18-10-2019, 02:37 PM
পরের পর্ব
সন্ধ্যায় ঘুম ভেঙ্গে উঠে খানিকক্ষণ বসে বসে কি করা যায় চিন্তা করতে লাগলাম। বাইরে বেশ জোড়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। পরে দেখেছিলাম আমাদের মেসের বাইরে জল দাঁড়িয়ে গেছে। ভাবলাম আরেকটু পড়ে পড়ে ঘুমাই, কিন্তু ঘুম আর আসবে না। বাসী ময়লা জামা কাপড়গুলো এই বেলা ধুয়ে ফেলতে পারলে মন্দ হয় না। কাজ এগিয়ে রাখা যাবে। অদিতিকে বিছানায় দেখলাম না। শান্তাদিকে জিজ্ঞেস করতে বললেন যে বিকেল থাকতেই এই দুর্যোগ মাথায় করে কোথায় জানি বেড়িয়ে গেছে। বলে যায়নি কিছু। শুধু বলে গেছে রাতের আগে ফিরে আসবে। এখন অনেক সময় আছে ভেবে রেজারটাও সাথে নিয়ে নিলাম। তবে এই ঠাণ্ডায় গায়ে জল আর সাবানের ফ্যানা লাগাতে হবে ভেবেই কেমন জানি গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। অনেকক্ষণ সময় লাগলো জামা কাপড় গুলো কাঁচতে। তবে কাপড়গুলো চুবিয়ে রেখে মনের জোড় এনে শীত কাটিয়ে সারা গায়ে স্নান করার মতন করে সাবানের ফ্যানা লাগিয়ে তার ওপর দিয়ে রেজার বুলিয়ে নিজেকে আবার মসৃণ আর পরিষ্কার করে তুললাম। গায়ে বেশী জল লাগাতে সাহস হল না। ইতিমধ্য পাঁচ ছটা হাঁচি পড়েছে। ঠাণ্ডা না লেগে যায়। যাই হোক শেভ হয়ে গেলে পরনের জামা কাপড় গুলো আবার পরে নিয়ে যেমন করে হোক কাপড় গুলে কেঁচে নিয়ে নিংড়ে বাইরে গিয়ে মেলে যখন ঘরে ফিরলাম তখনও অদিতির পাত্তা নেই। বাইরে মুষল ধারায় বৃষ্টি হয়েই চলেছে। গেল কোথায় মেয়েটা? একবার ভাবলাম নিচে গিয়ে অন্য দের জিজ্ঞেস করি কেউ কিছু জানে কিনা, তারপর আবার “কি লাভ” ভেবে নিয়ে কাটিয়ে দিলাম। আগেই বলেছি এখানে কেউ কারোর সাথে গায়ে পড়ে বেশী মিশতে বা লাগতে যায় না। বেশ শীত শীত লাগছে। আমি যে মদ খাই সেটা সবাই জানে। তবে কেউ বাঁধা দেয়নি বা অব্জেকশন দেয় নি, কারণ আমি আমার মতন থাকি। সন্ধ্যার টিফিন দিয়ে গেছেন শান্তাদি। আমি এই ভর সন্ধ্যায় বোতল খুলে চেয়ার টেনে নিয়ে বাইরে গিয়ে বসে পড়লাম, কিছুই না একটু শরীর গরম করার প্রয়োজন আর কি। মদ খেতে খেতে এই ঝড়ো ভেজা পরিবেশ দেখতে আর উপভোগ করতে বেশ ভালো লাগে। সারা গায়ে জল আর সাবান ঘষে বেশ শীত শীত করছে এখন। আর ভয় কি কাল থেকে তো আবার নির্জলা। মদ খেতে খেতে কি যে ভাবছিলাম জানি না। হয়ত এই উন্মাদ পরিবেশে আমার উন্মাদ মনটাও হারিয়ে গিয়েছিল। একা একা চুপ চাপ বসে খাচ্ছিলাম বলেই হয়ত কত তাড়াতাড়ি খেয়ে চলেছি ঠিক ঠাহর করতে পারিনি। প্রায় তিন পেগ খেয়ে নেওয়ার বাথরুমে যেতে গিয়ে বুঝতে পারলাম বেশ একটা চিন চিনে নেশার আমেজ আমাকে গ্রাস করে ফেলেছে। এখনও আধ ঘণ্টা সময় আছে। বাথরুম থেকে হালকা হয়ে ফিরে এসে আরেকটা ছোট পেগ বানিয়ে প্রায় জলের মতন খেয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আর একটু পরেই শান্তাদি খাওয়ার জন্য ডাক দেবেন। কিন্তু অদিতির কোনও পাত্তা নেই। না আর দেরী করা যাচ্ছে না, মনের জড়তা কাটিয়ে অদিতিকে একবার ফোন করলাম। রিং হয়ে গেল। কেউ ফোন ধরল না। আরেকবার ফোন করার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলাম। একটু পরে নিয়ম মাফিক ডিনারের ডাক পড়ল। পাছে বাকিরা মদের গন্ধ পায় তাই খাবার টেবিলে খুব একটা হু হাঁ ছাড়া কথা বললাম না। সবার খাওয়া হয়ে গেল কিন্তু অদিতির পাত্তা নেই। উপরে উঠে আসবার সময় শান্তাদিকে একবার বললাম “তুমি একবার অদিতিকে ফোন করে দেখবে? মেয়েটা কোন চুলায় আছে? বাইরে এমন বৃষ্টি হয়ে চলেছে টানা আর তার ওপর দিন কাল ভালো না। আমি ফোন করেছিলাম ফোন ধরছে না। “ ঘরের ভেতর থেকে দীপালিদির গলা পেলাম “আমিও বার দশেক চেষ্টা করেছি। কারোর ফোন ধরছে না। মামনও ফোন করেছে কোথায় আছে জানবার জন্য। লাভ হয় নি। আরেকটু দেখে নি, দিয়ে তিতলিদিকে জানাতে হবে। তবে এই দুর্যোগের রাতে উনিও কিছু করতে পারবেন বলে মনে হয় না। “ উপরে উঠে একরাশ দুশ্চিন্তা মনে পুষে রেখে ঘরের দরজা খোলা রেখেই শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছে না। এপাশ অপাশ করে চলেছি। প্রায় এক ঘণ্টা কেটে গেছে। এতো সত্যি মহা মুশকিল। মেয়েটা এরকম আগে তো জানতাম না। অবশ্য তার পরের মুহূর্তেই মনে হল আমি যে বাইরে এই সব কীর্তিকলাপ করে বেড়াই সেসব জানলে অদিতিও হয়ত বল যে এই মেয়েটা যে এমন তাতো জানতাম না। এইসব ভাবতে ভাবতেই সামান্য যেন একটু তন্দ্রা মতন এসেছিল, কিন্তু নিচে লোক জনের উত্তেজিত গলার আওয়াজ পেয়ে ঘুম কেটে গেল। উঠে চট করে একবার ব্রাশ করে নিচে নেমে এলাম। গোটা মেস মামনদের ঘরে জড় হয়েছে। তিতলিদি সবে এসে পৌঁছেছেন। ওনার বর এই প্রথম চাক্ষুষ দেখলাম। আকার আয়তনে ওনার ঠিক বিপরীত। তবে বেশ একটা ব্যক্তিত্বর ছাপ আছে ভদ্রলকের চেহারায়। আমি নিচে নামার আগে আরেকবার অদিতি কে ফোনে ট্রাই করেছিলাম, কিন্তু রিসিভ করে নি। নিচে গিয়ে বুঝলাম সবাই হিসাব দিচ্ছে যে কে কতবার ওকে ট্রাই করে ফোনে পায় নি। তিতলি দেখলাম ঠিক কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। উনি মাঝে মাঝেই ওনার বরের মুখের দিকে করুণ ভাবে তাকাচ্ছেন। ওনার বর অনেক ভেবে শেষে বললেন “ এখন এই ভয়ানক বৃষ্টির মধ্যে কিছু করার নেই। কাল যদি কোনও খবর না পাওয়া যায় তো পুলিশে একটা খবর দেব। তবে তোমার কাছে ওর বাড়ির নাম্বার আছে না? সেখানেই একবার ফোন করে খবরটা জানিয়ে দাও। “ এটা ভালো আইডিয়া, জানি না কেন আমাদের কারোর মাথায় এই কথাটা আগে আসেনি। “ চৈতালিদি সাথে সাথে ওনার হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটা কালো ছোট ডাইরি বের করে (এখানে আমাদের সবার ঠিকানা নাম্বার ইত্যাদি লেখা আছে) একটা নাম্বার খুজে মোবাইলে নাম্বার ডায়াল করে দিলেন।” জানি না কে ফোন উঠিয়েছে উল্টো দিকে, কিন্তু তিতলিদি এক দমে অদিতির ব্যাপারে সব কথা বলে দিলেন। উনি এটা বললেন যে গোটা মেসের একটাও মেয়ে, এমনকি ওর নিজের রুম মেটও জানে না যে ও কোথায় গেছে। আপনার চটপট কিছু একটা করুণ। আর অপেক্ষা করার মানে হয় না। তিতলি দি আর ওনার বর এই দুর্যোগ মাথায় করেই বেড়িয়ে পড়লেন। বাইরে ওনাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তবে গাড়ি অব্দি পৌছাতেই একেবারে কাক ভেজা হয়ে গেলেন দুজনেই। আর তিতলিদি এমনিতে এই শরীর নিয়ে দৌড়াতে পারেন না। তাই ওনার যে এই বৃষ্টির আক্রমণের সামনে কি অবস্থা হল সেটা না বলাই ভালো।
এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে আবার সেই রোজকার তাড়াহুড়া। রাত্রির দুর্যোগ কেটে গিয়ে এখন ঝলমলে রোদের ঘনঘটা। নিচে নেমে জানতে পারলাম যে এখানকার কেউ অদিতির কোনও খবর পায় নি। আমি হাঁসপাতালে পৌঁছানো অব্দি আমার মাথায় ওর চিন্তা ঘুর ঘুর করছিল ঠিকই কিন্তু একবার কাজের চাপ এসে যাওয়াতে আর ওর কথা মাথায় এলো না, ভুলে গেলাম ওর কথা। মেসে ফেরার সময় বীরের ফোন এল যথারীতি। আর সেই সাথেই আমার মাথার ভেতর আবার অদিতির কথাটাও ফিরে এল। বীরকে অদিতির ব্যাপারে খুব একটা বলা হয় নি। আজও বললাম না। কাটিয়ে দিলাম। ওর সাথে সামান্য একটু ইন্টু মিন্টু করতে না করতেই মেসে পৌঁছে গেলাম। ভাবতে পারেন আমার তো হাঁসপাতাল থেকে ফেরার কোনও ঠিক নেই, তো বীর কি করে রোজ ঠিক বাড়ি ফেরার সময়েই ফোন করে। কারণ আর কিছুই না, হাঁসপাতাল থেকে বেরনোর আগে ওকে আমি একটা মিসড কল দিয়ে দি। আর ও ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় কল ব্যাক করে। ও আমাকে বলল ওর দাদা নাকি ওকে জিজ্ঞেস করেছে যে কারোর প্রেমে পড়েছে কিনা। কিন্তু ও সতর্ক ভাবে কাটিয়ে দিয়েছে। সাবাশ ছেলে, এই না হলে আমার কচি নাগর। সব দিক বাঁচিয়ে চলতে শিখে ফেলেছে এরই মধ্যে। ভাবতে ভাবতে ঢুকছিলাম যে দীপালিদিকে অদিতির কথা জিজ্ঞেস করে তারপর ওপরে যাব, কিন্তু সেটা আর করতে হল না, কারণ মেসে ঢোকার মুখেই শান্তাদির মুখোমুখি পড়লাম, আর উনিই আমাকে নিজে থেকে যেচে সব কথা বলে দিলেন। অদিতির বাবা মার ফোনও অদিতি অব্দি পৌঁছায় নি গতকাল। ওনারাও তিতলিদির মতন ঠিক করে ফেলেছিলেন যে সকালে উঠে পুলিশে খবর দিয়ে দেবে নিখোঁজ বলে। কিন্তু তার আগেই অদিতির ফোন আসে ওনাদের কাছে। অদিতি কোলকাতাতেই ছিল গতকাল থেকে। ওর এক ছোটবেলার বন্ধুর বাড়িতে। অদিতি ওর প্রেমিকের কোনও উত্তর না পেয়ে শেষে নাকি ঠিক করে ফেলেছিল যে যেকোনো উপায়ে এই পাপকে নিজের শরীর থেকে বিদায় করে দেবে, তাতে যদি তার শরীরের কোনও স্থায়ী ক্ষতিও হয় তো তাতেও ও কিছুতেই পিছু হটবে না। কে না জানে যে কোলকাতায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আজকের দিনেও এসব কাজ হয়ে থাকে। অদিতি সেরকমই একটা জায়গার সাথে কথা বলে সব কিছু ঠিক করে রেখেছিল এই কদিনে। আজ সকালেই যা করার করা হবে সেটাই ঠিক করে রেখেছিল। গতকাল ওর বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার সময় এটিএম থেকে যা টাকা তোলার তুলে নিয়ে চলে গিয়েছিল একেবারে। ওর বন্ধুকে ও কিছুই জানায়নি। ও শুধু জানিয়েছিল যে এমনি বৃষ্টিতে এসে ফেঁসে গেছে তাই ওর সাথে এক রাত্রি থাকতে চায়। সারা রাত আত্মগোপন করে থাকার পর সকাল বেলায় দশটার আগে গিয়ে যা করার করিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আপদ বিদায় নেওয়ার পর আর কিছু ভয়ের কারণ নেই, মানে আর কেউ বাঁধা দিতে পারবে না এই কার্যকলাপে, এটা বুঝেই বাড়িতে ফোন করে খবরটা দিয়ে দিয়েছে ওর মাকে। আর তাছাড়া সব প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই ও এখন শারীরিক ভাবে ভীষণ দুর্বল, আর শুধু দুর্বল নয়, ওর নাকি নড়া চড়া করার মতনও ক্ষমতা ছিল না। তাই এখন একটু বাড়ির আদর দরকার ( যাকে বলে কেয়ার পাওয়া আর কি), আর তাই সব জানিয়ে বাড়ির লোককে ঠিকানা দিয়ে সেখানে আসতে বলেছে দুপুরের দিকে। ওর বাড়ির লোকেরা পুলিশে খবর দেবে দেবে করেও দেয় নি, কারণ ওরা শেষ অব্দি চারপাশে খবর নিয়ে দেখে নিচ্ছিল। যখন ওরা প্রায় ঠিকই করে ফেলেছে যে এইবার পুলিশের কাছে যাবে ঠিক তখনই অদিতির ফোন আসে। ফোন পাওয়া মাত্র ওর বাড়ির লোক এসে হাজির হয় অদিতির বলা জায়গায়। অদিতিকে নিয়ে ওর বাবা ডাক্তার দেখাতে চলে গেলেন ওখানে থেকে, আর ওর মা আর জেঠু এসে এখান থেকে বেশ কিছু জামা কাপড় প্যাক করে নিয়ে গেছেন। অবশ্য এখানে আসার আগে তিতলি দির সাথে কথা বলে এটা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে অদিতি কিছুদিন এখানে থাকবে না, তবে বেড বুক করা থাকবে। মদ্দা কথা সবাই মিলে ওকে বাড়িতে নিয়ে গেছেন আর ও ওখানেই থাকবে যত দিন না পুরো পুরি সেরে ওঠে। তারপর আবার ও এখানে ফিরে আসবে। অবশ্য ততদিন ওর জন্য বেড ধরা থাকবে। অবশ্য তিতলি এসে ওর মা আর জেঠুর সাথে কথা বলে ওদের নিজের ধরা গলায় (আমার বিশ্বাস এটা পুরোটাই তিতলিদির নাটক, কারণ এতদিন না থেকে কেউ একজন তার বেড ধরে রেখে অগ্রিম টাকা দিয়ে গেছে, তাতে ওনার সত্যি বলতে কি দুঃখ হওয়ার কোনও কারণ আমি দেখি না, আমি হলে তো মনে মনে বেশ খুশিই হতাম, অবশ্য এটা আমার ভুলও হতে পারে।) অনেক অনেক সহানুভূতি জানিয়ে বলেছেন যে অদিতি ওনার মেয়ের মতন (এটাও আমার বিশ্বাস হয় না), ও সুস্থ হয়ে এসে এখানেই থাকবে সেটাই উনি চান। শান্তাদির ভাষায় সহানুভূতি জানাতে জানাতে নাকি তিতলিদির চোখে জল এসে গিয়েছিল।
আমার বিশ্বাস পুরোটাই মেকি, অর্থাৎ পরিস্থিতি অনুযায়ী নাটক করেছেন তিতলিদি, কিন্তু হতে পারে সবাইকে নিজের মতন করে ভাবার কোনও কারণ নেই, উনি হয়ত সত্যি অদিতিকে নিজের মেয়ের মতই ভালোবাসতেন, তবে ওই যে বললাম ওনাকে যতটা দেখেছি সেই থেকেই বলছি, আর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই সব আদিখ্যেতা বিশ্বাস করতে ঠিক মন চায় না। এই লেখাটা একান্ত ব্যক্তিগত। নইলে আমিও তিতলিদির মতন একই সুরে লিখতাম উফফ আমার মন ভেঙ্গে গেল, বুক ফেটে গেল (না না স্তন ফেটে গেলে ছেলে চড়াবো কি করে), চোখ ভরে এল, কিন্তু এমন নাটক আমি করব না। সোজাসুজি বলতে, এই কথাটা শোনার পরেই আমার মনে যে প্রথম প্রতিক্রিয়াটা এল সেটা হল “ওহহহ ইয়েস। এইবার গোটা ঘরটা আমার, শুধু একা আমার। প্রাইভেসির আর কোনও সমস্যা নেই। এসি না থাকলেও এখন বেশ কয়েকদিন (আসা করি বেশ কয়েকদিন আগে ও ফিরে আসবে না) হাত পা ছড়িয়ে থাকা যাবে ঠিক যেমন থাকতাম চৈতালিদির বাড়িতে। যখন খুশি লাইট জ্বালিয়ে থাকতে পারব। যখন খুশি এক আধ পেগ মেরে দিতে পারব, সত্যি বলতে ওকে দেখে একটু সমীহ করে মেপে ছকে চলতে হত, কি ভাববে না ভাববে এইসব ভাবতে বাধ্য হতাম, ঠিক কেয়ার করতাম না ওর উপস্থিতি, কিন্তু ওর যাতে