Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
লক আউট
কয়েকদিন ধরেই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু ম্যানেজমেন্ট যে এত তাড়াতাড়িই নোটিশটা দিয়ে দেবে, সেটা কেউ আশা করে নি।
রোজকার মতোই ছেলেকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে ফ্যাক্টরিতে পৌঁছিয়েছিল প্রশান্ত। এই কলেজটাতে পড়ানোর মতো সামর্থ প্রশান্তর নেই। কিন্তু তবুও অন্যান্য অনেক খরচ বাঁচিয়ে বউয়ের মুখ রাখতে এই নামী কলেজটাতে ভর্তি করেছিল ও। তার আগে অবশ্য ওকে আর মনিকা- দুজনকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে – লিখিত আর তারপর ইন্টারভিউ। ছেলেরও পরীক্ষা হয়েছে।
শেষমেশ যখন লিস্ট বেরিয়েছিল, তখন বেশ ওপরের দিকেই নাম ছিল প্রশান্তর ছেলের।
কিছুটা অফিস থেকে লোন করে, কিছুটা বন্ধুবান্ধবদের থেকে ধার করেই ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল ছেলেকে।
অন্য অনেক শখ আহ্লাদ বাদ দিতে হয়েছে নিজেদের এই আট বছরের বিবাহিত জীবন থেকে – যেমন ও আর মনিকা ছেলে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সিনেমা দেখে না, বাইরে খেতে যায় না, প্রথম কবছর নিয়ম করে বাইরে ঘুরতে যেত – সে সবই এখন বন্ধ। শুধু ছেলেকে ভাল কলেজে ভর্তি করবে বলে।
বেরনোর সময়ে রোজকার মতোই মনিকা প্রশান্তর হাতে লাঞ্চ বক্স তুলে দিয়েছিল। ও জানে ভেতরে কী আছে – রোজকার মতোই কাল রাতের বেচে যাওয়া রুটি-তরকারী বা সামান্য মাখন লাগানো পাউরুটি। প্রতিদিনই এটাই খেতে হয় ওকে। ভাল না লাগলেও ছেলের পড়াশোনার খরচের কথা ভেবে এর থেকে ভাল টিফিন দেওয়া যে সম্ভব না, সেটা প্রশান্ত ভালই জানে।
ছেলের জন্য অবশ্য নিত্যনতুন টিফিন হয়!
ছেলেকে কলেজে দিয়ে বাসে আর ট্রেনে করে প্রায় যখন লিলুয়া নামবে, তখনই এক কলিগের ফোন এসেছিল।
‘প্রশান্তদা, তুমি কোথায়?’
‘এই তো লিলুয়া ঢুকছে। কেন রে?’
‘তাড়াতাড়ি এস,’ বলেই ফোনটা রেখে দিয়েছিল ওর জুনিয়ার অতনু।
স্টেশনের কাছেই ওদের ফ্যাক্টরি। আরও বেশ কয়েকজন কলিগও ট্রেন থেকে নেমেছিল।
সবাই মিলে কথা বলতে বলতে যখন ফ্যাক্টরির ঠিক আগে মোড়টা ঘুরল, ওদের চোখে একটা বড় জটলা চোখে পড়ল।
এ ওর দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করেছিল, কী ব্যাপার! কোনও ঝামেলা নাকি!
এক মিনিটেরও কম সময়ে ফ্যাক্টরি গেটে পৌঁছেই ওদের সবার মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়েছিল।
ম্যানেজমেন্ট লক আউট ঘোষণা করে দিয়েছে।
সকলেরই গলা চড়ছে! বিশেষ করে প্রশান্ত বা অতনুর মতো অল্পবয়সীদের। পুরণো কিছু স্টাফ রয়ে গেছে যারা পে রোলে আছে, কিন্তু নতুনদের সবাইকেই কন্ট্র্যাক্টে নিয়েছিল কোম্পানি। যার একটা অন্যতম শর্ত ছিল, লক আউট হয়ে গেলে কোনও বেতন পাবে না এরা। পুরণো লোকেরা অবশ্য আইন মেনে কম বেতন পাবে, কিছু সুযোগসুবিধাও বন্ধ হবে।
সেসব নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। তাই গেটে লক আউট নোটিশ কন্ট্র্যাক্টে থাকা কর্মীদের জন্য কী বার্তা বয়ে আনল, সেটা সবাই জানে!
