23-04-2020, 02:37 PM
করোনা মুক্ত পৃথিবী
আজ 31শে ডিসেম্বর2069 সাল আর আমার বয়েস 82 বছর। আমি যখন 32 বছরের যুবক ছিলাম তখন সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করে। সারা পৃথিবীর সব দেশের মানুষ এই ভাইরাসের আক্রমণের কবলে পড়ে। আজ সেই করোনা ভাইরাসের গল্প বলবো।
পুরো পৃথিবী ঘর বন্দী হয়ে এক বছর কাটায়। সারা পৃথিবীতে প্রায় 25 লক্ষ লোক করোনার ফলে মারা যায়, আরও 25 লক্ষ ক্ষুদায় আর সঠিক চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।
একবছর কোনোভাবে কেটে যায়। ভাইরাসের প্রভাব অনেক কমে যায়, তবে পুরোপুরি ভাবে কোনোদিন এই ভাইরাসকে নির্মূল করা যায় নি। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, মাস্ক কোনো কিছু দিয়েই একে থামানো যায়নি। ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছিলো, তবে এই ভাইরাস খুব তাড়াতাড়ি মিউটেট করে নিজেকে বদলে ফেলে। তাই কোনও ভ্যাকসিন এর স্থায়ী প্রতিরোধক হতে পারেনি। প্রায় প্রতিটি মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তবে সবার মধ্যে এর এফেক্ট সেভাবে হয়নি।
শুরুতে এই ভাইরাস ছড়িয়েছিল হাঁচি আর কাসি দিয়ে। সেই ছোটবেলায় EVS বইতে পড়েছিলাম হাঁচি বা কাসি আসলে মুখ দুহাতের তালু দিয়ে ঢাকতে। সেটাই এই ভাইরাস ছড়ানোর মূল কারণ ছিলো। মুখ থেকে ভাইরাস হাতে এসে যায়। তারপর হ্যান্ডশেক, জড়িয়ে ধরা বা অন্যান্য ভাবে একে অন্যকে ছোঁয়ায় এই ভাইরাস ছড়ায়। সেই সময় জলের কল, দরজার হ্যান্ডেল বা লক, লিফটের বাটন সব কিছুই হাত দিয়ে ছুঁয়েই ব্যবহার করতে হত। তারপর ধীরে ধীরে সব কিছু টাচ ফ্রী হয়ে যায়। আজকের পৃথিবীতে ঘর বা অফিসে যত কাজ করতে হয় সবই প্রায় হাতের ছোঁয়া ছাড়াই করা যায়। এক সময় পাসওয়ার্ড হিসাবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট খুব ব্যবহার হত। এখন সব চোখের ছবি দিয়ে হয়। এখনকার ছেলেমেয়েরা হাত লাগিয়ে কিছু করতে হবে সেটা ভাবতেই পারেনা।
গত 50 বছরে আমাদের জীবনযাত্রা ফ্যাশন শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা সব বদলিয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর 100% লোকের কাছে ইন্টারনেট আছে আর বাড়ির দেয়ালে বিশাল বড় টার্মিনাল মনিটর আছে। আমাদের মত গরিব দেশে সরকার থেকে বিনামূল্যে এই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেট একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ফ্রী। কেউ ব্যাংকে যায় না, ভোট দিতে যায়না, কলেজ কলেজে যায়না, ডাক্তার দেখাতে যায়না। কলেজ কলেজে শুধু প্র্যাকটিক্যাল শিখতে যায়। ডাক্তারের কাছে শুধু কোনো প্যাথলজিক্যাল টেস্ট বা অপারেশন এর জন্য যেতে হয়। বিয়ের মত সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার চল নেই। সবাই অনলাইনে ভিডিওতে বিয়ে দেখি। ছেলে বা মেয়ের বাবা নিমন্ত্রণ করেন অনলাইনে আর খাবার হোম ডেলিভারি করে