11-10-2019, 11:31 PM
এখন এই, একটু বড় হলে তো আমার হাড়মাস চিবিয়ে খাবে।‘ আমি উত্তর দিলাম, ‘বলেছি তো প্রেসিডেন্ট আসলে আমি কথা বলব।‘ তনু হঠাৎ বলল, ‘অ্যাই দীপ তোর মোবাইলটা কোথায় রে? একটু দে না দেখি। তুই নাকি কিসব লোড করে রেখেছিস?’ নির্ঘাত এটা স্নেহার কাজ। তনু একটু বোকা বলে ও নিশ্চয়ই স্নেহাকে জিজ্ঞেস করেনি ও কিভাবে জানলো। আমি পার্থর সামনে আর জিজ্ঞেস করলাম না যে ওকে কে বলেছে। অনেক কিছু ফাঁস হয়ে যেতে পারে। আমার যে আবার অন্যদিকে লোভ দেখা দিয়েছে। মোবাইলটা আমার পকেটেই ছিল, বার করে হাতে দিয়ে দিলাম। তনু মোবাইলটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আবার আমার হাতে দিয়ে বলল, ‘আরে বার করে দে। এতো দামী মোবাইল আমি বাপের কালে দেখিও নি আর ছুঁইও নি। দেখিয়ে দে কিভাবে দেখব।‘ আমি বার করে দিলাম ভিডিও ক্লিপগুলো। দেখিয়ে দিলাম কিভাবে অপারেট করতে হবে। তনু আর পার্থ পাশাপাশি শুয়ে পড়লো ভিডিও দেখতে। আমি আর ওখানে বসে কি করবো। দেখতে দেখতে হয়তো টেপাটেপি করার ইচ্ছে জাগতে পারে। আমি বললাম, ‘তোরা দেখ, আমি যাই স্নেহাকে ম্যানেজ করে আসি।‘ তনু একটু নড়ে বলল, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুই যা স্নেহার কাছে।‘ আমি বাইরে বেড়তে বেড়তে বললাম, ‘তাড়িয়ে দেবার জন্য কত উদগ্রীব তোরা। যাতে বদমাইশি করতে পারিস।‘ তনু পিছন ফিরে বলল, ‘শালা, করলে আমি আমার স্বামির সাথে করবো। তোর সাথে করবো নাকি?’ পার্থ বলল, ‘গান্ডুপানা করছিস নাকি দীপ, শুয়োর কোথাকার।‘ আমি বেড়িয়ে এলাম। অন্যঘরে দেখি স্নেহা বিছানায় শুয়ে খবরের কাগজ নিয়ে কিসব করছে। আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম, ‘কি করছিস রে বাবা?’ স্নেহা আমার দিকে না তাকিয়ে বলল, ‘যাও, আমার সাথে কথা বলবে না তুমি।‘ আমি খাটে পা তুলে বললাম, ‘কেন কি দোষ করেছি আমি?’ স্নেহা জবাব দিল, ‘খুব জোরে মেরেছ তুমি। এখনও জ্বলছে।‘ আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম, ‘আমি তো ইয়ার্কি মারলাম সোনা। ঠিক আছে আর মারবো না। হোল।‘ স্নেহা ওর কোমরটা দোলাল। মানে আমি বুঝলাম ওর আর কিছু বলার নেই এ ব্যাপারে।আমি ধীরে ধীরে স্নেহার পাশে শুয়ে পড়লাম। দেখি ও কাগজে কি সব করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম। ‘কি করছিস?’ স্নেহা না তাকিয়ে জবাব দিল, ‘সুডোকু করার চেষ্টা করছি।‘ আমি কাগজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও সত্যি সত্যি সুডোকু করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘করার চেষ্টা করছিস মানে? তুই পারিস না করতে?’ স্নেহা মাথা নেড়ে জবাব দিল, ‘আরে কি ভাবে করে তাই জানি না।‘ আমি কাগজটা টেনে আমার দিকে নিয়ে বললাম, ‘দে দেখি, দ্যাখ কিভাবে করে।‘ ও আবার কাগজ টেনে বলল, ‘ফালতু বকো নাতো। ভারী এসেছে সুডোকু করতে। জানো তুমি?’ আমি আবার কাগজটা টেনে নিলাম, বললাম, ‘দে না। দেখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে করবি?’ ও কাগজটা আমার দিকে ঠেলে দিয়ে বলল, ‘ওকে, দেখাও। কিন্তু তুমি যে মায়েদের ছেড়ে চলে এলে বড়?’ আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘কি করবো বল, তোর মা আমাকে তোর কাছে পাঠিয়ে দিল।‘ স্নেহা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কিন্তু মায়েরা কি করছে?’ আমি সুডোকুর দিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম, ‘মোবাইল দেখছে।‘ স্নেহা ফিক করে হেসে বলল, ‘সত্যি বাবা। তোমার মোবাইলটা এখন হট কেক।