Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
27-12-2020, 12:18 PM
** সত্যি কি প্রেম ছিল **
লেখায় - আরুষি
ভূমিকাঃ
আমি লিখতে জানি না, একটু চেষ্টা করছি। গল্পটা কিছু দিনের মধ্যে শুরু করব। আপনাদের আশির্বাদ পেলে নিজেকে খুব ধন্য মনে করব। গল্পে কোন ভুল হলে মাফ করে দেবেন।
এই গল্পটা একটি মেয়ের যে তার বান্ধুকে ভালবাসত কিন্তু দুই জনের মধ্যে কেউই কাউকে শেষ পর্যন্ত বলে উঠতে পারলো না।
সত্যি কি প্রেম ছিল (#01)
শীতকাল, আর কলকাতার শীত আসতে একটু সময় নেয়। সকালের রোদটা বেশ মিষ্টি লাগে। ঘুম থেকে উঠে কারুর কি আর কলেজ যেতে ভাল লাগে তাও যেতে হয়। কুড়িটা শিত কাটিয়ে এই তো সবে কলেজ এ পা রেখেছিলাম সেইদিন। ছোটবেলা থেকে শুধু পড়াশুনা পড়াশুনা করে কাটিয়ে গেলাম। অনেক কিছু তো করতে পারিনি বা করতে মন চায়নি। চারদিকে মেয়েদের দেখে মনে হত ওরা কত চনমনে উছহল। যেন সবাই একটা বাঁধনহারা নদী। আমি বরাবর শান্তশিসটি মেয়ে ছিলাম। থাকার মধ্যে এক প্রানের বান্ধবি, বাসবি, ছাড়া আমার বিশেষ কেউ বন্ধু বান্ধবী ছিলনা। কোনদিন তো জিন্স ও পরিনি তাই তো ছেলেরাও কেমন কেমন করে তাকিয়ে দেখত আর হইত পেছনে হাসতও হবে। আমার মনে হত মাঝয়ে মাঝয়ে ডানা মেলে উড়ে যেতে যেথাই দু চখ যায়। মনে হত কেউ যদি আমার কাছে আমাকে চায় তো আমি কি বলব তাই তো আর কোন দিন কাউকে মুখ ফুটে কিছু বলতেই পারলাম না। এই ভাবে কেটে যাই দু মাস, শুধু পড়াশুনা।
হাঁ নভেম্বর এর প্রথমে ও কলেজ জইন করে। আমাদের চেয়ে একটু দেরিতে জইন করে। কারন তো র সেইদিন জানতাম না। লাস্ট বেঞ্চে বসে গুরু গম্ভির গলায় স্যার এর প্রশ্নর উত্তর দেই। আমি ফার্স্ট বেঞ্চয় এ বসে পেছনে তাকিয়ে খুঁজতে চেষ্টা করি কে এই রকম ভারি গলায় উত্তর দেই। চারদিকে এত ছেলে মেয়েদের মধ্যে প্রথম দিন ওকে দেখতে পাইনি। তারপরে টিফিন টাইমএ দেখলাম একটা মঝারি গড়ন রোগা পটকা ছেলে, চখে চশমা, আমাদের চেয়ে বড় হবে বয়সে। বিশেষ কারুর সাথয়ে কথা বার্তা বলে না, ছুপছাপ নিজের টিফিন খেয়ে বেরিয়ে গেল ক্লাস থেকে।
দেখে মনে হয়েছিল "কি রে বাবা কেমন যেন ভুত। নাক উঁচু ছেলে নাকি যে কারুর সাথে কথা বলেনা?" লাস্ট বেঞ্চে বসে একা একা নিজের মনে নোটস লিখয়ে যায় আর ক্লাস এর পরে চুপচাপ কারুর সাথে কথা না বলে চলে যায়।
সত্যি কি প্রেম ছিল (#02)
তারপর একদিন দেখা বাস স্ট্যান্ডে, আমি আর বাসাবি দাঁড়িয়ে আছি বাসএর জন্য দেখি শুভ্র এক কোনে দাড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছয়ে। আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হাসল, আমিও কি করি কি করি একটু হাসতে হয় তাই দন্ত বিকশিত করে একটা হাসি দিলাম। একবার ভাবলাম জিজ্ঞেস করি "কিরে কলেজএ এতো চুপ চাপ থাকিস কেন?" তার পরে ভাবলাম "আমার বয়ে গেছে জিজ্ঞেস করতে ও আমার কন তের দিনিয়া যে আমি জিজ্ঞেস করবো?"
আমি বাসাবি কি জিজ্ঞেস করলাম "কিরে কেমন যেন ছেলেটা তাইই না? কেমন যেন কথাবার্তা দেখে তো বাঙালি মনে হয় কিন্তু কথা বার্তা শুনে তো বাঙালি বলে মনে হয় না রে"
বাসাবি বলল "আমি জানি না রে বাবা, তবে তুই এত কেন জিজ্ঞেস করছিস ওর ব্যাপারে বলত?"
মুচকি হেসে বললাম "নারে কিছু না, কিন্তু একটা আস্ত গান্দু ছেলে মাইরি। দেখেছিশ শিল্পির দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে ছিল। এইই যেন খেয়ে ফেলবে।"
বাসাবি বলল "কই আমি তো দেখিনি"
---"তুমি তো সোনা নেকু পুশুমুনু, তুমি বই ছাড়া কি কিছু দেখো?"
---"ধ্যাত তুই কবে থেকে দেখতে শুরু করলি রে? তোর তো কোনদিন নোলা শোঁক-শোঁক করেনি ছেলে দেখে?"
---"কোন দিন করেনি বলে কি করতে নেই এইই কি মহাভারতে লেখা আছে নাকি। যাই হক চল বাস এসে গেছে।"
বাসটা বড় ভিড়, দাঁড়াবার জায়গা পাওয়া মুশকিল আর কলকাতার বাস তো, মেয়েদের দাঁড়াবার জায়গা আলাদা থাকে। সেইখানেও ছেলে বুড় সব মিলে দাঁড়িয়ে হুমড়ি খেয়ে পরে যেন কুকুর গুলো কোন দিন মেয়ে দেখেনি। তার পরে পিঠে হাত লাগানো তো আছেই সেই সব বাঁচিয়ে কোন রকমে বাসে উঠলাম।
বাসাবি বলল "এইই বাস টা ছেড়ে দিলে হতোনা?"
আমি বললাম "বাড়ি কি হেঁটে যাবি নাকি না তোর শ্বশুর আমাদের জন্য গারি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছয়ে রে?"
আমি বেশ ভুঝতে পারছিলাম যে কেউ আমার পিঠে হাত রেখেছে মাথাটায় রক্ত চরে গেল কিন্তু কি করা যাবে এক হাতে ব্যাগ আর এক হাত দিয়ে ওপরের রড টা ধরে নিজেকে কোনোরকম সামলে সাম্নের দিকে আরও ঝুঁকে পরি যাতে পেছনের কুত্তাটার হাত না লাগে। তার পরে দেখি এতো বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে লোকটা মধ্যবয়স্খ তাও দেখি ঠেলে এসেছে আমার পিছনে।
আমি ঝাঁজিয়ে উঠলাম "কি কাকু একটু সোজা হয়ে দাঁড়াননা"
এক দাগা পান খাওয়া দাঁত বার করে একটা নোংরা হেসে বলে "খুকুমনি বাসে অনেক ভিড় কোথাই যাই বলতো"
---"কেন ছেলেদের দিকে তো অনেক জাইগা আছে, ওদিকে গিয়ে দাঁড়াননা।"
এমন সময়ই দেখি ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসে শুভ্র, আমার দিকে তাকিয়ে দেখে এক বার বুড়োটার দিকে কটমট করে তাকায়।
---"কি মশাই মেয়ে দেখন্নি নাকি, ওতো আপনার নাত্নির বয়সের হবে আর আপনি তো এক পা কবরে দিয়ে বসে আছেন তাও সাধ মেটেনা?"
এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল বুড়ো টাকে আর আমার পেছনে এসে আমাকে গার্ড করে দাঁড়াল। আমি এক বেচারা বেচারা হাসি হাসলাম, কি করবো কৃতজ্ঞতা বলেও তো পৃথিবীতে কিছু আছে।
আমার হাসি দেখে বাসাবি আমাকে জিজ্ঞেস করল "দেখলি তো ছেলেটা ভাল"
নাক কুঁচকে ওঁকে বললাম "হাঁ আর বলতে, লাইন মারছে শালা"
---"তোকে লাইন মারবে তাহলে হয়েছে।"
---"কেন আমি দেখতে খারাপ নাকি?"
---"নিজেকে একবার আয়নায় দেখিসতো, কোনদিন কি ঠিকঠাক ভাবে ড্রেস করে কলেজে এসেছিশ?"
আমি পিছন ঘুরে দেখতে চেষ্টা করলাম যে শুভ্র কি আমাদের কথা শুনছে কিনা। ওমা দেখি ও আমার দিকে মিটিমিটি করে হাসছে।
হাসি দেখে রাগ হল প্রথমে "কি রে ঐ রকম দাঁত বার করে হাসছিস কেন?"
আমার দিকে একটু ঝুঁকে কানেকানে বলল "তোদের কথা শুনে হাসি পেল তাই হাসছি। যাই হক তুই কোথাই থাকিস?"
আমি হেসে বলি---"কেন বলব, তুই কি আমার বাড়ি যাবি?"
---"না আমি কেন তোর বাড়ি যাব, আমি কি তোকে লাইন মারি নাকি যে তুই আমাকে তোর বাড়ি ডাকবি?"
আমি আর হাসি চাপতে পারলাম না "আমাদের কথা শুনশিলিশ কেন? মেয়েদের কথা শুনতে নেই"
---"কথা তো আমাকে নিয়ে করছিলিশ তাই তো আর মন টা ধরে রাখা গেলনা, যাই হক আমি দমদম নামবো তুই কোথাই নামবি বল টিকিটটা কেটে নেই"
---"তুই কেন আমার টিকিট কাটবি?"
---"বাহ রে প্রথম বার দেখা হল তো একটা কারসি বলে কিছু আছে তো রে বাবা। যাই হক আমি না হই না কাটলাম তুই আমার টা কেটে দে।"
আমি মিছকি হেসে জবাব দেইই "আমার বয়ে গেছয়ে তোর টিকিট কাটতে।"
আমার হাসি দেখয়ে আমার কানের কাছয়ে মুখ নিয়ে এসে বলে "ক্লাসে মাঝয়ে মাঝয়ে হাসিস না হলে সবাই তোকে রাম গারুরে ছানা বলবে।"
---"কেন তুই ও তো হাসিস না।"
---"আমি তো কলকাতায় নতুন, কাউকে চিনিনা জানিনা তাই তো কথা বলা বা হাসার লোক ও পাই না।"
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি "তুই নতুন মানে? তুই কলকাতার ছেলে নস?"
আমার দিকে হেসে বলে "প্রথম দিনে কি পুলিশএর মত জেরা করবি নাকি? বাড়ি ডেকে চা তো খাওয়াবিনা তো আমি বলব কেন?"
আমি আর হাসি চাপতে না পেরে বললাম "ঠিক আছে তবে আজ নই আজ বাড়ি তে কেউ নেই, পরে একদিন ডেকে চা খাইয়ে দেবো।"
আমার দিকে তাকিয়ে বলল "আমি তোর বাড়ি গেলে তোকে নিশ্চয়ই খেয়ে ফেলতাম না"
ঠোঁট উলটে হেসে বললাম---"কি জানি বাবা, বাড়ি গিয়ে দেখলাম তোর অন্য মূর্তি তাহলে কি করবো?"
---"আছা বাবা অন্য দিন হবে।"
আমি বললাম "আমি ও দমদম থাকি"।
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
( লেখিকার বানানে অনেক ত্রুটি আছে, আশা করি সবাই মানিয়ে নেবেন )
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
সত্যি কি প্রেম ছিল (#03)
আমি নামতে যাব, পেছন থেকে শুভ্র বলে উঠল "অহনা, তোর ফোন নাম্বার তা দিলি না ত?"
আমি নিজেকে আর সামলাতে না পেরে, একটু মুচকি হেসে বললাম "তুই না একটা পাগল," আর কিছু না বলে বাস থেকে নেমে গেলাম।
বাসাবি হেসে আমায় জিজ্ঞেস করল "কিরে কেমন মনে হল?"
আমি ঠোঁট উলটে বললাম "কি আবার, আরে পাঁচটার মতন হ্যাংলা ছেলে, প্রথম দিনেই আমার কাছে ফোন নাম্বার চায়।"
বাস থেকে নেমে পড়ে বাসটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম, মনটা বলছিল যে শুভ্র হয়ত বাস থেকে নেমে আসবে, কিন্তু বাসটা ছেড়ে দিল। আমি তাকিয়ে থাকি, চলে যাওয়া বাসটার দিকে, যতক্ষণ না বাসটা ঐ ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। একটু সময়ের জন্য মনটা খারাপ লেগেছিল কিন্তু নিজেকে বুঝালাম "তুই নিজে ত পাকামো করে দিলি না আবার মন খারা করছিস কেন রে?"
তার পর নিয়মিত হয়ে গেল গল্প করা। ক্লাসে আমার দেখাদেখি আরও মেয়ে গুলো বেশ শুরু করল ওর সাথে কথা বলা। এমনিতে শুভ্র বেশ হাসি খুশি ছেলে ছিল না তবে যেই রকম ভাবে কথাবার্তা বলত মনে হত জীবনে অনেক কিছু দেখেছে। মাঝে মাঝে মুখ টা দেখে খুব খারাপ লাগতো, কারুন চোখে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতো। খুব ইচ্ছে হতো জিজ্ঞেস করি "তোর কিসে কষ্ট রে?"
ক্লাসে দেখলাম যে ওর বেশ ভাল বন্ধু হয়েছে পরাশর আর অর্ণব। পরাশর টা একদম ফাজিল ছিল। তার দেখা দেখি শুভ্র দেখলাম বেশ ফাজিল হয়ে উঠল।
একদিন মজা করে বললাম "কি বাছাধন কলকাতার জল পেটে পরেছে? বেশ তো চনমনে লাগছে রে তোকে?"
আমাকে হটাত করে চোখ মেরে বলে "জন্ম তো কলকাতা এই কিছু দিনের জন্য বাইরে ছিলাম এই আর কি?"
ক্লাসে দুটো মেয়ে বেশ সুন্দরী দেখতে ছিল, এক সুপর্ণা আর পারমিতা। সুপর্ণার নাকটা একটু উঁচু ছিল তাই ও আমার সাথে কোন দিন বিশেষ কথা বলত না। নিজেকে যেন বিশ্ব সুন্দরী বলে ধারনা করত। আরে ছেলে গুলো তো ওর আশপাশে মউমাছির মতন ভন ভন করত। পারমিতা ভাল মেয়ে ছিল, ও আমার সাথে কথা ও বলত আর মাঝে মাঝে টিফিনও শেয়ার করতাম আমরা।
এক দিন লাস্ট পিরিওড টা খালি ছিল, আমরা মেয়েরা ক্লাসেই বসে ছিলাম। ছেলে গুলো সব বাইরে মাঠে বসে তাস খেলছিল।
পারমিতে আমাকে জিজ্ঞেস করল "এই অহনা একটা কথা বলবি?"
আমি জিজ্ঞেস করলাম "কি রে?"
---"তোর কোনো বয়ফ্রেনড নেই?"
