18-10-2019, 02:03 PM
পরের পর্ব
“এটাতে আমি থাকি। আর “ পাশের ঘরের দরজাটা খুলে আমাকে বললেন “ভেতরে এস। এটা ঠিক করেছি পেয়িং গেস্টকে ভাড়া দেব। “ বাপরে সত্যি সুন্দর। ওয়ারড্রব, একটা ডবল বেড, এসি, একটা ছোট ড্রয়ার ওয়ালা ড্রেসিং টেবিল, পড়ার টেবিল, তাতে আবার টেবিল ল্যাম্প আছে, তিনটে চেয়ার। ও হ্যাঁ ভুললে চলবে কেন বিছানার একদিকে একটা ছোট স্টুল মতন আছে যার ওপর একটা স্টাডি ল্যাম্প আছে। শালা এই ঘরের ভাড়া দিতে হলে আমার কিডনি বেচে দিতে হবে। “আচ্ছা তোমার এখানে আরেকটা সুবিধা আছে। এটা দোতলার এক প্রান্তে বলে এখানে একটা অ্যাটাচড বাথরুম আছে। আসলে এটা ছিল আমার আর আমার হাজবেন্ডের ঘর। তাই বাথরুমটা “ খেয়াল করিনি আগে, ঘরের পেছনের দিকে একটা ছোট দরজা ছিল। উনি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। সুন্দর সাজানো বাথরুম। শাওয়ার, বেসিন, কমোড, জামা ঝোলানোর হ্যাঙ্গার, আয়না, বালতি, মগ, ট্যাপ আর তার সাথে গিজার কিছুই বাদ নেই। তবে হ্যাঁ জায়গা বেশ কম। “তোমার প্রাইভেসির কোনও অসুবিধা হবে না। পেয়িং গেস্ট রাখতে হলে অনেক সময় তারা প্রাইভেসি নিয়ে চিন্তিত থাকে। তাই এই ঘরটাই ভাড়া দেব ঠিক করেছি। আমরা দোতলার অন্য দিকের বাথরুমটা ব্যবহার করব। বাথরুমে কোনও সমস্যা হলে , মানে জলের সমস্যা হলে বা কোনও রকম সমস্যা হলে তুমি অবশ্যই ওই মাষ্টার বাথরুমটা ব্যবহার করতে পার। “ আমি অনেকক্ষণ ধরে ঘরের সব জায়গায় চোখ বুলিয়ে নিলাম। ও হ্যাঁ একটা জিনিস তো বলতে ভুলে গেলাম ড্রেসিং টেবিলের পাশে একটা আধুনিক মিউজিক সিস্টেমও আছে। আমি ওটার দিকে তাকিয়ে আছি দেখে বললেন “ ওটা চাইলে ব্যবহার করতে পার তুমি। ছেলেদের ঘরে আলাদা ব্যবস্থা আছে। আমার ঘরেও আছে। এস। “ আমরা ওনার পিছন পিছন নিচে নেমে এলাম। নিচের কিচেনের পাশে বাথরুমটার সামনে দেখলাম একটা অয়াশিং মেশিন আছে আর তারপাশে পরিত্যক্ত জামা কাপড় রাখার একটা জায়গা। “অয়াশিং মেশিন আছে। চাইলে ব্যবহার করতে পার। এস। “
আমরা আবার সোফায় ফিরে গিয়ে বসলাম। “তোমার বয় ফ্রেন্ড আছে?” আচমকা এই প্রশ্নে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। একটু সামলে নিয়ে বললাম “হ্যাঁ বিয়ে ঠিক হয়ে আছে মোটামুটি। “ বললেন “এখানে কিন্তু নিয়ে আসতে পারবে না। “ আমি হেঁসে বললাম “না না সেই চিন্তা নেই। ও এখন বাইরে ইন্টার্ন করছে। আমি এখানে। ইন্টার্ন শেষ হলে আমরা দিল্লী চলে যাব মাস্টার্স করতে। “ ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গেছি, আমার মাস্টার্সের ব্যাপারটা পাকাপাকি হয়ে গেছে। “তাই এক কয়েক মাসের জন্য এরকম একটা বাড়ি খুঁজছিলাম। “ মহিলা বললেন “ আমরা খুব ছিম ছাম খাবার খাই। আগে জানিয়ে রাখা ভালো। তুমি কি রুটি খাও না ভাত?” আমি বললাম “আমি ভাতই খাই। “ বললেন “খুব ভালো। তবে রুটি খেতে চাইলে আগে থেকে জানিয়ে রাখলেই হবে। আর বাকি কথা পরে বললেও চলবে। “ দালালটা এইবার প্রথমবার মুখ খুলল। “তো ম্যাডাম, ভাড়ার ব্যাপারটা একটু পাকাপাকি করে নেওয়া ভালো এইবার। “ উনি বললেন “আমি ঠিক করেছি মাসে ৪৫০০ টাকা ভাড়া নেব। অয়াশিং মেশিন ব্যবহার করলে আরেক্তু বেশী লাগবে। “ একটা কথা বলে রাখি, এখন নিউ টাউনের দিকে মোটামুটি ভদ্র পেয়িং গেস্টের ভাড়া ৪৫০০ টাকা। উনি একটু বেশী চেয়েছেন যেই সময়ের কথা বলছি সেই সময়ের হিসাবে। আমি বললাম “ম্যাম, ঘরটা দেখে সত্যি ভালো লেগেছে, কিন্তু বুঝতেই পারছেন স্ট্রাইপ এন্ডে মাসে ৪৫০০ টাকা দেওয়াটা বেশ মুশকিল হয়ে যাবে। আর তাছাড়া, আমার এ সি বা ওইয়াশিং মেশিন লাগবে না। উনি বললেন, সারাদিন আমাদের বাড়িতে প্রায় এসি চলে না। রাতে আমি ১ থেকে দেড় ঘণ্টার বেশী চালাই না। আমার ছেলেদের ঘরেও যতদূর জানি এক ঘণ্টার বেশী চলে না, কারণ আমার ছোট ছেলের ঠাণ্ডা লাগার বাতিক আছে। আর বড় ছেলেও একটু শীত কাতুরে, ও এসি সহ্য করতে পারে না। তাই এসি তে এমন কিছু বিল উঠবে না। কিন্তু ভেবে দেখ, ঠাণ্ডা পড়লে গিজার পাবে। বাথরুমটাও তোমার নিজস্ব। “ আমি কি বলব ভেবে পেলাম না। জিজ্ঞেস করলাম আর আডভান্সের টাকাটা। বললেন “ সেটা না হয় ছেড়েই দিলাম। তবে দালালির টাকাটা তুমি দিয়ে দিও। দুমাসের ভাড়া। “ আমি বললাম “আমাকে দুদিন একটু ভাবার সময় দিন। তারপর ওনাকে আমি জানিয়ে দিচ্ছি।“ আমি তখন মনে মনে অনেক গুলো হিসাব কষতে শুরু করে দিয়েছি। ভদ্র মহিলাকে বাইরে থেকে দেখে বেশ ভালো লেগেছে। যদিও ওনার হাঁড়ির খবর শুনলে পাগল হয়ে যাবেন। আমার কপালেই এইসব জোটে। কিন্তু তখন তো আর বুঝিনি। ওখানে থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে এসে আমি ভদ্রলোককে বললাম “ঠিক আছে , আমাকে একদিন একটু ভাবতে দিন। আমি কাল আপনাকে জানাচ্ছি। “ উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন “আপনি কোথাও যাবেন, মানে আপনাকে কোথাও নামিয়ে দেব?” আমি বললাম “ আমি একটু অমুক ব্যাঙ্কে যাব। কিছু কাজ আছে। “ বলল “চলে আসুন নামিয়ে দিচ্ছি। তবে বাড়িটা ভালো। “ ব্যঙ্কে গেলাম নিজের চোখে আকাউন্টের হিসাব দেখার জন্য। অবশ্য এটিএমেও গেলে চলত। তাও একটু খতিয়ে সব কিছু বোঝা দরকার। পাশ বুক আপডেট করার পর আমার মাথাটা বো করে ঘুরে গেল। প্রতি মাসে মাসে ওই সাড়ে উনিশ লাখ থেকে ১৫ হাজার টাকার কাছাকাছি পড়ছে। আর তাছাড়া আরেকটা যে এফ ডি আছে সেটা থেকেও মাসে মাসে হাজার আটেক টাকা পড়ে। আমার বাবাকে মনে মনে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না। আসলে এতদিন যাবত আমার ঠিক যেটুকু দরকার সেতুকু উঠিয়েছি। তেমন ভাবে খতিয়ে দেখিনি। কেন দেখিনি বলতে পারব না। আর রাহুল কাকুকেও ধন্যবাদ না জানিয়ে পারলাম না। শেষ কয়েক মাস ধরে এই টাকাগুলো জমা পড়েছে। ওই আট হাজার টাকা থেকেই আমার মোটামুটি চলে যায়। কারণ আমার স্ট্রাইপএন্ডও মোটামুটি এই রকমই । এখন অবশ্য ইন্টারেস্ট রেট ফল করেছে। তাই আগে ভাগে বলে রাখলাম যে আমি সেই সময়ের কথা বলছি। আমার বেড়িয়ে আসতে একটু সময় লাগল কারণ একজন ম্যানেজার আমাকে আরেকটা এফ ডি করার জন্য জোরাজুরি করছিল। আমি বললাম “ঠিক আছে একটু ভেবে দেখে নিজেই করে নেব। “ এফ ডি না করলেও উনি জোড় করে আমাকে একটা ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং এর ফর্ম ফিলাপ করিয়ে নিল। বাইরে এসে দেখলাম সেই লোকটা ব্যাঙ্কের উল্টো দিকের একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে কিছু একটা খাচ্ছে। গিয়ে দেখলাম পুরি সবজি খাচ্ছে। আর পাশে এক কাপ চা রাখা। জিজ্ঞেস করলাম “আপনি এখনও যান নি?” বলল “সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। এইবার একটু পেটে দুটো দিয়ে নি। আবার দৌড়াতে হবে। “ আমাকে উনি জোড় করে এক কাপ চা খাইয়ে দিল।
