Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
জীবন খাতার প্রতি পাতায়
#1
একঃ
লোকজনের হইহট্টগোল আর হকারদের চিৎকারে ঘুম ভাঙলো তাপসের। চোখ কচলে তাকালো। নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশন। ঘড়িতে সময় দেখলো ৭ টা বাজে। কামরূপ এক্সপ্রেস। ট্রেন লেট চলছে। এখানে দাঁড়াবে কিছুক্ষণ। আশেপাশের প্যাসেঞ্জার বদল হয়েছে কিছু। কিছু একই আছে। গতকাল একটা বাচ্চা মেয়ে উঠেছিল। এখন নেই। হয়তো মাঝরাতে কোথাও নেমে গিয়েছে।
বাচ্চা বলতে একদম বাচ্চা নয়। ওই ১৫-১৬ হবে। মুখের গড়ন সুন্দর। চেহারাও ভালো ছিলো। কিন্তু তাপসের মুড ছিলো না দেখার। রাতে ঘুমিয়ে একটু ফ্রেশ লাগছে। টিকিট আছে গৌহাটির। আসলে যাবার কোথাও নেই তাপসের। বাড়িতে ঝামেলা হয়েছে। বাবা-মা ত্যাজ্যপুত্র করেছেন। তাই ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়েছে নিরুদ্দেশের দেশে।
মোবাইল রিসেট করে নিয়েছে। ফোন নম্বর পাল্টে ফেলেছে। ই-মেইল আইডি বন্ধ করেছে। সমস্ত সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট থেকে সরিয়ে নিজেকে গতকাল সারাদিনে। কোলকাতার ছেলে সে। বাঁগুইহাটি। অপরাধ কি? কিছুই না। আবার অনেক। কাকাতো বোনের সাথে অবৈধ সম্পর্ক। ঘরের মেয়েকে আর কে কোথায় পাঠাবে? অগত্যা তাপসের উপর সব দোষ চাপলো। আর যেহেতু মিলি ছোটো। তাই সব দোষ তাপসের। ওতটাও ছোটো নয়।
মিলির ২৩ বছরের ভরা যৌবন। আর তাপসের বয়স ৩০ ছুয়েছে। বাড়ি থেকে বের করে দেবার পর দুদিন কোলকাতাতেই পড়ে ছিলো। কিন্তু সবার পরিবার আছে। কেউ আর তাকে বিশ্বাস করছে না। বন্ধু বান্ধবরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অগত্যা কোলকাতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাপস। প্রথমে ভেবেছিলো দিল্লী-মুম্বাই চলে যাবে। কিন্তু ওখানে সবাই যায় কাজ করতে। অনেক ভেবেচিন্তে নর্থ-ইস্ট সিলেক্ট করেছে।তাপস পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েট ছেলে। পড়াশুনায় ভালোই। কিন্তু আজকাল চাকরির যা বাজার। কপালে যা আছে। তাই হবে ভেবে বেরিয়েছে। তবু ওই নেগলিজেন্সির জীবন থেকে বেরোতে চাইছিলো সে। দু’দিনের মধ্যে সবার পর হয়ে গেলো সে।
হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙলো সে। হকারকে ডেকে একটা চা নিলো।
তাপস- কতক্ষণ দাঁড়াবে দাদা?
হকার- টাইম তো ১৫ মিনিট, কিন্তু ইঞ্জিনে সমস্যা আছে। তাই দাঁড়াবে কিছুক্ষণ। ভালোই। ৩০ মিনিট হতে পারে বা এক ঘন্টা!
তাপস- যাহ শালা। ক্ষিদে পেয়েছে।
হকার- প্ল্যাটফর্মে খাবার পাবেন। বাইরেও হোটেল আছে অনেক।
তাপস- বেশ।

তাপস চা পান করতে লাগলো। হাজার দশেক টাকা নিয়ে বেরিয়েছে। কি ভেবে উঠে পড়লো। নামলো ব্যাগ নিয়ে। নাহ গৌহাটি যাবে না। এখানেই নামবে। এটা শিলিগুড়ি শহর। বেশ বড়। অনিশ্চয়তার জীবন যখন। অনিশ্চয়তা দিয়েই শুরু হোক।তাপস বাইরে এলো। অটোওয়ালা, রিক্সাওয়ালারা ছেঁকে ধরলো। সবাইকে পাশ কাটিয়ে এগোলো। সামনে হোটেলের লাইন। হাঁটতে লাগলো। তারপর একটা বড়সড় হোটেল দেখে ঢুকলো।
তাপস- দাদা, কি হবে?

