Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
05-11-2021, 04:49 PM
(This post was last modified: 05-11-2021, 04:53 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
নতুন বৌদি
( collected )
যে দিনটি দিয়ে আমার গল্পের সূচনা করছি, সেটি ছিল আমার মেজদার ফুলশয্যার রাতের পরের দিন | দুপুর বেলা বড় বৌদি আর বাড়ির সব ভাইবোনেরা মিলিয়ে মেজদার ঘরে রীতিমতো হামলা করছি | আড্ডা, হাসাহাসি, নব দম্পতিকে ঘিরে নানান রসাত্মক ইঙ্গিত – সব কিছুই সমানে চলছে | মেজদা মিটিমিটি হাসছে আর নতুন বৌদি লাজুক মুখে নতুন শাড়ি পড়ে সেজেগুজে খাটে বসে আছে |
নতুন বৌদির গায়ের রং শ্যামলা | গায়ের রং কালো বলে জেঠিমার বেশ দুঃখ, আমার মায়ের যদিও ভীষণ পছন্দ হয়েছিল ওকে | বাবা, জেঠু – ওদেরও খুব ভালো লেগেছিলো | আমি যখন নতুন বৌদিকে প্রথম দেখলাম, তখন প্রথম যে কথাটা মনে হয়েছিল সেটি হলো -“তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিন চোখ” | অদ্ভুত সুন্দরী, লাবন্যে ভরা চেহারাটি, তার চেয়েও সুন্দর ওর চোখের ভাষা | আমার তো একেবারে love at first sight | মেজদার কি হয়েছিল তা মেজদাই জানে |
আমাদের বাড়িতে দাদাদিদিদের ডাকগুলি জেঠুর পরিবার মিলিয়েই হয় | জেঠুর, বাবার – দু জনেরই দুই ছেলে এক মেয়ে – বড়দা, মেজদা আর দিদি জেঠুর ছেলেমেয়ে আর ছোড়দা, আমি, আমার বোন – এরা বাবার ছেলেমেয়ে | ভীষণ জমজমাট ব্যাপার হয় সবাই একত্র হলে | মেজদা দেশের সেরা কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির একটি থেকে এবং তারপর দেশের সেরা ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে পাশ করা ছাত্র ছিল | বিয়ের সময়তেই মেজদা সুপ্রতিষ্ঠিত, মুম্বাই (বম্বেই বলি, তখন শহরের নাম ছিল তাই )এর অদূরে থানে তে নিজে ফ্ল্যাট কিনে বসেছে | মেজদার বয়স তখন ২৯ বছর | নতুন বৌদি তখনো এম এ পরীক্ষা দেয়নি, ওর বয়স ২২ এর বেশি নিশ্চয় নয় | আমি সবেমাত্র ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, বয়স ১৮ ও হয়নি |
আমাদের সেদিনের আড্ডাতেই ফিরে আসি | অন্ত্যাক্ষরী খেলা চলছে নতুন বৌদিকে নিয়ে | গানের সুরেলা গলার আভাস পেয়েই আর আমি ছাড়লামনা | আগেই জানতাম যে কলকাতার বড় গানের কলেজ থেকে বৌদি গান শিখেছে | অনুরোধ করলেই কি নতুন বউ সঙ্গে সঙ্গে গান গাইবে নাকি ? আমি দিদির তানপুরাটা সোজা ওর হাতে এনে দিলাম |
-“এ কি ? এ বাবা !” নতুন বৌদি ভীষণ লজ্জা পেয়ে বললো |
-“মেজদার জন্য একটা গান করো তো”
-“না, প্লিজ – সবাই গান করুক”
-“রূপে তোমায় ভোলাবোনা, ভালোবাসায় ভোলাবো | যদি কালকে রাতেই শুনিয়ে না থেকে থাকো-”
শেষমেষ চাপে পড়ে গাইতেই হলো নতুন বৌদিকে | ওর অপূর্ব গায়কী শুনে বললাম “তুমি তো গান গেয়ে দ্বার খুলিয়েই দিয়েছ” | তারপর আরো কত গান গাইলো বৌদি | দিদিকে, তারপর বোনকেও ছাড়া হলনা |
ভয় পাচ্ছিলাম তীরটা কখন আমার দিকে ছোড়া হয় | আমার বোনটাই সব মাটি করলো | আমি আর সাহস করে নতুন বৌদির সামনে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইনি | বললাম “মেজদার হয়ে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় এর লেখা মান্না দে’র একটা গান করি”
“হৃদয়ের গান শিখে তো গায় গো সবাই
কজন আর হৃদয় দিয়ে গাইতে জানে?
নয়নে কাজল, সে তো সবাই পরে
কজন আর তোমার মতন চাইতে জানে?”
নতুন বৌদি লাজুক মুখে মাথা নিচু করে গানটা উপভোগ করেছিলো | বললো “ভীষণ, ভীষণ ভালো | আরো গান গাও ছোট ঠাকুরপো”
সেই দুপুরেই আমার সাথে নতুন বৌদির প্রথম পরিচয় | অল্প কয়দিন ওরা কলকাতায় ছিল বম্বে যাবার আগে | একদিন সব ভাইবোনরা মিলে রেস্টুরেন্ট গেছি, একদিন সিনেমা গেছি – এই টুকুই পেরেছি | নতুন বৌদি বলে গিয়েছিলো “বম্বে তে এস কিন্তু |”
আমাদের যাওয়া হয়নি | ওরা বছরে একবার করে এসেছে | একটু হই হুল্লোর হয়েছে, তবে সেও ভীষণ অল্প দিনের জন্য | সামান্য কটা দিনের মধ্যে বৌদিকে দুর্গাপুরেও যেতে হয়েছে নিজের বাবা মা’র কাছে |
নতুন বৌদির নামটাই বলিনি এখনো | ওর নাম মল্লিকা | ছোট করে বাড়ির নাম ‘মলি’ |
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
গল্পটা আগে পড়েছি , তবে কাহিনী পুরো মনে নাই , বেশ ভালো গল্প ।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(05-11-2021, 04:51 PM)cuck son Wrote: গল্পটা আগে পড়েছি , তবে কাহিনী পুরো মনে নাই , বেশ ভালো গল্প ।
অসম্ভব রোমান্টিক গল্প একটা , জানিনা এখানে পাঠকেরা কি ভাবে নেবে !!
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
(05-11-2021, 04:56 PM)ddey333 Wrote: অসম্ভব রোমান্টিক গল্প একটা , জানিনা এখানে পাঠকেরা কি ভাবে নেবে !!