লোকটা নিজের খদ্দের ছাড়তে নারাজ সেটা বেশ বুঝতে পারছি। ও নাকি নিজেও আমাদের হস্টেলের দিকে ফিরবে আরেকজনের বাড়ি দেখতে। আমাকে উনি হস্টেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে নিজের মোবাইল নাম্বারটা আমাকে দিয়ে কাল রাত্রে আসবে বলে ভো করে চলে গেল। আমি অবশ্য ওকে আমাদের হস্টেলের নাম্বারটা আগেই দিয়ে দিয়েছিলাম। ঘরে ঢুকে একটু ঠাণ্ডা হয়ে বসলাম। স্নান করেই বেড়িয়েছি। তবু একবার স্নান করলে মন্দ হয় না। আজ আমি অনেক ভোরে উঠেছিলাম। সব জামা কাপড় কাঁচা শেষ। একটু থিতু হয়ে বসে , বাথরুমে গিয়ে আবার স্নান করে ফিরে এলাম। লাঞ্চের এখনও অনেক বাকি। ডাইরি টা খুলে বসে একটু হিসাব নিকাশ করে নিলাম। আমি অঙ্কে খুব কাঁচা সেটা আগেই বলেছি। তাই একটু বেশী সময় লাগলো এইসব শেষ করতে। যা লিখলাম সেটাই ছেপে দিচ্ছি এখানে।
১। মাসিক আয় সব মিলিয়ে (ঘাবড়াবেন না ) ৩১৩৫৪ টাকা। (আজকের দিনে কিছু নয় জানি, কিন্তু একজন মেয়ের জন্য অনেক অনেক বেশী। আর সেই সময় জিনিস পত্রের দামও অনেক কম ছিল।) “
২। মেসের থাকার খরচ ১২০০ টাকা মাসে
৩। মেসের খাবার খরচ ১৮০০ টাকা মাসে। তবে এখন শুনছি খাওয়ার খরচ বেড়ে ২০০০ হবে। তাই ২০০০ ই ধরছি।
৪। যাতায়াতের খরচ আছে। তবে সেটা হিসাব করে লিখেতে পারব না। এখন যাতায়াতের কোনও খরচ থাকবে না। পরিশ্রমও থাকবে না। উল্টে কিছুটা হাঁটাও হবে।
৫। এছাড়া যা খরচ সেটা খুব বেশী হলে ৩০০০।
মা ঠিকই বলেছিল, আমার টিউশন না করলেও স্বচ্ছন্দে চলে যাবে। সুতরাং, ৩২০০ টাকা বাদ দিলাম তার জায়গায় ৪৫০০ টাকা যোগ হল। মানে ১৫০০ টাকা বাড়ল। আর আডভান্স নেই, আর দালালি দিতে হবে ৯০০০ টাকা। শেষ কয়েক মাসে ঠিক কত টাকা ব্যাঙ্কে আছে সেটা আর এখানে লিখছি না, তবে আমার কাছে সেই টাকার অঙ্কটা কম নয়। তবু একটু দরাদরি করা উচিত। আমরা একটা প্যানটি কিনতে গেলেও দরাদরি করি। এখানে করব না? বিকালের দিকে আমি ভাতঘুম দিচ্ছি, এমন সময় দরজায় ধাক্কা পড়ায় জেগে উঠলাম। দরজা খুলে দেখলাম একটা জুনিয়র দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করায় বলল “তোমার ফোন আছে। “ আমি গেলাম ফোন ধরতে। মনটা ভালো হয়ে গেল। অরুণ ফোন করেছে। ওকে বাড়ির ব্যাপারটা বলে দিলাম। ও বলল “তোর তো এত ফ্যাসিলিটি চাই না। তাই একটু দরাদরি করেই নিবি। বেকার টাকা নষ্ট করার মানে নেই। “ ওর সাথে একথা সেকথা বলে ওকে প্রায় পনেরবার আই লাভ ইউ বলে, ওর কাছ থেকে পড়ায় ১০ টা চুমু আদায় করে ফোন রেখে দিলাম। ঘরে ঢুকতে যাচ্ছি পেছন থেকে আবার একজনের ডাক পেলাম, আবার নাকি আমার ফোন এসেছে। আমি আবার দৌড়ে গিয়ে ফোনটা ধরলাম। সেই দালাল ভদ্রলোক। আমি ওনাকে বললাম “দাদা ৪৫০০ টাকাটা আমার জন্য সত্যি বেশী হয়ে যাচ্ছে। তারওপর এক থোকে ৯০০০ টাকা। কি করে দেব বলুন। আমি সামান্য স্ট্রাইপএন্ড পাই। “ আমাকে লোকটা বলল “দিদি ম্যাডাম ফোন করেছিলেন আমাকে। “ উনি ৪২০০ তে রাজি। আমাকে আপনি ৮০০০ দিয়ে দেবেন। তাতেই হবে। “ ছোটবেলায় একবার বাবাকে বলতে শুনেছিলাম যে যা নিজে আয় করছিস সেই থেকে হিসাব করে দেখা উচিত কতটা খরচ চালাতে পারব। তাহলে হিসাব করলে কি দাঁড়ায়, ৪২০০ আর ৩০০০ মিলিয়ে ৭২০০ টাকা। আমার কাছে এখনও শপাঁচেক টাকা পড়ে থাকবে স্ট্রাইপেন্ড থেকে। সুতরাং আমাকে ওই দুটো এফ ডি থেকে আসা ২৩০০০ টাকায় হাত দিতে হবে না। পরে আরেকটা এফ ডি করে দেব খন। বললাম “ঠিক আছে। কবে থেকে যেতে পারব। নতুন মাস তো সবে পড়েছে। “ লোকটা বলল “যেদিন চাইবেন চলে যাবেন। কালই চলুন। আর হ্যাঁ এই মাসে আপনি ৪০০০ দিলেই চলবে। কারণ একদম মাসের শুরু থেকে তো থাকছেন না। “ বললাম “ঠিক আছে। কিন্তু আপনাকে কাল একটু শিফটিঙ্গে সাহায্য করতে হবে। “ হেঁসে বলল “সেই নিয়ে চিন্তা করবেন না। কটা ব্যাগ আপনার?” কথা শেষ হয়ে গেল। আমি হস্টেলের সুপারের কাছে গিয়ে জানিয়ে দিলাম আমি হোস্টেল ছেড়ে দিচ্ছি। যা বাকি আছে ওনাকে দিয়ে রসিদ লিখিয়ে নিলাম। আজকের রাতের খাওয়ার অব্দি সবটা দেওয়া আছে। কাল সকালে আমি জিনিসপত্র নিয়ে বেড়িয়ে যাব। সুপার একবার জিজ্ঞেস করেছিল যে হঠাত কেন ছেড়ে দিচ্ছি, ওনাকে বলে দিলাম যাতায়াতটা পোষাচ্ছে না। আর খরচ বারলেও মোটামুটি চালিয়ে নিতে পারব। ওই ভদ্রলোকের কাছ থেকে ওই মহিলার নাম্বার নিয়ে নিয়েছিলাম। বাইরে বেড়িয়ে বাড়িতে ফোন করার পর ওনাকেও ফোন করে দিলাম। বাড়িতে অবশ্য বলেছি যে আমি আর এত পরিশ্রম নিতে পারছি না। তাই ১০০০ টাকা বেশী লাগলেও ওখানে চলে যাচ্ছি। আর তাছাড়া অনেক ভালো ব্যবস্থা। মা কথা বলার পর সেদিন রাহুল কাকুও আমার সাথে কথা বলল। রাহুল কাকু বলল কিছু লাগলে বলতে , কোলকাতায় গিয়ে দিয়ে আসবে। আমি বললাম “কিছু লাগবে না বাবা। সব ঠিক আছে। তোমরা কেমন আছ? ইত্যাদি...” রাহুল কাকু বলল ওখানে যাওয়ার পর ওখানকার ঠিকানাটা বলে দিতে। এই মাসেই একবার কোলকাতায় এসে আমাকে দেখে যাবে। উনি সত্যি ভালো। কিন্তু তবু ঠিক বাবার জায়গায় বসাতে পারছি না। না আর ওই কথায় ঢুকব না। ভদ্রমহিলা কে বললাম যে আমি কালই শিফট করতে চাইছি। উনি বললেন খুব ভালো। তবে এইমাসে আমার ৩৮০০ টাকা দিলেই চলবে। ৪০০০ দিতে হবে না শুনে মনে মনে বেশ খুশি হলাম। আরেকটা ব্যাপার খোলাখুলি বলে নিলাম যে আমি কিন্তু সপ্তাহে খুব বেশী হলে মাত্র দুদিন ছাড়া একদিনও দুপুর বেলায় খাব না। উনি বললেন সে সব ঠিক আছে। কাল সকালে এসে লাগেজ নামিয়ে দিয়ে চলে যাও। তোমাকে ৪২০০ দিতে হবে না। শুধু ৪০০০ দিও। কিন্তু অয়াশিং মেশিন ব্যবহার করলে আলাদা দিতে হবে। আর হ্যাঁ খুব বেশী এসি ব্যবহার করবে না নিশ্চই। আমি বলে দিলাম যে আমার এসি তে শোয়ার অভ্যাস নেই। চালালেও খুব সামান্য চালাব। ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন ছেড়ে দিলাম।
