29-06-2021, 09:08 AM
১ । ইদানিং আমার ছেলের সাথে প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে একটা করে হরর ফিল্ম দেখা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার ছেলের বয়স এখন তেরো। হলিউডি হররগুলো অবশ্য বেশিরভাগই 'R' রেটিংয়ের। সেক্স-ভায়োলেন্স দিয়ে ভরা। সেক্সের দৃশ্যগুলো টেনে দেই। ভায়োলেন্স বেশ আয়েশ করে দেখি। প্রথম যেদিন সে আব্দার ধরলো "বাবা ভূতের ছবি দেখবো!" সেদিন আমি সচেতন অভিভাবকের মতই ওর বয়স, শিশু মনস্তত্বের সাথে সহিংসতার সংঘাত প্রভৃতি বিশদভাবে চিন্তা করে একটা বি গ্রেডের হিন্দি মুভি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ওটাসে পছন্দ করে নি। আমি নিজেও বেশিক্ষণ দেখতে পারি নি। ও ঘুমে ঢলে পড়ার পরে বিছানায় দিয়ে এসে ডিভিডি প্লেয়ার বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
তখন তার বয়স ছিলো এগারো। মাঝখানে দুই বছরে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। ওর মা মারা গেছে দুর্ঘটনায়। কত করে বলেছিলাম পিছলা ছাদে বেশি ধারে যেও না! শোনেনি। শোনে নি আমার কথা। আর আমার ছেলেটা, যে অন স্ক্রিন বিভৎস দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত, বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে, ওর মায়ের রক্তাক্ত লাশটা দেখে শোক প্রকাশ করবে কী, নিমিষেই অজ্ঞান! তারপর অনেকদিন সে স্বাভাবিক আচরণ করে নি। মাতৃশোক, নাকি চোখের সামনে চরমতম ভায়োলেন্স ভিকটিম দেখা, কোনটা তার ওপর বেশি প্রভাব ফেলেছিলো জানি না। তবে সে একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলো।
তারপর একদিন
সে আবার আবদার করে উঠলো "বাবা, হরর মুভি দেখবো"। আমি তাকে যেকোন কিছু দেয়ার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম। গত কিছুদিন তাকে খেলনা, রঙপেন্সিল, কমিকস, আরো কত কিছু সেধেছি, যেন তার মন ভালো হয়। কিন্তু সে মৌন অসম্মতিতে সবকিছু নাকচ করে দিতো। সাইকোলোজিস্টের কাছে নেবার আগে আমি তাকে সময় দিতে চেষ্টা করেছি সাধ্যমত। শেষতক হাল ছেড়ে দিয়ে যখন মেডিকেল ট্রিটমেন্ট দেয়াটাই একমাত্র সমাধান মনে হচ্ছিলো, তখনই সে কথাবলে উঠলো। সেদিন রাতে একটা ফ্রেঞ্চ হরর দেখলাম। নাম Inside. মুভিটা দারুণ ছিলো। আ রিয়াল ক্রিপি ওয়ান। সেদিনের পর থেকে হরর মুভি দেখাটা আমাদের রুটিন হয়ে গেলো। তবে ভালো ভালো সব হরর মুভি দেখা শেষ হয়ে গেছে। বি গ্রেডের স্ল্যাশার দেখতে ভালো লাগে না। মুভিস্টোরে গেলে আগে ওদের সেলসম্যান একগাল হাসি নিয়ে এগিয়ে আসতো, ইদানিং দেখেও না দেখার ভান করে। কী করবে! ওদেরস্টক শেষ! আমি আর আমার ছেলে মিলেসব দেখে ফেলেছি।
আজ রাতে কোন মুভি দেখা হবে না। মুভিস্টোরে যাওয়া হয় নি। আর একথাটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন, ছেলেকে আমি হরর এ্যাডিক্ট করে ফেলছি কী না। এক রাত মুভি না দেখলে কিছু হবে না। এটা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। মুভি দেখা ছাড়াও অনেক কাজ আছে। এই আসক্তি দূর করা জরুরী।
"আনো নি?"
"নাহ আজকে মুভি না দেখে আমরা অন্য কিছু করি কেমন?"
"যেমন?"
"আসো টিভিতে মজার কোন প্রোগ্রামদেখি"
"না। টিভি সাক্স!"
হরর ছবি বেশি দেখার প্রভাবে কী অবলীলায় ইংরেজি স্ল্যাং বলে বেড়ায় আজকাল! তবে ওকে এজন্যে দোষারোপ না করে অন্য প্রক্রিয়ায়এগুতে হবে ধীরে ধীরে। এই অল্প বয়সেই ওর মধ্যে উদ্দাম ভায়োলেন্সের বীজ রোপিত করে দিয়েছি কী না কে জানে! এখন থেকে ওকে আরো বেশি সময় দিতে হবে। গল্পকরতে হবে। বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।
"আচ্ছা, টিভি বাদ। আজকে রাতে আসোগল্প করে কাটাই। কালকে তো কলেজ বন্ধ! রাত জাগতে পারো, সমস্যা নেই।"
"ঠিক আছে!"
