14-10-2019, 12:52 PM
খোলা জানালা দিয়ে হোহো বাতাস এলোমেলো করে দিচ্ছে আঁচড়ানো চুলগুলি। তারপরও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কমল, জানালা দিয়ে যেন চলে আসছে পুরনো দিনের স্মৃতি। স্থির কঠিন দৃষ্টি, চাঞ্চল্যহীন নীরবতা! বোঝার উপায় নেয় কী চলছে মনের ভিতর। অন্যের কাছে নিজেকে ধরা দিতে খুবই সংকোচ তার, বলা যায় প্রতিজ্ঞার মত। অল্পভাষী, সুপুরুষ আর রুচিশীল। মাথা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত অভিজাত্যের ছোঁয়া। খুব কম লোকই হাসতে দেখেছে তাকে,কখনো কদাচিৎ যা কেউ বা দেখেছে,সেটাও খুবই মার্জিত-মাপা। অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্বাস, আর সততা তাকে সম্মানীয় করে তুলেছে সবার কাছেই। পরিবারের সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও কেউ কারো থেকে দূরে সরে যায়নি। আর সবাই বিপদের সময় ছুটে আসে কমলের কাছে। কমলপ্রতাপ গুপ্ত; মাত্র ৩২ বৎসর বয়সেই নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যরকম উচ্চতায়!
এভাবেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে নিজের ব্যর্থতাগুলোকে বারবার জাগিয়ে তোলেন। যার জীবনে এতো সফলতা, সে কেন হারিয়ে যায় না-পাওয়াগুলোর স্মৃতি রোমন্থনে? অর্থ-বাণিজ্যের ব্যর্থতা তাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে,কিন্তু এর জীবনে এমন এক ব্যর্থতা আছে যা তার সব অর্জনকে ব্যাঙ্গ করে অট্টহাসিতে ফেটে পরে। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও রাগে ক্ষোভে পাথরের মতই শক্ত হয়ে উঠেছে তার শরীর। ব্যাকব্রাশ করা চুলগুলি আর জায়গায় নেয়, হীম ঠান্ডায় খোলা দেহে আছড়ে পড়ছে সুঁচালো বাতাস। তীব্র ঠান্ডায় অনুভূতিহীন হয়ে যাচ্ছে সব! এ যেন অপরাধী না হয়েও MORTIFICATION এর মাধ্যমে নিজেকে শাস্তি দেয়া! প্রতিদিনের অভ্যাস, কী শীত, কী গরম। হঠাৎ দরজায় নক হলো ঠুকঠুক করে। ধ্যান ভাঙলো কমলের, কাঁপতে কাঁপতে শুধু মাত্র ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো দরজার দিকে। নিশ্চয় মা হবেন, ওর রুমে এভাবে জোরে নক কেবল মার দ্বারাই সম্ভব।
কমলের মা শান্তি প্রীয়া গুপ্ত, ছয় সন্তানের জননী। দুই ছেলে আর চার মেয়ে। মেয়েদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। আর তিনি স্বামীকে নিয়ে নানান জায়গায় ঘোরাতে থাকেন। কমলের বাবা এই গুপ্ত পরিবারের সবার বড় ছেলে ছিলেন,তাই সব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্ত্রীকে বেশী সময় দিতে পারেননি। শেষ বয়সে ছেলেদের কাঁধে ব্যবসা আর সংসার তুলে দিয়ে দেশ-বিদেশে বিলাস যাত্রা করেই সময় পার করেন। এই পৃথিবীতে কেবল মায়ের সাথেই মন খুলে কথা বলে