দিয়ে দেন বাকিটা ,
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(05-11-2021, 05:01 PM)cuck son Wrote: দিয়ে দেন বাকিটা ,
নিশ্চয়ই দেবো ভাই,
নিজের সন্তুষ্টির জন্য...
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
গল্পটা আমার পুরোপুরি মনে নেই , তবে প্রথম অংশ দেখে মনে হচ্ছে পড়েছি আগে , পুরোটা না হলেও অনেকটা পড়েছি । আর পুরোটা না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি , কারন বেশি ভালবাসাবাসি চলে আসলে আমার কেমন জানি দম বন্ধ লাগে । এই কথাটাই একটু আগে একজন কে বলছিলাম ।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(05-11-2021, 05:35 PM)cuck son Wrote: গল্পটা আমার পুরোপুরি মনে নেই , তবে প্রথম অংশ দেখে মনে হচ্ছে পড়েছি আগে , পুরোটা না হলেও অনেকটা পড়েছি । আর পুরোটা না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি , কারন বেশি ভালবাসাবাসি চলে আসলে আমার কেমন জানি দম বন্ধ লাগে । এই কথাটাই একটু আগে একজন কে বলছিলাম ।
গল্পের নায়কের নতুন বৌদির সামনে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে লজ্জা লাগে , ওদিকে কাকসন ভাইয়ের প্রেমের গল্প পড়তে গেলে দম বন্ধ হয়ে যায় ... !!
কতবার ছেকা খাইসেন ভাই !!
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
দ্বিতীয় পর্ব
আরো চার বছর পর যখন পাশ করি, তার কিছুদিন আগেই ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে জীবনের প্রথম চাকরিটি পাই | পোস্টিং ব্যাঙ্গালোর, কিন্তু আরম্ভে চার মাসের ট্রেনিং, বম্বেতে | ট্রেনিং হোস্টেলে স্থানাভাব, সেটা আগেই জানিয়ে রেখেছিলো কোম্পানি, ওরা পি জি খুঁজে দেবার চেষ্টা করবে | মেজদা থাকায় আমার এ সবের প্রয়োজন নেই, সেটা জানিয়ে দিলাম | অফিস কান্জুরমার্গের কাছে, থানে থেকে যাতায়াত করতেই পারবো |
মেজদার বিয়ের পর চার বছর কেটে গেছে | ইতিমধ্যে আরো দু তিনবার চাকরি বদল করে মেজদা তখন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট ক্যাডারে চলে এসেছে | নতুন বৌদি এম এ পাশ করে ঘর গৃহস্থালি করছে | আমি কবে আসবো সেই অপেক্ষায় ওরা দিন গুনছিল | কয়েকদিন পর পর ফোন করে আসবার তারিখ কি ঠিক হলো জিজ্ঞাসা করতো | কোম্পানির থেকে ওদের তাড়া বেশি ছিল |
শেষ অবধি দিনটি চলেই এলো | তখন জুলাই মাস, বোম্বেতে ঘন বর্ষাকাল | বর্ষার মধ্যেই পৌছেছি | সাততলার ওপরে ফ্ল্যাট মেজদার | দুটি শোবার ঘর, লিভিং রুম আর রান্নাঘর | বম্বের পক্ষে যথেষ্টই বড় | আর বাড়ির সৌন্দর্য নির্ভর করে বাড়ি যে সাজাচ্ছে তার রুচির উপরে | এ ব্যাপারে নতুন বৌদির জুড়ি নেই | সোফার কভার, পর্দা, wall hanging – সব কিছুতেই ওর পছন্দে সংসার সেজে উঠেছে | অভাব একটি জিনিসের – এমন কেউ, যে দুরন্তপনা করে সাজানো বাড়ি লন্ডভন্ড করে দিতে পারে আর যার পিছনে বৌদিকে সারাদিন দৌড়দৌড়ি করে বেড়াতে হবে | সে অভাবটা যে বৌদির কাছে কত বড় দুঃখের স্থান ছিল তা কয়দিন পরেই বুঝেছি |
বাড়ির দ্বিতীয় ঘরটা ছিল গেস্টরুম | কলকাতা বা দুর্গাপুর থেকে বাড়ির কেউ এলে ওখানেই থাকতো | এখানে এসে ওটাই হয়ে গেলো “ছোট ঠাকুরপোর ঘর”| একটা খাট, একটা আলমারি, একটা টেবিল | আমার ঘরে একটা লেখার টেবিল থাকাটা নিতান্তই জরুরী | টেবিলের পাশের জানালাটা খুলে দিলে ঘরে অফুরন্ত হাওয়া |
কি আরামের জীবন ! সকালে নতুন বৌদি প্লেট ভরে ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে দেবে, তারপর অটোতে করে স্টেশন, ৮:০৩ এর লোকাল, ভিড় ঠেলে কান্জুর মার্গ স্টেশনে নামা, কয়েকটা বোরিং লেকচার, প্ল্যান্ট ভিজিট, আবার বিকেল চারটে বাইশ এর লোকাল ধরে ফিরে এসে নতুন বৌদির কাছে চা জলখাবার প্রাপ্তি | মেজদা ফিরত অনেক দেরি করে | ওর অফিস ছিল ওরলিতে, যাতায়াতে সময় লাগতই, এ ছাড়া নতুন চাকরি, দায়িত্ব বিরাট | মোটামুটি ডিনারের অল্প আগে মেজদা ঢুকে যেত | তার আগে নতুন বৌদির সাথেই গল্প হত আর সঙ্গে টি-ভি, ভি-সি-আর দেখা | তখন টি ভি চ্যানেল বলতে দূরদর্শন আর মেট্রো | প্রায়ই নতুন বৌদি আমায় ছাদে পাঠাতো এন্টেনা নড়ে গেছে কিনা দেখতে, কেবল এর যুগ তখনো শুরু হয়নি |
নতুন বৌদির সাথে সখ্যতা হচ্ছিলো বেশ ধীর গতিতে | আমি নতুন বৌদি বলেই ডাকি দেখে একদিন হেসে বলেছিলো, “এখনো নতুন বৌদি ? পুরনো হয়ে গেলাম তো |” আমিও রসিকতা করতে ছাড়লামনা | বললাম, “তুমি চিরনূতন” | এর পর থেকে মাঝে মাঝেই নতুন বৌদিকে ইয়ার্কি মেরে “চিরনূতন” বলে ডাকতাম |
সে বয়সে একটু আধটু লিখতাম | তখন কলমের জোরটা আজকের চেয়ে ভালো ছিল, বহুদিনের অনভ্যাসে বাংলা লেখায় মরচে ধরে গেছে এখন | খাওয়ার পর পড়ার টেবিলে বসে কিছু লিখলে নতুন বৌদি ঘরে এসে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করতো “প্রেমপত্র লেখা হচ্ছে বুঝি ?” বলতাম, “অতিরিক্ত কৌতুহল ভালো নয়” | বলতো, “এই একবারটি দ্যাখাও না কি লিখছো ? যে এত সুন্দর করে কথা বলে, সে নিশ্চই খুব ভালো লিখতেও পারে ?” ছুটির দিন, মানে শনি আর রবি, বৌদি বারবার চলে আসতো আমার ঘরে, একটু বিরক্ত করতে | আমি বলতাম, “তোমার একটাই কাজ, বুঝলে ? দেবরজী কে ঘন্টায় ঘন্টায় চা সরবরাহ করা | আর চা-র সাথে চানাচুর |” চা টা এলে চুমুকটা দিয়ে একবার বলেছিলাম, “চিরনূতন, দেখেছো কি মানুষের পছন্দের অনেক ভালো জিনিস এর আদ্যাক্ষরে চ ?” নতুন বৌদি বলেছিলো, “কি রকম?” বললাম, “এই যেমন চা, চানাচুর | দুপুরে আজকে চিংড়ি মাছ | আর চ দিয়ে অন্য জিনিসগুলি তো আর তুমি চাইলেও দেবেনা ?”
