Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 3.2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভালোবাসার রাজপ্রাসাদ 《সম্পূর্ণ 》
#1
ভালবাসার রাজপ্রাসাদ
Written By pinuram

Disclaimer : এই কাহিনীর কিছু চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক, কিছু চরিত্র এবং ঘটনা বাস্তব। পুরানো হলুদ কিছু পাতা নিয়ে আবার করে সামনে আসা, এক নতুন ভাবে পরিবেশন করা এই গল্প।

ভুমিকাঃ
এই জীবন ছিল নদীর মতন গতি হারা দিশা হারা
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে আমি হয়ে গেছি তারা।
ওগো আমি হয়ে গেছি তারা,
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে আমি হয়ে গেছি তারা।
আগে ছিল শুধু পরিচয় ,পরে হল মন বিনিময়
আগে ছিল শুধু পরিচয় ,পরে হল মন বিনিময়
শুভ লগ্নে হয়ে গেল শুভ পরিণয়
আমি যখনি ডাকি জানি তুমি দেবে সারা
এই জীবন ছিল নদীর মতন গতি হারা দিশা হারা
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে আমি হয়ে গেছি তারা।


প্রথম অধ্যায়ঃ প্রথম প্রেম

নিমন্ত্রন
সন ২০০০, শীতকাল ঠিক দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে হাতছানি দিচ্ছে। নভেম্বর মাসের ঠাণ্ডা শীত তখন ঠিক মতন পড়েনি। । বাইশটা বসন্ত পেরিয়ে, অভিমন্যু তখন কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। আবছা কুয়াশা মাখা মিষ্টি রোদ আর ঘাসের ডগায় শিশিরের চিকমিক যেন মন টাকে ব্যাকুল করে তোলে এক অজানা আনন্দের খোঁজে। দিনটা ছিল রবিবার। অভিমন্যু বসার ঘরে বসে আপনমনে খবরের কাগজ’টা পড়ছিল, না ঠিক পড়ছিল নয়, দেখছিল আর গরম চায়ে সুরত সুরুত করে চুমুক দিচ্ছিল। ওর মা রান্না ঘরে রান্না করছিলেন আরে বাবা বাজারে গেছিলেন।
ঠিক সেই সময়ে কলিং বেল বেজে ওঠে। মা বললেন এক বার দেখতে, হয়ত পেপারওয়ালা মাসের টাকা নিতে এসেছে। অভি দৌড়ে নিচে গিয়ে দেখে যে দরজায় একজন মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক এবং এক ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে। অভি তাদের কাউকেই চেনেনা।
ভদ্রলোক অভি কে জিজ্ঞেস করলেন, "তোমার মা বাড়িতে আছেন?"
মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় অভি যে মা বাড়িতে আছেন। ভদ্রলোক নিজের পরিচয়ে বললেন যে তিনি মায়ের দূর সম্পর্কের ভাই হন। অভি ওদেরকে বাড়ির মধ্যে আসার জন্য বলল এবং বসার ঘরে বসতে বলে মাকে ডাকতে গেল।
মা বসার ঘরে ঢুকে অবাক, "আরে শশাঙ্ক, কি ব্যাপার? অনেক দিন পরে। এটা তোর বউ, মেঘনা? ভাল ভাল, তা অনেক দিন পরে কি মনে করে আসা হল?"
কথাবার্তায় জানা গেল যে, শশাঙ্ক অভির মায়ের খুব দূর সম্পর্কের ভাই হন। তাঁরা তিন ভাই, তিন বোন। ছোটো ভাই সুব্রতর বিয়ে উপলক্ষে নিমন্ত্রন করতে এসেছে। কথাবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেল যে, শশাঙ্কর ছোটো বোন তখন অবিবাহিতা আর তাঁরা এক উপযুক্ত পাত্রের খোঁজে করছেন। তাঁরা সবাই গ্রামের বাড়িতে এক যৌথ পরিবারে থাকে, গ্রামের নাম বসিরহাট। অভি’র মা একজন শিক্ষিকা, মায়ের কলেজও বসিরহাটে। মা যখন কলেজের চাকরি শুরু করেন তখন তিনি ওদের বাড়িতে থাকতেন। অভির জন্মের বছর দুই আগে, মায়ের ছোটো মাসি, শশাঙ্কের মা, এক কন্যে সন্তানের জন্ম দেন। মায়ের ছোট্ট কুট্টী বোন, শুচিস্মিতা। মায়ের মুখে অভি তার কথা অনেক শুনেছে, কেমন করে অভি কে নিয়ে সারাদিন খেলে বেড়াত শুচিস্মিতা।
অভিমন্যুর যখন দুষ্টুমি করার বয়স হল এবং কলেজ যেতে শুরু করল তখন অভির বাবা মা, কলকাতা চলে আসেন। অভির মনে সেই ছোটো বেলার কোন কথাই মনে নেই। সব তাই যেন এক স্বপ্ন ধোঁয়াটে।
অভির মা অভিকে বললেন যে, শুচিস্মিতা বাড়ির ছোটো মেয়ে সেই জন্য সব থেকে দুষ্টু ছিল। ওর চেয়ে শুধু অভি ছোটো ছিল তাই অভিকে নিয়ে ওর যত খেলাধুলা চলত। টানতে টানতে নিয়ে যেত আমের বাগানে, পুকুর পাড়ে, ধানের ক্ষেতে। অভি ছিল তার জলজ্যান্ত খেলার পুতুল, যাকে নিয়ে ওর সারাদিন কেটে যেত শুধু খেলায়।
গ্রামে সবারই বড় এবং যৌথ পরিবার হয়ে থাকে। শশাঙ্কের দেরও যৌথ পরিবার এবং ওদের এক ছেলে, নাম নীলাঞ্জন, ক্লাস ফোরে পড়ে।
মা শশাঙ্কের নিমন্ত্রন স্বীকার করলেন আর জানালেন যে তাঁরা সবাই সুব্রতর বিয়েতে যাবেন।
প্রথম দেখা
বিয়ের দিন ছিল দিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এক সুন্দর সকালে ওরা বেড়িয়ে পড়ল মায়ের মাসির বাড়ি, বসিরহাটের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস কোলকাতা ছেড়ে, ধান খেতের মাঝ দিয়ে ছুটে চলতে লাগল। অভি জানাল্র পাশে বসে পুরান স্মৃতি রোমন্থন করার প্রবল চেষ্টা চালিয়ে গেল। কেমন দেখতে হবে সেই শুচিস্মিতা যে ওকে কোলে নিয়ে ছোটো বেলায় অনেক খেলা করেছে, শীতের রাতে ওকে জড়িয়ে ধরে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচিয়েছে। এই সব ভাবতে ভাবতে অভি একসময়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
অভি’র ঘুম ভাঙ্গল মায়ের ডাকে, "এই ওঠ। বসিরহাট এসে গেছে প্রায়। এর পরের স্টপেজে আমাদের নামতে হবে।"
বাস থেকে নামার পরে মা জানালেন যে শশাঙ্কর বাড়ি বড় রাস্তা থেকে প্রায় মাইল দুই তিন ভেতরে, এতটা রাস্তা হাটতে হবে তবে গিয়ে গ্রামে পৌঁছান যাবে। অভি জিজ্ঞেস করল যে কোন রিক্সা পাওয়া যায় কিনা।
প্রতিউত্তর অভির বাবা বললেন যে, "ব্যাটা, গ্রামের হাওয়া বাতাসে অনেক অক্সিজেন। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নে, এই সুদ্ধ হাওয়া বাতাস কোলকাতায় পাবি না। এখানে তুই মাটির অনেক কাছে আছিস, হেঁটে চল।"
বাবার কথা তো আর অমান্য করা যায় না, অগত্যা অভি হাঁটতে শুরু করে।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মা ওকে শুচিস্মিতার গল্প শুনালেন। সেই শুনে অভির মনে শুচিস্মিতাকে দেখার এক প্রবল ইচ্ছে জেগে উঠল।
অনেকক্ষণ হাঁটার পরে ওরা সবাই মায়ের মাসির বাড়ি পৌঁছে গেল। বাড়িটা বিশাল। মায়ের মেসোমশাই বেশ বড় চাষা ছিলেন, অনেক জমি জমা ছিল এককালে। অনেকদিন আগেই তিনি দেহরক্ষা করেছেন। মেসোমশাই মারা যাবার পরে, বড় ভাই সুমন্ত পরিবারের দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। সংসারের জোয়াল কাঁধে পরাতে তিনি আর বেশি পড়াশুনা করতে পারলেন না, তিনি চাষ বাস করে বাকি ভাই বোনেদের পড়াশুনা করিয়েছেন এবং বোনেদের বিয়েথা দিয়েছেন।