কমল, এখানে আভিজাত্য আর ব্যক্তিত্বের মাপা-মাপিও নেয়। মায়ের কাছে লুকানো যায়না কিছুই, তাই চেষ্টাও করেনা কখনো। কিন্তু আরো একজন আছে,যাকে কিছুই বলেনা কমল। তবুও সে সবি জেনে যায়। থাক সে কথা। কমল আস্তে আস্তে শরীরটা মুছে একটা শার্ট লাগালো, তারপর জানালা বন্ধ করে দরজা খুলে দিলো। মা এসেছেন, সাথে বড় বোন তাপস্বীকে দেখে একটু আশ্চর্য হলো সে। কিন্তু মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছেনা সেটা, দরজাটা খুলেই সোজা সোফাতে গিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। রিমোট হাতে নিয়ে টিভিটা চালিয়ে দুই-একটা চ্যানেল বদল করে মা আর দিদির দিকে ফিরে তাকালো। এতোক্ষণে ওরা বসে পরেছে সোফায়। ভারী সুরে তাপস্বীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“কিরে কবে আসলি?” শুনে মনে হবে সেই বয়সে বড়।
“কবে এসেছি, সেই দুপুরবেলা। সন্ধ্যায় একটু বাইরে বেড়িয়েছিলাম,সে সময় তুই এসেছিস। আর একি? এখন রাত দশটা বাজে, এই সময়ে তোকে একবারো রুমের বাইরে আসতে দেখলামনা। উপায় না দেখে মাকে নিয়ে তোর রুমেই চলে আসলাম।“ ভাইয়ের এইভাবে নিজেকে একঘরে করে নেয়াটা কিছুতেই মানবেনা তাপস্বী দত্ত্ব।
“কাজ ছিলো,তাই! এবার বল তোর খবর কী? জামাইবাবু কেমন আছেন? রাহুলকে এনেছিস তো?” কমল বললো। তাপস্বী প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে যা করতে এসেছে সেটা শুরু করলো।
“দেখ কমল, এটা ঠিক হচ্ছেনা! কারো জন্য লাইফ থেমে থাকেনা। আর এক চরিত্রহীন নারীকে ভেবে নিজের সুন্দর জীবনটা এভাবে নষ্ট করিস না। কী ছিলি তুই,আজ কী হলি। যার জন্য আনন্দ থেকে নিজেকে নির্বাসন দিলি, সে কিন্তু তার নাগরকে নিয়ে স্ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে। সেই…” শেষ করার আগেই কমল থামিয়ে দিলো দুই বৎসরের বড় বোনকে।
“আহা! বাদ দে এসব। কারো খবর শুনতে চাইনা আমি”।
“আমিও কারও খবর দিতে আসিনি। মা, দাও ওকে ছবিটা!”মায়ের দিকে ফিরে বললো তাপস্বী। শান্তি প্রীয়া ছেলের সামনে একটা ছবি রেখে দিলেন। খুবই সুন্দরী এক মেয়ের ছবি। শান্তি প্রীয়া চোখ তুলে ছেলের দিকে তাকাতেই ভয়ে আটকে উঠলেন। রাগে ফোসফোস করছে কমলপ্রতাপ গুপ্ত। বুঝলেন এখানে বসে থাকা ঠিক হবেনা। তাই উঠে দাঁড়ালেন আর মেয়ের হাত ধরে টান দিয়ে বললেন,
“চল! কাজ হবেনা এসব কথায়। আমাদের কষ্ট সে বুঝবে কেনো? ঘরে একটা মেয়ে নেয়, বউ নেয়। এতো বিশাল বাড়ি, সামলাবে কে? মা হয়ে আমি আমার সব দায়িত্ব পালন করেছি, ছেলেরা না করলে আমি কি করতে পারি।“
মা-মেয়ে চলে গেলো হনহন করে।
মায়ের কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো, ছেলে হিসাবে মাকে বউমা আর নাতি-নাতনীর মুখ দেখানো ওর দায়িত্ব। কিন্তু বিয়ে? না!
