Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
09-01-2021, 03:27 PM
(This post was last modified: 16-01-2021, 07:27 PM by Mr Fantastic. Edited 4 times in total. Edited 4 times in total.)
মুখবন্ধ - অবসর সময়ে মনের বিভিন্ন কল্পনা ও খেয়ালে কিছু ভাবনা-কথা গল্পের আকারে লিপিবদ্ধ করে রাখি কম্পিউটারের পর্দায়। হয়তো এগুলি সেই অর্থে যৌন সাহিত্য নয়, কারণ Xossipy-র বাইরে বাস্তব দুনিয়ায় গল্প লিখতে হলে যৌনতায় রাশ টানতে হয়। তাও সাধারণ মুষ্টিমেয় এই গল্পগুলি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। পাঠক-পাঠিকারা গল্প পড়ে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করলে খুশি হবো, উৎসাহ পাবো আরও কিছু লেখার। ধন্যবাদ।
সুন্দর দুটি ডিজিটাল প্রচ্ছদ এঁকে দেবার জন্য বাবানকে অনেক ধন্যবাদ
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
সুজন ও দীপালির কথা
একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। ছেলেটির নাম ধরা যাক সুজন আর মেয়েটির নাম ধরা যাক দীপালি। কার কত বয়স, কে কি করে, এসব জেনে আমাদের দরকার নেই।
একদিন দীপালি চোখ সজল আর বিস্ফারিত করে বলল, ছিঃ !
শুনে সুজন ভয়ানক ভড়কে গেল। একবার ভাবলো হাত বাড়িয়ে দীপালির একখানা হাত ধরে। ভেবেচিন্তে সে ইচ্ছা ত্যাগ করে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেন, ছি কেন? কিসের ছি?
-- মাকে তুমি এমন করে অবহেলা করো !
বাস্তবিকই দীপালির চোখ দিয়ে টপটপ করে কয়েক ফোঁটা জল মাটিতে ঝরে পড়ল। কোমল মন কিনা, কারও দুঃখকষ্টের কথা কানে এলেই মনটা উত্তপ্ত বালিতে রাখা একখন্ড বরফের মতো গলে যায়। অবশ্য সবচেয়ে বেশি গলে নিজের মন খারাপে। ঠিক গরম তাওয়ায় বরফ দেওয়ার মতো, কিন্তু জীবনে এখনও দুঃখকষ্টের সেরকম আবির্ভাব না ঘটায় পরের জন্য মনটাকে একটু গলাতে না পারলে দীপালির দিন যেন কাটতে চায় না।
দীপালির অভিযোগ সুজনকে আকস্মিক লজ্জায় প্রায় উদ্ভ্রান্ত করে দিল। কেমন যেন বদলে গেল ছেলেটা। সত্যিই তো সে তার বিধবা মাকে অবহেলাই করে। একটা আলগা ছাড়া ছাড়া ভাব। দিনে দিনে ছেলেটার পোশাকের চাকচিক্য উঠে গেল, খরচের বাহুল্য কমে গেল। চুল অবিন্যস্ত, অতিরিক্ত আলস্যটা দরকারি বিশ্রামের চার ভাগের একভাগে এসে ঠেকলো। না খায় সে আর সিগারেট, না যায় দীপালিকে নিয়ে সপ্তাহে দুদিন সিনেমা-রেস্তোরাঁয়।
অনেক দোনামোনা করে মাকে সে বলে, মা, তোমায় আমি বড়ো বেশি অবহেলা করেছি, এই অধমকে মাপ করো। বাকি জীবনটা আমি তোমার সেবা করে কাটিয়ে দেব।
-- বাকি জীবনটা আমি মার সেবা করে কাটিয়ে দেবো দীপালি !
দীপালি তা ভালো করেই টের পেতে আরম্ভ করেছিল। তার মনে হল কি যেন একটা ঘূর্ণিপাকে পড়ে আজকাল তার মাথা ধরার আর শেষ থাকছে না। মুখটা পাংশু দেখাচ্ছে, শরীরটা দেখাচ্ছে রোগাটে, কথাবার্তা হয়ে গেছে অসংলগ্ন। এমন একটা সাংঘাতিক ভুল সে কিভাবে করে ফেলল যার ফাঁদে পড়ে সারাজীবন ছটফট করতে হবে, এই কথাটা সব স্ত্রীলোকই জীবনের কোনো একটা পর্যায়ে অনেকবার ভাবে আর উতলা হয়। দীপালি ঠিক সেইরকম ভাবেই উতলা হতে আরম্ভ করলো। একদিন তাই সুজনের সঙ্গে অতি সাধারণ বিষয়ে কথা বলতে বলতে আবার তার চোখ দিয়ে জল পড়তে শুরু করল।
-- একি কাঁদছো কেন?
