18-10-2019, 02:07 PM
পরের পর্ব
আমার মাথায় সেই না বলা চিন্তাটা ছারাও আর অনেক উদ্বেগ আর কৌতূহল মাখা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আর তাই আমি গাড়িতে বসার পর অব্দি খুব একটা কোনও কথা বলিনি। উনিই নীরবতা ভাঙলেন। “টেনশান হচ্ছে? কি চুপ করে ভেবে চলেছ সেই তখন থেকে?” আমি বলেই ফেললাম সেই চেপে রাখা প্রশ্ন “আচ্ছা আপনি “ উনি স্টিয়ারিং থেকে ডান হাত টা তুলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন “ ওখানে গিয়ে আপনি আপনি করবে না, তুই, তুমি এইসব বলবে। তুই না বলতে পার তো তুমি বলবে। ওখানে আরও কেউ কেউ থাকবে। তাদের আপনি করে কথা বলতে যেও না, যদি না নেহাত কারোর হাত ধরে সংসার পাতার ইচ্ছা থাকে। মনে রাখবে আমরা সংসার বসাতে যাচ্ছি না বা প্রেমে পড়তে যাচ্ছি না। আমরা যাচ্ছি ফুর্তি করতে। ব্যস এটাই শেষ কথা।” বললাম “আপনি, মানে তুমি, অন্য ছেলে মেয়েদের সাথে ফুর্তি মানে মজা করতে যাচ্ছেন( কথার ভুল হয়েই যাচ্ছে), কিন্তু তাহলে এইভাবে ঢাক পিটিয়ে বলার কি আছে যে তুমি বিবাহিত?” উনি প্রায় হুমড়ি খেয়ে হেঁসে উঠলেন। “দূর আমি সিদুর পরে যাচ্ছি কারণ সিদুর পরলে আমার চেহারাটা খোলে। আর অন্যের বউয়ের সাথে ফ্লার্ট করতে পারছে বুঝলে ছেলেদের থেকে একটু বেশী আর কি , ওই আটেনশান পাওয়া যায়। আর আমার সেটা মন্দ লাগে না। সিঁদুরটাই তো শুধু রয়ে গেছে। আসল মানুষটাই তো আর নেই আমার জীবনে। “ একটু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন যেন। “আর তাছাড়া, ওর সিঁদুরের নাম ভাঙ্গিয়ে যদি ছেলেদের থেকে বেশী কৌতূহল আদায় করতে পারি তো মন্দ কি?” আমি কিছু কিছু বুঝলেও ঠিক পুরোটা বুঝলাম না উনি কি বলতে চাইছেন। যাকগে। বেশ সুন্দর এসি র হাওয়া খেতে খেতে যাচ্ছি। ভেতরে একটা বাংলা আধুনিক রোম্যান্টিক গান চলছে। উত্তর ২৪ পরগণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এখন। নিউ টাউন এর ভেতর দিয়ে ঢুকে রাজারহাটের রাস্তায় চলেছি। এখনও আমি ওদিকে প্রায়ই যাই কাজে, কিন্তু আজ তো যাচ্ছি ফুর্তি করতে। যখনকার কথা বলছি, তখন এই দিকটা বেশ খালি, রাস্তায় ভালো মতন আলোও নেই। আমরা চলেছি তো চলেছি। হঠাত এক জায়গায় এসে উনি কথা বললেন “মনে হয় কাছাকাছি চলে এসেছি।” আমার হুশ ফিরে এল। জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেশ কয়েকটা ফ্ল্যাট বাড়ি মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আচ্ছা এরই একটাতে যাব তাহলে। উনি আস্তে আস্তে এক একটা বাড়ির সামনে দিয়ে বাড়িগুলোর নাম পড়তে পড়তে এগিয়ে চলেছেন। “হ্যাঁ এসে গেছি।” যেটার সামনে এসে উনি কথাটা বললেন সেটাতে তখনও যে কাজ হচ্ছে সেটা দেখতে পাচ্ছি। উনি গেটের সামনে গাড়িটা থামিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে কাউকে একটা কল করলেন, আমি শুধু এইধারে ওনার কথা শুনতে পাচ্ছি। তাই এক তরফা কথাই লিখলাম। “এই চলে এসেছি আমরা। সরি রে একটু লেট হয়ে গেল। গেট দিয়ে ঢুকে যাব? কাউকে পাঠা না প্লীজ নিচে। হ্যাঁ অপেক্ষা করছি। “ ফোন টা রেখে উনি বেশ কয়েকবার জোরে জোরে হর্ন মারলেন। ভেতর থেকে গেট খুলে গেল। একজন উর্দি পরা সিকুরিটি বেড়িয়ে এসে ওনার জানলার পাশে দাঁড়াল। উনি এসি বন্ধ করে জানলার কাঁচ নামিয়ে বললেন “পলাশ সেনগুপ্ত আছেন এখানে? ওনার ফ্ল্যাটে যাব।” উনি নামানো কাঁচের মধ্যে দিয়ে আমাদের দুজনকে একবার ভালো করে মেপে নিলেন। কি কি দেখলেন সেটা ঠিক সঠিক ভাবে বলতে পারি না। একটু গলা পরিষ্কার করে বলল “দাঁড়ান আমি আগে কল করে দেখছি, তারপর যেতে দেব। “ উনি বিশাল বড় খোলা গেটটার ভেতর দিয়ে সিকুরিটির জন্য তৈরি ঘরে চলে গেলেন কাউকে কল করতে। না কল করতে হল না। দেখলাম একজন লোক, আমার থেকে বয়সটা সামান্য বেশীই হবে, ওর ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। গাড়ি গেট দিয়ে ঢুকে সিকুরিটির ঘরের সামনে দাঁড়াল, মহিলা গানের আওয়াজ কমিয়ে দিলেন। একটা পিচ বোর্ডে আটকানো খাতা সিকুরিটি মহিলার সামনে মেলে ধরলেন। তাতে কে এসেছে, কাকে দেখতে এসেছে, কখন এসেছে, কেন এসেছে, সাইন, এইসব করতে হবে। কে কে আসছে কমপ্লেক্সে সেই সবের হিসাবের খাতা। মহিলা নিজের এন্ট্রি টা করে আমার দিকে পেন সহ খাতাটা এগিয়ে দিলেন। আমিও নিজের নামের এন্ট্রি করে দিলাম। খাতাটা ফেরত চলে গেল। যে আমাদের নিতে এসেছে সে বাইরে দাঁড়িয়ে সিগারেটে খুব জোড়ে জোড়ে টান দিচ্ছে আর গোল রিং বানিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে। হুম বেশ হ্যান্ডসাম ছেলেটা। হ্যাঁ ঠিকই অনুমান করেছি বয়সটা আমার থেকে হয়ত সামান্য বেশী। একটা নীল রঙের জিন্স আর তার উপর একটা সাদা রিবক লেখা টি শার্ট। ছেলেটা জানলার ভেতর দিয়ে ভেতরে মাথা গলিয়ে আমাদের দুজনকে গুড ইভিনিং জানিয়ে কোথায় গাড়ি পার্ক করতে হবে হাত উঠিয়ে দেখিয়ে দিল। আর লোক বলছি না যে এসেছে আমাদের নিয়ে যেতে আর পরে যাদের দেখলাম এদের ঠিক লোক বলা চলে না, এদের সবারই বয়স হয় আমার সমান বা আমার থেকে সামান্য বেশী। বয়স জিজ্ঞেস করা হয়নি, তাই সঠিক ভাবে বলতে পারব না। এই ছেলেটা দেখতে বেশ কিউট।
