Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
21-06-2021, 01:45 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:18 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ভালোবাসার আষাড়ে গল্প
তুই আমাকে এখনো ভালোবাসিস?
– না।
– কেন?
– কেন আবার কি?
– ভালোবাসিস না কেন?
– যখন ভালোবেসে ছিলাম তখন তো মূল্য দিলি না।
– তুই তো আমাকে বলিসনী কোন দিন!
– তোর বোঝা উচিত ছিলো।
– তুই না বললে কেমন করে বুঝবো??
– কেমন করে বলব? বলার আগেই তো তুই ওই ছেলেটাকে আমাদের মাঝে নিয়ে আসলি।
– ও আমার জাষ্ট ফেন্ড ছিলো আর কিছু না।
– আমি তো তোর বেষ্ট ফেন্ড ছিলাম। মাএ দুই দিনের একটা ছেলের জন্য তুই আমাকে ভুলে গেলি?
– আমি তোকে ভুলিনী, তুই আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেছিস।
– কেন গেছি তু্ই জানিস না ?
– না।
– জানবি কেমন করে? আমি তো তোর কেউ ছিলাম না।
– এমন ভাবে বলিস কেন? তু্ই তো জানিসই আমি একটু কম বুঝি। বললেই পারিস।
– আমি তোর পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না।
– একবার বললেই পারতি!!
– কেন বলব ? তুই বুঝিতে পারিস না?
– বুঝলে কি আর তোর থেকে দূরে থাকতাম। দুজনেই চুপ। কিছুটা সময় নিরবতার পর দিশা বলে উঠল, চুপ কেন?
– এমনিই।
– কাউকে ভালোবাসিস?
– না।
– ভালোবাসতি?
– হ্যা।
– সেদিন বলিসনী কেন?
– বলার সাহস ছিলো না।
– কেন ?
– তোকে হারানোর ভয়ে।
– কেন হারাবি আমায়?
– তোকে বলার পর যদি তুই যদি “না” বলে দিস। যদি তুই চলে যাস আর আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট করে দিস।
– তুই কেমন করে ভাবলী “তোকে ছেড়ে আমি চলে যাবো?”
– তাহলে এই দুই বছর কোথায় ছিলি?
– ওটা তো……………….!!! থাক পুরানো কথা বাদ দে।
– ok, দিলাম। আবারো নিরবতা দুজনের মাঝে। প্রকৃতিও কেমন যেন ওদের সাথে শান্ত হয়ে গেল। মনে হচ্ছে আকাশেরও বুঝি আজ মন
খারাপ। এই বুঝি কান্না শুরু করবে।
– কিছু বলবি?
– কি বলবো?
– যা ভাবছিস এখন।
– তুই বলতে পারিস না?
– না।
– কেন?
– তুই জানিস না, “মেয়েদের বুক ফাটে তোবুও মুখ ফোটে না”।
– কেন ফোটে না? তোরা ফোটাতে চাসনা দেখেই ফোটে না।
– হা……..হা……..হা……..হা……..!!!
– তোর হাসিটা এখনো আগের মতোই সুন্দর। (দিশার দিকে তাকিয়ে বলল বিপলু)
– যাক বাবা, আমার হাসির কারণে হলেও তুই একবারের জন্য আমার দিকে তাকালি। এতক্ষণ তো আমার মনে হয়েছিলো আমি কোন গাছের সাথে কথা বলছি।
– (চুপ)
– আচ্ছা আমি আসি (দিশা উঠতে যাবে ঠিক তখনি দিশার হাত ধরে ফেলল বিপলু)
– বস।
– কেন বসবো ? তুই তো কিছু বলবি না!!
– বস বলছি।
– বল, কি বলবি?
– আমার হাতটা একটু শক্ত করে ধরবি?
– হুম ধরলাম।
– ছোটবেলায় তোকে হরলিক্স খাওয়ানী?
– কেন ? (বিস্মিত হয়ে)
– তোকে শক্ত করে ধরতে বলেছি, স্পর্শ করতে বলিনী।
– ok বাবা, ধরলাম। এবার বল কি বলবি?
– দিশা, আমি…….
– হুম….!!
– আমি……
– তারপর ?
– তোকে…
– হুম…..!!
– তোকে…
– তোকে কি …..??
– আমি একটু জল খাবো…।
– (হাত ছেড়ে দিয়ে রাগান্বিত হয়ে) যা ওই দোকান থেকে খেয়ে আয়।
– তোর কাছে নেই?
– না। বিপলু উঠে জল খেতে চলে গেল। এমন ভাবে গেল মনে হয় কত বছরের তৃষ্ণার্ত। অপর দিকে দিশার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
আজ দুই বছর পর ওদের দেখা অথচ বিপলু ওর মনের কথাটা আজও বলতে পারলো না।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
21-06-2021, 01:46 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:20 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগে এই দিনে দিশার সাথে বিপলুর প্রথম পরিচয় হয়।
বন্ধুত্বের কিছুদিন পরেই দিশাকে ভালোবাসতে শুরু করে বিপলু। দিশাও ব্যাপারটা বুঝতে পারে কিন্তু না বোঝার ভান করে থাকে।
মেয়েদের এই এক স্বভাব, “বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না”।
ওই দিকে বিপলু নানা কথা- বার্তায়, চাল-চলনে দিশাকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে সে দিশাকে ভালোবাসে।
দিশা বুঝেও সবসময় না বোঝার ভান করে থাকতো। কারণ, দিশা সবসময় চাইতো বিপলু দিশাকে সরাসরি প্রপোজ করুক।
সব মেয়েরেই এই রকম স্বপ্ন থাকে যে তার ভালোবাসার মানুষ তাকে আগে প্রপোজ করুবে, তার মনের কথাটা বলবে কিন্তু বিপলু সেটা পারছে
না শুধুমাএ বন্ধুত্বটা নষ্ট হওয়ার ভয়ে।
কোনদিন আর পারেওনী।
মাঝে অন্য একটা ছেলের জন্য দুই জনের বন্ধুত্বের ফাটল দেখা দেয়।
অতঃপর দীর্ঘ দুই বছর পর আজ আবার তাদের দেখা কিন্তু বিপলু আজও দিশাকে মনের কথা না বলায় দিশার মন খারাপ।
২০ মিনিট হয়ে গেল বিপলু এখনো আসছে না।
দিশা ফোন করল কিন্তু বিপলু ফোনটাও ধরছে না।
হয়তো বিপলু চলে গেছে, হয়তো বিপলুর আজও বলার সাহস হয়নী এমনটা ভেবে দিশা উঠে দাড়ালো।
হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন “দিশা” বলে চিৎকার করে উঠল।
দিশা পিছনে ফিরে তাকালো।
আরে এতো বিপলু!
ও একটু দূরে হাটুগেড়ে বসে আছে, হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ।
বিপলু লাল গোলাপ গুলো দিশার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল,
– দিশা……, I……Love…… You……. .!!!
লেকের পাড়টা যেনো বিপলুর চিৎকারে কেপেঁ উঠল।
লেকের পাড়ের উৎসুক মানুষ গুলোর দৃষ্টি এখন শুধু বিপলু আর দিশার দিকে।
এমন দৃশ্য হয়তো আজ বিরল তাই কেউ কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
অন্য দিকে দিশা অপলক দৃষ্টিতে বিপলুর দিকে তাকিয়ে রইল।
যে বিপলু ভালোবাসি কথাটা বলতে তিন বছর সময় নিলো, যে বিপলুর মনের কথাটা বলতে গেলে হাত কাপঁতে শুরু করে সেই বিপলু আজ পুরো পৃথিবীর সামনে প্রপোজ করল!
এটা ভাবতেই দিশা অবাক হয়ে গেল।
দিশা কেমন যেনো নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।
দিশার বিস্ময় যেনো কাটছে না।
বিপলু সত্যি আজ প্রপোজ করল নাকি দিশা স্বপ্ন দেখছে।
কেন যেনো আজ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না দিশা।
সব কিছুই যেনো আজ স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
এই সব কথা ভাবতে ভাবতে দিশার চোখে জল চলে আসল।
– কিরে আর কতক্ষণ বসে থাকবো ??
বিপলুর কথায় যেনো জ্ঞান ফিরল দিশার।
দিশা আস্তে আস্তে বিপলুর দিকে এগিয়ে আসলো।
বিপলুর হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিলো।
বিপলু উঠে দাড়ালো। দিশা বিপলুর দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইল।
কিছুক্ষণ পর......
– কিরে, কিছু বলবি না ?
– কি বলবো ? (দিশার চোখে জল)
– তুই কাঁদছিস কেন ?
– মার খাবি। এই কথাটা বলেতে এত সময় লাগলো?
– ওকে, সরি…..।
– কান ধর।
– কার? তোর না আমার?