হাতের ভাঁজে মুখ লুকিয়ে দীপালি এবার রীতিমতো ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
সুজন ভারী বিচলিত হয়ে গেল। দীপালির একটি হাত নিজের করতলে ধরে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে দীপালি, কাঁদছো কেন?
দীপালি অশ্রুচোখে বলল, তুমি কেবল মাকে নিয়ে মেতে আছো, আমার দিকে ফিরেও তাকাও না আর। আমি কি তোমার কেউ নই?
কি সর্বনাশ, দীপালির মুখে এই অভিযোগ - অবহেলার !
সুজনের হৃৎপিণ্ড কি যেন এক অজানা বাষ্পে ফুলে ফেঁপে উঠলো। সত্যি, জীবনের কি শোচনীয় অপচয় ঘটছে। অন্ধের মতো সোনার খনি থেকে সে কি ভাবেই না বিদায় গ্রহণ করেছে !
সুজনের ভোল আবার পাল্টে গেল। পরনে কেতাদুরস্ত পোশাক, খরচের বাহুল্য বেড়ে গেল। বিলাসিতার অতুলনীয় আনন্দে দিনরাত্রি পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। দীপালিকে নিয়ে হপ্তায় দু-তিনদিন সিনেমা-শপিং মলে যেতে আরম্ভ করল। অবশ্য সেজন্য মাকে জরাজীর্ণ অবস্থায় অবহেলায় দিন কাটাতে হয়, কিন্তু তার তো প্রতিকার নেই, তাই তা স্বাভাবিক।
দীপালির মন খুঁতখুঁত করে। মাঝে মাঝে চোখে জলও আসে, সুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে সে আকাশপাতাল ভাবে। ভাবে, সুজনেরা কি -- হয় আকাশে ওঠে নয়তো পাতালে নামে। পৃথিবীতে থাকতে পারে না? এই মাটির পৃথিবীতে?
( সমাপ্ত )
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
দারুন শুরু. এইটুকুর মধ্যে কত কি পেলাম ❤
ওই সেই ভারসাম্য...... সুজনরা যে কোনো একদিনে সব ভার দিতে পছন্দ করে. আরেকদিকের অবস্থা কি সেটা আর খেয়াল থাকেনা. হয়তো এই সমাজ ব্যবস্থা ছোট থেকেই এদের তাই শেখায়... আবার কখনো নিজেরাই শিখে নেয়.
Posts: 127
Threads: 2
Likes Received: 190 in 92 posts
Likes Given: 581
Joined: Jun 2019
Reputation:
20
B-A-L-A-N-C-E এই ছোট্ট একটা শব্দ কিন্তু সবচেয়ে কঠিন একটা কাজ ।
Posts: 446
Threads: 3
Likes Received: 11,694 in 2,466 posts
Likes Given: 4,988
Joined: Jan 2019
Reputation:
2,925
ঋত্বিক চক্রবর্তীর একটা সিনেমা দেখে ছিলাম "আসা যাওয়ার মাঝে" । তোমার গল্পটা পড়ে ঠিক সেই রকম অনুভূতি হলো । ছোট্ট গল্পের মাধ্যমে কিভাবে জীবনের বড় একটা পরিস্থিতি দেখিয়েছো । দোষ আসলে এই গল্পের কেনো চরিত্রেরই না । দোষ বোধহয় দৃষ্টিভঙ্গির । সমাজে উজানের মতো মানুষের অভাব নেই । তারা মা এবং স্ত্রীর চাহিদার মধ্যেই আটকে রয়ে যায় । অনেক টা ঐরঙ্গজেব এর দক্ষিনাত্ব বিজয়ের মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়।
Posts: 1,886
Threads: 6
Likes Received: 6,324 in 1,869 posts
Likes Given: 2,644
Joined: Jun 2019
Reputation:
739
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(09-01-2021, 03:45 PM)Baban Wrote: দারুন শুরু. এইটুকুর মধ্যে কত কি পেলাম ❤
ওই সেই ভারসাম্য...... সুজনরা যে কোনো একদিনে সব ভার দিতে পছন্দ করে. আরেকদিকের অবস্থা কি সেটা আর খেয়াল থাকেনা. হয়তো এই সমাজ ব্যবস্থা ছোট থেকেই এদের তাই শেখায়... আবার কখনো নিজেরাই শিখে নেয়.
