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসল। . ওদিকে মেহবুব
অফিসে রাগে অস্থির। এই মেয়ের এত সাহস,
ওকে
ফোন দিয়ে বলে যে বাবা ফোন দিতে বলছে।
ওকে ওর ওয়াইফের কোন মর্যাদাই দেয় নি
কেন
শুধু শুধু ওর বাড়িতে ও পরে আছে???ও তো
ভাবছিল
শিক্ষিত মেয়ে, নিজের সস্মান আছে। বিয়ের
ররাতে খারাপ বিহেবে পরদিনই চলে যাবে
কিন্তু না
সে যায় নি পরে ভাবছিল ওর মা অসুস্থতার
জন্য হয়ত
যায় নি, সে সুস্থ হলে চলে যাবে। নাহ আজ
একটা
মাস হল এখনও যাচ্ছে না। সাবিহা যখন
দিনরাত পরিশ্রম
করে ওর মাকে সুস্থ করে তুলল তখন ওর খুব ভাল
লাগছিল, আসলে ও তো এমন বউই চাইছিল যে
ওর মা
বাবাকে নিজের করে আগলে রাখবে। ওকে
একটা
ধন্যবাদ দিতে চাইছিল কিন্তু পরে ও হয়ত নরম
হয়ে
যাবে ওর প্রতি এই ভেবে আর দেয় নি আর ও
তো চায়ই ওকে তাড়াতে। ও শুধু মাএ বিয়ে
করেছে ওর মা বাবার জন্য। মেহবুবের মনের
ধারনা
সব মেয়েরা রিতার মত। সবার মনের মধ্যে
থাকে
কিভাবে পুরুষকে ফাঁদে ফেলানো যায়। যখন
আর
ভাল লাগবে না তখন ছেড়ে ছুড়ে অন্য দিকে
ঝুকবে।তাই তো আজ ওকে ও বাবার কথা বলে
ফোন দিছে, ওকে ওর প্রতি আকৃস্ট করার
ফন্দি।
কিন্তু ওর মনে কোন মেয়ের জন্য জায়গা নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে ও গাড়ি থেকে নামল,
বাসায়
ঢুকে সোজা ওর রুমে গিয়ে দেখল সাবিহা ওর
ব্যাগ
গুছাচ্ছে । দরজাটা আটকিয়ে ওর হাত ধরে
টেনে
বলল -তোমার এতবড় সাহস তুমি আমার মুখের
উপর
ফোন কেটে দিয়েছ। -তাহলে কি করব? আপনি
আমার সাথে কেন বাজে বিহেব করেছেন? –
বাজে বিহেব তো তুমি আরও দেখবা। খবরদার
আমাকে ক ন্টোল করার চেষ্টা ছেড়ে দাও। এই
বলতে বলতে মেহবুব ওর হাত জোরে চেপে
ধরল ও ব্যাথায় আহ্ করে উঠল আর চোখ দিয়ে
পানি
গড়িয়ে পড়ল।সাথে সাথে ও ওর হাত ছেড়ে
দিল।
তখন মেহবুব ওর দিকে ব্যাথাতুর দৃস্টিতে কয়েক
সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল। পরে সরি বলে
ওয়াশরুমে চলে গেল। হঠাৎ এই পরিবর্তন ওর
সাবিহার
মনে ধাক্কা দিল। . ওয়াশরুমে গিয়ে বেসিনের
আয়নায় মেহবুব নিজেকে দেখে ভাবল ওকি
সত্যি
এমন???!!! দিন দিন ও কঠিন হয়ে যাচ্ছে, দোষ
তো
সব রিতার যে ওকে ঠিক মত থাকতে দিচ্ছে না,
এই
মেয়েটার তো কোন দোষ নেই। আজ সাবিহার
কান্না সত্যি ওকে নাড়া দিয়ে গেছে। বাথরুম
হতে
বের হয়ে দেখে বাবা আর বড় ভাইয়া বসে
আছে।
-কি ব্যাপার হঠাৎ তোমরা? -তোর সাথে জরুরী
কথা
ছিল। বাবা বলল-তুই যে এখনও তোর মাথা হতে
ওই
মেয়ের চিন্তা নামাতে পারিস নি তা তো
জানতাম না। -কি
বলছ তোমরা? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
ভাইয়া
রেগে গিয়ে বলল-তুই নাকি প্রতিনিয়ত
সাবিহার সাথে
খারাপ ব্যবহার করিস?? -সাবিহা বলছে? –
সাবিহা কেন
বলবে? মা আজকে ওকে কাঁদতে দেখছ,তোর
ভাবি বিয়ের পরদিনই সকালে ওকে সোফায়
ঘুমুতে
দেখছে। মেহবুব ভাবছে এ সবই সাবিহার
শিখানো
কথা। ও ই বলছে মা আর ভাইয়াকে তারাই
বাবা আর
ভাইয়াকে পাঠিয়েছে। ভাইয়া আরও বলল-দেখ
মেহবুব তুই প্লিজ পিছনের কথা ভুলে যা, বিয়ে
করেছিস সব ভুলে সাবিহাকে নিয়ে সামনে
আগা। আর
কত বুঝাব তোকে, বয়স ও তো হল। তোর বন্ধুরা
বিয়ে শাদী করে সবাই কত ভাল আছে দেখ।
বাবা?
বলল-যাই হোক, আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
আমি
তোদের ব্যাংককের টিকিট কাটতে
চাচ্ছিলাম কিন্তু
এখন যা দেখছি আমি চাই তুই কালই দিমকয়েক
এর জন্য
সিলেট গিয়ে সাবিহাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়। –
আমার ছুটি
নেই, পারব না। -আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
তোর জন্য আমি অপরের মেয়ের সাথে অন্যায়
করতে পারব না। তোর যেতে হবেই। এই বলে
বাবা আর ভাইয়া চলে গেল। মেহবুব রাগে
ফুসঁতে
ফুসঁতে পুরো বাসায় সাবিহাকে খুজঁল কিন্তু
পেল না ও
নাইট ডিউটিতে হসপিটালে গেছে। মনে মনে
বলল
কোথায় আর যাবা?? আমার নামে নালিশ!!!
