18-10-2019, 01:11 PM
পরের পর্ব
পরে শুনেছিলাম আরেকজনের আসার কথা ছিল, কিন্তু সে কোনও একটা ফাঁক ফোঁকর দেখে অন্য জায়গায় পেয়ে গেছে। ব্যাক চ্যানেল যেটাকে বলে আর কি। সেই নিয়ে এই তিনজনের খুব রাগ। আমার ঘর দোতলায় আর ওদের তিনজনের জন্য একতলায় ঘর বরাদ্দ হয়েছে। আমি ছাড়া আর কোনও মেয়ে আসেনি। কিন্তু এই তিনজন আমারই ক্লাসমেট। তাই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ঘরে গিয়ে দেখলাম একটা টেবিল যেটাকে ভুল করে পা দিয়ে নাড়া দিলে ভেঙে পড়ে যেতে পারে, তাই রিস্ক নেওয়া যাবে না। বিছানা পরিচ্ছন্ন। একটা ছোট আলমারি গোছের জামা কাপড় রাখার জায়গা। একটা কাঁচের গ্লাস, একটা জলের বোতল। উপরে তাকিয়ে দেখলাম একটা হলুদ ল্যাম্প আর একটা ফ্যান। সুইচ বোর্ডে গিয়ে সবকটা সুইচ অন করলাম, ফ্যান চালানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু ফ্যান বাবাজী চললেন না। শ্যাম দা, মানে যিনি দেখাশোনা করেন, তিনি বললেন কারেন্ট নেই। বেশ তাই সই। আমি শ্যাম দা কে বললাম “আমাকে কিন্তু, তুমি একটু ফোটানো জল দিও। আমার পেটের সমস্যা আছে। “ ও হ্যাঁ বলে চলে গেল। ও হ্যাঁ ছেলেদের বাথরুম নিচে। আর আমারটা উপরে। আরও দুজন লোক এখানে কাজ করে। কিন্তু তারা রাত্রের খাবার তৈরি করে চলে যায়। শ্যামদা নিজে থাকে নিচের তলার একটা কোণার ঘরে। আমাকে অবশ্য বার বার বলে দিয়েছিলেন যে কোনও কিছু দরকার হলে যেন ওনাকে বলি। জল এসে গেল। একটু অস্বস্তিই হচ্ছিল এই পরিবেশে। আমি বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করে নিলাম। মুখের টেস্টটাই যেন বদলে গেছে। আচ্ছা আরেকটা কথা আমি এই তিনজনের একজনের নাম ও এখানে বলব না। তার কারণটা পরে বুঝতে পারবেন। আমি ব্রাশ করে শ্যামদাকে ডেকে এক কাপ চা দিতে বললাম। উনি বললেন নিচে বাকিদের জন্যও নাকি চা দেওয়া হচ্ছে। ৫০ পয়সা করে চা। আমি বললাম “নিচেই দিন আমি আসছি।“ সব দলেরই একজন পাণ্ডা থাকে যাকে আমরা চালু কথায় পালের গোদা বলে থাকি। এখানেও আছে। আসল নাম না বললেও কিছু একটা নাম তো দিতে হবে। নইলে কথা বলা মুশকিল। আচ্ছা, ছোট করে নাম দিচ্ছি, রাজা, সন্দীপ আর অরুণ। রাজার নাম কেন রাজা দিলাম? কারণ ওই ছিল পালের গোদা। না না এরা তিনজনেই খুব ভালো ছেলে হিসাবে ক্লাসে পরিচিত। রাজা আর সন্দীপ কিছুটা হাসিখুশি টাইপ কিন্তু অরুণ একটু চাপা স্বভাবের ছেলে বলেই আমাদের মধ্যে পরিচিত ছিল। অরুণকে চিনলাম এই ট্রিপে এসে। অজানা জায়গায় এলে যা হয়, বাইরের কাউকেই আমরা চিনি না। খুব তাড়াতাড়ি সবাই বন্ধু হয়ে উঠলাম। আমার এদের সম্পর্কে কোনও কথা পড়ে এমন ভাববেন না যে এরা খারাপ ছেলে, ভাবার কারণ হতে পারে, তাই আগে থেকে বলে দিলাম। আমি নিচে নেমে দেখলাম সন্দীপের ঘরে চারজনের চা দিয়ে গেছে। সবার চেয়ারও আছে সেখানে। আমি যেতেই সন্দীপ উঠে দাঁড়িয়ে বলল “মহারানীর গরীবের কুটীরে আসতে আজ্ঞা হোক। “ আমি চেয়ারে বসার পর আমাকে এক কাপ চা এগিয়ে দিল। ছেলেগুলো বড্ড ভালো। চা টা মুখে দিয়ে বুঝলাম কিছুক্ষণ আগেই দিয়ে গেছে। ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ওরা আমার জন্যই একসাথে খাবে বলে অপেক্ষা করছিল। আমি বুঝলাম আমি আসাতে ওদের কোনও একটা কথা মাঝ পথেই থেমে গেছে। সেটা আমাকে নিয়েও হতে পারে কারণ মেয়েদের পেছনে ছেলেরা তো কত কথাই বলে থাকে, আবার এমন কোনও কিছু নিয়ে হতে পারে যেটা ওরা আমার সামনে বলতে চায় না। অরুণ দেখলাম রাজাকে ইশারায় বোঝালো পরে হবে ওসব কথা। আমি বললাম “ কি রে, কি এমন কথা হচ্ছিল যে আমি আসতেই থেমে গেল। আমাকে নিয়ে নয় নিশ্চই। “ “না না তোকে নিয়ে নয়। কিন্তু আমাদের ছেলেদের কথা আর কি!” রাজা বলল। আমি বললাম “শুনি কেমন কথা, একসাথে যখন কিছুদিন থাকব, একটু ছেলেদের মতনই হয়ে দেখি। “ রাজা বলল “এখানে খাটা খাটনি অনেক হবে। টিভি, মুভি কিছুই নেই। সময় কাটবে কি করে? তাই আর কি আমরা ভাবছিলাম যে, রাত্রে ফিরে এসে একটু , মানে বুঝলি তো, ওইটা না হলে, আর কি হবে। কি বা আর আছে এখানে?” আমি সোজাসুজি বললাম “তোরা ইন্টার্নশিপে এসে মদ খাবি?” রাজা বলল “এই জন্যই! বুঝলি তো? তোর সামনে বলিনি। তুই চিন্তা করিস না, আমরা খেলে নিচেই খাব। তোর ঘুমের কোনও ব্যাঘাত আমরা করব না। “ একটা কথা এখানে বলে রাখা উচিত, রাজা আর অরুণ দুজনেই এখন খুব প্রতিষ্ঠিত সার্জেন। ওদের সাথে আমার এখনও কথা হয়, কিন্তু ভুলেও আমরা কেউ ওই ট্রিপের কথা ওঠাই না। পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে কার কি লাভ। আলাপ, মানে দোস্তি সেই তখন হয়েছিল। সেই ট্যুরে যা হয়েছিল পরে বলব। বন্ধুত্ব রয়ে গেছে। পুরনো কথা কেউ তুলিনা। বা সেই নিয়ে কথা বলা হয় না। একটু সাসপেন্স থাকা ভালো। “হুম, কোথাও তোদের সেই লিকার শপ খুঁজে পেয়েছিস?” আমি রাজাকেই প্রশ্নটা করেছিলাম। রাজা বলল “অরুণ আসার সময় একটা এফ এল শপ দেখেছিল কিন্তু সেটা ষ্টেশনের পাশেই।“ আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেই ফেললাম “হ্যাঁ সে তো একদম পাশেই, তাই না?” আমরা চারজনেই হেঁসে উঠলাম। বুঝলাম আমরা প্রত্যেকেই “কাছের” ব্যাপারটা নিয়ে একই রকম অভিজ্ঞতার শিকার।কাছে? রাজা বলল “কিন্তু সপ্তাহের মাঝে গিয়ে কালেক্ট করতে পারব না। গেলে আজই যেতে হবে। “ আমি একটু ভেবে জিজ্ঞেস করলাম “তোরা কি খাস? মানে এমনি বলছি আর কি, ” ও বলল “তুই খাস? কি খাস? মানে আমাদের সাথে খেতে, মানে, ”, আমিও ওকে কথা শেষ না করতে দিয়ে বললাম “ ভোদকা। কিন্তু কিছু পাতি লেবু দরকার। সেটা নাহ্য় আমিই কিনব। বাকিটা আমি শেয়ার করব।“ রাজা উঠে দাঁড়িয়ে বলল “মহারানি আজ্ঞা করলে কয়েকটা পাতি লেবু তার এই সেবকরাও এনে দিতে পারবে। “ আমি হেঁসে বললাম “ আসলে আমার নতুন জায়গা দেখার শখ আছে। তোদের সাথে আমিও যেতে পারি। কিন্তু স্টেশন অব্দি যেতে হবে শুনলে কেমন যেন গায়ে জ্বর আসছে। অরুণ আমাকে বলল “ সে ঠিক আছে, তুই টাকা দিয়ে দে, মানে তোর শেয়ার টা , আমরা তোর ভোদকা টা তোর ঘরেই পৌঁছে দেব। ও শ্যামদা, শ্যামদা গো, “ , শ্যামদা হাজির হলেন। “দাদা ফ্রিজ আছে?” ওনার মুখটা দেখে বুঝলাম ফ্রিজ কথাটা উনি যেন প্রথমবার শুনছেন। রাজা ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দিল। “দাদা, ঠাণ্ডা জল বা বরফ পেতে চাইলে কোথা থেকে পাব?” “বরফ পাবেন না। কিন্তু হ্যাঁ কলসিতে রেখে দিলে জল ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।