দেয়। দূরের নিমন্ত্রিত দের কুপন কোড দেওয়া হয়, ওরা ওদের পছন্দমত জায়গা থেকে খাবার আনিয়ে নেয়। প্রায় সব কেনাকাটা অনলাইনে হয়। বাজার আর দোকানের কনসেপ্টই বদলিয়ে গিয়েছে। মোবাইল ফোন আর হাতে ধরা আয়তাকার বাক্স নেই। এখন ফোন একটা জ্যাকেটের সাথে আছে। মুখের মাস্কের সাথে পড়ে নিতে হয়। সব কাজ ভয়েস কম্যান্ড দিয়ে হয়। হাতের গ্লাভস, মুখের মাস্ক, মাথার ক্যাপ এখন রেগুলার ড্রেস হিসাবে ধরা হয়।
অনেক গবেষণা করে জানা গিয়েছে যে এই করোনা ভাইরাস মোটামুটি তিনটে স্টেজে মানুষের শরীরে থাকে। 60% লোকের শরীরে এর কোনোই প্রভাব নেই। সেখানে করোনা জাস্ট একটা ডমিনেটেড এলিমেন্ট হিসাবেই থাকে। অনেকসময় পরীক্ষাতেও ধরা পড়ে না করোনার অস্তিত্ব, তবু শরীরে থাকে আর সংক্রমণ ছড়ায়। 35% লোকের শরীরে এটা শুধু নাক আর গলাকে কাহিল করে দেয়। তাদের কাসি আর শ্বাসকষ্ট অনেকদিন ধরে থাকে। একবার ভালো হয় আবার ছ মাস এক বছর পর আবার হয়। বাকি 5% বা তারও কম লোকের শরীরে এই ভাইরাস ফুসফুসে গিয়ে বাসা বাঁধে আর ধীরে ধীরে ফুসফুস অকেজো করে দেয়। একবার ফুসফুস ভালোরকম আক্রান্ত হয়ে গেলে ভেন্টিলেটর বা নেবুলাইজর কিছুই কাজ করে না। তারপর একদিন সব শেষ হয়ে যায়।
আরো বড় সমস্যা বোঝা যায় 2022 বা 2023 থেকে। সারা পৃথিবীর ডেথ রেট অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। আর সেই রেট প্রতিবছর জিওমেট্রিক প্রোগ্রেসনে বাড়তে থাকে। 2027 সালে ডেথ রেট বার্থ রেটকে ছাড়িয়ে যায়। প্রায় কোনো মৃত্যকেই করোনা জনিত মৃত্যু বলা যায় না। তবু অনেক সাধারণ কারণেই মৃত্যু হয়। প্রতিটি অসুখের সারভাইভাল রেট কমে যায়।
2027 সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল 8.4 বিলিয়ন। 2020 সালে পৃথিবীর ডেথ রেট ছিল 7.7 আর বার্থ রেট ছিল 18.5 আর 2027 সালে ডেথ রেট 21 হয়ে যায়। পৃথিবীর জনসংখ্যা কমতে থাকে। কমতে কমতে 2065 সালে ভারতের জনসংখ্যা হয় 45 বিলিয়ন আর পৃথিবীর জনসংখ্যা দাঁড়ায় 211 বিলিয়নে।
2068 সালে করোনার চিকিৎসা আবিষ্কার হয়। ভারত, ইতালি আর ফ্রান্স তিন দেশের বিজ্ঞানীরা একসাথে গবেষণা করে এই আবিষ্কার করে। এই চিকিৎসায় মানব শরীরের সব ক্ষতিকারক ভাইরাসের জেনেটিক কোড বদলে দেওয়া হয়। মানব শরীরকে ধীরে ধীরে একটা টানেলের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে চালনা করা হয়। সেই টানেলে আল্ট্রা ভায়োলেট রে আর অনেক রকম তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের সাহায্যে সব ক্ষতিকারক ভাইরাসের DNA আর RNA কোড বদলে দেয়া হয়। তাতে সেই ভাইরাস আর মাল্টিপ্লিকেশন করতে পারে না। তাই তার থেকে সংক্রমণও হয়না। তারপর কিছু ওষুধ দিয়ে ওই নিস্ক্রিয় ভাইরাস শরীর থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই বছরেই পৃথিবীর সব মানুষকে স্যানিটাইজ করে ভাইরাস মুক্ত করা হয়েছে।
কাল 1st জানুয়ারি 2070 সাল। আমরা সবাই