দেখে
নেব।
পরের দিন সকালে সাবিহা যখন বাসায় ফিরে
তখন ও
জানে না যে মেহবুব বাসায়,না জেনেই রুমে
ঢুকে
যায়। ঢুকে তো পুরো অবাক ও এই সময় বাসায়!!!
এদিকে এত কিছু হয়েছে ও জানেই না। সারা
রাত ডিউটি
করে ক্লান্ত।রুমে ঢুকে দেখে মেহবুব
ল্যাপটপে কাজ করছে। ওর দিকে তাকিয়ে
বলল-
আমার রুমে কেউ নক না করে ঢুকে তা মোটেই
পছন্দ না। -সরি, আমি জানতাম না আপনি রুমে।
ও ব্যাগ
রেখে ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবে ওমনি মেহবুব ওর
হাতটা জোরে চেপে ধরে দেয়ালের উপর
ধাক্কা মেরে ফালালো।হঠাৎ এধরনের
ব্যবহারে ও
পুরো শকড তাছাড়া ও মাথায় প্রচণ্ড ব্যাথা
পেল।
মেহবুবের রাগী চেহারা দেখে ব্যাথার কথা
ভুলে
গেল। কিন্তু মেহবুবের ওদিকে হুস নেই, পাগলের
মত বলল, -আমি জীবনে মেয়ে দেখেছি
অনেক তোমার মত বেহায়া মেয়ে দেখিনি।
তুমি
আমার নামে নালিশ কর মায়ের কাছে? -কি
বলছেন
আপনি এসব??? -ওহ, এখন কিছু বুঝতে পারছ না,
না? যখন
তোমার মুখের উপর ডির্ভোস পেপার ছুড়ে
মারব
তখন বুঝবা। আমি এই মাএ আমার উকিলের
সাথে কথা
বলছি। খুব তাড়াতারি ডির্ভোস নোটিশ পেয়ে
যাবা। –
আপনার সাথ আমার ডির্ভোস না হলেও যে
আমি থাকব
না এটুকু আমি জানি। কিন্তু এই খারাপ
ব্যবহারের মানে কি??
-তোমাকে এতবড় সাহস কে দিসে? আমার মা,
ভাবি
এদের কাছে ছোট করার..। তারপর কিছুক্ষণ
থেমে বলল-তুমি চিনো আমাকে আমি কে? এক
নিমিষে আমি তোমাকে, তোমার ক্যারিয়ার,
ফিউচার সব
শেষ করে ফেলতে পারি। এবার আর সাবিহা
চুপ
করে থাকার কোন উপায়ই পেল না। ও চিৎকার
করে
বলল-ও তাই, আপনি কে?? বলুন তো? আপনি
আমার কি
হন?আপনাকে কে সাহস দিয়েছে আমার
ব্যাপারে
কথা বলার? আপনি কে শুনতে চান, আপনি
একটা খারাপ
মানুষ আমার কাছে আর কিছুই না। -আমি
খারাপ না??আর
তুমি? বিয়ের রাত থেকে আমি খারাপ বিহেব
করছি
চলে কেন যাচ্ছ না?জানো কোন মেয়েরা
এভাবে পুরুষের পিছনে পরে থাকে? -তাহলে
আপনি কেন আমাকে বিয়ে করে এনেছিলেন? –
মা
বাবার কথায়। -আপনি কি একটা অমানুষ??!!
আপনি আমার
জীবনটা নষ্ট করেছেন। -তোমাদের
মেয়েদের জীবন কখনই নষ্ট হয় না। তোমাদের
মত বেহায়া মেয়েদের জন্যই ছেলেদের
জীবন নষ্ট হয়।তুমি যদি ভাল হতা বা আত্ন
সস্মান থাকত
তাহলে বিয়ের পরদিনই চলে যেতা বা যেদিন
তোমার মা বাবা আসল সেদিন। এই কথা শুনার
পর সাবিহা
আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি।ও
কান্নায়
ভেঙে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে বলল-আমি কি
দোষ
করেছি যে আপনি আমাকে এই কথা গুলো
বললেন?আমি তো আপনার সংসার করার জন্যই
এসেছিলাম, আপনার বউ হয়ে থাকতে
চেয়েছিলাম
আর আপনি কিনা আমাকে খারাপ মেয়েদের
সাথে
তুলনা করলেন? ওর এই কথা মেহবুবের মনে
কোন আঁচই ফেলল না উলটো আর রেগে বলল
-ও তাই তুমি আমার বউ হতে চাও ওকে ফাইন
আসো,
বিছানায় আসো। বউ হও, আসো। এত ইচ্ছা
তোমার
যখন,আসো। এই বলে ওকে বিছানার উপর ছুড়ে
মারল মেহবুব। যেই ওর কাছে আসল সাবিহা
ওকে
ধাক্কা দিয়ে ফেলে হাপাতে হাপাতে উঠে
বলল-
চরম অসভ্য আপনি। আমি আর এক মূহুর্তও এখানে
থাকব না। এতদিন আপনার খারাপ চেহারাটা
দেখলাম আজ
আপনার পশুর মত চেহারাটা দেখতে পেলাম।
এই
বলে ও দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এল। দেখল
যে ড্রইং রুমে ওর জা আর ননদ গল্প করছে।
ভাবিকে বলল-ভাবি মাকে বলো আমি চলে
গেলাম।
এই বলে ও আর দাড়াঁল না কারন তাহলে তারা
নানা প্রশ্ন
করবে আর ঐ লোকটাও বের হয়ে এসে না
জানি
কি না কি বলে, যাই হোক ওর কোন আর ও
বাড়ির
প্রতি পরোয়া নেই। কে কি বলুক বা করুক কিছু
আসে যায় না। কাঠফাটা দুপুরবেলা কোথায়
যাবে???