“ সন্দীপ বলে উঠল “ লেটেন্ট হিটের মারাচ্ছে”। রাজা ওকে থামিয়ে দিল। ঠিক হল আমরা সবাই একসাথে রেডি হয়ে লাঞ্চের পর বেরব। দুটো রিক্সা আনানোর বন্দবস্ত করা হল। মানে শ্যামদা ব্যবস্থা করবে। রাজা আর আমি যাব এক রিক্সায়। কেন রাজা আমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইছে সেটা নিয়ে আমার সামনেই রাজাকে সবাই মিলে টিটকিরি দিল। আমি হেঁসে কুটোপাটি। ছেলেদের বন্ধুত্ব আলাদা হয়। এত গভীর আর সহজ বোধহয় মেয়েদের বন্ধুত্ব হয় না। এটা আমি ওদের সাথে মিশে বুঝতে পেরেছি। অরুণ আর সন্দীপ যাবে আরেকটা রিক্সায়। রিক্সা বললেই তো আর রিক্সা পাওয়া যায় না এখানে। রিক্সা কখন আসবে কোনও ঠিক নেই। তাই আমরা শ্যামদাকে এখনই রিক্সা আনতে বলে দিলাম। আসলে ওনার হাতেও কিছু নেই। সামনে কোনও রিক্সা এলে তবেই উনি নিয়ে আসবেন। এখানে, এত জন মানব শূন্য জায়গায় চট করে রিক্সা পাওয়া যায় না। আসর ভাঙল। আমি আসার আগে জিজ্ঞেস করলাম “আসার পর বাড়িতে জানানো হয়নি। ওরা চিন্তা করবে। কোথাও ফোন বুথ দেখেছিস?” সবাই অরুনের মুখের দিকে তাকাল। বুঝলাম ওদেরও বাড়িতে জানানো দরকার। অরুণের কথা শুনে দমে গেলাম। ও বলল “ তেমন ভাবে দেখিনি, কিন্তু আছে একটা মনে হয় ওই গ্রামের শেষে। “ সবাই হুম বলে বিজ্ঞের মতন মাথা নাড়ালেও আমি ছাতার মাথা কিছুই বুঝিনি। এদের ব্যাপারে একটা জিনিস বলে রাখা ভালো, এরা আমার সাথে কখনও ফ্লার্ট করেনি। এদের কারোর গার্ল ফ্রেন্ড আছে বলেও কখনও শুনিনি। ওদের তিনজনের সাথেই আমার অনেক কথা হয়েছে, কিন্তু সবই পড়াশুনা নিয়ে। অরুণের সাথে কিছুটা কম হলেও হয়েছে। আমি ওদের সাথে মিশতে স্বাভাবিক বোধ করছিলাম। সব কটা যাকে বলে নেহাত ভালো ছেলে। আর এরকম জায়গায় ভালো ছেলে যত বেশী থাকে ততই ভালো। যে মদ খায় সেই খারাপ, এইটা আমি মানিনা। আমার চোখে এরা ভালো ছেলে।
সবাই স্নান করে ফ্রেশ হওয়ার জন্য উঠে পড়লাম। এমন ভাববেন না আমি স্নান করার সময় কেউ জানলা দিয়ে দেখছিল। না সেটা সম্ভবও নয়। ওরা নিজেদের নিয়ে মশগুল ছিল। আমি নামার পর সবাই একসাথে লাঞ্চ সারলাম। এখানে যে এত ভালো মাছ পাওয়া যায় সেটা আমার অজানা ছিল। সেটা শ্যামদাকে বলতেই শ্যামদা বলল, “দিদিমনি পাশেই নদী আছে। এখন শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওখান থেকে আমরা মিঠা মাছ নিয়ে আসি। আপনারা খেলে ভালো করে ঝাল টাল দিয়ে বানিয়ে দেব।“ লোকটা নেহাতই সরল। পরে জেনেছিলাম ওনার এক মেয়ে আছে। মা মড়া মেয়ে। মামার সাথে থাকে। সেটা আরেকটা ঘটনা। আমরা ওর মেয়েকে ছাড়ানোর জন্য রীতিমত যুদ্ধ করেছিলাম। সময় এলে বলব। আর ভুলে গেলে মনে করিয়ে দেবেন। বাপ্পা, শ্যামদার মেয়ে অনেক গুলো না বলা কথা রয়ে যাচ্ছে তো। ভুলে যেতেই পারি। বয়স বাড়ছে। আমার খাওয়া দেখে রাজা বলল পরের দিন, ও, আমার সাথে খাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা করবে। আমার একটু যেন লজ্জাই লাগল। “উফফ মহারানি লজ্জা পাচ্ছে, চুপ।“ সন্দীপের কথা আর নেওয়া যাচ্ছে না। শ্যামদা কিছু না বুঝেই একটু বোকার মতন হেঁসে চলে গেল সামনে থেকে। ও হ্যাঁ, কারেন্ট চলে এসেছে। এখানে বেশী সাজার মানে নেই। অনেক দিন পর বাইরে বেড়াতে যাচ্ছি। শুধু বিউটি পার্লারে যাওয়াটা একঘেয়ে। কিন্তু এখানে সাজগোজ করা যাবে না। এখন আমি ডাক্তার। শুধু বেরনর সময় ঠোঁটে হালকা একটু গোলাপি লিপস্টিক আর চোখে কাজল মেখে ছিলাম। গোটা রাস্তাটা আমাকে চোখে কাজল মাখা নিয়ে যা যা গান ওরা শুনিয়েছিল সেটা আর বলতে পারছি না। রাস্তার গল্প পরে বলছি। সেটাও অভিজ্ঞতা। কিন্তু তার আগের কথায় আসি।
আমি নামার সাথে সাথে আমাকে দেখে তিনজন খানিকক্ষণ ভুত দেখার মতন তাকিয়ে ছিল। নারীহীন স্থানে এটা বিরল নয়। কিন্তু ওরা যেন সত্যি ভুত দেখছে। রাজা বলেই ফেলল “ওরে আমরা বিয়ে বাড়ি যাচ্ছি না।“ আমি একটু লজ্জাই পেয়ে গেছিলাম। আমার বেশ ভুশা যথেষ্ট ভদ্র। অরুণ হঠাত করে গান ধরেছিল “কালো হরিণ চোখ, আর বাকিটা জানা নেই গুরু।“ এ যেন একটা নতুন অরুণ। ওকে দুজনে চুপ করিয়ে বলল “রিক্সা এল?” শ্যামদা বলল “ চেষ্টা চালাচ্ছি বাবু। এখনও আসেনি।“ “নদী কতদূর?” প্রশ্নটা করল সন্দীপ। শ্যামদা বলল “ ৬ থেকে ৭ মিনিটের হাঁটা পথ। আঙুল দেখিয়ে দিল কোন দিকে যেতে হবে। “কিন্তু পথে পাথর ফেলা আছে দাদারা। দিদিমনি যেতে পারবে না।“ শালা, আত্মবিশবাসে আঘাত? তাও এই ধুতি পরা লোকের কাছ থেকে। বললাম “চল যাওয়া যাক। রিক্সা এলে তুমি ধরে রেখ শ্যামদা। আমরা না হয় নদীই দেখে আসি। বেলা পড়ে আছে। চিন্তা নেই শ্যামদা।“ আমরা নদীর দিকে হেঁটে চললাম। ভীষণ বাজে পথ। এটা স্থানীয় লোকদের পায়ে হাঁটার পথ। রাজা হঠাত গান ধরেছিল “দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে “ আমরা হেঁসে ওকে চুপ করিয়ে দিলাম। ওকে দমানো গেল না, বলল “ গান থাক, তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের নদীর দর্শন দিচ্ছি। “ ভীষণ ভীষণ চিপ কথা নেতাজীর কথা টেনে, কিন্তু আমাদের মনে কোনও অসম্মান নেই। আমরা শুধু মজাই করছি। প্রায় বাইশ মিনিট হেঁটে, বার বার পড়তে পড়তে না পড়ে, এর ওর হাত ধরে ব্যাল্যান্স করে, শেষে পৌঁছালাম নদীর ধারে। ভীষণ তীব্র হাওয়া। বলে বোঝানো অসম্ভব। হ্যাঁ আমাদের বাংলাতেই আছে। নদীটা শুকিয়ে গেছে। প্রচুর লোক এসে ময়লা ফেলেছে। কিন্তু ফুরফুরে হাওয়াটা অগ্রাহ্য করা যায় না। এখানকার হাওয়া যেন অনেক সুন্দর। তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রি কম। আমি হাঁপিয়ে বসে পড়েছিলাম একটা পাথরে। ওরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে নদীর ধার ঘেঁষে। আমি ওদের দু একবার বারণ করেছিলাম, নদীতে যাস না। ওরা শোনেনি, আমিও আর বলিনি। আমার দায়িত্বে ওদের জুতো মোজা রেখে খালি পায়ে নদীর জলে পা ভেজাতে গেছে। মজা করছে, করুক না। আমার হাঁপ ধরে গেছে, একবার পা মচকে গেছে, কিন্তু ওরা তো দৌড়াতে পারে। ওদের কি সমস্যা। আমি স্পয়েল স্পোর্ট নই। অনেকক্ষণ পর বাদরগুলো ফিরে এল। আমিও তখন হাঁটতে পারছি দেখে ওরা বলল “এবার ফেরা যাক। “ রাজা বলল “শ্যামদাকে একবার জিজ্ঞেস করতে হবে এইখানে রাত্রে কেউ আসে কিনা?” বললাম “কেন বলত?” আমার পায়ে ব্যথা হচ্ছিল। তাই এর ওর হাত ধরে হাঁটছিলাম। ওরা আমাকে কোনও রকম জোড় করেনি। উল্টে হেল্পই করছিল। আর ওরা ফ্লার্ট করা ছেলে নয় বলেই মনে হচ্ছিল। তাই ওদের কথা বলতে গেলে আমি দ্বিধা করব না। রাজা বলল “ সামনের সপ্তাহের শেষে আমরা রাত্রে এখানে এসে পিকনিক করতে পারি। “ বলেই ফেললাম “নেকি অউর পুছ পুছ। তোরা কিন্তু নদীতে যাবি না রাত্রে। কথা দিবি? তবেই আসব।