মহিলা গাড়ি পার্ক করে নেমে পড়লেন, সেই সাথে আমিও। দেখলাম একটা বিল্ডিঙ্গে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে ছেলেটা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি গাড়ি থেকে নেমে আমার টপ আর সংক্ষিপ্ত স্কার্টটা একটু ঠিক করে নিলাম। মহিলার পেছন পেছন ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। “এস” ছেলেটা আমাদের নিয়ে বিল্ডিঙ্গের ভেতরে ঢুকে গেল। লিফট আছে। ঢুকে গেলাম লিফটে। ছেলেটা আমাদের আগে ঢুকতে দিয়ে সব শেষে নিজে লিফটের ভেতরে প্রবেশ করল। লিফটটা বেশ বড়, কিন্তু তবু কেন জানি না ছেলেটা আমাদের বেশ গায়ের সাথে ঘেসে এসে দাঁড়াল। “চিনতে অসুবিধা হয় নি তো?” মহিলা বললেন “একদম না। তুমি ই পল্লব?” বলল “ না ও ওপরে আছে। আসর জমতে সবে শুরু করেছে। তবে তোমরাই সবথেকে লেট। “ বুঝতে পারলাম আমি যার সাথে এসেছি তিনি অন্তত এই ছেলেটিকে আর যার ফ্ল্যাটে যাচ্ছি মানে পল্লব নামক ছেলেটাকে চেনেন না। মহিলা আস্তে করে জবাব দিলেন “সরি। আসলে বেরোতে বেরোতে দেরী হয়ে গেছে। “ আমরা সাত তলায় যাচ্ছি। লিফটটা এসে থামাতে আমরা নেমে গিয়ে একটা দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দরজাটা খোলাই ছিল। আমরা ওই ছেলেটার পেছন পেছন ঢুকে পড়লাম। খুব বড় ফ্ল্যাট নয়। সবাই ড্রয়িং রুমেই বসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। “কেমন আছিস” বলে এক মহিলা দৌড়ে এসে আমার বারিওলিকে জড়িয়ে ধরল। দুজনেরই বয়স মোটামুটি এক। বুঝলাম ইনিই সেই বন্ধু। ওনার নাম রমা। আমার বাড়িঅলির নাম এখন বলছি, কারণ নইলে লিখতে অসুবিধা হচ্ছে। ওনার নাম চৈতালি। এখন থেকে দুজনকেই নাম ধরে ডাকব। কারণ বাকিরা সবাই ওনাদের দুজনকে নাম ধরেই ডাকছে। রমা নামক ভদ্রমহিলাটির বর্ণনা দেওয়ার আগে যেখানে এসেছি আর ফ্ল্যাটে ঢোকার পর যা দেখছি সেটা আগে বলে নি। ফ্ল্যাট টা খুব বড় না হলেও কোনও বড়লোকের সেটা কয়েকটা জিনিস দেখে অনুমান করে নিতে অসুবিধা হয় না। ফ্ল্যাটটা পল্লবের বাবার। পরে শুনেছিলাম পল্লবের বাবা এখন পল্লবের মার সাথে কুয়েতে কোনও বড় অয়েল কোম্পানিতে কাজ করেন। ছেলে কলকাতায় থেকে পড়াশুনা করছে। ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুম টা খুব বড় নয়। মেঝে ঝকঝকে মার্বেলের। দরজা দিয়ে ঢুকেই বাদিকে একটা শুর*্যাক। শুর*্যাকটার একটা কপাট খুলে রাখা আছে, আর ভেতরে সাত থেকে আট জনের মতন চটি জুতো রাখার জায়গা আছে। মনে হয় যারা আজকের রাতের অতিথি তারা যাতে সেই খালি জায়গায় নিজেদের পরে আসা চটি বা জুতো রাখতে পারে তাই একটা কপাট খুলে রাখা হয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হল এই যে যারা এসেছে কেউই শু র*্যাকে নিজেদের চটি বা জুতো গুছিয়ে রাখেনি। শুর*্যাকের সামনে অগোছালো ভাবে ফেলে রেখেছে। দেওয়ালের রঙ হালকা গোলাপি। দরজার ঠিক ডান দিকে দেওয়ালের গা ঘেসে একটা বিশাল বড় ফ্ল্যাট টিভি রাখা আছে একটা মাঝারি উচ্চতার কাপড়ে ঢাকা টেবিলের উপর। টেবিলের দুপাশে দুটো লম্বা লম্বা স্পীকার মেঝের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। টিভি টা যে টেবিলের ওপর রাখা সেই কাপড়ে ঢাকা টেবিলটার বেশ কয়েকটা ধাপের মধ্যে একটা ধাপের মধ্যে স্পীকারের উফারটা রাখা। এরকম স্পীকার আমি বাপের জন্মে দেখিনি। টিভিটা দেখে মনে হল হালে কেনা। টিভির ঠিক সামনে মানে ড্রয়িং রুমের মাঝ বরাবর একটা কাঁচের মাঝারি সাইজের নিচু সেন্ট্রাল টেবিল আর তাকে ঘিরে তিনটে বেশ অত্যাধুনিক সোফাসেট। টেবিলের পিছনে মানে টিভির মুখোমুখি যে সোফাটা আছে সেটাই সবথেকে বড়, মানে তিনজনের বসার পক্ষে যথেষ্ট। আর টেবিলের দুধারে যে সোফা দুটো আছে তাতে একজন করে বসতে পারে। বড় সোফাটার একটু পিছনে দেওয়ালের শুরু, আর তার বাদিকে রান্নাঘরের দরজা। আর রান্নাঘরের পাশে একটা বাথরুম। রান্নাঘর আর বাথরুম দুটোই অত্যাধুনিক সব জিনিসে সাজানো, কিন্তু না বলে থাকতে পারছি না যে এই দুটো ঘরই ভীষণ ছোট। ফ্ল্যাট বাড়িগুলোর এই এক প্রবলেম। কিচেন আর বাথরুম ছোট ছোট হয়। বড় সোফাটার পিছনে ডান দিকে একটা ইয়া বড় ডাইনিং টেবিল। টেবিলের চারপাশে আটটা কাঠের চেয়ার কভার পরিয়ে সুন্দর ভাবে রাখা আছে। ডাইনিং টেবিলের ডান পাশে দেওয়ালের গা ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে বেশ একটা বড় সড় বেগুনি রঙের ফ্রিজ আর তার পাশে মাইক্র ওভেন রাখা একটা স্টুলের উপর। মাইক্র অভেনের পাশে দেওয়ালের গা বরাবর দুটো কাঁচের দরজাওয়ালা বইয়ের র*্যাক আর তাতে ঠেসে ঠেসে রাখা আছে অন্তত কেয়কশ বিভিন্ন বিষয়ের বই। তিভির ডান পাশে দেওয়াল বরাবর আরেকটা শো-কেস আছে মাঝারি উচ্চতার। সেটার কাঁচের দরজার ভেতর দিয়ে দেখলাম তাতেও অনেকগুলো বই বোঝাই করা আছে। মনে মনে আমি এদের বইয়ের কালেকশানের প্রশংসা না করে পারলাম না। ড্রয়িং রুমের বিভিন্ন জায়গায় হাওয়া দেওয়ার জন্য তিন তিনটে ফ্যান ঝুলছে ওপর থেকে। তবে এই তিনটির একটিও এখন চলছে না। টিভির মাথার ওপরে দেওয়ালে একটা মাঝারি সাইজের এসি মেশিন রয়েছে। এখন সেটি চলছে। আর তাই ঘরটা বেশ ঠাণ্ডা। এসব তো গেল ভালো দিক। খারাপ দিকটা হল ড্রয়িং রুমটা আয়তনে খুব একটা বড় নয়। এই অল্প জায়গায় এত শত জিনিস বোঝাই হয়ে থাকায় মানুষের চলা ফেরার জায়গা এক্কে বাড়ে নেই বললেই চলে। ঘরটা সুন্দর ভাবে সাজানো তাতে আপত্তি নেই, কিন্তু তা সত্ত্বেও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে এই ঘরটাকে গোছানে বলতে ইচ্ছে করছে না, যে বিশেষণটা মন থেকে আসছে সেটা হল ঘিঞ্জি। ঘরের মধ্যে যদি একাধিক মানুষ থাকলে আর তার যদি একটু নড়া চড়া করে তাহলে ঘন ঘন একে ওপরের সাথে পায়ে পায়ে লাগতে বাধ্য। ঘরে একধিক বড় টিউব লাইট থাকা সত্ত্বেও এখন তার একটিও জ্বলছে না। এখন ঘরটাকে আলকিত করে রেখেছে ঘরের চার কোনায় রাখা চারটে ডিম লাইট। যদিও ডিম লাইটগুলোর আলো সাধারন ডিম লাইটের থেকে বেশী, কিন্তু তাও ঘরটায় বেশ অন্ধকার অন্ধকার ভাব। অনেক বারে যেমন আজকাল থাকে না। এরকম স্বপ্নালু আলো ছায়া ময় ব্যবস্থা রাখার কারণ বোধহয় এই যে কম আলোয় মদের নেশা চড়ে বেশী। যদিও আমরা প্রত্যেককে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি কিন্তু তবুও একটা জানি বেশ গা ছমছম করা ভাব মিশে রয়েছে এই ছায়া মাখা পরিবেশে। এইবার ঘরের পার্মানেন্ট জিনিসগুলোকে বাদ দিয়ে বাকি জিনিস গুলোর কথায় আসা যাক।