নতুন বছরে নতুন সূর্যের অপেক্ষায় আছি।
আজ 31শে ডিসেম্বর2069 সাল আর আমার বয়েস 82 বছর। আমি যখন 32 বছরের যুবক ছিলাম তখন সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করে। সারা পৃথিবীর সব দেশের মানুষ এই ভাইরাসের আক্রমণের কবলে পড়ে। আজ সেই করোনা ভাইরাসের গল্প বলবো।
পুরো পৃথিবী ঘর বন্দী হয়ে এক বছর কাটায়। সারা পৃথিবীতে প্রায় 25 লক্ষ লোক করোনার ফলে মারা যায়, আরও 25 লক্ষ ক্ষুদায় আর সঠিক চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।
একবছর কোনোভাবে কেটে যায়। ভাইরাসের প্রভাব অনেক কমে যায়, তবে পুরোপুরি ভাবে কোনোদিন এই ভাইরাসকে নির্মূল করা যায় নি। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, মাস্ক কোনো কিছু দিয়েই একে থামানো যায়নি। ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছিলো, তবে এই ভাইরাস খুব তাড়াতাড়ি মিউটেট করে নিজেকে বদলে ফেলে। তাই কোনও ভ্যাকসিন এর স্থায়ী প্রতিরোধক হতে পারেনি। প্রায় প্রতিটি মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তবে সবার মধ্যে এর এফেক্ট সেভাবে হয়নি।
শুরুতে এই ভাইরাস ছড়িয়েছিল হাঁচি আর কাসি দিয়ে। সেই ছোটবেলায় EVS বইতে পড়েছিলাম হাঁচি বা কাসি আসলে মুখ দুহাতের তালু দিয়ে ঢাকতে। সেটাই এই ভাইরাস ছড়ানোর মূল কারণ ছিলো। মুখ থেকে ভাইরাস হাতে এসে যায়। তারপর হ্যান্ডশেক, জড়িয়ে ধরা বা অন্যান্য ভাবে একে অন্যকে ছোঁয়ায় এই ভাইরাস ছড়ায়। সেই সময় জলের কল, দরজার হ্যান্ডেল বা লক, লিফটের বাটন সব কিছুই হাত দিয়ে ছুঁয়েই ব্যবহার করতে হত। তারপর ধীরে ধীরে সব কিছু টাচ ফ্রী হয়ে যায়। আজকের পৃথিবীতে ঘর বা অফিসে যত কাজ করতে হয় সবই প্রায় হাতের ছোঁয়া ছাড়াই করা যায়। এক সময় পাসওয়ার্ড হিসাবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট খুব ব্যবহার হত। এখন সব চোখের ছবি দিয়ে হয়। এখনকার ছেলেমেয়েরা হাত লাগিয়ে কিছু করতে হবে সেটা ভাবতেই পারেনা।
গত 50 বছরে আমাদের জীবনযাত্রা ফ্যাশন শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা সব বদলিয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর 100% লোকের কাছে ইন্টারনেট আছে আর বাড়ির দেয়ালে বিশাল বড় টার্মিনাল মনিটর আছে। আমাদের মত গরিব দেশে সরকার থেকে বিনামূল্যে এই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেট একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ফ্রী। কেউ ব্যাংকে যায় না, ভোট দিতে যায়না, কলেজ কলেজে যায়না, ডাক্তার দেখাতে যায়না। কলেজ কলেজে শুধু প্র্যাকটিক্যাল শিখতে যায়। ডাক্তারের কাছে শুধু কোনো প্যাথলজিক্যাল টেস্ট বা অপারেশন এর জন্য যেতে হয়। বিয়ের মত সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার চল নেই। সবাই অনলাইনে ভিডিওতে বিয়ে দেখি। ছেলে বা মেয়ের বাবা নিমন্ত্রণ করেন অনলাইনে আর খাবার হোম ডেলিভারি করে দেয়। দূরের নিমন্ত্রিত