Thread Rating:
  • 10 Vote(s) - 3.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance একটি মেয়ে
#1
আজকে চঞ্চলের মনটা রঙিন হয়ে রয়েছে, কাল রাতের কথা মনে পড়তেই কেমন একটা অনুভব হচ্ছে। না সে সদ্য যুবক নয়, এখন বত্রিশ সে। বিয়ে এখনো করেনি, করার কথা এখনো ভাবেনি। সরকারি ডাকঘরে বছর তিনেক হলো চাকরি পেয়েছে ট্যাকনিকাল বিভাগে। আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। চাকরি পাওয়ার পরে থেকে মা বিয়ে বিয়ে করে পাগল করে দিয়েছিলেন আর সরকারি চাকরি পাওয়ার পরে সেটা মাত্রা ছাড়া হয়েছে, তাই সে এবার বদলী নিয়ে শিলিগুড়িতে এসেছে। সাথে ওর সাধের বাহনটিও এনেছে, আর বাহনটি সাথে থাকায় সে শিলিগুড়ির জনবহুল হইহট্টগোল থেকে দূরে শুকনার দিকে একটা বাড়িতে এসে উঠেছে এখানে বদলী হয়ে আসার সপ্তাহ খানেক পরে। খাবার দায়িত্ব বাড়ি নিতো না, তবে চঞ্চলের অনুরোধে সকালের ভাত আর রাত্রের খাবার, বাড়ির মালিক জানিয়েছিল রাতে তারা রুটি খায়,রাজি থাকলে খেতে পারে। মেদিনীপুর নিবাসী চঞ্চলের রুটিতে প্রবল আপত্তি থাকা সত্ত্বেও রাজি হয়েছিল, অবশ্য বলেছিলো "কাকাবাবু আপনার বাড়ির রান্না এক্কেবারে বাড়ির মতো, তাই রুটিতেই রাজি৷ অবশ্য আমি রুটি তেমন খাইনা, ভালোবাসিনা।"
 
 
 
বাড়ির কর্তা উত্তর দিয়েছিলো "জানি বাবা, আমার গিন্নীও মেদিনীপুরের, তবে এখন সেও রুটি খায় একবেলা। এই বয়সে ভাত ঠিক না।"
 
 
 
তারপর আর কথা হয়নি, প্রতিদিন সকাল আর রাতে খাবারের থালা পৌঁছে যেত তার ঘরে। বাড়িটা খুব সুন্দর, ঠিক বাংলো বাড়ির মতো কাঠের তৈরী। চারিদিকে বড় বড় গাছ। চঞ্চলের ঘরটা এই বাড়ির অতিথি ঘর ছিল তা বোঝা যায়, ঘর সংলগ্ন স্নানঘর আর ওর যাতায়াতের দরজাও ভিন্ন। তাই বাড়ির কারোর সাথে দেখা হয়না চঞ্চলের।এখানে এসে চঞ্চল সামান্য সময় পেলেই তাই দ্বিচক্র যান্ত্রিক যানটি নিয়ে বেড়িয়ে পড়তো।অনেক রাতে ফিরতো না, আর ফিরলেও এতো ক্লান্ত হয়ে পড়তো, খাবার খেয়ে বিছানায় মাথা রাখতেই ঘুমিয়ে পড়তো।
 
 
 
সাধারণত নয়টার মধ্যে সে বেড়িয়ে পড়তো। কারণ এখান থেকে অফিসে পৌঁছাতে এক ঘন্টা না হলেও মিনিট পয়তাল্লিশ লেগেই যায়।অনেকে বলেছিল অফিসের কাছাকাছি মেসে থাকতে, সে রাজি হয়নি। ভাড়াটা খুব বেশী না, তাই তেল খরচ গায়ে লাগতো না।আর ও স্বাধীনভাবে চলতে পারছে, দিনের বেলা গাড়ি রাখার অসুবিধা নেই, বাড়ির চারিদিকে অনেক ফাঁকা জায়গা আর রাতে তার বিশাল ঘরের একটা স্থানে সহজেই জায়গা করে নিতো তার বাহনটি।
 
 
 