ওর বোনের বাসায় যাবে না কারন ও চায় না
এখনি
ফ্যামিলিকে সব কিছু জানাতে, এমনিতেই ওর
শরীর,
মন ভাল না। তাদের হাজারটা প্রশ্নের সামনে
দাড়াঁনোর
সাহস বা মনের জোর নেই। নিজেকে একটু সময়
দিতে চায় ও।তাছাড়া রাত থেকে এক
নাগাড়ে ডিউটি,
সকালেও কিছুই খায় নি তারপর আবার এই
অবস্থা। ঠিককরল
ওর ছোটবেলার বান্ধবীর বাসায় যাবে যে ওর
বেস্ট ফ্রন্ড। ওকে সব মনের কথা খুলে বলে
ও। ও নিঃশ্চই এই কঠিন সময়ে ওকে বুঝবে।
সাবিহা দুপুরে ওর বান্ধবীর বাসায় গেল
চলবে
ব্যাপারে শুনতে শুনতে আর নিজের বন্ধু বান্ধব এর মুখে
শুনতে শুনতে নিজেরই আজ কেমন ঘোর লাগছে, কেমন
যেন কি হয় কি হয় অবস্থা। তাছাড়া আজ বিয়ের পর মিঃ মেহবুব ই ওর
লাইফে প্রথম পুরুষ। ও হ্যা, মেহবুব ওর হাজবেন্ড এর নাম।
মেডিকেল এর পড়ার দরুন কোন দিন প্রেম ভালবাসা নিয়ে ভাবার
সময় হয় নি সারাক্ষণ শুধু পড়া আর পড়া। কিন্তু অন্য সবার মত প্রকাশ না
করলেও ও ঠিকই এই দিনটির জন্য অনেক অপেক্ষা করছে। .
মেহবুব পেশায় একজন সেনাবাহিনী কর্মকর্তা। মা ববাবার ছোট
ছেলে। সাবিহাও ছোট। উনি সাবিহার মেডিকেলের প্রফেসর
এর ভাইয়ের ছেলে। সাবিহার বাবা স্যারের মুখে ছেলের
বায়োডাটা শুনে আর তাদের পরিবার পরিজনের সাথে দেখা করে
খুব পছন্দ করেছেন। স্যার সাবিহাকে ওর মেডিকেল লাইফ
থেকেই খুবই স্নেহ করত তো সাবিহাও স্যারের কথার অন্যথা না
করেই ও বিয়ের মত দে আর যেহেতু ওর নিজস্ব কোন
পছন্দও ছিল না তাই অমতের কারনও ছিল না। আর যতটুকু
মেহবুবকে দেখেছে ওর ভালই মনে হয়েছে।বাসায় যে দিন
দেখতে গিয়েছিল শুধু ওর শাশুড়ি আর বড় ননদ ই কথা বলছে। ওর
দুলাভাই ওদের কথা বলতে বলেছিল কিন্তু সে রাজি হয় নি তো
সাবিহার মনে যে টুকু আশা ছিল তাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে
ভাবল যাক বেটা বিয়ের পর তো কথা বলবিই আগেই না হয় একটু
ভাব ধর। . বিছানায় বসে বসে আকাশ পাতাল ভাবছিল ও এরই মেধ্য ওর
বড় জা আর ননদ ঢুকল মেহবুবকে নিয়ে। বেটা রুমে ঢুকেই
ওয়াশরুমে চলে গেল আর ওর জা আর ননদ ওর সাথে গল্প করা
শুরু করল। -কি ভাবি কেমন লাগছে? দেখ আমি কিন্তু তোমার
থেকে ছোট তো তুমি করেই বলব। – তোমার যা ইচ্ছে
ডাকতে পার কোন সমস্যা নেই। -ভাবি আমার ভাই কিন্ত বিশিষ্ট ভাবিস্ট
সে কিন্তু ভাব ধরবে তুমি তার ভাবের কোন পাত্তা দিবা না। সাবিহা
মনে মনে ভাবল যাহ বাবা ও মেহবুব সম্পর্কে যা ভাবছিল তাই ই যাই
হোক একটু পর তার প্রমাণ পাওয়া যাবে যে সে কতটুকু ভাব
নেয়। -ওই বেটা মেহবুব আমাকে ওনেক জালাতন করছে
ছোটবেলা থেকে। এর শোধ কিন্তু আমি তোমার উপর
থেকে নিব। বড় ভাবি হাসতে হাসতে বলল – আচ্ছা তুই থাম এবার।
বেচারিকে একটু রিলাক্স হতে দে। আচ্ছা সাবিহা আমরা গেলাম তুমি
ফ্রেশ হয়ে নাও আর হ্যা সকালে কিন্তু সব গল্প বলতে হবে।
একথা শুনে সাবিহা হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। তারা
চলে যাবার পর একা একা খাটে বসে আছে। ডাক্তারি লাইফে
অনেক ক্রিটিকাল সমস্যা ফেস করছে কিন্তু এমন দিশেহারা হয় নি
কিন্তু আজ কেমন জানি ফিলিংস হচ্ছে। আরও একা, মা বাবাকে
ছেড়ে আসার কষ্ট তো আছেই। মনে হল যেন দুনিয়া হঠাৎ
পালটে গেছে, সব থমকে গেছে। গত কয়েক দিনের কর্ম
ব্যস্ততা পুরো শরীরে ভর করছে, একটু শুতে পারলে বাচেঁ
কিন্তু ওই লোক এসে দেখে ও ঘুম তাহলে কেমন লাগবে
এই ভাবতে ছিল ওমনি সে ওয়াশরুম হতে ফিরে এল। ওর মুখে
ঘোমটা দেয়া তাই লোকটাকে পুরোপুরি দেখাও যাচ্ছিল না।
পরে কিছু একটা আলমারি থেকে খুলে নিয়ে বারান্দায় গেল।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর একসময় এসে বসল
বিছানায়, একটু কেশে নিয়ে মাতালে স্বরে বলল অনেক রাত হল
তুমি সোফায় গিয়ে শোও অথবা কোন সমস্যা না থাকলে বিছানায়
ও শুতে পার। . সাবিহা কথাটা শুনে যত না অবাক তার থেকে বেশি হল
তার গায়ের গন্ধ পেয়ে। মদের গন্ন্ধ!!!! সাবিহা বলল – আপনি
ড্রিংকস করেছেন???? অমনি মেহবুব রেগে গিয়ে বলল –
খবরদার বিয়ে করেছি বলে আমার উপর কখনই অধিকার প্রয়োগ
করবা না। সোফায় গিয়ে শুতে বলেছি গিয়ে শোও। . কথাটা শুনার
পর ওর মনে হল ওর দুনিয়াটা পুরো অন্ধকার হয়ে গেছে। ভয়ে
না লজ্জায় কাঁপতে কাঁপতে ও সোফায় কোন মতে গিয়ে
শোয়। শুধু ভাবছে -এ কি হল???? আল্লাহ কেন ওর সাথে এমন
করল ও তো কাউকে ঠকায় নি তাহলে!!!! সে দিনের রাত ওর
কেমন কাটল তা ওই আর ঐ সোফার বালিশটাই জানল।ওর
জীবনের সব থেকে অভিশপ্ত রাত।
সাবিহা একসময় হাত দিয়ে দেখল ওর চোখের পানিতে সোফার
কুশন ভিজে গেছে, ওপাশ ভয়ে ভয়ে ফিরে দেখল মেহবুব
খাটে উলটো হয়ে ঘুমিয়ে আছে পুরো বিছানা জুড়ে।
লোকটার উপর ওর রাগ ক্রমশ বাড়ছে তারথেকে রাগ হচ্ছে ওর
স্যারের উপর। সে জেনেশুনে কিভাবে ওকে ওর হাতে
তুলে দিল। এখন ওর কি হবে, মা বাবাকে কি বলবে? তাদের কত
স্বপ্ন ওকে নিয়ে, ওর নিজের কত স্বপ্ন ওর ছোট একটা সংসার
হবে, বাচ্চাকাচ্চা হবে, সারাদিন কাজ সেরে রাতে স্বামীর বুকে
মাথা এলিয়ে ঘুমাবে, হসপিটালের গল্প বলবে, কোন রূগী কি
বলছে তা বলবে, তার উপর ডাক্তারি করবে আরও কত কি,ওর সব
ভালবাসা, ওর দেহ মন সব রেখে ছিল ওর স্বামীর জন্য কিন্তু
আজ একটা রাতের মধ্যে কি থেকে কি হল!!!!
