Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
প্রথম ভাগ
শান্তিনীড় আশ্রমিক পরিবেশে এক বৃদ্ধাশ্রম, বয়স্ক মানুষদের থাকার জন্য সমস্ত সুবিধা এখানে আছে। তিস্তার তীরে বেশ মনোরম অবস্থান এই শান্তিনীড়ের। আশেপাশে অনেক ছোটো ছোটো পাহাড় উঁকি দেয় এখান ওখান থেকে। পূর্ব দিকের প্রাঙ্গনে রাধা কৃষ্ণের সুন্দর এক মন্দির। সন্ধ্যের পর রোজ ঘটা করে এখানে পুজো ও আরতি হয়। উত্তরে আশ্রমের গা ঘেঁষে ফুলের বাগান। মাধবীলতা, অপরাজিতা, ডালিয়া, জুঁই, নয়নতারা, রজনীগন্ধা, বেলফুল, চামেলী কোন ফুল না নেই। আশ্রমের অতিথিরাই সযত্নে বানিয়েছে এই বাগান। দক্ষিণে দুটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। তলায় সামনা সামনি দুটো বাঁধানো বেদি বসার জন্য। জীবন সায়াহ্ণে এসে নেমে আসা সন্ধ্যে গুলোকে পুরো মাত্রায় আশ্রমবাসীরা উপভোগ করে এখানে বসে গল্প গুজব করে। আর এই সুন্দর পরিবেশের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে গত এক বছর ধরে কুহু।।
কুহু চ্যাটার্জি কলেজের হেডমিসট্রেস, রিটায়ার্ড হবার পর এই বৃদ্ধাবাসে ঠাঁই নিয়েছে। অল্প বয়সে বাবা হারিয়ে দুই ভাই বোনকে মানুষ করতেই তার বেলা বয়ে গেছে। তাই বিয়ে থা করার আর সুযোগ হয়ে ওঠেনি। অবশ্য ভালো লেগেছিল কলেজে পড়ার সময়ে সহপাঠী জয় কে। কিছু নিভৃতে সময়ও কেটে ছিল দুজনের। কুহুর সুরেলা গলার গান শুনতে খুব ভালো বাসতো জয়। আর গানের সাথে সাথে তার মৃদু হাসির মধ্যে বেরিয়ে আসা গজ দাঁত আর গালেতে পরা খাঁজ জয়ের ছিল খুব পছন্দের। একদিন এক অন্তরঙ্গ মুহূর্তে জয় কুহুর হাতে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে ওরা সারা জীবন এক সাথে কাটাবে। জয়ের সেই দিনের স্পর্শ আর প্রতিজ্ঞাটা কুহুর মনে খুব গভীর রেখাপাত করেছিলো, ও ভুলতে পারে নি সেই অনুভূতি কোনোদিন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জীবন যুদ্ধে পরাজিত হতে হয়েছিল কুহুকে। ছোটো ভাই ও বোন নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি সময় মতো। আর জয়ের হাতে সেদিন ছিল না সময়। কিছু সময় চেয়ে কুহুর বিনীত আকুতিকে জয় সেদিন নাকচ করে দিয়েছিল। কুহুর ফেলা চোখের জল সেদিন জয়কে বিগলিত করতে পারেনি। জয় শেষ পর্যন্ত অন্য একজন মেয়েকে বিয়ে করে সংসার বেঁধেছিল। বাবার পরে জয় কে হারিয়ে রূঢ় বাস্তবের পৈশাচিক রূপকে খুব কাছের থেকে কুহু সেদিন দেখে ফেলেছিল অল্প বয়সে। অবশ্য এইসব প্রতিকূলতার কিছু ভালো ফলও হয়েছিল যেটা কুহুর পরবর্তী জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই ঘাত প্রতিঘাতের মাঝে ও নিজের মনোবলকে অনেকটা সুদৃঢ় করে তুলেছিল। ও শিখেছিল কারোর সাহায্য না নিয়ে কি করে একলা পথ চলতে হয়। আর কারোর উপর বোঝা না হয়ে কিভাবে সম্মানের সাথে জীবন কাটাতে হয়। আর সেই প্রচেষ্টাতেই পিএইচডি শেষ করে সে আজ ডক্টর কুহু হয়েছে, কলেজের প্রধান শিক্ষিকা হয়েছে। যদিও অনাসক্ত কুহু নিজের নামের আগে ডক্টর উপাধি টা লাগানো পছন্দ করে না। সব মিলিয়ে ওর জীবনটা যেন সত্যই এক তপস্যার। সব কিছু খুব কষ্ট করে অর্জন করা, কিন্তু কোনো কিছুর প্রতি কোন আসক্তি নেই। তাই শেষ পর্যন্ত রিটায়ার্ড হবার পরে ভাই বোনদের শত প্রতিবাদ থাকা সত্ত্বেও শান্তিনীড়কে সে প্রৌঢ়ত্বের নীড় হিসেবে বেছে নিয়েছে।।
সুমন্ত্র রায় এক রিটায়ার্ড সিআইডি অফিসর। কর্মসূত্রে অনেক ছদ্মনামে জীবন যাপন করতে হয়েছে। এই 'সুমন্ত্র রায়' নামটাও ওর এক ছদ্মনাম যেটা ওর স্ত্রীর খুব পছন্দের ছিল। তাই খুব দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অসময়ে বিপত্নীক হয়ে যাবার পর ওই নামটা সে স্ত্রীর স্মরণার্থে ধরে রেখেছে। একবার স্ত্রীর মৃত্যুর পর সুমন্ত্রর ওপর এক ভয়ানক হামলা হয়েছিল। অ্যাসিড অ্যাটাকে ওর মুখোশ্রী ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিলো এক অপরাধী। শেষ পর্যন্ত মুখোশ্রী ফিরে পেতে ওকে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হয়েছিলো, আর সেই সূত্রে সুমন্ত্র পেয়েছিল এক নতুন রূপ। শরীরের বাকি অংশটা তাই আগের মতো থাকলেও মুখ দেখে নতুন সুমন্ত্রকে আর চেনা যায় না। ওদের এক ছেলে শান্তনু সিএ শেষ করে এক বহুজাতিক সংস্থায় বিদেশে কর্মরত। রিটায়ার্ড হবার এক বছর আগে মাতৃহীন ছেলের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে সুমন্ত্র, তাই অনেকটা এখন দায় মুক্ত। রিটায়ার্ড হবার পর ছেলে বাবাকে নিজের কাছেই রাখতে চেয়েছিল কিন্তু সুমন্ত্র বৃদ্ধ বয়সে বিদেশ ভূমিতে গিয়ে থাকতে চায়নি। এদিকে দেশের মাটিতে একাকীত্ব কাটানোর জন্য শেষ পর্যন্ত ঠিক করে যে শান্তিনীড়ে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে থাকবে, অনেকটা ছেলের অমতেই। তবে শান্তনুও বাবাকে বলে রেখেছে যে কিছুদিন পরে এসে ও নিয়ে যাবে, কোনো কথাই শুনবে না।।