‘ আমি স্নেহার দিকে তাকালাম। তাকাতে নজর পড়লো ওর বুকের সামনের দিকটা ঝুলে গেছে আর ওর স্তনের বেশ কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুই কি ছেলে বন্ধুদের সাথে এইভাবে শুয়ে আড্ডা দিস নাকি?’ স্নেহা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কেন বলতো?’ আমি হাসলাম আর বললাম, ‘তোর বুকের প্রায় সবকিছু দেখা যাচ্ছে।‘ ও নিচের দিকে তাকিয়ে অস্ফুস্ট স্বরে বলল, ‘উফফ, এইদিকেও নজর তোমার। আচ্ছা ছেলে তো তুমি?’ আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘তাহলে আমাকে ছেলে বললি।‘ স্নেহা বুকের দিকটা একটু পিছনে টেনে বুকটা ঢেকে বলল, ‘ছেলেরাই এমন ভাবে চোরা নজর দেয়।‘ আমি সুডোকু করতে করতে বললাম, ‘তোর কাছে আর ছেলে হতে পারলাম কোথায়। তাহলে তো হাতই দিয়ে দিতাম।‘ স্নেহা ছিটকে আমার থেকে দূরে সরে গিয়ে বলল, ‘উফফ বাবা, একদম অসহ্য। কি আজে বাজে কথা বলছ তুমি?’ আমি বললাম, ‘কেন হাত দিলে খারাপ হয় বুঝি?’ স্নেহা উঠে বসে বলল, ‘উফফ, জানি না যাও। তুমি থামো তো এবার।‘ আমি আবার হেসে বললাম, ‘ঠিক আছে আয়, দেখ কিভাবে সুডোকু করে।‘ আমি শেখাতে লাগলাম স্নেহাকে সুডোকুর রহস্য। আমি ফিরে গেলাম ওদের কাছ থেকে আমার জায়গায়। ওটাই ছিল সেই সময়ের শেষ দেখা ওদের সাথে। ফোন হতে থাকতো তনুর সাথে, স্নেহার সাথে। তনু জানিয়েছিল পার্থ আবার ফিরে গেছে বিদেশে। যাবার আগে বলে গেছে আমি যেন খুব চেষ্টা করি ওকে ভারতে ফিরিয়ে আনার। এরমধ্যে আমি কথা বলেছিলাম আমার প্রেসিডেন্টের সাথে। উনি কথা দিয়েছিলেন যে ওরা যেন ওনার সাথে কথা বলে। আমি তনুকে বলেছিলাম সেই কথা। তনু জানিয়েছিল যে পার্থ কথা বলবে। তারপরে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিয়েছিল। আমি প্রমোশন না পাওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম আর জয়েন করেছিলাম অন্য একটা কোম্পানিতে। পোস্টিং ছিল লাখনউ। ছেড়ে দিয়েছিলাম বটে চাকরি আর জয়েন করেছিলাম কিন্তু মন থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না নতুন চাকরি। বর্ষাকে বলেছিলাম আমার অসুবিধের কথা। বর্ষা বলেছিল যে আমি মন দিতে পারবো না নতুন কোম্পানিতে। কারন পুরনো কোম্পানিতে কাজের চেহারা ছিল অন্য। এখানে কে কাকে মানে তাই জানা যেত না। ছিলাম বড় পোস্টে। কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। জব সাটিস্ফেকশন ছিল বড় কথা যেটা ওখানে পেতাম না। বর্ষা বলেছিল দাঁত কামড়ে পরে থাকতে। সুযোগ পেলে ছেড়ে দিতে। কিন্তু সে সুযোগ কবে আসবে? তনু জানতো আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। ও উইশ করেছিল আমার গুড লাকের। ওকে আমার অসুবিধের কথা বলতে ও আমাকে বুদ্ধি দিত পুরনো কোম্পানিতে ফিরে যেতে। কিন্তু না ডাকলে ফিরে কিভাবে যাওয়া যায়? একদিন প্রেসিডেন্ট ডেকে বললেন আমি ফিরতে রাজি কিনা। আমি এক কথায় রাজি। কিন্তু দেখালাম এটাই যেন ওরা ডাকছে বলেই আবার ফিরতে পারি। অনেক দর কষাকষির পর আমি বললাম ফিরব। উনি বললেন সাত দিনের মধ্যে বোম্বে এসে অফিসে দেখা করতে। প্রথম খবর আমি বর্ষাকে দিলাম। বর্ষা একটাই কথা বলেছিল যে আমি যেটা ঠিক মনে করবো সেটাই যেন করি। মনের সন্তুষ্টি শুধু আমি জানতে পারি আর কেউ নয়। তনুকে খবর দেওয়াতে বলেছিল এই মুহূর্তে যেন ছেড়ে বেড়িয়ে আসি। তনুর কোথায় কেমন স্বার্থের গন্ধ পেলাম। হবে নাই বা কেন, ওর তো ইচ্ছে পার্থ আমাদের এই কোম্পানিতে চাকরি করুক আর আমি না থাকলে কে ঢোকাবে পার্থকে। আমি আবার ফিরে এলাম পুরনো কোম্পানিতে আর জয়েন করলাম বম্বেতে, অফিসে।