Thread Rating:
  • 4 Vote(s) - 2.75 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নীলা (সংগৃহীত)
#1
[Image: 127066435-198516575228118-5660150392361582985-o.jpg]

নীলা। একটি সাধারণ ঘরের মেয়ে। সাধারণ ঘরের গৃহবধূ। কিন্তু তার স্বপ্ন, তার কল্পনা কিন্তু কখনই সাধারণ নয়। সেই অসাধারণ স্বপ্নের পিছনে ধাওয়া করতে করতে কখন যে তার জীবনটাই এক দামী কিন্তু অলাক কল্পনায় পরিণত হল, তা সে নিজেই বুঝতে পারেনি। একটি সাধারণ গৃহবধূ নীলা থেকে শহরের একটি নামী এসকর্ট সার্ভিসের ফিমেল এসকর্ট মেহক হয়ে ওঠার কাহিনী এটি। - অনিন্দিতা


Disclaimer:- এই ফোরামে আমার পোস্ট করা কোনো গল্পই আমার নিজের লেখা নয়। প্রত্যেকটি গল্পই ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা। তাই এই গল্পগুলির জন্য প্রকৃত কৃতিত্ব দাবী করেন, এদের লেখক এবং লেখিকারা। যদি এই গল্পগুলির পোস্ট করার বিষয়ে কারোর কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আমায় জানাবেন। আমি যত দ্রুত সম্ভব সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেব। - ধন্যবদান্তে, বৃহন্নলা।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
নীলা - পর্ব ১


ড্রেসিং টেবিলে সামনে দাঁড়িয়ে ব্রায়ের স্ট্র্যাপটা ঠিক করে নিল নীলা, এবার ওকে ফিরতে হবে | সেই কোন ছোটবেলায় ওর বাবা বলতেন নীলা সবার হাতে সাজে না | সঠিক লোকের হাতে পড়লে ফকিরকে রাজা আর ভুল লোকের হাতে পড়লে রাজাকে ফকির করে দিতে পারে, নীলার নাকি এমনই অলৌকিক ক্ষমতা | কে জানে আমার এই ছোট্ট নীলাটা আমাদের রাজা করবে কিনা ? বলে আদর করে ফ্রক পড়া বাচ্চা নীলার গাল টিপে দিতেন | ছোট্ট নীলা তখন কিছু না বুঝেই মাথা নেড়ে দৌড়ত আর বলত নীলার বাবা রাজা হবে আর নীলা রাজকুমারী হবে | মধ্যবিত্ত বাবা আজীবন মধ্যবিত্তই থাকল, তার আর কোনদিনই রাজা হওয়া হল না | নীলা কিন্তু মনেপ্রাণে রাজকুমারী হতে চাইত | নীলা জন্মেছিল অসামান্য রূপের ডালি নিয়ে আর ছোট থেকেই ওর সঙ্গী ছিল উচ্চাশা | ছোট্ট মেয়েটা আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিত ঘন্টার পর ঘন্টা ! কিশোরী নীলার শরীরে যৌবনের জোয়ার আসা শুরু হল, সেসময় ও ভাবত এই অনিন্দ্য সুন্দর রূপের জোরেই জগতকে ও হাতের মুঠোয় নিয়ে খেলবে | কিন্তু শুধু রূপের জোরেই যদি জগত চলত তাহলে নীলা নিশ্চিত রাণী হতো, মানে আজকের দিনে তো আর কেউ রাজা রাণী হয় না... ওই কোন কোটিপতি টতিপতির বউ টউ হতো আর কি ! সিনেমা দেখতে বড় ভালোবাসত নীলা, পর্দায় কেমন গরীবের মেয়ের স্বামীরা কোটিপতি হয়... বিয়ের পর তারা সারাদিন দামী গাড়ি করে পার্লারে যায় নয় শপিং করে বেড়ায় | বিদেশে ঘুরতেও যায় | কিন্তু কো-এড কলেজে পাস কোর্সে ভর্তি হয়ে নীলা দেখল বাস্তব আর সিনেমার মধ্যে তফাতটা বেশ অনেকখানি, নায়কোচিত সিক্স প্যাক অ্যাবসওয়ালা ছেলেরা ওরকম যখন তখন প্রেমে ট্রেমে পড়ে না বরং সম্পর্কে যাওয়ার আগে মেয়ের কেরিয়ার আর মেয়ের বাবার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সটায় চোখ বুলিয়ে নেয় | তাই কলেজ জীবনে নীলা বেশ কয়েকটা সম্পর্কে জড়ালেও পড়াশোনায় অ্যাভারেজ রেজাল্ট আর নীলার মধ্যবিত্ত বাপের স্ট্যাটাস দেখে বিয়ে অবধি কোনো সম্পর্কই গড়ালো না | এদিকে মেয়ের বয়স বাড়ছে, পাস কোর্সে পড়াশোনা করেছে সুতরাং চাকরি বাকরি করারও তেমন কোন সম্ভাবনা নেই... সবচেয়ে বড় কথা মেয়ের সেসব ইচ্ছেও নেই দেখে বছর পঁয়ত্রিশের সামান্য কেরানি দেবাশিসের সঙ্গে নীলার বিয়েটা দিয়েই দিলেন সুকোমলবাবু | ছেলের বাড়ির তেমন একটা দাবিদাওয়া ছিল না, তার উপর দেবাশিসের মামাতো বোন রূপা ছিল নীলার বুজুম ফ্রেন্ড | রূপার সঙ্গে নীলাকে ফুচকা খেতে দেখে, বলা ভালো ফুচকার ঝালে উঃ আঃ করতে দেখে দেবাশিসের ওকে পছন্দ হয় আর ওর বাবার মারফত প্রস্তাবটা সুকোমলবাবুর বাড়িতে পাঠায় | বাড়ির একমাত্র ছেলে, কোনো দাবীদাওয়া নেই দেখে সুকোমলবাবু খুব সহজেই দেবাশিসের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান | ছেলের বাড়ি থেকে যেদিন নীলাকে দেখতে এসেছিল সেদিন সুকোমলবাবু বেশ মজার ছলেই দেবাশিসকে বলেছিলেন, বাবা, তোমায় তেমন কোনো দামী জিনিস দিতে না পারলেও আমি কিন্তু তোমায় একটা ভীষণ দামী জেম দিচ্ছি ! ছেলেপক্ষ ওনার দিকে কৌতুহলের দৃষ্টিতে তাকালে উনি চোখ নামিয়ে বলেছিলেন এই যে আমার মেয়েকে দিচ্ছি নীলা, নীলা খুব দামী জেম বাবা, সাবধানে রেখো | জানো তো নীলা সকলের সহ্য হয় না | সুকোমল বাবুর কথার ধরণে সবাই হেসে উঠলেও মুখ নীচু করে থাকা বাবার চোখের জল নীলার নজর এড়ায় নি | তাই ওর একান্ত অপছন্দ সত্ত্বেও বাবার মুখ চেয়ে কেরানি দেবাশিসের সঙ্গে নীলার বিয়েটা হয়ে গিয়েছিল |
বিয়ের পর মফস্বল থেকে মহানগরীতে চলে আসতে হয় নীলাকে | মহানগরীর মাদকতায় নীলা ভেসে যাচ্ছিল | দেবাশিস কেরানির চাকরি করলেও ওর অফিসটা কোলকাতায় ছিল, নীলার কাছে অতি সাধারণ দেখতে দেবাশিসকে বিয়ে করার এটাও একটা বড় কারণ ছিল | ছোট থেকেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী নীলার মফস্বল শহরে দমবন্ধ হয়ে আসত, ও মুক্তি খুঁজছিল মধ্যবিত্ত হিসেবী জীবন থেকে.... ও নিজের মতো করে ডানা মেলতে চাইছিল আকাশে, আর দেবাশিস ছিল ওর উড়ানের প্রথম ধাপ | একটা ছোট্ট দু-কামরার ফ্ল্যাটে সংসার পাতল দুজনে | সরকারী চাকুরে দেবাশিসের আয় কম হলেও দুজনের সংসারে সচ্ছলতার অভাব ছিল না | শাশুড়ি শ্বশুরের ঝামেলা না থাকায় নীলা মনের আনন্দে যেখানে ইচ্ছে যখন ইচ্ছে বেরিয়ে পড়ত | সুন্দরী বউয়ের কোন দোষই দেবাশিসের চোখে পড়ত না... নীলার ঘরের কাজ করতে ভালো লাগত না বলে কলকাতার ফ্ল্যাটে এসেই দেবাশিস ওর জন্য রান্নার লোক, কাজের লোক রেখে দিয়েছিল | ও সারাদিন রূপচর্চা, ফ্যাশন ম্যাগাজিন, সিনেমা-টিভি-মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত থাকত | তবে দেবাশিসের সীমিত আয়ের জন্য নীলা যখন তখন শপিংয়ে যেতে পারত না আর সেই নিয়ে প্রায় দিনই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হতো | নীলা রাগ করে পাশের ঘরের ডিভানে শুয়ে পড়ত, মাঝরাত অবধি মানভঞ্জন করে দেবাশিস স্ত্রীকে নিজেদের বেডরুমে নিয়ে যেতে‌ সক্ষম হতো | স্বভাবে শান্ত দেবাশিস নিজের সাধ্যমত নীলার সব আবদার মেটাতে চেষ্টা করত | কিন্তু নিজের স্যালারির সবটা দিয়েও ও নীলার নিত্যনতুন শাড়ি-গয়না-গ্যাজেটসের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হতো না | নীলার উদ্ভিন্ন যৌবনে মগ্ন দেবাশিস চেষ্টা আরও চেষ্টা করত, অফিসের পর ওভারটাইম করত | বিয়ের ছ'মাস বাদে হানিমুনে সিমলা-কুলু-মানালি ঘুরে আসার পর ওদের সংসারে বেশ কিছুদিন শান্তি ছিল | ফেসবুকে ওদের যুগ্ম ছবিতে পাওয়া কমেন্টগুলো নীলা খুব উৎসাহ সহকারে দেবাশিসকে দেখাত ! কিন্তু সে আর কতদিন ? কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হল টাগ অব ওয়ার | নীলা আবার ঘুরতে যেতে চায় কিন্তু সংসার খরচা চালিয়ে দেবাশিসের হাতে তেমন টাকা কই ? এদিকে নীলার ঘরে তেমন কোন কাজ না থাকায় ও নাকি বোর হয়ে যায় অথচ কাজ করার ওর তেমন একটা ইচ্ছে আছে বলেও মনে হয় না | নীলা প্রতিদিন বিকেলে নিজেদেরএকফালি বারান্দায় বসে লোক দেখে আর আকাশকুসুম কল্পনা করে | ওর চোখে পড়ে প্রায় দিনই বিকেলবেলা চারটে নাগাদ দোতলার ফ্ল্যাটের রূপা বৌদি প্যান্ট গেঞ্জি পরে কোথায় যেন বেরিয়ে যায়, ঘন্টা দুই-তিন পরে ফেরে | নীলার ভীষণই কৌতুহল হয় কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করলে যদি বৌদি রাগ করে তাই ইচ্ছে থাকলেও বৌদির সঙ্গে এ ব্যপারে কথা বলে উঠতে পারে না | কিন্তু কৌতুহল বড় বালাই‌ ! একদিন নীলা একটা প্ল্যান করল | হেনার মায়ের রাঁধা চিকেন কষা টিফিন বক্সে ভরে বৌদির দরজায় নক করতেই বৌদি দরজা খুলে বেরিয়ে এলো | নীলা হাসিমুখে বলল, আজকে রাতের জন্য চিকেন কষা বানিয়েছি, তাই একটু তোমার জন্য আনলাম বৌদি | বোসো তুমি, বলে টিফিন কৌটোটা নিয়ে বৌদি কিচেনে চলে গেল, ফিরে এলো চা-মিষ্টি নিয়ে ! বৌদিদের সোফায় বসে চা-মিষ্টি খেতে খেতে এটা সেটা নিয়ে গল্প করার পর নীলা কিন্তু কিন্তু করে বলল, " বৌদি তুমি যদি রাগ না করো তাহলে একটা কথা জিজ্ঞেস করব ? "