আমি আমার হাসি চেপে রাখতে পারলাম না---"ধুর কি যে বলিস? আমার কেন বয়ফ্রেন্ড থাকতে যাবেরে?"
আই উলটে পারমিতে কে জিজ্ঞেস করলাম---"তোর নেই?"
একটু হেসে, পারমিতা আমাকে বলল---"না রে আমার কোন বয় ফ্রেন্ড নেই।তবে একটা কথা জিজ্ঞেস করার আছে, শুভ্র কেমন ছেলে রে?"
---"কেন বলত তুই কি কিছু মানে মানে ...?"
এক গাল হেসে উত্তর দিল---"কি যে বলিস না, ও আমার টাইপ এর ছেলেই নয়।"
আমি ভালভাবে ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি পারমিতা কি শুভ্রর পেছনে পরেছে?
আমার তাকান দেখে পারমিতা নিজের হাসি সামলাতে পারল না---"আরে কিছু না, তুই ঐ রকম ভাবে দেখছিশ কেন? আমি এমনি জিজ্ঞেস করলাম, তুই তো বেশ কথা বলিশ ওর সাথে তাই।"
আমি কিছু গন্ধ পেলাম তাই মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলাম---"তুমি তো সোনা এমনি এমনি কিছু জিজ্ঞেস করনা সত্যি করে বলত কি ঘটনা?"
---"আমি আমার জন্য জিজ্ঞেস করছি না রে। আমাকে পরাশর বলল যে শুভ্র নাকি সুপর্ণার পেছনে পাগল, তাই জিজ্ঞেস করা"
আমি কিছু উত্তর না দিয়ে একটু ব্যাঙ্গ হেসে ওকে বলি---"নিজেই জেনে নিস না কেন ওর কাছ থেকে, আমার সার্টিফিকেটের কি দরকার।" আমার সে দিন একটু রাগ হয়ে ছিল "বলে কি না আমার বন্ধু আর আমাকে একবারও জানাল না?"
কিছু দিন আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না ওকে, ও আমাকে কিছু বলল না। বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতাম হয়তো শুভ্র আসবে। বাসাবি বেশ বুঝতে পারত আমি কার জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে। মনটা কে মানিয়ে নিলাম, শুধু মাত্র কলেজের সহপাঠী ত, আমার বন্ধু ত নয়, আমি কেন অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকব? বাস আসত আমিও উঠে পরতাম আর বাড়ি চলে যেতাম।
দিন দিন, শুভ্র দেখলাম সুপর্ণার সাথে বেশ মিশে গেছিল। আমি মিটি মিটি করে তাকিয়ে দেখে হাসতাম আরে মনে মনে বলতাম "অহনা ভালই হল একটা হ্যাংলা ছেলের থেকে বেঁচে গেলি।"
লাস্ট বেঞ্চ থেকে শুভ্র আগে এসে সুপর্ণার পেছনে বসা শুরু করে দিল। টিফিন টাইমে আগে আগে ও আমাদের সাথে টিফিন করত, আস্তে আস্তে সেটা কমে গেল। আমি যে হেতু বিশেষ কারুর সাথে কথা বলতাম না তাই আমি আর বাসাবি একটু একটু করে আলাদা হয়ে গেলাম।
প্রথমে একদিন দুদিন কিছু বলিনি, তার পর এক দিন না থাকতে পেরে জিজ্ঞেস করি "কি রে কি চলছে?"
আমার দিকে ভ্রূকুটি করে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল "কি চলছে? কিছু নাতো।"
আমি একটা মুচকি হেসে ওকে রাগানর জন্য জিজ্ঞেস করলাম "ন্যাকা সেজ না আমার কাছে, আমি বেশ ভাল করে বুঝি। তুই তো আজ কাল দেখছি সুপর্ণার পেছনে বেশ লেগে আছিস?"
শুভ্র এমন একটা মুখ করল যেন ও ধরা পড়ে গেছে খুব বড় একটা চুরি করতে গিয়ে। আমার দিক থেকে মুখটা ফিরিয়ে নিয়ে আমতা আমতা করে বলল "না রে ও সব কিছু না।"
আমি আগ বাড়িয়ে বেশি কিছু আর জিজ্ঞেস করলামনা ওকে। যখন মন করবে বলতে হলে বলবে না হলে বলবে না। দিন দিন আমাদের মেলা মেশা একদম কমে গেল। একই ক্লাসে বসে, দুটো বেঞ্ছ পরে বসে থেকে ও আমাদের মধ্যে কথা বার্তা কমে গেছিল। প্রথম প্রথম একটু খারাপ লেগেছিল তার পরর মনটা কে মানিয়ে নিয়ে ছিলাম "বয়ে গেছে তোর সাথে কথা বলতে আমার।"
ঐ দিনটা শুভ্রর জন্মদিন ছিল। বাবা, মা, মামার বাড়িতে বেড়াতে গেছিল, তাই আমাকে নিজেই নিজের টিফিনটা বানাতে হয়ে ছিল। আমি সেই দিন একটু সুজি বানিয়ে ছিলাম।
টিফিনের সময় আমি শুভ্র কে ডেকে বলি---"এই আমি তোর জন্য টিফিন এনেছি খেয়ে যাস।"
ও দিকে ওর বন্ধুরা এবং সুপর্ণা ওকে ডাক দিতে ও আমার দিকে একটা হাসি ছেড়ে আমাকে বলল---"আজ নয়, অহনা অন্য দিন আমি তোর টিফিন খাবো।"
আমি বলতে যাচ্ছিলাম---"আমি তোর জন্য সুজি বানিয়ে এনেছি একটু তো খেয়ে যারে।"
আমার কথা ওর কানে গেলনা, তার আগেই ও দরজা দিয়ে দউরে বেরিয়ে গেল। টিফিন টা সুজি টা আমার চোখে বিষাক্ত হয়ে উটলো "ধুর তোর সুজি, আমি কোন দিন তোর সাথে আর কথা বলব না"
ব্যাস সেই দিন থেকে মনে মনে ভেবেনিলাম যে আমি কোন দিন আর শুভ্রর সাথে কথাই বলব না।
দিন দিন দেখতে থাকলাম যে শুভ্রকে, সুপর্ণা বেশ লেজে খেলাছে। শুভ্র যেন, সব কিছু দিয়ে দেবে এই রকম ভাবসাব দেখাচ্যে।
আমি এক দিন পারমিতা কে জিজ্ঞেস করলাম---"কি রে, সুপর্ণা আর শুভ্রর মধ্যে কি কিছু চলছে?"
পারমিতা হেসে উত্তর দিল---"জানিনা বাবা ওদের কথা। সুপর্ণা তো এমনি তে নাক উঁচু মেয়ে, ও কি আরে শুভ্র কে পাত্তা দেবে? আমি জানি ও লেজে খেলিয়ে ছেড়ে দেবে একদিন। অনেক তো দেখলাম ওকে।"
---"মানে?"
---"মানে আর কি, সুপর্ণা হছ্যে দশ ঘাটের জল খাওয়া মাগি। ওকি আর একটা তে সন্তুষ্ট থাকেরে। কলেজ কাউ কে চাই যে ওকে তোয়াজ করবে, যে ওর পেছনে পয়সা খরচ করবে। তাই এখন শুভ্র কে ওর ভাল লাগছে, আর কি। দেখিস একদিন শুভ্র হুমড়ি খেয়ে পরবে, বড় বেশি উরছে তো।"
আমি মনে মনে সেই দিন খুব শান্তি পেয়েছিলাম "বেশ হয়েছে, ধম্ম হয়েছে। যে যেই রকম সে সেই রকম পেয়েছে।"
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
সত্যি কি প্রেম ছিল (#04)
আমি, অহনা মুখার্জি, বাবা মার এক মেয়ে। আমার দাদা আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড় এবং সে একটা গভর্নমেন্ট অফিসে কাজ করেন। আমার বাবা অনেক শক্ত মানুষ তাই ছোটবেলা থেকে আমাকে অনেক বন্ধনের মধ্যে কাটাতে হয়। আমার মা, গৃহিণী। ছোটবেলা থেকে আমি শুধু পড়াশোনা করে গেছি। নিজের দিকেও বিশেষ তাকাই নি। ছেলে বেলা থেকে আমি আর বাসবি অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলাম। সেই কলেজের দিন থেকে। কোনোদিন যে ছেলেদের সাথে মিশবো সেটাও ছিল গুড়ে বালি। যত বড় হই, তত যেন মনে হতো বাঁধন ভেঙে কবে বের হব তবে বাবা মা কে কষ্ট দিয়ে নিচ্ছই নয়। তাই যখন কলেজএর গণ্ডি তে পা পড়ল তখন ভাবলাম এই তো জীবন টাকে ভাল ভাবে উপভোগ করবো। তবে কোন দিন যে প্রেম করবো সে কথাটা মাথায় ছিলনা। প্রেমটা কি বলে কয়ে আসে নাকি? এই অহনা আমি আসছি আমায় দেখ।
আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম "কেন তোকে লোকে দেখে না, অহনা?" অনেক দিন আমি আয়না কে এই প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছি। একদিন থাকতে না পেরে বাসবি (আমার আয়না) আমাকে বলল "কি দেখিস নিজেকে এতো? তোকে বলে ও তো বোঝানো যাবে না। অন্য মেয়েরা কেমন সুন্দর সাজে আর তুই কি না ঢলঢোলা সালওয়ার কামিজ পরে কলেজ যাবি। কোনোদিন ঠিকঠাক ভাবে সাজিসও না। পারমিতা আরে সুপর্ণা কে দেখ। কেমন maintain করে নিজেদের।"
আমি নিজেকে আবার দেখি, "কুড়ি বছর বয়স হল অহনা, কমনীয়তার লেশ মাত্র নেই তোর মধ্যে। ভরাট বুক নিয়ে লুকিয়ে রেখেছিস এক চাদরের আস্তরণে। পোশাক-আশাক এ ঢেকে রেখেছিস নিজেকে। যেই সময় মেয়েরা নিজের যৌবন কে মেলে ধরে সেই সময় তুই নিজেকে নিজের থেকে লুকিয়ে রেখেছিস। নিজের মনেকে উন্মুক্ত ও তো করতে পারিসনি তুই।"
তারপর আবার নিজেকেই বললাম "আমায় যদি কেউ ভালবাসে তবে আমার মন কে বাসবে না আমার শরীর কে।"
সেই দিক থেকে, সুপর্ণা যেন একটা আগুনে পোড়ান নারী। নিজের রূপ নিয়ে বেশ সতর্ক। উন্নত বক্ষ যুগল যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে সব হ্যাংলা ছেলে গুলো কে আরে ছেলে গুলো হুমড়ি খেয়ে পরে ঐ হাতের একটু পরশ পাওয়ার জন্য। মাঝে মাঝে হিংসে হতো সুপর্ণা র ওপরে, কিন্তু যখন ভাবতাম যে কি পেয়েছে ও ঐ জলন্ত রূপ নিয়ে? সবাই জানে ও কি রকম মেয়ে। সবাই জানে, যে ঐ মেয়ে এক রাতের জন্য ভাল লাগে, চির জীবন পাশে বসিয়ে রাখার মতন নয়।
নিজেকে দেখে তখন মনে হতো আমার চেয়ে সুখী আর এই পৃথিবীতে কেউ নেই, অন্তত আমাকে কেউ এক রাতের সয়ন সঙ্গিনি বলে তো ভাবে না।
দিন দিন আমার আর শুভ্রর মধ্যে দূরত্ব বেড়ে গেল। ও আজকাল আমার সাথে ভাল করে কথাও বলত না, প্রথম কয় এক দিন মনে হয়েছিলো তার পরে সেটাও আর থাকেনি। যাকগে নিজের জীবন ও কি করে কাটাবে সেটা ওর ব্যাপার। দেখতে দেখতে ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষা চলে এল কাছে। আমি নিজে কে ডুবিয়ে নিয়েছিলাম পরাশুনর মধ্যে, আসে পাশে কি ঘটে চলেছে তার দিকে কোন ভ্রুকেপ করে দেখিনি। পরীক্ষায় বেশ ভাল অঙ্কও নিয়ে উতরে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম যে শুভ্র যে হেতু ভাল ছেলে, সে হেতু ও বেশ ভাল মার্কস নিয়ে পাশ করবে। কিন্তু হল তার উলটো। ও কোন রকমে পাস করল। আমার দেখে বেশ মজা হয়েছিল ঐ দিন। "করবিনা পড়াশুনা তো হবে না? শুধু তো সুপর্ণার পেছনে লেগে থাকা। এবারে বোঝো ঠেলা আর কি।"
সেকেন্ড ইয়ার এর ক্লাস শুরু হল। আমি তো অবাক, প্রথম দিনে, যে শুভ্র আগে ছিল সেই শুভ্র আর নেই। অনেক রোগা হয়ে গেছে, আবার অনেক চুপ চাপ হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করবো কি করবো না এই ভাবতে ভাবতে বেশ কিছু দিন চলে গেল। আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম যে ওর আরে সুপর্ণার মধ্যে যে ভাব ভালবাসা বা হৃদ্যতা চলছিল সেটা কেটে গেছে। আমি ওর মুখ দেখে বুঝতে পারি যে ও বেশ কষ্টে আছে। তাও আমি ওকে গিয়ে জগ্যেস করিনি "কি হল তোর? এই রকম কাচুমাচু হয়ে বসে আছিস কেন?" আমার তো সেই দিন খুব ভাল লেগেছিল যে বেশ হয়েচে ভেবে।
একদিন আমি, বাসবি আর পারমিতা বসে গল্প করছিলাম।
বাসবি এক সময় পারমিতা কে জিজ্ঞেস করে---"এই বলতে পারিস, শুভ্রর কি হয়েছে?"
পারমিতা এক বার আমার দিকে এক বার বাসবির দিকে ভুরু কুঁচকে দেখে বলল---"কেন, তোরা জানিশ না? সুপর্ণা আর শুভ্রর মধ্যে কাটা কাটি হয়ে গেছে।"
সত্যি কি প্রেম ছিল (#05)
আমি জিজ্ঞেস করবো করবো ভাবলাম, ইতিমধ্যে বাসবি আমার হয়ে জিজ্ঞেস করলো---"কি হয়েছে?"
---"আমি কি জানি বাবা। তবে এই টুকু শুনেছি যে, সুপর্ণা ওকে ডিচ করেছে। শুভ্র নাকি ওর টাইপ এর ছেলে নয়। ওর চাই নতুন সখ মেটানোর জন্য একটা পোষা বেড়াল যেটা নাকি শুভ্রর পছন্দ নয়।"
আমি থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করি---"মানে?"
