18-10-2019, 02:29 PM
পরের পর্ব
বীর ছিল প্রাইভেট ওয়ার্ডে। আমি ওকে সেদিনকার সব ঘটনা খুলে বলেছিলাম। শুধু চৈতালিদি আর রমাদির সমকামিতার ব্যাপারটা বাদ দিয়ে। সেইদিন ওকে আমি বলেছিলাম “তুমি ঠিক ভেবেছ। নিজের পায়ে দাঁড়াও, বেড়িয়ে যাও এখান থেকে। যা দেখলাম সেটা ঠিক স্বাভাবিক বলা যায় না। পরিবেশটাই অসুস্থ।” বীর সব শুনেও কিছু বলেনি। আমি ওকে এটাও বলে দিয়েছিলাম যে আমি সেদিন রাত্রের এই ব্যাপার দেখার পর ঠিক করেছি এই অসুস্থ পরিবেশে আমি আর থাকবো না। এদের সাথে থাকতে থাকতে নিজের অজান্তে একদিন এদের মতন হয়ে যাব। নিজের জৈবিক চাহিদার সামনে এমন ভাবে দাসে পরিণত হব যে আর কারোর প্রতি কেয়ার করব না। আমি নষ্ট মেয়ে হতে পারি কিন্তু আমার কিছু সুক্ষ মানবিকতা এখনও মরে যায় নি। আমি অন্য কোথাও পেয়িং গেস্ট থাকার ব্যাপারে কথা বার্তা শুরু করেছি। বীর সব শুনেও কিছু বলেনি। অবশ্য ওর বলারই বা কি আছে। আরও কয়েকটা কথা বলে এই অধ্যায় শেষ করব। এই কদিন রোজ রথী আর চৈতালিদি এসে বীর কে দেখে গেছেন। আলাদা আলাদা এলেও এসেছে ওরা। দু দিন রমাদিও এসেছিলেন। ওনার সাথে রাখীও এসেছিল। এই প্রথম মেয়েটাকে চাক্ষুষ দেখলাম। আমার ডিউটির তাড়া ছিল তাই ওর সাথে কথা বলা হয় নি। সামনা সামনি দেখে বুঝলাম মেয়েটা আমার থেকে অনেক বেশী সুন্দরী, এই বয়সে অনেক বেশী সুন্দর ফিগারের অধিকারিণী, চেহারায় একটা ঝকঝকে জেল্লা আছে, চাপা অথচ উগ্র চটক আছে, চরিত্র কঠোর আর অনমনীয়, দাম্ভিক আর খুব নাক সিটকানো। এগুলো দুবার এক ঝলক দেখেই বোঝা যায়। তবে মুখে একটা হাঁসি হাঁসি ভাব সব সময় লেগে আছে। ঠোঁটে আর সারা শরীরে যেন সব সময় একটা ভেজা ভেজা ভাব। সাজ গোঁজ একটু উগ্র, কিন্তু মানানসই। এর আগে শুধু ওর ছবি দেখেছিলাম, সেই রাতে হয়ত মদের নেশার ঘোরে ওর সাথে নিজের তুলনা করেছিলাম, তাই সামনা সামনি দেখে যা বুঝলাম সেই সত্যিটা লিখে রাখলাম, নইলে নিজের কাছে নিজের মিথ্যে বলা হবে। এখন রমাদি আর চৈতালিদির সাথে আমার কথা প্রায় বন্ধ। নতুন মাস পড়ে গেছে। আমি ভাড়া দিতে গিয়েছিলাম। চৈতালিদি বারণ করেছিলেন, অনেক অজুহাত দেখিয়েছিলেন, নিজের বন্ধু থেকে শুরু করে, বাড়ির মেয়ে, শেষে নিজের মেয়ের মতন, সব শেষে বীরকে বাঁচানো, কোনও কিছুতেই আমি গলিনি। টাকাটা ওনার হাতে দিয়ে এসেছিলাম। রমাদি আর চৈতালিদি বীরের ব্যাপারটা নিয়ে আমাকে অনেকবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন, সেগুলো আমার কানে কেমন যেন মেকি শুনিয়েছে। রথীকে যে আর আমি পড়াবো না সেটা আমি হাবে ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি। বীরের এখন পড়বার মতন অবস্থা নেই। আমি পাক্কা পেয়িং গেস্টের মতন বাড়ি থেকে বেরতাম আর ফিরে আসতাম, সময় মতন খেয়ে দেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতাম। বাকি কটা দিন আমি আর এই বাড়ির এসি ব্যবহার করি নি। তার দুটো কারণ, প্রথমত, এসি ব্যবহার করে ওনাদের ইলেকট্রিক বিল বাড়ানোর ইচ্ছে আমার নেই, আর সব থেকে জরুরি কথা হল, এর পর যেখানে যাব সেটা সাধারণ মেস, ওখানে এসি পাব না, তাই আর অভ্যেস খারাপ করার মানে দাঁড়ায় না। অরুণকে বীরের ব্যাপারটা (শারীরিক ব্যাপারটা নয়) জানিয়েছি। ও আমাকে বলল বাড়ি ছেড়ে দিতে। আমি আবার সেই দালালের সাথে যোগাযোগ করেছি। আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছিল যে কেন বাড়ি ছাড়তে চাইছি। আমি বলেছি, আমার ঠিক পোষাচ্ছে না। আমি আবার দালালি দিতে রাজি আছি কিন্তু এখানে আর নয়। মনে হয় লোকটা চৈতালিদিকে ফোন করে ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল। চৈতালিদি একদিন এইটা নিয়ে কথা উঠিয়েও ছিলেন। আমি কোনও উত্তর দি নি। এর থেকেও শস্তায় মেয়েদের একটা মেসের সন্ধান আমি পেয়ে গেছি। দালালি আরেকবার দিতে হয়েছে, কিন্তু খুবই কম। বীর যেদিন বাড়ি ফিরল, তার দুদিন পরে আমি বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে গেলাম। বাকি ভাড়া মেটাতে যাওয়ার সময় চৈতালিদির সাথে অনেক দরাদরি করেও ভাড়া দেওয়া যায় নি। উনি কিছুতেই নেবেন না। এইবার আমিও আর কোনও জোরাজুরি করিনি। আমি আসার আগে বীরের সাথে শেষ দেখা করে এসেছি একবার। ও যেন অনেক কথা বলতে চাইছিল, কিন্তু পারলো না। ও এখন ভীষণ দুর্বল। খিদে মরে গেছে। ভালো করে দাঁড়াতে পারছে না। বাড়িতে একজন নার্স রাখা হয়েছে। এত কড়া কড়া ওষুধের ধাক্কা সামলিয়ে উঠতে পারেনি বেচারা। চৈতালিদির চোখে জল দেখেছিলাম। কিন্তু তাতে আমার মন গলে নি। এখানে বাকি যত দিন ছিলাম চৈতালিদি অনেকবার আমাকে ওনার সাথে মদ খাওয়ার কথা বলেছিলেন। আমি ওনার সাথে বসিনি। একদিন অবশ্য একা একা বসে ভোদকা খেয়েছিলাম। কিন্তু ওনার সাথে নয়। এখানেই এই অধ্যায়ের শেষ। এর পর বীরের সাথে আর চৈতালিদির সাথে হাঁসপাতালে কয়েকবার দেখা হয়েছিল। বীর কে নিয়ে উনি এসেছিলেন চেক আপ করাতে। আমি ওনাদের ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে গেছি। সামান্য সম্ভাষণ ছাড়া আর কোনও কথা হয় নি। আপনি হয়ত ভাববেন হঠাত এরকম রস কষ হীন হয়ে গেলাম কেন। আমি নিজে জানি আমার লেখাতেও হয়ত একটা তীক্ষ্ণ হতাশা ফুটে উঠেছে। কিন্তু কিছু করার নেই। সেই রাতে চৈতালিদি আর রমাদি কে দেখে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলাম এনারা পেট ফুলিয়ে বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু সঠিক অর্থে ঠিক মা হতে পারেন নি। যাই হোক এদের কথা বলে আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আগাম সতর্কতা শেষের কয়েকটা পাতা শুধু সেক্স সেক্স আর সেক্স ছিল। এখন পরের কিছু দিন সেক্সের থেকে বিরতি। লেখাতেও, আর আমার জীবন থেকেও।
