20-03-2020, 10:59 PM
সিগারেটটা টানছিলাম আনন্দ সিনেমা হলের নিচে দাঁড়িয়ে। অনেক কথাই মনে আসছে। ঢাকার এই জনবহুল জায়গাতেই আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়টা কেটেছে। কোচিং করতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য, থাকতাম এখানকারই একটা মেসে। সে মেসের খাবার যেমন জঘন্য ছিল, তমনি ছিল থাকার পরিবেশ। আমার রুমমেট ছিল এক মাছ ব্যবসায়ী। সে ব্যাটা সারাদিন আড়তে কাটিয়ে রাত দশটায় ফিরে যখন ভোস ভোস করে কমদামী সিগারেট টানত (কোন কোন দিন আকিজ বিড়ি), তখন দম বন্ধ হয়ে আসত আমার। তবে ব্যাটার মনটা ভাল ছিল। দুঃসময়ে অনেকদিন তার কাছে টাকা ধার নিয়েছি। অবশ্য প্রতিবার ধার দেয়ার সময় বলত, “শ্বশুরের ছেলে, টাকা সময় মত না দিতে পারলে কিন্তু ঢাকা থেকে লাত্থি মেরে বের করে দেব!”
ফার্মগেটের কোন মাছ ব্যবসায়ীর কাউকে লাত্থি মেরে শহরছাড়া করানোর ক্ষমতা আছে কিনা জানি না, তবে টাকা আমি তাকে সময়মতই দিতাম।
এভাবেই, কাটিয়ে দিয়েছিলাম এখানে তিনমাস।
কেউ বিশ্বাস করেনি, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাব। উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট ছিল জঘন্য। আমার মত রেজাল্ট ছিল যাদের, তারা তখন এলাকার কলেজে ডিগ্রি পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, আর আমি দূরাশায় ভর করে মেসের অখাদ্য খেয়ে পিঠটান করে পড়ছিলাম। তিনি পরিশ্রমের ফল সত্যিই পাব, এমন আশাও করিনি। সুতরাং চান্স পেয়ে আমার ছাতি যে দুই হাত হয়ে গিয়েছিল, সেটা না বললেও চলে।
এসব কথাই ভাবছিলাম সিগারেটের চিকন পাছা ঠোঁটে ঢুকিয়ে। হঠাত ভাবনায় ছেদ পড়ল এক জনের ডাকে।
“এক্সকিউজ মি, আপনি কি বারুদ?”
এমন জনসমুদ্রে কেউ আমাকে চেনার কথা নয়। তবে যেহেতু এখন আমি একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেই আর সেখানকার ছাত্ররা আমাকে আসল নামে না চিনে ‘বন্ধুদের ঠাট্টা করে দেয়া’ বারুদ নামেই ডাকে সুতরাং সেখানকার কেউই হবে।
ফিরে তাকিয়ে দেখলাম, একজন মধ্য বয়স্কা। অসম্ভব সুন্দরী।
নিজের চেয়ে বয়সে বড় কেউ সামনে এলে স্বভাবতই আমি সিগারেট লুকাই অথবা ফেলে দেই। টিপিকাল বাঙ্গালী মানসিকতা। সিগারেটটা ফেলে পায়ে পিষে মহিলার মুখে ভোস করে একগাল ধোঁয়া ছুড়ে বললাম, “হ্যাঁ, আমি বারুদ। কিছু বলবেন?”
এতক্ষণে বুঝে গিয়েছি, মহিলা আমার কোন ছাত্র অথবা ছাত্রীর মা। খুব বেশি বিনয় দেখালাম না তাই। শিক্ষকসুলভ ভাব ধরে রাখলাম! (পড়াই তো ১৫০ টাকা পার ক্লাস বেতনে একটা যেনতেন কোচিং এ! তার আবার শিক্ষকসুলভ ভাব। চোদন!)
ভদ্র মহিলা বললেন, “আমার মেয়ে নেহা আপনার কোচিং এ পড়ে। আপনার সাথে একটু কথা ছিল।“
ততোক্ষণে আমি টাকার গন্ধ পাওয়া শুরু করেছি। ক্লাস প্রতি মাত্র ১৫০ টাকা দেবে বলে একটু গাইগুই করেছিলাম কোচিংটায় জয়েন করা আগে। এক বড় ভাই ডেকে বলেছিলেন, “আরে ল্যাওড়া, ভাল করে ক্লাস নে, দেখবি অনেকে তোর কাছে প্রাইভেটভাবে পড়তে চাচ্ছে। তখন না হয় তাদের কাছ থেকে টাকা খসিয়ে নিস। কোচিংটা তো হলো টিউশান ধরার ফাঁদ!”
কথাটা মনে ধরেছিল। আজ এই মহিলার আমার সাথে কথা বলতে আসা যে ভাল ক্লাস নেয়ার ডিরেক্ট ফল, সেটা বুঝতে সমস্যা হলো না।
বললাম, “হ্যাঁ, বলুন।“
তিনি বললেন, “আমার মেয়েটা ইংরেজিতে একটু কাঁচা। একটু না, অনেকটাই কাঁচা। আপনি যদি ওকে একটু আলাদাভাবে দেখিয়ে দিতেন, তবে উপকার হত খুব।”
বড় ভাইয়ের কথাটা এমন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাওয়ায়, তার পা ধরে চুমু দিতে ইচ্ছে করছিল।
বললাম, “দেখুন। আমার তো পড়ানোর জায়গা নেই। চাইলেও পড়াতে পারছি না। তাছাড়া সময়ের ব্যাপারটা দেখতে হবে!”
বোকার মত এই কথাটা বলে ফেলেছি বলে নিজেরই নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছে করছে! কী দরকার ছিল ভাব নেয়ার! কেন বললি না, আমার টাকার দরকার, দুর্গন্ধ ড্রেনের উপরে দাঁড়িয়েও আপনার মেয়েকে পড়াতে রাজী আছি!
এখন যদি ভেস্তে যায়?
কিন্তু আমার কপাল বোধহয় ভালই। বললেন তিনি, “জায়গা নিয়ে চিন্তা নেই। আমাদের বাসায় এসে পড়াতে পারবেন আপনি। আপনি দেখুন না চেষ্টা করে একটু!”
আমার তখনই মহিলাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলতে ইচ্ছে করছিল, “আমি রাজী। আজ থেকে, এখন থেকেই আপনার মেয়েকে পড়াতে পারি!”
এসব না বলে বললাম, “আচ্ছা। আপনার নাম্বারটা আমাকে দিন। আমি রাতে আপনাকে জানিয়ে দেব পড়ার কিনা!”
তিনি নাম্বার দিয়ে নামটা ফারজানা নামে সেভ করতে বললেন। আমি সেভ করে তাকে একটা কল দিয়ে বললাম, “এটা আমার নাম্বার। যদি, রাতে আমি কল দিতে ভুলে যাই, তবে একবার কল দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেবেন!”
ভদ্রমহিলা মাথা ঝুঁকিয়ে চলে গেলেন।
আমি আবার একটা সিগারেট লাগিয়ে ভাবতে লাগলাম। ভদ্রমহিলার বয়স ৩৫ থেকে চল্লিশের মধ্যে। সুন্দরী। নেহা, তার মেয়ে, কার কাছ থেকে এত সৌন্দর্য পেয়েছে, সেটা জানতে পিএইচডি করতে হয় না। দেখেই বোঝা যায়, তারা সম্পদশালী। তিনি যে লকেটটা গলায় ঝুলিয়েছেন, যেটা ঝুলতে ঝুলতে তার স্তনের খাঁজে আটকে ছিল, সেটার দাম দিয়ে আমার ছয় মাসের খাওয়াখরচ চলে যাবে। হাতে সোনার বালা, পরনে দামি শাড়ি- বড়লোকের বৌ না হয়ে যায়ই না।
টাকা খসানোর জন্য এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?
মনের সুখে, অর্ধেক খেয়েই সিগারেটটা ফেলে দিলাম। সিগারেট আমার দুঃখদিনের সাথী, আজ এই সুখের দিনে, যেদিনে টাকা আসার পথ পেয়েছি, সেদিন সিগারেট টানব কেন?
রাতে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম, নেহাকে আমি পড়াব। সপ্তাহে তিনদিন পড়াব আর আমাকে মাসে সাত হাজার করে দিতে হবে। ফারজানা তাতেই রাজী হলেন। আমি আগামীকাল পড়াতে যাব বলে ওদের বাসার ঠিকানা নিলাম।
২
ধানমন্দি ৩২ এ ফারজানার বাসা খুঁজে পেতে আমাকে অনেকটা নাজেহালই হতে হল। শেষে ফারজানা নিজের এসে আমাকে বঙ্গবন্ধুর বাসার সামনে থেকে নিয়ে গেলেন।
যাওয়ার পথে যেসব কথা হলো, তা নিম্নরূপ-
“তোমাকে তুমি করেই বলি, বারুদ। কিছু মনে করো না।”
“না না, কিছু মনে করব কেন। আপনি তুমি করেই বলুন আমাকে।”
“ভার্সিটি থেকে এখানে আসতে কতক্ষণ লাগল তোমার? যা জ্যাম!”