হ্যাঁ, এটা আসলে একটা রূপকধর্মী অনুগল্প। সুজনদের মন আসলে খুব পরিবর্তনশীল আর তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়েই ভাবে, তাই ভুলে যায় ভারসাম্যতা আর ভালোবাসার বিভিন্ন রূপ
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(09-01-2021, 06:35 PM)Buro_Modon Wrote: B-A-L-A-N-C-E এই ছোট্ট একটা শব্দ কিন্তু সবচেয়ে কঠিন একটা কাজ ।
হ্যাঁ, এই ব্যালেন্স জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু যে মা আর বউয়ের মধ্যে ব্যালেন্স রক্ষা করতে হয় তা নয়, সব ক্ষেত্রেই এটা প্রয়োজন
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(09-01-2021, 07:27 PM)Jupiter10 Wrote: ঋত্বিক চক্রবর্তীর একটা সিনেমা দেখে ছিলাম "আসা যাওয়ার মাঝে" । তোমার গল্পটা পড়ে ঠিক সেই রকম অনুভূতি হলো । ছোট্ট গল্পের মাধ্যমে কিভাবে জীবনের বড় একটা পরিস্থিতি দেখিয়েছো । দোষ আসলে এই গল্পের কেনো চরিত্রেরই না । দোষ বোধহয় দৃষ্টিভঙ্গির । সমাজে উজানের মতো মানুষের অভাব নেই । তারা মা এবং স্ত্রীর চাহিদার মধ্যেই আটকে রয়ে যায় । অনেক টা ঐরঙ্গজেব এর দক্ষিনাত্ব বিজয়ের মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়।
You have good taste of movies ! আসলে এই দ্বন্দ্বটা তো চিরকালীন ছিল, আছে আর থাকবেও তবে উজান কেন এলো ? এটায় তো সুজন রয়েছে
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(09-01-2021, 10:35 PM)pinuram Wrote: ঠিকানাটা দারুন !!!!!!
এই অধমের বাসায় তোমাকে স্বাগত !!
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(09-01-2021, 11:05 PM)ddey333 Wrote: কিন্তু পিন কোড বলা নেই ....
Google > Xossipy > Stories > Bengali > this thread, পিনকোডের দরকার নাই !!
Posts: 446
Threads: 3
Likes Received: 11,694 in 2,466 posts
Likes Given: 4,988
Joined: Jan 2019
Reputation:
2,925
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(10-01-2021, 08:04 AM)Jupiter10 Wrote: এখন সব জায়গায় উজান কেই দেখছি
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
** মধুচন্দ্রিমা **
“বিয়ে তো জীবনে একবারই হয় !” এই বলে বড়ো অভিমান করে থাকে নতুন বউ। বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত বাঙালি ছেলের মতো এর বরটিও বিয়ের পর প্রথম নারীসঙ্গ পেয়েছে। জীবনে এই প্রথম নারীর নিবিড় সান্নিধ্য এমনিতেই তার মাথার সবটুকু ঘোলাটে করে রেখেছে। কিভাবে এই নিজস্ব রমণীটির কাছে নিজেকে বড় করে দেখানো যায় তার ফন্দি ফিকির মাথায় খেলছে সবসময়। কি বললে খুশি হবে মেয়েটি, কি করলে মুগ্ধ হয়ে যাবে, একবার ‘ইমপ্রেস’ করার জন্য বলে ফেলেছিল -- জানো, সামনের বছর একটা বাইক কিনবো ! নতুন বউ চমকে উঠে বলেছিল -- খবরদার না ! দু’চাকা হল শয়তানের চাকা, ভীষণ একসিডেন্ট হয় ওতে।
ছেলেটি খুশি হয় তাতে। কিন্তু কিন্তু বিয়ের এক মাসের মাথাতেই মেয়েটি জানায় -- সবাই হানিমুনে যায়, আমরা যাবো না?
শুনে ছেলেটা মনে মনে গুম হয়ে যায়। বিয়েতে সর্বদা বাজেট ছাড়িয়ে খরচ হয়, তারও হয়েছে। তাছাড়া ছুটি পাওনা নেই তেমন। ছেলেটা আবার একটু ঘরকুনোও বটে। জবাব দিল -- এসব ইংরেজিয়ানার কুফল। বিদেশী প্রথা। আমরা এসব মানবো না। বউ খুশি হয় না। অভিমান করে বলে -- বিয়ে তো জীবনে একবারই হয় ! সবাই যায়। বিদেশী প্রথা আবার কি? তুমি তো দিব্বি প্যান্ট শার্ট পরে অফিসে যাও, ধুতি পাঞ্জাবি পরো না কেন? এটা ইংরেজিয়ানা নয় বুঝি?