প্রতিদিন অফিস যাওয়ার পথে বাড়ির কর্তাকে দেখতে পেতো বাজার নিয়ে ফিরছে।অবশ্য চঞ্চল বাড়ির কাজের মেয়েটির কাছে জেনে নিয়েছে এই বাজার কাল সকাল আর রাতের জন্য। খুব কমই আজকের বাজার আজকে রান্না হয়, অবশ্য রবিবারের বিষয়টি আলাদা। সেদিন অনেক কিছু রান্না হয় আর সকালের রান্নার তাড়া থাকে না। চঞ্চল মনে মনে ভাবলো তারজন্যই তাড়াহুড়ো করে রান্না করতে হয়, নইলে বাড়ির কর্তা তো বনদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।বাড়ির প্রতিটি জিনিসে রুচির পরিচয় সুস্পষ্ট। রবিবার ভোরে পাখি ডাকার আগেই তার বাহনের পিঠে চড়ে বেড়িয়ে পড়ে সে আর রাতে ফেরে। রাতের খাবারের বিশেষ মেনু লক্ষ্য করেছে সে, শনিবারের নিরামিষের পরে বেশ লাগে, এই বাড়িতে শনিবার নিরামিষ হয়, অবশ্য পদ অনেকগুলোই থাকে।রবিবার সাধারণত পোলাও -কষা মাংস, কিংবা পরোটা - কচি পাঠার দোপেজি, সাথে আরও কিছু থাকতো, কখনো সবজি দেওয়া মিষ্টি ফ্রাই রাইস আর ডিম কষা আর সাথে চাটনি সহ আরও কিছু। কখনো ভাত ডাল,দুই তিন ধরনের সবজি আর সাথে মাছের বিশেষ পদ। সে বুঝতে পেরেছিল দুপুরে তারজন্য সব খাবার তুলে রাখা থাকে।খেতে গিয়ে খুব মাকে মনে পড়তো। যে তারজন্য এমন পরিপাটি করে খাবার সাজিয়ে দেয় কিন্তু তাকে একবারও চোখের দেখা পর্যন্ত দেখতে পায়নি সে। অবশ্য সে থাকে আর কই আর ওর যা কুম্ভকর্ণের মতো ঘুম, সকালে যাতে ঠিক সময় ঘুম ভাঙ্গে সেজন্য তিনটে অ্যালার্ম ঘড়ি কিনেছে। কানের দুইপাশে রাখে আর একটা মাথার উপরে। প্রথমে ভেবেছিলো তার এই কাণ্ডতে বাড়ির মালিকরা অসন্তোষ প্রকাশ করবে কিন্তু তা হয়নি। তাই এখনো একইভাবে সে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সেদিন অনেক রাতে ফিরেছিল একজন কলিগের বিবাহবার্ষিকী খেয়ে,অবশ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছিল সে খাবে না আজ। পরিস্কার হয়ে শুতে শুতে রাত সাড়ে বারোটা বেজে গেল। সে ঠিক রাত একটার দিকে একটা স্পর্শ অনুভব করলো। সে বুঝতে পারলো নারী স্পর্শ, সে স্বভাবে ভীষ্ম না,তবে বছর দুই এসবের ধারে কাছেও নেই। যখন ব্যাঙ্গালোরে থাকতো, তখন ওই কোম্পানির একজন কলিগের সাথে অ্যাপার্টমেন্ট শেয়ারে থাকতে থাকতে সম্পর্কে জড়ায়। মেয়েটি প্রবাসী বাঙ্গালী মা দিল্লির আর বাবা বাঙ্গালী। অত্যাধিক আধুনিক। ওর সাথে লিভ ইন সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। মেয়েটি উচ্চাকাঙ্খী, না চঞ্চল এটাকে দোষের মনে করেনা, সে একটু ঘরকুনো, বিশেষত বাংলা ছেড়ে থাকতে থাকতে ওর দম আঁটকে আসছিল, ওখানকার খাবার ওর পোষাচ্ছিল না। ও ট্যাকনিকাল পোস্টের জন্য সরকারি পরীক্ষা দিতে থাকে, শেষে পোস্টাপিসে পায়, ততদিনে পিলু অর্থাৎ পৌষালি নতুন সম্পর্কে জড়াতে শুরু করেছে, সেই সাথে বিদেশের সুযোগটা চলে এলো ওর হাতে আর এদিকে চঞ্চলের চাকরিটা হয়ে যাওয়ায় এখানে চলে এলো চঞ্চল। অবশ্য চঞ্চল আসার সময় কানাঘুঁসোয় শুনেছিল বসের সাথে পৌষালীর সম্পর্কে জড়ানোটাই পৌষালীকে বিদেশের সুযোগটা এনে দিয়েছিল। অবশ্য খারাপ লাগেনি কেন জানি, কেমন একটা মুক্তি আস্বাদ পেয়েছিল। সে কর্পোরেট জগতের দেখনদারিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। আর পৌষালীর মুখে এক কথা শুনতে শুনতে " তোমার দ্বারা কিচ্ছু হবেনা, কোনো উচ্চাকাঙ্খা নেই। তুমি এ জগতে বেমানান। " চঞ্চল সারাদিন মুখ গুঁজে কাজ করলেও সপ্তাহ অন্তে ঘুরতে বেড়িয়ে যেতো যতই ওর কাজের ক্ষতি হোক। এই স্বভাবের জন্য পৌষালী প্রচণ্ড রাগ করত। কয়েকবার সাথে গেলেও, পরের দিকে আর যেতে চাইতো না, চঞ্চল একাই বেড়িয়ে পড়তো ওর বাহনটি নিয়ে। চাকরি পেয়েই ই.এম.আইতে এটা কিনেছিল ও।ওর জীবনের প্রথম ভালোবাসা ভ্রমণ।
 