– তোর, শয়তান। (ধমক দিয়েই বলল দিশা)
বিপলু কানে ধরতে যাবে ঠিক তখনি দিশা “I Love You Too” বলে বিপলুকে জড়িয়ে ধরল।
দিশার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো।
বিপলু জানে দিশার চোখে আজ কোনো কষ্টের কান্না ছিলো না, যা ছিলো তা ছিলো আনন্দের।
আর বিপলুর চোখে- মুখে ছিলো আনন্দের হাসি।
গত দুই বছর বিপলু দিশার জন্য অনেক কেঁদেছে, সেই কাঁন্না আজ হাসিতে রুপান্তরিত হয়েছে।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
21-06-2021, 01:54 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:22 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ভালোবাসা মানে পাশে থাকা
"কি ব্যাপার সকাল আটটা বাজে। আজ কি অফিসে যেতে হবে না নাকি?" - ঝুমের ডাকে চোখ ডলতে থাকে জীত।
জানালার পর্দাটা সরিয়ে দেয়ার সাথে সাথেই সকালের আলোটা চোখে এসে পড়ে জীতের।
বিছানার পাশেই ভেজা চুল ঝাড়তে শুরু করে ঝুম।
ভেজা চুলের ছাট এসে জীতের মুখে পড়ে।
জীত ঝুমের হাতটা ধরে কাছে নিয়ে এসে কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বলে, "ভালোবাসি,ভালোবাসি, ভালোবাসি"
ঝুম ও জীতের নাকটা হালকা টেনে বলে, "ভালোবাসি,ভালোবাসি, ভালোবাসি"
এমনটা প্রতিদিনই হয়।
ভালোবাসা বাড়ে ধীরে ধীরে। কখনোই কমে না।
ছ বছর হলো ঝুমের আর জীতের বিয়ে হয়েছে।
এতটুকু পরিমান মন খারাপ করতে দেখেনি ঝুমকে।
জীত এতেই খুশি। লাভ ম্যারিজ। দুজনকেই দুজন খুব সুন্দর করে বোঝে।
ঝুম কখনোই পুরো পৃথিবী দাবি করে না জীতের কাছে।
জীত ই তার জন্য যথেষ্ট।
জীত ঝুমকে রাজকুমারী বলে ডাকে।
ঝুমের খুব লজ্জা লাগে। আবার অনেক ভালোও লাগে।
জীত ঝুমকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। অফিসে যাওয়ার আগে ঝুম আমার রুমাল কই, ঝুম আমার মোবাইল কই,ঝুম আমার টাই কই,ঝুম আমার ফাইল কই, এইটা কই ওইটা কই নানা কথা বলে ঝুমকে অস্থির করে ফেলে।
এমনকি টাইটাও নিজ হাতে বাধা শিখেনি কারন ঝুম বেধে দেবে বলে।
বড্ড ক্লান্ত হয়ে যেত ঝুম।
কিন্ত অফিসে যাওয়ার সময় যখন ঝুমের কপালে চুমু দিয়ে জীত বলে, 'সারাটাদিন তোমায় অনেক মিস করবো '
তখনই যেন ঝুমের ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
পরম বিশ্বাসে মাথা এলিয়ে দেয় জীতের বুকে।
কিন্তু জীবনে সুখের পাশাপাশি দুঃখও আছে।
জীত সবসময় তা লুকানোর চেষ্টা করে।
ঝুম রোজ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদে। কিন্তু জীত ঝুমের শব্দ ছাড়া কান্না বুঝতে পারে।
তখনই চোখের জল স্পর্শ করে ঝুমের অধর থেকে সরিয়ে দেয়।
রাগ করে বলে, 'আবার কান্নাকাটি করলে আমি কিন্তু মরে যাবো ' এটা বলে জীতও কেঁদে দেয়।
এভাবেই কষ্ট ঢেকে যায়।
কিন্ত ঝুমের কষ্টটা যেন একটু বেশিই।
তিন বছর আগের ঘটনা। ছ মাসের অন্তঃস্বত্তা ঝুম।
বেশ ভালোই চলছিল জীত আর ঝুমের দিনগুলো।
পেটের ভেতর থাকা বাচ্চা টা পা দিয়ে ধাক্কা মারে আর ঝুম ব্যাথায় কাতরে ওঠে। এদিকে জীত হেসে হেসে প্রায় খুন।আর রেগে গিয়ে ঝুম বলত“ তোমার মতোই দুষ্টু হবে”।
কোনো এক দুপুরবেলা হঠাৎ বাথরুম থেকে চিৎকার এর আওয়াজ আসে।
জীত বাথরুমের দরজা খুলে যেন চোখে মুখে অন্ধকার দেখা শুরু করলো।
বাথরুমের মেঝে রক্তে লাল হয়ে রয়েছে।
আর ঝুম যন্ত্রনায় ছটফট করছে।
এরপরে ঘটনা স্বাভাবিক হতে পারতো।
কিন্তু ভাগ্যে হয়তো অস্বাভাবিক কিছু ছিল।
প্রচন্ড আঘাতের কারনে মা হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ঝুম।
ঝুম শুধু কেঁদে যায় জীতের হাত ধরে আর জীত মিথ্যে শান্তনা দিতে থাকে।
"কাঁদছ কেন?
ধুর পাগলি। ভগবান হয়তো আরো বড় উপহার রেখেছে আমাদের জন্য। কিচ্ছু হবে না।
কাঁদবে না তো। তাহলে কিন্ত আমি কেঁদে দেবো।"
মুহূর্তগুলো খুবই কষ্টকর।
এখনো ঝুম যখন বারান্দায় একা একা বসে থাকে তখন জীত পাশে গিয়ে বসে আকাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,
"ওই যে চাদটা দেখছো না? তার পাশের তারাটাই আমাদের বাচ্চা টা"
মনটা যেন আরো ভারী হয়ে যায় ঝুমের। ভারি মনটা আর ধরে রাখতে না পেরে জীতের বুকে এলিয়ে দেয়।
আর জীত ঝুমের কপালে চুমু দিয়ে বলে, "ভালোবাসি,ভালোবাসি, ভালোবাসি" কী অদ্ভুত এই ভালবাসা তাই না।
Posts: 776
Threads: 0
Likes Received: 1,584 in 919 posts
Likes Given: 1,439
Joined: Jan 2021
Reputation:
187
সত্যিই এমনভাবে পাশে থাকার নামই ভালোবাসা
•
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
বাস্তবে যখন এই ধরনের কোন দুর্ঘটনা হয় তখন বেশিরভাগ সময় দেখা গেছে স্বামী আর একটা বিয়ে করে ফেলে।
ভালোবাসা আর কোথায়? সন্তান না দিলে সেটা আবার ভালোবাসা নাকি?
এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় অনেক নারীকে
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
21-06-2021, 05:25 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:23 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অনন্ত নিঝুমতা – ১
“একটা থাপ্পড় খাবি ফাজিল!!”, চেঁচিয়ে উঠে নিঝুম। সাথে সাথে অবশ্য নিবিড়ের উত্তরটাও পেয়ে যায়,”তোর একারই হাত আছে, তাই না?” এরপর মারামারি, আর আরও আরও ঝগড়া। ঝগড়া করতে করতে দুজন ভুলেই যায় যে আসলে ঝগড়াটা কী নিয়ে শুরু হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। কার কী একটা কথায় হাসির ফোয়ারা ছুটেছে একটু আগের ঝগড়া রত দুই কিশোরকিশোরীর মাঝে। হ্যাঁ, ওরা এরকমই। নিবিড় আর নিঝুম। এই ঝগড়া, এই ভাব, এই রোদ, এই বৃষ্টি। এদেরকেই হয়তো bestfriend বলা চলে। সেদিন বাড়ি ফেরার সময় বের হয়ে গাড়ি খুঁজে না পেয়ে নিঝুমের মা হঠাৎ নিবিড়কে বলে বসেন,”বাবা যাও তো তোমার girlfriend এর সাথে যেয়ে গাড়িটা কই দেখো তো!” কথা শুনে দুজনেই হা। বলে কী মহিলা! এদিকে নিবিড়ের মাও হেসে দিয়েছেন এই কথা শুনে। কিন্তু যাদের নিয়ে এই রসিকতা, তাদের কারো চেহারাতেই খুশির ছাপ দেখা গেল না। বরং আবার একচোট ঝগড়া হয়ে গেল এই নিয়ে।
নিবিড়-“ওই তুই আমার girlfriend হইলি কবে?? তুই আমার girlfriend না।”
নিঝুমও সমান তেজে উত্তর দেয়-“এহ আমার বয়ে গেছে তোর girlfriend হতে!”
ভাগ্যক্রমে তখনই গাড়িটা পেয়ে যায় ওরা। মারামারিটা তখনকার মতো স্থগিত থাকে। যে যার বাসায় চলে যায় মায়ের সাথে।
নিঝুম আর নিবিড়। সেই ছোট্টবেলা, মানে নার্সারিতে পড়ার সময় থেকেই বন্ধু। বন্ধু না বলে শত্রু বলাই হয়তো ভালো, কারণ এত ঝগড়া আর মারামারি শত্রুরাও করে কিনা সন্দেহ। তারপরও ওরা কিন্তু বন্ধু!! ছোটবেলায় একই কলেজে পড়ার সুবাদে দুজনের মধ্যে একটা “বন্ধুত্ব” গড়ে উঠে তাদের মায়েদের কল্যাণে। মাঝে কলেজ বদলের কারণে নিবিড় আর নিঝুমের যোগাযোগে ভাটা পড়লেও মায়েদের সম্পর্ক অটুট ছিল। তারপর নিবিড়ের বাবা হঠাৎ করে মারা যাওয়ার পর যোগাযোগটা আবার বেড়ে যায় দুজনের, কারণ দুই বাড়ির মানুষদের যাওয়া আসা বেড়ে যায়। উপরোক্ত কথোপকথনটি ওদের সেই আবার বন্ধুত্বের সময়ের।
ছোটবেলায় সাইকেল চালানর কারণে নিঝুম নিবিড়ের থেকে একটু লম্বা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন নিবিড়ই বেশ লম্বা। তবে নিঝুম সে যে লম্বা ছিল এটা শুনাতে ছাড়ে না যখনই নিবিড় ওকে খাটো বলে খেপায়। বেশ দেখতে নিবিড়। অন্তত অন্য মেয়েদের চোখে তো বটেই। চশমার ওপাশে চোখ দুটো বড় কাছে টানে। অনেক মেয়ে আবার তার উপর ফিদাও! ভদ্র ছেলে বলে সুনাম আছে নিবিড়ের। নিঝুম আবার ঠিক উলটো। ভালো দেখানর ধারেকাহেও নেই। তবে খুব সেনসিটিভ নিঝুম। খুব অল্পেই যেমন রেগে যায়, তেমনি খুব অল্পতেই অসম্ভব খুশি হয়ে যায়। নিঝুমের রাগ মানে চুপ হয়ে যাওয়া, খুব রাগ হলে সে চুপ হয়ে যায়, যার উপর রাগ তার সাথে কথা বলেনা। আর যতসব অদ্ভুত খেয়ালের সমাহার নিঝুম। বন্ধুদের মতে,”পাগল!” আহামরি চেহারা না নিঝুমের, মডার্নও না, বরং একটু ব্যাকডেটেডই বলা চলে নিঝুমকে। সুতরাং তার কোন স্তাবক থাকার প্রশ্নই উঠে না। এতে ওর কিছু যায় আসেও না। তার কথা, প্রেম মানুষে করেনা। নিবিড়ের উপর যতই মেয়ে ফিদা হোক না কেন, নিঝুম কিন্তু ফিদা হওয়ার মতো কিছু দেখতে পায়না কখনও। আসলে জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই যে মুখ দেখে আসছে, সে মুখে অচেনা কিছু দেখা সম্ভব ছিলনা নিঝুমের জন্য। নিবিড়কে নিয়ে তার একটাই আফসোস-“ইসসি রে! নিবিড় টা আমার থেকে লম্বা হয়ে গেল ধুর!!!”