সুমন্ত্রর শান্তিনীড়ে আসা কুহুর থেকে মাস তিনেক আগে। আশ্রমের দুইতলায় কোণের বেশ সুন্দর ঘরটা পেয়ে মনে মনে খুব খুশী সুমন্ত্র। তাকে নিয়ে তেইশ জন বাসিন্দা আছেন এই শান্তিনীড়ে। আর বেশীর ভাগ অতিথিই সম্ভ্রান্ত ঘরের মানুষ। মানে বৃদ্ধ বয়সে বিপাকে পড়ে থাকার মতো। কিছুদিন পরেই প্রবেশ করলো কুহু আশ্রমের চব্বিশতম অতিথি হিসেবে। কুহু আসার পর থেকেই আশ্রমে যেনো বসন্ত এসে গেছে। আশ্রমের অতিথিদের সেবাযত্ন করে সকলের খুব প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠেছে সে। সাথে আশ্রমের বাগানে নানান প্রজাতির ফুল ফুটিয়ে আশ্রমের রূপটা যেনো বদলে দিয়েছে কুহু। তার ওপর বিকেল বেলায় সকলকে নিয়ে গল্প গুজব করানো আর মিষ্টি গলায় গান শোনানো যেনো তার নিত্য দিনের কর্মসূচী হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় মন্দিরে কুহুর কন্ঠে আরতি টাও আজ আশ্রমে সমান জনপ্রিয়। সব মিলিয়ে কুহু যেনো অল্প সময়ে আশ্রমের হৃদপিন্ড হয়ে উঠেছে। কারুর মেয়ে কারোর বোন বা বন্ধু হয়ে বেশ হেসেখেলে সকলের সাথে নিজের দিনগুলোকে পার করে দিচ্ছে কুহু।।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
সুমন্ত্র বাকিদের থেকে কুহুকে একটু বেশী সমীহ করে। আর সে জন্যে ও ইতিমধ্যেই কুহুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলেছে। কুহুর কাছেও সুমন্ত্র যেনো একটু বেশী আকর্ষণের। কারণ সুমন্ত্রর মধ্যে ও খুঁজে পায় যেনো হারানো দিনের ছোঁয়া। তার শরীরের গঠন আর কথা বলার ধরণ ওকে বারবার জয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে জয়ের প্রতি ভালোবাসার সাথে বিদ্বেষটা বুঝি এখনো সে মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেনি। প্রথম প্রথম কয়েকবার সুমন্ত্রর প্রতি কিছু অসৌদ্যার্হ্যপূর্ণ ব্যবহারও করে ফেলেছিল সে জয়ের সাথে তার সাদৃশ্যের জন্য। কিন্তু পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেই বিদ্বেষ কিছুটা ভাল লাগায় পরিবর্তিত হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে ওদের বোঝাপড়াটা অনেকটা বেড়ে উঠেছে। এখন ওরা একে ওপরের সঙ্গ পছন্দ করে। নানান কাজের অছিলায় সুমন্ত্রর ঘরে আসতে কুহুর ভালো লাগে। সারাদিনের কাজের ফাঁকে সুমন্ত্রর সাথে গল্প করলে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগে। মানুষ একা একা বাঁচতে পারে না, 'আমি' থেকে 'আমরা' হতে চায় মন, তাই বয়স যাইহোক না কেন একটা দোসর সে খোঁজে, যা জীবনে টাটকা বাতাস এনে দেয়, যার মধ্যে বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভাবে অজান্তে বুঝি কুহুর মনে জয়ের জায়গাটা আজ সুমন্ত্র নিয়ে বসেছে।।
এদিকে শান্তনু অফিসের কাজে ইন্ডিয়া এসেছে এক সপ্তাহের জন্য। পুণেতে অফিসের গেস্ট হাউসে থাকা। কাজ মিটিয়ে হপ্তাশেষে পরিকল্পনা করল বাবার সাথে শান্তিনীড়ে এসে দেখা করার। সাথে বাবাকে বিদেশে নিয়ে যাবার প্ল্যান টাও ফাইনাল করে নেবে। আশ্রমে এসে কিছুক্ষনের মধ্যে শান্তনুর দৃষ্টি আকর্ষিত হলো কুহুর দিকে। উনি যেনো একদম অন্য ধরণের মহিলা, একাধারে অনেক গুণের অধিকারী। মা গত হবার পর বিধ্বস্ত বাবার মুখে রাশি রাশি আনন্দ দেখে শান্তনু আজ খুব মুগ্ধ। আর তার কৃতিত্বটা কুহুকে দিতে তার বিন্দু মাত্র দ্বিধা নেই মনে। তার প্রতিও কুহুর স্নেহের আতিশয্য শান্তনুর খুব ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে কুহুর প্রতি তার মনে নিতান্তই শ্রদ্ধা জেগে উঠেছে এক ব্যক্তিত্বময়ী জননীর রূপে। সাথে শান্তনু বুঝতে পেরেছে যে এই আনন্দ সে বিদেশে গিয়ে বাবাকে দিতে পারবে না। তাই ও বাবাকে আর শান্তিনীড় থেকে দূর করতে চায় না। বাবাকে জানিয়েও দিয়েছে তার সিদ্ধান্ত। শেষে হপ্তা কাটিয়ে শান্তনু বাবাকে ছেড়ে আবার ফিরত যায় বিদেশে। সাথে সাথে নিয়ে যায় এক গুচ্ছ মধুর স্মৃতি বাবা আর শান্তনীড়কে নিয়ে। এদিকে ছেলের সিদ্ধান্তে সুমন্ত্রের খুশীর সীমা নেই। আজ সে শান্তিনীড়ে থাকার ছাড়পত্র পেয়ে গেছে, কুহুর সান্নিধ্যে কুহুর ছায়ায় সুখ দুঃখের শরিক হয়ে থাকার ছাড়পত্র।।
সেদিন খুব ভোরে কুহুর ঘুম ভেঙে গেছে।আগের রাতে খুব ভালো বৃষ্টি হয়েছে, সকালটা বড়ো নির্মল লাগছে তাই। সুমন্ত্রর সাথে একটু বেশি সময় কাটাতে গিয়ে বাগানের গাছ গুলোর পরিচর্যায় ঘাটতি হয়ে গেছে তার। এখন তাই একটু বাগানের গাছগুলোর সাথে সময় কাটাতে চায় কুহু। বৃষ্টির দাপটে করুন অবস্থা মাধবীলতা, অপরাজিতার মতো গাছগুলোর, মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে তারা। রাতভর হয়তো একটু অবলম্বন খুঁজেছে, উঠে দাঁড়াবার প্রবল আকুতি জানিয়ে হয়তো হয়েছে দিশেহারা। কুহুর মনে পরে যায় তার ফেলে আসা অতীত, জয় সেদিন তার আকুতি না শোনায় কিভাবে সে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলো উঠে দাঁড়াবার তাগিদে। যাইহোক আজ সুমন্ত্রর মতন গাছগুলোও নবজীবন পায় কুহুর ছোঁয়ায়।
ওদিকে সকাল থেকে অনেকক্ষণ কুহুর জন্য অপেক্ষা করে শেষে সুমন্ত্রও বাগানে আসে। ঘর থেকে সিঁড়ি ভেঙ্গে আসতে গিয়ে একটু হাঁপিয়ে পড়েছে সে, তাই কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় বাঁধানো বেদিতে একটু বসে। তাকে দেখে কুহুও হাতের মাটি ধুয়ে এসে বসে সুমন্ত্রর পাশে। রক্তের সম্পর্ক নেই, সমাজের সিলমোহর নেই তবুও মনেহয় কুহু কতো আপনজন তার। সকালের সোনামাখা রোদে কুহুকে আজ বড়ো সুন্দর লাগছে সুমন্ত্রর। তার না বলা মনের কথাগুলো কুহুকে বলে দিতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে আজ। হ্যাঁ আজই, এই প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে এই কৃষ্ণচূড়ার তলায় দাঁড়িয়ে। সাথে সাথে আবার ভয় হয় কি জানি কুহু আবার তার আসল পরিচয় টা ধরে ফেলবে না তো? শেষে অনেক সাহস সঞ্চয় করে সুমন্ত্র কুহুকে জিজ্ঞাসা করে তুমি আমার মিতা হবে? বাকি জীবনটা একসাথে চলবো দুজনে? না না শরীর ছুঁয়ে নয় মন ছুঁয়ে থাকতে চাই তোমার, থাকবে?