সেন্টার টেবিলটা একটু টিভির দিকে ঠেলে সরিয়ে রাখা হয়েছে, বড় সোফাটাতে বসে আছে দুজন ছেলে। একজনের পরনে জিন্স আর টিশার্ট, শরীরটা যেন মাসলের ঘর। এত পেশি বহুল ছেলে এত কাছ থেকে আগে কখনও দেখিনি। উচ্চতায় প্রায় ছ ফুট হবে। ভীষণ চওড়া ছাতি আর পেশি বহুল গায়ের ওপর চেপে বসে থাকা টি শার্টটা মানিয়েছে বেশ। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গোঁফ। বয়স ওই যে বললাম হয় আমার সমান বা আমার থেকে সামান্য বেশী। তার পাশে সোফার আরেক প্রান্তে বসে আছে আরেকটা ছেলে। স্মার্ট চেহারা। ক্লিন শেভড। পরনে দামী শার্ট আর ট্রাউজারস। শুনেছিলাম সোজা কলেজ থেকে এসেছে। তাই এই পোশাক। চোখে গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা। ঘরে ঢোকার সময় দেখলাম রমা বড় সোফাটায় এই দুজনের মাঝখানে বসেছিল। চৈতালিকে দেখে দৌড়ে উঠে এসেছে। এখনও দুজনে রমার বসার জায়গাটা খালি করে সোফার দুপাশে বসে আছে। হাহা। পেশিবহুল দানবটার নাম অর্ণব। আর তার পাশে যে বসে আছে তার নাম সৌম্য। একজন ডাইনিং টেবিলে দাঁড়িয়ে আমাদের সাদর অভ্যর্থনা জানাল। সেই পল্লব। এর চেহারাটা মনে রাখার মতন একে বারেই নয়। মনে রাখার মতন অন্য জিনিস আছে ছেলেটার, সেটার কথায় পরে আসব। প্রল্লবের পরনে একটা হাত কাটা টিসার্ট আর হাঁটু অব্দি লম্বা চাপা জিন্স। যে আমাদের নিয়ে এসেছে চেহারা মোটামুটি ভালো। নাম তাপস। আরেকজনের দেখা পেলাম একটু পরে, এই ছেলেটা আমাদের একটু আগে এসে পৌঁছেছে। ছেলেটা বাথরুমে ঢুকেছিল ফ্রেশ হতে। ছেলেটার গায়ে ফর্মাল সাদা শার্ট আর কালো ট্রাউজার্স। উচ্চতা ৫ ফিট আট ইঞ্চি হবে। গোল মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ির সমাবেশ। এ নাকি একটা প্রাইভেট কলেজে এম বি এ পড়ছে। ক্লাস থেকে সোজা চলে এসেছে। এর নাম শুনলাম শেখর। আরেকজনকে দেখলাম মোবাইলে কথা বলতে বলতে একটা ঘর থেকে বেড়িয়ে এল। “ঠিক আছে, চিন্তা করতে হবে না। ফিরতে দেরী হবে।” বলে ফোনটা কেটে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল “হাই”। এদের কেউই ঠিক ফরসা নয়। মাঝারি গায়ের রঙ যাকে বলে। কিন্তু এই ছেলেটার গায়ের রঙ যেন আফ্রিকানদের মতন কালো। বেশ শার্প চেহারা। ক্লিন শেভড, চাপা টি-শার্ট আর কালো জিন্স। এর শরীরটাও বেশ পেশিবহুল, তবে অর্ণবের মতন নয়। নাম বিশ্বরূপ, সবাই ছোট করে ডাকছে বিশু বলে, তাই আমিও এখন থেকে বিশু বলেই ডাকব। এই গেল উপস্থিত ছেলেদের বর্ণনা আর নাম। সব মিলিয়ে ছ জন পুরুস অতিথি, অর্ণব, সৌম্য, পল্লব (ইনি অবশ্য অতিথি নয়) , শেখর, তাপস, বিশু। এইবার বাকি যে পড়ে থাকে তার কথায় আসা যাক। রমা ম্যাডাম। উচ্চতা আমার সমান বা আমার থেকে সামান্য একটু বেশী হতে পারে। আচ্ছা রমা আর চৈতালি বলে ডাকতে একটু বাঁধছে। তাই রমাদি আর চৈতালি দি বলেই ডাকছি এখন থেকে। কারণ আজ রাতের পর থেকে আমি চৈতালি দি বলেই ডাকতাম আমার বারিওলি কে। ফেরা যাক রমাদির কথায়। গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ। একটু লম্বাটে মুখ, তাতে অসংখ্য ব্রণর দাগ। তবে খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে মুখে একটা চাপা লাবণ্য আছে যেটা ব্রনর দাগে ঢাকা পড়ে গেছে। সিঁথিতে ঘন লাল সিঁদুর। কপালে একটা বড় টিপ। ঠোঁটে বড্ড বেশী গাড় লাল রঙের লিপ্সটিক। চুলটা মাথার পিছনে খোপার আকারে কয়েকটা ক্লিপ দিয়ে আটকানো আছে। পরনে একটা স্বচ্ছ গাড় নীল রঙের ডিজাইনার পাতলা শাড়ি। বক্ষে একটা চাপা ম্যাচিং ব্লাউজ। এটাকে ঠিক স্লিভলেসও বলা যায় না। মানে এই ব্লাউজটার স্লিভ বলে কিছুই নেই, যেটা আছে সেটাকে বলা যায় মোটা স্ট্র্যাপ। চৈতালিদির পরা বিকিনি ব্রায়ের মতন খানিকটা। স্তন বিভাজিকার দুপাশ থেকে দুটো মোটা স্ট্র্যাপ গলার পিছনে গিয়ে হুক দিয়ে আটকানো। গোটা পিঠের শ্যামবর্ণ ত্বকটা অনাবৃত। পিঠের মাঝ বরাবর ব্লাউজের নিচের দুধার থেকে একটা সামান্য চওড়া স্ট্র্যাপ গোল হয়ে পিঠের উপর দিয়ে চলে গেছে। পিঠের ঠিক মাঝে স্ট্র্যাপের দুটো প্রান্ত হুক দিয়ে আটকানো। স্তন বিভাজিকার উপরের দিকের প্রায় দেড় ইঞ্চির মতন ব্লাউজের বাইরে গলার কাছে বেড়িয়ে রয়েছে। বেশ সেক্সি আর স্টাইলিশ বক্ষ বন্ধনী। ব্লাউজের নিচে স্বচ্ছ শাড়িতে ঢাকা অল্প চর্বি যুক্ত পেট আর তার মাঝে নাভি, না রমাদির নাভিটাকে কাব্য করে গভীর বলা যায় না। কিন্তু বেশ গোল। চৈতালিদির থেকে পেটে চর্বি একটু কম বলে মনে হল। গোল নাভিটা পেটের মাঝে মানিয়েছে ভাল। স্বচ্ছ শাড়ি পরে থাকায় এই সবই শাড়ির ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। সমস্ত হাত, কাঁধ, গলা, বগল, বগলের নিচে স্তনের মাংসল পার্শভাগ, সম্পূর্ণ পেট, আর তার মাঝে গোল নাভি, সুগভির স্তন বিভাজিকার অনেকটা উন্মুক্ত অংশ, এই সবই স্বচ্ছ শাড়ির বাইরে বা শাড়ির ভেতর দিয়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, খোলা, নগ্ন। এই ধরণের ব্লাউজ বা শাড়ি অন্য কেউ পরলে আমি হয়ত বলতাম সেক্সি লাগছে। কিন্তু ওনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক বলতে পারলাম না। ওনার শ্যাম বর্ণের চামড়ার সমস্ত জায়গায় যেন একটা গুরি গুরি রোঁয়া উঠে আছে। ঠিক মসৃণ ত্বক বলতে যা বোঝায় রমা দির ত্বক ঠিক তার উল্টো। সারা গায়ে যেন ব্রনর মতন কিছু একটা উঠে আছে বা নোংরা দাগ আছে। স্বচ্ছ নীল শারির নিচে ব্লাউজে ঢাকা বক্ষদ্বয়ের অবয়ব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শাড়ির ভেতর দিয়ে। স্তন গুলো খুব বড় নয় হয়ত কিন্তু বেশ ভারী সেটা বলে দিতে হয় না। ব্লাউজটার কাপড় বেশ নরম আর পাতলা, অন্তত দেখে তাই মনে হচ্ছিল। ভেতরে ব্রা না পরায় পাতলা কাপড়ে ঢাকা স্তনগুলে যেন একটু নিচের দিকে ঝুলে পড়েছে, আর যখন চৈতালিদিকে দেখে দৌড়ে এসেছিল স্বচ্ছ শাড়ির নিচে ওর ব্রা হীন স্তন গুলো ওর বুকে অসম্ভব অশ্লীল ভাবে ওপরে নিচে লাফাচ্ছিল সেটা আমার নজর এড়ায়নি। এমন কি হাঁটা চলার সময়ও ওর স্তন গুলো বুকের উপর ঠিক না লাফালেও, উপর নিচে বেশ থল থল করে কাঁপছিল। স্বচ্ছ শাড়ির কল্যাণে এই ব্যাপারটা আমার মতন আশা করি বাকিরাও লক্ষ্য করেছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে ওনার বেশ ভুষা ঠিক ওনার রুপ আর ত্বকের সাথে মানায় না। উনার উচিত ছিল যতটা পারা ঝায় নিজেকে ঢেকে আসা। এসেছেন ঠিক তার উল্টো ভাবে সাজগোজ করে। কিছু অশ্লীল কথা আমিও জানি তাই বলছি। কোনও ছেলে ওনাকে এই রূপে দেখলে নিশ্চই বলত যে ওনাকে এখন ঠিক একটা খানকি মাগীর মতন লাগছে। যদিও আমি আর চৈতালিদিও খানকি মাগিদের মতই শরীর প্রদর্শন করছি, কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের ফিগার ত্বক গায়ের রঙ এইসব মিলিয়ে আমাদের পোশাক আমাদের গায়ে ভালই মানিয়েছে।
