Thread Rating:
  • 13 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy একটি নাম না দেওয়া গল্প... আসুন আর পড়ুন by somsom1981
#79
পরের পর্ব
রাতে বীর ফোন করেছিল। ওর সাথে ফিস ফিস করে অনেক্ষন গল্প করে শেষে বই নিয়ে বসে পড়লাম। কাল থেকে আবার সেই দৌড়া দৌড়ী শুরু হয়ে যাবে। অদিতি আজ বেশ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে। ওকে এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে দেখে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার আজ মন দেওয়া নেওয়া হচ্ছে না?” ও আমাকে একটু হতাশ ভাবে বলল ঝগড়া হয়েছে। এখন কথা বন্ধ। পরে রাগ নামলে আবার শুরু হবে। আমিও আর ওকে না ঘাটিয়ে নিজের বইয়ে মন দিলাম। একই জিনিস আগেও পড়েছি, এখন আবার পড়ছি, কিন্তু যেন অনেক বেশী বুঝতে পারছি, অনেক নতুন লাগছে প্রতিটা লাইন। আজ রাতে প্রায় আড়াইটা অব্দি পড়েছি, তারপর ঘুমাতে গেছি। সকাল বেলায় উঠে আবার সেই একই দৌড়া দৌড়ী শুরু। আজ আর কাল নিয়ে বলার মতন কিছু নেই। ডাইরির পাতাও খালি। দুদিনই অরুণের সাথে অনেক গল্প হয়েছে। কিন্তু পরশু দিন একটা ছোট ঘটনা ঘটেছিল, এইবার সরাসরি সেই কথায় আসব। পরশুঃ আজও আমি সকাল সকাল ব্রেক ফাস্ট সেরে রোজকার মতন হাঁসপাতালে চলে গেছি। দুপুরে অরুণের সাথে প্রায় আধ ঘণ্টা গল্প হয়েছে। অনেক কাজের চাপ ছিল আজ। বিকালে ফেরার সময় বীরের সাথেও অনেক গল্প হয়েছে রাস্তায়। মেসে ফিরে দেখলাম এক তলায় কেউ নেই। শান্তাদিকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে শান্তাদি? লোকজন সব কোথায়? ” বুড়ো গোকুল উনুনের সামনে বসে রান্না করে চলেছে। আজ কাজের চাপ থাকলেও একটু আগে ফিরেছি। এখন পর্যন্ত রান্না শেষ হয়নি, যদিও সন্ধ্যার টিফিন পর্ব শেষ হয়ে গেছে অনেক্ষন। শান্তাদি আমার খুব কাছে এসে চারপাশটা একবার ভালো করে দেখে নিয়ে খুব গলা নামিয়ে বলল আপনার ঘরের দিদিমণির বাড়ির লোক এসেছিল। আর ওইদিকের বাড়ির লোকও এসেছিল। খুব ঝামেলা হয়ে বাড়ির সামনে। বেশ ভিড় জমে গিয়েছিল। উপরে যাও সব জানতে পারবে। সঠিক না বুঝলেও কিছুটা বুঝতে পারলাম যে কি হয়েছে। উপরে গিয়ে দেখলাম আমার ঘরে ভর্তি লোক। মানে গোটা মেস আমাদের ঘরে এখন। তিতলিদিও আছেন দেখে আরও একটু আশ্চর্য হলাম। সবাই আমার আর অদিতির বিছানা আর চেয়ার দখল করে বসে আছে। অদিতিকে দেখলাম ওর বিছানার ওপর বসে এক নাগাড়ে কেদে চলেছে। আমি যে নিচ থেকে কিছুটা শুনে এসেছি সেটা চেপে গেলাম। কেচ্ছা বার বার শুনতে ভালো লাগে। আমাকে দেখে সবাই আমার বিছানা থেকে উঠে পড়তে যাচ্ছিল, আমি হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম যে ঠিক আছে, ওঠার দরকার নেই (যদিও এখন একটু ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরীরটা ফেলে দিতে ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছিল, কিন্তু সেই ইচ্ছে দমন করলাম)। কিছু গুরুতর ব্যাপার হয়েছে নিশ্চই, নইলে তিতলিদি এখানে?” তিতিলি দি ঠাণ্ডা গলায় আমাকে বললেন তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমাদের কথা প্রায় শেষ। আমি ফ্রেশ জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমের দিকে রওয়ানা দিলাম। ফিরে এসে দেখলাম আসর ভেঙ্গে গেছে। বাসী জামা কাপড় গুলো ধোয়ার জন্য তুলে রেখে আমি ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলাম। নিচে খাবার বাড়তে আরেকটু সময় লাগবে। এত দেরী এখানে হয় না। কিন্তু আজ ওই ঝামেলা হয়ে যাওয়াতে সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেছে। অদিতিকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার কোনও মানে হয় না। কারণ ও বিছানায় শুয়ে শুয়ে এখনও চোখের জল মুছে চলেছে। তাই আমি নিচে নেমে এলাম দীপালিদির রুমে। আমি সচরাচর এইভাবে কারোর ঘরে যাই না। আসলে এখানে কেউই আগ বাড়িয়ে পরে ধনে পোদ্দারি করতে যায় না। তবে আজ আমাকে দেখে দীপালিদি একটুও আশ্চর্য হল না। মামন কে দেখলাম বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় পড়ে আছে। আমাকে ঢুকতে দেখে উঠে বসল। আজ হাঁসপাতালে গিয়েছিলে?” উফফ এই জন্যই বোকা মামন। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় জিজ্ঞেস করি ঘটে কিছু দিয়েছেন ভগবান তোমারে … “ কিন্তু গিলে নিলাম। হাঁসপাতালে যাব না তো কোন চুলায় যাব। দীপালিদি মামনের এই প্রশ্নে একটু যেন ক্ষুণ্ণ হল, সেটা ওর নজর থেকে স্পষ্ট, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। আমি মামনের প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়ে দীপালিদির বিছানায় গিয়ে বসে গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এই, কি ব্যাপার বল তো?” মামন কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল ভীষণ উচ্ছসিত হয়ে, “ অদিতির প্রেমিক বিদ্রোহ...দীপালিদি ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকাতে থেমে গেল।
 
দীপালিদির মুখ থেকে যা শুনলাম সেটা এই মতন। বিকালের দিকে অদিতির প্রেমিককে নিয়ে ওর বাড়ির লোকজন মেসে এসে চড়াও হয়েছিল। অদিতি আজ কলেজ যায় নি। সকাল থেকেই ওকে দেখে নাকি সবাই বুঝতে পেরেছিল যে কিছু গণ্ডগোল আছে। নইলে মেসে সারা দিন বসে থাকার মেয়ে ও নয়। আমি যদিও তাড়াহুড়ার মধ্যে ভালো করে ওকে খেয়াল করিনি। অদিতির প্রেমিকের বাড়ির লোকজন আসার কিছুক্ষণ পরে অদিতির বাড়ির লোক জনও এসে হাজির হয়েছিল। ওদের মধ্যে অনেক্ষন ধরে মেসের সামনে দাঁড়িয়ে বচসা হয়। বিস্ফোরক খবর হল অদিতি প্রেগন্যান্ট। প্রায় তিন মাসের দিকে যাচ্ছে, এখন আর গর্ভপাত করাও অসম্ভব। অদিতির প্রেমিক এখনও নিজের পায়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু ও অদিতিকে বিয়ে করে নিতে চাইছে। বাড়িতে সব কিছু জানানোর পর বাড়ির লোকেরা বিদ্রোহ করেছে। ওদের বক্তব্য এমন ফেল করা মেয়েকে ওদের বাড়িতে তুলবে না। অদিতির বাড়ির লোকজনও ছেড়ে কথা বলে নি। শান্তাদি ঠিকই বলেছেন, বাইরে ভিড় জমে গেছিল একটা সময়ের পর। পরে তিতলিদি আর ওনার বর আসে সবাইকে বিদায় করেছেন। ওপরে টিভির ঘরে বসে অনেক্ষন কথা হয়েছে সবার সামনে। অদিতিকে ওর প্রেমিকের বাড়ির লোকজন অনেক ভালো মন্দ শুনিয়েছে। অনেক খারাপ কথাও শুনিয়েছে। অদিতি সেই যে