নতুন মেসে এসে আমার রুম মেট যাকে পেয়েছিলাম তার নাম অদিতি। না সেই পুরনো অদিতি নয়। অন্য অদিতি। অদিতি নামটা কাল্পনিক ছিল, কারণ ওর আসল নাম বলব না। আগের আমার রুম মেটের আসল নাম যা ছিল এর নামও তাই। টেলিপ্যাথি! তাই এখানেও মেয়েটাকে আমি অদিতি বলেই ডাকব। ভীষণ ল্যাদ খোর মেয়ে। কমার্স নিয়ে পড়ছে। আমার থেকে বয়সে ছোট, তবে খুব বেশী নয়, এক বছরের মতন হবে খুব বেশী হলে। এই অদিতি দুবছর ল্যাগ করেছে আগে। এখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। পড়াশুনা বাদ দিয়ে সব করে। সুতরাং বাকিটা বুঝে নিন। তবে নিজে পড়াশুনা না করলেও, আমার পড়াশুনা করার সময় যেচে আমাকে কখনও ডিস্টার্ব করেনি শেষ দিন অব্দি। ও আমার রুম মেট বাকি কয়েক মাসের। তাই ওর কথায় আসতেই হবে। শুধু ও কেন বাকি সাত জনের কথাও বলব বিস্তারিত। তার আগে বলে নি, এখানকার ভাড়া ভীষণ কম। খাওয়া দাওয়া চৈতালিদির বাড়ির মতন না হলেও, চলে যায়। মেসে আটটা মেয়ে থাকে। সবাই বাঙালি। কারোর পড়া শেষ হয়েছে এখন চাকরির সন্ধান চালাচ্ছে, কেউ বা ছোট খাটো চাকরি করছে, কেউ বা পড়া শেষ করার পথে। তবে পড়াশুনার মধ্যে কেউ নেই। তবে কেউ কাউকে ডিস্টার্ব করে না। সবাই নিজের মতন থাকে। যদি না যেচে কেউ গিয়ে বলে যে তুই ফাঁকা বসে আছিস চল ফুর্তি করি। হাহাহা। আর আরেকটা জিনিস এখানে আমার ভালো লেগেছে। এখানে সবাই সাধারণ পরিবারের থেকে এসেছে, মানে আমার মতন পরিবার থেকে। তাই ফুর্তি বাজ হোক আর স্টাইলিশই হোক, কেউ ধরাকে সরাজ্ঞান করে না। এটা সূচনা। এইবার নতুন পরিবেশ আর নতুন সাথীদের কথায় বিস্তারিত ভাবে আসছি।
আমি আমার লেখায় বাড়ির নাম আর ঠিকানা ইত্যাদি কখনও লেখা পছন্দ করি না। কিন্তু এই বাড়ির ঠিকানা না লিখলেও, নাম না লিখে পারছি না। লক্ষ্মীপুরী। মানে লক্ষ্মী দেবীরা সব থাকেন এখানে। বাড়ির নাম দেখে না হেঁসে থাকতে পারিনি। বলাই বাহুল্য যিনি এই নাম রেখেছিলেন তিনি লক্ষ্মী নারায়ণের বিশাল বড় ভক্ত ছিলেন। তবে মেসটা আমার হাঁসপাতালের থেকে হাঁটা পথ। এখন যিনি এই মেস চালান তিনি সেই নিদারুণ ব্যক্তিত্বের নাতনি। আমরা সবাই ওনাকে তিতলি দি বলে ডাকি। বয়স সাইত্রিশ, বিবাহিতা, তিন মেয়ের মা। ওনার ছবি আঁকা সবচেয়ে সোজা। সবচেয়ে উপরে একটা ছোট রসগোল্লা, তার নিচে কম্পাস দিয়ে একটা বড় দশ টাকা দামের রাজভোগ, আর তার নিচে স্কেল দিয়ে সরু সরু দুটো ল্যাংচা একে দিলেই ওনার ছবি আঁকা হয়ে যাবে। হাসবেন না। কারোর শারীরিক গঠন নিয়ে কথা বলা উচিৎ নয় আমি জানি। কিন্তু ওনার ফিগারটা ঠিক এরকম। উনি নিজে এখানে থাকেন না। উনি ওনার স্বামীর সাথে পাশেই একটা ফ্ল্যাটে থাকেন। রোজ এসে তদারকি করে যান। বাড়ির আর তার সাথে আমাদের দেখাশুনা করেন শান্তাদি আর ওনার স্বামী গোকুলদা। শান্তাদির বয়স খুব বেশী হলে ত্রিশ হবে। গোকুলদার বয়স খুব কম করে হলে পঞ্চাশ ছুই ছুই। সবাই আড়ালে ওনাকে বুড়ো গোকুল বলে ডাকে। ওদের বাচ্চা হয়নি। সবার বিশ্বাস ওদের আর বাচ্চা হবেও না। ওদের কোনও শারীরিক সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না, কারণ গোকুলদা ছাদের ঘরে শোন আর শান্তাদি একতলায় রান্না ঘরের পাশে একটা ছোট ঘরে শোন। গোকুলদা এমনিতে খুবই ভদ্র। আমাদের দিদিমনি দিদিমনি বলে ডাকেন সবাইকে। উনি রান্না বান্না করেন। চৈতালিদির মতন ভ্যারাইটি খাবার না বানালেও, বহু দিন উড়িশ্যায় কোনও এক ছোট হোটেলে কাজ করেছেন। উড়িয়াদের রান্নার হাত এমনিতে বেশ ভালোই হয়। চলনসই খাবার দাবার বানানোর হাত বেশ ভালো। ওনার রান্নার সাথে শ্যামদার হাতের রান্নার বেশ একটা মিল পাই। শান্তাদি বাজার হাট করা, ঘর পরিষ্কার করা, জামা কাপড় ধোয়া, ইস্তিরি করা এইসব করে দেন। তবে সব কাজের কিছু স্থির রেট আছে। আমি নিজে ধোয়া কাঁচা আর ইস্তিরি করে নিই, তাই আমার ওনার সাহায্য লাগে না সচরাচর। এখানে সব কিছুই খুব নিয়ম মাফিক আর ঘড়ির কাঁটা মেনে চলে। খাবার দাবারের বন্দবস্ত মোটা মুটি এই মতন। চার বেলা খাবার দেওয়া হয়। আর দুবেলা করে চা। সকালে এক কাপ চা দেওয়া হয়। সকাল নটার মধ্যে চা না খেলে আর পাওয়া যায় না। ছিমছাম ব্রেকফাস্ট দেওয়া হয়। রোজকার মেনু একই রকম। হাতে করা পাতলা রুটি আর পাতলা আলুর ঝোল। বেশ ঝাল ঝাল করেন আলুর ঝোলটা, আর রুটিটা থাকে গরম গরম। এক ঘেয়ে খাবার, কিন্তু খেতে মন্দ লাগে না। রুটি আর আলুর ঝোল যত পারো খাও। কেউ তিনটে রুটি খায় কেউ বা চারটে। সাথে কাঁচা লঙ্কা চাইলে পাওয়া যায়। নটার পরে আর ব্রেকফাস্ট পাওয়া যায় না। দুপুরে একটার দিকে লাঞ্চ। এটারও মেনু রোজ মোটামুটি একই রকম। ভাত, ডাল, একটা সবজি, সাথে পাতলা মাছের ঝোল বা ডিমের ঝোল, আর তার সাথে পাঁপড় বা আলুভাজা বা বেগুন ভাজা কোনও একটা থাকে। পেঁয়াজ আর লঙ্কা চাইলে পাওয়া যায়। ভাত ডাল আর সবজি যত চাও পাওয়া যায়। মাছ আর ডিম শুধু একটা করেই বরাদ্দ। আলুভাজার পরিমাণ বাঁধা, বেগুন ভাজা মাঝারি আকারের একটা আর পাঁপড় হলে একটা, কেউ না খেলে দুটো বেগুনভাজা বা দুটো পাঁপড় পাওয়া গেলেও যেতে পারে। তিনটের মধ্যে লাঞ্চ সেরে নিতে হয়, নইলে আর পাওয়া যায় না। সন্ধ্যায় পাঁচটা থেকে সাড়ে সাতটা অব্দি চা দেওয়া হয়। এক কাপ বরাদ্দ। তার সাথে রোজ মুড়ি আর তার সাথে বেগুনী বা আলুর চপ দেওয়া হয়। এখানেও একই ব্যাপার সাড়ে সাতটার পর আর পাওয়া যাবে না। রাতের খাবার কাঁটায় কাঁটায় নটার দিকে দিয়ে দেওয়া হয়। মেনু দুপুরের লাঞ্চের মতই। শুধু একটাই ব্যতিক্রম রাতে আগে থেকে বলা থাকলে ভাতের জায়গায় রুটি পাওয়া যায়। রোববার একটু ব্যতিক্রম থাকে মেনুতে। ব্রেকফাস্টে রুটির জায়গায় গরম গরম ফুলকো লুচি পাওয়া যায়। আর দুপুরে ডিম বা মাছের জায়গায় মাংসের ঝোল, সবার ভাগে তিন টুকরো করে চিকেন বরাদ্দ। মেসের ভাড়া একদম বাঁধা। প্রত্যেকটা মিল বা ব্রেকফাস্ট বা টিফিনের ভাড়া আলাদা করে ধরা থাকে। কেউ যদি কোনও একটা খাবার বাদ দেয় তো আগে থেকে বলে দিতে হবে, তাহলে ভাড়া থেকে সেই টাকা বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। পরে অবশ্য এক্সট্রা মিল বা টিফিন যোগ হলে আবার পরের মাসের ভাড়ার সাথে সেই টাকা যোগ করে দিয়ে দিতে হবে। পরিষ্কার নিয়ম। আগে থেকে বলা না থাকলে কেউ খাক বা না খাক তাকে সেই মিল বা টিফিনের পয়সা দিতে হবে। আমি যখন প্রথম বার তিতলিদির সাথে কথা বললাম তখন আমি বলে দিয়েছিলাম যে আমি উইকএন্ডের একদিন ছাড়া কোনও দিন লাঞ্চ আর সন্ধ্যার টিফিন আর সন্ধ্যার চা নেব না। এক ঝটকায় আমার ভাড়া থেকে বেশ কিছু টাকা বাদ হয়ে গেল। তবে হ্যাঁ বলে রেখেছিলাম যে কোনও দিন যদি এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় তো আগের দিন রাতেই জানিয়ে দেব যাতে গোকুলদার ব্যবস্থা করতে সমস্যা না হয়। পরে ভাড়ার সাথে এই বাড়তি মিলের টাকা যোগ করে দিয়ে দেব। তিতলিদি বাঁধা দেন নি। আরেকটা ব্যাপারে আমি আপত্তি করেছিলাম। হাঁসপাতালে ফেঁসে গেলে রাত নটার মধ্যে এসে আমি খেতে পারব না। আমাকে উনি বলে দিয়েছিলেন যে ফোন করে আগে থাকতে বলে দিতে, খাবার তোলা থাকবে, এই ব্যাপারে কোনও সমস্যা হবে না। রিলায়েন্স জিন্দাবাদ, ফ্রিতে একটা ফোন করলেই চলবে।