মনের মিতা হবার অনাস্বাদিত স্বাদ পেতে এই বয়সেও কুহুর মুখে রক্তিম আভা খেলে যায়। স্বাধীন, পিছুটানহীন কুহুও বোধহয় মনে মনে চেয়েছিল বাকি জীবনটা সুমন্ত্রর সাথে পা মিলিয়ে চলতে। তাই চোখের ভাষাতেই অনুচ্চারিত সম্মতি প্রকাশ করে তার। প্রকৃতির মাঝে গান্ধর্ব মতে দুটো প্রৌঢ় হৃদয় আজ একাকার হয়ে যায়। আনমনা হয়ে দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে কুহু, আর অপার মুগ্ধতা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে সুমন্ত্রর প্রৌঢ় দুটি চোখ। আজ রাশি রাশি সুখানুভূতি নিয়ে শান্তিনীড়ের দিকে পা বাড়ানোর আগে সুমন্ত্র কুহুর ভিজে হাতটা নিজের হাতে ধরে। একি, এতো সেই পুরানো স্পর্শ, তুমি কে? বলে দূরে সরে যায় কুহু। সুমন্ত্র বিব্রত হয়ে যায়, যে আশঙ্কা এতো দিন দুঃস্বপ্নের মতো ওর পিছু করেছে আজ কি তাহলে তা সত্যি হয়ে গেলো? কুহু আবার প্রশ্ন করে, আমার অনুভূতি ভুল হতে পারে না, কি তোমার আসল পরিচয়, তুমি কি জয়? প্রথমে বলতে দ্বিধা থাকলেও শেষে ওর ভালোবাসা রক্ষার খাতিরে সুমন্ত্র স্বীকার করে সেই জয়। আর তারপর বিস্তারিত ভাবে শোনায় তার নাম ও মুখোশ্রী পরিবর্তনের গল্প। তারপর ক্ষমা প্রার্থনা করে কুহুর কাছে তার পুরানো দুর্ব্যবহার আর এতদিন আসল পরিচয় লুকিয়ে রাখার জন্যে। কিছুক্ষণ থেমে আবার বোঝাতে শুরু করে যে তাকে হারানোর ভয়ে এতদিন সে পরিচয় দেয়নি, পাছে সে তাকে ক্ষমা না করে। মুহূর্তের মধ্যে কুহুর মনে পড়ে যায় সেই দুর্দিন যখন সে কিছু সময় ভিক্ষা চেয়ে জয়ের কাছে অনুরোধ করেছিলো, আর কি নিষ্ঠুর ভাবে সেদিন জয় ওর সমস্ত মিনতি নাকচ করে দিয়েছিলো। ক্ষণিকের মধ্যে সুমন্ত্রর প্রতি ওর সমস্ত ভালোবাসা জয়ের প্রতি ঘোর বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সমস্ত স্বপ্ন যেনো ক্ষণিকের ব্যবধানে চুড়মার হয়ে যায়। সে সুমন্ত্রকে খুব শক্ত গলায় একটু একা থাকতে দেওয়ার অনুরোধ করে। সেই কঠিন কুহুকে দেখে বিষণ্ণ সুমন্ত্র বুঝে উঠতে পারে না যে কি করবে। তারপর বিশেষ কিছু একটা বলতে গিয়ে ওর বুকে ব্যথা ওঠে আর ওকে হাসপাতাল নিয়ে যায় শান্তিনীড় কতৃপক্ষ।।
দীর্ঘ চিকিৎসার পর সে যাত্রা প্রাণে বেঁচে যায় সুমন্ত্র। সে আবার ফিরে আসে শান্তিনীড়ে। কিন্তু কুহু আর নেই সেখানে, সে ছেড়ে দিয়েছে তার স্বপ্নের প্রাসাদ। স্বপ্ন ভাঙ্গার দুঃখে আজ ও খুব বেশী বিষণ্ণ। অনাসক্ত কুহু ধিক্কার দেয় নিজেকে তার তপস্যার জীবনে এই প্রলয় আসার জন্য। সে নিজেকে দায়ী করে এই পরিণতির জন্য। তবে তারুণ্যে জয়ের কাছে পরাজিত হয়ে জীবন টাকে সে অনেক কঠোর ভাবে চিনে ফেলিছিল, তাই ও জানে কিভাবে সুমন্ত্রকেও মন থেকে মুছে ফেলা যায়।।
কুহু আজ একা। আজ ঝড় চলে গেছে, কিন্তু থেকে গেছে তার সুদৃঢ় মনোভাব আর উন্নত শির। আজ এক অজানা ঠিকানায় সে আবার করে এক নতুন শান্তিনীড় বানানোর তাগিদে লিপ্ত হয়েছে। এবার বুঝি ও আসল সুমন্ত্র কে খুঁজে পাবে।।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
দ্বিতীয় ভাগ
নতুন করে জীবন সাজানোর প্রচেষ্টায় কুহু সিদ্ধান্ত নিল নিজের তত্ত্বাবধানে একটা অনাথ আশ্রম তৈরী করবে। সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে ঠিক হলো আশ্রম তৈরী করবে বাংলা থেকে সহস্র কিলোমিটার দূরে উত্তরকাশিতে, গঙ্গার তীরে। কুহু ভুলে যেতে চায় তার কৃত ভুল আর সাথে মনের গ্লানি। তাই থাকতে চায় না সেই এক আকাশের নীচে, সেই চেনা বাতাসের সংস্পর্শে। আজ ও খুব উদাস, কিন্ত ততোই উদ্দীপ্ত নূতন করে মাথা তোলার অদম্য ইচ্ছায়। তৈরী হলো 'আশানিকেতন' - কুহুর আশা আর ভালোবাসার নতুন ঠিকানা।।
ছোটোবেলার অবাঙ্গালী অন্তরঙ্গ প্রতিবেশীর মেয়ে কবিতা, ঠিককরে জীবন টাকে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। ওর মায়ের সঙ্গতেই কুহুর ছোটোবেলায় হিন্দী শেখা। অনেক কষ্টের পরিবারের কবিতা নার্সিং কোর্সে ভর্তি হয়েও শেষ পর্যন্ত পয়সার অভাবে কোর্স সম্পূর্ন করতে পারেনি। অনেক ঘাত প্রতিঘাতের শেষে আজ সেও একা। তাই বিদেশ ভূমিতে সন্তান তুল্য কবিতাকে বেছে নিয়েছে কুহু তার আশানিকেতনের সাথী হিসেবে।।
