Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
আমার সংগৃহীত গল্প
#1
সব গল্পই সংগ্রহ করা, যদি এখানে কোনোও অরিজিনাল লেখক থেকে থাকেন তাহলে তাঁর কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী তাঁকে না জানিয়ে পোষ্ট করার জন্য
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
১, ‘তিস্তা তুমি যে অপাপবিদ্ধা’

২, শারমিন যাকে পেয়েছি বিলম্বে

৩, কাজের মেয়েরা

৪) ভাবী

৫) ছোটোমামী

৬) মিংলিনের দুধ

৭) কমলার বোন মুকু

৮ ) আহত নাগিন

৯) জীবনের সুখের জন্য

১০) কলগার্ল
Like Reply
#3
তিস্তা তুমি যে অপাপবিদ্ধা



                                        রাতের দার্জিলিং মেল #

রাত কত কে জানে … অন্ধকার চিরে দার্জিলিং মেল এগিয়ে যাচ্ছে তার গন্ত্যবের দিকে…ট্রেনটা তার গন্ত্যবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নাকি আমাকে আমার গন্ত্যবের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ভেবে হাসি পেয়ে গেল…কোনোটাই ভুল নয়…দুটোই ঠিক। লোয়ার বার্থের জানলার পাশে চুপ করে বসে আছি…সবাই ঘুমোচ্ছে কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। জানলার পর্দা সরিয়ে রেখে বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে হয়তো কিছু ভাবছিলাম। মাঝে মাঝে আকাশের বুক চিরে বিদ্যুতের ঝলকানিতে বাইরের অন্ধকার কেটে গিয়ে নিস্তব্ধ বিশ্বচরাচরের নিঃসঙ্গতা যেন আরো প্রকট করে তুলছিল। 

তিস্তা…বাপির ডাকে সম্বিত ফিরে এলো।

কি বাপি?

কি রে ঘুম আসছে না? একটু ঘুমিয়ে নে মা…না হলে শরীর খারাপ করতে পারে।

বাপি…কাল সকালে আমরা কখন পৌছোবো? 

সাড়ে ছয় কি সাতটার ভেতর পৌছে যাবো।

তুমি জানো তো কিভাবে যাবো আমরা ওদের বাড়ীতে?

তোর দাদাই ছেলেকে নিয়ে স্টেশনে আসবে আমাদের নিতে, ওদের নতুন বাড়ীতে আমি কোনোদিন যাইনি।

আগে বলোনি তো।

আমরা বেরোবার ঠিক আগে ফোন করে বলেছিল, তোকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। 

বুকের ভেতর থেকে একটা পাথর যেন নেমে গেল। যাকে কিছু বলার জন্য এতদুর থেকে যাচ্ছি তার সাথে আর কয়েক ঘন্টা পরেই দেখা হবেই জেনে এক অজানা আনন্দে মন ভরে উঠল। কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে জানলার পর্দাটা টেনে দিয়ে শুয়ে পড়লাম…চোখ বুজে ভাবার চেষ্টা করছি…যার কথা শুনলেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে… সে কেমন হবে? সেই আগের মতো একটু অহ্নকারী? নাকি এখন বড় হয়ে গিয়ে খুব গম্ভীর হয়ে গেছে? আমাকে দেখলে তো এতোদিন বাদে চিনতে পারবে না…সেই ছোটোবেলার মতো পেছনে লাগবে? খুনসুটি করবে?…মনে অনেক প্রশ্ন…কিন্তু একটারও উত্তর জানা নেই। ওকে কি ভাবে বলবো যে আমার এই সুন্দর জীবনটা তোমারই উপহার…তুমি যদি সেদিন না থাকতে…ভাবতেই পারিনা…কি যে হোতো। এক অদ্ভুত ভালোলাগার সাথে সাথে এক অজানা অস্বস্তির কাঁটা যেন বুকে বিঁধছিল। ঠিক কিভাবে গুছিয়ে বলবো বুঝে উঠতে পারছি না। নিজের উপর খুব রাগ করে নিজের মনে মনে বললাম…ধুস…আমি কি ওকে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলতে যাচ্ছি? শুধু তো থ্যাঙ্কস জানাবার জন্য যাচ্ছি…এত ভাবার কি আছে।

অনেক রাতে শুলেও খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর শুয়ে থাকতে ভালো লাগছিল না…আস্তে আস্তে উঠে আবার জানলার পর্দা সরিয়ে দিয়ে বাইরেটা দেখার চেষ্টা করলাম। ট্রেনটা বেশ জোরে দৌড়োচ্ছে… বাপির বার্থের পর্দাটা সরিয়ে… বাপি ঘুমোচ্ছে দেখে আর ডাকলাম না। চোখে মুখে জল দিয়ে এসে আবার বাইরের দিকে তাকালাম…খুব বৃষ্টি হচ্ছে বোধহয়…জানলার কাঁচটা পুরো ঝাপসা হয়ে আছে। কিছু করার নেই দেখে বালিশের উপর কম্বল টা ভাঁজ করে একটু উঁচু করে হেলান দিয়ে চুপ করে বসে আছি। একজন একজন করে সহযাত্রীরা উঠতে শুরু করেছে। কামরার মধ্যে সেই নিঝুমভাব টা আর নেই…কফিওয়ালার থেকে একটা কফি নিয়ে চুমুক দিতে দিতে আবার বাইরের দিকে তাকালাম…এখন আর বৃষ্টি হচ্ছে না। পুব আকাশে লাল আভার মাঝখান থেকে সুর্য উঁকি মারতে শুরু করেছে। পরিবেশটা এখন আর ফাঁকা ফাঁকা লাগছে না…প্রচুর বাড়ী, বাগান পুকুরের পাশ দিয়ে ট্রেনটা দৌড়োচ্ছে। মাঝে মাঝে স্টেশান গুলো পাস দিয়ে যেন হুস করে বেরিয়ে পেছনে চলে যাচ্ছে। 

কিরে…এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়লি কেন…ঘুমিয়েছিস তো? বাপির ডাকে প্রায় চমকে উঠলাম।

হ্যাঁ…এইতো একটু আগে উঠলাম…বাপি কফি খাবে?

তুই খেয়েছিস?

তোমার সাথে আর একবার খাবো…বাপি… আমরা কদিন থাকবো?

আমার তো দিন পনেরো লাগবে সব কাজ শেষ হতে। কেন রে বন্ধুদের জন্য মন খারাপ করছে নাকি?

নাঃ…ভাবছিলাম তুমি তো কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে…আমি একা একা কি করবো।

তুই একা থাকবি কেন…তোর বম্মা, বাবাই… ওরা তো আছে। আমি তোর বম্মাকে বলে রেখেছি…বাবাই তোকে কলকাতায় সব কিছু ঘুরিয়ে দেখাবে। ওর এখন ছুটি আছে, অসুবিধা হবে না।

ওর তো কিছু কাজ থাকতে পারে, আমার জন্য শুধু শুধু আবার সেগুলোর ক্ষতি হতে পারে।

বাপি পাশে বসে কাঁধে হাত দিয়ে বললেন…আমার মেয়েটা এক্কেবারে পাগল…তোকে এত চিন্তা করতে হবে না…আসার আগে এত লাফালাফি করলি আর এখন মন খারাপ করছিস।

বাপির কাঁধে মাথা রেখে বাপির হাত টা নিজের হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বললাম…আমার তো থাকতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কেমন যেন ভয় লাগছে…ওরা যদি আমাকে পছন্দ না করে।

ওরা ভীষন ভালো রে …তুই অনেক ছোটোবেলায় দেখেছিস তো…অনেক কিছুই ভুলে গেছিস…তাই বুঝতে পারছিস না…আমার তিস্তার মতো মিষ্টি মেয়েকে পছন্দ না করে কেউ থাকতে পারবেই না…আমার তো ভয় হচ্ছে…তুই আবার না বলিস যে আর ফিরবো না…আমাকে কোলকাতার কলেজে ভর্তি করে দাও… 

বাপির গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বললাম…আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবোই না…

সারা জীবন কি আমার কাছে থাকবি নাকি? এরপর তো পড়াশোনার জন্য বাইরে যেতে হবে…তারপর চাকরী নিয়ে কোথায় যেতে হবে তার ঠিক নেই…সেটল হয়ে গেলে তোর বিয়ে দিতে হবে না?

ধ্যাত…আমি কি বিয়ে করবো বলেছি? 

তুই না বললে কি তোর বিয়ে দিতে হবে না…সব মেয়েকেই এক সময় মা বাবাকে ছেড়ে যেতে হয়…

ভালো লাগছিল না… আর কিছু না বলে চুপ করে বসে আছি…বাপিকে ছেড়ে যেতে হবে একদিন না একদিন ভাবলেই কান্না পেয়ে যায়…আমি ছাড়া যে বাপির আর কেউ নেই…দু চোখের কোন আস্তে আস্তে ভিজে যাচ্ছিল। বাপি হয়তো খেয়াল করে নি আমার চোখে জল… না হলে নিজের হাতে মুছিয়ে দিয়ে আদর করতো…আমার মনটাকে ঠিক করার জন্য। ট্রেনটা আগের মতো জোরে এগোচ্ছে না দেখে বাপি বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল… আর কিছুক্ষনের ভেতরেই পৌঁছে যাবো। নিজেকে সামলে নিয়ে উঠলাম… ফ্রেস হতে হবে। রাতের জামাকাপড় পালটে এখন একটা হালকা সবুজ…কচি কলাপাতা টপ আর তার সাথে দুধসাদা গাউন পরে নিয়েছি, দুটো রং ই আমার ভীষন প্রিয়…আর কি করা যায় ভাবতে ভাবতে কপালে হালকা সবুজ ছোট্ট একটা টিপ লাগিয়ে আয়নায় দেখলাম…কেমন লাগছে। আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে ভাবছি…ও আমাকে দেখে পছন্দ করবে তো? নিজেকেই বকুনি দিয়ে বললাম… পছন্দ করুক বা না করুক…কি আসে যায় তাতে… কাল রাতেই তো বোঝালাম… প্রেম করতে যাচ্ছি না। 

বাপি মুগ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন…খুব সুন্দর লাগছে।

ঠিক বলছো তো নাকি আমাকে ভোলাবার জন্য? 

নারে…সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে তোকে।

প্রতীক্ষার অবসান #

ট্রেনটা শিয়ালদা স্টেশনে পৌঁছোবার পর এক এক করে সবাই নেবে যাচ্ছিল…চারদিকে হই হট্টগোল…এত লোকে কোথা থেকে আসে আর কোথায় যায় কে জানে ভাবতে ভাবতে বাপির দিকে তাকিয়ে দেখলাম… আরাম করে বসে আছে…যেন নামার ইচ্ছে নেই…



বাপি চলো…আমরা কি এখানে বসে থাকবো নাকি।

সবাই নেবে যাক…ওরা আমাদের কামরার কাছে আসবে বলেছে…

জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে লোকজনের যাওয়া আসা দেখছি…সারা প্ল্যাটফরম টা লোকে গিজগিজ করছে…তার মাঝখান দিয়ে দুজনকে আমাদের কামরার দিকে আসতে দেখলাম…ভীড়ের মাঝখান দিয়ে ধাক্কা খেতে খেতে এগোচ্ছে…একজন বাপির বয়সী বা একটু বেশী হবে আর সাথের ছেলেটি হয়তো কুড়ি বাইশ হবে। খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। জানলার পাশে এসে ছেলেটা বোধহয় ওর বাবাকে কিছু একটা বলছিল…ততক্ষনে বাপিও ওদের কে দেখতে পেয়ে গেছে…হাত নেড়ে বাপি চেঁচিয়ে বলল…মেশোমশায়…এই তো আমরা…এই তিস্তা চল…ওরা এসে গেছে…

বাপি…তুমি না…ওরা শুনতে পাবে নাকি?

ওঃ…খুব ভুল হয়ে গেছে রে…খেয়ালই নেই আমরা এসি তে আছি।

বাপি উঠে ব্যাগ গুলো এক জায়গায় করতে করতে ওরা চলে এলো…ছেলেটা বেশ হ্যান্ডসাম হয়েছে তো…বেশ লম্বা…কি সুন্দর চোখ দুটো…একটু যেন দুষ্টুমিতে ভরা…ব্লু জিন্স আর লালের উপর সাদা স্ট্রাইপ টি সার্টে দারুন দেখাচ্ছে…ওর সাথে একবার চোখাচুখি হতেই মুখ নাবিয়ে নিলাম…বুকের ভেতরটা একটু যেন কেঁপে উঠল। দাদাই… বেশ খুশীর সাথে আমার দিকে তাকিয়ে বলল… তিস্তা? আমাদের সেই ছোট্ট তিস্তা…কত বড় হয়ে গেছিস… চিনতেই পারছি না।

হেসে বললাম… তোমাকে দেখে আমিও চিনতে পারিনি।

আর…পারবি কি করে… কত বছর পর দেখা।

বাপি আর দাদাই যেন ভুলেই গেছে আর কেউ আছে…খুশী যেন আর ধরছে না ওদের, দুজনেই বকে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে আর বোধ হয় কোনোদিন দেখা হবে না। এখনই সব কথা শেষ করতে হবে।

ছেলেটা পাশ থেকে বলল …বাবা আমি একটা কুলি নিয়ে আসছি…তোমরা বোসো। ভীড় কমে এসেছে…এবার যাওয়া যাবে…

ব্যাগ গুলো কুলির মাথায় তোলা হয়ে গেলে ট্রেন থেকে নামলাম…ছেলেটা বলল…বাবা তোমরা ধীরে সুস্থে এসো…এ ব্যাটা কুলির সাথে তোমরা দৌড়োতে পারবে না…আমি গাড়িতে থাকবো…বলেই কুলির সাথে হনহন করে এগিয়ে গেল।

বাপির হাত ধরে এগোচ্ছি… খুব অভিমান হচ্ছিল…কি অহ্নকারী ছেলেরে বাবা…একটুও পাত্তা দিলো না… সাথে করে তো নিয়ে যেতে পারতো…বাপির তো খেয়ালই নেই যে মেয়ে সাথে আছে…যাকগে ও পাত্তা না দিলে আমিও পাত্তা দেবো না…বয়ে গেছে আমার ওর সাথে কথা বলতে।
[+] 1 user Likes রাজা রাম's post
Like Reply
#4
স্টেশন থেকে বেরিয়ে গাড়ীর কাছে গিয়ে দেখা গেল…গাড়ী লক করা…ছেলেটাকে আশে পাশে দেখা যাচ্ছে না…বাপিরা তখোনো গল্প করতে ব্যাস্ত…এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম একটু দুরে একটা গাড়ীর আড়ালে দাড়িয়ে ছেলেটা আমার দিকে হাত নাড়িয়ে ইশারা করছে…প্রথমে কিছু বুঝতে না পেরে ওর দিকে তাকিয়ে থাকার পর বুঝলাম…বলতে চাইছে সিগারেট খেয়ে আসছি… ঘাড় নেড়ে জানালাম…ঠিক আছে।

একটু আগে ছেলেটার উপর খুব অভিমান হচ্ছিল কিন্তু এখন আর সেটা নেই…হোক না দুর থেকে শুধু ইশারা করে কথা বলেছে…সে …যাই বলুক না কেন…

ছেলেটা একটু পরেই চলে এল…সিগারেটের গন্ধ যাতে না পাওয়া যায় তার জন্য বোধ হয় মুখে লবঙ্গের মতো কিছু একটা দিয়ে এসেছে…সবাই গাড়িতে উঠতে যাচ্ছে এমন সময় বাপি বলল…এই যা…একেবারে ভুলে গেছি…আমাকে প্রাচি সিনেমার কাছে একটু যেতে হবে…আমার এক বন্ধু একটা জিনিষ দিয়েছে…পৌঁছে দিতে হবে। মেশো… চলো না…যাবো আর আসবো…বাপিরা চলে যাবার পর চুপ করে গাড়ীর সামনের সিটে বসে ছিলাম…ছেলেটা গাড়ীর পেছনে দাঁড়িয়ে। বুকের ভেতরে আবার সেই অভিমান দানা বাঁধছিল…আমি একা বসে আছি…আমার সাথে একবার তো কথা বলা উচিত…

লুকিং গ্লাস দিয়ে ছেলেটার দিকে চুরি করে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলাম…ছেলেটা আবার একটা সিগারেট খেতে খেতে নিচু হয়ে পেছনের স্ক্রীনের ভেতর দিয়ে তাকাতেই ওর সাথে চোখাচুখি হয়ে গেল…অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে একটু পরে আবার যেই তাকিয়েছি…ছেলেটা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে…ভীষন লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে নিয়ে বসে থাকলাম…বুকের ভেতরের দ্রিম দ্রিম আওয়াজটা নিজেই শুনতে পাচ্ছি।

একটু পরেই ছেলেটা এসে ড্রাইভিং সিটে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল…তুমি তিস্তা…তাইতো? অবশ্য নতুন করে জিজ্ঞেস না করলেও চলতো…

নিজেকে কেমন যেন সামান্য হলেও দুর্বল লাগছিল ওর সাথে একা থাকতে…মুখ তুলে ওর দিকে একবার তাকিয়ে আবার মুখটা নীচু করে নিয়ে ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বললাম…

আমি বাবাই…ভালো নাম…সৃজন…

জানি…

তুমি এত লজ্জা পাচ্ছো কেন…আমাকে দেখছিলে তো কি হয়েছে?

মোটেও তোমাকে দেখছিলাম না…একা একা বসেছিলাম তাই এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম। তুমিই উলটে আমাকে চুরি করে দেখছিলে।

তাই? তো কি হয়েছে তোমাকে দেখছিলাম তো? তুমি ভীষন মিষ্টি দেখতে…তাই দেখছিলাম…

কথাটা শুনে আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না…সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিউরে ওঠার অনুভুতি…অনেকেই এর আগে একই কথা বলেছে কিন্তু আজ যেন মনে হল এভাবে এর আগে কেউ বলতে পারেনি… তার সাথে…একটু আগে যাকে খুব অহ্নকারী মনে হচ্ছিল…তার মুখ থেকে এত সহজ়ে এইটুকু সময়ের দেখা হলেও…বলে দেওয়া কথাটা যেন ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। নিজেও তেমন একটা লাজুক না হলেও…আর কিছু বলতে পারলাম না…

একটু পরে কিছু বলা উচিত ভেবে জিজ্ঞেস করলাম…তুমি আবার একটা সিগারেট খেলে কেন?

এই তুমি আবার মাকে বলে দিও না যেন আমি সিগারেট খাই…পিটিয়ে ছাতু করে ফেলবে…বাড়ী ফিরে তো আর সারাদিন চান্স পাবো না…তাই সুযোগ পেয়ে খেয়ে নিলাম…

ওর কথা বলার ধরন দেখে হাসি চেপে রাখতে পারলাম না…

আমাকে হাসতে দেখে বলল…এতে আবার হাসির কি আছে বুঝলাম না।

আবার হেসে ফেলে বললাম…এত বড় ছেলে মায়ের কাছে পিটুনি খায়…হাসবো না তো কি…

মায়ের কাছে ছেলেরা সব সময়ই ছোটো থাকে…প্লিজ মাকে বলবে না কিন্তু…

আমার বয়ে গেছে বলতে…ছেলেরা একটু আধটু সিগারেট খেলে ভালোই লাগে…

কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ বসে থাকলাম…আর বলার মতো কোনো কথা হয়তো খুঁজে পাচ্ছি না দুজনেই।

মুখ নিচু করে ভাবছি…যা বলার জন্য এতদিন অপেক্ষা করে থাকার পরে এতদুর থেকে এসেছি সেটা বলতে গিয়ে বুকের ভেতরে আটকে যাচ্ছে কেন…মন চাইছে আরো কিছু বলতে…কিন্তু সেটা কি…নিজেই বুঝতে পারছি না…

বাপিরা একটু পরেই ফিরে এল। পেছনের সিটে বসে আগের মতোই বকবক করে যাচ্ছে। সৃজন পার্কিং এর টাকা মিটিয়ে দিয়ে গাড়ীর ইঞ্জিন চালু করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল…এই…তিস্তা…তোমার সিট বেল্ট আটকে নাও।

সিট বেল্টটা কোথায় যেন আটকে ছিল…টানাটানি করেও বেরোচ্ছিল না দেখে ওর দিকে তাকালাম…ও নিজের সিট বেল্টটা খুলে আমার দিকে ঝুঁকে ডান হাত বাড়িয়ে বেল্টটা ধরে টেনে ছেড়ে দিয়ে আবার টানতেই ওটা বেরিয়ে এল। ওই করতে গিয়ে ওর হাতটা আমার বুকের উপর একটু ছুঁয়ে গেলে…বেল্টটা আটকে দিয়ে বলল…সরি…ইচ্ছে করে করিনি।

ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে মুখ নিচু করে নিয়ে আস্তে করে বললাম…আমি কিছু মনে করিনি। যদিও ওইটুকু সময়ের আলতো ছোঁয়ায় কেমন যেন একটা করে উঠল মনের ভেতরে।
আমার বম্মা #

বাড়ী পৌঁছোবার পর ওর মা আমাকে জড়িয়ে ধরল…ও মা…তিস্তা…তুই কত বড় হয়ে গেছিস…তুই আমাকে চিনতে পারছিস?…বম্মা বলে ডাকতিস…

ঘাড় নেড়ে জানালাম…মনে আছে।

আমাকে পেয়ে বম্মা কি করবে যেন ঠিক করতে পারছিল না। মায়ের কান্ড কারখানা দেখতে দেখতে সৃজন বলল…মা…ওনারা ট্রেন জার্নি করে এসেছেন…একটু বিশ্রাম নিতে দাও।

তুই থাম তো…আমার মেয়েকে এতদিন পর পেয়েছি…আদর কোরবো না? নিজের মায়ের আদর কাকে বলে কোনোদিন বুঝিনি… বম্মাই আমার মা বলে ভেবে এসেছি এতদিন…বম্মার আদরে বুকের ভেতর থেকে এক দলা কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছিল… সবার সামনে কাঁদতে গিয়ে পারলাম না। ওকে বলতে শুনলাম…ঠিক আছে…তুমি তোমার মেয়েকে আদর কর…আপত্তি নেই কিন্তু তোমার এই অভাগা ছেলেটার জন্য কিছুটা বাঁচিয়ে রেখো। এমন ভাবে কথাটা বললো যে আমিও বাকিদের সাথে না হেসে থাকতে পারলাম না।

বেশ কিছুক্ষন পর সবাই মিলে বসে গল্প করছি… বিচ্ছু ছেলেটা নাকি বাজারে গেছে… ভাবছি…খুব সংসারী হয়ে গেছে নাকি…কে জানে…দেখে তো মনে হল না। কিছুক্ষন পর বম্মা উঠে গেল… রান্নাবান্না শুরু করতে হবে। বাপিরা টিভি তে খবর দেখছে। একা একা কি করবো…ভেবে বম্মা কে গিয়ে বললাম… স্নান করে নেবো?

এই দেখো…মেয়ের কথা শোনো…স্নান করবি তো আবার আমাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে। আচ্ছা শোন…গরম জল লাগলে গিজার টা চালিয়ে নিস। এমনিতে আমার স্নান করতে সময় লাগে …বারে বারে বিচ্ছু ছেলেটার কথা মনের ভেতরে এসে যাওয়াতে …আজ যেন আরো একটু বেশি লাগলো। স্নান হয়ে গেছে…কি করি ভাবতে ভাবতে বম্মার কাছে গেলাম…মাছ, মাংস, সব্জি… নিয়ে খুব ব্যাস্ত… ও বোধ হয় বাজার থেকে এসে গেছে। বম্মা আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করল …কি রে … কি খেতে ভালোবাসিস… সব্জি খাসতো?

হ্যাঁ…কেন খাবো না… সব খাই… বাছাবাছির সু্যোগ আছে নাকি… রান্নার মাসী নিজের ইচ্ছে মতো রান্না করে…

সে কি রে… তুই কিছু বলিস না?

নিজে কিছু জানলে তো বলবো…

তা অবশ্য ঠিক… কে আর শেখাবে তোকে…

বেশ কিছুক্ষন বম্মার সাথে গল্প করার পর ইচ্ছে হচ্ছিল এক বার ওকে দেখতে…কোথায় আছে কে জানে… ভেবে বম্মা কে জড়িয়ে ধরে বললাম…বম্মা…তোমাদের বাড়ীটা একটু ঘুরে দেখবো?

ওমা মেয়ের কথা শোনো…তুই নিজেকে পর পর ভাবছিস কেন? এটা তোর ই বাড়ী…

বম্মা কে চুমু খেয়ে বললাম…একটু পরেই চলে আসছি কিন্তু…তোমার রান্না করা দেখবো…
[+] 2 users Like রাজা রাম's post
Like Reply
#5
বাবা এই কয়েক দিন আগে জ্বর থেকে উঠেছে…তার উপরে আবার সকাল সকাল উঠে স্টেশনে যেতে হয়েছে…বাড়ীতে গেস্ট…মায়ের ফর্দটা আজ বেশ লম্বা দেখে নিজেই বাজারে গেলাম এমন নয় এই প্রথম, মাঝে মাঝেই যেতে হয় যদিও বাবা পারতপক্ষে যতটা সম্ভব নিজে করে নেয় বাজার থেকে ফিরে এসে খেয়ে নিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে একটা গল্পের বই নিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে পড়ার চেষ্টা করলাম…এখন আর কিছু করার নেই…মা রান্না ঘরে ব্যাস্ত, তিস্তাকে দেখতে পেলাম না, বাবা তিস্তার বাপির সাথে বসে গল্প করছে…কিছুটা পড়ার পর মন বসাতে পারলাম না… একটু অন্য মনস্কহয়ে জানলার বাইরে তাকিয়ে কিছু ভাবছিলাম…জীবনে অনেক মেয়ের কাছাকাছি এসেছি কিন্তু কোনোদিন তো এরকম মনে হয়নি…ওর টানা টানা দীঘল কালো চোখে যেন কিছু বলার আর্তি…কিছু কি ও বলতে চায়? সেটাই বা কিভাবে সম্ভব…সবে মাত্র আজ সকালেই ওর সাথে দেখা…এত তাড়াতাড়ি কোনো মেয়ে তো কাউকে কিছু বলতে পারে না তাছাড়া বলবেই বা কি করে? ওদের সাথে নাকি আমাদের কোনো দিক থেকে আত্মীয়তা আছে হতে পারে আমি ভুল বুঝেছি…যা ভাবছি তা নয় কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভুতি বুকের মধ্যে নিয়ে পড়ার দিকে মন দেবার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না…বার বার তিস্তার চোখ দুটো মনের আয়নায় ছায়া ফেলতে লাগলো…কি সুন্দর মিষ্টি মুখটা…দেখলেই যেন আদর করতে ইচ্ছে করবে…সারা শরীরে যৌবন উছলে পড়ছে কিন্তু তা তীব্র কামনা না জাগিয়ে ভীষন ভালোলাগার এক অনুভুতিতে মন প্রান ভরিয়ে দেয়

প্রথম শিহরন #

খুব ইচ্ছে করছিল সৃজনকে একবার দেখার…বসার ঘরের দিকে না গিয়ে অন্য দিকে চলে গেলাম…ওখানে বাপিরা বসে আছে…এ ঘর ও ঘর খুঁজে কোথাও বিচ্ছুটাকে দেখতে পেলাম না… দোতলায় উঠে প্রথম ঘরটায় উঁকি দিয়ে ওকে দেখতে পেয়েই…বুকের ভেতরে আবার সেই সকালের মতো দ্রিম দ্রিম করে আওয়াজটা শুরু হয়ে গেল…

জিজ্ঞেস করলাম…আসবো?

ও ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার কাছে আমাকে কে দেখে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিল… হয়তো আমাকে স্নান করে নেওয়াতে আগের থেকে ফ্রেস দেখাচ্ছিল বলে ও তাকিয়ে আছে

লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিয়ে বললাম…ভেতরে আসতে বলবে নাকি চলে যাবো…

চলে গেলে তোমারই ক্ষতি…

মানে?

মানে…আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে কিছুটা সময় কাটানোর চান্স মিস করবে…

খুব অহ্নকার না …তোমার…

একদম নয়…শুধু অহ্নকার নয়…মিশলে দেখবে আমার মতো পাজীর পা ঝাড়া ছেলেও আর নেই…

হাসি আটকাতে না পেরে বললাম…তুমি যে পাজী সেটা তোমার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে…এত সময় তোমার দরজায় দাঁড়িয়ে আছি…এখোনো ভেতরে আসতে বললে না…তুমি বোধ হয়…

আরে না না…এসো…এমনিই… একটা গল্পের বই পড়ছিলাম…

ভেতরে গিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম…কার লেখা?

ও উঠে বসতে বসতে উত্তর দিল…সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের শ্বেতপাথরের টেবিল…আমার খুব ফেভারিট…

তাই…আমার ও ভীষন ভালো লাগে…অনেকবার পড়েছি…

আরে তুমি বোসো…দাঁড়িয়ে আছো কেন…

না বললে বসা যায় নাকি… 

খুব বসা যায়…নিজের মনে করলেই বসা যায়…

বিছানায় বসে ঘরটার এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম…তোমাদের বাড়ীটা খুব সুন্দর …

বাড়ীটা সুন্দর হয়তো কিন্ত কিছু একটার অভাব ছিল … তুমি এসে সেই অভাবটা মিটিয়ে দিয়েছো…

ঠিক বুঝলাম না…কিসের অভাব ছিল…

একজন সুন্দর অল্প বয়সী মেয়ের অভাব ছিল… 

ওর দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বললাম…আমি কি আর এমন সুন্দর…আমার থেকেও অনেক বেশী সুন্দরী মেয়ে আছে

তা হয়তো আছে…কিন্তু তোমার সৌন্দর্য ঠিক মোমবাতির আলোর মতো স্নিগ্ধ…অল্প উত্তাপ, জ্বলে যাবার ভয় নেই তাই এড়িয়ে যাওয়া ভীষন মুশকিল…আর তার সাথে…আছে…নীরব আহ্বান…কই এসো…আমার বুকে ঝাঁপ দাও…

তোমার অনেক বান্ধবী আছে…তাই না…

তা আছে…কিন্তু তুমি কি ভাবে বুঝলে?

নিজেকে একটু দুরে দুরে রেখে এরকম মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে পারে যে ছেলে…তার বান্ধবী থাকাটা খুব স্বাভাবিক…

ও একটু অবাক হয়ে আমার দিকে ঝুঁকে জিজ্ঞেস করল…তোমার এই একটু দূরে দূরে থেকে…কথাটার মানে কি বলোতো?

মানে…তুমি নিজেকে সহজলভ্য না করেও মেয়েদেরকে কাছে টেনে নিয়ে আসতে পারো…

আমি যে নিজেকে সহজলভ্য করিনা…বুঝলে কি করে?

আজ অব্দি আমি কোনো ছেলে দেখিনি…যারা কোনো না কোনো ছুতোয় মেয়েদের কাছে আসার চেষ্টা করে না…বা…ইম্প্রেস করার চেষ্টা করে না…তুমিই আমার দেখা একমাত্র ব্যাতিক্রম…

মাত্র তিন ঘন্টায় তুমি বুঝে গেলে যে আমি অন্য ছেলেদের থেকে আলাদা? কিভাবে সম্ভব?

ও তুমি বুঝবে না, মেয়েদের একটা আলাদা বোঝার ক্ষমতা আছে…ছেলেদের চাউনি দেখলে বুঝতে পারে…

ও একটু উদাস হয়ে…জানলার দিকে তাকিয়ে বলল…তা…আমার এই স্বভাবটা কি ভালো…না কি খারাপ…

ওর কথা বলার ধরন দেখে হাসি পেয়ে গেল…মুখ টিপে হেসে বললাম…সাঙ্ঘাতিক ডেঞ্জারাস…মেয়েদের জন্য…

হুঁমম…আমার থেকে তোমার দুরে থাকাই ভালো…

একটা কথা জিজ্ঞেস কোরবো…কিছু মনে করবে নাতো?

মনে করার আবার কি আছে…

তোমার কি কোনো খুব কাছের বান্ধবী আছে? কথাটা জিজ্ঞেস করে বুকের ভেতরটা ভীষন ভাবে কাঁপছিল…ভগবান…ওর উত্তরটা যেন ‘না’ হয়… 

ও কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে যেন কিছু ভাবলো…তারপর আবার জানলার দিকে তাকিয়ে বলল…নাঃ…তুমি যা ভাবছো…তা নয়…আমার সেরকম কেউ নেই…মানে…সেভাবে কাউকে নিজের করে নেওয়ার মতো কারুর দেখা পাইনি…

নিজের বুকের ভেতরে অদম্য খুশী আটকে রেখে বললাম…আমার বিশ্বাসই হছে না…তোমার মতো ছেলে…এতদিন প্রেম না করে থাকতে পারে… 

সে তুমি যা খুশী ভাবতে পারো…আমার কাউকে ভালো লাগে নি সেভাবে…যদিও অনেকেই কাছে আসতে চেয়েছে…যদি কোনোদিন…কাউকে পাই…তোমাকেই আগে জানাবো…

আমাকে কেন জানাবে?

আমার ইচ্ছে…

তুমি খুব ঝগড়ুটে…মেয়েদের মতো… 

এটাও আমার আর একটা গুন…তাহলে মোট কটা হল বলোতো? তিনটে…অহ্নকার… মেয়েদের কাছে টানার ক্ষমতা…আর ঝগড়ুটে…আর কটা দিন থাকো…আরো বেরোবে এক এক করে…

সত্যিই ওর কথা বলার ধরনটাই এমন যে না হেসে পারা যায় না…হাসতে হাসতে বললাম…আরো একটা পেয়েছি…

কি?