---"মানের আর কি জানি। সুপর্ণা ও বেশ মেয়ে, ডিচ করলো ঠিক পরীক্ষার আগে আগে, বেচারা ভেঙে গেলো একদম আর তার ফল তো দেখলি।"
আমি আড় চোখে তাকিয়ে দেখি শুভ্র দরজা দিয়ে ক্লাসে ঢুকল। চুপচাপ গিয়ে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়ল। আমি তাকিয়ে থাকি ওর দিকে, এই আশায় যে এক বার দেখুক আমার দিকে। কিন্তু না, এক মন দিয়ে মাথা নিচু করে কি যেন পড়তে লাগলো। বাসবি বেশ বুঝতে পারল আমার মুখ দেখে যে আমি কি দেখছি।
কলেজ শেষ হবার পরে, আমি আর বাসবি যথারিতি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করছি, এমন সময় দেখি শুভ্র আরে পরাশর আসছে। বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে একটু নিজেকে তৈরি করি, না আজ জিজ্ঞেস করে ছাড়বো যে কি হয়েছে। কিন্তু ও আমদের দিকে দেখলও না। চুপচাপ চলে গেলো পরাশরএর সাথে। আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখলাম তার পরে বাসে উঠে বাড়ি চলে এলাম।
বেশ কিছু দিন কেটে যায়, অপেক্ষায় যদি কখন কথা বলে তাখন আমি সব থেকে আগে ওর মাথা টা ফাতিয়ে দেবো তার পরে কিছু জিজ্ঞেস করবো। কিন্তু কথা আর হয়ে ওঠে না আমাদের। দেখা হলে আমাকে পাস কাটিয়ে চলে যায়। যদি বা এক আধ বার চোখাচুখি হয়ে যায় তো একটা ম্লান হাসি হেসে চলে যায়।
সেই দিন অনেক বৃষ্টি পড়ছিল। চারদিকে অন্ধকার হয়ে এল। বাসবি কলেজএ আসেনি, ওর শরীর খারাপ হয়েছিল তাই। আমি একা একা সারা দিন ক্লাস করি। লাস্ট পিরিওড হয়ে যাবার পরে, দেখলাম সবাই এক এক করে চলে যায়। আমিও নিজের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করি। আসপাশে আমার ক্লাসরই বন্ধুরা ছিল। হটাত করে একটা সিঁড়ি পিছল খেয়ে আমি পরে যাই। আমার বাম পায়ে মচকা লাগে। আমি চিৎকার করে উটি, চখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। দাঁড়াতে পারিনা ঠিক করে। আমার পরে যাওয়া দেখে বেশ কিছু ছেলে মেয়ে জমা হয়ে গেলো আমার চারদিকে। আমি পা ধরে বসে থাকি আর যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেতে থাকি। ছেলে গুলো যেন মজা দেখছিল একটা অসহায় মেয়ের পরে যাওয়া।
এমন সময় কোথাথেকে শুভ্র দেখি এগিয়ে আসে। আমার দিকে তাকিয়ে দেখে আমার চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। আমার কাতর বেদনাময় চোখ দুটি দেখে আমার দিকে এগিয়ে আসে। বাকি ছেলেগুলো কে এক ধমকে জিজ্ঞেস করে---"শালা, একটা মেয়ে এখানে পরে গেছে আর তোরা কুকুর গুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিশ। লজ্জা করেনা শূয়রের বাচ্চা।"
এক হাঁক দেয় পরাশর কে "এই শূয়র একটা ট্যাক্সি ডাক।"
তখনও পর্যন্ত ও আমার সাথে একটাও কথা বলেনি। আমার দিকে এক বার দেখে জিজ্ঞেস করলো---"হাঁটতে পারবি বলে তো মনে হছে না?"
আমি দুই ভেজা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে বললাম "না"
ব্যাথায় আমার ঠোঁট দুটি তির তির করে কাঁপছিল।
আমার দিকে ঝুঁকে পরে একটা হাত আমার পিঠের পেছনে রাখল, বলল---"আমার কাঁধে হাত রাখ।" আর একটা হাতে আমার দুই হাঁটুর নিচ থেকে দিয়ে আমায় পাঁজাকোলা করে তুলে নিল।
আমি অগত্যা ওর গলাটা জড়িয়ে ধরে থাকি। বুকের মাঝে তখন একটা বিশাল ঝড় উঠল। ধুকপুক ধুকপুক করে হৃদয়টা বাড়ি মারতে লাগলো বুকের পাঁজরে। তাকাতে গিয়ে ও ওর মুখের দিকে তাকাতে পারিনা। দৃষ্টি তো ততখনে ঝাপ্সা হয়ে গেছে।
ট্যাক্সি তে আমায় বসিয়ে দিয়ে ও পারমিতা কে জিজ্ঞেস করলো---"কি রে, যাবি নাকি?"
পারমিতা আমার দিকে এক বার তাকিয়ে দেখে বলে---"আমার না বাড়ি তে একটু কাজ আছে।"
আমার কান গুলো গরম হয়ে ওঠে, "এই কিনা বন্ধু? তুই কত নোট্*স আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছিস আর আজ তুই একবার আমার জন্য নিজের কাজটা বন্ধ রাখতে পারিস না?" কিছু বলার ছিলনা ওকে আমার।
আমি কাতর স্বরে শুভ্রকে বললাম---"ট্যাক্সি তে ওঠ।
Posts: 1,886
Threads: 6
Likes Received: 6,324 in 1,869 posts
Likes Given: 2,644
Joined: Jun 2019
Reputation:
739
গল্পটা বানান ভুল হলেও খুব ভালো লেগেছিল সেই সময়ে !!!!!
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(27-12-2020, 09:08 PM)pinuram Wrote: গল্পটা বানান ভুল হলেও খুব ভালো লেগেছিল সেই সময়ে !!!!!
ইনি আরেকটা গল্প লিখেছিলেন - "লুকিয়ে ছিলে এতদিন", ওটাও দারুণ লেগেছে পড়ে
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
সত্যি কি প্রেম ছিল (#06)
আমার দিকে এক বার তাকিয়ে দেখে, মাথা নাড়ল শুভ্র। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি। সুপর্ণার মুখটা একদম কালো হয়ে উঠেছে, ঠিক যেন, আষাঢ় মাসের কালো মেঘ "তুমি কি হারাইয়াছও তুমি নিজে জাননা"
বাইরে ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ে চলেছে। ট্যাক্সিটা বৃষ্টি কেটে চলতে লাগলো। আমি ও শুভ্র দুইজনে ভিজে চুপসা। আমার চুল থেকে টপ টপ করে জল ঝরছে, সারা মুখে বৃষ্টির জলের দানা। দান হাতটা মুঠি করে নিজের ব্যাথা টা আয়ত্তে আনতে প্রবল চেষ্টা চালিয়ে যাই। শুভ্র আমার বাম পা টা, নিজের কোলে তুলে নিয়ে, মালিশ করতে থাকে। আমি ব্যাথা ভুলে যাই তখন। মাথায় তখন রক্তর বাণ ছুটছে, রাগে দুঃখে আমার কান গরম হয়ে গেছিলো। দু চোখ ভরে গেছিলো, রাগে, তির তির করে কাঁপছিল দুই ঠোঁট। মনে হচ্ছিলো এক কষে থাপর মারি ওর গালে, যত গুলো দাঁত আছে ফেলে দেই আর জিজ্ঞেস করি, "এতো আদিখ্যেতা দেখানর কি আছে?" আমি এক মনে ওর দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকি, ও আমার পায়ের গোড়ালি টা নিয়ে বেশ মালিশ করতে থাকে।
আর থাকতে না পেরে ঝাঁঝিয়ে উথি---"আমার পা ছাড়, কুত্তা কোথাকার। এতো আদিখ্যতা দেখানোর কি হয়েছে?"
ও আমার কথার কোন ভ্রুক্ষেপ করলো না, নিজের কাজ করে যেতে লাগলো। কথাটা যেন ওর কানেই যাইনি এমন একটা ভাব দেখাল। আমি সেটা দেখে আরও রেগে উঠলাম, পা টা ছারিয়ে নিতে চেষ্টা করলাম। আমার কান নাক ততক্ষণে লাল হয়ে উঠেছে, এমন মনে হচ্ছিলো যেন বুক টা ফেটে যাবে রাগে। রাগে এক থাপ্পর লাগিয়ে দিলাম ওর গালে, চশমাটা ট্যাক্সির মেঝেতে ছিটকে পড়ল। তখন দেখলাম যে ওর চোখের কোনে এক বিন্দু শিশির টলমল করছে।
আস্তে আস্তে আমার দিকে তাকাল, শুভ্র। আমার নিজেকে খুব জোর করে সাম্লে নিলাম। নিচের ঠোঁট টাকে দাঁত দিয়ে চেপে ধরে তাকালাম ওর মুখের দিকে। দুজনে তাকিয়ে রইলাম নিজেদের মুখপানে। কণ্ঠ দিয়ে আওয়াজ বের করতে পারিনি কেউই। ওর দৃষ্টি চলে গেছিলো আমার দুই ঠোঁটরে দিকে, তির তির করে কাঁপা দুটি পাপড়ি এক আশা নিয়ে বসে। আগুন জলে ওঠে আমার দুটি ঠোঁটে, গাল দুটি লাল হয়ে যায়, কান হয়ে যায় গরম। বুকের মধ্যে এক ঝড় তাণ্ডব শুরু করে, আমি আমার হাত দুটি মুঠি করে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরি। এক ভাবে তাকিয়ে থাকি শুভ্রর দিকে, কি করতে চলেছে সে? নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে পেছনে সরে যাই। অজান্তে আমার পাটা ওর কোল থেকে সরে যাই।
শুভ্র আমার পা ছাড়তে চায়না, ওর ডান হাতটা এগিয়ে আসে আমার উন্মুক্ত লাল গোড়ালিটার দিকে।
আমি ধিরে ধিরে বলে উঠি---"ছার আমার পা। আমি চাই না তোর অহেতুক শুশ্রূষা।"
নিচু গলায় বলে ওঠে শুভ্র---"আই এম সরি।"
ঝাঁজিয়ে উঠি ওর ওপরে---"হ্যাঁ, একটা সরি বলে দিলে তো কাজ শেষ হয়ে যায় তাই না?"
কোন কথা বলেনা ও। চুপ চাপ আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে।
আমি থামিনা, বুকের মধ্যে তখন একটা ঝড় চলছে আমার---"কি রে কিছু বলছিস না কেন? চুপ করে বসে থাকবি নাকি?"
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
সত্যি কি প্রেম ছিল (#07)
আমার দিকে ম্লান চোখে তাকালো শুভ্র, একটা হালকা হাসি হেসে বলল---"কি বলব তোকে? আমার কিছু বলার নেই, আমি নিছক ঘোরের বশে একটা মরীচিকার পেছনে ছুটে ছিলাম। এই আর কি।"
"বেশ হয়েছে, আরও যা।" আমার মাথায় তখন রক্ত টগবগ করে ফুটছে "কে যেতে বলেছিল তোকে?"
---"কি করি, মানুষ তো রে বাবা, ভুল তো মানুষেরই হয় নাকি"
কি আর বলি ওকে। আমি আলত করে হেসে দিলাম। ওর মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলর মধ্যে বিলি কেটে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করি---"পাগল ছেলে এক বারে।"
আমার হাত টা সরিয়ে দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল---"পা টা ভাঙলি কি আমাকে দেখানোর জন্য?"
আমি আর হাসি থামাতে পারিনা---"ধুর বোকা ছেলে, তোর জন্য পা ভাঙতে হয় নাকি, তোর মাথা টা ফাটিয়ে দিলে তো আমার কাজ হয়ে যেত।"
---"মাথা টা তো ফাটাতে যাসনি, মচকেছিস নিজের পা।"
পায়ের ব্যাথা অনেকটা ভুলেই গেছিলাম আমি। আমার পাটা আবার ও নিজের কোলে তুলে নিয়ে আলত করে হাত বুলাতে লাগলো। যেইনা গোড়ালি তে হাত দিল আমার ব্যাথাটা চিনচিন করে উঠল।
---"উউফফফফ......... ছাড় ছাড় ..."
আমার দিকে তাকিয়ে বলল---"একটা এক্স-রে করতে হবে দেখছি।"
আবার ব্যাথা উঠে গেলো। বাড়ি কাছে আসছে। আমার দিকে তাকিয়ে বলল---"বাড়ি পর্যন্ত যেতে তো অসুবিধা নেই, নাকি বাড়ি গেলে তারা মারবি?"
আমি হাসব না কাঁদব কিছু ভেবে পেলাম না---"কুত্তা, শালা, কোলে তুলে ট্যাক্সি করে বাড়ির কাছে এসে কি না ছেলে বলে, বাড়ি যাব দিদিমনি। মারবো এমন না... চল বাড়ি দিয়ে আসবি, না হলে মা মারবে।"
কোন রকমে, ওর কাঁধে হাত রেখে, বাড়ি ঢুকলাম। মা তো আমাকে দেখে আঁতকে ওঠে---"কি রে পা ভাঙলি কোথায়?"
---"কাকিমা, আর বল কেন, তোমার যা একটা দস্যি মেয়ে, সিরি নামতে জানে না তো পা ভাংবে না।"
আমি চিৎকার করে উঠি---"এই একদম উলটো পাল্টা বলবি না। সিরি তে জল ছিল তাই পড়ে গেছি।" আমি মায়ের দিকে দেখে বললাম---"বেশি কিছু হয়নি শুধু মছকে গেছে।"
আমার মা আমার দিকে দেখে একটু হেসে বলল---"হ্যাঁ তাতো দেখতে পাচ্ছি যে মছকে গেছে।" শুভ্রর দিকে তাকিয়ে মা বলল---"একটু দাঁড়িয়ে যাস বাবা, চা টা বানাই।"
মা রান্না ঘরে ঢুকতেই, আমার দিকে ভুরু নাচিয়ে শুভ্র বল্ল---"কি রে চা টা খাবো না পালাবো?"
আমি হেসে বললাম---"পালিয়ে গেলে এবারে আমি না, মা তোর পা টা ভেঙে দেবে বুঝলি। চুপ চাপ ঘরে গিয়ে বস আমি কাপড় চেঞ্জ করে আসছি।"
ব্যথা একটু ছিল, কিন্তু চলে গেলো সব। আমি সালওয়ার ছেড়ে একটা টপ আর ঢোলা একটা প্যান্ট পড়ে বশার ঘরে ঢুকলাম। ঢুকে দেখি, শুভ্র আর মা বেশ জম্পেশ করে গল্প জমিয়েছে। আমি তো চক্ষু ছরক গাছ, "যে ছেলে কিনা কলেজে একটা কথা বলে না সে কিনা মায়ের সাথে দিব্যি গল্প জুরে দিয়েছে?"
---"কি গল্প হছে তোমাদের?"