" ওমা রাগ করব কেন ? তুমি বলই না ! "
" বিকেলে তুমি কোথায় যাও গো ? " বৌদির উৎসাহ পেয়ে নীলা কথাটা পেড়েই ফেলল |
" আর বোলো না আমার তো মোটার ধাত ! তাই আমি নিজের ফিগারটাকে টোনড রাখতে নিয়মিত জিমে যাই ! "
" আচ্ছা বৌদি আমিও জিম করতে পারি ? "
" কেন পারবে না ? জিম তো যে কেউ যে কোনো বয়সে করতে পারে ! কিন্তু তোমার জিম করার দরকারটা কি ? তোমার তো এমনিতেই দারুণ ফিগার ! যাকে বলে পারফেক্ট আওয়ার গ্লাস ! "
" কিন্তু বৌদি বয়স তো বাড়ছে বলো এবার একটু মেনটেন করাটাও প্রয়োজন | আচ্ছা বল না এতে খরচ কেমন ? " নীলা আদুরে গলায় বলে উঠল | বৌদির থেকে সব জেনে বেশ আনন্দের সঙ্গে নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে দেবাশিসের ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল নীলা |
ওয়ার্ডোবটা খুলে একটা শর্ট ড্রেস বার করল নীলা | এবার পুজোর সময় দেবাশিসের সঙ্গে মলে গিয়ে কিনেছিল | ব্লু রঙের ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচিং করে ইয়ারিং পড়ল | সঙ্গে মানানসই টাচআপ | সুগন্ধি পারফিউম ছড়িয়ে দিল শরীরে | নিজের লম্বা সুগঠিত পা দেখতে দেখতে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেল | কলিং বেলটা বাজতেই নীলা নিজের মেদহীন পিঠ, সুবর্তুল স্তন, পাতলা কোমরে হিল্লোল তুলে দেবাশিসকে দরজা খুলতে গেল | দরজায় দাঁড়ানো কামার্ত নীলাকে দেখে দেবাশিসের মনে হল এবার ও নির্ঘাত পাগল হয়ে যাবে, কোনো মেয়ে এতটা সেক্সি কি করে হতে পারে ! একঝটকায় নীলাকে কোলে তুলে দেবাশিস বেডরুমে ঢুকে গেল | নীলা ঠিক এটাই চাইছিল, এই জন্যই তো উত্তেজক পোশাকে অমন মোহময়ী সাজ ! আদুরে আদুরে গলায় ও দেবাশিসকে বলল শোনো, আমি না জিমে ভর্তি হব | আমি আজ রূপাবৌদির সঙ্গে কথা বলেছি | রূপাবৌদি প্রতিদিন বিকেলবেলা জিমে যায়, আমাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাবে বলেছে | তুমি ভর্তি করে দেবে তো ! নীলার উষ্ণতার ছোঁয়ায় দেবাশিসের সারা শরীরে তখন আগুন ছুটছে, শিরায় শিরায় ছড়িয়ে যাচ্ছে আগুনের হলকা... ও তেমন একটা কিছু না ভেবেই বলল নিশ্চয়ই ভর্তি হবে সোনা ! আমি কালই টাকাটা দিয়ে দেব | তারপর নীলাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল | দেবাশিস ঘুমিয়ে পড়লে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল নীলা | ভীষণ ক্লান্ত লাগছে, বাথরুমে ঢুকে ওকে একটা হট শাওয়ার নিতে হবে | এই হট শাওয়ার নেওয়ার কথাটা ফিল্ম ম্যাগাজিন থেকে জেনেছে নীলা, ফিল্মস্টাররা নাকি টায়ার্ড হলেই হট বাথ, হট শাওয়ার নেয় | পরের দিন দুপুরবেলা নীলা বৌদির সঙ্গে বেরিয়ে এক্সারসাইজ করার ট্র্যাক স্যুট, গেঞ্জি, স্পোর্টস শ্যু কিনে আনল, বৌদি না গেলে ও একা এসব জিনিস কিনতে পারত না | মফস্বলে এসব জিনিসের কেউ নাম শুনেছে নাকি ! কিশোরী মেয়েরা জিন্স পড়লেই ওখানে আওয়াজ দেওয়া শুরু হয়ে যায় | ঠিক বিকেল চারটে বাজতেই বৌদির সঙ্গে নীলা জিমের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল | বৌদিই ফর্ম ফিলআপ করে দিল, টাকা জমা দিয়ে ওরা দুজন জিমের ভিতর ঢুকে গেল | শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর, ঝাঁ চকচকে ইক্যুইপমেন্টস... প্রথমদিনই জিমটাকে নীলার ভালো লেগে গেল | টাইট গেঞ্জি, ব্ল্যাক ট্র্যাকস্যুটে ছিপছিপে নীলাকে দেখে ট্রেনারের চোখটা একটু বেশিই চকচক করল কি ? ইয়ং ট্রেনার ওকে বেশ যত্ন করেই ইকুইপমেন্টসের ব্যবহার শিখিয়ে দিল, সেই সুযোগে ছেলেটার হাত একটু ওর কোমর, পিঠ টাচও করল | নীলা ব্যপারটা বেশ উপভোগ করছিল, ফেরার সময় বৌদির কাছ থেকে জানতে পারল জিমের ওই সিক্স প্যাকওয়ালা সুদর্শন ট্রেনারের নাম সুপ্রতীক | বাড়ি ফিরেও সুপ্রতীকের সেই বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ নীলার সমস্ত শরীরকে মায়াবী নেশায় ডুবিয়ে রাখল | রাতে দেবাশিসকে অভ্যাস মতো জড়িয়ে ধরে ঘুমের সমুদ্রে তলিয়ে যেতে যেতে নীলা ভাবতে লাগল কাল বিকেল পাঁচটা কখন বাজবে .....
( ক্রমশঃ)
Like Reply
#3
নীলা - পর্ব ২


স্বচ্ছ নীল শিফনের শাড়িটা পেঁচিয়ে ধরেছে পাতলা কোমর | ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে হট পিঙ্ক লিপসে একটা মোহিনী হাসি হেসে দামী হোটেলের নরম বিছানায় শুয়ে থাকা পুরুষটিকে শেষবারের মতো ঘায়েল করে রুম থেকে বেরিয়ে পরল নীলা | লিফট চেপে হোটেল লবি, সেখান থেকে ক্যাবে উঠে গাড়ির নরম সিটে নীলা গা এলিয়ে দিল, হ্যাঁ এখন আর ও গৃহবধূ নয়, ও এখন অন্য পরিচয়ে বাঁচে, ওর বর্তমান পরিচয় হল হাই সোসাইটির এসকর্ট গার্ল | এই পেশায় ওর নাম মেহেক | একটা নামকরা এজেন্সির মাধ্যমে ও ক্লায়েন্ট পায়, আর শহরের এসকর্ট গার্লের লিস্টে মেহেক মোটামুটি টপ পজিশনে আছে সুতরাং ওর দর যথেষ্ট চড়া | নিজের রোজগারের টাকায় ও কলকাতার পশ সোসাইটির একটা চৌদ্দশো স্কোয়ার ফিট ফ্ল্যাটের মালকিন | ওর ঘর জুড়ে আধুনিক স্টাইলের দামী দামী আসবাবের ছড়াছড়ি, দেওয়াল জোড়া হোয়াইট ওয়ার্ডোবে থরে বিথরে সাজানো রয়েছে রকমারি পোশাক, ব্যাগ, জুতো | মেহেক কি সত্যি এগুলোই চেয়েছিল ? ও আসলে কে ? মেহেক না নীলা... আজকাল মাঝেমধ্যেই ওকে নিজের পরিচয় হাতড়াতে হয় | ম্যাডাম আপকা কমপ্লেক্স আ গ্যায়া ... ক্যাব ড্রাইভারে ডাকে সম্বিত ফিরল ওর |রেন্ট পে করে লিফটের বোতাম টিপল, ফোরটিন ফ্লোর... বারান্দায় দাঁড়ালে হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যায় | কিন্তু আজকাল নীলা এত ক্লান্ত থাকে, সবুজ শহরের হাতছানি দেখার জন্যও ওর আর ব্যালকনিতে যেতে ইচ্ছে হয় না | ডোরম্যাটের নীচে রাখা চাবি দিয়ে দরজা খুলে রুমে ঢুকে সোফায় বসে চোখ বুজল নীলা, ফিরে গেল নিজের অতীতে | জিমে যাওয়ার আগ্রহ বাড়ছিল ক্রমশঃ... আগ্রহ নাকি নেশা ? নেশার মতো জিম ওকে টানছিল | একদিন না গেলেই মনখারাপ... সুপ্রতীক ততদিনে ওর দেহমন দখল করতে শুরু করেছে | নীলার সারা শরীর জুড়ে অনুরণন তুলছে সুপ্রতীকের শরীর চেনার নিষিদ্ধ আকর্ষণ.... অদ্ভুত এক উত্তেজনায় নীলা যেন সবসময় আচ্ছন্ন হয়ে থাকত, দেবাশিস ওর পাশেই আছে অথচ নেই... একদিন দুপুরে দেবাশিসের অনুপস্থিতিতে ওরা দু'জন নীলার বেডরুমে মিলিত হলো | সুপ্রতীকের পুরুষালি দেহের সঙ্গে নীলার শরীর পিষ্ট হচ্ছিল, উষর মরুভূমিতে সুধাবর্ষণ করছিল ঠোঁট নিঃসৃত অমৃত, অস্ফুট গোঙানী আর পরিতৃপ্তির মধুর আবেশ... এক অজানা সুখানুভূতি ছড়িয়ে পড়ছিল নীলার কোষে‌ কোষে | মিলন শেষে এমন পরিতৃপ্তি দেবাশিস ওকে কোনদিন দিতে পারে নি | সুপ্রতীককে নীলা বলেছিল ওর চাহিদার কথা, ওর সাদামাটা জীবনের অসহায়তার কথা | সুপ্রতীকই ওকে প্রথম এসকর্ট সার্ভিসের কথা বলে | তুমি যদি চাও তোমার রাণী হওয়া আটকায় কে ? এত সুন্দর ফিগার তোমার, সঙ্গে নিখুঁত মুখশ্রী, অর্থবানদের টাকারা তো তোমার চরণে অর্পিত হওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছে |

এভাবেই একদিন শুরু হয়েছিল নীলার এই পথে আসা | সুপ্রতীকই ওকে এসকর্ট এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগটা করিয়ে দেয় | প্রথম প্রথম ওইরকম ছোট ছোট লেস/নেটের পোশাক পড়ে হোটেল রুমে পুরুষদের সামনে ঢুকতে নীলার খুবই লজ্জা করত | কিন্তু টাকা আসছিল জলের মতো | আগের মতো নামী দোকানে সাজানো শোকেসে দামী নেকলেস দেখে মনখারাপ হত না, কার্ডের দৌলতে সেটা গলায় পড়তে পারত | নামী পার্লার, ব্র্যান্ডেড পোশাক আশাক, দামী কসমেটিক্স.... নীলা বড় দ্রুত উপরে উঠছিল | দেবাশিসের সঙ্গে ওর বৈবাহিক সম্পর্কটা ধোঁকার টাটিতে পর্যবসিত হয়েছিল | দেবাশিস অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়তেই ও এসকর্ট সার্ভিসের কাজে বেরিয়ে পড়ত | দেবাশিস অফিস থেকে ফেরার আগেই ও বাড়ি ফিরে আসার চেষ্টা করত কিন্তু ক্লায়েন্টের আবদার মিটিয়ে সবসময় তা সম্ভব হতো না ! তখন ফিরতি পথে শপিং মল ঘুরে নানান জিনিস কেনাকাটা করে ফিরত | দেবাশিসকে বলত দেখেছ সেল দিচ্ছিল, কমদামে অনেক জিনিস পাওয়া যাচ্ছিল, তাই কেনাকাটা করতে করতে আজ ভীষণ লেট হয়ে গেল ! কেনাকেটা শেষে‌ ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই তো আমি চমকে উঠেছি... এই কতক্ষণ এসেছ গো‌ ? বলে একটা সরল মুখভঙ্গি করে হাতের জিনিসপত্র রেখে চা বানাতে চলে যেত | দেবাশিস কিছুই বলতো না শুধু সন্দিগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকত | যেন ওর চোখের দৃষ্টিতেই নীলার মনের ভিতরে লুকোনো সব কথা পড়ে ফেলবে | কিন্তু এভাবে বেশিদিন চলা সম্ভব নয়, কতদিন আর শপিং মলে গিয়ে গুচ্ছের অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ব্যাগভর্তি করা যায় ?শেষে সুপ্রতীকই বুদ্ধি দিল, সেইমতো নীলা দেবাশিসকে জানালো ও একটা প্রাইভেট অফিসে রিশেপসনিস্টের জব পেয়েছে, এগারোটা থেকে আটটা ডিউটি টাইম, প্রায় ফিফটিন কে স্যালারি দেবে, পার্কস এক্সট্রা | নীলা ভেবেছিল দেবাশিস একবার হলেও জিজ্ঞেস করবে অভিজ্ঞতা ছাড়া কোনো ফ্রেশার্সকে কোম্পানি কেন এত টাকা স্যালারি দেবে ? নীলা সেই মতো উত্তর তৈরি করেই এসেছিল কিন্তু দেবাশিস কোন প্রশ্ন না করে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল | বোধহয় দেবাশিস বুঝে ফেলেছিল যারা অধঃপাতে যেতে চায় তাদের কোনোভাবেই আটকানো যায় না ! যদি সেদিন দেবাশিস নীলাকে আটকাত, কোনভাবেই ওকে কোম্পানির চাকরি করতে দিতে রাজি না হতো... আজ তাহলে... ? অবসর সময়ে নীলা মাঝেমধ্যেই এই প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেরায় | কেন ? কেন ? কেন দেবাশিস তুমি একজন পুরুষ হয়েও অসহায়ের মতো নিয়তিকে মেনে নিলে ?
দেবাশিসকে নিয়েই দোলাচলে ছিল নীলা, দেবাশিস চাকরি করার অনুমতিটুকু দিতেই নীলার স্বেচ্ছাচারী জীবন শুরু হয়ে গেল | প্রথমে আটটায় ছুটির কথা বললেও অধিকাংশ দিনই বাড়ি ফিরতে নীলার রাত নটা বেজে যেত | অফিস থেকে ফিরে রাতের খাবার বানিয়ে দেবাশিস নিঃশব্দে নীলার জন্য অপেক্ষা করত, নীলা নামী হোটেলের দামী খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছিল, ঘরোয়া সাদামাটা খাবার ওর মুখে রুচত না ! মাঝে মাঝে দেবাশিসের জন্য দামী খাবার নিয়ে আসত... দেবাশিস হেসে বলত আমি খুব সাধারণ মানুষ নীলা আমার এত দামী খাবার খেলে বদহজম হবে ! নীলা কথা বাড়ানোর পক্ষপাতী ছিল না, দেবাশিসের কথাগুলো হয়ত ওর কানেই ঢুকত না ! টেবিলের উপর খাবারের প্যাকেটগুলো রেখে সোজা বাথরুমে ঢুকে যেত | তারপর নিজেকে ফ্রেশ রাখার জন্য আধঘন্টার একটা হট শাওয়ার... ব্যাস সারাদিনের ক্লান্তি শেষে গভীর ঘুমে নীলার চোখদুটো জুড়ে আসত | দিনগুলো কাটছিল স্বপ্নের মতো, দেবাশিস কেমন আছে সেটা জানার সময় নীলার কাছে ছিল না | দামী দামী জিনিসপত্র কেনার পর পেমেন্টের জন্য যখন নিজের ক্রেডিট কার্ডখানা বাড়িয়ে দিত, তখন ওর মনে হত এতদিনে বাবার কথা সত্যি হয়েছে, রাজকুমারী না হতে পারলেও ও রানি হয়েছে, কলঙ্কে কি বা আসে যায়... কাজলেরও তো কলঙ্ক আছে ! যেদিন নীলা বসার ঘর সাজানোর জন্য পঞ্চান্ন ইঞ্চির এলইডি টিভিটা কিনে নিয়ে এলো সেদিন প্রথম দেবাশিসের ব্যথাতুর চোখের দিকে ওর দৃষ্টি পড়ে গেছিল... কেমন যেন একটা অপরাধবোধ ওর মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলছিল | সেদিন আমতা আমতা করে নীলা দেবাশিসকে বলেছিল আজ‌ অফিসে বাজাজ ফিনান্সের লোক এসেছিল, সবার সঙ্গে আমিও একটা কার্ড করালাম... টিভিটা ইএমআইতে কিনেছি, মাসে মাসে টাকা শোধ করব | কেন জানিনা বহুদিন বাদে সেদিন নীলার ইচ্ছে হয়েছিল দেবাশিসের বুকে মাথা রেখে সব সত্যি কথা বলতে ! এই কলঙ্কের জীবন ছেড়ে আবার সেই ছাপোষা গৃহবধূর জীবনে ফিরে যেতে.... কিন্তু হঠাৎ পাওয়া আর্থিক স্বচ্ছলতা, নিজের ইচ্ছেমতো জিনিস কেনার ক্ষমতা, ক্রমশঃ বেড়ে চলা লোভের থাবার মতো হাত থেকে নিস্তার পাওয়া কি আদৌ‌ সম্ভব ? নীলার পক্ষে তো সম্ভব হয় নি | তাই পরের দিন সকালেই এজেন্সির কাছ থেকে পাওয়া হোটেলের ঠিকানায় ক্লায়েন্ট মিট করতে বেরিয়ে পড়েছিল নীলা ! কিন্তু ও কি স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছিল সেদিন ক্লায়েন্ট হিসেবে ওর জন্য হোটেলের বিছানায় কে অপেক্ষা করছে ?
( ক্রমশঃ )
Like Reply
#4
নীলা - পর্ব ৩


রিশেপসনের মেয়েটার কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে নির্দিষ্ট রুম নম্বর জেনে দরজায় মৃদু নক করতেই যে লোকটি বেরিয়ে এসেছিল তাকে দেখে চারশো চল্লিশ ভোল্টের ঝটকা খেয়েছিল নীলা ! দেবাশিস ? ও এখানে কি করছে ? অনেকদিন ধরেই দেবাশিসের কানে উটকো খবর আসছিল ওর স্ত্রী নীলাকে শর্ট ড্রেস পড়ে বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেলের রিশেপসনে, নামীদামী শপিং মলে বিভিন্ন উচ্চবিত্ত পুরুষের বক্ষলগ্না হয়ে হাসতে হাসতে বেরোতে দেখা গেছে | ব্যপারটায় দেবাশিস তেমন একটা আমল দিত না, বিয়ের পর থেকেই ও নীলাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করত | ওর দৃঢ়বিশ্বাস ছিল নীলা কোনোদিনই ওকে‌ ঠকাতে পারে না... কেউ কাগে‌ কান নিয়ে গেছে বললেই নিজের কানে হাত না দিয়ে কাগের পিছনে দৌড়য় কেবল বোকারা ! কিন্তু যেদিন ওদের অফিসের একজন সিনিয়র কলিগ চ্যাটার্জিদা এসে দেবাশিসকে ডেকে বললেন উনি নাকি নিজের চোখে নীলাকে ওদের বসের সঙ্গে ফাইভ স্টার হোটেল থেকে বেরোতে‌ দেখেছেন, সেদিন আর অবিশ্বাসের করার কোনো‌ জায়গা ছিল না | চ্যাটার্জিদা মিথ্যে বলার লোক নন, অফিসে কোনরকম পিএনপিসি করেন না, তাই ওনাকে অবিশ্বাস করা নেক্সট টু ইম্পসিবল | এক মুহূর্তের জন্য দেবাশিস ব্ল্যাক আউট হয়ে গেছিল | ওর মনে হচ্ছিল কে যেন ওর কানে তরল সীসা ঢেলে দিয়েছে | তবুও ও আমতা আমতা করে প্রতিবাদের চেষ্টা করেছিল | চ্যাটার্জিদা হেসে বলেছিলেন অভিজ্ঞ চোখ ভুল দেখে না দেবাশিস, পারলে মিসেসকে সামলাও | হাতের বাইরে বেরিয়ে গেলে কিন্তু.....