তুমি খুব সহজেই মানুষের দুঃখ ভুলিয়ে দিতে পারো…জানো তো…সারা রাস্তা চিন্তা করতে করতে এসেছি…তোমরা আমাকে কেমন ভাবে নেবে…আসার পর বুঝতে পারছি…না এলে…কত কিছু না জানা থেকে যেত…কত কিছু না পাওয়ার ব্যাথা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হত… 

আমার তাহলে গুনের শেষ নেই বলো…এত গুন থাকতেও কেন যে একটা মেয়ে তুলতে পারলাম নাকে জানে?...সবই কপাল…বুঝলে…

চেষ্টা করলেই পাবে…

তাই নাকি…আমি তো জানি…প্রেম নিজেই এসে ধরা দেয়…

কখোনো কখোনো…প্রেম নীরবে এসে চলে যায়…বুঝতে যদি না পারো…সারা জীবন... প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে…আমার এই দুয়ার প্রান্তে…আমি পারিনি তা জানতে…গাইতে হবে…

তোমার গলা খুব মিষ্টি…একটা গান শোনাবে?

উঁ হুঁ…এখন আমার তোমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে… 

আচ্ছা…এবার তোমার কথা বলো…মানে তোমার বয়ফ্রেন্ড কেমন…কি করে…কতদিন ধরে তোমরা প্রেম কোরছো…তোমার বাপিকে জানিয়েছো কিনা…

হেসে ফেলে বললাম…বাব্বাঃ…এক সাথে এত গুলো প্রশ্ন…উত্তর দিই কি করে…

ঠিক আছে…একটা একটা করে উত্তর দাও…

আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই…নেই যখন…কি করে…বা…কতদিন প্রেম করছির কোনো উত্তর দেওয়া যাচ্ছে না…

অসম্ভব…তোমাদের ওখানকার ছেলে গুলোর কি চোখ নেই নাকি? নাকি…তুমি বোরখা পরে রাস্তায় বেরোও?

চোখ থাকবে না কেন…রাস্তায় বেরোলে মনে হয় যেন গিলে খাবে…আসলে আমার কপালটাও তোমারই মতো…কাউকে মনেই ধরে নি…

যাঃ…বাজে বোকোনা…

সত্যি…বিশ্বাস কর…

ঠিক আছে…বিশ্বাস করলাম…এক কাজ করা যাক…আমরা দুজনে একটা করে ছেলে আর মেয়ে খুঁজি…আমারটা তুমি ঠিক করে দাও…আর আমি তোমার টা…

না বাবা…এই বেশ ভালো আছি…তুমি যদি আমাকে এখন তোমাদের বাড়ীটা ঘুরিয়ে দেখাও তাহলেই আমি খুশী…

ও চোখ ছোটো ছোটো করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল…কেন… আমার সাথে বসে গল্প করতে ভালো লাগছে না? এই যে বললে…আমার সাথে গল্প করবে…

তুমি না সত্যিই ভীষন বিচ্ছু…তোমার সাথে গল্প কোরবো বলেই তো এলাম… আমি বম্মাকে বলে এলাম যে তোমাদের বাড়ীটা ঘুরে দেখবো…সেটা না করে তোমার সাথে গল্প করতে দেখলে কি ভাববে…তাই না? 

হুঁমম…সৌন্দর্যের সাথে সাথে বুদ্ধি ও আছে…যার কপালে আছো…তার ভাগ্যটা সত্যিই ভালো…এই অভাগার ভাগ্যে আবার কি আছে কে জানে…চলো…তোমাকে বাড়ী দেখাই…

দোতলার সব ঘরগুলো দেখার পর…দুজনে ছাদে গেলাম…ছাদের বাগানটা দেখে ভীষন ভালো লাগছিল…কত রকমের ফুল ফুটে আছে…নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম…ইস…কি সুন্দর ফুল ফূটে আছে…কে দেখাশোনা করে গো? কথাটা বলেই খুব লজ্জা পেয়ে গেল…মুখ নিচু করে ভাবছিলাম…ইস…কি ভাবছে ও


ও আমার অবস্থা দেখে হেসে বলল…থাক আর লজ্জা পেতে হবে না…আমি কিছু ভাবিনি…

অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করলাম…ঠিক বোলছো…

ও আমার হাতটা ধরে বলল…চলো…ওদিকে আরো কিছু ফুলের গাছ আছে…

সারা শরীরটা এক অজানা শিহরনে কেঁপে উঠল…অস্ফুট স্বরে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললাম…প্লিজ ছাড়ো…কেউ দেখে ফেলবে…
[+] 2 users Like রাজা রাম's post
Like Reply
#6
খুনসুটি # 

দুপুরে সবাই এক সাথে খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল বেশির ভাগটাই আমার ছোটোবেলা নিয়ে আমার ছোটোবেলার দুষ্টুমির কথা শুনতে ভীষন ভালো লাগছিল আবার লজ্জাও পাচ্ছিলাম ওর সামনে বম্মা বলল…এই বাবাই…আমি কিন্তু বলে দিয়েছি…তিস্তা যতদিন থাকবে, তুই ওকে কলকাতার সবকিছু দেখিয়ে নিয়ে আসবি ও খুব মন দিয়ে মাছের কাঁটা চুষতে চুষতে বলল…আমি পারছি না বাবা…তুমি ওকে নিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে…

কেন শুনি…তোর অসুবিধাটা কি?

ও মায়ের কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে কিছু একটা বলে আবার কাঁটা চোষায় মন দিল 

বম্মা দাদাই এর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল…তোমার ছেলে এক্কেবারে পেকে গেছে…কি বলছে জানো…ও নাকি তিস্তার মতো সুন্দরী মেয়েকে কে নিয়ে বেরোলে পাড়ার সব মেয়ে গুলো হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরবে আর তিস্তাকে অভিশাপ দেবে…

শুনে সবাই যখন হাসছে দেখে ভীষন লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে ফেললাম…তারপরই ওর দিকে একবার মুখ তুলে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলাম…ও আমার উলটো দিকে বসেছিল…পা বাড়িয়ে পায়ের নিজের বুড়ো আঙ্গুলের নখটা দিয়ে ওর পায়ে হঠাৎ খোঁছা মারতেই… উঃ করে উঠল

বম্মা ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল…কি রে … কি হল?

নাঃ কিছু না…মাছের কাঁটাটা জিবে ফুটে গেল…

হেসে উঠে বললাম…দেখলে তো…আমাকে নিয়ে মজা করার কেমন শাশ্তি পেয়ে গেলে সাথে সাথে…

মা দেখো…তোমার মেয়ে কত ভালো…আমার কাঁটা ফুটে গেল আর ও কেমন মজা করছে…

বেশ করেছি…তুমি ওরকম বললে কেন…আমি তোমার সাথে বেরোবোই না…আমি আমার বম্মার সাথে বেরোবো…

বেঁচে যাবো বাবা…

বম্মা আমাদের কথা শুনে বলল…থাক…আর খুনসুটি করতে হবে না…তিস্তা আমার সাথে নয়…তোর সাথেই বেরোবে…

ঠিক আছে…তুমি এতো করে বললে আর কি করা যাবে…যেতেই হবে…বম্মার আদরের মেয়ে বলে কথা…কি কপাল আমার…আমার এতদিনের মা…কোথাকার কে একটা মেয়ে এসে ছিনিয়ে নিলো…

কি অদ্ভুত ছেলে… কত সহজে মিশে যায়… কাছে টেনে নেয়… ভাবতে ভাবতে মুখ নীচু করে খাচ্চিলাম… বম্মা জিজ্ঞেস করল…কি রে তিস্তা…চুপ করে গেলি?

না গো বম্মা…এমনিই… 


প্রথম একা পাওয়া #

বিচ্ছুটা গাড়ী চালাতে চালাতে গুন গুন করে কি একটা গান গাইছিল…

ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম…কি হল…তুমি কি আমার সাথে কথা বলবে না নাকি? আমি বোবার মতো বসে আছি আর উনি গান গাইছেন মজা করে

কি করি বল…তুমি যেভাবে মুখ শুকনো করে গাড়ীতে উঠলে…মনে হচ্ছে…আমি বুঝি তোমাকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছি…

বুদ্ধির ঢেঁকি…

মানে?

মানে তুমি একটা আস্ত বুদ্ধুরাম…সবার সামনে দিয়ে আমি আনন্দে নেচে নেচে বেরোই আর সবাই ভাবুক যে আমি তোমার সাথে বেরুচ্ছি বলে খুশিতে ফেটে পড়ছি… 

তার মানে…তুমি আমার সাথে বেরোনোটা খুব এক্সপেক্ট করছিলে…

আড়চোখে তাকিয়ে বললাম…তোমরা ছেলেরা কোনোদিনই মেয়েরা কি চায়… বুঝলে না…

কি করে বুঝবো বল…তোমার সাথে তো আগে কোনোদিন দেখা হয়নি…আমার জীবনে মেয়ে বলতে…বাড়ীতে মা…আর স্কুল কলেজের কিছু বান্ধবী মাকে বাদ দিয়ে থাকে বান্ধবী রা…ওদের কে গভীর ভাবে বোঝার কোনো প্রয়োজন পড়েনি…

প্রয়োজন পড়েনি নাকি তুমি প্রয়োজন মনে করনি…এরকম কি একেবারেই হয়নি যে কেউ তোমাকে কিছু বলার চেষ্টা করেনি?

মাই গড…তুমি তো আমাকে পুলিশের মতো জেরা করতে শুরু করলে…আবার হাসি পেয়ে গেলে হিহি করে হেসে বললাম…তুমি চোর…আমি পুলিশ…তারপর গলাটা গম্ভীর করে বললাম…উত্তর দাও…এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে লাভ নেই…

মেয়ে পুলিশ কিন্তু ছেলেদের হাতকড়া পরাতে পারে না… জানো তো…

আমার বয়ে গেছে জানতে…আমার ইচ্ছে হলেই পরাবো…তবে…একমাত্র তুমি যদি চোর হও…

হুমমম…তোমার হাতে বন্দী হওয়ার জন্য আমি চোর কেন…ডাকাত হতেও রাজি আছি…

তাহলে এখনই চাই তোমাকে বন্দী করতে…

কি ভাবে…

কি বলা যায় ভাবতে ভাবতে বললাম…হুমমম…পেয়ে গেছি…তুমি গিয়ারের উপর হাত টা রাখো…

কেন?

আরে বাবা রাখো না…বড্ড বেশী প্রশ্ন কর তুমি…জানো না …সুন্দরী মেয়েরা কোনো কথা বললে সেটা চুপচাপ মেনে নিতে হয়…

ও আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে গিয়ারে হাত রাখল…দুহাতে মুখ ঢেকে কিছু একটা ভাবলাম…তারপরেই ডান হাতটা ওর হাতের উপর চেপে ধরে বললাম…এই আমি তোমাকে বন্দী করলাম…

আমার হাতের উষ্ণতা হয়তো ওর শরীরে কেমন একটা শিহরন জাগিয়ে তুলল…মনে হল ওর হাতটা কেঁপে উঠল…গাড়ীটা আস্তে আস্তে সাইড করে নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে…ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকালো…আমি এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম…

তিস্তা…প্লিজ হাতটা সরিয়ে নাও… 

শুধু ওর শরীরে শিহরন আসেনি…আমার ও কেমন যেন লাগছিল ওকে ছুঁতে পেয়ে…অস্ফুট স্বরে বললাম…বাড়ীতে তো তোমাকে একা পাবো না…একটু তোমার হাতটা ধরে থাকি না… ভীষন ইচ্ছে করছে…

ফেরার সময় একগোছা রজনীগন্ধার স্টিক কিনলাম বম্মার জন্য…ফিরলাম যখন…প্রায় সাতটা বাজে বসার ঘরে মা বাবারা বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে বাপির কপালে চুমু খেয়ে বললাম…বাপি আমি এখুনি আসছি…কত ঘুরলাম আমরা…তোমাকে না বললে বিশ্বাসই করবে না…

ভেতরে যাবার আগে তাড়াতাড়ি বম্মার হাতে রজনীগন্ধার স্টিকগুলো দিয়ে বললাম…বম্মা…তোমার জন্য…বম্মা…খুব ক্ষিদে পেয়েছে…কিছু খেতে দাও না…তোমার ছেলে আমাকে কিচ্ছু খাওয়ালো না…হাওয়া খেয়ে কি পেট ভরে বলো…

বম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল…তোরা হাত মুখ ধুয়ে আয়…খেতে দিচ্ছি কি রে বাবাই…মেয়েটাকে কিছু খেতে দিস নি?

না বললে…আমি কি ভাবে বুঝবো ওর ক্ষিধে পেয়েছে…

তুই একটা আস্ত গাধা…তুই ওকে নিয়ে গেছিস…তোরই ওকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল…

ঠিক আছে…এর পরে বেরোলে আমি খাওয়ার সাথে নিয়ে বেরোবো…সাথে জলের বোতল…ন্যাপকিন…পেপার সোপ…সব থাকবে…যাতে তোমার আদরের মেয়ের কোনো অসুবিধা না হয়…

দাঁড়া তো…তোকে দেখাচ্ছি মজা…বলে বম্মা উঠতে যেতেই… বাবার পাশে বসে পড়ে বলল…বাবা…মাকে থামাও না…মেরে ফেলবে আজ মনে হচ্ছে…দূর্গা দূর্গতিনাশিনী না হয়ে আজ বোধ হয় দুর্গতিদায়িনী হয়ে গেছে…

সবাই ওর কথা শুনে হাসছে যখন আমি ভাবছিলাম কেমন সুন্দর জমিয়ে রাখতে পারে … ও কাছে থাকলে সত্যিই মনে রাগ দুঃখ কিছু থাকা সম্ভব নয়

______________________________
বৃষ্টি তুমি কত মিষ্টি # 

বাপির পাশে বসে বাচ্চা মেয়ের মতো খুশিতে ডগমগ করতে করতে বকে যাচ্ছিলাম…জানো তো…সন্ধের পর দুর থেকে সেকেন্ড হুগলী ব্রিজটা কি সুন্দর লাগে…বাবুঘাটে গঙ্গার ধারে বসে ভীষন ভালো লাগছিল…ছোটো ছোটো নৌকো গুলো কেমন জলের ধাক্কায় এদিক ওদিক করতে করতে ভেসে যাচ্ছিল আমাকে এমন খুশী হতে দেখে বাপির বুকটা ভরে উঠলো হয়তো… আনন্দে…আমাকে কে জড়িয়ে ধরে বললেন…কি…বলেছিলাম না…এখানে এলে তোর ভালো লাগবে তুই তো আসতেই চাইছিলি না…

ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম…আমি কি জানতাম নাকি…বম্মা এতো ভালোবাসে আমাকে…দাদাই কি ভালো…আমাদেরকে কত ভালোবাসে…সব সময়…কি খাবো…কোথায় যাবো…এই সব করছে…

বাবাই কি খারাপ নাকি…আমাদের জন্য কত কিছু করছে…আমার সোনা মেয়েকে নিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে এলো…

বাপির ঘাড়ে মাথা রেখে কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর বললাম…ওটা একটা বিচ্ছু ছেলে…খালি আমার পেছনে লাগে…

পেছনে লাগে তো কি হয়েছে…তোকে ভালোবাসে না নাকি…

কি জানি…ওকে ঠিক বোঝা যায় না…

তোর জন্য খুব চিন্তা হয় রে…ওর মতো একটা ছেলে যদি পেতাম…তোর বিয়েটা দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারতাম…

বাপি…তুমি আবার সেই শুরু করলে?...আমাকে তাড়াবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো…তোমাকে কতবার বলেছি আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না…তুমি কক্ষোনো আমাকে বিয়ের কথা বলবে না…

সকালের মতো আমার দুচোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে জল বেরিয়ে আসছিল…আমাকে আদর করতে করতে বাপি বললেন…আচ্ছা বাবা ঠিক আছে…আর বলবো না…তোর যখন ইচ্ছে হবে আমাকে বলবি…

বিচ্ছুটা কি একটা কাজে ঘরে ঢুকে আমাকে বাবার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে দেখে ফিরে যাচ্ছিল… চোখ মুছে ওকে ডেকে একটু ভারী গলায় বললাম…কি হল…চলে যাচ্ছো কেন…আমি কাঁদছি তো তোমার কি?

কি বলবে বুঝতে না পেরে চুপ করে দাঁড়িয়ে গেল হয়তো ভাবছিল …কি অদ্ভুত মেয়ে রে বাবা…কখন কাঁদে…কখন হাঁসে আর কখন যে রেগে যায় বোঝা মুশকিল 

বাপি বলল…বাবাই বোসো…আমার মেয়েটা একটা পাগল…কিছু মনে কোরো না…

আমি পাগল?…তুমি আমাকে কাঁদাবে আর আমি কাঁদলেই যত দোষ…



রাতে খাওয়ার টেবিলে চুপচাপ মুখ নীচু করে বসতেই…আমার থমথমে মুখ দেখে বম্মা জিজ্ঞেস করল…কি রে তিস্তা…তোর কি হয়েছে…বাবাই আবার তোর পেছনে লেগেছিল নাকি?

বাপি বলল…না না…বাবাই কিছু করে নি…ও আমার উপর রেগে আছে…বিয়ের কথা বলেছিলাম বলে কান্নাকাটি করেছে…

বম্মা আমার পিঠে হাত দিয়ে বলল…মা…রাগ করিস না বাপির উপর…বড় হচ্ছিস…এখনই বিয়ে দেবার সময় না হলেও…তোর বাপির একটা চিন্তা থাকবেই…তুই ছাড়া তোর বাপির আর কে আছে বল? তোর মা থেকেও তো নেই

তুমি জানো না বম্মা…আমি কতবার বাপিকে বলেছি…তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না…তবুও আমার পেছনে লাগবে…ভালো ছেলে কোথায় পাবো…ভালো ফ্যামিলি না পেলে যে কি হবে…

আচ্ছা বাবা…ঠিক আছে…বলুক না…এখন একটু মাথা ঠান্ডা করে খেয়ে নে…খাওয়ার সময় রাগ করতে নেই…

মায়ের কথা ওঠায় খুব ইচ্ছে করছিল বম্মাকে জড়িয়ে ধরতে… জড়িয়ে ধরে বললাম…বম্মা…আজ আমাকে খাইয়ে দাও না…

তুই একটু বোস…আমি ওদের কে দিয়ে তোকে খাইয়ে দিচ্ছি…

আমাকে আবার আগের মত হাসিখুশি দেখে সবারই ভালো লাগছিল…বম্মার হাতে খেতে খেতে মাঝে মাঝে সৃজনের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিলাম…ভাবখানা যেন এরকম…দেখো…আমি কেমন মজা করে মায়ের হাতে খাচ্ছি…একটু পরেই অন্যদিকে তাকিয়ে ওর পায়ে খোঁচা মেরে বললাম…বম্মা দেখো…তুমি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছো বলে তোমার ছেলে কেমন মুখ গোমড়া করে আছে…ভীষন হিংসুটে…

আমার বয়ে গেছে হিংসে করতে…মা আমাকেও খাইয়ে দেয়…

এ মা…বুড়ো ছেলে…এখোনো মায়ের হাতে খায়…

আচ্ছা…আমি বুড়ো ছেলে…তুমি কি নার্শারিতে পড়া কচি খুকি নাকি?

আমি তোমার থেকে চার বছরের ছোটো…অতএব…তোমার সাথে আমার তুলনা করা যাচ্ছে না…ইস…বুড়ো ছেলেকে বুড়ো বললে আবার রাগ করে…

আমাদেরকে আবার খুনসুটি করতে দেখে সবাই মুখ টিপে হাসতে শুরু করল সবার প্রায় খাওয়া শেষ হয়ে গেলেও আমার বাকি ছিল… বললাম…দাদাই…বাপি…তোমরা উঠে পড়…আমি বম্মাকে খাইয়ে তারপর উঠবো…বম্মা…আমি কিন্তু তোমাকে খাইয়ে দেবো আজ…

বম্মা হেসে বলল…ঠিক আছে…সেই কোন ছোটোবেলায় মায়ের হাতে খেয়েছি…আজ আবার আমি আমার ছোটো মায়ের হাতে খাবো

দাদাই ওঠার সময় জিজ্ঞেস করল…ছাদে কিছু নেই তো…আকাশের যা অবস্থা… মনে হয় ঝড় বৃষ্টি হতে পারে…

বম্মা বলল…না…সে রকম কিছু নেই…বাবাই… পাঁচিলের টব গুলোকে নামিয়ে দে না বাবা…ঝড়ে পড়ে যেতে পারে…

কিছুক্ষন পর ও ফিরে এসে বললো…টব গুলো নাবিয়ে দিয়েছি…বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে…সহজ়ে থামবে বলে মনে হয় না…

সবাই চলে যাবার পর আমি বম্মাকে খাইয়ে দিচ্ছিলাম…বৃষ্টি হচ্ছে শুনে বললাম... বম্মা…আজ না…বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে…তুমি বকবে না তো?

খাওয়ার পর বৃষ্টিতে ভিজবি…ঠান্ডা লেগে যাবে তো…

বম্মা…প্লিজ…হ্যাঁ…বল…খুব ইচ্ছে করছে…কিচ্ছু হবে না…তুমি আছো তো…ঠান্ডা লাগলে…সেই ছোটোবেলার মতো তেল গরম করে মালিশ করে দেবে…

তুই কি করে জানলি? তুই তো খুব ছোটো ছিলি তখন…

বাপি আমাকে সব বলেছে…বম্মা…প্লিজ…

আচ্ছা বাবা…ঠিক আছে…কিন্তু…রাত হয়েছে…খোলা ছাদে একা থাকবি?…আমারও আবার শরীরটা ভালো নেই…সেই কোন সকালে উঠেছি…

তোমার ছেলেকে বলো না…আমার সাথে যেতে…একদিন না হয় দেরীতে ঘুমোবে…

ঠিক আছে…তুই কিন্তু…বাপিকে বলে যাবি…

বাপিকে না বলে আমি কিচ্ছু করিনা…তুমি তো জানো…বাপি আমার শুধু বাবা নয়…মা ও…



বিচ্ছুটা বিছানায় বসে গিটারটা নিয়ে কিছু একটা সুর বাজাবার চেষ্টা করছিল…বম্মার হাত ধরে ভেতরে ঢুকলেও ও অন্যদিকে মুখ করে থাকায় বুঝতে পারলো না

এই বাবাই…মায়ের ডাকে ফিরে তাকাতেই আমার সাথে চোখাচুখি হয়ে গেল…ইশারা করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু বুঝলো কিনা কে জানে…মাকে বলল… বলো…মা

তিস্তা কে নিয়ে ছাদে যাবি?...মেয়ের আমার ইচ্ছে হয়েছে বৃষ্টিতে ভেজার…

তুমি যাও না…

আমার শরীরটা ভালো নেই রে…ঘুমোতে হবে…

ঠিক আছে…তোমার মেয়েকে বলে দাও…নিজে ভিজুক…আমাকে যেন না ডাকে…

ঠোট উলটে ভেঙ্গিয়ে দিয়ে বললাম…ইস…আমাকে যেন না ডাকে…আমার বয়ে গেছে তোমাকে ডাকতে…নেহাত রাত হয়েছে…খোলা ছাদে একা একা ভয় লাগবে…না হলে একাই যেতাম…

দেখেছো মা…কি রকম ঝগড়ুটে মেয়ে…আমি ওকে কিছু বলেছি?

এই দেখো…আবার দুটোতে ঝগড়া শুরু করে দিলো…তোরা যা…আমি শুতে যাচ্ছি…তিস্তা ফিরে এসে কিন্তু স্নান করবি…না হলে জ্বর এসে যাবে…

ঠিক আছে বম্মা…তুমি চিন্তা কোরো না

বম্মা বেরিয়ে যাবার পর ও আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল…সত্যিই ভিজবে নাকি…অন্য কিছু ইচ্ছে আছে? 

হাসি হাসি মুখ করে বললাম…কি আবার ইচ্ছে হবে…

কি জানি বাবা…তোমাকে বোঝা খুব মুশকিল…কখন যে কি করে বসবে…

বোঝার চেষ্টা করলেই বুঝবে…চলো না…বৃষ্টি থেমে গেলে আমার আর ভেজা হবে না…

ছাদের দরজার পরেও বেশ কিছুটা শেড আছে…সৃজন ওর তলায় দাঁড়িয়ে বলল…যাও…তুমি ভেজো…আমি এখানে দাঁড়াচ্ছি…

কি সুন্দর লাগছে না…ঝমঝম করে বৃষ্টিতে গাছগুলো কেমন সুন্দর ভিজছে…হাওয়ার সাথে দোল খেতে খেতে…ওর উত্তরের অপেক্ষা না করেই আস্তে আস্তে ছাদের মাঝে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ফুল গাছগুলো কে পরম মমতায় ছুঁয়ে যেন আদর করছি…রাতের মেঘে ভরা আকাশের অল্প আলোতে নিজেকে যেন মায়াবী কোনো কিছুর মতো লাগছিল…

ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলাম…এই…তুমি গান শুনতে চেয়েছিলে না…গাইবো?

আমি কখন ওর সামনে এসে ওকে কিছু বলেছি বোধ হয় বুঝতে পারেনি…অবাক হয়ে আমার বৃষ্টি ভেজা শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললাম…এই দুষ্টূ ছেলে…মেয়েদের বৃষ্টি ভেজা শরীরের দিকে তাকাতে নেই…জানো না…মন খারাপ করে…এই…বলো না…গান শুনবে কি না…

গাও…

চলো…বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গান শোনাবো…

আমাকেও যেতে হবে?

আমার সাথে না গেলে…কিভাবে আমি গান শোনাবো… বলো…

ওর হাত ধরে ছাদের মাঝে নিয়ে গিয়ে বললাম… এখানে দাঁড়াও… 


ও মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমার দিকে তাকিয়ে …আমি জুঁই ফুলের গাছটাকে আলতো ছুঁয়ে যেতে যেতে গাইছি…

বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি…এ কোন অপরুপ সৃষ্টি…

এত মিষ্টি মিষ্টি মিষ্টি…আমার হারিয়ে গেছে দৃষ্টি…

বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি…এ কোন অপরুপ সৃষ্টি…

এত মিষ্টি মিষ্টি মিষ্টি…আমার হারিয়ে গেছে দৃষ্টি…

এত মেঘের কোনে কোনে এলো বাতাস হু হু সনে

এত মেঘের কোনে কোনে এলো বাতাস হু হু সনে

রিম ঝিম ঝিম রিম বৃষ্টি

তোমার অঝোর ধারায় ভিজে…আমি নতুন হলাম নিজে……

মা মাপাধাপা নি আজ হারিয়ে গেছি আমি

বৃষ্টি তুমি এতো কেন মিষ্টি

হয়তো ও ভাবছিল…এ কোন তিস্তা…আজ সারাদিনের সেই তিস্তা যেন অন্য কেউ…হয়তো ওর ভীষন ভালো লাগছিল…বৃষ্টিতে ভিজে এত সুন্দর গান শুনতে…এক অজানা জগতে হারিয়ে যেতে যেতে শুনলো…

কই…বললে না তো…কেমন লাগলো…

সম্বিত ফিরে পেয়ে আমার দিকে তাকালো…আমি ওর দিকে এক অপরুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি…আমার ভেজা ঠোঁট দুটো যেন কিছু বলতে চাইছে…ওকে

দুহাত বাড়িয়ে আমার মুখটা আলতো ভাবে ধরে কপালে ওর ঠোঁটটা ছুঁইয়ে ফিস ফিস করে বলল…আজ নয়…যদি কোনো দিন সুযোগ আসে…তুমি যদি শুনতে চাও…সেদিন বোলবো…কেমন লাগলো…

থরথর করে কেঁপে উঠলাম…কিছু বলতে আর কিছু শুনতে চাইলেও… না পাওয়ার ব্যাথায় ক্ষনিকের জন্য বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল…নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম…চলো…অনেক রাত হয়েছে…
[+] 3 users Like রাজা রাম's post
Like Reply
#7
আমার কাছে নতুন লাগলো,, বেশ ভালো
Like Reply
#8
(02-03-2021, 09:46 PM)kunalabc Wrote: আমার কাছে নতুন লাগলো,, বেশ ভালো

ভাল লেগেছে  জেনে খুশী হলাম 
tnx bro
Like Reply
#9
তিস্তা তুমি যে অপাপবিদ্ধা , এটা রৌনক এর লেখা একটা বিখ্যাত গল্প  ... XOSSIP এ ছিল

১) জানিনা আপনি কোথায় খুঁজে পেয়েছেন গল্পটা , কিন্তু শুরুর অংশটা বাদ পড়ে গেছে .. শুরু হয়েছিল দাজিলিং মেইলে রাত থেকে ...

২) গল্পটা লেখক প্রায় প্রচুর বহু পাতা লিখেছিলেন , কিন্তু তাও সম্পূর্ণ না করেই কোনো কারণে ছেড়ে দিয়েছিলেন

অবিস্মরণীয় এক ভালোবাসার গল্প ছিল এটা ...      
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#10
(03-03-2021, 02:19 PM)ddey333 Wrote: তিস্তা তুমি যে অপাপবিদ্ধা , এটা রৌনক এর লেখা একটা বিখ্যাত গল্প  ... XOSSIP এ ছিল

১) জানিনা আপনি কোথায় খুঁজে পেয়েছেন গল্পটা , কিন্তু শুরুর অংশটা বাদ পড়ে গেছে .. শুরু হয়েছিল দাজিলিং মেইলে রাত থেকে ...

২) গল্পটা লেখক প্রায় প্রচুর বহু পাতা লিখেছিলেন , কিন্তু তাও সম্পূর্ণ না করেই কোনো কারণে ছেড়ে দিয়েছিলেন

অবিস্মরণীয় এক ভালোবাসার গল্প ছিল এটা ...      

আপনি ঠিকই বলেছেন 
গল্পটা ট্রেন থেকেই শুরু হয়েছিল
কিন্তু প্রথম থেকে আমার কাছে নেই

ধন্যবাদ আপনি আমার থ্রেডে কমেন্ট করেছেন বলে
[+] 1 user Likes রাজা রাম's post
Like Reply
#11
দাদা, সম্ভব হলে আপডেট দেবেন please ?
গল্পটা পড়তে পড়তে নেশা লেগে গেছে।
Like Reply
#12
ভোরের রজনীগন্ধা #

খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যেতে পাশ ফিরে জানলার দিকে তাকিয়ে দেখলাম…আকাশটা তখোনো মেঘে ভরা…গাছের নতুন পাতা গুলো বৃষ্টিতে ধুয়ে যেন অনাঘ্রাতা কুমারী মেয়ের মতো দেখাচ্ছে…কাল রাতের কথা ভাবতে ভীষন ভালো লাগছিল…বুকের ভেতরটা এক অজানা খুশিতে ভরা…খুব ইচ্ছে করছিল কেউ ওঠার আগে ছাদে গিয়ে রাতের সেই অনুভুতি গুলোকে আরো একবার নিজের হৃদয়ে ছুঁইয়ে দিতে…

জুঁই ফুলের গাছটা ফুলে ফুলে ভরে আছে…ফুল গুলোতে আলতো হাত বোলাতে বোলাতে ভাবছিলাম…ও কি কিছু বলতে চেয়েছিল…কেমন অদ্ভুত মায়াবী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল…যে দৃষ্টিতে ছিল না উগ্র কামনা…ছিল না কোনো উত্তেজনা…একেই কি বলে প্রেম…জানি না…আচ্ছা…ও কিছু বলতে চাইলে…বলতে পারতো…আমি না হয় লজ্জায় বলতে পারছি না…ও তো একটা ছেলে…ওর তো লজ্জা পাওয়া উচিত নয়…

কি রে তিস্তা…এতো সকালে ছাদে কি করছিস…ঘুমিয়েছিস তো… পেছন ফিরে দেখলাম বম্মা


বম্মা…দেখো…জুঁই ফুলের গন্ধে চারদিক ভরে গেছে…ভীষন ভালো লাগছে…না…

বম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল…আমার মেয়েটা খুব মিষ্টি…আয়…ওদিকে চল…আমি পুজোর ফুল তুলবো…

বম্মা…কত রজনীগন্ধা ফুটেছে…কয়েকটা নেবো গো?

ওমা…ফুল নিবি…আবার আমাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে…কি করবি রে…আমাকে তো দিলি কাল সন্ধেবেলা…

তোমার ছেলেকে দেবো…ও না থাকলে কাল রাতে তো বৃষ্টিতে ভিজতে পারতাম না…জানো তো…একটা গান গাইলাম ভিজতে ভিজতে…তোমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম…কেমন লাগলো…কিছুই বললো না…তোমাকে গানটা শোনাবো…তুমি বলবে তো আমি কেমন গাই…ও বোললো না তো আমার বয়ে গেল…



ফুল তোলা হয়ে গেলে নিচে এলাম… বম্মা চা বানিয়ে আমাকে ডেকে বলল…তিস্তা…বাপিকে ডেকে দে না মা…চা হয়ে গেছে…

চা খেতে খেতে বাপি জিজ্ঞেস করল…বাবাই কই…দেখছি না তো…

বম্মা হেসে বলল…বাবুর একটু দেরীতে ঘুম ভাঙ্গে…বিছানায় চা না পেলে উঠবেই না…আমাকে পাশে বসতে হবে…আমার গায়ে হেলান দিয়ে বসে চা খেয়ে তার পর উনি উঠবেন 


বম্মা তুমি তাহলে যাও…চা ঠান্ডা হয়ে যাবে তো…

আজ বরং তুই নিয়ে যা…আমরা তোর বাপির সাথে গল্প করি…

আমাকে আবার ওনার পাশে বসতে হবে নাকি…তাহলে বাবা আমি নেই…

আরে না না…ওর যত আব্দার আমার কাছে…বাইরে গেলে দিব্বি নিজেই সব করে নেয়… 


চায়ের কাপ আর রজনিগন্ধার স্টিক গুলো নিয়ে ওর ঘরের পর্দা সরিয়ে দেখলাম…পাশ ফিরে কোল বালিশ টাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে…ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবছিলাম…কি সুন্দর মায়া মাখানো মুখটা…একটু যেন দুষ্টুমিতে ভরা…

রজনীগন্ধার ফুলগুলো ওর কপালে, গালে আলতো ভাবে বুলিয়ে দিতে দিতে আস্তে আস্তে ডাকলাম…এই…ওঠো…না…

ও চোখ খুলে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো…ঘুম চোখে হঠাৎ বুঝতে পারছিল না…কে এসেছে…হয়তো ভাবছিল মা তো এভাবে ডাকে না…

ওঠো না…চা নিয়ে এসেছি…

ও উঠে বালিশে হেলান দিয়ে বসে বলল…বোসো…

রজনীগন্ধার স্টিক গুলো ওর দিকে এগিয়ে বললাম…আগে এটা নাও…

ফুল গুলো হাতে নিয়ে বুক ভরে গন্ধ নিতে নিতে জিজ্ঞেস করল…কিসের জন্য?