এসব ভাবতে
ভাবতে ও কখন ঘুমিয়ে পরছিল নিজেই জানে না। . সকালে ঘুম
ভাঙল একটা গম্ভীর আওয়াজে, চোখ খুলে দেখল মেহবুব
তাকিয়ে আছে আর ওকে ডাকছে। ও ধরফর করে উঠে
বসতেই আহ্ করে উঠল, সোফায় ঘুমানোর জন্য পুরো
শরীর ব্যাথা হয়ে আছে। মেহবুব দেখেও না দেখার ভান
করে আরেকদিকে ফিরে বলল -নাস্তার টেবিলে যাও, সবাই
অপেক্ষা করছে। এই হুকুম শুনে রাগে ওর পুরো শরীরে
আগুন লেগে গেল কিছু বলতে যাবে তখনি ওর জা এল। . -সাবিহা
এখনও উঠো নি?? একি তুমি সোফায়? তখন ভাবি আর কিছু বলল না
মনে হয় কিছু একটা আঁচ করেছে, বলল -ফ্রেশ হয়ে খেতে
আস, তারপর তোমার হাতে আজ রান্না করাব দেখব আমার
ডা.দেবরানী কি কি রান্না করে খাওয়ায়। . ওদিকে মেহবুবের মন
খুবই খারাপ। কি হতে কি হচ্ছে আসলে ও তো এমনটা চায় নি।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতেছিল। চাচার আবদারেই এই মেয়েটাকে
বিয়ে করেছে নইলে ও কখনই চায় নি রিতার পর ওর লাইফে
কেউ আসুক, ও ওর ভালবাসা নিয়েই একা একা থাকতে চেয়েছিল
থাকনা রিতা আজ অন্য জায়গায় সুখি, একটা অভিমান নিয়েই ও বাচঁতে
চাইছিল। দীর্ঘ ৪/৫টা বছর ও এমন ভাবে আছে। ও তো লাইফটা
কবেই শেষ করত যদি না ওর মা বাবা বেঁচে না থাকত। দিনের পর
দিন ও ভিতরে আর বাহিরে কঠিন থেকে কঠিন হইছে এখন আর
কোন মেয়ে জাতিয় অনূভুতি ওকে স্পর্শ করে না হয়ত এটা
সহজে পারছে ওর প্রফেশন এর জন্যই, যেখানে সব কিছু
সিরিয়াস। আর ও চাইতই রিতাকে ভুলতে দিন রাত ব্যস্ত থাকতে আর
যে জবে আছে এতে চাইলেই যে কেউ দিন রাত কাজের
মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারে তো তেমন কষ্ট হত না কিন্তু রাতটা
ছিল অসহ্য ওর জন্য। অনেক বিয়েই ও ইচ্ছে করে ভাঙছে
কিন্তু এটা আর পারে নি চাচার জন্য আর মাও দিন দিন দূর্বল হয়ে
যাচ্ছে শুধুমাএ পরিবার এর দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছে। তারপরও
আশা ছিল মেয়েটার পরিবার রাজি হবে না কারন ওর বয়স টা ৩৫পার
হয়ে গিয়েছে, পরিবার চাইলেও এ যুগের মেয়েরা এত বয়সী
স্বামী চায় না আরও সে একজন ডা., শিক্ষিত রিজেক্ট করাটা
স্বাভাবিক ছিল কিন্তু না মেয়ে রাজি হয়েছে। আর ও জানে এর
পিছনে ওর চাচারই হাত আছে। পরে ও চাইছিল মেয়েটার সাথে
কথা বলতে কিন্তু ওর চাচা দেয় নি কারন চাচা জানত ও কথা বলতেই
চায় বিয়ে ভাঙার জন্য। রাগ গিয়ে পড়ল সব মেয়েটার উপর। যখন ও
কাবিন নামায় সই করছিল তখন মনে মনে বলছিল -মেয়ে রাজি তো
হয়েছ সবার কথা মত, এবার এই মেজরের পুড়ে যাওয়া লাইফে
ঝলসানোর জন্য রেডি হও, ওয়েলকাম টু দ্যা হেল।
সাবিহা বাথরুমে গিয়ে অনেক কাঁদল,
আয়নায় তাকিয়ে
দেখল চোখ নাক মুখ ফুলে গেছে, চোখের
নিচে কালি জমেছে।খুব খুধাও লাগছে। ফ্রেশ
হয়ে
বের হয়ে দেখল মেহবুব বিছানায় বসা, ওর
দিকে
তাকালোও না। ও আয়নার সামনে গিয়ে মাথা
আচঁড়াতে
ছিল তখনি লোকটার ফোন আসল, রুম দিয়ে বের
হয়ে গেল যাওয়ার আগে দরজাটা জোরে শব্দ
করে আটকিয়ে গেল যেন খুবই বিরক্ত। ডাইনিং
রুমে
যাবার পর সবাই ঘিরে ধরল, কত খাবার কিছুই
খেতে
ইচ্ছে করছিল না আড় চোখে তাকিয়ে দেখল
মেহবুব কার সাথে যেন সোফায় বসে কথা
বলছে
হঠাৎ চোখাচোখি হল। এমন অবস্থা হল যেন
খাবার
গলায় আটকে যাবে। ওর শাশুড়ি বলল- মা
আস্তে খাও।
আহারে একদিনেই কেমন চেহারা হলে গেল।
মহিলার দিকে তাকাল সাবিহা, এত ভাল
একজন মহিলার
ছেলে এতটা বেয়াদব কিভাবে হয়??? . সারা
দিন কয়
একবার ফোনটা হাতে নিয়েও আব্বু আম্মুকে
ফোন দেয় নি, দুপুরবেলা কথা হবার সময় বলল ও
ভাল
আছে তারা যেন টেনশন না করে এছাড়া আর
কি বা
বলবে!!!? যদি শুনে তাদের নুতন জামাই বিয়ের
রাতেই
মদ খেয়ে ওর সাথে এমন ব্যবহার করেছে তারা
মরে যাবে ওর টেনশন এ। কিভাবে ও বাচঁবে
তখন??জীবনটা তো শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে
গেল। এবাড়ির প্রতিটা মানুষ খুব ভাল বিশেষ
করে ওর
শাশুড়ি, সব কিছু একটা দিনের মধ্যেই খুবই আপন
ভাবে
সবার সম্পর্কে বলল,সবার সাথে পরিচয় করিয়ে
দিল।
তবে মানুষটা খুবই অসুস্থ কিন্তু তার কথা শুনবে
কি সাবিহার
জীবনটা যে একটা অসুস্থ মানুষ শেষ করে দিল
তার
কি হবে!!!?ওর খুবই খারাপ লাগছিল যে ও
মহিলার সাথে
ঠিকমত কথাও বলছে না দেখে। . দুপুরবেলা
খাবারের
পরে ও রুমে গেল দেখল লোকটা নেই তো
ও পুরো রুম ঘুরে ফিরে দেখল। কিছু ছবি
দেয়ালে টানানো। মেহবুবের ক্যাডেট
কলেজের,কেমন যেন পার্সোনালিটি সম্পন্ন
চেহারা লোকটার।আলমারি খুলল এরই মেধ্য
মেহবুব
রুমে আসল, বলল-আমার পার্সোনাল জিনিসে
তুমি হাত
দাও কেন? এগুলা মোটেই লাইক করি না আমি
আর তুমি
কে?? শুধু কাগজ কলমের বিয়ে আমাদের
এছাড়া আর
কিছুই না। সাবিহা এই প্রথম কথা বলল -আপনি
আমার সাথে
এভাবে বাজে বিহেব কেন করছেন? আমি আগে
জানলে কোনদিন এই বিয়েতে রাজি হতাম না।
আপনি
কি আমাকে বলবেন কি সমস্যা? মেহবুব কিছু
একটা
বলতে যাবে ওমনি ওর বোন এসে চিৎকার করে
বলল-ভাইয়া মায়ের কি যেন হইছে। তুই
তাড়াতারি আয়।
মেহবুব ওর দিকে একটা রাগী দৃস্টি দিয়ে রুম
থেকে বেরিয়ে গেল, সাবিহাও পিছন পিছন
গেল।
গিয়ে দেখে ওর মা বিছানায় শোয়া। সবাই
জানে যে
ও ডা. তাই ওকেই দেখতে বলল। ও প্রথম
দেখাতেই বুঝল যে এটা হার্ট অ্যাটাক। বলল
তাড়াতারি
হসপিটালে নিতে।তখন ও, ওর শ্বশুর আর
মেহবুবরা দুই
ভাই ওর মাকে নিয়ে হসপিটালে নিল।
হসপিটালে নেবার
পর,ওর শাশুড়ি কে ভর্তি করা হল প্রায় রাত ২
পর তাকে
শংকামুক্ত বলা হল। ওর শ্বশুর ওকে বার বার
ধন্যবাদ
দিচ্ছিল আজ ও না থাকলে কি না কি হত কে
জানে কিন্তু
ও এক বার যার ধন্যবাদ পেতে চাচ্ছিল সে
ওকে
দেখে বরং উলটো দিকে ফিরে তাকিয়ে
ছিল।
প্রতিবার ও মেহবুবের দিকে তাকায় আর ওর
কষ্টে
বুকটা চৌচির হয়ে যাচ্ছিল। কি করবে, কি
বলবে কাকেই
বা বলবে!!! একটা দিনের মধ্যে এত করুন অবস্থা
ও
নিতেই পারছিল না। তারপরও ও ওর শাশুড়ির
সেবায়
কোন এুটি করে নি। ওর কলিগরা এসে দেখা
করে
গেছে ওদের সাথে তারা মেহবুবের সাথে কথা
বলতে চাচ্ছিল। -কি রে তোমার মেজরের
সাথে
আলাপ করিয়ে দাও। কিন্তু ওই নিষেধ করল,
বলল- ওনার
মা আসুস্থ ত এখন পরিচয় করানো থাক পরে
দিবো।
আসলে ও চাচ্ছিল না এখনি সব সমস্যা সবাই
জানুক।
আগে ওর শাশুড়ি সুস্থ হোক। তার ছেলের কোন
ভাল মন্দ বোধ না থাকতে পারে কিন্তু ওর তো
আছে। একজন ডা. হিসেবে হোক বা মানুষ
হিসেবে। টানা এক সপ্তাহ পর ওর শাশুড়ি কে
বাসায় আনা
হয়। সাবিহা এই সময়টা ওনার পাশেই ছিল
সারাদিন ডিউটি করত
আর ফাকে ফাকে ওনার কাছে এসে বসত,
অনেক
গল্প করত মাঝে মধ্যে ওর ননদ আর জা আসত।
বাসায়
যেত যখন মেহবুব থাকত না রাতে আবার ফিরে
আসত। মেহবুব আসত প্রতিদিন আফিসের পর
রাতে,যতক্ষন থাকত মায়ের হাত ধরে বসে
থাকত। ওর
দিকে তাকাতোও না। তখন ও রুমের বাইরে চলে
যেত। ওর শাশুড়ি ডাকত বলত ওর ডিউটি আছে।
বিয়ের
পর থেকে ওর উপর দিয়ে যে ধকল যাচ্ছে
তাতে
যে অ সুস্থ আছে তার প্রধান কারন এই মহিলার
ভালবাসা
ও যতক্ষণ না খেত সেও খেত না। এই পরিবারের
সবাই ওর প্রতি কেয়ারি শুধু মেহবুব ছাড়া।
আর মেহবুবের বিয়ের প্রায়১মাস চলছে। ওর
শাশুড়ির
অসুস্থতার খবরে ওর বাবার বাড়ি হতে লোকজন
আসল তাকে দেখতে। ও ওর মা বাবাকে দেখে
কেঁদেছে খুব, তারা বার বার ওকে বুঝিয়েছে
যে
বিয়ের পরে এমন একটু কষ্ট হয় প্রথম প্রথম।
ওকে সবার সাথে মানিয়ে নিতে বলল তারা। ও
কিভাবে
বুঝাবে আসলে সমস্যাটা কোথায়!! আসলে ও
এখনই এই পরিস্থিতিতে কাউকে কিছুই বলতে
চায় না। ও
শুধু একটা কথাই জানে যে ও ওর মা বাবার
অনেক
আদরের ছোট মেয়ে। ওর কোন খারাপ অবস্থা
তারা সহ্য করতে পারবে না। তারা মরে যাবে
ওর
টেনশনে আর ওর বড় বোন পাগল হয়ে.