চোখের সামনে ভেসে উঠলো সাবেক স্ত্রী নীমার নগ্ন শরীরটা। তারউপর চড়ে আছে তারই বাল্যবন্ধু প্রকাশ! নীমার দুইপা কাঁধে তুলে প্রকাশ তার পুচকী বাড়া দিয়ে পোদ মেরেই চলেছে। সেদিন মাথা ব্যথা করাই তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলো ঘরে। মা-বাবা দেশের বাইরে ছিলেন। বোনেদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো, একমাত্র ভাই অম্বধীস লন্ডন। এটা ছিলো নীমার প্রতিদিনের কাজ। ডিভোর্স হলো, কিন্তু সেই থেকে অন্যরকম হয়ে গেলো সে। প্রকাশের ওর মত অর্থ-ক্ষমতা,দেহ ছিলো না। এমনকি বাড়াটাও খুবই ছোট। কিন্তু সে কবিতা লিখতো,এটাই ছিলো আকর্ষন। এ অপমান কোনদিনও ভুলবেনা সে। তার আত্ম-অহংকার মাটির সাথে মিশে গেছে। ভিতর ভিতর আগ্নেয়গিরি জ্বলছে,নিভবেনা কখনো।
ক্রমশ...
এভাবেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে নিজের ব্যর্থতাগুলোকে বারবার জাগিয়ে তোলেন। যার জীবনে এতো সফলতা, সে কেন হারিয়ে যায় না-পাওয়াগুলোর স্মৃতি রোমন্থনে? অর্থ-বাণিজ্যের ব্যর্থতা তাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে,কিন্তু এর জীবনে এমন এক ব্যর্থতা আছে যা তার সব অর্জনকে ব্যাঙ্গ করে অট্টহাসিতে ফেটে পরে। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও রাগে ক্ষোভে পাথরের মতই শক্ত হয়ে উঠেছে তার শরীর। ব্যাকব্রাশ করা চুলগুলি আর জায়গায় নেয়, হীম ঠান্ডায় খোলা দেহে আছড়ে পড়ছে সুঁচালো বাতাস। তীব্র ঠান্ডায় অনুভূতিহীন হয়ে যাচ্ছে সব! এ যেন অপরাধী না হয়েও MORTIFICATION এর মাধ্যমে নিজেকে শাস্তি দেয়া! প্রতিদিনের অভ্যাস, কী শীত, কী গরম। হঠাৎ দরজায় নক হলো ঠুকঠুক করে। ধ্যান ভাঙলো কমলের, কাঁপতে কাঁপতে শুধু মাত্র ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো দরজার দিকে। নিশ্চয় মা হবেন, ওর রুমে এভাবে জোরে নক কেবল মার দ্বারাই সম্ভব।
কমলের মা শান্তি প্রীয়া গুপ্ত, ছয় সন্তানের জননী। দুই ছেলে আর চার মেয়ে। মেয়েদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। আর তিনি স্বামীকে নিয়ে নানান জায়গায় ঘোরাতে থাকেন। কমলের বাবা এই গুপ্ত পরিবারের সবার বড় ছেলে ছিলেন,তাই সব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্ত্রীকে বেশী সময় দিতে পারেননি। শেষ বয়সে ছেলেদের কাঁধে ব্যবসা আর সংসার তুলে দিয়ে দেশ-বিদেশে বিলাস যাত্রা করেই সময় পার করেন। এই পৃথিবীতে কেবল মায়ের সাথেই মন খুলে কথা বলে কমল, এখানে আভিজাত্য আর ব্যক্তিত্বের মাপা-মাপিও নেয়। মায়ের কাছে লুকানো যায়না কিছুই, তাই চেষ্টাও করেনা কখনো। কিন্তু আরো একজন আছে,যাকে কিছুই বলেনা কমল। তবুও সে সবি জেনে যায়। থাক সে কথা। কমল আস্তে আস্তে শরীরটা মুছে একটা শার্ট লাগালো, তারপর জানালা বন্ধ করে দরজা খুলে দিলো। মা এসেছেন, সাথে বড় বোন তাপস্বীকে দেখে একটু আশ্চর্য হলো সে। কিন্তু মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছেনা সেটা, দরজাটা খুলেই সোজা সোফাতে গিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। রিমোট হাতে নিয়ে টিভিটা চালিয়ে দুই-একটা চ্যানেল বদল করে মা আর দিদির দিকে ফিরে তাকালো। এতোক্ষণে ওরা বসে পরেছে সোফায়। ভারী সুরে তাপস্বীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“কিরে কবে আসলি?” শুনে মনে হবে সেই বয়সে বড়।