আমাকে একটা সুন্দর রাত উপহার দিয়েছো না…এটা তার জন্য


তোমাকে যতবার দেখি…ততবারই নতুন লাগে…তোমার দেওয়া ফুল নিয়ে একটা গান মনে পড়ছে…

আমি দুচোখ ভরা আগ্রহ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম…শোনার জন্য…

রজনীগন্ধা ফুল তুমহারী……তুমি গানটা জানো? গাইবে একবার?

এখন নয়…পরে কখোনো…যদি তুমি আমাকে কখোনো বলো কাল রাতের গান শুনে তোমার কেমন লেগেছিল…

আমার চোখে চোখ রেখে ও মৃদু স্বরে বলল…জানি…না…সেই দিনটা আসবে কিনা…যেদিন তোমাকে বলতে পারবো…

ওর মতোই মৃদু স্বরে বললাম...আমি অপেক্ষা করবো…

প্রথম শাড়ীর প্রেমে পড়া #

সকালে সেই যে সৃজনকে চা দিতে গিয়ে ওর সাথে কিছুক্ষন ছিলাম তারপর আর ওর সাথে দেখা হয়নি কোথায় যেন গেছে খুব অভিমান হচ্ছিল…আমাকে তো একবার বলে যেতে পারতো মনটা খুব খারাপ লাগছিল 


বাপি নিজের কাজে বেরিয়ে গেছে…দাদাই অফিসে…এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে ভাবলাম…বম্মার কাছে গিয়ে রান্না করা দেখি রান্না ঘরে গিয়ে পেছন থেকে বম্মাকে জড়িয়ে ধরলাম

কি রে…তিস্তা…কেউ নেই… সময় কাটছে না তো?

তুমি তো আছো…

আমি তো রান্না করতে ব্যাস্ত…

এত কি রান্না কোরছো?…কেউ তো বাড়ীতে নেই


আমার মেয়ে আছে না…বাবাইও তো বাড়ী ফিরে খাবে…

ও আসবে শুনে ভীষন ভালো লাগলো…যাওয়ার আগে বলে যায়নি…আসুক আগে…খুব বকুনি দিতে ইচ্ছে করছিল…হঠাৎ মনে হল…ওকে কিছু একটা করে চমকে দেবো আজ বম্মার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে রান্না করা দেখতে দেখতে ভাবছিলাম কি করা যায়… 


আমার মেয়েটা এক্কেবারে চুপচাপ কেন?

এমনিই…তোমার রান্না করা দেখছি…ভাবছি আর একবার স্নান করে নি…

আমার রান্না হয়ে এসেছে…তুই বরং চান করে নে…বাবাই এসে গেলে আমরা এক সাথে খেতে বসবো…

বম্মা…তোমার একটা শাড়ি পরতে দেবে গো…

ওমা শুধু শাড়ী কি করে পরবি…আমার ব্লাউজ় তো তোর হবে না…

দেখো না…তোমার পুরোনো কিছু যদি থাকে…তুমি তো আগে আমার মতো রোগা ছিলে…তোমার পুরোনো ফটো দেখছিলাম না…

ঠিক বলেছিস…মনে হয় আলমারীতে খুঁজলে পাওয়া যাবে…তুই জানিস তো শাড়ী পরতে? 


আগে কখোনো পরেছি নাকি…তুমি আছো তো…পরিয়ে দেবে…



বম্মা আলমারীতে যত জামা কাপড় ছিল টেনে বের করলো…বেছে বেছে একটা লালের উপর হালকা সবুজ কাজ করা সুতির শাড়ী আর তার সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ আর সায়া বের করে শাড়ীটা আমার গায়ে ফেলে বললো…তোকে বেশ মানাবে কিন্তু…

বম্মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম…ভাগ্যিস কাউকে দিয়ে দাওনি…তাহলে আমি আর পরতে পারতাম না…

এগুলো রেখেছি বাবাই এর বৌ কে দেবো বলে…অবশ্য যদি নিতে চায়…আজকালকার মেয়ে…বলা তো যায় না…না নিলে অন্য কাউকে দিয়ে দেবো…

কাউকে ঠিক করে রেখেছো নাকি? 


তোর মাথা খারাপ…আগে নিজের পায়ে দাঁড়াক…তারপর ও নিজে ঠিক না করলে তারপর না হয় আমরা দেখবো…

দেখো গিয়ে ঠিক করে রেখেছে…তোমাদের কে বলেনি…

না রে…সে রকম কেউ থাকলে আমাকে ঠিক বলে দিতো…ওর কলেজের কেউ কেউ প্রপোজ করেছিল…সব আমাকে বলেছে…

কথাটা শুনে ভীষন ভালো লাগছিল…ইচ্ছে করলো কিছুক্ষন একদম একা একা নিজের সাথে সময় কাটাতে বম্মাকে বললাম…বম্মা…আমি স্নান করে আসছি…তুমি কিন্তু শাড়ী পরিয়ে দেবে…

বাথরুম থেকে কোনোরকমে শাড়ীটা জড়িয়ে বেরোলাম…ব্লাউজটা একটু যেন টাইট লাগছে…লাগুক…প্রথম শাড়ী পরার খুশিতে মনটা নেচে উঠতে চাইছে…

কি রে তিস্তা…কখন থেকে বসে আছি তোকে শাড়ী পরাবো বলে…এক ঘন্টা হয়ে গেল…মেয়ে আমার আর বেরোয় না…কারুর কথা ভাবছিলি নাকি… 


লজ্জা পেয়ে গেলাম…ধ্যাত তুমি না বম্মা…কার কথা ভাববো…মনে মনে বললাম…বম্মা…কিছু মনে কোরো না…তোমার বিচ্ছু ছেলেটা আমার মনটা চুরি করে নিয়েছে…তার কথাই ভাবছিলাম…কিন্তু তোমাকে কি করে বলি বলোতো…

আমার এত সুন্দর মেয়েটাকে কারুর পছন্দ হয়নি নাকি…

ধ্যাত…তুমিও…তোমার ছেলের মতো পেছনে লাগছো…

আয়…তোকে শাড়ীটা পরিয়ে দিই…বাবাই এসে চানে ঢুকেছে…এখুনি বেরিয়ে মা খেতে দাও বলে চেঁচাবে…

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম বম্মা কিভাবে শাড়ী পরাচ্ছে…নিজেকেই চিনতে পারছিলাম না…

শাড়ী পরিয়ে দিয়ে বম্মা বলল…তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না রে…কি সুন্দর লাগছে…

আয়নার সামনে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বম্মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম…থ্যাঙ্ক ইউ…বম্মা…

এই মেয়ে…মাকে থ্যাঙ্ক ইউ বলে নাকি…

বম্মা…তোমার ছেলেকে একবার দেখিয়ে আসি? 


ঠিক আছে…যা…ও তো পেছনে লাগবেই… রাগ করবি না কিন্তু…

লাগুক না…আমি কি সত্যি সত্যি রাগ করি নাকি…

শাড়ীটা দুহাতে একটু তুলে ধরে প্রায় দৌড়ে সৃজনের ঘরে গেলাম…ওকে দেখাবার জন্য যেন আর দেরী সহ্য হচ্ছিল না…বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম ও আমাকে দেখে কি বলতে পারে…পেছনে লাগবে…নাকি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে…কখন যে ও স্নান করে বেরিয়ে এসেছে বুঝতে পারিনি…

অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল…ওর দুচোখে কেমন অদ্ভুত এক ভালোলাগার ছোঁয়া…

লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে জিজ্ঞেস করলাম…ভালো লাগছে?

ও আমার হাত ধরে বলল…চলো


কোথায়?

আয়নাটা দেখিয়ে বলল…যেখানে তুমি নিজেকে দেখতে পাবে


আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে বলল…আয়না কি বলছে জানো?

কিছু না বলে আয়নার ভেতর দিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে তাকিয়েছিলাম ও কি বলে শোনার জন্য… 


আমার কাঁধে দুহাত রেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আমার দিকে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো…কিছু যেন বলতে চাইছে…ওর উষ্ণ শ্বাস আমার মুখে আলতো ছোঁয়া দিয়ে যেতে যেতে যেন বলছে…কোথায় ছিলে এতদিন…আগে কেন আসোনি আমার কাছে…

বম্মার ডাকে সম্বিত ফিরে এলো…খেতে ডাকছে আমাদের…

তুমি যাও…আমি চুল আঁচড়ে আসছি…

নিজেকে সামলে নিয়ে ওর চুল গুলো আরো একটু এলোমেলো করে দিয়ে বললাম…দুষ্টু ছেলেদের এলোমেলো চুলে বেশী ভালো লাগে দেখতে…

আমার ঠোঁটে আলতো ভাবে আঙ্গুল বুলিয়ে বলল…মিষ্টি মেয়েরা এতো কাছে এলে কি ভালো থাকা যায়? 


আমি কি বলেছি…ভালো হয়ে থাকতে?

দুপুরে না শুয়ে বাপির জন্য অপেক্ষা করছিলাম…কখন আসবে…কখন বাপিকে আমার শাড়ী পরা দেখাবো…দুটো নাগাদ বেল বাজতেই দৌড়ে গিয়ে বম্মাকে ডেকে নিয়ে এসে বম্মার পেছনে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম…

বম্মা দরজা খুলে দিয়ে বাপি ভেতরে আসার পর বলল…অরুন…একটু দাঁড়াও…তোমাকে একটা নতুন জিনিস দেখাবো…

এই মেয়ে…সামনে আয়… বলে আমার হাত ধরে সামনে টেনে নিয়ে এসে বাপিকে বলল…দেখো তো এই মেয়েটাকে চিনতে পারো কিনা…

বাপি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল…কি বলবে যেন বুঝে উঠতে পারছিল না কিন্তু মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল ভীষন খুশী হয়েছে…

আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে বাপিকে জড়িয়ে ধরে বললাম…বম্মা পরিয়ে দিয়েছে…কেমন লাগছে বললে না তো…

ভীষন সুন্দর লাগছে আমার মেয়েকে
[+] 2 users Like রাজা রাম's post
Like Reply
#13
আমার সমুদ্র দেখা # 


দেখতে দেখতে পাঁচটা দিন কিভাবে কেটে গেল বুঝলাম না রোজই বিচ্ছুর সাথে কোথাও না কোথাও গেছি ও আমাকে এর মধ্যে একটা খুব সুন্দর ব্লু জিন্স আর টকটকে লাল টপ প্রেজেন্ট করেছে আমি যদিও খুব একটা জিন্স পরিনা তাও ওর দেওয়া বলে খুব যত্ন করে রেখেছি, ইচ্ছে আছে বিশেষ কোনো দিনে পরার ওকেও কিছু একটা দিতে ইচ্ছে করছে…কিন্তু কি দেবো কিছুতেই ঠিক করতে পারছি না 

বেশ কয়েকদিন বাপি রোজ নিজের কি সব কাজে বেরিয়ে যেত কিন্তু আজ আর বেরোয় নি তাই আমিও কোথাও যাবো না ভাবছিলাম দাদাই সকালে যথারীতি অফিসে চলে গেছে আমি বম্মা আর বাপি বসে গল্প করছিলাম বিচ্ছুটা আমাকে কিছুক্ষন জ্বালিয়ে মায়ের মিষ্টি বকুনি খেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে গিটার বাজাচ্ছে

বম্মা জিজ্ঞেস করল…অরুন…কাল বেরোবে নাকি?

কাল তো কিসের একটা যেন ছুটি আছে 


আরে তাই তো…কাল থেকে রবিবার, টানা তিন দিন ছুটি আছে…কাছাকাছি কোথাও গেলে তো ভালোই হয় তিস্তা…মা…যা না…বাবাই কে ডেকে নিয়ে আয়…

জানলার দিকে মুখ করে বসে বিচ্ছুটা গিটার বাজাচ্ছিল খুব মন দিয়ে…বাজানোর হাত খুব সুন্দর…একেবারে নিঁখুতভাবে আমার প্রিয় একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজাচ্ছে…ওকে ডিসটার্ব না করে চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনলাম…

আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশীনী


তুমি থাকো সিন্ধুপারে ওগো বিদেশীনী

আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশীনী

তুমি থাকো সিন্ধুপারে ওগো বিদেশীনী

তোমায় দেখেছি শারদ প্রাতে 

তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে

তোমায় দেখেছি… 

হৃদি মাঝারে… ওগো বিদেশীনী

আমি আকাশে পাতিয়া কান…শুনেছি শুনেছি তোমারই গান

আমি তোমারে সপেঁছি আমার প্রান… ওগো বিদেশীনী

আমি আকাশে পাতিয়া কান…শুনেছি শুনেছি তোমারই গান

আমি তোমারে সপেঁছি আমার প্রান… ওগো বিদেশীনী

ভূবন ভ্রমিয়া শেষে আমি এসেছি নুতন দেশে

আমি অতিথি তোমারই দ্বারে ওগো বিদেশীনী

আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশীনী

তুমি থাকো সিন্ধুপারে ওগো বিদেশীনী

আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশীনী

তুমি থাকো সিন্ধুপারে ওগো বিদেশীনী

গানটা শেষ হয়ে গেলেও মনের ভেতরে একটা রেশ থেকে গেল…ভাবছিলাম…এ তো আমার গাওয়ার কথা…শুধু‘ওগো বিদেশীনির’ জায়গায় যদি ‘ওগো পরদেশী’ থাকতো…আমিই তো এখন ওর দ্বারে অতিথি…

ওর মাথার চুল গুলোকে এলোমেলো করে দিয়ে বললাম…এই…চলো…বম্মা ডাকছে…

কেন? আবার বকবে নাকি…

বেড়াতে যাওয়ার প্রোগ্রাম হচ্ছে…তোমাকে দরকার…

ওঃ…কাজের সময় আমাকে চাই…আর একটু পেছন লাগলে…বকুনি খেতে হবে…যাবো না…যাও… 


তাহলে গিয়ে বলি…তুমি আবার আমার পেছনে লেগেছো…আমার চুল ধরে টেনে দিয়েছো…

খুব মজা লাগছে না…বকা খাওয়াতে…

লাগছে তো…এই…চলো না…

গিটারটা হাত থেকে নাবিয়ে রেখে একপাক ঘুরে নিয়ে বলল…চলো যাই…ঘুরে আসি…পাশাপাশি…তুমি আছো…আমি আছি…

তারপর?

ভালোবাসি…

যত আওয়াজ মুখে…কাজে তো কিছু দেখছি না…

এই…কি বললে…দেখাবো নাকি চেষ্টা করে এখনই…তুমি কিন্তু আমাকে খুব আন্ডার এস্টিমেট করে যাচ্ছো…

না বাবা…আমার দেখে কি হবে…তুমি তোমার বান্ধবীদের কাছে গিয়ে দেখাও…

না না…আমি তোমাকেই দেখাবো…পারি কিনা…

আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে… না…এখন নয়… বলে দৌড় দিলাম একতলার দিকে…ও আমার পেছন পেছন বেরিয়ে এলো…

দৌড়ে এসে বম্মার পাশে বসে পড়লাম…একটু পরেই ও এসে বলল…মা…তুমি আবার এই ফাজিল মেয়েটাকে আমার কাছে পাঠিয়েছিলে…আমার গিটার বাজানোর দফারফা করে দিলো একেবারে… 


বম্মা ওর হাত ধরে পাশে বসিয়ে নিয়ে বলল…গিটার পরে বাজাবি…কোথায় যাওয়া যায় বলতো…কাল থেকে টানা তিন দিন ছুটি আছে…

দীঘা নাহলে বকখালি যাওয়া যেতে পারে…

ঠিক বলেছিস…দীঘা যাই…তিস্তা কোনোদিন সমুদ্র দেখে নি…কাল সকাল সকাল বেরোনো যেতে পারে…এক কাজ কর না …তোর বাবাকে একবার ফোন কর…

যত চিন্তা তিস্তার জন্য…আমি যেন বন্যার জলে ভেসে এসেছি…বলে…উঠে গিয়ে ফোনটা নিয়ে ডায়াল করতে শুরু করল…কিছুক্ষন কথা বলে ফিরে এসে বলল…বাবা বলল…আজ বেরোলে কেমন হয়…

এত তাড়াতাড়ি কি করে বেরোবো…কিছু গোছানো নেই…অরুন তুমি যেতে পারবে তো?

বাপি বলল…না না…অসুবিধের কি আছে…

এখন মোটে বারোটা বাজে …সাড়ে চার কি পাঁচটায় বেরোতে পারবে না? যাওয়ার সময় বাবাকে অফিস থেকে তুলে নেবো…দশটা সাড়ে দশটার মধ্যে পৌঁছে যাবো…

ওখানে গিয়ে এত রাতে হোটেল পাবি কি পাবি না…

আরে তুমি চিন্তা কোরো না তো মা…তুমি গুছিয়ে নাও…আমি হোটেল দেখছি…আবার উঠে গিয়ে কাকে সব যেন ফোন করে ফিরে এসে বলল…হোটেল বুক করে দিয়েছি…হোটেল সি হক…আর কোনো চিন্তা নাই…চলো যাই… ঘুরে আসি… বলেই আমার দিকে তাকালো


আমার তো বুক ধুকপুক করছে তখন…আবার না গেয়ে ওঠে…তুমি আছো…আমি আছি…পাশাপাশি…ভালোবাসি…

বাপি আর বম্মার চোখ এড়িয়ে ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাতেই ইশারা করে বলল…ভয় নেই…

দাদাই কে অফিস থেকে তুলে নিয়ে বেরোতে বেরোতে সাড়ে পাঁচটা বাজলো…সেকেন্ড হুগলী ব্রিজে সেদিন ওঠা হয়নি…আজ পেরোতে গিয়ে ভালো করে দেখলাম…ব্রিজের উপর থেকে কি সুন্দর দেখাচ্ছে…ছোটো ছোটো নৌকো গুলো ভেসে যাচ্ছে…বেশ কিছুটা যাওয়ার পর হাইওয়েতে উঠলাম…ওটা নাকি বম্বে রোড…সৃজন গাড়ী চালাতে চালাতে বলে দিচ্ছিল এটা কি ওটা কি…পেছনে বাপি, বম্মা আর দাদাই নিজেদের ভেতরে গল্প করতে করতে খুব হাসাহাসি করছিল বম্মা বলে দিয়েছিল গাড়ী চালাবার সময় আমি যেন সৃজনের সাথে বেশী কথা না বলি…একটু এদিক ওদিক হয়ে গেলেই বিপদ হতে পারে বেশীর ভাগটাই চুপচাপ এদিক ওদিক দেখছিলাম বম্মা বলল…তিস্তা পেছনে আসবি? তোর দাদাই সামনে গিয়ে বসতে পারবে…

না না…আমি ঠিক আছি…তোমরা গল্প কর…মনে মনে ভাবলাম…মাথা খারাপ নাকি…বিচ্ছুটার পাশ থেকে উঠতে আমার বয়ে গেছে… 


খুব ইচ্ছে করছিল দুষ্টু ছেলেটার হাতে সেদিনের মতো হাত রাখি…কিন্তু হবে না…আজকালকার গাড়ী গুলোর সামনের সীট দুটো আলাদা আলাদা…মাঝখানে অনেকটা খোলা থাকায় পেছন থেকে সব দেখা যায় জানলার দিকে চেপে তেরছা হয়ে বসে ড্রাইভিং সিটের দিকে পা ছড়িয়ে বসেছিলাম যাতে পা না ব্যাথা করে আর ওকেও দেখতে পারি, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে গেলে পেছন থেকে বোঝা যাবে একটুপরেই তো অন্ধকার হয়ে যাবে…আর হাইওয়েতে কোনো আলো দেখছি না…তখন একবার ওর হাতটা ধরতে পারবো…ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম…পায়ে কিসের যেন খোঁচা লাগতে কিছু না ভেবে পা সরিয়ে নিলাম…একটু পরেই আবার…নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি…বিচ্ছুটা পা সরিয়ে নিচ্ছে…আড় চোখে ওর দিকে তাকালাম…যেন ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানে না এমন ভাব করে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ী চালাচ্ছে

বম্মাদের কান বাঁচিয়ে…আস্তে করে বললাম…এই…কি হচ্ছে এটা…

কিছু যেন জানে না…ভাব করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল…কিছু বললে?

ইশারা করে বললাম…এখন নয়…পরে…দেখতে পাবে তো


আমার দিকে তাকিয়ে মুখটা হাসি হাসি করে ইশারা করে বলল…আচ্ছা ঠিক আছে…

কি সাঙ্ঘাতিক ছেলে কে জানে বাবা…তার পরেই বেশ জোরে জিজ্ঞেস করল …কি দেখতে পাবে? 


ইশারা করে চুপ করতে বললাম কিন্তু শুনলে তো…আবার জোরে বলে উঠল…এই তো তুমি বললে…দেখতে পাবে… 

আমিও জোরে জোরে বললাম…আমি কিচ্ছু বলিনি তোমায়…গাড়ী চালাবার সময় মন দিয়ে গাড়ী চালাতে পারো না? বৃষ্টি হচ্ছে…কোথায় কি হয়ে যাবে… 

গাড়ী চালাচ্ছি না তো কি দাঁড়িয়ে আছি?

বম্মা পেছন থেকে জিজ্ঞেস করল…কি হয়েছে রে…আবার তোরা খুনসুটি করছিস?

দাদাই বলল…আরে করতে দাও না…এই বয়সে করবে না তো আর কবে করবে দুটোতেই তো এক একা বড় হয়েছে…ভাই বোন থাকলে না হয় একটু খুনসুটি ঝগড়া করতে পারতো…

মনে মনে ভাবলাম…ইস…বিচ্ছুটার বোন হতে আমার বয়ে গেছে… 


একটু পরেই রাস্তার ধারে একটা দোকানের সামনে গাড়ী দাঁড় করিয়ে বলল…মা…মেচেদা এসে গেছে…গরম গরম চপ খাবে নাকি? নিজেই নেমে বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে গিয়ে কোথা থেলে একটা ছাতা ম্যানেজ করে নিয়ে এসে বলল…এক এক করে নেমে এসো…আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি…

বাপিদেরকে দোকানে পৌঁছে দিয়ে ফিরে এসে…দরজা খুলে বলল…কই এসো…

যাবো না…যাও…পাজী কোথাকার…

এই দেখো…তুমি এখানে থাকলে আমিও তো যেতে পারবো না…সবাই কি ভাববে তখন…তোমার জন্যই তো ছাতা নিয়ে এলাম…

ইস…উনি আমার জন্য ছাতা নিয়ে এসেছেন…মিথ্যুক কোথাকার…

গাড়িতে তিনটে ছাতা আছে…মা জানে না…ওগুলো বের করলে কি তোমাকে একা একা নিয়ে যেতে পারতাম নাকি…

বম্মা বুঝতে পারলে…কি হবে…

ও আমি ম্যানেজ করে নেবো…তুমি এসো তো…

আমি গাড়ী থেকে নেমে ওর পাশে দাঁড়ালাম…গাড়ির দরজাটা রিমোট লক করে দিয়ে আমার পেছন দিয়ে ডান হাতটা ঘুরিয়ে নিয়ে এসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়ে বলল…চল… 


ওর হাতে একটা আলতো ভাবে চিমটি কেটে বললাম…খুব সখ… না…সবার সামনে দিয়ে এইভাবে যাওয়া যায় নাকি? 

তুমি চলো তো…বৃষ্টি হচ্ছে…কেউ দেখলেও কিছু বুঝবে না…

একটু এগিয়ে একটা পান সিগারেটের দোকানের দিকে যেতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল…আমি ওর দিকে তাকাতেই বলল…ভাগ্যিস বৃষ্টি হচ্ছে


কি হয়েছে তাতে?

বৃষ্টি না হলে তোমাকে এতো কাছে পেতাম কি? 


দোকানের ছেলেটাকে এটা আছে নাকি ওটা আছে নাকি আর তার সাথে দাম কত জিজ্ঞেস করে যাচ্ছিল,তারপর এক প্যাকেট সিগারেট, দেশলাই নিজের পকেটে ঢুকিয়ে আর একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতল আমার হাতে দিয়ে বলল…চলো…

তুমি এই কটা জিনিষ নিতে এত সময় নিলে কেন…এমন করছিলে যেন পুরো দোকানটাই কিনে নেবে…

ছাতাটা এমনিতেই নিচু করে ধরেছিল…আরো একটু নিচু করে কানের লতিতে আলতো কামড়ে দিয়ে বলল…তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না…

আস্তে ক রে বললাম...প্লিজ… বম্মা যেন বুঝতে না পারে…পৌঁছোনোর আগে তোমার হাতটা সরিয়ে নিও…

বাপিরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল ঢুকতেই বম্মা বলল…কি রে তোরা এতো সময় কোথায় ছিলি…চপ গুলো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে…

আর বোলোনা মা…তোমার এই পাগল মেয়েকে নিয়ে আমি এবার সত্যিই পাগল হয়ে যাবো…চপ খেলে নাকি কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতেই হবে আর সেটা এক্কেবারে ঠান্ডা না হলে চলবে না…চার চারটে দোকান ঘুরে তবে একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতল ওর পছন্দ হল…

কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না…কি সুন্দর ম্যানেজ করল…যত রকমের দুষ্টু বুদ্ধি সব বোধহয় ওর মাথায় আছে…

চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসতে বসতে বললাম…কে তোমাকে আমার সাথে থাকতে বলেছিল…আমি একা আনতে পারতাম না নাকি…সব ব্যাপারেই মায়ের কাছ নালিশ করা চাই… 


ইস…তোমাকে একা ছেড়ে এসে আমি মায়ের কাছে বকুনি খাই আর কি…

খেয়ে টেয়ে ওখান থেকে বেরোলাম যখন বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে…বেশ কিছুটা যাওয়ার পর আমরা হাইওয়ে থেকে ঘুরে গিয়ে একটা রাস্তায় ঢুকলাম… মাঝে মাঝে রাস্তার ধারে কিছু ছোটো ছোটো দোকান ছাড়া বাকিটা ফাঁকা মাঠের ভেতর দিয়ে মনে হল রাস্তাটা গেছে…এখন আর উল্টোদিক থেকে গাড়ী প্রায় আসছেই না…আমাদের গাড়ীর ভেতরটা এখন প্রায় অন্ধকার…পেছন থেকে কোনো আওয়াজ আসছেনা দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম…সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে…

আস্তে আস্তে ডান হাতটা নিয়ে গিয়ে ওর পায়ের উপরে রাখলাম… বাঁ হাতটা স্টিয়ারিং থেকে নামিয়ে আমার হাতের উপর রেখে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনটা দেখে নিয়ে আমার হাতটা নিয়ে ওর বুকের উপর রেখে ধরে থাকল…ওর বুকের ধুক পুক আওয়াজ অনুভব করতে করতে ভাবছিলাম…কিছু কি বলতে চাইছে…চাইছে তো বলছে না কেন…

দুর থেকে আলো দেখতে পেলে ওর বুকের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে আবার অন্ধকার হয়ে গেলে ওকে ছুঁয়ে বসে থাকছিলাম…ওকে এইভাবে লুকোচুরি করে ছুঁতে ছুঁতে ভীষন ইচ্ছে হচ্ছিল একবার জড়িয়ে ধরি…নিজেই নিজেকে বকুনি দিচ্ছিলাম…খুব সাহস না…

ঘন্টা দুয়েক পর বলল…মায়েদের কে ডেকে দাও…প্রায় পৌছে গেছি…মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল…আর ওকে ছুঁতে পারবো না ভেবে…

হোটেলে ঢুকে ঘড়ি দেখলাম… প্রায় দশটা বাজে হোটেলটা বেশ সুন্দর…আমাদের তিনটে রুম…আমাকে আর বম্মাকে একটা রুমে পৌছে দিয়ে বলল…তোমরা ফ্রেস হয়ে নাও…আমরা একটু পরে আসছি…তারপর কে কোথায় শোবে আর ডিনারের ব্যাপারটা ঠিক করা যাবে 


ইস…এতদুর থেকে এলাম সমুদ্র দেখবো বলে…

বম্মা বললো…সামনেই সমুদ্র…খেয়ে নিয়ে তারপর সবাই যাবো…

সবাই ফ্রেস হয়ে ডাইনিং রুমে গেলাম…বম্মা মেনু দেখে অর্ডার দেবার আগে কে কি খাবে জিজ্ঞেস করতে বাপি আর দাদাই দুজনেই বললো…তুমি দেখে বলে দাও না…এখানকার স্পেশাল কিছু যদি থাকে বম্মা ওয়েটারকে ডেকে মুচমুচে আলু ভাজা, মুগ ডাল, পার্শে মাছের ভাজা, সরষে চিংড়ি আর দই ইলিশ দিতে বলে দিল 


বাপি খেতে খেতে বম্মাকে বলল…দারুন রান্না করেছে কিন্তু…ভালো রান্না তো খাওয়ার সুযোগই পাই না…তোমাদের কাছে এসে কতদিন পর ভালো মন্দ খেতে পাচ্ছি 

দাদাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল…কি রে তিস্তা…তোর বম্মার কাছে রান্না শিখবি নাকি…বাপিকে মাঝে মাঝে রেঁধে খাওয়াতে পারবি…

আমি আলু ভাজা আর ডাল বানাতে পারি কিন্তু…

বম্মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল…আমার মেয়ে এর মধ্যে একটা শিখে নিয়েছে…কাল সারাক্ষন তো আমার সাথে রান্না ঘরে কাটালো…কি রে মা…বাপিকে রান্না করে খাওয়াবি তো…

বিচ্ছুটা মাঝখান থেকে ফুট কাটলো…এখন বাপিকে খাওয়াবে আর ভবিষ্যতে বরকে খাওয়াতে হবে কিন্তু…যে কদিন আছো…মায়ের কাছে সব শিখে নিও…

এই…ভালো হবে না বলছি…দেখেছো বম্মা…আবার আমার পেছনে লাগছে… 


খাওয়ার পর সবাই মিলে বেরোলাম…আকাশে এখন আর ঘন মেঘ নেই…ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে…মনে হয় পূর্নিমা…আমাদের হোটেলটা একেবারে বিচের পাশেই…হোটেলের বাগান থেকেই সমুদ্র দেখা যাচ্ছে…চাঁদের আলোতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল…একটার পর একটা ঢেউ গর্জন করতে করতে পাড়ের দিকে এসে আছড়ে পড়ছিল…অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম…

দশটার পরে নাকি বিচে যেতে দেয় না তাই হোটেলের বাগানের সিমেন্টের বেঞ্চিতে বসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলাম বাপিরা কিছুক্ষন বসে গল্প করার পর বলল…চলো…এবারে শুতে যাই…এত রাস্তাগাড়ী জার্নি করে এসে ক্লান্ত লাগছে…

আমার উঠতে ইচ্ছে করছিল না…বাপির হাত জড়িয়ে ধরে বললাম…বাপি আর একটু বোসো না…

বম্মা বলল…আচ্ছা ঠিক আছে তুই বোস…বাবাই থাকুক…খুব বেশী দেরী করবি না কিন্তু…

সবাই চলে যাবার পর বিচ্ছুটা আমার থেকে একটু দুরে বসে সিগারেট হাতে নিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিল…হঠাৎ আবার কি হল কে জানে…একটু আগেও তো সবার সাথে কথা বলছিল…এখন দেখে মনে হচ্ছে আমাকে চেনেই না…ভীষন খারাপ লাগতে সুরু করল…আমি কার জন্য থাকবো বললাম এখানে…আমি কি জানতাম না নাকি যে আমি আরো কিছুটা সময় থাকবো বললে ওকে আমার কাছে রেখে সবাই ফিরে যাবে…ভীষন কান্না পেয়ে গেল…
 