 
 
চঞ্চল বুঝতে পারেনা কে এই নারী, তবে উত্তেজিত হতে থাকে,অনেক দিন পরে যখন কোনও বাঘ নরমাংসের স্বাদ পেয়ে পাগল হয়ে উঠে, চঞ্চলের অবস্থা ঠিক সেরকম। সে দিকবিদিকশুন্য হয়ে সাত পাঁচ না ভেবে আদিম খেলায় মেতে উঠে। পরের দিন সকালে অনেক দেরী করে ঘুম ভাঙ্গে।ঘড়িতে তখন সাড়ে নয়টা বেজে গিয়েছে, দেখে তার খাবার যে জানালা দিয়ে টেবিলে রেখে যায়, সেই স্থান গরম খাবার ঢাকা দেওয়া আছে।সে তাড়াতাড়ি করে স্নান সেরে, কোনো মতে খাবার মুখে গুঁজে বেড়িয়ে পড়ে, আজ তার বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে। অফিসে ঢুকতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এই প্রথম তার দেরি করে আসা। অবশ্য সে যাত্রায় খুব অসুবিধা হয়না। কারণ সেদিন অনেকেই নিমন্ত্রিত ছিল। তাই আজ অনেকেই দেরী করে এসেছে। সেদিন বেশ দেরি করেই ফিরলো, কলিগদের সাথে আড্ডা মেরে ঘরে ফিরতে রাত নয়টা বেজে গেলো। খুব ক্লান্তি লাগছিলো,রাতে ঘুম পূর্ণ হয়নি। বাইরে থেকে হালকা কিছু খেয়ে এসেছে। পরিস্কার হয়ে পোশাক বদলে শুয়ে পড়লো, পাশে চালিয়ে দিলো হালকা সুরে রবীন্দ্রসঙ্গীত। অনতিবিলম্বেই ওর চোখ জুড়ে ঘুম নামলো।
 