অসুবিধা না হয় বা যেটা ওর ভালো লাগে না সেরকম কিছু করার আগে অন্তত দশ বার ভেবে দেখতে হত। এখন থেকে ভালো করে সুস্থ গলার আওয়াজে বীরের সাথে শুয়ে শুয়ে কথা বলা যাবে। প্রাইভেট গোপন একান্ত আপন কথাগুলো বলার সময় আর ও কি শুনে ফেলবে সেই চিন্তা করতে হবে না। এইবার আর শেভ করার জন্য বাথরুমে যেতে হবে না। এইখানেই আয়না নিয়ে বসে করা যাবে রূপ পরিচর্যা। “ মনে এতগুলো কথা একসাথে এসে আনন্দের ঢেউ খেলিয়ে দিয়ে গেলেও মুখে কিছু বললাম না। “ খুব খারাপ হয়েছে, আশা করি তাড়াতাড়ি সেরে আবার ফিরে আসবে,” বলে উপরে উঠে গেলাম। যাওয়ার পথে শুনলাম শান্তাদি আমাকে তাড়াতাড়ি এসে খেয়ে যেতে বলছেন আর তিতলিদি নাকি আমাদের সবাইকে বলে দিতে বলেছেন যে অদিতির ব্যাপারটা নিয়ে আর মাতামাতি না করতে আর যখন ও ফিরে আসবে তখন যেন সবাই ওর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করে। আমি একবার চেচিয়ে বলে দিলাম “ খেতে আসছি খুব তাড়াতাড়ি।” আর বাকি কিছু বলার মতন আদিখ্যেতা বা ভন্ডামি আমার ভেতরে নেই, সেগুল আনার কোনও চেষ্টাও করলাম না। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে মনে মনে ভাবলাম যে, না, আমি নিজেকে যত খারাপ মেয়ে ভাবি তত খারাপ মেয়ে আমি নই। চৈতালিদির বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি চলে আসার পর মাঝে মাঝে মনে হত যে আরেকজনের সাথে রুম শেয়ার করতে হবে। আর এখন দেখুন আবার একা একটা বড় ঘর ভোগ করব পরের কিছুদিন। আমি খুব খুব খারাপ মেয়ে তাই লিখছি নির্দ্বিধায়, আজকের রাত্রের ঘুমটা হয়েছে ব্যাপক, কারণ ঘুমানোর আগে আজ দরজা জানলা লাগিয়ে একবার ভালো করে মনের সুখে নিজের মধ্যাঙ্গুলি দিয়ে নিজের যোনীর ভেতরটা ঘষে আত্ম মৈথুন করে ভালো করে এই কদিনের জমে থাকা হতাশা আর জলগুলো ঝড়িয়ে নিয়েছি নিশ্চিন্ত মনে। আর কি চাই। একেই তো বলে প্রাইভেসি। রাতে ক্লান্ত শরীরে বাড়িতে ফিরে আসার পর একটু মনের সুখে আত্মমৈথুনে মেতে উঠতে পারব না তো কিসের সুখ। অদিতি ফিরে আসতে দেরী আছে। আর আমি মনে মনে চাই ও সেরে উঠুক, কিন্তু বেশ কিছুদিন বাপের বাড়ির আদর খেয়ে তবেই ফিরুক। ওর কথায় আসব ও ফিরে আসার পরে। এখন অন্য কথায় যাচ্ছি।
এই দুদিন বিন্দাস কাটল এক কথায়। দুটো উপলব্ধি হল ভেতরে ভেতরে। প্রথম, এখনও যেহেতু আমি সারাক্ষন পুরুষ সংসর্গ পাচ্ছি না ঘরে, তাই পুরুষের শরীরের আঁচ যে আমার চাইই চাই সেটা হয়ত সত্যি নয়। রোজ একবার করে আত্মরতিতে ভালো করে মেতে উঠে শারীরিক কষ্ট আর হতাশা মেটাতে পারলেই যথেষ্ট। সুতরাং! সুতরাং যে কি সেটাও কি আপনাকে বলে বোঝাতে হবে? ওই রকম একগুচ্ছ অচেনা লোকের চোখের সামনে নির্লজ্জের মতন শস্তা হোটেলে গিয়ে বীরের সাথে শোয়ার এখন আর আমার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ আমার দিনের শেষে বাড়ি ফেরার পর যা চাহিদা থাকে সেটা আমি এক গ্লাস ভোদকা পান করতে করতে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে পা ফাঁক করে বিছানায় শুয়ে আত্মরতি করতে করতে মিটিয়ে নিতে সক্ষম এই কদিন। মনের সুখে শীৎকারও করতে পারি এই দরজা বন্ধ ঘরে, তবে হ্যাঁ খুব হিট খেলেও ভীষণ জোড়ে চেচাই না, পাছে বাইরে থেকে অন্য কেউ শুনে ফেলে। বীরের সাথে প্রতি সপ্তাহে এরকম আউটিং করাটা একটু রিস্কি (আমি অবশ্য রিস্ক পছন্দ করি এই সব ব্যাপারে)। অদিতি ফিরে এলে কি হবে দেখা যাবে। আচ্ছা এই প্রথম কারনেই, আমি অদিতি যত দিন ফেরেনি, বীরের সাথে ততদিন ওই ভাবে শস্তা হোটেলের পথ মাড়াইনি। দ্বিতীয়, এটা মজার। এই উপলব্ধিটা হল দ্বিতীয় দিন, এই দিন আমি শুধু মস্তি করার জন্য ঘরে মগে করে জল আর ফ্যানা গুলে নিয়ে এসে নগ্ন হয়ে বসে সারা শরীর শেভ করছিলাম সময় নিয়ে, যাতে একটাও লোম না থাকে সারা গায়ে। রূপ পরিচর্যা শেষ হলে একটা নগ্ন হয়ে আত্মরতি করতে করতে মনে হল একটা কথা। পুরুষ স্পর্শ না বা পেলাম বা চাইলাম, কিন্তু ছেলেদের মতন কিছু একটা ফ্যান্টাসি নিয়ে আঙুল ঢোকালে বোধহয় বেশী সুখের অনুভুতি আসে। অনেক কিছু ভাবার চেষ্টা করলাম কিন্তু ঠিক কি নিয়ে ভাবা যায় মাথায় এলো না। এদিকে আমার ভেতরে জল ঝড়ে চলেছে আমার মধ্যাঙ্গুলির ঘর্ষণে। একটা সময়ের পর অরগ্যাস্মও পেয়ে গেলাম। কিন্তু সত্যি যতটা তৃপ্তি পাওয়ার কথা ছিল সেটা বোধহয় হল না। কারণ বোধহয় এই যে আমি চাইছিলাম কিছু একটা গরম ব্যাপারে ভাবতে ভাবতে বা কারোর কথা ভাবতে ভাবতে এই জলতা খসাবো। তোয়ালে দিয়ে নিজের যোনীদ্বারটা ভালো করে মুছে নিয়ে নগ্ন ভাবেই চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘরে তো কেউ নেই। এটাও প্রাইভেসি। কিন্তু একটা কিছু ভাবতে হবে ফ্যান্টাসি করার জন্য। অনেকক্ষণ শুয়ে শুয়ে ভাবার পর একটা পথ মাথায় এল। এটা পুরোটাই ছেলে মানুষী আগেই বলে রাখলাম। এই চিন্তা আর এই চিন্তাকে অনুসরণ করতে গিয়ে যা যা হয়েছিল তাতে সেক্সের থেকে বেশী হাসির খোঁড়াক পাবেন এতে। তবুও লিখছি, কারণ না লিখলে লেখাটা সম্পূর্ণ হবে না। আর আপনার বা ছেলেদের মতন যে অনেক মেয়েরাও এইসব অদ্ভুত ছেলেমানুষি কাজ করে থাকে সমাজের চোখ এড়িয়ে, বা বলা ভালো সমাজের কোঁচকানো ভুরুগুলোকে উপেক্ষা করে সেটা বুঝতে পারবেন এই জায়গাটা পড়ার পর। অনেক আগে অদিতি মানে আমার ডাক্তার বন্ধু অদিতি বলেছিল যে গড়িয়াহাটের ফুটপাথে নাকি কিছু কিছু বইয়ের দোকান আছে, মানে ছোট ভ্রাম্যমান বইয়ের দোকান, সেখানে নাকি অনেক গরম গরম বই পাওয়া যায়। ইংরেজি, বাংলা সব রকম। সত্যি মিথ্যে কখনও যাচাই করে দেখা হয় নি। আচ্ছা ও এটাও বলেছিল যে শিয়ালদহ বা বড় বড় স্টেশনে যে মাটিতে বসা বইয়ের বা ম্যাগাজিনের দোকান গুলো থাকে তাতে নাকি চটি নামক এক অদ্ভুত বস্তু পাওয়া যায়। তাহলেই বুঝতে পারছেন ছেলেদের গোপন হস্ত মৈথুন করার যে সামগ্রীগুলো থাকে সেগুলোর খবর আমাদের মতন সব মেয়েরাই রাখে, তবে হ্যাঁ আমরা বাইরে সে কথা প্রকাশ করি না। কারণ ছেলেরা সেই সব বই পড়ে ফুর্তি করলেও ছেলেদের কেউ কিছু বলবে না, সবাই বলবে ছেলেরা এই বয়সে এইসব করেই থাকে (কেন করে থাকে, না করলে কি হত এই প্রশ্নে সমাজ ঢোকে না,), কিন্তু এইসব বইয়ের খবর আমাদের কাছে আছে শুধু এই কথাটা প্রকাশ পেলেই এই ভণ্ড সমাজ আমাদের নামে কুৎসা রটাতে ছাড়বে না (একটা মেয়ে এইসব জানে? মাই গড। ওহহহ কেন জানে? এ তো আর ছেলে নয়, এর তো জানার কথাই নয়, তবে, জানল কি করে? অদ্ভুত মেয়ে তো, নিশ্চই ভীষণ ভীষণ বাজে মেয়ে, নিশ্চই অন্য কারোর সাথে শুয়ে বেড়ায়, এটা তো ওর করার বা জানার কথাই নয়, (আর সব থেকে বড় কথা) ওকে এইসব দেখবার বা জানবার অধিকার কে দিয়েছে? আমি তো দি নি! আমি চাই না তবুও ও জানলো কি করে, বা করার সাহসই বা পাচ্ছে কি করে। কে যে আমার বা আমাদের মেয়েদের জীবন যাত্রার মাত্রা নির্ধারণের দায়িত্ব এই গান্ডুগুলোকে দিয়েছে সেটা এই গান্ডুগুলো ছাড়া আর কেউই বোধহয় জানে না, কিন্তু এটাই সমাজ, আর আমরা সামাজিক জীব। আমিও তার ব্যতিক্রম নই, আর ব্যতিক্রম হতেও চাই না, কারণ সব দিক বাঁচিয়েও সব কিছু করা যায়।)