“ “ওকে মহারানী”, তিনজনেই হেঁসে আমাকে বলেছিল। “দিনের বেলা নদীতে গেলে কোনও সমস্যা নেই তো?“ এটা সন্দীপ। আমি কপট রাগ দেখিয়ে বলেছিলাম “না। আগে তো দিনের বেলায় সময় পা, তারপর ভাবিস ওইসব। “ রাজা বলল “চল মালটাকে একটু ধরি। আর আমি একটা জিনিস চিন্তা করছি যে কাল আমরা হাসপাতালে পৌঁছাবো কি করে? চল তো। ” আমরা বাইশ মিনিটের পথ ১৫ মিনিটে শেষ করে ফিরে এসেছিলাম। এক কাপ করে চাও খেয়েছিলাম। না রিক্সা আসেনি তখনও। একটা এসেছিল। আরেকটার অপেক্ষায় বসে আছি আমরা। এখানে আমরা একলা বেরব না। তাই অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। শ্যামদা আরেকটা রিক্সা নিয়ে এল প্রায় ১৫ মিনিট পর। আমরা রিক্সা চেপে বেরলাম মদ কিনতে আর বাড়িতে খবর দিতে। মোবাইল শস্তা হওয়া শুরু করেছে, কিন্তু আমাদের ৪ জনের কারোর কাছেই তখন মোবাইল নেই। আজ দুটো ওটি ছিল। আজ শুই কাল আবার হবে। ভালো থেকো সোনা। মা কেমন আছেন জানাবে।
আমরা ওঠার আগে রিক্সাওয়ালাকে খোলা খুলি জিজ্ঞেস করে নিয়েছিলাম কোথায় ভালো মদের দোকান পাওয়া যাবে। লোকটা প্রথমে বলল কাছেই আছে। কিন্তু কথাটা বলে একবার আমার দিকে তাকিয়ে নিল। বুঝলাম কোনও মেয়ে মদের দোকানে যাচ্ছে সেটা মেনে নিতে পারছে না। এটা কিন্তু সত্যিই কাছে। হাসপাতাল ছাড়িয়ে লোকালয়ের কাছে যেতেই একটা লাল ইটের বাড়ির সামনে দুজন রিক্সা দাঁড় করাল। দেকলাম দোকানের কোনও কাউন্টার নেই। এ কিধরণের এফ এল শপ। আমরা চারজনেই নেমে ঢুকতে যাচ্ছিলাম, রিক্সাওয়ালা আমি ওদের সাথে ওই বাড়ির মধ্যে ঢুকছি দেখে একবার ঢোঁক গিলল। গ্রামের লোক। কোলকাতায় কি হয় কোনও ধারণা নেই। ঢুকতে গিয়েই আমরা তিনজনেই থমকে গেছি। বাড়ির মধ্যে গোটা ৬ টা টেবিল আর তাতে চোলাই মদ জাতীয় কিছু একটা সার্ভ করা হচ্ছে। এটা একটা দেশী মদের ঠেক। বুঝলাম এত ভয়ানক ভাবে চোখ ওলটানের কারণটা। কয়েকজন তখন বসে গিলছিল, আমাদের দেখে যেন একটু ঘাবড়ে গেল। বেড়িয়ে এসে রাজা বেশ করে ধমক দিল ওদের। “কোথায় নিয়ে এসেছেন?” লোকটা ভয়ে ভয়ে বলল “দাদা এটাই এখাণকার সবথেকে বড় মদের দোকান।“ আমরা যতই হুইস্কি , ভদকা স্কচ এইসব বোঝাই ততই লোকটা আরও কনফিউসড হয়ে যাচ্ছে। শেষে কি একটা ভেবে, অরুণ বলল “রাম পাওয়া যায় কোথাও?” এইবার লোকটার ৩২ পাটি দাঁত বেড়িয়ে গেল। “হ্যাঁ সেট সেই ষ্টেশনের কাছে।“ “রামের সাথে ওখানে আরও কিছু রাখে নিশ্চই?” লোকটা বলল “হ্যাঁ তা রাখে। “ আমরা বললাম “চলুন সেখানে নিয়ে চলুন।“ অন্য রিক্সাওয়ালাটা রাস্তায় যেতে যেতে ওদের সাথে অনেক কথা বলেছিল। কি কথা হচ্ছিল, সেটা জানতে পেরেছিলাম শনিবার রাত্রে। অনেকক্ষণ পর শেষমেশ এফ এল শপের দেখা পাওয়া গেল। আমরা রিক্সাদুটোকে ছাড়িনি, নইলে আর ফিরতে পারব না। আমি দুটো ৭৫০ মিলি লিটারের বোতল কিনলাম ভদকার , ওতে আমার অনেক দিন চলে যাওয়া উচিত, ওরা নিজেরা গুছিয়ে প্রচুর মদ কিনল, অনেক গুলো বিয়ারের বোতলও কিনল। বেশ কয়েকটা পাতিলেবু কিনেছিলাম ফিরতি পথে। ও হ্যাঁ, মদের গল্প করতে করতে বাড়িতে ফোন করার কথাটাই বলতে ভুলে গেছিলাম। হ্যাঁ ফোন ছিল মদের দোকানের ঠিক দুটো দোকান পরেই। আমরা বাড়িতে ফোন করলাম। এখানে পৌঁছে গেছি জানিয়ে দিলাম। মা জিজ্ঞেস করেছিল, সাথে কটা মেয়ে আছে। আমি বললাম “আমরা তিনটে মেয়ে ৪ টে ছেলে।“ ইচ্ছা করেই মিথ্যা বলেছিলাম, যাতে আমাকে নিয়ে বেশী টেনশন না করে। একা আমি মেয়ে আর বাকি তিনটেই ছেলে শুনলে মা অক্কা পেত। মা তাও বলল “ছেলেদের সাথে বুঝে শুনে মিশিস।“ আমি যখন ফোনে কথা বলছিলাম ওরাও পাশে দাঁড়িয়েছিল। ওরা আমার কথা শুনে এর ওর মুখ চাওয়া চায়ি করল। আমি একটু চোখ মেরে বুঝলাম পাটি ঢপ মারছি। সিরিয়াসলি নেওয়ার কোনও কারণ নেই। সপ্তাহ খানেকের মতন মদের ব্যবস্থা করে, প্রচুর চিপস ইত্যাদি কিনে, আমরা আবার ফিরে চললাম বনবাসে। যত বেশী বার আমরা যাতায়াত করছি তত মনে হচ্ছে সময় যেন আরও আরও কম লাগছে। মহাগুরু আইনস্টাইন ভদ্রলোকের কথা মনে হচ্ছিল। ঘড়ি অনুযায়ী একই সময় লাগছিল, বরঞ্চ বেশীই, কারণ এখন রিক্সায় একজনের জায়গায় দুজন, তার উপর ব্যাগ ভর্তি মদের বোতল। কিন্তু এখন রাজার সাথে কথা বলতে বলতে সময় কেটে যাচ্ছিল। ছেলেটা খুব সুন্দর কথা বলতে পারে। আর মাঝে মাঝেই সামনের রিক্সা টা থেকে গান ভেসে আসছিল “রূপ তেরা মস্তানা, ও মাহারানি গো...” রাজা চীৎকার করে বলছিল “তোরা থাম, রাস্তার লোকেরা সব শুনছে।“ রাজা যেন আমার ব্যাপারে একটু বেশী কেয়ারিং। আমি যদিও একটু মস্তিবাজ বেপরোয়া ছেলে পছন্দ করি কিন্তু কেয়ারিং ব্যাপারটা কোন মেয়ের না মনে ধরে। না এত চট করে আমি প্রেমে পড়িনি। কিন্তু ওর সঙ্গ টা আমি পছন্দ করছিলাম। বেশ একটা উষ্ণতা ছিল ওর কথাবার্তায়, ওর ছোঁয়ায়। ছোঁয়া বলতে রিক্সাতে ওঠা বা নামার সময় যেটুকু আমাকে সাহায্য করছিল হাত ধরে, ওই আর কি। রাজাকে আমি বলেই ফেললাম আমি অদিতি শম্পা আমরা ছুটির দিন থাকলে ভোদকা খাই, মজা করি এইসব। বলল “ ভাবা যায় না। তোরা মদ খাস। “ আমি বললাম “সেই।আমাদের সবাইকে কি ভাবিস তোরা? ধোয়া তুলসীপাতা।“ ওকে রাস্তায় কথায় কথায় অদিতির বিয়ের ব্যপারটা বললাম। কথা বলতে বলতে এতটা পথ কিভাবে পাড় হয়ে চলে এসেছি বুঝলাম না। হঠাত বুঝলাম আমরা আমাদের মেসে ফেরত এসেছি। আগেই বলেছি এখানে খাওয়া দাওয়া শস্তা কিন্তু ওটা আমাদের ঘাড়ে, কিন্তু থাকাটা যা শুনলাম কলেজ থেকে আসবে, মানে এক কথায় আমাদের সরকারের ঘাড়ে। আমি রাজাকে পথেই বলে দিয়েছিলাম যে স্যার আমাদের সন্ধ্যায় আর এই লোকালয়ের দিকে আসতে বারণ করেছে। তার কারণ কি জানা নেই। ও বলল “কি গাঁড় মারাতে আসব এই লোকালয়ে?” বলেই ও একটু জিভ কাটল বটে, কিন্তু আমি বুঝলাম ও আমার সাথে ফ্রি হয়ে যাচ্ছে। মুখে আর আগের মত সংযম নেই। আমি বললাম “এত জিভ কাটিস না কথায় কথায়, পুরো জিভটাই তাহলে বাদ পড়ে যাবে। আমরাও খিস্তি খেউর করি। কিন্তু তোদের সামনে নয়। আমাদের মদের আড্ডায় বসলে বুঝতে পারতিস। “ ও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল “ যাক বাঁচালি। আর রেখে ঢেকে কথা বলার দরকার পড়বে না।