ছেলে গুলো নিজেদের মধ্যে তুই তুকারি করছে, কিন্তু আমাদের তিনজনের সাথে তুমি তুমি করেই কথা বলছে। ঘরে ঢুকতেই বুঝলাম ছ জোড়া বিস্ফারিত চোখ আমাদের দুজনের শরীর বেশ ভালো করে জরিপ করে নীল। ছেলেদের চোখে যে এক্স রে লাগানো থাকে এত জানা কথা। তবে চৈতালিদির স্বচ্ছ টপ আর স্কার্টের ভেতর দিয়ে যা দেখা যাচ্ছে সেগুল দেখার জন্য এক্স রের কোনও প্রয়োজন নেই। আর আমার তো যা খোলা তা পুরোটাই খোলা। আমাদের দুজনকে বাকিদের সাথে পল্লবই আলাপ করিয়ে দিল। আমার দুজনে দুটো ছোট সোফায় গিয়ে বসলাম। আমি বসেছিলাম অর্ণবের দিকে আর সৌম্যর পাশে বসেছিলেন চৈতালিদি। পল্লব আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে অভিযোগের সুরে বলল “তোমাদের জন্য অনেক্ষন অপেক্ষা করছিলাম আমরা। শেষ মেশ ভাবলাম তোমাদের ছেড়েই আমরা শুরু করে দেব। এখন আর দেরী করে লাভ নেই। তোমরা কি খাবে? ভোদকা, স্কচ, বিয়ার সব আছে। আমাদের মধ্যে একজন হনুমান ও আছে। শুধু জিন আর টাকিলা নেই। “ হনুমান বলাতে আমি একটু আশ্চর্য হয়েছি। পরে ভেবে বুঝতে পারলাম হনুমান হল রাম ভক্ত। কে সে জানিনা , কিন্তু একজন ই আছে আমাদের মধ্যে যে রাম খাবে। আমি কিছু বলার আগেই চৈতালিদি জিজ্ঞেস করলেন “ এই তোমাদের কি স্কচ এনেছ? “ উত্তর এল তাপসের কাছ থেকে “কালা কুত্তা।” চৈতালিদি বললেন “আমি ওইটাই খাব। যদিও আমি ভোদকা খাই, তবে অনেক দিন হয়ে গেল ব্ল্যাক ডগ খাইনি। আই আম ইন।” একটু থেমে বললেন “শুধু আইস দিয়ে খাব কিন্তু। জল সোডা কিচ্ছু দেবে না। “ আমিও কোনও দিন এইটা খাইনি, চৈতালিদি মেয়ে হয়ে যখন খাচ্ছে তখন নিশ্চই খুব খারাপ খেতে হবে না। একটু এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাই যাক। যদি না পোষায় তো পরের পেগ থেকে ভোদকায় নেমে যাব। তবে যা শুনেছি বেশ দামি মদ। আমিও চৈতালিদির মতন কেত মেরে বললাম “আমিও ব্ল্যাক ডগ খাব। শুধু আইস দিয়ে। জল সোডা কিচ্ছু দেবে না।” পল্লব ভেতরে গিয়ে তাপসের জন্য হাক মারল। “আয় একটু হেল্প কর। “ সৌম্য আর অর্ণবও দেখলাম উঠে ভেতরের ঘরে চলে গেল। ওরা যা নিয়ে বেড়িয়ে এল সেটা দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। করেছে কি ছেলে গুলো। দুটো ব্ল্যাক ডগের সাড়ে সাতশর বোতল, একটা আবসলিউটের সাড়ে সাতশোর বোতল। একটা ওল্ড মঙ্কের সাড়ে সাতশোর বোতল। ওরা জিনিস গুলো টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখল। আমি না বলে পারলাম না “বাব্বা ব্ল্যাক ডগের দুটো বোতল?” পল্লব বোধহয় আমার কথাটা বুঝতে পারে নি। ও ভেবেছে আমি ভাবছি কম পড়বে। আমাকে হাতের ইশারায় বোঝাল সব ঠিক আছে। “দেখো তুমি, চৈতালিদি, আমি, শেখর, তাপস, সৌম্য, বিশু , আমরা সাত জন আছি স্কচের দলে। জানতাম স্কচের চাহিদা বেশী হয়। তাই চার বোতল এনে রেখে দিয়েছি। ভেতরে আছে, চিন্তা করতে হবে না। লাগলে বের করে ফেলব। বেশী হলে ক্ষতি নেই, যেন কম না পড়ে সেটা খেয়াল রেখেছি। ওরেঞ্জ ফ্লেভারড ভোদকার দুটো বোতল আছে। তবে এখন দেখছি মাত্র রমা দি খাবে। আর রাম খাবে হচ্ছে গিয়ে আমাদের অর্ণব বাবু। “ ব্যস হিসাব কমপ্লিট। “ আমি হেঁসে বললাম “ আমি কম পড়ার ভয় পাচ্ছি না। আমি ভাবলাম এত বেশী কে খেয়ে শেষ করবে?” বিশু বলল “ও নিয়ে ভাবতে হবে না। এখানে পিপের অভাব নেই। গল্প হবে, নাচ গান হবে মস্তি হবে আর নইলে কি করতে এলাম। ও ঠিক উঠে যাবে। “ বিশু ইঞ্জিনিয়ার। একটা প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করে এখন বাবার ব্যবসায় যোগ দিয়েছে। রমাদি আমি আর চৈতালিদি উঠে গেলাম ডাইনিং টেবিলের দিকে। ওরা পেগ বানানো আরম্ভ করে দিয়েছে আর আমরা স্ন্যাক্স গুলো ট্রে তে সাজান শুরু করলাম, বিশু একবার আমাদের কাজ করতে বাঁধা দিয়েছিল বটে তবে রমাদি বললেন “সবাই কাজ করছে আর আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব সেটা হবে না। “ উফ কি এলাহি কান্ড। আমাদের পল্লব বলে দিয়েছিল যে ডিনার বাইরে থেকে আসবে। অর্ডার দেওয়া আছে। একটু রাতের দিকে দিতে বলা হয়েছে। চিকেন, মাটন, প্রন এইগুলর কাবাব, ডিমের পাকড়া, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কিছুই বাদ নেই। চৈতালিদি একটা চিকেন কাবাব মুখে তুলে নিয়ে বলল “লা জবাব।” অর্ধেকটা নিজে খেয়ে বাকি অর্ধেকটা আমার মুখের কাছে এনে বলল “খেয়ে দেখো। “ আমি ওনার হাত থেকে মুখে নিয়ে নিলাম। সত্যি গরম গরম একদম লা জবাব। আমার কেমন জানিনা সন্দেহ হচ্ছে যে এত কিছু স্ন্যাক্স খাওয়ার পর আর ডিনার সত্যি খেতে পারব কিনা। খালি পেটে মদ খেলে চড়ে যাবে বেশী, শরীর খারাপ করতেও পারে, তাই আগেই বেশ কিছু স্ন্যাক্স সাঁটিয়ে দিতে হবে। তারপর মদ গিলব ভালো করে। আমরা সমস্ত কিছু নিয়ে সেন্ট্রাল টেবিলে নিয়ে গিয়ে সাজিয়ে রাখলাম। পল্লব বেশ কয়েকটা পেপার ন্যাপকিন এনে রেখে দিল। সত্যি গুছিয়ে ব্যবস্থা করেছে। পরে অবশ্য শুনেছিলাম যে সবাই মিলে চাদা করে এই পার্টির বন্দবস্ত করা হয়েছে। রমাদি সেই আগের মতন অর্ণব আর সৌম্যর মাঝে গিয়ে বসে পড়ল। আমি আর চৈতালিদি আগের জায়গায় বসলাম। ডাইনিং টেবিল থেকে কয়েকটা চেয়ার টেনে এনে বিশু আর শেখর আর তাপস বসে পড়ল। পল্লব অবশ্য বসল মাটিতে আমার আর শেখরের মাঝে। সবার পেগ রেডি, ঊল্লাস বলে শুরু করে দিলাম। না বেশ কড়া। কিন্তু অনেকগুল বরফ দেওয়ায় খেতে মন্দ লাগছে না। জল নেই যেহেতু সেহেতু আস্তে আস্তে চুমুক দিতে হবে তাতে সন্দেহ নেই।