[+] 2 users Like রাজা রাম's post
Like Reply
#14
আমি তোমাকে ভালোবাসি #

সবাই চলে গেছে শুতে…আমি তিস্তার সাথে বসে আছি…ও এক মনে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে…ওর মধ্যে সেই ছটপটে ভাবটা এখন আর একদম নেই…কেমন যেন শান্ত হয়ে বসে আছে…
একটা সিগারেট ধরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলা্ম…এটা কি ঠিক হচ্ছে…জীবনে অনেক মেয়ে কাছে আসতে চাইলেও আমি এগোতে চাইনি…মাত্র এই কটা দিনের পরিচয়ে আমি তিস্তার প্রতি কেন এত দুর্বল হয়ে পড়ছি…ও যদি আমাদের আত্মীয় না হোত তাহলে হয়তো কোনো অসুবিধা ছিল না…খুব কাছের না হলেও…একটা সম্পর্ক তো আছে…ওর না হয় বয়স কম…এখন অনেক কিছুই বোঝে না…আমার তো বোঝা উচিত…পর পর দুটো সিগারেট খেয়ে ফেললাম…কিছু ভাবতে পারছিলাম না…মাথার ভেতরে সব যেন কেমন জট পাকিয়ে যাচ্ছে…মনে হল কেউ যেন ফুঁফিয়ে কাঁদছে…সমুদ্রের আওয়াজের মাঝে ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না…ভাবলাম মনের ভুল…পরক্ষনেই আবার মনে হল… না…মনে হচ্ছে কেউ কাঁদছে…তিস্তা কাঁদতে পারে একবারও মনে হল না…মেঘে ঢাকা চাঁদের আলোতে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝলামও না…মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এদিক ওদিক তাকালাম…কাউকে দেখতে পেলাম না…আবার মনে হল…সেই কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি…মেঘ সরে গিয়ে চাঁদের আলোতে এখন অনেকটাই পরিস্কার…উঠে তিস্তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বুঝলাম …ও কাঁদছে…ওর বুকের ভেতর থেকে চাপা কান্না গুমরে গুমরে বেরিয়ে আসছে…
নিজেকে ওই অবস্থায় ভীষন অসহায় লাগলো…কোনো কারন বুঝতে পারছি না…অথচ কাঁদছে…জীবনে এই প্রথম এরকম পরিস্থিতে পড়েছি…কি করবো বুঝতে পারছিলাম না…নিজেই এক অদ্ভুত পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি…ওকে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না…পাশে বসে ওর হাতটা ধরে বললাম…এই তিস্তা…কি হয়েছে…প্লিজ বলো…ওর কান্না যেন আরো বেড়ে গেল…ওর কাঁধে হাত দিয়ে নিজের দিকে টেনে নিলাম…এই…কাঁদছো কেন…আমি কি কিছু করেছি…প্লিজ বলো…
আমার কাঁধে মাথা রেখে ও ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে বলল…তুমি কেন বুঝতে চাইছো না…আমি তোমাকে কিছু বলতে চাইছি…
আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল…যা ভাবছিলাম…সত্যি…আমার আর কোনো রাস্তা নেই ওকে ফেরানোর…আমিও তো ওকে কাছে আসার সুযোগ দিয়েছি…আমি নিজেও এগিয়েছি…শুধু ওর দোষ দিয়ে তো লাভ নেই…কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে নিজের মনকে শক্ত করলাম…কাল কি হবে এখনই ভেবে লাভ নেই…ওর দিকে একটু ঘুরে দুহাতে মুখটা ধরে বললাম…আমার দিকে তাকাও…ও এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল তখোনো অল্প অল্প ফুঁফিয়ে উঠছিল…আঙ্গুল দিয়ে ওর দুচোখের জল মুছে দিতে দিতে বললাম…বলো…
আমার চোখে চোখ রেখে কান্না ভেজা গলায় বলল… আমি তোমাকে…
চুপ করে গেলে আস্তে করে বললাম… কি?
ভালোবাসি…
ওকে বুকে টেনে নিয়ে বললাম…জানি…
আমার বুকের ভেতরে ও কেঁপে উঠতে উঠতে কাঁধে মাথা রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরল… কেউ কোনো কথা বলছিলাম না সময় চলে যাচ্ছে একটু একটু করে…ভাবছিলাম…আমারও তো কিছু বলার আছে ওকে…আস্তে করে বললাম…আমারও তোমাকে কিছু বলার আছে…শুনবে তো?
কাঁধ থেকে মাথা তুলে আমার ঠোঁটে আঙ্গুল ছুঁইয়ে বলল…বলো…
আমিও একজনকে ভালোবাসি…বলতে পারিনি…
কাকে…
আমার সাথে বসে আছে…
জানি…
তাহলে কাঁদছিলে কেন…
তুমি তো আমাকে নিজের মুখে বলোনি…
তারপর আর কোনো কিছু বলার হয়তো ছিল না কারুরই…ও আমার বুকে মাথা রেখে দুহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে…আমার বুকের ভেতর থেকে কেউ যেন ওর কানে কানে বলছে…ভালো…বাসি…ভালো…বাসি…ভালো… বাসি, দুজনে দুজনের স্পর্শেই হয়তো বুঝে নিচ্ছিলাম না বলা কথা গু্লো… কত সময় কেটে গেছে জানি না…ওকে ডাকলাম…তিস্তা…
উঁ…
অনেক রাত হয়েছে…
হোক…
শোবে না?
আরো একটু থাকি না তোমার সাথে …

প্রথম সূর্যোদয়…#

মায়ের ঘরে ওকে পৌঁছে দিয়ে আমি শুতে গেলাম…কিছুতেই ঘুম আসছিল না…ভীষন একটা ভালো লাগার অনুভুতির সাথে সাথে কোথাও যেন একটা কাঁটা বুকে খোঁচা মারছিল…কাজটা কি ঠিক করলাম…ওকে বোঝানো যেত…তারপর ভাবলাম…ও তো শুধু একা চায়নি…আমিও তো চেয়েছি ওকে…কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না…খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল…পাশে তাকিয়ে দেখলাম বাবা ঘুমোচ্ছে…আস্তে আস্তে উঠে জানলা দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালাম…মনে মনে বললাম আমাদের জীবনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল তোমার সামনে…তোমার তো কোনো পরিবর্তন নেই…তুমি সেই আগের মতো…ঢেউ তুলছো আর ঢেউ ভাঙ্গছো…তুমি কি বুঝতে পারছো না…এই একটা রাতের ব্যাবধানে আমি কোথা থেকে কোথায় এলাম…আমি এখন আর শুধু আমার বাবা মায়ের আদরের বাবাই নই…আমি এখন আমার প্রেয়শী তিস্তারও…
আর একটু পরেই সুর্য উঠবে…আকাশে অল্প মেঘ থাকলেও পূর্ব দিকটা পরিস্কার…বাবাকে ডাকলাম…সূর্যোদয় দেখার জন্য…
ওদের কে ডেকেছিস?
না…তুমি ওঠো…ওদের কে ডেকে দিচ্ছি…
পাশের ঘরটাই মায়েদের…দরজায় আস্তে আস্তে টোকা মারলাম…
ভেবেছিলাম মা দরজা খুলবে…দরজাটা একটু খানি খুলে একটা মিষ্টি মুখ ঘুম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল…ওর মুখের রং যেন আস্তে আস্তে বদলে গিয়ে খুশীতে ভরে উঠল আমাকে দেখে…
মা ওঠেনি?
মাথা নেড়ে জানালো… না…
আশে পাশে এখন কেউ নেই…ডান হাতের তর্জনী নিজের ঠোঁটে ছুঁইয়ে নিয়ে ওর নরম ঠোঁটে আলতো ভাবে ছুঁইয়ে রেখে জিজ্ঞেস করলাম…ঘুম হয়েছে?
আবার মাথা নেড়ে জানালো…না…
কেন?
ফিসফিস করে বলল…বিচ্ছুটা খুব জ্বালিয়েছে…
ওর চোখে চোখ রেখে বললাম…আরো জ্বালাবে…
আমার আঙ্গুলটা ধরে আলতো করে কামড়ে দিয়ে বলল…জ্বালাক…বয়ে গেছে…
দেরি হয়ে যাচ্ছে…বাবা বেরিয়ে আসতে পারে ভেবে বললাম…মাকে ডেকে নিয়ে তাড়াতাড়ি লবিতে এসো…সান রাইজ দেখতে যাবো…
আঙ্গুলে একটু জোরে কামড়ে দিয়ে বলল…আমি তোমার সাথে একা একা যাবো না?
অল্প হেসে মাথা নেড়ে বললাম…চাঁদের সাথে সূর্যের ঝগড়া হয়ে যাবে…
কেন?
আমাদের দরজায় খুট করে আওয়াজ হল…বাবা বেরোচ্ছে মনে হয়…তাড়াতাড়ি করে বললাম…পরে বলব…এখন যাও…বাবা বেরোচ্ছে…
বাবা ক্যামেরাটা আমার হাতে দিয়ে বলল…মা উঠেছে?
তিস্তা ডেকে দিচ্ছে…লবিতে আসতে বলে দিয়েছি…
ঠিক আছে…তুই লবিতে যা…আমি অরুনকে ডেকে নিয়ে আসছি…

সবাই বিচে গিয়ে বোল্ডারের উপর বসলাম…মায়ের পাশে বসে ছোটো ছোটো লাল কাঁকড়া দেখে তিস্তা বাচ্চাদের মতো খুশীতে ডগমগ করছিল…দু চারটে ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে ওগুলো নিয়ে কি করবে যেন ভেবে পাচ্ছিল না…
মা…তোমার মেয়েকে বল…ঝিনুক আর কাঁকড়া সারাদিন থাকবে…সূর্য একবারই উঠবে…
আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বেঁকিয়ে ভেংচে দিয়ে মায়ের হাত ধরে জবাব দিলো…বম্মা…তোমার ছেলেকে বলে দাও…সকাল থেকেই আমার পেছনে না লাগতে…আমি কিছু বলিনা বলে এক্কেবারে পেয়ে বসেছে…
মা আমাকে মিষ্টি ধমক দিয়ে বলল…পাজ়ির পা ঝাড়া কোথাকার…আমার মেয়ের পেছনে না লেগে ছবি তোল…ঠিক সূর্য ওঠার মূহুর্তে ছবিটা তুলবি কিন্তু…
ক্যামেরাটা নিয়ে একটা পজিসান খুঁজে নিলাম যেখান থেকে ছবি ভালো আসবে…ক্যামেরা অন করে এপারচার…স্পিড এডজাস্ট করতে গিয়ে পারছিলাম না…তিস্তাকে ক্লোজ আপে নিয়ে এসে ওর দুষ্টুমি ভরা মিষ্টি মুখ থেকে চোখ সরানো যাচ্ছিল না…ও বোধহয় বুঝতে পেরেছিল…আমি ওকে ক্যমেরা দিয়ে দেখছি…মায়ের পাশে বসে থাকা অবস্থায় একটু পেছনে সরে গিয়ে কেউ যাতে বুঝতে না পারে…ঠোঁটে জিব বুলিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে ইসারায় চুমু খেলো আমাকে…তারপর চোখ দিয়ে ইশারা করলো বেশী সময় না নিতে…
হাত দিয়ে ইশারা করে সবাইকে পূর্ব দিকে তাকাতে বলে আমি রেডি হয়ে গেলাম…হঠাত সমুদ্রের মাঝ থেকে সূর্য যেন লাফ দিয়ে উঠল…আশেপাশের সবাই হইহই করে ওঠার সাথে সাথে ক্লিক করলাম…ক্যামেরা কি দেখছে জানি না…আমার দু চোখে তিস্তার উজ্জ্বল মুখ…তা কি ভোরের সূর্যের নরম আলোয় নাকি ভালোবাসার ছোঁয়ায় জানি না…ওর দুচোখে ভোরের সূর্য দেখার মুগ্ধতা…অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল ওকে…আরো কয়েকটা স্ন্যপ নিলাম…ফিরে গিয়ে বাবার হাতে ক্যমেরা দিয়ে মায়ের পাশে বসে পড়লাম…বাবা কয়েকটা ছবি তুলে দিল…
তিস্তা ওর বাপির সাথে আর বাবা মায়ের সাথে কম্বিনেশানে আরো কয়েকটা ছবি নেওয়া হলে…মা বললো…বাবাই…তিস্তার পাশে বসে ছবি তোল…আমার মনের কথাটা মা না বুঝেই বলে দেওয়াতে মনে মনে থ্যাঙ্কস জানালাম মাকে

ছবি তোলার পর সবাই এগিয়ে গিয়ে সমুদ্রের জল ছুঁলাম…তিস্তা ছোট্ট মেয়ের মতো জলে পা ভেজাতে ভেজাতে খুশিতে ফেটে পড়ছিল…ঢেউ গুলো ফিরে যাওয়ার সাথে সাথে ও এগিয়ে যাচ্ছিল…আবার যেই পরের ঢেউ আসছিল…দৌড়ে ফিরে আসছিল…একটু পরেই হাঁফিয়ে গিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার হাতটা ওর বুকের পাশে চেপে ধরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…কি সুন্দর… না…
চাপা স্বরে বললাম…সবাই কিন্তু বুঝে যাবে…
আমার দিকে তাকিয়ে জিব কেটে ফেলে বলল…ইস…একদম ভুলে গেছি… আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ওর বাপির কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালো…
 
[+] 2 users Like রাজা রাম's post
Like Reply
#15
প্রথম স্বপ্ন #


হোটেলে ফিরে মায়ের রুমে বসে চা খেয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিলাম…একটু ঘুম ঘুম ভাব আসছে…
তিস্তা মায়ের পাশে বসে আমাকে খোঁচা মেরে বলল…এই যে বিচ্ছু ছেলে…নিজের রুমে গিয়ে ঘুমোও…আমারও ঘুম পাচ্ছে…আমি যে কদিন আছি…বম্মা শুধু আমার…একদম ভাগ বসাতে আসবে না…
ইস…বম্মা শুধু আমার…কোথাকার কে ঠিক নেই…মায়ের ভাগ আমি ছাড়ছি না…বলে মাকে জড়িয়ে ধরলাম…
মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলল…ও তো কদিন পরেই চলে যাবে…
অগত্যা উঠে ওর দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙ্গিয়ে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম…বাবার বালিশটা বুকে জড়িয়ে ধরে তিস্তার কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না

তিস্তা আর আমি ঝাউ জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটছি…আশে পাশে কেউ নেই…সমুদ্রের গর্জন আর ঝাউ গাছের পাতাতে হাওয়া লেগে সোঁ সোঁ আওয়াজ তিস্তা আমার হাতটা ওর বুকের পাশে চেপে ধরে আমার পাশে পাশে হাঁটছে…আমার কাঁধে মাথা রেখে…ওর অবাধ্য চুল গুলো মাঝে মাঝে আমার মুখের উপরে চলে আসছে…দু এক বার সরিয়ে দিলাম…বার বার আসছে দেখে আর না সরিয়ে আমার গালে চেপে ধরে থাকলাম…খুব সুন্দর গন্ধ ওর চুলে…নাকের কাছে নিয়ে এসে শুঁকতে শুঁকতে জিজ্ঞেস করলাম…কি মাখো মাথায়…এত সুন্দর গন্ধ…উত্তর দিচ্ছে না দেখে চুলে একটু জোরে টান দিলাম…
উঃ মাগো…
ঘুম ভেঙ্গে গেল…তাকিয়ে দেখলাম…তিস্তা আমার পাশে বসে আছে…ওর এক গোছা চুল আমার হাতে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম…আমি স্বপ্ন দেখছিলাম নাকি…অন্য কিছু…
সত্যিই তুমি একটা বিচ্ছু…কি জোরে টানলে…লাগে না নাকি…
আমি তো স্বপ্ন দেখছিলাম…
ঘোড়ার ডিম দেখছিলে…আমার চুল হাতে নিয়ে শুঁকে কি একটা বিড় বিড় করে বললে…তারপর টান মারলে…
বিশ্বাস কর…স্বপ্ন দেখছিলাম…আমি আর তুমি হাঁটছি…তোমার চুল গুলো মাঝে মাঝে আমার মুখের উপর এসে পড়ছিল…
তাই?
হুঁ…
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে…এখন চলো…বম্মা খেতে ডাকছে…খেয়ে… আমাকে নিয়ে বাইরে যেতে বলেছে…

কে প্রথম কাছে এসেছি…কে প্রথম চেয়ে দেখেছি #

আমাদের ব্রেকফাস্ট করতে একটু দেরী হয়ে গেছে, ডাইনিং রুমে আমরা ছাড়া আর মাত্র কয়েকজন আছেন যারাও হয়তো আমাদের মতোই সকালে উঠে বেরিয়েছিলেন বলে খেতে আসতে দেরী হয়ে গেছে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আবার ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে এই বৃষ্টির মধ্যে বেরোনো যাবে না বলে আর ওঠারও তাড়া ছিল না আমাদের বেশ কিছুক্ষন নিজেদের ভেতরে গল্প করতে করতে দাদাই বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল…”বৃষ্টি থামলে তোরা একটু ঘুরে আয়”

বিচ্ছুটা দাদাই এর কথা শুনে জিজ্ঞেস করল…”তোমরা বেরোবে না”? দাদাই মাথা নেড়ে বলল...”নাঃ…তোরা ঘুরে আয়...আমরা ঘরে বসে একটু গল্প গুজব করি”
দাদাই যাবে না বলাতে বম্মার হাত ধরে বললাম…”ও বম্মা চলো না…ঘুরে আসি”
বম্মা হেসে বলল...”না রে...আমরা আর বেরোবো না... যা না...তোরা ঘুরে আয়”

একটু পরেই বৃষ্টি থেমে গেলে আমরা দুজনে বেরোলাম বাইরে বেরিয়েই সকালের মতো ওর গা ঘেঁষে হাতটা ধরে বুকের পাশে চেপে ধরতেই ও আমাকে মিষ্টি করে ধমকে দিয়ে বলল…”এই ছাড়ো…সবাই দেখতে পাচ্ছে”
ওর মিষ্টি বকুনি শুনে...”ইস…আবার ভুলে গেছি”…বলে ওর হাতটা ছেড়ে ইচ্ছে না থাকলেও একটু দুরে সরে গেলাম ও সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল... “বারবার ভুলে গেছি…তাই না…গন্ডগোল না পাকিয়ে ছাড়বে না দেখছি”…
- বললাম তো ভুলে গেছি…এই দেখো…কান ধরছি…আর করবো না…
আমাকে কান ধরতে দেখে ও হেসে ফেলে বলল…”থাক আর সবার সামনে কান ধরতে হবে না…চলো”


দুজনে পাশাপাশি আস্তে আস্তে হাঁটছি, হোটেল থেকে বেরিয়ে একটু দুরে চলে যাবার পর ও আমার কাঁধে হাত রেখে একেবারে কাছে টেনে নিয়ে গা ঘেষে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল…”কোথায় যাওয়া যায় বলো তো…বিচে বড্ড ভীড়”?
- আমি কি জানি…তুমি যেখানে নিয়ে যাবে…
- চলো…একটু দুরে একটা ঝাউ জঙ্গল আছে…খুব নিরিবিলি…বিশেষ কেউ যায়না ওদিকে…
- কিছু হবে না তো…নিরিবিলি জায়গা…খারাপ লোক থাকতে পারে…
- আমি আছি তো…ভরসা করতে পারছো না নাকি…
ওর কাঁধে মাথা রেখে আস্তে করে বললাম…”ভরসা করি বলেই তো তোমার বুকে নিজেকে সঁপে দিতে পেরেছি”

ও আমাকে ধরে থেকেই আস্তে করে আরো একটু নিজের সাথে চেপে ধরে হয়তো বোঝাতে চাইলো “তুমি আমাকে ভরসা করে কিছু ভুল করোনি”

ও আমার কোমরে হাত রেখে ধরে আছে আর আমি ওর কাঁধে মাথা রেখে আস্তে আস্তে হাঁটছি কেউ কেউ আমাদের ওইভাবে অন্তরঙ্গ অবস্থায় যেতে দেখে ফিরে ফিরে তাকালেই খুব রাগ হচ্ছিল, নিজের মনে মনে ভাবছিলাম…”আমি আমার বিচ্ছুর সাথে যা খুশি করবো…তোমাদের এত দেখার কি আছে”
কিছুটা যাবার পর দেখলাম সামনেই একটা ঝাউ জঙ্গল আর তার সামনের বিচে প্রায় কেউ নেই, কয়েকজন জেলে নৌকো আর জাল নিয়ে কি সব করছে আমরা আরো কিছুটা ঝাউ জঙ্গলের ভেতরে চলে গেলে, ও এদিক ওদিক দেখে বললো…”এসো...এখানেই বসি”

ও একটা ঝাউ গাছে হেলান দিয়ে বালির উপরে পা ছড়িয়ে বসে আমার হাত ধরে পাশে বসিয়ে দিল আমি ওর কাঁধে মাথা রেখে ওর একটা হাত বুকে চেপে নিয়ে বসে আছি, ভীষন ভালো লাগছে…কথা বললে যদি নিজের ভালোলাগার অনুভুতিটা হারিয়ে যায় এই ভয়ে চুপ করে আছি আমার মতোই ও চুপচাপ বসে আছে, কোনো কথা বলছে না… বোধহয় বুঝতে পেরেছিল আমার মনের ভাষা বা নিজেই হয়তো আমার মতোই নিজের ভালোলাগার অনুভুতিকে সম্পুর্ন ভাবে অনুভব করতে চাইছিল…দুজনে দুজনার স্পর্শে রোমাঞ্চিত হয়ে হারিয়ে যেতে যেতে জানি না কত সময় কেটে গেছে…ওর ডাকে মুখ তুলে তাকালাম...
- তিস্তা…
- উঁ…
- গান শোনাবে…
- উঁ হঁ…
- কেন?
- তুমি তো বলোনি…কেমন লেগেছিল সেদিন…বলার সময় কি এখোনো হয়নি?
- ভীষন ভালো লেগেছিল…
- আর কিছু মনে হয়নি?
- “তোমার অঝোর ধারায় ভিজে…আমি নতুন হলাম নিজে”…গানের এই কথা গুলোর ভেতর দিয়ে কি তুমি কিছু বোঝাতে চেয়েছিলে?
ওর প্রশ্নটা শুনে একটু সময় চুপ করে থেকে বললাম…”চেয়েছিলাম”...
- কি…
ওর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম...”আমার বিচ্ছুর সাথে দেখা হওয়ার আগের তিস্তা আর দেখা হওয়ার পরের তিস্তা যে এক ছিল না…বৃষ্টিতে ভিজে তিস্তা যদি নিজেকে নতুন করে না নেয়… বিচ্ছু তাকে কি করে নিজের করে নেবে বলো”? আমার উত্তর শুনে কিছু বুঝলো কিনা জানি না, ওকে চুপ করে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম…”বুঝেছো”? ও আস্তে করে বলল...”না”

আমি আগের মতোই ওর কাঁধে মাথা রেখে বললাম..”এখোনো সময় আসে নি বলার…পরে কোনোদিন বলব…বলো…কি গাইবো”...
- তুমি বলো…

ও আমার উপরেই ছেড়ে দিল দেখে ভাবছিলাম কি গাই, কিছুক্ষন ভেবে ভেবে কোনোটাই মনে ধরছিল না…তারপর আরো একটু ভেবে মনে হল...’আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলার আর শোনার পরে বোধহয়…’কে প্রথম কাছে এসেছি…কে প্রথম চেয়ে দেখেছি’ গাওয়া সবথেকে ভালো হবে… মনে মনে নিজেকে তৈরী করে নিয়ে চোখ বুজে নিচু গলায় গাইতে শুরু করলাম, চাই না ও ছাড়া এই পৃথিবীর আর কেউ শুনুক আমার গান…

______________________________
 
কে প্রথম কাছে এসেছি…কে প্রথম চেয়ে দেখেছি…
কিছুতেই পাই না ভেবে…কে প্রথম ভালোবেসেছি…
তুমি না… আমি…
ডেকেছি কে আগে…কে দিয়েছে সাড়া

কার অনুরাগে…কে গো দিশাহারা…
ডেকেছি কে আগে…কে দিয়েছে সাড়া

কার অনুরাগে…কে গো দিশাহারা…
কে প্রথম মন জাগানোর সুখে ভেসেছি…
তুমি না… আমি

কে প্রথম কাছে এসেছি…কে প্রথম চেয়ে দেখেছি…
কিছুতেই পাই না ভেবে…কে প্রথম ভালোবেসেছি…
তুমি না… আমি…
কে প্রথম কথা দিয়েছি…
দুজনার এ দুটি হৃদয়…একাকার করে নিয়েছি…
শুরু হল কবে এত চাওয়া পাওয়া…
একই অনুভবে… একই গান গাওয়া…
শুরু হল কবে এত চাওয়া পাওয়া…
একই অনুভবে… একই গান গাওয়া…
কে প্রথম মন হারানোর… স্রোতে ভেসেছি

তুমি না… আমি…
কে প্রথম কাছে এসেছি…কে প্রথম চেয়ে দেখেছি…
কিছুতেই পাই না ভেবে…কে প্রথম ভালোবেসেছি…
তুমি না… আমি…

গানটা গাওয়ার পর নিজেরই মনে হচ্ছিল এত মন প্রান দিয়ে বোধহয় এর আগে কোনোদিন গাইনি চুপ করে বসে থেকে অপেক্ষা করছিলাম ও কি বলে শোনার জন্য ও আরো কিছুক্ষন উদাস হয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…”তুমিই আগে কাছে এসেছো, আমি পারিনি আগে আসতে”

ওর কথাটা শুনে মনে হল...ওর কথাটা কিছুটা হলেও পুরোপুরি ঠিক নয়...ও আমাকে কাছে আসার সুযোগ না দিলে কি আমিও এত তাড়াতাড়ি বলতে পারতাম...”আমি তোমাকে ভালোবাসি”
নিজের বুকের ভেতরের কথা গুলো নিজের ভেতরেই আটকে রেখে আস্তে করে বললাম...”হয়তো আমরা দুজনেই একসাথে এসেছি”
______________________________
প্রথম চুম্বন #

কতক্ষন বসে আছি আমরা পাশাপাশি জানি না, চারিদিকে কেউ নেই, শুধু আমরা দুজন দুজনের উষ্ণ সান্নিদ্ধ অনুভব করছি হৃদয় দিয়ে ওর ডাকে যেন স্বপ্ন থেকে জেগে উঠে বললাম…”বলো”

ও আস্তে করে বলল...”আমার দিকে তাকাও”
মুখ তুলে ওর দিকে তাকালাম, ওর দু চোখে স্বপ্নের ছোঁয়া আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থেকে কিছু যেন বলতে চাইছে…জানি না কি বলতে চাইছে তাই আবার বললাম…”বলো”
ও স্বপ্নের ভেতর থেকে ফিরে এসে বলল… “চলো না…আরো একটু দুরে”
দুজনে পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটছি, ও ধীর স্থির…আমার কিশোরী মনটা ফিরে এসেছে অতীত থেকে ভীষন খুশীতে ছটপট করছি, নিজেই জানি না কি চাইছি …শুধু এইটুকু বুঝতে পারছি নিজের বুকের ভেতরে পারছি না ধরে রাখতে এই খুশী… আজ আমি আর একা নই…কেউ আমাকে তার মনটা চুরি করতে দিয়েছে খুশী হয়ে…আমি লুকিয়ে রাখবো সেই চুরি করা মনটা আমার বুকের গভীরে…আর কেউ জানবে না সেই খবর…শুধু ও ছাড়া ইস, শুধু কি আমি ওর মন চুরি করেছি? ওকেও তো দিয়েছি আমার এতদিনের সযত্নে আগলে রাখা মনটা...এত খুশীতে নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না...কখনও ওকে কাছে টেনে নিচ্ছি…কখোনো অকারনে নেচে উঠছি…কখনো বা গুনগুন করে কিছু গেয়ে উঠছি…নিজেই জানি না কি করতে চাইছি আর কেনই বা করতে চাইছি শুধু বুঝতে পারছি ও আমাকে অবাক হয়ে দেখছে…বোঝার চেষ্টা করছে...এ কোন তিস্তা...তিস্তার এই রুপ তো আগে দেখিনি...উচ্ছল হতে দেখেছি ওকে কিন্তু এ যেন অন্যরকমের উচ্ছলতা আরো কিছুটা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল ও একটা ঝাউ গাছে হেলান দিয়ে…আমার দিকে তাকিয়ে আছে হাসি মুখে ওর ওই পৃথিবী ভোলানো মন পাগল করা হাসিতে জানি না কি হ’ল আমার…ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম মন্ত্রমুগ্ধের মতো… কখন ওর চোখে চোখ রেখে আরো কাছে চলে গেছি জানিনা…দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে কোনো কিছু পাবার আশায় মুখ তুলে তাকিয়ে আছি… ওর প্রশস্ত বুকে আমার শরীরের আলতো ছোঁয়া…ওর দুহাত আমার কাঁধে…ও আস্তে আস্তে মুখ নামিয়ে নিয়ে এলো... কিছু পাওয়ার আশায় আমার চোখ বুজে আসছে আপনা হতে...আমি চাইলেও পারবো না আর তাকিয়ে থাকতে... ওর ঠোঁট স্পর্শ করল আমার তির তির করে কেঁপে যাওয়া ঠোঁট দুটোকে শিউরে উঠলাম জীবনের প্রথম ভালোবাসার চুম্বনে শরীর মন ভরে উঠল ওই আলতো ঠোঁটের ছোঁয়ায়, যাতে নেই সব কিছু তছনছ করে দেবার কোনো ইচ্ছে…শুধু আছে হৃদয় ভরানো মিষ্টি অনুভুতি নিজেকে সম্পুর্নভাবে সঁপে দিয়েছি ওর বুকে...চাই না আমি এই সুখের অনুভুতি হারিয়ে যাক
______________________________
প্রথম সমুদ্রে স্নান #