তারপর থেকে দেবাশিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নীলার চালচলন লক্ষ্য করে গেছে | কাজপাগল দেবাশিস অফিস কেটেছে নীলাকে ফলো করবে বলে ! নীলার পিছনে ফলো করে করে যেদিন ও প্রথমবারের জন্য নীলাকে এসকর্ট এজেন্সির অফিসে ঢুকতে দেখেছিল, সেদিন এক মুহূর্তের জন্য যেন ওর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল | ওর মনে হয়েছিল ও যেন শূন্যে ভেসে আছে কেউ না ধরলে এখুনি ! রোদে দাঁড়িয়ে থেকে চোখে ভুল দেখেছে এমনটা ভেবে ও বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন লাগিয়েছিল | কেউ ফোন তোলে নি ! চোখের সামনে সন্দেহকে সত্যি হতে দেখে দেবাশিসের পৃথিবী দুলছিল, ও কোনক্রমে এসকর্ট এজেন্সির ফোন নম্বরটা টুকে নিয়ে চলে এসেছিল | বাইরে পার্লারের বোর্ড ঝোলানো থাকলেও ওটা যে এসকর্ট এজেন্সি সেটা চ্যাটার্জিদা ওকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল | আর জানিয়েছিল এই পেশায় নীলার নাম মেহেক |দেবাশিস সেদিন রাতেই ওর একমাসের মাইনে জলাঞ্জলি দিয়ে ওই এজেন্সিতে ফোন করে নিজের ব
স্ত্রীর সঙ্গে একবার নতুন করে শোওয়ার অ্যাপয়মেন্ট ফিক্স করেছিল | যদিও শেষ অবধি দেবাশিস আশায় আশায় ছিল সব, সব মিথ্যে ! হয়ত হোটেল রুমে মেহেক নামের যে মেয়েটা ওকে সঙ্গ দিতে আসবে সে নীলা নয়, নীলার মত দেখতে কোন মেয়ে ! এমনটা তো কতই হয়... যমজ কি পৃথিবীতে নতুন নাকি ? এমনও তো হয় দুজন দুজনকে চেনেই না অথচ তাদের একইরকম দেখতে ! আহা এমনটা যদি হয়... এই আশাতেই দেবাশিস হোটেলে এসেছিল | কিন্তু রুমের দরজা খুলতেই ওকে দেখে নীলার বিস্ফারিত চোখ, তারপর এক দৌড়ে দরজা থেকে পালিয়ে যাওয়া দেখে দেবাশিস বুঝে ফেলে এসকর্ট সার্ভিস দেওয়া মেয়েটা অন্য কেউ নয়, তার মন্ত্র পড়ে বিয়ে করা স্ত্রী নীলা | নিজের চাহিদা পূরণের জন্য গৃহবধূ মেয়েটা আজ এই পথ বেছে নিয়েছে | ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ দেবাশিস নিজের সঙ্গে প্রচন্ড যুদ্ধ করে সেদিন গভীর রাতে যখন তার ছোট্ট দু-কামরার ফ্ল্যাটে ফিরেছিল তখন বাড়ির কোত্থাও নীলাকে খুঁজে পায় নি‌ | না বেডরুমে, না ডাইনিংয়ে, না কিচেনে... কোত্থাও কোত্থাও নীলার কোনো অস্তিত্ব ছিল না ! দেবাশিস বুঝেছিল নীলা স্বেচ্ছায় হারিয়ে গেছে, তাই পুলিশের কাছে গিয়ে রিপোর্ট লিখিয়ে ওকে আর বিব্রত করে নি | বাড়ির সামনে ছোট মদের দোকানটা থেকে কিনে আনা সস্তার বিলিতি তরল প্রথমবারের জন্য গলায় ঢেলে তরল আগুনে পুড়তে পুড়তে দেবাশিস ভেবেছিল অন্য অনেকের মতো ওরও নীলা সহ্য হল না !
সেদিনের ঝটকাটা সহ্য করতে পারে নি নীলা, হোটেল রুমে ক্লায়েন্টের ভূমিকায় দেবাশিসকে দেখে ও ভীষণরকম চমকে উঠেছিল ! পালাতে চেয়েছিল এই পৃথিবীর বুক থেকে ! শেষে কিনা দেবাশিস ? নিয়ম মেনে বিয়ে করা স্বামী দাম দিয়ে একদিনের জন্য ওর দেহ ভোগ করার অধিকার কিনেছে ? এক মুহূর্তের জন্য নীলার দুনিয়াটা যেন নরক হয়ে গেছিল ! পাগলের মতো দৌড়ে হোটেল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল... গিয়েছিল সুপ্রতীকের কাছে, একটু আশ্রয়ের প্রত্যাশায় | নীলার মনে হয়েছিল ওকে গ্রাস করবে বলে ওর পিছু পিছু হোটেলটাও যেন তার দৈত্যাকার চেহারা নিয়ে দৌড়ে আসছে | সুপ্রতীকের ফ্ল্যাটে পৌঁছে নীলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল | সব খুলে বলার পর সুপ্রতীকের দুকামরার ফ্ল্যাটে নীলা মাথা গোঁজার একটা আশ্রয় পেয়েছিল বটে তবে তার বিনিময়ে সুপ্রতীকের হাতে মাসে মাসে ওর রোজগারের একটা মোটা অংশ তুলে দিতে হতো | নীলা খবর নিয়ে জানতে পেরেছিল সিক্স প্যাক অ্যাবস আর সুন্দর মুখ দেখিয়ে প্রেম নিবেদন করে‌ দেদার টাকা রোজগারের লোভ দেখিয়ে সুপ্রতীক সুন্দরী ও আকর্ষণীয় ফিগারের গৃহবধূ ও তরুণী মেয়েদের এই এসকর্ট এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয় | আর তার বিনিময়ে জোটে বেশ মোটা অঙ্কের মাসোহারা | এটাই ওর আসল রোজগার | জিমের ইন্সট্রাক্টরের চাকরিটা লোক দেখানো... তবে ওই চাকরিটা ওর ভীষণ দরকার, ওখান থেকেই সুপ্রতীক সুন্দর ফিগার ওয়ালা মেয়েদের নিজের মোহজালে বশ করে এসকর্ট এজেন্সিতে নিয়ে আসে .... নীলাও ওর এক শিকার ছিল | কিন্তু.... এতকিছুর পরেও নীলার জীবনে প্রেম এসেছিল আর সেই প্রেমের সমুদ্রে নীলা চোখ বন্ধ করে ভেসে গেছিল কিন্তু নীলাদের মতো মেয়েদের জীবনে‌ প্রেম হয় না... প্রেমের অভিনয় হয় ! কুণালও ওর সঙ্গে অভিনয় করছিল... বড় আকস্মিকভাবে নীলা একদিন আবিষ্কার করেছিল কুণাল ওকে নিয়ে কি ভয়ঙ্কর খেলা খেলতে চলেছে ! সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনও আতঙ্কে শিউরে ওঠে নীলা ! যখন ভাঙা হৃদয়ের টুকরোগুলোকে কুড়িয়ে নিয়ে নীলা নিজের অন্ধকার বাসায় ফিরছিল... তখন যেন দেবাশিসের যন্ত্রণার পরিপূর্ণ স্বরূপ ও নিজের সমস্ত সত্তা দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিল | চোখ খুলল নীলা, স্মৃতির ভারে মন জর্জরিত | এবার ওকে একটা হট শাওয়ার নিতে হবে, তারপর ফুড অ্যাপ থেকে ডিনারের জন্য কিছু খাবার অর্ডার করলেই কাজ মিটে যাবে | নীলার শরীরে যেন এক অজানা ক্লান্তি ভর করেছে | আজকের ক্লায়েন্টটা বড় অত্যাচারী ছিল, আঁচড়ে, কামড়ে পয়সা উসুল করে নিয়েছে | ক্ষতস্থানে ক্রিম ঘষতে ঘষতে নীলা ভাবছিল অবশ্য এ পেশায় সেটাই স্বাভাবিক | যে যত বেশি যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবে তার রোজগার তত বেশি ! আজ আর নীলার কেউ নেই, একাকী এই বিরাট শহরে রোজগার না করলে ও বাঁচবে কি করে ?
( ক্রমশঃ )
Like Reply
#5
নীলা - পর্ব ৪


দরজায় কলিং বেল বাজছে, ড্রেসিং গাউনটা পড়ে নীলা দরজার আইহোলে চোখটা রেখে দেখল ফুড অ্যাপের ডেলিভারি বয় খাবার হাতে দাঁড়িয়ে আছে | আগেই ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে পেমেন্ট করা ছিল, খাবারটা নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল নীলা ডাইনিং টেবিলের উপর প্যাকেটটা রেখে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল, ডুব দিল স্মৃতির অন্দরমহলে | ওর মনে পড়ছিল কুণালের কথা | ক্লায়েন্ট, সার্ভিসের ব্যস্ততা ঘেরা দিনযাপনের শেষে যখন ওর চোখের জলের সঙ্গী হত বিছানার পাশে রাখা তুলোর বালিশ, ঠিক তখনই নীলার একাকীত্বে ঘেরা অন্ধকার জীবনে কুণাল এসেছিল একঝলক ঠান্ডা বাতাসের মতো ! কুণাল পেশায় ফটোগ্রাফার ছিল | ওর আওয়ার গ্লাস ফিগারের প্রশংসা করে বলেছিল, আমি টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি | আপনার ফিগার যা আকর্ষণীয় টলিউডের অনেক হিরোইনেরই এমন নির্মেদ দীর্ঘদেহী চেহারা নেই ! আপনি নায়িকা হবার জন্য আবেদন করেন না কেন ? এত সুন্দর মুখশ্রী, বাঁশির মতো টিকালো নাক, রসালো ঠোঁট, দীঘল চুল, মাদকতায় পরিপূর্ণ ফিগার... আপনার জন্ম তো হিরোইন হবার জন্যই হয়েছে | আপনি এসব জায়গায় কি করছেন | প্রশংসায় কে না গলে ? নীলাও গলে গেল | ক্লায়েন্ট আর প্রফেশনাল এসকর্টের মধ্যকার সম্পর্কের বাইরে ওদের আরো একটা সম্পর্ক তৈরি হল | ফটোশ্যুটের নাম করে কুণাল ওকে বিভিন্ন রিসর্টে নিয়ে যেত | সেখানকার লনে, সুইমিং পুলে বিকিনি পরা নীলার নানা ভঙ্গিমাকে নিজের দামী ডিএসএলআরে ক্যাপচার করত কুণাল | নীলা যখন স্ক্রিপ্ট পড়তে চাইত, কোন সিরিয়াল বা সিনেমার পরিচালক ওর ছবিগুলোকে পছন্দ করেছে কিনা জানতে চাইত কুণাল হেসে এড়িয়ে যেত... বলত চিন্তা কি সোনা ? আমি তো সবসময় তোমার পাশে আছি | তুমি চিন্তা করো না সোনা আমি বেশ কয়েকজন পরিচালক, প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলেছি, তোমার নাম অ্যাপ্রোচ করেছি | একটু অপেক্ষা করো একটা না একটা প্রজেক্ট লেগেই যাবে !