এতো গেলো খাবার দাবারের ব্যাপার। এইবার আসি এখানকার বাসিন্দাদের কথায়। আচ্ছা তার আগে বাড়ির মোটামুটি একটা বর্ণনা দিয়ে রাখা ভালো। বাড়িটা তিন তলা। অবশ্য তিন তলায় ছাদ আর একটা চিলে কোঠার ঘর ছাড়া কিছুই নেই। এক তলায় দুটো ঘর। তার পাশে একটা কমন বাথরুম। বাড়ির এক কোনায় একটা বড় রান্নাঘর। আর রান্নাঘরের পাশে একটা ছোট স্টোর রুম, এতে শান্তাদি শোন। দোতলায় আরও দুটো ঘর আর একটা কমন বাথরুম আছে। ছাদের চিলে কোঠার ঘরে বুড়ো গোকুল শোন। রান্না ঘরের গায়ে লাগানো বাড়ির বাইরের দিকে একটা ছোট ঘর আছে। সেখানে একটা ছোট টেবিল আছে যাতে বসে আমরা খাওয়া দাওয়া করি। প্রত্যেকটা ঘরে দুটো করে মাঝারি আকারের খাট আর তার পাশে একটা করে টেবিল আর একটা করে শস্তা কাঠের চেয়ার আছে। টেবিলে একটা করে টেবিল ল্যাম্পও রাখা আছে। ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে শুধু টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে নিজের কাজ করা যাবে। ঘরের অন্য লোক কে বিরক্ত করার দরকার নেই যদি সে ঘুমাতে চায়। দোতলার এক পাশে একটা ছোট বসার ঘর আছে যাতে একটা টিভি ও আছে। যে কেউ গিয়ে বসে টিভি চালিয়ে দেখতে পারে। গোটা দুয়েক ছোট চেয়ার আর একটা মাঝারি সাইজের সোফা আছে। কারোর বাড়ির লোক এলে এখানে বসে কথা বলা যায়। ও হ্যাঁ আমি বাড়িতে বলে দিয়েছি যে আমি ঘর বদলাচ্ছি। ওরা দেখলাম এইবার কেউ কি কেন ইত্যাদি প্রশ্ন করে আমাকে বিরক্ত করেনি। তাই আমিও বেশী জবাবদিহি করিনি। বাথরুম আর রান্নাঘর যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। শান্তাদির এই সব দিকে ভালোই নজর আছে। এইবার বাসিন্দাদের ব্যাপারে বলি।
১। রুমি মানে আমিঃ আমার ব্যাপারে বেশী বলার দরকার নেই। আমার জন্য দোতলায় টিভির ঘরের পাশের ঘরটায় থাকার বন্দবস্ত হয়েছে। আগে যে ছিল সে সদ্য বিয়ে ঠিক হওয়াতে বিদায় নিয়েছে, তার জায়গায় এসেছি আমি।
২। অদিতিঃ আমার রুম মেট। আমার থেকে এক বছরের ছোট। ওর ব্যাপারে আগেই কিছুটা বলেছি। গায়ের রঙ চাপা। তবে মুখটা মিষ্টি। উচ্চতা আমার মতন। শরীরের গড়ন আমার মতন, একটু রোগাটে বলা চলে। আমার মতন অদিতিও দুপুরে বাড়িতে থাকে না। তবে কি করে বলা শক্ত। কমার্সের ছাত্রী, তবে, সচরাচর ওকে বই নিয়ে বসতে দেখিনি। ঘরে থাকলে সারা দিন মোবাইল নিয়ে বসে খুট খুট করে চলে। একটা বয় ফ্রেন্ড আছে। সারা দিন তার সাথে মেসজ করে চলেছে। ছেলেটা ওর ক্লাস মেট। তবে ছেলেটা এখন মাস্টার্স করছে। অদিতি হাঁসি খুশি হলেও এমনিতে চাপা স্বভাবের মেয়ে। যেচে গায়ে পড়ে শুরুতেই ভাব করতে আসেনি। তবে আমি আসাতে অখুশি হয়েছে এমনটাও ওকে দেখে কখনও মনে হয় নি।
৩। শ্যামলীঃ আমাদের পাশের ঘরে থাকে। ওরও গায়ের রঙ চাপা। একটু লম্বাটে আর রোগাটে গড়ন। মানে দেখে মনে হতে বাধ্য যে কেউ যেন ওর ঠ্যাং আর মাথাটাকে ধরে টেনে ওকে লম্বা করে দিয়েছে। কোমর পাছা বুক সব কেমন যেন এই লম্বাটে গড়নের মধ্যে হারিয়ে গেছে। সব কিছু ছোট ছোট। শ্যামলী আমার সমবয়সী। ইতিহাসের ছাত্রী। মাস্টার্স করছে এখন সিঊ থেকে।
৪। ছন্দাঃ শ্যামলীর রুম মেট। আমার সমবয়সী। বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী। ফর্সা, সুশ্রী, ভরাট গড়ন। উচ্চতা আমার থেকে সামান্য কম। বেশ হাঁসি খুশি। সবার সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারে। আর আমার মতই ভীষণ বক বক করতে ভালোবাসে। কিন্তু গায়ে পড়ে আলাপ করতে আসে না। বা গায়ে পড়ে কারোর কাজে নাক গলাতে আসে না। পরে শুনেছিলাম ও নাকি ওর কলেজের এক বিবাহিত প্রফেসরের প্রেমে পড়েছে। বিচিত্র।
৫। মিনতিঃ গ্রামের মেয়ে। ফর্সা রোগা, উচ্চতা মাঝারি। সব থেকে চাপা স্বভাবের মেয়ে। দেখে মনে হয় সব সময় যেন কিছু একটা ভাবছে। কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝেই কোথায় যেন হারিয়ে যায়। ও থাকে এক তলায় রান্নাঘরের পাশের ঘরে। কলকাতার প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করেছে। চাকরি খুঁজে চলেছে। এখনও পায়নি। পড়ার জন্য লোণ নিয়েছে। সেটা শোধ করার জন্য সব সময় যেন চিন্তিত থাকে।
৬। অমৃতাঃ দুর্গাপুড়ে বাড়ি। মিনতির রুম মেট। মিনতির ক্লাস মেটও বটে। ওই একই কলেজ থেকে একই স্ট্রিমে পড়াশুনা করেছে। অনেক দিন হয়ে গেছে চাকরি পাচ্ছে না বলে দৌড়া দৌড়ী করতে হচ্ছে অনেক। এখন কম্পিউটার নিয়ে কি একটা কোর্সও করছে বাইরে। মাঝে মাঝে চাকরির জন্য অনেক অনেক দূর থেকে ঘুরে আসে। খুব একটা লাভ হয়নি এখন অব্দি। অমৃতাও ফর্সা রোগা কিন্তু উচ্চতা আমার থেকে ইঞ্চি তিনেক বেশীই হবে। মিশুকে। ওদের বাড়ির অবস্থা স্বচ্ছল। চাকরি পাওয়ার ইচ্ছে আছে পুরো দমে আর সেটা দেখে বোঝা যায়, কিন্তু খুব একটা তাগিদ বা চিন্তা আছে বলে মনে হয় না।
মিনতি আর অমৃতা দুজনেই আমার সমবয়সী।
৭। দীপালিদিঃ আমাদের মধ্যে সব থেকে বয়সে বড়। আঠাশে পড়েছে। ওনার সাথে কথা বললে বোঝা যায় ওনার মনে অনেক অনেক দুঃখ। বাড়ি কলকাতার বাইরে। খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে। গায়ের রঙ চাপা আর দেখতে সুন্দরী নয় বলে বিয়ে হচ্ছে না। তিনটে ছেলে ওকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তার ওপর ভালো চাকরি করার ইচ্ছে। পড়াশুনা খুব একটা করেনি। কিন্তু ভালো চাকরি চাই। অবশ্য একটা ব্যাক অফিসে চাকরি করে কাছেই। সেখানেও বিপত্তি। বস ভীষণ খিটখিটে। উঠতে বসতে নাকি ধমকায়। আর মাইনে নাকি খুব কম। মেস ভাড়া ইত্যাদি দিয়ে খুব একটা কিছু বাঁচে না। একতলার অন্য ঘরে দীপালিদি থাকে। শান্তাদির সাথে ওর তুই তুকারির সম্পর্ক।