হিমালয়ের কোলে অদ্ভুত সুন্দর জায়গা এই উত্তরকাশি। ছোটোবেলায় বাবা থাকতে একবার পরিবার সমেত কুহু বেড়াতে এসেছিল গাড়োয়ালের এই মহান সাধনা ভূমিতে। আর তখনই ভালো লাগা এই জায়গার প্রতি। এটি হিমালয়ের একটি অত্যন্ত প্রাচীন তীর্থক্ষেত্র। চারধাম যাত্রায় গঙ্গোত্রী যাবার পথে এটি এক উল্লেখযোগ্য জায়গা। বৈদিক যুগ থেকে অসংখ্য ঋষি মহাঋষি এখানে বিমুক্তকামী হয়ে সাধনা করেছিলেন। পবিত্র এই তীর্থক্ষেত্রকে অর্ধচন্দ্রাকারে বেষ্টন করে বয়ে চলেছে উত্তরবাহিনী গঙ্গা, ভাগীরথী নামে। এই উত্তরকাশীতে জ্যোতির্ধামের রাজাকে বৈদিক ধর্ম পুনস্থাপনের কাজে আত্মনিয়োগ করার উপদেশ দিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন আচার্য শঙ্কর।হিমালয়ের কোলে পরিবেশটা এখানে 'শান্তিনীড়' থেকে অনেক বেশী মনোরম। আর তার সাথে কুহু কোনো চেষ্টার ত্রুটি করেনি তাকে আরো অপরূপ করে তুলতে। আশ্রমের ভিতর নদী মুখো এক বিশাল বাগান। নানান ফুলের রাশি দিয়ে কুহু তাকে ইতিমধ্যে সাজিয়ে ফেলেছে। সে ভোলেনি তার 'শান্তিনীড়ে' ফেলে আসা মাধবীলতা আর অপরাজিতাদের। ওদের জন্য আজও কুহুর মন কাঁদে। তার ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে তারা সবাই আজ আশা নিকেতনের বাগানেও স্থান পেয়েছে। তার সাথে আশ্রমের দেয়াল ঘেঁষে পাইন গাছের বেড়া যা কুহুর মতোই মাথা উঁচু করে সারি সারি দাঁড়িয়ে। বাগানের মাঝখানে আশ্রমের বাচ্ছাদের জন্যে খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম। ক্ষুদে অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য কোনো আয়োজনই ছাড়া হয়নি। আশ্রমের গেট দিয়ে ঢুকেই সামনে আশা-নিকেতনের অফিস ঘর। আর সেই রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গিয়ে সামনে হস্টেল যেখানে সব মিলিয়ে তিরিশ জন ক্ষুদে অতিথির থাকার উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে। আশা-নিকেতনের গঠনশৈলীতে যেনো এক অদ্ভুত সামঞ্জস্য আছে কুহুর পুরোনো স্বপ্নের প্রাসাদ 'শান্তিনীড়ের' সাথে। তবে সামনে বরফে ঢাকা হিমালয়ের বেষ্টনি, আর পাশ দিয়ে গঙ্গার খরতর কল্লোল আশা-নিকেতনের পরিবেশকে যেনো আরো মাধুর্য মন্ডিত করে তুলেছে। পূর্ব দিকে নদীর গা ঘেঁষে একটা বাঁধানো বেদি কুহুর বসার জন্য। এখানে বসেই কুহু এখনো ওর স্বপ্নের প্রাসাদ তৈরী করে। কুহু মন থেকে হয়তো আজ সুমন্ত্রকে মুছে ফেলেছে, কিন্তু রয়ে গেছে এক অতৃপ্ত প্রেমিক মন যে আনমনা হয়ে স্বপ্নের ডানা মেলে বারবার উড়ে যায় এক অজানা পুরীর উদ্দেশে। কে যেনো ওকে বারবার পিছু ডাকে ফিরে দেখার।।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
কিছু দিনের ভিতর কুহুর প্রচেষ্টায় আশানিকেতন নন গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ধীরে ধীরে অনেক বাচ্ছা এসেছে আশ্রমের অতিথি হিসেবে। ওই স্বীকৃতি পেয়ে খরচের দিক থেকে অনেক সহায়তা হয়ে গেছে এই মহান প্রচেষ্টাকে চিরস্থায়ী করে তোলার পথে। বাচ্ছাদের সাথে এক নতুন জীবনের শুরু এবার কুহুর। আর এই আনন্দের দিনে কুহু শান্তিনীড়ে খবর জানাতে ভোলেনা তার এই সাফল্যের।।
আশানিকেতন আজ তিরিশ জন অনাথ ছেলেমেয়ের আশ্রয়। গত বছর কেদারনাথে অলকানন্দার প্রলয়ে অনেক বাচ্ছা মা-বাবা, নিকট জনের সঙ্গ হারিয়ে আজ আশানিকেতনের অতিথি। অনেকের মা-বাবা সেই ভয়ানক প্রলয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, আবার অনেকের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাদের মাঝে একটি পাঁচ বছরের বাচ্ছা মেয়ে খুশী প্রলয়ে মা-বাবার সঙ্গচ্যুত হয়ে গিয়েছিলো। যখন স্থানীয় লোকেরা ওকে উদ্ধার করে তখন অজ্ঞান হয়ে সে পরে ছিল মায়ের কোলে নদীর ধারে। মেয়েকে রক্ষা করে মা নিজেকে নিয়তির হাতে আহূতি দিয়েছে, শিকার হয়েছে বিধাতার রোষের। আর বাবার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। শেষে অভিভাবক শূন্য হয়ে আজ আশা-নিকেতনে ঠাঁই। প্রকৃতির এই নির্মম প্রহারে ছোট্ট খুশী এতো সন্ত্রস্ত হয়েছিল যে সে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে গেছে। ও নিজের নাম ছাড়া আর কিছু মনে করতে পারে না। তবে ওর মাতৃভাষা বাংলা, এটাই শুধু আজ তার পরিচয়।।