আমার মাথায় সেই না বলা চিন্তাটা ছারাও আর অনেক উদ্বেগ আর কৌতূহল মাখা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আর তাই আমি গাড়িতে বসার পর অব্দি খুব একটা কোনও কথা বলিনি। উনিই নীরবতা ভাঙলেন। “টেনশান হচ্ছে? কি চুপ করে ভেবে চলেছ সেই তখন থেকে?” আমি বলেই ফেললাম সেই চেপে রাখা প্রশ্ন “আচ্ছা আপনি “ উনি স্টিয়ারিং থেকে ডান হাত টা তুলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন “ ওখানে গিয়ে আপনি আপনি করবে না, তুই, তুমি এইসব বলবে। তুই না বলতে পার তো তুমি বলবে। ওখানে আরও কেউ কেউ থাকবে। তাদের আপনি করে কথা বলতে যেও না, যদি না নেহাত কারোর হাত ধরে সংসার পাতার ইচ্ছা থাকে। মনে রাখবে আমরা সংসার বসাতে যাচ্ছি না বা প্রেমে পড়তে যাচ্ছি না। আমরা যাচ্ছি ফুর্তি করতে। ব্যস এটাই শেষ কথা।” বললাম “আপনি, মানে তুমি, অন্য ছেলে মেয়েদের সাথে ফুর্তি মানে মজা করতে যাচ্ছেন( কথার ভুল হয়েই যাচ্ছে), কিন্তু তাহলে এইভাবে ঢাক পিটিয়ে বলার কি আছে যে তুমি বিবাহিত?” উনি প্রায় হুমড়ি খেয়ে হেঁসে উঠলেন। “দূর আমি সিদুর পরে যাচ্ছি কারণ সিদুর পরলে আমার চেহারাটা খোলে। আর অন্যের বউয়ের সাথে ফ্লার্ট করতে পারছে বুঝলে ছেলেদের থেকে একটু বেশী আর কি , ওই আটেনশান পাওয়া যায়। আর আমার সেটা মন্দ লাগে না। সিঁদুরটাই তো শুধু রয়ে গেছে। আসল মানুষটাই তো আর নেই আমার জীবনে। “ একটু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন যেন। “আর তাছাড়া, ওর সিঁদুরের নাম ভাঙ্গিয়ে যদি ছেলেদের থেকে বেশী কৌতূহল আদায় করতে পারি তো মন্দ কি?” আমি কিছু কিছু বুঝলেও ঠিক পুরোটা বুঝলাম না উনি কি বলতে চাইছেন। যাকগে। বেশ সুন্দর এসি র হাওয়া খেতে খেতে যাচ্ছি। ভেতরে একটা বাংলা আধুনিক রোম্যান্টিক গান চলছে। উত্তর ২৪ পরগণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এখন। নিউ টাউন এর ভেতর দিয়ে ঢুকে রাজারহাটের রাস্তায় চলেছি। এখনও আমি ওদিকে প্রায়ই যাই কাজে, কিন্তু আজ তো যাচ্ছি ফুর্তি করতে। যখনকার কথা বলছি, তখন এই দিকটা বেশ খালি, রাস্তায় ভালো মতন আলোও নেই। আমরা চলেছি তো চলেছি। হঠাত এক জায়গায় এসে উনি কথা বললেন “মনে হয় কাছাকাছি চলে এসেছি।” আমার হুশ ফিরে এল। জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেশ কয়েকটা ফ্ল্যাট বাড়ি মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আচ্ছা এরই একটাতে যাব তাহলে। উনি আস্তে আস্তে এক একটা বাড়ির সামনে দিয়ে বাড়িগুলোর নাম পড়তে পড়তে এগিয়ে চলেছেন। “হ্যাঁ এসে গেছি।” যেটার সামনে এসে উনি কথাটা বললেন সেটাতে তখনও যে কাজ হচ্ছে সেটা দেখতে পাচ্ছি। উনি গেটের সামনে গাড়িটা থামিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে কাউকে একটা কল করলেন, আমি শুধু এইধারে ওনার কথা শুনতে পাচ্ছি। তাই এক তরফা কথাই লিখলাম। “এই চলে এসেছি আমরা। সরি রে একটু লেট হয়ে গেল। গেট দিয়ে ঢুকে যাব? কাউকে পাঠা না প্লীজ নিচে। হ্যাঁ অপেক্ষা করছি। “ ফোন টা রেখে উনি বেশ কয়েকবার জোরে জোরে হর্ন মারলেন। ভেতর থেকে গেট খুলে গেল। একজন উর্দি পরা সিকুরিটি বেড়িয়ে এসে ওনার জানলার পাশে দাঁড়াল। উনি এসি বন্ধ করে জানলার কাঁচ নামিয়ে বললেন “পলাশ সেনগুপ্ত আছেন এখানে? ওনার ফ্ল্যাটে যাব।” উনি নামানো কাঁচের মধ্যে দিয়ে আমাদের দুজনকে একবার ভালো করে মেপে নিলেন। কি কি দেখলেন সেটা ঠিক সঠিক ভাবে বলতে পারি না। একটু গলা পরিষ্কার করে বলল “দাঁড়ান আমি আগে কল করে দেখছি, তারপর যেতে দেব। “ উনি বিশাল বড় খোলা গেটটার ভেতর দিয়ে সিকুরিটির জন্য তৈরি ঘরে চলে গেলেন কাউকে কল করতে। না কল করতে হল না। দেখলাম একজন লোক, আমার থেকে বয়সটা সামান্য বেশীই হবে, ওর ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। গাড়ি গেট দিয়ে ঢুকে সিকুরিটির ঘরের সামনে দাঁড়াল, মহিলা গানের আওয়াজ কমিয়ে দিলেন। একটা পিচ বোর্ডে আটকানো খাতা সিকুরিটি মহিলার সামনে মেলে ধরলেন। তাতে কে এসেছে, কাকে দেখতে এসেছে, কখন এসেছে, কেন এসেছে, সাইন, এইসব করতে হবে। কে কে আসছে কমপ্লেক্সে সেই সবের হিসাবের খাতা। মহিলা নিজের এন্ট্রি টা করে আমার দিকে পেন সহ খাতাটা এগিয়ে দিলেন। আমিও নিজের নামের এন্ট্রি করে দিলাম। খাতাটা ফেরত চলে গেল। যে আমাদের নিতে এসেছে সে বাইরে দাঁড়িয়ে সিগারেটে খুব জোড়ে জোড়ে টান দিচ্ছে আর গোল রিং বানিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে। হুম বেশ হ্যান্ডসাম ছেলেটা। হ্যাঁ ঠিকই অনুমান করেছি বয়সটা আমার থেকে হয়ত সামান্য বেশী। একটা নীল রঙের জিন্স আর তার উপর একটা সাদা রিবক লেখা টি শার্ট। ছেলেটা জানলার ভেতর দিয়ে ভেতরে মাথা গলিয়ে আমাদের দুজনকে গুড ইভিনিং জানিয়ে কোথায় গাড়ি পার্ক করতে হবে হাত উঠিয়ে দেখিয়ে দিল। আর লোক বলছি না যে এসেছে আমাদের নিয়ে যেতে আর পরে যাদের দেখলাম এদের ঠিক লোক বলা চলে না, এদের সবারই বয়স হয় আমার সমান বা আমার থেকে সামান্য বেশী। বয়স জিজ্ঞেস করা হয়নি, তাই সঠিক ভাবে বলতে পারব না। এই ছেলেটা দেখতে বেশ কিউট।