বাড়িতে ঢোকা মাত্রই মনে হল যেন এক জন সমুদ্রের মাঝে এসে পড়েছে অভি। চারদিকে লোকজনের হইহুল্লর, চেঁচামেচি, দৌড়া দউরি লেগে আছে। অভি সেই পরিবেশে একদম নতুন, কাউকেই সে চেনে না। মায়ের মাসিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল মা। ঝুঁকে প্রনাম করল অভি। দিদু পরিবারের সবাইকে ডেকে অভির পরিবারের সাথে সবার আলাপ করিয়ে দিল। অভির চোখ থেকে থেকে শুচিস্মিতাকে খোঁজে, তার কোন দেখা নেই। অভির বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছে, জিজ্ঞেস করবে কি করবেনা যে শুচিস্মিতা কোথায়, জিজ্ঞেস করাটা বাতুলতা হতে পারে সেই ভয়ে জিজ্ঞেস করল না অভি। মা মেঘনা কে শুচিস্মিতার কথা জিজ্ঞেস করলেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল অভি। মেঘনা উত্তর দিলেন যে যেহেতু শুচিস্মিতা বাড়ির সব থেকে ছোটো মেয়ে তাই ছোটবেলা থেকেই অনেক চঞ্চল। ওর বাড়ির বিয়ে হয়ত কোথাও ওর বান্ধবীদের সাথে ঘুরছে বা আড্ডা মারছে।
ঠিক সেইসময়ে ওদের পাশ দিয়ে একদল মেয়ে গল্প করতে করতে আর ফুল হাতে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিল। মেঘনা ওদের মধ্যে একজন কে ডাক দিল, "পরী এই দিকে শোনো। উলুপি দি ডাকছে তোমাকে।"
মেয়েদের দলের মাঝ থেকে একটি সুন্দরী তরুণী এগিয়ে এল। লাল ঠোঁটে লেগে আছে মনমোহক হাসি। মেয়েটি ঝুঁকে মায়ের পায়ে প্রনাম করল। অভির মা, দু’হাতে জড়িয়ে ধরল মেয়েটিকে। তারপর মেয়েটির চিবুক ছুঁয়ে আদর করে কপালে একটা চুমু খেলেন।
মাতৃ সুলভ স্বরে বললেন, "পরী! আমার ছোট্ট মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে। অনেক দিন তোকে দেখিনি রে।"
অভি নিস্পলক চোখে মেয়েটির সৌন্দর্য সুধা পান করে চলেছে। মেয়েটির গায়ের রঙ বেশ ফর্সা যেন একটু আলতা ছোঁয়ান। পরনে একটি ছোটো হাতার হালকা গোলাপি রঙের জমকালো সালোয়ার কামিজ পড়েছে। মাথার লম্বা ঘন কালো চুল একটা হাত খোঁপা করে ঘাড়ের কাছে আলত করে বাঁধা। খোঁপায় জুঁই ফুল গোঁজা, আর সেই জুঁই ফুলের গন্ধে চারপাশ মাতোয়ারা করে তুলেছে। শীতের মিষ্টি রদ্দুর যেন ওর ত্বকের ওপরে পেছল খাচ্ছে। ডিম্বাকৃতি মুখাবয়াব, হাসলে দু’গালে টোল পরে, আর তাতে যেন হাসিটার সৌন্দর্য আরও শত গুন বেড়ে যায়। মেয়েটির রুপে মোহিত হয়ে যায় অভিমন্যু, হাঁ করে চেয়ে থাকে ওর দিকে।
পরী একবার অভির হাঁ করা মুখের দিকে চেয়ে, মাকে প্রশ্ন করল, "এটি তোমার পুত্র অভিমন্যু, তাই না?"
মা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলেন, "হ্যাঁ। তোর মনে আছে, ছোটো বেলায় তুই এর সাথে খেলতিস। তুই যেখানে যেতিস, তোর সাথে একেও টেনে নিয়ে যেতিস।"
পরী অভির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করল, "বাঃবা, অভিমন্যু তো অনেক বড় হয়ে গেছে।"
অভির দিকে তাকিয়ে এক মিষ্টি হাসল পরী। সেই হাসি দেখে অভির বুকের ভেতরের রক্ত ছলকে উঠল। আওয়াজ শুনে মনে হল যেন ওর কানে কেউ মধু ঢেলে দিয়েছে।
মাকে জড়িয়ে ধরে পরী বলল, "উলুপিদি, আমার না খুব তাড়া আছে। আমি এখন যাচ্ছি, পরে তোমাদের সাথে কথা বলব।" তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি আমাকে পরী বলে ডাকতে পার। আমাকে বাড়ির সবাই পরী বলেই ডাকে। আমার এখন খুব তাড়া আছে, আমি তোমার সাথে পরে দেখা করব।"
মেঘনা পরীকে বলল, "তোমার কোন তাড়া নেই, পরী। তুমি শুধু আড্ডা মেরে বেড়াবে আর কিছু না।"
পরী মেঘনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "অঃ বৌদি, এইত সময় আমার আড্ডা মারার আর মজা করার।"
তারপরে পরী ওর বান্ধবীদের সাথে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। অভি নিস্পলক চোখে পরীর চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। নাসারন্ধ্রে তখন শুধু জুঁইয়ের গন্ধ মম-মম করছে।
অভির মা অভিকে বললেন যে ঘুরে ফিরে সবার সাথে আলাপ পরিচয় করে নিত। নিজেরা চলে গেলেন ভেতরে। অভি একা একা কি করবে ঠিক ভেবে পেল না। একেবারে নতুন পরিবেশ নতুন মানুষজন, কাউকেই ও চেনেনা।
এক কাপ কফি নিয়ে ছাদে উঠে গেল অভি। পড়ন্ত দুপুরের রোদে ছাদের ওপরে একা একা ঘুরতে ঘুরতে এক কোনায় দাঁড়িয়ে গ্রামের শোভা দেখতে লাগল।হটাত করে চোখ গেল নিচে উঠানে। সেই মেয়েদের দল উঠানে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছে। পরী কে দেখতে ঠিক এক রাজকুমারীর যেন সখী পরিবেষ্টিত হয়ে রয়েছে সেই রকম লাগছে। অভির চোখ আবার যেন পরীর শরীরের আঁকিবুঁকি মাপার জন্যে আনচান করছে। পরীর গঠন যেন প্রাচিন এক বালি-ঘড়ির মতন। তিন তলার ছাদ থেকে অভি পরীর রুপ ব্যাস এইটুকুই দেখে মন শান্তি করতে হল।
পরীর অপরূপ সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে প্রেমে পরে গেছে অভি। এক অদৃশ্য চুম্বকীয় শক্তি বাঁ ভাললাগা যেন ওকে পরীর দিকে টানছে। কিছু পরে মেয়েদের দলটি উঠান ছেড়ে অন্য দিকে চলে গেল।
বিমোহিত সৌন্দর্য
অভি পুনরায় পরীর চিন্তায় হারিয়ে গেল, যদি পরী ওর সাথে দেখা করতে না আসে? কিন্তু না আসার ত কোন কারন খুঁজে পাচ্ছে না। অভি’ত পরীর আত্মীয় হয় মাত্র, দেখা করতে আসা বা কথা বলা দৃষ্টিকটু নয়।
সূর্যি পশ্চিম আকাশের দিকে ঢলে চলেছে। বাড়ির সকলে নিজেদের সাজসজ্জা নিয়ে ব্যাস্ত। বিয়ে বলে কথা তাই সবাই নিজেদের কে নিখুত করে তুলতে তৎপর। অভি বরযাত্রী। অভি জানতে পারল যে কনের বাড়ি বসিরহাট থেকে অনেক দূর, রানাঘাট নামক এক জায়গায়, বাসে প্রায় ঘন্টা চারেক লাগবে যেতে। বিয়ের লগ্ন মাঝ রাতে।
বাঙ্গালীর প্রিয় পোশাক ধুতি পাঞ্জাবী। সাধারনত অভি ধুতি পাঞ্জাবী পরেনা, কিন্তু খুব কাছের কারুর বিয়ে হলে ধুতি পাঞ্জাবী পরে। অভি একটি ধাক্কা পাড়ের ধুতি আর তসরের পাঞ্জাবী পরে। গায়ে জড়িয়ে নেয় ঘিয়ে রঙের কাশ্মিরি শাল। এই জন সমুদ্রে অভিকে একদম আলাদা লাগছে ওর পোশাকের জন্য। এককোনে দাঁড়িয়ে থাকে অভি, চারদিকে সাজ সাজ কোলাহল।
সূর্যি পশ্চিম দিগন্তে পাটে চলে গেছে। বিয়ে বাড়ি সহস্র আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। বিয়ের ভিড়ে অভি আবার একা সাথে শুধু পরীর মুখাবয়াব চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। এমন সময়ে হটাত করে কেউ অভির পাঞ্জাবির হাতা ধরে টান মারে। পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা ছেলে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছ।
অভি ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি হল?"