“ আমি ওকে বললাম “ ক্লাসের মধ্যে তোরা যখন খিস্তি খেউর করিস আমাদের কানে যেন সেই কথা গুলো আসে না। তোরাই আমাদের স্টক বাড়িয়ে দিয়েছিস। নইলে আমাদের আর ওইসব শেখার জায়গা কোথায়।“ ও মাথাটা কয়েকবার ডাইনে বাঁয়ে নেড়ে বলল “ তুই মাইরি সত্যি ডানপিটে মেয়ে, নতুন করে চিনলাম।“ আমি বললাম “আগে কি ভাবতিস ধোয়া তুলসীপাতা?” বলল “ঠিক তা না হলেও, দেখা যাবে কত ছেলেদের মতন ফুর্তি করিস। “ যাই হোক আমরা আমাদের ঘরে পৌঁছে গেছি, শ্যামদা আমাদের কেনা জিনিসগুলো সব আমাদের ঘরে পৌঁছে দিল। আমার বোতল দুটো রাজার ঘরেই রাখা থাকল। আমি তো আর একা একা খাব না। লেবু কিনেছি দেখে শ্যামদা বললেন “এটা না কিনলেও পারতেন। আমি এটা এমনি দিয়ে দিতে পারতাম। শুধু কয়েক ঘণ্টা আগে জানালেই চলত। আর যা দিয়ে কিনেছেন তার থেকে অনেক শস্তায়। আমি বললাম “ আছি অনেক দিন। পরের বার তোমার থেকেই লেবু কিনব।“ সবাই যে যার ঘরে চলে এলাম। এখন আর কিছু করার নেই। ঠিক হল রাত্রে দেখা হবে। কোলকাতা থেকে আসার আগেই আমি আমার সমস্ত জামা কাপড় কেঁচে এসেছিলাম। এখন আর কাচাকাচির বিশেষ প্রয়োজন নেই। তবু দেখলাম হাতে সময় আছে , তাই গিয়ে পরে আসা ব্রা আর প্যানটিটা কেঁচে নিলাম। এটা আমি রোজকারটা রোজই কেঁচে নি। নইলে প্যানটি থেকে বিশ্রী গন্ধ ছাড়ে। কাল যদি কাচার সময় না হয় তখন কি হবে? আমি মার থেকে শুনেছিলাম কোথাও গেলে একটা কাপড় শুকানোর দড়ি সব সময় সাথে করে নিয়ে যেতে। মেয়েদের জন্য এটা খুব কাজের। কারণ মেয়েরা তো আর সবার সামনে সব কিছু ধুয়ে মেলতে পারে না। আমি ঘরে দড়িটা বেঁধে তাতে ভেজা অন্তর্বাস গুলো মেলে একটা ঘরে পরার ঢিলে স্লিভলেস টপ আর লেগিন্স পরে শুয়ে পরলাম। আমরা মেলা থেকে বেশ কয়েকদিন আগে শস্তায় অনেক গুলো ড্রেস কিনেছিলাম। কোথাও বাইরে গেলে সেগুলো কাজে লাগে। ক্লান্তি এতক্ষণে আমাকে পেয়ে বসেছে। ট্রেনে আমার খুব ভালো ঘুম হয় না। বিছানায় মাথা রাখতেই শরীরটা ছেড়ে দিল।
ঘুম যখন ভাঙল চোখ খুলে দেখলাম ঘর পুরো অন্ধকার, সন্ধ্যা হয়ে গেছে সেটা আর বলে দিতে হয় না। কানের পাশে প্রচণ্ড মশার ভোঁ ভোঁ শব্দ হচ্ছে। আমার গোটা খোলা হাত গুলো মশার কামড়ে চুল্কাচ্ছে। একটা পরিষ্কার সাদা চাদর আর মশারি ওই আলমারিটাতে রাখা ছিল। বের করে নেওয়া উচিত ছিল। এক কাপ চা পেলে মন্দ হয় না। পুরো হুঁশ আসার পর শুনলাম আমার ঘরের বন্ধ দরজায় দুম দুম করে বাড়ি মারছে কেউ বা কারা। রাজার গলা শুনতে পেলাম। বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়াতে যাব মাথায় ঘরে টাঙানো দড়িটাতে ঘষা খেল। আর কোথাও লাগাতে পারিনি দড়িটা। তড়িঘড়ি করে ছুটে গিয়ে সুইচবোর্ডে সুইচ অন করে হলদে বাল্ব টা জ্বালালাম। আমার শরীরে ম্যাড়ম্যাড়ে ভাবটা রয়েই গেছে। অসময়ে ঘুমানোর এই এক দোষ। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে দরজা খুললাম। রাজা বলল “ শালা ভাবলাম মড়ে পড়ে আছিস কিনা। কি ঘুমরে ভাই ...।“ ওর কথা মাঝ পথেই থেমে গেছে। ঘুম ঘুম চোখ বলে ব্যাপারটা অনুধাবন করতে একটু বেশীই সময় লাগল। ঘুমানোর সময় আমি ওপরে বা নিচে কোনও অন্তর্বাস পরে শুইনি। ঠিক করেছিলাম ঘর থেকে রাত্রে বেরনর আগে পরে বেরব। কিন্তু ব্যাপারটা আমার ঘন ঘুমের জন্য অন্যরকম হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি প্রায় দৌড়ে এসে দরজা খোলার জন্য আমর ব্রা হীন বুকদুটো অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ওঠানামা করছে এই চারটে প্রাণীর সামনে। ৪ জন বলতে শ্যমদাও ছিলেন। আমি যে ব্রা পরিনি সেটা বোধহয় স্পষ্ট। দেখলাম ওদের চোখগুলো খনিকের মধ্যে আমার স্তন আর তারপরেই আমার পিছনে ঘরের মধ্যে শুঁকাতে দেওয়া ব্রা আর প্যানটির উপরে দিয়ে ঘুরে এল। আমি লজ্জা ছাড়িয়ে নিজেই নিজের বুকের দিকে একবার চট করে দেখেনিলাম। প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি স্তন বিভাজিকা উন্মুক্ত, একটু আধতু নয় পুরো অর্ধেক। বড্ড বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। জেনে বুঝে করিনি এটা। কিন্তু হয়ে গেছে। আমি লজ্জার মাথা খেয়ে কাঁধের কাছে টপ টা একটু উঠিয়ে নিলাম। টপের কাপড়ের অনুভুতিতে বুঝলাম আমার স্তন বিভাজিকা মোটামুটি ঢেকে গেছে। এই আধুনিক টপগুলোর একটা স্টাইলই বলুন বা ব্যথাই বলুন এগুলো বগলের নিচে অনেক সময় এত খোলা হয় যে ঠিক করে না পরলে বুকের প্রায় মাঝখান অব্দি অনাবৃত হয়ে যায়। সেরকম জায়গায় পরে গেলে এটা ফ্যাশন। কিন্ত এই মুহূর্তে আমার মাথায় সেক্স বা শরীর দেখানোর কোনও ইচ্ছা আসেনি। তাই এখন এটা লজ্জার। পরিস্থিতি আর কি। আমার স্তন বিভাজিকা ঢেকে গেলেও বুঝলাম ওদের চোখ আমার অনাবৃত বগলের জায়গায় ঘোড়ার ফেরা করছে। না আমি ক্যালাসের মতন হাত তুলে দাঁড়িয়ে ছিলাম না। কিন্তু হাত শরীরের সাথে চেপে রাখলেও এইসব ড্রেসে বোঝা শরীরের বগলের নিচের অনাবৃত জায়গাগুলো বেশ ভালো ভাবেই দেখা যায়। অনেক সময় স্তনের পাশের দিকের প্রসারিত হওয়া অংশের আভাস বোঝা যায়। আমি হাত দুটো কে শরীরের পাশে আরও আঁটসাঁট করে চেপে ধরে বললাম “কটা বাজে রে?” ওরা আমার শরীরের থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিল। ওদের মুখ দেখে বুঝতে পারলাম ওদের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে ওরা বাকি কথাগুলো বলল এদিক ওদিক তাকিয়ে, আমার শরীরের থেকে চোখ যতটা পারা যায় অন্য দিকে তাকিয়ে। আমি আরেকবার সাবধান হওয়ার জন্য কাঁধের কাছে হাত নিয়ে টপের সামনের দিকটা তুলে নিলাম। ওরা আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরেই বলল “ নিচে আয়। পৌনে ৯ টা বেজে গেছে। এরা এখনই খেতে বলছে। আমরা একটু মদ গিলব। তুই জয়েন করতে চাইলে আয়। আমি বললাম “আমি আসছি, কিন্তু শোননা তার আগে একটু চা পাওয়া যাবে?” ওরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে “উফফ গার্লস উইল বি গার্লস। এখন চা? দেখছি।“ ওরা চলে গেল। আমি তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে ব্যাগ থেকে হ্যান্ড আয়নাটা বের করে একবার নিজেকে দেখলাম। না স্তনের কিছুই পাশ থেকে বেড়িয়ে ছিল না কারণ আমার স্তন তখনও অতটা ভরাট নয়, কিন্তু বগলের কাছটা এতটা ঢিলে যে পাশের অনেকটা অংশই অনাবৃত হাতের তলায়। যদিও এটা এখন স্বাভাবিক ব্যাপার।