তখন থেকে কান্না শুরু করেছে এখন অব্দি সেই কান্না চলেই চলেছে। অদিতির বাড়ির লোকেরাও ওর প্রেমিককে ভালো মন্দ অনেক কিছু শুনিয়েছে প্রত্যুত্তরে। শেষে পুলিশের ভয় দেখাতে ওর প্রেমিক নাকি বলেছে, অদিতিকে ভালোবাসি বলে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। যা হয়েছে তাতে দুজনের মত ছিল। এখন পুলিশের ভয়ে বিয়ে করতে আমি পারব না। এই সম্পর্কের এখানেই ইতি। আপনারা আর আপনাদের মেয়ে যা পারেন করে নিন। কোলকাতায় উকিলের অভাব নেই। আর আমার বাবার পয়সার অভাব নেই। ওদের বাড়ির অবস্থা বেশ ভালোই, অন্তত অদিতি দের বাড়ির থেকে ভালো সেটা নাকি দেখলেই বোঝা যায়। সত্যি কথা বলতে এইসব ক্ষেত্রে টিভিতে যাই দেখাক না কেন, পুলিশ প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের ব্যাপারে কোনও নাক গলায় না। কারণ এটা রেপ কেস নয়। আর তাছাড়া, যা হয়েছে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে নিজেদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক করেছে এতে পুলিশ কি করবে। এরকম অসংখ্য কেস থাকে। এমনও হয় শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার পর ব্রেক আপ হয়ে গিয়ে দুজনে অন্য কারোর গলায় ঝুলে পড়ে। এটা তো সচরাচর হয়েই থাকে। সত্যি কথা বলতে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ এই সব কেস নিতেই চায় না বাস্তবে। এখন অদিতির প্রেমিক বেঁকে বসায় সবাই খুব টেনশনে পড়ে গেছে। অদিতির প্রেমিকের বাড়ির লোকজন চলে যাওয়ার পর অদিতির জেঠু নাকি সবার সামনে বলেই ফেলেছেন যে এক্ষেত্রে পুলিশ মাথাই গলাবে না, বা পুলিশের কাছে গিয়ে কোনও ফল হবে না বাস্তবে। কেস নিয়ে নইলে কোর্ট কাছারি শুরু করতে হবে। আর এরকম অবস্থায় মেয়ে বলেই যে অদিতির পক্ষেই বিচার হবে তার সত্যি কোনও মানে নেই। আর এইসব কেসের ফয়সালা হতে হতে অনেক সময় লেগে যায়। ততদিনে যা হওয়ার হয়ে যাবে। আর তেমন কোনও কেস করতে গেলে অদিতিরও প্রচুর বদনাম হবে। কারণ কলেজের সবাই জানে ওদের প্রেমের বিষয়ে। অন্য একটা কিছু ভেবে দেখতে হবে মাথা ঠাণ্ডা করে। অদিতির বাবার বক্তব্য তিনি শুধু ছেলেটাকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন। সত্যি সত্যি পুলিশ ইত্যাদি করাতে ওনারও ভয় আছে। কিন্তু এখন তীর বেড়িয়ে গেছে। ছেলে ওনার কথা শুনে বেঁকে বসেছে। খুব সোজাসুজি যা বলার বলে দিয়ে বেড়িয়ে গেছে বাড়ির লোকজন কে নিয়ে। দীপালিদি বলল তিতিলিদি অদিতিকে এই ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটিয়ে নিতে বলেছেন কারণ তা না হলে মেসের বদনাম হবে। এরকম লোক জটলা রোজ হতে থাকলে বাকিরা আর থাকতে চাইবে না। পেটে বাচ্চা নিয়ে অদিতি মেসে থাকতে পারে, কিন্তু কোনও ঝঞ্ঝাট হলে উনি মেনে নেবেন না। এখন এই অবস্থায় কি করা যায় কেউ বুঝতে পারছে না। সব বলা শেষ হলে দীপালিদি যেই প্রশ্নটা করতে যাচ্ছিল সেটা করার আগেই আমি তার উত্তর দিয়ে দিলাম, “ এই অবস্থায় গর্ভ পাত সম্ভব নয়। আর এমনি কোনও মেডিক্যাল কারণ ছাড়া হঠাত করে ভ্রুনহত্যা মানে খুন। অনেক ডাক্তারই করতে চাইবে না। কারণ পরে জানাজানি