ছেলেটি উত্তর দিল, "আমি নীলাঞ্জন। সবাই আমাকে দুষ্টু নামে ডাকে, আমি তোমার শশাঙ্ক মামার পুত্র।"
অভি হাত বাড়িয়ে হাত মেলায় দুষ্টুর সাথে, "তোমার সাথে দেখা করে বেশ ভাল লাগল।"
দুষ্টু উত্তর দিল, "আমার ছোটো পিসি, পরী, তোমাকে উঠানে ডাকছে।"
অভি ওকে জিজ্ঞেস করে, "কেন ডাকছে?"
ওদিকে মনে তখন ওর নাচন ধরেছে!
দুষ্টু একটি শয়তানি হাসি হেসে বলে, "দেখা করে নিজেই জিজ্ঞেস করে নিও কেন ডাকছে।"
এই বলে দুষ্টু পালিয়ে গেল।
অভি উঠানের দিকে পা বাড়াল। প্রত্যেক পদে ওর বুকের ধুকপুকানি শতগুন বেড়ে গেছে, হৃদয়টা যেন পাঁজর ফেটে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করছে। সেই শীতের রাতে অধির ব্যাকুলতায় অভির ঘাম দিয়ে দিল।
উঠানে পা রাখতেই অভি দেখতে পেল যে পরী আর কিছু মহিলাদের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। সেই মহিলাদের মাঝে অভির মা ও বর্তমান। মাকে দেখে অভির বুকটা বেলুনের থেকে হাওয়া বেড়িয়ে যাওয়ার মতন চুপসে গেল।
মা ওকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করল, "এদিকে আয়। সারা দিন কোথায় ছিলিস তুই?"
পরী ওর দিকে দুষ্টুমি মাখা হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করল, "হ্যাঁ অভিমন্যু, সারাদিন কোথায় ছিলে?"
ওই হাসি দেখে, অভির মনে হল বলে ফেলে, "তোমার খেয়ালে ডুবে ছিলাম সারাদিন।"
মা ওকে জানিয়ে দিলেন যে বাস বিকেল ছ’টার মধ্যে ছেড়ে যাবে, যেখানেই থাকুক না কেন অভি যেন ঠিক সময়ে বাসে উপস্থিত থাকে।
পরী অভির পাশে এসে ওর মাকে বলল, "কোন চিন্তা করোনা উলুপিদি। ছোটো বেলায় ওকে যেমন দেখতাম ঠিক তেমনি করে দেখব আমি।"
পরীর দিকে তাকাল অভি। পরীর পরনে কালো রঙের জমকালো শাড়ি তাতে সোনালি সুতোর ভারী কাজ। রুপ দেখে মনে হল যেন আকাশ থেকে একটুকরো তারা মাটিতে নেমে এসেছে। পাশে দাঁড়িয়ে অভির বাজুতে হাত ছোঁয়াল পরী। হাতের ছোঁয়ায় অভির সারা অঙ্গে যেন বিদুত্য খেলে গেল। অভির নাকে পরীর সেই মনমাতান জুঁইয়ের গন্ধে ভরে উঠল। ওর দিকে তাকিয়ে দেখল ওর মুখ। টিয়ে পাখীর মতন নাক, টানা টানা কাজল কালো দুই চোখ, দুই ভুরু যেন কালো দুই চাবুক। ঠোঁট জোড়া যেন রসাল কোন ফল।
অভির দিকে তাকিয়ে পরী ইশারা করল ওর সাথে হাঁটতে। নির্বাক হয়ে এতক্ষণ অভি শুধু পরীকে দেখে যাচ্ছিল, ওর কথা শুনে হতবাকের ন্যায় ওর পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল।
পরী ওকে জিজ্ঞেস করল, "তোমার কি ছোটবেলার কোন কথাই মনে নেই?"
নির্বাক অভি মাথা নাড়ল, "না নেই।"
পরী, "তুমি নাকি পড়াশুনায় বেশ ভাল।"
অভি আবার মাথা নাড়ল, "হুম।"
পরী, "তোমাকে না এই ধুতি পাঞ্জাবিতে দারুন হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। তুমি কি সবসময়ে ধুতি পাঞ্জাবী পর?"
নির্বাক অভি আবার মাথা নাড়ল, "না"।
কথা কি বলবে অভি ওত বাক শক্তি হারিয়ে শুধু পরীর কথা শুনে যাচ্ছে।
পরী, "আমি গ্রাজুয়েসান ফিসিক্সে করেছি। শুনলাম তুমিও নাকি ফিসিক্সে গ্রাজুয়েসান করছ?"
অভি আবার মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ।"
পরী, "আমি আরও পড়তে চাই। আমার মা আমার বিয়ের জন্যে ছেলে দেখছে। আমি অনেক বলে কয়ে উলুপিদিকে ডাকিয়েছি। উলুপিদি হাইয়ার পড়াশুনা করে এখন কলেজে চাকরি করেন। উনি যে কলেজে চাকরি করেন সেই কলেজে আমি ছোটো বেলায় পড়তাম। আমি আশা করে আছি যে তোমার মা আমার মাকে বলে বুঝাবে যাতে আমি আগেও পড়াশুনা করতে পারি আর উলুপিদির মতন আমিও কলেজে টিচার হতে চাই।"
অভি চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে ওর পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। পাশাপাশি হাঁটার ফলে মাঝে মাঝে পরীর হাত অভির হাতের সাথে ছুঁয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝ আঙ্গুল গুলির একে ওপরকে ছঁচ্ছে। আঙ্গুলের সেই কোমল স্পর্শে অভির শিরদাঁড়ায় যেন বিদ্যতু খেলে যায়। বারে বারে অভির নজর পরীর মুখের দিকে চলে যায়।
পরী, "তোমার মাকে আমি সব বুঝিয়ে বলেছি। উলুপিদি বলেছেন যে ঠিক সময়ে আমার মাকে সব বুঝিয়ে বলবে যাতে আমার মা আমাকে আগেও পরাশুনার জন্য বারন না করে। আমি জানি যে আমার মা তোমার মায়ের কথা উপেক্ষা করতে পারবে না। আমি মায়ের মুখে শুনেছি যে তোমার মা নাকি আমাকে নিজের মেয়ের মতন ভালবাসত আর আমার মা তোমার মায়ের সব কথা শুনত। সেইসব দিন চলে গেছে, আর আমাদের মাঝের ব্যাবধান অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু কিছুদিন আগে তোমার মায়ের কথা উঠতে আমার মায়ের চোখে জল চলে আসে। আজও আমার মা উলুপিদির কথা মনে করে শ্রদ্ধায় মাথা নত করে। সেইসব শুনে আমার মনে হল যে আমি যদি উলুপিদিকে আমার মনের কথা খুলে বলি আর উলুপিদি যদি আমার মাকে বলে তাহলে আমার মা তোমার মায়ের কথা ফেলতে পারবে না।"
অভির দিকে তাকিয়ে পরী জিজ্ঞেস করে, "তোমার কি মনে হয় অভিমন্যু? মা আমাকে পড়াশুনা করতে দেবে?"
নির্বাক অভি আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনতে চেষ্টা করল, কি উত্তর দেবে, ওর কানে ত একবর্ণ ও কথা ঢোকেনি।
পরী একটু রাগত ভাবে বলল, "কি হল অভিমন্যু? তখন থেকে শুধু আমিই কথা বলে যাচ্ছি। তোমার কি জিব নেই নাকি না বোবা তুমি। তখন থেকে শুধু গরুর মতন মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিচ্ছ যে। কিছু’ত উত্তর দেবে নাকি?"
আকাশের দিকে তাকিয়ে অভি বুক ভরে এক নিঃশ্বাস নিল। বুকের মধ্যে সাহস জুগিয়ে দুম করে বললে ফেলল, "পরী তুমি ভারী সুন্দরী।" কথাটা বলে ফেলেই চোখ বন্ধ করে নেই অভি, এই বুঝি পরী ওর গালে সপাটে এক চড় কসিয়ে দেয়।
পরী ওর কথা শুনে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। অভির দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "তুমি তার মানে আমার কোন কথাই শোনোনি, তাইত। তুমি একদম শয়তান ছেলে, মনে মনে আবার আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে?"
অভির হাতে সজোরে একটা থাপ্পর মেরে বলল, "তুমি না খুব শয়তান।"
অভি মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে পরীর দিকে তাকিয়ে বলল, "না সেই কথা নয়। আমি তোমার কথা সব শুনেছি কিন্তু তুমি ভারী সুন্দরী দেখতে, পরী।"
পরী লাজুক হেসে উত্তর দিল, "দুষ্টু ছেলে, যাই হক, থ্যাঙ্কস ফর দা কমপ্লিমেন্টস।"
অভি জিজ্ঞেস করল, "তোমার বান্ধবীরা কোথায়, তুমি তাদের সাথে কেন নয়?"