“যেমন?” আবার নতুন বৌদির প্রশ্ন |
“চুম্বন-”একটি শব্দেই উত্তরটা দিয়ে দিলাম |
বলবার পরপরই বৌদি আমার কানটা ধরে মুলে দিলো | বললাম, “চুম্বন অবধিই তো বলেছি | চ দিয়ে আরো চাওয়ার জিনিস এর নাম উল্লেখ না করতেই কানমলা ?” নতুন বৌদি চড় মারবে বলে প্রস্তুত হচ্ছিলো | “দ্যাখো চড় এও চ” |
মধুর চড় চাপড়ের লোভে সাহসটাও বেড়ে চলেছিলো | স্নান করতে ঢুকলে নতুন বৌদির অনেকক্ষণ লাগতো | সারাদিন বাড়িতে নিজের মনে গুনগুন করে গাইলেও ওই সময়টায় নতুন বৌদি বাথরুমে গলা খুলে গাইতো | আমি বাইরে থেকে শুনতাম | একদিন বলেছিলাম, “দেহের আবরণগুলি খুলে গেলে তোমার গানের গলাটাও খোলে | বাথরুমের বাইরে থেকেও সবটা বুঝতে পারি |” বলতে না বলতেই লজ্জায় মুখ লাল করে বৌদি আমার কানটা সজোরে মুলেছে | বললো “এবার কাকিমা (আমার মা) কে বলতে হচ্ছে যে এ ছেলের এক্ষুনি বিয়ে না দিলে বখে যাবে এবং বৌদির সাথে সময় কাটানো একেবারেই নিরাপদ নয় |”
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
তৃতীয় পর্ব
নতুন বৌদির সাথে দুষ্টুমিটা চলছিলই | চলছিলো বললে কম করে বলা হয়, দিনের থেকে দিন বেড়েই চলেছিলো | ওকে অনেক নামে ডাকতাম, যখন যেটা ইচ্ছা করে –“চিরনূতন” তো ছিলই, কখনো কখনো স্রেফ নাম ধরে “মল্লিকা” বা একেবারে “মলি”বলেও ডাকতাম | আর ও আমায় মাঝে মাঝে “ছোট ঠাকুরপো”, কখনো বা আমার নিজের নাম, কখনো বা ডাকনাম “বাবু”, কখনো বা “এই দুষ্টুটা” | ভীষণ মধুর একটা সম্পর্ক, যেটা দিনের থেকে দিন গভীর হচ্ছিলো |
প্রথম মাস প্রায় শেষ হতে চললো | প্রথম মাসের মাইনে পেয়েই কি কি করবো, তা মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম | যেদিন মাইনেটা পাবার কথা, সেদিন সকাল বেলা মেজদা আর বৌদির সাথে ব্রেকফাস্ট করতে করতে বললাম, “আজ আমরা খুব ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে রাত্তিরে খাবো | প্রথম মাইনে পাবো বলে কথা” মেজদা বললো, “ও, তাহলে তোর ঘাড়টা খুব ভালো করে ভাঙব আজকে | কোথায় খাওয়াবি বল ?” নতুন বৌদিকে বললাম, মা’র জন্য একটা শাড়ি আর কুঁড়ি (আমার বোন) –র জন্য সালোয়ার সুট কিনবো | ভালো দোকানপাট কোথায় তার খোঁজ করলাম | নতুন বৌদি বললো তাহলে দাদারে যাওয়া যাক | কেনাকাটা ওখানে হবে, খাওয়াটা ওখানেই প্রীতম হোটেলে সেরে নেওয়া যাবে | মেজদা সোজা অফিস থেকে প্রীতমে চলে আসবে |
ডি’সুজার হাত থেকে পে প্যাকেটটা নিয়ে এত ভালো লাগছিলো বলার নয় | যেন সাত রাজার ধন এক মাণিক হাতে পেয়ে গেছি | মাইনের অঙ্কটা আর নাই বা বললাম | সবাই লজ্জা পাবেন, তবে তখনকার দিনে আমার অল্পস্বল্প প্রয়োজন মেটানোর পক্ষে ভালই | ট্রেনিংটা মাসের দশ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে, তাই মাইনেটাও ছিল ভাঙ্গা মাসের | মোটামুটি যা কেনাকাটার পরিকল্পনা ছিল এবং প্রীতম হোটেলে খাওয়া – এতেই মাইনেটা মনে হয় শেষ করে দিতে পারবো | অল্পস্বল্প কিছু রেখে দেবো ট্রেনের মান্থলি, অটো ভাড়া আর হাত খরচার জন্য |
নতুন বৌদিকে সঙ্গে নিয়েই দোকানে ঢুকেছি | আগে কুঁড়ি’র টা কিনলাম , তারপর অন্যদের | সবটাই নতুন বৌদিকে পছন্দ করে দিতে হলো | মা’র টা পছন্দ মতন কেনা হয়ে যাবার পরই আমার অন্তরের একটা প্রবল ইচ্ছা নতুন বৌদিকে না বলে পারলামনা | খুব আস্তে আস্তে, দোকানদারকে শুনতে না দিয়ে ওকে বললাম,
“ও নতুন বৌদি, লিপি’র জন্য একটা শাড়ি পছন্দ করে দেবে ?”