পরে শুনেছিলাম আরেকজনের আসার কথা ছিল, কিন্তু সে কোনও একটা ফাঁক ফোঁকর দেখে অন্য জায়গায় পেয়ে গেছে। ব্যাক চ্যানেল যেটাকে বলে আর কি। সেই নিয়ে এই তিনজনের খুব রাগ। আমার ঘর দোতলায় আর ওদের তিনজনের জন্য একতলায় ঘর বরাদ্দ হয়েছে। আমি ছাড়া আর কোনও মেয়ে আসেনি। কিন্তু এই তিনজন আমারই ক্লাসমেট। তাই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ঘরে গিয়ে দেখলাম একটা টেবিল যেটাকে ভুল করে পা দিয়ে নাড়া দিলে ভেঙে পড়ে যেতে পারে, তাই রিস্ক নেওয়া যাবে না। বিছানা পরিচ্ছন্ন। একটা ছোট আলমারি গোছের জামা কাপড় রাখার জায়গা। একটা কাঁচের গ্লাস, একটা জলের বোতল। উপরে তাকিয়ে দেখলাম একটা হলুদ ল্যাম্প আর একটা ফ্যান। সুইচ বোর্ডে গিয়ে সবকটা সুইচ অন করলাম, ফ্যান চালানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু ফ্যান বাবাজী চললেন না। শ্যাম দা, মানে যিনি দেখাশোনা করেন, তিনি বললেন কারেন্ট নেই। বেশ তাই সই। আমি শ্যাম দা কে বললাম “আমাকে কিন্তু, তুমি একটু ফোটানো জল দিও। আমার পেটের সমস্যা আছে। “ ও হ্যাঁ বলে চলে গেল। ও হ্যাঁ ছেলেদের বাথরুম নিচে। আর আমারটা উপরে। আরও দুজন লোক এখানে কাজ করে। কিন্তু তারা রাত্রের খাবার তৈরি করে চলে যায়। শ্যামদা নিজে থাকে নিচের তলার একটা কোণার ঘরে। আমাকে অবশ্য বার বার বলে দিয়েছিলেন যে কোনও কিছু দরকার হলে যেন ওনাকে বলি। জল এসে গেল। একটু অস্বস্তিই হচ্ছিল এই পরিবেশে। আমি বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করে নিলাম। মুখের টেস্টটাই যেন বদলে গেছে। আচ্ছা আরেকটা কথা আমি এই তিনজনের একজনের নাম ও এখানে বলব না। তার কারণটা পরে বুঝতে পারবেন। আমি ব্রাশ করে শ্যামদাকে ডেকে এক কাপ চা দিতে বললাম। উনি বললেন নিচে বাকিদের জন্যও নাকি চা দেওয়া হচ্ছে। ৫০ পয়সা করে চা। আমি বললাম “নিচেই দিন আমি আসছি।“ সব দলেরই একজন পাণ্ডা থাকে যাকে আমরা চালু কথায় পালের গোদা বলে থাকি। এখানেও আছে। আসল নাম না বললেও কিছু একটা নাম তো দিতে হবে। নইলে কথা বলা মুশকিল। আচ্ছা, ছোট করে নাম দিচ্ছি, রাজা, সন্দীপ আর অরুণ। রাজার নাম কেন রাজা দিলাম? কারণ ওই ছিল পালের গোদা। না না এরা তিনজনেই খুব ভালো ছেলে হিসাবে ক্লাসে পরিচিত। রাজা আর সন্দীপ কিছুটা হাসিখুশি টাইপ কিন্তু অরুণ একটু চাপা স্বভাবের ছেলে বলেই আমাদের মধ্যে পরিচিত ছিল। অরুণকে চিনলাম এই ট্রিপে এসে। অজানা জায়গায় এলে যা হয়, বাইরের কাউকেই আমরা চিনি না। খুব তাড়াতাড়ি সবাই বন্ধু হয়ে উঠলাম। আমার এদের সম্পর্কে কোনও কথা পড়ে এমন ভাববেন না যে এরা খারাপ ছেলে, ভাবার কারণ হতে পারে, তাই আগে থেকে বলে দিলাম। আমি নিচে নেমে দেখলাম সন্দীপের ঘরে চারজনের চা দিয়ে গেছে। সবার চেয়ারও আছে সেখানে। আমি যেতেই সন্দীপ উঠে দাঁড়িয়ে বলল “মহারানীর গরীবের কুটীরে আসতে আজ্ঞা হোক। “ আমি চেয়ারে বসার পর আমাকে এক কাপ চা এগিয়ে দিল। ছেলেগুলো বড্ড ভালো। চা টা মুখে দিয়ে বুঝলাম কিছুক্ষণ আগেই দিয়ে গেছে। ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ওরা আমার জন্যই একসাথে খাবে বলে অপেক্ষা করছিল। আমি বুঝলাম আমি আসাতে ওদের কোনও একটা কথা মাঝ পথেই থেমে গেছে। সেটা আমাকে নিয়েও হতে পারে কারণ মেয়েদের পেছনে ছেলেরা তো কত কথাই বলে থাকে, আবার এমন কোনও কিছু নিয়ে হতে পারে যেটা ওরা আমার সামনে বলতে চায় না। অরুণ দেখলাম রাজাকে ইশারায় বোঝালো পরে হবে ওসব কথা। আমি বললাম “ কি রে, কি এমন কথা হচ্ছিল যে আমি আসতেই থেমে গেল। আমাকে নিয়ে নয় নিশ্চই। “ “না না তোকে নিয়ে নয়। কিন্তু আমাদের ছেলেদের কথা আর কি!” রাজা বলল। আমি বললাম “শুনি কেমন কথা, একসাথে যখন কিছুদিন থাকব, একটু ছেলেদের মতনই হয়ে দেখি। “ রাজা বলল “এখানে খাটা খাটনি অনেক হবে। টিভি, মুভি কিছুই নেই। সময় কাটবে কি করে? তাই আর কি আমরা ভাবছিলাম যে, রাত্রে ফিরে এসে একটু , মানে বুঝলি তো, ওইটা না হলে, আর কি হবে। কি বা আর আছে এখানে?” আমি সোজাসুজি বললাম “তোরা ইন্টার্নশিপে এসে মদ খাবি?” রাজা বলল “এই জন্যই! বুঝলি তো? তোর সামনে বলিনি। তুই চিন্তা করিস না, আমরা খেলে নিচেই খাব। তোর ঘুমের কোনও ব্যাঘাত আমরা করব না। “ একটা কথা এখানে বলে রাখা উচিত, রাজা আর অরুণ দুজনেই এখন খুব প্রতিষ্ঠিত সার্জেন। ওদের সাথে আমার এখনও কথা হয়, কিন্তু ভুলেও আমরা কেউ ওই ট্রিপের কথা ওঠাই না। পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে কার কি লাভ। আলাপ, মানে দোস্তি সেই তখন হয়েছিল। সেই ট্যুরে যা হয়েছিল পরে বলব। বন্ধুত্ব রয়ে গেছে। পুরনো কথা কেউ তুলিনা। বা সেই নিয়ে কথা বলা হয় না। একটু সাসপেন্স থাকা ভালো। “হুম, কোথাও তোদের সেই লিকার শপ খুঁজে পেয়েছিস?” আমি রাজাকেই প্রশ্নটা করেছিলাম। রাজা বলল “অরুণ আসার সময় একটা এফ এল শপ দেখেছিল কিন্তু সেটা ষ্টেশনের পাশেই।“ আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেই ফেললাম “হ্যাঁ সে তো একদম পাশেই, তাই না?” আমরা চারজনেই হেঁসে উঠলাম। বুঝলাম আমরা প্রত্যেকেই “কাছের” ব্যাপারটা নিয়ে একই রকম অভিজ্ঞতার শিকার।কাছে? রাজা বলল “কিন্তু সপ্তাহের মাঝে গিয়ে কালেক্ট করতে পারব না। গেলে আজই যেতে হবে। “ আমি একটু ভেবে জিজ্ঞেস করলাম “তোরা কি খাস? মানে এমনি বলছি আর কি, ” ও বলল “তুই খাস? কি খাস? মানে আমাদের সাথে খেতে, মানে, ”, আমিও ওকে কথা শেষ না করতে দিয়ে বললাম “ ভোদকা। কিন্তু কিছু পাতি লেবু দরকার। সেটা নাহ্য় আমিই কিনব। বাকিটা আমি শেয়ার করব।“ রাজা উঠে দাঁড়িয়ে বলল “মহারানি আজ্ঞা করলে কয়েকটা পাতি লেবু তার এই সেবকরাও এনে দিতে পারবে। “ আমি হেঁসে বললাম “ আসলে আমার নতুন জায়গা দেখার শখ আছে। তোদের সাথে আমিও যেতে পারি। কিন্তু স্টেশন অব্দি যেতে হবে শুনলে কেমন যেন গায়ে জ্বর আসছে। অরুণ আমাকে বলল “ সে ঠিক আছে, তুই টাকা দিয়ে দে, মানে তোর শেয়ার টা , আমরা তোর ভোদকা টা তোর ঘরেই পৌঁছে দেব। ও শ্যামদা, শ্যামদা গো, “ , শ্যামদা হাজির হলেন। “দাদা ফ্রিজ আছে?” ওনার মুখটা দেখে বুঝলাম ফ্রিজ কথাটা উনি যেন প্রথমবার শুনছেন। রাজা ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দিল। “দাদা, ঠাণ্ডা জল বা বরফ পেতে চাইলে কোথা থেকে পাব?” “বরফ পাবেন না। কিন্তু হ্যাঁ কলসিতে রেখে দিলে জল ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।