হলে পুলিশের ঝুক্কি সেই ডাক্তারকেই পোহাতে হবে। তবে অনেক জায়গা আছে যেখানে এইসব কেস দেখে। তবে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা পুরো মাত্রায় আছে। এমনও হতে পারে যে পরে আর ও কোনও দিনও মা হতেই পারবে না। সেই দিকটাও ভেবে দেখা দরকার। কথাগুলো বলে আমি উঠে পড়লাম। সেই লাঞ্চের পর থেকে পেটে কিছুই পড়েনি, পেটের ভেতর থেকে একটা গুর গুর শব্দ আসছে। রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম খাবার দিতে আজ আরেকটু দেরী। আমি উঠে ঘরে চলে এলাম। আমি বিছানায় গিয়ে একটা বই খুলে শুয়ে পড়লাম। মেয়েদের মেসে অবশ্য এরকম ঘটনা উনিশ বিশ সব জায়গাতেই হয়ে থাকে। হঠাত দেখলাম অদিতি বিছানা থেকে উঠে আমার দিকে দৌড়ে এসেছে।
 
আমি একটু থতমত খেয়ে উঠে বসতেই আমার কোমরটা জড়িয়ে ধরে আমার কোলে নিজের মুখটা চেপে ধরে ভীষণ জোড়ে হাউ মাউ করে কাদতে শুরু করে দিল। এই সব ক্ষেত্রে আগের অদিতি বা শম্পা অনেক ভালো ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। কিন্তু আমি ঠিক সান্তনা দিতে পারি না। ওর গলার আওয়াজ এতই বেশী ছিল যে পাশের ঘর থেকে শ্যামলী আর ছন্দা ছুটে এসেছে ওর কান্নার আওয়াজ পেয়ে। এত শক্ত করে আমার কোমরটাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যে আমি একবার হালকা করে চেষ্টা করেও ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না। আমার ঘরে পড়ার লেগিন্সের থাইয়ের কাছটা এক নিমেষে ওর চোখের জলে ভিজে চুপসে গেছে সেটা বুঝতে পারলাম। কি যে করি। আমি একটু অসহায় ভাবে শ্যামলীর দিকে তাকালাম। ও আর ছন্দা দুজন মিলে ওকে একটু উঠিয়ে বসানোর চেষ্টা করল, কিন্তু কোনও ফল হল না। ও আমার কোলে মুখ চেপে রেখে হাউমাউ করে কেদেই চলেছে। ছন্দা নিচে গিয়ে দীপালিদিকে নিয়ে এল। মেসের বাকিরা আবার এসে জড় হল আমাদের ঘরে। মানে, সত্যি কি আর বলব, চালু কথায় পুরো ঝাঁট জ্বলে গেছে। কয়েকটা দিন যদি সত্যি একটু একটানা শান্তিতে থাকতে পারি। এই আবার নতুন উপদ্রব। কি হবে কে জানে। আর আমারই রুমমেট। উফফ আর পারি না। সবাই এসে অদিতিকে আমার কোলের থেকে সরিয়ে একটু ঠাণ্ডা করে উঠিয়ে বসাতে সক্ষম হয়েছে অনেক কসরতের পর। আমার আরেকটা অস্বস্তি হওয়ার কারণ হল ভেতরে প্যান্টি পরা নেই। এই অবস্থায় কেউ ঊরুসন্ধির কাছে মুখ চেপে ধরলে অস্বস্তি হওয়ারই কথা। যাকগে। ও আমার হাত দুটো নিজের হাতে ধরে নিয়ে বলল দিদি এই বাচ্চা চাই না। কিছু একটা কর।আমি এইসব ব্যাপারে আজও ভীষণ কড়াকড়ি উত্তর দি। বললাম এই অবস্থায় বিনা কারনে গর্ভ পাত করা খারাপ, হয়ত আইনের চোখেও দোষ। একটু ভেবে সময় নিয়ে ঠিক কর যে কি করতে চাইছিস।