সকালে সমস্ত বাচ্ছাদের নিয়ে প্রার্থনা দিয়ে শুরু হয় আশানিকেতনের দিন। কখনো 'ইতনা শক্তি হামে দেনা দাতা.... ', বা কখনো 'তুমি নির্মল করো মঙ্গল করো মলিন মর্ম মুছায়ে ....'। এই বাংলা প্রার্থনাটা সমস্ত বাচ্ছাদের শেখাতে অবশ্য কুহুকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আর সেই প্রার্থনার মধ্যে বাচ্ছাদের সাথে সাথে কুহুও সারা দিনের প্রেরণা সঞ্চয় করে নেয়। মনে মনে বিধাতাকে বলে যেনো স্নেহ আর ভালোবাসার বন্যায় আজ ভাসিয়ে দিতে পারে সে বাচ্ছাদের মন। এক নতুন সংকল্পের আহ্বান আজ কুহুর কাছে। এতো জন অনাথের নাথ হবার, তাদের ভালোবাসার ছায়ায় ভুলিয়ে রাখার, ওদের জীবনে স্বপ্ন দেখানোর আর সাথে মানসিক ভাবে বলিষ্ঠ করে তোলার। আর অতি দর্পের সাথে কুহু সেই আহ্বানে আজ সাড়া দিয়েছে। প্রাকৃতিক ভাবে তার মাতৃত্ত্বের কোনো অনুভব নেই, কিন্তু ত্রিশ জন অনাথের কাছে আজ একাধারে মা বাবার দ্বৈত ভূমিকা পালন করে চলেছে কর্তব্যে অনড় এই প্রৌঢ় রমণী। আর তাকে সর্বাঙ্গিক ভাবে এই মহান প্রচেষ্টায় সঙ্গ দিয়ে চলেছে সন্তানতুল্য কবিতা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় যখন কুহু একা গঙ্গার ধারের বাঁধানো বেদিতে বসে সারাদিনের ঘটনাক্রম রোমন্থন করে তখন যেনো সন্তোষে ভরে ওঠে তার বুক। নতুন ভাবে আবার করে জীবন টাকে গুছিয়ে তোলার তৃপ্তি অনুভব করে। তবু যেনো এক শূন্যতা কোথা থেকে উঁকি দিয়ে যায় ওর মনের দিগন্তে।।
আশ্রমের সমস্ত বাচ্ছাদের মধ্যে খুশী একটু বেশী প্রিয় কুহুর। একে তো সে সবচেয়ে ছোটো আর তার ওপর খুব মিষ্টি। আর যখন বাকি বাচ্ছাদের মতো খুশী ওকে মা বলে ডাকে তখন কুহুর মনটা যেনো ভোরে ওঠে স্নেহে, মনে হয় যেনো ওর নিজের সন্তান বুঝি ওকে মা বলে ডাকছে। এইভাবে এক অটুট মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে পরে কুহু।।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
একদিন কুহুর সাথে এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটে। অনতিদূরে কুতেতি দেবী মন্দিরের দেবী কুতেতি কুহুকে স্বপ্নাদেশ দিলেন তাঁর কাছে আসার জন্য। কুতেতি দেবী মা দুর্গার আর এক রূপ। তাই ভগবানে গভীর বিশ্বাসী কুহু প্ল্যান করে আশ্রমের সমস্ত বাচ্ছাদের নিয়ে যাবে দেবীর দর্শন করতে। আর ঠিক হলো দর্শন শেষে বাচ্ছাদের নিয়ে পিকনিক করা হবে মন্দির প্রাঙ্গণে। গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই মনোরম মন্দির আশা-নিকেতন থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। শাস্ত্রমতে দেবীর স্বপ্নাদেশে মন্দিরটি স্থাপনা করেছিলেন কোটার মহারাজার মেয়ে ও জামাই। দেবীর এবার পুনরায় স্বপ্নাদেশ, তাই কুহু খুব উত্তেজিত আর সাথে একটু উদ্বিগ্নও। কে জানে কি আশীর্বাদ দেবেন দেবী কুতেতি? আবার মনে সংশয় হয় যে দেবী কোনো কারণে তার ওপর রুষ্ট হোননি তো? এদিকে আশা-নিকেতনের ক্ষুদে অতিথিরাও সমান ভাবে উত্তেজিত আজ প্রথম সবাই মিলে পিকনিকে যাবে।।
পরিকল্পনা মতো সকাল সকাল বাচ্ছাদের নিয়ে কুহুরা পৌঁছে গেলো দেবীর মন্দিরে। প্রথমে দেবীর কাছে কুহু সমস্ত বাচ্ছাদের মঙ্গল কামনা করল। সাথে কৃতজ্ঞতা জানালো নতুন করে পথ চলার শক্তি প্রদানের। তারপর কিছু একটা চাইতে গিয়েও যেনো মনের অন্তরাল থেকে থমকে গেলো। কে জানে দেবী কুতেতি কুহুর না চাইতে পারা সেই প্রার্থনাটা শুনে ফেলেছেন কিনা? তারপর সকালের আরতির সময় হয়ে এসেছে। শান্তিনীড় ছাড়ার পর প্রায় এক বছর হয়ে গেছে কুহু আরতি করেনি। তাই 'জয় অম্বে গৌরী...' র সুরের মাঝে সে আজ হারিয়ে গেছে শান্তিনীড়ের সন্ধ্যায়, তার হারিয়ে আসা অতীতের মধ্যে। আরতির মাঝে সে অনুভব করলো দেবী কুতেতির আশীর্বাদ। মনে হলো সাক্ষাত দেবী যেনো উপস্থিত হয়ে তাকে প্রদান করলেন হারিয়ে যাওয়া অতীতকে ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি।।
যাই হোক মন্দিরে পূজোর শেষে এবার ক্ষুদে দের নিয়ে পিকনিকের পর্ব। একদিকে রান্নার জন্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আশা-নিকেতন থেকে রাঁধুনিরা এসেছে রান্না করার জন্য। কুহু আর কবিতাও শুরুতে একটু কাজকর্ম গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত। আর ক্ষুদে গুলো সব মন্দির প্রাঙ্গণে খেলায় মত্ত। একি অঘটন ঘটে গেলো হঠাত? ছোট্ট খুশী খেলতে খেলতে পাহাড়ের ধাপ থেকে নীচে পড়ে গেছে। খুব জোরে মাথায় ব্যথা পেয়েছে। পাথরের কোনে লেগে বেশ গভীর ভাবে মাথাটা কেটে গেছে, সেখান থেকে ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে। খুশীর এই অবস্থা দেখে কুহু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে। কবিতা অবস্থার সামাল দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করে। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরকাশির জেলা হাসপাতালে। তাহলে কি শেষপর্যন্ত দুঃস্বপ্ন সত্যি হলো? দেবী কুতেতি তাহলে কি রুষ্ট হয়ে কুহুকে এখানে ডেকে এনেছেন? কিছু ভেবে উঠতে পারে না কুহু। শুধু দেবী কুতেতির কাছে মনে মনে প্রার্থনা করে যেনো ছোট্ট খুশীর কোনো ক্ষতি না হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার এসে সিটি স্ক্যান করেন। আর বলেন মাথার চোট টা বাহ্যিক, ভিতরে কোনো ক্ষতি হয়নি। ঠোঁটের কোণে একটা মৃদু হাসি ফুটে ওঠে কুহুর। আর পরক্ষণেই চোখ দুটো ভিজে যায় আনন্দের অশ্রু ধারায়। মনে মনে কুতেতি মাতাকে জানায় শ্রদ্ধাপূর্ণ কৃতজ্ঞতা।।