৮। মামনঃ দীপালিদির রুম মেট। আমার সমবয়সী। গায়ের রঙ খুব ফর্সা নয়, কিন্তু আমাদের মধ্যে সব থেকে সুন্দরী আর মিষ্টি দেখতে। ফিগারও ভালো। বেশ নিখুঁত ভাবে বানিয়েছেন ওকে ভগবান। কিন্তু মাথা অদ্ভুত ভোঁতা। অঙ্ক নিয়ে পড়েছে। কিন্তু ওর সাথে তিন মিনিট কথা বললে আমার মনে হয়, আমি যেন একটা দেওয়ালের সাথে কথা বলছি। রেজাল্ট অত্যন্ত খারাপ। তার ওপর মাস্টার্স করতে করতে কারোর একটা প্ররচনায় অঙ্ক ছেড়ে কম্পিউটারের কোর্সে ঢুকে গিয়েছিল। এখন একটা ছোট কল সেন্টারে চাকরি করে। মাস গেলে যে টাকা হাতে আসে সেটা নিয়ে এও খুশি নয়। মাঝে মাঝে আফসোস করে কেন অঙ্ক ছেড়ে দিয়ে এইসব হচপচ করতে গেল। এমনিতে হাঁসি খুশি, কিন্তু ওই যে বললাম ভীষণ ভোঁতা মাথা। এই মাথা নিয়ে আর যাই হোক অঙ্ক হয় না। আমাদের মধ্যে ওই একমাত্র মেয়ে যার গয়না নিয়ে ভীষণ আকর্ষণ আছে। গয়না ছাড়া জীবনে আরও যে অনেক কিছু জিনিস আছে সেটা ভুলে যায় মাঝে মাঝে। একটা বয় ফ্রেন্ড ছিল, কেটে পড়েছে। পরে একদিন দুঃখ করে বলেছিল ওর বয় ফ্রেন্ড নাকি ওকে বলেছে যে ওর সাথে কথা বলার কোনও মানে হয় না, কারণ ও কোনও কিছুই বোঝে না, এমনকি বাচ্চাদের জোকও বুঝতে পারে না, তাই এমন মেয়েকে নিয়ে সংসার করা সম্ভব নয়। মন্দ বলে নি। মানে ওর সাথে আলাপ করার পর বুঝেছি যে ভগবান আমাদের থেকে ওকে রূপ আর ফিগার অনেক ভালো দিয়েছেন, কিন্তু ঘটে ব্রেন দেওয়ার সময় ভগবানের বাড়িতে লোড শেডিং হয়ে গিয়েছিল নিশ্চিত, ব্রেন দিতে ভুলে গেছেন। তবে হ্যাঁ আবারও বলছি কথা বার্তা মিষ্টি আর মিশুকে। আরেকটা জিনিস আমাদের মধ্যে সব থেকে ফ্যাশনেবল ড্রেস ওই পড়ে। তবে দেখানোর জন্য নয়। গয়নার মতন স্টাইলিশ জামা কাপড়ের ওপরও বেশ আকর্ষণ আছে ওর। তবে উগ্র সাজ করে না, যেমন আমি বেশ কয়েকবার করেছি, শারীরিক আর মানসিক চাহিদা মেটানোর জন্য, বা কোনও কিছু আদায় করার জন্য। সবাই ওকে বোকা মামন বলে ডাকে।
চৈতালিদির বাড়ির জমজমাট ঘটনাবহুল জীবনযাত্রার পর এখানে এসে মনটা শুরুতে দমে গিয়েছিল। এখানকার জীবনযাত্রা ভীষণ নিরুপদ্রব। আমি যেদিন এখানে প্রথম এসেছিলাম তিতলি দি আমার সাথে সবার মুখো মুখি উপর উপর আলাপ করিয়ে দিয়ে চলে গেছিলেন। অদিতির নাম শুনে আমি একটু চমকেই গেছিলাম। ঘরে ঢুকে ওকে বলেই ফেললাম হস্টেলে আমার যে রুমমেট ছিল ওর নামও অদিতি। মেয়েটা শুধু হাসল একটু মুখে কিছু বলল না। প্রথম আলাপে মনে হয়েছিল যে মেয়েটা ভীষণ চাপা স্বভাবের, অবশ্য পরে বুঝেছিলাম যতটা মনে হয়েছে ততটা চাপা নয়। এখানে সবারই খোলস ছাড়তে একটু সময় লাগে এই আর কি। সেদিন আমি আর বেশীক্ষণ বসতে পারিনি। আমার ডিউটি ছিল, তাই বেড়িয়ে পড়েছিলাম। রাতে সেদিন ইচ্ছে করে একটু তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছি। যাতে খাওয়ার সময় সবার সাথে আলাপটা সেরে ফেলা যায়। হ্যাঁ সেদিন রাতে খাবার টেবিলে সবার সাথে আলাপ হল। এই যে আগে একগুচ্ছ জিনিস এর তার ব্যাপারে লিখে পাতা ভরালাম সেটা এই খাবার টেবিলে বসে কথা বলার ফল। সকালে এক ঝলক দেখলেও এখন একটু ভালো করে প্রত্যেককে দেখে নিলাম। কাউকে আমার খারাপ লাগলো না। খাবারের টেবিলে আলাপ হওয়ার পর ঘরে ফিরে এসে অদিতির সাথেও বেশ খানিক্ষন গল্প হল ঘুমানোর আগে। কথা বলার ফাঁকে ফাকেই দেখছিলাম যে মোবাইল তুলে খুঁট খুঁট করে চলেছে। জিজ্ঞেস করাতে বলল, বিকালে বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে, তাই এখন মান ভাঙানোর খেলা চলছে এসএমএসে। আমার হাঁসপাতালের ডিউটি ইত্যাদি নিয়েও আমাকে ও জিজ্ঞেস করেছিল। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয়ে গেল ওর সাথে। কয়েকদিন যেতে না যেতে আমি এই ছিম ছাম পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিলাম। এখানে একটা সমস্যা হল, এখানে কেউ ভোদকা ইত্যাদি খায় না। অদিতিকে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আমি খেলে ও খাবে কিনা। অদিতি বলেছিল, ও একবার বয় ফ্রেন্ডের সাথে টেস্ট করে দেখেছিল, কিন্তু পেটে সহ্য হয়নি। সপ্তাহে একদিন করে আমি একা একা বসে ভোদকা গিলি, আর পুরনো দিনগুলোর স্মৃতি নিয়ে জাবর কাটি। অদিতি অবশ্য মাঝে মাঝে গল্প করে সঙ্গ দিয়ে থাকে। ওকে আমি অরুণের কথা বলেছি। মাঝখানে একদিন ছুটির দিনে আমরা মেসের সবাই মিলে গিয়ে ছোটখাটো শপিং করে সিনেমা দেখে এসেছি। বাইরে খাওয়া দাওয়া করার প্ল্যান হচ্ছিল, কিন্তু আগে থেকে শান্তাদিকে বলা ছিল না বলে সেই প্ল্যান বাতিল করতে হল। এদিকে আমার হাঁসপাতালের ডিউটির চাপ বেড়েই চলেছে। জীবনে কোনও বৈচিত্র নেই, এক ঘেয়ে। বেশ হাঁপিয়ে উঠেছি। অরুণকে খুব মিস করি মাঝে মাঝে। কিন্তু কিছু করার নেই। আমার মোবাইলের পয়সা যদিও কোনও দিন শেষ হয় না, কিন্তু অরুণের কাছে মোবাইল নেই। তাই কথা বলা যায় না। অবশ্য হাঁসপাতাল থেকে ওর সাথে মাঝে মাঝে গল্প হয়। রাজা আর সন্দীপের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেওয়া হয়। ভালোই আছে ওরা। কিন্তু সেই গ্রামীণ পরিবেশে হাঁপিয়ে উঠেছে, সেটা ওর কথা শুনে বেশ ভালো বুঝতে পারি। লাভ ইউ মিস ইউ ইত্যাদি অসংখ্যবার বলেও আর মন ভরে না। মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে শুতে যাওয়ার সময় পুরুষালি ছোঁয়ার অভাব বোধ করি প্রচণ্ড রকম। কিন্তু কিছু করার নেই। আর তো কয়েকমাস। এখন আর অন্য কারোর সাথে জড়িয়ে পড়তে মন চায় না। চৈতালিদির পাল্লায় পড়ে সেই পার্টিতে যা সব করেছি, আর পরে নিজে থেকেই বীরের সাথে যা সব কিছু করেছি, সেই নিয়ে ভাবলে মাঝে মাঝে লজ্জা লাগে, নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। কিন্তু এই শরীর আর মনটা একটু উষ্ণ ছোঁয়ার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে দুই মাস কেটে গেল এই বৈচিত্রহীন জীবনে। অরুণ আমাকে বলেছিল যে ও মাঝে একবার কলকাতা এসে ঘুরে যাবে।