"এই তোকে নিয়ে গল্প হচ্ছেনা চিন্তা নেই" আমার দিকে তাকিয়ে শুভ্র বলল।
---"হ্যাঁ টা বেশ বুঝতে পারছি।"
বেশ কিছুক্ষণ গল্প টলপ করে শুভ্র সেইদিন চলে গেলো।
আমি সারা রাত ধরে ভাবতে লাগলাম, কি হতে চলেছে এটা? ঘুম আসে কি আসে না। একসময় দু চোখের পাতা ভারি হয়ে ওঠে। চারদিকে অন্ধকার, আকাশে কালো মেঘ, আমি একা একা একটা গাছের তলায় চুপচাপ বসে। মাথার ওপরে মেঘেরা তাণ্ডব নৃত্য চালাচ্ছে। থেকে থেকে, বজ্র বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আসে পাশে কেউ কথাও নেই। ধু ধু একটা ফাঁকা মাঠ তার মাঝে একটা বিশাল গাছ, তার তলায় আমি একা। পরনে একটা আলু থালু সাদা মখমলের জামা যেটা বুক থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত নেমে এসেছে। ঠাণ্ডা হিমেল বরষার হাওয়ায় আমার মসৃণ ত্বকে এক শিহরণ জাগিয়ে তুলেছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ ঝলকানি তে দেখি, গাছটার ডাল গুলো আমায় যেন কাছে ডাকছে, আমার দিকে হাত নাড়িয়ে ইশারা করছে "অহনা, আয় আয়।"
আমি থর থর করে কাঁপতে থাকি একটা ভিজে পায়রার মতন। চোখে আতঙ্ক নিয়ে চারদিকে দেখতে থাকি। গলাটা আমার শুকিয়ে ওঠে "কেউ কি আছ কোথাও। আমি এখানে, আমায় বাঁচাও।"
আমার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আমার শরীর, বুক, পিঠ সব ঢেকে ফেলে। গাছের ডাল আমার পিঠে হটাত করে হাত বোলায় যেন। আমি আর থাকতে না পেরে ঐ খোলা প্রান্তর মাঝে দিশা হিন ভাবে ছুটতে থাকি। দেখা যায় না কিছু। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানিতে দেখি গাছ টা আমার পেছনে ছুটছে। আমি আরও জোরে দৌরতে শুরু করি। একবারের জন্য পেছনে ফিরে দেখি, গাছ টা আমার অনেক কাছে চলে এসেছে। আমি চোখ বন্ধ করে নেই, ধরা পড়ার আশঙ্কায়। আমার সারা গা হাত পা, ঠক ঠক করে কাঁপতে থাকে। আমি দৌড়নো বন্ধ করিনা। দৌরতে দৌরতে হঠাথ একটা কিছুর সাথে আমি ধাক্কা খাই।
সত্যি কি প্রেম ছিল (#08)
আমায় কেউ যেন নিজের বলিষ্ঠ বাহু জোড়া দিয়ে আলিঙ্গনে বধ্য করে। আমি নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করি ঐ দুই বলিষ্ঠ বাহু পাশ। আমায় ছাড়তে চায় না। মুখ তুলে দেখতে চেষ্টা করি, কে সেই মানুষ যে আমাকে তার বাহুপাশে আলিঙ্গন বধ্য করেছে। কিন্তু আমি তার মুখ টা দেখতে পাইনা। সেই মানুষটার মুখের ওপরে একটা কালো কাপরের আস্তরন। চোখ দুটি দিয়ে আগুন বের হচ্ছে যেন। আমি কিছু না ভেবে, ঐ পুরুষটার বুকের ওপরে আঁচর কাটতে থাকি নিজেকে বাঁচানোর জন্য। এক সময় ঐ বলিষ্ঠ পুরুষটা আমাকে তার বাহি পাশ থেকে মুক্ত করে। আমার সারা শরীর এক নির্মম উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জেগে ওঠে। আমি ওর মুখের ওপরের আস্তরন টা খুলে ফেলতে চেষ্টা চালাই, কিন্তু পারিনা। এমন সময় একটা বিদ্যুৎ ঝলশায় আকাশ থেকে, বিদ্যুৎ তরঙ্গ টা সোজা ঐ নাম না জানা, পুরুষটির মাথার ওপরে পড়ে। আমি চমকে উঠি চিৎকার করে উঠি "না একি হল।" আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি।
এমন সময় মা ডাক দেয়---"অহনা কি হয়েছে?"
আমি চোখ মেলে দেখি আমি নিজের বিছানায় শুয়ে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। আমি আমার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার হাত দুটি যেন জ্বলছে, যেন এই মাত্র আগুনে পুড়েছে।আমি ঠিক করলাম যে আমি সেই দিন কলেজে যাবোনা, আমি বাসবি কে ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে আমার পা মচকেছে তাই আমি কলেজে যেতে পারবো না।
আমি সারা দিন অপেক্ষা করে রইলাম, যে শুভ্র আমাকে ফোন করবে, কিন্তু কোন ফোন এল না সারাদিনে। সন্ধ্যেবেলায় এক এক করে পাখিরা সব ঘরে দিকে উড়ে যেতে লাগলো, আমি আমার ঘরের জানলা খুলে চুপ চাপ বসে ছিলাম। পাখীদের আনাগোনা দেখছিলাম আনমনে। ভাবতে লাগলাম "আমি যদি পাখী হতে পারতাম তো কি করতাম? শুভ্রর কাছে যেতাম কি? ও কে? সেটা ও খুব বড় প্রশ্ন। কালো কাপড়ের পেছনে যে মানুষ টা ছিল সে কি শুভ্র না সে অন্য কোন রাজকুমার যে আমার জন্য কোথাও অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে?" আমি কোন উত্তর পেলাম না।
পর দিন যখন কলেজ গেলাম, সেদিন দেখলাম যে শুভ্র কলেজ আসেনি। পরাশর কে জিজ্ঞেস করতে ও বলল, শুভ্র কোন কাজে কলকাতার বাইরে গেছে। ও ঠিক করে বলতে পারল না কোথায় গেছে। মনটা একটু খানির জন্য হলেও, নড়ে ওঠে "আমাকে বলে গেলো না একবার? তার মানে কি ঐ কালো কাপড়ের পেছনের পুরুষটা ও নয়?"
তার কিছুদিন পর পর্যন্ত শুভ্র ফিরল না। আমি ওর বাড়ি ফোন করবো কি করবো না সেটা ভাবছিলাম একা একা বসে। এমন সময় বাসবি আমাকে জিজ্ঞেস করে---"কি রে তোর কি হয়েছে? তুই ঠিক ঠাক কথা বলছিসনা কেন?"
আমি ওর দিকে এক গাল হেসে বললাম---"কই কিছু হয়নি তো। আমি তো দিব্যি আছি।" আমার থুতনি টায় আঙ্গুল দিয়ে নাড়িয়ে আমায় জিজ্ঞেস করে---"সত্যি তো তুমি বলছনা সোনা, কই ব্যাপার।"
নাকের ডগাটা লাল হয়ে ওঠে আমার, কান দুটি উষ্ণ বাতাসে দুলে ওঠে। আমি মাথা নেড়ে বলি---"কিছু হয় নি রে।"
দু দিন পরে, আমি আর বাসবি ক্লাসে বসে নোট্*স লিখছিলাম একমনে, এমন সময় হটাথ করে কোথা থেকে একটা ছোটো চাঁটি আমার মাথার পেছনে পড়ল। আমি রেগে মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি, শুভ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
---"মিস মি ডার্লিং।"
হাতের সামনে যে বইটা ছিল সেটা ছুঁড়ে মারি ওর দিকে---"এক বার বলে যেতে পারলি না কোথায় গেছিলি।"
---"সরি বাবা, নেক্সট টাইম একদম বলে যাবো, পারলে সাথে নিয়ে যাবো।"
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, ও অনেক শুকিয়ে গেছে। বাসবি ওকে জিজ্ঞেস করে---"কি হয়েছিল রে তোর, এতো দিন আসিস নি কেন?"
ঠোঁট উল্টে জবাব দিল শুভ্র---"জ্বর হয়েছিল আর কি।"
আমি রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করি---"একটা ফোন করার দরকার মনে করিসনি আমাকে?"
আমার দিকে ম্লান হাসি হেসে বলে---"ফোন তো তুইও করতে পারতিস, অহনা। তুই তো করিসনি। যাই হোক। আমি গেছিলাম একটু কাজে বাইরে, তার পরে সেখান থেকে ফিরে একদিন মায়াপুর যাই ঘুরতে।"
---"একা একা মায়াপুর?"
---"হ্যাঁ, একা একা মায়াপুর।"
---"একা ঘুরতে কারুর ভাল লাগে নাকি রে? তুই কেমন ছেলে?"
---"আমার একা একা ঘুরতে ভাল লাগে। তবে সেটা পরের ব্যাপার, মায়াপুর গিয়ে বৃষ্টি তে ভিজে আমার হল জ্বর, বাড়িতে একা তাই আর আসা হল না।"
---"বাড়িতে একা মানে, কাকু কাকিমা কোথায়?"
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে শুভ্র, চোখের কোলে এক চিলতে কালো মেঘ দেখে আমার বুক টা ধুকপুক করে ওঠে। আমি ওর পাশে এসে ওর হাতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করি---"কি হয়েছে?"
একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে আমার দিকে জল ভরা চোখে তাকায়, একটা ম্লান হাসি হেসে বলে---"ক্লাস শুরু হবে, চল বসি।"
আমি ওর হাত ধরে বাইরে তেনে নিয়ে যাই---"ক্লাস গেছে চুলোয়, আমি জানতে চাই আজ যে কে এই শুভ্র।"
আমি ওর হাতটা আমার মাথার ওপরে দিয়ে বলি---"বল না হলে আমি আর কোন দিন তোর সাথে কথা বলব না"
জোর করে ও হাতটা আমার মাথা থেকে সরিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকায়। চোয়াল দুটি শক্ত হয়ে ওঠে ওর। চোখ দুটি দিয়ে রাগ, দুঃখ, আগুন, ভেঙে পড়ার দাগ ফুটে ওঠে। চোখ দুটি লাল। আমার বুক দুটি কেঁপে ওঠে ওর মুখ দেখে। আমার দুই চোখে, জলে টলমল করতে থাকে, বুক কেঁপে ওঠে দুরুদুরু। একটা অজানা ভয় এবং শূন্যতা ভর করে আমার মাথার ওপরে। আমি এগিয়ে যাই ওর দিকে। মুখ টা উঁচু করে ওর জল ভরা দুই চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি "কি"।
আড় চোখে তাকিয়ে দেখি, পরাশর, সুপর্ণা, পারমিতা, বাসবি আরও অনেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে। আমার মাথায় যেন রক্তর বাণ ডেকেছে।
আমি ওর হাত ধরে কলেজ থেকে টেনে বার করে নিয়ে যাই। হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে না, চুপ চাপ আমার পেছনে একটা পোষা গারুর মতন হেঁটে আসে।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি---"কোথায় যাবি?"
---"কোথাও না।"
দুই জনে পাশাপাশি হাঁটতে থাকি, চুপচাপ, কারুর মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ নেই।
ও কিছুক্ষণ পরে বলে ওঠে---"আমার মা নেই, অনেক দিন আগে মারা গেছেন। পাঁচ বছর আগে বাবা আবার বিয়ে করেন। তিনি এবং আমার নতুন মা, তারা আলাদা থাকেন, আলাদা সংসার। আমি তাদের সাথে থাকতে চাইনি। আমি একা থাকি, আমার মায়ের নামে দাদু একটা বাড়ি দিয়েছিল সেখানে। বাবা তার নতুন সংসার নিয়ে, অফিস নিয়ে ব্যাস্ত, আমাকে সময় দেবে কোথা থেকে। ছোটো বেলা থেকে হস্টেলে মানুষ। কারুর তো ভালবাসা কোন দিন পাইনি। তাই আমার এই অবস্থা।"
আমার পা দুটো যেন কেউ পেরেক দিয়ে পিচের রাস্তার ওপরে গেঁথে দিল। আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। হাতের তালু মুঠি হয়ে আমার অজান্তেই আমার বুকের মাঝে জড় হয়ে আসে, বুক কেঁপে ওঠে। মনে হয় যেন এই বুঝি ভেঙে যাবে, টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পরবে রাস্তায়। আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকি এক দৃষ্ট, আমি চোখের পলক ফেলতে ভুলে যাই। আমার গাল বেয়ে টপ টপ করে জল ঝরতে থাকে। "কি বলছিস তুই?"
আমার থেমে যাওয়া দেখে ও দাঁড়িয়ে পরে, আমার দিকে তাকিয়ে হালকা করে মাথা নাড়ায় "আমি সত্যি বলছি।"
মনে হয়েছিল সেই দিন, দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরি ওকে। রাস্তার মানুষ জন দেখে সেই দিন পারিনি।
তার আর পর নেই, নেই কোন ঠিকানা। আমি বাসবি আর শুভ্র, তিন জন বেশ ভাল বন্ধু হয়ে যাই।
আমার জন্মদিন ছিল, সেপ্টেম্বর মাসে। আমি তার আগের দিন ওকে জিজ্ঞেস করি---"কি রে রাতে উইশ করছিস?"
হেসে উরিয়ে দেয় আমার কথা---"ধুর ঐ সব তো প্রেমিক প্রেমিকারা করে।"
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
রেগে বলি---"কুত্তা কাল তাহলে আমি আসবোনা কলেজে।"
ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে---"বয়ে গেছে, তোকে ফোন করতে। রাতে ফোন করলে কাকু যদি ফোন ধরে তাহলে আমার আর তোর, দু জনের চামড়া গুটিয়ে ডুগডুগি বাজাবে, সেটা জানিস।"
আমি রেগে মেগে মাথা নেড়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাই। যেতে যেতে ওর দিকে অগ্নি ঝরান চোখে তাকিয়ে বলি---"ফোন অর নো ফোন, আই এম গইং টু ওয়েট। নাউ দ্যাট দিপেন্দস আপঅন ইউ।"
---"উ মা, মেয়ের রাগ দেখো।"
ও সত্যি কথা টাই বলেছিল, আমাকে কোন ছেলে যদি মাঝ রাত্রে ফোন করে আর যদি আমার বাবা জানতে পারে তাহলে আমার চামড়া গুটিয়ে দেবে বাবা। আমি ও বেশ ভয় ভয় ছিলাম। কি যে করবে সেটা ও আর ভাগবানই জানেন।
রাত্রের খাওয়া দাওয়া শেষ। আমি আমার ঘরে ঢুকে পরি। একটা উপন্যাস নিয়ে বসে পড়ি। এক এক করে, মাঝ রাত এগিয়ে আসে। এমন সময় ট্রিং ট্রিং, ট্রিং ট্রিং, ফোনের রিং বাজে। আমি পা টিপে টিপে ফোনের দিকে যেতে থাকি, রিং টা বন্দ হয়ে যায়। আবার কিছুক্ষণ পরে বেজে উঠে কেটে যায়। আমি ঠিক বুঝতে পারি যে আমার জন্মদিনের প্রথম শুভেচ্ছা পাওনাটা হয়ে গেছে।
হাত দুটি মুটি করে মাথার উপরে ছুঁড়ে দিয়ে একটা ছোটো লাফ মারি "ইপি।" খুসি তে যেন বাণ ডেকে দেয়।
সকাল থেকে অন্য সব বন্ধু বান্ধবীদের ফোন আসতে থাকে। অনেক দিন পরে আমার কেন যেন মনে হল আমার জন্মদিন, বেশ খুশির দিন। ঠিক বাবা বেরিয়ে যেতেই ফোন আসে শুভ্রর।
---"কিরে ডার্লিং, কাল রাতে ফোন করিনি বলে রেগে আছিস আমার ওপরে।"
আমি ওর কথা শুনে হেসে উরিয়ে দেই---" বাহ রে ছেলে, দুটি রিং করে ছেড়ে দিলি আর আমাকে বলছিস যে ফোন করিস নি। আমি ঠিক জানতাম যে তুই কিছু না কিছু করে ত উইশ করবি আমাকে।"
ধরা পরে যাবার একটা খুশির হাসি হেসে আমায় জিজ্ঞেস করে---"ঠিক জানিস যে আমি ফোন করেছিলাম?"
---"তা ছাড়া আমায় কোন পাগল মাঝ রাত্রে ফোন করবে রে শুয়োর।"
---"তোকে ফোন করার জন্য তো লাইন লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রে।"
---"আর ঢঙ্গ করিসনা, আমি কি তোর সুরপনাখার মতন যে মাছি ভন ভন করবে আমার চারদিকে।"
পেট চেপে আমার যেমন হাসি পায়, ও দিকে শুভ্র ও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়---"বেড়ে বলেছিস, সূর্পনাখা, হা হা হা......... তো আজ তো পার্টি হওয়া উচিৎ, কোথায় দিচ্ছিস আমাদের পার্টি?"