দুইদিন হাসপাতালে থেকে খুশী আজ সুস্থ হয়ে আশ্রমে ফিরবে। তার মাঝে এলো আরো এক খুশির সংবাদ। খুশী হাসপাতাল থেকে বের হয়ে কুহুকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করছে। ওর ছোটো বেলার স্মৃতি ফিরে এসেছে। ওর মনে পরে গেছে ওর বাবা মা আর বাড়ির সব কথা। সেই দ্বৈত খুশিতে আজ উদ্ভাসিত আশানিকেতনের আকাশ বাতাস। কিন্ত কুহুর কাছে এক নতুন চ্যালেঞ্জ কিভাবে খুশীকে তার বাবা মায়ের খবরটা দেবে। তবে এক আশার কিরণ যে খুশী ওর বাবাকে হয়তো একদিন খুঁজে পাবে। মনে মনে কুহু আবার প্রণাম জানালো দেবী কুতেতিকে। আর প্রতিজ্ঞা করলো যেমন করেই হোক খুশীকে ওর বাবার সাথে মিলিয়ে দিতে হবে।।
দিনের শেষে কুহু গিয়ে বসে গঙ্গার ধারের বাঁধানো বেদিতে। মনটা যেনো ভোরে আছে তার আনন্দে। মনের বিশ্বাস যেনো ক্রমশ দানা বাঁধছে মায়াময়ী দেবী কুতেতির অসীম দিব্যশক্তির প্রতি। জীবনের চলার পথটা যেন তিনি অনেকটা সুগম করে দিয়েছেন। তাহলে কি শেষে করুণাময়ী দেবী কুহুকে শাপমোচনের বরদান টাও দেবেন? দীপ্ত মন যেনো স্বপ্নের ডানা মেলে দিতে চায়। তাকে ফিরে নিয়ে যেতে চায় তার ফেলে আসা অতীতে।।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পরের দিন সকালে খুশীর থেকে বাবার নাম ঠিকানা নেওয়া হবে। কিন্তু খুব হতাশ হলো জেনে যে তাদের বাড়ি আমেরিকার কলোরাডো রাজ্যে। বিদেশ ভূমিতে গিয়ে তাহলে কি কুহুর পক্ষে সম্ভব হবে খুশীর বাবার খোঁজ নেবার? কিন্তু একটা কিছু তো সূত্র বের করতেই হবে, কুহু যে দেবী কুতেতির কাছে সংকল্প নিয়েছে। আর সূত্রটা বোধহয় বের হলো যখন খুশী ওর বাবার নাম বললো, শান্তনু রায়। সাথে এক আশ্চর্য মিল যে ওর মায়ের নাম ও কবিতা, মানে কবিতা রায়। শান্তনু রায় নামটা তো কুহুর খুব চেনা নাম লাগছে। কথায় কথায় খুশীর থেকে আরো জানা গেলো যে ওর দাদু উত্তরবঙ্গে কোনো বয়স্ক আশ্রমে থাকে আর নাম সুমন্ত্র রায়। ক্ষণিকের জন্যে কুহুর শরীরে যেনো তড়িৎ প্রবাহ বয়ে গেলো। খুব বিস্মৃত হোলো জেনে যে খুশীর রক্তের সম্পর্ক আছে সুমন্ত্রর সাথে। তাহলে কি খুশীর সূত্রে আবার করে সে সুমন্ত্রর সংস্পর্শে আসবে? কিন্তু সে যে সুমন্ত্রকে পরিত্যাগ করে এসেছে। তাহলে কি সে শান্তনুকে খোঁজার সংকল্প পরিত্যাগ করবে? মনের ভিতর আলোড়ন চলতে থাকে পক্ষে ও বিপক্ষে। শেষে কুহু স্থির করে সে শান্তিনীড়ে যাবে সুমন্ত্রর থেকে শান্তনুর খোঁজ নিতে। সে যে দেবী কুতেতির কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে খুশীকে ওর বাবার সাথে মিলিয়ে দেবার।।
সুমন্ত্র আজ মানসিক ভাবে পুরো বিধ্বস্ত। কুহুর শান্তিনীড় ছেড়ে যাওয়াকে সে কোনোদিন মন থেকে গ্রহণ করতে পারেনি। তার ওপর বিচ্ছেদের দিনে কুহুর সেই লাঞ্ছনা তার কাছে আজও যেনো দুঃস্বপ্ন হয়ে রয়ে গেছে। ছেড়ে যাবার আগে সে কুহুকে কিছু সত্য বলতে চেয়েছিলো কিন্তু তার বুকে ব্যথা ওঠায় সেটা শেষ পর্যন্ত বলে উঠতে পারেনি। আজ তাই অবমাননার গ্লানিতে আচ্ছাদিত সুমন্ত্রর আত্মবিশ্বাস প্রায় বিলুপ্তির পথে। সাথে গত এক বছর যাবত শরীরের প্রতি অরাজকতা করে আজ সে যক্ষা রোগের শিকার হয়েছে।।
হঠাত করে কুহুকে শান্তিনীড়ে দেখে সুমন্ত্র অবাক হলো। অবচেতন মনে আশার সঞ্চার হয় যে তার শরীর খারাপের খবর পেয়ে বুঝি কুহু ছুটে এসেছে তাকে সঙ্গ দিতে, তাকে সুশ্রূষা করার সংকল্প নিয়ে। প্রথমে সুমন্ত্রর এই দুরবস্থা দেখে কুহুর ভিতরটা কেঁদে ওঠে। কিন্তু আজ তার মনোভাব সুদৃঢ় আর সংকল্প অটুট। আজ সে মনকে দুর্বল করে দিতে চায়না। নিজেকে তাই পরক্ষণে সামলে নিয়ে সুমন্ত্রকে জানায় নাতনি 'খুশীর' খবর আর তার আসার উদ্দেশ্য। সুমন্ত্র এখন খুব দুর্বল হয়ে গেছে। তার কথা বলতে গিয়ে হাঁফ আসছে। তবু কষ্টের সাথে শোনালো শান্তনুর দুঃস্বপ্নের গল্প। শান্তনু পরিবার নিয়ে ২০১৩ সালের জুন মাসে আমেরিকা থেকে আসে আর তারপর বেড়াতে যায় গাড়োয়ালের চারধামে। সেখানে কেদারনাথে থাকাকালীন অলকানন্দার প্রলয়ে হঠাত করে ওরা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর শান্তনুর যখন জ্ঞান ফেরে তখন ও হাসপাতালে ভর্তি আছে। অলকানন্দার খরস্রোতে মেরুদণ্ডে