পরের দিন খুব সকাল সকাল উঠে পড়লাম। সামনে একটা এটি এম আছে। সেখান থেকে গিয়ে দালালি আর মাসের টাকাটা তুলে নিলাম। ফিরে এসে স্নান করে রেডি হয়ে নিলাম। ভদ্রলোকের চলে আসার সময় হয়ে গেছে। শেষ বারের মতন ঘরটার দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো জলে ভরে গেল। এই ঘরটা আমার কাছে ভীষণ প্রিয়। আজ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। রুমাল দিয়ে ভালো করে চোখ মুছে নিলাম। সত্যি চোখের জল বাঁধ মানছে না। একজন এসে খবর দিল যে সেই লোকটা এসে গেছে। একটা অটো দাঁড়িয়ে আছে হস্টেলের সামনে। ও অবশ্য নিজে বাইকে এসেছে। আমি সুপারের সাথে শেষ বারের মতন দেখা করে ওনাকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করে বিদায় নিলাম। আমার ব্যাগ কটা অটোতে উঠিয়ে রওয়ানা দিয়ে দিলাম। মনটা একটু ভেজা, কিন্তু আস্তে আস্তে সামলে নিলাম নিজেকে। মহিলা দরজা খুলে দিলেন। এত সকাল সকাল আমাকে দেখে একটু বোধহয় বিচলিত হয়েছেন। দেখলাম নাইট ড্রেসের ওপর একটা র*্যাপার জড়ানো। উনি সবে চা খেতে বসেছেন। আমি বললাম “আসলে আমার ডিউটি শুরু হয়ে যাবে। তাই চলে এলাম। “ উনি বললেন “কোনও সমস্যা নেই। ভেতরে এস। “ আমি অটোর ভাড়া মিটিয়ে উপরে উঠে গেলাম। সেই দালাল ভদ্রলোকই আমার জিনিসগুলো ওপরে উঠিয়ে দিল। আমি ওর হাতে ৮০০০ টাকা ধরিয়ে দিলাম। ও আরও কেউ ঘর খুজলে যাতে ওকে বলি এটা বলে কেটে পড়ল। আমি নিচে গিয়ে দেখলাম মহিলা আমার জন্য চা বানিয়ে ফেলেছেন। বললাম “আপনি চা না দিলেও পারতেন। “ বললেন “বস। চা টা খেয়ে নিয়ে তারপর যা করার করো। “ আমি ওনার হাতে ৩৮০০ টাকা দিয়ে দিলাম। উনি হেঁসে ফেললেন। “এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। “ বললাম “এইবার এইমাসটা শান্তিতে থাকতে পারব। ও হ্যাঁ আমি আজ দুপুরে খাচ্ছি না। রাত্রে ভাতই খাব। আপনি যা খাবেন তাই খাব। বেশী চিন্তা করবেন না। তবে মাঝে মাঝে ফিরতে দেরী হয়। “ উনি হাত নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন এইসব নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে হবে না। বললেন “তোমার জন্য আমাদের সকাল সকাল ওঠা অভ্যেস হয়ে যাবে। “ আমি উঠে পড়লাম। আজ সারাদিন ভীষণ চাপের মধ্যে ছিলাম। কি না করতে হয়েছে আজ। প্রি-চেকাপ থেকে ওটি। সন্ধ্যায় ৭ টার সময় আমার ছুটি হল। আজ একজন ডাক্তার আমার খুব প্রশংসা করেছেন। আমার শরীর ক্লান্ত হলেও মনটা ভালো ছিল। আমি গুটি গুটি পায়ে নতুন বাড়ি ফিরে এলাম। কলিং বেল বাজাতে মহিলা এসে দরজা খুলে দিলেন। ওনার দিকে এক ঝলক দেখে নিলাম। থাই অব্দি লম্বা একটা ভীষণ টাইট স্লিভলেস কুর্তি আর তার নিচে গোড়ালি অব্দি লম্বা লং স্কার্ট পরেছেন। কুর্তিটা বেশ টাইট হলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি ওনার ওপর মানিয়েছে ভালো। বয়স যেন এক ধাক্কায় কয়েক বছর পিছনে চলে গেছে। মাথার চুল খুব নিখুঁত ভাবে পনি টেলে বাঁধা। আমি ওনাকে গুড ইভিনিং জানিয়ে ওপরে চলে গেলাম। ওপরে ওঠার সময় পেছন থেকে ওনার গলার আওয়াজ পেলাম “চা খাবে তো?” বললাম “আপনার অসুবিধা না হলে খেতে পারি।“ উনি বললেন “চা জল খাবার তোমার ভাড়ার সাথে ধরা আছে। “ ঘরে গিয়ে ভালো করে স্নান করে আজকের পরা জামা কাপড় গুলো কেঁচে চেয়ারের ওপর মেলে দিলাম। একটা ঢোলা স্লিভলেস টপ আর ওনারই মতন একটা লং স্কার্ট পরে নিচে নেমে এলাম। বাজে কিছু ভাববেন না, নিচে ব্রা ইত্যাদি পরেই নেমেছি। হাহা। আমি নিচে নামার ওপর উনি টেবিলে আমার জন্য চা নিয়ে এলেন। বাধ্য হচ্ছি বলতে , অনেক দিন পর এত ভালো চা খেলাম। সাথে বিস্কুট দিয়েছিলেন, আমি তুলে নিতে বললাম। আমাকে উনি জিজ্ঞেস করলেন “তোমার খাওয়ার অভ্যেস কটায়। “ আমি বললাম “এমনিতে ৯.৩০ টার মধ্যে খেয়ে নি, কিন্তু আরেকটু দেরী হলেও আমার সত্যি কোনও ক্ষতি নেই। এমনি কিছু কিছু দিন আমার ফিরতেই দেরি হয়ে যায়। “ উনি বললেন “আমরা খাই ১০.৩০ এ। তুমি অবশ্য চাইলে আমি “ আমি ওনাকে বাঁধা দিয়ে বললাম “আমার কোনও সমস্যা হবে না। “ আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে চা এ চুমুক দিচ্ছি, উনি মাঝখান থেকে উঠে গেলেন। পেছনের ঘর থেকে কিছু একটা করে ফিরে এলেন আবার। “একটা কথা তোমাকে বলে রাখি, যতদিন আছ, বাড়ির মেয়ে হয়েই থাক। বাড়ির কথা বাইরে না বের করলেই ভালো। “ আমি বললাম “আপনি এসব নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমার কথা বলার লোক ও নেই তেমন। “ উনি বললেন “এটা আমারও সমস্যা। তো এখন চা খেয়ে তুমি কি করবে? “ আমি বললাম “ভীষণ ক্লান্ত আজ। আজ আর বই নিয়ে বসা হবে না এখন। রাতে খাওয়ার পর বই নিয়ে বসতে পারি। “ বললেন “টিভি দেখবে?” বললাম “না আমার টিভি দেখার অভ্যাস নেই। “ বললেন “তাহলে এস রান্না করতে করতে তোমার সাথে গল্প করি। “ বললাম “৫ মিনিটে আসছি।“ চা খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। আমি ওপরে চলে গেলাম। কয়েকটা জিনিস ঠিক ঠাক করে ওয়ারড্রবে গুছিয়ে নিচে নেমে এলাম। নামার আগে অবশ্য দরজাটা আব্জে বন্ধ করে দিলাম।
নিচে নেমে রান্না ঘর থেকে খুট খাট শব্দ শুনে আমি ওই দিকে এগিয়ে গেলাম। “আপনি নিজেই রান্না করেন?” উনি আলু কাটছিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “ওখানে দাঁড়িয়ে কেন। ভেতরে এস। “ আমি ভেতরে ঢুকে গেলাম। বললাম “আপনাকে সাহায্য করব। রোজ পারব না। কিন্তু আজ করতে পারি। “ উনি হেঁসে বললেন “ ভাড়াও দেবে আবার কাজ ও করবে টা কি করে হয়?” বললাম “সময় ভালো কাটবে।“ আমি আরেকটা ছুরি নিয়ে পেঁয়াজ কাটতে শুরু করে দিলাম। “খুব কাজের চাপ না তোমাদের?” উনি হেঁসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। এখন আমি ওনার খুব পাশে দাঁড়িয়ে আছি। ওনার মুখ থেকে যেন চেনা স্পিরিটের গন্ধ পেলাম। ওনাকে দু একবার মেপে নিলাম দেখে উনি নিজেই হেঁসে বললেন “ আমি সন্ধ্যায় একটু ভোদকা খাই। “ আমি বললাম “আমিও মাঝে সাঝে খাই। কিছু ভাববেন না। “ বললেন “তাহলে তুমি পেঁয়াজ আর আলুটা কাটো আমি তোমাকে একটা গ্লাস বানিয়ে দি। “ আমি ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। বললাম “আপনাকে এইসব করতে হবে না। আর তাছাড়া আমি এইভাবে ফ্রি তে...” উনি বেড়িয়ে গেলেন। আমার পেঁয়াজ কাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমি আলু ধরতে যাব, উনি ফিরে ওনার আর আমার গ্লাসদুটো সিঙ্কে নামিয়ে রেখে আমাকে থামিয়ে দিলেন। বাধ্য হয়ে ওনার সাথে চিয়ার্স করে আমি প্রথম চুমুকটা দিলাম। মা আমাকে প্রায়ই রান্না শিখিয়ে দিত হাতে হাতে। বলত যে বিয়ের পর বরকে নিজের হাতে রেধে খাওয়ালে বর খুশি হবে। আর মেয়েদের এইসব কাজ জানা উচিত। আমি রান্না মার মতন না পারলেও মোটামুটি পারি। তবে অভ্যাস কম এই যা। পাবদা মাছের ঝোলের গ্রেভিটা জোরাজুরিতে আমি বানালাম সেদিন। আমি ওনাকে বলে দিয়েছিলাম যে “আমার এইসব কাজ করতে ভালোই লাগে। এর সাথে ভাড়া ইত্যাদি গোলাবেন না। তবে হ্যাঁ পড়াশুনা থাকলে বা ভীষণ ক্লান্ত থাকলে হয়ত আপনাকে সাহায্য করতে পারব না। “ এখন ঝোলটা একটু ফুটতে দিতে হবে। উনি আরেকটা ওভেনে ভাত চড়িয়ে দিয়েছেন। তার সাথে আলু আর ডিম ও দিয়ে দিয়েছেন সিদ্ধ হতে। “চলো এখন আর কিছু করার নেই, বাইরে গিয়ে বসি। “ বললাম “ঝোলটা একবারে নামিয়ে নিয়ে গেলে হত না।