“ সন্দীপ বলে উঠল “ লেটেন্ট হিটের মারাচ্ছে”। রাজা ওকে থামিয়ে দিল। ঠিক হল আমরা সবাই একসাথে রেডি হয়ে লাঞ্চের পর বেরব। দুটো রিক্সা আনানোর বন্দবস্ত করা হল। মানে শ্যামদা ব্যবস্থা করবে। রাজা আর আমি যাব এক রিক্সায়। কেন রাজা আমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইছে সেটা নিয়ে আমার সামনেই রাজাকে সবাই মিলে টিটকিরি দিল। আমি হেঁসে কুটোপাটি। ছেলেদের বন্ধুত্ব আলাদা হয়। এত গভীর আর সহজ বোধহয় মেয়েদের বন্ধুত্ব হয় না। এটা আমি ওদের সাথে মিশে বুঝতে পেরেছি। অরুণ আর সন্দীপ যাবে আরেকটা রিক্সায়। রিক্সা বললেই তো আর রিক্সা পাওয়া যায় না এখানে। রিক্সা কখন আসবে কোনও ঠিক নেই। তাই আমরা শ্যামদাকে এখনই রিক্সা আনতে বলে দিলাম। আসলে ওনার হাতেও কিছু নেই। সামনে কোনও রিক্সা এলে তবেই উনি নিয়ে আসবেন। এখানে, এত জন মানব শূন্য জায়গায় চট করে রিক্সা পাওয়া যায় না। আসর ভাঙল। আমি আসার আগে জিজ্ঞেস করলাম “আসার পর বাড়িতে জানানো হয়নি। ওরা চিন্তা করবে। কোথাও ফোন বুথ দেখেছিস?” সবাই অরুনের মুখের দিকে তাকাল। বুঝলাম ওদেরও বাড়িতে জানানো দরকার। অরুণের কথা শুনে দমে গেলাম। ও বলল “ তেমন ভাবে দেখিনি, কিন্তু আছে একটা মনে হয় ওই গ্রামের শেষে। “ সবাই হুম বলে বিজ্ঞের মতন মাথা নাড়ালেও আমি ছাতার মাথা কিছুই বুঝিনি। এদের ব্যাপারে একটা জিনিস বলে রাখা ভালো, এরা আমার সাথে কখনও ফ্লার্ট করেনি। এদের কারোর গার্ল ফ্রেন্ড আছে বলেও কখনও শুনিনি। ওদের তিনজনের সাথেই আমার অনেক কথা হয়েছে, কিন্তু সবই পড়াশুনা নিয়ে। অরুণের সাথে কিছুটা কম হলেও হয়েছে। আমি ওদের সাথে মিশতে স্বাভাবিক বোধ করছিলাম। সব কটা যাকে বলে নেহাত ভালো ছেলে। আর এরকম জায়গায় ভালো ছেলে যত বেশী থাকে ততই ভালো। যে মদ খায় সেই খারাপ, এইটা আমি মানিনা। আমার চোখে এরা ভালো ছেলে।
সবাই স্নান করে ফ্রেশ হওয়ার জন্য উঠে পড়লাম। এমন ভাববেন না আমি স্নান করার সময় কেউ জানলা দিয়ে দেখছিল। না সেটা সম্ভবও নয়। ওরা নিজেদের নিয়ে মশগুল ছিল। আমি নামার পর সবাই একসাথে লাঞ্চ সারলাম। এখানে যে এত ভালো মাছ পাওয়া যায় সেটা আমার অজানা ছিল। সেটা শ্যামদাকে বলতেই শ্যামদা বলল, “দিদিমনি পাশেই নদী আছে। এখন শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওখান থেকে আমরা মিঠা মাছ নিয়ে আসি। আপনারা খেলে ভালো করে ঝাল টাল দিয়ে বানিয়ে দেব।“ লোকটা নেহাতই সরল। পরে জেনেছিলাম ওনার এক মেয়ে আছে। মা মড়া মেয়ে। মামার সাথে থাকে। সেটা আরেকটা ঘটনা। আমরা ওর মেয়েকে ছাড়ানোর জন্য রীতিমত যুদ্ধ করেছিলাম। সময় এলে বলব। আর ভুলে গেলে মনে করিয়ে দেবেন। বাপ্পা, শ্যামদার মেয়ে অনেক গুলো না বলা কথা রয়ে যাচ্ছে তো। ভুলে যেতেই পারি। বয়স বাড়ছে। আমার খাওয়া দেখে রাজা বলল পরের দিন, ও, আমার সাথে খাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা করবে। আমার একটু যেন লজ্জাই লাগল। “উফফ মহারানি লজ্জা পাচ্ছে, চুপ।“ সন্দীপের কথা আর নেওয়া যাচ্ছে না। শ্যামদা কিছু না বুঝেই একটু বোকার মতন হেঁসে চলে গেল সামনে থেকে। ও হ্যাঁ, কারেন্ট চলে এসেছে। এখানে বেশী সাজার মানে নেই। অনেক দিন পর বাইরে বেড়াতে যাচ্ছি। শুধু বিউটি পার্লারে যাওয়াটা একঘেয়ে। কিন্তু এখানে সাজগোজ করা যাবে না। এখন আমি ডাক্তার। শুধু বেরনর সময় ঠোঁটে হালকা একটু গোলাপি লিপস্টিক আর চোখে কাজল মেখে ছিলাম। গোটা রাস্তাটা আমাকে চোখে কাজল মাখা নিয়ে যা যা গান ওরা শুনিয়েছিল সেটা আর বলতে পারছি না। রাস্তার গল্প পরে বলছি। সেটাও অভিজ্ঞতা। কিন্তু তার আগের কথায় আসি।
আমি নামার সাথে সাথে আমাকে দেখে তিনজন খানিকক্ষণ ভুত দেখার মতন তাকিয়ে ছিল। নারীহীন স্থানে এটা বিরল নয়। কিন্তু ওরা যেন সত্যি ভুত দেখছে। রাজা বলেই ফেলল “ওরে আমরা বিয়ে বাড়ি যাচ্ছি না।“ আমি একটু লজ্জাই পেয়ে গেছিলাম। আমার বেশ ভুশা যথেষ্ট ভদ্র। অরুণ হঠাত করে গান ধরেছিল “কালো হরিণ চোখ, আর বাকিটা জানা নেই গুরু।“ এ যেন একটা নতুন অরুণ। ওকে দুজনে চুপ করিয়ে বলল “রিক্সা এল?” শ্যামদা বলল “ চেষ্টা চালাচ্ছি বাবু। এখনও আসেনি।“ “নদী কতদূর?” প্রশ্নটা করল সন্দীপ। শ্যামদা বলল “ ৬ থেকে ৭ মিনিটের হাঁটা পথ। আঙুল দেখিয়ে দিল কোন দিকে যেতে হবে। “কিন্তু পথে পাথর ফেলা আছে দাদারা। দিদিমনি যেতে পারবে না।“ শালা, আত্মবিশবাসে আঘাত? তাও এই ধুতি পরা লোকের কাছ থেকে। বললাম “চল যাওয়া যাক। রিক্সা এলে তুমি ধরে রেখ শ্যামদা। আমরা না হয় নদীই দেখে আসি। বেলা পড়ে আছে। চিন্তা নেই শ্যামদা।“ আমরা নদীর দিকে হেঁটে চললাম। ভীষণ বাজে পথ। এটা স্থানীয় লোকদের পায়ে হাঁটার পথ। রাজা হঠাত গান ধরেছিল “দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে “ আমরা হেঁসে ওকে চুপ করিয়ে দিলাম। ওকে দমানো গেল না, বলল “ গান থাক, তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের নদীর দর্শন দিচ্ছি। “ ভীষণ ভীষণ চিপ কথা নেতাজীর কথা টেনে, কিন্তু আমাদের মনে কোনও অসম্মান নেই। আমরা শুধু মজাই করছি। প্রায় বাইশ মিনিট হেঁটে, বার বার পড়তে পড়তে না পড়ে, এর ওর হাত ধরে ব্যাল্যান্স করে, শেষে পৌঁছালাম নদীর ধারে। ভীষণ তীব্র হাওয়া। বলে বোঝানো অসম্ভব। হ্যাঁ আমাদের বাংলাতেই আছে। নদীটা শুকিয়ে গেছে। প্রচুর লোক এসে ময়লা ফেলেছে। কিন্তু ফুরফুরে হাওয়াটা অগ্রাহ্য করা যায় না। এখানকার হাওয়া যেন অনেক সুন্দর। তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রি কম। আমি হাঁপিয়ে বসে পড়েছিলাম একটা পাথরে। ওরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে নদীর ধার ঘেঁষে। আমি ওদের দু একবার বারণ করেছিলাম, নদীতে যাস না। ওরা শোনেনি, আমিও আর বলিনি। আমার দায়িত্বে ওদের জুতো মোজা রেখে খালি পায়ে নদীর জলে পা ভেজাতে গেছে। মজা করছে, করুক না। আমার হাঁপ ধরে গেছে, একবার পা মচকে গেছে, কিন্তু ওরা তো দৌড়াতে পারে। ওদের কি সমস্যা। আমি স্পয়েল স্পোর্ট নই। অনেকক্ষণ পর বাদরগুলো ফিরে এল। আমিও তখন হাঁটতে পারছি দেখে ওরা বলল “এবার ফেরা যাক। “ রাজা বলল “শ্যামদাকে একবার জিজ্ঞেস করতে হবে এইখানে রাত্রে কেউ আসে কিনা?” বললাম “কেন বলত?” আমার পায়ে ব্যথা হচ্ছিল। তাই এর ওর হাত ধরে হাঁটছিলাম। ওরা আমাকে কোনও রকম জোড় করেনি। উল্টে হেল্পই করছিল। আর ওরা ফ্লার্ট করা ছেলে নয় বলেই মনে হচ্ছিল। তাই ওদের কথা বলতে গেলে আমি দ্বিধা করব না। রাজা বলল “ সামনের সপ্তাহের শেষে আমরা রাত্রে এখানে এসে পিকনিক করতে পারি। “ বলেই ফেললাম “নেকি অউর পুছ পুছ। তোরা কিন্তু নদীতে যাবি না রাত্রে। কথা দিবি? তবেই আসব।