গভীর আঘাত পেয়েছে। কোনোরকমে নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও স্ত্রী আর মেয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা হবার পরে এখন কয়েক মাস বিছানায় রেস্ট নিতে হবে। তাই নিরুপায় হয়ে দেশের বাড়িতে একা থাকে কেয়ার টেকারের সহায়তায়। শান্তনুর এই বিপর্যয়ের গল্প শুনে খুব বিষণ্ণ হয় কুহু। তার স্ত্রী ও মেয়ের খবর তো জানা ছিল, কিন্তু তার যে আজ এত কঠিন অবস্থা তা জানা ছিল না। পুরো রায় পরিবারের দুর্দশা দেখে কুহু কুতেতি দেবীর কাছে সকলের মঙ্গল কামনা করে। তারপর সুমন্ত্রর থেকে দেশের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে রওনা হয়ে যায়। সুমন্ত্র তার কাছ থেকে পাঁচ মিনিটের সময় চায়। সে আজ কুহুর থেকে নিজের জন্যে কোনো আনুকূল্য কামনা করে না। শুধু কুহুকে বিনীত নিবেদন করে যেনো শান্তনু আর খুশীর সে খেয়াল রাখে। আর তারপর তাদের ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে কিছু অব্যক্ত কথা বলার চেষ্টা
করে। কিন্তু দুর্বল সুমন্ত্র তা বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে পড়ে, তাই কথা অব্যক্তই থেকে যায়। হতভাগ্য সুমন্ত্র আরো একবার বঞ্চিত হয় কুহুর কাছে সত্যের উন্মোচন করতে। কুহু মনে মনে সুমন্ত্রর আরোগ্য কামনা করে সেখান থেকে বিদায় নেয় শান্তনুর উদ্দেশে।।
কেয়ার টেকারের কাছ থেকে শান্তনু খবর পায় কোনো মহিলা তার সাথে বুঝি দেখা করতে এসেছে। মহিলা শুনে শান্তনু হকচকিয়ে যায়, সত্যিই কি ওর স্ত্রী কবিতা তাহলে ফিরে এসেছে। কিন্ত অল্পক্ষণেই তার সমস্ত উচ্ছ্বাস বিষণ্ণতায় বদলে যায়। কুহুর মুখে শান্তনু স্ত্রী কবিতার চির বিদায়ের গল্প শোনে। ক্ষণিকের জন্যে স্তব্ধ হয়ে যায় ওর ভাষা, নীরব হয়ে যায় আকাশ বাতাস। শুধু চোখের দুই কোণ বেয়ে দুই ফোঁটা অশ্রুধারা ঝরে পড়ে বালিশের গায়ে। তার মাথায় হাত রেখে কুহু সহানুভূতি জানায়। এই অল্প বয়সে জীবনে এতো বড় ঝড়। তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে কুহু শোনায় খুশীর গল্প, তাকে উদ্দীপ্ত করতে। আবার ঠোঁটের কোণ থেকে মৃদু হাসি ভেসে ওঠে আদরের খুশী ভালো আছে জেনে। কুহুর থেকে সহানুভূতি পেয়ে শান্তনু যেনো আশ্বস্ত হয়েছে। কুহুর সান্নিধ্যে আজ হঠাত করে যেনো বাঁচার লয়টা আবার খুঁজে পেয়েছে। স্বল্প সময়ের সাক্ষাত যেনো সমস্ত বিষাদকে আজ দূর করে দিয়েছে। তার মনে পড়ে যায় শান্তিনীড়ে ঠিক তেমনটাই কুহু করেছিলো তার বাবার জন্যে।।
শান্তনু এবার ফিরে আসে কুহুর প্রসঙ্গে। বাবা ওকে তাদের বিচ্ছেদের সব গল্প শুনিয়েছে আর জানিয়েছে কুহুর নতুন ঠিকানা আশানিকেতনের। ঠিক হয় চারধাম যাত্রা শেষে শান্তনু আশানিকেতনে যাবে। আর সেখানে কুহুকে তার ভুল বোঝাবুঝির সংশোধন করাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেই পরিকল্পনা সার্থক হয়ে ওঠেনি। আগে দুই বার চেষ্টা করেও আজ অবধি বাবা সে কথা কুহুকে বলে উঠতে পারেনি। একবার বুকে ব্যথা আর একবার দুর্বলতায় বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়া। আজ তাই শান্তনু সেই সত্যের উন্মোচন করতে চায়। সে করে দিতে চায় আজ দুই প্রৌঢ়ের শাপমোচন। আর বাজিয়ে দিতে চায় তাদের মহা মিলনের শঙ্খধ্বনি।।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
জয় কলেজ জীবনে বাবা মাকে প্রস্তাব দিয়েছিলো কুহুর সাথে বিয়ের জন্যে। রক্ষনশীল পরিবার হিসেবে প্রথমে সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। পরে জয়ের প্রবল ইচ্ছায় পরিবারের প্রথা অনুযায়ী কুলপুরোহিতের সাথে তাদের বিবাহ নিয়ে বিচার বিনিময় করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত জয়ের কুষ্ঠিতে তার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর মৃত্যুযোগ ধরা পড়ে। জয়-কুহু নামের জুড়িতেও দোষ খুঁজে পাওয়া যায়। সাথে কুল পুরোহিত জানায় যে এই দোষ কাটানোর কোনো উপায় নেই শাস্ত্রে। তাকে এই পরিণতি স্বীকার করতেই হবে। শাস্ত্রে বিশ্বাসী জয় সেদিন কুহুর জীবন রক্ষার তাগিদে তার ভালোবাসাকে বিসর্জন দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কুহুকে সেদিন সেকথা বোঝানো সম্ভব ছিল না। তাই তার প্রতি বিদ্বেষ তৈরী করার জন্যে কুহুর সাথে সে দুর্ব্যবহার করে। পরবর্তী কালে কুলের প্রদীপ রক্ষার খাতিরে সুমন্ত্রকে বাবা মা বিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কুলপুরোহিতের গণনা অনুযায়ী