আমি তো শুনে থ---"আমি আর পার্টি? কি যে বলিস?"
---"কেন সকাল থেকে ফোন আসেনি?"
আমি অবাক ওর কথা শুনে---"তুই কি করে জানলি, যে সকাল থেকে ফোনের বন্যা বয়ে গেছে?"
হাসতে থাকে অ---"বাসবি... দ্যা সুইট ড্রিম ফেয়ারি। ওকে জিজ্ঞেস কর। প্লান টা ব্যাসিকালি বাসবির।"
একের পর এক যেন চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে চলেছে আমার চার দিকে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি---"তোরা চুপি চুপি এতো কি জল্পনা করেছিস রে?"
"আছে আছে আরও আছে। একটু পরেই একটা আরও সারপ্রাইসে আছে। আমি ফোন রাখছি।" বলে ফোন কেটে দেয়।
এমন সময় মা আমাকে এসে বলে---"বাসবি এসেছে। তোরা কি কোথাও যাবি নাকি রে?"
আমি অবাক হয়ে দেখি মায়ের দিকে, পেছনে দেখি বাসবি। একটা খুব সুন্দর কচি কলাপাতা রঙের সাড়ী পরে। খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে ওকে।
আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হেসে বলে---"তৈরি হসনি এখনো? তারা তারি তৈরি হ।"
আমি কি বলব বুঝে পেলাম না---"কি ব্যাপার বলত তোদের?"
হেসে উরিয়ে দেয় আমার কথা---"কি আর আজ তোর জন্মদিন আবার কি।"
"কিন্তু আগে তো কোনদিন এই রকম করিস নি।"---আমি অবাক চোখে ওকে জিজ্ঞেস করি।
---"ব্যাস মন হল তাই করলাম। শুভ্র কি ফোন করেছিলো?"
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
আমি মাথা নেড়ে জানাই "হ্যাঁ"।
আমাকে ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে আমাকে বলে শাড়ী পড়তে।
---"কেন?"
---"সব মেয়ে রা আজ শাড়ী পরছে তাই। সুপর্ণা, পারমিতা, অরুণিমা সবাই আজ শারী পরে কলেজে আসছে। আমরা সবাই কোথাও খেতে যাবো।"
---"কোথায়?"
---"পিটার ক্যাট, পার্ক স্ট্রিট।"
---"সবাই মানে, কুড়ি জন ?"
---"হ্যাঁ, সবাই। অত চিন্তা তোকে তো করতে হবে না। তুই তারা তারি শারী পরে চল।"
আমি সেই দিন একটা, কাঁচা হলুদ রঙের শারী পরেছিলাম। পাড়টা গাড় নীল রঙের। শারী টা আমার পাতলা শরীরের ওপরে যেন একটা মখমলের পরতের মতন এতে গেলো। আমি নিজেকে আয়নায় দেখে হেসে ফেললাম। চুল গুলো একটা আলত হাত খোঁপা করে, ঘাড়ের পেছনে ঝুলিয়ে দিলাম। কানে ছোটো দুটো সোনার দুল, মা আমাকে পরিয়ে দিল। আমি কোন দিন এই রকম ভাবে সাজিনি, নিজেকে দেখিনি।
বাসবি আমার দিকে একমনে তাকিয়ে, আলত করে মাথা নেড়ে বলল---"তুই সত্যি সুন্দরী রে।"
আমার কান দুটো লাল হয়ে গেলো---"ধুত কি যে বলিস।"
---"আমি কি আর বলব, যে বলার সে বলবে খানে।"
আমার বুক কেঁপে ওঠে, "কে কি বলার জন্য অপেক্ষা করে আছে?" ধুক পুক করে ওঠে মন, হাতুরি পিটতে থাকে ছোটো হৃদয় টা, পাঁজরের ওপরে যেন একটা হাপরের বাড়ি ক্রমাগত মারছে।
আমি আর বাসবি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। যেতে যেতে বাসবি বলল যে, টিফিনের পরে আমরা সবাই মিলে পিটার ক্যাট যাচ্ছি। কলেজে পৌঁছে দেখি, শুভ্র আসেনি। সব মেয়ে গুলো শারী পরে।
ছেলে গুলো তো বলতে লাগলো---"এই প্রথম মনে হচ্ছে যে, পদার্থ বিগ্যানের ছেলে মেয়ে রা ও সাজতে জানে। আর অহনা তো আজ কি যে বলি..."
আমি পরাশর কে জিজ্ঞেস করি---"ব্যস অনেক হয়েছে, এবারে বলত শুভ্র কোথায়?"
---"আমি কি জানি, আমাকে বলে গেলো যে দুপুর বেলায় সবাই কে নিয়ে পিটার ক্যাট পৌঁছুতে।"
সারাটা সময় আমি ক্লাসে মন দিতে পারলাম না, সারা সময় ভেবে ভেবে কুল পেলাম না যে কি করছে ছেলেটা, কেন এল না এমন দিনে। বাসবি আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসতে থাকে। আমি শত বার জিজ্ঞেস করা সত্যেও আমায় বলেনা যে শুভ্র কোথায়।
আমারা সবাই যখন পার্ক স্ট্রিটএর জন্য রওনা দেই তখন দেখি শুভ্র আমাদের জন্য বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি প্রায় দৌড়ে গিয়ে ওর কলারটা টেনে জিজ্ঞেস করি---"সকাল থেকে কোথায় ছিলিশ? ক্লাসে আসিস নি কেন?"
আমার ঐ রকম দৌড়নো দেখে আমি বেশ বুঝতে পারি যে সবাই বেশ মিটি মিটি হাসছে আমার পেছনে। আমি তো লজ্জায় লাল হয়ে পড়ি।
পারমিতা আমার দিকে তাকিয়ে আলত হেসে বলে---"কিরে এবারে শান্তি?"
আমি কিছু না বলে চুপ চাপ করে দাঁড়িয়ে থাকি আর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার মুখ দেখে সবাই হেসে ফেলে। আড় চোখে তাকিয়ে দেখি, সুপর্ণার মুখটা একদম হটাত করে কালো হয়ে ওঠে। আমি দেখে বেশ মজাই পেয়েছিলাম সেই দিন।
সত্যি কি প্রেম ছিল (#12)
আমরা সবাই মিলে ট্যাক্সি চেপে পার্ক স্ট্রিট গিয়ে পৌঁছালাম। ছেলেরা একটা আলাদা ট্যাক্সি আর মেয়েরা একটা আলাদা ট্যাক্সি। সুতরাং আমি শুভ্র কে একা কিছু জিজ্ঞেস করার অবকাশ পাইনি।
গন্ত্যব স্থলে নেমেই ওকে ধরি আমি---"কি রে সকাল থেকে কোথায় ছিলিছ বলতো? আমি তোকে খুঁজে খুঁজে হয়রান।"
আমার দিকে একটু খানি হেসে জিজ্ঞেস করে---"আমাকে কেন খুঁজ ছিলিছ?"
---"যেন তুই জানিস না, এমন একটা ভাব দেখাচ্ছিস?"
---"সত্যি বলছি আমি কি করে জানবো, আমি তো তোকে খুঁজছিলাম না, তুই আমাকে খুঁজছিলিস। যাই হোক চল ভেতরে।"
"সত্যি কি তুই কিছু বুঝিস না শুভ্র" আমার খুব ইছ্যে হয়েছিল সেই দিন ওকে আমি এই কথা টা জিজ্ঞেস করি, কিন্তু তার মাঝে বাসবি এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যায় ভেতরে।
ঢুকে দেখলাম আমাদের জন্য একটা টেবিল আগে থেকে বুক করা। আমি বাসবি কে জিজ্ঞেস করাতে ও উত্তর দেয় ও টেবিল আগে থেকে বুক করে রেখেছিলো। আমি একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। এতো বড় একটা রেস্তুরান্ত তাতে আবার টেবিল বুক করা, আমরা সবাই মিলে প্রায় কুড়ি জন মানুষ। ও এতো পয়সা পেল কোথা থেকে?
আমার একদিকে বাসবি আর একদিকে পারমিতা বসলো। আমি আশা করেছিলাম যে শুভ্র আমার পাশে বসবে কিন্তু ও বসলো বাসবির পাশে। কিছু ঠিক করে আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না, সব কিছু আমার কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছিলো। মন টা বেশ খুশি খুশি ছিল।
আমি থাকতে না পেরে বাসবি জিজ্ঞেস করি---"হ্যাঁ রে কাকিমা বা আমার মা আমাদের দিনে কুড়ি টাকার বেশি তো দেয় না, এতো খরচ যোগাড় করবি কোথা থেকে?"
আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে বাসবি---"তোর সব জেনে দরকার কি রে? আজ তোর জন্মদিন, তোর দিন, মজা করনা। এখানে ছেলো কাবাব খুব ভাল, ওটাই অডার করি কি বল?"
অবাকে হয়ে তাকিয়ে দেখি ওর দিকে---"কোন দিন তো আমায় না নিয়ে কোথাও যাসনি, কি করে জানলি এই খানে ওটা সব থেকে ভাল পাওয়া যায়?"
---"শুভ্র বলেছে।"
"মানে?" আমার মনের এক কোনে একটা ভীষণ ঝড় ওঠে, মাথা ঘুরতে থাকে আমার, হৃদয় টা হটাথ করে থেমে যাবার উপক্রম হয় "তাহলে কি শুভ্র বাসবি কে ভালবাসে?"
আমার চোখে চোখ রেখে, তাকিয়ে থাকে বাসবি, আলত করে আমার গাল গুলো ওর মিষ্টি নরম আঙ্গুল দিয়ে ছোঁয়---"কি ভাবছিস, ঐ পাগলের কথা? আরে না না, আমি আর ও কিছু না। তুই একটা পাগলী মেয়ে রে।"
আমার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে, আমি জড়িয়ে ধরি বাসবি কে, একটু খানি ফুঁপিয়ে উঠি। আমি পলক ভেজা চোখে তাকিয়ে থাকি শুভ্রর দিকে।
আমার চোখে জল দেখে ও আমাকে জিজ্ঞেস করে---"কি হল তোর?"
মিষ্টি হেসে, চোখের জল মুছে ওকে বলি আমি---"কিছু হয় নি। তুই আমার সব থেকে ভাল বান্ধবী রে।"
তারপরে এল ছেলো কাবাব, শুরু হোলও গল্প গুজব। আমি এক সময় হেসে শুভ্র কে জিজ্ঞেস করি---"তুই তো কলকাতার ছেলে নস, তাহলে এই রেস্তুরান্ত এর কথা জানলি কি করে।"
ও একটা দুষ্টু হাসি হেসে সুপর্ণার দিকে তাকিয়ে থাকে। ভুরু নাচিয়ে সুপর্ণা কে জিজ্ঞেস করে---"কি গো কি জিজ্ঞেস করছে, তুমি উত্তর টা দেবে না আমি দেবো?"
সুপর্ণা লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে, সবাই প্রায় মুখ টিপে হাসতে শুরু করে। বেশ প্রানবন্ত ভাবে শুভ্র নিজেকে ব্রেকআপ থেকে সামলে নিয়েছে দেখলাম। সুপর্ণার সাথে বেশ ভাল ভাবে কথা বলছে ও। আমি বেশ বুঝে গেলাম যে ওরা কোন সময় এসেছিলো এখানে খেতে।
খাওয়া দাওয়া শেষ, সবাই এক এক করে সুভেচ্ছা জানায়।
পারমিতা শুভ্রকে জিজ্ঞেস করে---"তোর কি কিছু বলার আছে?"
আমি উৎসুক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে, কি বলতে চায়। ও একবার পারমিতার দিকে, একবার সুপর্ণার দিকে, একবার বাসবির দিকে তাকিয়ে দেখে। আমার মুখ টা লাল হয়ে ওঠে, বুক টা একটা অজানা উৎসুকময় আনন্দে ভরে উঠতে থাকে "কি বলতে চলেছে ও, সেটা কি আমার সম্পর্কে?" ফুসফুস যেন হাপর টানে বুকের পিঞ্জরে।
আমার দিকে তাকায় ও, আমি জুলু জুলু নয়নে দেখতে থাকি ওর দিকে এক দৃষ্টে। সবাই যেন বাকরুদ্ধ হয়ে এক দৃষ্টে দেখতে থাকে ওর দিকে। এক সেকেন্ড যেন একটা বছর বলে মনে হচ্ছিলো আমার। ওর ঠোঁট নাড়ানো দেখে আমার অজান্তেই আমার দুই হাত আমার বুকের মাঝে জড়সড় হয়ে আসে।
আমি ওর আওয়াজ শুনতে পাই---"অহনা...।" আমার মনটা ঢুম ঢুম করতে থাকে "তোকে আমি..." আমি প্রানপনে ভাবতে থাকি তার পরের শব্দ টা। ---"তুই আমার সব থেকে ভাল বান্ধবী রে, অহনা।"
Posts: 1,886
Threads: 6
Likes Received: 6,324 in 1,869 posts
Likes Given: 2,644
Joined: Jun 2019
Reputation:
739
দারুন দারুন, আবার পড়ে মন ভরে গেল !!!!!!
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(28-12-2020, 02:11 PM)pinuram Wrote: দারুন দারুন, আবার পড়ে মন ভরে গেল !!!!!!
এনার লেখনীর সাথে তোমার স্টাইলের বেশ মিল আছে
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
আমার সাথে সাথে সবাই হেসে ফেলে। পারমিতা চিৎকার করে ওঠে---"না না, এটা সত্যি কথা নয়।"
ও একটা ব্যঙ্গ হাসি দেয় পারমিতার দিকে, একটু পরে বলে ওঠে---"আমি কি বলেত চাই না চাই সেটা কি তোকে বলে দিতে হবে। আমার কিছু বলার থাকলে তো বলবো, তোরা এমন ভাবে কোনটাসা করে ফেলেছিস ক্যানও।"
আমরা সবাই বেরিয়ে পড়ি, সবাই এবারে বাড়ি ফেরার পালা। আমি, বাসবি আর শুভ্র এক দিকে থাকি সুতরাং আমরা একটা ট্যাক্সি নিলাম। আমি বসলাম শুভ্রর পাশে, ও আমার দিকে দেখে বলল---"তোকে আজ দারুন মিষ্টি দেখাচ্ছে রে। আমি তো ভাবতে পারিনি তুই এই রকম ভাবে সাজতে পারিস।"
আমি ভুরু নাচিয়ে বলে উঠি---"সবে তো শুরু সোনা মনি, আরও কত আছে লুকিয়ে তুমি কি জানো"
চোখ বড় বড় করে আমার দিকে দেখে বলে---"বাঃবা আরও কত আছে রে লুকিয়ে, দেখাস যাকে দেখানোর আমি নয়।"
---"কেন তুই নস?"
আমার কথা শুনে ওর চোখ দুটি কেমন ভাসা ভাসা হয়ে ওঠে। ও আবার আমায় বলে অথে---"আমি নয় অহনা, আমি নয়।"
আমি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম "কেন তুই নয়?"
বাসবি আমার দিকে তাকিয়ে দেখে বলে---"তোদের কি হয়েছে বলতো আজ, একজন তো উদাস বাউল আর একজন চাতক পাখী।"
আমি ওকে আবার জিজ্ঞেস করি---"তাহলে তুই কিছু বলবি না আমায়?"