“ “ওকে মহারানী”, তিনজনেই হেঁসে আমাকে বলেছিল। “দিনের বেলা নদীতে গেলে কোনও সমস্যা নেই তো?“ এটা সন্দীপ। আমি কপট রাগ দেখিয়ে বলেছিলাম “না। আগে তো দিনের বেলায় সময় পা, তারপর ভাবিস ওইসব। “ রাজা বলল “চল মালটাকে একটু ধরি। আর আমি একটা জিনিস চিন্তা করছি যে কাল আমরা হাসপাতালে পৌঁছাবো কি করে? চল তো। ” আমরা বাইশ মিনিটের পথ ১৫ মিনিটে শেষ করে ফিরে এসেছিলাম। এক কাপ করে চাও খেয়েছিলাম। না রিক্সা আসেনি তখনও। একটা এসেছিল। আরেকটার অপেক্ষায় বসে আছি আমরা। এখানে আমরা একলা বেরব না। তাই অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। শ্যামদা আরেকটা রিক্সা নিয়ে এল প্রায় ১৫ মিনিট পর। আমরা রিক্সা চেপে বেরলাম মদ কিনতে আর বাড়িতে খবর দিতে। মোবাইল শস্তা হওয়া শুরু করেছে, কিন্তু আমাদের ৪ জনের কারোর কাছেই তখন মোবাইল নেই। আজ দুটো ওটি ছিল। আজ শুই কাল আবার হবে। ভালো থেকো সোনা। মা কেমন আছেন জানাবে।
আমরা ওঠার আগে রিক্সাওয়ালাকে খোলা খুলি জিজ্ঞেস করে নিয়েছিলাম কোথায় ভালো মদের দোকান পাওয়া যাবে। লোকটা প্রথমে বলল কাছেই আছে। কিন্তু কথাটা বলে একবার আমার দিকে তাকিয়ে নিল। বুঝলাম কোনও মেয়ে মদের দোকানে যাচ্ছে সেটা মেনে নিতে পারছে না। এটা কিন্তু সত্যিই কাছে। হাসপাতাল ছাড়িয়ে লোকালয়ের কাছে যেতেই একটা লাল ইটের বাড়ির সামনে দুজন রিক্সা দাঁড় করাল। দেকলাম দোকানের কোনও কাউন্টার নেই। এ কিধরণের এফ এল শপ। আমরা চারজনেই নেমে ঢুকতে যাচ্ছিলাম, রিক্সাওয়ালা আমি ওদের সাথে ওই বাড়ির মধ্যে ঢুকছি দেখে একবার ঢোঁক গিলল। গ্রামের লোক। কোলকাতায় কি হয় কোনও ধারণা নেই। ঢুকতে গিয়েই আমরা তিনজনেই থমকে গেছি। বাড়ির মধ্যে গোটা ৬ টা টেবিল আর তাতে চোলাই মদ জাতীয় কিছু একটা সার্ভ করা হচ্ছে। এটা একটা দেশী মদের ঠেক। বুঝলাম এত ভয়ানক ভাবে চোখ ওলটানের কারণটা। কয়েকজন তখন বসে গিলছিল, আমাদের দেখে যেন একটু ঘাবড়ে গেল। বেড়িয়ে এসে রাজা বেশ করে ধমক দিল ওদের। “কোথায় নিয়ে এসেছেন?” লোকটা ভয়ে ভয়ে বলল “দাদা এটাই এখাণকার সবথেকে বড় মদের দোকান।“ আমরা যতই হুইস্কি , ভদকা স্কচ এইসব বোঝাই ততই লোকটা আরও কনফিউসড হয়ে যাচ্ছে। শেষে কি একটা ভেবে, অরুণ বলল “রাম পাওয়া যায় কোথাও?” এইবার লোকটার ৩২ পাটি দাঁত বেড়িয়ে গেল। “হ্যাঁ সেট সেই ষ্টেশনের কাছে।“ “রামের সাথে ওখানে আরও কিছু রাখে নিশ্চই?” লোকটা বলল “হ্যাঁ তা রাখে। “ আমরা বললাম “চলুন সেখানে নিয়ে চলুন।“ অন্য রিক্সাওয়ালাটা রাস্তায় যেতে যেতে ওদের সাথে অনেক কথা বলেছিল। কি কথা হচ্ছিল, সেটা জানতে পেরেছিলাম শনিবার রাত্রে। অনেকক্ষণ পর শেষমেশ এফ এল শপের দেখা পাওয়া গেল। আমরা রিক্সাদুটোকে ছাড়িনি, নইলে আর ফিরতে পারব না। আমি দুটো ৭৫০ মিলি লিটারের বোতল কিনলাম ভদকার , ওতে আমার অনেক দিন চলে যাওয়া উচিত, ওরা নিজেরা গুছিয়ে প্রচুর মদ কিনল, অনেক গুলো বিয়ারের বোতলও কিনল। বেশ কয়েকটা পাতিলেবু কিনেছিলাম ফিরতি পথে। ও হ্যাঁ, মদের গল্প করতে করতে বাড়িতে ফোন করার কথাটাই বলতে ভুলে গেছিলাম। হ্যাঁ ফোন ছিল মদের দোকানের ঠিক দুটো দোকান পরেই। আমরা বাড়িতে ফোন করলাম। এখানে পৌঁছে গেছি জানিয়ে দিলাম। মা জিজ্ঞেস করেছিল, সাথে কটা মেয়ে আছে। আমি বললাম “আমরা তিনটে মেয়ে ৪ টে ছেলে।“ ইচ্ছা করেই মিথ্যা বলেছিলাম, যাতে আমাকে নিয়ে বেশী টেনশন না করে। একা আমি মেয়ে আর বাকি তিনটেই ছেলে শুনলে মা অক্কা পেত। মা তাও বলল “ছেলেদের সাথে বুঝে শুনে মিশিস।“ আমি যখন ফোনে কথা বলছিলাম ওরাও পাশে দাঁড়িয়েছিল। ওরা আমার কথা শুনে এর ওর মুখ চাওয়া চায়ি করল। আমি একটু চোখ মেরে বুঝলাম পাটি ঢপ মারছি। সিরিয়াসলি নেওয়ার কোনও কারণ নেই। সপ্তাহ খানেকের মতন মদের ব্যবস্থা করে, প্রচুর চিপস ইত্যাদি কিনে, আমরা আবার ফিরে চললাম বনবাসে। যত বেশী বার আমরা যাতায়াত করছি তত মনে হচ্ছে সময় যেন আরও আরও কম লাগছে। মহাগুরু আইনস্টাইন ভদ্রলোকের কথা মনে হচ্ছিল। ঘড়ি অনুযায়ী একই সময় লাগছিল, বরঞ্চ বেশীই, কারণ এখন রিক্সায় একজনের জায়গায় দুজন, তার উপর ব্যাগ ভর্তি মদের বোতল। কিন্তু এখন রাজার সাথে কথা বলতে বলতে সময় কেটে যাচ্ছিল। ছেলেটা খুব সুন্দর কথা বলতে পারে। আর মাঝে মাঝেই সামনের রিক্সা টা থেকে গান ভেসে আসছিল “রূপ তেরা মস্তানা, ও মাহারানি গো...” রাজা চীৎকার করে বলছিল “তোরা থাম, রাস্তার লোকেরা সব শুনছে।“ রাজা যেন আমার ব্যাপারে একটু বেশী কেয়ারিং। আমি যদিও একটু মস্তিবাজ বেপরোয়া ছেলে পছন্দ করি কিন্তু কেয়ারিং ব্যাপারটা কোন মেয়ের না মনে ধরে। না এত চট করে আমি প্রেমে পড়িনি। কিন্তু ওর সঙ্গ টা আমি পছন্দ করছিলাম। বেশ একটা উষ্ণতা ছিল ওর কথাবার্তায়, ওর ছোঁয়ায়। ছোঁয়া বলতে রিক্সাতে ওঠা বা নামার সময় যেটুকু আমাকে সাহায্য করছিল হাত ধরে, ওই আর কি। রাজাকে আমি বলেই ফেললাম আমি অদিতি শম্পা আমরা ছুটির দিন থাকলে ভোদকা খাই, মজা করি এইসব। বলল “ ভাবা যায় না। তোরা মদ খাস। “ আমি বললাম “সেই।আমাদের সবাইকে কি ভাবিস তোরা? ধোয়া তুলসীপাতা।“ ওকে রাস্তায় কথায় কথায় অদিতির বিয়ের ব্যপারটা বললাম। কথা বলতে বলতে এতটা পথ কিভাবে পাড় হয়ে চলে এসেছি বুঝলাম না। হঠাত বুঝলাম আমরা আমাদের মেসে ফেরত এসেছি। আগেই বলেছি এখানে খাওয়া দাওয়া শস্তা কিন্তু ওটা আমাদের ঘাড়ে, কিন্তু থাকাটা যা শুনলাম কলেজ থেকে আসবে, মানে এক কথায় আমাদের সরকারের ঘাড়ে। আমি রাজাকে পথেই বলে দিয়েছিলাম যে স্যার আমাদের সন্ধ্যায় আর এই লোকালয়ের দিকে আসতে বারণ করেছে। তার কারণ কি জানা নেই। ও বলল “কি গাঁড় মারাতে আসব এই লোকালয়ে?” বলেই ও একটু জিভ কাটল বটে, কিন্তু আমি বুঝলাম ও আমার সাথে ফ্রি হয়ে যাচ্ছে। মুখে আর আগের মত সংযম নেই। আমি বললাম “এত জিভ কাটিস না কথায় কথায়, পুরো জিভটাই তাহলে বাদ পড়ে যাবে। আমরাও খিস্তি খেউর করি। কিন্তু তোদের সামনে নয়। আমাদের মদের আড্ডায় বসলে বুঝতে পারতিস। “ ও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল “ যাক বাঁচালি। আর রেখে ঢেকে কথা বলার দরকার পড়বে না।