13-10-2019, 01:42 AM
৩
••••••••••••
ছেলেটি বলতে লাগলো গল্প. (এখানে বলে রাখি কথোপকথন দুই ছোট বাচ্চার মধ্যে হলেও অতীতে যা যা হয়েছিল সেটা আমি অর্থাৎ লেখক বড়োদের মতো করেই বর্ণনা করবো )
রাজু: আমার ভালো নাম হলো রমেশ ভট্টাচার্য. আমার বাবার নাম রঞ্জন ভট্টাচার্য. বাবার এক ভাই ছিল সুজিত বলে. সে ছিল পাগল. মানে সবাই মনে করতো সেটাই. কিন্তু..... যাক সেটা পড়ে বলছি. আমার বাবা কাজের সূত্রে বাইরে ছিলেন বেশ কিছু বছর. সেখানে আমাদের আরেকটা বাড়ি ছিল. সেখানেই আমার, আমার ভাই আর আরেকটা ভাই জন্মায়. আমরা তিন ভাই ছিলাম. আমাদের মায়ের নাম ছিল অনুপমা. খুব সুন্দরী. টানা টানা চোখ অনেকটা তোমার মায়ের মতনই.
সব ঠিক থাক চলছিল কিন্তু একদিন বাবা দাদুর চিঠি পান যে তিনি খুব অসুস্থ তাকে দেখতে আসতে. আর সম্পত্তির ব্যাপারেও আলোচনা করা হবে. তাই ঠিক হয় আমরা ওই বাড়িতে আসবো কিছুদিনের জন্য. আমি বাবা মা আর দুই ভাই এলাম এই বাড়িতে থাকতে. হয়তো জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিল এটা. এইটা বলেই ছেলেটা কি যেন ভেবে ছাদের ধারে গিয়ে কি যেন দেখলো তারপর চিন্তিত মনে বুবাইয়ের পাশে এসে বসলো.
বুবাই বললো : কি হলো থামলে কেন বলো?
রাজু : হ্যা...? ওহ হ্যা যেটা বলছিলাম. তিন দিন পর আমরা বেহালা থেকে এই বাড়িতে আসি ট্রেনে করে. ট্রেন বেশ দেরি করেই সেই জায়গায় পৌছালো. স্টেশন যখন গাড়িটা থামল তখন রাত একটা হবে. একটা লোককে দেখলাম দাড়িয়ে ছিল. আমাদের নামতে দেখে আমাদের কাছে এল. লোকটা এসে বাবাকে পেন্নাম করলো. তারপর বললো : দাদাবাবু আসুন আসুন. আমি কল্যাণ. আপনাদের বাড়ির কাজ করি. তারপর সে মাকে পেন্নাম করলো. আমার যেন মনে হলো মাকে নমস্কার করার সময় কল্যাণ মাকে একবার নিচ থেকে ওপর দেখে নিলো তারপর দাঁত বের করে হেসে বললো : চলুন বাবু সময় হয়ে গেছে মানে..... আমাদের যাবার সময় হয়ে গেছে. এমনিতেই অনেক রাত এবং নিজেই সূটকেসট হাতে নিয়ে এগিয়ে চলল. আমরা ওর পিছন পিছন যেতে লাগলাম.
বাবা বলল – “ট্রেন অনেক দেরি করেছে আজ.
কল্যাণ বলল-আর বলবেন না বাবু, সবসময় করে এবং মার কোলে ছোট্ট ভাইকে শুয়ে থাকতে দেখে বলল – বাহ্ কি সুন্দর ফুটফুটে ছেলে আপনার. ঘুমাচ্ছে বুঝি?
বাবা বললো : হ্যা.
মা বলল-এইতো ট্রেনে ওঠার আগেই আগেই ঘুমালো. আবার উঠেছে না পড়ে. জেগে থাকলে কেঁদে কেঁদে আমাদের মাথা খারাপ করে দেয়. আমরা গরুর গাড়িতে করে অন্ধকার রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চললাম. চারিদিক থম থমে, নিস্তব্ধ. আকাশে চাঁদ মাথার ওপরে. হটাৎ গাড়িটার চাকা একটা পাথরের ওপর পড়াতে গাড়িটা কেঁপে উঠলো জোরে. গাড়ির ওই ঝাকুনিতে ছোটটার ঘুম ভেঙ্গে গেলো এবং কাঁদতে লাগল. বাবা – উফ..... আবার জেগে গেছে…ওকে থামাও অনুপমা নইলে এখন কেঁদে কেঁদে রাস্তা মাথায় তুলবে. মেজো ভাই এতো রাত অব্দি জাগেনা. তাই ও গাড়িতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছেন. মা ভাইয়ের কান্না থামানোর চেস্টা করল কিন্তু ভাই কেঁদেই চলল. মা বললো : রাজু একটু ওদিকটা গিয়ে বস আমি ভাইকে দুধ খাওয়াবো . আমি পেছনটাতে গিয়ে বসলাম. মা ব্লাউসটা কিছুটা খুলে নিজের ডানদিকের দূদুটা বেড় করল এবং ভাইকে দুধ খাওয়াতে লাগল. ভাই দুধ খাচ্ছে. বাবা চোখ বুজে রয়েছে. আমি যেহেতু পেছনে ছিলাম তাই পেছনে গাড়ির কাপড় সরিয়ে বাইরের জঙ্গল দেখছিলাম. হটাৎ আমি যেই সামনে ফিরলাম আমি দেখলাম মা ভাইকে দুধ খাওয়াতে ব্যাস্ত কিন্তু কল্যাণ মায়ের দুধ খাওয়ানো দেখছিলো আমি তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো আর গাড়ি চালাতে লাগলো. আমার কেমন যেন লাগলো কিন্তু ওতো কিছু ভাবলাম না.
কিছুক্ষনের মধ্যে ঘোড়ার গাড়িটা একটা বড় বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো মানে এই বাড়িটার সামনে. তখন মনে হচ্ছিল কি বিশাল বাড়ি!!! কল্যাণ বললো : রঞ্জন বাবু আমরা এসে গেছি. মা বাড়ির চারপাসে অন্ধকার দেখে জিজ্ঞেস করল-বাবা... এই বাড়িতে বাবা থাকেন তাও এতো অন্ধকার? যেন কেউ থাকেনা. কল্যাণ বললো : আসলে বৌদিমনি....বড়ো দাদাবাবু তো আর সেই ভাবে বাইরে বেরোনই না. আর দাদাবাবু আপনার ভাই কখন ভালো কখন রেগে যায় মানে আপনি তো জানেনি. উনিও খুব একটা নীচে নামেন টামেন না. নিচ তোলাটাতে আমি থাকি আর আমার বোন থাকে লাবনী. এই বলে কল্যাণ ডাক দিলো : লাবনী..... এই লাবনী... কোথায় গেলি বেরিয়ে আয়. একটু পড়ে একটি মহিলা বেরিয়ে এলো বছর ৩৫ বা ৪০ এর. দখতে যেন কেমন. এসেই বললো: দাদা ডাকছিলে?