ছেলেটা সিগারেট ধরিয়ে বিষন্ন দৃষ্টিতে বউয়ের মুখ দেখে। তারপর বলে -- আচ্ছা দেখবো।
বউ আশান্বিত হয়ে বলে -- খুব দূর নয়, নির্জন জায়গায় যাবো কিন্ত। শুধু তুমি আর আমি।
-- পুরী?
-- আমার পাহাড় ভালো লাগে।
-- তবে দার্জিলিং?
-- হ্যাঁ। বউ হেসে গলা কাত করে দেয়।
বিয়ের পর থেকে মা একটু গম্ভীর। ছেলের সঙ্গে ভালো করে কথা কন না। তাকানোর মধ্যে কেমন যেন একটু উদাস অভিমান ভাব। খেতে বসেছে ছেলেটা, মা ভাত দিয়ে বলে -- রিমি বলছিল দাদা-বউদি হানিমুনে যাচ্ছে। তা কোথায় যাওয়া ঠিক করলি?
-- কোথায় আর যাবো? এখনো সেরকম কিছু ঠিক নেই। ছেলেটা একটু লজ্জা পেল যেন, সেটা ঢাকতে গোগ্রাসে খেতে থাকে।
-- আস্তে খা। মা একটু চুপ করে থেকে বলেন -- উনিই নতুন বউয়ের মাথা খাচ্ছেন। কেবল বলতে শুনি, যাও ঘুরে টুরে এসো। একটু নিরিবিলিতে থেকে এলে বাঁধনটা পোক্ত হয়। কই আমরা তো কখনো যাইনি, তা বলে আমাদের বাঁধন পলকা হয়েছে?
উনি হলেন ছেলের বাবা। প্রশ্রয় কিছুটা বেশিই দেন নতুন বৌকে। বলেন -- সংসারের চার্জ এখন থেকে তোমার হাতে বৌমা। বুঝেসুঝে নাও। মা তাতে খুশি হন না। আড়ালে বলেন, কেন, আমার কি গতরে শুঁয়োপোকা ধরেছে? সংসারের টানাপোড়েনগুলো ছেলেটা বিয়ের আগে বুঝতো না। এখন কিছু কিছু বুঝছে।
নতুন বউ একদিন রাতে বলল -- রিমি আজ কি বলেছে জানো, বলে দাদা নাকি বিয়ের আগে একটুও স্টাইল করতো না। আজকাল খুব পোশাকের দিকে নজর। আর বলে, বিয়েতে দাদার অনেক খরচ হয়েছে। এবার হানিমুন করতে গেলে সংসার নাকি ভেসে যাবে। কি হিংসুটে দেখো !
ছেলেটা উদাস ভাবে বলল -- ওর মনটা আসলে খুব ভালো।
-- ছাই ভালো। তোমার আমার বেশি ভাব পছন্দ করেনা। আমি দেখবো বিয়ের পর ও নিজে হানিমুনে যায় কিনা !
চিন্তায় ছেলেটার অনেক রাত অবধি ঘুম আসে না। পুজোর আর দেরি নেই। দার্জিলিঙের মরসুম পড়েই গেল। রিজার্ভেশনে এখন ভিড়, কতো লোক যে পুজোতে দার্জিলিং যাবে।
অনেক অনেক ধস্তাধস্তির পর দার্জিলিঙের দুটো রিজার্ভেশন পায়। বারোদিনের ছুটি নেয়। বাবার হাতে সেই মাসে বেশ কিছু টাকা কম দেয়। মায়ের মুখ গম্ভীর। বোন পেট পাতলা, সে বলেই দেয় -- ওসব মধুচন্দ্রিমা-টন্দ্রিমা বড়লোকদের ব্যাপার।
ছেলেটার মন খারাপ হয়। কিন্তু বউ খুশি, বাড়ির সবাই হিংসে করুক তাকে। হিংসে করে জ্বলুক।
পথে যা হওয়ার হলো। অনর্গল পয়সা বেরিয়ে যাচ্ছে। কুলি, খাবার, চা কতো কি। দার্জিলিং-এ যত সস্তায় থাকবে ভেবেছিলো, হলো না। সাধ্যের মধ্যে থাকা হোটেলগুলি সব ভর্তি। বহু কষ্টে একটা গেস্ট হাউস পাওয়া গেল। রোজের ভাড়া একটু বেশি, সুতরাং বউকে চুপিচুপি বলল -- পাঁচদিনের বেশি থাকা যাবে না, টাকা নেই। বড়ো মেঘলা দার্জিলিং। বৃষ্টি পড়ছে থেকে থেকে। চাঁদ-টাদ দেখাই যায় না, পাহাড় মুখ লুকিয়ে আছে জমাট কুয়াশায়। ছেলেটা বিছানায় শুয়ে পা নাচাতে নাচাতে বলে, টাকাটাই জলে গেল।
বউ ঝামটা মেরে বলে --জলে আবার কি? আসা তো হলো। লোকে বলতে পারবে না যে ওরা হানিমুনে যায়নি।
ছেলেটা বউয়ের দিকে অর্থপূর্ণ ভাবে তাকিয়ে বলে -- ও আচ্ছা, লোক দেখানোর জন্য আমরা হানিমুন আসবো ঠিক করেছিলাম?