পরী উত্তরে জানাল যে, ওর বান্ধবীদের বউভাতে নিমন্ত্রন করা হয়েছে। যেহেতু পরী বাড়ির সবার ছোটো সেইজন্য এই ভিড়ে ওরও খুব একা একা লাগছে।
অভির মন ব্যাকুল হয়ে উঠল, একটু খানি পরীর ছোঁয়া পাওয়ার জন্য হাত বাড়াল পরীর দিকে। ঠিক সেই সময়ে অভির মা ওদের কে ডাক দিলেন, বললেন যে বাস ছাড়ছে ওরা যেন বাসে উঠে পরে। কপালে করাঘাত করল অভি, "ধুর বাবা, এই সময়ে কি মাকে ডাক দিতে হত, একটু পরে ডাক দিলে হত না।"
পরী বুঝতে পারে অভির মনের কথা, বুঝতে পারে যে অভি ওর দিকে হাত বাড়াচ্ছিল। ওর দিকে তাকিয়ে চোখে মুখে দুষ্টুমি ভরা এক হাসি দিয়ে বলল, "আমি অপেক্ষা করে থাকব কিন্তু......"
এই বলে অভিকে ওখানে একা ছেড়ে বাসের দিকে দৌড়ে চলে গেল।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
প্রথম চুম্বন #2#

বাস ভর্তি বরযাত্রী, মা বাবা, মামা মাসি আরও অনেক আত্মীয় সজ্জন। কোলাহলে বাসের ভেতরে থাকা দায়। অচির উৎসুক আঁখি ওই ভিড়ে শুধু পরীকে খুঁজে বেড়ায়। কিছু পরে দেখতে পায় যে পরী শেষের দিকের একটা সিটে বসে ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
ওকে দেখেই জোরে ডাক দেয় পরী, "এদিকে অভিমন্যু। আমি একটা সিট রেখে দিয়েছি তোমার জন্য।"
অভি সুবোধ গাধার মতন মাথা নাড়িয়ে ওর পাশের সিটে গিয়ে বসে পরে। পরী জানালার দিকে বসে আর পাশে অভি। ভিড় ভর্তি বাস লোকজনের জন্যে গরম হয়ে ওঠে। সবাই যেন তারস্বরে চিৎকার করছে। কিছু পরে বরযাত্রীদের বাস রানাঘাট উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
রানাঘাট পৌঁছতে অনেক দেরি, সেইজন্য অভির মা প্রস্তাব দিলেন যে একটু নাচ গান হয়ে যাক। সবাই মায়ের কথা শুনে সম্মতি জানাল। কিন্তু প্রশ্ন উঠল যে শুরু কে করবে। বড়রা প্রস্তাব দিলেন যে ছোটোরা আগে শুরু করুক।
অভি আর পরী পাশাপাশি বসে, একজনের বাজু আরেক জনের বাজুর সাথে ঘসা খাচ্ছে। পরী বারে বারে এক প্রশ্নমাখা চোখ নিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে দেখছ, কিন্তু মুখে কিছু বলছে না। অভির মনের ভেতরে যেন সমুদ্রের উথাল পাথাল ঢেউ বয়ে চলেছে, অকি কোন এটম বম্ব ফেলেছে নাকি, না চুপ করে থাকাটাই নিরাপদ।
বাসের সামনে থেকে কেউ ডাক দিল, "পরী কোথায়, পরী। অনেকক্ষণ পরীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছেনা, কি ব্যাপার। পরীর’ত এই রকম হবার কথা নয়।"
অভি মুখ নিচু করে পরীর কানে কানে বলল, "পরী, কি হয়েছে? আমি কি কিছু ভুল করে ফেলেছি? আমি ক্ষমা চাইছি যা ভুলে করেছি তার জন্যে। দেখ সারা বাসের লোক তোমাকে খুঁজছে, পরী।"
পরী অভির মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করে উত্তর দিল, "আমি ভেবেছিলাম যে তুমি আমার কথা গুলো শুনেছ, কিন্তু তুমি আমার কোন কথাতেই কান দাও নি। তুমি বোঝো না, আমি পড়াশুনা করতে চাই।"
অভি, "আই আম সরি, পরী। আমি সত্যি বলছি যে আমি তোমার সব কথা শুনেছি। এবার প্লিস একটু হাসো, দেখ সবাই তোমাকে খুঁজছে পরী, উত্তর দাও।"
পরীর চোখ টলটল করে উঠল, কিন্তু ও অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে। মনের অবস্থা লুকিয়ে রাখার মতন যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে।
চিৎকার করে উত্তর দেয়, "পরী এখানে..." পরী উঠে দাঁড়িয়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলল, "আমাকে একটু যেতে দেবে নাকি?"
বাসের সিট একদম চাপা, যাবার জায়গা কম। পরীকে একটু কুঁকড়ে বের হতে হল। ওর মসৃণ পিঠ অভির বাজুতে স্পর্শ করল, চিবুক ছুঁয়ে গেল শিরদাঁড়ার ওপরে। মসৃণ ত্বক যেন মাখন। অভি হাত দিয়ে পরীর পাতল কোমর ধরে ওকে বের হতে সাহায্য করে। নিরাভরন ত্বকের ওপরে অভির গরম হাতের স্পর্শে পরী একটু কেঁপে ওঠে। অভি দুষ্টুমি করে পরীর উন্মুক্ত পেটের ওপরে আলতো করে চাপ দেয়। অভির সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়।
নাক কুঁচকে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "একটু সবুর কর অভিমন্যু, আমি এখুনি আসছি।"
বরযাত্রী ভরা বাস, রাতের ঘন অন্ধকার কেটে দ্রুত গতিতে গন্তব্য স্থলের দিকে দৌড়ে চলেছে। আত্মীয় সজ্জনের কোলাহলে বাস মুখরিত। পরীর সাথে সাথে অনেক লোক ওর চারদিকে নাচ গান শুরু করে দিল। পরী ওদের ভিড়ে হারিয়ে গেল। না ঠিক নয়, বারে বারে পরী আড় চোখে অভির দিকে তাকিয়ে দেখে। চোখ ইশারায় কাতর আহ্বান জানায় ওর সাথে অংশ গ্রহন করতে। কিন্তু অভি একটু ঘরকুন প্রকৃতির ছেলে, বাইরের মানুষের সাথে মিশতে ওর একটু সময় লাগে। অনেকক্ষণ নাচার পরে সবাই ক্লান্ত হয়ে সিটের ওপরে এলিয়ে পরে। যাত্রীদের মধ্যে কেউ প্রস্তাব দেয় গানের খেলা খেলার।
পরী গান বাঁধে, "পিয়া তু আব ত আজা... শোলা সা মন দেহকে আকে বুঝা যা..."
গান গাইতে গাইতে বারে বারে অভির দিকে তাকায় পরী।
পরীর চোরা চাহনি বাসের অনেকের লোকের চোখে পরে যায়। অভির মা বাবার মনে সেইরকম কিছু উদয় হয় না।
অভি ওর গান শুনে আর চুপ করে বসে থাকতে পারেনা। বুক ভরে, একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে সাহস জুগিয়ে গেয়ে ওঠে, "তুঝে দেখা ত ইয়ে জানা সনম, প্যার হোতা হ্যায় দিওানা সনম..."
ওর গান শুনে পরী অবাক হয়ে যায়। বাসের বাকি লোকের মুখে প্রশ্ন ওঠে কে এই ছেলেটা আগে ত কোনদিন দেখিনি?
পরী ওদের উত্তর দেয়, "এ অভিমন্যু।" অভির মায়ের দিকে দেখিয়ে বলে, "উলুপিদির ছেলে।"
বড়রা মাকে বলে, "কিরে উলুপি তোর ছেলে যে অনেক বড় হয়ে গেছে।"
এই সব কথাবার্তার মাঝে পরী ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। পরী প্রস্তাব দেয় যে যেহেতু গানের খেলা চলছে সুতরাং সবাই নিজের নিজের সিটে বসে গান গাইতে পারে। অভির মন নেচে ওঠে, অনেকক্ষণ পরে ও আবার পরীর পাশে বসার সুযোগ পাবে।
পরী অভির কাঁধের ওপরে ভর দিয়ে ওর পেছনে সিটের ওপরে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। কোমল বক্ষ যুগল অভির ঘাড়ের ওপরে পিষ্ট হয়। অভির মাথার ওপরে নিজের চিবুক রেখে গলার দু পাশ দিয়ে সামনের দিকে হাত নামিয়ে দেয় পরী।
গানের খেলা আবার শুরু হয়ে যায়। মাঝে মাঝেই পরী ওর সরু সরু আঙ্গুল দিয়ে অভির চুলে বিলি কাটতে থাকে। আরামে অভির দু’চোখ বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। অভির মা একবার আড় চোখে ওদের লক্ষ্য করে।
কিছু সময় যাবার পরে একে একে সবাই ক্লান্ত হয়ে পরে, একে একে গান বন্ধ হয়ে যায়।
পরী সবাইকে জিজ্ঞেস করে, "কি হল, আর কি কেউ গান টান গাইবে না?"