মহিলা গাড়ি পার্ক করে নেমে পড়লেন, সেই সাথে আমিও। দেখলাম একটা বিল্ডিঙ্গে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে ছেলেটা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি গাড়ি থেকে নেমে আমার টপ আর সংক্ষিপ্ত স্কার্টটা একটু ঠিক করে নিলাম। মহিলার পেছন পেছন ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। “এস” ছেলেটা আমাদের নিয়ে বিল্ডিঙ্গের ভেতরে ঢুকে গেল। লিফট আছে। ঢুকে গেলাম লিফটে। ছেলেটা আমাদের আগে ঢুকতে দিয়ে সব শেষে নিজে লিফটের ভেতরে প্রবেশ করল। লিফটটা বেশ বড়, কিন্তু তবু কেন জানি না ছেলেটা আমাদের বেশ গায়ের সাথে ঘেসে এসে দাঁড়াল। “চিনতে অসুবিধা হয় নি তো?” মহিলা বললেন “একদম না। তুমি ই পল্লব?” বলল “ না ও ওপরে আছে। আসর জমতে সবে শুরু করেছে। তবে তোমরাই সবথেকে লেট। “ বুঝতে পারলাম আমি যার সাথে এসেছি তিনি অন্তত এই ছেলেটিকে আর যার ফ্ল্যাটে যাচ্ছি মানে পল্লব নামক ছেলেটাকে চেনেন না। মহিলা আস্তে করে জবাব দিলেন “সরি। আসলে বেরোতে বেরোতে দেরী হয়ে গেছে। “ আমরা সাত তলায় যাচ্ছি। লিফটটা এসে থামাতে আমরা নেমে গিয়ে একটা দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দরজাটা খোলাই ছিল। আমরা ওই ছেলেটার পেছন পেছন ঢুকে পড়লাম। খুব বড় ফ্ল্যাট নয়। সবাই ড্রয়িং রুমেই বসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। “কেমন আছিস” বলে এক মহিলা দৌড়ে এসে আমার বারিওলিকে জড়িয়ে ধরল। দুজনেরই বয়স মোটামুটি এক। বুঝলাম ইনিই সেই বন্ধু। ওনার নাম রমা। আমার বাড়িঅলির নাম এখন বলছি, কারণ নইলে লিখতে অসুবিধা হচ্ছে। ওনার নাম চৈতালি। এখন থেকে দুজনকেই নাম ধরে ডাকব। কারণ বাকিরা সবাই ওনাদের দুজনকে নাম ধরেই ডাকছে। রমা নামক ভদ্রমহিলাটির বর্ণনা দেওয়ার আগে যেখানে এসেছি আর ফ্ল্যাটে ঢোকার পর যা দেখছি সেটা আগে বলে নি। ফ্ল্যাট টা খুব বড় না হলেও কোনও বড়লোকের সেটা কয়েকটা জিনিস দেখে অনুমান করে নিতে অসুবিধা হয় না। ফ্ল্যাটটা পল্লবের বাবার। পরে শুনেছিলাম পল্লবের বাবা এখন পল্লবের মার সাথে কুয়েতে কোনও বড় অয়েল কোম্পানিতে কাজ করেন। ছেলে কলকাতায় থেকে পড়াশুনা করছে। ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুম টা খুব বড় নয়। মেঝে ঝকঝকে মার্বেলের। দরজা দিয়ে ঢুকেই বাদিকে একটা শুর*্যাক। শুর*্যাকটার একটা কপাট খুলে রাখা আছে, আর ভেতরে সাত থেকে আট জনের মতন চটি জুতো রাখার জায়গা আছে। মনে হয় যারা আজকের রাতের অতিথি তারা যাতে সেই খালি জায়গায় নিজেদের পরে আসা চটি বা জুতো রাখতে পারে তাই একটা কপাট খুলে রাখা হয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হল এই যে যারা এসেছে কেউই শু র*্যাকে নিজেদের চটি বা জুতো গুছিয়ে রাখেনি। শুর*্যাকের সামনে অগোছালো ভাবে ফেলে রেখেছে। দেওয়ালের রঙ হালকা গোলাপি। দরজার ঠিক ডান দিকে দেওয়ালের গা ঘেসে একটা বিশাল বড় ফ্ল্যাট টিভি রাখা আছে একটা মাঝারি উচ্চতার কাপড়ে ঢাকা টেবিলের উপর। টেবিলের দুপাশে দুটো লম্বা লম্বা স্পীকার মেঝের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। টিভি টা যে টেবিলের ওপর রাখা সেই কাপড়ে ঢাকা টেবিলটার বেশ কয়েকটা ধাপের মধ্যে একটা ধাপের মধ্যে স্পীকারের উফারটা রাখা। এরকম স্পীকার আমি বাপের জন্মে দেখিনি। টিভিটা দেখে মনে হল হালে কেনা। টিভির ঠিক সামনে মানে ড্রয়িং রুমের মাঝ বরাবর একটা কাঁচের মাঝারি সাইজের নিচু সেন্ট্রাল টেবিল আর তাকে ঘিরে তিনটে বেশ অত্যাধুনিক সোফাসেট। টেবিলের পিছনে মানে টিভির মুখোমুখি যে সোফাটা আছে সেটাই সবথেকে বড়, মানে তিনজনের বসার পক্ষে যথেষ্ট। আর টেবিলের দুধারে যে সোফা দুটো আছে তাতে একজন করে বসতে পারে। বড় সোফাটার একটু পিছনে দেওয়ালের শুরু, আর তার বাদিকে রান্নাঘরের দরজা। আর রান্নাঘরের পাশে একটা বাথরুম। রান্নাঘর আর বাথরুম দুটোই অত্যাধুনিক সব জিনিসে সাজানো, কিন্তু না বলে থাকতে পারছি না যে এই দুটো ঘরই ভীষণ ছোট। ফ্ল্যাট বাড়িগুলোর এই এক প্রবলেম। কিচেন আর বাথরুম ছোট ছোট হয়। বড় সোফাটার পিছনে ডান দিকে একটা ইয়া বড় ডাইনিং টেবিল। টেবিলের চারপাশে আটটা কাঠের চেয়ার কভার পরিয়ে সুন্দর ভাবে রাখা আছে। ডাইনিং টেবিলের ডান পাশে দেওয়ালের গা ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে বেশ একটা বড় সড় বেগুনি রঙের ফ্রিজ আর তার পাশে মাইক্র ওভেন রাখা একটা স্টুলের উপর। মাইক্র অভেনের পাশে দেওয়ালের গা বরাবর দুটো কাঁচের দরজাওয়ালা বইয়ের র*্যাক আর তাতে ঠেসে ঠেসে রাখা আছে অন্তত কেয়কশ বিভিন্ন বিষয়ের বই। তিভির ডান পাশে দেওয়াল বরাবর আরেকটা শো-কেস আছে মাঝারি উচ্চতার। সেটার কাঁচের দরজার ভেতর দিয়ে দেখলাম তাতেও অনেকগুলো বই বোঝাই করা আছে। মনে মনে আমি এদের বইয়ের কালেকশানের প্রশংসা না করে পারলাম না। ড্রয়িং রুমের বিভিন্ন জায়গায় হাওয়া দেওয়ার জন্য তিন তিনটে ফ্যান ঝুলছে ওপর থেকে। তবে এই তিনটির একটিও এখন চলছে না। টিভির মাথার ওপরে দেওয়ালে একটা মাঝারি সাইজের এসি মেশিন রয়েছে। এখন সেটি চলছে। আর তাই ঘরটা বেশ ঠাণ্ডা। এসব তো গেল ভালো দিক। খারাপ দিকটা হল ড্রয়িং রুমটা আয়তনে খুব একটা বড় নয়। এই অল্প জায়গায় এত শত জিনিস বোঝাই হয়ে থাকায় মানুষের চলা ফেরার জায়গা এক্কে বাড়ে নেই বললেই চলে। ঘরটা সুন্দর ভাবে সাজানো তাতে আপত্তি নেই, কিন্তু তা সত্ত্বেও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে এই ঘরটাকে গোছানে বলতে ইচ্ছে করছে না, যে বিশেষণটা মন থেকে আসছে সেটা হল ঘিঞ্জি। ঘরের মধ্যে যদি একাধিক মানুষ থাকলে আর তার যদি একটু নড়া চড়া করে তাহলে ঘন ঘন একে ওপরের সাথে পায়ে পায়ে লাগতে বাধ্য। ঘরে একধিক বড় টিউব লাইট থাকা সত্ত্বেও এখন তার একটিও জ্বলছে না। এখন ঘরটাকে আলকিত করে রেখেছে ঘরের চার কোনায় রাখা চারটে ডিম লাইট। যদিও ডিম লাইটগুলোর আলো সাধারন ডিম লাইটের থেকে বেশী, কিন্তু তাও ঘরটায় বেশ অন্ধকার অন্ধকার ভাব। অনেক বারে যেমন আজকাল থাকে না। এরকম স্বপ্নালু আলো ছায়া ময় ব্যবস্থা রাখার কারণ বোধহয় এই যে কম আলোয় মদের নেশা চড়ে বেশী। যদিও আমরা প্রত্যেককে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি কিন্তু তবুও একটা জানি বেশ গা ছমছম করা ভাব মিশে রয়েছে এই ছায়া মাখা পরিবেশে। এইবার ঘরের পার্মানেন্ট জিনিসগুলোকে বাদ দিয়ে বাকি জিনিস গুলোর কথায় আসা যাক।
