18-10-2019, 01:12 PM
পরের পর্ব
ঘুম যখন ভাঙল চোখ খুলে দেখলাম ঘর পুরো অন্ধকার, সন্ধ্যা হয়ে গেছে সেটা আর বলে দিতে হয় না। কানের পাশে প্রচণ্ড মশার ভোঁ ভোঁ শব্দ হচ্ছে। আমার গোটা খোলা হাত গুলো মশার কামড়ে চুল্কাচ্ছে। একটা পরিষ্কার সাদা চাদর আর মশারি ওই আলমারিটাতে রাখা ছিল। বের করে নেওয়া উচিত ছিল। এক কাপ চা পেলে মন্দ হয় না। পুরো হুঁশ আসার পর শুনলাম আমার ঘরের বন্ধ দরজায় দুম দুম করে বাড়ি মারছে কেউ বা কারা। রাজার গলা শুনতে পেলাম। বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়াতে যাব মাথায় ঘরে টাঙানো দড়িটাতে ঘষা খেল। আর কোথাও লাগাতে পারিনি দড়িটা। তড়িঘড়ি করে ছুটে গিয়ে সুইচবোর্ডে সুইচ অন করে হলদে বাল্ব টা জ্বালালাম। আমার শরীরে ম্যাড়ম্যাড়ে ভাবটা রয়েই গেছে। অসময়ে ঘুমানোর এই এক দোষ। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে দরজা খুললাম। রাজা বলল “ শালা ভাবলাম মড়ে পড়ে আছিস কিনা। কি ঘুমরে ভাই ...।“ ওর কথা মাঝ পথেই থেমে গেছে। ঘুম ঘুম চোখ বলে ব্যাপারটা অনুধাবন করতে একটু বেশীই সময় লাগল। ঘুমানোর সময় আমি ওপরে বা নিচে কোনও অন্তর্বাস পরে শুইনি। ঠিক করেছিলাম ঘর থেকে রাত্রে বেরনর আগে পরে বেরব। কিন্তু ব্যাপারটা আমার ঘন ঘুমের জন্য অন্যরকম হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি প্রায় দৌড়ে এসে দরজা খোলার জন্য আমর ব্রা হীন বুকদুটো অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ওঠানামা করছে এই চারটে প্রাণীর সামনে। ৪ জন বলতে শ্যমদাও ছিলেন। আমি যে ব্রা পরিনি সেটা বোধহয় স্পষ্ট। দেখলাম ওদের চোখগুলো খনিকের মধ্যে আমার স্তন আর তারপরেই আমার পিছনে ঘরের মধ্যে শুঁকাতে দেওয়া ব্রা আর প্যানটির উপরে দিয়ে ঘুরে এল। আমি লজ্জা ছাড়িয়ে নিজেই নিজের বুকের দিকে একবার চট করে দেখেনিলাম। প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি স্তন বিভাজিকা উন্মুক্ত, একটু আধতু নয় পুরো অর্ধেক। বড্ড বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। জেনে বুঝে করিনি এটা। কিন্তু হয়ে গেছে। আমি লজ্জার মাথা খেয়ে কাঁধের কাছে টপ টা একটু উঠিয়ে নিলাম। টপের কাপড়ের অনুভুতিতে বুঝলাম আমার স্তন বিভাজিকা মোটামুটি ঢেকে গেছে। এই আধুনিক টপগুলোর একটা স্টাইলই বলুন বা ব্যথাই বলুন এগুলো বগলের নিচে অনেক সময় এত খোলা হয় যে ঠিক করে না পরলে বুকের প্রায় মাঝখান অব্দি অনাবৃত হয়ে যায়। সেরকম জায়গায় পরে গেলে এটা ফ্যাশন। কিন্ত এই মুহূর্তে আমার মাথায় সেক্স বা শরীর দেখানোর কোনও ইচ্ছা আসেনি। তাই এখন এটা লজ্জার। পরিস্থিতি আর কি। আমার স্তন বিভাজিকা ঢেকে গেলেও বুঝলাম ওদের চোখ আমার অনাবৃত বগলের জায়গায় ঘোড়ার ফেরা করছে। না আমি ক্যালাসের মতন হাত তুলে দাঁড়িয়ে ছিলাম না। কিন্তু হাত শরীরের সাথে চেপে রাখলেও এইসব ড্রেসে বোঝা শরীরের বগলের নিচের অনাবৃত জায়গাগুলো বেশ ভালো ভাবেই দেখা যায়। অনেক সময় স্তনের পাশের দিকের প্রসারিত হওয়া অংশের আভাস বোঝা যায়। আমি হাত দুটো কে শরীরের পাশে আরও আঁটসাঁট করে চেপে ধরে বললাম “কটা বাজে রে?” ওরা আমার শরীরের থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিল। ওদের মুখ দেখে বুঝতে পারলাম ওদের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে ওরা বাকি কথাগুলো বলল এদিক ওদিক তাকিয়ে, আমার শরীরের থেকে চোখ যতটা পারা যায় অন্য দিকে তাকিয়ে। আমি আরেকবার সাবধান হওয়ার জন্য কাঁধের কাছে হাত নিয়ে টপের সামনের দিকটা তুলে নিলাম। ওরা আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরেই বলল “ নিচে আয়। পৌনে ৯ টা বেজে গেছে। এরা এখনই খেতে বলছে। আমরা একটু মদ গিলব। তুই জয়েন করতে চাইলে আয়। আমি বললাম “আমি আসছি, কিন্তু শোননা তার আগে একটু চা পাওয়া যাবে?” ওরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে “উফফ গার্লস উইল বি গার্লস। এখন চা? দেখছি।“ ওরা চলে গেল। আমি তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে ব্যাগ থেকে হ্যান্ড আয়নাটা বের করে একবার নিজেকে দেখলাম। না স্তনের কিছুই পাশ থেকে বেড়িয়ে ছিল না কারণ আমার স্তন তখনও অতটা ভরাট নয়, কিন্তু বগলের কাছটা এতটা ঢিলে যে পাশের অনেকটা অংশই অনাবৃত হাতের তলায়। যদিও এটা এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার এমন টপ আছে যাতে পেটের অর্ধেকটা অব্দি বগলের নিচের শরীরের পাশের জায়গা অনাবৃত থাকে। কিন্তু সেইগুলো পার্টি বা বাইরে বেড়াতে যাওয়া ছাড়া অন্তত এরকম জায়গায় পরার মতন নয়। কিন্তু এটা তেমন কিছু নয়। এটুকু খোলা ড্রেস পরতে, যদি এটাকে খোলামেলা বলা যায় তো, আমি কোনও রকম অস্বাচ্ছন্দ্য সত্যি বলতে ফিল করিনা। কিন্তু হ্যাঁ, ব্রা হীন বুকের লাফালাফি ৪ জোড়া চোখের সামনে সত্যিই লজ্জার আর অস্বস্তিকর। আর তার থেকেও লজ্জার বা অস্বস্তিকর ব্যাপারটা হল, আমার ব্রা হীন স্তনের বোঁটা গুলো শক্ত হয়ে টপের আবরণ ভেদ করে প্রস্ফুটিত হয়েছিল ওদের চোখের সামনে। অনেক সময় ঘুম থেকে উঠলে আমাদের বোঁটা এরকম পাথরের মতন শক্ত হয়ে থাকে। যেমন আপনার ওটাও শক্ত হয়ে থাকে ঘুম থেকে ওঠার সময় অনেক সময়। ওইগুলো নিশ্চই ওরা দেখেছে। ওরা দেখেছে তাতে সন্দেহ নেই। ছেলেরা এইসব দেখতে ভুল করে না। আমার স্তনবৃন্তের শক্ত হয়ে যাওয়াটা দেখেছে ওরা, বা হতে পারে আমার শক্ত বোঁটাগুলোর সাইজ আর আকার বুঝেছে। সব মেয়েদেরই বোঁটা বাইরে থেকে দেখতে গোল নুরির মতন লাগে। এতে কোনও নতুনত্ব নেই। কিন্তু এই প্রদর্শনটা আমি ইচ্ছা করে করিনি। এরপর থেকে একটু সতর্ক হতে হবে। আমি তাড়াতাড়ি ড্রেস ছেড়ে টপ আর লেগিন্সের নিচে নতুন ব্রা আর প্যানটি পরে নিলাম। না টপটা ছাড়ার কোনও কারণ দেখিনি। যদি অসাবধানতায় হাত উঠলে আমার নির্লোম পরিষ্কার বগল বা স্তনের পাশের জায়গাগুলোর একটু দর্শন পায় তাতে আমি এই মুহূর্তে বা হয়ত কখনই কোণও অস্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি না। সেটা ঠিক আছে। আমি ঘরে তালা দিয়ে নিচে নেমে গেলাম। ওদের চোখগুলো আমার স্তনের আর বগলের আর বগলের নিচে বুকের নিচ অব্দি শরীরের পাশের অনাবৃত নগ্ন অংশের ওপর দিয়ে চলা ফেলা করল বেশ কয়েকবার সেটা অনুধাবন করেছিলাম। যাইহোক কেউ সরাসরি তাকাচ্ছিল না। ওরা ওদের পেগ নিয়ে মোটামুটি রেডি। আমি বললাম “আগে চা খাই তারপর ইচ্ছে হলে খাব। শরীরটা ম্যাড়ম্যাড় করছে ভীষণ।“ ওরা বলল “সব রেডি আছে। খেলে বলিস। বানিয়ে দেওয়া যাবে।“ আমার জন্য চা দিয়ে গিয়েছিল শ্যামদা। চায়ে চুমুক দিয়ে যেন ধরে প্রাণ ফিরে এল। না সেই রাতে আর আমার মদ খাওয়ার ইছা আসেনি। আসলে শরীরটা পুরো ছেড়ে দিয়েছিল। আমি ডিনারটা ওদের সাথেই করেছিলাম। কিন্তু ডিনারের আগে ওদের সাথে যতক্ষণ বসে ছিলাম বেশ কয়েক বার ওদের তিনজনের চোখ যে আমাকে আপাদমস্তক মেপেছে সেইটা লক্ষ্য করার জন্য গোয়েন্দার চোখ লাগে না। কিন্তু ওদের ভাবখানা ছিল এমন যে ওরা ওদের গল্প নিয়ে ব্যস্ত। তবে হ্যাঁ অনেক মজার কথা হয়েছিল সেদিন। কিছু আমাদের নিজেদের নিয়ে, কিছু স্যার বা ম্যাডামদের নিয়ে কিছু অন্যান্য ছেলে মেয়েদের নিয়ে। প্রথম দিনেই অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে দেখে আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আসর ভেঙে দিলাম। শ্যামদাকে বলা ছিল “সকাল সকাল রিক্সা জোগাড় করে রাখতে।“ শ্যামদা বলেছিলেন “ খুব সকালে রিক্সা পাওয়াটা সমস্যা হবে না। কারণ তখন রিক্সা গুলো বেড়িয়ে কাজের দিকে যায়। দুটো রিক্সা ধরে নিলেই হয়ে যাবে।“ বহুত আচ্ছা। রাতের খাওয়াটা ভালোই হয়েছিল। আমার শরীরের ম্যাড়ম্যাড়ে ভাবটা তখনও কাটেনি। মশারি টাঙ্গিয়ে শোয়ার সাথে সাথে ঘুমের মধ্যে ডুবে গেলাম।