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
আশেপাশে পুরণো লোকরাও কয়েকজন আছে – নতুনদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
একটু পরেই ইউনিয়নের দাদারা চলে এসেছিল গেটে – গরম গরম বক্তৃতা দিয়ে চা খেয়ে ম্যানেজমেন্টকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে গিয়েছিল।
তারাই পাঠিয়ে দিয়েছিল ডেকরেটার্সের লোকজন – প্যান্ডেল খাটিয়ে, চাদর বিছিয়ে গেটে অবস্থান করতে হবে। এসেছিল মাইকও।
দুপুরের দিকে ভীড়টা আস্তে আস্তে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। প্রশান্ত আর অতনু – দুজনেই বেলগাছিয়ায় যাবে। একই সঙ্গে স্টেশনের দিকে হাটা দিয়েছিল ওরা।
কীভাবে সংসার চলবে, অন্য কোথাও কাজকর্মের কোনও খোঁজ আছে কী না, এসবই নীচু গলায় আলোচনা করতে করতে আসছিল ওরা।
প্রশান্তর তো তাও বিয়ের দশ বছর হয়েছে, সামান্য কিছু জমানো টাকা, এল আই সি, ফিক্সড ডিপোজিট আছে! কিন্তু অতনু যা জমিয়েছিল, তার একটা বড় টাকা গেছে চিট ফান্ডে, আর অনেকটা টাকা গেছে গত বছর বিয়ের খরচে। হাতে প্রায় কিছুই নেই অতনুর।
‘তুমি তো তাও কিছু জমিয়েছ প্রশান্ত দা। আমার অবস্থাটা ভাব! চিট ফান্ডের হারামিগুলো অত টাকা মেরে দিল আর বিয়ের সময়ে খরচ হয়ে গেল! কী করে যে চালাব জানি না! ভাবতেই পারছি না কিছু! উফ,’ কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল অতনু।
ওকে ছোট ভাইয়ের মতোই দেখে প্রশান্ত। দুই ফ্যামিলিতে সামাজিক মেলামেশাও আছে। মনিকাকে বৌদি বলে ডেকে খুব মান্য করে অতনুর বউ শিউলি। মফস্বলের মেয়ে, খুব শান্ত শিষ্ট।
‘তোদের আই টি ফিল্ডে তো তাও কাজকর্ম পাওয়া যায় রে ভাই। কিন্তু আমি কী করব কে জানে!’ বলল প্রশান্ত।
‘চলো দেখা যাক কী হয় দাদা। কিছু তো একটা করতেই হবে,’ বলতে বলতেই ওরা স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিল।
মনিকাকে আগেই মোবাইলে জানিয়েছিল খবরটা প্রশান্ত। তাই ওদের দুকামরার ভাড়ার ফ্ল্যাটে অসময়ে বেল বাজার পরে দরজা খুলে বরকে দেখে অবাক হয় নি মনিকা।
আর কয়েকদিন ধরেই যে লক আউট নিয়ে ফ্যাক্টরিতে আলোচনা চলছে, সেটা প্রশান্ত মনিকাকে জানিয়ে রেখেছিল। দুজনের মধ্যে জমানো টাকা পয়সা নিয়ে বেশ কয়েকবার কথাও হয়েছে।
জুতো খুলে কাঁধের ব্যাগটা রেখে বেতের সোফায় ধীরে ধীরে বসেছিল প্রশান্ত। তারমধ্যেই একগ্লাস জল নিয়ে এসেছিল মনিকা।
বরের হাতে জলের গ্লাসটা দিতে দিতে মনিকা বলল, ‘বেশী ভেব না। ঠিক ব্যবস্থা হয়ে যাবে।‘
‘কী করে ব্যবস্থা হবে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না।‘
‘তুমি চেঞ্জ করে নাও। তারপর কথা বলব। আমি কয়েকটা ব্যাপারে খোঁজখবর করেছি। সব বলছি।‘
‘কী ব্যাপারে খোঁজখবর করেছ?’
‘আরে তুমি চেঞ্জ কর আগে। সব বলছি। তোমাকে বলব না তো কাকে বলব!’
জলটা খেয়ে খালি গ্লাসটা টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়াল প্রশান্ত। শোয়ার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল, ‘কেস টা কী বল তো?’
‘ধুর বাবা। বলব। চেঞ্জ করে এসো আগে।‘
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
একটা ছোট ঘরে ছেলে কলেজ থেকে ফিরে খেয়ে দেয়ে ঘুমচ্ছে – পর্দাটা সরিয়ে দেখে নিল প্রশান্ত।
তারপর নিজেদের শোয়ার ঘরে গিয়ে বাথরুমে ঢুকল একবার। বেশ কিছুক্ষণ শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে ঠান্ডা হল, তারপরে শর্টস পড়ে বাইরে এল।
‘এবার বলো তো! কী ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছ তুমি?’ রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বউকে জিগ্যেস করল প্রশান্ত।
বর আর নিজের জন্য চায়ের জল বসিয়েছিল মনিকা।
‘উফ তর সয় না তোমার আর! যাও তো গিয়ে বসো সোফায়, চা নিয়ে এসে সব বলছি।‘
মিনিট পাঁচেক পরে দুকাপ চা আর বিস্কুট নিয়ে পাশে এসে বসল মনিকা।
কয়েক চুমুক দেওয়া হয়ে গেল চায়ের কাপে, তাও মনিকা কিছু বলছে না।
তারপর এক নিশ্বাসে মনিকা বলল, ‘তুমি তো কাজকর্ম খুঁজবেই, সঙ্গে আমাকেও কিছু করার পারমিশন দিতে হবে তোমাকে।‘
একটু চা কাপ থেকে চলকে প্রশান্তর হাঁটুতে পড়ল।
‘কাজ মানে? তুমি কী কাজ করবে?’
‘কেন আমি তো গ্র্যাজুয়েট। মাস্টার্সটাও শেষ করতাম যদি না বিয়ে হয়ে যেত! কোনও কাজ পাব না?’
‘সংসার, ছেলের দেখভাল?’
‘সেসব তো পড়ে। আগে বলো তুমি পারমিশান দেবে!’
‘তুমি কি কোনও স্পেসিফিক কাজের খবর পেয়েছ?’
পাশের তাক থেকে একটা ছোট মতো কী কাগজ বার করল – ছাপানো হ্যান্ডবিলের মতো। কাগজটা মনিকা এগিয়ে দিল প্রশান্তর দিকে।
এরকম হ্যান্ডবিল মাঝে মাঝেই খবরের কাগজের মধ্যে থাকে রিটায়ার্ড মানুষ, গৃহবধূ – সকলেই ঘরে বসে আয় করুন – এরকম লেখা থাকে হ্যান্ডবিলের হেডিংয়ে।
সবগুলোই নোংরার ঝুড়িতে চলে যায়। সেরকমই একটা হ্যান্ডবিল মনিকা এগিয়ে দিতে অবাকই হল প্রশান্ত!