মনে হল নিতান্তই অনিচ্ছায় সম্মতি জানালো।
রাতের খাবার শেষে আমরা বিছানায় শুলাম একসাথে।
"বাবা, আজকে কি তুমি আমার সাথে শোবে?"
"তুমি কী তাই চাও?"
"আমি তো অনেককিছুই চাই, আমার চাওয়াতে কী এসে যায়!"
আহা! ওর মধ্যে এত অভিমান জমা ছিলো তা তো জানতাম না! ওর কোন চাওয়াই তো অপূর্ণ রাখি না। তারপরেও কেন এমন বলছে?
"তুমি তো কিছু চাওই না। খালি এক হরর মুভি দেখার আব্দার। এখন থেকে অন্যকিছুও চাইবে ঠিক আছে? তুমি চাইলে তো আমার ভালোই লাগবে।"
আমি ওর রেশম নরম চুলগুলোতে সস্নেহে হাত বুলিয়ে দিই। কিন্তুও কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
"ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?"
"কেন ভয় পাচ্ছো? হাহাহাহাহাহাহাহাহা!"
ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই, কিন্তু ওর এ ধরণের প্রশ্ন আর হঠাৎ হাসিতে কিছুটা চমকে উঠলাম।
"হরর মুভিগুলো তোমার মাথা খেয়েছে। নাহ, এখন থেকে ঐসব দেখা সম্পূর্ণ বন্ধ"
"কাম অন বাবা! ইউ কান্ট টেক আ প্র্যাকটিকাল জোক? ইউ আর আ ফাকিং কান্ট!"
মেজাজ চড়ে গেল আমার। প্র্যাকটিকাল জোক করছে ভালো কথা, কিন্তু বাবার সাথে এ কিরকম শব্দ ব্যবহার করছে! হ্যাঁ, এটা ঠিক যে হরর মুভিগুলোতে এরকম শব্দ প্রচুর থাকে, আমরা একসাথে দেখিও সেসব। তার মানে এই না যে...
"স্যরি বাবা। আর বলবো না। বাট হোয়াই ইউ ডিডন'ট সে স্যরি টু হার?"
"আমি কাকে স্যরি বলবো!"
"দ্যাট ওয়াজ জাস্ট সাম র*্যান্ডম টকিং। তোমার যদি কাউকে স্যরি বলার থাকে তো বলবে, নাহলে না!"
"তোমার কথাবার্তা হেঁয়ালির মত শোনাচ্ছে"
"আমাদের সময়টা কিন্তু ভালো কাটছে, তাই না? কলেজ নিয়ে কথা বলার চেয়ে এসবই ভালো!"
"তুমি ভারি অদ্ভুত হয়ে গেছো।"
"মা মারা যাবার পর থেকে?"
"হয়তো বা। কিন্তু সেসব কথা থাক"
"আচ্ছা থাকুক। জলি আন্টি কেমন আছে?"
তখন তার বয়স ছিলো এগারো। মাঝখানে দুই বছরে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। ওর মা মারা গেছে দুর্ঘটনায়। কত করে বলেছিলাম পিছলা ছাদে বেশি ধারে যেও না! শোনেনি। শোনে নি আমার কথা। আর আমার ছেলেটা, যে অন স্ক্রিন বিভৎস দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত, বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে, ওর মায়ের রক্তাক্ত লাশটা দেখে শোক প্রকাশ করবে কী, নিমিষেই অজ্ঞান! তারপর অনেকদিন সে স্বাভাবিক আচরণ করে নি। মাতৃশোক, নাকি চোখের সামনে চরমতম ভায়োলেন্স ভিকটিম দেখা, কোনটা তার ওপর বেশি প্রভাব ফেলেছিলো জানি না। তবে সে একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলো।
তারপর একদিন
সে আবার আবদার করে উঠলো "বাবা, হরর মুভি দেখবো"। আমি তাকে যেকোন কিছু দেয়ার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম। গত কিছুদিন তাকে খেলনা, রঙপেন্সিল, কমিকস, আরো কত কিছু সেধেছি, যেন তার মন ভালো হয়। কিন্তু সে মৌন অসম্মতিতে সবকিছু নাকচ করে দিতো। সাইকোলোজিস্টের কাছে নেবার আগে আমি তাকে সময় দিতে চেষ্টা করেছি সাধ্যমত। শেষতক হাল ছেড়ে দিয়ে যখন মেডিকেল ট্রিটমেন্ট দেয়াটাই একমাত্র সমাধান মনে হচ্ছিলো, তখনই সে কথাবলে উঠলো। সেদিন রাতে একটা ফ্রেঞ্চ হরর দেখলাম। নাম Inside. মুভিটা দারুণ ছিলো। আ রিয়াল ক্রিপি ওয়ান। সেদিনের পর থেকে হরর মুভি দেখাটা আমাদের রুটিন হয়ে গেলো। তবে ভালো ভালো সব হরর মুভি দেখা শেষ হয়ে গেছে। বি গ্রেডের স্ল্যাশার দেখতে ভালো লাগে না। মুভিস্টোরে গেলে আগে ওদের সেলসম্যান একগাল হাসি নিয়ে এগিয়ে আসতো, ইদানিং দেখেও না দেখার ভান করে। কী করবে! ওদেরস্টক শেষ! আমি আর আমার ছেলে মিলেসব দেখে ফেলেছি।
আজ রাতে কোন মুভি দেখা হবে না। মুভিস্টোরে যাওয়া হয় নি। আর একথাটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন, ছেলেকে আমি হরর এ্যাডিক্ট করে ফেলছি কী না। এক রাত মুভি না দেখলে কিছু হবে না। এটা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। মুভি দেখা ছাড়াও অনেক কাজ আছে। এই আসক্তি দূর করা জরুরী।
"আনো নি?"