আমার ঘড়িতে আল্যার্ম দেওয়াই ছিল। উঠে ভাবলাম এক কাপ চা খাব। নিচে চায়ের জন্য বলতে গিয়ে দেখি ছেলেগুলো খালি গায়ে তোয়ালে পরে এদিক ওদিক হেঁটে বেড়াচ্ছে। রাজার তো জাঙ্গিয়াটাও নির্লজ্জের মতন তোয়ালের কোমর থেকে বেড়িয়ে আছে। অন্য সময় হলে ঝারি মারতাম। আজ নয়। লজ্জায় আর চা চাইতে পারলাম না। এরপর লজ্জা কাটাতে হবে জানি। কিন্তু আজ নয়। চা না নিয়েই উপরে উঠে এলাম মাঝ সিঁড়ি থেকে। প্রাতঃকৃত্য সেরে, স্নান করে একেবারে ফ্রেশ হয়ে হাসপাতালের জন্য রেডি হয়ে নিচে নামলাম। ওরাও মোটামুটি তৈরি। সবার জন্য চা জলখাবার দিয়ে গেছে। জলখাবারটা তেমন আহামুরি কিছু ছিল না তাই সেটা নিয়ে আর নাই বা বললাম। রিক্সা হাজির ছিল! আমি আর রাজা আবার আগের দিনের মতন একই রিক্সায় উঠলাম। আর সন্দীপ আর অরুণ অন্যটায়। পথে খুব একটা কথা হয়নি। রিক্সা ছুটে চলল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। অনেক কান্না, ঘাম, চীৎকার, হতাশা, সাফল্য, পরাজয়, হাঁসি, উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, আবেগ, দৌড়াদৌড়ী, পীড়াপীড়ি আর সব থেকে বড় কথা নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে দিনটা কেটে গেল। আমরা লাঞ্চ করব হাসপাতালেই সেটা তো জানা ব্যাপার। সন্ধ্যে ছটার পর থেকে আমার শরীর ছেড়ে দিতে শুরু করেছিল। এত অভিজ্ঞতা এক দিনের জন্য বড্ড বেশী। তবে ভীষণ অন্যরকম রুরাল জায়গা আর সাথে একজন মেয়ে আছে বলে আমাদের দলটার রাত্রিবাস করতে হল না হাসপাতালে। কোনও দিনও করতে হয়নি। এটা খুবই অবিশ্বাস্য, কারণ সকলকে নাইট ডিউটি দিতে হয় এই সময় অন্যান্য ডাক্তারদের সাথে, কিন্তু আমাদের হাসপাতালে থাকতে হয়েছে কোনও কোনও দিন প্রায় রাত ১১ টা অব্দি, কিন্তু রাত্রিবাস করতে হয়নি আমাদের কাউকে। সকালে আসা রিক্সাগুলো শ্যামদা ঠিক করেই রেখেছিল রাত্রে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওরা তিনবার এসে আমাদের খোঁজ করে ফিরে গেছে। শেষে আমরা যখন প্রথম দিনের কুরুক্ষেত্র শেষ করে বেরলাম তখন রাত প্রায় ১০ টা। ওরা আমাদের পৌঁছে দিয়ে হিসাব বুঝে চলে গেল। আমরা বলে দিয়েছিলাম কাল সকালে ঠিক এই সময়েই এস। আসার পথে আমার আর রাজার কোনও কথা হয়নি। পৌঁছানোর পর আমি সিঁড়িতে উঠতে উঠতে ওদের বললাম “ আজ অনেক কিছু শেখা হল তাই না?” সন্দীপ বলল “ দেখা হল, সঠিক করে বলতে গেলে।“ আমি ঘরে গিয়ে ফ্রেশ জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে গিয়ে পরনের জামা কাপড় সব ছেড়ে ফেললাম। সব ঘামে আর কান্নায় ভেজা জামাকাপড়, কালকের পরা ঘরের টপ আর লেগিন্স আর ভেতরে পরা অন্তর্বাস ধুয়ে, শেষে নিজের অভিজ্ঞতা আর জ্ঞানে ভরা শরীরটাকে ঠাণ্ডা জলে সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে নতুন বস্ত্রে নিজেকে ঢেকে বেড়িয়ে এলাম। আজকে কি পরেছিলাম সেটা বলার প্রয়োজন নেই, কারণ এই প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা আর অভিজ্ঞতার ব্যথা আমাদের এতটা গ্রাস করেছিল যে না কারোর আমার শরীরের ওপর বা আমি কি পরেছি বা কিছু দেখা যাচ্ছে কিনা সেই ব্যাপারে কোনও নজর ছিল, না আমার ওদের বা আমার নিজের শরীরের ওপর কোনও নজর ছিল। ঘরে এসে ভিজে জামা কাপড় গুলো মেলে দিয়ে, কালকের মেলা শুঁকনো ব্রা আর প্যানটিটাকে আলমারিতে রেখে চুল আঁচড়ে নিলাম। আমি রোজ মাথায় জল দি না। কিন্তু এখানে মনে হচ্ছে রোজই মাথায় শ্যাম্পু করতে হবে। নইলে এই ক্লেদ যাবে না। আমার মধ্যে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। আমার ভেতরে একটা দিক বলছে একটু একলা শুয়ে ঘুমিয়ে নি। আরেকটা দিক বলছে একা থাকতে পারব না। একটু ওদের সাহচর্য পেলে আরও ভালো থাকব। শারীরিক আর মানসিক পরিশ্রমের ঝড় বয়ে গেছে শরীরের ওপর দিয়ে। একবার শুতে গিয়ে ভাবলাম, সবাই ক্লান্ত, আমি এখন শুয়ে থাকলে ওরা আবার আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকবে, আর ঘুমিয়ে পড়লে তো কথাই নেই। না নিচে গিয়ে ওদের সাথেই বসি। বড্ড একলা লাগছে, অদিতি থাকলে আজ ওকে জড়িয়ে ধরে শুতাম, না ও এখন এনগেজড। নিচে নেমে আমার চোখ মাথায় উঠে গেছে। আপনার ক্ষেত্রে অন্য কিছু মাথায় উঠে যেত। আমার সেটা নেই। তাই চোখই সই। হাহা। ও হ্যাঁ আমি কিছু ব্যাপারে খুবই গোছানো, যাওয়ার আগে আমি মশারি খাঁটিয়ে বিছানা তৈরি করে গিয়েছিলাম। আজ আর আমার ঘরে কেউ হানা দেবে না সেই ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত।
নিচে নেমে দেখলাম সন্দীপের ঘরে কোনও আলো নেই যদিও ঘর খোলা। ভাবলাম একবার আওয়াজ দিয়ে দেখব কিনা, ব্যাটা হয়ত ঘুমাচ্ছে। কিন্তু রাজার ঘর থেকে গলার শব্দ পেয়ে আর আলো দেখে ওর ঘরের দিকেই চলে গেলাম। হে ভগবান। তিনটে ছেলে গতকালের হুইস্কির বোতল খুলে বসেছে। একটা খালি বিয়ারের বোতল মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বুঝলাম তিনজনে মিলে শেষ করেছে। ওদের তেস্টা মেটেনি। তাই কালকের আধ খাওয়া হুইস্কিটা খুলে বসেছে। খুব একটা বেশী পেগ মারার সময় ওরা পায়নি। কিন্তু শরীর আর মন আর সবথেকে বড় কথা মাথা, এগুলো ক্লান্ত থাকলে যা হয় আর কি, বোধহয় অল্পেই চড়ে গেছে। খালি পেটও একটা কারণ। তিনজনেই খালি গায়ে তোয়ালে পরে হস্টেলে যেমন থাকে সেইমতন বসে আছে। রাজা তো চেয়ারের ওপর পা তুলে এমন ভাবে বসে ছিল যে ওর তোয়ালের দুটো পাড় দুদিকে সরে গিয়ে আকাশী রঙের জাঙ্গিয়া ঢাকা যৌনদেশ তোয়ালে থেকে সম্পূর্ণ বেড়িয়ে রয়েছে। আমাকে দেখেই তিনজনে তোয়ালে ঠিক করে নিল। রাজা বেশ অর্ডারের স্বরেই বলল, “শ্যামদাকে কাল সকাল সকাল উঠে ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে বলে ওকে বলেছি আমার মানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। তোর খাবার ও রাখা আছে। খেয়ে নে। আমরা সার্ভ করে দিচ্ছি। “ ওর গলা ধরা, বেশ নেশা চড়েছে সেটা আর বলে দিতে হয় না। চোখ স্বাভাবিক আছে এখনও। আসলে ওরা তিনজনেই নিজেদের জীবনে কোনও দিন মৃত্যু দেখেনি। বড়লোকদের বাড়িতে চুলের নিচে পাক ধরলে ডাক্তার ডাকা হয়। এইটাই ওরা দেখে এসেছে। আর আমি দেখেছি লোকদের নাভিশ্বাস ওঠা পর্যন্ত ডাক্তারের কাছে যায় না। অবশ্য তারপর অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের কিছু করারও থাকেনা। বিশেষ করে যদি ওটা ক্রনিক রোগ হয় তো। আজ ওরা তিনটে মৃত্যু দেখেছে। দুজন মহিলা, আর একটা ১১ বছরের শিশু। শিশুদের কোনও জাত হয় না, লিঙ্গান্তর(মেডিক্যালই হয় যদিও) বা ভেদাভেদ হয় না, তাই শুধু শিশুই বললাম। আরেকজন আমরা জানি কাল মারা যাবেন, তিনি অবশ্য বলা যায় পৃথিবীর বোঝা (না খারাপ ভাববেন না, এটা সাধারণ কথা মাত্র) কারণ শরীর স্বাস্থ্য সব গেছে, বয়স ৯১। এইবার যাবেন। কাল না হলেও পরশু। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হল, আমরা যতদিন ছিলাম উনি বেঁচেই ছিলেন। অদ্ভুত বিধির লিখন। ওরা রীতিমত উচ্চস্বরে কথা বলছিল। আমি কয়েকবার ওদের বলেছি, একটু নিচু গলায় কথা বলতে। আমাকে ওরা থামিয়ে দিয়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সন্দীপ উঠে দাঁড়িয়ে বাথরুমে যেতে গিয়ে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। বাকিরা রে রে করে উঠলেও ওদের দৌড়ে গিয়ে ধরার ক্ষমতা তখন আর নেই। আমিই ওদের মধ্যে একমাত্র সুস্থ। আমি প্রায় লং জাম্প দিয়ে সন্দীপকে গিয়ে ধরলাম। সন্দীপ আমাকে প্রায় জড়িয়ে ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল “কি ভাবছিস আমি মাতাল? আমি বেশ সুস্থ আছি।“ কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম “হ্যাঁ তুই ঠিকই আছিস।“ সন্দীপ বলল “আই অ্যাম ডান ফর দি ডে। “ ও চলে যেতেই বাকি দুজনের যেন হুঁশ এল। অরুণ জড়ানো গলায় বলল “এই সন্দীপ না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে বমি করবে না তো?” এটা আমিও জানি এটুকু খেয়ে বমি হবে না। না ওকে খাওয়াতেই হবে রাজা সিদ্দান্ত নিল। দুজন টলতে থাকা ছেলে আমার কাঁধে হাত রেখে, সেই একবারের জন্য ফিল করলাম আমি স্লিভলেস না পরলেই পারতাম, ও হ্যাঁ যা বলছিলাম ওরা আমার নগ্ন কাঁধে হাত রেখে আমাকে প্রায় দুজনের মাঝে জড়িয়ে ধরে সন্দীপের ঘরের দিকে চলল। কেউ ঘরে ঢুকবে না। ঘরের দরজা হাট করে খোলা, ভেতরে অন্ধকার। কিন্ত কেউ ঘরে ঢুকবে না। সন্দীপের প্রাইভেসি তারা নষ্ট করতে চায় না, আর সেটা ওরা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে এমন স্বরে বলছে যে হোয়াইট হাউসে ঘুমিয়ে থাকার রাষ্ট্রপতিরও ঘুম ভেঙে যাবে। মাতালদেড় ইমশান নিয়ে আরেকটা বই লেখা যায়। আমি বললাম “আমি গিয়ে দেখি?” রাজা বলল “তুই সত্যি খুব ভালো মেয়ে জানিস, তুই যাবি, যা। দাঁড়া, বেশী দেখিস না,“, আমি বলতে যাচ্ছিলাম কালকে শালা তাহলে ওইভাবে তাকিয়ে ছিলিস কেন রে? আমি ঢুকে দেওয়াল হাতরে সুইচবোর্ডে বোতাম টিপলাম। আলো হল ঘর। সন্দীপ নেই। বেড়িয়ে এসে বললাম “ ও ঘরে নেই।“ খোঁজ খোঁজ, শেষে দেখলাম ছেলেদের জন্য বরাদ্দ বাথরুমে গিয়ে বাবাধন মেঝেতে বসে ঘুমাচ্ছে। তিনজন মিলে তাকে টেনে তোলা হল। যা দেখার আমি আগেই দেখেছি। রাজা আমাকে অন্যদিকে তাকাতে বলে ওর জাঙ্গিয়ার ওপর ওর তোয়ালে টা বেঁধে দিল। সন্দীপের তখন হুঁশ এসেছে। ও আমাকে দেখে বলল “ মহারানী, ক্ষমা চাই।“ রাজা ওকে বলল “চুপ, মদ খেয়ে আছিস কথা বলবি না। চুপ।“ রাজা নিজেও টলে চলেছে। সন্দীপ “সরি স্যার বলে মুখে আঙুল দিয়ে কার্টুনের মতন দাঁড়িয়ে আছে। “ রাজা ওকে নিয়ে আবার ওর ঘরের দিকে যাচ্ছিল, আমি বললাম “ কাল সকালে হাসপাতাল আছে খেয়াল আছে? এইবার খাবেন না?” “ও হ্যাঁ তাও আছে। তিন জনে আমার পিছন পিছন খাওয়ার জায়গায় এসে বসল। “ সন্দীপ “শ্যামদা পেঁয়াজ লাও “ বলে হাঁক দিতে যাচ্ছিল , আমি থামিয়ে বললাম “ আমি নিয়ে আসছি।“ আমি ওদের রান্না ঘর চিনতাম। যেতে যেতে শুনলাম রাজা গাইছে “রূপ তেরা মস্তানা না মস্তানি, চাঁপা কিন্তু খাসা, কি বল? ও প্যায়ার মেরা ...।“ মাতালদের কথায় কান দেওয়ার মানে হয় কি? ওখান থেকে ওদের জন্য পেঁয়াজ নুন লেবু লঙ্কা সব নিয়ে এলাম। আসলে এই মদ গেলা আর তার সাথে আড্ডা আর রাত্রের খাওয়াটা ছাড়া আর এখন আমাদের সত্যিই কোনও এন্টারটেইনমেন্ট নেই। এটা যে করলাম এতে আমি মহান হলাম না, গ্রুপে থাকলে একজন আরেকজনের জন্য করেই থাকে। রাজা বলেছিল ওরা তিনজন আমাকে সার্ভ করে দেবে আমি তখন খেতে চাইলে, এখন আমি বাসন হাতে তিনজনকে পরিবেশন করছি। তিনজনে রাজার মতন মেজাজে খাচ্ছে। শালা। তবে ওদের ওপর আমার রাগ আসেনি। ওরা খেয়ে উঠে আঙুল দিয়ে ফ্যান্টাস্টিক খেয়েছে সেটা বুঝিয়ে ঘুমাতে চলে গেল। হায় আমার পোড়া কপাল। এখন আমি বসে একা একা খাচ্ছি। এদের একজনকেও আজ মন্দ লাগল না। খাওয়া শেষ করে আমি আমার ঘরে চলে এলাম। ওপরে ওঠার আগে একবার দেখেছিলাম তিনজনেরই ঘর বন্ধ। আলো আসছে না দরজার তলা দিয়ে।
পরের দিন সকালে রেডি হয়ে নিচে নেমে এসে থ মেরে গেছি। তিনজনেই রেডি। ওদের যে হ্যাংওভার হয় নি সেটা বোঝানোর জন্য এতটা না করলেও পারত। আবার সেই আগের মতন ভদ্র। আমরা একসাথে চা খেলাম। কেউ কারোর সাথে কথা বলছে না। সবাই চুপ। ছেলেরা নিজেরা কথা না বললে আমিই বা কি করে কথা বলি। রিক্সা হাজির ছিল। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর নিয়মমত আমি যখন আমার শেয়ারটা দিতে যাচ্ছি, আমাকে রাজা বলল, “থাক আজ তুই দিস না। আমি কালকের জন্য সরি।“ আমি জোড় করে আমার শেয়ারটা দিয়ে দিলাম। ও হাসপাতালে ঢুকতে ঢুকতে বলল “তুই আমাদের ওপর রাগ করে আছিস জানি। কিন্তু...।“ আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম “গুরু ভুল ধারণা, এক্কেবারে ভুল ধারণা। এক ফোটাও রাগ করে নেই। তোরা শালা শুধু আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করিস না আর আমাকে একঘরে করে দিস না। ব্যস। হল?” ও আমার হাতটা চেপে ধরে প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে ঢুকে গেল। আমাকে আগে ঢুকিয়ে দিয়ে বাকি দুজন কে কিসব বলল কানে কানে, ওরা এসে আমাকে একবার করে “সরি” বলে চলে গেল। রাহুল কাকুকে বিয়ে করে আমার মা তো কোনও দিন আমাকে সরি বলেনি। এরা কেন বলছে। সত্যি আশ্চর্য। ঝড়ের বেগে সময় এগোতে লাগল। দুপুরে লাঞ্চের সময় দেখলাম ওরা আমার সাথে আবার আগের মতই সাবলীল। থ্যাঙ্ক গড। আমি কিছুক্ষণ চুপ করে খাচ্ছিলাম। লক্ষ্য করলাম ওরা তিনজনেই চোরা চাহুনিতে আমাকে মাঝে মাঝে দেখছে। তবে ব্যবহার নর্মাল, মানে পুরো স্বাভাবিক। শালারা এখনও বুঝতে পারছে না যে আমার কিছুই মনে হয়নি কালকে ওদের মাতলামিতে? আবার একজন মরল। তবে আজ কোনও বাড়াবাড়ি হয়নি। আমরা ঘরে এসে খেয়ে শুতে গেলাম। মা শিখিয়েছিল, ছেলেরা যতক্ষণ না খাবে, তুমি রাত্রে খাবে না, আমিও রোজ ওদের সার্ভ করতে শুরু করলাম, “রাত্রের” পিকনিকের আগের রাত অব্দি শ্যামদার সাথেই সার্ভ করতাম। । ওদের খাওয়া হয়ে যেত। তবে ওরা শুত না। ওরা দাঁড়িয়ে থাকত, আমি খেতাম, উঠে চলে যেতাম, ওরা শুতে চলে যেত। ৩ দিন কেটে গেল। না সরি ৪ দিন। আমি আগের লাইনটা সংশোধন করতে পারতাম, ল্যাধ খেয়ে আর করিনি। ডেট দেখে বুঝলাম ৪ দিন হয়ে গেছে। সেদিন সকালে উঠে নিচে নেমেছি, আমাকে বলল, মানে রাজা, “আজ এনার্জি বাঁচিয়ে রাখিস আজ রাত্রে ফিরেই পিকনিক। “ আমি জিজ্ঞেস করলাম “শ্যামদা রাত্রে ওখানে রান্না করার বন্দবস্ত করছে?” “দূর পাগল, সে কোণও দিনও হয়? তবে আজে স্যারকে ম্যানেজ করে একফাকে কচি পাঁঠা কিনতে যাব।“ আমি বললাম “ আমাকে কত দিতে হবে বলে দিস।“ বলল “তোর মদ আছেই, তুই ৩৫০ টাকা দিয়ে দিলেই হবে। যদি বাঁচে ফেরত দিয়ে দেব। এখন না দিলেও পারিস।“ নেক্সট উইকে আবার করব যদি অবশ্য এইবারের টা জমে। আমার হাত খরচে নয় সেটা আগেই বলেছিলাম। অনেক গুলো টাকার নোট, মানে বেশ বড় বান্ডিল পড়েছিল আমার ব্যাগে। তাই স্পয়েল স্পোর্ট হওয়া সাজে না। হয়ত ওদের থেকে আমার ট্যাঁকে বেশী টাকা আছে। কেন বলছি , কারণ তখন এক টাকা খরচ করতে গেলেও ভাবতে হত। কিন্তু হ্যাঁ আমার নিজস্ব আকাউন্টে তখন সাড়ে উনিশ লাখ টাকা আছে, বাড়ি বেঁচে। সব ভেবেই বললাম, এখনই নিয়ে নে। ও বলল “ যা শালা মহারানী শপিঙে যাবে না আমাদের সাথে?” আমি বললাম “তোরা যাচ্ছিস কাজের সময়ে। তোরা ম্যানেজ করতে পারবি ফিরে এসে। আমাকে তাড়িয়ে দেবে দেরী দেখলে।“ আর সত্যি কথা হল, ডাক্তারিতে দেরী মানে মৃত্যু। ঠিক হল চারজনেই যাব। নইলে নয়। আমাকে মুরগি বানিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে পাঠিয়ে দিল স্যারের কাছে। আমি গিয়ে বললাম “স্যার আমরা পিকনিক করব।“ “কবে?” স্যারের স্বাভাবিক প্রশ্ন। আমি বললাম “আজকে, কাল তো আমাদের ওফ তাই আজ রাত্রেই , মানে”। স্যার যেন আমাকে জুতো পেটা করতে যাচ্ছিলেন। নেহাত মেয়ে বলে করলেন না বা বলা ভালো করতে পারলেন না। ওরা হলে করেই ছাড়তেন। “তো কি চাও?” স্যার জিজ্ঞেস করলেন। আমি ভাবছি কি ভাবে বলব যে বেড়িয়ে যেতে চাই। “যাও ওদের কে জিজ্ঞেস করে এসে বল। তোমাকে ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম...।“ আমি তো আগেই বলেছি আমি ভালো মেয়ে নই। আমি নির্লজ্জের মতন বাইরে এসেই (ওদের ইশারা দেখে) আবার ভেতরে ঢুকে গেলাম। “স্যার কাল এমারজেন্সি হলে একটু ম্যানেজ করে নেবেন। মানে আমরা বোধহয় আসছি না। (যদিও আমাদের ওফ তবু এমারজেন্সি হলে আসতেই হয়।) ও কে?” আমরা ভ্যানিস। স্যারের মুখটা দেখে একটু খারাপ লাগল কি? ফিরে এসে বলে গেলাম “সরি স্যার।“ যেতে যেতে শুনলাম স্যার কাউকে বলছেন “কাদের যে আজকাল সরকার পাঠায়, আমাদের সময় ......” আমরা তো ভ্যানিস।