হোটেলে ফিরে এসে দেখলাম মায়ের রুমে সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে আমাদেরকে ফিরে আসতে দেখে মা বলল…আরে তোরা আবার এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলি কেন? কোথায় মেয়েটাকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসবি তা নয়, গেলি আর এলি…কি রে তিস্তা…বাবাই নিশ্চয় তোর পেছনে লেগেছিল আবার? তিস্তা মায়ের পাসে বসে পড়ে জড়িয়ে ধরে বলল…না গো বম্মা…তোমার বিচ্ছু ছেলেটা আজ একটু ভালো হয়ে গেছে মা কে বললাম…স্নান করতে যাবে তো নাকি…না হলে তো আর একটু পরেই আসা যেত…
- না না…তোরা যা…আমরা আজ কেউ বেরোচ্ছি না…দেখছিস না কেমন সুন্দর গল্প করছি…
- আচ্ছা…ফাজিল মেয়েটার দায় দায়িত্ব সব আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা বেশ মজা করা হচ্ছে…
বাবা পাশ থেকে হেসে বলল…আমরা তো এতদিন দায় দায়িত্ব নিয়েছি…বড় হয়েছো…দুদিন পর চাকরি বাকরি আর তারপর ঘর সংসার করতে হবে তো নাকি…এখন থেকে একটু আধটু অভ্যাস করাই ভালো তিস্তা পাশ থেকে ফুট কাটলো…ঠিক বলেছো দাদাই…এখন থেকে অভ্যেস না করলে পরে ঝামেলায় পড়ে যাবে
- দেখেছো মা…আমি কিছু বলেছি ওকে...এখন আমার পেছনে কেন লাগছে?
- মা কে বলে কিচ্ছু হবে না…শোধবোধ হয়ে গেল…তুমি আমাকে রান্না করে বর কে খাওয়াতে বলেছিলে না?
মা হেসে ফেলে বলল…আচ্ছা ঠিক আছে যা…তোরা স্নান করে আয়…ওকে একা ছাড়বি না কিন্তু…
আমি জামাকাপড় বদলে আসছি বলে বেরিয়ে আমাদের রুমে এলাম তিস্তা পাশে ছিল বলে সিগারেট খেতে পারিনি সর্টস টা পরে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম, একটু পরেই বেল বেজে উঠতে ফিরে গিয়ে দরজা খুলে দিলে তিস্তা ভেতরে এসে আমাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কিছুক্ষন দেখে বললো...খুব হ্যন্ডসাম লাগছে কিন্তু তোমাকে…আমার কিন্তু টেনশান বেড়ে যাচ্ছে ওর টেনশানের কারন বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে কেন জিজ্ঞেস করাতে হাসি মুখে বলল...চারদিকে এত মেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে…তাদের হাত থেকে তোমাকে সামলে রাখতে হবে তো ওর কাঁধে দুহাত রেখে ওকে একটু কাছে টেনে নিয়ে বললাম…সুন্দরী…তোমার চিন্তা করিবার কারন নাই…আমি সারা জীবন আমার তিস্তাতেই অবগাহন করিতে চাই…অন্য কোনো নদীতে নামিবার কোনো ইচ্ছাই আমার নাই তারপরেই গেয়ে উঠলাম…আমি তোমারে সঁপেছি প্রান…ওগো…নর্থ বেঙ্গল বাসিনী আমার মজা করে বলা কথা গুলো শুনে ও হেসে ফেলে বলল…তুমি না সত্যিই একটা পাজী…বম্মা ঠিকই বলে ওর চোখে চোখ রেখে আস্তে করে বললাম...এই পাজীটাকেই কিন্তু ভালোবেসেছো তিস্তা মুখটা একটু গোমড়া করে বলল…কি আর করা যাবে বলো…নিজেকে কত করে বোঝালাম…পাজিটার পাল্লায় পড়িস না…মন কিছুতেই বুঝলো না…তার নাকি তোমাকেই চাই আমার মতোই ওকেও মজা করতে দেখে আমি হেসে ফেলাতে তিস্তাও হেসে ফেলে বলল…এই…দেরী হয়ে যাবে…চলো হু...চলো বলাতে তিস্তা একটু থমকে গিয়ে চিন্তিত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল…স্নান তো করবো…কিন্তু কি পরে যাই বলোতো…সালোয়ার কামিজ ভিজে গেলে বড্ড গায়ে সেঁটে যায় একটু ভেবে বললাম…তুমি আমার একটা হাফ প্যান্ট আর টি সার্ট পরতে পারো…
- ধ্যাত…
- আরে…পরেই দেখো না…না ভালো লাগলে পরবে না…
আমার ব্যাগ থেকে ওকে কি কি দেওয়া যায় দেখে বের করে দিতে তিস্তা বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে বেরিয়ে এলো ওর টুকটুকে ফরসা শরীরে নেভি ব্লু হাফ প্যান্ট আর টি সার্ট ভীষন ভালো মানিয়েছে…এক দৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ছেলেদের পোষাক পরেও ওকে যেন আরো বেশি মেয়ে বলে মনে হচ্ছিল নিজেকে দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল...কেমন লাগছে…বাইরে যাওয়া যাবে তো? আমি মুগ্ধ চোখে ওকে দেখতে দেখতে আস্তে করে বললাম...একদম পারফেক্ট…তুমি যা পরো না কেন তোমাকে ভীষন মানিয়ে যায়…এরকম ড্রেস করলে আমি রোজ নতুন করে তোমার প্রেমে পড়তে রাজী আছি ও নিজেকে আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বলল…যাঃ…বাড়িয়ে বোলো না আয়নার ভেতর দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম…একটাই জিনিস চেক করার আছে আর…
- কি?
- ব্রেসিয়ার আর প্যান্টি কি লাইট কালারের?
আমার প্রশ্ন শুনে ও একটু লজ্জা পেয়ে গেল…কিছু বললো না দেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে থুতনি রেখে বললাম…বলো না…
- ডিপ ব্ল্যাক…
- পারফেক্ট…
তিস্তা আয়নার ভেতর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল…কেন…তোমার কি দেখতে ইচ্ছে করছে?
- উঁ হুঁ…আমি আমার দেখার জন্য বলছি না…টি সার্ট আর প্যান্ট ভিজে গেলে…লাইট কালারের ব্রেসিয়ার আর প্যান্টি সব্বাইকে বলে দেবে তারা কোথায় আছে…
- আচ্ছা…এইসব দেখা হয়… না…অসভ্য কোথাকার…
- কি করবো বলো…চোখ তো আর আমার সব কথা শুনে চলে না…তার যেদিকে ইচ্ছে সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে… আর…কেউ যদি নিজের থেকে দেখাতে চায়…আমি কি করতে পারি বলো…
মায়ের রুমে চাবি দিতে গিয়ে মাকে বললাম…মা দেখো তো…তিস্তাকে কেমন লাগছে…কিছুতেই পরতে চাইছিল না…ওকে নাকি বিচ্ছিরি লাগছে মা ওর দিকে তাকিয়ে বলল...এ মা… কে বলেছে বিচ্ছিরি লাগছে…খুব ভালো মানিয়েছে তোকে মা ভালো বলাতে ও খুব খুশী হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল…থ্যাঙ্ক ইউ বম্মা…
ও যেন এত সময় বাইরে বেরোবার অপেক্ষায় ছিল, হোটেল থেকে বেরিয়ে গিয়ে যথারীতি ও আবার আমার গায়ে সেঁটে গেছে কিছুটা এদিক ওদিক ঘুরে একটু দূরে চলে গেলাম যেখানে খুব বেশী লোকজনের ভীড় নেই ওর হাতটা ভালো ভাবে ধরে একটু একটু করে জলের দিকে এগোচ্ছিলাম…আমার ওকে ধরে থাকার হয়তো দরকার ছিল না, যে ভাবে আমাকে শক্ত করে ধরে গায়ের সাথে আটকে রেখেছে তাতে আলাদা হয়ে যাবার কোনো চান্স ছিল না সেটা যতটা না প্রথম সমুদ্রে নামার ভয় তার থেকে বেশী আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য ওকে নিয়ে খুব বেশী দূরে যাওয়া যাবে না, এই প্রথম সমুদ্রে নামছে…বিপদ হয়ে যেতে পারে যদিও ওর ভয় পাওয়ার কথা কিন্তু আমি ওর সাথে আছি ভেবে হয়তো ওর মনে কোনো চিন্তা নেই, ও জানে আমি কোনো অবস্থাতেই ওর কিছু হতে দেবো না একটা করে ঢেউ এসে আমাদেরকে ভেজাচ্ছে আর ও আমাকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে উদ্বেল হয়ে উঠছে…যেই ঢেউ ফিরে যাচ্ছে ওমনি আমাকে টেনে নিয়ে ঢেউ এর পেছন পেছন যাবার চেষ্টা করছে…আবার যেই ঢেউ আসছে আমাকে টেনে পেছনের দিকে চলে আসছে কিছুক্ষন পর হাঁফিয়ে গিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো…
একটু পিছিয়ে এসে ওকে পাশে বসিয়ে জলের মধ্যে বসলাম ও ওখানেই ঢেউ এর সাথে হুটোপুটি শুরু করে দিলে আমাকেও ওর সাথে তাল মেলাতে হচ্ছিল ভীষন ভালো লাগছিল ওকে এইভাবে খুশী হতে দেখে বেশ কিছুক্ষন স্নান করার পরে একটু একটু ঠান্ডা লাগছিল…ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে কাঁপতে বলল…শীত করছে…
- চলো এবারে উঠি...এর পরে কিন্তু আরো শীত করবে…
- করুক…আমার এখন যেতে ইচ্ছে করছে না…বেশী শীত করলে তুমি আছো তো…
- আমি কি করবো?
- কিচ্ছু করতে হবে না…শুধু আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে থাকবে…
মাথাটা একটু গরম হয়ে গেলে মুখ থেকে বেরিয়ে গেল…তোমার কি মাথা খারাপ…এখানে সবার সামনে কি করে তোমাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকবো ভাবছিলাম কি অবুঝ মেয়ে কে জানে, আমরা যেন বন্ধ ঘরের মধ্যে আছি যে ইচ্ছে হলেই ওকে বুকে জড়িয়ে ধরবো চারদিকে কিছু হলেও লোকজন রয়েছে, তার মাঝে কি ওকে বুকে জড়িয়ে ধরা ঠিক হবে? আমি তো চাইনা কেউ তা দেখে ভাবুক…ইস কি নির্লজ্জ মেয়ে আমার গলার আওয়াজে হয়তো বুঝতে পেরেছিল আমি রেগে গেছি…একটু যেন আহত হল মনে মনে, আমাকে ছেড়ে একটু দুরে সরে গিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল…চলো খুব খারাপ লাগলো ওর খারাপ লেগেছে বুঝে ভাবলাম ওই ভাবেই না বলে ওকে অন্যভাবে বোঝানো যেতে পারতো ওর হাতটা ধরে কাছে টানলাম…নিজেকে শক্ত করে রেখে বলল…ছাড়ো ওর এত খুশী আমি কিভাবে নষ্ট করলাম ভেবে নিজেকে অভিশাপ দিতে ইচ্চে করছিল মুখ নিচু করে ভাবছিলাম কি করি এখন…একটু পরে তাকিয়ে দেখলাম ও অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে যা করার আমাকেই করতে হবে ভেবে ওর পাশে সরে গিয়ে বললাম…তিস্তা…প্লিজ…আমার দিকে তাকাও ও আগের মতোই মুখ ঘুরিয়ে থাকলো, একটু যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর শরীরটা বুঝলাম না কাঁদছে নাকি শীত করছে ওর মনে মনে ভাবলাম…ধুস…যে দেখবে দেখুক…যা খুশী ভাবুক…ওর কাঁধে হাত দিয়ে জোর করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বুকে টেনে নিলাম, ও নিজেকে তখোনো শক্ত করে রেখেছে দেখে বললাম…তিস্তা…প্লিজ...আমি বুঝতে পারিনি ও দু হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে থাকলো দেখে আর কিছু না বলে ওকে স্বাভাবিক হতে সময় দিলাম অনেকটা সময় কেটে গেলেও কিছু বলছে না দেখে আস্তে আস্তে ডাকলাম…তিস্তা আমার ডাক শুনেও চুপ করে থাকলো দেখে বুঝলাম না সমুদ্রের আওয়াজের মাঝে শুনতে পেয়েছে কিনা…আবার ডাকলাম…তিস্তা এবারেও কোনো সাড়া নেই, শুধু একবার আমার কাঁধ থেকে মাথা তুলে আবার আগের মতো রাখলো আর তার সাথে সাথে আমার বুকে নিজেকে আরো একটু জোরে চেপে ধরে বোঝালো ও নিজের মধ্যেই থাকতে চাইছে একটু পরে আমার বুক থেকে নিজেকে আলাদা করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল…আর একটু থাকবো?
- কোথায়?
ও আমার বুকে আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিয়ে বোঝালো…আমার বুকে থাকতে চাইছে ও মনে মনে বললাম…তোমাকে আমি সারা জীবনের মতো এখানে আটকে রাখতে চাই আমার নীরবতাকে সম্মতি ধরে নিয়ে ও আবার নিজেকে আমার বুকের সাথে মিশিয়ে দিয়ে পরম নিশ্চিন্তে আমার কাঁধ মাথা রাখলো…
ফেরার সময় পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে আসছিলাম, আমার হাত ওর হাতের বাঁধনে ওর স্বভাব মতো বকবক করে যাচ্ছে এক নাগাড়ে যার সাথে তাল মেলানো খুব মুশকিল হচ্ছিল মনেই হচ্ছিল না একটু আগে ও মন খারাপ করে বসেছিল আমাকে হুঁ হাঁ করে উত্তর দিতে দেখে কি ভাবলো কে জানে…হটাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল…এই, তুমি কি এখোনো আমার উপরে রেগে আছো? কি মেয়ে কে জানে বাবা…কোথায় আমি ওকে বলব যে আমি বকেছিলাম বলে তুমি কিন্তু মনে রেখে দিওনা উল্টে ও আমাকে জিজ্ঞেস করছে আমি রেগে আছি কিনা আমার উত্তর দিতে একটু দেরী হচ্ছিল দেখে আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল…ঠিক আছে…বুঝেছি…তুমি এখোনো আমার উপর রেগে আছো…আমি না সত্যিই খুব বোকা…কখন কি করা উচিত বুঝি না…কি করবো…বলো…তোমাকে কাছে পেলে আমার কেমন যেন মাথার ভেতরে সব গোলমাল পাকিয়ে যায়…এই…প্লিজ…আর কক্ষোনো ভুল হবে না ওর কথা শুনে ভালো লাগার সাথে সাথে খুব হাসি পেয়ে গেল…মেয়েটা কি পাগল নাকি অন্য কিছু…আমি ওর হাতটা ধরে একটু গম্ভীর হয়ে বললাম…আর একটাও কথা নয়…লক্ষী মেয়ের মতো চলো…আমি কিন্তু খুব রেগে আছি…আর যদি একটা কথা বলেছো…আমি আরো রেগে যাবো আমার সাথে এগোতে এগোতে একটু যেন ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল…তুমি খুব রেগে আছো? আমি আর হাসি চাপতে পারলাম না…হো হো করে হেসে বললাম…তোমাকে নিয়ে আমি যে কি করবো বুঝতে পারছি না…কোথায় আমি তোমাকে বকেছি বলে নিজের খারাপ লাগছে…কি বলা যায় তোমাকে ভাবছিলাম…তুমি উল্টে ভাবছো…আমি রেগে আছি ও যেন বিশ্বাসই করতে পারছিল না আমি রাগ করে নেই আমার দিকে তাকিয়ে আবার কিছু একটা বলার চেষ্টা করতেই বললাম…আর কোনো কথা নয়…ভেজা জামাকাপড়ে বেশী সময় থেকে জ্বর এসে গেলে… কাল তো আর জলে নামতে পারবে না …তখন কিন্তু তোমার বম্মা আমার হাল খারাপ করে দেবে…আমার না হয় যা হবে দেখা যাবে…তুমি কিন্তু আমাকে জড়িয়ে ধরার সুযোগ পাবে না…সেটা কি ভালো হবে?

ঝিনুকের মালা নয়, এ যে মুক্তোর মালা #
[+] 2 users Like রাজা রাম's post
Like Reply
#16
দুপুরে খাওয়ার পর বম্মার পাশে শুয়ে ভাবছিলাম আমরা দুজনে ছাড়া আর তো কেউ বেরোচ্ছে না, যদিও মনে মনে চাইছি তাই কিন্তু সেটা কি ভালো দেখাচ্ছে…কি জানি বম্মাকে বললাম…বিকেলে কিন্তু আমরা সবাই বেরোবো…তোমরা না বেরোলে আমি বেরোবোই না বম্মা আমাকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করে বলল…কি হয়েছে তাতে…তোদের এখন ঘোরার বয়স…তোদের বয়সে আমরা অনেক ঘুরেছি…
- না…তোমরা না গেলে আমি যাবোই না…বসে বসে কাঁদবো…কিন্তু…
- আচ্ছা বাবা ঠিক আছে…আমরা বেরোবো…এখন একটু ঘুমিয়ে নে…কাল তো কত রাতে শুতে এলি…
- ঘুম আসছে না তো…
- তুই তাহলে টিভি দ্যাখ…আমি একটু শুয়ে নি…
বম্মা ঘুমোচ্ছে, কিছুক্ষন টিভি দেখে আর ভালো লাগলো না দেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম বিচে এখোনো ভীড়…কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে... কেউ স্নান করছে…কেউ বসে গল্প করছে…সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে ভাবছিলাম…বিচ্ছুটা কি করছে কে জানে…ঘুমোচ্ছে? নাকি আমার কথা ভাবছে…এখোনো কি ওর ভেতরে একটু আড়ষ্টতা আছে? হয়তো আমাকে পুরোপুরি নিজের করে নিতে পারছে না কোনো কারনে…না হলে কেন আমি জড়িয়ে ধরে থাকার কথা বলতে রেগে গেল অনেক কিছুই ভাবছি কিন্তু জানা নেই উত্তর কোনোটারই হোটেলের সামনে কয়েকটা ছেলে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘুরঘুর করছিল …মনে হল আমার দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইছে ভাবছিলাম কি বোকা ছেলে গুলো…এই ভাবে নিজেদেরকে মেয়েদের কাছে সস্তা করে ফেলে…ওরা কি বোঝে না সেটা? নিজের মনে হেসে যেন ওদেরকে বললাম…আমার বিচ্ছুকে দেখে তোমরা শিখতে পারো কিভাবে মেয়েদের মন জয় করা যায় নিজেকে একটুও ছোটো না করে…
চারটে বাজে, এবারে বেরোনো যাবে ভেবে বম্মাকে ডাকলাম বম্মা ঘুম থেকে উঠে বলল…ওদেরকে ডেকে নিয়ে আয়…চা খেয়ে বেরোবো বাপিকে ডাকতে গিয়ে দেখলাম দাদাইও ওখানে,বাপির সাথে আড্ডা দিচ্ছে তার মানে বিচ্ছুটা যদি না বেরিয়ে থাকে তাহলে একাই আছে দাদাই বললো…আমরা যাচ্ছি…তুই বাবাইকে ডেকে তোল…খুব ঘুমোচ্ছে…চাবিটা নিয়ে যা…ডাকলে যদি না শুনতে পায়

বাপির রুম থেকে বেরিয়ে প্রজাপ্রতির মতো মনে মনে উড়ে গিয়ে আস্তে করে দরজাটা খুলে ভেতরে গিয়ে খুব সাবধানে আটকে দিলাম যাতে আওয়াজ না হয় ও একটা বালিশ বুকে জড়িয়ে নিয়ে পাশ ফিরে ঘুমোচ্ছে দেখে মনে মনে বললাম…ওর বুকে তুমি কে হে…ওটা তো আমার জায়গা জানলার পর্দা টেনে দিয়ে ফিরে এলাম ওর দিকে তাকিয়ে থেকে কি করা যায় ভাবতে ভাবতে ওর মুখের খুব কাছে মুখ নিয়ে গেলাম, খুব ইচ্ছে করলো চুমু খেতে ওর পাশে আধশোয়া হয়ে ঠোট দুটো ভিজিয়ে নিয়ে ওর ঠোঁটে আলতো করে ছোঁয়ালাম, বুকের ভেতরটা ভীষন ভালো লাগায় ভরে উঠল, আপনা থেকে আমার দুচোখ বুজে এলো… চাইছিলাম না ও জেগে উঠুক কতক্ষন ওইভাবে ছিলাম জানি না…আমার গালে ওর আঙ্গুলের ছোঁয়া পেয়ে লজ্জায় নিজেকে সরিয়ে নিতে গেলাম ও আমার ঘাড়ের পেছনে হাত রেখে টেনে নিয়ে ঠোঁটে পরের পর চুমু খেয়ে যেতে থাকলো…জানি না কতগুলো চুমু খেয়ে তবে আমাকে ছাড়লো মিষ্টী করে বকুনি দিলাম…ডাকাত কোথাকার ও সোজা হয়ে শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দু দাত বাড়িয়ে দিলে আমি নিজেকে ওর বাহু বন্ধনে সঁপে দিলাম আমাকে বুকে চেপে ধরে আবার চুমু খেলো…তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো…এই তো সবে সুরু করেছি…এখোনো অনেক কিছু বাকি আছে ডাকাতি করার মৃদু স্বরে উত্তর দিলাম…আমার তো সব কিছুই তুমি নিয়েছো…আর যে কিছু নেই আমার…
- আছে…
- কি…
আমাকে জড়ানো অবস্থায় এক ঝটকায় ঘুরে গিয়ে আমাকে নিচে ফেলে আমার উপরে এসে বলল…জানতে চাও…আর কি আছে? ওর চোখে চোখ রেখে ঘাড় ঝঁকিয়ে বোঝালাম…হ্যাঁ ও দুষ্টুমির হাসি হেসে আমার বুকে মুখ ডুবিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো…একটু পরে মুখ তুলে নাভির উপরে চুমু খেল…একটার পর একটা চুমু খেতে খেতে আরো নিচে…উরু সন্ধি তে চুমু খেয়ে মুখ গুঁজে একবার আলতো করে কামড়ে দিয়ে আরো নিচে…পায়ে… পায়ের পাতায়…আঙ্গুলে নিজের ঠোঁঠ ছুঁইয়ে ফিরে এলো…আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম…সারা শরীর অবশ হয়ে গেছে…সাথে সাথে কিছু একটা পাওয়ার এক অদম্য ইচ্ছে মনের মধ্যে ও আমার আবেশ ভরা চোখে চোখ রেখে দুষ্টু হাসি ভরা মুখে বলল…বুঝছো…নাকি মুখে বলতে হবে? অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করলাম… এখন করবে…ডাকাতি? ও আমার গালে গাল ঠেকিয়ে বলল…উঁ হুঁ…এখনও যে সময় আসেনি…ডাকাতি করার আমাকে নিজের বুকের মিশিয়ে নিয়ে আরো অনেক অনেক চুমু খেয়ে বলল…চলো…দেরী হয়ে যাচ্ছে…

সবাই মিলে বেরোলাম বম্মার হাত ধরে হাঁটছি…দাদাই আর বাপি আমাদের সামনে…যথারীতি নিজেদের মধ্যেই গল্প করতে ব্যাস্ত আর আমার বিচ্ছু একটু দুরে একেবারে একলা হয়ে আমাদের পেছনে মাঝে মাঝে বম্মার চোখ এড়িয়ে পেছন ফিরে ওকে দেখছিলাম ওর দিকে তাকালেই দুষ্টু হাসি মুখে নিয়ে মায়ের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বোঝাবার চেষ্টা করছিল…আমার দিকে এখন ফিরে ফিরে তাকিয়ো না…মা বুঝে যাবে ওর বারন করা দেখে ভাবছিলাম…সে তো বুঝলাম…কিন্তু মন মানতে চাইছে না…তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে যে…
বেশ কিছুক্ষন বিচে ঘুরে বেড়ানোর পর দাদাই বম্মাকে বলল…চলো…কেনাকাটা কিছু করবে তো বিচের পাশেই প্রচুর দোকান খুব সুন্দর সুন্দর ঝিনুকের তৈরী জিনিষ…মনে হচ্ছিল সব গুলো কিনে নি বাপিকে বলছিলাম…বাপি দেখো…এইটা আমাদের ড্রয়িং রুমে…ওইটা তোমার বেড রুমে…আর এটা আমার বিছানার মাথার দিকের দেওয়ালে…খুব সুন্দর লাগবে...তাই না বাপি আমার সব কথাতেই হ্যাঁ হ্যাঁ করে যাচ্ছিল দেখে বাপিকে বললাম…বাপি…প্লিজ…বলো না…কেমন লাগবে…খালি… আমি যা বলছি…হ্যাঁ বলে যাচ্ছো বাপি হেসে ফেলল…আচ্ছা তুই আমাকে কি কিছু বলতে দিচ্ছিস…সবই তো নিজেই বলে যাচ্ছিস এক কাজ কর… তোর বম্মার সাথে কথা বলে দেখ কি নিবি…
আমি আর বম্মা এটা ওটা দেখে পছন্দ করছিলাম আমাদের জন্য আর সাথে সাথে বম্মাদের জন্যও দাদাই আর বাপি অফিস কলিগদের জন্য কিছু কিনলো আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে করে হঠাৎ খেয়াল হল…আরে বিচ্ছুটা কোথায়…ইস, আমার এক্কেবারে ওর কথা মনেই ছিল না নিজের উপর খুব রাগ হল ওকে ভুলে যাবার জন্য…নিজেকে বকলাম…সুন্দর সুন্দর ঘর সাজানোর জিনিষ দেখে তুই তোর ভালোবাসাকে ভুলে গেলি…এটা কি ঠিক হল? সাথে ওর ওপরেও একটু অভিমান হল…ও কেন এখানে নেই…আমাকে তো বলে গেল না…আসুক এক বার…খুব বকে দেবো…বকুনি দেবো ভেবেই আবার নিজেকে বললাম…খুব…না…এই তো কয়েকটা ঘন্টা হয়েছে…কেঁদে কেটে আমি তোমাকে ভালোবাসি বলা হয়েছে…আর এরই মধ্যে…বকতে ইচ্ছে করছে? আমাকে আনমনা দেখে বম্মা বলল…এই তিস্তা…তোর আবার কি হল রে…এই তো এখুনি…হইচই করছিলি…হটাৎ একেবারে চুপ? বাপি পাশ থেকে বলল…ও ওই রকমই…কখন যে কি মুডে থাকে বোঝা মুশকিল বম্মাকে বললাম…বন্ধুদের জন্য কি নেবো ভাবছিলাম…তোমরা তো জানো না…এক এক জনের পছন্দ এক এক রকম…ভেবে চিন্তে না নিলে মুখ হাঁড়ি করে বলবে…আমারটা ভালো নয় …ওরটা ভালো…মেয়েরা কেমন হিংসুটে হয়……জানো তো আমাদের কেনা কাটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে…উনি কোত্থেকে ঘুরে ফিরে এলেন…আমার দিকে একবার তাকিয়েই বম্মাকে জিজ্ঞেস করল…মা…তোমাদের হয়েছে…নাকি আরো কোথাও যাবে?
- তুই কোথায় গিয়েছিলি রে…কোথায় একটু সাহায্য করবি তা নয়…এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো হচ্ছে…
মায়ের কাছে বকুনি খেয়ে আমার দিকে তাকাতেই হেসে ফেললাম…ঠিক হয়েছে…মায়ের কাছে বকুনি খেয়েছো বেশ করেছি…আমি আমার মায়ের কাছে বকুনি খেয়েছি…তোমার কি …বলেই মাকে জড়িয়ে ধরে বলল…আরে…এই তো এসে গেছি…আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দাও…বয়ে নিয়ে যাচ্ছি…যার যেটা কাজ …সেটা করাই ভালো নাকি বম্মা রাগ ভুলে হেসে ফেলল…পাজ়ীর পা ঝাড়া ছেলে আমার…
রাতে খেয়ে সবে মাত্র উঠেছি, হটাৎ লোডশেডিং হয়ে গেল একটু পরেই জেনারেটারের আলো এসে গেল…হোটেলের ভেতরে আলো থাকলেও বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাইরের আলো গুলো নেভানো…আকাশে আর একটুও মেঘ নেই… চাঁদের আলোয় চারদিক ভেসে যাচ্ছে…কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে দাদাই আর বাপি টিভিতে খবর দেখবে বলে রুমে ফিরে গেল, খুব ইচ্ছে করছিল বাইরে গিয়ে বসি, বম্মাকে বললাম…চলো না…বাইরে গিয়ে বসি বম্মা ওকে ডেকে বলল…বাবাই…তিস্তাকে নিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আয় না…আমার ঘুরে ঘুরে পা ব্যাথা হয়ে গেছে…
কাল রাতের সেই জায়গাটায় গিয়ে বসলাম দুজনে ও পাশে বসে আছে আমার কাঁধে হাত রেখে আমাকে চুপচাপ থাকতে দেখে বলল…এই…কি হয়েছে…এত চুপচাপ?
- তুমি আমাকে না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলে…তুমি জানো…আমার ভীষন খারাপ লাগছিল…
- তোমাকে বললে তো যেতে দিতে না…
বুঝতে না পেরে ওর দিকে তাকালাম…ও আর কিছু না বলে পকেট থেকে একটা ছোটো ছোটো ঝিনুকের মালা বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল…তোমার জন্য এটা নিতে গিয়েছিলাম…তোমার আর আমার নাম লেখা আছে খুব খুশী হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম…তুমি পরিয়ে দাও আমি পেছনে হাত নিয়ে গিয়ে চুল তুলে ধরলে ও মালাটা পরিয়ে দিলো…ভীষন ভালো লাগছিল…কি সুন্দর দেখতে…তার থেকেও বড়…ও আমাকে দিয়েছে…শুধু তাই নয়, নিজের হাতে পরিয়েও দিয়েছে…হোক না সে ঝিনুকের, ওটাই আমার গলায় মুক্তোর মালার সমান
[+] 2 users Like রাজা রাম's post
Like Reply
#17
আমার রিজ সোনা #

আজ সকালে ব্রেকফাস্টের পর আমরা সবাই এক সাথে বেরিয়েছি। বিচে এদিক ওদিক কিছুক্ষন ঘুরে একটা জায়গায় বসে আছি। তিস্তা ঝিনুক কুড়োতে ব্যাস্ত, কি করবে কে জানে এত ঝিনুক দিয়ে। আমি একটু দুরে বোল্ডারের উপরে বসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম…কেমন ভাবে হটাৎ তিস্তা আমার জীবনে চলে এলো। এতদিন নিজের ইচ্ছে মতো পড়াশোনা, গিটার,বন্ধুবান্ধব আর মাঝে মাঝে কোথাও হঠাৎ হঠাৎ নিজের ইচ্ছেয় বেড়িয়ে আসা নিয়ে থেকেছি। সত্যি কথা বলতে কি কখোনো প্রেম নিয়ে সে ভাবে ভাবিনি। কোনো এক অজানা কারনে মা বাবাও আমার খামখেয়ালী স্বভাবের জন্য কিছু বলেনা। কিছু করতে চাইলে না করেনা কখোনা। হয়তো, খামখেয়ালী হলেও পড়াশোনা ঠিক মতো করি বলে বাকি গুলোকে মানিয়ে নিয়েছে। নিজেকে কেমন যেন অন্যরকম কিছু একটা ভাবতে ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে এতদিনে আমি একটা বাঁধনের মধ্যে আটকে গেলাম। যে বাঁধনে বাঁধা পড়লে দুঃখ হয় না বরং আনন্দে বুক ভরে যায়। ভাবতে ভালো লাগে আমার জন্য কেউ আছে যে শুধু আমাকে ভালোবাসে, আমাকে নিয়ে ভাবে। মায়ের ডাকে ফিরে তাকালাম…কি রে কি ভাবছিস বাবাই?
- কই? কিছু না তো…
- কি জানি বাবা… মা হয়েও তোকে বুঝতে পারলাম না আজ পর্যন্ত।
মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম… উমম…মা…ওরকম করে বলবে না… আমার খারাপ লাগে। মা আমাকে আদর করে বলল...আচ্ছা বাবা ঠিক আছে বলবো না। এই শোন, আমরা ফিরে যাচ্ছি। তোরা ঘুরে আয়।
- ঠিক আছে যাও…

তিস্তা আজ আমার দেওয়া ব্লু জিন্স আর ডিপ রেড টপ পরেছে। এমনিতেই ভীষন ছটপটে আর ওরকম একটা কম্বিনেশনের ড্রেসে ভীষন মিষ্টি দেখতে লাগছে ওকে। চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে বসে ছিলাম। মায়েরা কিছুদুর চলে যেতেই ও দৌড়ে এসে আমার পাশে বসে পড়ল। ঠিক যেন এত সময় ও অপেক্ষা করছিল আমাকে কখন একা পাবে। আর ঝিনুক কুড়োবে না? জিজ্ঞেস করাতে ঠোঁট টিপে হেসে মাথা নেড়ে বোঝালো আর ওর ঝিনুক চাই না। ভাবটা এমন যেন ও তো মুক্তো পেয়ে গেছে, আর কি হবে ঝিনুক খুঁজে। একটু সময় আমার পাশে বসে থেকে আমার হাতটা ধরে ঝাঁকিয়ে বলল…এই চলো না…এখানে ভালো লাগছে না…বড্ড ভীড়।

ও আমার কাঁধে মাথা রেখে এক হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে আছে, আমার এক হাত ওর কাঁধে, আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি। ও থেকে থেকে খুশীতে নেচে উঠছে। মাঝে মাঝে মুখ তুলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে, কখোনো বা নিজের মনে হাসছে। জিজ্ঞেস করলাম…কি এতো ভাবছো বলোতো?
- এই…তোমার কি নাম দেওয়া যায় বলোতো?
বুঝতে পারলাম না আমাকে আবার কেন নতুন নাম দিতে চাইছে। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল… বাবাই নামটা বেশ ভালো কিন্তু ওটা বম্মা আর দাদাই এর আদর করে ডাকার জন্য। সৃজন নামটা তো বাকি সবার জন্য। আমার জন্য একটা একেবারে নতুন কিছু চাই...বুঝলে?
- কেন?
- উমম…যে নামে শুধু আমি তোমাকে ডাকবো…আর কেউ জানবে না…
- বুঝলাম…
- এই…বলো না… সত্যিই আমার খুব ইচ্ছে করছে।
- তুমি বলো…কি নামে ডাকতে চাও।
- ঠিক আছে…চলো…হাঁটতে হাঁটতে ঠিক ভাবতে পারছি না… কাল যেখানে বসেছিলাম…ওখানে চলো… চুপচাপ বসে ভাবতে হবে।

আমার কোলে মাথা রেখে তিস্তা বালির উপরে শুয়ে আছে। ও আমার দুটো হাত বুকের উপর চেপে ধরে আছে। অনেক সময় হয়ে গেছে ও কোনো কথা বলেনি, চুপ করে চোখ বুজে ভাবছে কি নামে আমায় ডাকবে। আরো কিছুক্ষন পরে চোখ খুলে আমার দিকে ফিরে তাকালো মুখে মিষ্টি একটা হাসি নিয়ে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি কি বলে শোনার জন্য।
- এই…শোনো না…পেয়ে গেছি…
- তাই?
- হু…খুব মিষ্টী নামটা…
- কি?
- রি-জ… কি ছোটো আর মিষ্টি না?
- হুমম… পেলে কোত্থেকে?
- তুমি বলো…
- বুঝতে পারছি না…কোথাও শুনেছো হয়তো…
- উঁ হুঁ…
- তাহলে?
- তোমার নামের ভেতর থেকে বের করেছি… সৃজন এর মাঝখানটা তো রিজ…তাই না?
ওর কথা শুনে চিন্তা করলাম কিছুক্ষন। ঠিকই বলেছে... স এর সাথে রি কার, তারপর জ আর ন… ও রি আর জ কার টা নিয়েছে। বুঝতে পেরে হাসি মুখে বললাম… খুব পছন্দ?
- হুম… আর কেউ জানবে না কিন্তু…শুধু তুমি আর আমি…বুঝেছো?
- হুম বুঝেছি…

ও হাত বাড়িয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরতে চাইলে নিচু হলাম। ও দুহাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলল… আমার রিজ সোনা… শুধু আমার…আর কারুর নয়। বুকের ভেতরটা ভীষন ভালোলাগায় ভরে উঠল ওর কথা শুনে, চুপ করে ওর ওর গালে গাল ছুঁইয়ে রেখে বসে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল…আমি রিজ…শুধু আমার তিস্তার।

______________________________
 
আরো দুরে …চলো যাই…ঘুরে আসি #

দুপুরের পর থেকে মাঝে মাঝে তেড়ে বৃষ্টি আসছে, বেরোনো সম্ভব নয়। সবাই মিলে বসে গল্প হচ্ছে। আমার বিচ্ছুটা কিছুক্ষন আগে কেটে পড়েছে… সিগারেট খাবে হয়তো। বম্মার গা ঘেঁসে বসে আছি… কখন যে সবার ভেতর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ওর কথা ভাবতে শুরু করেছি নিজেই জানি না। বম্মা ডাকলো…এই তিস্তা…তিস্তা।
- হ্যাঁ বম্মা…
- কি রে… বাইরে যেতে পারছিস না বলে মন খারাপ?
- কই না তো…
- কই না তো কি? তোর মুখ বলছে… ভালো লাগছে না…যা ঘুরে আয়…
- কি করে যাবো? বৃষ্টি হচ্ছে তো…
- গাড়ীটা কি করতে আছে… যা বাবাইকে ডেকে নিয়ে আয়।