নতুন বৌদি একেবারে আকাশ থেকে পড়ল –“লিপি ? সে আবার কে?”
খুব লাজুক মুখে বললাম, “someone so special to me”
“আচ্ছা, so sweet, so interesting!” নতুন বৌদি তো আহ্লাদে আটখানা |
“মেজদাকে বলোনা, প্লিজ | শুধু তোমাকে বললাম |”
“আচ্ছা রে বাবা আচ্ছা | কিন্তু, তোমার স্পেশাল এর কি পছন্দ, সেটা আমি কেমন করে বুঝি ?”
“যেটা তুমি পছন্দ করে দেবে, আমি কিনে ওর হাতে দেবো | আমি জানি, আমি যা দেবো, ওর ভীষণ পছন্দ হবে |”
“কিরকম দ্যাখাতে বলবো বলো? range ?”
“ভালই | পিওর সিল্কে দ্যাখাতে বলো”
নতুন বৌদি জিজ্ঞাসা করে নিলো,
“কি রং নেবো ? আচ্ছা, লিপি’র গায়ের রং কিরকম?”
“কালো” আমি বললাম |
“কালো?” ওর প্রশ্নটার উত্তর তৈরী ছিল |
“তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিন চোখ”
“বাহ, বাহ, প্রেয়সীর কথায় রবি ঠাকুরের কাব্য মনে হচ্ছে ? কিন্তু, বাছাধন, তুমিও কিনা সেই ঘুরে ফিরে মেজদার মতন কালো মেয়ের পাল্লায় পড়লে ? মেজদা কে না হয় খুঁজে পেতে কালো মেয়ে এনে দেওয়া হয়েছে, আর তুমি কিনা স্বেচ্ছায় ?”
“মল্লিকার পাশাপাশি লিপিকা – বেমানান হবেনা বলো ?”
দোকানদার অধৈর্য হচ্ছে | আমার লিপিকা’র জন্য নতুন বৌদিকেই খুঁজে খুঁজে একটা খুব সুন্দর পিওর সিল্কের প্রিন্টেড শাড়ি পছন্দ করতে হলো |
“লিপি কে বেশ মানাবে বলো নতুন বৌদি ?”
নতুন বৌদি আমার হ্যাংলামো দেখে আর বাঁচেনা |
“আমি কি করে বলি তোমার লিপি’কে সব চেয়ে বেশি কোনটায় ভালো লাগবে ?”
“তুমি একটু গায়ে ফেলে দ্যাখাও”
দোকানদার সাগ্রহে নতুন বৌদি’র গায়ে শাড়িটা লাগিয়ে বললো, “ইয়ে দেখো শেঠ, কিতনা বরিয়া লাগেগী”
প্রথম মাসের মাইনে পেয়েই (তায় আবার ভাঙ্গা মাসের !) আমি বনে গেলাম শেঠ ? বেদম হাসি পেলো আর গর্বিত হয়ে লিপি’র জন্য কিনেই ফেললাম শাড়িটা|
শাড়ির দোকান থেকে রাস্তায় বেরিয়ে লজ্জা সরমের মাথা খেয়েই নতুন বৌদিকে বললাম, “একটা ম্যাচিং শায়া ব্লাউজ কিনিয়ে দেবে ?”
“আচ্ছা বিপদে ফেল্লে আমায় ? আমি না জানি ও কতটা লম্বা, না জানি ওর গায়ের মাপ-”
“ওই পাঁচ ফুট চার মতন উচ্চতা, আর গায়ের মাপটা, হু, বলা মুশকিল কারণ এখনো মেপে দেখিনি |”
নতুন বৌদি ফিক ফিক করে হাসছে | বললো, “থাক, গায়ের মাপ নিয়ে রিসার্চটা পরে করো | বাচ্চা মেয়ে তো, আমার চেয়ে কম হবারই কথা”
“না না, বোধ হয় তোমারি মতন হবে |”
“থার্টি সিক্স কিনবো ? ঠিক তো ? তোমার কপালে অশেষ দুর্গতি আছে দেবরজী |”
আবারও সাবধান করে দিলাম, “বলবেনা কিন্তু কাউকে | লিপি’র কথা শুধু তোমাকে বললাম | খুব গোপন | দাঁড়াও, তোমায় ঘুষ দিয়ে রাখি একটু, যাতে গোপনীয়তা বজায় থাকে | পাশের দোকানে ঢুকেই নতুন বৌদির হাতে ধরিয়ে দিলাম একটা বড় বাক্সো চকলেট | মা’র জন্য শাড়ি কিনলাম, কিন্তু জেঠির জন্য কিনলামনা, মনটা খারাপ লাগছিলো | প্রথম মাসে কতটাই বা হয় ?