বাজার থেকে অনেক কিছু কেনা হল। প্রায় ২ কিলো কচি পাঁঠা কিনলাম আমরা চাঁদা তুলে। আমাদের সেই বুক করা রিক্সাই এবারেও আমাদের সাথী। বাড়িতে একটা ফোন করে দিয়েছিলাম। শ্যামদাকে বলা ছিল এই রাতের বেলায় নদীর ধারে পিকনিকের ব্যাপারটা। কিন্তু শ্যামদা বললেন, ওখানে খাবার নিয়ে যাওয়া যাবে না। আমাদের ফিরে গিয়ে খেয়ে নিতে হবে। তারপর আমরা বাইরে থেকে তালা মেরে নদীর ধারে চলে যাব। তারপর যখন খুশি ফিরতে পারি ওনার আর আমাদের নিয়ে কোনও মাথা ব্যাথা নেই। সেদিন খুবই ভালো হাওয়া দিচ্ছিল। আমরা প্রত্যেকেই বেশ উত্তেজিত ছিলাম। শ্যামদা সন্ধ্যায় আমাদের বলে দিয়েছিলেন যে এই হাওয়া টা সুবিধের নয়। আজ বৃষ্টি হওয়ার চান্স আছে। আমাদের বারণ করছিল ওইদিকে যেতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বৃষ্টি হলে ভিজব। ঠাণ্ডা লাগার ওষুধ তো আছেই। সমস্যা টা কিসের। আর আমরা কেউ তেমন দুর্বল নই। ও হ্যাঁ একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, আমাদের কে মেসে নামিয়ে সন্দীপ ওদের রিক্সাওয়ালাটাকে নিয়ে কোথাও একটা গিয়েছিল। অবশ্য ফিরে এসেছিল ১০ মিনিটের মধ্যেই। আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওপরে ওঠার আগে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় গেলি রে? আর তো কিছু আনার নেই। ও আমাকে শুধু বলল “ সারপ্রাইজ।“ বাজারের একটা দোকান থেকে ওদের এক প্যাকেট সিগারেট কিনতে দেখেছিলাম। আমরা কেউই স্মোক করিনা। ওদের জিজ্ঞেস করলাম “তোরা কি স্মোক করিস নাকি?” রাজা চোখ টিপে আমাকে বলেছিল “সারপ্রাইজ।“ সত্যি আজ অনেক সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। এ এক দীর্ঘতম রাত। আমি ওপরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। একটা জিনিস ভালোই হয়েছে। ভরপেট খাওয়ার পর মদ খেলে অনেকটা টানা যায়। আর শরীরের উপর চাপও কম পড়ে। আর আমার খালি পেতে মদ খাওয়ার অভ্যেসও নেই। আমাদের যেন আর তর সইছে না। আমি ওপর থেকে শুনছিলাম ওরা বারবার শ্যামদাকে ডিনারের জন্য তাড়া দিচ্ছে। বেশ মজাই হচ্ছে। আমি এখানে আসা অব্দি মদ ছুঁই নি। আমার বেশ একটা মাতাল হওয়ার ইচ্ছে আসছে। আর তিনজন ছেলের সাথে আমি একা মেয়ে। ওদের সাথে মদ খাওয়ার মধ্যে একটা আলাদা সেক্সি ব্যাপার আছে। ওরা আমাকে নতুন করে চিনবে আর আমিও মদের ঠেকে ওদের কি কথা হয় জানতে পারব। মদ খেলে মনের অনেক কথাই বেড়িয়ে আসে। একটা লেভেলের পর মাতলামি ব্যাপারটা মাতালরা নিজেরা বেশ উপভোগই করে তাতে সন্দেহ নেই। অন্য লোকেরা অবশ্য বিরক্ত হয়। কিন্তু এখানে তো আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। তাই রেখে ঢেকে মাতলামি করতে হবে না। প্রাণ খুলে নষ্টামি করা যাবে। আউট হলে হব, কার বাপের কি। মন টা যে অনেক কিছু চাইছে, ঠিক কি যে চাইছে বোঝাতে পারব না। ৮ টা বেজে ৩০ মিনিটে নিচ থেকে আওয়াজ এল শ্যামদার। আরও ৩০ মিনিট লাগবে পাঁঠা সিদ্ধ হতে। আমি স্নান করে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছি। আজ আর ধোয়া কাঁচা করিনি। কাল তো সময় পাবই। আমি একটা স্লিভলেস কামিজ আর ক্যাপ্রি পরে নেমে এলাম। ক্যাপ্রি বা জিন্স পরে খারাপ রাস্তায় হাঁটা সোজা। অনেক কমফোর্টেবল। রাজা আর অরুণ পুরো রেডি। সন্দীপ নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে কিছু একটা করছে। রাজা বলল “ মালটা আসবে চাপ নিস না। তুই বস। “ দেখলাম রাজার ঘরের মেঝেতে একটা খবরের কাগজের ওপর ওদের বড় একটা হুইস্কির বোতল, আমার আনকোরা ভদকার বোতলটা চারটে ধোয়া কাঁচের গ্লাস, তিনটে বড় বড় ২ লিটারের জলের বোতল, খান দশেক লেবু, কাঁচা লঙ্কা, ৫ টা সোডার বোতল, একটা বিটনুনের জায়গা, গোলমুরিচ এই সব রাখা আছে। এছাড়া চিপস, চানাচুর এসব তো আছেই। রান্না যেখানে হচ্ছে সেখান থেকে মাতাল করা পাঁঠার গন্ধ আসছে, পেটের ভেতরটা কেমন জানি করছে। আমি রাজাকে জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম “ তোরা বিট নুন আর গোলমুরিচ দিয়ে হুইস্কি গিলবি?” ওরা আমাকে বলল “ না হে ডার্লিং ওটা তোমার জন্য। “ “আমার জন্য” আমি একটু আশ্চর্যই হলাম। বলল তোকে ঝাল ঝাল ভোদকার প্রিপারেশন খাওয়াব। অরুণ কে বলল “ যাওয়ার আগে লেবুগুল কাটিয়ে নিতে ভুলিস না। “ অরুণ লেবু গুলো নিয়ে রান্না ঘরের দিকে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছে। আমি বলেই ফেললাম “বেড়ে গন্ধ বেরচ্ছে না?” ও আমাকে বলল “সিদ্ধ টা ঠিক ঠাক হলেই হয়। আমি ওই একটা ব্যাপারেই টেনশন নি। “ একটু পরে অর্ধেক করে কাটা লেবুর টুকরো গুলো নিয়ে ফেরত এল অরুণ। আরও মিনিট পাঁচেক পর, দেখলাম সন্দীপ ঘামাতে ঘামাতে বেড়িয়ে এসেছে। দেখে মনে হল প্রচুর যুদ্ধ করে ফিরল। আজ কারেন্ট ছিল। তাও এত ঘামায় কেন মালটা। ইশারায় ওদের বোঝাল যে কাজ হয়ে গেছে। আমি বললাম “কি রে? কি করে এলি?” বলে সিগারেট বানানো কি মুখের কথা। আমি বললাম “ঠিক বুঝেছি তোরা ফুঁকবি আজ।“ অরুণ বলল “ফুঁকব বো তো বটেই, কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক সিগারেটের মতন সরল নয়।“ মুখের সামনে ডান হাতটা মুঠো করে ধোঁয়া ছাড়ার মতন করে একটা ইশারাটা করল যার মানে আমার জানা। সন্দীপ কোথাও গিয়ে গাঁজা সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছে। এই অজানা জায়গায় গাঁজার সন্ধান নিশ্চই ওই রিক্সাওয়ালাই দিয়েছে। আমি বললাম “তোদের এই গুনও আছে?” রাজা বলল “ দূর পাগল। তবে মদ টদ খাওয়া হলে একটু গাঁজা না হলে ঠিক চলে না। তুই চাইলে তুইই দুই টান মেরে দেখতে পারিস।“ আমি বললাম থাক “ আমার অল্পেই চড়ে যায়। তার সাথে আবার গাঁজা খেলে বমি হয়ে যাবে। “ রাজা বলল “ঠিক আছে, তাহলে দরকার নেই। তবে নদীর ধারে বসে নেশা চড়ার পর শখ হলে খেতে পারিস। যথেষ্ট আছে। আমি হাত দেখিয়ে বলে দিলাম থাক অনেক হয়েছে। ৯ টা বেজে ১০ এ শ্যামদা এসে আমাদের বললেন যে খাবার বাড়া হয়ে গেছে। কচি পাঁঠার ঝোল টা কিছু রেঁধেছিল সেদিন। আমরা প্রত্যেকেই যে কত কত খেলাম বলা যায় না। লোকগুলোর রান্নার হাত বেশ ভালোই। অন্যদিন হলে এত খাওয়ার পর আমি ঘুম ছাড়া কিছু ভাবতে পারতাম না। কিন্তু আজকের ব্যাপার আলাদা। আমাদের প্রত্যেকের কাছে টর্চ ছিল। ঠিক হল বসব মাটিতেই। কয়েকটা খবরের কাগজ নিয়ে নিলাম পাতার জন্য। টর্চ জ্বালিয়ে যাত্রা শুরু।