‘এটা কি?’
‘ঘরে বসে কাজ করতে হবে, যে কেউই করতে পারে। রিটায়ার্ড লোক, হাউসওয়াইফ – সবাই। এটা শিউলি আমাকে কাল দিয়েছে। অতনুও তো বাড়িতে বলেছে যে লক আউট হতে পারে। শিউলিদের কাগজের সঙ্গে দিয়েছিল এটা। গৃহবধূরাও বাড়িতে বসে রোজগার করতে পারে, এটা দেখেই ওর মাথাতে এসেছিল যে আমি আর ও ট্রাই করি না কেন! কাল এসে দিয়ে গেছে কাগজটা। অতনুকে এখনও বলে নি,’ মনিকা থামল সবটা গড়গড় করে বলে।
দুটো ফোন নম্বর দেওয়া আছে কাগজটায়।
এই অবস্থায় শুধুই জমানো টাকায় না খেয়ে যদি বাড়িতে বসে কিছু রোজগার করতে পারে মনিকা, বা শিউলি, তাহলে ওর বা অতনুর আপত্তি করার তো কোনও কারণ ও খুঁজে পেল না।
‘হুম। দেখা যেতেই পারে। ফোন করেছিলে না কি এই নম্বরে?’ জিগ্যেস করল প্রশান্ত।
এত সহজে যে পারমিশান পাওয়া যাবে, সেটা মনিকা ভাবে নি।
‘করেছিলাম। ওই টেলি কলারের কাজ। ওরা একটা সিম দেবে, হ্যান্ডসেট আমাদের। ঠিক মতো কাজ করতে পারলে তো বলছে মাসে হাজা ১৫-২০ও রোজগার হতে পারে!’
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
‘বলো কি! বাড়িতে বসে শুধু ফোনে কথা বলে ১৫-২০ হাজার! কীসের ব্যবসাপত্র এদের? ভাল করে খোঁজ নিতে হবে। এটা থাক। অতনুর সঙ্গে কথা বলে নেব।‘
‘তবে একটা দুদিনের ট্রেনিং নিতে হবে। তারজন্য ৫০০ টাকা লাগবে।‘
‘ওহো তাই বলো! একটা ক্যাচ আছে। দেখবে হয়তো কোনও কাজই পাবে না, কিন্তু এদের পকেটে ৫০০ টাকা চলে যাবে। ফ্রড না তো?‘
‘দেখো চেষ্টা করতে তো অসুবিধা কিছু নেই! গিয়ে দেখি না ট্রেনিংটাতে!’
‘কবে যেতে হবে?’
‘এই শনিবার একটা ব্যাচের ট্রেনিং আছে। যদি কালকের মধ্যে ওদের অফিসে জানাই তাহলে সেদিনই হয়ে যাবে।‘
‘ঠিক আছে,’ বলল প্রশান্ত।
ফোনটা হাতে নিয়ে অতনুর নম্বর টিপল প্রশান্ত।
গোটা ব্যাপারটা বলল। ওর বউ কিছু জানায় নি ওকে এখনও অবধি। কিন্তু প্রশান্তর মত আছে জেনে অতনুও না করল না। তবে বিকেলে এসে ওরা দুজনে একবার ওই অফিসটায় যাবে ঠিক করল।
ছোট অফিস, কিন্তু বেশ সাজানো গোছানো। দমদমের একটা মধ্যবিত্ত পাড়ায় অফিসটা। কথাবার্তা হল এক মহিলা আর এক কম বয়সী ছেলের সঙ্গে।
কোম্পানীটা ওই ছেলেটিরই। বেশ চলতাপুরিয়া ছেলে। দুজনকেই বোঝালো যে টেলি কলারের কাজটা কি, কারা ওদের ক্লায়েন্ট – এসব। বেশ কিছু কন্ট্র্যাক্টও দেখালো। যেসব ক্লায়েন্ট কোম্পানিগুলোর নাম দেখালো, একটাও পরিচিত নাম নয়, বা বড় কোম্পানিও নয়।
‘স্যার বড় কোম্পানি হলে কি আর আমাদের মতো ছোট কোম্পানিকে দিয়ে কাজ করাবে? তারা তো সেক্টর ফাইভে বি পি ও-গুলোতে চলে যাবে। আমরা খুব কম রেটে কাজ ধরতে পারি কারণ কোনও এস্টাব্লিশমেন্ট খরচ নেই তো! শুধু কল পিছু কমিশন। আপনাদের স্ত্রীদের তো কোনও ভয় নেই – বাড়িতেই তো থাকবেন। শুধু ফোনে ফোনেই কাজ,’ বলল ছেলেটি।
অপছন্দ হওয়ার মতো কোনও কারণ পেল না প্রশান্ত বা অতনু।
ও নিজে যেহেতু আই টি-র ছেলে, তাই ও জানে যে ছোট ছোট কোম্পানিগুলো, যারা বি পি ও এফর্ড করতে পারে না, তার এরকম ছোট ছোট কোম্পানিকে দিয়ে কাজ করায়।
ফেরার সময়ে ওরা দুজনেই বলাবলি করছিল যে ট্রেনিংয়ের দুদিন আর তারপরে অফিসে কোনও দরকারে যেতে হলে শিউলি আর মনিকা মেট্রোয় করেই একটা স্টেশন চলে এসে একটা অটোতে এখানে চলে আসতে পারবে।
বাড়ি পৌঁছিয়ে মনিকাকে বলল সব।
শিউলিও সব শুনল অতনুর কাছে।
পরের দিন ওদের বরেরা যখন কাজকর্মের খোঁজে বেরিয়ে গেল, তখন মনিকাই ওই অফিসে ফোন করে দুজনের নাম লিখিয়ে দিল শনিবারের ট্রেনিংয়ের জন্য।