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
21-06-2021, 05:26 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:23 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
নিবিড় যে কোচিঙে পড়ে, মোটামুটি নিঝুমের অনিচ্ছাতেই তার মা মেয়েকে ওই কোচিঙে ভরতি করে দিলেন। প্রথমদিনেই নিবিড় একটা অদ্ভুত কাণ্ড করে বসে। নিঝুমের মা গেছেন ভিতরে টিচারের সাথে কথা বলতে। ওরা বাইরে গল্প করছে। গল্প আর কী, খুনসুটি আর একে অন্যের পিছে লাগা। কথা বলতে বলতে হঠাৎ নিবিড় নিঝুমের একটু কাছে সরে আসে। নিঝুম ভয় পেয়ে যায়, আর কোন চিন্তা মাথায় আসার আগে এটা মাথায় আসে ওর যে মারবে নাকি রে বাবা!!! আগের দিন কি কোন ঝগড়া আন্সল্ভড ছিল নাকি!!! কিন্তু নিবিড় কিছু করেনা। কথা বলে যায় আগের মতই। নিঝুম এদিকে একটা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো, পিছাতেও পারছেনা। বড়ই অস্বস্তিকর অবস্থা। নিবিড়কে বলে,”ওই তুই সরে দাঁড়া, মানুষ অন্য কিছু ভাববে।” নিবিড় বলে, “ভাবুক।” সরেনা সে। নিঝুম বুঝে বন্ধু নিশ্চয়ই কোন মেয়েকে জেলাস করানোর চেষ্টা করছে, পাশেই তো মেয়েদের একটা ক্লাস দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকে ওদের সরাসরি দেখা যায়। এই সময় কোচিং থেকে নিবিড়ের এক বান্ধবী বের হয়। নিঝুম ফাজলামির সুযোগ পেয়ে যায়। বলে,”ওই দেখ তোর girlfriend.” নিবিড় হেসে দেয়, “ও আমার girlfriend?” বলে সেও যোগ দেয় খুনসুটিতে নিঝুমের সাথে।
নিবিড়ের মোবাইল থাকলেও নিঝুমের নেই। কোচিঙে ভর্তি হয়েছে দেরি করে। পিছিয়ে গেছে তাই একটু নিঝুম। নিবিড়ের সাহায্য দরকার। তাই ল্যান্ডলাইনে ফোন করে নিঝুম দরকার হলে। রোজই কথা হয় বলতে গেলে। কথার বেশিরভাগ জুড়েই থাকে পড়াশুনো। আর মাঝে মাঝে নিঝুমের কোন বান্ধবীর কোন ছেলেকে পছন্দ হলে নিঝুমের নিবিড়কে অনুরোধ,”তুই না ভালো? দে না একটু অমুকের খোঁজটা বের করে প্লিস প্লিস প্লিস!” এরকম এক সন্ধ্যায় কথা বলছে দুজন। হঠাৎ কী নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে নিঝুম বলে,”আমি আর জীবনে তোর সাথে কথা বলবনা!” এর উত্তরে নিবিড় যা বলে, তা শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থ হয়ে থাকে নিঝুম-“হ্যাঁ, আমার সাথে কথা কেন বলবা?? যাও যেয়ে শিহাবের সাথে কথা বলগে যাও!”
শিহাব! চমকে উঠে একটু নিঝুম। শিহাবের কথা এখানে কেন আসলো? হ্যাঁ, শিহাব বলতে একটি ছেলের খোঁজ সে নিবিড়ের কাছে চেয়েছিল বটে, তবে সে তো তার বান্ধবীর জন্য। সে নিজে তো শিহাবকে চেনেইনা, কথা বলতে যাওয়া তো বহুদুরের ব্যাপার। তাহলে? নিবিড় এভাবে বলল কেন? “দুত্তোর! ঝগড়া লাগানোর আর জায়গা পায়না! যত্তসব!”, ভেবে আবার পড়ায় মন দেয় নিঝুম।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
21-06-2021, 05:27 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:24 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দিন যায়। কথা আজকাল ল্যান্ডলাইনের বাইরেও ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। নিঝুম বাসার কারো মোবাইল থেকে নিবিড়কে মেসেজ দেয়, নিবিড় তা রিপ্লাই করে। তবে কেন যেন আজকাল মায়েদের অগোচরেই চলছে এই মেসেজিং। কথার বিষয়বস্তু কিন্তু একই আছে। ইতিমধ্যে নিঝুমের গুটিকয়েক বান্ধবীর সাথে মোবাইলে পরিচয় হয়েছে নিবিড়ের। তবে তাদের সাথে কী কথা বলে নিবিড়, তা কখনো জানতে চায়না নিঝুম।
মা’রা খুব ভালো বন্ধু হওয়ার কারণে নিবিড়দের বাসায় প্রায়ই যাওয়া হয় নিঝুমদের। এমনই একদিন গেছে মায়ের সাথে। নিবিড় বাসায় নেই। নিঝুম আবার বরাবর একটু ছটফটে। এক জায়গায় সুস্থির হয়ে বসে থাকা যেন তার ধাতে নেই। এই অস্থিরতার কারণে মুভি পর্যন্ত দেখেনা সে। যাই হোক, নিবিড় তো নেই, কী করবে এখন নিঝুম? খানিকক্ষণ এঘর ওঘর ঘুরাঘুরি করে চোখ পড়ে নিবিড়ের টেবিলের দিকে। কাগজপত্র স্তুপ হয়ে আছে। “ইস কী অগোছালো হয়ে আছে!”, ভাবে নিঝুম। ভাবখানা এমন, নিজে যেন খুব গুছানো মেয়ে! তবুও, নিবিড়ের টেবিলটা সে গুছানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কাগজ ঘাটাই সার হয়, গুছানো আর হয়না, অত ধৈর্য কোথায় তার? যেখানকার কাগজ সেখানে রেখে দেয় আবার। ইতিমধ্যে নিবিড় এসে গেছে। সময় কাটানো আর কষ্ট হয়না নিঝুমের।
পরদিন। আবার কথা হচ্ছে নিবিড়ের সাথে। নিঝুমের নোট দরকার একটা। নিবিড় বলে,”দাঁড়া খুঁজি।” নিঝুমের হঠাৎ মনে পড়ে যায়, নোটখানি তো সে কালই দেখে এসেছে নিবিড়ের টেবিলে। জানায় সে কথা,”অ্যাই তোর টেবিলে একটা খাম আছে না? তার নিচে দেখ নোটটা আছে।” নিবিড় বলে,”তুই আমার টেবিলে হাত দিয়েছিলি?” নিঝুম-“হু দিয়েছি তো।”।সাথে সাথে কেমন রেগে যায় নিবিড়,”কেন?? তুই আমার টেবিলে হাত দিলি কেন? আর কখনো ধরবিনা আমার জিনিস। যা তুই আর আমার বাসায়ই আসিস না কখনো।”
অভিমানী নিঝুম। নিবিড়ের এমন কথায় কষ্ট পায়। তবে কষ্টটা চেপে রাখে নিজের ভিতরেই। মুখে কিছু বলেনা, কিন্তু এরপর বহুদিন আর নিবিড়ের বাসায় যায়নি সে। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে,আর কখনো নিবিড়ের কোন কিছুতে সে হাত দেবেনা।
আকাশ। তালঢ্যাঙা একটি ছেলে। একই স্যারের বাসায় পড়তে যেয়ে নিঝুমের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে তার নতুন নতুন। নিঝুম নতুন বন্ধু পেয়ে মহাখুশি মনেই নিবিড়কে জানায় আকাশের কথা। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে নিবিড় আকাশকে কোনমতেই সহ্য করতে পারছেনা। কেন, তা হাজার জিগ্যেস করেও কোন সদুত্তর পায়নি নিঝুম। নিবিড়ের বারবার সেই একই কথা, “আকাশ ভালো না, ওকে আমার ভালো লাগেনা।” আকাশের তরফ থেকেও নিবিড়ের প্রতি খুব একটা পছন্দনীয় মনোভাব দেখা যায় না। অথচ দুজনের কেউ কাউকে চিনেনা, জীবনে দেখেওনি, নামও শুনেনি। ওদের মাঝে শুধু নিঝুমই কমন। একে অপরের কথা তারা নিঝুমের থেকেই জেনেছে। সেদিন মা’র অনেক চাপাচাপির পর নিঝুম যেতে রাজি হয় নিবিড়ের বাসায়। আরও দু-একজন বন্ধু বান্ধব আসে ছোটবেলার, আড্ডা হয়। সব ছাড়িয়ে নিবিড়ের বক্তব্য শুনে গা টা জ্বলে উঠে নিঝুমের-“আকাশ যে তোর boyfriend না তার প্রমাণ দে।” কিন্তু নিজেকে সামলে নেয় সে। বলে,”আমার boyfriend হলে সবার আগে তোরই জানার কথা নিবিড়।” নিবিড় তবুও মানেনা। বলে,”প্রমাণ কর।” নিঝুম বলে,”কীভাবে প্রমাণ করব আমি? সমস্যা কোথায় তোর??? আমার এমন কেউ থাকলে তুই জানবিনা এটা কেমন করে হয়??” বলে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়।
ফেরার সময় সেদিন একটা অভাবনীয় ঘটনা ঘটে। ওদেরই এক বান্ধবী, লিসার ছোট্ট ভাগ্নিকে নিয়ে এসেছিল সে নিবিড়ের বাড়িতে আসার সময়। ভীষণ কিউট বাচ্চাটাকে নিঝুমের ভালো লেগে যায়। ফেরার সময় মা’রা নেমে গেছেন আগে, নিঝুম লিসা আর নিবিড় গল্প করতে করতে নামে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বাচ্চাটার গালে ছোট করে একটি চুমু এঁকে দেয় সে, গাল টিপে দেয়। নিবিড় একটু উপরে ছিল। সে নিঝুমকে ডাকে,”এই তুই একটু উপরে আয় তো।” অবাক হলেও চুপচাপ নিবিড়ের কথা মানে নিঝুম। উপরে যায় নিবিড়ের কাছে,”কী? ডাকলি কেন?”