ঘুম যখন ভাঙল চোখ খুলে দেখলাম ঘর পুরো অন্ধকার, সন্ধ্যা হয়ে গেছে সেটা আর বলে দিতে হয় না। কানের পাশে প্রচণ্ড মশার ভোঁ ভোঁ শব্দ হচ্ছে। আমার গোটা খোলা হাত গুলো মশার কামড়ে চুল্কাচ্ছে। একটা পরিষ্কার সাদা চাদর আর মশারি ওই আলমারিটাতে রাখা ছিল। বের করে নেওয়া উচিত ছিল। এক কাপ চা পেলে মন্দ হয় না। পুরো হুঁশ আসার পর শুনলাম আমার ঘরের বন্ধ দরজায় দুম দুম করে বাড়ি মারছে কেউ বা কারা। রাজার গলা শুনতে পেলাম। বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়াতে যাব মাথায় ঘরে টাঙানো দড়িটাতে ঘষা খেল। আর কোথাও লাগাতে পারিনি দড়িটা। তড়িঘড়ি করে ছুটে গিয়ে সুইচবোর্ডে সুইচ অন করে হলদে বাল্ব টা জ্বালালাম। আমার শরীরে ম্যাড়ম্যাড়ে ভাবটা রয়েই গেছে। অসময়ে ঘুমানোর এই এক দোষ। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে দরজা খুললাম। রাজা বলল “ শালা ভাবলাম মড়ে পড়ে আছিস কিনা। কি ঘুমরে ভাই ...।“ ওর কথা মাঝ পথেই থেমে গেছে। ঘুম ঘুম চোখ বলে ব্যাপারটা অনুধাবন করতে একটু বেশীই সময় লাগল। ঘুমানোর সময় আমি ওপরে বা নিচে কোনও অন্তর্বাস পরে শুইনি। ঠিক করেছিলাম ঘর থেকে রাত্রে বেরনর আগে পরে বেরব। কিন্তু ব্যাপারটা আমার ঘন ঘুমের জন্য অন্যরকম হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি প্রায় দৌড়ে এসে দরজা খোলার জন্য আমর ব্রা হীন বুকদুটো অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ওঠানামা করছে এই চারটে প্রাণীর সামনে। ৪ জন বলতে শ্যমদাও ছিলেন। আমি যে ব্রা পরিনি সেটা বোধহয় স্পষ্ট। দেখলাম ওদের চোখগুলো খনিকের মধ্যে আমার স্তন আর তারপরেই আমার পিছনে ঘরের মধ্যে শুঁকাতে দেওয়া ব্রা আর প্যানটির উপরে দিয়ে ঘুরে এল। আমি লজ্জা ছাড়িয়ে নিজেই নিজের বুকের দিকে একবার চট করে দেখেনিলাম। প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি স্তন বিভাজিকা উন্মুক্ত, একটু আধতু নয় পুরো অর্ধেক। বড্ড বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। জেনে বুঝে করিনি এটা। কিন্তু হয়ে গেছে। আমি লজ্জার মাথা খেয়ে কাঁধের কাছে টপ টা একটু উঠিয়ে নিলাম। টপের কাপড়ের অনুভুতিতে বুঝলাম আমার স্তন বিভাজিকা মোটামুটি ঢেকে গেছে। এই আধুনিক টপগুলোর একটা স্টাইলই বলুন বা ব্যথাই বলুন এগুলো বগলের নিচে অনেক সময় এত খোলা হয় যে ঠিক করে না পরলে বুকের প্রায় মাঝখান অব্দি অনাবৃত হয়ে যায়। সেরকম জায়গায় পরে গেলে এটা ফ্যাশন। কিন্ত এই মুহূর্তে আমার মাথায় সেক্স বা শরীর দেখানোর কোনও ইচ্ছা আসেনি। তাই এখন এটা লজ্জার। পরিস্থিতি আর কি। আমার স্তন বিভাজিকা ঢেকে গেলেও বুঝলাম ওদের চোখ আমার অনাবৃত বগলের জায়গায় ঘোড়ার ফেরা করছে। না আমি ক্যালাসের মতন হাত তুলে দাঁড়িয়ে ছিলাম না। কিন্তু হাত শরীরের সাথে চেপে রাখলেও এইসব ড্রেসে বোঝা শরীরের বগলের নিচের অনাবৃত জায়গাগুলো বেশ ভালো ভাবেই দেখা যায়। অনেক সময় স্তনের পাশের দিকের প্রসারিত হওয়া অংশের আভাস বোঝা যায়। আমি হাত দুটো কে শরীরের পাশে আরও আঁটসাঁট করে চেপে ধরে বললাম “কটা বাজে রে?” ওরা আমার শরীরের থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিল। ওদের মুখ দেখে বুঝতে পারলাম ওদের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে ওরা বাকি কথাগুলো বলল এদিক ওদিক তাকিয়ে, আমার শরীরের থেকে চোখ যতটা পারা যায় অন্য দিকে তাকিয়ে। আমি আরেকবার সাবধান হওয়ার জন্য কাঁধের কাছে হাত নিয়ে টপের সামনের দিকটা তুলে নিলাম। ওরা আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরেই বলল “ নিচে আয়। পৌনে ৯ টা বেজে গেছে। এরা এখনই খেতে বলছে। আমরা একটু মদ গিলব। তুই জয়েন করতে চাইলে আয়। আমি বললাম “আমি আসছি, কিন্তু শোননা তার আগে একটু চা পাওয়া যাবে?” ওরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে “উফফ গার্লস উইল বি গার্লস। এখন চা? দেখছি।“ ওরা চলে গেল। আমি তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে ব্যাগ থেকে হ্যান্ড আয়নাটা বের করে একবার নিজেকে দেখলাম। না স্তনের কিছুই পাশ থেকে বেড়িয়ে ছিল না কারণ আমার স্তন তখনও অতটা ভরাট নয়, কিন্তু বগলের কাছটা এতটা ঢিলে যে পাশের অনেকটা অংশই অনাবৃত হাতের তলায়। যদিও এটা এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার এমন টপ আছে যাতে পেটের অর্ধেকটা অব্দি বগলের নিচের শরীরের পাশের জায়গা অনাবৃত থাকে। কিন্তু সেইগুলো পার্টি বা বাইরে বেড়াতে যাওয়া ছাড়া অন্তত এরকম জায়গায় পরার মতন নয়। কিন্তু এটা তেমন কিছু নয়। এটুকু খোলা ড্রেস পরতে, যদি এটাকে খোলামেলা বলা যায় তো, আমি কোনও রকম অস্বাচ্ছন্দ্য সত্যি বলতে ফিল করিনা। কিন্তু হ্যাঁ, ব্রা হীন বুকের লাফালাফি ৪ জোড়া চোখের সামনে সত্যিই লজ্জার আর অস্বস্তিকর। আর তার থেকেও লজ্জার বা অস্বস্তিকর ব্যাপারটা হল, আমার ব্রা হীন স্তনের বোঁটা গুলো শক্ত হয়ে টপের আবরণ ভেদ করে প্রস্ফুটিত হয়েছিল ওদের চোখের সামনে। অনেক সময় ঘুম থেকে উঠলে আমাদের বোঁটা এরকম পাথরের মতন শক্ত হয়ে থাকে। যেমন আপনার ওটাও শক্ত হয়ে থাকে ঘুম থেকে ওঠার সময় অনেক সময়। ওইগুলো নিশ্চই ওরা দেখেছে। ওরা দেখেছে তাতে সন্দেহ নেই। ছেলেরা এইসব দেখতে ভুল করে না। আমার স্তনবৃন্তের শক্ত হয়ে যাওয়াটা দেখেছে ওরা, বা হতে পারে আমার শক্ত বোঁটাগুলোর সাইজ আর আকার বুঝেছে। সব মেয়েদেরই বোঁটা বাইরে থেকে দেখতে গোল নুরির মতন লাগে। এতে কোনও নতুনত্ব নেই। কিন্তু এই প্রদর্শনটা আমি ইচ্ছা করে করিনি। এরপর থেকে একটু সতর্ক হতে হবে। আমি তাড়াতাড়ি ড্রেস ছেড়ে টপ আর লেগিন্সের নিচে নতুন ব্রা আর প্যানটি পরে নিলাম। না টপটা ছাড়ার কোনও কারণ দেখিনি। যদি অসাবধানতায় হাত উঠলে আমার নির্লোম পরিষ্কার বগল বা স্তনের পাশের জায়গাগুলোর একটু দর্শন পায় তাতে আমি এই মুহূর্তে বা হয়ত কখনই কোণও অস্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি না। সেটা ঠিক আছে। আমি ঘরে তালা দিয়ে নিচে নেমে গেলাম। ওদের চোখগুলো আমার স্তনের আর বগলের আর বগলের নিচে বুকের নিচ অব্দি শরীরের পাশের অনাবৃত নগ্ন অংশের ওপর দিয়ে চলা ফেলা করল বেশ কয়েকবার সেটা অনুধাবন করেছিলাম। যাইহোক কেউ সরাসরি তাকাচ্ছিল না। ওরা ওদের পেগ নিয়ে মোটামুটি রেডি। আমি বললাম “আগে চা খাই তারপর ইচ্ছে হলে খাব। শরীরটা ম্যাড়ম্যাড় করছে ভীষণ।“ ওরা বলল “সব রেডি আছে। খেলে বলিস। বানিয়ে দেওয়া যাবে।“ আমার জন্য চা দিয়ে গিয়েছিল শ্যামদা। চায়ে চুমুক দিয়ে যেন ধরে প্রাণ ফিরে এল। না সেই রাতে আর আমার মদ খাওয়ার ইছা আসেনি। আসলে শরীরটা পুরো ছেড়ে দিয়েছিল। আমি ডিনারটা ওদের সাথেই করেছিলাম। কিন্তু ডিনারের আগে ওদের সাথে যতক্ষণ বসে ছিলাম বেশ কয়েক বার ওদের তিনজনের চোখ যে আমাকে আপাদমস্তক মেপেছে সেইটা লক্ষ্য করার জন্য গোয়েন্দার চোখ লাগে না। কিন্তু ওদের ভাবখানা ছিল এমন যে ওরা ওদের গল্প নিয়ে ব্যস্ত। তবে হ্যাঁ অনেক মজার কথা হয়েছিল সেদিন। কিছু আমাদের নিজেদের নিয়ে, কিছু স্যার বা ম্যাডামদের নিয়ে কিছু অন্যান্য ছেলে মেয়েদের নিয়ে। প্রথম দিনেই অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে দেখে আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আসর ভেঙে দিলাম। শ্যামদাকে বলা ছিল “সকাল সকাল রিক্সা জোগাড় করে রাখতে।“ শ্যামদা বলেছিলেন “ খুব সকালে রিক্সা পাওয়াটা সমস্যা হবে না। কারণ তখন রিক্সা গুলো বেড়িয়ে কাজের দিকে যায়। দুটো রিক্সা ধরে নিলেই হয়ে যাবে।“ বহুত আচ্ছা। রাতের খাওয়াটা ভালোই হয়েছিল। আমার শরীরের ম্যাড়ম্যাড়ে ভাবটা তখনও কাটেনি। মশারি টাঙ্গিয়ে শোয়ার সাথে সাথে ঘুমের মধ্যে ডুবে গেলাম।