মাথা নাড়ায় ও---"না আমি কিছু বলবো না।"
রেগে উঠি আমি, জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিজের চোখের জল লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করি। আমার অজান্তে ডান হাত টা মুঠি হয়ে আমার মুখের কাছে চলে আসে, দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরি নিজের কড়ে আঙ্গুল নিজেকে সামলে নেবার জন্য। "কি হবে চোখের জল ফেলে যে আমাকে বুঝল না।"
ট্যাক্সি থেকে নামার সময় আমাকে জিজ্ঞেস করে---"কাল কলেজে দেখা হবে।"
রেগে মেগে বলে উঠি---"কথা বলবি না আমার সাথে।"
---"ঠিক আছে, আমি তো এই রকম কিছু একটা আশা করেছিলাম রে।"
আমার বুক টা ফেটে যায়, চোয়াল শক্ত করে জলে ভেজা চোখে তাকিয়ে দেখি। ট্যাক্সি ছেড়ে দেয়। পেছনে তাকিয়ে দেখি, ও দাঁড়িয়ে আছে আমার চলে যাবার দিকে তাকিয়ে। মনে হোল এক বারের জন্য ও নিজের চোখের কোল টা আঙ্গুল দিয়ে মুছে নিলো।
তারপর দিন থেকে ও আমার সাথে এমন ভাব দেখায় যেন কিছুই হয়নি, আমরা খুব ভাল বন্ধু মাত্র। আমি ও বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারি ও আমার কাছে কিছু বলতে চায় কিন্তু বলে উঠতে পারে না। দিন কেটে যায় একটা লুকচুরি খেলা চলে যেন আমাদের মধ্যে। শুভ্র সবসময় একটা দূরত্ব রেখে যায় আমার সাথে। আমি যতই ধরতে চেষ্টা করি ওকে ও তত যেন মাগুর মাছের মতন পিচ্ছিল হয়ে আমার হাত ফশকে বেরিয়ে যায়। ধরা আর পরেনা। আমাদের বন্ধুতের মাঝে কোন বিচ্ছেদ ঘটাতে ও দেয় না ঠিকই কিন্তু ও আমাকে ওর মন খুলে কিছু বলতে ও চায় না।
শত বার জিজ্ঞেস করার পরেও ওর সেই একি উত্তর "আমার বলার সময় আসেনি অহনা"
সত্যি কি প্রেম ছিল (#14)
আমি অনেক দিন ধরে ভাবি "শুভ্র কি চায় আমার কাছ থেকে?" আমি মাঝে মাঝে বাসবি কে সেই প্রশ্নটা করি। ওর কাছ থেকে ও কোন রকম মন মানানো উত্তর পাই না। ও বলে হয়তো হবে তোকে পড়ে জানাবে। আমি জিজ্ঞেস করি এখন কেন নয়? এখন জানাতে আমাকে দোষটা কি? পারমিতাও আমাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে কি রে শুভ্র কিছু বলল? আমি মাথা নেড়ে বলি "কি আর, কিছুই তো বলে না রে?"
কিছু দিন ধরে দেখতে পাই যে ও আমাকে কেমন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। শীত কাল চলে আসে। সামনে পরীক্ষা। পরীক্ষার পড়া নিয়ে সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়ি।
একদিন শুভ্র আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে---"কি রে আমার ওপরে রাগ করে আছিস নাকি?"
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে, কি বলছে ও আমি কেন রাগ করবো ওর ওপরে। আমার তাকিয়ে থাকা দেখে ও বুঝতে পারে আমি কি জিজ্ঞেস করতে চাই।
আমার দিকে একটু ঝুঁকে জিজ্ঞেস করে---"মায়াপুর ঘুরতে যাবি?"
আমি কিছু বুঝে উঠতে পারিনা, যে ছেলে আমাকে মাঝে মাঝে এড়িয়ে চলছিল সে হটাথ করে আমাকে মায়াপুর যাবার জন্য কেন জিজ্ঞেস করছে?
---"যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। যাবি কি না বল।"
আমি রেগে মেগে বলি---"তোর সাথে কেন যাবো?"
একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বলে---"ওকে যাস না। আমি ভাবছিলাম একটু ঘুরতে যাবো তাই তোকে জিজ্ঞেস করা। আমি তাহলে একাই যাবো আর কি।"
আমার খুব বড় প্রশ্ন ছিল---"মায়াপুর কেন?"
---"আরে কিছু না, আমার একটু শান্তশিষ্ট জায়গা ভাল লাগে তাই মায়াপুর যাওয়া।"
আমি নিমরাজি হয়ে সম্মতি দেই---"ঠিক আছে আমি যাবো।"
আমি বাসবি কে জানাই যে আমি আর শুভ্র মায়াপুর বেড়াতে যাবো। বাসবি আমায় জিজ্ঞেস করে যে শুভ্র কি আমাকে একা যেতে বলেছে না ও আমাদের সাথে যাবে। আমি ওকে জানাই যে আমি আর শুভ্র শুধু আমরা দুইজনেই মায়াপুর বেড়াতে যাবো। সেই শুনে, বাসবি আমার চেয়ে বেশি খুশি হল মনে হল। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি "কি হল এতো আনন্দিত হবার কি আছে?" ও আমায় বলে যে "দেখ এবারে নিসচ্ছই কিছু বলবে" আমি মাথা নেড়ে জানাই "কি জানি বাবা ছেলের মতি গতি কিছুই তো বুঝে উঠতে পারছিনা আমি।"
সেইদিন আমি একটা কচি কলাপাতা রঙের শারী পরি। চুল টাকে একটা ছোটো হাত খোঁপা করে ঘাড়ের পেছনে এলিয়ে দেই। দুই ভুরুর মাঝে একটা ছোটো টিপ এঁকে দেই। একটা পেন গুঁজে দেই খোঁপার ভেতরে। ডান কাঁধে একটা লাল শাল পাট পাত করে ঝুলিয়ে দেই। নিজেকে আয়নার সামনে দেখে বেশ লাগে আমার। মনে একটু দ্বিধা থাকলেও সেটা আমি আমার মুখে আনতে দেইনি। বাড়ি থেকে বলে বের হই যে আমি কলেজ যাচ্ছি। মা আমায় দেখে হেসে জিজ্ঞেস করে "কি রে সত্যি কলেজ যাচ্ছিস তো নাকি?" আমি আলত হেসে মাকে জানাই যে আমি কলেজেই যাচ্ছি।
বাসবি আমায় দেখে বলে---"বাহ বাঃ অনেক সেজেছিশ তো রে। কি ব্যাপার।"
মনের কোনো এক কোনায় আমার তখন একটা দ্বিধা বোধ থাকে। মনটা তৃষ্ণার্ত চাতক পাখীর মতন উরতে থাকে যেন আমি এক অজানা তরি বাইতে চলেছি, কোথায় যাবো কোথায় তীর ঠিকানা জানা নেই আমার। মনের কোন গহিনে জেগে ওঠে এক আনমনা সুর, সেই সুর কাছে ডাকে না দূরে সরাবে আমি কিছু বুঝে উটতে পারিনা। আমার ম্লান চোখের চাহনি দেখে বাসবি আমায় জড়িয়ে ধরে। চোখের কোলে আমার জল চলে আসে। ঠোঁট জোড়া একটু কেঁপে ওঠে।
---"কোথা থেকে বাসে উঠছিস তোরা?"
---"উলটোডাঙা"
---"ঠিক আছে, সাবধানে যাস কিছু হলে জানাস আমায়।"
আমি মাথা নেড়ে জানাই ঠিক আছে।
বাস স্ট্যান্ডে এসে ওকে দেখে আমি তো থ। ও একটা ব্রাউন রঙের সুট পরেছে। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে---"লুকিং গরজিয়াস ডার্লিং। সো ক্যান উই স্টার্ট।"
আমি একটু লজ্জাই পেয়েছিলাম ওকে দেখে। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই "চল।"
বাস দৌরতে থাকে রাস্তা ধরে। কিছুক্ষণের মধ্যে শহর ছাড়িয়ে গ্রাম গঞ্জের মাঝ ধরে এগুতে থাকে বাস। কারুর মুখে কোন কথা নেই। আমি এক দৃষ্টে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি। বুকের মাঝে ধুক পুক করতে থাকে এক বিশাল প্রশ্ন "কি বলতে চলেছে শুভ্র আমায়। আমি যা জানতে চাই সেটা না অন্য কিছু।"
আমার নীরবতা দেখে শুভ্র আমায় জিজ্ঞেস করে---"কি হয়েছে, এতো চুপ চাপ কেন? কিছু তো বল। তুই কথা না বললে কি ভাল লাগে?"
একটা ম্লান হাসি হেসে তাকাই ওর দিকে---"কি শুনতে চাস বল, আমি বলে দেবো।"
আমায় একটু ঠেলে বলে---"তুই না একদম সাঙ্ঘাতিক দেখাচ্ছিস।"
আমি মুখ টিপে হেসে বলি---"কেন আগে আমাকে এই রকম অবস্থায় দেখিসনি।"
---"হায় পোড়া কপাল আমার, তুই আর দেখালি কোথায়।"
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
---"আদিখ্যেতা করতে হবেনা। কেন জন্মদিনে তো আমি সেজেছিলাম, তখন। পুজর সময় ও সেজেছিলাম কিন্তু তুই তো ছিলিশনা।"
---"ও, পুজোর সময় আমি একটু বেরিয়ে ছিলাম, তাই কলকাতায় ছিলাম না।"
---"তুই আরে তোর একা একা ঘোরা, কি যে করিস আমি কিছু বুঝতে পারিনা।"
---"বুঝে কি করবি আমায়। আমি যে রকম আছি বেশ ভাল আছি।"
---"আচ্ছা একটা কথা বলতো, তুই কি আমার ওপরে রাগ করে আছিস নাকি। বিগত দু তিন মাস ধরে আমার সাথে ঠিক করে কথা পর্যন্ত বলিস না।"
---"ধুর কি যে বলিস তুই না। আমি যদি তোর ওপরে রেগে থাকতাম তাহলে কি তোকে নিয়ে মায়াপুর বেড়াতে যেতাম রে।"
---"আর আমি যদি রেগে থাকতাম তাহলে আমি যেতামই না তোর সাথে, তোর সাথে যেতে আমার বয়ে গেছে।"
---"সেটা আমি ভাল ভাবে জানি, কিন্তু তোর মতন একটা পাগলী তো যা কিছু তাই করতে পারে তাই ভাবলাম এবারে তোকে নিয়েই যাই ঘুরতে, না হলে কন দিন বাড়ি এসে আমার মাথাটা ফাটিয়ে দিয়ে চলে গেলি।"
আমি হেসে ফেলি। আমাদের মাঝে একটা ক্ষীণ কালো মেঘ জমেছিল সেটা এক হাওয়ার ঝোঁকে উড়ে গেলো। আকাশ মুক্ত, বিহঙ্গ ডানা মেলে উড়তে লাগলো আবার মুক্ত বারিধির তলায়। আমি ভাবলাম জীবন টা তো হাসি কান্না নিয়ে থাকা, সেই দিন গুলো সে রকম কিছু একটা হবে। আবার আমার মনটা খুশি তে ভরে উঠলো।
আমি হটাৎ করে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠি---"আমি যা বলবো সেটা তুই শুনবি? সত্যি বলছিস।"
আমার দিকে একটু ঝুঁকে পড়ে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ওঠে---"যা শোনাতে চাইবি তাই শুনতে রাজি আছি আমি।"
আমার কানে ওর গরম নিঃশ্বাস আমার কান টাকে উতপ্ত করে তোলে। কানের সাথে গাল গুলো উতপ্ত হয়ে ওঠে আমার। আমি আমার মুখটা একটু পেছনে করে নিয়ে এক দৃষ্টে ওর চোখের দিকে তাকাই, কি আছে ঐ দুই চোখে? আধবোঝা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আলতো হাসে ও।
আমি বলে উঠি---"তোকে আমি কোন দিন বুঝে উঠতে পারবোনা, তুই একটা খুব বড় প্রশ্ন আমার কাছে। আমি জানিনা কি বলবো তোকে, কিছুই ভেবে উঠতে পারছিনা আমি।"
---"ভেবে কি হবে। যে রকম চলছে সেই রকম চলতে দে না। কি আছে তাতে।"
---"মানে, যে রকম চলছে সেই রকম চলতে দেবো মানে? তাহলে আমাকে নিয়ে বেড়াতে বেড়িয়েছিস কেন বলতে পারিস?"
---"কেন জিলিপির প্যাঁচের মতন প্রশ্ন করে চলেছিস তুই, আমার সাথে যদি তোর যেতে নাই হতো তাহলে আসতে গেলি কেন?"
চোখ ফেটে জল বেরনোর উপক্রম হয়েছিল আমার, ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। আমার চোখে জল দেখে আমার গালে হাত দেয়। আমি ওর হাতের পরশটা নিঙরে নিতে চাই প্রানপনে। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আমার চোখের কোল মুছিয়ে দেয় আমার। বুকের মাঝে একটা অনাবিল ভাললাগা জেগে ওঠে। চোখ বন্ধ করে আমি ওর আঙ্গুলের পরশ অনুভব করতে থাকি। কিছুক্ষণ পর্যন্ত ওর আঙ্গুলটা আমার গালে থাকে তার পড়ে ও নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়।
প্রায় দুপুর নাগাদ পৌঁছই আমরা ধুবুলিয়া হয়ে মায়াপুর। শীতকাল, সকাল থেকে বেশ একটা মিষ্টি রোদ ছিল আকাশে। সেই মিষ্টি রোদে আমরা নিজেদের সব পুরনো ব্যাথা ধুয়ে নিতে চাইলাম। বেশ সুন্দর গতিময় হয়ে সময় কেটে গেলো।
নদীর তিরে বসে আমি ওর বাঁ কাঁধে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করি---"এই রকম ভাবে চিরটাকাল বসে থাকা যায় না শুভ্র?"
কথা বলেনি আব আমার প্রশ্নর উত্তর দেয়নি ও তখন। আমি আস্তে আস্তে মাথা উঠিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, ওর চোখের কোনা জলে ভরে। আমার বুক কেঁপে ওঠে কি হল ওর হটাত করে। আমি কি কিছু অন্যায় করে ফেললাম?
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
একটা বেদনাময় হাসি হেসে আমার দিকে তাকায়। চোখ দুটো টল টল করছে, সেই দেখে আমার দৃষ্টি ঝাপ্সা হয়ে আসে। ওর বাঁ হাতটা আমার দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরি প্রানপনে।
---"কি হয়েছে তোর? তুই এইরকম কেন হয়ে গেলি হটাৎ করে। কিছু বলবি তো।"
একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে ও বলে---"কি করবি আমার কথা শুনে। তুই বল তুই কি করবি এর পরে। আরও পড়াশুনা না এখানেই ইতি টানবি?"
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলি---"আমার ইচ্ছে আছে এম-এস-সি করবো তারপরে কলেজে বাঁ কলেজে পরাব।"
ওর মুখের ওপরে যেন একটা খুশির জোয়ার এল---"আরি বাআস খুব ভাল কথা। তাহলে আমরা সবাই একটা দিদিমনি পেতে চলেছি। খুব ভাল।"
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি---"তুই কি করবি এর পরে? তুই আর পড়াশুনা করবি না?"
