13-10-2019, 11:28 PM
দুজনে সাথে সাথে চলতে শুরু করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘ তা এই বেহালায় কেন রে?’ তনু আমার পিঠে মিষ্টি করে থাপ্পর দিয়ে বলল, ‘বললাম না বাবার অসুখ। আর আমাদের বাড়ী তো এই বেহালায়।‘ জিজ্ঞেস কলাম, ‘স্নেহা কইরে? দেখছি না তো ওকে?’ তনু জবাব দিল, ‘আরে তুই এসেছিস শুনে তো ও থাকতে চাইছিল না কিছুতেই। ওকে রেখেছি পার্থর ছোড়দির বাড়ী। আমাদের বাড়ী থেকে মিনিট পাঁচ গেলেই ছোড়দিদের বাড়ী। আমি জোর করে রেখে এসেছি। তুই থাকলেই কেমন বাঁদরামি করে। বাবা আবার অসুস্থ ফিল করবে। তাছাড়া একটু সময় তো আমাকে একা দে। তোর সাথে জমিয়ে প্রেম করি।‘ মনে মনে ভাবলাম বয়স তো কম হতে চলল না। এখনও প্রেম? আবার এও ভাবলাম তাহলে আমি বোকাচোদা কি করতে এসেছি? ভাবতে হবে এটা নিয়ে কোন এক সময়। চলতে চলতে ওদের বাড়ী পেড়িয়ে কিছুটা গিয়ে তনু খেয়াল করল, বলল, ‘এই দ্যাখ, কথা বলতে বলতে কখন বাড়ীর গলি ছেড়ে চলে এসেছি। খেয়ালই নেই। চল আবার ব্যাক করি। ওই যে গলিটা।‘ আমি বললাম, ‘সত্যি তুই আমার প্রেমে মজে গেছিস।‘ তনু আমার হাতটা জোর করে ধরে বলল, ‘একদম সত্যি রে।‘ তনুদের গলিতে পৌঁছে একটা পুরনো ধরনের বাড়ী দেখিয়ে তনু বলল, ‘ওই দ্যাখ আমাদের বাড়ী।‘ আমরা দোতলায় উঠলাম। তনুর দাদা দাঁড়িয়েছিল। পরিচয় হোল। পাতলা পুতলা, দেখতে খুব একটা খারাপ নয়। তনুরই মত গায়ের রঙ ফর্সা। আমি নমস্কার করে বললাম, ‘কেমন আছেন? আমি দীপ। পার্থর বন্ধু। কোলকাতায় এসেছিলাম। আপনার বোন আমাকে আপনাদের ঘরে নিয়ে এলো। তনুর দাদা প্রতি নমস্কার করে জিজ্ঞেস করল, ‘কোলকাতায় নিজের ঘর নেই? থাকেন কোথায়?’ কি অভদ্র প্রশ্ন। এমনভাবে জিজ্ঞেস করল যেন কোলকাতায় ঘর না থাকলে ভারী অন্যায় হয়েছে এইখানে আসা। তনু একরকম জোর করে তনুর ঘরে নিয়ে গেল। ঘরে ঢুকে বলল, ‘দাদাটা একদম অভদ্র। কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শেখে নি। এইটা আমার ঘর। এখানে তোর ব্যাগ রাখ। আমি তোর জন্য চা করে নিয়ে আসি।‘ চা নিয়ে এলো তনু একটু পরে। চা খাওয়ার পর বলল, ‘বাথরুমে যাবি তো? আমাদের বাথরুম আবার খুব পরিস্কার না। আমার তো ঘেন্না করে। তাও করতে হয়। কোনরকমে ম্যানেজ করে নিস।‘ ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে এলাম। তনুর বাবার সাথে পরিচয় হোল। খুবই খারাপ অবস্থা। এই যায় তো ওই যায়। বিছানার সাথে লেগে গেছে। আমি তনুকে অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হাসপাতালে নিয়ে যাস নি কেন? অবস্থা তো খুব ভালো না।‘ তনু বলল, ‘আমি কি এখানে ছিলাম নাকি? এসে তো দেখি এই কাণ্ড। খুব গালাগালি দিয়েছি দাদাকে। বাপেরটা খেতে পারে আর বাবাকে দেখতে পারে না। ডাক্তার এসে দেখে গেছে। ওষুধ দিয়ে গেছে। এখন যা থাকে কপালে। ওর বাবার আমাকে চিনতে পারার কথা নয় স্বাভাবিকভাবে, চিনতেও পারলেন না। আমি বেড়িয়ে এলাম ঘর থেকে। ভালো লাগছিল না এই ঘরে, ওর দাদার থেকে থেকে আমার দিকে বিষ চাউনি। কেমন যেন অবিশ্বাস। থাকলাম একপ্রকার জোর করে। তনুর মুখে অনেক কিছু শুনলাম তনুদের কথা, ওর মায়ের কথা, বাবার কথা, বিশেষ করে দাদার কথা। ওর দাদার নাকি মায়ের গয়নার উপর লোভ। বাবা মারা গেলে ও গয়নাগুলো হরফ করবে, সেই আশা নিয়ে বসে আছে। মনে মনে ভাবলাম তাহলে আর এই চরিত্র হবে না কেন। তনু স্নানে যাবার পর ওর দাদা আমাকে ধরে ধরে তনুর ব্যাপারে অনেক কিছু শুনিয়ে দিল। পার্থর সাথে ওর সম্পর্ক কিরকম। ছোটবেলায় ছেলেদের সাথে কিভাবে মিশত। চরিত্র ওর একদম ভালো ছিল না। আমি যে ওর কাছে এসেছি ও ভালো চোখে নেয় নি, কারন এইরকম ও অনেকবার করেছে। বিয়ের আগে, বিয়ের পরে। আমার কাছে নতুন খবর। অনেক কিছু শুনলাম ওর দাদার মুখ থেকে। ছেলেটাকে কেমন অসহায়ের মত লাগছিল তখন আমার। এটাও বলল তনুর কারনে নাকি ওর বিয়ে হয় নি। বাবার একটা এসপার অসপার হলে তবে ও ভাববে। গয়নার বাপারেও বলল যে তনু নাকি সবসময় ওকে তান করে এই ব্যাপারে। বলে নাকি বিক্রি করে ও আধা আর দাদা আধা পয়সা নিয়ে নেবে। এগুলো তো সবই ঠিক ছিল, যে খবরটা ওর মুখ থেকে পেলাম সেটা আমাকে এতো অবাক করেছে আমি আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, মনে হচ্ছিল ঠিক শুনেছি তো। তনুর দাদা বলতে বলতে বলে ফেলল, ‘জানেন, আপনাকে একটা গোপন খবর দিই।‘ আমি বললাম, ‘দেখুন দাদা, এটা আপনাদের ঘরের ব্যাপার। আমাকে না বললেই বোধহয় ভালো হবে।