কল্যাণ : দেখ যাদের আসার কথা এসে গেছেন. ইনি হলেন রঞ্জন বাবু আর ওনার স্ত্রী অনুপমা. আমাদের দাদাবাবুর পুত্রবধূ.
এইটা বলার পরেই দেখলাম কল্যাণ আর লাবনীর মধ্যে চোখে চোখে কি ইশারা হলো. লাবনী হেসে মাকে আর বাবাকে বললো : পেন্নাম দাদাবাবু, পেন্নাম বৌদিমনি. ওমা..... কি সুন্দর মুখখানি আপনার. আসুন আসুন. লাবনী আমাদের নিয়ে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো. পেছনে আমরা যেতে লাগলাম. আমাদের উত্তর দিকের একটা বড়ো ঘরে নিয়ে গেলো লাবনী. বেশ বড়ো ঘর.
লাবনী : আসুন দাদাবাবু, বৌদিমনি.... এটা আপনার ঘর. আপনারা বিশ্রাম করুন. আপনারা কিছু খাবেন?
বাবা : না.... আমরা খেয়ে নিয়েছি. এতো রাত হয়ে গেলো নইলে একবার বাবার সঙ্গে দেখা করে আসতাম. ঠিক আছে..... কাল সকালেই যাবো. এখন ঘুমিয়ে পড়ি.
কল্যাণ সুটকেস নিয়ে ঘরে ঢুকে পরলো. সেটা কে রেখে বিচ্ছিরি ভাবে একটা হাসি হেসে বললো : হি.. হি... দাদাবাবু আপনারা এসেছেন খুব ভালো হয়েছে. বড়ো দাদাবাবু আর সুজিত বাবু খুব খুশি হবে.
বাবা : দাদা কেমন আছে? এখনো কি আগের মতোই নাকি উন্নতি হয়েছে?
কল্যাণ : না.... না... উনি আগের থেকে অনেক ভালো. এখন আর রেগে টেগে যান না ওতো. যদিও বা রেগে যান কিন্তু সামলে নেন. আপনারা আসছেন শুনে তিনি আপনাদের দেখতে চেয়েছেন. বিশেষ করে বৌদিমনি কে. আসলে উনি তো বৌদিমনিকে দেখেনি নি. আচ্ছা আসি তাহলে. আপনারা বিশ্রাম করুন.
কল্যাণ আর লাবনী চলে গেলো. মেজোটা এসেই বিছানাতে শুয়ে পড়েছেন. ছোট ছিল তো. আর একদম ছোটটা মায়ের কোলে. আমি বাইরে বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে আছি. আর বাবা মায়ের কথা শুনছি.
মা : ওনার কি হয়েছিল বলতো? আমাদের বিয়েতেও উনি আসেননি. তোমার বাবা তো আমাদের বেহালার বাড়িতেই আমাদের বিয়ে দিলেন. আমরা আজ অব্দি ঐবাড়িতেই থেকে এসেছি. আজ জীবনে আমি প্রথমবার এই বাড়িতে এলাম. বাবা মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন. কিন্তু একবারও এই বাড়িতে ডাকেননি. ব্যাপারটা কি বলোতো?
বাবা : আসলে দাদার মাথাটা ঠিক নেই. না.... তার মানে পুরো পাগল নন. খুব রাগী, রাগলে মাথা ঠিক থাকেনা. যাতা বলেন.... কাউকে ছাড়বোনা.... তোদের মেরে ফেলবো.... তোরা আমাকে চিনিসনা... এইসব আরকি. কিন্তু একবার খুব বাড়াবাড়ি হয়েছিল. যার জন্য বাবা আমাকে বেহালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন.
মা : কি হয়েছিল গো?
বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে কানে কানে কি বললো. মা চমকে উঠলো সেটা শুনে.
মা : কি!! তোমায়..... তোমাকে উনি মারতে..... !!
বাবা : আঃ.... আস্তে বলো..... রাজু বারান্দায়.
মা : কবেকার ব্যাপার এটা?
বাবা : আমি তখন সবে কলেজ পাস করেছি. ওই যে বললাম দাদা এমনিতে আগে ভালোই ছিল. এই মানুসিক ব্যাপারটা হটাত করেই ধরা পড়ে. পরে বলবো. এখন চলো শুয়ে পড়ি. উফফফ.... এতটা দেরি হয়ে গেলো.
বাবা নীচে বিছানা করে শুয়ে পড়লেন আর আমরা আর মা ওপরে খাটে. সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল হটাৎ একটা হাসির শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো. একটা কালো ছায়া মতো কি যেন জানলা দিয়ে বেরিয়ে গেলো. আমি উঠে বসলাম. কিন্তু আর কোনো শব্দ হলোনা. বাইরে শেয়ালের ডাক. চোখের ভুল ভেবে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম. সকালে ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে. চোখ কচলে উঠে বসলাম. দেখি মেজো ভাই তখনো ঘুমোচ্ছে. বাবা বাথরুমে গেছেন. দরজা খোলাই ছিল. আমি বিছানা ছেড়ে নামতেই দেখি লাবনী খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলো. আজ সকালের আলোয় তার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম. দেখতে ভয়ঙ্কর নয় কিন্তু এমন একটা ব্যাপার আছে মুখে যেটা আমায় ওর প্রতি ভয়টা বাড়িয়ে দিচ্ছে.
লাবনী : বৌদিমনি...... খাবার এনেছি. তোমরা আগে খেয়ে নাও তারপরে বড়ো বাবুর সাথে দেখা করতে যেও. আমি ওনাকে বলে এসেছি তোমরা এসেছো.
বাবা সেই সময়ে ঘরে ঢুকে বললো : যাও এবার তুমি. আমার হয়ে গেছে. ও... খাবার এসে গেছে. রাজু ভাই কে ডাক..... তোদের মাও যাচ্ছে.... যা তোরা মায়ের সাথে পাশের ছোট বাথরুম টাতে যা. একটু পরেই দাদুর সঙ্গে দেখা করতে যেতে হবে.
আমি ভাইকে জাগিয়ে মায়ের সঙ্গে নীচে গেলাম. লাবনী নিতে গেলো আমাদের. নীচে গিয়ে মা দূরের বাথরুমটাতে ঢুকলো আর আমরা সামনের ঔ ছোট দুটোয়. কিছুক্ষন পর আমার মায়ের বেরোনোর শব্দ পেলাম. মা ওপরে চলে গেলো. কিন্তু একটু পরেই আবার ওই বাথরুমেই কে যেন ঢুকলো. দরজা বন্ধ করার আওয়াজ স্পষ্ট পেলাম. একটু পরেই আমি বেরিয়ে এলাম. আমি এগিয়ে গেলাম ওই বাথরুমটায়. ভেতরে কেউ রয়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে. কারণ দরজার নিচ দিয়ে দুটো বড়ো বড়ো পা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে. তবে সে কি যেন বলছে গুন গুন করে. আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না. আমি আরো এগিয়ে যাবো কিনা ভাবছি হটাৎ পেছনে একটা হাত ! আমি চমকে উঠে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি মেজো ভাই. সে বললো তার হয়ে গেছে. আমিও আর সাত পাঁচ না ভেবে ভাইয়ের সঙ্গে ওপরে উঠে এলাম. উপরে গিয়ে লুচি তরকারি খেলাম. লাবনী মাসির হাতের রান্না ভালো তবে মায়ের মতো নয় সেটা বুঝলাম. মুখ ধুয়ে নিয়ে বাবা বললেন চলো চলো বাবার সঙ্গে দেখা করেনিই. আমরা সবাই গেলাম দাদুর ঘরে. পূর্বের একটা বড়ো ঘরে উনি থাকতেন. আমরা পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে দেখলাম দাদু শুয়ে আছে আর লাবনী মাথার কাছে দাঁড়িয়ে.