। নগ্ন শরীরটা নিয়ে চাদরের নিচে ঘুমাতে ঘুমাতে ভাবলাম আমাদের হাঁসপাতালের একটু দুরেও তো বেশ কয়েকটা চটি মার্কা ম্যাগাজিনের ভ্রাম্যমান দোকান দেখেছি। অবশ্য আমি সিওর নই যে তাতে ওইসব পাওয়া যাবে কিনা যেটা আমি চাইছি। কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কি? গিয়ে তো সোজা সুজি কিছু চাইব না। ছবি দেখে ভুরু কুঁচকে বিজ্ঞের মতন একটা কিছু বেছে নিতে হবে। তবে এখানে একটা সমস্যা আছে। সেই কথায় আসব ঘটনাক্রমে।
পরের দিন হাঁসপাতাল থেকে বেড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঠিক করে রেখেছিলাম যে এরকমই একটা বইয়ের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াব, কিন্তু কাজের চাপের চোটে সেই সব চিন্তা মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে শোবার আগে যখন আত্মরতিতে মগ্ন হওয়ার সময় এসেছে তখন সেই কথা মাথায় এল। এখন দুদিন ধরে পুরো নগ্ন হয়েই ঘুমাচ্ছি প্রাভেসির সুযোগ নিয়ে। সত্যি বলতে কি পরিতৃপ্তির পরে এইভাবে নগ্ন ভাবে শুয়ে চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমাতে বেশ লাগে। পরের দিন সব কিছু মনে ছিল কিন্তু হাঁসপাতাল থেকে বেরোতে এত দেরী হয়ে গিয়েছিল যে বইয়ের দোকানগুলো হেঁটে হেঁটে অন্যত্র গমন করেছে। অগত্যা ঠিক করলাম যে কাল আর চেস্টাই করব না। আর তো একদিন একটু কষ্ট করে কোনও কিছু অনুপ্রেরণা ছাড়াই করে নেওয়া যাক যা করার। তার পরের দিন ফেরার সময় কিনতেই হবে, কারণ তার পরের দিন ছুটি। সেই সব বই পড়ার পর বেশী হিট খেয়ে ঘুমাতে দেরী হয়ে গেলে কি করব? গতকাল আর আজ প্ল্যান করেছিলাম যে যাব আর বই কিনব, কিন্তু যাওয়া হয় নি, কিন্তু কাল তো প্ল্যান করিনি, তাই ভাগ্য যে কালই সাথ দেবেন সেটা কি আর বুঝতে পেরেছি। এইবার মজার কথায় আসছি। পরের দিন হাঁসপাতালে যাওয়ার পর আগের রাতের সব কিছু ভুলে গিয়েছিলাম, অনেক কাজ তারপর দুপুরে অরুণের সাথে অনেকক্ষণ গল্প, তারপর, তারপর আর কি, সন্ধ্যায় কাজের শেষে ছুটি। ছুটির আগে অব্দি এখানে সময় জ্ঞান থাকে না। আজ বেরনোর আগে বীরকে মিসড কল দিতে যাচ্ছি, এমন সময় ঘড়ির দিকে খেয়াল পড়ল। সাড়ে সাতটাও বাজেনি। ও হ্যাঁ এখানে বলে রাখি এই দুদিনই বাড়ি ফিরেও বীরের সাথে কথা হয়েছে খানিকক্ষণ। ও ফোন রাখার আগে অরুণের মতই অনেকগুলো চুমু উপহার দেয় আমায়, আর কোথায় কোথায় দেয় সে আর নাই বা বললাম, যারা প্রেম করেছে তাদের এটা অজানা নয়, তবে আপনার ব্যাপারটা আমি ঠিক বলতে পারব না। অরুণ আর বীর দুটোই আমাকে নিয়ে পাগল। আজ আর মিসড কল দিলাম না। অনেকবার মনকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে আজ ওই দিকে যাব না, কালই তো যাব, কিন্তু মন মানলেও আমার অবাধ্য ঠ্যাং দুটো মানলো না। ঠিক এই জন্যেই কথায় বলে যে ঠ্যাং ভেঙ্গে ফেলে দিতে হয় তাহলেই আর বাড়াবাড়ি করা যায় না। কিন্তু আপাতত আমার ঠ্যাং দুটো ঠিক আছে, আর আমি যতক্ষণ যাব কি যাব না এইসব নিয়ে মাথা ব্যথা করছি, ততক্ষণে বাবাজীরা মানে আমার ঠ্যাং দুটো অবাধ্য ভাবে আমাকে উলটো দিকের ফুটপাথ ছাড়িয়ে আবছা অন্ধকারের মাঝে ওরকমই একটা বইয়ের দোকানের সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছে। দোকানটা খালি, কোনও খদ্দের নেই। মালিক বসে মাছি তাড়াচ্ছে, থুড়ি মশা। এখানে ভীষণ মশা। কিছু করব করব করা আর সত্যি যখন করার সময় আসে তখন যে মানসিক অবস্থা হয় এই দুটোর মধ্যে যে কত বেশী পার্থক্য থাকে সেটা এখন উপলব্ধি করলাম। এখানে আসার জন্য এত ইচ্ছে ছিল মনে, আর দুদিন ধরে আসতে না পারার জন্য ছটফট করে চলেছিলাম ভেতরে ভেতরে, কিন্তু এখন যখন এসেই পড়েছি, তখন ব্যস সব দম হাওয়া। কিন্তু আমিও দমবার পাত্রী নই। আগে একটু দম তো নিয়ে নি। আর এই লোকটা যখন বসে মশা মারছে, তখন আমাকে সহজে ছাড়বে না। কিছু একটা গছানোর ইচ্ছে এরও রয়েছে। চারপাশটা একবার দেখে নিলাম, না কেউ আমাকে লক্ষ্য করছে না। লেগে পড়া যাক। একটা জোড়ে দম নিয়ে প্রচণ্ড বিজ্ঞের মতন মুখ করে সামনে রাখা ম্যাগাজিন আর বইগুলোর ওপর ঝুঁকে পড়লাম। লোকটা প্রথমেই একবার জিজ্ঞেস করেছিল যে কি লাগবে, তখন দম নিয়ে সাহস জোগাড় করছিলাম্* তাই ওর কথার উত্তর দেওয়া হয় নি, এখন আরেকবার জিজ্ঞেস করল, এখনও সুযোগটা নষ্ট করলাম কারণ এখন বিজ্ঞের মতন ভাব করে নাটক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বেশ কিছুক্ষণ ধরে পুরো সাজানো বইগুলোর ওপর নজর বুলিয়েই চলেছি, কিন্তু ঠিক কোনটাই মনঃপুত হচ্ছে না যে। অনেকগুলো ইংরেজি বইও সাজানো আছে। কয়েকটা দেখেই বাতিল করে দিয়েছি, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল সেই বাতিল করা বইগুলই হাতে নিয়ে বেশী করে দেখে চলেছি সংকোচ কাটানোর জন্য। লোকটা নির্মোহী আর একটা ভাবহীন দৃষ্টি নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার কার্যকলাপ দেখেই চলেছে। প্রায় মিনিট পাঁচেক হয়ে গেল এইটা ওইটা দেখে, শেষে আরেকবার লোকটার দিকে তাকাতেই ও আবার উঠে চলে এল আমার পাশে আমাকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে। “দিদি কি বই খুজছেন? আমাকে বলুন আমি সাহায্য করতে পারি।” আমি একটু গলা খাকরে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু ঠিক কিছু বলতে পারলাম না, “দাঁড়ান দেখছি।” আমার ছোটবেলার পড় থেকে তেমন ইংরেজি বই পড়ার অভ্যেস নেই, মানে গল্পের বইয়ের কথা বলছি, পড়ার বই তো ইংরেজিতেই পড়তে হয়। এইবার লোকটা আমার পাশ থেকে নড়ল না।