দু চার জন ছাতা নিয়ে বেরোলেও রাস্তা প্রায় ফাঁকা, এত বৃষ্টিতে কে আর ভিজতে চাইবে। উইন্ডস্ক্রিনে ওয়াইপার জ়ল টেনে সরাতে পারছে না। ও আস্তে আস্তে গাড়ী চালাতে চালাতে আমার দিকে হাত বাড়ালো। ওর দিকে একটু সরে গেলে আমার গালে আলতো আঙ্গুল ছুঁইয়ে বলল… বাইরে বৃষ্টি…ভেতরে শুধু আমরা দুজন… কি রোমান্টিক …তাই না? ওর হাতটা ধরে নিজের গালে চেপে রেখে একটু ভেবে বললাম… উঁ হুঁ। সামনের দিকটা দেখে নিয়ে ও আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল… উঁ হুঁ মানে?
- একটু একটু রোমান্টিক… কিন্তু আরো হতে পারতো…
- কি ভাবে?
- এই আজকালকার গাড়ী গুলো কি বিচ্ছিরি… কাছে আসা যায় না। যারা এগুলো ডিজাইন করে তারা প্রেমের কিচ্ছু বোঝে না… প্রেমের সাথে গাড়ীর কত নিবিড় সম্পর্ক… প্রেমিকের এক হাতে স্টিয়ারিং, আর এক হাত জড়িয়ে আছে প্রেমিকার কোমর বা কাঁধ…প্রেমিকা প্রেমিকের কাঁধে মাথা রেখে গান গাইছে… এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হোতো বলোতো… প্রেমিক একবার রাস্তা দেখে নিয়ে প্রেমিকার দিকে তাকাচ্ছে… কি রোমান্টিক …তাই না?
- হুমম বুঝলাম… বাবাকে বলবো এটাকে বেচে দিয়ে এম্ব্যাসাডার কিনতে…
ওর কথা শুনে হাসি পেয়ে গেল…জিজ্ঞেস করলাম… দাদাই নিশ্চয় জিজ্ঞেস করবে…কেন?
- তা তো করবেই… বলে দেবো…আমি আজকাল প্রেম করছি… আমার প্রেমিকার কোমর জড়িয়ে ধরে গাড়ী চালাতে হবে…না হলে বলেছে অন্য ছেলে দেখে নেবে।
- এই…আমি কখন বললাম অন্য ছেলে দেখবো?
- এখোনো বলোনি…পরে বলবে হয়তো, তাই ভাবছি আগে থেকেই কিছু করতে হবে…
- ইস… আমি কি তোমাদের গাড়ী আছে বলে তোমার সাথে প্রেম করছি নাকি?
- তা করনি… তবে…আচ্ছা দাঁড়াও, দেখছি কি করা যায়।
ভাবছিলাম ও আবার কি করবে এখন, দেখলাম গাড়ীটা আস্তে করে রাস্তার ধারে নিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। নিজের সিটটাকে একেবারে পেছনের দিকে করে দিয়ে বলল…এসো। আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম...কোথায়?
- আমার কাছে এসো…আমরা এখন আরো রোমান্টিক হবো।
উঠে গিয়ে প্রায় ওর কোলে বসে পড়লে পেছন থেকে থেকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে বুকে চেপে ধরে বলল… আস্তে আস্তে গাড়ী চালাচ্ছি… তুমি একটা রোমান্টিক গান গাও।
- কিছু হয়ে গেলে?
- কিচ্ছু হবে না…এই রাস্তাটা একেবারে ফাঁকা থাকে…
ওর বুকের ভেতরে নিজেকে রেখে ভীষন ভালো লাগছিল… ওর উষ্ণ সান্নিদ্ধ উপভোগ করতে করতে গাইছি………

আরো দুরে…চলো যাই…ঘুরে আসি
মন নিয়ে…কাছাকাছি…তুমি আছো…আমি আছি
পাশাপাশি…ঘুরে আসি
পায়ে পায়ে পথ চলা…
সেই কথা… হোক বলা…
সেই ধ্বনি…যেন শুনি…
ভালোবাসি…ভালোবাসি…
মন নিয়ে কাছাকাছি…তুমি আছো…আমি আছি
পাশাপশি…ঘুরে আসি…
রেখেছি এ হাত ধরে…এক হয়ে…অন্তরে…
সব শেষে তাই এসে…
ঝরে হাসি…ঝরে হাসি
মন নিয়ে কাছাকাছি…তুমি আছো…আমি আছি
পাশাপশি…ঘুরে আসি…

গানের মাঝে ওকে একবার বলেছিলাম এটা তো ডুয়েট, তুমিও গাইলে আরো ভালো লাগবে। ও হেসে ফেলে বলেছে...আমার হাত কথা বলে কিন্তু মুখ নয়। পুরো বেসুরো হয়ে যাবে, তুমি একাই গাও। গাওয়া হয়ে গেলে বললাম...এই এবারে যাই? ও আস্তে করে বলল...কেন? তোমার অসুবিধা হচ্ছে তো গাড়ী চালাতে বলাতে, গাড়ীটা থামিয়ে দিয়ে বলল...এবারে? ও যে আমাকে ছাড়তে চাইছে না বুঝতে পেরে চুপ করে চোখ বুজে ওর হাতের বাঁধনের ভেতরে থেকে ভীষন ভালো লাগছিল। ও আস্তে করে ডেকে বলল...এই তিস্তা দেখো, বাইরেটা কি সুন্দর লাগছে। মুখ তুলে তাকালাম...বিকেলেই সন্ধের মতো আবছা হয়ে এসেছে চারদিক। আমরা নিঃসঙ্গ এক রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি...একদিকে শুধু বালিয়াড়ি...আর একদিকে সমুদ্র। মাতাল ঝোড়ো হাওয়াতে ছোট ছোট ঝাউ গাছ গুলো হেলে পড়ছে একে অপরের উপরে। দূর থেকে ঠিক মতো দেখা না গেলেও বুঝতে পারছি সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে। ইচ্ছে করছিল...আমরা দুজনে হাত ধরাধরি করে ওই উত্তাল সমুদ্রের কাছে ছুটে চলে যাই...ওই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য দু ছোখ ভরে দেখি। ভাবার সাথে সাথে ভীষন ভয়ে বুক কেঁপে উঠল। ওই ভয়ঙ্কর যদি আমার কাছ থেকে আমার দুষ্টু সোনাকে ছিনিয়ে নিতে চায়...আমি তো পারবো না ওকে ফিরিয়ে আনতে। ভীষন ভয়ে মুখ লুকোলাম আমার সোনার বুকে। ও আমাকে ডাকলেও আমি মুখ লুকিয়ে পড়ে থাকলাম... বুকের ভেতরে কি হচ্ছে নিজেই জানিনা...মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছি। কখন ও নিজের সিট টাকে একেবারে শুইয়ে দিয়েছে জানি না। আমি ওর বুকের উপরে শুয়ে আছি। ও আমার পিঠে আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আস্তে করে বলছে...অনেক দূরে চলে এসেছি তাই না? আমার ভয় কেটে যাচ্ছে, আমার সোনা তো আমার বুকের ভেতরে...ওকে আমি জড়িয়ে ধরে আছি...এই পৃথিবীর কারুর ক্ষমতা নেই ওকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে ওকে আটকে রাখবো সারা জীবন এই ভাবে।

ভালোবাসা যে প্রতিদান চায় না #

দুজনে বসে আছি পাশাপাশি, ওর কাঁধে মাথা রেখে…আমার হাতটা নিয়ে ও খেলা করতে করতে বললো…এই তিস্তা…চলো না…সমুদ্রের জল ছুঁয়ে আসি, খুব ইচ্ছে করছে।
- উমম কেন?
- কি মনে হচ্ছে জানো…এই জল ছুঁলে তোমাকেও ছুঁতে পারবো…
ওর কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম…মানে? ও যেন নিজের মনেই বললো কথা গুলো...তিস্তা... হয়তো এখানে নয়... অনেক দূরে…প্রথমে বম্ভপুত্র…তারপর মেঘনা হয়ে সমুদ্রে মিশে যাচ্ছে… মন বলছে…তবুও তিস্তার জল এখানেও আছে। আমি দুষ্টূমি করে বললাম… তাই? যাও তাহলে… ওই তিস্তাকে ছুঁয়ে এসো…আমি কে? মনে মনে ভাবলাম…আমার সাগর তো তুমিই, তোমার বুকের মাঝেই আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাই। আর কিছু না বলে দুষ্টুমি করে উঠে গেলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল…কি হ’ল, উঠে গেলে?
- বারে, তুমি আমার সতীনের কথা বলবে…আর আমাকে তাই শুনতে হবে?

ও উঠে এসে আমাকে ধরতে চাইলো… দৌড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলাম, দুজনে দুজনের চোখে চোখ রেখে হাসছি…চাইছি ও আমাকে ধরুক কিন্তু সহজ়ে কেন ধরা দেব? এদিক ওদিক করতে করতে বালিতে পা আটকে পড়ে গেলাম বা হয়তো ইচ্ছে করেই করলাম যাতে ও আমাকে ধরতে পারে। পড়ে যাবার মুহুর্তে ও আমাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল। আমি বালির উপরে …ও টাল সামলাতে না পেরে আমার বুকের উপরে এসে পড়ল। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল… খুব হিংসে… তাই না? ওর চোখে চোখ রেখে দুষ্টুমি ভরা হাসিতে বললাম...হুম…তাই। চাইছিলাম ও আমাকে অনেক অনেক আদর করুক, কোথায় আছি ভাবার দরকার কি। ভাবছি আমরা দুজনে ছাড়া কেউ নেই কোথাও। কখন ও আমাকে ছেড়ে উঠে গেছে বুঝতে পারিনি…

ওর ডাকে চোখ খুলে তাকালাম… স্বপ্নে ভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম…এই…এসোনা… বালি নিয়ে খেলতে ইচ্ছে করছে। ও পারলো না আমার ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে। দুজনে দুজনের গায়ে বালি টেনে টেনে চাপা দেবার ভান করছি… হাসি…খেলায় কতক্ষন কেটে গেছে জানি না। সারা গায়ে বালি ভর্তি হয়ে গেছে দেখে বললাম …ইস কি করেছো বলোতো… খুব কিচ কিচ করছে ভেতরটা।ও হাসি মুখে বলল…ফিরে চলো…বের করে দেবো।
- ইস…বের করে দেবো…কি শখ… একটা চুমুও তো খেতে পারতে?
- খেয়েছি তো…
- ইস…খেয়েছি তো…কখন?
- ওই তুমি যখন চোখ বুজে ছিলে…আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম… তোমার ঠোঁট তির তির করে কাঁপছিল… তখন…
- মিথ্যুক কোথাকার…আমি কিছুই বুঝতে পারিনি…
- মনে মনে চুমু খেয়েছি…তাই হয়তো বুঝতে পারো নি…
- তাই?
- হু
- এই…একটা কথা জিজ্ঞেস কোরবো…কিছু মনে করবে না তো…
- ভালোবাসার মধ্যে কোনো কিন্তুর জায়গা নেই…তিস্তা…
- তুমি কি মেয়েদের শরীরের ব্যাপারে একটু উদাসীন?
- কেন বলোতো?
- আমি তোমার এত কাছাকাছি আছি, তোমাকে জড়িয়ে ধরছি কিন্তু তুমি তো কখোনো আমাকে সেই ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা কোরছো না…

ও আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…আমিও তো তোমাকে কতবার জড়িয়ে ধরলাম। ওর চোখ থেকে নিজেকে সরিয়ে না নিয়ে আস্তে করে বললাম...আমি অন্য কিছু বলতে চাইছি। ও হেসে ফেলে বলল…একেবারেই নয় তিস্তা…আর পাঁচটা ছেলের মতো আমারও মেয়েদের শরীরের প্রতি একই রকম আকর্ষন আছে…আমি তোমাকে ভালোবাসি তিস্তা…ভালোবাসার মধ্যে একে অপরকে বোঝার একটা ব্যাপার থাকে…যেটার উপরে সারাটা জীবন নির্ভর করে…আমরা সবে মাত্র একে অপরকে বুঝতে… চিনতে শুরু করেছি…আমার বাবা মা বা তোমার বাপি আমাদেরকে বিশ্বাস করেন…আমি যদি তোমাকে নিয়ে বেশ কিছুটা সময়ের জন্য কোথাও নিয়ে যেতে চাই…এক কথায় রাজী হয়ে যাবেন…আমি জানি…সেই সুযোগটা নিয়ে আমি যদি তোমার শরীরটা চাই…তুমিও না বলবে না… কিন্তু…এখনই যদি মনের আগে শরীরটা চলে আসে তাহলে আমাদের সম্পর্কের ভীত শক্ত নাও হতে পারে…তুমি কি চাও আমি জানি না কিন্তু আমি চাইনা আমার জীবনের প্রথম প্রেম কখোনো হারিয়ে যাক। ভীষন কান্না পেয়ে গেল ওর কথাগুলো শুনে…ও আমাকে এতো ভালোবাসে… সত্যিই তো ও চাইলে আমি না করতে পারতাম না…কিন্তু এটাও ঠিক যে, আমার কিছুটা হলেও ওকে খুব কাছে পাওয়ার ইচ্ছে হলেও মন থেকে কখোনো মানতে ইচ্ছে হয়না শুধু শরীর নিয়ে ভাবতে…ওর বুকে মাথা রেখে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদলাম…ও কিছু না বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। আমি মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু যেন বলতে চাইলাম…আমার ঠোঁট দুটো তির তির করে কেঁপে কেঁপে উঠছিল। ও নরম স্বরে জিজ্ঞেস করল…কিছু বলবে? কান্না ভেজা গলায় বললাম…তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো…জানি না আমি তোমার ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারবো কিনা।
ও আমাকে আরো নীবিড় ভাবে বুকে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল...ভালোবাসা যে কখোনো প্রতিদান চায় না তিস্তা…আমি তোমাকে সারা জীবন এই ভাবেই ভালোবেসে যেতে চাই… (ক্রমশ)
[+] 1 user Likes রাজা রাম's post
Like Reply
#18
বিরহ – তিস্তা #

আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেছে ফিরে এসেছি কোলকাতা থেকে। কটা দিন যেন স্বপ্নের ভেতরে ছিলাম, কিভাবে যে সময় কেটে যেত বুঝতেই পারতাম না। বাড়ী ফিরে এসে যেন কিছুতেই সময় কাটতে চাইছে না। মন একেবারেই ভালো নেই, যতই ইচ্ছে হোক না কেন যখন তখন আমার বিচ্ছুর সাথে কথা বলতে পারি না… ওনার আবার মোবাইল ফোন নেই, ল্যান্ড লাইনে ফোন করে তো আর ঠিক মতো কথা বলা যায় না, বম্মা আছে…দাদাই আছে। কেমন বিদ্ঘুটে ছেলে কে জানে বাবা? মোবাইল ফোন নাকি নিজের স্বাধীনতা রাখতে দেয় না, তাই উনি মোবাইল ব্যাবহার করেন না। আজকালকার দিনে যে এই রকম ছেলে আছে তা হয়তো ওকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। ওই, যখন ও নিজে থেকে আমাকে ফোন করে তখনই যা একটু কথা হয়… তাতে কি আর মন ভরে? তার উপরে আবার কাল ওর সাথে ছোট করে ঝগড়া হয়ে গেছে। এমনিতেই মন ভালো ছিল না…আমি ওকে এবারে একটা মোবাইল নেবার কথা বলতে কিছুতেই শুনতে চাইছিল না। এখন হঠাৎ মোবাইল নিলে মা বাবা কি ভাববে? বললাম…লুকিয়ে রাখবে…তাও শুনলো না। আমিও অভিমান করে বলে দিয়েছি… থাক, তোমাকে আর কষ্ট করে আমার সাথে কথা বলতে হবে না। কি দরকার বুথ থেকে এত ঝামেলা করে ফোন করার, আমার কিচ্ছু চাই না। ওকেও দেখলাম, আমি কথা গুলো বলার পর ফোনটা কেটে দিল। ভীষন কান্না পেয়ে গিয়েছিল, ফোনটা রেখে দিয়ে চুপ করে বসেছিলাম। কিছু ভালো লাগছিল না। বাপি দু একবার জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে? বাপিকে বলেছি… না কিছু হয়নি, শরীর ভালো নেই। বাপিকে শরীর খারাপ বলেও আর এক ঝামেলা… বাপি বলল…চল, ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসি। এমনিতে ভালো লাগছিল না তার উপরে বাপির জোরাজুরি… বাপির সাথে তো আর খারাপ ব্যাবহার করতে পারিনা…তাই কোনো রকমে বুঝিয়ে থামালাম।

রাতে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি, কিছুতেই ঘুম আসছে না। খুব বিরক্ত লাগছে… ভাবছি… ইস, কি দরকার ছিল ওকে মোবাইল কেনার জন্য জোর করার। যেটুকু পাচ্ছিলাম… সেটাও আর হবে না হয়তো। আজ সারাদিন খুব আশা করে বসেছিলাম ও একবার হলেও ফোন করবে কিন্তু করলো না। নিশ্চয় ওর খুব খারাপ লেগেছে আমার কথাগুলো, না হলে ও এরকম করতোই না। ভাবছি, কাল যা হবে হোক সকালে উঠে আগে ওকে ফোন করবো। তারপরেই মনে হল…সে তো না হয় ফোন করবো…কিন্তু সকাল বেলাতেই ফোন করলে বম্মা আবার ধরে ফেলবে না তো? ধুস, কি যে করি…মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ড্রয়িং রুমের দেওয়াল ঘড়ীটা টুং টাং করে বেজে উঠল…রাত দুটো বাজে, বালিশের পাশে আমার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলে চমকে উঠলাম। এত রাতে কে ফোন করল… তাড়াতাড়ি ফোনটা হাতে নিয়ে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। ওদের ল্যান্ড লাইন থেকে ফোনটা এসেছে। ও কি এত রাতে ফোন করবে? নাঃ…ও তো রেগে আছে। তাহলে কি কারুর কিছু বিপদ হয়েছে… ভাবতে ভাবতে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম… অজানা এক ভয়ে বুকের ভেতরটা ভীষন ভাবে ধুকপুক করছে। আস্তে করে হ্যালো বললাম… ওদিক থেকে ফিস ফিস করে কেউ বলল… এই তিস্তা, খুব রাগ করে আছো? নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না… ও ফোন করেছে এত রাতে। কিছুক্ষন কথাই বলতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল আনন্দে কেঁদে ফেলি। ও আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল… এই তিস্তা, প্লিজ… কথা বলো। আস্তে করে বললাম… বলো।
- খুব রেগে আছো?
- জানি না
- মন খারাপ?
- জানি না
- ঘুমিয়ে পড়েছিলে?
- জানি না
- এই, তিস্তা… প্লি-জ
- ব’লো
- তুমি তো শুধু জানি না বলে যাচ্ছো
- আর বলবো না
- এই, রেগে আছো?
- না
- মন খারাপ?
- হু
- ঘুমিয়ে পড়েছিলে?
- না
- আমিও ঘুমোতে পারছিলাম না
- কেন?
- মন খারাপ
- কেন?
- তোমার সাথে ঝগড়া করলাম…তাই…
- আচ্ছা
- আর কোরবো না
- কেন?
- তোমার খারাপ লাগবে
- লাগুক
- তাই?
- হু
- আচ্ছা… কোরবো
- ভালো
- কি ভালো?
- তুমি
- আচ্ছা
- কি আচ্ছা?
- তুমিও ভালো
- না
- কেন?
- তোমার সাথে ঝগড়া করেছি…তাই
- বেশ করেছো…আবার করবে
- আচ্ছা
- কি করছো?
- তোমার সাথে কথা বলছি
- ভালো
- তুমি কি করছো?
- তোমার সাথে কথা বলছি
- বম্মা উঠে পড়লে?
- লুকিয়ে পড়বো
- কোথায়?
- জানি না
- ভালো
- শুয়ে পড়ো এবারে
- কেন?
- ঘূমোবে না নাকি?
- না
- আচ্ছা
- তুমি যাও ঘুমোতে
- যাবো না
- কেন?
- তোমার সাথে কথা বলবো
- আচ্ছা
ফিস ফিস করে দুজনে কথা বলে যাচ্ছি… বুকের ভেতরটা খুশীতে ভরে যাচ্ছে…জানি…এইসব কথার কোনো মানে নেই তবুও ইচ্ছে করছিল সারারাত ওর সাথে এইভাবে কোনো মানে ছাড়াই কথা বলে যাই। আমাদের আবোল তাবোল কথার মাঝে মনে হ’ল ও উঃ করে উঠল… জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। আস্তে করে বলল…একটা মেয়ে পায়ে বসে রক্ত চুষে খাচ্ছে। খুব খারাপ লাগলো…আমি আরাম করে বিছানায় শুয়ে আছি আর ও মশার কামড় খাচ্ছে। বললাম… লক্ষীটি এবারে রাখো… কিছুতেই রাখতে চাইছিল না দেখে বললাম… আমিও কিন্তু তাহলে বাইরের বারান্দায় চলে যাবো…ওখানে জানো তো এখন কোটি কোটি মশা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তোমার তিস্তাকে একেবারে খেয়েই ফেলবে। ফোনেই দুজন দুজনকে চুমু দিলাম… ও চলে যাবার পর কোল বালিশটা বুকে চেপে বুক ভরা খুশী নিয়ে নিজের মনেই ভাবছি…হাসছি… ও শুধু বিচ্ছু নয়…পাগলও… না হলে এত রাতে কেউ এক ঘন্টা ধরে ওই ভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলে… বুক ভরা সুখ নিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। সকালে বাপির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো… কি রে মা… শরীর কেমন? বাপির হাতটা বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম… আমার আবার কি হয়েছিল? বাপি বেশ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…কাল বললি যে শরীর খারাপ। মনে মনে ভাবছি, ইস…একেবারে ভুলে গেছি…কি বলি এখন বাপিকে… ভেবে বললাম…ও হ্যাঁ… ভুলে গেছিলাম…এখন ঠিক আছি। বাপি কি বুঝলো কে জানে…আমাকে আদর করে বলল… জানি তো…আমার মেয়েটা একেবারে পাগল। আমিও ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম…আমি কিন্তু এবারে কাঁদবো। বাপি আমাকে আদর করে উঠে গেলে ভাবছিলাম… উঃ… প্রেম করা কি ঝামেলার রে বাবা। কত কিছু মাথায় রাখতে হয়। আর একটু হলেই ধরা পড়ে যাচ্ছিলাম বাপির কাছে।

ওর সাথে ফোনেই গল্প, ঝগড়া, মান অভিমান করে দিন গুলো কেটে যাচ্ছিল। রাতে শুয়ে শুয়ে ওর কথা ভাবি… ও আমার কথা ভাবে। যেদিন আমাদের মান অভিমান হয় সেদিন মাঝ রাতটা কাটে আমাদের ফোনে, এক এক দিন দু ঘন্টার উপরেও কথা বলি আমরা, ও নাকি আজকাল হাতে পায়ে ক্রীম লাগিয়ে নেয় মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য… পরে যখন মনে পড়ে যায়…মনে মনে হাসি, মশা নয় আমার হাত থেকে বাঁচার জন্য হয়তো। তারপরেই ভাবি… ইস, আমার জন্য নাকি শুধু…ও আমাদের ভালোবাসার জন্যই তো ফোন করে। ও যদি ফোন না করে তাহলে না পারবে ও ঘুমোতে, আমি তো পারবোই না।
কাউকেই বলিনি আমার রিজ সোনার কথা, এমন কি আমার খুব কাছের বন্ধুদেরও নয়। ও যে একেবারে আমার নিজের, ইস…আমি ছাড়া আর কেউ কেন জানবে ওর কথা। তবে ওরা যে সন্দেহ করে না তা নয়, আমি নাকি কোলকাতা থেকে ফিরে এসে অনেকটাই পালটে গেছি… কখন কি ভাবি কখন কি করি এই স্বভাবটা আগেও ছিল…কিন্তু তা নাকি এখন মাঝে মাঝে পাগলামীর পর্যায়ে চলে যায়। আমি নাকি একা একা বসে বসে কি সব ভাবি… নিজের মনেই হাসি… বিড় বিড় করে কারুর সাথে কথা বলি। আমাকে অনেক বারই ওরা চেপে ধরেছে স্বীকার করানোর জন্য যে আমি নাকি প্রেমে পড়েছি। ওদেরকে হেসে উড়িয়ে দিলে কি হবে ওরা আমার পেছন ছাড়তে রাজী নয়। আমিও এখন বুঝে গেছি ওদেরকে কি করে বুদ্ধু বানানো যায়।

যেদিন বিচ্ছুটা ফোন করেনা সেদিন মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়…সারাদিন কেটে যায়…এই বুঝি ফোন করলো ভেবে ভেবে। বৃথা অপেক্ষা করে করে সন্ধের সময় বম্মাকে ফোন করি… সেই রকম একটা দিন… ফোন করে বললাম…বম্মা, কেমন আছো?
- আরে তিস্তা, তোদের কথাই ভাবছিলাম।
- কেন গো?
- কেন গো মানে? আমার মেয়েটা কেমন আছে…তার বাপি কেমন আছে জানতে হবে না? আজ সাত আট দিন হয়ে গেল কথা হয়নি।
- কিছু মনে কোরো না গো বম্মা… পড়ার চাপ
- জানি রে…
মনে মনে ভাবছি, বম্মা বিচ্ছুটার কথা কখন তুলবে। ভুলে গেলে তো আমাকেই ঘুরিরে ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে। আরো কিছু কথা হ’ল বম্মার সাথে, বিচ্ছুটার কথা উঠলো না দেখে নিজেই বললাম… বম্মা, তোমার বিচ্ছু ছেলের খবর কি গো?
- আর বলিস না, সেই কোন সকালে বেরিয়েছে…খেতেও আসেনি
- হুম, দেখো গিয়ে… কারুর সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে.
- না রে…ওর কোন বন্ধুর বাবা নাকি অসুস্থ, হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
মনটা খুশীতে ভরে উঠল… ইস, আমার বিচ্ছু কি আর এমনি এমনি ফোন করতে পারেনি? ব্যাস্ত আছে সারাদিন, কি করে ফোন করবে? আজ রাতে নিশ্চয় ওর সাথে কথা হবে ভেবে আরো ভালো লাগলো। বম্মার সাথে আরো কিছুক্ষন বকবক করে তারপরে বাপির হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে কেটে পড়েছি…আমি এখন ঘরের আলো নিভিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে আমার রিজ সোনার কথা ভাববো...

______________________________
বিরহ – রিজ #

প্রায় এক বছরের মতো হয়ে গেছে তিস্তা ফিরে যাবার পর। আজ আর কোথাও বেরোইনি…চুপ করে বসে জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। মনটা কিছুক্ষন একেবারে ফাঁকা ছিল, জানি না কখন তিস্তা আমার মনের ভেতরে এসে উঁকি দিয়ে ফেলেছে। এতদিন হয়ে গেছে, আর ভালো লাগছে না, একবার যদি কাছে পেতাম ওকে। তিস্তাও বেশ কয়েকবার মন খারাপ করে বলেছে… আমি না হয় ইচ্ছে হলেও যেতে পারবো না… তুমি তো একবার এখানে আসতে পারো। কি করে ওকে বোঝাই… আমারও ইচ্ছে করে কিন্তু যাবো যাবো ভেবেও পিছিয়ে এসেছি…ওরা ছোটো শহরে থাকে…বলতে গেলে সবাই সবাইকে চেনে… আমাকে ওর সাথে দেখা করতে গেলে ওদের বাড়ী ছাড়া অন্য কোথাও সম্ভব নয়। হঠাৎ ওদের বাড়ী চলে গেলে অন্যরকম দেখাবে ভেবে আর এগোতে পারিনি। মা নীচ থেকে ডাকছে মনে হ’ল। নীচে গেলাম। মা জিজ্ঞেস করল…কি রে বাবাই…কি হয়েছে তোর?
- কেন মা?
- কখন থেকে ডাকছি… কি এত ভাবিস আজকাল?
- কই কিছু না তো… এমনি...
- আমি তোর মা বাবাই… আমি তোকে পুরোটা হয়তো বুঝি না ঠিকই… কিন্তু…কিছুটা হলেও তো বুঝি।
- না গো মা…এমনিই...
- আচ্ছা…ঠিক আছে…শোন… ভাবছি…এবারের পুজোয় তিস্তাদেরকে আসতে বললে হয়...

ভীষন ভালো লাগলো কথাটা শুনে, মনটা খুশীতে নেচে উঠতে চাইলো। নিজের অজান্তেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছি কখন নিজেই জানি না। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে মা বলল… কি রে, চুপ করে আছিস?
- ও হ্যাঁ… বলো…
- তুই থাকবি তো পূজোয়?
- কেন?
- বললাম না…তিস্তাদেরকে আসতে বলবো...
- হু, বলে দাও… ভালোই তো...
- আরে, মেয়েটা কি একা একা ঘুরবে নাকি?
- ও হ্যাঁ…ঠিক আছে…থাকবো।
- কি হয়েছে বলতো…তোর কি ইচ্ছে নেই নাকি?
মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম… না গো…বললাম না এমনিই… ভাবছিলাম, আর তো দুটো বছর… তারপর তোমাদেরকে ছেড়ে কোথায় যেতে হবে। মা আমাকে আদর করে বলল… আমাদেরকে নিয়ে যাবি মাঝে মাঝে।

রাতে তিস্তাকে ফোন করলাম…দুদিন হয়ে গেছে ওর সাথে কথা বলা হয়নি।
ও কি ফোনটা হাতে ধরে ছিল কিনা কে জানে… রিং হতে না হতেই মিষ্টি গলায় বলল… বাব্বা…বাবুর এতক্ষনে সময় হ’ল?
- হু
- কথা বলবো না তোমার সাথে...
- হু
- কি খালি হু হু করে যাচ্ছো?
- হু
- ধ্যাত…
- হু
- আমি কিন্তু এবারে ফোন রেখে দেবো...
- বুঝলাম…
- কি?
- তুমি জানো না...
- কি জানি না?
- পূজোয় তোমার সাথে দেখা হবে...
- ইস… কি করে?
- হুম
- এই… বলো না…প্লি-জ
- মা তোমাদেরকে আসতে বলবে...
- তা-ই? স-ত্যি?
- হু
- এই, আমার না নাচতে ইচ্ছে করছে...
- নাচো
- এই, এক্কেবারে মজা করবে না…সত্যিই আমার নাচতে ইচ্ছে করছে...
- বুঝলাম
- এই, আমাকে নিয়ে কোথায় কোথায় যাবে?
- কোথাও যাবো না...
- ইস…কেন?
- আমার ইচ্ছে...
- দেখাবো মজা...
- হু
- আবার হু?
- হু
- এই…
- ব’লো...
- তোমাদের ওখানে নাকি পূজোর সময় সারারাত সবাই ঘুরে বেড়ায়?
- হু
- আমরাও ঘুরবো… কি মজা...
- তাই?
- তাই তো… ইস…আমার কি আনন্দ হচ্ছে…জানো…
- কি দেবে আমাকে?
- কিচ্ছু দেবো না...
- আমিও তাহলে নিয়ে যাবো না কোথাও...
- আচ্ছা…দেবো…
- এই তো আমার মিষ্টি সোনা মেয়ে...
- আমি কি আমার রিজ সোনাকে কিছু না দিয়ে থাকতে পারবো …বলো…
- উমম… জানি তো...
[+] 1 user Likes রাজা রাম's post
Like Reply
#19
আবার ফিরে দেখা #

কাল রাতে আমার বিচ্ছুর কাছে কথাটা শোনার পর থেকে কি যে ভালো লাগছে বোঝাতে পারবো না। কখন হাসছি, কখন নেচে উঠছি নিজেই জানি না। আবার আমি আমার ওকে দেখতে পাবো… ও আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকবে...আমিও চোখের পলক না ফেলে ওর চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকবো...ওকে ছুঁতে পারবো… ও আমাকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করবে, আমিও ওকে আদর করে চুমু দেবো…উঃ…ভাবতেই পারছি না। ওর বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে থাকবো চুপ করে। ও আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করে ডাকবে…এই তিস্তা। আমি খুব আস্তে করে বলবো…উঁ… হারিয়ে গিয়েছিলাম স্বপ্নের ভেতরে… কাজের দিদির ডাকে ফিরে এলাম বাস্তবে… কাজের দিদির বাসন ধোয়া হয়ে গেছে, এবারে ফিরে যাবে। বাইরের দরজাটা আটকে দিয়ে ফিরে এলাম নিজের বিছানায়…উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশটা দুহাতে জড়িয়ে ধরে আবার স্বপ্নটা দেখতে শুরু করলাম…ও আমাকে কোলে তুলে নিয়েছে…আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরে আছি…সবে মাত্র ও আমাকে একটা চুমু দিয়েছে... বেলটা বেজে উঠল। বাপি এসে গেছে। দৌড়োলাম দরজা খুলতে… বাপিকে কি আমিই খবরটা দেবো? না…থাক… আগে বম্মা ফোন করুক। আমার আগ বাড়িয়ে বলাটা ভালো দেখাবে না, তার থেকেও বড় কথা আর আমি তো এখোনো জানি না…আমার বিচ্ছু আমাকে চুপি চুপি জানিয়েছে…তাই না?