“এই ২০ মিনিটের মত। জ্যাম না থাকলে তো বাসে এটা পাঁচ মিনিটের রাস্তা!”
“ঢাকার এই জ্যামটাই আমার অসহ্য লাগে! জ্যামের ভয়ে আমি নেহার সাথে আসতেই চাইনি এখানে!”
“মানে? আপনারা ঢাকার স্থানীয় নন?”
“না রে, ভাই। আমাদের বাসা পাবনা। মেয়েটা বড্ড বেখেয়ালি। ওকে একা ছাড়তে পারি? ভাবলাম, তিন মাস কষ্ট করে থেকেই যাবো!”
“আর যদি মেয়ে চান্স পেয়ে যায়? তখন তো ওকে একা ঢাকায় থাকতেই হবে। তখন কী করবেন?”
“তখনকারটা তখন দেখা যাবে। তাছাড়া ও তো হলে থাকবে তখন যদি চান্স পেয়ে যায়। সমস্যা হবে না।”
এসব বলতে বলতেই ওদের বাসায় চলে এলাম। একটা চিপা গলির ভেতর চারতলা ঝকঝকে ফ্লার্ট। আক্ষরিক অর্থের মধ্যবিত্তদের জায়গা এই ধানমন্ডি, যারা গুলশান বনানীতে থাকার সামর্থ্য রাখে না, তারাই আজিমপুরের কলোনিতে না থেকে এখানে বাসা নেয়। ফ্লাটটা মাত্র দুই রুমের। তিনমাস থাকবে বলে আসবাব বিশেষ নেই। যে রুমে নেহা থাকে, সেটায় একটা খাট আর পড়ার টেবিল আর ফারজানার রুমে একটা খাট ছাড়া কিচ্ছু নেই- অন্তত আমি নেহার রুম থেকে দেখতে পারিনি অন্য কিছু। অনেকটা হোটেল হোটেল ভাব।
আমাকে নেহার রুমেই বসতে দেয়া হলো। ফারজানা আমাকে কিছু ড্রাইকেক দিয়ে গেলেন এক গ্লাস পানি সহ। আমি পড়ানো শুরু করলাম বিস্কুট খুটুস খুটুস করে চিবোতে চিবোতে।
নেহাকে শুধু ইংরেজিতে কাঁচাই না, মারাত্মক রকমের কাঁচা। এই ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে সে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে, সেটা একটা বিস্ময়। চান্স পাক বা না পাক আমাকে পড়িয়ে যেতেই হবে। সাত হাজার টাকা তো আর কম নয়!
দেড় ঘণ্টা পড়িয়ে সেদিন খান্ত দিলাম। এভাবেই চলল কয়েকদিন। আমি একদিন পরপর পড়াই। মেয়েটা ভয়ঙ্কর অধ্যবসায়ী। যা পড়া দেই নিখুঁতভাবে পড়ে রাখে। এতদিন নির্ঘাত ভালভাবে পড়েনি। পড়লে, যে ইংরেজিটুকু জানলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ২৫ মার্কের ইংরেজি প্রশ্নে ভালভাবে পাস করা যায়, সেটা নিয়ে সমস্যা হত না।
নেহার আগ্রহ দেখে আমিও ভালভাবেই পড়ানো শুরু করলাম।
এর মধ্যে ফারজানার সাথেও বেশ ভাব হয়ে গিয়েছে। তিনি গৃহিণী কিন্তু মন মানসিকতায় অনেক আধুনিক। আমার সাথে বেশ খোলামেলাই আচরণ করেন। তার আগ্রহ সিনেমায়। আমিও বেশ সিনেমাখোর। আমার সাথে প্রায়ই সিনেমা নিয়ে কথা হয়। একদিন তাকে আমার পছন্দের বেশ কিছু সিনেমার নাম সাজেস্ট করলাম। ভদ্রমহিলা তিনদিনের মোটামোটি ১০ টার মত সিনেমা দেখে আমাকে তাক লাগিয়ে দিলেন! উল্লেখ্য, আমার লিস্টে কেট উইন্সলেট অভিনীত ‘দ্য রিডার’ সিনেমাটিও ছিল!
একদিন নেহাকে পড়ানো শেষে ফারজানার দেয়া বিস্কুট আর চা খাচ্ছিলাম। এই সময়ে ভদ্রমহিলা আমার সাথে বিভিন্ন আলোচনা করেন। নেহার লেখাপড়া, আমার লেখাপড়া, নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে ইত্যাদি। গল্প করার সময়, আমি প্রতিদিন তার রুপের প্রশংসা করি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে!
কিন্তু আজ এলেন না গল্প করতে। বিস্কুট দিয়েই চলে গেলেন নিজের রুমে।
আমার চা শেষ হতেই ফারজানা আমাকে পাশের রুমে ডাকলেন। এভাবে কোনদিন তিনি আমাকে ডাকেননি। কোন কথা থাকলে, নেহার রুমে এসেই বলতেন। তাই অবাক হলাম কিছুটা।
নেহার রুম থেকে আমি শুধু বিছানাটাই দেখতে পেতাম। ঘরে ঢুকে দেখি,
সেখানে খাটের সাথে রীতিমত একটা টেবিল আর দামি ওয়ারড্রোবও আছে।
ফারজানার রুমটা পশ্চিম দিকে। তাই শেষ বিকেলের রোড এলুমিনিয়াম গ্লাস ভেদ করে তার বিছানায় এসে পড়েছে।
হঠাত টেবিলে চোখ পড়তেই দেখলাম, একটা কন্ট্রাতিনিপ্টিক পিলের প্যাকেট! ভদ্রমহিলার স্বামী হয়ত নিয়মিত এসে চোদেন, তাই এই ব্যবস্থা। কিন্তু মেয়ে বড় হয়েছে, রীতিমত উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে, তার চোখের সামনেই পিলের প্যকেটটা রাখে কি ঠিক করেছেন তিনি? আর দুই ঘরের মাঝে কোন দরজা পর্যন্ত নেই। ভদ্রমহিলার স্বামী এসে চোদেন কীকরে? তাদের শীতকার নেহার কানে যায় না?
নানান প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
ঘরে কোন চেয়ার ছিল না। আমি বিছানাতেই বসলাম তার পাশে।
“বারুদ, কিছু মনে করো না। একটা কাজ করে দিতে হবে তোমাকে!”
আগ্রহী হয়ে বললাম, “না না, বলুন। কিছু মনে করব না!”
বললেন, “আমাকে একটু নিউমার্কেট নিয়ে যেতে পারবে? নতুন এসেছি, কিচ্ছু চিনি না! কিছু জিনিস কেনাকাটা করা দরকার।”
আমি সাসন্দে রাজী হলাম। ফারজানা সুন্দরী। যতটা সুন্দরী হলে, রাস্তা দিয়ে শুধু হেঁটেই শতজনের নজর কড়া যায়, ততোটা সুন্দরী। এই আধমাসে আমি তার শরীরের প্রতিটা বাঁক দেখেছি। কদবেলের মত তার ভরাট স্তন, ব্লাউজের ভেতরে ‘বাঁধ দেয়া’ কর্ণফুলি- ছেড়ে দিলেই ভাসিয়ে দেবে সব আর তার স্তনের ঘর্ষণে উতপন্ন হবে জলবিদ্যুত। যে কোন পুরুষই তার সাথে শপিং এ যেতে চাইবে!
ফারজানা বললেন, “তুমি নেহার রুমে বসো। আমি এক্ষুণি কাপড় পরে তৈরি হয়ে নিচ্ছি।”
ফারজানা পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটা কুচকুচে কালো শাড়ি পরে বেরিয়ে এল।
আমি কোন নারীকে এত তাড়াতাড়ি সাজতে দেখিনি। ধপধপে সাদা শরীরের সঙ্গে কালো শাড়িটা মানিয়েছে দারুণ। যেন চিত্রকর্মের পশ্চাৎপট। ফারজানা তিনিই ব্যাকগ্রাউন্ডে ভেনাস। শুধু ভেনাতিনির মত ন্যুড নয়, কালো শাড়িতে আবৃত তার দেহ। সাদা মেরুন ব্রার স্ট্রাপ তার ধপধপে কাঁধে চেপ্টে বতিনিছে। ঠিক স্ট্রাপের পাশেই একটা কালো তিল- সাদা পাতায় কলমের একবিন্দু ফোঁটা যেন। ফারজানার শরতের মেঘের মত হাতে আলতো কালো চুলের রেখা। রেখাটা ঠিক যেখানে তিনিখানেই ব্লাউজের হাতা। হাতাটা যেন কেটে বতিনিছে মাংস। শ্লা, দেখার মত সিনই বটে।
আমি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেই ফেললাম, “আপনার সাজতে তো একটুও সময় লাগে না! পাঁচ মিনিটেই জয়া আহসান হয়ে বেরিয়ে এলেন!”