মা প্রথমে এগিয়ে গেলেন. দাদুর পা ছুঁয়েছে প্রণাম করল. দাদু মা কে দেখে হাসিমুখে উঠে বসতে যাচ্ছিলেন কিন্তু মা তাকে আবার শুয়ে দিলো.
মা : না.. না... বাবা. আপনাকে উঠতে হবেনা. আপনি শুয়ে থাকুন.
দাদু : বৌমা.... তোমরা এসেছো. খুব খুশি হয়েছি মা. কৈ আমার নাতিরা কোথায়?
বাবা আমাদের নিয়ে এগিয়ে গেলেন. আমরা সকলে দাদুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলাম. বাবাও করলেন. তারপর বাবা আর মা দাদুর পায়ের কাছে বসলেন. আমরা দাদুর পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম. দাদু আমাদের দেখে খুব খুশি হয়েছেন সেটা বোঝাই যাচ্ছে.
মা : বাবা.... কতদিন আপনাকে দেখিনি. কি অবস্থা হয়েছে আপনার. সেই ৮ বছর আগে আপনি এসেছিলেন তারপর আজ.
দাদু : বৌমা.... আমায় ক্ষমা করো....তুমি এই বাড়ির বৌমা... তা সত্ত্বেও তোমাকেও এই বাড়িতে বৌমা করে আনতে পারিনি মা. আসলে কিছু অতীতের ব্যাপার যা......
মা দাদুকে থামিয়ে বললেন : ছি.. ছি... বাবা... একি বলছেন ! আমি সব জেনেছি বাবা. আপনি যা করেছেন আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেছেন.
দাদু হটাৎ লাবনী মাসিকে একটু বাইরে যেতে বললেন. লাবনী ভুরু কুঁচকে একবার দাদুর দিকে তাকালো তারপর বেরিয়ে গেলো. তারপর দাদু মায়ের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন.
দাদু : সুখী হও মা..... মা এই শেষ বয়সে তোমাদের দেখতে ইচ্ছা করছিলো তাই সাহস করে ডেকে পাঠালাম. জানিনা আমি আর কদিন. তাই সব কিছু রঞ্জন কে বুঝিয়ে দিতে চাই. সুজিত তো এসব বেপারে কিচ্ছু বোঝেনা. তাই রঞ্জন কেই সব দায়িত্ব বুঝিয়ে আমার মুক্তি. আচ্ছা বৌমা যদি একটা অনুরোধ করি তোমার কাছে তুমি রাখবে মা?
মা : এমা.... বাবা... অনুরোধ কেন? আমি আপনার বৌমা.... আপনি আমার বাবার মতন. বলুননা.
দাদু : যে কটাদিন তোমরা এই বাড়িতে আছো... মানে যতদিন না সব দলিল পত্র তৈরী হচ্ছে তোমরা তো এখানেই আছো... তাই বলছিলাম মা যে তুমি যদি আমার খাবারের দায়িত্বটা নাও. আমার বৌমার হাতের সেই চমৎকার রান্না কতদিন খাওয়া হয়নি.
মা হেসে বললেন : আপনি না বললেও আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আপনাকে নিজে রেঁধে খাওয়াবো. কতদিন আপনাকে কিছু রেঁধে খাওয়াতে পারিনি.
মা দাদুর মধ্যে কথা হচ্ছে.... আমি, বাবা ভাই সেইদিকে চেয়ে. হটাৎ আমার নজর পরলো দরজার বাইরে. পর্দার ওপারে কে যেন দাঁড়িয়ে. বিশাল লম্বা আর চোখ দুটো যেন জ্বলছে. আমার বুকটা হটাৎ ছ্যাৎ করে উঠলো. কে ওটা? বাবা কি বিশাল লম্বা. তখনি পর্দা সরিয়ে ওই ছায়া ঘরে প্রবেশ করলো. একজন লম্বা করে ভদ্রলোক. এসেই হাসি মুখে বাবাকে দেখে বললো : কি রে? কেমন আছিস? চিনতে পারছিস? বাবাকে দেখলাম হাসি মুখে লোকটার দিকে এগিয়ে গেলেন. গিয়ে প্রণাম করলেন. লোকটা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো. বাবা বললেন : দাদা..... কতদিন পর তোমায় দেখলাম. কিযে ভালো লাগছে. আমি বুঝতে পারলাম ইনি আমার জেঠু. সুজিত জেঠু. বাবা মাকে ডাকলেন এবং মা হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে ওনাকে প্রণাম করলো. জেঠু মায়ের মাথায় হাত রেখে বললেন : থাক থাক. তারপর মায়ের থুতনি ধরে বললেন : বাহ্.... কি সুন্দরী বৌ হয়েছে রঞ্জন তোর. ভালো থাকো অনুপমা. তা এতদিনে মনে পরলো আমাদের. তোমাকেতো শুধু ছবিতেই দেখেছি. তোমাদের বিয়ের ছবিতে বাবা তুলে এনেছিল. আজ এতদিন পরে সামনে দেখলাম.
মা হেসে বললো : দাদা আমি তো আসতেই চাইতাম কিন্তু আপনার ভাইয়ের কাজ পরে যেত তাই আসা হয়ে ওঠেনি. রাজু, তনু... এসো জেঠুকে প্রণাম করো.