দের কুপন কোড দেওয়া হয়, ওরা ওদের পছন্দমত জায়গা থেকে খাবার আনিয়ে নেয়। প্রায় সব কেনাকাটা অনলাইনে হয়। বাজার আর দোকানের কনসেপ্টই বদলিয়ে গিয়েছে। মোবাইল ফোন আর হাতে ধরা আয়তাকার বাক্স নেই। এখন ফোন একটা জ্যাকেটের সাথে আছে। মুখের মাস্কের সাথে পড়ে নিতে হয়। সব কাজ ভয়েস কম্যান্ড দিয়ে হয়। হাতের গ্লাভস, মুখের মাস্ক, মাথার ক্যাপ এখন রেগুলার ড্রেস হিসাবে ধরা হয়।
অনেক গবেষণা করে জানা গিয়েছে যে এই করোনা ভাইরাস মোটামুটি তিনটে স্টেজে মানুষের শরীরে থাকে। 60% লোকের শরীরে এর কোনোই প্রভাব নেই। সেখানে করোনা জাস্ট একটা ডমিনেটেড এলিমেন্ট হিসাবেই থাকে। অনেকসময় পরীক্ষাতেও ধরা পড়ে না করোনার অস্তিত্ব, তবু শরীরে থাকে আর সংক্রমণ ছড়ায়। 35% লোকের শরীরে এটা শুধু নাক আর গলাকে কাহিল করে দেয়। তাদের কাসি আর শ্বাসকষ্ট অনেকদিন ধরে থাকে। একবার ভালো হয় আবার ছ মাস এক বছর পর আবার হয়। বাকি 5% বা তারও কম লোকের শরীরে এই ভাইরাস ফুসফুসে গিয়ে বাসা বাঁধে আর ধীরে ধীরে ফুসফুস অকেজো করে দেয়। একবার ফুসফুস ভালোরকম আক্রান্ত হয়ে গেলে ভেন্টিলেটর বা নেবুলাইজর কিছুই কাজ করে না। তারপর একদিন সব শেষ হয়ে যায়।
আরো বড় সমস্যা বোঝা যায় 2022 বা 2023 থেকে। সারা পৃথিবীর ডেথ রেট অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। আর সেই রেট প্রতিবছর জিওমেট্রিক প্রোগ্রেসনে বাড়তে থাকে। 2027 সালে ডেথ রেট বার্থ রেটকে ছাড়িয়ে যায়। প্রায় কোনো মৃত্যকেই করোনা জনিত মৃত্যু বলা যায় না। তবু অনেক সাধারণ কারণেই মৃত্যু হয়। প্রতিটি অসুখের সারভাইভাল রেট কমে যায়।
2027 সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল 8.4 বিলিয়ন। 2020 সালে পৃথিবীর ডেথ রেট ছিল 7.7 আর বার্থ রেট ছিল 18.5 আর 2027 সালে ডেথ রেট 21 হয়ে যায়। পৃথিবীর জনসংখ্যা কমতে থাকে। কমতে কমতে 2065 সালে ভারতের জনসংখ্যা হয় 45 বিলিয়ন আর পৃথিবীর জনসংখ্যা দাঁড়ায় 211 বিলিয়নে।
2068 সালে করোনার চিকিৎসা আবিষ্কার হয়। ভারত, ইতালি আর ফ্রান্স তিন দেশের বিজ্ঞানীরা একসাথে গবেষণা করে এই আবিষ্কার করে। এই চিকিৎসায় মানব শরীরের সব ক্ষতিকারক ভাইরাসের জেনেটিক কোড বদলে দেওয়া হয়। মানব শরীরকে ধীরে ধীরে একটা টানেলের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে চালনা করা হয়। সেই টানেলে আল্ট্রা ভায়োলেট রে আর অনেক রকম তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের সাহায্যে সব ক্ষতিকারক ভাইরাসের DNA আর RNA কোড বদলে দেয়া হয়। তাতে সেই ভাইরাস আর মাল্টিপ্লিকেশন করতে পারে না। তাই তার থেকে সংক্রমণও হয়না। তারপর কিছু ওষুধ দিয়ে ওই নিস্ক্রিয় ভাইরাস শরীর থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই বছরেই পৃথিবীর সব মানুষকে স্যানিটাইজ করে ভাইরাস মুক্ত করা হয়েছে।
কাল 1st জানুয়ারি 2070 সাল। আমরা সবাই
নতুন বছরে নতুন সূর্যের অপেক্ষায় আছি।