বাপি আর নিজের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এলাম। আগে কাজের দিদি চা বানিয়ে ফ্লাস্কে রেখে যেত। এখন আমি নিজেই বানাই, মাঝে মাঝে একটু আধটু রান্নাও করি বম্মাকে জিজ্ঞেস করে করে…বাপি খুব খুশী হয় খেয়ে, যদিও আমি জানি খুব একটা ভালো হয়না। এবারে গিয়ে বম্মার কাছে আরো কিছু রান্না শিখে নিতে হবে ভাবছিলাম। বাপির ডাকে চমক ভাঙ্গলো…
- এই তিস্তা…
- ব’লো...
- তোকে কিছুদিন তোর বম্মার কাছে থাকতে হবে…বুঝলি?
- কেন?
- তোকে ব’লেছিলাম না…আমি একটা থিসিস লিখছি...
- হু
- লেখাটা পাঠিয়েছিলাম জার্মানীতে…ওরা ডেকে পাঠিয়েছে...
ভীষন আনন্দে বাপিকে জড়িয়ে ধরলাম। বাপীর অনেক দিনের চেষ্টার ফল। উঃ...কি ভালো যে লাগছে। বাপী আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বলল… তোকেও নিয়ে যেতে পারলে ভালো হ’ত… কিন্তু খবরটা এত দেরীতে এলো… এত তাড়াতাড়ি তোর পাসপোর্ট ভিসা করানো মুশকিল।
- ঠিক আছে বাপী… তুমি ঘুরে এসো…আমার মন খারাপ হবে না...
- ঠিক তো?
- উমম…একটুও যে হবে না তা নয় তবে…
- তবে কি?
- বম্মার কাছে থাকবো… তাই...
বাপিকে তো আর বলতে পারিনা এখন বম্মার কাছে থাকার চেয়েও আরো বেশি ভালো লাগছে আমি আমার বিচ্ছুকে কাছে পাবো ভেবে। বাপীর সাথে কথা বলতে বলতেই বম্মার ফোন এলো। বাপী কথা বলছে বম্মার সাথে, আমি পাশে বসে ভাবছি… আমি আমার বিচ্ছুর সাথে দেখা হলে কি কি করবো। বাপী আমাকে ডেকে বম্মার সাথে কথা বলতে বলল।

পূজোর দিন পনেরো আগে আমার রিজ সোনা আসবে আমাকে নিতে। বাপীর একেবারেই হাতে সময় ছিল না যে আমাকে কোলকাতা পৌঁছে দিয়ে তারপর যাবে। অবশ্য একেবারেই যে ছিল না তা নয়… বিচ্ছু আছে তাই বাপীকে আর চাপ নিতে হয়নি। আজ দুপুরের ফ্লাইটে ও আসছে। আমাদের বাড়ী পৌঁছোতে পৌঁছোতে পাঁচটা বাজবে প্রায়। সকাল থেকেই আমার ছটপটানি শুরু হয়ে গেছে। কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি চলে এলাম, বন্ধুদের বলেছি পরশু চলে যাবো…এখোনো ব্যাগ গোছানো হয়নি। সাড়ে চারটে বাজে...ওর আসার সময় হয়ে এসেছে...একবার ঘরে একবার বাইরে করে যাচ্ছি, নিজের মনে গুন গুন করে গাইছি… আমার বেলা যে যায় সাঁঝ বেলাতে… তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে…

গান থেমে গেছে আমার, চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে আছি বাইরের দিকে। গেট খুলে একজন ভেতরে আসছে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে। হাতে একটা ছোট ব্যাগ। বাইরের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার দিকে চোখ পড়তেই কি ও ফ্রিজ হয়ে গেল… ইস, শুধু ও নাকি? আমিও তো তাই…আমাকে দেখতে পেয়ে ওর চোখে মুখে যেন সাত রং এর খেলা…নিজেকে তো আর দেখতে পাচ্ছি না…আমার মুখেও হয়তো তাই হচ্ছে… কখন ও আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারিনি নাকি? দরজাটা নিজেই ঠেলে দিয়ে আমাকে বুকে টেনে নিয়েছে, কেউ কোনো কথা বলছি না। আমি ওর বুকে মাথা রেখে দুহাতে জড়িয়ে ধরে আছি… মনে হচ্ছে সহস্র বছর পরে আমরা দুজন দুজনকে কাছে পেয়েছি। ওর বুকে কান পেতে শুনছি… ও যেন বলছে আমায়…তিস্তা…তুমি শুধু আমার। আমিও চোখ বুজে থেকে নীরবে বললাম…আমার রিজ সোনা…শুধু আমার…আর কারুর নয়…গাইতে ইচ্ছে হ’চ্ছিল... প্রান চায় চক্ষু না চায়।

______________________________
 
অভিসার #

সন্ধে হয়ে গেছে, ওর বাপি এখোনো ফেরেননি। সাধারনত ফিরে আসেন অনেক আগেই কিন্তু বাইরে যাবার ব্যাপার নিয়ে খুব ব্যাস্ত থাকায় প্রায় দিনই নাকি মোটামুটি রাত হয় ফিরতে আজকাল। তবে বাড়ী ফিরতে না পারলেও তিস্তাকে ফোন করে জেনে নিয়েছেন আমি ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছোতে পেরেছি কিনা। আমি এসে গেছি শুনে তিস্তাকে আমার খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে কিছু বললেন মনে হয়েছিল। তিস্তা বাপিকে বলেছে...বাপি, তুমি চিন্তা কোরো না, আমি আছি তো...
দুজনে মিলে কি করবো যেন ঠিক করতে পারছিলাম না। আমাদের আবোল তাবোল গল্প হয়েছে বেশ কিছুক্ষন, কখোনো বা দুজনে দুজনের পেছনে লেগেছি...এসবের মাঝে ও হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বলল...এই যাঃ...তোমাকে যে আমাদের বাড়ীটা দেখানো হল না! কথাটা বলেই আমার হাত ধরে টান দিয়ে বলল এই চলো না... ওর সাথে ঘুরে ঘুরে সব ঘর গুলো এক এক করে দেখছি। পুরোনো বাড়ী হলেও দেখলাম যতটা সম্ভব সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। আমাকে নিয়ে এটা ওটা দেখাতে দেখাতে সাথে অবশ্য এটা বলতে বাকি রাখেনি যে ওদের বাড়ীটা নিজেদের নয়, ভাড়ার... তাই নাকি আমাদের বাড়ীর মতো এত সুন্দর নয়। আমিও হাসি মুখে বলেছি, যে বাড়ীতে তুমি থাকো সেখানে আর কিছু থাকলো বা না থাকলো তাতে কিছু যায় আসে না। ও আমার কথা শুনে ঘাড় কাত করে আমাকে ভ্রু বেঁকিয়ে দেখতে দেখতে বলল...ইস, তাই নাকি? আর কিছু না থাকলে চলবে? ওর ওই ভাবে ঘাড় বেঁকিয়ে টিয়া পাখীর মতো তাকাতে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি দেখে ওর টানা টানা চোখ দুটোকে আরো ছোট করে বলল...এই, তুমি কি এত আমাকে দেখো বলোতো... উত্তরে আমি ওর দিকে তাকিয়ে শুধু মুখ টিপে হেসেছি আর মনে মনে ভেবেছি... কি দেখি বলতে পারবো না কিন্তু এইটুকু বলতে পারি, সারাজীবন তোমাকে এইভাবে দেখে গেলেও আমার আশ মিটবে না.. ও কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে অস্ফুট স্বরে বলেছে... তুমি এমন ভাবে তাকালে যে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি রিজ। আমি ওর আরো কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বললাম... তুমি চাও না হারিয়ে যেতে? ও আর কাছে এসে আগের মতোই মৃদু স্বরে বলল... চাই তো...
সবার শেষে ওর ঘরে নিয়ে এলো আমাকে। আমি ওর বিছানায় বসে আছি...ও এক এক করে ওর গান আর নাচের প্রাইজ গুলো দেখানোর পর ওর ছোটোবেলার কিছু খেলনা, পুতুল বের করে দেখাতে শুরু করেছে। সব কিছুই এত যত্নে রেখেছে যে দেখলে মনেই হয়না খুব একটা পুরোনো। ওর ভীষন প্রিয় জিনিষ গুলো আমাকে দেখাতে পেরে এত খুশী যে আমিও বাধ্য ছেলের মতো মন দিয়ে দেখছি...মাঝে মাঝে ওর পেছনে লাগছি কচি খুকী বলে। ও একবার আমার পিঠে কিল মেরে বলেছে...এই ভালো হবে না কিন্তু, আমি কচি খুকী? তারপরেই আমার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলেছে...এই...তুমি আমাকে আলাদা একটা শোকেশ বানিয়ে দিও। তোমার কাছে যখন একেবারে চলে যাবো, সব কিন্তু সাথে করে নিয়ে যাবো। আমি ওর চোখে চোখ রেখে আস্তে করে জিজ্ঞেস করেছি...আমার থেকেও বেশী ভালোবাসো এদেরকে? ও কিছুক্ষন আমার দিকে চুপ করে তাকিয়ে থেকে মাথা নেড়ে বলেছে... উঁ হু...তুমি তো আমার বুকে থাকবে আর এরা থাকবে শোকেশে...তাহলে আমি কাকে বেশী ভালোবাসি বলো...
এত ভালো লাগছে ওকে এতদিন পর কাছে পেয়ে যে কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে। ভীষন ইচ্ছে করছিল ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে বসে থাকতে। ইচ্ছে হলেই তো আর হবে না...এতো আর সেই দীঘার সমুদ্র সৈকতের ঝাউ জঙ্গল নয় যে যা খুশী করবো। ওর অবস্থাও আমার মতোই, এত খুশীতে কি করবে যেন বুঝে উঠতে পারছে না। কখনও আমার পাশে বসে পড়ছে, কখনও উঠে গিয়ে কিচেনে গিয়ে দেখে আসছে রান্নার কি অবস্থা, তারপরে হয়তো ফিরে এসে আমার দিকে মুখ করে বসে আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে। মাঝে একবার উঠে গিয়ে শালোয়ার কামিজ পালটে একটা জঙ্গলা প্রিন্টের স্লিভলেস মিডি পরে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল ...এই...কেমন লাগছে আমাকে? আমি নির্বাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি...ওর যৌবন টলমল শরীরের সৌন্দর্য আর আকর্ষন যেন এক লাফে হাজার গুন বেড়ে গেছে... কোন দিকে তাকাবো যেন বুঝতেই পারছি না...অনাবৃত হাত...পা নাকি উদ্ধত বুক নাকি মেদহীন সরু কোমর...সবকিছুই যেন আলাদা লাগছে আজ... আমাকে ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাছে এসে ফিসফিস করে বলল...এই, বলো না। ও আমার দিকে সামান্য ঝুঁকে থাকায় স্তন সন্ধির স্পষ্ট আভাস আমার চোখে...ওর উষ্ণ শ্বাস প্রশ্বাস আমার মুখে ...মন পাগল করা মেয়েলী ঘ্রান আমাকে যেন অবশ করে দিয়েছে...আগেও ও অনেকবার আমার কাছে এসেছে কিন্তু নিজেকে এত দুর্বল কোনোদিন মনে হয় নি। ইচ্ছে করছে ওকে আরো কাছে নিয়ে এসে বুকে মুখ গুঁজে দি। ভাবলাম...না থাক, এত ইচ্ছে ভালো নয়... ওদের রান্নার দিদি দেখে ফেললে আমাদের গোপন সম্পর্ক আর গোপন থাকবে না। এই তো মাঝে আর দুটো দিন...তারপরে বেশ কয়েক দিন তো ও আমার কাছেই থাকবে। ও আমার দিকে তাকিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল আমি কি বলি শোনার জন্য...ডিং ডং করে বেল-টা বেজে উঠতেই আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে মুখটা ব্যাজার করে ধ্যাত বলেই সাথে সাথে মুখে দুষ্টুমি মাখানো হাসি এনে বলল...তোমার ফাদার ইন ল এসে গেছে। আমি হাসি মুখে আস্তে করে বললাম... তুমিও কম বিচ্ছু নও। ও হাসি মুখে কোমর দুলিয়ে নাচের ভঙ্গী করে..আমি আমার বিচ্ছুর বিচ্ছুনী...বলে দৌড়ে গেল দরজা খুলে দিতে। আমি পেছন থেকে ওর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থেকে ওর চলে যাওয়ার মুহুর্তগুলো মনের ক্যামেরায় এক এক করে তুলে রাখছিলাম যখন ও আমার কাছে থাকবে না তখনকার জন্য...ও চলে গেছে কিন্তু আমার মনের ভেতরে ও থেকে গেছে যেমন ভাবে ও থাকে সব সময় , মনের অতল গভীর থেকে একটা গানের কলি যেন ভেসে উঠতে চাইলো... তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহুর্তে...কি আবেশে আমি দিশাহারা...
রাত ন-টা মতো বাজে, এমন কিছু রাত হয়নি। আমরা সবাই মিলে ওদের ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছি। সোফার একদিকে আমি, মাঝে ওর বাপি আর ও বাপির একেবারে গা ঘেঁষে ওদিকে বসেছ। আমার আর ওর পড়াশোনা নিয়ে কথা হচ্ছিল। ওর বাপির ইচ্ছে গ্র্যাজুয়েশান হয়ে যাবার পর ও কোলকাতায় থেকে এমবিএ করুক। তিস্তা ওর বাপির কাঁধে থুতনি রেখে চুপচাপ আমাদের কথা শুনছিল। কোলকাতায় গিয়ে থাকতে পারবে শুনে খুশী ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বাপিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল...ইস, আমি হোস্টেলে থাকতে পারবো না। আমি কি তোকে হোস্টেলে থাকতে বলেছি? তোর বম্মার সাথে আমার কথা হয়ে গেছে তোর থাকার ব্যাপারে... বাপির কথা শুনে তিস্তা আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে বলল...না বাবা...ইস... এই বিচ্ছুটার সাথে আমি থাকতে পারবো না। পেছনে লেগে লেগে আমার মাথা খারাপ করে দেবে। আমি হেসে ফেলে বলেছি...তুমি যখন যাবে তখন তো আমি আর নেই...এই তো সামনের বছর আমার ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ হয়ে যাবে... তাতে আমার বিচ্ছুনীর আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে উত্তর দেওয়া হল...বাব্বা, বাঁচলাম, আমার আর থাকতে কোনো অসুবিধা নেই বাপি। তুমি বম্মাকে বলে দিও আমি একা একা বম্মার আদর খাবো...ইস, কি মজা...
রাতে খাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষন গল্প করার পর ওর বাপি শুতে চলে গেলে আমাকেও উঠতে হল। তিস্তা আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিল কোথায় শোবো। ও আগে থেকেই আমার বিছানা ঠিক করে রেখেছিল...আমি শুয়ে পড়লে ও আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি মুখে ইশারায় চুমু দিয়ে বলল...এই, আমি পাশের ঘরে আছি... দরকার হলে ডাকবে কিন্তু। আমাকে এক দৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর মুখ থেকে আস্তে আস্তে হাসিটা মিলিয়ে গিয়ে একটা অব্যাক্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। তারপরেই ‘আসি’ বলে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ও ফিরে চলে যাচ্ছে দেখে মনে হল একবার ডাকি। পারলাম না ওকে ডাকতে...ভাবলাম, না থাক... ওর বাপি হয়তো এত তাড়াতাড়ি ঘুমোন নি। কাছে পেয়েও না পাওয়ার ব্যাথায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ও একবার পেছন ঘুরে আমাকে দেখে আলোটা নিভিয়ে দিল। অন্ধকার ঘর...নিস্ফল চেস্টা করলাম ওকে শেষবারের মতো দেখতে...পেলাম না দেখতে... ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে চোখ বুজলাম। ওর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়বো। কিছুক্ষন কেটে গেছে ওর কথা ভাবতে ভাবতে... মনে হল...ও আমার খুব কাছে...ওর নিশ্বাস আমার চোখ মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে...আমার বুক ভরে যাচ্ছে মিষ্টি সুগন্ধে। না...কি করে হবে...আমার মনের ভুল হয়তো। ও তো চলে গেছে। আমার মন ভাবছে ও আমার কাছে আছে...তাই হয়তো আমি ভাবছি এই সব...তবুও মন চাইলো ওকে একবার মনে মনে ছুঁয়ে দেখতে। আস্তে আস্তে হাত বাড়ালাম অদৃশ্য আমার ভালোবাসাকে ছুঁতে... একি স্বপ্ন... নাকি সত্যি? নাঃ, স্ব প্ন তো নয়...আমি ওকে সত্যিই ছুঁতে পারছি...ও চলে যেতে পারেনি, ফিরে এসেছে আমার কাছে...আমি ওকে অনুভব করতে পারছি... বুকে টেনে নিলাম। আমার দুহাতের বাঁধনে ও থরথর করে কেঁপে উঠছে। নিজের সাথে ওকে মিশিয়ে নিতে চাইলাম। পাগলের মতো চুমু চুমুতে ওর চোখ মুখ ভরিয়ে দিচ্ছি। ও চুপ করে আমার বুকের ভেতরে থেকে আমার আদর মন প্রান দিয়ে অনুভব করছে। আস্তে আস্তে আমি শান্ত হয়ে এলে ও আস্তে করে বলল...বাপি ঘুমোয়নি হয়তো। বুঝতে পারলাম ও বলতে চাইছে...চাইছিলাম না ওকে ছেড়ে দিতে...তবুও দিতে হল। ও মন থেকে না চাইলেও আস্তে আস্তে নিজেকে আমার হাতের বাঁধন থেকে আলাদা করে নিয়ে ফিরে যাওয়ার আগে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে বলল...আসি?
থেকে থেকে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে...রাত এখন কত জানি না। কি হয়েছে আজ আমার বুঝতে পারছি না, কেন জানি না ওকে আজ আবার কাছে পেতে ভীষন ইচ্ছে করছে। এই তো পাশের ঘরেই ও আছে। যাবো? নাঃ থাক... এতদিন ওকে ছেড়ে থাকতে পেরেছি...আমাদের ভালোবাসাকে গোপন ভাবে রেখেছি নিজের বুকের ভেতরে। নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ করছি...একবার যাই না ওর কাছে। কেউ জানবে না। একটু আদর করেই চলে আসবো। আস্তে আস্তে উঠে বসে থাকলাম কিছুক্ষন...ভাবছি, এত রাতে ওর কাছে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? যদি ওর বাপি উঠে পড়েন আর বুঝতে পারেন আমি এত রাতে ওর কাছে গেছি...ভীষন বিচ্ছিরি হয়ে যাবে ব্যাপারটা। আরো কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকার পরেও ঠিক করতে পারিনি যাবো কি যাবো না। শেষে ওকে কাছে পাওয়ার অদম্য ইচ্ছের কাছে হেরে গেল বাকি সব কিছু...বিছানা থেকে নেমে আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগোচ্ছি, বুকের ভেতরে যেন ছাত পেটানোর আওয়াজ..ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে নয়...ওকে আবার কাছে পাবো...আদর করতে পারবো...এই ভেবে উত্তেজনায় হাত পা কাঁপছে। দরজার পর্দাটা সরিয়ে চমকে উঠলাম...দরজার ঠিক সামনে আবছা আলোয় এক নারী মুর্তি, আমার তিস্তা আমার মতোই ঘুমোতে পারেনি আমাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেয়। ফিরে এসেছে আবার আমায় কাছে পাবার ইচ্ছে বুকে নিয়ে। হাত বাড়িয়ে ওকে টেনে আনলাম ভেতরে নাকি ও নিজেই আমাকে দেখে চলে এলো জানি না। ও আমার বুকে মাথা রেখে দুহাতে জড়িয়ে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। চুপ করে আছে বলাটা হয়তো ঠিক হবে না একেবারেই...আমার মতোই ও থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। বেশ কিছুক্ষন কেটে গেছে...একটু একটু করে আমরা স্বাভাবিক হয়ে আসছি...এক হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে থেকে আর এক হাতে ওর মুখটা তুলে ধরলাম...আবছা আলোয় আমাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফিস ফিস করে বলল...কোথায় যাচ্ছিলে? মুখ নামিয়ে আলতো ভাবে ওর গালে মুখ লাগিয়ে বললাম...তোমার কাছে। ও দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করল...কেন? আলতো ভাবে ওর গালে কামড়ে দিয়ে জবাব দিলাম...আমার শ্রীরাধিকাকে আদর করতে। ও আস্তে করে বলল...খুব সাহস...বাপির কাছে ধরা পড়ে গেলে কি হবে জানো? ওর নরম পাৎলা ঠোঁট দুটো মুখে নিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দিলে ও আমাকে বুকে চেপে ধরে পিষে ফেলতে চাইলো দেখে ওকে কোলে তুলে নিয়ে ফিরে এলাম... বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আবছা আলোয় চোখের পলক না ফেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছি...ও দুহাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বুকের উপরে টেনে নিয়ে বলল... তোমার তো আমার কাছে আসার কথা নয় রিজ...আমি তোমার শ্রীরাধিকা...আমিই তো আসবো অভিসারে...তাই না? কি করবো বলো? আমার শ্রীরাধিকাকে যে কাছে পেতে ভীষন ইচ্ছে করছিল...বলাতে ও ফিসফিস করে বলল...এই, জানো তো...
- কি
- ভীষন ভালো লাগছে...মনে হচ্ছে আর আমার কিছু চাই না...
- তাই?
- হু...
- আমার কি মনে হচ্ছে জানো?
- কি?
- তোমাকে নিয়ে এখুনি কোথাও চলে যাই...
- তাই?
- হু...
- এই...কোথায় যেতে ইচ্ছে করছে?
- দুরে কোথাও...
ও আমাকে চুমু খেয়ে ফিস ফিস করে বলল...আমারও ইচ্ছে করছে তোমার সাথে পালিয়ে যেতে...যেখানে থাকবো শুধু তুমি আর আমি...
এই, এখুনি যাবে? বলাতে ও আস্তে করে বলল...ইচ্ছে তো করছে কিন্তু কাল সকালে যে বাপি আমাকে দেখতে না পেয়ে কান্নাকাটি করবে...নিস্তব্ধ রাত...জানলার ঠিক পাশেই একটা ফুলে ভরা গুলঞ্চ গাছ দেখেছিলাম বিকেলে আসার সময়... খোলা জানলা দিয়ে মাঝে মাঝে হু হু করে বাতাস বয়ে আসছে, সাথে করে বয়ে নিয়ে আসছে ফুলের মিষ্টি গন্ধ... সেই মন মাতানো ফুলের গন্ধ আর আমার বুকে আমার তিস্তা...আমার নদী...অবর্ননীয় ভালো লাগায় ভেসে যাচ্ছি...আমরা দুজনে প্রলাপ বকে যাচ্ছি যেমন এতদিন করে এসেছি, পার্থক্য শুধু একটাই...আজ আমরা আর কয়েকশো কিলোমিটার দুরে নয়...আজ আমরা খুব কাছে...একে অপরের আলিঙ্গনে...সময়ের খেয়াল থাকার কথা নয়, তাই নেই...পৃথিবী রসাতলে যেতে চাইলে যাক না আজ...বয়ে গেছে আমাদের...সাথে যদি আমাদেরকে নিয়ে যেতে চায় তো তাও মানা নেই। থাকবো আমরা একসাথে সে যেখানে খুশী হোক না কেন..ও আমার পাশে থাকলে...যেখানেই থাকবো সেটাই আমার কাছে স্বর্গের চেয়েও দামী। কথা বলতে বলতে তিস্তা হঠাৎ জিজ্ঞেস করল...এই, তুমি কি জানো শ্রীরাধিকা যখন অভিসারে যেতেন তখন ঠিক কি কি হোতো? আমার ঠিক জানা না থাকায় বললাম... কি জানি কি হোতো...তবে মনে হয়না শুধু বাঁশির আওয়াজ শুনে ওনার মন ভরে যেতো। আরো হয়তো কিছু হোতো। আমার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ও বলল...সেটাই তো জানতে চাইছি। ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললাম...সে যা পারতো করতো...আমার শ্রীরাধিকার এখন কি ইচ্ছে করছে? ও আস্তে করে বলল...জানি না। ওর ওই ছোট্ট করে বলা ‘জানি না’ কথাটার ভেতরে কতটা আবেগ ছিল সেটা হয়তো আমি ছাড়া আর কেউ বুঝবে না... আর সাথে সাথে এটাও বুঝলাম ও কি চাইছে...মনে পড়ে গেলো ওর সেই দিনের কথাগুলো... তুমি তো আমাকে সে ভাবে ছোঁয়ার চেস্টা করো না। তখন আমি নিজেই চাইনি আমাদের সম্পর্কের ভেতরে এতো তাড়াতাড়ি শরীর চলে আসুক। ওকে সেটা জানিয়েছিলাম আর কথাটা শুনে ও সেদিন কেঁদেছিল... তবে বুঝে। এতদিন পর আমার আর সেই ভয় নেই, আমাদের সম্পর্ক এখন অনেক অনেক গভীর...দুজনেই জানি... দুজনেই বুঝি। পুরোটা না হলেও সামান্য কিছুটা এগোনো যেতে পারে ভেবে ওর কানের লতিতে আলতো ভাবে কামড়ে দিয়ে বললাম... এই তিস্তা। ও খুব ছোট্ট করে সাড়া দিল...উঁ। এর পর আর মুখে কিছু না বলে ওকে ছুঁয়ে বুঝিয়েছি আমি কি চাই। ও নিশ্চুপ থেকেও শরীরের ভাষায় সাড়া দিয়েছে, কাঁপা কাঁপা হাতে নিজেকে উন্মুক্ত করে বুঝিয়েছে...আমি তো তোমাকে দিতে চাই রিজ...তুমি কেন নাও না। ওকে আলতো ভাবে ছুঁয়ে থেকেছি কত সময় নিজেই বুঝিনি...এক অদ্ভুত আনন্দে সারা শরীর মন ভরে উঠছিল...মনে হচ্ছিল এইভাবে যদি সারাজীবন ওকে এইভাবে ছুঁয়ে থাকতে পারতাম...
গভীর রাত আরো গভীর হয়েছে, আমার শ্রীরাধিকা অভিসারে এসে আমাকে আদর করে নিজেও খুশী মনে ফিরে গেছে।
জানি না ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি...স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি ওকে নিয়ে...
[+] 1 user Likes রাজা রাম's post
Like Reply
#20
গোপন কথাটি রইলো না আর গোপনে #

বাপি বেরিয়ে গেছে সেই কোন সকালে, আমার রিজ সোনা ঘুমোচ্ছে দেখে আর ডাকিনি। চুপ করে বসে কাল রাতের কথা ভাবছি। ইস, কি ভালো লাগছিল ওর বুকের ভেতরে নিজেকে লুকিয়ে রেখে ফিসফিস করে ওর সাথে কথা বলে যেতে। বুকের ভেতরে যে এত কথা জমে ছিল নিজেও কি জানতাম না নাকি। ওর ওই কথাটা বারে বারে মনে পড়ে যাচ্ছে...তিস্তা, আর আমার কোনো ভয় নেই তোমাকে হারানোর। আমি ওর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলেছিলাম...জানি তো। ও একটু চুপ করে থেকে বলেছিল...কি ভাবে? আমাদের কত মান অভিমান হয়েছে তবুও কি তুমি পেরেছো আমার সাথে কথা না বলে থাকতে? আমার প্রশ্নের ভেতরে থাকা উত্তরটা শুনে ও বলেছিল...আমি কি একা...তোমার সব কথা তো আমি রাখিনি... তুমিও তো পারোনি অভিমান করে থাকতে...আমার থেকে দুরে সরে যেতে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে খুব ইচ্ছে করলো ওকে একবার দেখে আসি...ওর ঘুমের যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্য ভোরে উঠে গিয়ে জানলা দরজার পর্দা ভালো করে টেনে দিয়ে এসেছিলাম...বাইরে ঝকঝকে রদ্দুর থাকলেও ওর ঘরে এখোনো আলোছায়ার খেলা। ও পাশ ফিরে ঘুমোচ্ছে, জেগে থাকলে যে মুখে দুষ্টুমি ভরা থাকে সেখানে এখন নিস্পাপ শিশুর সরলতা...মুগ্ধ দৃষ্টিতে চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে দেখতে দেখতে মনে পড়ে গেল সেই দিনটার কথা...দীঘায় ওকে ডেকে আনতে গিয়ে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু পাওয়ার আশায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম...সম্বিত ফিরে এসেছিল যখন আমি ওর দুহাতের বাঁধনে। আজও আবার সেইভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে...ঘুমের ভেতরেই ওর মুখে এক চিলতে হাসি দেখে অবাক হয়ে গেলাম...তাহলে কি ও জেগে আছে...দুষ্টুমি করে ঘুমের ভান করে থেকে দেখতে চাইছে আমি কি করি? আচ্ছা, আমিও কম যাই না...তুমি যদি ভেবে থাকো আমাকে বোকা বানাবে...সে গুড়ে বালি...ভাবতে ভাবতে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি ও কি করে দেখার জন্য। বেশ কিছুক্ষন কেটে গেল...ওর মুখের এক চিলতে হাসি এখন আর নেই...হাতড়ে হাতড়ে কি যেন খোঁজার চেস্টা করছে। বুঝলাম, ও ঘুমের ভেতরে স্বপ্ন দেখছে...নিশ্চয় আমাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখছে। তাই হবে, ও তো মাঝে মাঝেই বলে...জানো তিস্তা, আজ আমি তোমাকে স্বপ্নে দেখলাম...খুব দুষ্টুমি করছিলে আমার সাথে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ভীষন ভালো লাগলো...থাক, ওকে এখন আর ডাকবো না...আমাকে নিয়ে স্বপ্নে কি কি করছে কে জানে ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম রাতের আরো একটা কথা মনে পড়ে গেলে...আমার ইচ্ছেতেই ও চেয়েছিল আরো কিছুটা কাছে আসতে...এই প্রথম ও আমার বুকে হাত রেখেছিল নিজের থেকে কিন্তু একবারের জন্যও ও নিজেকে হারিয়ে ফেলেনি। সত্যিই অদ্ভুত একটা ছেলে, জানি না কি করে একটা ছেলে কোনো মেয়ের বুকে হাত দেবার সুযোগ পেলে এইভাবে নিজেকে আটকে রাখতে পারে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা না থাকলেও বন্ধুদের কাছে যা যা শুনেছি ছেলেদের ব্যাপারে এতদিন, সব কিছুই যেন ও মিথ্যে প্রমান করে দিল...ভাবতেই শিউরে উঠছি, ও কেমন ভাবে আলতো ভাবে আমাকে ছুঁয়ে থেকে ফিস ফিস করে বলেছিল...তিস্তা তুমি কি স্বর্গের দেবী? এতো সুন্দর! এত নিঁখুত! এত মসৃন! ওর আমাকে ছুঁয়ে থাকা দেখে মনে হচ্ছিল ঠিক যেন কোনো শিল্পী তাঁর সৃষ্টিকে পরম মমতায় ছুঁয়ে থেকে নিজেই অনুভব করছেন তিনি কি সৃষ্টি করেছেন। ও আমাকে ছোঁয়ার আগে হয়তো চেয়েছিলাম নিজেকে বিলিয়ে দিতে কিন্তু ওর আমাকে ওইভাবে অনুভব করতে দেখে শরিরের কামনা বাসনা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়ে এক অপার্থিব সুখে ভেসে যাচ্ছিলাম ওর সাথে সাথে। আরো একবার মন প্রান দিয়ে ওর ভালোবাসা অনুভব করতে করতে ফিসফিস করে বলেছিলাম...আমাকে তো ঈশ্বর তোমার জন্যই নিজের হাতে গড়েছেন। বাইরের ঘরের ঘড়ির আওয়াজে ঘোরের ভেতর থেকে ফিরে এলাম, বুঝলাম সকাল ন টা বাজল। নাঃ, ওর জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসে ডেকে তুলি,অনেক কাজ পড়ে আছে...ভেবে ফিরে এলাম।
আমাকে একবারে ওর কাছ ঘেঁষে বসতে দেখে ঘুম জড়ানো চোখে উঠে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করল...বাপি কই? ওর কাঁধে মাথা রেখে আস্তে করে বললাম...বাপি নেই,বেরিয়ে গেছে...এখন শুধু তুমি আর আমি। আবার আমাকে এত কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে দিল দেখে আদুরে গলায় বললাম...এই রিজ, তুমি তো এত লোভী ছিলে না আগে। ও আমাকে আদর করতে করতে বলল...একটু আগে খুব দুষ্টুমি করছিলে আমার সাথে...খালি দৌড়ে দৌড়ে পালাচ্ছিলে...কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না তোমাকে। ইস, পালাচ্ছিলাম না ছাই...এই তো তোমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললাম বলাতে আস্তে করে বলল...তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম। কথাটা শুনে ওকে আরো বেশী করে বুকে চেপে ধরে চোখ বুজে ভাবছিলাম...জানি তো...আমার বিচ্ছু আমাকে ছাড়া তো আর কিছু ভাবতেই পারে না।
সাড়ে এগারোটা মতো বাজে, আমি রান্নাঘরে ব্যাস্ত। ওকে একটা গল্পের বই দিয়ে এসেছি সময় কাটাবার জন্য। যতক্ষন রান্নার দিদি আসেনি আমাকে কিছুতেই কাছছাড়া করতে চাইছিল না, রান্নার দিদি এসে যাবার পর আর জোর করেনি। বাইরের বেলটা বেজে উঠলে ভাবলাম বাপি ফিরে এসেছে। দরজা খুলে দেখি বাপি নয়, আমার সবথেকে কাছের দুই বন্ধু চয়নিকা আর মৌলী। কাল আমি চলে যাবো জানতো, তাই ওরা চলে এসেছে দেখা করতে। আমাকে দেখতে পেয়ে দুজনেই খুব হইচই করে আমাকে ঠেলে নিজেরাই ঢুকে পড়ল ভেতরে। ওরা যে হঠাৎ আমাকে না জানিয়ে চলে আসবে ভাবতেই পারিনি, তার জন্য হয়তো একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। মেয়েদের চোখ যে কি জিনিষ তা কি আর আমি বুঝি না? কোনো কিছুই হয়তো এড়িয়ে যায় না। চয়নিকা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ছোটো ছোটো করে বলল... কি রে তিস্তা...তোকে দেখে মনে হচ্ছে আমরা এসেছি বলে তোর ভালো লাগছে না? মৌলী পাশ থেকে ফোড়ন কেটে বলল... উঁ হুঁ... মনে হচ্ছে অন্য কেস। কিছু একটা চাপা দিতে চাইছে। ততক্ষনে আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি... আমিও কম যাই না, হেসে ফেলে বললাম... তোদের আর আমার পেছনে লাগা ছাড়া কাজ নেই নাকি?
তিনজনে মিলে খুব হইচই করছি ব্যাগ গোছাতে গোছাতে। ওর দেওয়া জিন্সটা দেখে চয়ি মৌলীর কানে কানে কিছু বললে আমি ইচ্ছে করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে কান খাড়া করে রেখেছি ওরা এরপরে কি বলে শোনার জন্য। মৌলীর সোজাসুজি প্রশ্ন...এই তিস্তা, তুই তো এই জিন্সটা দেখাস নি আমাদেরকে...কবে কিনলি? যুৎসই একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিলাম, কি করে জানবো বিচ্ছুটা উঠে চলে আসবে আমার ঘরে... হঠাৎ মুখ তুলে ওকে দরজার সামনে দেখে থতমত খেয়ে গেলাম... এখুনি হয়তো কৈফিয়ত দিতে হবে ও কে...যা করার এখুনি করতে হবে ভেবে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম...কিছু লাগবে মামা? আমার মুখে মামা ডাক শুনে ও হয়তো ভেতরে ভেতরে চমকে গেল, বুদ্ধিমান ছেলে বলে কি ভাবছে বুঝতে না দিয়ে বলল...আর একবার চা পেলে ভালো হোতো। আচ্ছা যাও, আমি দিয়ে আসছি বলাতে ও ফিরে গেল। চয়ি আর মৌলী নিজেদের ভেতরে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছিল দেখে আমি নিজের থেকে কিছু না বলে উঠে গেলাম রান্না ঘরের দিকে। দিদিকে চা বানাবার কথা বলে ফিরে আসতেই শুরু হয়ে গেল ওদের সাঁড়াসী আক্রমন। ওরাও ছাড়বে না আর আমিও হার মানবো না। ছেলেটা কে, কোত্থেকে এলো, সত্যি যদি তোর যে মামা হয় তো আগে বলিস নি কেন... কত যে প্রশ্ন ওদের কে জানে। বেশ কিছুক্ষন টানা হেঁচড়ার পর ওরা হার মেনে নিলেও মনে হোলো না খুব একটা বিশ্বাস করেছে আমাকে। তারপরেই কি মনে হল কে জানে, আর যেন পারছিলাম না আমার এতো খুশী আমার এতো কাছের বন্ধুদেরকে না জানিয়ে থাকতে। কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকার পর নিজের থেকেই ওদেরকে বললাম...এই শোন না...রাগ করবি না কিন্তু তোরা, একটা কথা বলছি...
ওরা দুজনে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে... আমি ওদেরকে একটু একটু করে বলছি আমার বিচ্ছুর কথা। ওদেরকে বলতে পেরে ভীষন হাল্কা লাগছে নিজেকে...মুখ নীচু করে বসে আছি। হঠাৎ ওদের হইচই শুনে মুখ তুলে তাকালাম... এখুনি ওদের সাথে আমার বিচ্ছুর আলাপ করিয়ে দিতে হবে। কি হোলো কে জানে আমার, সারা শরীর যেন অবশ হয়ে গেল হঠাৎ...লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠল...আস্তে করে বললাম...তোরা নিজেরাই যা না... ও খুব মিশুকে...
পাশের ঘর থেকে ওদের তিনজনের হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। বিচ্ছুটা এইটুকু সময়ের ভেতরেই জমিয়ে ফেলেছে ওদের সাথে। আমাকে ওখানে পেলে ওরা পেছনে লাগতে ছাড়বে না ভেবে আমি কাজ আছে বলে এড়িয়ে গেছি, অবশ্য এড়িয়ে গেছি বলাটা মনে হয় ঠিক হবেনা...কিছুটা সময় আমি নিজের ভেতরে থাকতে চাইছিলাম...মাঝে একবার চয়ি আমাকে ডাকতে এসে জড়িয়ে ধরে বলেছে...এই তিস্তা, এ তো একেবারে লেডি কিলার টাইপের ছেলে রে...কি সুন্দর কথা বলতে পারে...সাবধানে রাখিস কিন্তু, ফুড়ুৎ না হয়ে যায়। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসেছি আর নিজের মনে মনে বলেছি...তোরা ওকে বুঝবি না রে... একমাত্র আমিই বুঝি ওকে।
দুপুরে আর ওদেরকে বাড়ী ফিরতে দিই নি, বাপি দুপুরে ফিরে খেয়ে নিয়েই আবার বেরিয়ে যাওয়াতে আমরা যেন বাঁধন ছেঁড়া হয়ে উঠেছি...সবাই মিলে গল্প হাসি ঠাট্টা খুনসুটি কি না করেছি... চয়ী খুব করে ধরেছিল আমাদের দুজনের অন্তরঙ্গ একটা ছবি তুলে রাখবে মোবাইলে। আমি রাজী হইনি... বলেছি...না রে এখন থাক... তোরা দুজনে ছাড়া আর কেউ এখন জানলে অসুবিধা আছে...