তবে ওকে পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দিলাম যে ও শারীরিক ভাবে, মানে মেডিক্যালি কোনও সাহায্য চাইলে আমি খুব খুশি মনে ওকে সাহায্য করব, কিন্তু এই ব্যাপারে আমার হাত পা বাঁধা। মনে মনে বললাম ভালোবাসা থেকে দুজন দুজনকে আদর করতে চেয়েছিস তো বেশ করেছিস আদর করেছিস। এখন এত ওষুধ আছে কিছু একটা খেয়ে নিতিস ডাক্তারের সাথে কথা বলে। আমারও তো আগের সপ্তাহের পর...। আমি যা প্রিকশান নেওয়ার নিয়ে নিয়েছি। ভেতরকার অবস্থা থেকে এটা নিশ্চিত যে আর দুদিনের মধ্যে মাসিক শুরু হবে। তবে আমি বাজারের চালু ওষুধ খাইনি যাতে শরীরের অনেক স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়। এখন চিকিৎসা বিদ্যা অনেক উন্নত। তবে দুমাসের অপর হয়ে গেলে আর কিছুই করার থাকে না পেট কাটা ছাড়া বা ভয়ানক কিছু বাজে ওষুধ দেওয়া ছাড়া। তবে সত্যি বলতে কি ওষুধে যে কাজ করবেই তার সত্যি কোনও মানে নেই। পাঁচ শতাংশ ক্ষেত্রে কাজ নাও করতে পারে। আর তাছাড়া শারীরিক ক্ষতি যেটা হবে সেটা তো বাদই দিলাম। অদিতি আমার কথা শুনে একটু মন মড়া হয়ে কেদে চলল। দীপালিদি ওকে শান্ত করার অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু কোনও ফল হল না। শান্তাদি যে কখন বাইরে এসে দাঁড়িয়েছেন বুঝতেই পারিনি। উনি আমাদের খাবার বেড়েছেন, এই খবরটা দিতে এসেছিলেন। কিন্তু এই ড্রামা দেখে আর কিছু বলতে পারেন নি। অদিতি কে দেখে খারাপ লাগছে, সেদিন বীরকে দেখেও খারাপ লেগেছিল, কিন্তু সেদিন ওকে সাহায্য করতে পেরেছিলাম, কিন্তু এই ক্ষেত্রে হয়ত কিছুই করার নেই। তবে অদিতির কান্নার স্বর বেড়েই চলেছে দেখে ওকে একটু শান্ত করার জন্য বললাম আমি নিজে এমনিতে কিছু করতে পারব না। স্যারদের সাথে কথা বলে কাল জানাচ্ছি কিছু করা সম্ভব কিনা এই হাঁসপাতালে। কিন্তু খুব দৃঢ়তার সাথে কিছু বলতে পারছি না। তবু ও ঠাণ্ডা হল না। কাল সকালে আমার ওটির ডিউটি, ঘুম চোখে গেলে বিপদ। আমি আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। সবাই মিলে অদিতিকে ধরাধরি করে খাবার টেবিলে এনে বসিয়ে দিল। ও খেতেই চাইছিল না। কিন্তু দীপালিদি জোড় করে নিজের হাতে ওকে খাইয়ে দিল। ওর খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর ও চলে যেতেই আমরা বাকিরা খাওয়া শুরু করলাম। খাওয়ার পর ঘরে এসে দেখলাম কাদতে কাদতে ও ঘুমিয়ে পড়েছে। কোনও সাড়া শব্দ নেই। খাবার টেবিলে ওকে নিয়ে আর আমাদের মধ্যে কোনও কথা হয় নি। বোকা মামন একটা বোকার মতন প্রশ্ন করেছিল আচ্ছা, কতবার করলে সিওর যে বাচ্চা হবেই?” প্রশ্নটা ঠিক কাকে করেছে কেউ জানে না। তাই আমরা কেউ আর উত্তর দিলাম না। ও নিজেও আর এই নিয়ে কথা বাড়ায় নি।
 
পরের দিন আমি যখন বেরিয়েছি অদিতি তখনও ঘুমাচ্ছে। ওটির পর আমি দুজন স্যারকে এই ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। দুজনেই আমাকে ওর মেডিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড জিজ্ঞেস করে একই উত্তর দিয়েছে। এই ক্ষেত্রে ওনারা রিস্ক নেবেন না। অন্য কারণ থাকলে সেটা দেখা যেত বা ভাবা যেত। কিন্তু শুধু মাত্র ব্রেক আপের কারনে অ্যাঁবর্শান প্রশ্নের অতীত। আমিও আর এই নিয়ে কথা বাড়াই নি। তবে হ্যাঁ যদি দুমাস না হয়ে যেত তো অনেক কিছু করা যেত। আর এই দিনও ওকে দেখতে হত না। কিন্তু যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। সেদিন বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। ফিরে এসে দেখি আবার আমাদের ঘরে সমস্ত মেস এসে জমায়েত হয়েছে। একজন অচেনা মহিলাকেও দেখলাম। অদিতি নিজের মায়ের সাথে