“কী যে বলো না! কোথায় আমি আর কোথায় জয়া আহসান! আর সাজলামই বা কি। শুধু শাড়িটাই পড়েছি!”
মেয়েরা প্রশংসা পছন্দ করে, যে কোন বয়সেই। বললাম, “আপনি প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরী। আপনাকে তাই সাজতে হয় না!”
ফারজানা হয়ত লজ্জা পেল, নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন, “চল, দেরী হয়ে যাচ্ছে!”
মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “নেহা। তুই থাক। তোকে নিয়ে যাচ্ছি না। তুই পড়। একা লাগলে বা ভয় লাগলে কল দিস। সটান চলে আসব!”
আমার খেয়ালই ছিল না, নেহা ঘরে আছে। তার সামনেই তার মায়ের প্রশংসা করলাম এমন প্রেমিকের মত!
নেহা অনেকটা বিবস নয়নে তাকিয়ে আছে সামনে ধরা বইয়ের দিকে। বুঝলাম, আমাদের এতক্ষণে কথোপকথন কানে যায়নি তার। নাকি গিয়েছে? তিনি না শোনার ভান করে নেই তো?
গেলেই বা আমি কী করব? উপদেশ দেয়ার মত করে বললাম, “বইয়ের এক্সারসাইজগুলো সব করে ফেল! আমি এসে পরীক্ষা নেব কিন্তু পরদিন।”
নেহা মাথা নাড়িয়ে জানালো, তিনি ভালভাবেই পড়বে।
ফারজানার বাসাটা একটা গলির ভিতরে। একারণেই প্রথম দিন এসে খুঁজে পাইনি।
দিনের বেলায়ও খানিকটা অন্ধকার। চিকন গলি বলে পাশাপাশি হাঁটলে গায়ে গা লেগে যায়। কয়েকবার ফারজানার হাতে হাত লেগে গেল আমার। একবার কনুইটা আলতো করে তার নরম স্তনেও লাগল না? ঠিক বুঝতে পারিনি!
আমি একটু পিছিয়ে তাকে সামনে হাঁটতে দিলাম। লেডিস ফার্স্ট! পিছন থেকে তার পাচার হাঁটার ছন্দে দুলে যাওয়াটাও দেখা যাবে।
নিচে এসে, আমরা সিএনজি নিলাম একটা। ফারজানাকে আগে ঢুকতে দিয়ে আমি পরে ঢুকলাম সিএনজির ভেতর।
ফারজানা বললেন, “আমার সিএনজি চাপতে বেশ ভাল লাগে। বেশ আঁটসাঁট, না?”
আমাদের গায়ে গা লেগে যাচ্ছে। আমি আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় বাম হাতে নিয়ে গিয়েছি আমার যেটা লেগে আছে ফারজানার ডান হাতে। ফারজানার মাংসল হাতটা অসম্ভব নরম। আমার গায়ে যেন কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
বললাম, “হ্যাঁ। বিশেষ করে প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য!”
একটু বোল্ড খেললাম। মাঝেমাঝে রিস্ক নিয়ে ক্রিস থেকে বেড়িয়ে ব্যাটসম্যানদের হিট নিতে হয়! লাগলে ছক্কা নয়ত স্ট্যাম্পিং এর ক্ষপরে পড়ে সোজা প্যাভিলিয়ন।
ফারজানা বললেন, “প্রেমিকাকে নিয়ে সিএনজিতে ঘোর তবে? তোমাদেরই তো বয়স। এই বয়সে একটু রঙ গায়ে না লাগালে চলে?”
ছক্কাই হয়েছে। আপাতত প্যাভিলিয়নে ফিরতে হচ্ছে না!
বললাম, আরেকটু সাহসী হয়ে, “আপনার সময়ও তো চলে যায়নি। স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে পারেন তো!”
ফারজানা কোথায় বেশ পটু! সাথেসাথেই জবাব দিলেন, “স্বামী তো আছে ঘরে। তাকে নিয়ে সিএনজিতে বতিনি প্রেম করব কেন!”
মুচকি হেসে ওনার দিকে একটু হেলে বললাম, “তাই বুঝি? সিএনজিতে ঘোরার জন্য তবে কাউকে জুটিয়ে নিন না! যে কেউ আপনার প্রেমিক হতে চাইবে!”
দুখী দুখী মুখ করে বললেন, “কে আর এই বয়সে আমার সাথে প্রেম করবে বল! আমি কি আর সুইট সিক্সটিনে আছি নাকি এখনও?”
বুঝলাম, আরেকটু সাহসী হলে সমস্যা নেই।
তাছাড়া আমি প্রশংসাই করছি তার, রেগে গিয়ে বেঁকে বসার চান্স নেই।
“আপনি আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের একজন। তখন জয়া আহসানের তুলনা দিলাম না? একটুও ভুল করিনি তুলনা দিতে। তিনি কোন দিক থেকেই আপনার চেয়ে সুন্দরী নয়। বয়স জিজ্ঞেস করা যায় না মেয়েদের, তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করছি না। কিন্তু আপনি তার চেয়ে কম বয়সী, এটা আমি নিশ্চিত। জয়ার বয়স কিন্তু ৪৫!”
“আমার ৩৯ চলছে। তবে আমি জয়ার বয়সে যেতে যেতে বুড়ি হয়ে যাবো!”
আমি এবার জোরের সাথে বললাম, তার চোখে চোখ রেখে, “আমার মনে হয় না। আপনার এই সৌন্দর্য মাত্র ৫ বছরেই শেষ হয়ে যাবে না। আমি হলফ করে বলতে পারি, আপনি ৫০/৫৫ পর্যন্ত ছেলেদের মাথা ঘুরিয়ে দেবার সামর্থ রাখবেন!”
ফারজানা বললেন, “হয়েছে। আর বলতে হবে না। বিয়ের পর এভাবে আমাকে কেউ কোনদিন বলেনি। তোমার কথা শুনে নিজের কিশোরীবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে!”
বললাম, “অনেকেই বলতে চেয়েছে, হয়ত পারেনি। সবাই তো আর আপনার সাথে এভাবে সিএনজিতে ঘোরার সুযোগ পায় না!”
ফারজানা কিছু না বলে ঠোঁট গোল করে বললেন, “ইসসসস!”
“সত্যি বলছি। আপনাকে মিথ্যে বলব কেন?”
“আচ্ছা বাবা ঠিকাছে। আমি জয়া আহসানের চেয়ে বেশি সুন্দরী, মানলাম!”
“মানতেই হবে। আপনি নিজেও জানেন, আপনি কতটা সুন্দরী, তাই না?”
“হা হা। বুঝি আমি সুন্দরী কিন্তু কতটা বুঝি না!”
“একটু আপনার আশেপাশের পুরুষদের চোখে ভাষা পড়ে দেখুন। বুঝে যাবেন!”
“কবির মত কথা বলো না তো, বারুদ! আমি কিশোরী হলে তো পটেই যেতাম তোমার কথায়!”
“সেটা আমার বিশাল সৌভাগ্য হত!”
সাইন্সল্যাবে এসে সিএনজি আটকা পড়ল জ্যামে। বিশ্রি অবস্থা। আমাদের সিএনজির পাশে একটা বোটকা মহিষের মত ট্রাক থেমে কালো ধোঁয়া ছাড়ছে। এমন ট্রাকের রোড পারমিশন থাকাই উচিত নয়। তাও চালিয়ে যাচ্ছে অলস আর দুর্নীতিবাজ কিছু আমলা আর সরকারি চাকুরের কারণে।
দেখলাম, ফারজানার মুখ লাল হয়ে গেছে।
দরদর করে ঘামছে। ভাগ্যিস ট্রাকটা একটু ফাঁক পেয়ে সামনে চলে গেল! না হলে দম বন্ধ হয়ে মরত এখানেই!
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “এই, আপনি ঠিক আছেন তো?”
কপালের ঘাম মুছে বললেন, “হ্যাঁ। ঠিক আছি। এসবের কারণেই ঢাকা আসতে ইচ্ছে করে না, জানো?”
এর জবাবে কিছু বলার নাই। শহরটা আসলেই নরকে পরিণত হয়েছে। অনেকটা ব্যাটম্যানের “গোথাম” এর মত।
আমি পকেট থেকে টিস্যুপেপার বের করে সাহস করে তার কপালের ঘামটুকু মুছে দিলাম। ফারজানা বাঁধা দিল না। তার গলায় কয়েক ফোঁটা ঘাম। ইচ্ছে হলো, তিনিগুলোয় টিস্যু দিয়ে মুছে দেই। কিন্তু খুব বেশি হয়ে যাবে ভেবে দিলাম না।
জ্যাম ছাড়তেই ফারজানা বললেন, “তোমার প্রেমিকা খুব হ্যাপি হবে!”