ছ'মাস কুণালের সঙ্গে সম্পর্কে ছিল নীলা | এই ছ'মাস ধরে সিনেমা বা সিরিয়ালে ডাক পাওয়ার জন্য নীলা অনন্ত অপেক্ষা করে আছে... কিন্তু ঝোড়ো বাতাসেও কুণাল কোনদিনই সে সুখবর বয়ে আনতে পারে না ! তবুও কুণালের সঙ্গে নীলা রয়ে যায়... ফটোশ্যুট করে... আশায় আশায় ! যদি কোনোদিন শিকে ছেঁড়ে... কিন্তু সেই আপাত ঠান্ডা বাতাস যে জীবনের জন্য কতটা বিষাক্ত ছিল তা বুঝতে নীলার একটু বেশিই সময় লেগে গেছিল | কুণাল দাম দিয়ে ওর সময় কিনত গল্প করবে বলে, ছবি তুলবে বলে ! নামীদামী রিসর্ট, নীলচে জলের সুইমিং পুল, দীঘা-মন্দারমণি-তাজপুরের সৌন্দর্য দেখিয়ে নীলাকে ক্রমশঃ মুগ্ধ করছিল কুণাল | নীলার মনে হচ্ছিল এতদিন বাদে ও এমন একটা মানুষ পেয়েছে যে ওকে সময় দেয়, মনটাকে বোঝে, ভবিষ্যতের কথা ভাবে ! নীলার পেশায় পয়সা মেলে শরীরের জন্য গল্প করার জন্য নয় ! কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় কুণালের সঙ্গে ও কত ঘুরেছে... প্রিন্সেপ ঘাট, ভিক্টোরিয়া, ময়দান... সেখানে ও রঙ-বেরঙের বেলুন কিনত, ভীড় রাস্তায় সিগারেটের ধোঁয়ায় একলা হতে চাইত | আর হ্যাঁ নানা পোজে ফটোশ্যুটও চলত দেদার !কুণাল ওকে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখাত... বারবার সুযোগ না পাওয়া সত্ত্বেও নীলা ওর স্বপ্নের ফেরিওয়ালার গল্পে বিশ্বাস করত কিন্তু হঠাৎ কুণালের মুখোশটা খুলে আসল চেহারাটা ওর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল ! নীলা স্বপ্নের ঘোর থেকে জেগে উঠল | কুণালের জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিতে এসে নীলা নিজের সারপ্রাইজড হয়ে এক ঝটকায় কুণালের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে থেকে পালিয়ে এসেছিল | ভাগ্যিস সেদিন কুণালের ফ্ল্যাটের সদর দরজা খানিকটা ফাঁক করা ছিল, নইলে অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া নীলা আরো কোন ভয়ঙ্কর অন্ধকারে তলিয়ে যেত.... সেটা ভাবলেই আজো নীলা শিউরে ওঠে | তবে একথা সত্যি কুণাল ওকে নায়িকা বানাতেই চেয়েছিল তবে ছবির নয়, নীল ছবির .....
দরজার ফাঁক থেকে নীলা শুনতে পেয়েছিল ফোনে কুণাল কোন একজনকে বলছিল আরে আমি সত্যি বলছি আমি একদম নিজের চোখে দেখেছি সুপার সেক্সি ফিগার ! ছবি ? মেহেকের নেকেড ছবি তো এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই ! তবে শর্ট ড্রেস, বিকিনি পরা শট তো আপনাকে পাঠিয়েছি | আপনি যদি ওকে আপনার ব্লু ফিল্মে হিরোইন হিসাবে সাইন করাতে গ্রিন সিগন্যাল দেন তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার কাছে মেহেকের ভেরিয়াস টাইপ নেকেড পিক পৌঁছে যাবে | আমার পিঠব্যাগটা আজই চুরি গেছে, জানেনই তো আজকাল চোরগুলো কেমন হাতসাফাইতে ওস্তাদ ! প্রচুর লোকসান হয়ে গেল... ওতে আমার ল্যাপটপ, ক্যামেরা পেন ড্রাইভটা ছিল.... নইলে আজই আপনাকে মেহেকের কিছু নেকেড স্টিল পাঠাতে পারতাম ! আরে স্যার বুঝছেন না কেন ? মালটা ঝক্কাস, পুরো চারশো চল্লিশ ভোল্ট, একবার ছ্যাঁকা খেলে না ! আপনার নীল ছবি ইন্টারনেট দুনিয়ায় ছেয়ে যাবে..... টাকার কথা ছাড়ুন ডলারে কামাবেন ডলারে | আমি কি আর মেহেকের পিছনে এত সময় এমনি এমনি নষ্ট করেছি ? মেয়েটা আমার পিছনে একেবারে দিওয়ানি স্যার দিওয়ানি ! শ্যুটিংয়ের জন্য যেখানে নিয়ে যেতে বলবেন নিয়ে চলে যাব .... তারপর ড্রাগসের জাস্ট কয়েকটা ইনজেকশন... আর একবার মালটাকে যদি নেশার বশে আনা যায় তখন টাকার জন্য সবই করবে ! ব্লু ফিল্ম তো কোন ছাড় ! আপনার দু-নম্বরী ব্যবসার ড্রাগস, আর্মস সবই পাচার করাতে পারবেন ! আমি মেহেকের বেশ কয়েকটা ছবি আপনাকে পাঠিয়ে দিয়েছি, আপনি শুধু জানান ডিলটা ফাইনাল কিনা ! তবে আমার রেট কিন্তু এক ফিফটি, ফিফটি ল্যাকস ! না, না... কমাতে পারব না ! শুনলেন তো সব গ্যাজেটগুলো চুরি হয়ে গেছে ওগুলো আবার নতুন করে কিনতে হবে... জানেন তো একটা শ্যুটকে পারফেক্ট করতে ক্যামেরার পিছনে থাকা ফটোগ্রাফারের গুরুত্ব কতটা ! আর অপেক্ষা করে নি নীলা ওরফে মেহেক .... সোজা এসে এসকর্ট এজেন্সিতে কুণালের নামে রিপোর্ট করে | আর এসকর্ট এজেন্সিগুলো এ ব্যপারে ওদের মেয়েদের যথেষ্ট সাপোর্ট করে আর নীলা ওদের স্টার, ওকে তো হেল্প করবেই ! তবুও রিপোর্ট করার পর থেকেই কুণাল হঠাৎ করে ওর ফ্ল্যাটে এসে ওকে আক্রমণ করতে পারে এমন একটা ভয় নীলাকে রাতে ঘুমাতে দিচ্ছিল না ! যতই হোক টাকাটা তো‌ কম নয়, পঞ্চাশ লাখ ! নীলা ঠিকঠাকভাবে কাস্টমারকে‌ স্যাটিসফাই করতে পারছিল না ! ঠিক করে না ঘুমানোয় ওর শরীর জুড়ে ক্লান্তিরা বাসা বাঁধছিল | কিন্তু এসব এজেন্সির রুল খুব কড়া, কাস্টমারকে স্যাটিসফাই না করতে পারলে তোমার কেরিয়ার খতম | কাস্টমারদের কাছ থেকে নীলার নামে রিপোর্টের পর রিপোর্ট আসছিল | এজেন্সি থেকে দুবার ওয়ার্নিং বেল পাওয়ার পর নীলা সিদ্ধান্ত নেয় ও নিজের পুরোনো ফ্ল্যাটটা বেচে দেবে আর সেই টাকার সঙ্গে আরো কিছু টাকা ইনভেস্ট করে নতুন ফ্ল্যাটে উঠে যাবে .... আর তারই ফসল আজকের এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট | এখানকার সিকিউরিটি খুব কড়া, কুণাল কোনোদিনই এখানে ঢুকতে পারবে না ! হঠাৎ মোবাইল ফোনের ট্রিং ট্রিং শব্দে বর্তমানে ফিরে এল নীলা | মেসেজ বলছে সুপ্রতীক আসছে ! এতরাতে সুপ্রতীকের নীলার সঙ্গে কি দরকার ?