“ আমি ওকে বললাম “ ক্লাসের মধ্যে তোরা যখন খিস্তি খেউর করিস আমাদের কানে যেন সেই কথা গুলো আসে না। তোরাই আমাদের স্টক বাড়িয়ে দিয়েছিস। নইলে আমাদের আর ওইসব শেখার জায়গা কোথায়।“ ও মাথাটা কয়েকবার ডাইনে বাঁয়ে নেড়ে বলল “ তুই মাইরি সত্যি ডানপিটে মেয়ে, নতুন করে চিনলাম।“ আমি বললাম “আগে কি ভাবতিস ধোয়া তুলসীপাতা?” বলল “ঠিক তা না হলেও, দেখা যাবে কত ছেলেদের মতন ফুর্তি করিস। “ যাই হোক আমরা আমাদের ঘরে পৌঁছে গেছি, শ্যামদা আমাদের কেনা জিনিসগুলো সব আমাদের ঘরে পৌঁছে দিল। আমার বোতল দুটো রাজার ঘরেই রাখা থাকল। আমি তো আর একা একা খাব না। লেবু কিনেছি দেখে শ্যামদা বললেন “এটা না কিনলেও পারতেন। আমি এটা এমনি দিয়ে দিতে পারতাম। শুধু কয়েক ঘণ্টা আগে জানালেই চলত। আর যা দিয়ে কিনেছেন তার থেকে অনেক শস্তায়। আমি বললাম “ আছি অনেক দিন। পরের বার তোমার থেকেই লেবু কিনব।“ সবাই যে যার ঘরে চলে এলাম। এখন আর কিছু করার নেই। ঠিক হল রাত্রে দেখা হবে। কোলকাতা থেকে আসার আগেই আমি আমার সমস্ত জামা কাপড় কেঁচে এসেছিলাম। এখন আর কাচাকাচির বিশেষ প্রয়োজন নেই। তবু দেখলাম হাতে সময় আছে , তাই গিয়ে পরে আসা ব্রা আর প্যানটিটা কেঁচে নিলাম। এটা আমি রোজকারটা রোজই কেঁচে নি। নইলে প্যানটি থেকে বিশ্রী গন্ধ ছাড়ে। কাল যদি কাচার সময় না হয় তখন কি হবে? আমি মার থেকে শুনেছিলাম কোথাও গেলে একটা কাপড় শুকানোর দড়ি সব সময় সাথে করে নিয়ে যেতে। মেয়েদের জন্য এটা খুব কাজের। কারণ মেয়েরা তো আর সবার সামনে সব কিছু ধুয়ে মেলতে পারে না। আমি ঘরে দড়িটা বেঁধে তাতে ভেজা অন্তর্বাস গুলো মেলে একটা ঘরে পরার ঢিলে স্লিভলেস টপ আর লেগিন্স পরে শুয়ে পরলাম। আমরা মেলা থেকে বেশ কয়েকদিন আগে শস্তায় অনেক গুলো ড্রেস কিনেছিলাম। কোথাও বাইরে গেলে সেগুলো কাজে লাগে। ক্লান্তি এতক্ষণে আমাকে পেয়ে বসেছে। ট্রেনে আমার খুব ভালো ঘুম হয় না। বিছানায় মাথা রাখতেই শরীরটা ছেড়ে দিল।
ঘুম যখন ভাঙল চোখ খুলে দেখলাম ঘর পুরো অন্ধকার, সন্ধ্যা হয়ে গেছে সেটা আর বলে দিতে হয় না। কানের পাশে প্রচণ্ড মশার ভোঁ ভোঁ শব্দ হচ্ছে। আমার গোটা খোলা হাত গুলো মশার কামড়ে চুল্কাচ্ছে। একটা পরিষ্কার সাদা চাদর আর মশারি ওই আলমারিটাতে রাখা ছিল। বের করে নেওয়া উচিত ছিল। এক কাপ চা পেলে মন্দ হয় না। পুরো হুঁশ আসার পর শুনলাম আমার ঘরের বন্ধ দরজায় দুম দুম করে বাড়ি মারছে কেউ বা কারা। রাজার গলা শুনতে পেলাম। বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়াতে যাব মাথায় ঘরে টাঙানো দড়িটাতে ঘষা খেল। আর কোথাও লাগাতে পারিনি দড়িটা। তড়িঘড়ি করে ছুটে গিয়ে সুইচবোর্ডে সুইচ অন করে হলদে বাল্ব টা জ্বালালাম। আমার শরীরে ম্যাড়ম্যাড়ে ভাবটা রয়েই গেছে। অসময়ে ঘুমানোর এই এক দোষ। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে দরজা খুললাম। রাজা বলল “ শালা ভাবলাম মড়ে পড়ে আছিস কিনা। কি ঘুমরে ভাই ...।“ ওর কথা মাঝ পথেই থেমে গেছে। ঘুম ঘুম চোখ বলে ব্যাপারটা অনুধাবন করতে একটু বেশীই সময় লাগল। ঘুমানোর সময় আমি ওপরে বা নিচে কোনও অন্তর্বাস পরে শুইনি। ঠিক করেছিলাম ঘর থেকে রাত্রে বেরনর আগে পরে বেরব। কিন্তু ব্যাপারটা আমার ঘন ঘুমের জন্য অন্যরকম হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি প্রায় দৌড়ে এসে দরজা খোলার জন্য আমর ব্রা হীন বুকদুটো অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ওঠানামা করছে এই চারটে প্রাণীর সামনে। ৪ জন বলতে শ্যমদাও ছিলেন। আমি যে ব্রা পরিনি সেটা বোধহয় স্পষ্ট। দেখলাম ওদের চোখগুলো খনিকের মধ্যে আমার স্তন আর তারপরেই আমার পিছনে ঘরের মধ্যে শুঁকাতে দেওয়া ব্রা আর প্যানটির উপরে দিয়ে ঘুরে এল। আমি লজ্জা ছাড়িয়ে নিজেই নিজের বুকের দিকে একবার চট করে দেখেনিলাম। প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি স্তন বিভাজিকা উন্মুক্ত, একটু আধতু নয় পুরো অর্ধেক। বড্ড বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। জেনে বুঝে করিনি এটা। কিন্তু হয়ে গেছে। আমি লজ্জার মাথা খেয়ে কাঁধের কাছে টপ টা একটু উঠিয়ে নিলাম। টপের কাপড়ের অনুভুতিতে বুঝলাম আমার স্তন বিভাজিকা মোটামুটি ঢেকে গেছে। এই আধুনিক টপগুলোর একটা স্টাইলই বলুন বা ব্যথাই বলুন এগুলো বগলের নিচে অনেক সময় এত খোলা হয় যে ঠিক করে না পরলে বুকের প্রায় মাঝখান অব্দি অনাবৃত হয়ে যায়। সেরকম জায়গায় পরে গেলে এটা ফ্যাশন। কিন্ত এই মুহূর্তে আমার মাথায় সেক্স বা শরীর দেখানোর কোনও ইচ্ছা আসেনি। তাই এখন এটা লজ্জার। পরিস্থিতি আর কি। আমার স্তন বিভাজিকা ঢেকে গেলেও বুঝলাম ওদের চোখ আমার অনাবৃত বগলের জায়গায় ঘোড়ার ফেরা করছে। না আমি ক্যালাসের মতন হাত তুলে দাঁড়িয়ে ছিলাম না। কিন্তু হাত শরীরের সাথে চেপে রাখলেও এইসব ড্রেসে বোঝা শরীরের বগলের নিচের অনাবৃত জায়গাগুলো বেশ ভালো ভাবেই দেখা যায়। অনেক সময় স্তনের পাশের দিকের প্রসারিত হওয়া অংশের আভাস বোঝা যায়। আমি হাত দুটো কে শরীরের পাশে আরও আঁটসাঁট করে চেপে ধরে বললাম “কটা বাজে রে?” ওরা আমার শরীরের থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিল। ওদের মুখ দেখে বুঝতে পারলাম ওদের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে ওরা বাকি কথাগুলো বলল এদিক ওদিক তাকিয়ে, আমার শরীরের থেকে চোখ যতটা পারা যায় অন্য দিকে তাকিয়ে। আমি আরেকবার সাবধান হওয়ার জন্য কাঁধের কাছে হাত নিয়ে টপের সামনের দিকটা তুলে নিলাম। ওরা আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরেই বলল “ নিচে আয়। পৌনে ৯ টা বেজে গেছে। এরা এখনই খেতে বলছে। আমরা একটু মদ গিলব। তুই জয়েন করতে চাইলে আয়। আমি বললাম “আমি আসছি, কিন্তু শোননা তার আগে একটু চা পাওয়া যাবে?” ওরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে “উফফ গার্লস উইল বি গার্লস। এখন চা? দেখছি।“ ওরা চলে গেল। আমি তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে ব্যাগ থেকে হ্যান্ড আয়নাটা বের করে একবার নিজেকে দেখলাম। না স্তনের কিছুই পাশ থেকে বেড়িয়ে ছিল না কারণ আমার স্তন তখনও অতটা ভরাট নয়, কিন্তু বগলের কাছটা এতটা ঢিলে যে পাশের অনেকটা অংশই অনাবৃত হাতের তলায়। যদিও এটা এখন স্বাভাবিক ব্যাপার।