“ বললেন ঠিক আছে ১০ মিনিট পর এসে নামিয়ে নেব খন। চল। “ উনি আমাদের দুজনের খালি গ্লাস দুটো নিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু আমি দাঁড়িয়েই রইলাম। না প্রথম দিন রান্না করছি। ঝোলটা না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকাই শ্রেয়। উনি এসে একবার আমাকে দেখে গেলেন। কিন্তু কিছু বললেন না। প্রায় ১২ মিনিট পর আমি ঝোলটা নামিয়ে নিলাম। উনি এসে একবার টেস্ট করে দেখে বললেন “খুব ভালো হয়েছে। “ আলু আর ডিমটা নামতে আরেকটু সময় লাগবে বলে আমি বাইরে বেড়িয়ে এলাম। ভদ্রমহিলা খুব একটা কথা বলছিলেন না। আমরা চুপ চাপ নিজেদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে চলেছি। “চলো ডাল আর তরকারিটা করে ফেলা যাক। “ আমি বলেই ফেললাম “এত কে খাবে। “ বললেন “তুমি ছারাও লোক আছে। তারা খাবে। “ আরও একঘণ্টা আমাদের রান্না ঘরে কেটে গেল। মহিলার রান্নার হাত সত্যি ভালো। ডাল আর একটা সবজি বানিয়ে নিলেন এরই মধ্যে। ভাত ইত্যাদি সব নেমে গিয়েছে। বললেন “বাকিটা পরে করা যাবে। চলো ব্যলকনিতে গিয়ে বসা যাক। “ আমরা দুটো গ্লাস নিয়ে ওপরে চলে গেলাম। ওনার বেড্রুমের বাইরে একটা ছোট ব্যালকনি আছে। আমরা সেখানে গিয়ে বসলাম। উনি ভোদকার বোতলটা আর কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতলটা নিয়ে এসেছেন। একথা সেকথার পর ওনাকে ওনার ছেলেদের ব্যাপারে না জিজ্ঞেস করে পারলাম না। উনি এক দমে ওনার পুরো জীবনের সারাংশ আমার সামনে মেলে ধরলেন। নেশা চরলে যা হয় আর কি। তবে বিস্তারিত ভাবে শুনেছিলাম পরে আরেকদিন। ওনার ভাষাতেই বলছি “ আমার বাবা নিজে আর্মিতে ছিলেন। রিটায়ারের পর ব্যবসায় নামেন। ভালোই ফুলে ফেপে উঠেছিল। এখন ওনার সব সম্পত্তি আমি পেয়েছি। আমার কোনও ভাই বোন নেই। একজন আর্মির অফিসারের সাথে আমার সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়। আমার বাবাই সম্বন্ধটা নিয়ে এসেছিল। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়। দুই ছেলে হয়। আগেই বলেছি ওদের বয়স ১৯ আর ১৭। ওর ডিউটির জন্য খুব মাঝে মাঝে ছুটিতে ও বাড়ি আসত। ছেলেদের দেখাশুনা তখন আমিই করতাম। একবার ছুটিতে বাড়ি এসেছে, ওর হাব ভাব খুব একটা ভালো ঠেকল না। কি ভালো ঠেকল না সেটা পরে কোনও দিন সময় করে বলব। যাইহোক বুঝতে পারছিলাম একজন কারোর সাথে ওর সম্পর্ক হয়েছে। পরে জানতে পারলাম যেখানে পোস্টিং আছে সেখানকার একটা বাচ্চা নর্থ ইস্টার্ন মেয়ের প্রেমে পড়েছে। এখন ওরা এক সাথেই থাকে। কোথায় থাকে সঠিক করে বলতে পারব না। তবে মোবাইল নাম্বারটা একই আছে। আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেল। এই বাড়িটা ওরই তৈরি, আমার নামে লিখে দিয়ে চলে গেছে। আমার টাকা পয়সার অভাব নেই, কারণ বাবা অগাধ টাকা রেখে গেছে। কিন্তু বাবার অবর্তমানে যা হয়, আমার ছেলে দুটো শাসনের অভাবে পুরো গোল্লায় যাচ্ছে। বড়টা এইবার ফেল করেছে। জানি না কি করবে। ছোটটার রেজাল্ট ভীষণ খারাপ। দুজনেই টই টই করে ঘুরে বেড়ায়। বাড়ি এসে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। দুটোই এই বয়সে সিগারেট মদ সব ধরেছে। আসলে প্রচুর টাকা দেখেছে। “ উনি থামলেন। আমি ওনাকে বললাম “ আমি আসলে সারা জীবনে এরকম সবচ্ছলতা দেখিনি। আপনি একটু ...” “সেই জন্যই তুমি মানুষ হয়েছ। “ উনি বাইরের দিকে উদাস ভাবে তাকিয়ে আছেন। “কিছু না মনে করলে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করব?” বললেন “ বলো না। “ বললাম “ বুঝতেই তো পারছেন আমার একটু টানাটানি আছে (পুরোটাই গুল, কারণ সত্যি আমার কোনও টানাটানি নেই। ) আপনার ছেলেরা তো মোটামুটি হাইয়ার সেকন্ডারির দিকে আছে, যদি আপনি কয়েকটা টিউশানি জোগাড় করতে পারেন। আমি সপ্তাহে দুদিন পড়াতে পারব। বাইলজি পড়াই। “ উনি কিছু বলছেন না দেখে আমি বলেই ফেললাম “আগে দুটো ব্যাচ পড়াতাম। কয়েকজন জয়েন্টে ভালো র*্যাঙ্ক করে মেডিক্যাল পড়ছে। “ উনি কিছু একটা চিন্তা করে বললেন “কত নাও মাসে ?” বললাম “৪০০ মতন নি। “ উনি বললেন “ দাঁড়াও। আমার বাদর দুটোকে পড়াবে? ৮০০ টাকা দেব। মানে ভাড়া কমে যাবে ৮০০ টাকা। “ বললাম “তাহলে তো ভালোই হয়, কিন্তু ওদের যদি আমাকে মানে আমার পড়ানো পছন্দ না হয় তাহলে কি হবে জানি না। “ বললেন “ছাড়ো তো। পড়বে। কান ধরে বসে পড়াবে। “ আমি বললাম “আমি আসলে নিজে খুব একটা শাসন করতে পারি না। “ বললেন “শাসন আমি করব। “ ওনার ছেলেরা রাত্রি ১০ টা অব্দিও ফিরছে না দেখে উনি আমার সাথে খেতে বসে গেলেন। অদ্ভুত সুন্দর ছিম ছাম খাওয়া। ভাত। ডাল। আলু সিদ্ধ, ডিম সিদ্ধ, পেঁয়াজ, আর কাঁচা লঙ্কা সরসের তেল দিয়ে মাখা। পাবদার ঝোল। খেতে খেতে উনি আমাকে বললেন “তোমাকে পেয়ে ভালোই লাগছে। একজন কথা বলার লোক পাওয়া গেল। যেদিন সময় পাবে এসে কথা বলে যেও। কিন্তু ওই বাদর দুটোর দায়িত্ব নাও। “ আমি কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শেষ করে উঠে গেলাম। বাসন ধুতে সাহায্য করব কিনা জিজ্ঞেস করায় আমাকে হাত দেখিয়ে বারণ করে দিলেন। আমি সিঁড়িতে ওঠার সময় শুনলাম “ এখন বাড়িতে কিছু চলছে না চাইলে একটু এসি চালাতে পার। তবে ঘর ঠাণ্ডা হওয়ার পর বন্ধ করে দিও। “ আমি হালকা করে এসি চালিয়ে কিছুক্ষণ পড়াশুনা করলাম। ডাইরি লিখলাম। না পড়াশুনাটাই বেশী করলাম। ঘর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। এসি বন্ধ করে দিলাম। কিছুক্ষণ পরে শুয়ে পড়লাম নরম চাদরের নিচে। কিছুক্ষণ পর ছেলেদের আওয়াজ পেয়ে ঘুম চটে গেল।