সেন্টার টেবিলটা একটু টিভির দিকে ঠেলে সরিয়ে রাখা হয়েছে, বড় সোফাটাতে বসে আছে দুজন ছেলে। একজনের পরনে জিন্স আর টিশার্ট, শরীরটা যেন মাসলের ঘর। এত পেশি বহুল ছেলে এত কাছ থেকে আগে কখনও দেখিনি। উচ্চতায় প্রায় ছ ফুট হবে। ভীষণ চওড়া ছাতি আর পেশি বহুল গায়ের ওপর চেপে বসে থাকা টি শার্টটা মানিয়েছে বেশ। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গোঁফ। বয়স ওই যে বললাম হয় আমার সমান বা আমার থেকে সামান্য বেশী। তার পাশে সোফার আরেক প্রান্তে বসে আছে আরেকটা ছেলে। স্মার্ট চেহারা। ক্লিন শেভড। পরনে দামী শার্ট আর ট্রাউজারস। শুনেছিলাম সোজা কলেজ থেকে এসেছে। তাই এই পোশাক। চোখে গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা। ঘরে ঢোকার সময় দেখলাম রমা বড় সোফাটায় এই দুজনের মাঝখানে বসেছিল। চৈতালিকে দেখে দৌড়ে উঠে এসেছে। এখনও দুজনে রমার বসার জায়গাটা খালি করে সোফার দুপাশে বসে আছে। হাহা। পেশিবহুল দানবটার নাম অর্ণব। আর তার পাশে যে বসে আছে তার নাম সৌম্য। একজন ডাইনিং টেবিলে দাঁড়িয়ে আমাদের সাদর অভ্যর্থনা জানাল। সেই পল্লব। এর চেহারাটা মনে রাখার মতন একে বারেই নয়। মনে রাখার মতন অন্য জিনিস আছে ছেলেটার, সেটার কথায় পরে আসব। প্রল্লবের পরনে একটা হাত কাটা টিসার্ট আর হাঁটু অব্দি লম্বা চাপা জিন্স। যে আমাদের নিয়ে এসেছে চেহারা মোটামুটি ভালো। নাম তাপস। আরেকজনের দেখা পেলাম একটু পরে, এই ছেলেটা আমাদের একটু আগে এসে পৌঁছেছে। ছেলেটা বাথরুমে ঢুকেছিল ফ্রেশ হতে। ছেলেটার গায়ে ফর্মাল সাদা শার্ট আর কালো ট্রাউজার্স। উচ্চতা ৫ ফিট আট ইঞ্চি হবে। গোল মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ির সমাবেশ। এ নাকি একটা প্রাইভেট কলেজে এম বি এ পড়ছে। ক্লাস থেকে সোজা চলে এসেছে। এর নাম শুনলাম শেখর। আরেকজনকে দেখলাম মোবাইলে কথা বলতে বলতে একটা ঘর থেকে বেড়িয়ে এল। “ঠিক আছে, চিন্তা করতে হবে না। ফিরতে দেরী হবে।” বলে ফোনটা কেটে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল “হাই”। এদের কেউই ঠিক ফরসা নয়। মাঝারি গায়ের রঙ যাকে বলে। কিন্তু এই ছেলেটার গায়ের রঙ যেন আফ্রিকানদের মতন কালো। বেশ শার্প চেহারা। ক্লিন শেভড, চাপা টি-শার্ট আর কালো জিন্স। এর শরীরটাও বেশ পেশিবহুল, তবে অর্ণবের মতন নয়। নাম বিশ্বরূপ, সবাই ছোট করে ডাকছে বিশু বলে, তাই আমিও এখন থেকে বিশু বলেই ডাকব। এই গেল উপস্থিত ছেলেদের বর্ণনা আর নাম। সব মিলিয়ে ছ জন পুরুস অতিথি, অর্ণব, সৌম্য, পল্লব (ইনি অবশ্য অতিথি নয়) , শেখর, তাপস, বিশু। এইবার বাকি যে পড়ে থাকে তার কথায় আসা যাক। রমা ম্যাডাম। উচ্চতা আমার সমান বা আমার থেকে সামান্য একটু বেশী হতে পারে। আচ্ছা রমা আর চৈতালি বলে ডাকতে একটু বাঁধছে। তাই রমাদি আর চৈতালি দি বলেই ডাকছি এখন থেকে। কারণ আজ রাতের পর থেকে আমি চৈতালি দি বলেই ডাকতাম আমার বারিওলি কে। ফেরা যাক রমাদির কথায়। গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ। একটু লম্বাটে মুখ, তাতে অসংখ্য ব্রণর দাগ। তবে খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে মুখে একটা চাপা লাবণ্য আছে যেটা ব্রনর দাগে ঢাকা পড়ে গেছে। সিঁথিতে ঘন লাল সিঁদুর। কপালে একটা বড় টিপ। ঠোঁটে বড্ড বেশী গাড় লাল রঙের লিপ্সটিক। চুলটা মাথার পিছনে খোপার আকারে কয়েকটা ক্লিপ দিয়ে আটকানো আছে। পরনে একটা স্বচ্ছ গাড় নীল রঙের ডিজাইনার পাতলা শাড়ি। বক্ষে একটা চাপা ম্যাচিং ব্লাউজ। এটাকে ঠিক স্লিভলেসও বলা যায় না। মানে এই ব্লাউজটার স্লিভ বলে কিছুই নেই, যেটা আছে সেটাকে বলা যায় মোটা স্ট্র্যাপ। চৈতালিদির পরা বিকিনি ব্রায়ের মতন খানিকটা। স্তন বিভাজিকার দুপাশ থেকে দুটো মোটা স্ট্র্যাপ গলার পিছনে গিয়ে হুক দিয়ে আটকানো। গোটা পিঠের শ্যামবর্ণ ত্বকটা অনাবৃত। পিঠের মাঝ বরাবর ব্লাউজের নিচের দুধার থেকে একটা সামান্য চওড়া স্ট্র্যাপ গোল হয়ে পিঠের উপর দিয়ে চলে গেছে। পিঠের ঠিক মাঝে স্ট্র্যাপের দুটো প্রান্ত হুক দিয়ে আটকানো। স্তন বিভাজিকার উপরের দিকের প্রায় দেড় ইঞ্চির মতন ব্লাউজের বাইরে গলার কাছে বেড়িয়ে রয়েছে। বেশ সেক্সি আর স্টাইলিশ বক্ষ বন্ধনী। ব্লাউজের নিচে স্বচ্ছ শাড়িতে ঢাকা অল্প চর্বি যুক্ত পেট আর তার মাঝে নাভি, না রমাদির নাভিটাকে কাব্য করে গভীর বলা যায় না। কিন্তু বেশ গোল। চৈতালিদির থেকে পেটে চর্বি একটু কম বলে মনে হল। গোল নাভিটা পেটের মাঝে মানিয়েছে ভাল। স্বচ্ছ শাড়ি পরে থাকায় এই সবই শাড়ির ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। সমস্ত হাত, কাঁধ, গলা, বগল, বগলের নিচে স্তনের মাংসল পার্শভাগ, সম্পূর্ণ পেট, আর তার মাঝে গোল নাভি, সুগভির স্তন বিভাজিকার অনেকটা উন্মুক্ত অংশ, এই সবই স্বচ্ছ শাড়ির বাইরে বা শাড়ির ভেতর দিয়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, খোলা, নগ্ন। এই ধরণের ব্লাউজ বা শাড়ি অন্য কেউ পরলে আমি হয়ত বলতাম সেক্সি লাগছে। কিন্তু ওনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক বলতে পারলাম না। ওনার শ্যাম বর্ণের চামড়ার সমস্ত জায়গায় যেন একটা গুরি গুরি রোঁয়া উঠে আছে। ঠিক মসৃণ ত্বক বলতে যা বোঝায় রমা দির ত্বক ঠিক তার উল্টো। সারা গায়ে যেন ব্রনর মতন কিছু একটা উঠে আছে বা নোংরা দাগ আছে। স্বচ্ছ নীল শারির নিচে ব্লাউজে ঢাকা বক্ষদ্বয়ের অবয়ব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শাড়ির ভেতর দিয়ে। স্তন গুলো খুব বড় নয় হয়ত কিন্তু বেশ ভারী সেটা বলে দিতে হয় না। ব্লাউজটার কাপড় বেশ নরম আর পাতলা, অন্তত দেখে তাই মনে হচ্ছিল। ভেতরে ব্রা না পরায় পাতলা কাপড়ে ঢাকা স্তনগুলে যেন একটু নিচের দিকে ঝুলে পড়েছে, আর যখন চৈতালিদিকে দেখে দৌড়ে এসেছিল স্বচ্ছ শাড়ির নিচে ওর ব্রা হীন স্তন গুলো ওর বুকে অসম্ভব অশ্লীল ভাবে ওপরে নিচে লাফাচ্ছিল সেটা আমার নজর এড়ায়নি। এমন কি হাঁটা চলার সময়ও ওর স্তন গুলো বুকের উপর ঠিক না লাফালেও, উপর নিচে বেশ থল থল করে কাঁপছিল। স্বচ্ছ শাড়ির কল্যাণে এই ব্যাপারটা আমার মতন আশা করি বাকিরাও লক্ষ্য করেছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে ওনার বেশ ভুষা ঠিক ওনার রুপ আর ত্বকের সাথে মানায় না। উনার উচিত ছিল যতটা পারা ঝায় নিজেকে ঢেকে আসা। এসেছেন ঠিক তার উল্টো ভাবে সাজগোজ করে। কিছু অশ্লীল কথা আমিও জানি তাই বলছি। কোনও ছেলে ওনাকে এই রূপে দেখলে নিশ্চই বলত যে ওনাকে এখন ঠিক একটা খানকি মাগীর মতন লাগছে। যদিও আমি আর চৈতালিদিও খানকি মাগিদের মতই শরীর প্রদর্শন করছি, কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের ফিগার ত্বক গায়ের রঙ এইসব মিলিয়ে আমাদের পোশাক আমাদের গায়ে ভালই মানিয়েছে।