আমার ঘড়িতে আল্যার্ম দেওয়াই ছিল। উঠে ভাবলাম এক কাপ চা খাব। নিচে চায়ের জন্য বলতে গিয়ে দেখি ছেলেগুলো খালি গায়ে তোয়ালে পরে এদিক ওদিক হেঁটে বেড়াচ্ছে। রাজার তো জাঙ্গিয়াটাও নির্লজ্জের মতন তোয়ালের কোমর থেকে বেড়িয়ে আছে। অন্য সময় হলে ঝারি মারতাম। আজ নয়। লজ্জায় আর চা চাইতে পারলাম না। এরপর লজ্জা কাটাতে হবে জানি। কিন্তু আজ নয়। চা না নিয়েই উপরে উঠে এলাম মাঝ সিঁড়ি থেকে। প্রাতঃকৃত্য সেরে, স্নান করে একেবারে ফ্রেশ হয়ে হাসপাতালের জন্য রেডি হয়ে নিচে নামলাম। ওরাও মোটামুটি তৈরি। সবার জন্য চা জলখাবার দিয়ে গেছে। জলখাবারটা তেমন আহামুরি কিছু ছিল না তাই সেটা নিয়ে আর নাই বা বললাম। রিক্সা হাজির ছিল! আমি আর রাজা আবার আগের দিনের মতন একই রিক্সায় উঠলাম। আর সন্দীপ আর অরুণ অন্যটায়। পথে খুব একটা কথা হয়নি। রিক্সা ছুটে চলল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। অনেক কান্না, ঘাম, চীৎকার, হতাশা, সাফল্য, পরাজয়, হাঁসি, উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, আবেগ, দৌড়াদৌড়ী, পীড়াপীড়ি আর সব থেকে বড় কথা নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে দিনটা কেটে গেল। আমরা লাঞ্চ করব হাসপাতালেই সেটা তো জানা ব্যাপার। সন্ধ্যে ছটার পর থেকে আমার শরীর ছেড়ে দিতে শুরু করেছিল। এত অভিজ্ঞতা এক দিনের জন্য বড্ড বেশী। তবে ভীষণ অন্যরকম রুরাল জায়গা আর সাথে একজন মেয়ে আছে বলে আমাদের দলটার রাত্রিবাস করতে হল না হাসপাতালে। কোনও দিনও করতে হয়নি। এটা খুবই অবিশ্বাস্য, কারণ সকলকে নাইট ডিউটি দিতে হয় এই সময় অন্যান্য ডাক্তারদের সাথে, কিন্তু আমাদের হাসপাতালে থাকতে হয়েছে কোনও কোনও দিন প্রায় রাত ১১ টা অব্দি, কিন্তু রাত্রিবাস করতে হয়নি আমাদের কাউকে। সকালে আসা রিক্সাগুলো শ্যামদা ঠিক করেই রেখেছিল রাত্রে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওরা তিনবার এসে আমাদের খোঁজ করে ফিরে গেছে। শেষে আমরা যখন প্রথম দিনের কুরুক্ষেত্র শেষ করে বেরলাম তখন রাত প্রায় ১০ টা। ওরা আমাদের পৌঁছে দিয়ে হিসাব বুঝে চলে গেল। আমরা বলে দিয়েছিলাম কাল সকালে ঠিক এই সময়েই এস। আসার পথে আমার আর রাজার কোনও কথা হয়নি। পৌঁছানোর পর আমি সিঁড়িতে উঠতে উঠতে ওদের বললাম “ আজ অনেক কিছু শেখা হল তাই না?” সন্দীপ বলল “ দেখা হল, সঠিক করে বলতে গেলে।“ আমি ঘরে গিয়ে ফ্রেশ জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে গিয়ে পরনের জামা কাপড় সব ছেড়ে ফেললাম। সব ঘামে আর কান্নায় ভেজা জামাকাপড়, কালকের পরা ঘরের টপ আর লেগিন্স আর ভেতরে পরা অন্তর্বাস ধুয়ে, শেষে নিজের অভিজ্ঞতা আর জ্ঞানে ভরা শরীরটাকে ঠাণ্ডা জলে সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে নতুন বস্ত্রে নিজেকে ঢেকে বেড়িয়ে এলাম। আজকে কি পরেছিলাম সেটা বলার প্রয়োজন নেই, কারণ এই প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা আর অভিজ্ঞতার ব্যথা আমাদের এতটা গ্রাস করেছিল যে না কারোর আমার শরীরের ওপর বা আমি কি পরেছি বা কিছু দেখা যাচ্ছে কিনা সেই ব্যাপারে কোনও নজর ছিল, না আমার ওদের বা আমার নিজের শরীরের ওপর কোনও নজর ছিল। ঘরে এসে ভিজে জামা কাপড় গুলো মেলে দিয়ে, কালকের মেলা শুঁকনো ব্রা আর প্যানটিটাকে আলমারিতে রেখে চুল আঁচড়ে নিলাম। আমি রোজ মাথায় জল দি না। কিন্তু এখানে মনে হচ্ছে রোজই মাথায় শ্যাম্পু করতে হবে। নইলে এই ক্লেদ যাবে না। আমার মধ্যে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। আমার ভেতরে একটা দিক বলছে একটু একলা শুয়ে ঘুমিয়ে নি। আরেকটা দিক বলছে একা থাকতে পারব না। একটু ওদের সাহচর্য পেলে আরও ভালো থাকব। শারীরিক আর মানসিক পরিশ্রমের ঝড় বয়ে গেছে শরীরের ওপর দিয়ে। একবার শুতে গিয়ে ভাবলাম, সবাই ক্লান্ত, আমি এখন শুয়ে থাকলে ওরা আবার আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকবে, আর ঘুমিয়ে পড়লে তো কথাই নেই। না নিচে গিয়ে ওদের সাথেই বসি। বড্ড একলা লাগছে, অদিতি থাকলে আজ ওকে জড়িয়ে ধরে শুতাম, না ও এখন এনগেজড। নিচে নেমে আমার চোখ মাথায় উঠে গেছে। আপনার ক্ষেত্রে অন্য কিছু মাথায় উঠে যেত। আমার সেটা নেই। তাই চোখই সই। হাহা। ও হ্যাঁ আমি কিছু ব্যাপারে খুবই গোছানো, যাওয়ার আগে আমি মশারি খাঁটিয়ে বিছানা তৈরি করে গিয়েছিলাম। আজ আর আমার ঘরে কেউ হানা দেবে না সেই ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত।
নিচে নেমে দেখলাম সন্দীপের ঘরে কোনও আলো নেই যদিও ঘর খোলা। ভাবলাম একবার আওয়াজ দিয়ে দেখব কিনা, ব্যাটা হয়ত ঘুমাচ্ছে। কিন্তু রাজার ঘর থেকে গলার শব্দ পেয়ে আর আলো দেখে ওর ঘরের দিকেই চলে গেলাম। হে ভগবান। তিনটে ছেলে গতকালের হুইস্কির বোতল খুলে বসেছে। একটা খালি বিয়ারের বোতল মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বুঝলাম তিনজনে মিলে শেষ করেছে। ওদের তেস্টা মেটেনি। তাই কালকের আধ খাওয়া হুইস্কিটা খুলে বসেছে। খুব একটা বেশী পেগ মারার সময় ওরা পায়নি। কিন্তু শরীর আর মন আর সবথেকে বড় কথা মাথা, এগুলো ক্লান্ত থাকলে যা হয় আর কি, বোধহয় অল্পেই চড়ে গেছে। খালি পেটও একটা কারণ। তিনজনেই খালি গায়ে তোয়ালে পরে হস্টেলে যেমন থাকে সেইমতন বসে আছে। রাজা তো চেয়ারের ওপর পা তুলে এমন ভাবে বসে ছিল যে ওর তোয়ালের দুটো পাড় দুদিকে সরে গিয়ে আকাশী রঙের জাঙ্গিয়া ঢাকা যৌনদেশ তোয়ালে থেকে সম্পূর্ণ বেড়িয়ে রয়েছে। আমাকে দেখেই তিনজনে তোয়ালে ঠিক করে নিল। রাজা বেশ অর্ডারের স্বরেই বলল, “শ্যামদাকে কাল সকাল সকাল উঠে ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে বলে ওকে বলেছি আমার মানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। তোর খাবার ও রাখা আছে। খেয়ে নে। আমরা সার্ভ করে দিচ্ছি। “ ওর গলা ধরা, বেশ নেশা চড়েছে সেটা আর বলে দিতে হয় না। চোখ স্বাভাবিক আছে এখনও। আসলে ওরা তিনজনেই নিজেদের জীবনে কোনও দিন মৃত্যু দেখেনি। বড়লোকদের বাড়িতে চুলের নিচে পাক ধরলে ডাক্তার ডাকা হয়। এইটাই ওরা দেখে এসেছে। আর আমি দেখেছি লোকদের নাভিশ্বাস ওঠা পর্যন্ত ডাক্তারের কাছে যায় না। অবশ্য তারপর অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের কিছু করারও থাকেনা। বিশেষ করে যদি ওটা ক্রনিক রোগ হয় তো। আজ ওরা তিনটে মৃত্যু দেখেছে। দুজন মহিলা, আর একটা ১১ বছরের শিশু। শিশুদের কোনও জাত হয় না, লিঙ্গান্তর(মেডিক্যালই হয় যদিও) বা ভেদাভেদ হয় না, তাই শুধু শিশুই বললাম। আরেকজন আমরা জানি কাল মারা যাবেন, তিনি অবশ্য বলা যায় পৃথিবীর বোঝা (না খারাপ ভাববেন না, এটা সাধারণ কথা মাত্র) কারণ শরীর স্বাস্থ্য সব গেছে, বয়স ৯১। এইবার যাবেন। কাল না হলেও পরশু। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হল, আমরা যতদিন ছিলাম উনি বেঁচেই ছিলেন। অদ্ভুত বিধির লিখন। ওরা রীতিমত উচ্চস্বরে কথা বলছিল। আমি কয়েকবার ওদের বলেছি, একটু নিচু গলায় কথা বলতে। আমাকে ওরা থামিয়ে দিয়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সন্দীপ উঠে দাঁড়িয়ে বাথরুমে যেতে গিয়ে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। বাকিরা রে রে করে উঠলেও ওদের দৌড়ে গিয়ে ধরার ক্ষমতা তখন আর নেই। আমিই ওদের মধ্যে একমাত্র সুস্থ। আমি প্রায় লং জাম্প দিয়ে সন্দীপকে গিয়ে ধরলাম। সন্দীপ আমাকে প্রায় জড়িয়ে ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল “কি ভাবছিস আমি মাতাল? আমি বেশ সুস্থ আছি।“ কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম “হ্যাঁ তুই ঠিকই আছিস।“ সন্দীপ বলল “আই অ্যাম ডান ফর দি ডে। “ ও চলে যেতেই বাকি দুজনের যেন হুঁশ এল। অরুণ জড়ানো গলায় বলল “এই সন্দীপ না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে বমি করবে না তো?” এটা আমিও জানি এটুকু খেয়ে বমি হবে না। না ওকে খাওয়াতেই হবে রাজা সিদ্দান্ত নিল। দুজন টলতে থাকা ছেলে আমার কাঁধে হাত রেখে, সেই একবারের জন্য ফিল করলাম আমি স্লিভলেস না পরলেই পারতাম, ও হ্যাঁ যা বলছিলাম ওরা আমার নগ্ন কাঁধে হাত রেখে আমাকে প্রায় দুজনের মাঝে জড়িয়ে ধরে সন্দীপের ঘরের দিকে চলল। কেউ ঘরে ঢুকবে না। ঘরের দরজা হাট করে খোলা, ভেতরে অন্ধকার। কিন্ত কেউ ঘরে ঢুকবে না। সন্দীপের প্রাইভেসি তারা নষ্ট করতে চায় না, আর সেটা ওরা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে এমন স্বরে বলছে যে হোয়াইট হাউসে ঘুমিয়ে থাকার রাষ্ট্রপতিরও ঘুম ভেঙে যাবে। মাতালদেড় ইমশান নিয়ে আরেকটা বই লেখা যায়। আমি বললাম “আমি গিয়ে দেখি?” রাজা বলল “তুই সত্যি খুব ভালো মেয়ে জানিস, তুই যাবি, যা। দাঁড়া, বেশী দেখিস না,“, আমি বলতে যাচ্ছিলাম কালকে শালা তাহলে ওইভাবে তাকিয়ে ছিলিস কেন রে? আমি ঢুকে দেওয়াল হাতরে সুইচবোর্ডে বোতাম টিপলাম। আলো হল ঘর। সন্দীপ নেই। বেড়িয়ে এসে বললাম “ ও ঘরে নেই।“ খোঁজ খোঁজ, শেষে দেখলাম ছেলেদের জন্য বরাদ্দ বাথরুমে গিয়ে বাবাধন মেঝেতে বসে ঘুমাচ্ছে। তিনজন মিলে তাকে টেনে তোলা হল। যা দেখার আমি আগেই দেখেছি। রাজা আমাকে অন্যদিকে তাকাতে বলে ওর জাঙ্গিয়ার ওপর ওর তোয়ালে টা বেঁধে দিল। সন্দীপের তখন হুঁশ এসেছে। ও আমাকে দেখে বলল “ মহারানী, ক্ষমা চাই।“ রাজা ওকে বলল “চুপ, মদ খেয়ে আছিস কথা বলবি না। চুপ।“ রাজা নিজেও টলে চলেছে। সন্দীপ “সরি স্যার বলে মুখে আঙুল দিয়ে কার্টুনের মতন দাঁড়িয়ে আছে। “ রাজা ওকে নিয়ে আবার ওর ঘরের দিকে যাচ্ছিল, আমি বললাম “ কাল সকালে হাসপাতাল আছে খেয়াল আছে? এইবার খাবেন না?” “ও হ্যাঁ তাও আছে। তিন জনে আমার পিছন পিছন খাওয়ার জায়গায় এসে বসল। “ সন্দীপ “শ্যামদা পেঁয়াজ লাও “ বলে হাঁক দিতে যাচ্ছিল , আমি থামিয়ে বললাম “ আমি নিয়ে আসছি।“ আমি ওদের রান্না ঘর চিনতাম। যেতে যেতে শুনলাম রাজা গাইছে “রূপ তেরা মস্তানা না মস্তানি, চাঁপা কিন্তু খাসা, কি বল? ও প্যায়ার মেরা ...।“ মাতালদের কথায় কান দেওয়ার মানে হয় কি? ওখান থেকে ওদের জন্য পেঁয়াজ নুন লেবু লঙ্কা সব নিয়ে এলাম। আসলে এই মদ গেলা আর তার সাথে আড্ডা আর রাত্রের খাওয়াটা ছাড়া আর এখন আমাদের সত্যিই কোনও এন্টারটেইনমেন্ট নেই। এটা যে করলাম এতে আমি মহান হলাম না, গ্রুপে থাকলে একজন আরেকজনের জন্য করেই থাকে। রাজা বলেছিল ওরা তিনজন আমাকে সার্ভ করে দেবে আমি তখন খেতে চাইলে, এখন আমি বাসন হাতে তিনজনকে পরিবেশন করছি। তিনজনে রাজার মতন মেজাজে খাচ্ছে। শালা। তবে ওদের ওপর আমার রাগ আসেনি। ওরা খেয়ে উঠে আঙুল দিয়ে ফ্যান্টাস্টিক খেয়েছে সেটা বুঝিয়ে ঘুমাতে চলে গেল। হায় আমার পোড়া কপাল। এখন আমি বসে একা একা খাচ্ছি। এদের একজনকেও আজ মন্দ লাগল না। খাওয়া শেষ করে আমি আমার ঘরে চলে এলাম। ওপরে ওঠার আগে একবার দেখেছিলাম তিনজনেরই ঘর বন্ধ। আলো আসছে না দরজার তলা দিয়ে।
পরের দিন সকালে রেডি হয়ে নিচে নেমে এসে থ মেরে গেছি। তিনজনেই রেডি। ওদের যে হ্যাংওভার হয় নি সেটা বোঝানোর জন্য এতটা না করলেও পারত। আবার সেই আগের মতন ভদ্র। আমরা একসাথে চা খেলাম। কেউ কারোর সাথে কথা বলছে না। সবাই চুপ। ছেলেরা নিজেরা কথা না বললে আমিই বা কি করে কথা বলি। রিক্সা হাজির ছিল। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর নিয়মমত আমি যখন আমার শেয়ারটা দিতে যাচ্ছি, আমাকে রাজা বলল, “থাক আজ তুই দিস না। আমি কালকের জন্য সরি।“ আমি জোড় করে আমার শেয়ারটা দিয়ে দিলাম। ও হাসপাতালে ঢুকতে ঢুকতে বলল “তুই আমাদের ওপর রাগ করে আছিস জানি। কিন্তু...।“ আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম “গুরু ভুল ধারণা, এক্কেবারে ভুল ধারণা। এক ফোটাও রাগ করে নেই। তোরা শালা শুধু আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করিস না আর আমাকে একঘরে করে দিস না। ব্যস। হল?” ও আমার হাতটা চেপে ধরে প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে ঢুকে গেল। আমাকে আগে ঢুকিয়ে দিয়ে বাকি দুজন কে কিসব বলল কানে কানে, ওরা এসে আমাকে একবার করে “সরি” বলে চলে গেল। রাহুল কাকুকে বিয়ে করে আমার মা তো কোনও দিন আমাকে সরি বলেনি। এরা কেন বলছে। সত্যি আশ্চর্য। ঝড়ের বেগে সময় এগোতে লাগল। দুপুরে লাঞ্চের সময় দেখলাম ওরা আমার সাথে আবার আগের মতই সাবলীল। থ্যাঙ্ক গড। আমি কিছুক্ষণ চুপ করে খাচ্ছিলাম। লক্ষ্য করলাম ওরা তিনজনেই চোরা চাহুনিতে আমাকে মাঝে মাঝে দেখছে। তবে ব্যবহার নর্মাল, মানে পুরো স্বাভাবিক। শালারা এখনও বুঝতে পারছে না যে আমার কিছুই মনে হয়নি কালকে ওদের মাতলামিতে? আবার একজন মরল। তবে আজ কোনও বাড়াবাড়ি হয়নি। আমরা ঘরে এসে খেয়ে শুতে গেলাম। মা শিখিয়েছিল, ছেলেরা যতক্ষণ না খাবে, তুমি রাত্রে খাবে না, আমিও রোজ ওদের সার্ভ করতে শুরু করলাম, “রাত্রের” পিকনিকের আগের রাত অব্দি শ্যামদার সাথেই সার্ভ করতাম। । ওদের খাওয়া হয়ে যেত। তবে ওরা শুত না। ওরা দাঁড়িয়ে থাকত, আমি খেতাম, উঠে চলে যেতাম, ওরা শুতে চলে যেত। ৩ দিন কেটে গেল। না সরি ৪ দিন। আমি আগের লাইনটা সংশোধন করতে পারতাম, ল্যাধ খেয়ে আর করিনি। ডেট দেখে বুঝলাম ৪ দিন হয়ে গেছে। সেদিন সকালে উঠে নিচে নেমেছি, আমাকে বলল, মানে রাজা, “আজ এনার্জি বাঁচিয়ে রাখিস আজ রাত্রে ফিরেই পিকনিক। “ আমি জিজ্ঞেস করলাম “শ্যামদা রাত্রে ওখানে রান্না করার বন্দবস্ত করছে?” “দূর পাগল, সে কোণও দিনও হয়? তবে আজে স্যারকে ম্যানেজ করে একফাকে কচি পাঁঠা কিনতে যাব।“ আমি বললাম “ আমাকে কত দিতে হবে বলে দিস।“ বলল “তোর মদ আছেই, তুই ৩৫০ টাকা দিয়ে দিলেই হবে। যদি বাঁচে ফেরত দিয়ে দেব। এখন না দিলেও পারিস।“ নেক্সট উইকে আবার করব যদি অবশ্য এইবারের টা জমে। আমার হাত খরচে নয় সেটা আগেই বলেছিলাম। অনেক গুলো টাকার নোট, মানে বেশ বড় বান্ডিল পড়েছিল আমার ব্যাগে। তাই স্পয়েল স্পোর্ট হওয়া সাজে না। হয়ত ওদের থেকে আমার ট্যাঁকে বেশী টাকা আছে। কেন বলছি , কারণ তখন এক টাকা খরচ করতে গেলেও ভাবতে হত। কিন্তু হ্যাঁ আমার নিজস্ব আকাউন্টে তখন সাড়ে উনিশ লাখ টাকা আছে, বাড়ি বেঁচে। সব ভেবেই বললাম, এখনই নিয়ে নে। ও বলল “ যা শালা মহারানী শপিঙে যাবে না আমাদের সাথে?” আমি বললাম “তোরা যাচ্ছিস কাজের সময়ে। তোরা ম্যানেজ করতে পারবি ফিরে এসে। আমাকে তাড়িয়ে দেবে দেরী দেখলে।“ আর সত্যি কথা হল, ডাক্তারিতে দেরী মানে মৃত্যু। ঠিক হল চারজনেই যাব। নইলে নয়। আমাকে মুরগি বানিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে পাঠিয়ে দিল স্যারের কাছে। আমি গিয়ে বললাম “স্যার আমরা পিকনিক করব।“ “কবে?” স্যারের স্বাভাবিক প্রশ্ন। আমি বললাম “আজকে, কাল তো আমাদের ওফ তাই আজ রাত্রেই , মানে”। স্যার যেন আমাকে জুতো পেটা করতে যাচ্ছিলেন। নেহাত মেয়ে বলে করলেন না বা বলা ভালো করতে পারলেন না। ওরা হলে করেই ছাড়তেন। “তো কি চাও?” স্যার জিজ্ঞেস করলেন। আমি ভাবছি কি ভাবে বলব যে বেড়িয়ে যেতে চাই। “যাও ওদের কে জিজ্ঞেস করে এসে বল। তোমাকে ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম...।“ আমি তো আগেই বলেছি আমি ভালো মেয়ে নই। আমি নির্লজ্জের মতন বাইরে এসেই (ওদের ইশারা দেখে) আবার ভেতরে ঢুকে গেলাম। “স্যার কাল এমারজেন্সি হলে একটু ম্যানেজ করে নেবেন। মানে আমরা বোধহয় আসছি না। (যদিও আমাদের ওফ তবু এমারজেন্সি হলে আসতেই হয়।) ও কে?” আমরা ভ্যানিস। স্যারের মুখটা দেখে একটু খারাপ লাগল কি? ফিরে এসে বলে গেলাম “সরি স্যার।“ যেতে যেতে শুনলাম স্যার কাউকে বলছেন “কাদের যে আজকাল সরকার পাঠায়, আমাদের সময় ......” আমরা তো ভ্যানিস।