আমরা ঘুরছিলাম দাদর টি টি’র কাছে | কোনো এক যুগে বোম্বেতে ট্রাম চলতো, তখন জায়গাটা ছিল ট্রাম টার্মিনাস, সংক্ষেপে টি টি | নামটা এখনো রয়ে গেছে | জায়গাটা আমি আর নতুন বৌদি ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম | সময় কাটানোর জন্য একটু পানিপুরি খেলাম | প্রীতমে আসতেই মেজদার গাড়িটাও এলো | দারুন রেস্তরেন্ট, বুঝলাম গলাটা পুরো কেটে ফাঁক হয়ে যাবে, সে যাক | মেজদার সাথে ঢুকে, সাজানো টেবিলের সামনে বসে মেনু কার্ড নিয়ে মেজাজে অর্ডার করলাম | Fried prawn,রেশমী কাবাব, রুমালি রোটি, মাটন দো-পিয়ান্জা, বাটার চিকেন – কোনো কিছুই বোধ হয় বাদ দিইনি | আজ আমি কিনা শেঠ ! নতুন বৌদি বসেছিলো মেজদার পাশে, আমি উল্টো দিকে | গায়ে সবুজ সিল্কের শাড়ি, গলায় মুক্তর মালা, কানে মুক্তর ঝোলা দুল, হাতে মুক্তর বালা | আমিই পরতে বলেছিলাম| মেজদা একবার নাকি এনে দিয়েছিলো হায়দ্রাবাদ থেকে, এতদিন তোলা ছিল বাক্সে | ভীষণ সুন্দর লাগছিলো নতুন বৌদিকে |আজ সব ভাইবোনেরা একসাথে থাকলে কতই না ভালো হত | সব চেয়ে বেশি missকরছিলাম কুঁড়িকে | ছোড়দা বসে আছে আমেরিকার ইঠাকায়, তখন ও কর্নেলে পি-এইচ-ডি করে | আর বড়দা, বড় বৌদি ইউরোপে, দিদি ইন্দোরে | সব কেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছি, যে যার মতন |
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
নতুন বৌদি মেজদাকে কেনাকাটার জিনিসগুলি না দেখিয়ে আর থাকতেই পারছেনা | মেজদা দেখতে দেখতে বলতে লাগলো, “ও, এটা কাকিমার, এটা কুঁড়ির ? কি সুন্দর |” আমি নতুন বৌদি’র দিকে তাকিয়ে ইশারা করছিলাম, যাতে পরের প্যাকেটটা না খুলে ফেলে | আস্তে আস্তে বললো, “ভয় নেই|” মেজদা শুনতে পেয়েছে | বললো, “কি বলছো বলত ?” নতুন বৌদি হেসে ম্যানেজ দিলো, “দেওর বৌদি’র কথায় আড়ি পাততে নেই|”
রাত প্রায় দশটা হয়ে গেলো প্রীতম থেকে বেরোতে | তারপর থানে অবধি ফেরা | বিলটা মেটানোর সময় মেজদা জিজ্ঞাসা করলো, “বাবু, তোর পকেটটা ফাঁক হয়ে গেলনা ?” বললাম, “হলেই বা ! বাকি মাস কেয়ার অফ মেজদা |” বললো, “ঠিক হ্যায় ভাইয়া | ভালো বলেছিস | মেজদা হ্যায় না |”
মেজদা অফিসের ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে দিয়েছিলো রাত হবে বলে | নিজেই ড্রাইভ করছিলো সায়ান, ধারাভী, ইস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়ে দিয়ে | নতুন বৌদি বসেছে মেজদা’র পাশে | আমি পিছনের সিট এ বসে পাচ্ছিলাম নতুন বৌদির পারফিউমের মিষ্টি গন্ধটা | ওকে দেখতে পাচ্ছিলাম জানালার পাশে সাইডের আয়নাটা দিয়ে | বাতাসে ওর চুলটা উড়ছিল, হাত দিয়ে ঠিক করে নিচ্ছিল বারবার | আয়নার কাঁচেনতুন বৌদি’র চেহারার উপরে লেখা ছিল “objects are closer than what they appear at the mirror”
ভীষণ ভালো লাগছিলো নতুন বৌদিকে মেজদার পাশে | মেজদা’র স্বপ্ন হলো সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে যাওয়া, আর নতুন বৌদি’র চাওয়া সামান্যই, একটু মেজদাকে কাছে পাওয়া | এই দুটির সমন্বয় হতে পারছিলনা | আজ আবার একটু বেশি সময় কাছে পেয়ে নতুন বৌদি’র ভালো লাগছে নিশ্চই |
আমারও খুব আনন্দ চলছে মনের ভিতরে | আজ শেঠ হয়ে গেছি না ? শ্রাবনের মেঘেঢাকা আকাশ | বৃষ্টি পড়ছিল ঠিক ইল্শেগুরির মতন |ভীষণ ভালো লাগছে, তাই আমি গুনগুন করে গাইছিলাম, “হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ুরের মতো নাচে রে”|
“গলা খুলে গাও না, ছোট ঠাকুরপো ?”
“তুমিও সঙ্গে গাও, মেজদাও গাইবে -”
চড়া স্কেলে ধরেছিলাম,
“শত বরণের ভাব-উচ্ছাস, কলাপের মতো করেছে বিকাশ,
আকুল পরান আকাশে চাহিয়া, উল্লাসে করে যাচে রে”
মেজদাকে ওয়াইপার চালিয়েই দিতে হলো | বম্বের বর্ষা, কখন যে ইল্শেগুরির থেকে উন্মত্ততা পাবে, তা ভগবানই জানেন | স্টিয়ারিংটা ধরে রেখেই ও আমাদের সাথে গলা মেলালো –
“ওগো নির্জনে বকুল শাখায়, দোলায় কে আজি দুলিছে, দোদুল দুলিছে”
গাড়ির দুলুনির সাথে দুলতে দুলতে গাইছিলাম – কি মনমাতানো সুর ওই গানটার | কি জোর বৃষ্টি এসে গেলো নিমেষের মধ্যে, ঠিক এটাই আমি চাইছিলাম ! মেজদা গাড়ির গতি কমিয়ে দিলো | জানালার কাঁচের ফাঁক দিয়ে নতুন বৌদি’র গায়ে ছাট লাগছে | ওর ভিজতে ভালো লাগছে | বৃষ্টির বেগের সাথে আমাদের গান আরো এগিয়ে গেছে,
“ঝরে ঘনধারা নবপল্লবে কাঁপিছে কানন ঝিল্লির রবে
তীর ছাপি নদী কলকল্লোলে এলো পল্লীর কাছে রে”
নতুন বৌদি মেজদাকে বলছিলো, “একবার গাড়ি চালিয়ে আমাদের পাহাড়ে নিয়ে যেওনা একটু- ভীষণ ইচ্ছা করে | কতদিন বেরই নি”|