হঠাত প্রেমিকার কথা বললেন কেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “যেভাবে ঘমটা মুছে দিলে! অনেক কেয়ারিং তুমি!”
বললাম, “আপনার মত কেউ পাশে বসলে যে কেউ কেয়ারিং হতে পারে, ম্যাম!”
লজ্জা পেয়ে বললেন, “যাহ। আর বলো না তো!
আমরা নিউ মার্কেটে এসে গেলাম। প্রচণ্ড ভীড়। পা ফেলার জায়গা নেই। আমি খুব দরকার না হলে নিউমার্কেটে আসি না। কথায় আছে, সুন্দরীর দোহাই, বড়
দেনা। না এসে পারলাম না।
অনেক ঘুরে অনেক ভীড় ঠেলে, এর ওর গায়ে পড়ে ঘণ্টাদুয়েক হতাশ ঘুরে ফারজানা একটা শাড়ি, এক জোড়া কানের দুল, একটা নেইল কাটার আর একটা বেড শিট কিনলেন। আমরা চালতার আঁচার খেলাম ভীড়েই দাঁড়িয়ে।
তারপর তিনি আমাকে বললেন, “তুমি এখানে দাঁড়াও, আমি আসছি!”
বললাম, “কোথায় যাচ্ছেন? অনেক ভীড়। পরে আমাকে খুঁজে পেতে আপনার সমস্যা হবে!”
“যেখানে যাচ্ছি সেখানে তোমাকে নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা ভাবছি। আচ্ছা চলই না! আর আমি এসব জায়গা চিনিও না!”
বললাম, “কোথায় যেতে চাচ্ছেন বলুন তো!”
লাজুক হেসে, গোপন কথা বলার মত করে বললেন, “আচ্ছা, ব্রা কোথায় পাওয়া যায়, জানো?”
আমি হেসে বললাম, “জানব না কেন? আমি আমার গফকে নিয়ে আগেও এসেছি। আর আমার যাওয়া নিয়ে কোন প্রব্লেম নেই। ছেলেরাও সেসব দোকানে সাথে যেতে পারে।”
বলেই আমি হাঁটা দিলাম। ফারজানা আমাকে ফলো করা শুরু করলেন।
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ২য় তালায় অনেকগুলা ব্রা’র দোকান। ঢুকে পড়লাম সেগলোর একটায়। দোকানটায় কোন মেয়ে নেই। পুরুষই বিক্রি করে এসব। ফারজানার দেখলাম, সেসব নিয়ে সমস্যা নেই।
দোকানদারকে বললেন, “৩৬ সাইজে ব্রা দাওতো!”
আমি তার একদম পাশেই গা ঘেষে দাঁড়িয়ে ছিলাম পিছনে। আমি তার চেয়ে লম্বা বলে পিছন থেকে তার স্তনের খাঁজ দেখতে পাচ্ছি। সুগভীর একটা খাদ যে। একটা লকেট স্তনের খাঁজে আটকে আছে। দোকানের উজ্জ্বল আলোয় সাইন করছে লকেটটা।
দোকানদার বললেন, “সাধারণ ব্রা না স্পোর্টস ব্রা দেব, ম্যাম? আপনাকে স্পোর্টস ব্রা খুব মানাবে, ম্যাম!”’
আমি ফারজানাকে বললাম পিছন থেকে, “স্পোর্টস ব্রা কি?”
আমার দিকে ঘুরে বললেন, “খেলোয়াররা যেসব ব্রা পরে। মারিয়া সারাপোভা, সানিয়া মির্জা এরা পরে।”
আমি এই সুযোগে ওর সুস্পষ্ট স্তনের দিকে চোখ রেখে বললাম, “আসলেই আপনাকে মানাবে। স্পোর্টস ব্রাই কিনুন!”
দোকানদার তাকে দুই জোড়া স্পোর্টস ব্রা দিল ট্রায়াল দেয়ার জন্য। ফারজানা ট্রায়াল রুমে গিয়ে পরে দেখে ফিরে এসে বললেন, “হচ্ছে না। সাইজ মিলছে না!”
দোকানদার বললেন, “আপনার সাইজটা আরেকবার মেপে দেখব, ম্যাম?”
ফারজানা মাথা ঝুঁকিয়ে সমর্থন দিল।
দোকানদার ফারজানার পিছনে গিয়ে ফিতা দিয়ে মাপ দিলে ফারজানার স্তন। পুরো সময়টা ফারজানা মাথা নিচু করে ছিলেন। আমি দেখলাম, মাপ নেয়ার সময় দোকানদার ওর স্তন দুই একবার ইচ্ছে করেই ছুয়ে দিল। ওর হাত আঙ্গুল ফারজানার স্তনের মাংশে ডুবে গিয়েছিল কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের জন্য। স্পষ্টই দেখলাম। ফারজানা কিছু বললেন না এতে। মুখেও কোন বিরক্তির ছাপ নেই। হয়ত কিছু বলে তিনি সিন ক্রিয়েট করতে চাননি।
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা, কোন রঙের কিনি বলতো?”
আমি কাছে গিয়ে কানের কাছে বললাম, “যে দেখবে, তাকেই জিজ্ঞেস করুন না!”
ফারজানা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললেন, “খুব দুষ্ট হয়েছো! আমাদের বিয়ের কত বছর হলো জানো? এখন তাকে ফোন দিয়ে যদি জিজ্ঞেস করি, কোন রঙের ব্রা কিনব, তিনি তো হেসেই খুব হয়ে যাবে!”
কপট সমবেদনা জানিয়ে বললাম, “ইসস! আপনি আমার স্ত্রী হলে, আপনার জন্য আমি নিজেই ব্রা কিনে নিয়ে গিয়ে পরিয়ে দিতাম! আপনার ভাগ্যটা ভাল না জানেন! আমি আরেকটু বড় হলে, আপনার জীবনটা আরো সুখের হত!”
ফারজানাও কপট রাগের সুরে বললেন, “হুম। অনেক কিছু ভাবছো দেখছি ইদানিং। তাড়াতাড়ি বলো, কোন কালারের ব্রা কিনব!”
আমি আবার তাকালাম ফারজানার সুপুষ্ট স্তনের দিকে। আমি ওর একবারেই কাছে, তিনি নিজেও বুঝতে পারছে আমি ওর স্তন দেখছি। বললাম, “আপনি ফর্সা অনেক। কালো ব্রা’ই কিনুন!”
দোকানদার এতক্ষণ আমাদের কথায় কান পেতে ছিল, আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। তিনি বললেন, “আচ্ছা ম্যাম, কালো ব্রা’ই দিচ্ছি তবে!”
দোনাকদারের ঠোঁটে অশ্লীল এক হাসি। ফারজানা লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকাল।
আমরা ব্রা নিয়ে বেড়িয়ে এলাম।
বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে এলাম আমরা কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত। হঠাত ফারজানা বললেন, “আচ্ছা, তুমি সিগারেট খাও
সেদিন দেখলাম। আজ খাচ্ছো না যে?”
বললাম, “সুন্দরী কোন নারী পাশে থাকলে, কেই বা সিগারেট খেতে চায়!”
ফারজানা হেসে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বললেন, “আহা। মন ভরে গেল শুনে! খাও না একটা সিগারেট। আমার সিগারেটের ঘ্রাণ খুব ভাল লাগে!”
বললাম, “তাই নাকি! প্রথম কোন নারীকে এই কথা বলতে শুনলাম! তা গন্ধ শুঁকবেন কেন? নিজেই টেনে দেখুন না!”
“আরে নাহ! কে কী বলবে দেখে!”
“কে আপনাকে চেনে এখানে? আর ঢাকার মেয়েরা প্রচুর স্মোক করে। আমার এক বান্ধবী তো গাঁজা পর্যন্ত খায়! ওরা পারলে আপনি পারবেন না কেন?”
ফারজানা আমার যুক্তি শুনে রাজী হলেন। সাধারণত আমি গোল্ডলিফ খাই। বাংলাদেশে গোল্ডলিফের চেয়ে ভাল সিগারেট নেই অন্তত। কিন্তু এত কড়া সিগারেট খাওয়ানো যাবে না ফারজানাকে। তাই আমি গোল্ডলিফ ধরিয়ে তার মুখে একটা ব্লাক ধরিয়ে দিলাম। ব্লাক খুব হালকা সিগারেট। তামাকের চেয়ে সেটায় তেজপাতার ফ্লেভার বেশি।
ফারজানা কয়েকটা টান দিয়ে বললেন, “এই বারুদ। এটা তো সিগারেটের মত লাগছেই না। তোমারটার কী পুরুষালি গন্ধ আর এটার এমন তেজপাতার মত গন্ধ কেন?”