“এটাতে আমি থাকি। আর “ পাশের ঘরের দরজাটা খুলে আমাকে বললেন “ভেতরে এস। এটা ঠিক করেছি পেয়িং গেস্টকে ভাড়া দেব। “ বাপরে সত্যি সুন্দর। ওয়ারড্রব, একটা ডবল বেড, এসি, একটা ছোট ড্রয়ার ওয়ালা ড্রেসিং টেবিল, পড়ার টেবিল, তাতে আবার টেবিল ল্যাম্প আছে, তিনটে চেয়ার। ও হ্যাঁ ভুললে চলবে কেন বিছানার একদিকে একটা ছোট স্টুল মতন আছে যার ওপর একটা স্টাডি ল্যাম্প আছে। শালা এই ঘরের ভাড়া দিতে হলে আমার কিডনি বেচে দিতে হবে। “আচ্ছা তোমার এখানে আরেকটা সুবিধা আছে। এটা দোতলার এক প্রান্তে বলে এখানে একটা অ্যাটাচড বাথরুম আছে। আসলে এটা ছিল আমার আর আমার হাজবেন্ডের ঘর। তাই বাথরুমটা “ খেয়াল করিনি আগে, ঘরের পেছনের দিকে একটা ছোট দরজা ছিল। উনি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। সুন্দর সাজানো বাথরুম। শাওয়ার, বেসিন, কমোড, জামা ঝোলানোর হ্যাঙ্গার, আয়না, বালতি, মগ, ট্যাপ আর তার সাথে গিজার কিছুই বাদ নেই। তবে হ্যাঁ জায়গা বেশ কম। “তোমার প্রাইভেসির কোনও অসুবিধা হবে না। পেয়িং গেস্ট রাখতে হলে অনেক সময় তারা প্রাইভেসি নিয়ে চিন্তিত থাকে। তাই এই ঘরটাই ভাড়া দেব ঠিক করেছি। আমরা দোতলার অন্য দিকের বাথরুমটা ব্যবহার করব। বাথরুমে কোনও সমস্যা হলে , মানে জলের সমস্যা হলে বা কোনও রকম সমস্যা হলে তুমি অবশ্যই ওই মাষ্টার বাথরুমটা ব্যবহার করতে পার। “ আমি অনেকক্ষণ ধরে ঘরের সব জায়গায় চোখ বুলিয়ে নিলাম। ও হ্যাঁ একটা জিনিস তো বলতে ভুলে গেলাম ড্রেসিং টেবিলের পাশে একটা আধুনিক মিউজিক সিস্টেমও আছে। আমি ওটার দিকে তাকিয়ে আছি দেখে বললেন “ ওটা চাইলে ব্যবহার করতে পার তুমি। ছেলেদের ঘরে আলাদা ব্যবস্থা আছে। আমার ঘরেও আছে। এস। “ আমরা ওনার পিছন পিছন নিচে নেমে এলাম। নিচের কিচেনের পাশে বাথরুমটার সামনে দেখলাম একটা অয়াশিং মেশিন আছে আর তারপাশে পরিত্যক্ত জামা কাপড় রাখার একটা জায়গা। “অয়াশিং মেশিন আছে। চাইলে ব্যবহার করতে পার। এস। “
আমরা আবার সোফায় ফিরে গিয়ে বসলাম। “তোমার বয় ফ্রেন্ড আছে?” আচমকা এই প্রশ্নে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। একটু সামলে নিয়ে বললাম “হ্যাঁ বিয়ে ঠিক হয়ে আছে মোটামুটি। “ বললেন “এখানে কিন্তু নিয়ে আসতে পারবে না। “ আমি হেঁসে বললাম “না না সেই চিন্তা নেই। ও এখন বাইরে ইন্টার্ন করছে। আমি এখানে। ইন্টার্ন শেষ হলে আমরা দিল্লী চলে যাব মাস্টার্স করতে। “ ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গেছি, আমার মাস্টার্সের ব্যাপারটা পাকাপাকি হয়ে গেছে। “তাই এক কয়েক মাসের জন্য এরকম একটা বাড়ি খুঁজছিলাম। “ মহিলা বললেন “ আমরা খুব ছিম ছাম খাবার খাই। আগে জানিয়ে রাখা ভালো। তুমি কি রুটি খাও না ভাত?” আমি বললাম “আমি ভাতই খাই। “ বললেন “খুব ভালো। তবে রুটি খেতে চাইলে আগে থেকে জানিয়ে রাখলেই হবে। আর বাকি কথা পরে বললেও চলবে। “ দালালটা এইবার প্রথমবার মুখ খুলল। “তো ম্যাডাম, ভাড়ার ব্যাপারটা একটু পাকাপাকি করে নেওয়া ভালো এইবার। “ উনি বললেন “আমি ঠিক করেছি মাসে ৪৫০০ টাকা ভাড়া নেব। অয়াশিং মেশিন ব্যবহার করলে আরেক্তু বেশী লাগবে। “ একটা কথা বলে রাখি, এখন নিউ টাউনের দিকে মোটামুটি ভদ্র পেয়িং গেস্টের ভাড়া ৪৫০০ টাকা। উনি একটু বেশী চেয়েছেন যেই সময়ের কথা বলছি সেই সময়ের হিসাবে। আমি বললাম “ম্যাম, ঘরটা দেখে সত্যি ভালো লেগেছে, কিন্তু বুঝতেই পারছেন স্ট্রাইপ এন্ডে মাসে ৪৫০০ টাকা দেওয়াটা বেশ মুশকিল হয়ে যাবে। আর তাছাড়া, আমার এ সি বা ওইয়াশিং মেশিন লাগবে না। উনি বললেন, সারাদিন আমাদের বাড়িতে প্রায় এসি চলে না। রাতে আমি ১ থেকে দেড় ঘণ্টার বেশী চালাই না। আমার ছেলেদের ঘরেও যতদূর জানি এক ঘণ্টার বেশী চলে না, কারণ আমার ছোট ছেলের ঠাণ্ডা লাগার বাতিক আছে। আর বড় ছেলেও একটু শীত কাতুরে, ও এসি সহ্য করতে পারে না। তাই এসি তে এমন কিছু বিল উঠবে না। কিন্তু ভেবে দেখ, ঠাণ্ডা পড়লে গিজার পাবে। বাথরুমটাও তোমার নিজস্ব। “ আমি কি বলব ভেবে পেলাম না। জিজ্ঞেস করলাম আর আডভান্সের টাকাটা। বললেন “ সেটা না হয় ছেড়েই দিলাম। তবে দালালির টাকাটা তুমি দিয়ে দিও। দুমাসের ভাড়া। “ আমি বললাম “আমাকে দুদিন একটু ভাবার সময় দিন। তারপর ওনাকে আমি জানিয়ে দিচ্ছি।“ আমি তখন মনে মনে অনেক গুলো হিসাব কষতে শুরু করে দিয়েছি। ভদ্র মহিলাকে বাইরে থেকে দেখে বেশ ভালো লেগেছে। যদিও ওনার হাঁড়ির খবর শুনলে পাগল হয়ে যাবেন। আমার কপালেই এইসব জোটে। কিন্তু তখন তো আর বুঝিনি। ওখানে থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে এসে আমি ভদ্রলোককে বললাম “ঠিক আছে , আমাকে একদিন একটু ভাবতে দিন। আমি কাল আপনাকে জানাচ্ছি। “ উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন “আপনি কোথাও যাবেন, মানে আপনাকে কোথাও নামিয়ে দেব?” আমি বললাম “ আমি একটু অমুক ব্যাঙ্কে যাব। কিছু কাজ আছে। “ বলল “চলে আসুন নামিয়ে দিচ্ছি। তবে বাড়িটা ভালো। “ ব্যঙ্কে গেলাম নিজের চোখে আকাউন্টের হিসাব দেখার জন্য। অবশ্য এটিএমেও গেলে চলত। তাও একটু খতিয়ে সব কিছু বোঝা দরকার। পাশ বুক আপডেট করার পর আমার মাথাটা বো করে ঘুরে গেল। প্রতি মাসে মাসে ওই সাড়ে উনিশ লাখ থেকে ১৫ হাজার টাকার কাছাকাছি পড়ছে। আর তাছাড়া আরেকটা যে এফ ডি আছে সেটা থেকেও মাসে মাসে হাজার আটেক টাকা পড়ে। আমার বাবাকে মনে মনে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না। আসলে এতদিন যাবত আমার ঠিক যেটুকু দরকার সেতুকু উঠিয়েছি। তেমন ভাবে খতিয়ে দেখিনি। কেন দেখিনি বলতে পারব না। আর রাহুল কাকুকেও ধন্যবাদ না জানিয়ে পারলাম না। শেষ কয়েক মাস ধরে এই টাকাগুলো জমা পড়েছে। ওই আট হাজার টাকা থেকেই আমার মোটামুটি চলে যায়। কারণ আমার স্ট্রাইপএন্ডও মোটামুটি এই রকমই । এখন অবশ্য ইন্টারেস্ট রেট ফল করেছে। তাই আগে ভাগে বলে রাখলাম যে আমি সেই সময়ের কথা বলছি। আমার বেড়িয়ে আসতে একটু সময় লাগল কারণ একজন ম্যানেজার আমাকে আরেকটা এফ ডি করার জন্য জোরাজুরি করছিল। আমি বললাম “ঠিক আছে একটু ভেবে দেখে নিজেই করে নেব। “ এফ ডি না করলেও উনি জোড় করে আমাকে একটা ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং এর ফর্ম ফিলাপ করিয়ে নিল। বাইরে এসে দেখলাম সেই লোকটা ব্যাঙ্কের উল্টো দিকের একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে কিছু একটা খাচ্ছে। গিয়ে দেখলাম পুরি সবজি খাচ্ছে। আর পাশে এক কাপ চা রাখা। জিজ্ঞেস করলাম “আপনি এখনও যান নি?” বলল “সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। এইবার একটু পেটে দুটো দিয়ে নি। আবার দৌড়াতে হবে। “ আমাকে উনি জোড় করে এক কাপ চা খাইয়ে দিল।
লোকটা নিজের খদ্দের ছাড়তে নারাজ সেটা বেশ বুঝতে পারছি। ও নাকি নিজেও আমাদের হস্টেলের দিকে ফিরবে আরেকজনের বাড়ি দেখতে। আমাকে উনি হস্টেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে নিজের মোবাইল নাম্বারটা আমাকে দিয়ে কাল রাত্রে আসবে বলে ভো করে চলে গেল। আমি অবশ্য ওকে আমাদের হস্টেলের নাম্বারটা আগেই দিয়ে দিয়েছিলাম। ঘরে ঢুকে একটু ঠাণ্ডা হয়ে বসলাম। স্নান করেই বেড়িয়েছি। তবু একবার স্নান করলে মন্দ হয় না। আজ আমি অনেক ভোরে উঠেছিলাম। সব জামা কাপড় কাঁচা শেষ। একটু থিতু হয়ে বসে , বাথরুমে গিয়ে আবার স্নান করে ফিরে এলাম। লাঞ্চের এখনও অনেক বাকি। ডাইরি টা খুলে বসে একটু হিসাব নিকাশ করে নিলাম। আমি অঙ্কে খুব কাঁচা সেটা আগেই বলেছি। তাই একটু বেশী সময় লাগলো এইসব শেষ করতে। যা লিখলাম সেটাই ছেপে দিচ্ছি এখানে।
১। মাসিক আয় সব মিলিয়ে (ঘাবড়াবেন না ) ৩১৩৫৪ টাকা। (আজকের দিনে কিছু নয় জানি, কিন্তু একজন মেয়ের জন্য অনেক অনেক বেশী। আর সেই সময় জিনিস পত্রের দামও অনেক কম ছিল।) “
২। মেসের থাকার খরচ ১২০০ টাকা মাসে
৩। মেসের খাবার খরচ ১৮০০ টাকা মাসে। তবে এখন শুনছি খাওয়ার খরচ বেড়ে ২০০০ হবে। তাই ২০০০ ই ধরছি।
৪। যাতায়াতের খরচ আছে। তবে সেটা হিসাব করে লিখেতে পারব না। এখন যাতায়াতের কোনও খরচ থাকবে না। পরিশ্রমও থাকবে না। উল্টে কিছুটা হাঁটাও হবে।
৫। এছাড়া যা খরচ সেটা খুব বেশী হলে ৩০০০।
মা ঠিকই বলেছিল, আমার টিউশন না করলেও স্বচ্ছন্দে চলে যাবে। সুতরাং, ৩২০০ টাকা বাদ দিলাম তার জায়গায় ৪৫০০ টাকা যোগ হল। মানে ১৫০০ টাকা বাড়ল। আর আডভান্স নেই, আর দালালি দিতে হবে ৯০০০ টাকা। শেষ কয়েক মাসে ঠিক কত টাকা ব্যাঙ্কে আছে সেটা আর এখানে লিখছি না, তবে আমার কাছে সেই টাকার অঙ্কটা কম নয়। তবু একটু দরাদরি করা উচিত। আমরা একটা প্যানটি কিনতে গেলেও দরাদরি করি। এখানে করব না? বিকালের দিকে আমি ভাতঘুম দিচ্ছি, এমন সময় দরজায় ধাক্কা পড়ায় জেগে উঠলাম। দরজা খুলে দেখলাম একটা জুনিয়র দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করায় বলল “তোমার ফোন আছে। “ আমি গেলাম ফোন ধরতে। মনটা ভালো হয়ে গেল। অরুণ ফোন করেছে। ওকে বাড়ির ব্যাপারটা বলে দিলাম। ও বলল “তোর তো এত ফ্যাসিলিটি চাই না। তাই একটু দরাদরি করেই নিবি। বেকার টাকা নষ্ট করার মানে নেই। “ ওর সাথে একথা সেকথা বলে ওকে প্রায় পনেরবার আই লাভ ইউ বলে, ওর কাছ থেকে পড়ায় ১০ টা চুমু আদায় করে ফোন রেখে দিলাম। ঘরে ঢুকতে যাচ্ছি পেছন থেকে আবার একজনের ডাক পেলাম, আবার নাকি আমার ফোন এসেছে। আমি আবার দৌড়ে গিয়ে ফোনটা ধরলাম। সেই দালাল ভদ্রলোক। আমি ওনাকে বললাম “দাদা ৪৫০০ টাকাটা আমার জন্য সত্যি বেশী হয়ে যাচ্ছে। তারওপর এক থোকে ৯০০০ টাকা। কি করে দেব বলুন। আমি সামান্য স্ট্রাইপএন্ড পাই। “ আমাকে লোকটা বলল “দিদি ম্যাডাম ফোন করেছিলেন আমাকে। “ উনি ৪২০০ তে রাজি। আমাকে আপনি ৮০০০ দিয়ে দেবেন। তাতেই হবে। “ ছোটবেলায় একবার বাবাকে বলতে শুনেছিলাম যে যা নিজে আয় করছিস সেই থেকে হিসাব করে দেখা উচিত কতটা খরচ চালাতে পারব। তাহলে হিসাব করলে কি দাঁড়ায়, ৪২০০ আর ৩০০০ মিলিয়ে ৭২০০ টাকা। আমার কাছে এখনও শপাঁচেক টাকা পড়ে থাকবে স্ট্রাইপেন্ড থেকে। সুতরাং আমাকে ওই দুটো এফ ডি থেকে আসা ২৩০০০ টাকায় হাত দিতে হবে না। পরে আরেকটা এফ ডি করে দেব খন। বললাম “ঠিক আছে। কবে থেকে যেতে পারব। নতুন মাস তো সবে পড়েছে। “ লোকটা বলল “যেদিন চাইবেন চলে যাবেন। কালই চলুন। আর হ্যাঁ এই মাসে আপনি ৪০০০ দিলেই চলবে। কারণ একদম মাসের শুরু থেকে তো থাকছেন না। “ বললাম “ঠিক আছে। কিন্তু আপনাকে কাল একটু শিফটিঙ্গে সাহায্য করতে হবে। “ হেঁসে বলল “সেই নিয়ে চিন্তা করবেন না। কটা ব্যাগ আপনার?” কথা শেষ হয়ে গেল। আমি হস্টেলের সুপারের কাছে গিয়ে জানিয়ে দিলাম আমি হোস্টেল ছেড়ে দিচ্ছি। যা বাকি আছে ওনাকে দিয়ে রসিদ লিখিয়ে নিলাম। আজকের রাতের খাওয়ার অব্দি সবটা দেওয়া আছে। কাল সকালে আমি জিনিসপত্র নিয়ে বেড়িয়ে যাব। সুপার একবার জিজ্ঞেস করেছিল যে হঠাত কেন ছেড়ে দিচ্ছি, ওনাকে বলে দিলাম যাতায়াতটা পোষাচ্ছে না। আর খরচ বারলেও মোটামুটি চালিয়ে নিতে পারব। ওই ভদ্রলোকের কাছ থেকে ওই মহিলার নাম্বার নিয়ে নিয়েছিলাম। বাইরে বেড়িয়ে বাড়িতে ফোন করার পর ওনাকেও ফোন করে দিলাম। বাড়িতে অবশ্য বলেছি যে আমি আর এত পরিশ্রম নিতে পারছি না। তাই ১০০০ টাকা বেশী লাগলেও ওখানে চলে যাচ্ছি। আর তাছাড়া অনেক ভালো ব্যবস্থা। মা কথা বলার পর সেদিন রাহুল কাকুও আমার সাথে কথা বলল। রাহুল কাকু বলল কিছু লাগলে বলতে , কোলকাতায় গিয়ে দিয়ে আসবে। আমি বললাম “কিছু লাগবে না বাবা। সব ঠিক আছে। তোমরা কেমন আছ? ইত্যাদি...” রাহুল কাকু বলল ওখানে যাওয়ার পর ওখানকার ঠিকানাটা বলে দিতে। এই মাসেই একবার কোলকাতায় এসে আমাকে দেখে যাবে। উনি সত্যি ভালো। কিন্তু তবু ঠিক বাবার জায়গায় বসাতে পারছি না। না আর ওই কথায় ঢুকব না। ভদ্রমহিলা কে বললাম যে আমি কালই শিফট করতে চাইছি। উনি বললেন খুব ভালো। তবে এইমাসে আমার ৩৮০০ টাকা দিলেই চলবে। ৪০০০ দিতে হবে না শুনে মনে মনে বেশ খুশি হলাম। আরেকটা ব্যাপার খোলাখুলি বলে নিলাম যে আমি কিন্তু সপ্তাহে খুব বেশী হলে মাত্র দুদিন ছাড়া একদিনও দুপুর বেলায় খাব না। উনি বললেন সে সব ঠিক আছে। কাল সকালে এসে লাগেজ নামিয়ে দিয়ে চলে যাও। তোমাকে ৪২০০ দিতে হবে না। শুধু ৪০০০ দিও। কিন্তু অয়াশিং মেশিন ব্যবহার করলে আলাদা দিতে হবে। আর হ্যাঁ খুব বেশী এসি ব্যবহার করবে না নিশ্চই। আমি বলে দিলাম যে আমার এসি তে শোয়ার অভ্যাস নেই। চালালেও খুব সামান্য চালাব। ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন ছেড়ে দিলাম।