-“ওই জায়গায় আকাশ হলে ভালো হত। না?”, নিঝুমের কানের কাছে মুখ এনে বলে নিবিড়। প্রচণ্ড রাগে একটা মিনিট কোন কথা বলতে পারেনা নিঝুম। এরপর সিঁড়ির আধো আলো আধো অন্ধকারে “ঠাস” করে একটা শব্দ। আর একটা কথাও না কারো মুখ থেকে। দুদ্দাড় করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে চলে যায় নিঝুম। বাসায় ফিরে একটা মেসেজ দেয় নিবিড়কে,”তুই আমাকে এরকম ভাবতে পারলি?” কোন রিপ্লাই আসেনা সেই মেসেজের। চড় খেয়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল নিবিড়। আজ পর্যন্ত কেউ তাকে এত নীরব, অথচ এত সশব্দ প্রতিবাদ জানাতে পারেনি কোন বিষয়ে। আর নিঝুম কিনা…? তবে একটা ব্যাপারে সিওর হয়ে যায়, না নেই কিছু নিঝুমের মনে কারো জন্য। জানেনা কেন, কেমন একটা খুশির বাতাসও ছুঁয়ে যায় চড় খেয়ে অপমানে জ্বলতে থাকা গালটাকে। তবে পরক্ষনেই আবার সেই জ্বালাটা ফিরে আসে নিঝুমের মেসেজ দেখে। “চড় মারলি কেন তুই আমাকে??”-লিখতে যেয়েও লিখলনা। নিঝুমের সাথে আর কোন কথা বলবেনা, ঠিক করে সে।
Posts: 776
Threads: 0
Likes Received: 1,584 in 919 posts
Likes Given: 1,439
Joined: Jan 2021
Reputation:
187
বেঁচে থাকুক তাদের রাগ অভিমান ভালোবাসা
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
22-06-2021, 09:45 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:24 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দু’দিন যায়। তিনদিন। কোচিঙেও কোন দেখা নেই, বাসার সবাইকে লুকিয়ে মোবাইলও চেক করে নিঝুম। কোন মেসেজ নেই।
“চড়টা কি বেশি জোরে হয়ে গেছে? আমার হাত তো আবার চড় মারার জন্য বিখ্যাত।…আচ্ছা বেশি রিঅ্যাক্ট করে ফেললাম নাকি? নাহ যা করেছি একদম ঠিক করেছি। আনটি কে ডেকে যে মার খাওয়াইনি, এটাই বহুত। কিন্তুহ…শালার পেটে পেটে এত রাগ কেন? ব্যাটা তুই তো দোষ করেছিস বলেই থাপ্পড়টা খেলি, এখন নিদেনপক্ষে সরি তো বল! তা না, বাবুর উল্টা আমার উপরেই রাগ দেখান হচ্ছে। দেখাক গা। who cares?!”- এমনি সব সাতপাঁচ ভাবে নিঝুম, ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ করতে যেয়েও রেখে দেয়।
চারদিনের দিন আর ধৈর্য রাখতে পারেনা নিঝুম। একটা গুরুগম্ভীর মেসেজ পাঠিয়েই দেয়,”তুই কি আমার সাথে কথা বলবি? হ্যাঁ, নাকি না?” এরপর নিবিড় আর রিপ্লাই না করে কীভাবে? জানে তো মেয়ের জেদ। যদি না বলে, জীবনেও আর কথা বলতে আসবেনা তার সাথে। মাঝ থেকে কোথাকার কোন আকাশের জন্য এতদিনের বন্ধুকে হারাতে হবে। তারচেয়ে রিপ্লাই করেই দেওয়া যাক! তবে… চড় মেরেছে যে সেই রাগটাও ভোলা যাচ্ছেনা। থাক কী আর হবে রাগ করে, যে মেয়ে রে বাবা! “একটু রাগ দেখিয়েই রিপ্লাই করি নাহয়, দুধের স্বাদ ঘোলে তো মিটুক!”, এই ভেবে রিপ্লাই করে দেয় নিবিড়-“হু।” ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসে-” গুড। কিন্তু আমার সাথে রাগ দেখিয়ে লাভ নেই। তোর এই রাগ আমি পরোয়া করবনা। আর কোনদিন ওই রকম কথা বললে হাঁটুর মালাইচাকি ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিব মনে রাখিস।” আহা! কোথায় ভেবেছিল থাপ্পড় মারার জন্য স্যরি টরি বলে মেসেজ দিবে, তা না, এ কী! “হে ঈশ্বর! এই মেয়ে এত দস্যি কেন??!”, ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয় বুক থেকে।
আবার কাটতে থাকে সময়। পুরনো ঝগড়া ভুলে বন্ধুত্ব আবার এগিয়ে যায়। তবে আকাশের প্রতি বিদ্বেষের কোন পরিবর্তন হয়না নিবিড়ের। বরং দিন দিন বেড়েই যায় আকাশকে নিয়ে নিঝুমের উচ্ছাস দেখে। তবে সেদিনের মতো নিঝুমকে কষ্ট দিয়ে কথা বলেনা আর নিবিড়, সে খুব ভালভাবেই জানে এখন যে নিঝুমের এই শিশুসুলভ উচ্ছাস শুধুই নতুন বন্ধু পাওয়ার আনন্দ আর নিবিড়কে সব বলার আগ্রহ। তবুও, মনের কোথায় যেন খচখচ করে। কেন করে, নিজেকে জিগ্যেস করেছে বহুবার। উত্তর-জানিনা, বুঝিনা, বুঝতে চাইও না, আমি আকাশকে সহ্য করবনা ব্যস। আকাশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশও করে ফেলে মাঝে মাঝে, কিন্তু নিঝুম আর পাত্তা দেয়না, তার মতে, বন্ধু বন্ধুই। নিঝুম ভাবে, নিবিড় হয়তো মনে করছে আকাশ তার বন্ধুত্বকে কেড়ে নিবে। কিন্তু নিঝুমের জীবনে নিবিড়ের যে জায়গা, সেখানে আকাশ তার হাজার ভালো বন্ধু হলেও বসতে পারবেনা। নিবিড় তা বুঝুক না বুঝুক, সে তো জানে নিবিড় তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, bestfriend. তার সিংহাসন তারই থাকবে। তবে খুঁটিনাটি মান অভিমান যে চলেনা, তা না। এই তো সেদিনই নিঝুমকে আবার রাগিয়ে দিল নিবিড়। না, আকাশকে নিয়ে নয়। বান্ধবীর সাথে কী নিয়ে লেগেছে নিঝুমের, তা নিঝুমকে জিগ্যেস করায় উত্তর পায়নি। পরে আবার নিঝুম একটু দরকারে কথা বলতে আসলে,প্রশ্ন করলে নিবিড় বিরক্তি দেখায়। পরে জানতে পারে সেদিন নিঝুমের মন অনেক খারাপ ছিল বলে উত্তর দেয়নি, কারণ বৃষ্টি তার অনেক ভালো বন্ধু, নিবিড়ের মতো না হলেও কাছাকাছি। তার সাথে কিছু হলে মন খারাপই লাগে। কিন্তু নিবিড় তাকে এভাবে ভুল বুঝবে সে ভাবেনি। একটু মুখভার করে নিঝুম। মেসেজ দিয়ে দেয়,”আমার ভুল হয়েছে। আর কোনদিন তোকে কিছু জিগ্যেস করবনা। স্যরি বিরক্ত করার জন্য। বাই”। নিবিড় ভুল বুঝতে পেরে অনেক স্যরি বলে মেসেজ দিলেও উত্তর দেয় না। পরদিন কোচিঙে অঙ্ক পরীক্ষা ছিল। নিবিড়ের সাথে কথা বলেনি বলে জানেনা সে আসবে কিনা। নিঝুম নিজের ক্লাস টাইমে যেয়ে বসে থাকে। জানালার ধারের সীট তার খুব পছন্দ। সেখানেই বসে তাকিয়ে থাকে বাইরে। এমন সময় দেখতে পায় নিবিড় আসছে। বাইরে থেকে নিঝুমকে দেখতে পেয়ে হাসি দেয় একটা। নিঝুম অন্যদিকে তাকায়। ক্লাসে ঢুকে আর কোনদিকে না যেয়ে সোজা নিঝুমের কাছে এসে বসে পড়ে। মাথায় আদুরে একটা চাঁটি মেরে আরও আদুরে গলায় বলে,”তুই এমন বাচ্চাদের মতো রাগ করিস কেন রে?” ব্যস, রাগ গলে জল। “মোটেও আমি বাচ্চাদের মতো রাগ করিনা”, প্রতিবাদ করতে যেয়ে হেসে ফেলে নিঝুম। মান অভিমানটা বড্ড বেশিই যেন তাদের, তারপরও বন্ধুত্বটা বড় মধুর লাগে,নিবিড়ের ফার্স্ট বেঞ্চ আর নিঝুমের লাস্ট বেঞ্চ মিলেমিশে পরীক্ষা দিতে দিতে এরপর পুরো সময় জুড়ে এই কথাই ভেবে চলে।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
22-06-2021, 09:47 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:25 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
“ওহহো আকাশ, তোকে না কতবার বলেছি ফোন নেই আমার? তাও বারবার ফোন দিসনা কেন বলার মানে কী?”, খাতায় কুনোব্যাঙের ছবি আঁকতে আঁকতে আকাশের প্রতি একটু ঝাঁঝিয়েই ওঠে নিঝুম।
-“তোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগে… ব্যাঙের ঠ্যাং ঠিক কর, বাঁকা হয়েছে”, আকাশ বলে।
-“কই? খাতা বাঁকা……… তোদের সবার ভালো লাগানোর দায়িত্ব নিয়েছি নাকি আমি??”
-“আহা দোস্ত এমন করিস কেন? আসলে হয়েছে কী, ওই ব্যাপারটা নিয়ে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম, তাই বলছিলাম তোর ফোন থাকলে ভালো হত, ফোন করতে পারতি অথবা আমি ফোন করতে পারতাম তোকে।”
-“ও ওই ব্যাপার? তো সেটা আগে বলবেই পারতি। সাতসকালে উঠে ফোন দিস না কেন রেকর্ডটা গ্রামোফোনে না চাপালেও তো পারতি। আমি তো আসিই, তখন যা বলার বললেই হয়। আর তুই কীভাবে দাবি করিস তোকে আমি ফোন দিব? জীবনে দিয়েছি? নিবিড়কেই আমি খুব দরকার লাগলে ফোন করি, তাও ল্যান্ডলাইনে। আর তুই চাস আমি তোকে এমনি এমনি ফোন দিব!”
-“আবার নিবিড়!”
-“হ্যাঁ নিবিড়। কেন তোর কোন সমস্যা হয়েছে নিবিড়ের কথা বলায়?? ভুলে যাস না ও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, তোর সাথে বন্ধুত্বের অনেক আগে থেকে ওর সাথে বন্ধুত্ব…বুঝিনা বাবা একজন আরেকজনের নাম শুনলেই এমন খেপে যাস কেন তোরা!”
-“আচ্ছা হয়েছে হয়েছে, এখন আমার কথা শুনবি তো নাকি?”