বাড়ি ফিরতে রাত হলো | গল্প করে সময় নষ্ট করলামনা | রাতটুকু ওদের দুজনার জন্য ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করলো | আমি চাইলাম, আজ রাতে ওদের ভালোবাসা নিবিড় হোক, নতুন বৌদি’র ঘরে ফুল ফুটুক, ওর সব দুঃখ ভুলিয়ে | মেজদার ঘরের আলোটা নিভে গেছে | আমি চুপি চুপি আমার ঘরে আলোটা জ্বালিয়ে প্যাকেট থেকে লিপির শাড়িটা বার করে হাত বুলালাম | লিপি আমার, তাকে আমি বিনা বাধায় আদর করে যেতে পারি |
বর্ষণধারা তখনো অবিরাম চলেছে | মনে হচ্ছিলো লিপি তানপুরাটা হাতে নিয়ে শুধু আমায় শুনিয়ে চলেছে,
“আজি তোমায় আবার চাই শুনাবারে
যে কথা শুনায়েছি বারে বারে ”
আমার মনের নিভৃত গোপন কোনে সে গান শুনতে শুনতে লিপি’র গায়েই মাথা এলিয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে পরেছি |
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
চতুর্থ পর্ব
কি বিপদটাই না ঘটালাম| নতুন বৌদি’র হাতে আমার পিছনে লাগবার একটা মোক্ষম অস্ত্র তুলে দিলাম ? তা ছাড়া উপায়টাই বা কি ছিল ? নিজের পছন্দর উপরে আস্থা রেখে লিপি’র জন্য শাড়ি কিনবো, সেটা পারবনা | নতুন বৌদি’র সাহায্য ছাড়া সেটা হওয়া সম্ভব ছিলনা |
ও বারবার জানতে চাইতো লিপির ব্যাপারে | আমি একটু এড়িয়ে চলতাম প্রসঙ্গটা | জানতো আমার পেটের থেকে সহজে কথা বেরবেনা, তাই অনেক কায়দা কানুন করতো কথা বার করতে | এমনকি ব্ল্যাক মেলও করতো, “মেজদাকে বলে দেবো, যদি আমাকেও না বলো |” আবার চকলেট দেবো ইত্যাদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিরস্ত করতাম |
একটা ছুটির দিনে ঘুম থেকে উঠে বালিশের পাশে একটা ছোট্ট চিরকুট পেলাম | লেখা আছে, “মনে হয় লিপিকে প্রেমপত্র লিখে অনেক রাত করে ঘুমিয়েছো | তাই জাগালামনা | ব্রেকফাস্ট তৈরী আছে, মুখটা ধুয়ে খেয়ে নাও |” মুখটা ধোবার আগে চিরকুটের পিছন দিকে লিখে দিলাম, “নিদ্রামগ্ন পুরুষ মানুষের ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশের অধিকার তোমায় কে দিলো ?” চিরকুট খানি সাবধানে গুঁজে রাখলাম নতুন বৌদি যে বইটা তখন দুপুরে বসে পরতো, সেই পেজ মার্ক এরই ভিতর করে | পরদিন আবার সেই চিরকুটে লেখা, “আবার যদি দেরি করে ওঠ, কাতুকুতু দেবো |” লিখে দিলাম, “ঘোরতর বিপদ হতে পারে কাতুকুতু দিলে | নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার হাতটা তোমাকে কোথায় অসাবধানে স্পর্শ করে ফেলবে, তখন আমায় দোষ দিওনা যেন | আমি বলে দেবো, আত্মরক্ষায় করেছি |”
বেশ জমত এই খেলাটা | আজকালকার লোক হলে এস-এম-এস এ খেলাটা খেলতে পারতাম, তখন এবং আমাদের বহু আগের যুগেও দেওর-বৌদি’র এহেন খেলাগুলি হত চিরকুটের মাধ্যমে | খেলতে বাধা কোথায় ? নতুন বৌদি আমার খেলার সাথী তো বটেই | আর সেই সঙ্গে আমার বন্ধু, আমার দোসর, কখনো বা অভিভাবিকা, যেন সাক্ষাত মা জননী |
আমি কি জানতাম, এই মা জননী প্রসঙ্গে একদিন নতুন বৌদি’র প্রাণে অজান্তে ব্যথা দিয়ে ফেলবো ? রাতে খুব বৃষ্টি চলছিলো, ঘরে ফ্যান চলছে, জানালা দিয়ে বাদলের পাগলা হাওয়া আসছে | আরাম করে ঘুমিয়ে আছি | সকালে দেখি, আমার গায়ে একটা পাতলা চাদর, ফ্যানটা অনেক কম করে চালানো | বললাম, “আজকাল দিব্যি রাতের বেলাতেও বিনা অনুমতিতে ঘরে এসে পর ?”
ও একটু সিরিয়াস ছিল কেন জানি | আমি বললাম, “একেবারে সাক্ষাত মা জননীর মতো গায়ে সযত্নে চাদর গায়ে দিয়ে দিয়েছে ?”
“ঠান্ডা লেগে গেলে তো ফ্যাঁচফঁচ করবে |”
আমি সকাল সকাল বেদম দুষ্টুমি’র মুড এ ছিলাম | বলেই দিলাম, “আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে একটা বিশেষ স্থানের স্পর্শ না দিয়েই মা জননী হলে ?”
নতুন বৌদি উত্তর করেনি | কি ব্যাপার ? আমার রসিকতার মাত্রা ছাড়ানোয় ও রাগ করেছে ? এ তো হবার কথা নয় ? কানমলা, চড় চাপড়, গাট্টা – এগুলি খাবারই কথা ছিল | আমি কাছে গেলাম | ওর চোখে জল, গম্ভীর হয়ে নিজের কাজ করে চলেছে | বললাম, “রাগ করলে ?” আমার কোনো কথার উত্তর করলনা | আমি কাছে ডাকতে ও হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো | “মা জননী আমি হতে পারিনি | ও কথা ভাবলেই আমার ভীষণ কষ্ট হয়, ছোট ঠাকুরপো | কিন্তু তোমার মুখেও সেই এক কথা ? যখনি কলকাতায় যাবো, সে একদিনের জন্য হলেও তোমার জেঠি, দিদি, আমার মাসী শ্বাশুড়ি – সব এক কথা বলে যাবে, কবে ছেলেপুলে হবে, এখনো কেন হলনা ? আমার সাথে আর কি কোনো কথা নেই কারোর | আমি এখনো মা হতে পারিনি দেখে আমার নিজের মনের ভিতরে বুঝি কোনো কষ্ট নেই ? সবাই তো জানে ডাক্তার দ্যাখানো হয়েছে ”