"নাহ আজকে মুভি না দেখে আমরা অন্য কিছু করি কেমন?"
"যেমন?"
"আসো টিভিতে মজার কোন প্রোগ্রামদেখি"
"না। টিভি সাক্স!"
হরর ছবি বেশি দেখার প্রভাবে কী অবলীলায় ইংরেজি স্ল্যাং বলে বেড়ায় আজকাল! তবে ওকে এজন্যে দোষারোপ না করে অন্য প্রক্রিয়ায়এগুতে হবে ধীরে ধীরে। এই অল্প বয়সেই ওর মধ্যে উদ্দাম ভায়োলেন্সের বীজ রোপিত করে দিয়েছি কী না কে জানে! এখন থেকে ওকে আরো বেশি সময় দিতে হবে। গল্পকরতে হবে। বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।
"আচ্ছা, টিভি বাদ। আজকে রাতে আসোগল্প করে কাটাই। কালকে তো কলেজ বন্ধ! রাত জাগতে পারো, সমস্যা নেই।"
"ঠিক আছে!"
মনে হল নিতান্তই অনিচ্ছায় সম্মতি জানালো।
রাতের খাবার শেষে আমরা বিছানায় শুলাম একসাথে।
"বাবা, আজকে কি তুমি আমার সাথে শোবে?"
"তুমি কী তাই চাও?"
"আমি তো অনেককিছুই চাই, আমার চাওয়াতে কী এসে যায়!"
আহা! ওর মধ্যে এত অভিমান জমা ছিলো তা তো জানতাম না! ওর কোন চাওয়াই তো অপূর্ণ রাখি না। তারপরেও কেন এমন বলছে?
"তুমি তো কিছু চাওই না। খালি এক হরর মুভি দেখার আব্দার। এখন থেকে অন্যকিছুও চাইবে ঠিক আছে? তুমি চাইলে তো আমার ভালোই লাগবে।"
আমি ওর রেশম নরম চুলগুলোতে সস্নেহে হাত বুলিয়ে দিই। কিন্তুও কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
"ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?"
"কেন ভয় পাচ্ছো? হাহাহাহাহাহাহাহাহা!"
ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই, কিন্তু ওর এ ধরণের প্রশ্ন আর হঠাৎ হাসিতে কিছুটা চমকে উঠলাম।
"হরর মুভিগুলো তোমার মাথা খেয়েছে। নাহ, এখন থেকে ঐসব দেখা সম্পূর্ণ বন্ধ"
"কাম অন বাবা! ইউ কান্ট টেক আ প্র্যাকটিকাল জোক? ইউ আর আ ফাকিং কান্ট!"
মেজাজ চড়ে গেল আমার। প্র্যাকটিকাল জোক করছে ভালো কথা, কিন্তু বাবার সাথে এ কিরকম শব্দ ব্যবহার করছে! হ্যাঁ, এটা ঠিক যে হরর মুভিগুলোতে এরকম শব্দ প্রচুর থাকে, আমরা একসাথে দেখিও সেসব। তার মানে এই না যে...
"স্যরি বাবা। আর বলবো না। বাট হোয়াই ইউ ডিডন'ট সে স্যরি টু হার?"
"আমি কাকে স্যরি বলবো!"
"দ্যাট ওয়াজ জাস্ট সাম র*্যান্ডম টকিং। তোমার যদি কাউকে স্যরি বলার থাকে তো বলবে, নাহলে না!"
"তোমার কথাবার্তা হেঁয়ালির মত শোনাচ্ছে"
"আমাদের সময়টা কিন্তু ভালো কাটছে, তাই না? কলেজ নিয়ে কথা বলার চেয়ে এসবই ভালো!"
"তুমি ভারি অদ্ভুত হয়ে গেছো।"
"মা মারা যাবার পর থেকে?"
"হয়তো বা। কিন্তু সেসব কথা থাক"
"আচ্ছা থাকুক। জলি আন্টি কেমন আছে?"