অভির মা উত্তর দেয়, "না পরী, আর নয়। সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সাড়ে ন’টা নাগাদ আমরা রানাঘাট পৌঁছে যাব, কিছু ক্ষণ রেস্ট নিয়ে নাও নাহলে বিয়ে বাড়িতে সবার চোখ মুখের অবস্থা খারাপ দেখাবে।"
মা কলেজের শিক্ষিকা, তার গম্ভির গলার আওয়াজে কেউ কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল।
পরী অভির পাশে জানালার দিকের সিটে আরাম করে বসে পড়ল। রাতের অন্ধকার কেটে এগিয়ে চলে বাস। সবাই চুপ, শুধু মাত্র বাসের ইঞ্জিনের শব্দ কানে আসে। পরী অভির ডান কাঁধে মাথা রেখে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। সাজ নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে পরী কোন শীতের কাপড় আনেনি। জানালার ফাঁক দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়ায় মাঝে মাঝে পরী কেঁপে ওঠে, অভি নিজের গায়ের শাল খানি খুলে ওর গায়ে জড়িয়ে দেয়।
শাল পরানোর সময়ে কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, "এত চুপ কেন, পরী?"
পরী ওর দিকে বড় বড় চোখ করে উত্তর দেয়, "থ্যাঙ্কস। আমার এমনিতে একটু ঠাণ্ডা লাগছিল।" হেসে বলে, "আমি কি বোকা, শীত কালেও কোন ঠান্ডার কাপড় আনিনি।"
অভি মজা করে ওর সাথে, "না না, তুমি শুধু বোকা নও, তুমি একটি সুন্দরী বোকা মেয়ে।"
পরী লাজুক হেসে বলে, "ধুর দুষ্টু ছেলে, দূর হ।"
অভি, "কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি কি তোমাকে?"
পরী, "কি?"
অভি, "তোমার কলেজের কথা..."
পরী, "এই একরকম গেছে কলেজ। সেই রকম কিছু বলার মতন নেই।"
অভি, "তোমার কি কোন বয় ফ্রেন্ড আছে?"
প্রশ্নটা শুনে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল অভির দিকে, "এই কথা কেন জিজ্ঞেস করছ?"
প্রশ্নটা করে মাথা উঠাল পরী, অভির চেহারা আর পরীর চেহারার ব্যাবধান কমে এসেছে। একে ওপরে উষ্ণ নিঃশ্বাস ওপরের মুখের ওপরে অনুভব করতে পারছে।
অভির গলা শুকিয়ে এল, বাধও বাধও হয়ে উত্তর দিল, "না মানে এমনি জিজ্ঞেস করলাম। তুমি যা সুন্দরী তাতে তোমার একাধিক বয়ফ্রেন্ড থাকা কোন অসম্ভব ব্যাপার নয়।"
নাক কুঁচকে দুষ্টু হেসে পরী বলল, "আমি যেন কিছু জ্বলার গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে? অভি, আমি কিন্তু সম্পর্কে তোমার মাসি হই, সেটা মনে থাকে যেন।"
"অভি" নিজের নাম ছোটো করে পরীর ঠোঁটে শুনে অভিমন্যুর হৃদয় নেচে ওঠে।
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় অভি, "না না, আমি কেন ঈর্ষান্বিত হব।"
কিন্তু মনে মনে অভি সেই অচেনা অজানা লোকের ওপরে ঈর্ষা বোধ করে।
পরী, "না গো। আমার কোন বয় ফ্রেন্ড নেই। আমার অনেক বন্ধু ছিল তাদের মধ্যে অনেক ছেলে বন্ধুও ছিল কিন্তু কাউকে মনে ধরেনি জানও। আজ পর্যন্ত, সেই রকম কাউকে পাইনি যাকে মন দিতে পারি।"
অভি, "তার মানে তুমি তোমার হৃদয়ের সব জানালা দরজা বন্ধ করে রেখেছ, এই তো।"
বাঁকা হাসি হাসে পরী, "না ঠিক তা নয়। আজ পর্যন্ত আমি পাইনি এটা বলতে চাই।" অভি কিছু বুঝতে না পেরে ওর মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটে দুষ্টুমিরে হাসি মেখে উত্তর দিল, "ধুর বোকা ছেলে। আজ পর্যন্ত পাইনি বলেছি, এখন পর্যন্ত পাইনিত বলিনি।"
কথা শুনে মাথা ঘুরে গেল অভির, মানে পরী কি বলতে চায়? পরীও ওর প্রতি আকৃষ্ট? ওর কথার মানে বুঝে অভির বুকের মাঝে দুমদাম আওয়াজ শুরু হয়ে যায়।
নিজেকে একটু সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে অভি, "আচ্ছা একটা কথা বল পরী। তুমি আজ বিকেলে আমাকে তোমার কথা গুলো বলতে গেলে কেন?"
পরী, "জানি না কেন, অভি। আমার মনে হল তাই তোমাকে বলে ফেললাম। এবারে একটু চুপ করবে কি, আমি একটু রেস্ট নেব।"
অভি ডান হাতে পরীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিল। অভির কাঁধে মাথা গুঁজে চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইল পরী। অভির নচ্ছার আঙ্গুল গুলো, পরীর কোমরের পাশের উন্মুক্ত পেটের ওপরে আদর করতে থাকে। বাসের নিস্প্রভ আলোয় পরী কে ঠিক স্বর্গের অপ্সরার মতন দেখাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে সামনের দিকে থেকে কেউ জানিয়ে দিল যে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস বিয়ে বাড়ি পৌঁছে যাবে।
অভি পরীর কাঁধে হাত রেখে জাগাতে চেষ্টা করে, "পরী ওঠও। আমরা কিছুক্ষণের মধেই বিয়ে বাড়ি পৌঁছে যাব।"
পরী, "উম্মম... এত তাড়াতাড়ি কেন, আমাকে একটু ঘুমুতে দাও না... প্লিস..."
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস বিয়ে বাড়ির সামনে পৌঁছে গেল। অভির মা ওদের সিটের সামনে এসে পরীকে ওঠাল। সেই সময়ে অভি বুঝতে পারল যে ওর মা পরীকে ঠিক নিজের মেয়ের মতন ভালবাসে।
মা বললেন, "পরী সোনা মা আমার, উঠে পর, আমাদের নামতে হবে।"
মায়ের গলা শুনে পরী নড়েচড়ে বসল, আরামোড়া ভেঙ্গে মুখচোখ কচলে হাতের ব্যাগ খুলে মেকআপ করতে শুরু করল। বাস থেকে সবাই নেমে গেছে, বাসের মধ্যে শুধু অভি আর পরী। পরী নিজের মেকআপ নিয়ে ব্যাস্ত।
অভি উঠে দাঁড়াল, পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল একবার, বুকের মাঝে যেন একটা ফেরারি চলছে। ওর দিকে ঝুঁকে পড়ল অভি। মাথার ওপরে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করে মুখ তুলে তাকাল পরী। চার চোখ এক হল, পরীর দু’চোখ চকচক করছে এক অজানা আশঙ্কায়। অভি, সারা শরীরের শেষ শক্তিটুকু একত্রিত করে চোখ বন্ধ করে ঠোঁট নামিয়ে আনল পরীর কপালের ওপরে। পরীর উষ্ণ কপালের ওপরে ভিজে ঠোঁটে একটি ছোট্ট চুমু খেয়ে এক লাফে বাস থেকে নেমে পড়ল অভি। ভয়ে আর পেছন দিকে তাকাল না।
মেঘ রোদ্দুর (#01)
অভি বাস থেকে নামতেই ওর মা ওকে এককোনে ডেকে নিয়ে যায়। মায়ের ডাক শুনে অভির ত আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবার যোগাড়। বুকের মাঝে এক ঝড় ওঠে, মা কি বুঝতে পেরে গেল নাকি ওর আর পরীর হৃদ্যতা?