বুঝলাম, নতুন বৌদি আমার পুরো কথাটা শোনেনি, বা যে কোনো কারণেই হোক বোঝেনি | আমার কথার ও পুরো অন্য রকমের একটা মানে করেছে | নতুন বৌদির মনে কিরকম কষ্ট, আমি বুঝতে পারলামনা | আস্তে করে ওকে পাশে বসিয়ে বললাম, “তুমি আমার কথা বোঝনি নতুন বৌদি, আমি সে কথা বলিইনি | যতখুশি কানমলা দাও, কিন্তু তোমার সাথে দুষ্টুমি আর ইয়ার্কি না করে আমি থাকতেই পারবনা, নতুন বৌদি”| ও আমার কাঁধের উপরে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকলো, “আমার মনে অন্য কিছু আসেনা, বিশ্বাস করো | আমি চলে যাবো, দেখো, একদিন ঠিক চলে যাবো, তোমার মেজদা তখন যেন নতুন করে সংসার করে |” ও কেঁদে চলেছে আর আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি | যেন ও ছোট বাচ্চা | ছোটবেলায় মা’র কাছে বকুনি খেলে কুঁড়ি যেমন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতো | নতুন বৌদির কষ্টে আমার দু চোখ দিয়ে অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ল | সেটা ওকে টের পেতে না দিয়ে বললাম “ভরসা রাখো নতুন বৌদি | তুমি সব পাবে | আজকের দিনে চিকিত্সা কত এগিয়েছে, কত অসম্ভব আজ সম্ভব হয় | আর চিকিত্সা হেরে গেলেই বা ? এ পৃথিবীতে অনেক শিশু আছে, যারা মায়ের জন্য অপেক্ষা করে আছে | আর যেই তোমাকে যত কষ্ট দিক না কেন, আমি কি তোমায় কখনো কষ্ট দিতে পারবো ? আমি তোমার বন্ধু না, তুমি বলো ? লক্ষী আমার, আর কাঁদবেনা বলো”
শনিবার ছিল সেদিন | মেজদা অফিসে | নতুন বৌদি’কে বললাম, “চান করে তৈরী হয়ে নাও, আজ একটু শহরের দিকে বেড়িয়ে আসি | ওদিকেই লাঞ্চ করবো, তারপর একটা সিনেমা দেখি চলো”| সারাদিন ওর সঙ্গে কাটালাম | সন্ধ্যা হয়ে এলেও বোম্বেতে অনেকক্ষণ আলো থাকে | মেরিন ড্রাইভ দিয়ে হাঁটছি দুজনে | একের পর এক গাড়ি চলেছে, উল্টো দিকে চার্চ গেটের লোকালগুলি যাচ্ছে | হাটতে হাটতেই বৃষ্টি এসে পড়ল | ওই গানটা মনে পড়ছিল কিশোরের গলায়, অমিতাভের লিপে | গুনগুন করছিলাম -
“রিমঝিম গিরে সাওয়ান
সুলাগ সুলাগ যায়ে মন
ভীগে আজ ইস মৌসম মে
লগি কয়্সী ইয়ে আগন”
নতুন বৌদিকে বলছিলাম, “মনে করো আমি লিপিকে পাশে নিয়ে চলছি আর গাইতে গাইতে চলেছি দুজনে” | ও বললো, “কবে যে লিপি আসবে ? তখন যদি এই দিনরাত ‘নতুন বৌদি’, ‘নতুন বৌদি’ করবার রোগটা সারে |”ওর চোখের দিকে তাকালাম | বললাম, “রোগটা সেরে গেলে তোমার ভালো লাগবে?” আমার কথার কোনো উত্তর দেয়নি ও |
Posts: 273
Threads: 0
Likes Received: 106 in 86 posts
Likes Given: 2,260
Joined: Mar 2020
Reputation:
2
Asha kori golpo tar kono sukhokor porinoti hobe. Sombhabona boddo kom.. Tao.... Dekha jak
•
Posts: 51
Threads: 0
Likes Received: 194 in 80 posts
Likes Given: 467
Joined: Jul 2021
Reputation:
41
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পঞ্চম পর্ব
একটি একটি করে দিন এগিয়ে চলেছে | জুলাই এর শেষ দিন, যেদিন আনন্দে বিভোর হয়ে আমরা সবাই গাইছিলাম, “হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে”, সে তো পেরিয়েই এসেছি | অগাস্ট মাসের শেষার্ধ ও দেখতে দেখতে চলে এলো | একটা দিন এগিয়ে যাওয়া, মানে একটা করে দিন ফুরিয়েও আসা | যখন ওই সুরটা আস্তে আস্তে মনের মধ্যে ঘুরতে শুরু করলো, “নাই নাই নাই যে বাকি সময় আমার”, মনে হচ্ছিলো ঠেলা দিয়ে ফিরে যাবার দিনটিকে সরিয়ে রাখি | কিন্তু সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘুরবে, নিজের অক্ষরেখা ধরেও আবার পাঁক খাবেই, দিন এগোবেই | সবই তো প্রকৃতির নিয়মেই ঘটে যায়, আমরা কেউ তাকে বাধা দিতে পারবনা |
বাংলা মাসের হিসাবে শ্রাবন মাস সবে শেষ হয়ে গেছে, তবু বর্ষার বিরাম নেই | সকালে খবরের কাগজে বর্ষণের মোট হিসাবটা আগ্রহ সহকারে পড়তাম | যখন এসেছিলাম, তখন স্কোর বোর্ডে দেখতাম তিনশো | ধাপে ধাপে, কখনো বা লাফিয়ে লাফিয়ে, স্কোর পেরোলো পাঁচশো, হাজার, দেড় হাজার, দু হাজার – এবং still going strong !
মেজদা কাজের মধ্যে ডুবে গেছে | কোম্পানি নয়ডায় নতুন ইউনিট খুলছে তখন, তাই দিল্লি যেতে হচ্ছে বারবার | একটা বিরাট কন্ট্রাক্ট নাকি আসতে চলেছে ওদের | বোম্বেতে অগাস্ট মাসে বেশ কয়েকটা ছুটি পড়ে | স্বাধীনতা দিবস ছাড়াও জন্মাষ্টমী, মুম্বাইবাসীর অতি প্রিয় গণপতি, আরো একটা দুটো কি আমি হয়তো miss করে যাচ্ছি | আর ছুটি মানেই তো সারাটা দিন নতুন বৌদি | গল্প, গান, চা, VCR এ ছবি দেখা, এটা ওটা খাবার বানিয়ে দেবার অর্ডার – এইই চলতো | আর মেজদা নেই, তাই খাবার পরেও ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা চলতো দেওর-বৌদিতে মিলে |
সেদিন রাতে শুতে এসে দেখি বৃষ্টি হয়েই চলেছে | মনে হচ্ছিলো, “আমার প্রিয়ার ছায়া, আকাশে আজ ভাসে |” ইচ্ছা করছিলো, লিপি’র সাথে দেখা হলে ওকে ওই গানটা শোনাবো, “এমন দিনে তারে বলা যায়” | কিন্তু আমি যে গানটার সুর ভালো করে জানিনা, প্রথম দিকটা করতে পারবো, কিন্তু না শিখলে সুরে এদিক ওদিক বিচ্যুতি ঘটবে | আমায় কে শেখাবে গানটা ?
“নতুন বৌদি, এসোনা একটু”
“কি চাই ছোট ঠাকুরপো ?”
“একটা গান শিখিয়ে দেবে ?”