-“হু বল তোর কী কথা।”
এস এস সি পরীক্ষা সামনেই। কলেজ শেষ, পরীক্ষা পূর্ববর্তী প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন স্যার ম্যাডামদের বাসায় আর কোচিঙে দৌড়াদৌড়ি চলছে খুব ছাত্রছাত্রীদের। তেমনই এক বায়োলজি স্যারের ভোর সাতটার ক্লাসে বসে উপরের কথাবার্তাগুলো চলছে নিঝুম আর আকাশের। ঘুম ভেঙ্গেই মেঘলা আকাশ দেখে মনটা বেশ উড়ু উড়ু ছিল নিঝুমের। কিন্তু আকাশের প্রশ্ন শুনে মেজাজটা যায় বিগড়ে। নিঝুম ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথে আকাশের প্রশ্ন-“তুই আমাকে ফোন দিস না কেন?” ব্যাটা তোর কাছে আমি ফোন করব চুক্তিপত্রে সই করেছি নাকি!-বলতে যেয়েও বলেনা নিঝুম। সকাল সকাল মুড অফ করার ইচ্ছে হচ্ছিলনা। তবে মেজাজটা খারাপ হয় ঠিকই। কিন্তু ভালো হতেও সময় লাগেনা কালো মেঘে ঢাকা আকাশের ছায়ায় মন হারাতে হারাতে আর বন্ধু আকাশের সাথে পরবর্তী ক্লাসটাইম টকশো করতে করতে।
আজকাল নিবিড় বেশ বাবুয়ানা দেখানো শুরু করেছে নিঝুমের সাথে। কোচিঙের ক্লাস শেষ। সুতরাং দেখাও হয়না। সামনে পরীক্ষা, বাসায়ও যাওয়া হয়না তেমন একটা। কিন্তু মেসেজ ঠিকই চলে দুজনার। এখন অবশ্য পড়াশুনোই পুরো জায়গা দখল করে নেই। অন্য কথাও হয়। তার মধ্যে নিবিড়ের দখলদারিত্ব প্রকট। কিছুদিন হল তাদের মধ্যে মিসডকল মিসডকল খেলা শুরু হয়েছে। খেলাটা যে কে আগে শুরু করেছে, বলা মুশকিল। হয়তো নিঝুমই। নিঝুম হঠাৎ হঠাৎ ল্যান্ডলাইন থেকে নিবিড়ের মোবাইলে ফোন করে একটা রিং বাজলেই ছেড়ে দিচ্ছে। নিবিড়ও উত্তরে নিঝুমের ল্যান্ডলাইনে একটা রিং বাজাচ্ছে। কোন নিয়ম নেই যে দিতেই হবে। এটা শুধুই খেলা। তাই মাঝে মাঝেই খেলেনা নিঝুম। কিন্তু পরদিন মেসেজ দিতে গেলে একজনের রাগী রাগী মেসেজ আসে-“কাল খোঁজ ছিলনা কেন?”
রিপ্লাই-“মানে?”
আবার রিপ্লাই-“মানে বুঝনা তুমি? কাল ‘মিস’ দাওনি কেন?”
-“রোজ দিতে হবে এমন কোন নিয়ম আছে নাকি রে কোথাও?”
-“আছে।”
-“কোন শাস্ত্রে আছে? দেখা।”
-“আমার শাস্ত্রে আছে। তুমি দিবে কি না? মেসেজ দিতে না পার, একটা ‘মিস’ দিবে রোজ যেখান থেকেই পার।”
-“কেন?”
-“আমি বলছি তাই। টেনশন লাগে।”
-“আজিব!টেনশন কেন লাগবে?”
-“জানিনা। যা বলছি করবে ব্যস।”
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
web archive থেকে এসব খুঁজে খুঁজে বার করতে প্রচুর প্রচুর ধৈর্য এবং সময় লাগে ...
এক একটা পাতা খুঁজে কপি করতে কখনো এক ঘন্টা লেগে যায় ..
কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছেনা যে কেউ আদৌ পড়ছে বা কারোর ভালো লাগছে কিনা !!
কোনো মন্ত্যব্য নেই কারো ......
Posts: 776
Threads: 0
Likes Received: 1,584 in 919 posts
Likes Given: 1,439
Joined: Jan 2021
Reputation:
187
অনেকটা ত্রিভুজ আকারে চলছে প্রেম কাহিনী, দেখা যাক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়......
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
23-06-2021, 01:54 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:26 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
হ্যাঁ, নিবিড় আর নিঝুমের ডিজিটাল চিরকুটের সংলাপগুলো আজকাল এরকমই। ‘মিস’ মানে ‘মিসডকল’ ইনশর্ট।আর দেখা যাচ্ছে বেশ উল্লেখযোগ্য একটা পরিবর্তনও হয়েছে; নিবিড় আজকাল নিঝুমকে মেসেজে ‘তুমি’ করে বলা ধরেছে। নিঝুম অবশ্য নিবিড়ের চাপাচাপিতে হাজার চেষ্টা করেও পারেনি তুমি বলতে। চার বছর বয়স থেকে তুইতোকারির সম্পর্ক, একদিনে বদলে দেওয়া যায় নাকি? আর দেবেই বা কেন? বন্ধুকে তুই করেই তো বলে। নিবিড় হঠাৎ কেন তুমি করে বলছে, তা জিগ্যেস করায় উত্তর দিয়েছে, এমনি। নিঝুম যেমন পাগল, বন্ধুও তার সঙ্গদোষে পড়ে পাগল হয়ে গেছে ভেবে আর কথা বাড়ায়নি। সে যাই হোক, কথা হচ্ছে নিঝুমকে রোজ নিজের খোঁজ নিবিড়কে দিতেই হবে মিসডকল বা মেসেজ দিয়ে। তবে দুষ্টু নিঝুম কথা মানেনা প্রায়ই। ইচ্ছা করেই ‘খোঁজ’ দিতে ভুলে যায়। না না, সবসময় না, মাঝে মাঝে তো এমনিতেই মনে থাকেনা ‘খোঁজ’ দিতে, রোজ রোজ মনে থাকে নাকি? তবে বেশিরভাগ সময় ইচ্ছা করেই মনে থাকছেনা। কেন? নিবিড়ের বকা খেতে যে তার ভী- ষ- ণ ভালো লাগে। আর তাছাড়া, তার জন্য কেউ চিন্তা করে, টেনশন করে, এই চিন্তাটা নিঝুমের মনকে অন্যরকম একটা খুশিতে ভরে দেয়। ভালো ছাত্রী সে। এই জীবনে দরকার ছাড়া, লেখাপড়ায় সাহায্য চাওয়া ছাড়া কেউ তার খোঁজ করেনি। নিবিড়ের হঠাৎ এমন খাপছাড়া আচরণে অবাক হলেও তাই খুশিও হয় নিঝুম। তাই এই ভালোলাগাটাকে বারবার এভাবে ওভাবে নেড়েচেড়ে দেখতে মন চায়। সেজন্যই ‘খোঁজ’ দিতে ‘ভুলে যেয়ে’ রাগিয়ে দেয় মাঝে মাঝেই তার প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে।
একদিন খোঁজ না পেলে নিঝুমের বান্ধবীদের মাথা খারাপ করে দেয় নিবিড়। “নিঝুম কোথায়?? যেখানে থাকুক, একটা খোঁজ এনে দে প্লিস।”, এভাবেই অনুরোধ করে সে তাদের।তবে নিঝুম এসবের কিছুই জানেনা। প্রজ্ঞা, নিঝুমের অন্যতম ভালো বান্ধবীদের মধ্যে একজন। তার সাথে ফোনে নিবিড়ের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল নিঝুম। কারণ প্রজ্ঞার পছন্দের ছেলে ঋজুর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দিয়েছিল নিবিড়। তারপর থেকেই প্রজ্ঞা আর ঋজুর প্রেম শুরু, আর প্রজ্ঞার সাথে নিবিড়ের পরিচয়। এই প্রজ্ঞাই সর্বপ্রথম নিঝুমের কাছে তার সন্দেহটা ব্যক্ত করে নিঝুম তার বাসায় এলে, “নিবিড় মনেহয় তোকে পছন্দ করে রে নিঝুম।” কিন্তু নিঝুম আমলেই নেয়না সে কথা। বলে, “খেয়ে আর কাজ নেই তোর? নিবিড়কে আমি চিনিনা, না?” প্রজ্ঞা বলে,“চিনবি না কেন? তবে এবার একটু আলাদাভাবে চেনার চেষ্টা কর। তুই জানিস, তোর একদিন খবর না থাকলে ছেলেটা কেমন অস্থির হয়ে থাকে?” এবার ঘাড় ঘুরিয়ে সরাসরি প্রজ্ঞার দিকে তাকায় নিঝুম, “তাই? তোকে কে বলল?” প্রজ্ঞা নীরব। এরপর নিঝুম বলে, “তোর কোথাও ভুল হচ্ছে। তুই তো জানিস এটা সম্ভব না। জানিস না আমরা…” নিঝুমকে কথা শেষ করতে দেয়না প্রজ্ঞা, “হ্যাঁ আমি জানি বাধাটা কোথায়। কিন্তু প্রেম কি এসব দেখে নিঝুম?”প্রাণখোলা একটা হাসি দেয় এবার নিঝুম, “এবার বুঝেছি। নিজে আরেকজনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস কিনা, তাই সবখানেই প্রেম দেখিস! শোন, তোরা যা জানিস তার চেয়েও বড় বাধা হল we never feel anything like this for each other. নিবিড় আমার প্রেমে পরলে আমি বুঝতামই। তোদের কারো কিছু বলা লাগত না। কিন্তু তা হয়নি। আমরা দুজন এত ঝগড়া করি টম এন্ড জেরির মতো, তোরাই তো বলিস। এরপরও কী করে এখন আবার এই কথা বলিস? আমাদের মধ্যে সম্পর্ক হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবে! হা হা হা! গাধী!”, বলে প্রজ্ঞার পনিটেইল করা চুলে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে চলে যায় নিঝুম।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
23-06-2021, 01:54 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:26 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দেখতে দেখতে ডিসেম্বর মাস এসে যায়। সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকলেও ডিসেম্বর মানেই কেমন একটা ছুটি ছুটি ভাব ঘুরে বেড়ায় আকাশে বাতাসে। ছুটির আমেজে ছোটবেলার বন্ধু নিঝুম নিবিড় লিসা আর সুপ্তি একত্রিত হয় নিঝুমদের বাসায়। এরা সবাই ছোটবেলায় একই কলেজে পড়লেও এখন প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা কলেজে পড়ছে। নিবিড় আর নিঝুমের মধ্যে যে গাঢ় বন্ধুত্ব, লিসা কিংবা সুপ্তির সাথে অতটা অ্যাটাচমেনট নেই ওদের, ওদের সাথে অত যোগাযোগও হয়ে ওঠেনা।