সন্ধ্যায় ঘুম ভেঙ্গে উঠে খানিকক্ষণ বসে বসে কি করা যায় চিন্তা করতে লাগলাম। বাইরে বেশ জোড়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। পরে দেখেছিলাম আমাদের মেসের বাইরে জল দাঁড়িয়ে গেছে। ভাবলাম আরেকটু পড়ে পড়ে ঘুমাই, কিন্তু ঘুম আর আসবে না। বাসী ময়লা জামা কাপড়গুলো এই বেলা ধুয়ে ফেলতে পারলে মন্দ হয় না। কাজ এগিয়ে রাখা যাবে। অদিতিকে বিছানায় দেখলাম না। শান্তাদিকে জিজ্ঞেস করতে বললেন যে বিকেল থাকতেই এই দুর্যোগ মাথায় করে কোথায় জানি বেড়িয়ে গেছে। বলে যায়নি কিছু। শুধু বলে গেছে রাতের আগে ফিরে আসবে। এখন অনেক সময় আছে ভেবে রেজারটাও সাথে নিয়ে নিলাম। তবে এই ঠাণ্ডায় গায়ে জল আর সাবানের ফ্যানা লাগাতে হবে ভেবেই কেমন জানি গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। অনেকক্ষণ সময় লাগলো জামা কাপড় গুলো কাঁচতে। তবে কাপড়গুলো চুবিয়ে রেখে মনের জোড় এনে শীত কাটিয়ে সারা গায়ে স্নান করার মতন করে সাবানের ফ্যানা লাগিয়ে তার ওপর দিয়ে রেজার বুলিয়ে নিজেকে আবার মসৃণ আর পরিষ্কার করে তুললাম। গায়ে বেশী জল লাগাতে সাহস হল না। ইতিমধ্য পাঁচ ছটা হাঁচি পড়েছে। ঠাণ্ডা না লেগে যায়। যাই হোক শেভ হয়ে গেলে পরনের জামা কাপড় গুলো আবার পরে নিয়ে যেমন করে হোক কাপড় গুলে কেঁচে নিয়ে নিংড়ে বাইরে গিয়ে মেলে যখন ঘরে ফিরলাম তখনও অদিতির পাত্তা নেই। বাইরে মুষল ধারায় বৃষ্টি হয়েই চলেছে। গেল কোথায় মেয়েটা? একবার ভাবলাম নিচে গিয়ে অন্য দের জিজ্ঞেস করি কেউ কিছু জানে কিনা, তারপর আবার “কি লাভ” ভেবে নিয়ে কাটিয়ে দিলাম। আগেই বলেছি এখানে কেউ কারোর সাথে গায়ে পড়ে বেশী মিশতে বা লাগতে যায় না। বেশ শীত শীত লাগছে। আমি যে মদ খাই সেটা সবাই জানে। তবে কেউ বাঁধা দেয়নি বা অব্জেকশন দেয় নি, কারণ আমি আমার মতন থাকি। সন্ধ্যার টিফিন দিয়ে গেছেন শান্তাদি। আমি এই ভর সন্ধ্যায় বোতল খুলে চেয়ার টেনে নিয়ে বাইরে গিয়ে বসে পড়লাম, কিছুই না একটু শরীর গরম করার প্রয়োজন আর কি। মদ খেতে খেতে এই ঝড়ো ভেজা পরিবেশ দেখতে আর উপভোগ করতে বেশ ভালো লাগে। সারা গায়ে জল আর সাবান ঘষে বেশ শীত শীত করছে এখন। আর ভয় কি কাল থেকে তো আবার নির্জলা। মদ খেতে খেতে কি যে ভাবছিলাম জানি না। হয়ত এই উন্মাদ পরিবেশে আমার উন্মাদ মনটাও হারিয়ে গিয়েছিল। একা একা চুপ চাপ বসে খাচ্ছিলাম বলেই হয়ত কত তাড়াতাড়ি খেয়ে চলেছি ঠিক ঠাহর করতে পারিনি। প্রায় তিন পেগ খেয়ে নেওয়ার বাথরুমে যেতে গিয়ে বুঝতে পারলাম বেশ একটা চিন চিনে নেশার আমেজ আমাকে গ্রাস করে ফেলেছে। এখনও আধ ঘণ্টা সময় আছে। বাথরুম থেকে হালকা হয়ে ফিরে এসে আরেকটা ছোট পেগ বানিয়ে প্রায় জলের মতন খেয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আর একটু পরেই শান্তাদি খাওয়ার জন্য ডাক দেবেন। কিন্তু অদিতির কোনও পাত্তা নেই। না আর দেরী করা যাচ্ছে না, মনের জড়তা কাটিয়ে অদিতিকে একবার ফোন করলাম। রিং হয়ে গেল। কেউ ফোন ধরল না। আরেকবার ফোন করার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলাম। একটু পরে নিয়ম মাফিক ডিনারের ডাক পড়ল। পাছে বাকিরা মদের গন্ধ পায় তাই খাবার টেবিলে খুব একটা হু হাঁ ছাড়া কথা বললাম না। সবার খাওয়া হয়ে গেল কিন্তু অদিতির পাত্তা নেই। উপরে উঠে আসবার সময় শান্তাদিকে একবার বললাম “তুমি একবার অদিতিকে ফোন করে দেখবে? মেয়েটা কোন চুলায় আছে? বাইরে এমন বৃষ্টি হয়ে চলেছে টানা আর তার ওপর দিন কাল ভালো না। আমি ফোন করেছিলাম ফোন ধরছে না। “ ঘরের ভেতর থেকে দীপালিদির গলা পেলাম “আমিও বার দশেক চেষ্টা করেছি। কারোর ফোন ধরছে না। মামনও ফোন করেছে কোথায় আছে জানবার জন্য। লাভ হয় নি। আরেকটু দেখে নি, দিয়ে তিতলিদিকে জানাতে হবে। তবে এই দুর্যোগের রাতে উনিও কিছু করতে পারবেন বলে মনে হয় না। “ উপরে উঠে একরাশ দুশ্চিন্তা মনে পুষে রেখে ঘরের দরজা খোলা রেখেই শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছে না। এপাশ অপাশ করে চলেছি। প্রায় এক ঘণ্টা কেটে গেছে। এতো সত্যি মহা মুশকিল। মেয়েটা এরকম আগে তো জানতাম না। অবশ্য তার পরের মুহূর্তেই মনে হল আমি যে বাইরে এই সব কীর্তিকলাপ করে বেড়াই সেসব জানলে অদিতিও হয়ত বল যে এই মেয়েটা যে এমন তাতো জানতাম না। এইসব ভাবতে ভাবতেই সামান্য যেন একটু তন্দ্রা মতন এসেছিল, কিন্তু নিচে লোক জনের উত্তেজিত গলার আওয়াজ পেয়ে ঘুম কেটে গেল। উঠে চট করে একবার ব্রাশ করে নিচে নেমে এলাম। গোটা মেস মামনদের ঘরে জড় হয়েছে। তিতলিদি সবে এসে পৌঁছেছেন। ওনার বর এই প্রথম চাক্ষুষ দেখলাম। আকার আয়তনে ওনার ঠিক বিপরীত। তবে বেশ একটা ব্যক্তিত্বর ছাপ আছে ভদ্রলকের চেহারায়। আমি নিচে নামার আগে আরেকবার অদিতি কে ফোনে ট্রাই করেছিলাম, কিন্তু রিসিভ করে নি। নিচে গিয়ে বুঝলাম সবাই হিসাব দিচ্ছে যে কে কতবার ওকে ট্রাই করে ফোনে পায় নি। তিতলি দেখলাম ঠিক কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। উনি মাঝে মাঝেই ওনার বরের মুখের দিকে করুণ ভাবে তাকাচ্ছেন। ওনার বর অনেক ভেবে শেষে বললেন “ এখন এই ভয়ানক বৃষ্টির মধ্যে কিছু করার নেই। কাল যদি কোনও খবর না পাওয়া যায় তো পুলিশে একটা খবর দেব। তবে তোমার কাছে ওর বাড়ির নাম্বার আছে না? সেখানেই একবার ফোন করে খবরটা জানিয়ে দাও। “ এটা ভালো আইডিয়া, জানি না কেন আমাদের কারোর মাথায় এই কথাটা আগে আসেনি। “ চৈতালিদি সাথে সাথে ওনার হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটা কালো ছোট ডাইরি বের করে (এখানে আমাদের সবার ঠিকানা নাম্বার ইত্যাদি লেখা আছে) একটা নাম্বার খুজে মোবাইলে নাম্বার ডায়াল করে দিলেন।” জানি না কে ফোন উঠিয়েছে উল্টো দিকে, কিন্তু তিতলিদি এক দমে অদিতির ব্যাপারে সব কথা বলে দিলেন। উনি এটা বললেন যে গোটা মেসের একটাও মেয়ে, এমনকি ওর নিজের রুম মেটও জানে না যে ও কোথায় গেছে। আপনার চটপট কিছু একটা করুণ। আর অপেক্ষা করার মানে হয় না। তিতলি দি আর ওনার বর এই দুর্যোগ মাথায় করেই বেড়িয়ে পড়লেন। বাইরে ওনাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তবে গাড়ি অব্দি পৌছাতেই একেবারে কাক ভেজা হয়ে গেলেন দুজনেই। আর তিতলিদি এমনিতে এই শরীর নিয়ে দৌড়াতে পারেন না। তাই ওনার যে এই বৃষ্টির আক্রমণের সামনে কি অবস্থা হল সেটা না বলাই ভালো।
এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে আবার সেই রোজকার তাড়াহুড়া। রাত্রির দুর্যোগ কেটে গিয়ে এখন ঝলমলে রোদের ঘনঘটা। নিচে নেমে জানতে পারলাম যে এখানকার কেউ অদিতির কোনও খবর পায় নি। আমি হাঁসপাতালে পৌঁছানো অব্দি আমার মাথায় ওর চিন্তা ঘুর ঘুর করছিল ঠিকই কিন্তু একবার কাজের চাপ এসে যাওয়াতে আর ওর কথা মাথায় এলো না, ভুলে গেলাম ওর কথা। মেসে ফেরার সময় বীরের ফোন এল যথারীতি। আর সেই সাথেই আমার মাথার ভেতর আবার অদিতির কথাটাও ফিরে এল। বীরকে অদিতির ব্যাপারে খুব একটা বলা হয় নি। আজও বললাম না। কাটিয়ে দিলাম। ওর সাথে সামান্য একটু ইন্টু মিন্টু করতে না করতেই মেসে পৌঁছে গেলাম। ভাবতে পারেন আমার তো হাঁসপাতাল থেকে ফেরার কোনও ঠিক নেই, তো বীর কি করে রোজ ঠিক বাড়ি ফেরার সময়েই ফোন করে। কারণ আর কিছুই না, হাঁসপাতাল থেকে বেরনোর আগে ওকে আমি একটা মিসড কল দিয়ে দি। আর ও ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় কল ব্যাক করে। ও আমাকে বলল ওর দাদা নাকি ওকে জিজ্ঞেস করেছে যে কারোর প্রেমে পড়েছে কিনা। কিন্তু ও সতর্ক ভাবে কাটিয়ে দিয়েছে। সাবাশ ছেলে, এই না হলে আমার কচি নাগর। সব দিক বাঁচিয়ে চলতে শিখে ফেলেছে এরই মধ্যে। ভাবতে ভাবতে ঢুকছিলাম যে দীপালিদিকে অদিতির কথা জিজ্ঞেস করে তারপর ওপরে যাব, কিন্তু সেটা আর করতে হল না, কারণ মেসে ঢোকার মুখেই শান্তাদির মুখোমুখি পড়লাম, আর উনিই আমাকে নিজে থেকে যেচে সব কথা বলে দিলেন। অদিতির বাবা মার ফোনও অদিতি অব্দি পৌঁছায় নি গতকাল। ওনারাও তিতলিদির মতন ঠিক করে ফেলেছিলেন যে সকালে উঠে পুলিশে খবর দিয়ে দেবে নিখোঁজ বলে। কিন্তু তার আগেই অদিতির ফোন আসে ওনাদের কাছে। অদিতি কোলকাতাতেই ছিল গতকাল থেকে। ওর এক ছোটবেলার বন্ধুর বাড়িতে। অদিতি ওর প্রেমিকের কোনও উত্তর না পেয়ে শেষে নাকি ঠিক করে ফেলেছিল যে যেকোনো উপায়ে এই পাপকে নিজের শরীর থেকে বিদায় করে দেবে, তাতে যদি তার শরীরের কোনও স্থায়ী ক্ষতিও হয় তো তাতেও ও কিছুতেই পিছু হটবে না। কে না জানে যে কোলকাতায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আজকের দিনেও এসব কাজ হয়ে থাকে। অদিতি সেরকমই একটা জায়গার সাথে কথা বলে সব কিছু ঠিক করে রেখেছিল এই কদিনে। আজ সকালেই যা করার করা হবে সেটাই ঠিক করে রেখেছিল। গতকাল ওর বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার সময় এটিএম থেকে যা টাকা তোলার তুলে নিয়ে চলে গিয়েছিল একেবারে। ওর বন্ধুকে ও কিছুই জানায়নি। ও শুধু জানিয়েছিল যে এমনি বৃষ্টিতে এসে ফেঁসে গেছে তাই ওর সাথে এক রাত্রি থাকতে চায়। সারা রাত আত্মগোপন করে থাকার পর সকাল বেলায় দশটার আগে গিয়ে যা করার করিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আপদ বিদায় নেওয়ার পর আর কিছু ভয়ের কারণ নেই, মানে আর কেউ বাঁধা দিতে পারবে না এই কার্যকলাপে, এটা বুঝেই বাড়িতে ফোন করে খবরটা দিয়ে দিয়েছে ওর মাকে। আর তাছাড়া সব প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই ও এখন শারীরিক ভাবে ভীষণ দুর্বল, আর শুধু দুর্বল নয়, ওর নাকি নড়া চড়া করার মতনও ক্ষমতা ছিল না। তাই এখন একটু বাড়ির আদর দরকার ( যাকে বলে কেয়ার পাওয়া আর কি), আর তাই সব জানিয়ে বাড়ির লোককে ঠিকানা দিয়ে সেখানে আসতে বলেছে দুপুরের দিকে। ওর বাড়ির লোকেরা পুলিশে খবর দেবে দেবে করেও দেয় নি, কারণ ওরা শেষ অব্দি চারপাশে খবর নিয়ে দেখে নিচ্ছিল। যখন ওরা প্রায় ঠিকই করে ফেলেছে যে এইবার পুলিশের কাছে যাবে ঠিক তখনই অদিতির ফোন আসে। ফোন পাওয়া মাত্র ওর বাড়ির লোক এসে হাজির হয় অদিতির বলা জায়গায়। অদিতিকে নিয়ে ওর বাবা ডাক্তার দেখাতে চলে গেলেন ওখানে থেকে, আর ওর মা আর জেঠু এসে এখান থেকে বেশ কিছু জামা কাপড় প্যাক করে নিয়ে গেছেন। অবশ্য এখানে আসার আগে তিতলি দির সাথে কথা বলে এটা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে অদিতি কিছুদিন এখানে থাকবে না, তবে বেড বুক করা থাকবে। মদ্দা কথা সবাই মিলে ওকে বাড়িতে নিয়ে গেছেন আর ও ওখানেই থাকবে যত দিন না পুরো পুরি সেরে ওঠে। তারপর আবার ও এখানে ফিরে আসবে। অবশ্য ততদিন ওর জন্য বেড ধরা থাকবে। অবশ্য তিতলি এসে ওর মা আর জেঠুর সাথে কথা বলে ওদের নিজের ধরা গলায় (আমার বিশ্বাস এটা পুরোটাই তিতলিদির নাটক, কারণ এতদিন না থেকে কেউ একজন তার বেড ধরে রেখে অগ্রিম টাকা দিয়ে গেছে, তাতে ওনার সত্যি বলতে কি দুঃখ হওয়ার কোনও কারণ আমি দেখি না, আমি হলে তো মনে মনে বেশ খুশিই হতাম, অবশ্য এটা আমার ভুলও হতে পারে।) অনেক অনেক সহানুভূতি জানিয়ে বলেছেন যে অদিতি ওনার মেয়ের মতন (এটাও আমার বিশ্বাস হয় না), ও সুস্থ হয়ে এসে এখানেই থাকবে সেটাই উনি চান। শান্তাদির ভাষায় সহানুভূতি জানাতে জানাতে নাকি তিতলিদির চোখে জল এসে গিয়েছিল।
আমার বিশ্বাস পুরোটাই মেকি, অর্থাৎ পরিস্থিতি অনুযায়ী নাটক করেছেন তিতলিদি, কিন্তু হতে পারে সবাইকে নিজের মতন করে ভাবার কোনও কারণ নেই, উনি হয়ত সত্যি অদিতিকে নিজের মেয়ের মতই ভালোবাসতেন, তবে ওই যে বললাম ওনাকে যতটা দেখেছি সেই থেকেই বলছি, আর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই সব আদিখ্যেতা বিশ্বাস করতে ঠিক মন চায় না। এই লেখাটা একান্ত ব্যক্তিগত। নইলে আমিও তিতলিদির মতন একই সুরে লিখতাম উফফ আমার মন ভেঙ্গে গেল, বুক ফেটে গেল (না না স্তন ফেটে গেলে ছেলে চড়াবো কি করে), চোখ ভরে এল, কিন্তু এমন নাটক আমি করব না। সোজাসুজি বলতে, এই কথাটা শোনার পরেই আমার মনে যে প্রথম প্রতিক্রিয়াটা এল সেটা হল “ওহহহ ইয়েস। এইবার গোটা ঘরটা আমার, শুধু একা আমার। প্রাইভেসির আর কোনও সমস্যা নেই। এসি না থাকলেও এখন বেশ কয়েকদিন (আসা করি বেশ কয়েকদিন আগে ও ফিরে আসবে না) হাত পা ছড়িয়ে থাকা যাবে ঠিক যেমন থাকতাম চৈতালিদির বাড়িতে। যখন খুশি লাইট জ্বালিয়ে থাকতে পারব। যখন খুশি এক আধ পেগ মেরে দিতে পারব, সত্যি বলতে ওকে দেখে একটু সমীহ করে মেপে ছকে চলতে হত, কি ভাববে না ভাববে এইসব ভাবতে বাধ্য হতাম, ঠিক কেয়ার করতাম না ওর উপস্থিতি, কিন্তু ওর যাতে অসুবিধা না হয় বা