( ক্রমশঃ )
Like Reply
#6
নীলা - পর্ব ৫

ভাবতে ভাবতে খাবারটা কখন যেন ঠান্ডা হয়ে গেছে |কি আর করা ? অগত্যা মাইক্রোতে আরেকবার গরম করে খেতে বসেছিল নীলা | এমন সময় রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে বারবার কলিং বেল বেজে উঠল, কলিং বেল বাজার ধরণেই নীলা বুঝল আগন্তুকের বেশ তাড়া আছে | ডাইনিং টেবিলে পড়ে রইল খাবার, নীলা উঠে দরজা খুলতে গেল | দরজা খুলতেই দেখল সুপ্রতীকের পাশে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটা পনেরো ষোলো বছরের কিশোরী | নীলা মেয়েটার দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকাতেই সুপ্রতীক ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল | তারপর নীলার দিকে চেয়ে চোখ মেরে বলল, " বাঃ বাঃ... দিন দিন তো নীলার চমক বেড়েই চলেছে, কিন্তু আজ এ চমক উপভোগ করার মতো সময় নেই ! আজ আমার একটু তাড়া আছে | তবে একদিন সময় করে আমার খোঁজা অমূল্য নীলার উজ্জ্বলতা উপভোগ করতে আসব... " কথা শেষে সুপ্রতীক আরেকবার চোখ মারল |

তারপর একটু হেসে নীলাকে বলল, " শোনো, এই মেয়েটার নাম রোশনি, লাইনে নতুন এসেছে | একে দিন দশেকের জন্য এখানে রাখো, সময় হলে নিয়ে যাব, এই কদিনের মধ্যে ও যেন এই পেশা সংক্রান্ত ট্রেনিংগুলোতে ভালো করে পোক্ত হয়ে যায় | ও এবার থেকে এসকর্ট এজেন্সির হয়ে কাজ করবে ! বুঝেছ ? "
নরম লেদারের সোফার একপাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রোশনির দিকে তাকিয়ে সুপ্রতীক বলল, " এই রোশনি যা দিদির কাছে যা... দিদি তোকে এই লাইনের সব কাজ শিখিয়ে দেবে | আমি এখন চললাম ! পরে আবার আসব "
" এই নীলা রোশনির খেয়াল রেখো.... কিন্তু ! " একটু তাড়াহুড়ো করেই সুপ্রতীক বেরিয়ে গেল |
" কিরে মেয়ে কিছু খেয়েছিস ? " নীলা প্রশ্নটা করতেই রোশনি ঘাড় নাড়ল ! ও ডাইনিং টেবিলে রাখা খাবারটা রোশনির দিকে এগিয়ে দিল | থালাটা হাতে নিয়ে ধপাস করে মাটিতে বসে পড়ল রোশনি | এত তাড়াহুড়ো করে রোশনি খাবারটা খেতে লাগল নীলার দেখে মনে হল বেচারা বেশ কয়েকদিন ধরে ভালো করে খেতেই পায় নি ! আহা রে বেচারা, নীলার গলার কাছে যেন কষ্টটা দলা পাকিয়ে উঠলো | খাওয়ার পর নীলা রোশনিকে সোফায় শুতে বলল, কিন্তু পরদিন সকালে দেখে মেয়েটা মাটিতে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে | গত দুদিন ধরে রোশনির সঙ্গে কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছে নীলা | মেয়েটা কোনো কথা বলে না, মাথা নীচু করে সব কথা মন দিয়ে শোনে আর ভাবলেশহীন মুখে বসে থাকে | নীলা ওর দিকে খাবারের থালা বাড়িয়ে দিলে চুপচাপ খায়, কোনোদিন খাবার সময় পেরিয়ে গেলে নীলার মুখের দিকে অবোধ শিশুর মতো তাকিয়ে থাকে.... নীলার ভীষণ খারাপ লাগে, তাড়াতাড়ি ওকে খাবার এনে দেয় | তৃতীয় দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নীলা একা একা কিচেনে দাঁড়িয়ে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিল, হঠাৎ ও অবাক হয়ে দেখল রোশনি কাঁচুমাচু মুখে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, নীলা ওর দিকে চেয়ে অবাক হয়ে বলল " কিরে ? কিছু বলবি ?" ও ঘাড় নাড়ল |
" বল, কি বলবি ? "
" আমি কি তোমাকে কিচেনে হেল্প করব ? "
" হ্যাঁ নিশ্চয়ই | আয় এদিকে | " দুজনে মিলে কফি, টোস্ট আর এগ পোচ বানাতে বানাতে গল্প করতে লাগল | নীলাই আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল " কিরে রোশনি তুই মহানগরীতে এলি কিভাবে ? "
মুখ নীচু করে ওড়নায় খুঁট পাকাতে লাগল মেয়েটা, তারপর ধীরে ধীরে বলল, " ট্রেনে করে | "
" ট্রেনে করে ? তুই একা এলি ? নাকি আর কেউ সঙ্গে ছিল ? "
" আমি একা আসি নি গো | আমি তো আমার স্বামীর সঙ্গে এসেছিলাম | "
" স্বামীর সঙ্গে ? তোর স্বামী কোথায় ? স্বামীর নাম কি ? "
এবার ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল মেয়েটা | এতে কাঁদার কি হলো‌ নীলা ভেবে পেল না | নীলা ওর দিকে অবাক চোখে তাকাতেই রোশনি কাঁদতে কাঁদতে বলল, " কাজু, আমার স্বামী | কাজুই তো আমায় এখানে বেচে দিয়েছে | " কথাটা বলেই মেয়েটা আবার মুখ নীচু করে নিল | নীলা বুঝল মেয়ৈটা চোখের জল লুকোচ্ছে | ইস ও না বুঝে রোশনিকে কতখানি আঘাত দিয়ে ফেলল | নীলা বুঝল রোশনির মনখারাপ হচ্ছে, তাই প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলল, " আর দুটো টোস্ট নিবি ? " রোশনি দুদিকে ঘাড় নাড়াল |
রাতের ডিনারে নীলা চিকেন ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন রান্না করল | এই মেয়েটার দৌলতে নীলাকে এজেন্সি দশ দিনের ছুটি দিয়েছে, সুপ্রতীকই ওর জন্য এই ছুটিটা ম্যানেজ করেছে | চিলি চিকেন রাঁধলেই মেয়েটা বড় তৃপ্তি করে খায়, আজকের খাবারটা দেখে রোশনির চোখদুটো চকচক করছিল | খেতে খেতে নিজে থেকেই বললো, " জানো দিদি কাজু আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল | ও আমাকে বলেছিল ও নাকি এখন কলকাতায় ভালো কাজ করে, ছোট্ট একটা ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকে | সেই ক্লাস সেভেন থেকে ওর সঙ্গে আমার প্রেম | মাধ্যমিকের পর কলকাতায় চলে এলো কাজের সন্ধানে | মাঝে মাঝে গ্রামে ঘুরতে আসত | কাজু যখন চকচকে সিল্কের শার্ট পড়ে আমার সঙ্গে ঘুরত, তখন বাকি বন্ধুদের সামনে গর্বে আমার বুক ফুলে উঠত | আমায় অনন্যা বলেছিল ও নাকি তমা বৌদির কাছে শুনেছে কাজু ভালো ছেলে নয় | আমার বিশ্বাস হত না, কাজু আমার মেলায় ঘুরতে নিয়ে যেত, সিনেমা হলে সিনেমা দেখাত, ইমিটিশনের চুড়ি-হার-কানের কিনে দিত, ফুচকা - চপ - কাটলেট খাওয়াতো... আমার খুব আনন্দ হত জানো | তারপর একদিন সিনেমা হলের অন্ধকারে ও আমার ঠোঁটে... রোশনি কথাটা অর্ধসমাপ্ত রেখে থেমে গেল | "
"কিরে থামলি কেন ? বল ! "
" সেদিন হঠাৎ কাজু আমায় গ্রামের পোড়ো মন্দিরে ডেকে পাঠালো‌ | আমি আসতেই একগাল হেসে বলল কিরে কলকাতা যাবি ? ওখানে তোর জন্য একটা ভালো কাজ দেখেছি রে... ভাবছি এবার বিয়েটা সেরেই ফেলি | এক কামরার ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দুজনে একটা ভালো বাড়ি ভাড়া নেবো | তুই আমি দুজনে মিলে কামাবো সব ম্যানেজ হয়ে যাবে... কি রে যাবি নাকি স্বপ্নের শহর কলকাতায় ? ওখানে কিন্তু সব স্বপ্ন সত্যি হয় | জানো দিদি সেদিন ওর বুকে মাথা রেখে ভবিষ্যতের সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে কতক্ষণ কেটে গেছিল মনেই পড়ে নি ! কাজু বলল চল, তবে আমরা কোনো মন্দিরে বিয়েটা সেরে ফেলি | তাহলে তোর বাবা-মাও কোনো আপত্তি করবে না, বরং মেয়ে-জামাই শহরে থাকবে জেনে খুশিই হবে |ওর পরামর্শে পরের দিনই আমরা গ্রামের মন্দিরে বিয়েটা সেরে নি... ও যখন আমার সিঁথিতে সিঁদুর পড়ালো মনে হল আজ থেকে আমি আর একা নই !বাড়িতে এসে সৎমাকে নমস্কার করলে সৎমা খুব খুশি হয়ে আমায় চারটে নতুন শাড়ি দিয়েছিল | বাবা হেসে বলেছিল বিয়ের পর প্রথমবারের জন্য কলকাতায় যাবি তো মা, এভাবে কি কেউ খালি হাতে যায় ? একটু দাঁড়া, আমি এখুনি আসছি | বলে একটা নতুন তোরঙ্গ এনে হাজির করেছিল | সঙ্গে আমার মৃত মায়ের চারগাছা সোনার চুড়ি আর একজোড়া পুরোনো কানের দুল হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল, হাজার অভাব হলেও আমি জিনিসগুলো বিক্রি করি নি রে মা, এগুলো যে তোর মায়ের স্মৃতি ! আর এই ধনে শুধু তোরই অধিকার | সস্তা নতুন বেনারসি শাড়ি, হাতভর্তি কাঁচের চুড়ি, মাথায় মোটা করে সিঁদুর লেপে কাজুর হাত ধরে প্রথমবারের জন্য ট্রেনে উঠলাম | বুকের ভিতর সে যে কি এক অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছিল তুমি ভাবতে পারবে না দিদি ! একের পর এক স্টেশন পেরিয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝেই নিজেকে চিমটি কেটে দেখছি এসব কোনো সুখস্বপ্ন নয় তো ? মাঝে মাঝেই রাস্তার ধারে বিভিন্ন জিনিস দেখে আমি কাজুকে নানারকম প্রশ্ন করছিলাম... ও ওর সাধ্যমতো উত্তর দিচ্ছিল | আমার প্রশ্নের ঠেলায় কাজু খুব বিরক্ত হচ্ছিল | কিন্তু আমি তো তখন উৎসাহে ফুটছি | হাওড়া স্টেশনে নেমে আমি তো হাঁ ! কত্ত বড়ো স্টেশন, কতো কতো লোকজনের আনাগোনা | কাজু স্টেশন থেকে বেরিয়ে ট্যাকসি স্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে গেল, আমিও ওর পিছু পিছু গেলাম | কাজু দরদস্তুর করে একটা ট্যাকসি ধরল | রাস্তায় কত বাস, অটো, গাড়ি আমি জানলা দিয়ে হাঁ করে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে ছিলাম বলে কাজু আমায় জোরে ধমক দিল | অভিমানে‌ আমার প্রায় চোখে জল এসে গেছিল হঠাৎ একটা জোরে ব্রেক কষে আমাদের ট্যাকসিটা দাঁড়িয়ে গেল | ট্যাকসির জানালা দিয়ে দেখলাম একটা বিরাট উঁচু বাড়ি | কাজু বলল, নামো ! আমরা এসে গেছি | আমি তো ভয়ে জড়োসড়ো | এটা আবার কাদের বাড়ি ? আমি ভয়ে ভয়ে কাজুকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি এখানেই কাজ করো ? এরা তো বিশাল বড়লোক বলে মনে হচ্ছে | কাজু বেশ রেগে উঠে বলল, বেশি কথা না বাড়িয়ে ওর সঙ্গে চুপচাপ যেতে | বোতাম টিপে একটা বিরাট বড় মেশিনের পেটের ভেতর আমায় ঢোকালো, আমি ' ওয়ান্টেড ' সিনেমায় দেখেছি ওই মেশিনটাকে লিফট বলে | জানো দিদি, ওই সিনেমাটায় সলমান খান ও আয়েশা টাকিয়া একই লিফটে আটকে পড়ে কি কেলেংকারি ! কি কেলেংকারি ! পুরো যাতা কান্ড ! " কথাটা বলে ছোট্ট বাচ্চাদের মতো হাততালি দিয়ে উঠলো রোশনি |