বুঝলাম, মালের কড়া মাল চাই। ওর হাত থেকে ব্লাকটা নিয়ে পায়ে পিষে নিজের গোল্ডলিফটা নিজ হাতে ওর ঠোঁটে গুঁজে দিলাম। গুঁজে দেয়ার সময় ফারজানার ঠোঁটের ছোঁয়া পেলাম হাতে।
আমি সিগারেট গুঁজে দেয়ার সময় ও কেমন পাখির বাচ্চার মত ঠোঁটটা ফাঁক করেছিলেন।
ফারজানা দুইটা টান দিয়েই কাশতে আরম্ভ করলেন। আমি তোর কাছ থেকে সিগারেটটা কেড়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। তাও আর কাশি থামছিল না। আমি অনেকক্ষণ ধরে থাকলাম তাকে বাম হাতে জড়িয়ে!
ফার্মগেটের কোন মাছ ব্যবসায়ীর কাউকে লাত্থি মেরে শহরছাড়া করানোর ক্ষমতা আছে কিনা জানি না, তবে টাকা আমি তাকে সময়মতই দিতাম।
এভাবেই, কাটিয়ে দিয়েছিলাম এখানে তিনমাস।
কেউ বিশ্বাস করেনি, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাব। উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট ছিল জঘন্য। আমার মত রেজাল্ট ছিল যাদের, তারা তখন এলাকার কলেজে ডিগ্রি পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, আর আমি দূরাশায় ভর করে মেসের অখাদ্য খেয়ে পিঠটান করে পড়ছিলাম। তিনি পরিশ্রমের ফল সত্যিই পাব, এমন আশাও করিনি। সুতরাং চান্স পেয়ে আমার ছাতি যে দুই হাত হয়ে গিয়েছিল, সেটা না বললেও চলে।
এসব কথাই ভাবছিলাম সিগারেটের চিকন পাছা ঠোঁটে ঢুকিয়ে। হঠাত ভাবনায় ছেদ পড়ল এক জনের ডাকে।
“এক্সকিউজ মি, আপনি কি বারুদ?”
এমন জনসমুদ্রে কেউ আমাকে চেনার কথা নয়। তবে যেহেতু এখন আমি একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেই আর সেখানকার ছাত্ররা আমাকে আসল নামে না চিনে ‘বন্ধুদের ঠাট্টা করে দেয়া’ বারুদ নামেই ডাকে সুতরাং সেখানকার কেউই হবে।
ফিরে তাকিয়ে দেখলাম, একজন মধ্য বয়স্কা। অসম্ভব সুন্দরী।
নিজের চেয়ে বয়সে বড় কেউ সামনে এলে স্বভাবতই আমি সিগারেট লুকাই অথবা ফেলে দেই। টিপিকাল বাঙ্গালী মানসিকতা। সিগারেটটা ফেলে পায়ে পিষে মহিলার মুখে ভোস করে একগাল ধোঁয়া ছুড়ে বললাম, “হ্যাঁ, আমি বারুদ। কিছু বলবেন?”
এতক্ষণে বুঝে গিয়েছি, মহিলা আমার কোন ছাত্র অথবা ছাত্রীর মা। খুব বেশি বিনয় দেখালাম না তাই। শিক্ষকসুলভ ভাব ধরে রাখলাম! (পড়াই তো ১৫০ টাকা পার ক্লাস বেতনে একটা যেনতেন কোচিং এ! তার আবার শিক্ষকসুলভ ভাব। চোদন!)
ভদ্র মহিলা বললেন, “আমার মেয়ে নেহা আপনার কোচিং এ পড়ে। আপনার সাথে একটু কথা ছিল।“
ততোক্ষণে আমি টাকার গন্ধ পাওয়া শুরু করেছি। ক্লাস প্রতি মাত্র ১৫০ টাকা দেবে বলে একটু গাইগুই করেছিলাম কোচিংটায় জয়েন করা আগে। এক বড় ভাই ডেকে বলেছিলেন, “আরে ল্যাওড়া, ভাল করে ক্লাস নে, দেখবি অনেকে তোর কাছে প্রাইভেটভাবে পড়তে চাচ্ছে। তখন না হয় তাদের কাছ থেকে টাকা খসিয়ে নিস। কোচিংটা তো হলো টিউশান ধরার ফাঁদ!”
কথাটা মনে ধরেছিল। আজ এই মহিলার আমার সাথে কথা বলতে আসা যে ভাল ক্লাস নেয়ার ডিরেক্ট ফল, সেটা বুঝতে সমস্যা হলো না।
বললাম, “হ্যাঁ, বলুন।“
তিনি বললেন, “আমার মেয়েটা ইংরেজিতে একটু কাঁচা। একটু না, অনেকটাই কাঁচা। আপনি যদি ওকে একটু আলাদাভাবে দেখিয়ে দিতেন, তবে উপকার হত খুব।”
বড় ভাইয়ের কথাটা এমন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাওয়ায়, তার পা ধরে চুমু দিতে ইচ্ছে করছিল।
বললাম, “দেখুন। আমার তো পড়ানোর জায়গা নেই। চাইলেও পড়াতে পারছি না। তাছাড়া সময়ের ব্যাপারটা দেখতে হবে!”
বোকার মত এই কথাটা বলে ফেলেছি বলে নিজেরই নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছে করছে! কী দরকার ছিল ভাব নেয়ার! কেন বললি না, আমার টাকার দরকার, দুর্গন্ধ ড্রেনের উপরে দাঁড়িয়েও আপনার মেয়েকে পড়াতে রাজী আছি!
এখন যদি ভেস্তে যায়?
কিন্তু আমার কপাল বোধহয় ভালই। বললেন তিনি, “জায়গা নিয়ে চিন্তা নেই। আমাদের বাসায় এসে পড়াতে পারবেন আপনি। আপনি দেখুন না চেষ্টা করে একটু!”
আমার তখনই মহিলাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলতে ইচ্ছে করছিল, “আমি রাজী। আজ থেকে, এখন থেকেই আপনার মেয়েকে পড়াতে পারি!”
এসব না বলে বললাম, “আচ্ছা। আপনার নাম্বারটা আমাকে দিন। আমি রাতে আপনাকে জানিয়ে দেব পড়ার কিনা!”
তিনি নাম্বার দিয়ে নামটা ফারজানা নামে সেভ করতে বললেন। আমি সেভ করে তাকে একটা কল দিয়ে বললাম, “এটা আমার নাম্বার। যদি, রাতে আমি কল দিতে ভুলে যাই, তবে একবার কল দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেবেন!”
ভদ্রমহিলা মাথা ঝুঁকিয়ে চলে গেলেন।
আমি আবার একটা সিগারেট লাগিয়ে ভাবতে লাগলাম। ভদ্রমহিলার বয়স ৩৫ থেকে চল্লিশের মধ্যে। সুন্দরী। নেহা, তার মেয়ে, কার কাছ থেকে এত সৌন্দর্য পেয়েছে, সেটা জানতে পিএইচডি করতে হয় না। দেখেই বোঝা যায়, তারা সম্পদশালী। তিনি যে লকেটটা গলায় ঝুলিয়েছেন, যেটা ঝুলতে ঝুলতে তার স্তনের খাঁজে আটকে ছিল, সেটার দাম দিয়ে আমার ছয় মাসের খাওয়াখরচ চলে যাবে। হাতে সোনার বালা, পরনে দামি শাড়ি- বড়লোকের বৌ না হয়ে যায়ই না।
টাকা খসানোর জন্য এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?
মনের সুখে, অর্ধেক খেয়েই সিগারেটটা ফেলে দিলাম। সিগারেট আমার দুঃখদিনের সাথী, আজ এই সুখের দিনে, যেদিনে টাকা আসার পথ পেয়েছি, সেদিন সিগারেট টানব কেন?
রাতে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম, নেহাকে আমি পড়াব। সপ্তাহে তিনদিন পড়াব আর আমাকে মাসে সাত হাজার করে দিতে হবে। ফারজানা তাতেই রাজী হলেন। আমি আগামীকাল পড়াতে যাব বলে ওদের বাসার ঠিকানা নিলাম।
২
ধানমন্দি ৩২ এ ফারজানার বাসা খুঁজে পেতে আমাকে অনেকটা নাজেহালই হতে হল। শেষে ফারজানা নিজের এসে আমাকে বঙ্গবন্ধুর বাসার সামনে থেকে নিয়ে গেলেন।
যাওয়ার পথে যেসব কথা হলো, তা নিম্নরূপ-
“তোমাকে তুমি করেই বলি, বারুদ। কিছু মনে করো না।”
“না না, কিছু মনে করব কেন। আপনি তুমি করেই বলুন আমাকে।”
“ভার্সিটি থেকে এখানে আসতে কতক্ষণ লাগল তোমার? যা জ্যাম!”
“এই ২০ মিনিটের মত। জ্যাম না থাকলে তো বাসে এটা পাঁচ মিনিটের রাস্তা!”
“ঢাকার এই জ্যামটাই আমার অসহ্য লাগে! জ্যামের ভয়ে আমি নেহার সাথে আসতেই চাইনি এখানে!”
“মানে? আপনারা ঢাকার স্থানীয় নন?”