যেটা ওর ভালো লাগে না সেরকম কিছু করার আগে অন্তত দশ বার ভেবে দেখতে হত। এখন থেকে ভালো করে সুস্থ গলার আওয়াজে বীরের সাথে শুয়ে শুয়ে কথা বলা যাবে। প্রাইভেট গোপন একান্ত আপন কথাগুলো বলার সময় আর ও কি শুনে ফেলবে সেই চিন্তা করতে হবে না। এইবার আর শেভ করার জন্য বাথরুমে যেতে হবে না। এইখানেই আয়না নিয়ে বসে করা যাবে রূপ পরিচর্যা। “ মনে এতগুলো কথা একসাথে এসে আনন্দের ঢেউ খেলিয়ে দিয়ে গেলেও মুখে কিছু বললাম না। “ খুব খারাপ হয়েছে, আশা করি তাড়াতাড়ি সেরে আবার ফিরে আসবে,” বলে উপরে উঠে গেলাম। যাওয়ার পথে শুনলাম শান্তাদি আমাকে তাড়াতাড়ি এসে খেয়ে যেতে বলছেন আর তিতলিদি নাকি আমাদের সবাইকে বলে দিতে বলেছেন যে অদিতির ব্যাপারটা নিয়ে আর মাতামাতি না করতে আর যখন ও ফিরে আসবে তখন যেন সবাই ওর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করে। আমি একবার চেচিয়ে বলে দিলাম “ খেতে আসছি খুব তাড়াতাড়ি।” আর বাকি কিছু বলার মতন আদিখ্যেতা বা ভন্ডামি আমার ভেতরে নেই, সেগুল আনার কোনও চেষ্টাও করলাম না। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে মনে মনে ভাবলাম যে, না, আমি নিজেকে যত খারাপ মেয়ে ভাবি তত খারাপ মেয়ে আমি নই। চৈতালিদির বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি চলে আসার পর মাঝে মাঝে মনে হত যে আরেকজনের সাথে রুম শেয়ার করতে হবে। আর এখন দেখুন আবার একা একটা বড় ঘর ভোগ করব পরের কিছুদিন। আমি খুব খুব খারাপ মেয়ে তাই লিখছি নির্দ্বিধায়, আজকের রাত্রের ঘুমটা হয়েছে ব্যাপক, কারণ ঘুমানোর আগে আজ দরজা জানলা লাগিয়ে একবার ভালো করে মনের সুখে নিজের মধ্যাঙ্গুলি দিয়ে নিজের যোনীর ভেতরটা ঘষে আত্ম মৈথুন করে ভালো করে এই কদিনের জমে থাকা হতাশা আর জলগুলো ঝড়িয়ে নিয়েছি নিশ্চিন্ত মনে। আর কি চাই। একেই তো বলে প্রাইভেসি। রাতে ক্লান্ত শরীরে বাড়িতে ফিরে আসার পর একটু মনের সুখে আত্মমৈথুনে মেতে উঠতে পারব না তো কিসের সুখ। অদিতি ফিরে আসতে দেরী আছে। আর আমি মনে মনে চাই ও সেরে উঠুক, কিন্তু বেশ কিছুদিন বাপের বাড়ির আদর খেয়ে তবেই ফিরুক। ওর কথায় আসব ও ফিরে আসার পরে। এখন অন্য কথায় যাচ্ছি।
এই দুদিন বিন্দাস কাটল এক কথায়। দুটো উপলব্ধি হল ভেতরে ভেতরে। প্রথম, এখনও যেহেতু আমি সারাক্ষন পুরুষ সংসর্গ পাচ্ছি না ঘরে, তাই পুরুষের শরীরের আঁচ যে আমার চাইই চাই সেটা হয়ত সত্যি নয়। রোজ একবার করে আত্মরতিতে ভালো করে মেতে উঠে শারীরিক কষ্ট আর হতাশা মেটাতে পারলেই যথেষ্ট। সুতরাং! সুতরাং যে কি সেটাও কি আপনাকে বলে বোঝাতে হবে? ওই রকম একগুচ্ছ অচেনা লোকের চোখের সামনে নির্লজ্জের মতন শস্তা হোটেলে গিয়ে বীরের সাথে শোয়ার এখন আর আমার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ আমার দিনের শেষে বাড়ি ফেরার পর যা চাহিদা থাকে সেটা আমি এক গ্লাস ভোদকা পান করতে করতে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে পা ফাঁক করে বিছানায় শুয়ে আত্মরতি করতে করতে মিটিয়ে নিতে সক্ষম এই কদিন। মনের সুখে শীৎকারও করতে পারি এই দরজা বন্ধ ঘরে, তবে হ্যাঁ খুব হিট খেলেও ভীষণ জোড়ে চেচাই না, পাছে বাইরে থেকে অন্য কেউ শুনে ফেলে। বীরের সাথে প্রতি সপ্তাহে এরকম আউটিং করাটা একটু রিস্কি (আমি অবশ্য রিস্ক পছন্দ করি এই সব ব্যাপারে)। অদিতি ফিরে এলে কি হবে দেখা যাবে। আচ্ছা এই প্রথম কারনেই, আমি অদিতি যত দিন ফেরেনি, বীরের সাথে ততদিন ওই ভাবে শস্তা হোটেলের পথ মাড়াইনি। দ্বিতীয়, এটা মজার। এই উপলব্ধিটা হল দ্বিতীয় দিন, এই দিন আমি শুধু মস্তি করার জন্য ঘরে মগে করে জল আর ফ্যানা গুলে নিয়ে এসে নগ্ন হয়ে বসে সারা শরীর শেভ করছিলাম সময় নিয়ে, যাতে একটাও লোম না থাকে সারা গায়ে। রূপ পরিচর্যা শেষ হলে একটা নগ্ন হয়ে আত্মরতি করতে করতে মনে হল একটা কথা। পুরুষ স্পর্শ না বা পেলাম বা চাইলাম, কিন্তু ছেলেদের মতন কিছু একটা ফ্যান্টাসি নিয়ে আঙুল ঢোকালে বোধহয় বেশী সুখের অনুভুতি আসে। অনেক কিছু ভাবার চেষ্টা করলাম কিন্তু ঠিক কি নিয়ে ভাবা যায় মাথায় এলো না। এদিকে আমার ভেতরে জল ঝড়ে চলেছে আমার মধ্যাঙ্গুলির ঘর্ষণে। একটা সময়ের পর অরগ্যাস্মও পেয়ে গেলাম। কিন্তু সত্যি যতটা তৃপ্তি পাওয়ার কথা ছিল সেটা বোধহয় হল না। কারণ বোধহয় এই যে আমি চাইছিলাম কিছু একটা গরম ব্যাপারে ভাবতে ভাবতে বা কারোর কথা ভাবতে ভাবতে এই জলতা খসাবো। তোয়ালে দিয়ে নিজের যোনীদ্বারটা ভালো করে মুছে নিয়ে নগ্ন ভাবেই চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘরে তো কেউ নেই। এটাও প্রাইভেসি। কিন্তু একটা কিছু ভাবতে হবে ফ্যান্টাসি করার জন্য। অনেকক্ষণ শুয়ে শুয়ে ভাবার পর একটা পথ মাথায় এল। এটা পুরোটাই ছেলে মানুষী আগেই বলে রাখলাম। এই চিন্তা আর এই চিন্তাকে অনুসরণ করতে গিয়ে যা যা হয়েছিল তাতে সেক্সের থেকে বেশী হাসির খোঁড়াক পাবেন এতে। তবুও লিখছি, কারণ না লিখলে লেখাটা সম্পূর্ণ হবে না। আর আপনার বা ছেলেদের মতন যে অনেক মেয়েরাও এইসব অদ্ভুত ছেলেমানুষি কাজ করে থাকে সমাজের চোখ এড়িয়ে, বা বলা ভালো সমাজের কোঁচকানো ভুরুগুলোকে উপেক্ষা করে সেটা বুঝতে পারবেন এই জায়গাটা পড়ার পর। অনেক আগে অদিতি মানে আমার ডাক্তার বন্ধু অদিতি বলেছিল যে গড়িয়াহাটের ফুটপাথে নাকি কিছু কিছু বইয়ের দোকান আছে, মানে ছোট ভ্রাম্যমান বইয়ের দোকান, সেখানে নাকি অনেক গরম গরম বই পাওয়া যায়। ইংরেজি, বাংলা সব রকম। সত্যি মিথ্যে কখনও যাচাই করে দেখা হয় নি। আচ্ছা ও এটাও বলেছিল যে শিয়ালদহ বা বড় বড় স্টেশনে যে মাটিতে বসা বইয়ের বা ম্যাগাজিনের দোকান গুলো থাকে তাতে নাকি চটি নামক এক অদ্ভুত বস্তু পাওয়া যায়। তাহলেই বুঝতে পারছেন ছেলেদের গোপন হস্ত মৈথুন করার যে সামগ্রীগুলো থাকে সেগুলোর খবর আমাদের মতন সব মেয়েরাই রাখে, তবে হ্যাঁ আমরা বাইরে সে কথা প্রকাশ করি না। কারণ ছেলেরা সেই সব বই পড়ে ফুর্তি করলেও ছেলেদের কেউ কিছু বলবে না, সবাই বলবে ছেলেরা এই বয়সে এইসব করেই থাকে (কেন করে থাকে, না করলে কি হত এই প্রশ্নে সমাজ ঢোকে না,), কিন্তু এইসব বইয়ের খবর আমাদের কাছে আছে শুধু এই কথাটা প্রকাশ পেলেই এই ভণ্ড সমাজ আমাদের নামে কুৎসা রটাতে ছাড়বে না (একটা মেয়ে এইসব জানে? মাই গড। ওহহহ কেন জানে? এ তো আর ছেলে নয়, এর তো জানার কথাই নয়, তবে, জানল কি করে? অদ্ভুত মেয়ে তো, নিশ্চই ভীষণ ভীষণ বাজে মেয়ে, নিশ্চই অন্য কারোর সাথে শুয়ে বেড়ায়, এটা তো ওর করার বা জানার কথাই নয়, (আর সব থেকে বড় কথা) ওকে এইসব দেখবার বা জানবার অধিকার কে দিয়েছে? আমি তো দি নি! আমি চাই না তবুও ও জানলো কি করে, বা করার সাহসই বা পাচ্ছে কি করে। কে যে আমার বা আমাদের মেয়েদের জীবন যাত্রার মাত্রা নির্ধারণের দায়িত্ব এই গান্ডুগুলোকে দিয়েছে সেটা এই গান্ডুগুলো ছাড়া আর কেউই বোধহয় জানে না, কিন্তু এটাই সমাজ, আর আমরা সামাজিক জীব। আমিও তার ব্যতিক্রম নই, আর ব্যতিক্রম হতেও চাই না, কারণ সব দিক বাঁচিয়েও সব কিছু করা যায়।)