সন্ধের দিকে যখন ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরল প্রশান্ত আর অতনু, তাদের দুজনকেই কিছুটা সময় দিয়ে মনিকা আর শিউলি প্রথমে জেনে নিল যে কোনও খবর পাওয়া গেল কী না, আর তারপরে একসময়ে জানিয়ে রাখল যে শনিবারের ট্রেনিংয়ের জন্য ওরা লিস্টে নাম তুলে দিয়েছে।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পরের দুটো দিনও এভাবেই কেটে গেল। প্রশান্ত কয়েকটা জায়গা থেকে আশ্বাস পেয়েছে, সি ভি জমা দিয়েছে। কিন্তু সামনের মাসের আগে কোনও অশিওরেন্স কেউ দিতে পারছে না।
অতনুর এক বন্ধু তার আই টি ব্যবসার কাজে সঙ্গী হওয়ার প্রোপোজাল দিয়েছে। অতনু বোধহয় তাতেই রাজী হয়ে যাবে। বন্ধুটার বেশ কয়েকটা ব্যবসা – তাই আই টি তে ঠিকমতো মন দিতে পারছে না। কাজ জানা একজন কাউকে খুঁজছিলই যে। অতনুকে কিছুটা কম টাকায় পেয়ে গিয়ে তার লাভই হল।
শনিবার সকাল সকালই দুই বউ আর প্রশান্তর ছেলেকে নিয়ে পাঁচজন হাজির হল দমদমের ওই অফিসে।
জনা পনেরো মহিলা জড়ো হয়েছেন দেখা গেল। বেশ কয়েকজন হাউসওয়াইফ। বাকিরা কম বয়সী মেয়ে – বোধহয় কলেজে পড়ে বা পড়াশোনা শেষ করে বেকার বাড়িতে বসে আছে।
ট্রেনিং বিকেলে শেষ হবে। তাই এখানে অপেক্ষা করার মানে হয় না। প্রশান্ত ছেলে আর অতনুকে সঙ্গে নিয়ে মেট্রো ধরতে এগিয়ে গেল। মনিকাকে বলে গেল, কোনও অসুবিধা হলেই যেন ফোন করে।
এই প্রথম মনিকা আর শিউলি কাজে বেরিয়েছে – দুজনেই বেশ টেনশানে আছে।
তবে এমন নয় যে বাড়ি থেকে দুজনের কেউ বেরয়ই না! কেনাকাটা, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া – এসব একা একা করতে দুজনেই বেশ স্বচ্ছন্দ্য। তবে চাকরী এই প্রথম।
প্রথম দিনের ট্রেনিংয়ের সময়ে ওদের ভাল করে বুঝিয়ে দেওয়া হল কয়েকটা বিষয় – কলারদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হবে, কী কী ধরণের কল আসতে পারে, আবার নিজেদের থেকে কল করতে হবে প্রোডাক্ট পুশ করার জন্য যখন, তখন কী কী বলতে হবে – এসব।
পরের দিন প্র্যাক্টিকাল করে করে সবাইকে অভ্যেস করানো হল। রবিবার বিকেলের দিকে কয়েকটি অল্প বয়সী মেয়েকে আলাদা করে কী যেন ট্রেনিং দিতে নিয়ে গেল মালিক ছেলেটি।
রবিবার ট্রেনিংয়ের শেষে কয়েক পাতা জেরক্স করা নোটস আর একটা করে মোবাইলের সিম কার্ড দিয়ে দেওয়া হল সবাইকে। সঙ্গে দেওয়া হল প্রায় দশ পাতার একটা নাম, ফোন নম্বরের লিস্ট। প্রায় ৫০০ ফোন নম্বর।
পরের দিন থেকে কাজ শুরু হয়ে যাবে।
মনিকা আর শিউলি দুজনেই বেশ উত্তেজিত।
একা একা কাজটা করতে পারবে কী না শিউলি সে ব্যাপারে খুব শিওর ছিল না, তাই ঠিক করল অতনু আর প্রশান্ত বেরিয়ে গেলে শিউলি মনিকার কাছে চলে আসবে।
প্রথম কদিন দিনে প্রায় ৫০ টা করে ফোন করে একটা কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স বিক্রির চেষ্টা করল ওরা। যারা আগ্রহ দেখাল, তাদের নামের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে রাখতে হবে। সেগুলো আবার ফোন করে দিনের শেষে অফিসে জানিয়ে দিয়ে তবে ওদের ছুটি।
এক সপ্তাহের কাজের শেষে পেমেন্ট দেবে। তাই পরের শনিবার বেলার দিকে শিউলি আর মনিকা দুজনেই গিয়েছিল অফিসে টাকা আনতে।
সেখানে আরও কিছু মেয়ে আর গৃহবধূও টাকা নিতে এসেছিল। ওদের সঙ্গেই কাজ শুরু করেছিল মনিকা আর শিউলি, কিন্তু ওরা যেখানে প্রায় ৭, সাড়ে ৭ হাজার টাকা পেল, এরা দুজন সেখানে মাত্র আড়াই হাজার!