--ধ্যাত !
ছেলেটা হাত বাড়িয়ে বউকে কাছে টেনে নিল। বিয়ের পর এই প্রথম ওরা বাড়ির বাইরে নির্জনে একে অপরকে নিজের মতো করে পেয়েছে। ডুবে যায় দুজনে সুখ সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে।
দুদিন পর রোদ উঠলো। খুব বেড়ালো দুজনে সেদিন। বউ এটা সেটা নানা রকম জিনিস কিনতে চায়, বরের জন্য ভুটিয়া সোয়েটার, ননদের জন্য পাথরের মালা, মায়ের জন্য শাল। ছেলেটা সবরকম কেনাকাটায় বাধা দিতে থাকে, কেবল বলে- উঁহু, বাজেটে কুলোবে না। পরদিন গাড়ি ভাড়া করে টাইগার হিল, ঘুম, মনাস্ট্রি, সিঞ্চল লেক দেখলো। এক স্বর্গীয় আনন্দের জলে যেন মুখ ধুয়েছে বউ, এমন উজ্জ্বল দেখাল তার মুখ। ছেলেটা নিসর্গ দেখে যতটা না আনন্দ পেল, তার থেকেও দ্বিগুন খুশি হলো বউয়ের হাসিমাখা ঝলমলে মুখ দেখে -- হোক না টাকা খরচ, আহা ও তো খুশি হয়েছে !
ফেরার সময় হাওড়া স্টেশনেই টাকা শেষ। ট্যাক্সি করে বাড়ি এসে ভাড়া মেটাল। বাড়িঘর কেমন জীর্ণ মনে হচ্ছে ছেলেটির। মা-বাবাকে কি আরেকটু বুড়ো দেখাচ্ছে? রিমিরও মুখটা বসে গেছে মনে হচ্ছে। কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য করলো ছেলেটি, ওরা ফিরে আসায় বাড়ির সবাই খুশিতে ছুটে এসে ধরলো তাদের।
-- ও বৌমা, কেমন ঘুরলে? ভালো ছিলে তো সব? কি রকম বাজারদর ওখানে? বাহ্ বউদি এই মালাটা আমার জন্য এনেছো? ভীষণ সুন্দর তো ! বউ নিজের নাম করে অনেকগুলো জিনিস কিনেছিলো। কিন্তু ছেলেটি অবাক হয়ে দেখলো সে সব জিনিস অকৃপণভাবে বাড়ির সবাইকে বিলিয়ে দিচ্ছে বউ। সে রাতে যখন চাঁদ উঠলো তখন ছেলেটি খোলা জানলার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে ভাবলো, বাহঃ ভারী মিষ্টি চাঁদ উঠেছে তো আজ !
( সমাপ্ত )
Posts: 438
Threads: 3
Likes Received: 792 in 413 posts
Likes Given: 6,278
Joined: Jul 2019
Reputation:
160
(10-01-2021, 01:09 PM)Mr Fantastic Wrote:
** মধুচন্দ্রিমা **
-- ও বৌমা, কেমন ঘুরলে? ভালো ছিলে তো সব? কি রকম বাজারদর ওখানে? বাহ্ বউদি এই মালাটা আমার জন্য এনেছো? ভীষণ সুন্দর তো ! বউ নিজের নাম করে অনেকগুলো জিনিস কিনেছিলো। কিন্তু ছেলেটি অবাক হয়ে দেখলো সে সব জিনিস অকৃপণভাবে বাড়ির সবাইকে বিলিয়ে দিচ্ছে বউ। সে রাতে যখন চাঁদ উঠলো তখন ছেলেটি খোলা জানলার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে ভাবলো, বাহঃ ভারী মিষ্টি চাঁদ উঠেছে তো আজ !