মা অভিকে বললেন যে রাতের খাবার যেন তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয় অভি, বরযাত্রী নিয়ে বাস ফিরে যাবে রাত এগারোটার মধ্যে। অভিকে জিজ্ঞেস করলেন যে ও কি করতে চায়, থাকতে চায় না বরযাত্রীর দের সাথে ফিরে যেতে চায়। ওর অনেক দিনের সখ বাঙালি বিয়ে দেখার, তাই অভি জানিয়ে দেয় যে ও রাতে থাকবে এবং পরের দিন বরের সাথে বাড়ি ফিরবে। মা সম্মতি দিয়ে দিলেন।
কনের বাড়িতে বরযাত্রী পৌঁছান মাত্রই চারদিকে হইহই রব উঠল, বর এসেছে বর এসেছে। বিয়ে বাড়ির ভিড়ে আবার অভি একা। এখানে পরীকে খোঁজা বোকামো। পরীর ছোটো দাদার বিয়ে আর সে মজা করবে না সেটা ভাবা উচিত নয়। ওই আত্মীয় সজ্জনের মাঝে পরী কোথাও হারিয়ে আছে। অভি বিয়ের মণ্ডপে একা বর, সুব্রতর সাথে বসে। ', মন্ত্র পরে চলেছে।
মাঝে মাঝে পরীর দেখা পায় অভি, এদিক ওদিক নাচা নাচি করছে, এমন দেখাচ্ছে যেন খুব ব্যাস্ত।
ওর অর্বাচীন ব্যাস্ততার মধ্যেই পরী একবার অভির কাছে আসে, অভির বুক ধুকপুক করছে, এই বুঝি কিছু বলে ফেলে। পরী ওর দিকে না তাকিয়েই বলে "এই কি গো, এই রকম গাধার মতন একা বসে কেন? এস না আমার সাথে।"
অভিও ওর দিকে তাকাতে পারছে না, গলা শুকিয়ে এসেছে অভির। তোতলাতে তোতলাতে উত্তর দিল, "না মানে, তোমার সাথে সবসময়ে মহিলারা থাকেন, আর মহিলাদের সঙ্গ আমার একটু অস্বস্তিকর।"
পরী, "ঠিক আছে তাহলে, একা একা বসে ঠাক এখানে। যাই হক জানিয়ে গেলাম যে ডিনার খেতে ভুলে যেও না যেন। সবাই কিন্তু খাবার পরে চলে যাবে, শুধু মাত্র সুব্রতদার কয়েক জন বন্ধুরা রাতে থাকবে।"
অভি, "আমি রাতে থাকছি, মা আমাকে পারমিসান দিয়ে দিয়েছে।"
পরী এতক্ষণ পরে কৌতূহলী চোখ নিয়ে অভির দিকে তাকাল, "তুমি কি বলতে চাও যে আমিও রাতে থাকব?"
অভি, "সেটা তোমার ব্যাপার, পরী।"
পরী ওর কথা শুনে ঝাঁঝিয়ে উঠল, "ঠিক আছে, তোমাকে আমি দেখে নেব, আর তুমি অচিরেই জানতে পারবে আমি কি করতে পারি।" রেগে মেগে অখান থেকে চলে গেল পরী।
রাতের খাবার পরে বরযাত্রী ফিরে যাবার জন্য তৈরি। অভি ওদের সাথে বাসের কাছে দাঁড়িয়ে। পরী ফিরে যেতে নারাজ।
অভির মা বারংবার পরীকে বঝাতে চেষ্টা করে চলেছেন, "পরী, কোন মেয়েছেলেরা রাতে এই বাড়িতে থাকছে না। সেই মত অবস্থায় কিকরে তোমাকে আমি রেখে যাই বল। মাসিমা কি বলবে?"
পরী মাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে, "কেন, তুমিও ত একসময়ে আমাকে নিজের মেয়ের মতন ভালবাসতে। তুমি অনুমতি দিলে ত আর কোন কথা থাকে না। প্লিস প্লিস প্লিস, আমাকে রাতে থাকতে দাও।"
মা শেষ পর্যন্ত পরীর আব্দারের কাছে মাথা নোয়াল। অভিকে কাছে ডেকে বলল, "এই ছেলে, পরী রাতে এখানে থাকবে। ওর দিকে নজর রাখিস। ওর যদি কিছু হয় তাহলে আমি তোকে আস্ত রাখব না।"
পরী রাতে থাকবে যেনে অভির মন খুশিতে ভরে উঠল। বাধ্য ছেলের মতন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে ও পরীর খেয়াল রাখবে। পরী মায়ের গলা জড়িয়ে আদর করে বলল, "আমার সোনা দিদি – মা। আমি ভাল করে থাকব একদম দুষ্টুমি করব না।"
বরযাত্রী প্রস্থান করার পরে অভি আবার বিয়ের মন্ডপে গিয়ে বসে পড়ল। পরী আবার ভিড়ের মধ্যে কোথাও হারিয়ে গেল। অভি মাঝে মাঝেই দেখা পায় যে পরী ওর শালখানি গায়ে জড়িয়ে এদিক ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওর চলন দেখে অভির মনের ভেতরটা আকুলি বিকুলি করে উঠল, মনে হচ্ছিল যেন এই উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আর ওই রাঙ্গা ঠোঁটে শত চুম্বন এঁকে দেয়।
ধিরে ধিরে রাত গভীর হতে থাকে। কনের বাড়ির অনেক লোকজন চলে গেছে। বরের বাড়ি থেকে শুধু সুব্রতর দুই বন্ধু, সুব্রতর বড় দা, সুমন্ত মামা আর অভি আর পরী। বিয়ের লগ্ন মাঝ রাতে, ধিরে ধরে লগ্নের সময় ঘনিয়ে আসছে।
এর মধ্যে কোন এক সময়ে পরী চুপিচুপি এসে অভির পাশে এসে গা ঘেসে দাঁড়ায়। হাতের ওপর হাতের স্পর্শ, মাঝে মাঝে কোমল আঙ্গুলের ছোঁয়া। কিন্তু কেউই কারুর দিকে তাকায় না, দু’জনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে হোমের আগুনের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে।
এরই মাঝে একজন মহিলা এসে পরীকে জিজ্ঞেস করে যে ও শুতে যেতে চায় কিনা। বরযাত্রীর জন্য আলাদা করে রাতে থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। পরী মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় যে ও শুতে যেতে চায় না।
অভি ওকে জিজ্ঞেস করল যে একটু হাটা যেতে পারে কিনা। কিছু উত্তর না দিয়ে চুপচাপ অভির পাশে হাঁটতে শুরু করল পরী। দু’জনে অন্ধকার রাস্তা ওপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। শীতের রাত, নিজেকে গরম রাখার জন্য অভির শালটা গায়ের ওপরে জড়িয়ে রেখেছে। দুই হাত বুকের কাছে আড় করে, মাটির দিকে তাকিয়ে চুপ করে অভির পাশে হেঁটে চলেছে। দুজনেই একদম চুপ কারুর মুখে কোন কথা নেই। এই নিস্তব্ধতা বড় হ্রদয় বিদারক হয়ে দাঁড়ায় দু’জনার পক্ষে। অভি ভাবতে থাকে যে কাউকে ত শুরু করতে হবে।
কিছু দোনামোনা ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করল, "এত চুপ করে কেন পরী? কিছু কি হয়েছে?"
গলা কেঁপে ওঠে পরীর, "তুমি বলতে চাও যে কিছুই হয়নি।"
অভি, "আমি কি করলাম?"
পরী, "তুমি এই বলতে চাও যে তুমি কিছুই করনি। জান আমি যেন একটা বিদ্যুৎ ঝটকা খাই। আমি অনেকক্ষণ চুপ করে বসে ছিলাম সিটের ওপরে, নড়বার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি, আর তুমি বলছ যে তুমি কিছু কর নি?"
কাঁপা গলায় বলল অভি, "না মানে, হটাত করে কেন জানিনা খুব ইচ্ছে হল..."
পায়ের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চলেছে পরী, "চোখের সামনে সবকিছু কালো অন্ধকার হয়ে গেছিল। এমন টি মনে হয়েছিল যেন আমি বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে স্থাণুবৎ হয়ে গেছি।"
রাস্তার মাঝে পরীর কাঁধে হাত রেখে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল অভি। মাথা নিচু করে পরীর মুখের দিকে তাকাল। তর্জনী দিয়ে পরীর চিবুক স্পর্শ করে উঁচু করে নিল ওর মুখ। পরীর দু’চোখ বন্ধ, অজানা এক আশঙ্কায় তিরতির করে কাপছে দু ঠোঁট। দু’চোখের বড়বড় পাতা কাপছে তার সাথে। গায়ের শালখানি আরও আস্টেপৃষ্টে নিজের গায়ের সাথে জড়িয়ে ধরল পরী। অভির ঠোঁট ধিরে ধরে নেমে এল, পরীর লাল ঠোঁটের কাছে। প্রেয়সীর গরম নিঃশ্বাস সারা মুখের ওপরে ঢেউ খেলে বেড়াচ্ছে। বুকের ভেতরে যেন হাপর টানছে। এক অনাবিল প্রত্যাশায় বুক কাপছে পরীর, নিঃশ্বাসে ঝরে পড়ছে আগুন। নাকে নাক ঠেকল প্রথমে। ডিসেম্বরের সেই শীতের রাতেও নাকের ডগায় ঘামের ফোঁটা অনুভব করল দু’জনেই। দুজনের ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে। ঠোঁটের মাঝে একচিলতে ব্যাবধান। এত কাছে আসার পরেও যেন সাহস কুলিয়ে উঠতে পারছে না অভি, কোন কিছু বলার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছে।
এক গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে, কাজল কালো দুচোখ খুলল পরী। চোখে জল টলমল করছে। নাকের ডগা লাল হয়ে উঠেছে। অবশেষে দুজনের মাঝের নিস্তব্ধতা ভাঙলও পরী। অশ্রু ভরা নয়নে অভির দিকে তাকিয়ে কম্পিত স্বরে বলে উঠল, "না অভি না। আমি পারব না অভি। আমার চোখের সামনে থেকে দূর যাও।"
কথাটা বলেই বিয়ে বাড়ির দিকে দৌড়ে চলে গেল।
সেই শীতের রাতে একা অন্ধকার রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে অভিমন্যু তালুকদার। বড় একা মনে হল নিজেকে, মনে হল কেউ নেই তার পাশে। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে খুব বড় এক টান দিল। আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করল, "আমি কে, আমি কি, কে এই অভিমন্যু?"