আমার আলাপ করিয়ে দিল। ওদের সবার খাওয়া শেষ। অদিতির মা সেই বিকেল থেকে ওর সাথে আছে। জানি না ওদের মধ্যে কি কথা হয়েছে, তবে আমি হাঁসপাতালে কথা বলে যা জেনেছি ওনাদের ভাষাতেই সরাসরি ওকে আর ওর মাকে জানিয়ে দিলাম। দেখলাম ওর মা খুব একটা আশ্চর্য হলেন না আমার কথা শুনে। বোধহয় উনি আগে থেকেই জানতেন ব্যাপারটা এত সরল নয়। তবে আবারও বলছি, জিনিসটা অসম্ভব নয়। কিন্তু কেউ অকারনে রিস্ক নেবে না। আর সব থেকে বড় ব্যাপার জিনিসটা আইনের চোখে ঠিক না। দীপালিদির কাছে জানতে পারলাম যে আজ নাকি অদিতি অনেকবার ওর প্রেমিককে ফোন করেছিল কিন্তু সে ফোন ওঠায় নি। ও ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। দু একবার নাকি সুইসাইড করার কথাও বলেছে। আবারও বলছি উফফ এই ড্রামা আর নেওয়া যাচ্ছে না। আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে খেতে বসে গেলাম। যখন খাচ্ছি তখনই কোনও একটা সময় অদিতির মা চলে গেছেন। বাকিরাও নিজেদের ঘরে ফিরে গেছে। আমি যখন উপরে উঠলাম ঘর খালি। অদিতি চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। তবে ঘরের আলো নেভায় নি। আজ আমি ভীষণ ক্লান্ত তাই ওর সাথে আর কথা না বাড়িয়ে আলো নিভিয়ে দিলাম। ওকে সাহায্য করতে সত্যি ইচ্ছে করছে, কিন্তু উপায় নেই। চোখ বুজতেই ঘুমের সাগরে ডুবে গেলাম আমি। বীর আর অরুণ দুজনের সাথে কথা হয়েছে আজ। বীরের সাথে তেমন ভাবে না হলেও অরুণের সাথে এখন প্রায় রোজ আধ ঘণ্টার মতন কথা হয়। বীর আমাকে বার বার এই উইকএন্ডের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছিল, কিন্তু আমি অদিতির কথা পুরোটা না বললেও এই সপ্তাহের শেষে যে কিছু একটা ঘটতে পারে সেই ব্যাপারটা ভেবে নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছি। এই উইকএন্ডটা আমাকে এখানেই থাকতে হবে। আর কিছু না হোক, তেমন কোনও ড্রামা হলে চাক্ষুষ দেখার ইচ্ছে কিছুতেই ছাড়তে পারছি না। সেই শ্যামদার মেয়ের ব্যাপারটার পরে এটাই দ্বিতীয় ঘটনা ঘটতে চলেছে। খারাপ ভাববেন না আমাকে। আমার অদিতির ওপর কোনও আক্রোশ নেই, বা আমি চাই না ওর জীবনে কোনও ক্ষতি হয়ে যাক, আর তাও শুধু মাত্র একটা ভুল কাজের জন্য। কিন্তু কেচ্ছা কে না ভালোবাসে? আর তাও এই বৈচিত্র্যহীন জীবনে। তবে এবার কিছু মিস করা যাবে না। আগের সপ্তাহের শেষে বীর আমাকে যা আদর করেছে তাতে আমি এক সপ্তাহ কেন গোটা একটা মাস কাটিয়ে দিতে পারি। আর প্রত্যেক সপ্তাহে মেসের বাইরে বাইরে রাত কাটানো কারোর চোখেই ভালো দেখায় না। পিছনে কথা চালাচালি শুরু হতে পারে। অদিতির সাথে এরকম ব্যাপার হওয়ার পর আমার উপর সন্দেহ হলে কে জানে তিতলিদি হয়ত আমাকে এখান থেকে চলে যেতে বলবেন, তখন আবার এক উল্টো বিপদের মুখে পড়ব। আমার ধারণা যে ঠিক সেটা সময়ে প্রমাণিত হয়েছিল। যাইহোক পরে দু দিন এমনি এমনি কেটে গেল। অদিতি সারাটা দিন বিছানায় শুয়ে থাকে মন মড়া হয়ে। আমি কাজে বেড়িয়ে যাই। ফিরে এসে ডিনার করে বই নিয়ে বসি আর তারপর ঘুমিয়ে পড়ি। ও আমার সাথে আর খুব একটা বেশী কথাবার্তা বলছে না। প্রথমে ভেবেছিলাম আমি ওকে সাহায্য করলাম না বলে রাগে আমার সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু পরে অনুভব করলাম ও এই মেসের কারোর সাথেই আর কথা বলছে না। নিজেকে নিজের মনের মধ্যে বন্ধ করে রেখেছে। বাকিদের জীবন যেমন চলার তেমন চলছে। সময় ভীষণ শক্তিশালী। এক জনের জন্য সবাই সারাটা সময় বসে থাকবে না। তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত যে এমন চলতে থাকলে ও আবার ফেল করবে এই বছরেও। তবে এই নিয়ে আমার মাথা ব্যথা থাকার কোনও কারণ নেই, কারণ আগের দুবার তো আর আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার অনুমতি নিয়ে ফেল করেনি।
 
আজ এই সপ্তাহের জন্য আমার শেষ ডিউটি। এই দিনটা এলেই মেজাজ বেশ ফুরফুরে হয়ে যায়। আবার একটা দিন শান্তিতে কাটানো যাবে। আগের সপ্তাহে বীর যে ভোদকার বোতলটা আমার জন্য নিয়ে এসেছিল সেটা একটা প্লাস্টিকে মুড়ে আমাকে দিয়ে দিয়েছিল বাইক থেকে নামার পর। আর তাছাড়া আমার ঘরেও আরেকটা আধ খাওয়া ভোদকার বোতল আছে। আজ ডিনারের পর খাওয়ার প্ল্যান। কোনও ভনিতা না করে রাতে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেই মদ গেলা শুরু করে দিলাম। আজও বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেছে। অন্যান্য দিনে অদিতি আমার সাথে বসে আমাকে সঙ্গ দিত অন্তত কিছুক্ষনের জন্য হলেও। কিন্তু আজ মোবাইলটা মুখের সামনে ধরে নিয়ে চুপ করে শুয়ে রইল। আমি ওকে একবার জিজ্ঞেস করলাম কি রে তোর বয় ফ্রেন্ড কোনও উত্তর দিল?” ও শুধু একটা ছোট না বলে উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে পড়ল। মরুক গে। আমার আজকের রাতটা পণ্ড করার কোনও মানে হয় না। এই মুহূর্তে আমি ভীষণ ভীষণ স্বার্থপর। প্রায় আড়াইটা অব্দি মদ গিলে টেবিল ল্যাম্পটা নিভিয়ে বেশ নেশা গ্রস্ত অবস্থাতে শুয়ে পড়লাম। আজই অবশ্য এই অদিতির ব্যাপারটা ডাইরিতে বিস্তারিত ভাবে তুলে রেখেছিলাম মদ গিলতে গিলতে, নইলে এতদিন পরে আর এইসব আমার মনে থাকত না, কারণ এত কিছু ঘটে গেছে এর পর। পরের দিন ঘুম ভাঙল শান্তাদির ডাকে। ব্রেক ফাস্ট তুলে নেওয়ার সময় চলে এসেছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে ব্রাশ করে নিচে নেমে ভালো করে ব্রেক ফাস্ট করে নিলাম। উফফ এখনও একটা ঘুম ঘুম ভাব লেগে আছে, যদিও হ্যাংওভার নয় মোটেই। আজ আবার পার্লারে যাওয়ার একটা প্ল্যান আছে বিকালের দিকে। তবে তার আগে লাঞ্চ অব্দি ভালো করে ঘুমিয়ে নেব। আমিই সবার শেষে সকালের খাবার খেতে নেমে ছিলাম। ঝখন শান্তাদির ডাকে ঘুম ভেঙ্গে উঠলাম তখনও দেখলাম অদিতি এক পাশ ফিরে মোবাইল হাতে নিয়ে শুয়ে আছে। কিছু একটা টাইপ করে চলেছে এক মনে। ও আমার সাথে কথা বলল না, গুড মর্নিং জানাল না, আমারও ওর সাথে কথা বলার কোনও মাথা ব্যথা নেই এই মুহূর্তে, সত্যি বলতে কি ওকে ওই ব্যাপার নিয়ে খোঁচাতে মন চাইল না। সত্যি তিন দিনে একটা হাঁসি খুশি মেয়ের জীবনে কিরকম একটা আমুল পরিবর্তন হয়ে গেল। দেখলে খারাপ লাগে আবার মনে মনে ভয়ও হয়। ব্রেক ফাস্ট করে এসেই আবার চাদরের নিচে ঢুকে গেলাম। বাইরে বেশ মেঘ মেঘ করেছে বলে মনে হল। ঘুমে চোখ জুড়িয়ে গেল কয়েক মিনিটে। আবারও ঘুম