“না রে, ভাই। আমাদের বাসা পাবনা। মেয়েটা বড্ড বেখেয়ালি। ওকে একা ছাড়তে পারি? ভাবলাম, তিন মাস কষ্ট করে থেকেই যাবো!”
“আর যদি মেয়ে চান্স পেয়ে যায়? তখন তো ওকে একা ঢাকায় থাকতেই হবে। তখন কী করবেন?”
“তখনকারটা তখন দেখা যাবে। তাছাড়া ও তো হলে থাকবে তখন যদি চান্স পেয়ে যায়। সমস্যা হবে না।”
এসব বলতে বলতেই ওদের বাসায় চলে এলাম। একটা চিপা গলির ভেতর চারতলা ঝকঝকে ফ্লার্ট। আক্ষরিক অর্থের মধ্যবিত্তদের জায়গা এই ধানমন্ডি, যারা গুলশান বনানীতে থাকার সামর্থ্য রাখে না, তারাই আজিমপুরের কলোনিতে না থেকে এখানে বাসা নেয়। ফ্লাটটা মাত্র দুই রুমের। তিনমাস থাকবে বলে আসবাব বিশেষ নেই। যে রুমে নেহা থাকে, সেটায় একটা খাট আর পড়ার টেবিল আর ফারজানার রুমে একটা খাট ছাড়া কিচ্ছু নেই- অন্তত আমি নেহার রুম থেকে দেখতে পারিনি অন্য কিছু। অনেকটা হোটেল হোটেল ভাব।
আমাকে নেহার রুমেই বসতে দেয়া হলো। ফারজানা আমাকে কিছু ড্রাইকেক দিয়ে গেলেন এক গ্লাস পানি সহ। আমি পড়ানো শুরু করলাম বিস্কুট খুটুস খুটুস করে চিবোতে চিবোতে।
নেহাকে শুধু ইংরেজিতে কাঁচাই না, মারাত্মক রকমের কাঁচা। এই ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে সে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে, সেটা একটা বিস্ময়। চান্স পাক বা না পাক আমাকে পড়িয়ে যেতেই হবে। সাত হাজার টাকা তো আর কম নয়!
দেড় ঘণ্টা পড়িয়ে সেদিন খান্ত দিলাম। এভাবেই চলল কয়েকদিন। আমি একদিন পরপর পড়াই। মেয়েটা ভয়ঙ্কর অধ্যবসায়ী। যা পড়া দেই নিখুঁতভাবে পড়ে রাখে। এতদিন নির্ঘাত ভালভাবে পড়েনি। পড়লে, যে ইংরেজিটুকু জানলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ২৫ মার্কের ইংরেজি প্রশ্নে ভালভাবে পাস করা যায়, সেটা নিয়ে সমস্যা হত না।
নেহার আগ্রহ দেখে আমিও ভালভাবেই পড়ানো শুরু করলাম।
এর মধ্যে ফারজানার সাথেও বেশ ভাব হয়ে গিয়েছে। তিনি গৃহিণী কিন্তু মন মানসিকতায় অনেক আধুনিক। আমার সাথে বেশ খোলামেলাই আচরণ করেন। তার আগ্রহ সিনেমায়। আমিও বেশ সিনেমাখোর। আমার সাথে প্রায়ই সিনেমা নিয়ে কথা হয়। একদিন তাকে আমার পছন্দের বেশ কিছু সিনেমার নাম সাজেস্ট করলাম। ভদ্রমহিলা তিনদিনের মোটামোটি ১০ টার মত সিনেমা দেখে আমাকে তাক লাগিয়ে দিলেন! উল্লেখ্য, আমার লিস্টে কেট উইন্সলেট অভিনীত ‘দ্য রিডার’ সিনেমাটিও ছিল!
একদিন নেহাকে পড়ানো শেষে ফারজানার দেয়া বিস্কুট আর চা খাচ্ছিলাম। এই সময়ে ভদ্রমহিলা আমার সাথে বিভিন্ন আলোচনা করেন। নেহার লেখাপড়া, আমার লেখাপড়া, নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে ইত্যাদি। গল্প করার সময়, আমি প্রতিদিন তার রুপের প্রশংসা করি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে!
কিন্তু আজ এলেন না গল্প করতে। বিস্কুট দিয়েই চলে গেলেন নিজের রুমে।
আমার চা শেষ হতেই ফারজানা আমাকে পাশের রুমে ডাকলেন। এভাবে কোনদিন তিনি আমাকে ডাকেননি। কোন কথা থাকলে, নেহার রুমে এসেই বলতেন। তাই অবাক হলাম কিছুটা।
নেহার রুম থেকে আমি শুধু বিছানাটাই দেখতে পেতাম। ঘরে ঢুকে দেখি,
সেখানে খাটের সাথে রীতিমত একটা টেবিল আর দামি ওয়ারড্রোবও আছে।
ফারজানার রুমটা পশ্চিম দিকে। তাই শেষ বিকেলের রোড এলুমিনিয়াম গ্লাস ভেদ করে তার বিছানায় এসে পড়েছে।
হঠাত টেবিলে চোখ পড়তেই দেখলাম, একটা কন্ট্রাতিনিপ্টিক পিলের প্যাকেট! ভদ্রমহিলার স্বামী হয়ত নিয়মিত এসে চোদেন, তাই এই ব্যবস্থা। কিন্তু মেয়ে বড় হয়েছে, রীতিমত উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে, তার চোখের সামনেই পিলের প্যকেটটা রাখে কি ঠিক করেছেন তিনি? আর দুই ঘরের মাঝে কোন দরজা পর্যন্ত নেই। ভদ্রমহিলার স্বামী এসে চোদেন কীকরে? তাদের শীতকার নেহার কানে যায় না?
নানান প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
ঘরে কোন চেয়ার ছিল না। আমি বিছানাতেই বসলাম তার পাশে।
“বারুদ, কিছু মনে করো না। একটা কাজ করে দিতে হবে তোমাকে!”
আগ্রহী হয়ে বললাম, “না না, বলুন। কিছু মনে করব না!”
বললেন, “আমাকে একটু নিউমার্কেট নিয়ে যেতে পারবে? নতুন এসেছি, কিচ্ছু চিনি না! কিছু জিনিস কেনাকাটা করা দরকার।”
আমি সাসন্দে রাজী হলাম। ফারজানা সুন্দরী। যতটা সুন্দরী হলে, রাস্তা দিয়ে শুধু হেঁটেই শতজনের নজর কড়া যায়, ততোটা সুন্দরী। এই আধমাসে আমি তার শরীরের প্রতিটা বাঁক দেখেছি। কদবেলের মত তার ভরাট স্তন, ব্লাউজের ভেতরে ‘বাঁধ দেয়া’ কর্ণফুলি- ছেড়ে দিলেই ভাসিয়ে দেবে সব আর তার স্তনের ঘর্ষণে উতপন্ন হবে জলবিদ্যুত। যে কোন পুরুষই তার সাথে শপিং এ যেতে চাইবে!
ফারজানা বললেন, “তুমি নেহার রুমে বসো। আমি এক্ষুণি কাপড় পরে তৈরি হয়ে নিচ্ছি।”
ফারজানা পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটা কুচকুচে কালো শাড়ি পরে বেরিয়ে এল।
আমি কোন নারীকে এত তাড়াতাড়ি সাজতে দেখিনি। ধপধপে সাদা শরীরের সঙ্গে কালো শাড়িটা মানিয়েছে দারুণ। যেন চিত্রকর্মের পশ্চাৎপট। ফারজানা তিনিই ব্যাকগ্রাউন্ডে ভেনাস। শুধু ভেনাতিনির মত ন্যুড নয়, কালো শাড়িতে আবৃত তার দেহ। সাদা মেরুন ব্রার স্ট্রাপ তার ধপধপে কাঁধে চেপ্টে বতিনিছে। ঠিক স্ট্রাপের পাশেই একটা কালো তিল- সাদা পাতায় কলমের একবিন্দু ফোঁটা যেন। ফারজানার শরতের মেঘের মত হাতে আলতো কালো চুলের রেখা। রেখাটা ঠিক যেখানে তিনিখানেই ব্লাউজের হাতা। হাতাটা যেন কেটে বতিনিছে মাংস। শ্লা, দেখার মত সিনই বটে।
আমি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেই ফেললাম, “আপনার সাজতে তো একটুও সময় লাগে না! পাঁচ মিনিটেই জয়া আহসান হয়ে বেরিয়ে এলেন!”
“কী যে বলো না! কোথায় আমি আর কোথায় জয়া আহসান! আর সাজলামই বা কি। শুধু শাড়িটাই পড়েছি!”
মেয়েরা প্রশংসা পছন্দ করে, যে কোন বয়সেই। বললাম, “আপনি প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরী। আপনাকে তাই সাজতে হয় না!”
ফারজানা হয়ত লজ্জা পেল, নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন, “চল, দেরী হয়ে যাচ্ছে!”
মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “নেহা। তুই থাক। তোকে নিয়ে যাচ্ছি না। তুই পড়। একা লাগলে বা ভয় লাগলে কল দিস। সটান চলে আসব!”
আমার খেয়ালই ছিল না, নেহা ঘরে আছে। তার সামনেই তার মায়ের প্রশংসা করলাম এমন প্রেমিকের মত!
নেহা অনেকটা বিবস নয়নে তাকিয়ে আছে সামনে ধরা বইয়ের দিকে। বুঝলাম, আমাদের এতক্ষণে কথোপকথন কানে যায়নি তার। নাকি গিয়েছে? তিনি না শোনার ভান করে নেই তো?
গেলেই বা আমি কী করব? উপদেশ দেয়ার মত করে বললাম, “বইয়ের এক্সারসাইজগুলো সব করে ফেল! আমি এসে পরীক্ষা নেব কিন্তু পরদিন।”
নেহা মাথা নাড়িয়ে জানালো, তিনি ভালভাবেই পড়বে।
ফারজানার বাসাটা একটা গলির ভিতরে। একারণেই প্রথম দিন এসে খুঁজে পাইনি।
দিনের বেলায়ও খানিকটা অন্ধকার। চিকন গলি বলে পাশাপাশি হাঁটলে গায়ে গা লেগে যায়। কয়েকবার ফারজানার হাতে হাত লেগে গেল আমার। একবার কনুইটা আলতো করে তার নরম স্তনেও লাগল না? ঠিক বুঝতে পারিনি!
আমি একটু পিছিয়ে তাকে সামনে হাঁটতে দিলাম। লেডিস ফার্স্ট! পিছন থেকে তার পাচার হাঁটার ছন্দে দুলে যাওয়াটাও দেখা যাবে।
নিচে এসে, আমরা সিএনজি নিলাম একটা। ফারজানাকে আগে ঢুকতে দিয়ে আমি পরে ঢুকলাম সিএনজির ভেতর।
ফারজানা বললেন, “আমার সিএনজি চাপতে বেশ ভাল লাগে। বেশ আঁটসাঁট, না?”
আমাদের গায়ে গা লেগে যাচ্ছে। আমি আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় বাম হাতে নিয়ে গিয়েছি আমার যেটা লেগে আছে ফারজানার ডান হাতে। ফারজানার মাংসল হাতটা অসম্ভব নরম। আমার গায়ে যেন কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
বললাম, “হ্যাঁ। বিশেষ করে প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য!”
একটু বোল্ড খেললাম। মাঝেমাঝে রিস্ক নিয়ে ক্রিস থেকে বেড়িয়ে ব্যাটসম্যানদের হিট নিতে হয়! লাগলে ছক্কা নয়ত স্ট্যাম্পিং এর ক্ষপরে পড়ে সোজা প্যাভিলিয়ন।
ফারজানা বললেন, “প্রেমিকাকে নিয়ে সিএনজিতে ঘোর তবে? তোমাদেরই তো বয়স। এই বয়সে একটু রঙ গায়ে না লাগালে চলে?”
ছক্কাই হয়েছে। আপাতত প্যাভিলিয়নে ফিরতে হচ্ছে না!
বললাম, আরেকটু সাহসী হয়ে, “আপনার সময়ও তো চলে যায়নি। স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে পারেন তো!”
ফারজানা কোথায় বেশ পটু! সাথেসাথেই জবাব দিলেন, “স্বামী তো আছে ঘরে। তাকে নিয়ে সিএনজিতে বতিনি প্রেম করব কেন!”
মুচকি হেসে ওনার দিকে একটু হেলে বললাম, “তাই বুঝি? সিএনজিতে ঘোরার জন্য তবে কাউকে জুটিয়ে নিন না! যে কেউ আপনার প্রেমিক হতে চাইবে!”
দুখী দুখী মুখ করে বললেন, “কে আর এই বয়সে আমার সাথে প্রেম করবে বল! আমি কি আর সুইট সিক্সটিনে আছি নাকি এখনও?”
বুঝলাম, আরেকটু সাহসী হলে সমস্যা নেই।
তাছাড়া আমি প্রশংসাই করছি তার, রেগে গিয়ে বেঁকে বসার চান্স নেই।
“আপনি আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের একজন। তখন জয়া আহসানের তুলনা দিলাম না? একটুও ভুল করিনি তুলনা দিতে। তিনি কোন দিক থেকেই আপনার চেয়ে সুন্দরী নয়। বয়স জিজ্ঞেস করা যায় না মেয়েদের, তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করছি না। কিন্তু আপনি তার চেয়ে কম বয়সী, এটা আমি নিশ্চিত। জয়ার বয়স কিন্তু ৪৫!”
“আমার ৩৯ চলছে। তবে আমি জয়ার বয়সে যেতে যেতে বুড়ি হয়ে যাবো!”
আমি এবার জোরের সাথে বললাম, তার চোখে চোখ রেখে, “আমার মনে হয় না। আপনার এই সৌন্দর্য মাত্র ৫ বছরেই শেষ হয়ে যাবে না। আমি হলফ করে বলতে পারি, আপনি ৫০/৫৫ পর্যন্ত ছেলেদের মাথা ঘুরিয়ে দেবার সামর্থ রাখবেন!”
ফারজানা বললেন, “হয়েছে। আর বলতে হবে না। বিয়ের পর এভাবে আমাকে কেউ কোনদিন বলেনি। তোমার কথা শুনে নিজের কিশোরীবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে!”
বললাম, “অনেকেই বলতে চেয়েছে, হয়ত পারেনি। সবাই তো আর আপনার সাথে এভাবে সিএনজিতে ঘোরার সুযোগ পায় না!”
ফারজানা কিছু না বলে ঠোঁট গোল করে বললেন, “ইসসসস!”
“সত্যি বলছি। আপনাকে মিথ্যে বলব কেন?”
“আচ্ছা বাবা ঠিকাছে। আমি জয়া আহসানের চেয়ে বেশি সুন্দরী, মানলাম!”
“মানতেই হবে। আপনি নিজেও জানেন, আপনি কতটা সুন্দরী, তাই না?”
“হা হা। বুঝি আমি সুন্দরী কিন্তু কতটা বুঝি না!”
“একটু আপনার আশেপাশের পুরুষদের চোখে ভাষা পড়ে দেখুন। বুঝে যাবেন!”
“কবির মত কথা বলো না তো, বারুদ! আমি কিশোরী হলে তো পটেই যেতাম তোমার কথায়!”
“সেটা আমার বিশাল সৌভাগ্য হত!”
সাইন্সল্যাবে এসে সিএনজি আটকা পড়ল জ্যামে। বিশ্রি অবস্থা। আমাদের সিএনজির পাশে একটা বোটকা মহিষের মত ট্রাক থেমে কালো ধোঁয়া ছাড়ছে। এমন ট্রাকের রোড পারমিশন থাকাই উচিত নয়। তাও চালিয়ে যাচ্ছে অলস আর দুর্নীতিবাজ কিছু আমলা আর সরকারি চাকুরের কারণে।
দেখলাম, ফারজানার মুখ লাল হয়ে গেছে।
দরদর করে ঘামছে। ভাগ্যিস ট্রাকটা একটু ফাঁক পেয়ে সামনে চলে গেল! না হলে দম বন্ধ হয়ে মরত এখানেই!
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “এই, আপনি ঠিক আছেন তো?”
কপালের ঘাম মুছে বললেন, “হ্যাঁ। ঠিক আছি। এসবের কারণেই ঢাকা আসতে ইচ্ছে করে না, জানো?”
এর জবাবে কিছু বলার নাই। শহরটা আসলেই নরকে পরিণত হয়েছে। অনেকটা ব্যাটম্যানের “গোথাম” এর মত।
আমি পকেট থেকে টিস্যুপেপার বের করে সাহস করে তার কপালের ঘামটুকু মুছে দিলাম। ফারজানা বাঁধা দিল না। তার গলায় কয়েক ফোঁটা ঘাম। ইচ্ছে হলো, তিনিগুলোয় টিস্যু দিয়ে মুছে দেই। কিন্তু খুব বেশি হয়ে যাবে ভেবে দিলাম না।
জ্যাম ছাড়তেই ফারজানা বললেন, “তোমার প্রেমিকা খুব হ্যাপি হবে!”
হঠাত প্রেমিকার কথা বললেন কেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “যেভাবে ঘমটা মুছে দিলে! অনেক কেয়ারিং তুমি!”
বললাম, “আপনার মত কেউ পাশে বসলে যে কেউ কেয়ারিং হতে পারে, ম্যাম!”
লজ্জা পেয়ে বললেন, “যাহ। আর বলো না তো!