ছেলে গুলো নিজেদের মধ্যে তুই তুকারি করছে, কিন্তু আমাদের তিনজনের সাথে তুমি তুমি করেই কথা বলছে। ঘরে ঢুকতেই বুঝলাম ছ জোড়া বিস্ফারিত চোখ আমাদের দুজনের শরীর বেশ ভালো করে জরিপ করে নীল। ছেলেদের চোখে যে এক্স রে লাগানো থাকে এত জানা কথা। তবে চৈতালিদির স্বচ্ছ টপ আর স্কার্টের ভেতর দিয়ে যা দেখা যাচ্ছে সেগুল দেখার জন্য এক্স রের কোনও প্রয়োজন নেই। আর আমার তো যা খোলা তা পুরোটাই খোলা। আমাদের দুজনকে বাকিদের সাথে পল্লবই আলাপ করিয়ে দিল। আমার দুজনে দুটো ছোট সোফায় গিয়ে বসলাম। আমি বসেছিলাম অর্ণবের দিকে আর সৌম্যর পাশে বসেছিলেন চৈতালিদি। পল্লব আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে অভিযোগের সুরে বলল “তোমাদের জন্য অনেক্ষন অপেক্ষা করছিলাম আমরা। শেষ মেশ ভাবলাম তোমাদের ছেড়েই আমরা শুরু করে দেব। এখন আর দেরী করে লাভ নেই। তোমরা কি খাবে? ভোদকা, স্কচ, বিয়ার সব আছে। আমাদের মধ্যে একজন হনুমান ও আছে। শুধু জিন আর টাকিলা নেই। “ হনুমান বলাতে আমি একটু আশ্চর্য হয়েছি। পরে ভেবে বুঝতে পারলাম হনুমান হল রাম ভক্ত। কে সে জানিনা , কিন্তু একজন ই আছে আমাদের মধ্যে যে রাম খাবে। আমি কিছু বলার আগেই চৈতালিদি জিজ্ঞেস করলেন “ এই তোমাদের কি স্কচ এনেছ? “ উত্তর এল তাপসের কাছ থেকে “কালা কুত্তা।” চৈতালিদি বললেন “আমি ওইটাই খাব। যদিও আমি ভোদকা খাই, তবে অনেক দিন হয়ে গেল ব্ল্যাক ডগ খাইনি। আই আম ইন।” একটু থেমে বললেন “শুধু আইস দিয়ে খাব কিন্তু। জল সোডা কিচ্ছু দেবে না। “ আমিও কোনও দিন এইটা খাইনি, চৈতালিদি মেয়ে হয়ে যখন খাচ্ছে তখন নিশ্চই খুব খারাপ খেতে হবে না। একটু এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাই যাক। যদি না পোষায় তো পরের পেগ থেকে ভোদকায় নেমে যাব। তবে যা শুনেছি বেশ দামি মদ। আমিও চৈতালিদির মতন কেত মেরে বললাম “আমিও ব্ল্যাক ডগ খাব। শুধু আইস দিয়ে। জল সোডা কিচ্ছু দেবে না।” পল্লব ভেতরে গিয়ে তাপসের জন্য হাক মারল। “আয় একটু হেল্প কর। “ সৌম্য আর অর্ণবও দেখলাম উঠে ভেতরের ঘরে চলে গেল। ওরা যা নিয়ে বেড়িয়ে এল সেটা দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। করেছে কি ছেলে গুলো। দুটো ব্ল্যাক ডগের সাড়ে সাতশর বোতল, একটা আবসলিউটের সাড়ে সাতশোর বোতল। একটা ওল্ড মঙ্কের সাড়ে সাতশোর বোতল। ওরা জিনিস গুলো টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখল। আমি না বলে পারলাম না “বাব্বা ব্ল্যাক ডগের দুটো বোতল?” পল্লব বোধহয় আমার কথাটা বুঝতে পারে নি। ও ভেবেছে আমি ভাবছি কম পড়বে। আমাকে হাতের ইশারায় বোঝাল সব ঠিক আছে। “দেখো তুমি, চৈতালিদি, আমি, শেখর, তাপস, সৌম্য, বিশু , আমরা সাত জন আছি স্কচের দলে। জানতাম স্কচের চাহিদা বেশী হয়। তাই চার বোতল এনে রেখে দিয়েছি। ভেতরে আছে, চিন্তা করতে হবে না। লাগলে বের করে ফেলব। বেশী হলে ক্ষতি নেই, যেন কম না পড়ে সেটা খেয়াল রেখেছি। ওরেঞ্জ ফ্লেভারড ভোদকার দুটো বোতল আছে। তবে এখন দেখছি মাত্র রমা দি খাবে। আর রাম খাবে হচ্ছে গিয়ে আমাদের অর্ণব বাবু। “ ব্যস হিসাব কমপ্লিট। “ আমি হেঁসে বললাম “ আমি কম পড়ার ভয় পাচ্ছি না। আমি ভাবলাম এত বেশী কে খেয়ে শেষ করবে?” বিশু বলল “ও নিয়ে ভাবতে হবে না। এখানে পিপের অভাব নেই। গল্প হবে, নাচ গান হবে মস্তি হবে আর নইলে কি করতে এলাম। ও ঠিক উঠে যাবে। “ বিশু ইঞ্জিনিয়ার। একটা প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করে এখন বাবার ব্যবসায় যোগ দিয়েছে। রমাদি আমি আর চৈতালিদি উঠে গেলাম ডাইনিং টেবিলের দিকে। ওরা পেগ বানানো আরম্ভ করে দিয়েছে আর আমরা স্ন্যাক্স গুলো ট্রে তে সাজান শুরু করলাম, বিশু একবার আমাদের কাজ করতে বাঁধা দিয়েছিল বটে তবে রমাদি বললেন “সবাই কাজ করছে আর আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব সেটা হবে না। “ উফ কি এলাহি কান্ড। আমাদের পল্লব বলে দিয়েছিল যে ডিনার বাইরে থেকে আসবে। অর্ডার দেওয়া আছে। একটু রাতের দিকে দিতে বলা হয়েছে। চিকেন, মাটন, প্রন এইগুলর কাবাব, ডিমের পাকড়া, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কিছুই বাদ নেই। চৈতালিদি একটা চিকেন কাবাব মুখে তুলে নিয়ে বলল “লা জবাব।” অর্ধেকটা নিজে খেয়ে বাকি অর্ধেকটা আমার মুখের কাছে এনে বলল “খেয়ে দেখো। “ আমি ওনার হাত থেকে মুখে নিয়ে নিলাম। সত্যি গরম গরম একদম লা জবাব। আমার কেমন জানিনা সন্দেহ হচ্ছে যে এত কিছু স্ন্যাক্স খাওয়ার পর আর ডিনার সত্যি খেতে পারব কিনা। খালি পেটে মদ খেলে চড়ে যাবে বেশী, শরীর খারাপ করতেও পারে, তাই আগেই বেশ কিছু স্ন্যাক্স সাঁটিয়ে দিতে হবে। তারপর মদ গিলব ভালো করে। আমরা সমস্ত কিছু নিয়ে সেন্ট্রাল টেবিলে নিয়ে গিয়ে সাজিয়ে রাখলাম। পল্লব বেশ কয়েকটা পেপার ন্যাপকিন এনে রেখে দিল। সত্যি গুছিয়ে ব্যবস্থা করেছে। পরে অবশ্য শুনেছিলাম যে সবাই মিলে চাদা করে এই পার্টির বন্দবস্ত করা হয়েছে। রমাদি সেই আগের মতন অর্ণব আর সৌম্যর মাঝে গিয়ে বসে পড়ল। আমি আর চৈতালিদি আগের জায়গায় বসলাম। ডাইনিং টেবিল থেকে কয়েকটা চেয়ার টেনে এনে বিশু আর শেখর আর তাপস বসে পড়ল। পল্লব অবশ্য বসল মাটিতে আমার আর শেখরের মাঝে। সবার পেগ রেডি, ঊল্লাস বলে শুরু করে দিলাম। না বেশ কড়া। কিন্তু অনেকগুল বরফ দেওয়ায় খেতে মন্দ লাগছে না। জল নেই যেহেতু সেহেতু আস্তে আস্তে চুমুক দিতে হবে তাতে সন্দেহ নেই।