ভাঙল শান্তাদির ডাকে। বাইরে কালো করে ঝড় শুরু হয়েছে। খোলা জানালা দিয়ে কন কনে ঠাণ্ডা হাওয়া আসছে ঘরের ভেতরে। ধড়মড় করে উঠে বসতেই উনি বললেন চলো গিয়ে খেয়ে নেবে। বেলা হয়ে গেল। দুপুর দেড়টা বেজে গেছে দেখলাম। অদিতি খেয়ে দেয়ে এসে শুয়ে পড়েছে, কে জানে হয়ত ঘুমিয়েই পড়েছে। দীপালিদির খাওয়া এখনও বাকি সেটা পরে বুঝেছিলাম। আমি ভীষণ হুড়াহুড়ি করে স্নান সেরে খেতে নেমে গেলাম। বাইরে যা অবস্থা আজ আর পার্লারে যাওয়া হবে না। কাল সকালে স্নান করার সময় ভালো করে হাত, পা, বগল, ঊরুসন্ধি, এইসব জায়গা শেভ করে নিতে হবে। এখানে হাঁসপাতালের জীবন এত ব্যস্ত যে নিজের পরিচর্যা করার সময় পাওয়া যায় না, আর সময় পাওয়া গেলেও ইচ্ছে হয় না। আজ স্নান করার সময় আয়নায় দেখলাম বগলের নিচে রোমকূপগুলো ভরে গিয়ে পুরো বগলের কেন্দ্রস্থল জুড়ে একটা নোংরা পুরু চওড়া কালচে আস্তরণ ফেলে দিয়েছে। পুরো বগলটা কালো ছোপে ভর্তি। হাত পায়ের, এমনকি যোনী দেশেরও একই অবস্থা। সব থেকে অস্বস্তি হল লোম গজানো জায়গাগুলো ভীষণ কুড়কুড় করে সারাক্ষন। না কাল শেভ করে নিতেই হবে। এখানে স্লিভলেস পরে থাকি প্রায়ই, এখনও সেরকমই একটা হাত কাটা পাতলা কামিজ পরে আছি। হাত তুললে লোকে বলবে নোংরা মেয়ে। দেখলাম দীপালিদিও ঠিক আমারই সাথে খেতে এসেছে। সকাল সকাল উঠে কোনও একটা কাজে বেড়িয়ে গিয়েছিল আর এই একটু আগে ফিরেছে। আমি বললাম বিকালের দিকে একবার পার্লার যাব ভেবেছিলাম। দীপালিদি বলল সকালেও এক প্রস্থ বৃষ্টি হয়ে গেছে। বললাম , আমি তো সারা সকাল প্রায় ঘুমিয়ে কাটিয়েছি।দীপালিদি বলল সেটা তোমার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।আমরা খাওয়া শুরু করে দিলাম। আজকের খাবার স্পেশাল থাকে আগেই বলেছি। আমরা মুখ বন্ধ করে খেয়ে চললাম। শুধু খাবার মাঝে একবার দীপালিদি আমাকে জিজ্ঞেস করল অদিতির কথা। আমার মুখে তখন মাংসের পিস। মুখ না খুলে একটু দুঃখী দুঃখী ভাব দেখিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম যে ওই একই রকম আছে, ভালো নয়। আর কথা এগোল না। খাওয়া সেরে আমরা যে যার ঘরে উঠে পড়লাম। অদিতিকে একবার ভালো করে দেখলাম এইবার। ওর চোখ মুখ একটু যেন ফোলা আর লাল হয়ে আছে। বুঝেছি সবার আড়ালে চোখের জল ফেলে চলেছে। এই কদিন ধরে বেচারি শুধু বিছানা বাথরুম আর খাবার ঘর, এই ছাড়া আর কোথাও যায় নি, কারোর সাথে কথাও বলেনি। আবার চাদরের নিচে ঢুকে পড়লাম। একবার মনে হল ওর সাথে একটু কথা বলি। কিন্তু তারপরেই আবার ভেবে নিলাম যে কথা বলতে চাইলেও কি বলব। এখানে আমি তো ওকে কোনও রকম সাহায্যই করতে পারব না। বাইরে থেকে কণকণে ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে চলেছে, মৃদু মন্দ বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেছে। মটকা মেরে পড়ে রইলাম বিছানায়। একটু পরে ঘুমও এসে গেল।
[+] 1 user Likes pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: একটি নাম না দেওয়া গল্প... আসুন আর পড়ুন by somsom1981 - by pcirma - 18-10-2019, 02:37 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)