দুজনেরই চোখে পড়েছিল ব্যাপারটা। শেষে একজন বছর তিরিশেক বয়সের মহিলাকে জিগ্যেসই করল, ‘আচ্ছা দিদি, আপনারা তো অনেক পেমেন্ট পেলেন! আমরা মাত্র আড়াই!’
ওই মহিলা মনিকাকে চোখের ইশারায় পাশের দিকে ডাকলেন।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
গলার স্বর নামিয়ে বললেন, ‘কেন ভাই তোমরা স্পেশাল কল করছ না?’
‘স্পেশাল কল? সেটা কি? কেউ তো কিছু বলে নি!’
‘ও। জানো না? সে কি! অলোক মানে ওই মালিক ছেলেটা, ওর ঘরের বাইরে যে মেয়েটা বসে, পিয়ালী, ওকে জিগ্যেস করো, সব বলে দেবে। সবার সামনে জানতে চেও না যেন। স্পেশাল কলে অনেক বেশী পেমেন্ট তো!‘
কী স্পেশাল কল, কেন তাতে এত বেশী পেমেন্ট, আর এতে ঢাকঢাকগুরগুর কেন, মনিকা বুঝতে পারল না।
ভাবল, থাক পরের সপ্তাহে এসে জিগ্যেস করবে স্পেশাল কলের ব্যাপারটা।
পিয়ালী কিন্তু লক্ষ্য করেছিল যে মনিকা একজন স্পেশাল কলারকে একপাশে ডেকে নিয়ে গেছে।
ও সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের ভেতরে মালিক অলোকদাকে এস এম এস করে জানিয়ে দিয়েছিল।
জবাবও এসেছিল সঙ্গে সঙ্গেই, ‘ওই দুজনকে ভেতরে পাঠাও।‘
পিয়ালী নিজের সীট থেকে উঠে গিয়ে মনিকা আর শিউলিকে বলেছিল, ‘আপনারা দুজনে একবার ভেতরে যান। বস ডাকছেন।‘
‘আসুন আসুন ম্যাডাম। কেমন লাগল প্রথম সপ্তাহ,’ আন্তরিকতা দেখিয়ে মনিকা আর শিউলিকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়েছিল অলোক।
সামনে রাখা চেয়ারে বসে কেমন লাগছে কাজ, কীভাবে পেমেন্ট আরও বাড়াতে পারেন, এসব সাজেশান দিচ্ছিল অলোক।
হঠাৎই বলেছিল, ‘আপনারা যদি স্পেশাল কল এটেন্ড করেন, তাহলে কিন্তু অনেক বেশী রোজগার করতে পারবেন।‘
মনিকা বলল, ‘হ্যাঁ আজ এসেই শুনলাম এই স্পেশাল কলের ব্যাপারটা। ওরা তো অনেক বেশী টাকা পেল। আপনি তো ট্রেনিংয়ের সময়ে কিছু বলেন নি!’
‘আপনারা দুজনে একদম নতুন তো, তাই প্রথমে বলি নি। শিওর ছিলাম না যে পারবেন কী না, বা আদৌ বাড়তি চাপ নিতে রাজী হবেন কী না!’
‘বলুন তো শুনি কী ব্যাপারটা। দেখুন আমাদের হাসব্যান্ডদের ফ্যাক্ট্রি লক আউট হয়ে গেছে, সেটা তো বলেইছিলাম আপনাকে। তাই বেশী পেমেন্ট যদি পাওয়া যায়, সেটাই করব!’ জবাব দিল মনিকা।
তার পরের ঘন্টা খানেক অলোক হাঁ হয়ে থাকা মনিকা আর শিউলিকে বুঝিয়েছিল স্পেশাল কল কী! কীভাবে এটেন্ড করতে হয় সেগুলো – সব।
শেষমেশ যখন ওই অফিস থেকে বেরিয়েছিল মনিকা আর শিউলি, তখন ওরা একরকম বিধ্বস্ত!
মনিকা চাপা স্বরে শিউলিকে বলেছিল, ‘এখনই তুই অতনুকে কিছু বলতে যাস না। আমিও প্রশান্তকে বলব না। একটু ভেবে নিই আগে।‘
সেদিন একটু বেশী পয়সা খরচ করে দুবার অটো পাল্টে বাড়ি ফিরেছিল ওরা। মেট্রো ধরতে ইচ্ছে করে নি।
বাড়ি ফিরে মনিকা অনেকক্ষণ ধরে শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে মনটাকে শান্ত করেছিল। তার পর গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে শোওয়ার ঘরে এসে বিয়েতে পাওয়া ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে গা থেকে তোয়ালেটা ফেলে দিয়েছিল।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
নিজেই নিজের বুকে, কোমরে, নিতম্বে হাত বুলিয়ে নিজেকে পরখ করেছিল অনেকক্ষণ ধরে। বিয়ের প্রায় দশ বছর হতে চলল। চল্লিশ হতে এখনও দু বছর দেরী। ওর ছেলের কলেজের অনেক মায়ের মতো গায়ে গতরে বেড়ে যায় নি ও। মিনিট দশেক যোগব্যায়াম করে রোজ। তাছাড়াও রোজ না হলেও প্রশান্ত আর ও সপ্তাহে অন্তত দুতিন দিন এখনও মিলিত হয়।
ফিগারটা মন্দ নয় এখনও, নিজের গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে মনে মনে বলল মনিকা। তবে দুপায়ের মাঝের ত্রিভুজের চুলগুলো বেশ কিছুদিন ছাঁটা হয় নি। হাত বুলিয়ে দেখল বেশ ঘণ হয়েছে জায়গাটা।
হাত বোলাতে বোলাতে কখন যেন আবেশে ওর চোখ দুটো বুজে এল, আয়নার সামনে থেকে সরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে বসে নিজেকে মেহন শুরু করল মনিকা।
সম্বিৎ ফিরল বেশ কিছুক্ষণ পরে, মোবাইলের আওয়াজে। ঘাড় কাৎ করে দেখল এক বন্ধু – থাক পরে কলব্যাক করে নেব বলে আবারও নিজেতে আবিষ্ট হল মনিকা।
শিউলি নিজের বাড়িতে ফিরে চুপচাপ নিজের ঘরেই বসেছিল। স্পেশাল কলের ব্যাপারটা শুনে থেকেই ওর শরীরের মধ্যে কীরকম একটা অদ্ভূত ফিলীং হচ্ছে, যেটা বলে বোঝানো যাবে না!