তার স্ত্রী ভাগ্যের পরিহাসের শিকার হয়, জয় শেষপর্যন্ত তার স্ত্রী কে হারায়। জয় আজ স্ত্রী বিয়োগের বেদনার মধ্যেও যেনো কুহুর জীবন রক্ষার তৃপ্তি অনুভব করে। স্ত্রীকে হারানোর ঘটনাটা সে পূর্বনির্ধারিত পরিণাম হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। সময়ের সাথে জয়ের নতুন করে আশার সঞ্চার হয় কুহুর কাছে ফেরার। কিন্তু কুলপুরোহিতের গণনা অনুযায়ী এখনো অন্তরায় থেকে যায় তাদের 'নামের জুড়ির' দোষে। সাথে দূর করতে হবে তার প্রতি কুহুর বিদ্বেষ ভাবও। দুই সমস্যার সমাধান সুত্র বের হয় নিজের নাম পরিবর্তন করে 'সুমন্ত্র' নাম নেয়া, আর প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজের পরিচয় পরিবর্তন করার মধ্যে। লোকসমক্ষে দুটি পরিবর্তনকে গ্রহণযোগ্য করতে জয় দুটো আলাদা গল্প তৈরী করে। এইভাবে কুহুকে নতুন করে জয় করার অভিপ্রায়ে জয় গ্রহণ করে নতুন রূপ আর নতুন নাম।।
শান্তনুর কথা শেষ হতে হতে কুহুর গলা বিষাদে শুকিয়ে আসে। ওর চোখ দুটো জলে ভারী হয়ে যায়। কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে গিয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলে। তারই জীবন রক্ষার তাগিদে যে জয় আজ এতো বড়ো আত্মত্যাগ করেছে সেই জয় কেই কিনা সে এতোদিন ঘৃণা করে এসেছে। সে যেনো নিজেকে আর ক্ষমা করে উঠতে পারে না। আর সময় নষ্ট না করে কুহু তৎক্ষণাৎ শান্তিনীড় উদ্দেশে রওনা হয়।।
যেতে যেতে কোনো দূর অচেনা পুরী থেকে যেনো নতুন করে জীবন গড়ার এক সুর ভেসে আসে কুহুর কানে। কুহু যেনো আরো একবার অনুভব করে দেবী কুতেতির আশীর্বাদ। শান্তিনীড়ে সুমন্ত্রর কাছে গিয়ে সে ক্ষমা প্রার্থনা করে। পুনরায় কুহুকে আসতে দেখে বিস্মিত হয় সুমন্ত্র। পরক্ষণে সে বুঝে নেয় ঘটনাক্রম। লজ্জিত হয় কুহুর কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা শুনে। যে কুহুর কাছে এতোদিন সে ছিল এক লাঞ্চনা আর ঘৃণার পাত্র আজ হঠাত করে সে শ্রদ্ধা আর সম্মানের ব্যক্তি হয়ে ওঠে। সুমন্ত্র তাকে বসার জন্যে অনুরোধ জানায়। কুহু সুমন্ত্রর চোখে চোখ রাখে, আর দুজনে মিলিয়ে যায় এক স্বপ্নের দেশে। ওদের চোখের পলক স্তব্ধ হয়ে যায়। নীরব হয়ে যায় ওদের বাক, স্তব্ধ হয়ে যায় ওদের শ্বাস। ওদের বুকে আজ অভিমান আছে কিন্তু নেই কোনো অভিযোগ। এইভাবে দীর্ঘ সময় ধরে হারিয়ে যাওয়া দিন গুলোকে নতুন ভাবে ওরা সুদে আসলে উপভোগ করে নিতে থাকে। ওরা আজ যেনো বয়সের সীমা আর জন্মের বন্ধন কে পরাস্ত করে উন্মত্ত হয়ে ওঠে অষ্টাদশের লীলায়। নতুন আলোর ছটায় যেনো আজ দিগন্ত রঙিন হয়ে গেছে। সংকল্পের পূর্ণতার ছোঁয়ায় আজ যেনো তাদের সত্তা সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। আজ এক নতুন আকাশের নীচে যেনো ওদের পুনর্জন্ম হয়েছে। চোখের ভাষাতেই আজ ওরা বাকি জীবন একসাথে কাটানোর অনুচ্চারিত সম্মতি প্রকাশ করেছে। সুমন্ত্র কুহুর পাশে বসে তার হাতদুটি ধরে। পুরোনো রঙের স্পর্শে ধন্য হয়ে যায় তাদের প্রৌঢ় প্রেম। আজ মা কুতেতিকে সাক্ষী রেখে গান্ধর্ব মতে তারা জুড়ে নেয় দুটি মন।।
কুহুর অনুরোধে কবিতাকে জীবন সঙ্গীনী বানিয়ে শান্তনু আজ সুখের সংসার বেঁধেছে আশা নিকেতনে। আর কুহু সুমন্ত্রর সাথে ফিরে গেছে তাদের স্বপ্নের রাজপ্রসাদ শান্তিনীড়ে। কবিতা আর কুহুর সুশ্রূষায় শান্তনু আর সুমন্ত্র আজ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছে। খুশী তার মা পেয়েছে, শান্তনু তার কবিতা, আর কুহু ফিরে পেয়েছে তার প্রথম প্রেম।।
-------------------------------------
Posts: 95
Threads: 0
Likes Received: 270 in 111 posts
Likes Given: 751
Joined: Jun 2021
Reputation:
60
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(28-11-2021, 12:10 AM)sunilgangopadhyay Wrote: besh galpo
এসব গল্পও কিছুরা এখানে পড়েন দেখে খুব ভালো লাগলো ..
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে !!
•
Posts: 273
Threads: 0
Likes Received: 106 in 86 posts
Likes Given: 2,260
Joined: Mar 2020
Reputation:
2
Khub mishti Golpo dada!!
Onek dhonyobaad golpo post korar jnyo.
Apnar shorir kemn achhe ekhn??
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(30-11-2021, 09:22 AM)WrickSarkar2020 Wrote: Khub mishti Golpo dada!!
Onek dhonyobaad golpo post korar jnyo.
Apnar shorir kemn achhe ekhn??
পুরো ফিট
•
|