( সমাপ্ত )
dibyi galpo, shesh kore ekti kathai mone holo- Bah!
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
খুব সুন্দর গল্প. অনেক কিছু তুলে ধরলে গল্পের মাধ্যমে. মানুষ সবসময় মুখে যা বলে মনেও যে সেটাই ভাবে তা কিন্তু নয়. ঐযে ছেলে বৌমাকে ফিরে পেয়ে বাবা মায়ের বোনের মুখের হাসি, আবার নিজের স্ত্রীয়ের অনেক কিছু কাছের মানুষদের উপহার দিয়ে দেওয়া.... সব কিছুই অবাকও করায় আবার মনে একটা হালকা সুখের অনুভূতিও জাগ্রত হয় ❤
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(10-01-2021, 01:44 PM)nilr1 Wrote: dibyi galpo, shesh kore ekti kathai mone holo- Bah!
আমার থ্রেডে তোমার পদধূলি পেয়ে আর গল্পের মন্তব্য পেয়ে খুশি হলাম
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(10-01-2021, 01:59 PM)Baban Wrote: খুব সুন্দর গল্প. অনেক কিছু তুলে ধরলে গল্পের মাধ্যমে. মানুষ সবসময় মুখে যা বলে মনেও যে সেটাই ভাবে তা কিন্তু নয়. ঐযে ছেলে বৌমাকে ফিরে পেয়ে বাবা মায়ের বোনের মুখের হাসি, আবার নিজের স্ত্রীয়ের অনেক কিছু কাছের মানুষদের উপহার দিয়ে দেওয়া.... সব কিছুই অবাকও করায় আবার মনে একটা হালকা সুখের অনুভূতিও জাগ্রত হয় ❤
একদমই তাই, মুখে বিরক্তি আর অসন্তোষ প্রকাশ করলেও মা আর বোন চেয়েছিল ওরা একটু ঘুরে আনন্দ করে আসুক। আবার বউয়ের কথায় হালকা স্বার্থপরতা প্রথমে চোখে পড়লেও শেষে কিভাবে নিজের নামে কেনা জিনিস গুলি বাড়ির সবাইকে বিলিয়ে দিলো এভাবে জিনিস ভাগ করে নিলে ভালোবাসা বাড়ে, সম্পর্ক অটুট হয়। আসলে নারী মনের ব্যাপ্তি, তার বিশালতা বুঝতে গেলে একটু ধৈর্য রাখতেই হয়
Posts: 1,886
Threads: 6
Likes Received: 6,324 in 1,869 posts
Likes Given: 2,644
Joined: Jun 2019
Reputation:
739
(10-01-2021, 01:09 PM)Mr Fantastic Wrote:
** মধুচন্দ্রিমা **
“বিয়ে তো জীবনে একবারই হয় !”
( সমাপ্ত )
হে হে, কে বলেছে যে বিয়ে একবার হয় জীবনে? চোখ খুলে দেখো, এইলিজাবেথ টেলর, কতগুলো বিয়ে করেছিল জানো ? আটবার, ভাবা যায় !
যাই হোক, এক একটা যা মণি মুক্তো উপহার দিচ্ছ এই ঠিকানায়, কি ভাবে ব্যাক্ত করব নিজেকে বলা মুশকিল! মাঝে মাঝে মনে হয় শালা আমি কয়েক'শ পাতা গল্প লিখে তবে এই মনোভাব ব্যাক্ত করতে পারি আর তুমি কি না একটা ছোট গল্পে সব কিছু ব্যাক্ত করে দিলে! ! টুপি খোলা সেলাম তোমাকে! নারী ধরিত্রীর রূপ, আরো একবার প্রকাশিত হল! গল্পটা পড়ে মনে হল কোন মন্দিরের ধুপের গন্ধ, ধুপ যেমন নিভে যাওয়ার পরেও সুগন্ধের রেশ রেখে যায়, তেমনি এই গল্পের ওই শেষে লাইনটা, আকাশের চাঁদের সাথে যে তুলনা করলে, সেই রেশ রেখে গেল মনের মধ্যে !!!!!!
|