আমি আর ভাই তনু গিয়ে জেঠুকে প্রণাম করলাম. জেঠু আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো কিন্তু আমার মনে হলো তিনি আমাদের থেকে আমার মায়ের আসাতে বা মায়ের প্রতি বেশি আগ্রহী. আমাদের পাশ কাটিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বললেন : তা তোমার আরেকটা ছেলে আছে শুনলাম. মা বললো : হ্যা.... ওকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে এসেছি. আপনি বসুন না দাদা. জেঠু বললেন : না ঘরে যাই. একটু কাজ আছে. তোমরা আমার ঘরে এসো. বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন. বাবা মা আবার দাদুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন. আমি দরজার দিকে তাকালাম দেখলাম জেঠু ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে গেলোনা বরং বাইরে থেকে ঘরে নজর রাখছিলেন. আর তার নজরটা যেন মায়েরই দিকে. দাদুকে বিশ্রাম করতে বলে মা আর বাবা ঘরে চলে গেলো. আমি আর ভাই নীচে গেলাম ঘর গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে. ভাই একটা ফুটবল নিয়ে নিলো. আমি নীচে নামতেই কল্যাণ লোকটার সাথে দেখা. উনি উপরেই আসছিলেন. আমাদের নীচে নামতে দেখে হেসে বললেন : কি... তোমরা নীচে খেলতে যাচ্চো. আমরা হ্যা সূচক মাথা নাড়তে সে হেসে বললো : যাও... যাও. খেলো. বলে সে উপরে উঠে গেলো. আমরা নীচে খেলতে বাইরে গেলাম. ওই বাগানটাতে. তখন ওই বাগানটা আজকের মতো অগোছালো ছিলোনা. নিয়মিত যত্ন করা হতো. কত সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে রয়েছে বাগানে. আমি আর ভাই ওই বাগানে খেলতে লাগলাম. ভাই হটাৎ বল টাতে লাথি মেরে দূরে ছুড়ে দিলো আমি ওটা নিয়ে ফিরে আসছি হটাৎ ওপরে দোতলায় চোখ পরলো. ওখানে জানলার ধারে দুজন লোককে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে. স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সুজিত জেঠু আর কল্যাণ. দুজনেই হাসি মুখে কি যেন আলোচনা করছে. তারপর কল্যাণ একটা লাল কাপড়ে মোড়া কি যেন একটা জেঠুর হাতে দিলো. আমি ওতো কিছু না ভেবে খেলতে লাগলাম. কিছুক্ষন পরে মা নেমে এলো. আমি দেখলাম মা আর লাবনী ঢুকলো রান্না ঘরে. তারপর আমরা রান্না ঘরে ঢুকলাম. কি বড়ো রান্না ঘর. পুরানো বনেদি বাড়ির রান্না ঘর বলে কথা. মা আমাকে দেখে বললো : রাজু... অনেক খেলা হয়েছে এবার ওপরে যাও. ভাই ঘুমোচ্ছে ওখানে থাকো. বাবার সঙ্গে উকিল বাবু দেখা করতে এসেছেন তাই সে ব্যাস্ত আছে. যাও.
আমি আর ভাই ওপরে উঠে এলাম. দেখলাম দাদুর ঘরে বাবা, জেঠু আর একজন লোক. জামাকাপড় থেকেই বোঝা যাচ্ছে সে উকিল. আমি আমাদের ঘরে আসতেই দেখি কল্যাণ. সে আমার ঘুমন্ত ভাইয়ের দিকে চেয়ে আছে. আমাদের দেখে হেসে বললো : হি... হি.. তোমরা সবাই বাইরে তাই আমি তোমার ভাইকে পাহারা দিচ্ছিলাম. আসি তাহলে. সে বেরিয়ে গেলো. আমি আর ভাই ওখানেই বসে বই পরতে লাগলাম. দুপুরে আমরা সবাই রান্না ঘরে খেতে গেলাম. ওখানে আগে একটা বড়ো টেবিল ছিল. এখন আর নেই. আমি বাবা ভাই আর মা খেতে বসলাম. মা লাবনী কে জিজ্ঞেস করলো দাদা খেতে আসবেন না? লাবনী বললো জেঠু তার ঘরেই খান. সে জেঠুর খাবার তার ঘরে নিয়ে গেলো. খেতে খেতে বাবা বললো : উকিল বললো কটাদিন সময় লাগবে. আমাদের ততদিন এখানেই থাকতে হবে. তাছাড়া আমার ওখানকার ব্যাবসার উন্নতির জন্য কিছু টাকার প্রয়োজন. এটা পেলে ভালোই হবে. ও হ্যা..... ভালো কথা. দাদা আমাদের তার ঘরে একবার যেতে বলেছেন. খাওয়া হয়ে গেলে একবার দেখা করে আসবো. আমরা জেঠুর ঘরে দেখা করতে গেলাম. আশ্চর্য এই লোকটা রাগী ছিল? কে বলবে? এতো শান্ত লোক কিকরে রাগী হতে পারে আমি সেটাই ভাবছিলাম. জেঠু বাবা মায়ের সাথে কথা বলছিলো আমি বাইরে চলে এলাম. সেদিনটা এসবেই কেটে গেলো. কিন্তু কে জানতো পরের দিন গুলো কত ভয়ানক হতে চলেছে.
বুবাই : কি হয়েছিল পরে?
রাজু কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনি সে কান পেতে কি শুনলো তারপর বুবাইকে বললো : তোমার মা তোমায় ডাকবে এক্ষুনি.
বুবাই : ডাকবে..... কৈ ডাকছে নাতো?
অমনি নিচ থেকে মায়ের ডাক : বুবাই....? কোথায় তুই বাবা?
বুবাই অবাক হয়ে গেলো. সে রাজু কে বললো : তুমি কিকরে জানলে মা ডাকবে? রাজু হেসে বললো : আমি আওয়াজ পেলাম যে. তুমি যাও মায়ের কাছে. আমি আজ আসি. কাল আবার এই সময়ে আসবো বাকিটা বলতে. চলো. বুবাই এগিয়ে যেতে লাগলো হটাৎ পেছন থেকে রাজু ডাকলো. বুবাই পেছন ফিরে তাকালো. রাজু এগিয়ে এসে বুবাইকে বললো : শোনো..... তুমি একটু চোখ কান খোলা রেখো. ওই তপন লোকটার ওপর নজর রেখো. এই বলে সে বুবাইয়ের আগে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো. বুবাই মায়ের কাছে ফিরে এলো. আসতেই মায়ের কাছে একচোট বকা খেলো. কেন ভাইকে ছেড়ে গেছিলো. মায়ের বকা যে আদরের বকা সেটা বুবাই জানে. কিন্তু ঘরে একটা নতুন জিনিস দেখে বুবাই অবাক.
বুবাই : মা.... ওটাকি? এইবলে সে বিছানায় রাখা একটা লকেট এর দিকে ইশারা করলো. মা বললো সে স্নান করে ফেরার সময় সে বাথরুমের জানলার আয়নাতে এটা ঝোলানো ছিল. এতো সুন্দর একটা লকেট ঝুলে থাকতে দেখে নিয়ে এসেছে. কি সুন্দর দেখতে. তাই নিয়ে এসেছে. বুবাই দেখলো মা ওইটা হাতে নিয়ে আয়নার দিকে এগিয়ে গেলো তারপর আয়নার সামনে ওটা পড়ে নিজেকে দেখতে লাগলো.
বুবাই : মা... ওটা পড়ে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে. কি সুন্দর লাগছে তোমায়.
স্নিগ্ধা বুবাইয়ের গাল টিপে মাথায় চুমু খেয়ে বললো : যাও এবার চান করে নাও. তোয়ালে নিয়ে যাও. বুবাই নীচে নেমে কল ঘরে ঢোকার সময় দেখলো তপন কল ঘর থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে আসছে. বুবাইকে দেখে আরো হেসে এগিয়ে এসে বললো : কি খোকাবাবু? চান করতে যাচ্চো? যাও যাও চান করে নাও. ওদিকে তোমার বাবা বাড়িতে নেই. এখন তোমার, তোমায় ভাই আর তোমার মায়ের খেয়াল তো আমাকেই রাখতে হবে তাইনা? তোমার মায়ের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব তো আমারই. হি.... হি....করে হাসতে হাসতে তপন চলে গেলো.
