11-10-2019, 12:08 AM
আমরা দুজন ওকে রেখে বেড়িয়ে এলাম বাইরে। দুটো চেয়ার নিয়ে বসলাম জিন সাথে। আমি জানি স্নেহা অর্কুটও করবে আবার ছবিও দেখবে। তা দেখুক। আমি গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললাম, ‘তারপর বল, আমি চলে আসার পর কেমন ভাবে কাটাচ্ছিলি দিন।‘ তনু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘খুব কষ্ট হয়েছিল তুই যখন আমাদের সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিলি। আমি আর পার্থ কতবার আলোচনা করেছি এই ব্যাপারে। কি দোষ করেছিলাম আমরা যে তুই বিশেষ করে আমাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলি। দীপ বলতে পারিস কেন তুই কথা বলা বন্ধ করেছিলি?’ আমি আবার একটা সিপ নিলাম। ভাবলাম তারপর বললাম, ‘দ্যাখ, ইনিসিয়ালি তোদের এটা মনে হতে পারে যে এটা বোধহয় আমাদের দোষ। কিন্তু বর্ষাকে আমি বিয়ে করে এনেছিলাম। বর্ষা আমার বউ। আমার যা জানবার সেটা বর্ষারই জানার কথা। তুই আমার সম্বন্ধে বর্ষাকে অনেক কথা বলেছিলি যে আমি কি পছন্দ করি কি করি না। এতে ওর মনে একটা ভ্রম তৈরি হয়েছিল যেটা হওয়া খুব স্বাভাবিক। কারন একজন স্বামীর পছন্দ অপছন্দ জানার কথা বউয়ের। আর সেখানেই তুই ভুল করে ফেলেছিলি। আমি বলছিনা যে তুই জেনেশুনে করেছিলি। তুই ভেবেছিলি যে তুই যে খেয়াল রেখেছিলি ওর স্বামীর ও সেটা জেনে হয়তো খুশি হবে। যেটা সে হয় নি। এটা তোর দুর্ভাগ্য বলতে পারিস। এবার রইল আমার ব্যাপার। আমাকে আমার বউয়ের সাথ দিতেই হবে। ওকে আমি বিয়ে করে এনেছি। তোদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সমস্যা আমি মেটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু সম্ভব হয় নি। তোরা সে সুযোগ দিস নি।‘ তনু অনেকক্ষণ ধরে চুপ করে রইল। তারপর নিজের মনে বলে উঠলো, ‘হয়তো তুই যেটা বলছিস সেটাই ঠিক। আমরা তোর ব্যাপারে একটু বেশিই হয়তো অবসেসিভ হয়েছিলাম। যাক যেটা হয়ে গেছে সেটা তো আর ফেরানো যাবে না। তবে বিশ্বাস কর আমি আর পার্থ পড়ে অনেক আলোচনা করেছিলাম। আমাদের মনে হয়েছিল তোর মত একটা বন্ধুকে হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম আমরাই বেশি। হয়তো আমরাই জোড়া লাগাতে পারতাম ভাঙ্গা সম্পর্ককে। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠে নি।‘ আমি বললাম, ‘অথচ দ্যাখ, তুই আর বর্ষা কিন্তু পরস্পরের সাথে কথা বলতিস। আমরাই মানে আমি আর পার্থই তোদের মধ্যে আসতে পারিনি।‘ তনু একটা সিপ দিয়ে বলল, ‘যাক গে যেটা হবার সেটা তো হয়ে গেছে। এবার বল নতুন সম্পর্ক কিভাবে বজায় রাখবি?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘কিভাবে আবার? বর্ষাকে গোপন করে। বর্ষা জানবে না তোদের সাথে আমার সম্পর্ক আছে। ওর জানারই বা দরকার কি? ওর সব কিছু মিটিয়ে যদি আমি আমাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারি তাহলে তো আর কোন অসুবিধে নেই। তোর কি মত?’ তনু জবাব দিল, ‘আমার মত তোরই মত। গোপনেই আমাদের সম্পর্ক বেঁচে থাক। বর্ষার না জানলেই হোল।‘ আমি হেসে বললাম, ‘তাহলে আয় তোদের আর আমার নতুন করে আবার সম্পর্ককে টোস্ট করি ড্রিংকের মধ্য দিয়ে।‘ আমরা গ্লাস তুলে ঠোকাঠুকি করলাম আর চিয়ার্স বললাম। তারপর তনুকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা, আমি চলে আসার পর দাস মজুমদার এরা সব যেত তোদের বাড়ি?’ তনুর মুখটা কেমন জানি হয়ে গেল। ও তক্ষুনি কোন উত্তর দিল না। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিরে বোবা হয়ে গেলি? উত্তর দিচ্ছিস না কেন?’ তনুর সম্বিত ফিরল যেন। ও বলল, ‘হ্যাঁ, কি যেন জিজ্ঞেস করছিলি?’ আমি অবাক হলাম। তনুর হঠাৎ কি হোল, এতো অমনোযোগী হয়ে গেল? আমি বললাম, ‘জিজ্ঞেস করছিলাম আমি চলে আসার পর দাসেরা যেত কিনা তোদের বাড়ি?’ তনু আমার দিকে চেয়ে বলল, ‘না আসতো না। মানে হ্যাঁ আসতো মাঝে মাঝে। মজুমদারদা আসতো না। তুই জানিস না মজুমদার কোম্পানি ছেড়ে দিয়েছিল?’ আমি বললাম, ‘তাই নাকি? মজুমদার ওই কোম্পানিতে নেই আর? কবে ছেড়েছিল?’ ও বলল, ‘তুই যাবার প্রায় এক মাসের মধ্যে।‘ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন কোম্পানিতে জয়েন করেছিল জানিস কিছু?’ তনু বলল, ‘নারে, আমাদের কিছুই জানায় নি। হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে চলে গেছিল।‘ আমি বললাম, ‘ও আচ্ছা। কিন্তু দাসেদের কথা বলাতে তুই হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলি কেন?’ তনু ঝাঁজিয়ে উঠলো, ‘ছাড় না ওসব কথা।‘