রুমে গিয়ে ফোন দিল মেহবুবকে ওপাশ হতে
কিছুক্ষণ পর ফোন ধরল ও। -হ্যালো, আপনি কি
মেহবুব বলছেন? -জি, কে আপনি? -আমি
সাবিহা।
আপনার সাথে কথা বলার ছিল। বাবা
আপনাকে ফোন
দিতে বলেছে। -তুমি আমার নাম্বার কিভাবে
পেলে?
আর তোমার সাহস কিভাবে হয় আমাকে ফোন
দেয়ার? কথাটা শুনার সাথে সাথে ওর চোখে
পানি
চলে আসল। কিছু বলতে যাবে ওমনি দেখে ওর
শাশুড়ি দরজায় দাঁড়িয়ে, ও সাথে সাথে ফোন
কেটে
দিল।ওর চোখে পানি দেখেই সে বুঝে
নিয়েছে। বলল- মা শোন মেহবুব আসলে ওকে
বলবি আমার রুমে আসতে। আর ও বকা দিলে তুই
কাঁদবি
কেন? আসলে ব্যস্ত থাকে তো তাই রাগ করছে।
বাসায় ফিরলে তুই উলটো ওকে বকা দিয়ে
দিবি। ওর
শাশুড়ি যাবার কিছুক্ষণ পর ওর জা আসল বুঝল
ওর মন ঠিক
করতে সেই পাঠিয়েছে। -এই সাবিহা আসো
তোমার প্যাকিং করে দেই। আরে উঠ তো। মুখ
কাল করে বসে থেক না। ও দৌড়ে গিয়ে দরজা
বন্ধ
করে দিয়ে ভাবিকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদল।
আসলে ও এ একটা মাস যতটা কষ্ট পেয়েছে তা
মুখ
ফুটে কাউকে বলতে পারেনি আজ একটা
সান্ত্বনার
কাধ পেয়ে সব দুঃখ গুলো চেপে ধরেছে। সব
এখন পর্যন্ত যা যা হয়েছে সব বলল। ভাবি বলল-
দেখ
সাবিহা এটা ঠিক তোমার বয়স কম আর
মেহবুবের উচিৎ
ছিল তোমাকে সময় দিয়ে সব সমস্যাগুলো বলে
ফেলা। ও যদি সংসার নাই করতে চায় তাহলে
শুধু শুধু
তোমার জীবনটা কেন নষ্ট করল, তার মা আর
বাবাকে দেখানোর জন্য??? -ভাবি আমি কিছুই
বুঝতে
পারছি না। আজ এতটা খারাপ বিহেভ করল
ফোনে। আমি
কোনদিনও এতটা অপমানিত হই নি কারও
কাছে।তুমিই বল
আমি কি করব? -তুমি ধৈর্য হারা হয়ো না,
শান্ত হও।আমি
এব্যাপারে তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলব। –
উনি যদি রাগ
করে? -রাগ করলে করবে, তুমি একটা
এস্টাবলিসড
মেয়ে তুমি কেন ওকে ভয় পাবা?? ওর কোন
অধিকার নেই তোমার লাইফ নষ্ট করার। -আচ্ছা
ভাবি তুমি
যা ভাল মনে করার কর। কিন্তু আমি ঐ লোকের
সাথে কোথাও যাব না। -সাবিহা, পাগলের মত
কথা বল না।
যেহেতু একটা সময় পেয়েছ একটু কাছাকাছি
থেকে নিজেদের জানার সুযোগটা হাত ছাড়া
কর না।
আমি তো তোমাকে বলেছিই, আমার দেবর
ওতটাও
খারাপ না যতটা তুমি ভাবছ, তুমি নিজেই
একদিন আমাকে
বলবা দেখ। এই বলে ভাবি চলে গেল।সাবিহা
বিছানায়
বসে মনে মনে বলল-এটা তোমার ভুল ধারনা
ভাবি
তোমরা তো এই লোকের বাইরেরটা দেখ আর
আমি তো বন্ধ রুমে খারাপ আচারন গুলো দেখি।
সে কোনদিন বদলাবে না। নিজের মনেই একটা
দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসল। . ওদিকে মেহবুব
অফিসে রাগে অস্থির। এই মেয়ের এত সাহস,
ওকে
ফোন দিয়ে বলে যে বাবা ফোন দিতে বলছে।
ওকে ওর ওয়াইফের কোন মর্যাদাই দেয় নি
কেন
শুধু শুধু ওর বাড়িতে ও পরে আছে???ও তো
ভাবছিল
শিক্ষিত মেয়ে, নিজের সস্মান আছে। বিয়ের
ররাতে খারাপ বিহেবে পরদিনই চলে যাবে
কিন্তু না
সে যায় নি পরে ভাবছিল ওর মা অসুস্থতার
জন্য হয়ত
যায় নি, সে সুস্থ হলে চলে যাবে। নাহ আজ
একটা
মাস হল এখনও যাচ্ছে না। সাবিহা যখন
দিনরাত পরিশ্রম
করে ওর মাকে সুস্থ করে তুলল তখন ওর খুব ভাল
লাগছিল, আসলে ও তো এমন বউই চাইছিল যে
ওর মা
বাবাকে নিজের করে আগলে রাখবে। ওকে
একটা
ধন্যবাদ দিতে চাইছিল কিন্তু পরে ও হয়ত নরম
হয়ে
যাবে ওর প্রতি এই ভেবে আর দেয় নি আর ও