বুবাইয়ের তপনের এই শেষের কথাটা কেমন যেন লাগলো. কিনতু সে ওতো কিছু না ভেবে স্নান করতে ঢুকে গেলো. কিন্তু বিপদের শুরু যে হয়ে গেছে সেটা ওই আট বছরের বাচ্চাটা বুঝতেই পারলোনা.
সব ঠিক থাক চলছিল কিন্তু একদিন বাবা দাদুর চিঠি পান যে তিনি খুব অসুস্থ তাকে দেখতে আসতে. আর সম্পত্তির ব্যাপারেও আলোচনা করা হবে. তাই ঠিক হয় আমরা ওই বাড়িতে আসবো কিছুদিনের জন্য. আমি বাবা মা আর দুই ভাই এলাম এই বাড়িতে থাকতে. হয়তো জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিল এটা. এইটা বলেই ছেলেটা কি যেন ভেবে ছাদের ধারে গিয়ে কি যেন দেখলো তারপর চিন্তিত মনে বুবাইয়ের পাশে এসে বসলো.
বুবাই বললো : কি হলো থামলে কেন বলো?
রাজু : হ্যা...? ওহ হ্যা যেটা বলছিলাম. তিন দিন পর আমরা বেহালা থেকে এই বাড়িতে আসি ট্রেনে করে. ট্রেন বেশ দেরি করেই সেই জায়গায় পৌছালো. স্টেশন যখন গাড়িটা থামল তখন রাত একটা হবে. একটা লোককে দেখলাম দাড়িয়ে ছিল. আমাদের নামতে দেখে আমাদের কাছে এল. লোকটা এসে বাবাকে পেন্নাম করলো. তারপর বললো : দাদাবাবু আসুন আসুন. আমি কল্যাণ. আপনাদের বাড়ির কাজ করি. তারপর সে মাকে পেন্নাম করলো. আমার যেন মনে হলো মাকে নমস্কার করার সময় কল্যাণ মাকে একবার নিচ থেকে ওপর দেখে নিলো তারপর দাঁত বের করে হেসে বললো : চলুন বাবু সময় হয়ে গেছে মানে..... আমাদের যাবার সময় হয়ে গেছে. এমনিতেই অনেক রাত এবং নিজেই সূটকেসট হাতে নিয়ে এগিয়ে চলল. আমরা ওর পিছন পিছন যেতে লাগলাম.
বাবা বলল – “ট্রেন অনেক দেরি করেছে আজ.
কল্যাণ বলল-আর বলবেন না বাবু, সবসময় করে এবং মার কোলে ছোট্ট ভাইকে শুয়ে থাকতে দেখে বলল – বাহ্ কি সুন্দর ফুটফুটে ছেলে আপনার. ঘুমাচ্ছে বুঝি?
বাবা বললো : হ্যা.
মা বলল-এইতো ট্রেনে ওঠার আগেই আগেই ঘুমালো. আবার উঠেছে না পড়ে. জেগে থাকলে কেঁদে কেঁদে আমাদের মাথা খারাপ করে দেয়. আমরা গরুর গাড়িতে করে অন্ধকার রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চললাম. চারিদিক থম থমে, নিস্তব্ধ. আকাশে চাঁদ মাথার ওপরে. হটাৎ গাড়িটার চাকা একটা পাথরের ওপর পড়াতে গাড়িটা কেঁপে উঠলো জোরে. গাড়ির ওই ঝাকুনিতে ছোটটার ঘুম ভেঙ্গে গেলো এবং কাঁদতে লাগল. বাবা – উফ..... আবার জেগে গেছে…ওকে থামাও অনুপমা নইলে এখন কেঁদে কেঁদে রাস্তা মাথায় তুলবে. মেজো ভাই এতো রাত অব্দি জাগেনা. তাই ও গাড়িতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছেন. মা ভাইয়ের কান্না থামানোর চেস্টা করল কিন্তু ভাই কেঁদেই চলল. মা বললো : রাজু একটু ওদিকটা গিয়ে বস আমি ভাইকে দুধ খাওয়াবো . আমি পেছনটাতে গিয়ে বসলাম. মা ব্লাউসটা কিছুটা খুলে নিজের ডানদিকের দূদুটা বেড় করল এবং ভাইকে দুধ খাওয়াতে লাগল. ভাই দুধ খাচ্ছে. বাবা চোখ বুজে রয়েছে. আমি যেহেতু পেছনে ছিলাম তাই পেছনে গাড়ির কাপড় সরিয়ে বাইরের জঙ্গল দেখছিলাম. হটাৎ আমি যেই সামনে ফিরলাম আমি দেখলাম মা ভাইকে দুধ খাওয়াতে ব্যাস্ত কিন্তু কল্যাণ মায়ের দুধ খাওয়ানো দেখছিলো আমি তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো আর গাড়ি চালাতে লাগলো. আমার কেমন যেন লাগলো কিন্তু ওতো কিছু ভাবলাম না.
কিছুক্ষনের মধ্যে ঘোড়ার গাড়িটা একটা বড় বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো মানে এই বাড়িটার সামনে. তখন মনে হচ্ছিল কি বিশাল বাড়ি!!! কল্যাণ বললো : রঞ্জন বাবু আমরা এসে গেছি. মা বাড়ির চারপাসে অন্ধকার দেখে জিজ্ঞেস করল-বাবা... এই বাড়িতে বাবা থাকেন তাও এতো অন্ধকার? যেন কেউ থাকেনা. কল্যাণ বললো : আসলে বৌদিমনি....বড়ো দাদাবাবু তো আর সেই ভাবে বাইরে বেরোনই না. আর দাদাবাবু আপনার ভাই কখন ভালো কখন রেগে যায় মানে আপনি তো জানেনি. উনিও খুব একটা নীচে নামেন টামেন না. নিচ তোলাটাতে আমি থাকি আর আমার বোন থাকে লাবনী. এই বলে কল্যাণ ডাক দিলো : লাবনী..... এই লাবনী... কোথায় গেলি বেরিয়ে আয়. একটু পড়ে একটি মহিলা বেরিয়ে এলো বছর ৩৫ বা ৪০ এর. দখতে যেন কেমন. এসেই বললো: দাদা ডাকছিলে?
কল্যাণ : দেখ যাদের আসার কথা এসে গেছেন. ইনি হলেন রঞ্জন বাবু আর ওনার স্ত্রী অনুপমা. আমাদের দাদাবাবুর পুত্রবধূ.
এইটা বলার পরেই দেখলাম কল্যাণ আর লাবনীর মধ্যে চোখে চোখে কি ইশারা হলো. লাবনী হেসে মাকে আর বাবাকে বললো : পেন্নাম দাদাবাবু, পেন্নাম বৌদিমনি. ওমা..... কি সুন্দর মুখখানি আপনার. আসুন আসুন. লাবনী আমাদের নিয়ে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো. পেছনে আমরা যেতে লাগলাম. আমাদের উত্তর দিকের একটা বড়ো ঘরে নিয়ে গেলো লাবনী. বেশ বড়ো ঘর.