“কবে এসেছি, সেই দুপুরবেলা। সন্ধ্যায় একটু বাইরে বেড়িয়েছিলাম,সে সময় তুই এসেছিস। আর একি? এখন রাত দশটা বাজে, এই সময়ে তোকে একবারো রুমের বাইরে আসতে দেখলামনা। উপায় না দেখে মাকে নিয়ে তোর রুমেই চলে আসলাম।“ ভাইয়ের এইভাবে নিজেকে একঘরে করে নেয়াটা কিছুতেই মানবেনা তাপস্বী দত্ত্ব।
“কাজ ছিলো,তাই! এবার বল তোর খবর কী? জামাইবাবু কেমন আছেন? রাহুলকে এনেছিস তো?” কমল বললো। তাপস্বী প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে যা করতে এসেছে সেটা শুরু করলো।
“দেখ কমল, এটা ঠিক হচ্ছেনা! কারো জন্য লাইফ থেমে থাকেনা। আর এক চরিত্রহীন নারীকে ভেবে নিজের সুন্দর জীবনটা এভাবে নষ্ট করিস না। কী ছিলি তুই,আজ কী হলি। যার জন্য আনন্দ থেকে নিজেকে নির্বাসন দিলি, সে কিন্তু তার নাগরকে নিয়ে স্ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে। সেই…” শেষ করার আগেই কমল থামিয়ে দিলো দুই বৎসরের বড় বোনকে।
“আহা! বাদ দে এসব। কারো খবর শুনতে চাইনা আমি”।
“আমিও কারও খবর দিতে আসিনি। মা, দাও ওকে ছবিটা!”মায়ের দিকে ফিরে বললো তাপস্বী। শান্তি প্রীয়া ছেলের সামনে একটা ছবি রেখে দিলেন। খুবই সুন্দরী এক মেয়ের ছবি। শান্তি প্রীয়া চোখ তুলে ছেলের দিকে তাকাতেই ভয়ে আটকে উঠলেন। রাগে ফোসফোস করছে কমলপ্রতাপ গুপ্ত। বুঝলেন এখানে বসে থাকা ঠিক হবেনা। তাই উঠে দাঁড়ালেন আর মেয়ের হাত ধরে টান দিয়ে বললেন,
“চল! কাজ হবেনা এসব কথায়। আমাদের কষ্ট সে বুঝবে কেনো? ঘরে একটা মেয়ে নেয়, বউ নেয়। এতো বিশাল বাড়ি, সামলাবে কে? মা হয়ে আমি আমার সব দায়িত্ব পালন করেছি, ছেলেরা না করলে আমি কি করতে পারি।“
মা-মেয়ে চলে গেলো হনহন করে।
মায়ের কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো, ছেলে হিসাবে মাকে বউমা আর নাতি-নাতনীর মুখ দেখানো ওর দায়িত্ব। কিন্তু বিয়ে? না!
চোখের সামনে ভেসে উঠলো সাবেক স্ত্রী নীমার নগ্ন শরীরটা। তারউপর চড়ে আছে তারই বাল্যবন্ধু প্রকাশ! নীমার দুইপা কাঁধে তুলে প্রকাশ তার পুচকী বাড়া দিয়ে পোদ মেরেই চলেছে। সেদিন মাথা ব্যথা করাই তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলো ঘরে। মা-বাবা দেশের বাইরে ছিলেন। বোনেদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো, একমাত্র ভাই অম্বধীস লন্ডন। এটা ছিলো নীমার প্রতিদিনের কাজ। ডিভোর্স হলো, কিন্তু সেই থেকে অন্যরকম হয়ে গেলো সে। প্রকাশের ওর মত অর্থ-ক্ষমতা,দেহ ছিলো না। এমনকি বাড়াটাও খুবই ছোট। কিন্তু সে কবিতা লিখতো,এটাই ছিলো আকর্ষন। এ অপমান কোনদিনও ভুলবেনা সে। তার আত্ম-অহংকার মাটির সাথে মিশে গেছে। ভিতর ভিতর আগ্নেয়গিরি জ্বলছে,নিভবেনা কখনো।
ক্রমশ...