বুকের কোন এক কোণ থেকে উত্তর এল, "তুমি বিধ্বস্ত পরাজিত এক নাবিক!"
চোখে জল চলে এল অভির, নিজের মনকে বুঝাতে চেষ্টা করল যে চোখের জল সিগারেটের ধোঁয়ার জন্য এসেছে, কিন্তু পাপী মন মানতে চায় না সে কথা। অস্ফুট চিৎকার করে উঠল অভি, "না আমার কোন অধিকার নেই কাউকে আঘাত করার। শুচিস্মিতা কে আঘাত দেবার কোণ অধিকার আমার নেই।"
যা কিছু ঘটে চলেছে বা ঘটে গেছে তা হয়ত ঘটা উচিত হয়নি। ওরা কি কোন পাপ করেছে? এই সমাজ ওদের দুজনকে সাংসারিক জীবনের বন্ধনে হয়ত বাঁধতে দেবে না ওদের দুজন কে। কিছু সম্পর্ক এই সমাজের কাছে অপবিত্র।
মাথা নিচু করে এই সব ভাবতে ভাবতে বিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দিল অভি। এক সময়ে দূর থেকে কেউ অভি কে ডাক দিল। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখল সুব্রতর কোণ একজন বন্ধু অভিকে বিয়ের মন্ডপে ডাকছে। বিয়ের পালা শেষ, সবাই খেতে বসবে তাই অভির খোঁজ পড়েছে।
বিয়ের মন্ডপে প্রবেশ করে অভি দেখতে পেল যে পরী মন্ডপের এক কোনায় চুপ করে বসে। থমথমে চোখ মুখ নিয়ে নিস্পলক দৃষ্টিতে এক ভাবে তাকিয়ে রয়েছে নিভে যাওয়া হোমের আগুনের দিকে। ফর্সা নাকের ডগা গোলাপের মতন লাল হয়ে উঠেছে। খানিক দূর থেকে অভি বুঝতে পারল যে ওর চোখের পাতা ভিজে, পিঠের ওঠা নামা দেখে বুঝতে পারল যে ফুঁফিয়ে ফুফিয়ে কঁদছে পরী।
বড় ধাক্কা খেল অভি, কেন পরী কাঁদছে? এত একদম ভাল কথা নয়, কেউ জানতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
মেঘ রোদ্দুর (#02)
কিছু পরে কনের মা এসে পরীর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, "কি হয়েছে সোনা পরীর? তোমার নতুন বৌদি তোমার জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে আড় তুমি এখানে একা একা বসে? কি ব্যাপার? যাও খেতে যাও, সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।"
পরী চোখ মুছে ভদ্রমহিলার দিকে হেসে তাকিয়ে অনার সাথে খেতে চলে যায়।
অভি চুপচাপ খাওয়ার জায়গায় ঢুকে পড়ে। লক্ষ্য করে যে পরী ওর নতুন বউদির পাশে বসে হাসি মুখ নিয়ে খাচ্ছে। অভি খাবারে টেবিলে এক কোনায় বসে চুপ করে খেয়ে উঠে চলে যায়। খাবার সারাটা সময়ে কেউ কারুর মুখের দিকে তাকায় না। না দেখেও অভি ঠিক অনুমান করতে পারে যে ওর প্রান প্রেয়সী পরীর সেই অনুনাদশীল মেজাজ যেন কোণ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে।
খাবার পড়ে যে বিশ্রাম নেবার পালা। তখন রাত দুটো বাজে। অভি চুপচাপ বিয়ের মন্ডপে এসে এক কোনে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়ে আর হোমের নিভে যাওয়া আগুনের থেকে যে ধোঁয়া উদ্গিরন হচ্ছে তার দিকে নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মাথা শূন্য, কোন কিছু ভাবতে পারছে না অভি। সময়ের ঠিকানা ভুলে গেছে, কতক্ষণ কেটে যায় তার কোন ঠিকানা থাকেনা। কিছু সময় পরে মাথা ভার করে ঝিমুনি আসে অভির।
অকস্মাৎ কাঁধের ওপরে নরম হাতের চাপ অনুভব করে। নাকে ভেসে আসে জুঁই ফুলের মনমাতান সুঘ্রাণ। অবশেষে পরী অভির কাছে এসেছে। ওর দিকে তাকিয়ে, একটা চেয়ার পাশে টেনে পরীকে বসতে বলে। পরী ওর সামনে ওর দিকে মুখ করে চেয়ারে বসে। অভি ভাবলেশহীন চোখ নিয়ে পরীর দুষ্টু মিষ্টি চোখের দিকে তাকাল।
পরী জিজ্ঞেস করল, "তোমার ঠাণ্ডা লাগছে?"
অভি মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ"
ওর দিকে একটা শাল এগিয়ে দিলে বলে, "এটা গায়ে জড়িয়ে নাও।"
অভি, "আমারটা আমাকে দিয়ে দাও।"
পরী সুন্দর একখানি হাসি দিয়ে বলল, "না। এটা আজ থেকে চিরদিনের জন্য আমার।"
অভি, "যথা আজ্ঞা রানী।"
পরী, "আমি লক্ষ্য করছি যে তুমি অনেক সিগারেট খেয়েছ। কেন খেয়েছ?"
অভি সিগারেটটা মাটিতে ফেলে নিভিয়ে দিয়ে বলল, "ঠিক আছে বাবা, এটাই শেষ সিগারেট।"
পরী জিজ্ঞেস করল, "কেন থাকলে আজ রাতে?"
অভি উত্তর দিল, "আমি কোনদিন বিয়ের পুর অনুষ্ঠান দেখিনি, দেখার খুব ইচ্ছে হল তাই থেকে গেলাম।"
পরী অভিমান করে বলল, "আচ্ছা ঠিক আছে বুঝেছি। তুমি আমার জন্য থাকনি তাহলে।"
অভি, "দেখ পরী, সেই সময়ে আমি জানতাম না যে তুমি থাকবে। কোন মহিলারা রাতে থাকবে না ত আমি কি করে জানব যে তুমি থাকতে?"