লাবনী : আসুন দাদাবাবু, বৌদিমনি.... এটা আপনার ঘর. আপনারা বিশ্রাম করুন. আপনারা কিছু খাবেন?
বাবা : না.... আমরা খেয়ে নিয়েছি. এতো রাত হয়ে গেলো নইলে একবার বাবার সঙ্গে দেখা করে আসতাম. ঠিক আছে..... কাল সকালেই যাবো. এখন ঘুমিয়ে পড়ি.
কল্যাণ সুটকেস নিয়ে ঘরে ঢুকে পরলো. সেটা কে রেখে বিচ্ছিরি ভাবে একটা হাসি হেসে বললো : হি.. হি... দাদাবাবু আপনারা এসেছেন খুব ভালো হয়েছে. বড়ো দাদাবাবু আর সুজিত বাবু খুব খুশি হবে.
বাবা : দাদা কেমন আছে? এখনো কি আগের মতোই নাকি উন্নতি হয়েছে?
কল্যাণ : না.... না... উনি আগের থেকে অনেক ভালো. এখন আর রেগে টেগে যান না ওতো. যদিও বা রেগে যান কিন্তু সামলে নেন. আপনারা আসছেন শুনে তিনি আপনাদের দেখতে চেয়েছেন. বিশেষ করে বৌদিমনি কে. আসলে উনি তো বৌদিমনিকে দেখেনি নি. আচ্ছা আসি তাহলে. আপনারা বিশ্রাম করুন.
কল্যাণ আর লাবনী চলে গেলো. মেজোটা এসেই বিছানাতে শুয়ে পড়েছেন. ছোট ছিল তো. আর একদম ছোটটা মায়ের কোলে. আমি বাইরে বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে আছি. আর বাবা মায়ের কথা শুনছি.
মা : ওনার কি হয়েছিল বলতো? আমাদের বিয়েতেও উনি আসেননি. তোমার বাবা তো আমাদের বেহালার বাড়িতেই আমাদের বিয়ে দিলেন. আমরা আজ অব্দি ঐবাড়িতেই থেকে এসেছি. আজ জীবনে আমি প্রথমবার এই বাড়িতে এলাম. বাবা মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন. কিন্তু একবারও এই বাড়িতে ডাকেননি. ব্যাপারটা কি বলোতো?
বাবা : আসলে দাদার মাথাটা ঠিক নেই. না.... তার মানে পুরো পাগল নন. খুব রাগী, রাগলে মাথা ঠিক থাকেনা. যাতা বলেন.... কাউকে ছাড়বোনা.... তোদের মেরে ফেলবো.... তোরা আমাকে চিনিসনা... এইসব আরকি. কিন্তু একবার খুব বাড়াবাড়ি হয়েছিল. যার জন্য বাবা আমাকে বেহালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন.
মা : কি হয়েছিল গো?
বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে কানে কানে কি বললো. মা চমকে উঠলো সেটা শুনে.
মা : কি!! তোমায়..... তোমাকে উনি মারতে..... !!
বাবা : আঃ.... আস্তে বলো..... রাজু বারান্দায়.
মা : কবেকার ব্যাপার এটা?
বাবা : আমি তখন সবে কলেজ পাস করেছি. ওই যে বললাম দাদা এমনিতে আগে ভালোই ছিল. এই মানুসিক ব্যাপারটা হটাত করেই ধরা পড়ে. পরে বলবো. এখন চলো শুয়ে পড়ি. উফফফ.... এতটা দেরি হয়ে গেলো.
বাবা নীচে বিছানা করে শুয়ে পড়লেন আর আমরা আর মা ওপরে খাটে. সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল হটাৎ একটা হাসির শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো. একটা কালো ছায়া মতো কি যেন জানলা দিয়ে বেরিয়ে গেলো. আমি উঠে বসলাম. কিন্তু আর কোনো শব্দ হলোনা. বাইরে শেয়ালের ডাক. চোখের ভুল ভেবে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম. সকালে ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে. চোখ কচলে উঠে বসলাম. দেখি মেজো ভাই তখনো ঘুমোচ্ছে. বাবা বাথরুমে গেছেন. দরজা খোলাই ছিল. আমি বিছানা ছেড়ে নামতেই দেখি লাবনী খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলো. আজ সকালের আলোয় তার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম. দেখতে ভয়ঙ্কর নয় কিন্তু এমন একটা ব্যাপার আছে মুখে যেটা আমায় ওর প্রতি ভয়টা বাড়িয়ে দিচ্ছে.
লাবনী : বৌদিমনি...... খাবার এনেছি. তোমরা আগে খেয়ে নাও তারপরে বড়ো বাবুর সাথে দেখা করতে যেও. আমি ওনাকে বলে এসেছি তোমরা এসেছো.
বাবা সেই সময়ে ঘরে ঢুকে বললো : যাও এবার তুমি. আমার হয়ে গেছে. ও... খাবার এসে গেছে. রাজু ভাই কে ডাক..... তোদের মাও যাচ্ছে.... যা তোরা মায়ের সাথে পাশের ছোট বাথরুম টাতে যা. একটু পরেই দাদুর সঙ্গে দেখা করতে যেতে হবে.
আমি ভাইকে জাগিয়ে মায়ের সঙ্গে নীচে গেলাম. লাবনী নিতে গেলো আমাদের. নীচে গিয়ে মা দূরের বাথরুমটাতে ঢুকলো আর আমরা সামনের ঔ ছোট দুটোয়. কিছুক্ষন পর আমার মায়ের বেরোনোর শব্দ পেলাম. মা ওপরে চলে গেলো. কিন্তু একটু পরেই আবার ওই বাথরুমেই কে যেন ঢুকলো. দরজা বন্ধ করার আওয়াজ স্পষ্ট পেলাম. একটু পরেই আমি বেরিয়ে এলাম. আমি এগিয়ে গেলাম ওই বাথরুমটায়. ভেতরে কেউ রয়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে. কারণ দরজার নিচ দিয়ে দুটো বড়ো বড়ো পা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে. তবে সে কি যেন বলছে গুন গুন করে. আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না. আমি আরো এগিয়ে যাবো কিনা ভাবছি হটাৎ পেছনে একটা হাত ! আমি চমকে উঠে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি মেজো ভাই. সে বললো তার হয়ে গেছে. আমিও আর সাত পাঁচ না ভেবে ভাইয়ের সঙ্গে ওপরে উঠে এলাম. উপরে গিয়ে লুচি তরকারি খেলাম. লাবনী মাসির হাতের রান্না ভালো তবে মায়ের মতো নয় সেটা বুঝলাম. মুখ ধুয়ে নিয়ে বাবা বললেন চলো চলো বাবার সঙ্গে দেখা করেনিই. আমরা সবাই গেলাম দাদুর ঘরে. পূর্বের একটা বড়ো ঘরে উনি থাকতেন. আমরা পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে দেখলাম দাদু শুয়ে আছে আর লাবনী মাথার কাছে দাঁড়িয়ে.