নিবিড়ের দূরসম্পর্কের বড় বোন ঈশিতাও এসেছে। সে নিবিড়দের বাসায় থেকে পড়াশুনা করে। তাই নিবিড়ের বন্ধুদের সাথে পরিচয় তারও আছে। আর সবার মা তো এসেছেনেই। তবে মা এবং ছেলেমেয়েদের ফ্রেন্ড সার্কেল আলাদা আলাদা আড্ডা দিচ্ছে অবশ্যই। হাসিঠাট্টায় সময় কাটাতে কাটাতে নিবিড় আজ আবারও নিঝুমকে আঘাত করে বসে আকাশকে নিয়ে। এবার নিঝুম আর কোন ঝগড়াঝাঁটিতে যায় না, সাফ বলে দেয় যে আকাশকে নিয়ে নিবিড় আর একটা কথাও বললে সে নিজের একটা ক্ষতি করে বসবে। বেগতিক দেখে ঈশিতা নিঝুমকে টেনে নিয়ে যায় অন্য ঘরে। কিন্তু নিয়ে যেয়ে যে কথা বলে তা শুনে আবারও নিঝুম দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। ঈশিতা নিঝুমকে প্রশ্ন করে, “নিঝু তুই কি নিবিড়কে পছন্দ করিস?” নিঝুম বলে, “এই এক ব্যাপার আমি আর কতজনের কাছ থেকে শুনব?? একজন বলে নিবিড় আমাকে পছন্দ করে, আরেকজন আবার আমাকেই প্রশ্ন করছে আমি পছন্দ করি কিনা। সমস্যাটা কোথায় তোমাদের সবার? জান না তোমরা এটা সম্ভব না? ” অন্য কেউ হলে এত কড়া ভাবে কথাগুলো বলতে পারতোনা নিঝুম।কিন্তু নিবিড়ের বোন মানেই তারও বোন, এজন্যই বয়সের পরোয়া না করে এভাবে বলে দেয়। ঈশিতা দমে না। বলে, “সম্ভব করতে চাইলেই সম্ভব। তোদের মতো এরকম সমস্যা অনেকেরই আছে। কিন্তু তারা সেটাকে জয় করেছে। কিন্তু সম্ভব অসম্ভবের কথা পড়ে আসছে। তুই আরেকবার ভাব, ভেবে বল তুই নিবিড়কে পছন্দ করিস কি না। তুই ওর জন্য নিজের ক্ষতি করতে চাইলি,এটা তো স্বাভাবিক না।” নিঝুম বলে, “আমি কোন ছেলের ব্যাপারেই এরকম কিছু ফিল করিনা। আর কেন নিজেকে কষ্ট দেব সেটা আমি বলেছি তোমার সামনেই। ও আকাশ আর আমাকে নিয়ে এমন কথা বলে কেন? ও তো জানে যে আমি এমন না। ” এবার নিঝুমের চমকে যাওয়ার পালা। ঈশিতা বলে, “তুই পছন্দ করলেও আমি তোকে মানা করতাম সিরিয়াস হতে। কারণ ও হয়তো তোকে সিরিয়াসলি নিত না। তোকে মিসডকল দেয়, ওর কলেজের একটা মেয়ে আছে, ওর ফ্রেন্ড, রূপা, ওকেও দিত এরকম মিসডকল। ওর কাছে অবশ্য সেটা শুধু বন্ধুত্বই। কিন্তু রূপা সম্ভবত ওকে পছন্দ করে। ইচ্ছা করে করে ওকে ফোন দেয়, দরকার না থাকলেও। ও মিসডকল দিলে তখন নিবিড় ব্যাক করত। আমাকে বলেছে ওর নাকি বিরক্ত লাগে। কিন্তু আমি ঠিক সিওর না। আমার মনেহয় নিবিড় ওকে পছন্দ করে। ” নিঝুমের চোখেমুখে একটা খুশি ঝিলিক দিয়ে যায়, “নিবিড়ের কাউকে পছন্দ???? ও হো!” মুহূর্তে রাগ ভুলে নিবিড়ের কাছে ছুটে যায় নিঝুম। “কী রে রূপা কে?”, প্রশ্ন করে।নিবিড় একটু হকচকিয়ে যায় প্রশ্নটা শুনে। কিছু বলেনা। নিঝুম সুযোগ পেয়ে আবার পিছে লাগে, “হু হু তোমার বলতে হবেনা গুরু, আমি জেনে গেছি! পছন্দ কর তো বলতে কী ভয়?আমাকে নাম্বার দিস, আমিই বলে দেব।” নিবিড় বুঝানর চেষ্টা করে, “তোকে কে বলল আমি রুপাকে পছন্দ করি? করিনা। ও শুধুই আমার ক্লাসমেট, আমার আর সব বন্ধুর মতো একজন বন্ধু।” কিন্তু নিঝুম শোনে না। এরপর খোঁচাতেই থাকে। সাথে যোগ দেয় লিসা আর সুপ্তি। নিবিড় একবার কটমট করে ঈশিতার দিকে তাকায়। নিঝুম তা দেখেও দেখেনা। সে আছে তার খেয়ালে, নিবিড়- রূপা, রূপা- নিবিড়। না দেখেই মেয়েটাকে পছন্দ করে ফেলে সে।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
23-06-2021, 01:55 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:27 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
লিসা আর সুপ্তি নিজেদের মধ্যে নিচুস্বরে কী যেন আলোচনা করছে। নিঝুম যেয়ে হামলে পড়ে, “এই তোরা কী এত বলছিস রে কখন থেকে?” কিন্তু পাশ কাটিয়ে যায় ওরা এই প্রশ্ন। নিঝুম গায়ে মাখেনা। নিবিড় আর সেও তো কতকিছু গল্প করে, সব তো ওরা জানেনা। এই ভেবে আর কিছু বলেনা। হোসট হওয়ার কারণে নিঝুম আজ বন্ধুদের সাথে বেশি আড্ডা দিতে পারছেনা, আতিথেয়তা করতে একটু ছুটাছুটির মধ্যেআছে। তাও যতটা সম্ভব সে বন্ধুদের সাথে থাকার চেষ্টা করছে। দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে যায়। এবার একটু চিন্তায় পড়ে যায় নিঝুম। এক স্যারের বাসায় ক্লাস আছে। তার যাওয়ার ইচ্ছে নেই আজ। মা কে বললে হয়তো যেতে মানাই করবেন। কিন্তু স্যার তো ছার দেবেন না।তাও একবার চেষ্টা করে দেখবে ভাবে নিঝুম। অন্তত রেডি তো হয়ে থাকা যাক, ভাবে সে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে। নিবিড় একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সে জানে যে আজ নিঝুমের ক্লাস আছে। আর এটাও জানে যে সেই ক্লাসে আকাশ আছে। হঠাৎ বলে ওঠে, “খালি চুল আঁচড়াচ্ছ কেন? ভালভাবে সাজগোজ কর একটু।” নিঝুম মাথায় চিরুনি ধরা অবস্থাতেই আয়নার দিক থেকে ঘুরে দাঁড়ায়, “কী বললি?” নিবিড়ের কণ্ঠের ঝাঁজ এবার স্পষ্টই বোঝা যায়,“ডেটে যাচ্ছ যখন, একটু সেজেগুজে যাওয়াই তো ভালো তাই না?” নিঝুম কী বলবে ভেবে পায়না। নিবিড় খুব ভালোমতই তো বুঝছে যে তার যাওয়ার কোনই ইচ্ছে নেই ক্লাসে। তাও এমন কথা বলল! না যাওয়ার চেষ্টা করবে ভেবেছিল, মুহূর্তে সেই চিন্তাটা বাতিল করে দেয় এবার নিঝুম। এই ছেলের সাথে আর এক মুহূর্তও এক ছাদের নিচে না। নিবিড়ের দিকে আর একবারও তাকায় না সে। আর সবাইকে ‘বাই’ বলে মাকে যেয়ে বলে ক্লাসে যাবে। বের হয়ে যায় বাবার সাথে। যাওয়ার সময় বাবার ফোন থেকে নিবিড়কে একটা মেসেজ দেয়, “আজ খুব বেশি কষ্ট দিলি তুই আমাকে।” এই মেসেজের কোন উত্তর দেয় না নিবিড়। তার ভেতরটা তখন জ্বলছে। তাকে উপেক্ষা করে নিঝুম আর কোথাও চলে যাবে, তাও আবার যেখানে ওই আকাশ আছে, এটা সে কোনমতেই মেনে নিতে পারেনা। নিঝুমের চুল আঁচড়ানো দেখেই তার মেজাজ খারাপ হওয়া শুরু হয়েছে, তাই বাঁকা বাঁকা কথা বলে ইচ্ছে করে নিঝুমকে কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু তাও নিঝুম চলে গেল। বুকের ভেতর এটা কীসের আগুন জ্বলছে অহরহ তা বুঝেও না বুঝার চেষ্টা চালিয়ে যায় নিবিড়। প্রজ্ঞার জেরার পর জেরায় তার কাছে সে কাল রাতে একটু আভাস দিয়েছে নিজের মনের। কিন্তু তা নিঝুমকে বলতে মানাও করে দিয়েছে। কারণ নিশ্চিতভাবে সে কিছুই জানায়নি। সে নিজেও নিশ্চিত না নিজের ব্যাপারে। এমন তো হওয়ার কথা না! হবেও না। তবুও, নিজের অনুভূতিগুলোকে নিজের কাছেই বড় অচেনা ঠেকে। প্রজ্ঞা সাথে সাথে বান্ধবীকে জানাতে চেয়েছিল, কিন্তু নিবিড় বাঁধা দিয়েছে, “প্রজ্ঞা আমি এখনো সিওর না। আমাকে একটু সময় দে। বলিস না কিছু আগেই। তোকে ঋজুর দোহাই। ” এরপর প্রজ্ঞার আর কিছু করার থাকেনা। ঋজুর নামটাই তার দেহমনে অদ্ভুত এক শিহরণ জাগায়। সেখানে তার দোহাই দিলে প্রজ্ঞা অচল, নিরুপায়।
ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথেই আকাশ বলে ওঠে, “এত দেরি করলি কেন আসতে? আমি কখন থেকে এসে বসে আছি!” মনটা আগেই খারাপ ছিল আজ নিবিড়ের কথা শোনার পর থেকে। আকাশের এই প্রশ্নে আর নিজেকে সামলাতে পারেনা নিঝুম, বারুদের মতো দপ করে জ্বলে ওঠে “একদম চুপ আকাশ। আমি তোমার girlfriend না যে আমাকে সময় বেঁধে আসতে হবে। আমি ক্লাসে পড়তে আসি, ক্লাসের সময়েই আসব। তোমার সাথে আমার দেখা করার কথা না যে আগেই এসে বসে থাকতে হবে।” বলতে বলতে গলা ধরে যায় তার। আকাশ হতভম্ব হয়ে থাকে। এই মেয়ের রাগ সে আগেও দেখেছে, যতদিন ধরেই চেনে, রাগটাই সবচেয়ে বেশি দেখার সুযোগ হয়েছে তার অভিমানী নিঝুমের, আর আন্তরিকতা, যার কারণে মাত্র এক মাসের পরিচয়ে নিঝুম হয়ে উঠেছে তার অন্যতম প্রিয় বন্ধু। কিন্তু তার কষ্টের রূপটা কখনো দেখেনি আকাশ। সদা উচ্ছল এই মেয়েটা যে কাঁদতে পারে, তা তার জানাই ছিলনা। “কী বলে ফেললাম যে এভাবে কেঁদে দিল নিঝুম?”, অবাক হয়ে ভাবতে থাকে। জিগ্যেস যে করবে কী হয়েছে, তাও সাহস পায়না। এখন পর্যন্ত ক্লাসে শুধু সে আর নিঝুমএসেছে। বাকিরা আসা শুরু করলে এভাবে কান্নাকাটি দেখলে কী মনে করবে তা ভেবে পায় না আকাশ। তবে নিঝুম নিজেই একটু পরে সামলে নেয়। চোখ মুছে বলে, “স্যরি রে। বেশি রিঅ্যাক্ট করে ফেলেছি। কিন্তু তোকেও একটা কথা বলে দিচ্ছি আমি, তোকে আর আমাকে জড়িয়ে কোন কথা শুনতে আমি রাজি না। আমি তোর জন্য বন্ধুত্বের বাইরে কিচ্ছু ফিল করিনা। এজন্য এমন কিছু কখনও করবিনা যাতে মানুষের মনে হয় যে আমাদের সম্পর্কটা শুধু বন্ধুত্ব না।” “মানুষের না শুধু নিবিড়ের নিঝুম?”, আকাশের এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনা সে। আকাশ বলে, “তোকে আর নিবিড়কে নিয়েও তো মানুষ কত কিছু ভাবে। সেখানেতো তুই এমন রেগে যাস না। আর নিবিড় তোকে আর আমাকে নিয়ে সন্দেহ করলেই তোর এত লাগে কেন? ওর কাছে নিজেকে ঠিক প্রমাণিত করার এত চেষ্টা কেন তোর?” নিঝুম জ্বলন্ত চোখে আকাশের দিকে তাকায়, “তুই ভুলে যাচ্ছিস আকাশ যে নিবিড় আমার bestfriend.ও আমাকে ভুল বুঝলে আমার কষ্ট লাগবেই। ” কিছু না বলে কাঁধ ঝাঁকিয়ে একটা বিশেষ ভঙ্গি করে আকাশ যার মানে অনেক কিছুই হতে পারে। আরও ছাত্রছাত্রী এসে গেছে ইতিমধ্যে। স্যারও এসে গেছেন। এরপর আর বিশেষ কথাবার্তা হয়না। ক্লাস শুরু হয়ে যায়। পুরো সময়টা অকারণেই বারবার চোখ ভিজে উঠতে থাকে নিঝুমের।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
24-06-2021, 09:54 AM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:28 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এরপর কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন। সেদিন ভীষণ মন খারাপ করে বাসায় ফিরেছিল নিঝুম। এসে দেখে বন্ধুরা চলে গেছে। রাতে মোবাইল চেক করে। না, কোন মেসেজ নেই। পরদিন একটা জাতীয় দিবস ছিল। সেই দিবসের শুভকামনা জানিয়েছিল রাতে নিবিড়কে। ব্যস, এইই। এরপর আর কোন কথা হয়নি প্রায় একসপ্তাহ। এরপর একটা নতুন ঘটনা ঘটে। নিঝুম যে স্যারের কাছে বাংলার জন্য কোচিং করছিল,অযাচিতভাবেই সেখানে ভর্তি হয় রূপা। হ্যাঁ, সেই রূপা যার কথা ঈশিতা বলে গিয়েছিল নিঝুমকে। প্রথমে রূপা নাম শুনে বিশ্বাস করতে পারেনি নিঝুম যে এই রূপা-ই সেই রূপা। পরে পুরো নাম মিলিয়ে দেখেছে যে হুম, এ সেই। খুশিতে লাফালাফি করা বাকি রাখে শুধু নিঝুম। উত্তেজনা চেপে পরিচয় করে রূপার সাথে। বলে যে সে নিবিড়ের বন্ধু। নিঝুমের নাম শুনে একটা মিষ্টি কিন্তু রহস্যময় হাসি দেয় রূপা, “ও তুমিই নিঝুম?” “আমিই নিঝুম মানে?”, অবাক হয়ে প্রশ্ন করে নিঝুম। “না কিছুনা, নিবিড়ের কাছে অনেক শুনেছি তোমার কথা।”, রূপার উত্তর। নিঝুম আরও অবাক হয়। তার ব্যাপারে অনেক আবার কী বলবে নিবিড়? জিগ্যেস করে রূপাকে। কিন্তু রূপা কিছু একটা চেপে যায় নিঝুমের কাছে “এই তো তেমন কিছুনা” বলে। কৌতূহল হলেও আর চাপাচাপি করেনা নিঝুম, নতুন পরিচয় কেবল, এখনই কিছু নিয়ে চাপাচাপি করা ঠিক হবেনা ভেবে চুপ হয়ে যায়। পিছনের সীটে বসে রূপাকে দেখতে থাকে তার অলক্ষ্যে। দেখতে ভালোই রূপা। লম্বা কোঁকড়া চুল, হালকা ফোলা গাল, দেখলেই টিপতে ইচ্ছে করে, আর মুখটা, নিঝুমের মনে হয় অবিকল নিবিড়ের মায়ের মুখের গড়ন সেখানে। নিবিড়ের মাকে ছোটবেলা থেকেই নিঝুমের খুব পছন্দ। ছোট থাকতে নিঝুমের মা তো তাকে কলেজে দিয়ে চলে যেতেন। নিবিড়ের মা রোজ বসে থাকতেন, কলেজ শেষ হওয়া পর্যন্ত। নিঝুমের মনে পড়ে, তাকে টিফিন খাইয়ে দিতেন রোজ আনটি। সেই চার বছর বয়স থেকেই যেন নিঝুমের আরেক মা হয়ে গেছেন নিবিড়ের মা। ছোটবেলায় কতদিন মনে মনে চেয়েছে অবুঝ নিঝুম যাতে সৃষ্টিকর্তা নিবিড়ের মাকে তার মা করে দেন। নিঝুমের কাছে অফুরন্ত মমতার প্রতিমূর্তি এক নারী নিবিড়ের মা। রূপাকে দেখতে দেখতে শৈশবের অজস্র এলোমেলো কথা মনে পড়ে যায় নিঝুমের, নস্টালজিক হয়ে যায়।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
24-06-2021, 09:55 AM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:28 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বাড়ি ফিরেই আর তর সয় না,নিবিড়কে মেসেজ দেয়, “তোর বউকে দেখলাম আজ।” এতদিন কোন মেসেজ দেয়নি নিবিড় নিঝুমকে, নিঝুমও দেয়নি। সেদিনের ব্যাপারটা নিয়ে মেজাজ খিচড়ে ছিল দুজনেরই। বেশ কয়েকবার দেবে ভেবেও পরে আর দেয়নি কেউই। কিন্তু এবার আর নিবিড় রিপ্লাই না করে পারেনা, “আমার বউ মানে?” নিঝুম রিপ্লাই দেয়, “মানে রূপা। আমার খুব পছন্দ হয়েছে রে, একদম আনটির আদল ওর চেহারায়, এই মেয়ে ভালো না হয়েই যায় না।” নিবিড় এই মেসেজ পেয়ে হাসবে না কাঁদবে বুঝে পায়না। ফোনটা হাতে নিয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ। শেষে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে রিপ্লাই করে, “আচ্ছা আমার বউকে তাহলে বলে দিস যে আমি কাল মামাবাড়ি যাচ্ছি।” নিঝুম আরও খুশি হয়ে যায়, বলে, “আচ্ছা বলে দেবো। সাথে এটাও বলে দেবো যে তুই ওকে…” বাক্যটা শেষ না করেই দুষ্টুমিমার্কা একটা হাসি জুড়ে দেয় মেসেজের শেষে, তারপর পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এই মেসেজের কোন রিপ্লাই আসেনা। না আসুক, একসময় না একসময় তো নিবিড়ের রূপাকে বলতেই হবে, তাই এখন এড়িয়ে গেলেও কিছু যায় আসেনা, ভাবে নিঝুম। পরদিন যেয়ে রূপাকে বলে যে নিবিড় মামাবাড়ি গেছে। একই সাথে পাশে বসে থাকা নিলীমার মোবাইল থেকে নিবিড়কেও মেসেজ পাঠায়, “বলে দিলাম তোর ‘বউ’ কে যা বলতে বলেছিলি। এখন কি বাকিটাও বলব?” নিবিড় সাথে সাথে উত্তর দেয়, “না তোর কিছু বলার দরকার নেই। একদম পণ্ডিতি করবিনা। ” আর কথা বাড়ায় না এরপর নিঝুম। রূপার সাথে গল্প করতে থাকে। দেখে রূপা তো বেশ ভালভাবেই জানে নিবিড়ের সম্পর্কে! এটাও জানে যে ওর মামাবাড়ি কোথায়! মামাবাড়ি গেছে বলতেই বলে দিল, “হুম্ম রাজশাহী গেছে।” মনে মনে বেশ আশান্বিত হয়ে যায় নিঝুম যে না,রূপা আর নিবিড় নিশ্চয়ই পছন্দ করে একে অপরকে। মনটা গুনগুনিয়ে ওঠে নিজের অজান্তেই, ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসিও চলে আসে কখন যেন।
“পিয়া কী নাযারিয়া…”, নতুন শেখা খেয়ালটা গুনগুন করতে করতে আর চুল মুছতে মুছতে কী মনে করে থমকে যেয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে নিঝুম।সদ্যস্নাত গোলগাল ফর্সা মুখ,পাতলা ঠোঁট, আর হালকা নীল কামিজ পরিহিত মাঝারি গড়নের দেহটা দেখতে দেখতে ছোট্ট একটা হাসি ছুঁড়ে দেয় নিজের উদ্দেশ্যে। “নাহ আমি এমনই ভালো! সাজগোজ আমার পোষাবে না!”,আপনমনেই বলে। গতকাল সন্ধ্যায় একটা বিয়েবাড়িতে গেছিল নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। সেখানে তার বয়সী মেয়েদের প্রসাধনের বহর দেখে তার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেছে। এত সাজতে পারে কোন মেয়ে?!বাব্বাহ! অবশ্য সাজতেই পারে, পরক্ষনেই আবার ভাবে সে, নিজে তো সাজগোজের ব্যাপারগুলো ভালো বোঝে না নিঝুম। এত বড় হয়েছে, এখনো কাজল দিতে পারেনা, মা’র দিয়ে দিতে হয়। “আজ তো বড়দিন, আজ একটু সেজে ক্লাসে যাবো নাকি?”, ভাবতে যেয়ে আবার হেসে ফেলে সে। “ইশ! তোমাকে কে দেখবে তুমি ছাড়া সোনা যে আজ সাজার শখ হল তোমার?”, প্রতিবিম্বের দিকে ভেংচি কেটে ভেজা চুলগুলো আবার মুছতে থাকে। কেমন যেন একটা বিষণ্ণতা এসে ভর করে মনে। তারও তো কেউ থাকতে পারত, যার জন্য সে নিজেকে সাজিয়ে তুলত মনের মাধুরী মিশিয়ে, চোখের কোলে কাজল টেনে, কপালে প্রজাপতির ডানার আবির মাখা টিপ পরে, আর হাতে বৃষ্টির রিমঝিম সুর তোলা চুড়ি গলিয়ে,আর…“এই নিঝু! ক্লাস আছে যাবিনা??” মায়ের ডাকে সম্বিত ফেরে নিঝুমের। “হ্যাঁ মা যাবো, আসছি দাঁড়াও”, বলে মাথে নেড়ে যেন বিষণ্ণতাটাকে ঝেড়ে ফেলে সে। আনমনে নিজের দিকে তাকিয়ে আরেকবার হেসে ক্লাসের জন্য ব্যাগ গুছাতে চলে যায়।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