পরের দিন খুব সকাল সকাল উঠে পড়লাম। সামনে একটা এটি এম আছে। সেখান থেকে গিয়ে দালালি আর মাসের টাকাটা তুলে নিলাম। ফিরে এসে স্নান করে রেডি হয়ে নিলাম। ভদ্রলোকের চলে আসার সময় হয়ে গেছে। শেষ বারের মতন ঘরটার দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো জলে ভরে গেল। এই ঘরটা আমার কাছে ভীষণ প্রিয়। আজ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। রুমাল দিয়ে ভালো করে চোখ মুছে নিলাম। সত্যি চোখের জল বাঁধ মানছে না। একজন এসে খবর দিল যে সেই লোকটা এসে গেছে। একটা অটো দাঁড়িয়ে আছে হস্টেলের সামনে। ও অবশ্য নিজে বাইকে এসেছে। আমি সুপারের সাথে শেষ বারের মতন দেখা করে ওনাকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করে বিদায় নিলাম। আমার ব্যাগ কটা অটোতে উঠিয়ে রওয়ানা দিয়ে দিলাম। মনটা একটু ভেজা, কিন্তু আস্তে আস্তে সামলে নিলাম নিজেকে। মহিলা দরজা খুলে দিলেন। এত সকাল সকাল আমাকে দেখে একটু বোধহয় বিচলিত হয়েছেন। দেখলাম নাইট ড্রেসের ওপর একটা র*্যাপার জড়ানো। উনি সবে চা খেতে বসেছেন। আমি বললাম “আসলে আমার ডিউটি শুরু হয়ে যাবে। তাই চলে এলাম। “ উনি বললেন “কোনও সমস্যা নেই। ভেতরে এস। “ আমি অটোর ভাড়া মিটিয়ে উপরে উঠে গেলাম। সেই দালাল ভদ্রলোকই আমার জিনিসগুলো ওপরে উঠিয়ে দিল। আমি ওর হাতে ৮০০০ টাকা ধরিয়ে দিলাম। ও আরও কেউ ঘর খুজলে যাতে ওকে বলি এটা বলে কেটে পড়ল। আমি নিচে গিয়ে দেখলাম মহিলা আমার জন্য চা বানিয়ে ফেলেছেন। বললাম “আপনি চা না দিলেও পারতেন। “ বললেন “বস। চা টা খেয়ে নিয়ে তারপর যা করার করো। “ আমি ওনার হাতে ৩৮০০ টাকা দিয়ে দিলাম। উনি হেঁসে ফেললেন। “এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। “ বললাম “এইবার এইমাসটা শান্তিতে থাকতে পারব। ও হ্যাঁ আমি আজ দুপুরে খাচ্ছি না। রাত্রে ভাতই খাব। আপনি যা খাবেন তাই খাব। বেশী চিন্তা করবেন না। তবে মাঝে মাঝে ফিরতে দেরী হয়। “ উনি হাত নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন এইসব নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে হবে না। বললেন “তোমার জন্য আমাদের সকাল সকাল ওঠা অভ্যেস হয়ে যাবে। “ আমি উঠে পড়লাম। আজ সারাদিন ভীষণ চাপের মধ্যে ছিলাম। কি না করতে হয়েছে আজ। প্রি-চেকাপ থেকে ওটি। সন্ধ্যায় ৭ টার সময় আমার ছুটি হল। আজ একজন ডাক্তার আমার খুব প্রশংসা করেছেন। আমার শরীর ক্লান্ত হলেও মনটা ভালো ছিল। আমি গুটি গুটি পায়ে নতুন বাড়ি ফিরে এলাম। কলিং বেল বাজাতে মহিলা এসে দরজা খুলে দিলেন। ওনার দিকে এক ঝলক দেখে নিলাম। থাই অব্দি লম্বা একটা ভীষণ টাইট স্লিভলেস কুর্তি আর তার নিচে গোড়ালি অব্দি লম্বা লং স্কার্ট পরেছেন। কুর্তিটা বেশ টাইট হলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি ওনার ওপর মানিয়েছে ভালো। বয়স যেন এক ধাক্কায় কয়েক বছর পিছনে চলে গেছে। মাথার চুল খুব নিখুঁত ভাবে পনি টেলে বাঁধা। আমি ওনাকে গুড ইভিনিং জানিয়ে ওপরে চলে গেলাম। ওপরে ওঠার সময় পেছন থেকে ওনার গলার আওয়াজ পেলাম “চা খাবে তো?” বললাম “আপনার অসুবিধা না হলে খেতে পারি।“ উনি বললেন “চা জল খাবার তোমার ভাড়ার সাথে ধরা আছে। “ ঘরে গিয়ে ভালো করে স্নান করে আজকের পরা জামা কাপড় গুলো কেঁচে চেয়ারের ওপর মেলে দিলাম। একটা ঢোলা স্লিভলেস টপ আর ওনারই মতন একটা লং স্কার্ট পরে নিচে নেমে এলাম। বাজে কিছু ভাববেন না, নিচে ব্রা ইত্যাদি পরেই নেমেছি। হাহা। আমি নিচে নামার ওপর উনি টেবিলে আমার জন্য চা নিয়ে এলেন। বাধ্য হচ্ছি বলতে , অনেক দিন পর এত ভালো চা খেলাম। সাথে বিস্কুট দিয়েছিলেন, আমি তুলে নিতে বললাম। আমাকে উনি জিজ্ঞেস করলেন “তোমার খাওয়ার অভ্যেস কটায়। “ আমি বললাম “এমনিতে ৯.৩০ টার মধ্যে খেয়ে নি, কিন্তু আরেকটু দেরী হলেও আমার সত্যি কোনও ক্ষতি নেই। এমনি কিছু কিছু দিন আমার ফিরতেই দেরি হয়ে যায়। “ উনি বললেন “আমরা খাই ১০.৩০ এ। তুমি অবশ্য চাইলে আমি “ আমি ওনাকে বাঁধা দিয়ে বললাম “আমার কোনও সমস্যা হবে না। “ আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে চা এ চুমুক দিচ্ছি, উনি মাঝখান থেকে উঠে গেলেন। পেছনের ঘর থেকে কিছু একটা করে ফিরে এলেন আবার। “একটা কথা তোমাকে বলে রাখি, যতদিন আছ, বাড়ির মেয়ে হয়েই থাক। বাড়ির কথা বাইরে না বের করলেই ভালো। “ আমি বললাম “আপনি এসব নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমার কথা বলার লোক ও নেই তেমন। “ উনি বললেন “এটা আমারও সমস্যা। তো এখন চা খেয়ে তুমি কি করবে? “ আমি বললাম “ভীষণ ক্লান্ত আজ। আজ আর বই নিয়ে বসা হবে না এখন। রাতে খাওয়ার পর বই নিয়ে বসতে পারি। “ বললেন “টিভি দেখবে?” বললাম “না আমার টিভি দেখার অভ্যাস নেই। “ বললেন “তাহলে এস রান্না করতে করতে তোমার সাথে গল্প করি। “ বললাম “৫ মিনিটে আসছি।“ চা খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। আমি ওপরে চলে গেলাম। কয়েকটা জিনিস ঠিক ঠাক করে ওয়ারড্রবে গুছিয়ে নিচে নেমে এলাম। নামার আগে অবশ্য দরজাটা আব্জে বন্ধ করে দিলাম।
নিচে নেমে রান্না ঘর থেকে খুট খাট শব্দ শুনে আমি ওই দিকে এগিয়ে গেলাম। “আপনি নিজেই রান্না করেন?” উনি আলু কাটছিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “ওখানে দাঁড়িয়ে কেন। ভেতরে এস। “ আমি ভেতরে ঢুকে গেলাম। বললাম “আপনাকে সাহায্য করব। রোজ পারব না। কিন্তু আজ করতে পারি। “ উনি হেঁসে বললেন “ ভাড়াও দেবে আবার কাজ ও করবে টা কি করে হয়?” বললাম “সময় ভালো কাটবে।“ আমি আরেকটা ছুরি নিয়ে পেঁয়াজ কাটতে শুরু করে দিলাম। “খুব কাজের চাপ না তোমাদের?” উনি হেঁসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। এখন আমি ওনার খুব পাশে দাঁড়িয়ে আছি। ওনার মুখ থেকে যেন চেনা স্পিরিটের গন্ধ পেলাম। ওনাকে দু একবার মেপে নিলাম দেখে উনি নিজেই হেঁসে বললেন “ আমি সন্ধ্যায় একটু ভোদকা খাই। “ আমি বললাম “আমিও মাঝে সাঝে খাই। কিছু ভাববেন না। “ বললেন “তাহলে তুমি পেঁয়াজ আর আলুটা কাটো আমি তোমাকে একটা গ্লাস বানিয়ে দি। “ আমি ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। বললাম “আপনাকে এইসব করতে হবে না। আর তাছাড়া আমি এইভাবে ফ্রি তে...” উনি বেড়িয়ে গেলেন। আমার পেঁয়াজ কাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমি আলু ধরতে যাব, উনি ফিরে ওনার আর আমার গ্লাসদুটো সিঙ্কে নামিয়ে রেখে আমাকে থামিয়ে দিলেন। বাধ্য হয়ে ওনার সাথে চিয়ার্স করে আমি প্রথম চুমুকটা দিলাম। মা আমাকে প্রায়ই রান্না শিখিয়ে দিত হাতে হাতে। বলত যে বিয়ের পর বরকে নিজের হাতে রেধে খাওয়ালে বর খুশি হবে। আর মেয়েদের এইসব কাজ জানা উচিত। আমি রান্না মার মতন না পারলেও মোটামুটি পারি। তবে অভ্যাস কম এই যা। পাবদা মাছের ঝোলের গ্রেভিটা জোরাজুরিতে আমি বানালাম সেদিন। আমি ওনাকে বলে দিয়েছিলাম যে “আমার এইসব কাজ করতে ভালোই লাগে। এর সাথে ভাড়া ইত্যাদি গোলাবেন না। তবে হ্যাঁ পড়াশুনা থাকলে বা ভীষণ ক্লান্ত থাকলে হয়ত আপনাকে সাহায্য করতে পারব না। “ এখন ঝোলটা একটু ফুটতে দিতে হবে। উনি আরেকটা ওভেনে ভাত চড়িয়ে দিয়েছেন। তার সাথে আলু আর ডিম ও দিয়ে দিয়েছেন সিদ্ধ হতে। “চলো এখন আর কিছু করার নেই, বাইরে গিয়ে বসি। “ বললাম “ঝোলটা একবারে নামিয়ে নিয়ে গেলে হত না।