মা প্রথমে এগিয়ে গেলেন. দাদুর পা ছুঁয়েছে প্রণাম করল. দাদু মা কে দেখে হাসিমুখে উঠে বসতে যাচ্ছিলেন কিন্তু মা তাকে আবার শুয়ে দিলো.
মা : না.. না... বাবা. আপনাকে উঠতে হবেনা. আপনি শুয়ে থাকুন.
দাদু : বৌমা.... তোমরা এসেছো. খুব খুশি হয়েছি মা. কৈ আমার নাতিরা কোথায়?
বাবা আমাদের নিয়ে এগিয়ে গেলেন. আমরা সকলে দাদুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলাম. বাবাও করলেন. তারপর বাবা আর মা দাদুর পায়ের কাছে বসলেন. আমরা দাদুর পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম. দাদু আমাদের দেখে খুব খুশি হয়েছেন সেটা বোঝাই যাচ্ছে.
মা : বাবা.... কতদিন আপনাকে দেখিনি. কি অবস্থা হয়েছে আপনার. সেই ৮ বছর আগে আপনি এসেছিলেন তারপর আজ.
দাদু : বৌমা.... আমায় ক্ষমা করো....তুমি এই বাড়ির বৌমা... তা সত্ত্বেও তোমাকেও এই বাড়িতে বৌমা করে আনতে পারিনি মা. আসলে কিছু অতীতের ব্যাপার যা......
মা দাদুকে থামিয়ে বললেন : ছি.. ছি... বাবা... একি বলছেন ! আমি সব জেনেছি বাবা. আপনি যা করেছেন আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেছেন.
দাদু হটাৎ লাবনী মাসিকে একটু বাইরে যেতে বললেন. লাবনী ভুরু কুঁচকে একবার দাদুর দিকে তাকালো তারপর বেরিয়ে গেলো. তারপর দাদু মায়ের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন.
দাদু : সুখী হও মা..... মা এই শেষ বয়সে তোমাদের দেখতে ইচ্ছা করছিলো তাই সাহস করে ডেকে পাঠালাম. জানিনা আমি আর কদিন. তাই সব কিছু রঞ্জন কে বুঝিয়ে দিতে চাই. সুজিত তো এসব বেপারে কিচ্ছু বোঝেনা. তাই রঞ্জন কেই সব দায়িত্ব বুঝিয়ে আমার মুক্তি. আচ্ছা বৌমা যদি একটা অনুরোধ করি তোমার কাছে তুমি রাখবে মা?
মা : এমা.... বাবা... অনুরোধ কেন? আমি আপনার বৌমা.... আপনি আমার বাবার মতন. বলুননা.
দাদু : যে কটাদিন তোমরা এই বাড়িতে আছো... মানে যতদিন না সব দলিল পত্র তৈরী হচ্ছে তোমরা তো এখানেই আছো... তাই বলছিলাম মা যে তুমি যদি আমার খাবারের দায়িত্বটা নাও. আমার বৌমার হাতের সেই চমৎকার রান্না কতদিন খাওয়া হয়নি.
মা হেসে বললেন : আপনি না বললেও আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আপনাকে নিজে রেঁধে খাওয়াবো. কতদিন আপনাকে কিছু রেঁধে খাওয়াতে পারিনি.
মা দাদুর মধ্যে কথা হচ্ছে.... আমি, বাবা ভাই সেইদিকে চেয়ে. হটাৎ আমার নজর পরলো দরজার বাইরে. পর্দার ওপারে কে যেন দাঁড়িয়ে. বিশাল লম্বা আর চোখ দুটো যেন জ্বলছে. আমার বুকটা হটাৎ ছ্যাৎ করে উঠলো. কে ওটা? বাবা কি বিশাল লম্বা. তখনি পর্দা সরিয়ে ওই ছায়া ঘরে প্রবেশ করলো. একজন লম্বা করে ভদ্রলোক. এসেই হাসি মুখে বাবাকে দেখে বললো : কি রে? কেমন আছিস? চিনতে পারছিস? বাবাকে দেখলাম হাসি মুখে লোকটার দিকে এগিয়ে গেলেন. গিয়ে প্রণাম করলেন. লোকটা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো. বাবা বললেন : দাদা..... কতদিন পর তোমায় দেখলাম. কিযে ভালো লাগছে. আমি বুঝতে পারলাম ইনি আমার জেঠু. সুজিত জেঠু. বাবা মাকে ডাকলেন এবং মা হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে ওনাকে প্রণাম করলো. জেঠু মায়ের মাথায় হাত রেখে বললেন : থাক থাক. তারপর মায়ের থুতনি ধরে বললেন : বাহ্.... কি সুন্দরী বৌ হয়েছে রঞ্জন তোর. ভালো থাকো অনুপমা. তা এতদিনে মনে পরলো আমাদের. তোমাকেতো শুধু ছবিতেই দেখেছি. তোমাদের বিয়ের ছবিতে বাবা তুলে এনেছিল. আজ এতদিন পরে সামনে দেখলাম.
মা হেসে বললো : দাদা আমি তো আসতেই চাইতাম কিন্তু আপনার ভাইয়ের কাজ পরে যেত তাই আসা হয়ে ওঠেনি. রাজু, তনু... এসো জেঠুকে প্রণাম করো.
আমি আর ভাই তনু গিয়ে জেঠুকে প্রণাম করলাম. জেঠু আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো কিন্তু আমার মনে হলো তিনি আমাদের থেকে আমার মায়ের আসাতে বা মায়ের প্রতি বেশি আগ্রহী. আমাদের পাশ কাটিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বললেন : তা তোমার আরেকটা ছেলে আছে শুনলাম. মা বললো : হ্যা.... ওকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে এসেছি. আপনি বসুন না দাদা. জেঠু বললেন : না ঘরে যাই. একটু কাজ আছে. তোমরা আমার ঘরে এসো. বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন. বাবা মা আবার দাদুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন. আমি দরজার দিকে তাকালাম দেখলাম জেঠু ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে গেলোনা বরং বাইরে থেকে ঘরে নজর রাখছিলেন. আর তার নজরটা যেন মায়েরই দিকে. দাদুকে বিশ্রাম করতে বলে মা আর বাবা ঘরে চলে গেলো. আমি আর ভাই নীচে গেলাম ঘর গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে. ভাই একটা ফুটবল নিয়ে নিলো. আমি নীচে নামতেই কল্যাণ লোকটার সাথে দেখা. উনি উপরেই আসছিলেন. আমাদের নীচে নামতে দেখে হেসে বললেন : কি... তোমরা নীচে খেলতে যাচ্চো. আমরা হ্যা সূচক মাথা নাড়তে সে হেসে বললো : যাও... যাও. খেলো. বলে সে উপরে উঠে গেলো. আমরা নীচে খেলতে বাইরে গেলাম. ওই বাগানটাতে. তখন ওই বাগানটা আজকের মতো অগোছালো ছিলোনা. নিয়মিত যত্ন করা হতো. কত সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে রয়েছে বাগানে. আমি আর ভাই ওই বাগানে খেলতে লাগলাম. ভাই হটাৎ বল টাতে লাথি মেরে দূরে ছুড়ে দিলো আমি ওটা নিয়ে ফিরে আসছি হটাৎ ওপরে দোতলায় চোখ পরলো. ওখানে জানলার ধারে দুজন লোককে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে. স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সুজিত জেঠু আর কল্যাণ. দুজনেই হাসি মুখে কি যেন আলোচনা করছে. তারপর কল্যাণ একটা লাল কাপড়ে মোড়া কি যেন একটা জেঠুর হাতে দিলো. আমি ওতো কিছু না ভেবে খেলতে লাগলাম. কিছুক্ষন পরে মা নেমে এলো. আমি দেখলাম মা আর লাবনী ঢুকলো রান্না ঘরে. তারপর আমরা রান্না ঘরে ঢুকলাম. কি বড়ো রান্না ঘর. পুরানো বনেদি বাড়ির রান্না ঘর বলে কথা. মা আমাকে দেখে বললো : রাজু... অনেক খেলা হয়েছে এবার ওপরে যাও. ভাই ঘুমোচ্ছে ওখানে থাকো. বাবার সঙ্গে উকিল বাবু দেখা করতে এসেছেন তাই সে ব্যাস্ত আছে. যাও.