বীর ছিল প্রাইভেট ওয়ার্ডে। আমি ওকে সেদিনকার সব ঘটনা খুলে বলেছিলাম। শুধু চৈতালিদি আর রমাদির সমকামিতার ব্যাপারটা বাদ দিয়ে। সেইদিন ওকে আমি বলেছিলাম “তুমি ঠিক ভেবেছ। নিজের পায়ে দাঁড়াও, বেড়িয়ে যাও এখান থেকে। যা দেখলাম সেটা ঠিক স্বাভাবিক বলা যায় না। পরিবেশটাই অসুস্থ।” বীর সব শুনেও কিছু বলেনি। আমি ওকে এটাও বলে দিয়েছিলাম যে আমি সেদিন রাত্রের এই ব্যাপার দেখার পর ঠিক করেছি এই অসুস্থ পরিবেশে আমি আর থাকবো না। এদের সাথে থাকতে থাকতে নিজের অজান্তে একদিন এদের মতন হয়ে যাব। নিজের জৈবিক চাহিদার সামনে এমন ভাবে দাসে পরিণত হব যে আর কারোর প্রতি কেয়ার করব না। আমি নষ্ট মেয়ে হতে পারি কিন্তু আমার কিছু সুক্ষ মানবিকতা এখনও মরে যায় নি। আমি অন্য কোথাও পেয়িং গেস্ট থাকার ব্যাপারে কথা বার্তা শুরু করেছি। বীর সব শুনেও কিছু বলেনি। অবশ্য ওর বলারই বা কি আছে। আরও কয়েকটা কথা বলে এই অধ্যায় শেষ করব। এই কদিন রোজ রথী আর চৈতালিদি এসে বীর কে দেখে গেছেন। আলাদা আলাদা এলেও এসেছে ওরা। দু দিন রমাদিও এসেছিলেন। ওনার সাথে রাখীও এসেছিল। এই প্রথম মেয়েটাকে চাক্ষুষ দেখলাম। আমার ডিউটির তাড়া ছিল তাই ওর সাথে কথা বলা হয় নি। সামনা সামনি দেখে বুঝলাম মেয়েটা আমার থেকে অনেক বেশী সুন্দরী, এই বয়সে অনেক বেশী সুন্দর ফিগারের অধিকারিণী, চেহারায় একটা ঝকঝকে জেল্লা আছে, চাপা অথচ উগ্র চটক আছে, চরিত্র কঠোর আর অনমনীয়, দাম্ভিক আর খুব নাক সিটকানো। এগুলো দুবার এক ঝলক দেখেই বোঝা যায়। তবে মুখে একটা হাঁসি হাঁসি ভাব সব সময় লেগে আছে। ঠোঁটে আর সারা শরীরে যেন সব সময় একটা ভেজা ভেজা ভাব। সাজ গোঁজ একটু উগ্র, কিন্তু মানানসই। এর আগে শুধু ওর ছবি দেখেছিলাম, সেই রাতে হয়ত মদের নেশার ঘোরে ওর সাথে নিজের তুলনা করেছিলাম, তাই সামনা সামনি দেখে যা বুঝলাম সেই সত্যিটা লিখে রাখলাম, নইলে নিজের কাছে নিজের মিথ্যে বলা হবে। এখন রমাদি আর চৈতালিদির সাথে আমার কথা প্রায় বন্ধ। নতুন মাস পড়ে গেছে। আমি ভাড়া দিতে গিয়েছিলাম। চৈতালিদি বারণ করেছিলেন, অনেক অজুহাত দেখিয়েছিলেন, নিজের বন্ধু থেকে শুরু করে, বাড়ির মেয়ে, শেষে নিজের মেয়ের মতন, সব শেষে বীরকে বাঁচানো, কোনও কিছুতেই আমি গলিনি। টাকাটা ওনার হাতে দিয়ে এসেছিলাম। রমাদি আর চৈতালিদি বীরের ব্যাপারটা নিয়ে আমাকে অনেকবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন, সেগুলো আমার কানে কেমন যেন মেকি শুনিয়েছে। রথীকে যে আর আমি পড়াবো না সেটা আমি হাবে ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি। বীরের এখন পড়বার মতন অবস্থা নেই। আমি পাক্কা পেয়িং গেস্টের মতন বাড়ি থেকে বেরতাম আর ফিরে আসতাম, সময় মতন খেয়ে দেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতাম। বাকি কটা দিন আমি আর এই বাড়ির এসি ব্যবহার করি নি। তার দুটো কারণ, প্রথমত, এসি ব্যবহার করে ওনাদের ইলেকট্রিক বিল বাড়ানোর ইচ্ছে আমার নেই, আর সব থেকে জরুরি কথা হল, এর পর যেখানে যাব সেটা সাধারণ মেস, ওখানে এসি পাব না, তাই আর অভ্যেস খারাপ করার মানে দাঁড়ায় না। অরুণকে বীরের ব্যাপারটা (শারীরিক ব্যাপারটা নয়) জানিয়েছি। ও আমাকে বলল বাড়ি ছেড়ে দিতে। আমি আবার সেই দালালের সাথে যোগাযোগ করেছি। আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছিল যে কেন বাড়ি ছাড়তে চাইছি। আমি বলেছি, আমার ঠিক পোষাচ্ছে না। আমি আবার দালালি দিতে রাজি আছি কিন্তু এখানে আর নয়। মনে হয় লোকটা চৈতালিদিকে ফোন করে ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল। চৈতালিদি একদিন এইটা নিয়ে কথা উঠিয়েও ছিলেন। আমি কোনও উত্তর দি নি। এর থেকেও শস্তায় মেয়েদের একটা মেসের সন্ধান আমি পেয়ে গেছি। দালালি আরেকবার দিতে হয়েছে, কিন্তু খুবই কম। বীর যেদিন বাড়ি ফিরল, তার দুদিন পরে আমি বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে গেলাম। বাকি ভাড়া মেটাতে যাওয়ার সময় চৈতালিদির সাথে অনেক দরাদরি করেও ভাড়া দেওয়া যায় নি। উনি কিছুতেই নেবেন না। এইবার আমিও আর কোনও জোরাজুরি করিনি। আমি আসার আগে বীরের সাথে শেষ দেখা করে এসেছি একবার। ও যেন অনেক কথা বলতে চাইছিল, কিন্তু পারলো না। ও এখন ভীষণ দুর্বল। খিদে মরে গেছে। ভালো করে দাঁড়াতে পারছে না। বাড়িতে একজন নার্স রাখা হয়েছে। এত কড়া কড়া ওষুধের ধাক্কা সামলিয়ে উঠতে পারেনি বেচারা। চৈতালিদির চোখে জল দেখেছিলাম। কিন্তু তাতে আমার মন গলে নি। এখানে বাকি যত দিন ছিলাম চৈতালিদি অনেকবার আমাকে ওনার সাথে মদ খাওয়ার কথা বলেছিলেন। আমি ওনার সাথে বসিনি। একদিন অবশ্য একা একা বসে ভোদকা খেয়েছিলাম। কিন্তু ওনার সাথে নয়। এখানেই এই অধ্যায়ের শেষ। এর পর বীরের সাথে আর চৈতালিদির সাথে হাঁসপাতালে কয়েকবার দেখা হয়েছিল। বীর কে নিয়ে উনি এসেছিলেন চেক আপ করাতে। আমি ওনাদের ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে গেছি। সামান্য সম্ভাষণ ছাড়া আর কোনও কথা হয় নি। আপনি হয়ত ভাববেন হঠাত এরকম রস কষ হীন হয়ে গেলাম কেন। আমি নিজে জানি আমার লেখাতেও হয়ত একটা তীক্ষ্ণ হতাশা ফুটে উঠেছে। কিন্তু কিছু করার নেই। সেই রাতে চৈতালিদি আর রমাদি কে দেখে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলাম এনারা পেট ফুলিয়ে বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু সঠিক অর্থে ঠিক মা হতে পারেন নি। যাই হোক এদের কথা বলে আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আগাম সতর্কতা শেষের কয়েকটা পাতা শুধু সেক্স সেক্স আর সেক্স ছিল। এখন পরের কিছু দিন সেক্সের থেকে বিরতি। লেখাতেও, আর আমার জীবন থেকেও।