" তারপর ? তারপর কি হলো বললি না তো ! " রোশনিকে খোঁচাল নীলা |
" কাজু লিফটে উঠে ছ তলার বোতাম টিপল | লিফট খুলতেই ওর পেটের ভিতর থেকে বেরিয়ে দেখি দুদিকে দুটো দরজা | ওরই একটা দরজার সামনে গিয়ে কাজু বেল টিপল | আমি ততক্ষণে নিশ্চিত হয়ে গেছি যে, এই বাড়িতেই কাজু চাকরের কাজ করে | লজ্জায় আমার সামনে বলতে পারছে না ! আরে ওই যে লোকটা এসে তোমার কাছে আমায় দিয়ে গেল না.... "
" কে ? সুপ্রতীক ? "
" ও ! ওই বিচ্ছিরি লোকটার নাম সুপ্রতীক বুঝি ? কাজু তো আমাকে কাছে ওর দিয়ে গেল | লোকটা নাকি ওর পাতানো মামা | বলল, এখানে কিছুক্ষণ থাকো | আমি বাজার থেকে কয়েকটা জিনিস কিনে আনি, ফেরার পথে তোমাকে নিয়ে যাবো | জানো দিদি আমি ওর সঙ্গে যেতে চেয়েছিলাম | কিন্তু কাজু কিছুতেই রাজি হল না | কাজু সেই যে বাজারে গেল আর ফিরল না | গত দুদিন ধরে লোকটার বাড়িতেই ছিলাম | লোকটা যখন বাইরে যেত আমায় তালা দিয়ে রেখে যেত ! দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যেবেলা ওই সুপ্রতীক লোকটা মদ খেয়ে আমার গায়ে হাত দিতে এসেছিল | আমি ঠেলে সরিয়ে দিতে যেতেই জড়ানো গলায় বলল, আমায় তেজ দেখিয়ে লাভ হবে না | তোর জন্য কাজুকে পুরো পাঁচ লাখ গুনে দিয়েছি বুঝলি ! পুরো পাঁচ লাখ ! পুরো পাঁচ লাখে কটা শূন্য থাকে জানিস ? বলেই আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ..... তারপর সারা রাত কি অমানুষিক অত্যাচার ", চোখদুটো বন্ধ করে রোশনি যেন সেই রাতের কথাটা ভেবে আতঙ্কে শিউরে উঠল | কিছুক্ষণ পর ধাতস্থ হয়ে গলাটা খাদে নামিয়ে বলল, " সে রাত্তিরে তীব্র ব্যথায় আমার পুরো শরীরটা অবশ হয়ে গেছিল, তবুও একটু নিস্তার পাই নি | তবে কি জানো দিদি আমার সুপ্রতীকবাবুদের ওপর রাগ হয় না... নারী শরীর ভোগের জন্য লোলুপ হায়েনার দল বরাবরই ওঁত পেতে থাকে, সেটাই স্বাভাবিক | আমার কোথায় কষ্ট হয় জানো ? এই যে আমি কাজুকে ভালোবাসলাম, ওকে বিশ্বাস করে নিজের সর্বস্ব ওর হাতে তুলে দিলাম আর শেষে কিনা ওই আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলো ? ও এমনটা কেন করল গো‌ ? ঈশ্বরের সামনে পরানো সিঁথির সিঁদুরের এতবড় অপমানটা করতে পারল ? ওর একটুও বিবেকে বাঁধল না ? " অবরুদ্ধ কান্নায় ফুলে ফুলে উঠতে লাগল রোশনির দেহ | ও কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল, " আমাকে চুটিয়ে ভোগ করার পর সুপ্রতীকবাবু তোমার কাছে দিয়ে গেল | বলল নাকি আমাকে এজেন্সির জন্য কিনেছে | এজেন্সিতে কাজ করতে হলে ট্রেনিং নিতে হবে ! তুমিই হলে আমার ট্রেনার ! তুমি তো অনেক বড়লোক, তার উপর আবার হিরোইনের মতো দেখতে ! তাহলে দিদি তুমি কেন এসব কাজ করো ? কাজু আমার জন্য শেষে এই কাজ খুঁজল ? ও কিনা আমার সঙ্গে বিট্টে‌‌ করল ? তুমি ভাবতে পারবে না দিদি আমার শরীরের কত জায়গায় কালশিটের দাগ ! "
এক মুহূর্তে জন্য নীলার পায়ের তলার মাটিটা দুলে উঠল | ও রোশনিকে কি উত্তর দেবে ? তাহলে এসকর্ট সার্ভিসে কাজ করানোর জন্যই রোশনিকে টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে | তাই সুপ্রতীকের এক কথায় নীলার দশ দিনের ছুটি মঞ্জুর হয়ে গেল | কিন্তু মেয়েটার কি হবে ? নীলার কেমন যেন মেয়েটার উপর মায়া পড়ে গেছে | রোশনি তো অর্থ চায় না... তবে ও কেন তলিয়ে যাবে নরকের অন্ধকারে ?
‌( ক্রমশঃ )
Like Reply
#7
নীলা - শেষ পর্ব

রোশনির ফুলে ফুলে কান্নাটা কিছুতেই ভুলতে পারছিল না নীলা ! সত্যি রোশনি তো পয়সা চায় নি, দামী জীবনযাত্রা চায় নি, শাড়ি-গয়না চায় নি, শুধু একটু সিঁথির সিঁদুরের অধিকার চেয়েছিল ! এটাই কি ওর অপরাধ ? সেখানে নীলা দামী জীবনযাত্রার সিঁড়ি বেয়ে ওঠার লোভে দেবাশিসের ভালোবাসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, ক্ষণিকের আনন্দ, অর্থের লোভে নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে হেলায় ভাসিয়ে দিয়ে উদ্দাম জীবনযাত্রায় মেতে উঠেছে | ধীরে ধীরে নরকের পাঁকে তলিয়ে গেছে, যেখান থেকে ওর ফেরার উপায় নেই ! কিন্তু এই ছোট্ট মেয়েটাকে সে কি করে এই নরকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় ! মেয়েটা যে ওকে কি মায়ায় জড়িয়েছে | নীলা তো জানে এই পেশার কি যন্ত্রণা.... সাময়িক মোহে যে নরকের আগুনে নীলা তলিয়ে গেছে ও জানে তার থেকে মুক্তি নেই, প্রাণপণে চাইলেও মুক্তি মেলে না ! ও দেবাশিসকে আঘাত করেছে, দেবশিসের নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে আঘাত করেছে | নিজের সাধারণ, ঘরোয়া, গৃহবধূর জীবন ছেড়ে বিলাসবহুল জীবনযাপনের খেসারত দিয়েছে... এখনো দিয়ে চলেছে | প্রত্যেকেরই যৌবন একদিন শেষ হয়, যতই চড়া মেকআপ আর দামী সাজগোজ দিয়ে বয়সটাকে আড়াল করার চেষ্টা করুক না কেন... শেষের সেদিন কাউকে রেয়াত করে না | ওর যৌবনও তো একদিন শেষ হবে, সেইদিনের কথা ভাবলেই নীলার বুকের ভেতরটা শূন্য হয়ে যায় | কে থাকবে ওর পাশে ? হয় একা থাকতে থাকতে পাগল হয়ে যাবে নয় মরে পড়ে থাকবে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের শূন্য অন্দরমহলে | শূন্যতার জ্বালা মেটানোর ক্ষমতা সোনালি তরলের নেই | ভোগের পথ, বাসনার পথ বেয়ে আজ নীলা অনেকদূর এগিয়ে গেছে... এই প্যাঁচালো সর্পিল চক্রব্যূহে ঢোকা সহজ কিন্তু নিজের সমস্ত আত্মা দিয়ে চাইলেও মৃত্যুর আবেষ্টনী ছাড়া বেরোনোর কোনো রাস্তা নেই ..... আর আত্মহত্যা করার ক্ষমতা বা সাহস কোনোটাই নীলার নেই | তবে চেষ্টা করলে এই মেয়েটাকে ও বাঁচাতে পারে | নীলা তো ক্লায়েন্টের চাহিদা মেটাতে মেটাতে একটা যান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল, সোনালি তরল, ঘুমের ওষুধের ঘোরে কেটে যেত অভ্যস্ত দিনলিপি | কতদিন বাদে এমন লম্বা ছুটি পেল নীলা |রোশনির কোমল মুখছবি ওকে মনে পরিয়ে দেয় ওর ছোটবেলার দিনগুলোর কথা | বহুদিন বাদে একটা ভালো কাজ করার ইচ্ছে মনে জাগছে ! কিন্তু এতদিনকার এসকর্ট এজেন্সি সঙ্গে আবার অমানুষ সুপ্রতীক... এদের সঙ্গে কি একাকী লড়তে পারবে নীলা ? ওর কাছে কি সত্যি নীলার মতো জাদু ক্ষমতা আছে ! জীবন রোশনির বেশে ওর কাছে এসেছে একটা প্রশ্নচিহ্ন নিয়ে.... জীবন উত্তর চায় ! এই যুদ্ধে নীলা কি জিততে পারবে ? না কি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষে কর্ণের মতো ওরও মৃতদেহ পড়ে থাকবে ....... অস্তগামী সূর্যের প্রান্তরে |
সকাল রাত্তির ভাবতে থাকল নীলা | ওর দুচোখের নীচে গাঢ় কালির পোঁচ বলে দিচ্ছে নীলা কতগুলো রাত্রি নির্ঘুম কাটিয়েছে | সারাক্ষণ নীলা কি যেন ভাবতে থাকে... হাসিখুশি দিদিকে এভাবে বদলে যেতে দেখে রোশনি ওর দিকে অবাক চোখে তাকায়, ওর আর বাক্যস্ফূর্তি হয় না | মাঝে মাঝেই নীলার মনে হয় ওরা অনেক ক্ষমতা ধরে ওদের বিরুদ্ধে নীলা একা কিসসু করে উঠতে পারবে না | তখন ওর নিজের উপরই ভীষণ রাগ হয়, মনে হয় একটা মেয়েকে বাঁচাতেও ও অপারগ | সেই রাগটা গিয়ে পড়ে ঘরে থাকা জিনিসপত্রের উপর | একে একে ভাঙে কাঁচের ফ্লাওয়ার ভাস, কাঁচের দামী দামী ক্রকারিজ | রোশনি নিশ্চুপে ঝাঁট দিয়ে কাঁচগুলো পরিস্কার করে .... মেয়েটার শূন্য দৃষ্টি দেখে বুকের ভিতরটা উথালপাথাল করে নীলার | ঝাঁট দেওয়া শেষে নীলা প্রাণপণে রোশনিকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে ! দেবাশিসের সঙ্গে যদি ভালো করে সংসার করত তবে ওরও কি এরকম একটা মিষ্টি মেয়ে হতো ! যাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ও নিজের সমস্ত প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিগুলোকে ভুলে যেতে পারত ! যদি এমনটা হতো দিবাস্বপ্ন দেখতে লাগে নীলা ! কি সে তো কোনদিনই সম্ভব হবে না | তার চেয়ে অন্ততঃ ও যদি রোশনিকে বাঁচাতে পারে ! আজকাল নীলার দার্জিলিংয়ে হানিমুনের স্মৃতিগুলো ভীষণ মনে পড়ে | দেবাশিসকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার পর ও বুঝতে পেরেছে দেবাশিস ওকে কতটা ভালোবাসত, কতটা যত্ন করে আগলে রাখত | দেবাশিস ভালোবাসার কাঙাল ছিল, শুধু নীলা চেয়েছিল বলে দেবাশিস দার্জিলিংয়ের কনকনে ঠান্ডায় রাত্রিবেলা হোটেল থেকে বেরিয়ে আইসক্রিম নিয়ে এসেছিল | আইসক্রিমটা হাতে ধরে কি যে ভীষণ কাঁপছিল তখন, নীলা ওর গায়ে কম্বলটা জড়িয়ে দিতে তবে বাবুর কাঁপুনি থামে | নীলা চেটে চেটে আইসক্রিম খাচ্ছিল, দেবাশিস ওকে সতৃষ্ণ নয়নে দেখছিল | ভয়ে ভয়ে ঠোঁট থেকে ক্রিম চেটে নিচ্ছিল | পরের দিন সকালবেলা ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে একসঙ্গে টাইগার হিল দেখা | রেলিংয়ের ধারে কি বিপজ্জনক ভাবে ঝুঁকে দাঁড়িয়েছিল দেবাশিস, টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখা নীলা মাথায় ওঠেছিল, ভয়ে দেবাশিসকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠেছিল | সন্ধ্যেবেলা ম্যালের দোকান থেকে নীলাকে লুকিয়ে বেরিয়েছিল দেবাশিস | ওখান একটা সুদৃশ্য চাদর কিনে এনে ওর গায়ে জড়িয়ে ধরে বলছিল আঃ ! আমার বউটা কি সুন্দর, কি মিষ্টি ! নীলা আবেগে দেবাশিসকে জড়িয়ে ধরেছিল | আর কাজু কিনা কটা পয়সার জন্য নিজের বিয়ে করা বউটাকেই বেচে দিল..... না, যেভাবেই হোক রোশনিকে সে বাঁচাবেই, প্রয়োজনে সে নিজের প্রাণ দিয়ে দেবে | ওর মতো মেয়ে বেঁচে থেকেই বা পৃথিবীর কোন কাজে আসবে ?