মাথা নাড়ায় ও---"না আমি আর পড়াশুনা করবো না। তবে এখনও ঠিক করিনি আমি কি করবো। আমার সামনের পথটা অন্ধকারময়। সেটাই সব থেকে ভয়ঙ্কর আমার পক্ষে যে আমি কি করবো আমি নিজে জানিনা।"
আমার বুকের রক্ত ছলাত ছলাত করে ওঠে। কি হল ওর হটাৎ করে। আমি ওকে ঝাঁকিয়ে দেই হাত ধরে---"কি হয়েছে তোর, হটাৎ এই রকম ভাবে কথা বলতে শুরু করেছিশ কেন?"
আবার হেসে ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে---"দেখলি তো শালা, আমি আমার দুঃখ নিয়ে তোর কাছে বসেছি। ধুর, কিছু হবেনা।"
ও দিকে দেখি শীতকালের দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে এসেছে। আমি একটু ভয় পাই। মায়াপুর কলকাতা থেকে অনেক দূর। বাড়ি পৌঁছাতে পারবোনা সময় মতন। বাবা আমার ওপরে ক্ষেপে উঠবে।
আমি ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে শুভ্র কে বলি---"আমাদের বাড়ি যাওয়া উচিৎ শুভ্র।"
---"হ্যাঁ। কিন্তু বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যাবে যে? আর তোর বাবা।"
একটা আশঙ্কা আমার বুকের মধ্যে ভর করে, বাবা আজ মার পিঠের চামড়া গুটিয়ে দেবে---"কি করবো,"
---"এক কাজ কর, বাসবি কে ফোন করে বলে দে যে তুই ওর বাড়িতে থাকবি আজ রাতে। আর একটা ফোন বাড়িতে করে দে যে তুই আজ রাতে বাসবির বাড়ি থাকবি। ব্যাস সব ঠিক ঠাক।"
---"উইই মা, তোর মাথায় কত বুদ্ধি রে। আমার যদি এতো বুদ্ধি থাকতো তাহলে আমি ধন্য হয়ে যেতাম।"
আমার গালে আলতো টপ মেরে বলে---"তোর মাথায় যে বুদ্ধি আছে সেটা তো আর আমার মাথায় নেই তাই আমি পরাশুনায় ভাল না। যাই হোক বেশি কথা না বাড়িয়ে ফোন টা কর।"
ও দিকে দেখি, শীতের আকাশের পশ্চিম কোণে কালো মেঘের আগমন। আমার ভয়টা আরও বেড়ে যায়। আমি আতঙ্কিত নয়নে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি---"এই বৃষ্টি আসবে না তো?"
---"ফোনটা তো আগে কর, তার পরে যেতে যেতে ভাবছি কি করা যায়।"
বাসবি কে ফোন টা করাতে, ওর সব থেকে প্রথম প্রশ্ন---"কি রে কি হল? কিছু কি বলল।"
আমি হেসে উরিয়ে দেই ওর কথা---"না রে, কি জানি ওর মনে মনে কি আছে কিছুই ঠিক ঠাক বোঝা দায়। যাই হোক, আমার ফিরতে রাত হবে তাই আমি মাকে বলেছি যে আমি আজ রাতে তোর বাড়ি থাকব।"
---"ওকে ঠিক আছে।"
তারপরে মাকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে আমি ওইদিন রাতে বাসবির বাড়িতে থাকব। মা বিশেষ কিছু জিজ্ঞেস করলো না।
শুধু একটা কথা বলল, "যা কিছু করিস ভেবে চিন্তে করিস। অনেক বড় হয়েছিশ তুই।"
আমি মা কে জানাই---" কি যে বল তুমি না।"
শুভ্র আমাকে জিজ্ঞেস করল---"ফোন টোন ত হল এবারে, চলা যাক কি বল।"
বড় রাস্তা থেকে বাস ধরতেই দেখি বাইরে বৃষ্টি শুরু। আমি জানালার ধারে বসি, আর শুভ্র আমার পাশে বসে। আমার শীত লাগতে থাকে, আমি শালটা গায়ে জড়িয়ে নেই। বাস ছুটতে থাকে, চারদিকে ঘন কালো অন্ধকার নেমে আসে। আমার মধ্যে একটা অজানা ভয় ঢোকে।
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
আমার দিকে তাকিয়ে থাকে শুভ্র, ও মনে হয় বুঝতে পারে আমার মনের অবস্থা। আমার কাঁধে ও নিজের কোট টা জড়িয়ে দেয়। আমার বাঁ কাঁধটা আলতো করে হাত বুলিয়ে আমায় আশস্ত করে।
---"কিছু হবেনা। আমি আছি ত।"
---"হ্যাঁ তুই আছিস সেটাই আমার কাছে সব থেকে বড় পাওনা।"
আমার মুখের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে শুভ্র, ওর তাকান দেখে আমার মনের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে, আমি ওর গা ঘেঁসে ওর উষ্ণতা নেবার জন্য জড়সড় হয়ে বসি। ও আমাকে নিজের বাম বাহুপাশে আলিঙ্গন করে। আমি ওর বাম কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্দ করি। ওর বাঁ হাতের তালু আমার বাঁ কাধের গোলায় আস্তে আস্তে ঘুরতে থাকে। ওর আলতো পরশে আমার মন প্রান একটা উষ্ণ প্রসবনের ন্যায় উন্মিলিত হতে থাকে। আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলার পর্যায় পৌঁছে যাই। আস্তে আস্তে আমার ঘুম পায় আমি চোখ বন্ধ করে ওর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরি।
অল্পক্ষণ না অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানি না, ওর আলতো ঠেলায় আমার ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে তখনও ঝড় জল বয়ে চলেছে।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি---"কটা বাজে? কোথায় এলাম আমরা।"
---"উলটোডাঙা আসবে। অনেক রাত হয়ে গেছে রে অহনা। কি করবি।"
আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি, ঘুম জড়ানো চোখে একটা মিষ্টি হাসি ওর দিকে---"আজ দিনটা আমার চির দিন মনে থাকবে।"
হেসে ওঠে ও---"আমারও মনে থাকবে, কেন জানিনা তবে আমার মনে থাকবে।"
বাস থেকে নেমে দেখি, চারদিকে জল। অনেক রাত হয়ে গেছে। এই সময় বাসবির বাড়ি যাওয়াটা ও একটা বড় দুঃসহ ব্যাপার। ওর মা কি ভাববে।
আমি শুভ্রকে জিজ্ঞেস করি---"হ্যা রে, এই রাতে যদি বাসবির বাড়ি যাই তাহলেত ওর মা আমায় অনেক কিছু জিজ্ঞেস করবে রে। কি করি বলতো?"
বুক ভরা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে---"একটা উপায় আছে, যদি তুই কিছু মনে না করিস তাহলে বলতে পারি।"
---"কি?"
---"আমার বাড়ি চল।"
আমি সেই রকম কিছু আশা করছিলাম ওর কাছ থেকে। তাও একটা অবাক এবং মৃদু রাগ দেখান চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলি---"দুষ্টুমি হচ্ছে হ্যাঁ। আমি যাবো কেন তোর বাড়ি।"
---"আমায় বিশ্বাস নেই তোর।"
"হায় রে পড়া কপাল আমার, কাকে যে বিশ্বাস করবো ওকে না আমাকে সেটাই ত জানিনা।" আমি হেসে বলি চল তাহলে "কিন্তু কোন দুষ্টুমি নয়।"
হেসে প্রায় লুটিয়ে পরে রাস্তায় "আরে না না আমার যদি কিছু করার থাকতো তাহলে অনেক আগে...।"
"কি কি অনেক আগে কি" আমার হাসি আর ধরে না।
যেহেতু আমরা কোন ছাতা আনিনি সুতরাং আমরা দুই জনে একটু ভিজে গেছিলাম বৃষ্টি তে। শুভ্রর বাড়ি জাখন পৌঁছলাম তাখন অনেক রাত হয়ে গেছে, রাত প্রায় সারে ন’টা বাজে তখন।
সেই প্রথম বার আমি ওর বাড়ি ঢুকি। ওর আগে ও আমায় কোন দিন ওর বাড়িতে ডাকেনি আর আমিও যাইনি। বাড়িটা একতলা, দুটো শোবার ঘর, একটা বসার ঘর। একটা ঘরে একটাই বিছানা পাতা। আর একটা ঘরে ওর পড়ার সরঞ্জাম আর খাবার টেবিল। বসার ঘরটা ছোটো, দুটি সোফা পাতা আর একটা টিভি আছে। বেশ ছিমছাম, কোন আড়ম্বর হীন, দেখে মনে হয়না যে ও এতো আড়ম্বর হীন জীবন যাপন করে। আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকি। ও আমাকে বলে বাসবি কে ফোন করে জানিয়ে দিতে।
আমি বাসবিকে ফোন করাতেই আমাকে বলে ওঠে বাসবি---"কি করছিস তুই? ওর বাড়িতে থাকবি? জানিসত ওর কেউ নেই, ও একা থাকে। কিছু করে যদি।"
আমি হেসে বলি---"কি করবে তা ত জানিনা। তবে যদি কিছু করে তখন দেখা যাবে খানে। যাই হোক মা যদি ফোন টোন করে তাহলে একটু সামলে নিশ প্লিস।"
হেসে বলে বাসবি---"সেটা আর বলতে, তবে অহনা ...।"
সত্যি কি প্রেম ছিল (#18)
আমি একটু খুশি খুশি ভাব নিয়ে ওকে বলি---"কিছু না, রাখ ফোন। আজ যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি আমার জীবনের সব থেকে বড় পাওনা পেয়ে যাবো।"
এমনিতেই আমি এবং ও দুই জনে বৃষ্টিতে একটু একটু ভিজে গেছিলাম। ও যেহেতু নিজের কোটটা আমার ওপরে চাপিয়ে দিয়েছিল তাই আমার ঊর্ধ্বভাগ ভেজেনি, মাথাটা ভিজেছিল। শুভ্র একটু ভিজেই গেছিলো। আমাকে নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে---"তুই ড্রেসটা চেঞ্জ করেনে।"
আমি হেসে জিজ্ঞেস করি---"ওরে পাগল আমি কি কোন ড্রেস এনেছি নাকি যে চেঞ্জ করবো। আমি কি পরবো চেঞ্জ করে?"
আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, চোখে একরাশ উষ্ণতার লেশ মাখা। ওর চোখ চাহনি দেখে আমার বুক টা ছলাত করে ওঠে, আমার কান গরম হয়ে যায়। ও এক দৃষ্টে আমার মুখ ও বক্ষ যুগলের দিকে তাকিয়ে। আমার গাল গুলো লাল হয়ে ওঠে। বুকের পাঁজরের অলিগলিতে শ্রাবনের তাণ্ডব শুরু হয়।
আমি মৃদু স্বরে বলে উঠি---"আমার দিকে ঐ রকম ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন রে? আমি একটু চান করবো, জল গরম করে দিবি?"
আলমারি খুলে আমাকে একটা পাঞ্জাবি আর পায়জামা দিয়ে বলে---"আমার বাড়িতে তো কোন মেয়ে থাকে না তাই কোন মেয়েদের জামা কাপড় নেই। তোকে এটা পড়তে হবে। তুই বাথরুমে ঢোক, গিজার আছে।"
আমি ওর হাত থেকে পাঞ্জাবি নেবার জন্য হাতটা বাড়াই। দুজনার আঙ্গুলের ছোঁয়া লাগে। এক বিদ্যতু তরঙ্গ খেলে যায় আমার হাতের ওপর দিয়ে। সারা অঙ্গে ফুটে ওঠে মিহিদানা, রোমকূপ গুলো উন্মিলিত হয়ে ওঠে। আমার হাতটা শিথিল হয়ে আসে। আমার আঙ্গুল যেন ছাড়তে চায়না ও, এমন ভাবে ধরে আঁকড়ে থাকে আমার হাতটা। এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে আমার মুখের দিকে। উন্নত নাশিকা, চওরা কাঁধ, প্রসস্থ বুক। আমি নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাই।
আলতো করে আমি নিজের হাতে মোচর দিয়ে বলি---"কি রে হাত টা ছাড়, না হলে আমি যাবো কি করে।"
আমার আওয়াজে যেন ও নিজের সম্বিৎ ফিরে পায়। একটা ঝাকানি দিয়ে ওঠে ও, যেন এক নিবিড় ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল এতক্ষণ। হটাত করে হাতটা ছেড়ে দিয়ে মাথা ঝাঁকা দেয়।
---"হ্যাঁ হ্যাঁ যা যা। আমিও চেঞ্জ করে নেই ততক্ষণে।"
আমি কোন রকমে, ওর হাত থেকে কাপড় গুলো নিয়ে বাথরুমে ঢুকি। দরজা বন্ধ করার আগে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে আর অল্প অল্প করে মাথা নাড়ছে।
আমি একটা মিষ্টি হাসি হেসে বলি---"ঐ রকম ভাবে তাকিয়ে থাকিস না।"
মাথা চুলকোয় শুভ্র, যেন একটা চুরি করতে গিয়ে ধরা ওরে গেছে। আমি বাথরুমে ঢুকে, দরজা বন্ধ করে নিজেকে আয়নায় দেখতে থাকি। আমার অজান্তে আমার দুই হাত আমার গালের কাছে চলে আসে। ওর হাতের পরশটা নিজের গালের মেখে অনুবভ করতে চেষ্টা করি। মনের কোন এক কোনা হতে এক মিষ্টি সুর ভেসে আসে। নিজের প্রতিফলন দেখে নিজেই কেমন যেন লজ্জা পেয়ে যাই আমি। গিজার টা চালিয়ে দেই জল গরম করার জন্য। এক এক করে নিজের পরনের বস্ত্র গুলো খুলতে থাকি। শাড়ীটা নেমে এল আমার দেহ পল্লব থেকে। বাকি যে টুকু ছিল, সেটাও খুলে ফেলে, প্রথম বার নিজেকে এক অন্য চোখে দেখতে চেষ্টা করি। আমার তন্বী গঠন, পাতলা শরীর, সুডৌল কুঁচ যুগল, মসৃণ ত্বক, সব যেন এক অনাবিল আনন্দের হাতছানি তে ঝলসে যাচ্ছে। নিজেকে দেখতে দেখতে, নিজেরই কেমন জানো লাগলো। হেসে ফেললাম আনমনে।
তারপরে চান সেরে বেরিয়ে দেখি, শুভ্র কাপড় চেঞ্জ করে নিয়েছে। শীতকাল বলে একটা ট্রাকসুট পরেছে। আমি ওর পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে জড়সড় হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ওর দিকে তাকাই। পাঞ্জাবির নিচে আমার পরনে আমার অন্তরবাস। আমি ঠাণ্ডায় একটু কেঁপে উঠি। আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে শুভ্র। আমি ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি যে পাঞ্জাবির বোতাম গুলো খোলা। ওর ফাঁক থেকে আমার কুঁচ যুগলের দিকে ওর নজর। আমার গাল দুটো লাল হয়ে ওঠে, বুকের রক্ত ছলাত করে ওঠে, কে যেন আগুন লাগিয়ে চলে যায় আমার দুটো কুঁচে। আমি ওর দিকে তাকাতে পারিনা। আমার লজ্জা দেখে ও নড়ে ওঠে। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে খোলা পাঞ্জাবিটা নিজের মুঠোয় নিয়ে ফেলি।
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,591 in 626 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
Complicated love story ভালো লাগছে
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
(28-12-2020, 09:51 PM)Kolir kesto Wrote: Complicated love story ভালো লাগছে
পুরো জিলিপির প্যাঁচের মতো সোজা
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
আমার দিকে এগিয়ে আসে শুভ্র, আমি প্রমাদ গুনি সেই আনন্দের। চোখ বন্ধ করে নেই, আমার শ্বাসের গতি বেড়ে চলে। বন্ধ চোখের সামনে অসংখ্য তারা বাতির আলো জ্বলে ওঠে। সারা শরীরের যত গুলো ধমনী ছিল সব গুলোর মধ্যে রক্ত যেন তীরের বেগে ছুটতে শুরু করে দিয়েছে। শ্বাসের বর্ধিত গতির জন্য আমার বুক দুটি হাপরের মতন ওঠা নামা করতে থাকে। আমি বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারি যে আমার কুঁচ যুগল আমার অন্তর্বাসের অভ্যন্তরে পিষ্ট হচ্ছে। আমার সারা শরীরে একের পর এক বিদ্যুৎ ঝলকানি খেলে যেতে থাকে। আমি আসন্ন আলিঙ্গনে বদ্ধ হবার উন্মুখ আশঙ্কায় তির তির করে কেঁপে উঠি। ওর পায়ের শব্দ ধিরে ধিরে আমার কাছে এগিয়ে আসে। আমি নাকে ভেসে আসে ওর গায়ের গন্ধ। আমি বুঝতে পারি ও আমার অনেক কাছে চলে এসেছে। আমার শরীর বারংবার কেঁপে ওঠে একটা ভিজে পায়রার মতন, কিছুটা ঠাণ্ডায় বেশিটা ওর বাহুপাশে বদ্ধ হবার আশঙ্কায়।
এক সেকেন্ড যেন এক একটা বছর মনে হয় আমার। অবশেষে আমার সব আশঙ্কা ঘুচিয়ে দিয়ে আমাকে শাল জড়িয়ে দিল। আমি চোখ না খুলেই ওর মুখের দিকে মাথা উঁচু করে নেই। ঠোঁট জোড়া তির তির করে কাঁপতে থাকে যেন ওকে আহ্বান জানায় আমার সুধা পান করার জন্য। ও আমার চারদিকে শাল জড়িয়ে দিয়ে আমার কাঁধে হাত রাখে। আমার বুকের ভেতরটা যেন গলে পরে। রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে আসে। আমি যেন একটা পুতুলের ন্যায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।
অল্পক্ষণ না অনেক্ষন জানিনা, বহু দূর দিয়ে ওর গলার স্বর ভেসে আসে---"অহনা, চোখ খোল প্লিস।"
দৃষ্টি ঝাপ্সা আমার, আস্তে আস্তে চোখ খুলি আমি। ও আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে। আমার সারা মুখের ওপরে ওর উষ্ণ প্রশ্বাস ঢেউ খেলে বেড়ায়।
"আমার কিছু বলার আছে, শুভ্র। আমার অনেক কিছু বলার আছে তোকে আজ।" ঠোঁট কেঁপে ওঠে আমার কিন্তু আমার গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হয় না। কেউ যেন আমার গলার আওয়াজ কেড়ে নিয়েছে।
---"অনেক রাত হয়ে গেছে, তুই শুতে যা।"
আমি নড়ে উঠি ওর কথা শুনে---"তুই কোথায় শুবি?"