আমি আর ভাই ওপরে উঠে এলাম. দেখলাম দাদুর ঘরে বাবা, জেঠু আর একজন লোক. জামাকাপড় থেকেই বোঝা যাচ্ছে সে উকিল. আমি আমাদের ঘরে আসতেই দেখি কল্যাণ. সে আমার ঘুমন্ত ভাইয়ের দিকে চেয়ে আছে. আমাদের দেখে হেসে বললো : হি... হি.. তোমরা সবাই বাইরে তাই আমি তোমার ভাইকে পাহারা দিচ্ছিলাম. আসি তাহলে. সে বেরিয়ে গেলো. আমি আর ভাই ওখানেই বসে বই পরতে লাগলাম. দুপুরে আমরা সবাই রান্না ঘরে খেতে গেলাম. ওখানে আগে একটা বড়ো টেবিল ছিল. এখন আর নেই. আমি বাবা ভাই আর মা খেতে বসলাম. মা লাবনী কে জিজ্ঞেস করলো দাদা খেতে আসবেন না? লাবনী বললো জেঠু তার ঘরেই খান. সে জেঠুর খাবার তার ঘরে নিয়ে গেলো. খেতে খেতে বাবা বললো : উকিল বললো কটাদিন সময় লাগবে. আমাদের ততদিন এখানেই থাকতে হবে. তাছাড়া আমার ওখানকার ব্যাবসার উন্নতির জন্য কিছু টাকার প্রয়োজন. এটা পেলে ভালোই হবে. ও হ্যা..... ভালো কথা. দাদা আমাদের তার ঘরে একবার যেতে বলেছেন. খাওয়া হয়ে গেলে একবার দেখা করে আসবো. আমরা জেঠুর ঘরে দেখা করতে গেলাম. আশ্চর্য এই লোকটা রাগী ছিল? কে বলবে? এতো শান্ত লোক কিকরে রাগী হতে পারে আমি সেটাই ভাবছিলাম. জেঠু বাবা মায়ের সাথে কথা বলছিলো আমি বাইরে চলে এলাম. সেদিনটা এসবেই কেটে গেলো. কিন্তু কে জানতো পরের দিন গুলো কত ভয়ানক হতে চলেছে.
বুবাই : কি হয়েছিল পরে?
রাজু কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনি সে কান পেতে কি শুনলো তারপর বুবাইকে বললো : তোমার মা তোমায় ডাকবে এক্ষুনি.
বুবাই : ডাকবে..... কৈ ডাকছে নাতো?
অমনি নিচ থেকে মায়ের ডাক : বুবাই....? কোথায় তুই বাবা?
বুবাই অবাক হয়ে গেলো. সে রাজু কে বললো : তুমি কিকরে জানলে মা ডাকবে? রাজু হেসে বললো : আমি আওয়াজ পেলাম যে. তুমি যাও মায়ের কাছে. আমি আজ আসি. কাল আবার এই সময়ে আসবো বাকিটা বলতে. চলো. বুবাই এগিয়ে যেতে লাগলো হটাৎ পেছন থেকে রাজু ডাকলো. বুবাই পেছন ফিরে তাকালো. রাজু এগিয়ে এসে বুবাইকে বললো : শোনো..... তুমি একটু চোখ কান খোলা রেখো. ওই তপন লোকটার ওপর নজর রেখো. এই বলে সে বুবাইয়ের আগে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো. বুবাই মায়ের কাছে ফিরে এলো. আসতেই মায়ের কাছে একচোট বকা খেলো. কেন ভাইকে ছেড়ে গেছিলো. মায়ের বকা যে আদরের বকা সেটা বুবাই জানে. কিন্তু ঘরে একটা নতুন জিনিস দেখে বুবাই অবাক.
বুবাই : মা.... ওটাকি? এইবলে সে বিছানায় রাখা একটা লকেট এর দিকে ইশারা করলো. মা বললো সে স্নান করে ফেরার সময় সে বাথরুমের জানলার আয়নাতে এটা ঝোলানো ছিল. এতো সুন্দর একটা লকেট ঝুলে থাকতে দেখে নিয়ে এসেছে. কি সুন্দর দেখতে. তাই নিয়ে এসেছে. বুবাই দেখলো মা ওইটা হাতে নিয়ে আয়নার দিকে এগিয়ে গেলো তারপর আয়নার সামনে ওটা পড়ে নিজেকে দেখতে লাগলো.
বুবাই : মা... ওটা পড়ে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে. কি সুন্দর লাগছে তোমায়.
স্নিগ্ধা বুবাইয়ের গাল টিপে মাথায় চুমু খেয়ে বললো : যাও এবার চান করে নাও. তোয়ালে নিয়ে যাও. বুবাই নীচে নেমে কল ঘরে ঢোকার সময় দেখলো তপন কল ঘর থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে আসছে. বুবাইকে দেখে আরো হেসে এগিয়ে এসে বললো : কি খোকাবাবু? চান করতে যাচ্চো? যাও যাও চান করে নাও. ওদিকে তোমার বাবা বাড়িতে নেই. এখন তোমার, তোমায় ভাই আর তোমার মায়ের খেয়াল তো আমাকেই রাখতে হবে তাইনা? তোমার মায়ের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব তো আমারই. হি.... হি....করে হাসতে হাসতে তপন চলে গেলো.
বুবাইয়ের তপনের এই শেষের কথাটা কেমন যেন লাগলো. কিনতু সে ওতো কিছু না ভেবে স্নান করতে ঢুকে গেলো. কিন্তু বিপদের শুরু যে হয়ে গেছে সেটা ওই আট বছরের বাচ্চাটা বুঝতেই পারলোনা.
এবার কি হবে? জানতে পরবর্তী আপডেট এর অপেক্ষা করুন.