ঘুম ভাঙলো তখন কয়টা বেজেছে প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলো না, ঠিক ধরতে পারলো না এখন কত রাত, মনে করতে পারলো না সে কখন ঘুমিয়েছে।তবে তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে পাশে রাখা মোবাইলটা দেখতে গিয়ে দেখে সেটা সুইচ অফ হয়ে গিয়েছে।বিছানার পাশের টেবিলে রাখা নাইট ল্যাম্পটা অন্ধকারেই হাতরে হাতরে জ্বালালো। টেবিলে রাখা টেবিল ঘড়িতে সময় দেখে রাত পৌনে বারোটা বেজে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি করে চোখেমুখে জল দিয়ে দেখলো সকালের মতো খাবার ঢাকা রয়েছে। থালা উঠিয়ে দেখলো মুরগীর মাংস, রুটি, সুজি । ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো, তবুও খিদের পেটে গোগ্রাসে গিলে নিলো সে। খেয়ে উঠে থালা আর বাটিটা ধুয়ে রাখলো সে। মাজতে তাকে হয়না। তবে সে খেয়ে ধুয়ে রাখে। আজ সকালে প্রথম এর ব্যতিক্রম হয়েছে।তারপর দাঁত মেজে মোবাইলটা চার্জ দিতে বসিয়ে, বিছানায় এসে একটা ভ্রমণের বই খুলে টেবিল ল্যাম্পের সামনে বসলো, দিন দুই হলো কিনেছে।ঘুম তার আসবে না এখন তা সে জানে, যদি বই পড়তে পড়তে আসে। মনে মনে বলে ভাগ্যিস অফিস থেকে বেড়িয়ে বাড়িতে ফোন করে দিয়েছিলাম, নইলে মা চিন্তায় বাড়ি মাতিয়ে রাখতো। মা-বাবার কথা মনে পড়তেই ঠোঁটে হাসি ফুটে। এখন যেন তারাই শিশু হয়ে গিয়েছে। অদ্ভুত সব বায়না করে তারা। ভাগ্যিস বোন কাছে রয়েছে আর দিদিও বেশ যত্নে রাখে।দিদির বিয়ে হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মা-বাবার প্রতি সব কর্তব্য পালন করে। দিদির ওই ভিডিও অফিসের ছুটি হীন কাজ সামলে যে কি করে দুই পরিবারকে সামলায় কে জানে, তার এই দিদি সব সময়ই দায়িত্বশীল। দিদি একটু বড় হতেই অনেক দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিয়েছিল, তাই বুঝি চঞ্চল এমন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতে পারে। আজ বোন নার্সের চাকরি করে, প্রেমও চলছে পুরোদমে। তবুও বোন বাড়ির সবার কাছে ছোট হয়েই রয়ে গেল। এখনও সব আশা দিদির উপর। মাঝে মাঝে চঞ্চলের মনে হয়, এটা ঠিক না। কিন্তু পরক্ষণেই নিজের কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা বাড়ি বা বোনের বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে দিদির নামটাই আগে মনে পড়ে। দিদির মতানুসারেই আজও চলে ওদের বাড়িটা, বাড়ির সবার দিদির উপর অসীম ভরসা। অবশ্য আজ পর্যন্ত ওর দিদির কোনো সিন্ধান্তে ভুল হয়নি, বোনের নার্সিং এ চান্স থেকে শুরু করে, তার আগে বোনের কলা বিভাগে ভর্তির সিদ্ধান্ত দিদি নিয়েছিলো, বাবার ইচ্ছে ছিলো তার দুই সন্তানের মতো ছোট জনও বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে। কিন্তু দিদি সেটা না করিয়ে কলা বিভাগে ভর্তি করায়, কারণ দিদি ওকে পড়াতো দেখে জানত ভালো ফল হয়ে গিয়েছে মাধ্যমিকে তার অনেক রাত জাগার ফলে, কিন্তু এই মেয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়লে হাজার চেষ্টা করে পাশ করাতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। আজও মনে আছে চঞ্চলের, বাবা খালি বলছিলেন " লোক কি বলবে, লোক কি বলবে?" দিদি ঘর থেকে বেড়িয়ে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে " লোক তোমার মেয়ে পাশ করতে না পারলে আরও বলবে, সেটা সইবে তো তোমার? " আর কিছু বলতে পারেনি বাবা। সত্যি কলা বিভাগে বেশ ভালো নাম্বার নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিল বোন, আর কিছুদিনের মধ্যেই সুযোগ জুটে যায় সরকারি নার্সের, তিনবছর প্রশিক্ষণের পরে সরকারি হাসপাতালে চাকরি। মা কিছুতেই যেতে দেবে না বোনকে, এখানেও দিদির কথা শুনে রাজি হতে বাধ্য হয়। " মা কি মান্ধাতার আমলের চিন্তাভাবনা, নার্সের চাকরি কত সেবামূলক চাকরি, কত সম্মানের। কে কি বললো ওই নিয়ে বসে রয়েছ। এ যুগে সরকারি চাকরি পাওয়া এতো সোজা না। এই সুযোগ যদি ছেড়ে দেয় পড়ে যদি ওর কপালে আর চাকরি না জোটে, সারাজীবন আফসোস তো করবে আর তোমাকে দোষারোপ করবে, সেটা সহ্য হবে তো তোমার? "
 
এসব কথাগুলো হঠাৎ করে মনে পড়ছিলো চঞ্চলের, তার ব্যাঙ্গালোর যাওয়াও বাস্তবায়িত হয়েছিল দিদির দৌলতেই।
 
এসব ভাবতে ভাবতে কত সময় গিয়েছে সে বুঝতে পারেনি, আবার হঠাৎ একটা স্পর্শ অনুভব করলো, সেই আগের দিনের স্পর্শ, লক্ষ্য করে দেখলো ঘরের বাতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, মনে মনে ভাবলো লোডসেডিং হয়ে গিয়েছে হয়তো। তারপর আর কিছু ভাবতে পারলো না, যৌবনের উন্মুক্ত আদিম খেলায় মেতে উঠতে শুরু করলো সে। বাকি সব স্মৃতি থেকে বিস্মৃত হয়ে গেল, শুধু রইলো সেই আদিমতম খেলাটি...
[+] 3 users Like rahulror.2015's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
Ke ei meye jar sathe erm adim khelate mete uthchhe Chonchol??
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)