দশদিন শেষ হতে আর মাত্র একদিন বাকি ! সুপ্রতীকের রোশনিকে নিতে আসার সময় প্রায় হয়ে এলো | একটা লাইসেন্স বিহীন রিভলবার অনেক টাকায় কিনেছে নীলা | এই কাজে নেমে সমাজের অনেকতলার মানুষের সঙ্গেই নীলার পরিচয় হয়েছে, তাই সামান্য একটা রিভলবার জোগাড় করতে ওকে তেমন বেগ পেতে হয় নি ! নীলা সম্পূর্ণ প্রস্তুত, এবার শুধু সুপ্রতীকের ফোনের অপেক্ষা | তা ফোনটা এলো, ঠিক সন্ধ্যে নাগাদ ফোনটা করল সুপ্রতীক | রোশনির নতুন কাস্টমার ঠিক হয়ে গেছে | সব ঠিক থাকলে এসকর্ট এজেন্সির হয়ে এটাই হবে রোশনির প্রথম কাজ | কাল রাতে সুপ্রতীক ওর বাড়িতে এসে রোশনিকে নিয়ে যাবে | ফোনটা রেখে নীলা কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইল | রোশনি ওর দিকে অবাক চোখে চেয়ে আছে দেখে নীলা ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, " ভয় কি আমি তো আছি ! তোর দিদি থাকতে কেউ তোর কিচ্ছু করতে পারবে না | "
পরেরদিন ঠিক সন্ধ্যেবেলা সুপ্রতীক এসে বেল বাজাল | হাসিমুখে বলল, " কি রোশনি রেডি তো ? কাল থেকে কিন্তু কাজ শুরু | মন দিয়ে কাজ করতে হবে | মালদার ক্লায়েন্ট, ভালো সার্ভিস দিতে পারলে পয়সা হি পয়সা .... এই দিদিকে দেখছিস তো ! কত আসবাবপত্র, কত বড় ফ্ল্যাট ".... কথাটা বলে নীলার দিকে চেয়ে চোখ মারল |
বিলোল কটাক্ষে সুপ্রতীককে মাত করে নীলা বলল, " সে তো যাবেই তার আগে চলো ডিনারটা সেরে নেবে | কতদিন বাদে আমার কাছে এলে বলো তো ! আগেরদিন তো কিছু না খেয়েই চলে গেলে ! আজ তোমার জন্য স্পেশাল ডিনার বানিয়েছি | ফ্রায়েড রাইস আর চিকেন কষা | "
" আর ? ওটা আছে তো ? " সুপ্রতীক হাত দিয়ে বোতলের ইঙ্গিত করল |
" হ্যাঁ | তোমার পছন্দের ব্র্যান্ডের হুইস্কিও আছে | " নীলা ইঙ্গিতপূর্ণ হেসে টেবিল সাজাতে চলে গেল |
খাওয়া দাওয়া শেষে মৌজ করে সিগারেট ধরিয়েছে সুপ্রতীক | তৃতীয় পেগ শেষে একটু নেশা চড়েছে, আয়েশ করে সুপ্রতীক চতুর্থ পেগে চুমুকটা দিতে যাবে এমন সময় নীলার ফ্ল্যাটের কলিং বেল বেজে উঠল | বোধহয় কোন প্রতিবেশী হবে... কথাটা বলে চট করে সোফা ছেড়ে উঠে দরজা খুলতে এগিয়ে গেল নীলা | দরজাটা খুলতেই ইন্সপেক্টর সমেত পুলিশের দল ঘরে ঢুকে পড়ল |
" এত রাতে আবার কে এলো ? "কথাটা বলতে বলতে সুপ্রতীক তখন বসার ঘরে এসে পড়েছে... ঘরভর্তি পুলিশ দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো " শালি গদ্দার ! " নীলাকে লক্ষ্য করে পলকে সুপ্রতীকের রিভলবার ঝলসে উঠল |
সুপ্রতীক নেশার ঘোরে থাকায় গুলিটা নীলার মাথার রগ ঘেঁষে বেরিয়ে গেল | পলকের মধ্যে পুলিশ সুপ্রতীককে ঘিরে ফেলল | ইন্সপেক্টর দাস একজন পুলিশকে ডেকে বললেন, " অ্যাম্বুলেন্স ডেকে অবিলম্বে নীলাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে...."
ওদিকে একজন মহিলা পুলিশ রোশনির কাছে গিয়ে কোমল স্বরে বলল, " তোমার আর কোন ভয় নেই | কি হয়েছিল আমাদের খুলে বলো | যদি তুমি বাড়ি যেতে চাও তাহলে আমরা তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেব | আর নইলে তুমি নাবালক/নাবালিকাদের জন্য নির্মিত হোস্টেলে থাকবে | "
রোশনি প্রথম থেকে ওর সঙ্গে যা যা হয়েছে, কাজুর সঙ্গে ওর বিয়ের কথা, কলকাতায় আসার কথা, ওকে সুপ্রতীকের কাছে বেচে দেওয়ার কথা... সবটাই পুলিশকে খুলে বলল | রোশনি পুলিশকে জানালো ওর পক্ষে আর গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়... ওর ছোট ভাই-বোন আছে... বাড়ির কেউই আর ওকে মেনে নেবে না | পুলিশের তরফ থেকে রোশনিকে হোমে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হল ! হাওয়ায় এসব খবর শুনে কাজু পালাবার চেষ্টা করেছিল | কিন্তু ওর পক্ষে পালানো আর সম্ভব হল না, পালানোর সময়টাতেই বাস ডিপোতে সাদা পোশাকে অপেক্ষারত স্থানীয় পুলিশের হাতে কাজু ধরা পড়ে গেল‌ | বিচারে ওর তিনবছর সশ্রম কারাদণ্ড হল, সঙ্গে হাজার পাঁচেক টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছ'মাস জেল | আর সুপ্রতীক যখন বুঝলো পুলিশের হাত থেকে বাঁচা ওর পক্ষে কোনমতেই সম্ভব নয়, তখন ওই এসকর্ট এজেন্সির বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হিসাবে আদালতে বয়ান দিল | এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ব্যক্তিরা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পেল | হাসপাতালের চিকিৎসায় নীলা ধীরে ধীরে সাড়া দিলেও ডাক্তার বললেন ওর মাথার রগ ছুঁয়ে বুলেটটা বেরিয়ে গেলেও ওই আকস্মিক আঘাতে নীলার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে | ভুলভাল বকছে, পুরোনো কথা কিছু মনে করতে পারছে না.... শুধু ওর ছোটবেলার কথা বলে যাচ্ছে, বাচ্চাদের মতো করছে | তবে আশার কথা নীলা ওর পিতৃদত্ত নামটা ভোলেনি কেউ ওর নাম জিজ্ঞেস করলে বলছে তোমরা জানো না আমার নাম নীলা, আ রেয়ার জেম | কিন্তু কেউ ওর কাছে যেতে গেলেই ভায়োলেন্ট হয়ে উঠছে, হাসপাতালের নার্সকেও আঁচড়ে কামড়ে দিয়েছে | শেষপর্যন্ত একপ্রকার বাধ্য হয়েই পুলিশ নীলাকে মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করে দিল | ওখানকার খোলা জানলার ধারে বসে নীলা শুধু একটা কথাই বিড়বিড় করে বলে চলে, " আমার নাম নীলা | নীলা খুব রেয়ার জেম | ছোটবেলায় বাবা বলত নীলা সকলের সহ্য হয় না ! "


( সমাপ্ত )
[+] 1 user Likes Brihannala's post
Like Reply
#8
মর্মান্তিক গল্প। তবে খুব সচেতন মূলক কাহিনী। আজ নীলা সুখে শান্তিতে স্বামী-সন্তান নিয়ে হাসি-কান্নায় থাকতে পারতো কিন্তু অপরিমিত উচ্চাকাঙ্খা ওকে কোথায় এনে দিল। অতি লোভে তাঁতি নষ্ট  Sad
Make her happy, she'll make you twice happier   Heart
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)