পরী অভির হাতে আলতো করে একটা থাপ্পর মেরে বলল, "তুমি না একটা মস্ত গাধা। তুমি যখন থাকবে বলে ঠিক করেছিলে তাহলে আমাকে কে বার জানালে না কেন? তুমি একবারের জন্য এটা ভেবে দেখলে না যে এই রাতে বরযাত্রীর বাসে এমি একা একা কি করে বাড়ি ফিরব।"
অভি, "যাঃ বাবা। সত্যি আমি তোমাকে একদম বুঝে উঠতে পারছিনা জানো। বাসে সব আত্মীয় সজ্জন, সবাই তোমার চেনা।"
পরী, "তুমি না একটা খুব বড় গাধা। তুমি মেয়েদের মন কোনদিন বুঝবে না। কোনদিন বুঝবে না তুমি।"
অভিমান করে উঠে যাবার উপক্রম করে পরী। অভি ওর দু’হাত নিজের হাতে নিয়ে অনুনয় করে বলে, "প্লিস চলে যেওনা।"
পরী, "আমি কেন বসতে যাব তোমার পাশে? তুমি ত আমার জন্য রাতে থাকনি।"
অভি, "আই এম সরি বাবা। সোনামনা আমার, এবারে’ত রাগ কমাও।"
হাত ধরে পরী কে পাশে বসিয়ে দেয় অভি। পরী ওর কাঁধে মাথা রেখে ওর দুহাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আঙ্গুল গুলো নিয়ে খেলা শুরু করে।
অভি বিড়বিড় করে বলে, "আমি জানিনা এই সম্পর্ক আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে। এই পরিণতি কি হবে তাও আমি জানিনা।"
পরী, "অভি, আমি জানতে চাইনা এই পরিণতি। আমি শুধু মাত্র বর্তমানে বাঁচতে চাই, বাঁচতে চাই তোমার সাথে। শুধুমাত্র এই টুকু জানি আমি।"
অভি বাঁ হাতে পরীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে নিবিড় করে কাছে টেনে নিল। পরী ওর বাজুতে নাক ঘষে আলিঙ্গনের উষ্ণতায় নিজেকে ধিরে ধিরে সঁপে দিল। পরীর নিরাভরন কোমরের ওপরে হাত বুলাতে লাগল অভি। ওর ডান হাতখানি ঠোঁটের কাছে এনে ছোটো ছোটো চুম্বনে ভরিয়ে দিল। কোমল তর্জনী ঠোঁটের ভেতর নিয়ে আলতো করে চুষে দিল। উষ্ণ লালায় সিক্ত হয়ে ওঠে পরীর তর্জনী।
কেঁপে ওঠে পরী, প্রেমঘন মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে, "উম্মম্ম... প্লিস করো না সোনা। আমার সারা শরীরে কেমন যেন করছে। বুক কেঁপে উঠছে সোনা, প্লিস ছাড়।"
ওর কবল থেকে নিজের আঙ্গুল ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে পরী, কিন্তু সাথে সাথে অভির ঘাড়ের ওপরে নাক ঘষতে থাকে পরী। ভিজে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় অভির উষ্ণ ঘাড়ের ওপরে। ওদিকে অভি ওর তর্জনী মুখের মধ্যে পুরে চুষতে ছাড়ে না।
আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে বারংবার কেঁপে ওঠে পরী। ম্রিদুকনে কাতর স্বরে বলে, "প্লিস অভি দুষ্টুমি করে না, ছেড়ে দাও।"
অভি নিজের চয়ালের ওপরে পরীর ভিজে ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করে। পরী থেমে থাকেনা, ছোটো ছোটো চুম্বনে ভরিয়ে দেয় অভির গাল আর গলা। দু’জনার মাঝে প্রেমের বহ্নিশিখা জ্বলে ওঠে।
অভি পরীর তর্জনী ছেড়ে ওর দিকে তাকায়। গভীর আলিঙ্গনে বদ্ধ পরী, অভির পাঞ্জাবির কলার খামচে ধরে বুকের কাছে চলে আসে। কাজল কালো দু’চোখে প্রগাড় প্রেমের আগুন যেন অভির হৃদয়কে জ্বালিয়ে দিয়েছে। হাত দিয়ে কোমল গাল ছুঁয়ে ঠোঁট নামিয়ে আনল অভি, পরীর কপালের ওপরে। ভিজে উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে পরী। ছোটো ছোটো চুম্বনে ভরিয়ে দেয় ওর সুন্দর মুখখানি। প্রথমে কপাল, তারপরে বাঁকা ভুরুর ওপরে, আরও নিচে নামে অভির ঠোঁট, চোখের পাতার ওপরে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় অভি। দু’চোখ বন্ধ করে প্রেমের উষ্ণতায় নিজেকে সমর্পণ করে দেয় পরী। অভির ঠোঁট নেমে আসে পরীর নাকের ডগার ওপরে, বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠেছে নাকের ডগায়। অভি আলতো করে চুমু খায় নাকের ডগায়। অনাস্বাদিত ভালোলাগায় ভরিয়ে দেয় পরীকে।
তিরতির করে কাপে পরীর ঠোঁট, কিছু পরেই যে দুই ঠোঁটের মিলন ঘটবে সেই প্রহর গোনে। কলার ধরে টেনে অভির ঠোঁটের ওপরে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় পরী। অভি থাকতে না পেরে চেপে ধরে ঠোঁট। প্রথমে হালকা ছোঁয়া, তারপরে পাগলের মতন একে ওপরের ঠোঁট নিয়ে খেলা শুরু হয়ে যায়। জিব দিয়ে ঠোঁট চাটে কখন, কখন বা জিবের ডগা ঢুকিয়ে দেয় অভির উষ্ণ ঠোঁটের ভেতরে। দাঁতের ওপর দিয়ে আলতো করে বুলিয়ে দেয় জিবের ডগা। চুম্বনের ঘনত্ব পর্যায়ক্রমে বেড়ে ওঠে। অভি বা পরী কেউই এই প্রথম চুম্বনকে শেষ করে দিতে নারাজ। অভি হাত নিয়ে যায় পরীর মাথার পেছনে, ক্লিপে আঙ্গুল দিয়ে খুলে ফেলতে চেষ্টা করে খোঁপা।
সুদীর্ঘ চুম্বনের রেশ কাটিয়ে উঠে পরী বল, "না সোনা, খোঁপা খুল না। কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে আমাদের এই অবস্থায় যদি কেউ দেখে ফেলে।"
দু’জনেই প্রগাড় চুম্বনের খেলার পরে হাপাতে থাকে। যা ঘটে গেল মনে হল যেন সমুদ্র তীরে যেন বিশাল ঢেউ আছড়ে পরে সব কিছু ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়ে চলে গেছে। পরীর গালে দেখা দেয় সেই পুরান লালিমা, ঠোঁটে ভেসে ওঠে হৃদয় কাঁপানো হাসি। ওর মুখে হাসি দেখে আনন্দে অভির বুক ভরে ওঠে। অভির ঠোঁটে লেগে থাকে পরীর ঠোঁটের রঙ।
অভি, "উম্মম্মম্ম...... তোমার ঠোঁট দুটি ভারী মিষ্টি।"
উলটো হাতের পাতা দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছে বলে, "তুমি না একদম যাতা। পাগল করে ছেড়ে দিলে একেবারে..." পরী উঠে দাঁড়িয়ে অভির হাত ধরে তুলতে চেষ্টা করে, "এইজ কিগো, সকাল চারটে বাজে সেটা খেয়াল আছে তোমার? একটু বিস্রাম নেবার কথা কি মনে হয় না কখন?"
অভি, "তুমি সাথে থাকলে কি আড় বিস্রাম নেবার কথা মনে হয়, সোনা।"
পরী, "জানো বউদির মা বলছিল যে আমাদের জন্য একটা রুম দিয়েছে। দাদার বন্ধুরা ত বাসর জাগছে দাদার সাথে, রুমটা খালি ই হবে এখন। চলো না সেখানে গিয়ে দুজনে একটু গরিয়ে নেই।"
অভি, "পাগল হলে নাকি। তোমার বড়দা দেখ সেই ঘর দখল করে ভোঁসভোঁস করে ঘুমুচ্ছে হবে।"
পরী, "উফফফ... না দাদা কে নিয়ে আড় পারা গেল না। দাদার কথা আমি একদম গুলে খেয়ে নিয়েছিলাম। এখন কি কর্তব্য, এই ঠাণ্ডার রাতে ত এখানে বসে থাকা যায় না।"
অভি আবার পরীকে কোলে ওপরে টেনে বসিয়ে দেয়, "তুমি যতক্ষণ আমার সাথে আছো, ততক্ষণ আমার ঠাণ্ডাও লাগবে না আড় ক্লান্তিও আসবেনা।"
পরী, "তুমি না একদম পাগল। কেউ যদি আমাদের এই অবস্থায় দেখে ফেলে না, তাহলে মস্ত এক কেলেঙ্কারি কান্ড ঘটে যাবে। উম্মম... আমি চাইনা এই রাত শেষ হয়ে যাক..."
অভি দুহাতে পরীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরল। পরী অভির গলা নিজের বাহুপাসে নিয়ে নিল, ওর কোল থেকে ওঠার কোন তারা নেই যেন। একে ওপরের বাহুপাসে বদ্ধ হয়ে বসে আদর খেতে লাগল।
আদর করে মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে পরী অভিকে বলে, "একটা গান গাও।"
অভি, "পাগলে গেলে নাকি তুমি? আমি গান গাইলে কুকুর গুলো মারতে শুরু করে দেবে আমাকে।"
পরী, "বাঃরে, বাসে ত আমাকে দেখে বেশ গান বের হচ্ছিল, এখন কি হল..."
অভি, "বাসের কথা আলাদা।"
পুব আকাশে নবীন ঊষার ছটা দেখে অভি পরীকে বলল, "বাড়ির ভেতরে যাওয়া যাক।"
পুব দিকে একবার তাকিয়ে মৃদু স্বরে উত্তর দিল, "হ্যাঁ চল, আমাদের বাড়ির ভেতর যাওয়া উচিত।"
[+] 1 user Likes Alvi Arman's post
Like Reply
#3
গল্পটা যদিও পড়া আগে থেকেই, তবুও চাই নিয়মিত আপডেট আসুক... অন্তত নতুন পাঠক-পাঠিকারা পড়ে বুঝুক প্রেম-ভালোবাসা আর যৌনতা কিভাবে একে-অপরের পরিপূরক হয়ে মিশে একাকার হয়ে যায় | আরেকটা আবেদন আছে এই উপন্যাসের পরবর্তী ধারাবাহিক "মধ্যরাতে সূর্যোদয়" এই গল্পটাও সম্পূর্ণ প্রকাশ করলে ভালো হয়, তবেই দুটো জীবনের গল্প সমাপ্তিলাভ করবে... অনেকেই জানেন না, এই দুটো উপন্যাস হল পিনুরামের নিজের জীবনী
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)