“এই মেরেছে, এই মাঝ রাত্তিরে ? লোক জন ঘুমিয়ে পড়েছে যে | এখন গান শুনলে সবাই ধরে পেটাবে | কাল হবে’খন |”
“না না নতুন বৌদি, এখনি | খুব আস্তে আস্তে গাও, আমি তুলে নেবো তোমার সাথে সাথে |”
“কোন গান ?”
“এমন দিনে তারে বলা যায়”
“গাও”
“আগে তোমার কাছ থেকে পুরোটা শুনবো |”
“শোনো তাহলে, খুব ধীরে গাইতে হয় –
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘন ঘোর বরিষায়
এমন দিনে মন খোলা যায়
এমন মনস্বরে বাদল ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায় ||
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
গানটা তুলবো কেমন করে? আমি তো ডুবে গিয়েছিলাম সুরে, বাণীতে | পুরো গানটা হয়ে গেলে নতুন বৌদি বললো, “এবার আমার সঙ্গে সঙ্গে গাও” বলে আবার আরম্ভ করলো গানটা | প্রথম ছত্র তুলিয়ে দিয়ে আমায় বললো পরেরটার সাথে গলা মেলাতে,
সে কথা শুনিবেনা কেহ আর
নিভৃত নির্জন চারি ধার
দুজনে মুখোমুখি, গভীর দুখে দুখি
আকাশে জল ঝরে অনিবার –
জগতে কেহ যেন নাহি আর ||
“আবার করো, সে কথা শুনিবেনা কেহ আর থেকে”
আবার ওর সাথে গেয়ে নিয়ে পরের জায়গাটা শিখতে লাগলাম,
সমাজ সংসার মিছে সব
মিছে এ জীবনের কলরব |
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব
আঁধারে মিশে গেছে আর সব ||
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার |
শ্রাবন বরিষণে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার ||
“শেষেরটা আর একবার একটু শুনিয়ে দাও না নতুন বৌদি,”
ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেলো মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায় ||
গাইতে গিয়ে গলাটা ধরে আসছিলো |
নতুন বৌদি আবার ফিরে এলো গানের আরম্ভে | তারপর ছেড়ে দিলো | আমাকে একা গাইতে হবে, প্রথম থেকে | আর ত্রুটির সংশোধন করে দেবেন আমার শিক্ষয়িত্রী |
“হলনা, এটা এরকম করে গাইতে হবে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব (সুরে)
গাও, আবার”
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
হৃদয় দিয়ে গাওয়া, সে কি অতই সোজা ?
“অনুভব (সুরে) – শোনো – অনুভব (সুরে)- ভুল করনা”
যাবতীয় ত্রুটি সংশোধনের পর্ব শেষ করে বলে, “এবার পুরোটা গাও, আরম্ভ থেকে”
বারবার গাওয়া হচ্ছিলো | সেদিন সারাটা রাত ফুরিয়ে গিয়েছিলো শুধু গানে, কথায় আর গল্পে | কেন ফুরালো ?
সারা রাতের বৃষ্টিতে কি অবস্থা বাড়ির সামনে ! থৈ থৈ জল |
“সাবধানে যেও ছোট ঠাকুরপো |” এ কথাটা রোজই শুনি | না শোনা অবধি বেরোতেই পারিনা কাজে |
থানে স্টেশনে এলাম | রাতের প্রবল বর্ষণে ট্রেন থেমে গেছে | প্ল্যাটফর্মে গিজগিজ করছে লোক, কখন আবার ট্রেন চলবার announcement হয় সেই অপেক্ষায় | ধুত্তর, নিকুচি করেছে announcement | আমি সটান ফিরে এলাম |
কি মজা ! আজ আমাদের ছুটি রে ভাই, আজ আমাদের ছুটি | অফিস যেতে পারবনা | বাড়ির সামনে জল জমেই আছে | প্যান্ট গুটিয়ে, জুতো হাতে নিয়ে বাড়ি ঢুকলাম | নতুন বৌদি দেখে হেসে লুটোপুটি |
“বেশ হয়েছে | আচ্ছা জব্দ আজকে | বাড়ি বসে থাকো |”
“এই নতুন বৌদি, খিচুরী চাপাও | আর আলুভাজা, মাছভাজা |”
“বয়ে গেছে আমার |”
“করবেনা না তো, আড়ি, যাও” খুব গম্ভীর মুখ করলাম |
“বাবুর আজকাল কথায় কথায় রাগ হয়, তাই না ? লিপি আসুক, তখন রাগ কোথায় যায় দেখবো |”
নতুন বৌদি’র হাতটা জোরে চেপে ধরলাম |
“ছাড়ো”
“ছাড়বনা | আগে বলো খিচুরী হবে”
“হবে”
এবারও হাতটা ছাড়িনি | হাতের পাতাটা টেনে এনে আমার বুকে রাখলাম | কাঁধে হাত দিয়ে টেনে আনলাম ওকে আমার কাছে | তারপর হাতের পাতায় খুব আলতো করে, ঠিক ওর নরম চামড়ার মতন নরম করে একটা চুমো খেলাম | “ধ্যাত” বলেই ও পালিয়ে গেলো |
“পাজী কোথাকার, রাত দিন আমায় জ্বালিয়ে মারে |” এই বলে রান্নাঘরে ঢুকলো | আমিও এলাম, পিছন পিছন | গ্যাসের প্ল্যাটফর্মের গায়ে ঠ্যাস দিয়ে নতুন বৌদি’র সাথে গল্প করে গেলাম |
“আমার জন্য একটা কিচ্ছু কাজ করেনা পাজিটা | এই, পেঁয়াজটা কেটে দেবে ? ভীষণ চোখটা জলছে |”
পাজি আর পেয়াঁজ ! প আর জ এর সম্মিলিত অনুপ্রাসটি মন্দ নয় | বাধ্য ছেলের মতন ঘসঘস করে পেয়াঁজ কেটে দিলাম | বললাম, “তাকাও, তো | চোখটা দেখি – আর জ্বলছে না তো?”
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
এসব গল্পের কোনো পাঠক নেই এখানে ...
দুঃখের ব্যাপার , কিন্তু কিছু করার নেই
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(06-11-2021, 08:22 PM)ddey333 Wrote: এসব গল্পের কোনো পাঠক নেই এখানে ...
দুঃখের ব্যাপার , কিন্তু কিছু করার নেই
Stopping here only.
Posts: 46
Threads: 0
Likes Received: 156 in 67 posts
Likes Given: 312
Joined: Jun 2021
Reputation:
23
এত বড় গান? কোনওদিন শুনিনি তো?
•
|