______________________________
বিদায় #

কোলকাতা পৌছোলাম আমরা একই ফ্লাইটে, আমরা মানে বাপি, আমার উনি আর আমি। আমার জীবনের প্রথম আকাশ যাত্রা, কিছুই বুঝলাম না, এত তাড়াতাড়ি বাগডোগরা থেকে কোলকাতা পৌঁছে গেলাম যে বুঝতেই পারলাম না ঠিক কেমন লাগল। ভাবতেই পারছি না যে রাস্তা আসতে সারা রাত ট্রেনে কাটাতে হয় সেই রাস্তা যেন নিমেষে পৌঁছে গেলাম। বাপির সময় হবে না বম্মাদের ওখানে যাওয়ার, এখান থেকেই দিল্লী চলে যাবে, আমি থেকে যাবো আমার বিচ্ছুর কাছে। এত সময় ঠিক ছিল...খুব একটা কিছু মনে হয়নি। বাপির ফ্লাইটের সময় যত এগিয়ে আসছে তত যেন কান্না পেয়ে যাচ্ছে। এর আগে কোনোদিন বাপিকে ছেড়ে থাকিনি। আমার বিচ্ছুর কাছে থাকতে পারার খুশী ছাপিয়ে গিয়ে বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠছে। নিজেকে সামলাতে পারলাম না। বাপিকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চা মেয়ের মতো কেঁদে ফেলেছি। বাপি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করে সান্তনা দেবার চেস্টা করতে গিয়ে নিজের চোখ জলে ভরিয়ে ফেলেছে। তারপর নিজেই নিজেকে বুঝিয়েছি...যতই খারাপ লাগুক না কেন আমাকে তো একদিন না একদিন বাপিকে ছেড়ে চলে যেতে হবে...আমি এত কান্নাকাটি করলে তো বাপির আরো মন খারাপ হবে। আমার তো উচিত বাপিকে খুশী মনে বিদায় দেওয়া। নিজের কথা না ভেবে কান্না ভেজা চোখে বাপির দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললাম...ইস, বাপি তুমি কাঁদছো। ধ্যাত...সবাই কি ভাববে। নিজের হাতে ওড়না দিয়ে বাপির চোখের জল মুছিয়ে দিলাম। চুমু দিলাম বাপির গালে। সাবধানে যেও...রোজ একবার করে ফোন করবো...আমার জন্য চিন্তা করবে না...আমি তো বম্মাদের কাছে আছি বলে বাপিকে সান্তনা দিলে বাপি আমাকে জড়িয়ে ধরে থেকে বলল...জানি, তাই তো আমার আর তোর জন্য কোনো চিন্তা নেই। আমার বিচ্ছু অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, ও চায়নি আমাদের বাবা মেয়ের একেবারে আলাদা জগতে ঢুকে কোনোরকম অস্বস্তিতে ফেলতে। ওর এই ব্যাপারটা আমার সত্যিই ভীষন ভালো লাগে। আমারও যে একটা নিজস্ব জগৎ আছে সেটা ওকে মনে করিয়ে দিতে হয় না।
বাপিকে যেতে হবে এবারে। শেষ বারের মতো বাপি আমাকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করে বলল... বাবাই এর সাথে ঝগড়া করবি না কিন্তু। আমি মনে মনে বাপিকে বললাম...বাপি, তোমরা যেটা দেখতে পাও সেটা তো সত্যি নয়... তোমাকে তো এখোনো বলতে পারিনি আমি যে এখন আমার নিজের থেকেও বেশী ভালোবাসি ওকে। তোমরা যেটা দেখতে পাও না সেটা ঠিক কি তা শুধু আমরা দুজনেই জানি। মনে মনে এই কথা গুলো বলে ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম ইস, বিচ্ছুটা আমার পেছনে লাগলে আমি ছেড়ে দেব নাকি? বাপি আমার পিঠ চাপড়ে হেসে ফেলে বলল...পাগলী মেয়ে আমার। আরো দু একটা কথা বলে বাপিকে ভেতরে চলে যেতে হল, দেরী হয়ে যাচ্ছে। বাপিকে বারে বারে পেছন ফিরে তাকাতে দেখে আমার দুচোখ আবার জলে ভরে উঠল। হাত নেড়ে বাপিকে টাটা করতে করতে ইচ্চে করছিল দৌড়ে গিয়ে বাপিকে একবার ছুঁয়ে আসি। বাপি চোখের আড়ালে চলে গেছে...ইচ্ছেটা নিজের ভেতরেই আটকে রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি, চোখের জলে গাল ভিজে যাচ্ছে একটু একটু করে। ও আমার পাশে এসে আমার হাত ধরে কাছে টেনে নিলে ওর বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেললাম। বেশ কিছুক্ষন কেটে গেছে...আস্তে আস্তে আমার কান্না থেমে গেলেও মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছিলাম। আরো কিছুক্ষন কেটে গেছে, আমি অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছি...মুখ তুলে ওর দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে আস্তে করে বললাম...চলো...ফেরার সময় ট্যাক্সিতে ওর কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে বসে ছিলাম। ও আমাকে জড়িয়ে ধরে থেকে আমার মতোই চুপ করে ছিল। ও জানতো আমার কথা বলতে ভালো লাগবে না এখন, তাই ও চায়নি জোর করতে।

আমার নতুন বান্ধবী #

সামনেই একটা সেমিস্টার থাকায় তিস্তাকে বেশী সময় দিতে পারছিলাম না। অবশ্য কারনটা জানা থাকায় ও নিজের থেকেই আমার কাছে বেশী আসে না। উল্টে আমি যদি ওকে কখোনো কাছে পেতে চাই তো ও বলে যে...উঁ হুঁ...এখন নয়...আগে পড়া তারপরে প্রেম। মায়ের আদরের মেয়ে তার বম্মার সাথেই বেশী সময় কাটায়...খুব নাকি মন দিয়ে রান্না শিখছে ভবিষ্যতে ওর হাসব্যান্ডকে খাওয়াবে বলে...ওর বম্মা তাই জানে কিন্তু ওর সেই ভবিষ্যতের হাসব্যান্ড যে নিজের ছেলে সেটা এখোনো জানে না। একেবারেই যে চিন্তা হয় না তা নয় তবু নানা রকম ভাবে নিজেকে বুঝিয়েছি সময় হলে কিভাবে মা বাবাকে জানাবো যে আমি আর তিস্তা বিয়ে করতে চাই। ব্যাপারটা যে খুব সোজা হবে তা নয় কিন্তু কিভাবে এগোলে ভালো হবে সেটা নিয়ে নানা রকম রাস্তা ভেবে রেখেছি। তিস্তাকে এই নিয়ে কিছু বলিনা কারন ওর সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে দেখেছি খুব টেনশান করে। মাঝে মাঝে ওর সেই দুই বান্ধবী চয়ী আর মৌলীর সাথে আমাকেও কথা বলতে হয় ওর মোবাইলে... প্রথম প্রথম আমার থেকে ওদের উৎসাহটাই বেশী ছিল আমার সাথে কথা বলার। ওদের দুজনের সাথেই বেশ একটা বন্ধুর মতো সম্পর্ক হয়ে গেছে এই কদিনে। মেয়ে দুটো আর যাই হোক না কেন তিস্তাকে সত্যিই ভীষন ভালোবাসে, যাকে বলে একেবারে প্রানের বন্ধু। তাই হয়তো আমার কাছে ওদের প্রত্যাশাটা অনেক অনেক বেশী। যাই ঘটুক না কেন আমি যেন কোনো অবস্থাতেই তিস্তার পাশ থেকে সরে না যাই...এটাই চায় ওরা মন প্রান দিয়ে, শুধু তাই নয়, আমাকে মাঝে মাঝে বলেও ফেলে। তিস্তাকে কথায় কথায় জানিয়েছি ওদের মনোভাব। যদিও আমার বা তিস্তার কারুরই আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আর কোনো দ্বিধা ছিল না তবুও ভালো লেগেছিল এই ভেবে যে আমাদের জন্য আরো কেউ আছে ভাবার। যারা নিঃস্বার্থ ভাবে চায় আমরা এক হই।
আজ আমার পরীক্ষা শেষ। বাড়ী ফিরে বিকেলে মা আর তিস্তাকে নিয়ে বেরোনোর কথা, গড়িয়াহাটে কেনাকাটা করতে যাবে। ক্লাস থেকে বেরোনোর আগে কলেজের অফিস থেকে খবর পাঠালো বাড়ী থেকে মায়ের ফোন এসেছিল কিছুক্ষন আগে, আমি যেন এখুনি ফোন করি। মা তো এর আগে কোনোদিন এইভাবে কলেজে ফোন করেনি, কি এমন হয়েছে ভাবতে ভাবতে এক বন্ধুর মোবাইল নিয়ে বাড়ীতে ফোন করলাম। যা শুনলাম তা মোটেও ভালো খবর নয়...মৌলীর বাবা কোলকাতা এসেছিলেন অফিসের কাজে, বাস থেকে নামতে গিয়ে পেছন থেকে একটা গাড়ীর ধাক্কা খেয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। খুব কপাল ভালো পুলিশ সময়মতো হসপিটালে ভর্তি করেছে। তিস্তা এই মুহুর্তে এখানে থাকায় আর কোলকাতায় ওদের চেনা জানা তেমন কেউ না থাকায় মৌলী ওকেই ফোন করেছে খবর পেয়ে। খবরটা শুনেই তাড়াতাড়ি এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে ওর বাইকে হসপিটালের দিকে দৌড়োলাম। মাকে বলে দিয়েছি তিস্তাকে নিয়ে চলে আসতে তাই আর আমার বাড়ী যাবার দরকার ছিল না। হসপিটালে পৌঁছে দেখলাম নিজের কেউ কাছে না থাকায় যা হবার তাই হয়েছে, ট্রিটমেন্টের তেমন কিছু তখোনো শুরু হয়নি। আইসিইউতে দেবার ব্যাবস্থা করতে গিয়ে টাকার জন্য বাবার সাহায্য নিতে হল। ওদিক থেকে মায়ের সাথে তিস্তাও পৌঁছে গেছে ততক্ষনে। তিস্তাকে দিয়ে মৌলীর মাকে ফোন করালাম, চিন্তা করার দরকার নেই..আমরা সামলে নিচ্ছি।
বাইরে অপেক্ষা করছি, ডাক্তারবাবু বেরোলে কথা বলে জানতে হবে পেশেন্টের অবস্থা ঠিক কিরকম। তিস্তা মাকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে বসে আছে। মাঝে মাঝে চোখের জল মুছতে দেখে মা ওকে বোঝাবার চেস্টা করছে। বেশ কিছুক্ষন পর ডাক্তারবাবু বেরোলে কথা বলে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল... প্রানের ভয় নেই তবে হাত পায়ের হাড় ভেঙ্গেছে। খবরটা পাওয়ার পর আবার মৌলীদেরকে জানালে ওরা কিছুটা নিশ্চিন্ত হল, ওর মা আমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেবেন বুঝতেই পারছিলেন না। বাবা অফিস থেকে ফেরার পথে এসেছিলেন, তিস্তা আর মাকে নিয়ে বাড়ী ফিরে গেছেন। আমাকে রাতে থেকে যেতে হল হসপিটালে, যোগাযোগ রাখার জন্য মায়ের মোবাইলটা আমার কাছে থাকছে। দুদিন পর মেজর অপারেশন, হাতে পায়ে প্লেট বসাতে হবে। মৌলী পরের দিন সকালে এসে গেল, সাথে ওর মা আর ভাই। আমাদের বাড়ীতেই থাকবেন ওনারা যতদিন প্রয়োজন।
অপারেশন ভালো ভাবেই হয়েছে। মৌলীর বাবা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছেন তবে আরো কিছুদিন সময় লাগবে ছাড়া পেতে। আমাদের দিক থেকে এতটা সাহায্য পেয়ে শুধু মৌলীরা নয় তিস্তাও ভীষন কৃতজ্ঞ, বারে বারে সেটা বোঝানোর চেস্টা করেছে আমাদেরকে। নতুন করে একটা সম্পর্ক তৈরী হওয়ায় মা বাবারাও খুব খুশী। ওদের তিন জনের এত বন্ধুত্বের কথা শুনে মা বলেছে শুধু তিস্তা নয়, চাইলে মৌলী আর চয়নিকাও আমাদের এখানে থেকে পড়াশোনা করতে পারে...ছেলে বাড়ীতে থাকবে না...মা নাকি তিন মেয়েকে নিয়ে বেশ থাকবে। আমি কথাটা শুনে যথারীতি মাকে বলেছি... আমি বাড়ী ফিরলে তোমার মেয়েরা আবার তাড়িয়ে দেবে না তো? তিস্তা ভেংচি কেটে বলেছে... তাড়ানোর তো প্রশ্নই উঠছে না কারন ঢুকতেই তো দেবো না...

______________________________
 
আমি যে নিঃস্ব হতে চাই #

বম্মা আর দাদাই নেই, আজ বাড়ীতে শুধু আমি আর আমার বিচ্ছুটা আছি…মনটা সকাল থেকেই উড়ু উড়ু, কি যেন একটা পেতে ইচ্ছে করছে আজ। বাথরুম নাকি মেয়েদের একান্ত নিজস্ব জায়গা যেখানে নিজের সাথে মন প্রান খুলে কথা বলা যায়…আজ নিজেকে দিয়ে তার প্রমান পেলাম…ঠান্ডা জলে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে নিতে ভাবছিলাম…যা চাইছি সেটা কি ঠিক? বুকের ভেতর থেকে কেউ যেন বলে উঠল…কেন ঠিক নয়? মন বললো আমি কোনো কিছু মানি না…আমার মনে হয়েছে এটাই ঠিক…আর কতদিন অপেক্ষা করবো? বোঝাতে পারলাম না ওকে…মেনে নেওয়া ছাড়া আর কি করার আছে…চোখ বুজে নিজের সাথে বোঝাপড়া করতে করতে ইচ্ছে হল নিজেকে একবার দেখার…আয়নায় মধ্যে নিজের নগ্নতায় নিজেই লজ্জা পেয়ে মুখ ঢাকলাম…যেন এই প্রথম নিজেকে দেখছি…মসৃন ত্বকের গা বেয়ে জলের ধারা পিছলে নেবে যেতে যেতে যেন আমাকে বলে যাচ্ছে…নিজেকে উজ়াড় করে দেবার সময় তো হল…আর কিসের জন্য অপেক্ষা করছিস…মনে হল…আজ যাকে দেখছি সে আমি নই …অন্য কেউ…আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে দেখতে ভাবছিলাম…ইস…কি ভীষন লজ্জা করবে যখন ও আমাকে দেখবে…আমাকে ছোঁবে…ভেজা চুল বুকের উপরে ফেলে ঢেকে দিয়ে বললাম…এখন থেকে তোমরা আর তিস্তার নয়…অন্য কেউ আসার সময় হয়েছে যেই শুধু তোমাদেরকে দেখবে…ছোঁবে…আদর করবে…মনে হল ওরা আড়ালে থাকতে রাজী নয় …চুলের ফাঁক দিয়ে নিজেদের ঔদ্ধত্ব আর সৌন্দর্য প্রকাশ করতে করতে যেন বলল আমায়…তুমি কি জানতে না যে আমরা তোমার নই... অন্য কারুর…এত দিন বোকার মতো আমাদেরকে নিজের ভেবে খুশী হয়েছো…বোকা মেয়ে কোথাকার। পাহাড় চুড়ায় বসে থাকা ছোট্ট বিচ্ছু দুটো যেন আরো দুষ্টু…কাঠবেড়ালীর মতো টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে যেন বোঝাতে চাইছে তারা এভারেষ্ট জয় করে ফেলেছে…দুটোকেই খুব করে বকুনি দিলাম…খুব মজা তাই না…ওর কথা ভাবছি দেখেই লাফিয়ে উঠেছো? আমাকে পাত্তাই দিলো না। ইস, বয়ে গেল আমার…দুষ্টুটার হাতে যখন পড়বে তখন বুঝবে তোমরা…কুট কুট করে ও যখন কামড়াবে, সব অহ্নকার তখন উধাও হয়ে যাবে। আমার মনের কথা কি করে ওরা বুঝলো কে জানে… আমাকে যেন বলতে চাইলো কি বোকা গো তুমি? তুমি কি বোঝো না…কি ভালো লাগবে তোমার ও যখন আমাদেরকে আলতো করে কামড়াবে…দেখবে, তুমি কেমন শিউরে শিউরে উঠবে তখন। চুল দিয়ে না হয় ওদেরকে আড়াল করলাম…তা সে যতই উঁকি দিক না কেন…আরো তো একজন আছে তাকে কিভাবে আড়াল করি? সে তো আরো দুষ্টু…মাঝে মাঝেই খুব জ্বালাতন করে মারে…কাকে যেন ওর চাই বলে আমার পেছনে লাগে। ওকেও বলে দি…তুমি যখন আমার নয়…একেবারে আমাকে জ্বালাবে না আর…দেখি তো কি করছে ভেবে তাকালাম……যা ভেবেছি তাই…ছিঃ ছিঃ একটুও লজ্জা নেই...নিঃর্লজ্জের মতো নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা না করে দেখানোর ইচ্ছে নিয়ে নিজের সগর্ব উপস্থিতি ঘোষনা করছে…লজ্জা নেই তো কি হয়েছে রুপ যেন ফেটে পড়ছে...নিজে মেয়ে হয়েও ওর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে হতে বললাম…এই যে, দুষ্টু…তুমি কি জানো…তুমি কার? তুমি এতদিন যার কথা ভাবতে সে আসছে…তুমি তৈরী তো তাকে সাদরে আহ্বান জানাতে…পারবে তো তোমার উষ্ণ কোমল আলিঙ্গনে আটকে রেখে তাকে খুশী করতে, যাতে সে বারে বারে তোমার কাছে ফিরে আসে। আমার প্রশ্নের উত্তরে সে খুব অহঙ্কারের সাথে জানালো…সময় হলেই দেখতে পাবে।
ঠোঁট দুটো বলে উঠল তুমি কি ভাবছো আমরা তোমার? মোটেও না…সাথে সাথে বাকি সবাইও এক সাথে বলে উঠল…আমরা কেউ তোমার নই…ওদেরকে বকুনি দিলাম… চুপ ক’র সবাই…আমি নিজেই যখন ওর তাহলে কি আর আমার বলে কিছু থাকলো? আমার সাথে সাথে তোমার সবাইও ওর…সবাই যেন বলে উঠল…ঠিকই তো…কিন্তু তুমি তো এখোনো বলে উঠতে পারলে না…যে তুমি ওকে কিছু দিতে চাও…কিছু পেতে চাও ওর কাছ থেকে। ওদেরকে বললাম…আমাকে তো দিতেই হবে…আমি যে আমার সব কিছু ওকে উজাড় করে দিয়ে নিঃস্ব হতে চাই…

প্রথম রাত # 

সকাল থেকেই ছিল আকাশ জ়োড়া ঘন কালো মেঘের আনাগোনা, দুপুর থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি, সাথে দমকা হাওয়া। বিকেল হয়ে গেল তবু থামার নাম নেই...অবশ্য থামার কথাও নয়। বঙ্গোপোসাগরে গভীর নিম্নচাপ ঘনীভুত হয়েছে…টিভিতে বার বার ঘোষনা করছে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার লোকজন যেন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়, গভীর সমুদ্রে থাকা নিরাপদ নয়। বাড়ীতে শুধু আমি আর তিস্তা, মা-কে নিয়ে বাবা কল্যানীতে এক অফিস কলিগ বোস কাকুর বাড়ীতে গেছে আজ সকালে, ফিরবে কাল বিকেলে। বোস কাকুর মেয়ে তানা-দির বিয়ের পাকা দেখার জন্য ছেলের বাড়ি থেকে আসবে আজ। আমারও যাবার কথা ছিল কিন্তু তিস্তা থাকায় আমার যাওয়া হয়নি। মা ভোর রাতে উঠে রান্না করে ফ্রিজে রেখে দিয়ে যাবে বলেছিল কিন্তু তিস্তা মাকে জড়িয়ে ধরে বায়না করে বলেছে…ও করে নেবে। মাত্র দুটো দিনের তো ব্যাপার। দুজনে মিলে রান্না করেছি…আমি মোটামুটি কাজ চালানোর মতো রান্না জানতাম…এর ভেতরে ও আরো কিছু শিখেছে, তাই আর খুব একটা অসুবিধা হয়নি তবে মাত্র সাত বার ও মায়ের মোবাইলে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছে এটা কি করবো, ওটা কি করবো গো বম্মা আর আমি তাই নিয়ে ওর পেছনে লাগতে গিয়ে তাড়া খেয়েছি... ও খুন্তি হাতে আমাকে তাড়া করে এলে মিথ্যে ভয় পাওয়ার ভান করে দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়েছি মায়ের ঘরের ওয়ার্ড্রোবের পেছনে। ও আমাকে খুঁজেছে সারা ঘরে, পায়নি। বারে বারে ডেকেছে, আমি সাড়া দিইনি...তারপরেই ও অভিমানে প্রায় কেঁদে ফেলছে দেখে বাধ্য হয়ে বেরিয়ে এলাম। ও দাঁড়িয়ে আছে চুপ করে আর আমি ওর সামনে হাসি মুখে বলেছি ওদিকে যে সব পুড়ে গেল, কি খাবো আমরা...ও অভিমান ভরা গলায় বলেছে... যাক পুড়ে সব, তোমাকে ওই খাওয়াবো আজ। আমি ওর মুখ তুলে ধরে জিজ্ঞেস করেছি...আমি তো না হয় পোড়া খাবো...তুমি কি খাবে? ও আস্তে করে বলেছে...তুমি পোড়া খেলে আমাকেও তাই খেতে হবে... তারপরেও আমার অভিমানিনীর মান ভাঙ্গাতে আমাকে আদর করতে হয়েছে, অনেক চুমু দিতে হয়েছে...

দুপুরে খেতে বসে খুব মজা করেছি…কোনোটায় নুন কম তো কোনোটায় ঝাল বেশী। ও বায়না করেছিল আজ ও আমার হাতে ছাড়া খাবেই না…ওকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে পাশাপাশি বসে খাচ্ছিলাম…ওকে খাইয়ে দিতে গেলে মাঝে মাঝেই আমার আঙ্গুল মুখে নিয়ে চুষেছে, ক খোনো বা কুট কুট করে কামড়ে দিয়েছে…’উঃ লাগছে তো’ বললে শুনতে হয়েছে... এই টুকুতেই উঃ করে উঠছো? আরো কতো জ্বালাবো তার ঠিক আছে নাকি…এখোনো তো সারা জীবনটা পড়ে আছে সামনে…পারবে তো আমাকে নিয়ে সংসার করতে?

ইচ্ছে ছিল দুপুরে ওকে খুব করে আদর করবো কিন্তু বিধি বাম থাকলে যা হয়। এই বিচ্ছিরি ওয়েদারের ভেতরেও আমাদের কাজের মাসী এসে হাজির। এমনিতে যখন তখন কামাই করে কিন্তু আজ যে কেন ওর এত ভালো সার্ভিস বুঝলাম না। নিজে তো এসেছে আবার সাথে করে বাচ্চাটাকেও নিয়ে এসেছে। সারা বাড়ি ঝাঁট দেবে, মুছবে, বাসন ধোবে...মাথা গরম হয়ে গেলেও কিছু বলতে পারলাম না। তিস্তা বোধহয় আমার মনের কথা বুঝে গিয়েছিল... আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ভেংচে দিয়ে চলে গেল টিভি দেখতে। কি আর করবো...নিজের ঘরে গিয়ে গিটারটা নিয়ে বসলাম। কাজ হয়ে গেলেও মাসীকে অপেক্ষা করতে বলতে হল...বৃষ্টির জোর বেড়েছে। একটু না কমলে বাচ্চা নিয়ে বেরোতে দেওয়া ঠিক হবে না।
সন্ধে সাতটা প্রায় বাজে। বসার ঘরে সোফাতে বসে টিভি দেখছি, তিস্তা আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে …ওর রেশম কোমল চুলে বিলি কাটতে কাটতে দেখলাম টিভি দেখছে না, চোখ বুজে কিছু ভাবছে হয়তো দেখে ওকে ডাকলাম…
- এই…তিস্তা…
আমার ডাকে ও সাড়া দিলো কিন্তু কি বললো বুঝলাম না। মুখ নিচু করে বললাম…কিছু ভাবছো?
- হুঁ…
- কি…
- আজ আমরা ছাড়া আর কেউ নেই বাড়ীতে…
আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম...কি হয়েছে তাতে…তোমার কি ভয় করছে নাকি?
- নাঃ…ভয় করবে কেন…
- তাহলে?
ও পাশ ফিরে সোজা হয়ে শুয়ে আমার দিকে তাকালো… হাত বাড়িয়ে আমার গালে আলতো ভাবে আঙ্গুল ছুঁইয়ে রেখে বলল…তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই এখানে…
- হু...তা নেই...
- বাইরে ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি হচ্ছে…
- হচ্ছে...
- রজনীগন্ধার গাছগুলো ফুলে ফুলে ভরে আছে…
- আছে...
- কি রোমান্টিক …তাই না…
ওর আবেগ ভরা কথা গুলো শুনে মনে হল ও কিছু বলতে চাইছে এই কথা গুলোর ভেতর দিয়ে...চুপ করে ভাবছিলাম…কি বলতে চাইছে…হঠাৎই যেন বুঝতে পারলাম ও কি চাইছে… ভাবছিলাম…ইস…আমি সত্যিই একটা আস্ত বুদ্ধুরাম…আমারই ওকে বলা উচিত ছিল আজ…ওর হাতের উপরে হাত রেখে আমার গালে ওর আঙ্গুল চেপে ধরে বললাম…একটু ওঠো না…
- কেন…
- না উঠলে বলবো কিভাবে…
ইচ্ছে না থাকলেও ও উঠে আমার পাশে বসলো…আমি সোফা থেকে নেমে ওর পায়ের কাছে হাঁটুতে ভর বসে দুহাত দিয়ে ওর ডান হাতের আঙ্গুল ধরে মুখ নিচু করে চুমু খেয়ে মুখ তুলে তাকালাম... ও আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে...ওর টানা টানা কাজল কালো চোখে স্বপ্নের আবেশ...অনুনয়ের স্বরে বললাম…রাজকুমারী…এই অধমের কিছু আর্জি আছে…পেশ করার অনুমতি চাই…
আমাকে ওইভাবে অভিনয় করতে দেখে ও ফিক করে হেসে ফেলল…তারপরে মুখ গম্ভির করে বলল…অনুমতি দিলাম…
- রাজকুমারী…যদি সম্ভব হয় আজ রাতে কি এই অধম তার প্রেয়সীকে কি খুব কাছে পেতে পারে?
- বুঝলাম না…কাছে বলতে ঠিক কি বলতে চাওয়া হচ্ছে…
- কাছে মানে... ওই আর কি…
ও আমার দুচোখে কিছু যেন খোঁজার চেস্টা করে বলল...হুম…বুঝেছি…শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া যেতে পারে...
- কি শর্ত রাজকুমারী?
- প্রথমত…বাগান থেকে টাটকা রজনীগন্ধা তুলে নিয়ে আসতে হবে। দ্বিতীয়ত…তোমার প্রেয়সীর এখন সেফ পিরিয়ড চলছে না…তার ব্যাবস্থা করতে হবে...
যথা আজ্ঞা রাজকুমারী …বলে আমি আবার ওর হাতে চুমু খেয়ে উঠে এসে ওর পাশে বসতেই আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে বলল…তুমি একটা পাজী…দুষ্টু…শয়তান…
- উমমম...কেন...আমি আবার কি করলাম...
- ইস...কি করলাম...আমাকেই সব কিছু বলতে হবে আগে?
ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললাম…তুমি যদি কিছু মনে কর, ভেবে আর বলতে পারি না। ও আমার বুকের এক দিকে মাথা রেখে আর একদিকে আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুকি কাটতে কাটতে বলল…তুমি কিছু চাইলে আমি কি না করতে পারি? আমি তো চাই তুমি নিজের থেকে আমাকে বলো আমার কাছে তুমি কি চাও। মুখ নিচু করে মৃদু স্বরে বললাম…মাঝে মাঝে আমার খুব ভয় করে তিস্তা, আমার কোনো ভুলের জন্য তুমি যদি দূরে চলে যাও। ও কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো…তোমার ভালোবাসা দিয়ে পারবে না আমাকে দূর থেকে ফিরিয়ে আনতে? ওকে বুকে চেপে ধরে ফিসফিস করে বললাম…পারবো। তারপর কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে ছিলাম। ও আমার বুকের উপর থেকে মাথা তুলে কাঁধে উপরে রেখে বলল…এই…আমার না খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে আজ। খাওয়াবে? কেমন যেন একটা ঘোরের ভেতরে ছিলাম ওকে আজ রাতে একান্ত ভাবে পাবো ভাবতে ভাবতে...তার ভেতরে ওর ফুচকা খাওয়ার ইচ্ছের কথা শুনে হাসি পেয়ে গেল…কোথায় আমি ভাবছি…আমাদের জীবনের প্রথম রাত কিভাবে স্মরনীয় করে রাখা যায় আর ওর এখন ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে…হাসি চেপে বললাম…যথা আজ্ঞা রাজকুমারী…

[+] 2 users Like রাজা রাম's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)