তো চায়ই ওকে তাড়াতে। ও শুধু মাএ বিয়ে
করেছে ওর মা বাবার জন্য। মেহবুবের মনের
ধারনা
সব মেয়েরা রিতার মত। সবার মনের মধ্যে
থাকে
কিভাবে পুরুষকে ফাঁদে ফেলানো যায়। যখন
আর
ভাল লাগবে না তখন ছেড়ে ছুড়ে অন্য দিকে
ঝুকবে।তাই তো আজ ওকে ও বাবার কথা বলে
ফোন দিছে, ওকে ওর প্রতি আকৃস্ট করার
ফন্দি।
কিন্তু ওর মনে কোন মেয়ের জন্য জায়গা নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে ও গাড়ি থেকে নামল,
বাসায়
ঢুকে সোজা ওর রুমে গিয়ে দেখল সাবিহা ওর
ব্যাগ
গুছাচ্ছে । দরজাটা আটকিয়ে ওর হাত ধরে
টেনে
বলল -তোমার এতবড় সাহস তুমি আমার মুখের
উপর
ফোন কেটে দিয়েছ। -তাহলে কি করব? আপনি
আমার সাথে কেন বাজে বিহেব করেছেন? –
বাজে বিহেব তো তুমি আরও দেখবা। খবরদার
আমাকে ক ন্টোল করার চেষ্টা ছেড়ে দাও। এই
বলতে বলতে মেহবুব ওর হাত জোরে চেপে
ধরল ও ব্যাথায় আহ্ করে উঠল আর চোখ দিয়ে
পানি
গড়িয়ে পড়ল।সাথে সাথে ও ওর হাত ছেড়ে
দিল।
তখন মেহবুব ওর দিকে ব্যাথাতুর দৃস্টিতে কয়েক
সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল। পরে সরি বলে
ওয়াশরুমে চলে গেল। হঠাৎ এই পরিবর্তন ওর
সাবিহার
মনে ধাক্কা দিল। . ওয়াশরুমে গিয়ে বেসিনের
আয়নায় মেহবুব নিজেকে দেখে ভাবল ওকি
সত্যি
এমন???!!! দিন দিন ও কঠিন হয়ে যাচ্ছে, দোষ
তো
সব রিতার যে ওকে ঠিক মত থাকতে দিচ্ছে না,
এই
মেয়েটার তো কোন দোষ নেই। আজ সাবিহার
কান্না সত্যি ওকে নাড়া দিয়ে গেছে। বাথরুম
হতে
বের হয়ে দেখে বাবা আর বড় ভাইয়া বসে
আছে।
-কি ব্যাপার হঠাৎ তোমরা? -তোর সাথে জরুরী
কথা
ছিল। বাবা বলল-তুই যে এখনও তোর মাথা হতে
ওই
মেয়ের চিন্তা নামাতে পারিস নি তা তো
জানতাম না। -কি
বলছ তোমরা? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
ভাইয়া
রেগে গিয়ে বলল-তুই নাকি প্রতিনিয়ত
সাবিহার সাথে
খারাপ ব্যবহার করিস?? -সাবিহা বলছে? –
সাবিহা কেন
বলবে? মা আজকে ওকে কাঁদতে দেখছ,তোর
ভাবি বিয়ের পরদিনই সকালে ওকে সোফায়
ঘুমুতে
দেখছে। মেহবুব ভাবছে এ সবই সাবিহার
শিখানো
কথা। ও ই বলছে মা আর ভাইয়াকে তারাই
বাবা আর
ভাইয়াকে পাঠিয়েছে। ভাইয়া আরও বলল-দেখ
মেহবুব তুই প্লিজ পিছনের কথা ভুলে যা, বিয়ে
করেছিস সব ভুলে সাবিহাকে নিয়ে সামনে
আগা। আর
কত বুঝাব তোকে, বয়স ও তো হল। তোর বন্ধুরা
বিয়ে শাদী করে সবাই কত ভাল আছে দেখ।
বাবা?
বলল-যাই হোক, আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
আমি
তোদের ব্যাংককের টিকিট কাটতে
চাচ্ছিলাম কিন্তু
এখন যা দেখছি আমি চাই তুই কালই দিমকয়েক
এর জন্য
সিলেট গিয়ে সাবিহাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়। –
আমার ছুটি
নেই, পারব না। -আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
তোর জন্য আমি অপরের মেয়ের সাথে অন্যায়
করতে পারব না। তোর যেতে হবেই। এই বলে
বাবা আর ভাইয়া চলে গেল। মেহবুব রাগে
ফুসঁতে
ফুসঁতে পুরো বাসায় সাবিহাকে খুজঁল কিন্তু
পেল না ও
নাইট ডিউটিতে হসপিটালে গেছে। মনে মনে
বলল
কোথায় আর যাবা?? আমার নামে নালিশ!!!
দেখে
নেব।
পরের দিন সকালে সাবিহা যখন বাসায় ফিরে
তখন ও
জানে না যে মেহবুব বাসায়,না জেনেই রুমে
ঢুকে
যায়। ঢুকে তো পুরো অবাক ও এই সময় বাসায়!!!