। নগ্ন শরীরটা নিয়ে চাদরের নিচে ঘুমাতে ঘুমাতে ভাবলাম আমাদের হাঁসপাতালের একটু দুরেও তো বেশ কয়েকটা চটি মার্কা ম্যাগাজিনের ভ্রাম্যমান দোকান দেখেছি। অবশ্য আমি সিওর নই যে তাতে ওইসব পাওয়া যাবে কিনা যেটা আমি চাইছি। কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কি? গিয়ে তো সোজা সুজি কিছু চাইব না। ছবি দেখে ভুরু কুঁচকে বিজ্ঞের মতন একটা কিছু বেছে নিতে হবে। তবে এখানে একটা সমস্যা আছে। সেই কথায় আসব ঘটনাক্রমে।
পরের দিন হাঁসপাতাল থেকে বেড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঠিক করে রেখেছিলাম যে এরকমই একটা বইয়ের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াব, কিন্তু কাজের চাপের চোটে সেই সব চিন্তা মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে শোবার আগে যখন আত্মরতিতে মগ্ন হওয়ার সময় এসেছে তখন সেই কথা মাথায় এল। এখন দুদিন ধরে পুরো নগ্ন হয়েই ঘুমাচ্ছি প্রাভেসির সুযোগ নিয়ে। সত্যি বলতে কি পরিতৃপ্তির পরে এইভাবে নগ্ন ভাবে শুয়ে চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমাতে বেশ লাগে। পরের দিন সব কিছু মনে ছিল কিন্তু হাঁসপাতাল থেকে বেরোতে এত দেরী হয়ে গিয়েছিল যে বইয়ের দোকানগুলো হেঁটে হেঁটে অন্যত্র গমন করেছে। অগত্যা ঠিক করলাম যে কাল আর চেস্টাই করব না। আর তো একদিন একটু কষ্ট করে কোনও কিছু অনুপ্রেরণা ছাড়াই করে নেওয়া যাক যা করার। তার পরের দিন ফেরার সময় কিনতেই হবে, কারণ তার পরের দিন ছুটি। সেই সব বই পড়ার পর বেশী হিট খেয়ে ঘুমাতে দেরী হয়ে গেলে কি করব? গতকাল আর আজ প্ল্যান করেছিলাম যে যাব আর বই কিনব, কিন্তু যাওয়া হয় নি, কিন্তু কাল তো প্ল্যান করিনি, তাই ভাগ্য যে কালই সাথ দেবেন সেটা কি আর বুঝতে পেরেছি। এইবার মজার কথায় আসছি। পরের দিন হাঁসপাতালে যাওয়ার পর আগের রাতের সব কিছু ভুলে গিয়েছিলাম, অনেক কাজ তারপর দুপুরে অরুণের সাথে অনেকক্ষণ গল্প, তারপর, তারপর আর কি, সন্ধ্যায় কাজের শেষে ছুটি। ছুটির আগে অব্দি এখানে সময় জ্ঞান থাকে না। আজ বেরনোর আগে বীরকে মিসড কল দিতে যাচ্ছি, এমন সময় ঘড়ির দিকে খেয়াল পড়ল। সাড়ে সাতটাও বাজেনি। ও হ্যাঁ এখানে বলে রাখি এই দুদিনই বাড়ি ফিরেও বীরের সাথে কথা হয়েছে খানিকক্ষণ। ও ফোন রাখার আগে অরুণের মতই অনেকগুলো চুমু উপহার দেয় আমায়, আর কোথায় কোথায় দেয় সে আর নাই বা বললাম, যারা প্রেম করেছে তাদের এটা অজানা নয়, তবে আপনার ব্যাপারটা আমি ঠিক বলতে পারব না। অরুণ আর বীর দুটোই আমাকে নিয়ে পাগল। আজ আর মিসড কল দিলাম না। অনেকবার মনকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে আজ ওই দিকে যাব না, কালই তো যাব, কিন্তু মন মানলেও আমার অবাধ্য ঠ্যাং দুটো মানলো না। ঠিক এই জন্যেই কথায় বলে যে ঠ্যাং ভেঙ্গে ফেলে দিতে হয় তাহলেই আর বাড়াবাড়ি করা যায় না। কিন্তু আপাতত আমার ঠ্যাং দুটো ঠিক আছে, আর আমি যতক্ষণ যাব কি যাব না এইসব নিয়ে মাথা ব্যথা করছি, ততক্ষণে বাবাজীরা মানে আমার ঠ্যাং দুটো অবাধ্য ভাবে আমাকে উলটো দিকের ফুটপাথ ছাড়িয়ে আবছা অন্ধকারের মাঝে ওরকমই একটা বইয়ের দোকানের সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছে। দোকানটা খালি, কোনও খদ্দের নেই। মালিক বসে মাছি তাড়াচ্ছে, থুড়ি মশা। এখানে ভীষণ মশা। কিছু করব করব করা আর সত্যি যখন করার সময় আসে তখন যে মানসিক অবস্থা হয় এই দুটোর মধ্যে যে কত বেশী পার্থক্য থাকে সেটা এখন উপলব্ধি করলাম। এখানে আসার জন্য এত ইচ্ছে ছিল মনে, আর দুদিন ধরে আসতে না পারার জন্য ছটফট করে চলেছিলাম ভেতরে ভেতরে, কিন্তু এখন যখন এসেই পড়েছি, তখন ব্যস সব দম হাওয়া। কিন্তু আমিও দমবার পাত্রী নই। আগে একটু দম তো নিয়ে নি। আর এই লোকটা যখন বসে মশা মারছে, তখন আমাকে সহজে ছাড়বে না। কিছু একটা গছানোর ইচ্ছে এরও রয়েছে। চারপাশটা একবার দেখে নিলাম, না কেউ আমাকে লক্ষ্য করছে না। লেগে পড়া যাক। একটা জোড়ে দম নিয়ে প্রচণ্ড বিজ্ঞের মতন মুখ করে সামনে রাখা ম্যাগাজিন আর বইগুলোর ওপর ঝুঁকে পড়লাম। লোকটা প্রথমেই একবার জিজ্ঞেস করেছিল যে কি লাগবে, তখন দম নিয়ে সাহস জোগাড় করছিলাম্* তাই ওর কথার উত্তর দেওয়া হয় নি, এখন আরেকবার জিজ্ঞেস করল, এখনও সুযোগটা নষ্ট করলাম কারণ এখন বিজ্ঞের মতন ভাব করে নাটক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বেশ কিছুক্ষণ ধরে পুরো সাজানো বইগুলোর ওপর নজর বুলিয়েই চলেছি, কিন্তু ঠিক কোনটাই মনঃপুত হচ্ছে না যে। অনেকগুলো ইংরেজি বইও সাজানো আছে। কয়েকটা দেখেই বাতিল করে দিয়েছি, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল সেই বাতিল করা বইগুলই হাতে নিয়ে বেশী করে দেখে চলেছি সংকোচ কাটানোর জন্য। লোকটা নির্মোহী আর একটা ভাবহীন দৃষ্টি নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার কার্যকলাপ দেখেই চলেছে। প্রায় মিনিট পাঁচেক হয়ে গেল এইটা ওইটা দেখে, শেষে আরেকবার লোকটার দিকে তাকাতেই ও আবার উঠে চলে এল আমার পাশে আমাকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে। “দিদি কি বই খুজছেন? আমাকে বলুন আমি সাহায্য করতে পারি।” আমি একটু গলা খাকরে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু ঠিক কিছু বলতে পারলাম না, “দাঁড়ান দেখছি।” আমার ছোটবেলার পড় থেকে তেমন ইংরেজি বই পড়ার অভ্যেস নেই, মানে গল্পের বইয়ের কথা বলছি, পড়ার বই তো ইংরেজিতেই পড়তে হয়। এইবার লোকটা আমার পাশ থেকে নড়ল না।