“ বললেন ঠিক আছে ১০ মিনিট পর এসে নামিয়ে নেব খন। চল। “ উনি আমাদের দুজনের খালি গ্লাস দুটো নিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু আমি দাঁড়িয়েই রইলাম। না প্রথম দিন রান্না করছি। ঝোলটা না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকাই শ্রেয়। উনি এসে একবার আমাকে দেখে গেলেন। কিন্তু কিছু বললেন না। প্রায় ১২ মিনিট পর আমি ঝোলটা নামিয়ে নিলাম। উনি এসে একবার টেস্ট করে দেখে বললেন “খুব ভালো হয়েছে। “ আলু আর ডিমটা নামতে আরেকটু সময় লাগবে বলে আমি বাইরে বেড়িয়ে এলাম। ভদ্রমহিলা খুব একটা কথা বলছিলেন না। আমরা চুপ চাপ নিজেদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে চলেছি। “চলো ডাল আর তরকারিটা করে ফেলা যাক। “ আমি বলেই ফেললাম “এত কে খাবে। “ বললেন “তুমি ছারাও লোক আছে। তারা খাবে। “ আরও একঘণ্টা আমাদের রান্না ঘরে কেটে গেল। মহিলার রান্নার হাত সত্যি ভালো। ডাল আর একটা সবজি বানিয়ে নিলেন এরই মধ্যে। ভাত ইত্যাদি সব নেমে গিয়েছে। বললেন “বাকিটা পরে করা যাবে। চলো ব্যলকনিতে গিয়ে বসা যাক। “ আমরা দুটো গ্লাস নিয়ে ওপরে চলে গেলাম। ওনার বেড্রুমের বাইরে একটা ছোট ব্যালকনি আছে। আমরা সেখানে গিয়ে বসলাম। উনি ভোদকার বোতলটা আর কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতলটা নিয়ে এসেছেন। একথা সেকথার পর ওনাকে ওনার ছেলেদের ব্যাপারে না জিজ্ঞেস করে পারলাম না। উনি এক দমে ওনার পুরো জীবনের সারাংশ আমার সামনে মেলে ধরলেন। নেশা চরলে যা হয় আর কি। তবে বিস্তারিত ভাবে শুনেছিলাম পরে আরেকদিন। ওনার ভাষাতেই বলছি “ আমার বাবা নিজে আর্মিতে ছিলেন। রিটায়ারের পর ব্যবসায় নামেন। ভালোই ফুলে ফেপে উঠেছিল। এখন ওনার সব সম্পত্তি আমি পেয়েছি। আমার কোনও ভাই বোন নেই। একজন আর্মির অফিসারের সাথে আমার সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়। আমার বাবাই সম্বন্ধটা নিয়ে এসেছিল। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়। দুই ছেলে হয়। আগেই বলেছি ওদের বয়স ১৯ আর ১৭। ওর ডিউটির জন্য খুব মাঝে মাঝে ছুটিতে ও বাড়ি আসত। ছেলেদের দেখাশুনা তখন আমিই করতাম। একবার ছুটিতে বাড়ি এসেছে, ওর হাব ভাব খুব একটা ভালো ঠেকল না। কি ভালো ঠেকল না সেটা পরে কোনও দিন সময় করে বলব। যাইহোক বুঝতে পারছিলাম একজন কারোর সাথে ওর সম্পর্ক হয়েছে। পরে জানতে পারলাম যেখানে পোস্টিং আছে সেখানকার একটা বাচ্চা নর্থ ইস্টার্ন মেয়ের প্রেমে পড়েছে। এখন ওরা এক সাথেই থাকে। কোথায় থাকে সঠিক করে বলতে পারব না। তবে মোবাইল নাম্বারটা একই আছে। আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেল। এই বাড়িটা ওরই তৈরি, আমার নামে লিখে দিয়ে চলে গেছে। আমার টাকা পয়সার অভাব নেই, কারণ বাবা অগাধ টাকা রেখে গেছে। কিন্তু বাবার অবর্তমানে যা হয়, আমার ছেলে দুটো শাসনের অভাবে পুরো গোল্লায় যাচ্ছে। বড়টা এইবার ফেল করেছে। জানি না কি করবে। ছোটটার রেজাল্ট ভীষণ খারাপ। দুজনেই টই টই করে ঘুরে বেড়ায়। বাড়ি এসে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। দুটোই এই বয়সে সিগারেট মদ সব ধরেছে। আসলে প্রচুর টাকা দেখেছে। “ উনি থামলেন। আমি ওনাকে বললাম “ আমি আসলে সারা জীবনে এরকম সবচ্ছলতা দেখিনি। আপনি একটু ...” “সেই জন্যই তুমি মানুষ হয়েছ। “ উনি বাইরের দিকে উদাস ভাবে তাকিয়ে আছেন। “কিছু না মনে করলে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করব?” বললেন “ বলো না। “ বললাম “ বুঝতেই তো পারছেন আমার একটু টানাটানি আছে (পুরোটাই গুল, কারণ সত্যি আমার কোনও টানাটানি নেই। ) আপনার ছেলেরা তো মোটামুটি হাইয়ার সেকন্ডারির দিকে আছে, যদি আপনি কয়েকটা টিউশানি জোগাড় করতে পারেন। আমি সপ্তাহে দুদিন পড়াতে পারব। বাইলজি পড়াই। “ উনি কিছু বলছেন না দেখে আমি বলেই ফেললাম “আগে দুটো ব্যাচ পড়াতাম। কয়েকজন জয়েন্টে ভালো র*্যাঙ্ক করে মেডিক্যাল পড়ছে। “ উনি কিছু একটা চিন্তা করে বললেন “কত নাও মাসে ?” বললাম “৪০০ মতন নি। “ উনি বললেন “ দাঁড়াও। আমার বাদর দুটোকে পড়াবে? ৮০০ টাকা দেব। মানে ভাড়া কমে যাবে ৮০০ টাকা। “ বললাম “তাহলে তো ভালোই হয়, কিন্তু ওদের যদি আমাকে মানে আমার পড়ানো পছন্দ না হয় তাহলে কি হবে জানি না। “ বললেন “ছাড়ো তো। পড়বে। কান ধরে বসে পড়াবে। “ আমি বললাম “আমি আসলে নিজে খুব একটা শাসন করতে পারি না। “ বললেন “শাসন আমি করব। “ ওনার ছেলেরা রাত্রি ১০ টা অব্দিও ফিরছে না দেখে উনি আমার সাথে খেতে বসে গেলেন। অদ্ভুত সুন্দর ছিম ছাম খাওয়া। ভাত। ডাল। আলু সিদ্ধ, ডিম সিদ্ধ, পেঁয়াজ, আর কাঁচা লঙ্কা সরসের তেল দিয়ে মাখা। পাবদার ঝোল। খেতে খেতে উনি আমাকে বললেন “তোমাকে পেয়ে ভালোই লাগছে। একজন কথা বলার লোক পাওয়া গেল। যেদিন সময় পাবে এসে কথা বলে যেও। কিন্তু ওই বাদর দুটোর দায়িত্ব নাও। “ আমি কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শেষ করে উঠে গেলাম। বাসন ধুতে সাহায্য করব কিনা জিজ্ঞেস করায় আমাকে হাত দেখিয়ে বারণ করে দিলেন। আমি সিঁড়িতে ওঠার সময় শুনলাম “ এখন বাড়িতে কিছু চলছে না চাইলে একটু এসি চালাতে পার। তবে ঘর ঠাণ্ডা হওয়ার পর বন্ধ করে দিও। “ আমি হালকা করে এসি চালিয়ে কিছুক্ষণ পড়াশুনা করলাম। ডাইরি লিখলাম। না পড়াশুনাটাই বেশী করলাম। ঘর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। এসি বন্ধ করে দিলাম। কিছুক্ষণ পরে শুয়ে পড়লাম নরম চাদরের নিচে। কিছুক্ষণ পর ছেলেদের আওয়াজ পেয়ে ঘুম চটে গেল।