আমরা নিউ মার্কেটে এসে গেলাম। প্রচণ্ড ভীড়। পা ফেলার জায়গা নেই। আমি খুব দরকার না হলে নিউমার্কেটে আসি না। কথায় আছে, সুন্দরীর দোহাই, বড়
দেনা। না এসে পারলাম না।
অনেক ঘুরে অনেক ভীড় ঠেলে, এর ওর গায়ে পড়ে ঘণ্টাদুয়েক হতাশ ঘুরে ফারজানা একটা শাড়ি, এক জোড়া কানের দুল, একটা নেইল কাটার আর একটা বেড শিট কিনলেন। আমরা চালতার আঁচার খেলাম ভীড়েই দাঁড়িয়ে।
তারপর তিনি আমাকে বললেন, “তুমি এখানে দাঁড়াও, আমি আসছি!”
বললাম, “কোথায় যাচ্ছেন? অনেক ভীড়। পরে আমাকে খুঁজে পেতে আপনার সমস্যা হবে!”
“যেখানে যাচ্ছি সেখানে তোমাকে নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা ভাবছি। আচ্ছা চলই না! আর আমি এসব জায়গা চিনিও না!”
বললাম, “কোথায় যেতে চাচ্ছেন বলুন তো!”
লাজুক হেসে, গোপন কথা বলার মত করে বললেন, “আচ্ছা, ব্রা কোথায় পাওয়া যায়, জানো?”
আমি হেসে বললাম, “জানব না কেন? আমি আমার গফকে নিয়ে আগেও এসেছি। আর আমার যাওয়া নিয়ে কোন প্রব্লেম নেই। ছেলেরাও সেসব দোকানে সাথে যেতে পারে।”
বলেই আমি হাঁটা দিলাম। ফারজানা আমাকে ফলো করা শুরু করলেন।
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ২য় তালায় অনেকগুলা ব্রা’র দোকান। ঢুকে পড়লাম সেগলোর একটায়। দোকানটায় কোন মেয়ে নেই। পুরুষই বিক্রি করে এসব। ফারজানার দেখলাম, সেসব নিয়ে সমস্যা নেই।
দোকানদারকে বললেন, “৩৬ সাইজে ব্রা দাওতো!”
আমি তার একদম পাশেই গা ঘেষে দাঁড়িয়ে ছিলাম পিছনে। আমি তার চেয়ে লম্বা বলে পিছন থেকে তার স্তনের খাঁজ দেখতে পাচ্ছি। সুগভীর একটা খাদ যে। একটা লকেট স্তনের খাঁজে আটকে আছে। দোকানের উজ্জ্বল আলোয় সাইন করছে লকেটটা।
দোকানদার বললেন, “সাধারণ ব্রা না স্পোর্টস ব্রা দেব, ম্যাম? আপনাকে স্পোর্টস ব্রা খুব মানাবে, ম্যাম!”’
আমি ফারজানাকে বললাম পিছন থেকে, “স্পোর্টস ব্রা কি?”
আমার দিকে ঘুরে বললেন, “খেলোয়াররা যেসব ব্রা পরে। মারিয়া সারাপোভা, সানিয়া মির্জা এরা পরে।”
আমি এই সুযোগে ওর সুস্পষ্ট স্তনের দিকে চোখ রেখে বললাম, “আসলেই আপনাকে মানাবে। স্পোর্টস ব্রাই কিনুন!”
দোকানদার তাকে দুই জোড়া স্পোর্টস ব্রা দিল ট্রায়াল দেয়ার জন্য। ফারজানা ট্রায়াল রুমে গিয়ে পরে দেখে ফিরে এসে বললেন, “হচ্ছে না। সাইজ মিলছে না!”
দোকানদার বললেন, “আপনার সাইজটা আরেকবার মেপে দেখব, ম্যাম?”
ফারজানা মাথা ঝুঁকিয়ে সমর্থন দিল।
দোকানদার ফারজানার পিছনে গিয়ে ফিতা দিয়ে মাপ দিলে ফারজানার স্তন। পুরো সময়টা ফারজানা মাথা নিচু করে ছিলেন। আমি দেখলাম, মাপ নেয়ার সময় দোকানদার ওর স্তন দুই একবার ইচ্ছে করেই ছুয়ে দিল। ওর হাত আঙ্গুল ফারজানার স্তনের মাংশে ডুবে গিয়েছিল কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের জন্য। স্পষ্টই দেখলাম। ফারজানা কিছু বললেন না এতে। মুখেও কোন বিরক্তির ছাপ নেই। হয়ত কিছু বলে তিনি সিন ক্রিয়েট করতে চাননি।
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা, কোন রঙের কিনি বলতো?”
আমি কাছে গিয়ে কানের কাছে বললাম, “যে দেখবে, তাকেই জিজ্ঞেস করুন না!”
ফারজানা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললেন, “খুব দুষ্ট হয়েছো! আমাদের বিয়ের কত বছর হলো জানো? এখন তাকে ফোন দিয়ে যদি জিজ্ঞেস করি, কোন রঙের ব্রা কিনব, তিনি তো হেসেই খুব হয়ে যাবে!”
কপট সমবেদনা জানিয়ে বললাম, “ইসস! আপনি আমার স্ত্রী হলে, আপনার জন্য আমি নিজেই ব্রা কিনে নিয়ে গিয়ে পরিয়ে দিতাম! আপনার ভাগ্যটা ভাল না জানেন! আমি আরেকটু বড় হলে, আপনার জীবনটা আরো সুখের হত!”
ফারজানাও কপট রাগের সুরে বললেন, “হুম। অনেক কিছু ভাবছো দেখছি ইদানিং। তাড়াতাড়ি বলো, কোন কালারের ব্রা কিনব!”
আমি আবার তাকালাম ফারজানার সুপুষ্ট স্তনের দিকে। আমি ওর একবারেই কাছে, তিনি নিজেও বুঝতে পারছে আমি ওর স্তন দেখছি। বললাম, “আপনি ফর্সা অনেক। কালো ব্রা’ই কিনুন!”
দোকানদার এতক্ষণ আমাদের কথায় কান পেতে ছিল, আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। তিনি বললেন, “আচ্ছা ম্যাম, কালো ব্রা’ই দিচ্ছি তবে!”
দোনাকদারের ঠোঁটে অশ্লীল এক হাসি। ফারজানা লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকাল।
আমরা ব্রা নিয়ে বেড়িয়ে এলাম।
বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে এলাম আমরা কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত। হঠাত ফারজানা বললেন, “আচ্ছা, তুমি সিগারেট খাও
সেদিন দেখলাম। আজ খাচ্ছো না যে?”
বললাম, “সুন্দরী কোন নারী পাশে থাকলে, কেই বা সিগারেট খেতে চায়!”
ফারজানা হেসে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বললেন, “আহা। মন ভরে গেল শুনে! খাও না একটা সিগারেট। আমার সিগারেটের ঘ্রাণ খুব ভাল লাগে!”
বললাম, “তাই নাকি! প্রথম কোন নারীকে এই কথা বলতে শুনলাম! তা গন্ধ শুঁকবেন কেন? নিজেই টেনে দেখুন না!”
“আরে নাহ! কে কী বলবে দেখে!”
“কে আপনাকে চেনে এখানে? আর ঢাকার মেয়েরা প্রচুর স্মোক করে। আমার এক বান্ধবী তো গাঁজা পর্যন্ত খায়! ওরা পারলে আপনি পারবেন না কেন?”
ফারজানা আমার যুক্তি শুনে রাজী হলেন। সাধারণত আমি গোল্ডলিফ খাই। বাংলাদেশে গোল্ডলিফের চেয়ে ভাল সিগারেট নেই অন্তত। কিন্তু এত কড়া সিগারেট খাওয়ানো যাবে না ফারজানাকে। তাই আমি গোল্ডলিফ ধরিয়ে তার মুখে একটা ব্লাক ধরিয়ে দিলাম। ব্লাক খুব হালকা সিগারেট। তামাকের চেয়ে সেটায় তেজপাতার ফ্লেভার বেশি।
ফারজানা কয়েকটা টান দিয়ে বললেন, “এই বারুদ। এটা তো সিগারেটের মত লাগছেই না। তোমারটার কী পুরুষালি গন্ধ আর এটার এমন তেজপাতার মত গন্ধ কেন?”
বুঝলাম, মালের কড়া মাল চাই। ওর হাত থেকে ব্লাকটা নিয়ে পায়ে পিষে নিজের গোল্ডলিফটা নিজ হাতে ওর ঠোঁটে গুঁজে দিলাম। গুঁজে দেয়ার সময় ফারজানার ঠোঁটের ছোঁয়া পেলাম হাতে।
আমি সিগারেট গুঁজে দেয়ার সময় ও কেমন পাখির বাচ্চার মত ঠোঁটটা ফাঁক করেছিলেন।
ফারজানা দুইটা টান দিয়েই কাশতে আরম্ভ করলেন। আমি তোর কাছ থেকে সিগারেটটা কেড়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। তাও আর কাশি থামছিল না। আমি অনেকক্ষণ ধরে থাকলাম তাকে বাম হাতে জড়িয়ে!