24-06-2021, 09:56 AM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:29 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ক্লাসে যাবার সময় পুরোটা পথ কেমন আনমনা হয়ে থাকে নিঝুম। নিজের কাছে তো সে পরিষ্কার। তবে কেন আজ বুকের মাঝে একটা অব্যক্ত বেদনা বারবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে? কেন মনে হচ্ছে তাকেও যদি কেউ ভালবাসত? বান্ধবীদের রিলেশন আর কিছুদিনের মধ্যেই ব্রেকআপের সমাহার দেখতে দেখতে তো প্রেমের উপর তার যতটুকু ভরসা ছিল তাও নেই বললেই চলে। তাহলে আজ কেন কারো অভাব বোধ হচ্ছে তীব্রভাবে? আর সবচেয়ে আশ্চর্য, এই অভাববোধের সাথে সাথেই এমন একটা মুখ মনের পর্দায় ভেসে উঠছে যাকে দেখে নিঝুম বারবার চমকে উঠছে। এই মুখ, এই হাসি, এই চোখ, এসব তো তার জন্মজন্মান্তরের পরিচিত। এ কেমন দ্বিধা? এ কী করে সম্ভব? নিঝুম তো কোনদিন তার ব্যাপারে আর কিছু ভাবেনি। তবে আজ কেন সেই অনুপস্থিত, অস্তিত্বহীন ‘কারো’ সাথে এই মুখটা একাকার হয়ে যাচ্ছে? আর ভাবতে পারেনা নিঝুম। কে যেন কথা বলে ওঠে বুকের মধ্যে বসে,“ভালবাসার দরকার নেই তোমার নিঝুম। তুমি কারো জন্য কিছু ফিল করনা। আর ওর জন্য তো না-ই। তুমি কি ভুলে গেছ যে মানবজাতিকেই তুমি সবচেয়ে বেশি ভয় কর? ভুলে গেছ যে তোমার বন্ধুবান্ধবদের জন্যেও তুমি শুধু একটা ব্যবহারের জিনিস? যখন যার দরকার হবে, তখন সে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করবে। তোমার সরলতার সুযোগ নিয়ে তোমাকে ঠকাবে,তোমার পিছে তোমার সরলতা নিয়ে অন্যদের সাথে হাসাহাসি করবে। ভুলে গেছ নিঝুম এসব? ভালবাসা তোমার জন্য নয়। তুমি একা নিঝুম, বড় একা। তুমি শুধু ভালবেসে যাও, তোমার জন্য কারো ভালবাসা নেই। ” নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে নিঝুমের।সত্যিই তো, সে বড় একা। সবার সাথে সে উচ্ছল, রঙিন প্রজাপতির মতো নিঝুম। আর তার নিজের জগতে সে তার নামের মতোই নিঝুম। কেউ নেই তার।
বন্ধুদের জন্য সে জান দিয়ে দিতে পারে, কিন্তু এই বন্ধুরাই তাকে বারবার ঠকিয়েছে, বারবার কষ্ট দিয়েছে। সে তাদের মতো মডার্ন না, তা নিয়ে হাসাহাসি করেছে, দরকার শেষ হলে তাকে এড়িয়ে গেছে। হাতেগোনা কয়জন মাত্র ভালো বন্ধু আছে তার। তার মধ্যে নিবিড় সবার থেকে আপন। নিবিড়!নামটা মনে হতেই আবার আড়ষ্ট হয়ে যায় নিঝুম। বারবার মাথা নেড়ে যেন নামটাকে ঝেড়ে ফেলতে চায় এই মুহূর্তের জন্য। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় এই বিষণ্ণতাটা কেটে যায়। তার জায়গায় ঠাঁই নেয় অন্য একটা আনন্দ। আজ! আজ সে রূপাকে বলবে নিবিড়ের পছন্দের কথা। এই কয়দিন নিবিড়কে সে বহুত জ্বালান জ্বালিয়েছে রূপার কথা বলে বলে। হুমকি দিয়েছে রূপাকে বলে দেবে বলে। কিন্তু কেন যেন নিবিড় বারবার ওকে বাধা দিয়েছে। নিঝুম এই বাধাটাকে নিবিড়ের প্রেয়সীকে পছন্দের কথা না বলতে পারার জড়তা বলেই ধরে নিয়েছে। তারপর নিজে নিজেই ঠিক করেছে রূপাকে বলে দেবে যে নিবিড় তাকে পছন্দ করে। নিজের একাকীত্বের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে নিঝুম যে আজ-ই বলবে। নিঝুমের জীবন খালি থাকুক না, তাতে কিছু যায় আসেনা। কিন্তু নিবিড়ের জীবন তো সে তার মতো খালি থাকতে দিতে পারেনা, যেখানে নিবিড়ের কাউকে পছন্দও আছে। বোকাটা বলতে না পারলে দেখা যাবে রূপা অন্য কারো হয়ে গেল,তখন? তখন নিবিড়ের কষ্ট তো সে সইতে পারবেনা। তারচেয়ে বলে দেওয়াই ভালো, দুজনই দুজনকে পছন্দ করে যখন, ভাবতে ভাবতে স্যারের বাসার গেটের সামনে গাড়ি এসে যায়। বাবাকে ‘টা টা’ জানিয়ে নেমে পড়ে গাড়ি থেকে।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
24-06-2021, 09:57 AM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:29 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ক্লাসে যেয়ে দেখে রূপা তখনও আসেনি। তবে নিলীমা এসেছে। নিঝুম আর নিলীমা, নাম দুটির মধ্যে অনেক মিল আছে বলেই হয়তো অনেক ছোট ছোট ঝগড়া, সারাজীবন মুখ না দেখার পণ করার পরেও তাদের বন্ধুত্বটা রয়ে গেছে, আরও গভীর হয়েছে। যতটুকুই মন খারাপ ছিল নিঝুমের, নিলীমাকে দেখে এক মুহূর্তের মধ্যে সব যেন কর্পূরের মতো উবে যায়। স্যার এখনও আসেননি, অন্য রুমে আছেন। ক্লাসে শুধু নিঝুম, নিলীমা, আর আরও কয়েকজন ছাত্রী। কী যে হয় নিঝুমের, ছুটে যেয়ে নিলীমার পাশে বসে পড়ে অন্যরকম উচ্ছ্বাসে তাকে জড়িয়ে ধরে, “নিলী আই লাভ ইউ! উম্মাহ!!”, টুক করে একটা চুমুও খেয়ে ফেলে গালে। নিলীমা ভীষণ অবাক হয়ে যায় নিঝুমের এমন খুশি দেখে।নিঝুম না বললেও সে ঠিকই বুঝতে পারে যে তার নিঝুর কোন কারণে মন খারাপ ছিল, এখন সেটা চাপা দিতে চাইছে তাকে আঁকড়ে ধরে। কিচ্ছু বলেনা নিলীমা, কী হয়েছে কিছুই জিগ্যেস করেনা, শুধু ধীরে ধীরে নিঝুমের রেশম কোমল ভেজা চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দেয়। নিঝুমও যেন নিলীমার হাতের সবটুকু মমতা শুষে নিতে চায় নিলীমার কাঁধে চুপচাপ মাথা রেখে চোখবন্ধ করে। সেই মুহূর্তে দুজনের মনেই একটা কথাই খেলে যায় বারবার, কথায় বলে মেয়েরাই নাকি মেয়েদের শত্রু, কিন্তু মেয়েরাই হয়তো পারে আরেকটা মেয়েকে এমন আপন করে নিতে, এমন গভীর মমতায়, ভালবাসায় আঁকড়ে ধরতে। একটু পর মুখ তুলে নিঝুম বলে, “জানিস নীলু আজ না আমি রূপাকে নিবিড়ের কথা বলে দেবো!”,। নিলীমা বান্ধবীর মুখের দিকে তাকায় ভালো করে,দেখতে চায় এই আকাঙ্ক্ষার অন্তরালে কোন বেদনা আছে কিনা। কিন্তু পারেনা দেখতে। বরং নিঝুমের মুখটা কেমন একটা আনন্দে জ্বলজ্বল করছে। নিলীমা অবাক হয়ে ভাবে, “বন্ধুত্ব এতটা নিঃস্বার্থ হতে পারে? সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে অন্য কারো হাতে তুলে দিতে কি এই বোকা মেয়েটার একটুও বাধবেনা?”। কিন্তু এই ভাবনাগুলো যে নিঝুমকে বলে কোনই লাভ নেই,তা নিলীমার থেকে ভালো বোধহয় আর কেউ জানেনা নিঝুমের বান্ধবীদের মধ্যে। একটা অজানা আশঙ্কায় বুক কেঁপে ওঠে নিলীমার, “মেয়েটা এজন্য পরে কষ্ট পাবেনা তো? যখন জানবে রূপা নয়, সে-ই ছিল নিবিড়ের যোগ্য জীবনসঙ্গিনী?” আবার নিঝুমের মুখের দিকে তাকায় নিলীমা,দুর্গাপ্রতিমার কল্যাণদায়িনী মুখের কথা মনে পড়ে যায় তার, বড় শুদ্ধ মনে হয় এইমুহূর্তে তার প্রাণের বান্ধবীটিকে। সমস্ত দুশ্চিন্তা পাশে ঠেলে হাসে অবশেষে নিলীমা, “দেখ তুই যা ভালো বুঝিস কর। তোকে তো বাধা দিয়ে লাভ নেই। তবে আমি বলব একবার নিবিড়ের সাথে সরাসরি কথা বলে নে।”, বলে নিজের মোবাইলটা বাড়িয়ে দেয় নিঝুমের দিকে।নিঝুম ভাবে, স্যার যখন এখনও আসেননি পড়াতে, দেরি হবে নিশ্চয়ই আজ, আরও স্টুডেন্ট আসা বাকি আছে, কথাটা বলেই ফেলা যাক নিবিড়ের সাথে। আজ একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে, কারণ আজই শেষ ক্লাস তার রূপার সাথে। নিলীমাকে আবারও জড়িয়ে ধরে বলে, “এজন্যই তো তোকে এত ভালবাসি রে আমার নীলপরী! তুই সব বুঝিস!” তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে নিচে নেমে যায় কথা বলতে।
|