---"আমি বসার ঘরে সোফার ওপরে শুয়ে পরবো, তুই আমার খাটে শুয়ে পর।"
আমি মাথা নিচু করে চলে যেতে থাকি, ও হটাত করে আমায় জড়িয়ে ধরে। আমি আর থাকতে পারিনা, আমার যত সংকচ সব ছুঁড়ে ফেলে হাত দুটি দিয়ে ওর বলিষ্ঠ শরীর কে আলিঙ্গন করে নেই। ও আমার মাথার ওপরে আলতো করে একটা চুমু খায়, আমার সারা শরীর গলে ওঠে। ওর বুকে মাথা গুঁজে থাকি ওর শরীরের শেষ উষ্ণতা টুকু নিঙরে নিজের মধ্যে করে নিতে। সর্ব সক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরি আমি, পৃথিবীর কোন শক্তি যেন আমাকে ওর কাছ থেকে বিচ্ছেদ না করতে পারে। ওর বুকের ওপরে ধিরে ধিরে আমি নিজের মুখ ঘসতে থাকি, আমার নাকে ওর গায়ের গন্ধ ভেসে আসে। বলিষ্ঠ বাহুপাশে আমার নরম শরীরটা যেন পিষ্ট হতে বাকি রাখে ও। জড়িয়ে ধরে ছিল আমায় কিন্তু সেই জড়িয়ে ধরার মধ্যেও আমি কেমন যেন একটা দ্বিধা বোধের আশঙ্কা খুঁজে পাই। আমি বুঝে উঠতে পারিনা, শুভ্র কেন আমাকে এতো ভালবাসার পরেও কিছু বলছেনা।
আমি থাকতে না পেরে বলে উঠি---"কিছু তো বল আজ, কেন তুই চুপ করে থাকিস। আমি ও জানি তুই কি চাস তুই ও জানিস আমি কাকে চাই। তাও কেন আমাকে তুই বলতে পারিসনা।"
আমি বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারি যে আমার কথা শুনে ওর বুক কাঁপছে। আমি ওর কপম্পন আমার গালের ওপরে অনুভব করি। ধিরে ধিরে মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে জল। সেই জল দেখে আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনা। আমার গাল বেয়ে আমার চোখের জল নেমে আসে।
---"কি যে বলি তোকে আমি নিজে জানিনা রে অহনা।"
আমি নিজেকে আস্তে আস্তে ওর আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে বলি---"কেন আমাকে তোর লুকোনোর কি আছে শুনি?"
আমাকে বসার ঘরে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলে---"আমি তোর জীবনের এগিয়ে যাবার পথের কাঁটা হতে চাইনা।"
আমি চিৎকার করে উঠি---"মানে? তুই কেন আমার পথের কাঁটা হবি?"
আমার পায়ের কাছে বসে পরে আমার হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। আমার বুক ভেদ করা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে আমার মুখের দিকে।
সত্যি কি প্রেম ছিল (#20)
তারপরে আস্তে আস্তে বলে ওঠে---"আমার ভবিষ্যতের কোন ঠিকানা নেই, অহনা। তোর সামনে একটা বিশাল জীবন পরে আছে।"
আমার বুক কেঁপে ওঠে, ও থামেনা "আমি চিরটাকাল ভবঘুরের মতন এখানে সেখানে করে কাটিয়েছি। অনেক দিন ধরে হস্টেলে থেকে থেকে ভেতরটা পাষাণ হয়ে গেছে। আমি যা ছুঁতে চাই তাই আমার কাছ থেকে দূরে চলে যায়। ছোটো বেলায় মা মারা যাবার পরে আমি ভেবেছিলাম আমি বাবার সাথে থাকব, কিন্তু আমাকে দূর বিহারে কোন এক হস্টেলে পাঠিয়ে তিনি নিজের কর্তব্য করেছেন। ভালবাসার নামে প্রতেক মাসে একটা চেক আমার ব্যাঙ্কের খাতায় জমা পরে। চার বছর আগে কলকাতা ফিরে আসি আমি এই ভেবে যে বাবা আর আমি এক সাথে থাকব। কিন্তু আমার মামা যখন আমায় হোস্টেল থেকে আনতে যায় তখন আমায় বলে যে বাবা আমার আবার একটা বিয়ে করেছেন। তার বিয়ে করা নিয়ে আমার কোন দুঃখ নেই, সেটা তার নিজের জীবন, তিনি কি ভাবে বাঁচবেন তার জীবন, সেটা নিয়ে আমি প্রশ্ন করার কে? আমি শুধু চেয়েছিলাম তার কাছে থাকতে, সেটা হয়ে ওঠেনি। তার বদলে পেলাম একটা চেক।"
আমি অবাক হয়ে হাঁ করে ওর কথা গুলো শুনতে থাকি, নিজের বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি। আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনা, চোখ দিয়ে অবিশ্রাম বারিধারা বয়ে চলে। আমার সারা শরীর মৃদু মৃদু শিহরনে কেঁপে ওঠে।
---"তুই এম-এস-সি করবি, আমার পড়া এখানে শেষ। আমি কলকাতা ছেড়ে চলে যাবো, ফিরবনা কোনোদিন।"
আমি চিৎকার করে উঠি---"না তুই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারিস না"
---"আমার কথা শোন দয়া করে, তারপরে বলিস।"
আমি বারংবার মাথা ঝাঁকাই, আমার বুক কাঁপতে থাকে, বন্যা নেমে আসে আমার দু চোখ দিয়ে---"না আমি কিছু আর শুনতে চাই না। তুই আমাকে ছেড়ে যেতে পারিসনা।"
কান্না জড়ানো গলায় ও বলে যেতে থাকে---"এক সময় তোর মনে হবে কেউ থাকলে ভাল হতো যার কাঁধে মাথা রেখে কিছু মনের কথা বলতে পারতাম, আমার ও এক সময় মনে হবে এই কথা। হয়তো আজ নয় অনেক দিন পরে। অনেক কথা হয়তো আমরা নিজেদের শয়ন সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে বলে উঠতে পারবোনা, সেই ব্যাথা গুলো আমরা একে অপরকে জানাব। সব সময় তো আর এক ছাদের তলায় থাকলে বুকের ব্যাথা অপরকে জানানো যায়না। সেই সময় আমি থাকব তোর কাছে।"
আমার চোখ লাল হয়ে ওঠে, ওকে কি বলবো কিছু ভেবে পাইনা আমি। এক ভাবে তাকিয়ে থাকি ওর মুখের দিকে, নাকের ফুটো বারংবার ফুলে ওঠে। আমার দুই হাত ওর হাতের মুঠোয় বরফের মতন জমে যায়। আমি সব শক্তি হারিয়ে ফেলি, একটু যে নড়ে বসবো সেটার ক্ষমতা ও থাকে না আমার মধ্যে।
দু জনে চুপ করে বসে থাকি, ও আমার পায়ের কাছে আমার হাত দুটি নিজের হাতে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি ভাষা হারিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি।
কিছুক্ষণ পরে কাঁপা স্বরে বলে উঠি---"তুই আমার সব থেকে ভাল বন্ধু রে।" বুকের এক একটা পাঁজর ভাঙতে থাকে যখন আমি ওকে ঐ কথা গুলো বলতে থাকি "আমি নিজেকে কোন দিন যা ভাবিনি সেটা তুই আমাকে ভাবতে শিখিয়েছিস। অনেক স্বপ্ন ছিল ডানা মেলে এই আকাশে উড়ে যেতে, সেটা তুই শিখিয়েছিস। আর সব থেকে বড়, আমাকে নিজেকে ভালবাসতে শিখিয়েছিস তুই। কিন্তু তুই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারিসনা, শুভ্র।"
"আমি তোকে ছেড়ে যাবো না তোর কাছেই থাকব, ডাক দিস আমি আসবো।" তারপরে হটাত করে হেসে ওঠে "আরে পাগলী মেয়ে, অনেক রাত হল, শুতে হবে, কাল ছুটি, সকাল সকাল তোকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তবে আমার শান্তি।"
আমি কান্না জড়ানো গলায় হেসে উঠি---"তুই না কি যে আর বলি তোকে। নাই বা শুলাম আজ রাতে। ধরে নে এটা আমাদের জীবনের শেষ রাত, কি করতিস তুই?"
বুক থেকে একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে ও বলে---"তোকে আগে ঘুম পারাতাম তার পরে আমি ঘুমিয়ে পরতাম।"
ওর কথা শুনে আমি আর হাসি চেপে রাখতে পারিনা---"ঘুমটা তো পাড়া আগে।"
ও আমার গালে হাত দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দেয়---"শুতে চাস না, তাহলে আর কি, চল গল্প করি।"
সত্যি কি প্রেম ছিল (#21)
যে মুহূর্তে ওর হাত আমার গালে আসে, আমি কেঁপে উঠি আমি ওর হাতের ওপরে হাত রেখে গালের সাথে চেপে ধরি।
ও আস্তে আস্তে হাতটা সরিয়ে নিয়ে আমায় বলে---"অহনা, আমাদের শোয়া উচিৎ। গল্প করা টা হয়তো ঠিক হবেনা।" আস্তে আস্তে আমার হাত ধরে উঠায় সোফা থেকে, আমাকে ও ওর নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে---"শুয়ে পর প্লিস। এর পরে যদি জেগে থাকি তাহলে হয়তো আর আমরা নিজেদের সামলে রাখতে পারবোনা। আমি চাই না আমি তোকে কিছু করি।"
আমি হাত টা ওর হাত থেকে টেনে নিতে নিতে বলি---"আমি জানিনা এটা কি হয়ে গেলো আমাদের মধ্যে, তবে তুই আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলি।"
সারা টা রাত আমি জেগে কাটা ই, দু চোখের পাতা এক করতে পারিনা। বুকের মাঝে এক ভীষণ ঝঞ্ঝা বারংবার আমার হৃদয় টা দোলাতে থাকে সারা রাত ধরে। আমি সারা রাত বিছানার এ পাশ থেকে ও পাশ করতে থাকি আর নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকি "একি হল আমার।"
মাঝ রাতে উঠে দেখি, সোফার ওপরে গুটি শুটি মেরে পরে আছে শুভ্র একটা শাল গায় দিয়ে। টেবিলের ওপরে একটা গেলাস, তাতে কোকা কোলা রঙের কিছু। মাঝে মাঝে একটু একটু চুমুক দিচ্ছে গেলাসে আর আমার দরজার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। যেহেতু আমার ঘরের আলো বন্ধ তাই আমাকে ঠিক ভাবে দেখতে পারেনা ও। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে ওকে এক মনে দেখে যেতে থাকি। শুভ্রর চোখ দুটি জবা ফুলের মতন লাল হয়ে জ্বলছে যেন। আমি বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারি ওর বুকের পাঁজর গুলো এক এক করে ভাঙছে, সেই নিস্তব্ধ রাতে ওর বুকের পাঁজরের ভাঙ্গার আওয়াজ আমার কানে ভীষণ ভাবে ধাক্কা দিতে থাকে।
আমি চুপ করে ঘরের মধ্যে ঢুকে বালিশে মুখ গুঁজে নিজেকে অন্ধকারে মিলিয়ে দিতে প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি। প্রানপনে ডাকতে থাকি "তারা তারি যেন সকাল হয় আমি আর পারছিনা ওর চোখের সামনে থাকতে। আমি হয়তো মারা যাবো না হলে ও হয়তো নিজেকে শেষ করে দেবে।"
সেই বেদনাময় রাত বা মধুময় রাত, জানিনা সেই রাত কি ছিল, তবে সেই রাত আমার জীবনের সব থেকে বড় রাত। সকাল হতে আর যেন চায়না আকাশ, সূর্য্যি মামা যেন আর উঠতে চায়না তার বালিশ ছেড়ে। আমি প্রান পনে বালিশটাকে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে আমার বুক ফাটার আওয়াজ লুকিয়ে রাখি, পাছে ও শুনতে পায় আমার কান্না, সেই ভয়ে।
........... ইতি অহনা।
======সমাপ্ত======
|