হোটেলের লোক- যা খাবেন। পুরী হবে, রুটি হবে, চাউমিন, মোমো, ভাত-ডাল মাছ ভাজা হবে।
তাপস রুটি অর্ডার করে বসলো। রুটি এলো। খেলো। খেয়ে কিছুক্ষণ বসলো। তারপর চারদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলো। দুপুরে আবার ওই একই হোটেলে খেতে এলো। খেয়ে কিছুক্ষণ বসে আবার এদিক সেদিক ঘুরে রাত ৮ টা নাগাদ একই হোটেলে খেতে গেলো।
এবার গল্পটা পাড়লো হোটেল মালিকের সামনে।

খাওয়া-দাওয়ার পর-
তাপস- দাদা, কিছু মনে করবেন না। একটা কথা বলবো।
মালিক- বলুন না।
তাপস- রাতে থাকার জায়গা দিতে পারবেন একটু?
মালিক- কি ব্যাপার বলুন তো? আপনি সারাদিন ধরে এখানে খেলেন। মনে হচ্ছে কলকাতার  লোক। আবার যাচ্ছেনও না।

তাপস- আমার নাম তাপস সাহা। আমি বড্ড আতান্তরে পড়েছি। আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বাবা-মা এর সাথে ঝামেলা। রাগের চোটে বেড়িয়ে এসেছি। সারাদিন আশপাশ ঘুরে দেখলাম। দু-এক জায়গায় কাজের জন্যও গেলাম। কিন্তু অচেনা মানুষকে কেউ কাজ দিচ্ছে না। আমি কোলকাতার ছেলে। এই আমার ডকুমেন্টস। এই আমার আইডি কার্ড। দেখুন। তাই বলছিলাম রাতে একটু থাকার ব্যবস্থা করে দিলে সুবিধা হয়। কাল আবার কাজ খুঁজতে বেরোবো।
মালিক- কি কাজ করবেন। রেজাল্ট তো ভালোই দেখা যাচ্ছে। তাই হোটেলে কাজ করার অভিজ্ঞতা তো নেই মনে হচ্ছে। আর আপনাকে দেখে ভদ্র ঘরের ছেলেই মনে হচ্ছে।
তাপস- আমি কেমন সেটা মিশে দেখতে পারেন।

মালিক- দেখুন এটা স্টেশন চত্ত্বর। এখানে আমরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করি না। আমি যেমন আপনাকে বিশ্বাস করছি না। আপনারও আমার উপর বিশ্বাস রাখা উচিত নয়।
তাপস- জানি দাদা। এখনকার দিনে কে কাকে বিশ্বাস করে।

মালিক- দেখুন। আপনি অচেনা। আপনাকে জায়গা দিতে পারবো না। তবে আপনি এখানে থাকুন। রাত্রি ১ টায় আমার দোকান বন্ধ হবে। দোকানের বারান্দায় রাতটা কাটাতে পারেন।
তাপস- দাদা আপনার নাম?
মালিক- লোকজন বাবাইদা করে ডাকে। তাই ডাকবেন।

তাপস স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। পা ছুঁয়ে প্রণাম করলো বাবাইদাকে। বাবাইদার তাপসের ব্যবহার ভালো লাগলো। আর ছেলেটার চোখের দিকে তাকালে মনে হয় সত্যি বলছে।তাপস দোকানের সামনে বসে রইলো। কিছুক্ষণ বসে দোকানের সামনে একটি ছেলে কন্টিনিউ লোকজন ডাকছে খাবার জন্য। তার পাশে দাঁড়িয়ে ডাকতে লাগলো। বাবাইদা দেখে মুচকি হাসলো।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
এই গল্পটা এখানেই কিছুটা পরেছি নতুন জীবন হয়তো নাম ! কিন্তু আসমাপ্ত ! 
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)