প্ল্যানমতো সেদিন বা তারপরের দিন রবিবার ওরা দুজনেই অতনু বা প্রশান্তকে কিছু জানাল না। নিজেদের মধ্যে কয়েকবার কথা হয়েছে ফোনে, কিন্তু কিছু ঠিক করে উঠতে পারে নি। কিন্তু সোমবার অফিসে অলোককে তো বলতেই হবে কিছু।
কাজের খোঁজে প্রশান্ত আর অতনু বেরিয়ে যাওয়ার পরে যখন শিউলি এল মনিকার বাড়িতে, তখনও ওরা জানে না যে কী করবে!
‘কী রে, কী করবি ভাবলি কিছু? ট্রাই করবি নাকি?’ জিগ্যেস করল মনিকা।
‘তুমি কী বলো?’
‘দেখ এখন আমাদের যা অবস্থা, তাতে টাকার তো দরকার, তাই না?’
‘হুম, তা তো বটেই। তাহলে চলো চেষ্টা করি। না পারলে বলে দেব।‘
‘ঠিক আছে। দাঁড়া অলোককে ফোনে বলি।‘
মনিকা অলোককে ফোন করার ঠিক কুড়ি মিনিটের মাথায় প্রথমে শিউলির মোবাইলে একটা ফোন ঢুকল।
ম*ৌদির দিকে তাকিয়ে একটা বড় করে নিশ্বাস নিয়ে ফোনটা তুলল শিউলি। ওর কাঁধে হাত দিয়ে হাল্কা চাপ দিয়ে ভরসা দিল মনিকা। স্পীকারটা অন করে দিল শিউলি।
‘হ্যালো?’
‘হাই শিল্পা?’
মনিকা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতে বলল।
‘হ্যাঁ শিল্পা বলছি। তুমি কে?’
ওপাশ থেকে জবাব এল, ‘আমি কৌশিক। বয়স ৩৪। তোমার তো ২২, তাই না?’
শিল্পা নাম নিয়ে কী কী বলতে হবে সেটা অলোক শিখিয়ে দিয়েছে। প্রাথমিক আলাপের পরেই কৌশিক নামধারী ওই লোকটি জানতে চেয়েছিল, ‘কী পড়ে আছ সোনা তুমি?’
শিউলি জবাব দিয়েছিল নাইটি।
‘আর ভেতরে?’
‘আর কিছু নেই।‘
‘উফফফফফ.. আমি শুধু জাঙ্গিয়া পড়ে আছি, যা গরম!’
‘বাবা, একেবারে রেডি হয়ে আছ দেখি!’
‘রেডি হব না? সেই সকাল থেকে ঠাটিয়ে বসে আছি। বউ বাপের বাড়ি গেছে সাতদিন হয়ে গেল। এ কদিন হ্যান্ডেল মেরে কাটিয়েছি। আজ তোমাকে চুদে শান্ত হব।‘
মনিকা মুখ টিপে হাসছিল, শিউলি মনে মনে শিরশিরিয়ে উঠছিল, কিন্তু তার থেকেও বেশি শিরশিরানির অভিনয় করতে হচ্ছিল ওকে।
তারপরের প্রায় একঘন্টা শিউলিকে অভিনয় করে যেতে হল – আত্মমেহনের অভিনয়। পুরো সময়টা অবশ্য মনিকা কাছে থাকতে পারে নি।
ওর মোবাইলেও একটা ‘স্পেশাল কল’এসে গিয়েছিল। শিউলির দিকে আবারও একটু ভরসা দেওয়ার মতো করে চোখ বন্ধ করে ইশারা করে চলে গিয়েছিল বসার ঘরের সোফায়।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ওর কাছে যে স্পেশাল কলার ফোন করেছিল, সে নিতান্তই কচি – সবে ২১ বছর হয়েছে। তার আবার নাকি একটু ম্যাচিওর্ড পছন্দ। সে ফ্যান্টাসাইজ করে পাশের বাড়ির আন্টি, কাকিমা, দিদির বন্ধু – এদের সঙ্গে সঙ্গম করছে।
মনিকার নাম ওই স্পেশাল কলারের কাছে বলা হয়েছিল দীপালি।
মনিকা মনে মনে ভেবেছিল, ইশ এইটুকু ছেলের সঙ্গে! কিন্তু ওকে আর শিউলিকে টাকা তো রোজগার করতেই হবে।
তাই মনকে বুঝিয়ে ওই কচি ছেলের সঙ্গেই কথা শুরু করেছিল মনিকা।
মিনিট খানেক কথার পরেই জানতে চেয়েছিল, ‘আন্টি তোমার সাইজ কতো?’