নতুন মেসে এসে আমার রুম মেট যাকে পেয়েছিলাম তার নাম অদিতি। না সেই পুরনো অদিতি নয়। অন্য অদিতি। অদিতি নামটা কাল্পনিক ছিল, কারণ ওর আসল নাম বলব না। আগের আমার রুম মেটের আসল নাম যা ছিল এর নামও তাই। টেলিপ্যাথি! তাই এখানেও মেয়েটাকে আমি অদিতি বলেই ডাকব। ভীষণ ল্যাদ খোর মেয়ে। কমার্স নিয়ে পড়ছে। আমার থেকে বয়সে ছোট, তবে খুব বেশী নয়, এক বছরের মতন হবে খুব বেশী হলে। এই অদিতি দুবছর ল্যাগ করেছে আগে। এখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। পড়াশুনা বাদ দিয়ে সব করে। সুতরাং বাকিটা বুঝে নিন। তবে নিজে পড়াশুনা না করলেও, আমার পড়াশুনা করার সময় যেচে আমাকে কখনও ডিস্টার্ব করেনি শেষ দিন অব্দি। ও আমার রুম মেট বাকি কয়েক মাসের। তাই ওর কথায় আসতেই হবে। শুধু ও কেন বাকি সাত জনের কথাও বলব বিস্তারিত। তার আগে বলে নি, এখানকার ভাড়া ভীষণ কম। খাওয়া দাওয়া চৈতালিদির বাড়ির মতন না হলেও, চলে যায়। মেসে আটটা মেয়ে থাকে। সবাই বাঙালি। কারোর পড়া শেষ হয়েছে এখন চাকরির সন্ধান চালাচ্ছে, কেউ বা ছোট খাটো চাকরি করছে, কেউ বা পড়া শেষ করার পথে। তবে পড়াশুনার মধ্যে কেউ নেই। তবে কেউ কাউকে ডিস্টার্ব করে না। সবাই নিজের মতন থাকে। যদি না যেচে কেউ গিয়ে বলে যে তুই ফাঁকা বসে আছিস চল ফুর্তি করি। হাহাহা। আর আরেকটা জিনিস এখানে আমার ভালো লেগেছে। এখানে সবাই সাধারণ পরিবারের থেকে এসেছে, মানে আমার মতন পরিবার থেকে। তাই ফুর্তি বাজ হোক আর স্টাইলিশই হোক, কেউ ধরাকে সরাজ্ঞান করে না। এটা সূচনা। এইবার নতুন পরিবেশ আর নতুন সাথীদের কথায় বিস্তারিত ভাবে আসছি।
আমি আমার লেখায় বাড়ির নাম আর ঠিকানা ইত্যাদি কখনও লেখা পছন্দ করি না। কিন্তু এই বাড়ির ঠিকানা না লিখলেও, নাম না লিখে পারছি না। লক্ষ্মীপুরী। মানে লক্ষ্মী দেবীরা সব থাকেন এখানে। বাড়ির নাম দেখে না হেঁসে থাকতে পারিনি। বলাই বাহুল্য যিনি এই নাম রেখেছিলেন তিনি লক্ষ্মী নারায়ণের বিশাল বড় ভক্ত ছিলেন। তবে মেসটা আমার হাঁসপাতালের থেকে হাঁটা পথ। এখন যিনি এই মেস চালান তিনি সেই নিদারুণ ব্যক্তিত্বের নাতনি। আমরা সবাই ওনাকে তিতলি দি বলে ডাকি। বয়স সাইত্রিশ, বিবাহিতা, তিন মেয়ের মা। ওনার ছবি আঁকা সবচেয়ে সোজা। সবচেয়ে উপরে একটা ছোট রসগোল্লা, তার নিচে কম্পাস দিয়ে একটা বড় দশ টাকা দামের রাজভোগ, আর তার নিচে স্কেল দিয়ে সরু সরু দুটো ল্যাংচা একে দিলেই ওনার ছবি আঁকা হয়ে যাবে। হাসবেন না। কারোর শারীরিক গঠন নিয়ে কথা বলা উচিৎ নয় আমি জানি। কিন্তু ওনার ফিগারটা ঠিক এরকম। উনি নিজে এখানে থাকেন না। উনি ওনার স্বামীর সাথে পাশেই একটা ফ্ল্যাটে থাকেন। রোজ এসে তদারকি করে যান। বাড়ির আর তার সাথে আমাদের দেখাশুনা করেন শান্তাদি আর ওনার স্বামী গোকুলদা। শান্তাদির বয়স খুব বেশী হলে ত্রিশ হবে। গোকুলদার বয়স খুব কম করে হলে পঞ্চাশ ছুই ছুই। সবাই আড়ালে ওনাকে বুড়ো গোকুল বলে ডাকে। ওদের বাচ্চা হয়নি। সবার বিশ্বাস ওদের আর বাচ্চা হবেও না। ওদের কোনও শারীরিক সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না, কারণ গোকুলদা ছাদের ঘরে শোন আর শান্তাদি একতলায় রান্না ঘরের পাশে একটা ছোট ঘরে শোন। গোকুলদা এমনিতে খুবই ভদ্র। আমাদের দিদিমনি দিদিমনি বলে ডাকেন সবাইকে। উনি রান্না বান্না করেন। চৈতালিদির মতন ভ্যারাইটি খাবার না বানালেও, বহু দিন উড়িশ্যায় কোনও এক ছোট হোটেলে কাজ করেছেন। উড়িয়াদের রান্নার হাত এমনিতে বেশ ভালোই হয়। চলনসই খাবার দাবার বানানোর হাত বেশ ভালো। ওনার রান্নার সাথে শ্যামদার হাতের রান্নার বেশ একটা মিল পাই। শান্তাদি বাজার হাট করা, ঘর পরিষ্কার করা, জামা কাপড় ধোয়া, ইস্তিরি করা এইসব করে দেন। তবে সব কাজের কিছু স্থির রেট আছে। আমি নিজে ধোয়া কাঁচা আর ইস্তিরি করে নিই, তাই আমার ওনার সাহায্য লাগে না সচরাচর। এখানে সব কিছুই খুব নিয়ম মাফিক আর ঘড়ির কাঁটা মেনে চলে। খাবার দাবারের বন্দবস্ত মোটা মুটি এই মতন। চার বেলা খাবার দেওয়া হয়। আর দুবেলা করে চা। সকালে এক কাপ চা দেওয়া হয়। সকাল নটার মধ্যে চা না খেলে আর পাওয়া যায় না। ছিমছাম ব্রেকফাস্ট দেওয়া হয়। রোজকার মেনু একই রকম। হাতে করা পাতলা রুটি আর পাতলা আলুর ঝোল। বেশ ঝাল ঝাল করেন আলুর ঝোলটা, আর রুটিটা থাকে গরম গরম। এক ঘেয়ে খাবার, কিন্তু খেতে মন্দ লাগে না। রুটি আর আলুর ঝোল যত পারো খাও। কেউ তিনটে রুটি খায় কেউ বা চারটে। সাথে কাঁচা লঙ্কা চাইলে পাওয়া যায়। নটার পরে আর ব্রেকফাস্ট পাওয়া যায় না। দুপুরে একটার দিকে লাঞ্চ। এটারও মেনু রোজ মোটামুটি একই রকম। ভাত, ডাল, একটা সবজি, সাথে পাতলা মাছের ঝোল বা ডিমের ঝোল, আর তার সাথে পাঁপড় বা আলুভাজা বা বেগুন ভাজা কোনও একটা থাকে। পেঁয়াজ আর লঙ্কা চাইলে পাওয়া যায়। ভাত ডাল আর সবজি যত চাও পাওয়া যায়। মাছ আর ডিম শুধু একটা করেই বরাদ্দ। আলুভাজার পরিমাণ বাঁধা, বেগুন ভাজা মাঝারি আকারের একটা আর পাঁপড় হলে একটা, কেউ না খেলে দুটো বেগুনভাজা বা দুটো পাঁপড় পাওয়া গেলেও যেতে পারে। তিনটের মধ্যে লাঞ্চ সেরে নিতে হয়, নইলে আর পাওয়া যায় না। সন্ধ্যায় পাঁচটা থেকে সাড়ে সাতটা অব্দি চা দেওয়া হয়। এক কাপ বরাদ্দ। তার সাথে রোজ মুড়ি আর তার সাথে বেগুনী বা আলুর চপ দেওয়া হয়। এখানেও একই ব্যাপার সাড়ে সাতটার পর আর পাওয়া যাবে না। রাতের খাবার কাঁটায় কাঁটায় নটার দিকে দিয়ে দেওয়া হয়। মেনু দুপুরের লাঞ্চের মতই। শুধু একটাই ব্যতিক্রম রাতে আগে থেকে বলা থাকলে ভাতের জায়গায় রুটি পাওয়া যায়। রোববার একটু ব্যতিক্রম থাকে মেনুতে। ব্রেকফাস্টে রুটির জায়গায় গরম গরম ফুলকো লুচি পাওয়া যায়। আর দুপুরে ডিম বা মাছের জায়গায় মাংসের ঝোল, সবার ভাগে তিন টুকরো করে চিকেন বরাদ্দ। মেসের ভাড়া একদম বাঁধা। প্রত্যেকটা মিল বা ব্রেকফাস্ট বা টিফিনের ভাড়া আলাদা করে ধরা থাকে। কেউ যদি কোনও একটা খাবার বাদ দেয় তো আগে থেকে বলে দিতে হবে, তাহলে ভাড়া থেকে সেই টাকা বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। পরে অবশ্য এক্সট্রা মিল বা টিফিন যোগ হলে আবার পরের মাসের ভাড়ার সাথে সেই টাকা যোগ করে দিয়ে দিতে হবে। পরিষ্কার নিয়ম। আগে থেকে বলা না থাকলে কেউ খাক বা না খাক তাকে সেই মিল বা টিফিনের পয়সা দিতে হবে। আমি যখন প্রথম বার তিতলিদির সাথে কথা বললাম তখন আমি বলে দিয়েছিলাম যে আমি উইকএন্ডের একদিন ছাড়া কোনও দিন লাঞ্চ আর সন্ধ্যার টিফিন আর সন্ধ্যার চা নেব না। এক ঝটকায় আমার ভাড়া থেকে বেশ কিছু টাকা বাদ হয়ে গেল। তবে হ্যাঁ বলে রেখেছিলাম যে কোনও দিন যদি এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় তো আগের দিন রাতেই জানিয়ে দেব যাতে গোকুলদার ব্যবস্থা করতে সমস্যা না হয়। পরে ভাড়ার সাথে এই বাড়তি মিলের টাকা যোগ করে দিয়ে দেব। তিতলিদি বাঁধা দেন নি। আরেকটা ব্যাপারে আমি আপত্তি করেছিলাম। হাঁসপাতালে ফেঁসে গেলে রাত নটার মধ্যে এসে আমি খেতে পারব না। আমাকে উনি বলে দিয়েছিলেন যে ফোন করে আগে থাকতে বলে দিতে, খাবার তোলা থাকবে, এই ব্যাপারে কোনও সমস্যা হবে না। রিলায়েন্স জিন্দাবাদ, ফ্রিতে একটা ফোন করলেই চলবে।