এদিকে এত কিছু হয়েছে ও জানেই না। সারা
রাত ডিউটি
করে ক্লান্ত।রুমে ঢুকে দেখে মেহবুব
ল্যাপটপে কাজ করছে। ওর দিকে তাকিয়ে
বলল-
আমার রুমে কেউ নক না করে ঢুকে তা মোটেই
পছন্দ না। -সরি, আমি জানতাম না আপনি রুমে।
ও ব্যাগ
রেখে ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবে ওমনি মেহবুব ওর
হাতটা জোরে চেপে ধরে দেয়ালের উপর
ধাক্কা মেরে ফালালো।হঠাৎ এধরনের
ব্যবহারে ও
পুরো শকড তাছাড়া ও মাথায় প্রচণ্ড ব্যাথা
পেল।
মেহবুবের রাগী চেহারা দেখে ব্যাথার কথা
ভুলে
গেল। কিন্তু মেহবুবের ওদিকে হুস নেই, পাগলের
মত বলল, -আমি জীবনে মেয়ে দেখেছি
অনেক তোমার মত বেহায়া মেয়ে দেখিনি।
তুমি
আমার নামে নালিশ কর মায়ের কাছে? -কি
বলছেন
আপনি এসব??? -ওহ, এখন কিছু বুঝতে পারছ না,
না? যখন
তোমার মুখের উপর ডির্ভোস পেপার ছুড়ে
মারব
তখন বুঝবা। আমি এই মাএ আমার উকিলের
সাথে কথা
বলছি। খুব তাড়াতারি ডির্ভোস নোটিশ পেয়ে
যাবা। –
আপনার সাথ আমার ডির্ভোস না হলেও যে
আমি থাকব
না এটুকু আমি জানি। কিন্তু এই খারাপ
ব্যবহারের মানে কি??
-তোমাকে এতবড় সাহস কে দিসে? আমার মা,
ভাবি
এদের কাছে ছোট করার..। তারপর কিছুক্ষণ
থেমে বলল-তুমি চিনো আমাকে আমি কে? এক
নিমিষে আমি তোমাকে, তোমার ক্যারিয়ার,
ফিউচার সব
শেষ করে ফেলতে পারি। এবার আর সাবিহা
চুপ
করে থাকার কোন উপায়ই পেল না। ও চিৎকার
করে
বলল-ও তাই, আপনি কে?? বলুন তো? আপনি
আমার কি
হন?আপনাকে কে সাহস দিয়েছে আমার
ব্যাপারে
কথা বলার? আপনি কে শুনতে চান, আপনি
একটা খারাপ
মানুষ আমার কাছে আর কিছুই না। -আমি
খারাপ না??আর
তুমি? বিয়ের রাত থেকে আমি খারাপ বিহেব
করছি
চলে কেন যাচ্ছ না?জানো কোন মেয়েরা
এভাবে পুরুষের পিছনে পরে থাকে? -তাহলে
আপনি কেন আমাকে বিয়ে করে এনেছিলেন? –
মা
বাবার কথায়। -আপনি কি একটা অমানুষ??!!
আপনি আমার
জীবনটা নষ্ট করেছেন। -তোমাদের
মেয়েদের জীবন কখনই নষ্ট হয় না। তোমাদের
মত বেহায়া মেয়েদের জন্যই ছেলেদের
জীবন নষ্ট হয়।তুমি যদি ভাল হতা বা আত্ন
সস্মান থাকত
তাহলে বিয়ের পরদিনই চলে যেতা বা যেদিন
তোমার মা বাবা আসল সেদিন। এই কথা শুনার
পর সাবিহা
আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি।ও
কান্নায়
ভেঙে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে বলল-আমি কি
দোষ
করেছি যে আপনি আমাকে এই কথা গুলো
বললেন?আমি তো আপনার সংসার করার জন্যই
এসেছিলাম, আপনার বউ হয়ে থাকতে
চেয়েছিলাম
আর আপনি কিনা আমাকে খারাপ মেয়েদের
সাথে
তুলনা করলেন? ওর এই কথা মেহবুবের মনে
কোন আঁচই ফেলল না উলটো আর রেগে বলল
-ও তাই তুমি আমার বউ হতে চাও ওকে ফাইন
আসো,
বিছানায় আসো। বউ হও, আসো। এত ইচ্ছা
তোমার
যখন,আসো। এই বলে ওকে বিছানার উপর ছুড়ে
মারল মেহবুব। যেই ওর কাছে আসল সাবিহা
ওকে
ধাক্কা দিয়ে ফেলে হাপাতে হাপাতে উঠে
বলল-
চরম অসভ্য আপনি। আমি আর এক মূহুর্তও এখানে
থাকব না। এতদিন আপনার খারাপ চেহারাটা
দেখলাম আজ
আপনার পশুর মত চেহারাটা দেখতে পেলাম।
এই
বলে ও দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এল। দেখল
যে ড্রইং রুমে ওর জা আর ননদ গল্প করছে।
ভাবিকে বলল-ভাবি মাকে বলো আমি চলে
গেলাম।
এই বলে ও আর দাড়াঁল না কারন তাহলে তারা
নানা প্রশ্ন
করবে আর ঐ লোকটাও বের হয়ে এসে না
জানি
কি না কি বলে, যাই হোক ওর কোন আর ও
বাড়ির
প্রতি পরোয়া নেই। কে কি বলুক বা করুক কিছু
আসে যায় না। কাঠফাটা দুপুরবেলা কোথায়
যাবে???
ওর বোনের বাসায় যাবে না কারন ও চায় না
এখনি
ফ্যামিলিকে সব কিছু জানাতে, এমনিতেই ওর
শরীর,
মন ভাল না। তাদের হাজারটা প্রশ্নের সামনে
দাড়াঁনোর
সাহস বা মনের জোর নেই। নিজেকে একটু সময়
দিতে চায় ও।তাছাড়া রাত থেকে এক
নাগাড়ে ডিউটি,
সকালেও কিছুই খায় নি তারপর আবার এই
অবস্থা। ঠিককরল
ওর ছোটবেলার বান্ধবীর বাসায় যাবে যে ওর
বেস্ট ফ্রন্ড। ওকে সব মনের কথা খুলে বলে
ও। ও নিঃশ্চই এই কঠিন সময়ে ওকে বুঝবে।
সাবিহা দুপুরে ওর বান্ধবীর বাসায় গেল
চলবে