মনিকার মুখে প্রায় এসে গিয়েছিল, ‘কীসের সাইজ সোনা? জুতোর? পিঠে পড়বে যখন টের পাবে কত সাইজ।‘
নিজেকে সামলে নিয়ে বলেছিল ‘৩৬সি’।
‘উফফফফফফ, মম.. মনে হচ্ছে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তোমার পাছায় আমার ঠাটানো বাঁড়াটা ঠেসে দিই, তারপরে তোমার ওই ৩৪ সাইজের মাইগুলো কপ কপ করে চটকাই!‘
মনিকাকে হাসি চেপে অভিনয় করতে হয়েছিল, ‘এই দুষ্টু.. উফফ কী করছিস রে.. পেছনে কী ঠেসে ধরলি রে .. উফফ বাবা কত বড় রে তোরটা!’
একটা ঘরে সালোয়ার কামিজ পড়া শিউলি যখন ৩৪ বছরের কৌশিককে নাইটির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে প্যান্টির ভেতরে সুড়সুড়ি দিতে দিচ্ছে, অন্য ঘরে শাড়ি পরে থাকা মনিকাকে নগ্ন হয়ে ওই ছোট ছেলেটার সামনে বসে তার পুরুষাঙ্গ চুষে দেওয়ার অভিনয় করতে হচ্ছে।
ফোনের ওপাশে থাকা স্পেশাল কলাররা তো মনে করছিল যেন শিউলি বা মনিকা সত্যিই সব কাপড়জামা খুলে ওদের সঙ্গে ফোনে সঙ্গম করছে, আত্মমেহন করছে। গলা দিয়ে ‘আহহহ.. উফ.. এই শয়তান.. দুষ্টু, আহ.. কী করছওওওওওওওও ওমাগো.. মরে যাচ্ছি সোনা’ – এসব কথাগুলো বলে আরও তাতিয়ে তুলতে হচ্ছিল স্পেশাল কলারদের।
সারাদিনে গত সপ্তাহে যেখানে ওদের দিনে ৬০ থেকে ৮০ টা পর্যন্ত ফোন করতে হয়েছে, এই সপ্তাহে সেটা নেমে এল দিনে তিন কি বড়জোড় চারটে কলে।
প্রথম দিন কয়েকজন স্পেশাল কলার এত বাজে গালাগালি করছিল, সেগুলোও হজম করতে হচ্ছিল ওদের। তবে সেই শনিবার যখন পেমেন্ট নিতে গেল, ওদের নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে অলোক ৮ হাজার করে টাকা তুলে দিয়ে বলেছিল, ‘আপনারা দুজনে ফার্স্ট উইকেই এত ভাল কাজ করবেন ভাবতে পারি নি ম্যাডাম। প্রায় সব কলারই আমাদের জানিয়েছে যে রেগুলার আপনাদের সার্ভিস পেতে চায় ওরা।‘
মনিকা আর শিউলি দুজনেই কোনও কথা না বলে বেরিয়ে এসেছিল।
সপ্তাহের মধ্যে এই অভিনয় করার পরে রাতে ওদের দুজনের কাররই আর বরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছে হয় নি।
কিন্তু আজকে হচ্ছে ইচ্ছেটা দুজনেরই।
প্রশান্তকে পুরো টাকার অ্যামাউন্টটা এবার আর বলল না মনিকা। হয়তো ও ভেবে নিল যে গত সপ্তাহের মতোই হাজার আড়াই পেয়েছে। তাহলেও মাসে দশ হাজারই বা কম কিসে!
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পরের মাসের গোড়ায় প্রশান্ত একটা চাকরি পেয়েই গেল। আগেরটার থেকে সামান্য কম বেতন, তবে এই নতুন ফ্যাক্ট্রি ব্যারাকপুরের দিকে। লিলুয়ার থেকে তো কাছে।
আর অতনু ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বন্ধুর আই টি ব্যবসা নিয়ে।
প্রশান্ত আর অতনু তখনও জানত না যে ওদের বউরা ঠিক কীভাবে নিজেদের রোজগার করছে। মাসের শেষে মনিকা আর শিউলি হিসাব করে দেখল যে ওই মাসে রোজগার প্রায় তিরিশ হাজার!
আজকাল নিজেদের জন্য কিছু টাকা ওরা দুজনেই খরচ করে। মাঝারি দরের রেস্টুরেন্টে খেতে যায় সবাই মিলে।
একটা টানা তিন চার দিনের ছুটিতে দীঘা ঘুরে এল প্রশান্ত-মনিকা-ওদের ছেলে - শিউলি-অতনু – সবাই মিলে।
অনেক বছর পরে ঘুরতে আসা।
ঘুরতে যাওয়ার কথাটা যখন প্রথম প্রশান্তকে জানিয়েছিল মনিকা, তখন অবাক হয়ে বউকে জিগ্যেস করেছিল ও, ‘মানে? ঘুরতে যাবে মানে? তোমাকে সারাদিন ধরে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের রোজগারটা একটু ঠিকঠাক হবে বলে, আর সেই টাকা এভাবে ওড়াবে?’