বাজার থেকে অনেক কিছু কেনা হল। প্রায় ২ কিলো কচি পাঁঠা কিনলাম আমরা চাঁদা তুলে। আমাদের সেই বুক করা রিক্সাই এবারেও আমাদের সাথী। বাড়িতে একটা ফোন করে দিয়েছিলাম। শ্যামদাকে বলা ছিল এই রাতের বেলায় নদীর ধারে পিকনিকের ব্যাপারটা। কিন্তু শ্যামদা বললেন, ওখানে খাবার নিয়ে যাওয়া যাবে না। আমাদের ফিরে গিয়ে খেয়ে নিতে হবে। তারপর আমরা বাইরে থেকে তালা মেরে নদীর ধারে চলে যাব। তারপর যখন খুশি ফিরতে পারি ওনার আর আমাদের নিয়ে কোনও মাথা ব্যাথা নেই। সেদিন খুবই ভালো হাওয়া দিচ্ছিল। আমরা প্রত্যেকেই বেশ উত্তেজিত ছিলাম। শ্যামদা সন্ধ্যায় আমাদের বলে দিয়েছিলেন যে এই হাওয়া টা সুবিধের নয়। আজ বৃষ্টি হওয়ার চান্স আছে। আমাদের বারণ করছিল ওইদিকে যেতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বৃষ্টি হলে ভিজব। ঠাণ্ডা লাগার ওষুধ তো আছেই। সমস্যা টা কিসের। আর আমরা কেউ তেমন দুর্বল নই। ও হ্যাঁ একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, আমাদের কে মেসে নামিয়ে সন্দীপ ওদের রিক্সাওয়ালাটাকে নিয়ে কোথাও একটা গিয়েছিল। অবশ্য ফিরে এসেছিল ১০ মিনিটের মধ্যেই। আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওপরে ওঠার আগে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় গেলি রে? আর তো কিছু আনার নেই। ও আমাকে শুধু বলল “ সারপ্রাইজ।“ বাজারের একটা দোকান থেকে ওদের এক প্যাকেট সিগারেট কিনতে দেখেছিলাম। আমরা কেউই স্মোক করিনা। ওদের জিজ্ঞেস করলাম “তোরা কি স্মোক করিস নাকি?” রাজা চোখ টিপে আমাকে বলেছিল “সারপ্রাইজ।“ সত্যি আজ অনেক সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। এ এক দীর্ঘতম রাত। আমি ওপরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। একটা জিনিস ভালোই হয়েছে। ভরপেট খাওয়ার পর মদ খেলে অনেকটা টানা যায়। আর শরীরের উপর চাপও কম পড়ে। আর আমার খালি পেতে মদ খাওয়ার অভ্যেসও নেই। আমাদের যেন আর তর সইছে না। আমি ওপর থেকে শুনছিলাম ওরা বারবার শ্যামদাকে ডিনারের জন্য তাড়া দিচ্ছে। বেশ মজাই হচ্ছে। আমি এখানে আসা অব্দি মদ ছুঁই নি। আমার বেশ একটা মাতাল হওয়ার ইচ্ছে আসছে। আর তিনজন ছেলের সাথে আমি একা মেয়ে। ওদের সাথে মদ খাওয়ার মধ্যে একটা আলাদা সেক্সি ব্যাপার আছে। ওরা আমাকে নতুন করে চিনবে আর আমিও মদের ঠেকে ওদের কি কথা হয় জানতে পারব। মদ খেলে মনের অনেক কথাই বেড়িয়ে আসে। একটা লেভেলের পর মাতলামি ব্যাপারটা মাতালরা নিজেরা বেশ উপভোগই করে তাতে সন্দেহ নেই। অন্য লোকেরা অবশ্য বিরক্ত হয়। কিন্তু এখানে তো আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। তাই রেখে ঢেকে মাতলামি করতে হবে না। প্রাণ খুলে নষ্টামি করা যাবে। আউট হলে হব, কার বাপের কি। মন টা যে অনেক কিছু চাইছে, ঠিক কি যে চাইছে বোঝাতে পারব না। ৮ টা বেজে ৩০ মিনিটে নিচ থেকে আওয়াজ এল শ্যামদার। আরও ৩০ মিনিট লাগবে পাঁঠা সিদ্ধ হতে। আমি স্নান করে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছি। আজ আর ধোয়া কাঁচা করিনি। কাল তো সময় পাবই। আমি একটা স্লিভলেস কামিজ আর ক্যাপ্রি পরে নেমে এলাম। ক্যাপ্রি বা জিন্স পরে খারাপ রাস্তায় হাঁটা সোজা। অনেক কমফোর্টেবল। রাজা আর অরুণ পুরো রেডি। সন্দীপ নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে কিছু একটা করছে। রাজা বলল “ মালটা আসবে চাপ নিস না। তুই বস। “ দেখলাম রাজার ঘরের মেঝেতে একটা খবরের কাগজের ওপর ওদের বড় একটা হুইস্কির বোতল, আমার আনকোরা ভদকার বোতলটা চারটে ধোয়া কাঁচের গ্লাস, তিনটে বড় বড় ২ লিটারের জলের বোতল, খান দশেক লেবু, কাঁচা লঙ্কা, ৫ টা সোডার বোতল, একটা বিটনুনের জায়গা, গোলমুরিচ এই সব রাখা আছে। এছাড়া চিপস, চানাচুর এসব তো আছেই। রান্না যেখানে হচ্ছে সেখান থেকে মাতাল করা পাঁঠার গন্ধ আসছে, পেটের ভেতরটা কেমন জানি করছে। আমি রাজাকে জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম “ তোরা বিট নুন আর গোলমুরিচ দিয়ে হুইস্কি গিলবি?” ওরা আমাকে বলল “ না হে ডার্লিং ওটা তোমার জন্য। “ “আমার জন্য” আমি একটু আশ্চর্যই হলাম। বলল তোকে ঝাল ঝাল ভোদকার প্রিপারেশন খাওয়াব। অরুণ কে বলল “ যাওয়ার আগে লেবুগুল কাটিয়ে নিতে ভুলিস না। “ অরুণ লেবু গুলো নিয়ে রান্না ঘরের দিকে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছে। আমি বলেই ফেললাম “বেড়ে গন্ধ বেরচ্ছে না?” ও আমাকে বলল “সিদ্ধ টা ঠিক ঠাক হলেই হয়। আমি ওই একটা ব্যাপারেই টেনশন নি। “ একটু পরে অর্ধেক করে কাটা লেবুর টুকরো গুলো নিয়ে ফেরত এল অরুণ। আরও মিনিট পাঁচেক পর, দেখলাম সন্দীপ ঘামাতে ঘামাতে বেড়িয়ে এসেছে। দেখে মনে হল প্রচুর যুদ্ধ করে ফিরল। আজ কারেন্ট ছিল। তাও এত ঘামায় কেন মালটা। ইশারায় ওদের বোঝাল যে কাজ হয়ে গেছে। আমি বললাম “কি রে? কি করে এলি?” বলে সিগারেট বানানো কি মুখের কথা। আমি বললাম “ঠিক বুঝেছি তোরা ফুঁকবি আজ।“ অরুণ বলল “ফুঁকব বো তো বটেই, কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক সিগারেটের মতন সরল নয়।“ মুখের সামনে ডান হাতটা মুঠো করে ধোঁয়া ছাড়ার মতন করে একটা ইশারাটা করল যার মানে আমার জানা। সন্দীপ কোথাও গিয়ে গাঁজা সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছে। এই অজানা জায়গায় গাঁজার সন্ধান নিশ্চই ওই রিক্সাওয়ালাই দিয়েছে। আমি বললাম “তোদের এই গুনও আছে?” রাজা বলল “ দূর পাগল। তবে মদ টদ খাওয়া হলে একটু গাঁজা না হলে ঠিক চলে না। তুই চাইলে তুইই দুই টান মেরে দেখতে পারিস।“ আমি বললাম থাক “ আমার অল্পেই চড়ে যায়। তার সাথে আবার গাঁজা খেলে বমি হয়ে যাবে। “ রাজা বলল “ঠিক আছে, তাহলে দরকার নেই। তবে নদীর ধারে বসে নেশা চড়ার পর শখ হলে খেতে পারিস। যথেষ্ট আছে। আমি হাত দেখিয়ে বলে দিলাম থাক অনেক হয়েছে। ৯ টা বেজে ১০ এ শ্যামদা এসে আমাদের বললেন যে খাবার বাড়া হয়ে গেছে। কচি পাঁঠার ঝোল টা কিছু রেঁধেছিল সেদিন। আমরা প্রত্যেকেই যে কত কত খেলাম বলা যায় না। লোকগুলোর রান্নার হাত বেশ ভালোই। অন্যদিন হলে এত খাওয়ার পর আমি ঘুম ছাড়া কিছু ভাবতে পারতাম না। কিন্তু আজকের ব্যাপার আলাদা। আমাদের প্রত্যেকের কাছে টর্চ ছিল। ঠিক হল বসব মাটিতেই। কয়েকটা খবরের কাগজ নিয়ে নিলাম পাতার জন্য। টর্চ জ্বালিয়ে যাত্রা শুরু।