এতো গেলো খাবার দাবারের ব্যাপার। এইবার আসি এখানকার বাসিন্দাদের কথায়। আচ্ছা তার আগে বাড়ির মোটামুটি একটা বর্ণনা দিয়ে রাখা ভালো। বাড়িটা তিন তলা। অবশ্য তিন তলায় ছাদ আর একটা চিলে কোঠার ঘর ছাড়া কিছুই নেই। এক তলায় দুটো ঘর। তার পাশে একটা কমন বাথরুম। বাড়ির এক কোনায় একটা বড় রান্নাঘর। আর রান্নাঘরের পাশে একটা ছোট স্টোর রুম, এতে শান্তাদি শোন। দোতলায় আরও দুটো ঘর আর একটা কমন বাথরুম আছে। ছাদের চিলে কোঠার ঘরে বুড়ো গোকুল শোন। রান্না ঘরের গায়ে লাগানো বাড়ির বাইরের দিকে একটা ছোট ঘর আছে। সেখানে একটা ছোট টেবিল আছে যাতে বসে আমরা খাওয়া দাওয়া করি। প্রত্যেকটা ঘরে দুটো করে মাঝারি আকারের খাট আর তার পাশে একটা করে টেবিল আর একটা করে শস্তা কাঠের চেয়ার আছে। টেবিলে একটা করে টেবিল ল্যাম্পও রাখা আছে। ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে শুধু টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে নিজের কাজ করা যাবে। ঘরের অন্য লোক কে বিরক্ত করার দরকার নেই যদি সে ঘুমাতে চায়। দোতলার এক পাশে একটা ছোট বসার ঘর আছে যাতে একটা টিভি ও আছে। যে কেউ গিয়ে বসে টিভি চালিয়ে দেখতে পারে। গোটা দুয়েক ছোট চেয়ার আর একটা মাঝারি সাইজের সোফা আছে। কারোর বাড়ির লোক এলে এখানে বসে কথা বলা যায়। ও হ্যাঁ আমি বাড়িতে বলে দিয়েছি যে আমি ঘর বদলাচ্ছি। ওরা দেখলাম এইবার কেউ কি কেন ইত্যাদি প্রশ্ন করে আমাকে বিরক্ত করেনি। তাই আমিও বেশী জবাবদিহি করিনি। বাথরুম আর রান্নাঘর যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। শান্তাদির এই সব দিকে ভালোই নজর আছে। এইবার বাসিন্দাদের ব্যাপারে বলি।
১। রুমি মানে আমিঃ আমার ব্যাপারে বেশী বলার দরকার নেই। আমার জন্য দোতলায় টিভির ঘরের পাশের ঘরটায় থাকার বন্দবস্ত হয়েছে। আগে যে ছিল সে সদ্য বিয়ে ঠিক হওয়াতে বিদায় নিয়েছে, তার জায়গায় এসেছি আমি।
২। অদিতিঃ আমার রুম মেট। আমার থেকে এক বছরের ছোট। ওর ব্যাপারে আগেই কিছুটা বলেছি। গায়ের রঙ চাপা। তবে মুখটা মিষ্টি। উচ্চতা আমার মতন। শরীরের গড়ন আমার মতন, একটু রোগাটে বলা চলে। আমার মতন অদিতিও দুপুরে বাড়িতে থাকে না। তবে কি করে বলা শক্ত। কমার্সের ছাত্রী, তবে, সচরাচর ওকে বই নিয়ে বসতে দেখিনি। ঘরে থাকলে সারা দিন মোবাইল নিয়ে বসে খুট খুট করে চলে। একটা বয় ফ্রেন্ড আছে। সারা দিন তার সাথে মেসজ করে চলেছে। ছেলেটা ওর ক্লাস মেট। তবে ছেলেটা এখন মাস্টার্স করছে। অদিতি হাঁসি খুশি হলেও এমনিতে চাপা স্বভাবের মেয়ে। যেচে গায়ে পড়ে শুরুতেই ভাব করতে আসেনি। তবে আমি আসাতে অখুশি হয়েছে এমনটাও ওকে দেখে কখনও মনে হয় নি।
৩। শ্যামলীঃ আমাদের পাশের ঘরে থাকে। ওরও গায়ের রঙ চাপা। একটু লম্বাটে আর রোগাটে গড়ন। মানে দেখে মনে হতে বাধ্য যে কেউ যেন ওর ঠ্যাং আর মাথাটাকে ধরে টেনে ওকে লম্বা করে দিয়েছে। কোমর পাছা বুক সব কেমন যেন এই লম্বাটে গড়নের মধ্যে হারিয়ে গেছে। সব কিছু ছোট ছোট। শ্যামলী আমার সমবয়সী। ইতিহাসের ছাত্রী। মাস্টার্স করছে এখন সিঊ থেকে।
৪। ছন্দাঃ শ্যামলীর রুম মেট। আমার সমবয়সী। বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী। ফর্সা, সুশ্রী, ভরাট গড়ন। উচ্চতা আমার থেকে সামান্য কম। বেশ হাঁসি খুশি। সবার সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারে। আর আমার মতই ভীষণ বক বক করতে ভালোবাসে। কিন্তু গায়ে পড়ে আলাপ করতে আসে না। বা গায়ে পড়ে কারোর কাজে নাক গলাতে আসে না। পরে শুনেছিলাম ও নাকি ওর কলেজের এক বিবাহিত প্রফেসরের প্রেমে পড়েছে। বিচিত্র।
৫। মিনতিঃ গ্রামের মেয়ে। ফর্সা রোগা, উচ্চতা মাঝারি। সব থেকে চাপা স্বভাবের মেয়ে। দেখে মনে হয় সব সময় যেন কিছু একটা ভাবছে। কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝেই কোথায় যেন হারিয়ে যায়। ও থাকে এক তলায় রান্নাঘরের পাশের ঘরে। কলকাতার প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করেছে। চাকরি খুঁজে চলেছে। এখনও পায়নি। পড়ার জন্য লোণ নিয়েছে। সেটা শোধ করার জন্য সব সময় যেন চিন্তিত থাকে।
৬। অমৃতাঃ দুর্গাপুড়ে বাড়ি। মিনতির রুম মেট। মিনতির ক্লাস মেটও বটে। ওই একই কলেজ থেকে একই স্ট্রিমে পড়াশুনা করেছে। অনেক দিন হয়ে গেছে চাকরি পাচ্ছে না বলে দৌড়া দৌড়ী করতে হচ্ছে অনেক। এখন কম্পিউটার নিয়ে কি একটা কোর্সও করছে বাইরে। মাঝে মাঝে চাকরির জন্য অনেক অনেক দূর থেকে ঘুরে আসে। খুব একটা লাভ হয়নি এখন অব্দি। অমৃতাও ফর্সা রোগা কিন্তু উচ্চতা আমার থেকে ইঞ্চি তিনেক বেশীই হবে। মিশুকে। ওদের বাড়ির অবস্থা স্বচ্ছল। চাকরি পাওয়ার ইচ্ছে আছে পুরো দমে আর সেটা দেখে বোঝা যায়, কিন্তু খুব একটা তাগিদ বা চিন্তা আছে বলে মনে হয় না।
মিনতি আর অমৃতা দুজনেই আমার সমবয়সী।
৭। দীপালিদিঃ আমাদের মধ্যে সব থেকে বয়সে বড়। আঠাশে পড়েছে। ওনার সাথে কথা বললে বোঝা যায় ওনার মনে অনেক অনেক দুঃখ। বাড়ি কলকাতার বাইরে। খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে। গায়ের রঙ চাপা আর দেখতে সুন্দরী নয় বলে বিয়ে হচ্ছে না। তিনটে ছেলে ওকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তার ওপর ভালো চাকরি করার ইচ্ছে। পড়াশুনা খুব একটা করেনি। কিন্তু ভালো চাকরি চাই। অবশ্য একটা ব্যাক অফিসে চাকরি করে কাছেই। সেখানেও বিপত্তি। বস ভীষণ খিটখিটে। উঠতে বসতে নাকি ধমকায়। আর মাইনে নাকি খুব কম। মেস ভাড়া ইত্যাদি দিয়ে খুব একটা কিছু বাঁচে না। একতলার অন্য ঘরে দীপালিদি থাকে। শান্তাদির সাথে ওর তুই তুকারির সম্পর্ক।