তবে শেষমেশ মনিকার জেদের কাছে মাথা নোয়াতে হয়েছিল প্রশান্তকে।
অতনুকেও প্রশান্তই রাজি করিয়েছিল।
অফিসে জানিয়ে মোবাইল থেকে সিমকার্ডটা খুলে রেখে এসেছে ওরা দুজনেই।
একঘেয়ে অভিনয়ের থেকে কয়েকটা দিনের ছুটি।
মনিকা আর শিউলি ওই কদিন নিজেদের বরেদের প্রাণ ভরে আদর করেছিল, আদর খেয়েছিল।
তারপর আবার সেই একই জীবন। টাকা আসছে হাতে অনেক, ওরা বরেদের না জানিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্টে জমাচ্ছে।
মাস তিনেক পরে অলোক একদিন অফিসে ডেকে পাঠাল ওদের।
‘আসুন আসুন ম্যাডাম। আপনাদের তো দারুণ বিলিং হয়েছে দেখলাম। এত ভাল পার্ফর্ম্যান্স!’
‘কিছু লোক এত বাজে গালাগালি দেয়, সহ্য করা মুশ্কিল হয়ে যায়।‘
‘হে হে ওটুকু তো করতেই হবে ম্যাডাম। তাও তো আপনাদের কাছে বেছে বেছে কলারদের পাঠাই, একটু সোবার। অনেক কলার আছে এত পার্ভার্ট, যে আমাদের কাছে মেয়েরা কমপ্লেন করেছে। তাদের ব্লক করে দিয়েছি আমরা। কী কী যে বলে দুস্বপ্নেও ভাবতে পারবেন না ম্যাডাম।‘
‘তা যে জন্য আপনাদের আসতে বলা ম্যাডাম। আপনারা তো জেনেই গেছেন স্পেশাল কল মানে কী। তা আমরা ভিডিয়ো চ্যাটিং শুরু করছি। আপনাদের মুখ ঢেকে শরীর দেখাতে কী আপত্তি আছে? বাকিটা ফোনে যা যা করেন, সেগুলোই করতে হবে, তবে এবার হ্যাঁ আপনাদের চেহারা দেখাতে হবে। পেমেন্ট অনেক বেশী ম্যাডাম। আধঘন্টা সেশনে ৫ হাজার নিই আমরা। রোজ যদি নাও করেন, সপ্তাহে তিন চার দিন দিনে একবার করে করলেই ভাবুন মাসের শেষে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা,’ মুখ হাঁ করে থাকা মনিকা আর শিউলিকে কথাগুলো হজম করার সময় দিল অলোক।
‘এখুনি বলতে হবে না, ভেবে আমাকে জানালেই হবে ম্যাডাম।‘
‘ভাবার কিছু নেই অলোকবাবু। আমরা বলেই দিচ্ছি। ওটা পারব না আমরা। যেটা করছি, সেটাই ঠিক আছে।‘
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
‘ঠিক আছে ম্যাডাম। যদি কখনও মত পাল্টান, জানাবেন।‘
‘না আমাদের মত পাল্টাবে না অলোকবাবু। আসি আমরা,’ কথাগুলো কেটে কেটে বলে অলোকের অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছিল ওরা দুজন।
ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরেছিল সেদিন ওরা দুজনে।
ঠিক করেছিল এবার একটা দাড়ি টানতেই হবে। আর না!
বাড়ি যাওয়ার আগে ব্যাঙ্কে গিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্টের ব্যালান্সটা দেখে নিয়েছিল।
সেই রাতে দুজনেই বরেদের ঘনিষ্ঠ হয়ে সব কথা খুলে বলে দিয়েছিল যে কীভাবে টাকা রোজগার করছে ওরা।
আজ অলোক কী বলেছে, সেটাও জানাতে ভোলে নি।
প্রশান্ত আর অতনু দুজনেই প্রথমে থম মেরে গিয়েছিল।
তারপরে দুজনেই একইরকম রিঅ্যাকশন দিয়েছিল, ‘আমাদের কপাল। তোমাদের এও করতে হল! যাক। কালকেই ওদের সিমগুলো ফেরত দিয়ে আসব আমরা। তোমাদের আর যেতে হবে না।‘
অতুনর নতুন কাজ আর প্রশান্ত নতুন চাকরীর মধ্যেও এখনও ওরা সাড়ে চারজন মাঝে মাঝেই একসঙ্গে আড্ডা দেয়। সিনেমা দেখতে যায়, তারপর বাইরেই কিছু খেয়ে বাড়ি ফেরে।
তারমধ্যেই জানা গেল অতনুর পরিবারেও আসতে চলেছে নতুন অতিথি। তারিখ হিসাব করে মনিকা হেসে প্রশান্তকে বলেছিল ‘এ একদম সেই দীঘার ব্যাপার!!!’
প্রশান্তর গলা জড়িয়ে ধরে মনিকা আব্দার করেছিল, ‘আমারও একটা চাই!’
‘হুম.. আবার যদি চাকরী যায়, তখন?’
তারপরে ওদের দুজনের মুখে ঘন্টাখানেক আর কোনও কথা শোনা যায় নি.. শুধু উফ আহ শব্দ হচ্ছিল।
এটা আর ওই স্পেশাল কলের অভিনয় নয়....
-- সমাপ্ত --
Posts: 95
Threads: 0
Likes Received: 270 in 111 posts
Likes Given: 751
Joined: Jun 2021
Reputation:
60
•
Posts: 273
Threads: 0
Likes Received: 106 in 86 posts
Likes Given: 2,260
Joined: Mar 2020
Reputation:
2
•
Posts: 2,729
Threads: 0
Likes Received: 1,204 in 1,060 posts
Likes Given: 43
Joined: May 2019
Reputation:
26
•
|