৮। মামনঃ দীপালিদির রুম মেট। আমার সমবয়সী। গায়ের রঙ খুব ফর্সা নয়, কিন্তু আমাদের মধ্যে সব থেকে সুন্দরী আর মিষ্টি দেখতে। ফিগারও ভালো। বেশ নিখুঁত ভাবে বানিয়েছেন ওকে ভগবান। কিন্তু মাথা অদ্ভুত ভোঁতা। অঙ্ক নিয়ে পড়েছে। কিন্তু ওর সাথে তিন মিনিট কথা বললে আমার মনে হয়, আমি যেন একটা দেওয়ালের সাথে কথা বলছি। রেজাল্ট অত্যন্ত খারাপ। তার ওপর মাস্টার্স করতে করতে কারোর একটা প্ররচনায় অঙ্ক ছেড়ে কম্পিউটারের কোর্সে ঢুকে গিয়েছিল। এখন একটা ছোট কল সেন্টারে চাকরি করে। মাস গেলে যে টাকা হাতে আসে সেটা নিয়ে এও খুশি নয়। মাঝে মাঝে আফসোস করে কেন অঙ্ক ছেড়ে দিয়ে এইসব হচপচ করতে গেল। এমনিতে হাঁসি খুশি, কিন্তু ওই যে বললাম ভীষণ ভোঁতা মাথা। এই মাথা নিয়ে আর যাই হোক অঙ্ক হয় না। আমাদের মধ্যে ওই একমাত্র মেয়ে যার গয়না নিয়ে ভীষণ আকর্ষণ আছে। গয়না ছাড়া জীবনে আরও যে অনেক কিছু জিনিস আছে সেটা ভুলে যায় মাঝে মাঝে। একটা বয় ফ্রেন্ড ছিল, কেটে পড়েছে। পরে একদিন দুঃখ করে বলেছিল ওর বয় ফ্রেন্ড নাকি ওকে বলেছে যে ওর সাথে কথা বলার কোনও মানে হয় না, কারণ ও কোনও কিছুই বোঝে না, এমনকি বাচ্চাদের জোকও বুঝতে পারে না, তাই এমন মেয়েকে নিয়ে সংসার করা সম্ভব নয়। মন্দ বলে নি। মানে ওর সাথে আলাপ করার পর বুঝেছি যে ভগবান আমাদের থেকে ওকে রূপ আর ফিগার অনেক ভালো দিয়েছেন, কিন্তু ঘটে ব্রেন দেওয়ার সময় ভগবানের বাড়িতে লোড শেডিং হয়ে গিয়েছিল নিশ্চিত, ব্রেন দিতে ভুলে গেছেন। তবে হ্যাঁ আবারও বলছি কথা বার্তা মিষ্টি আর মিশুকে। আরেকটা জিনিস আমাদের মধ্যে সব থেকে ফ্যাশনেবল ড্রেস ওই পড়ে। তবে দেখানোর জন্য নয়। গয়নার মতন স্টাইলিশ জামা কাপড়ের ওপরও বেশ আকর্ষণ আছে ওর। তবে উগ্র সাজ করে না, যেমন আমি বেশ কয়েকবার করেছি, শারীরিক আর মানসিক চাহিদা মেটানোর জন্য, বা কোনও কিছু আদায় করার জন্য। সবাই ওকে বোকা মামন বলে ডাকে।
চৈতালিদির বাড়ির জমজমাট ঘটনাবহুল জীবনযাত্রার পর এখানে এসে মনটা শুরুতে দমে গিয়েছিল। এখানকার জীবনযাত্রা ভীষণ নিরুপদ্রব। আমি যেদিন এখানে প্রথম এসেছিলাম তিতলি দি আমার সাথে সবার মুখো মুখি উপর উপর আলাপ করিয়ে দিয়ে চলে গেছিলেন। অদিতির নাম শুনে আমি একটু চমকেই গেছিলাম। ঘরে ঢুকে ওকে বলেই ফেললাম হস্টেলে আমার যে রুমমেট ছিল ওর নামও অদিতি। মেয়েটা শুধু হাসল একটু মুখে কিছু বলল না। প্রথম আলাপে মনে হয়েছিল যে মেয়েটা ভীষণ চাপা স্বভাবের, অবশ্য পরে বুঝেছিলাম যতটা মনে হয়েছে ততটা চাপা নয়। এখানে সবারই খোলস ছাড়তে একটু সময় লাগে এই আর কি। সেদিন আমি আর বেশীক্ষণ বসতে পারিনি। আমার ডিউটি ছিল, তাই বেড়িয়ে পড়েছিলাম। রাতে সেদিন ইচ্ছে করে একটু তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছি। যাতে খাওয়ার সময় সবার সাথে আলাপটা সেরে ফেলা যায়। হ্যাঁ সেদিন রাতে খাবার টেবিলে সবার সাথে আলাপ হল। এই যে আগে একগুচ্ছ জিনিস এর তার ব্যাপারে লিখে পাতা ভরালাম সেটা এই খাবার টেবিলে বসে কথা বলার ফল। সকালে এক ঝলক দেখলেও এখন একটু ভালো করে প্রত্যেককে দেখে নিলাম। কাউকে আমার খারাপ লাগলো না। খাবারের টেবিলে আলাপ হওয়ার পর ঘরে ফিরে এসে অদিতির সাথেও বেশ খানিক্ষন গল্প হল ঘুমানোর আগে। কথা বলার ফাঁকে ফাকেই দেখছিলাম যে মোবাইল তুলে খুঁট খুঁট করে চলেছে। জিজ্ঞেস করাতে বলল, বিকালে বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে, তাই এখন মান ভাঙানোর খেলা চলছে এসএমএসে। আমার হাঁসপাতালের ডিউটি ইত্যাদি নিয়েও আমাকে ও জিজ্ঞেস করেছিল। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয়ে গেল ওর সাথে। কয়েকদিন যেতে না যেতে আমি এই ছিম ছাম পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিলাম। এখানে একটা সমস্যা হল, এখানে কেউ ভোদকা ইত্যাদি খায় না। অদিতিকে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আমি খেলে ও খাবে কিনা। অদিতি বলেছিল, ও একবার বয় ফ্রেন্ডের সাথে টেস্ট করে দেখেছিল, কিন্তু পেটে সহ্য হয়নি। সপ্তাহে একদিন করে আমি একা একা বসে ভোদকা গিলি, আর পুরনো দিনগুলোর স্মৃতি নিয়ে জাবর কাটি। অদিতি অবশ্য মাঝে মাঝে গল্প করে সঙ্গ দিয়ে থাকে। ওকে আমি অরুণের কথা বলেছি। মাঝখানে একদিন ছুটির দিনে আমরা মেসের সবাই মিলে গিয়ে ছোটখাটো শপিং করে সিনেমা দেখে এসেছি। বাইরে খাওয়া দাওয়া করার প্ল্যান হচ্ছিল, কিন্তু আগে থেকে শান্তাদিকে বলা ছিল না বলে সেই প্ল্যান বাতিল করতে হল। এদিকে আমার হাঁসপাতালের ডিউটির চাপ বেড়েই চলেছে। জীবনে কোনও বৈচিত্র নেই, এক ঘেয়ে। বেশ হাঁপিয়ে উঠেছি। অরুণকে খুব মিস করি মাঝে মাঝে। কিন্তু কিছু করার নেই। আমার মোবাইলের পয়সা যদিও কোনও দিন শেষ হয় না, কিন্তু অরুণের কাছে মোবাইল নেই। তাই কথা বলা যায় না। অবশ্য হাঁসপাতাল থেকে ওর সাথে মাঝে মাঝে গল্প হয়। রাজা আর সন্দীপের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেওয়া হয়। ভালোই আছে ওরা। কিন্তু সেই গ্রামীণ পরিবেশে হাঁপিয়ে উঠেছে, সেটা ওর কথা শুনে বেশ ভালো বুঝতে পারি। লাভ ইউ মিস ইউ ইত্যাদি অসংখ্যবার বলেও আর মন ভরে না। মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে শুতে যাওয়ার সময় পুরুষালি ছোঁয়ার অভাব বোধ করি প্রচণ্ড রকম। কিন্তু কিছু করার নেই। আর তো কয়েকমাস। এখন আর অন্য কারোর সাথে জড়িয়ে পড়তে মন চায় না। চৈতালিদির পাল্লায় পড়ে সেই পার্টিতে যা সব করেছি, আর পরে নিজে থেকেই বীরের সাথে যা সব কিছু করেছি, সেই নিয়ে ভাবলে মাঝে মাঝে লজ্জা লাগে, নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। কিন্তু এই শরীর আর মনটা একটু উষ্ণ ছোঁয়ার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে দুই মাস কেটে গেল এই বৈচিত্রহীন জীবনে। অরুণ আমাকে বলেছিল যে ও মাঝে একবার কলকাতা এসে ঘুরে যাবে।