08-10-2019, 02:59 PM
(This post was last modified: 08-10-2019, 03:03 PM by Newsaimon85. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
পর্ব ৩৫
জুলিয়েটের সাথে যখন মুভির ঘটনা টা ঘটে তখন আমরা থার্ড ইয়ারের শেষের দিকে। পরীক্ষার আর বেশি বাকি নাই। ক্লাস হবে হয়ত আর একমাস। এরপর কয়েকদিন বন্ধ দিয়েই পরীক্ষা হবে। সেই সময় টা পিছন ফিরে দেখলে মনে হয় একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আমরা ঢুকি আঠার উনিশ বছর বয়েসে তখনো আমরা কেউ পরিণত নই। অনেক স্বপ্ন, আশা, পরিবার থেকে নিয়ে আসা ধ্যান ধারণ আর বাস্তব জগতের রূঢ়তার সাথে পরিচয়ের অভাবে ফার্স্ট ইয়ারের সেই সময় গুলোতে ছেলেমেয়েরা তখন অনেক বেশি এমেচারিশ। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে এদের অনেকেই কলেজ কলেজে ভাল ছাত্র ছাত্রী বলে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এরা প্রথম টের পায় আসলে ভাল এই মানদন্ডটা এখানে অনেক উপরে। এইসব নানা মুখী বাস্তবতা আস্তে আস্তে ছেলেমেয়েদের ঘষেমেজে পরিণত করতে থাকে। কেউ আগে হয় আর কেউ পরে তবে সবার শুরুর রাস্তাটা ঐখান থেকেই। থার্ড ইয়ার হচ্ছে এখানে একটা মাইলস্টোন কারণ এটা ঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনের মাঝামাঝি পর্যায়। মাস্টার্স সহ ধরলে পাচ বছর লাগে সেখানে থার্ড ইয়ার একদম মধ্যক। এই সময়ে এসে অনেকে স্বপ্ন আর বাস্তবতার ফারাক টা নতুন করে বুঝতে শিখে। কেউ সে অনুযায়ী নতুন পরিকল্পনা সাজায়, কেউ আবার হতাশ হয়ে পড়ে। সম্পর্কের ব্যাপার গুলোও সেরকম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকে যে বড় বড় গ্রুপ গুলো তৈরি হয় এই থার্ড ইয়ারের দিক থেকে তার বেশির ভাগ ভেংগে নতুন মেরুকরণ হয় বা ইনএক্টিভ হয়ে পড়ে। আমাদের ক্লাসেও তখন নতুন হাওয়া। গ্রুপ ভেংগে ছোট গ্রুপ হচ্ছে, কেউ দলছুট হয়ে পড়ছে। কেউ সামনের চাকরির চিন্তায় মগ্ন, কেউ এখনো প্রেম হলোনা বলে মরিয়া। এই ঝড়ঝাপটার সময়ে আমাদের গ্রুপটা কীভাবে যেন টিকে গেল। আগের তীব্রতা না থাকলেও হ্রদ্যতা আমাদের মাঝে কমে নি। বিভিন্ন ব্যস্ততায় হয়ত প্রতিদিনের আড্ডা কমে সাপ্তহে দুই বা তিনদিনে চলে আসল তবে আমরা দলছুট হয়ে পড়লাম না। বরং নতুন করে নিজেদের সাজিয়ে নিলাম। সেই সময়ে কীভাবে যেন আমাদের গ্রুপের গূরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠলাম আমি।
গ্রুপের অন্যতম নিয়ামক হওয়ার পিছনে আসলে আমি ছেলে তা না বরং সময়টাই মূখ্য হয়ে দাড়াল। গ্রুপের ক্যাম্পাসে বা তার আশেপাশে থাকে তিন জন। সাদিয়া, মিলি আর আমি। এরমধ্য সাদিয়ার হল বলা যায় ক্যাম্পাসের দূরতম প্রান্তে ফলে ডাকলেই ওকে পাওয়া কঠিন। আবার মিলি টিউশনিতে ব্যস্ত থাকে তাই অনেক সময় দুপুরের পর ওকে পাওয়া যায় না। আর বাকি থাকলাম আমি। তাই কার জন্য নোট ফটোকপি করে রাখতে হবে তাহলে মাহি কে বলো, গল্প করার কেউ নেই মাহি কে ডাক। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাকে পাওয়া সোজা। আবার আমি পড়াশোনায় এমন কোন সিরিয়াস নই যে রাতদিন বসে থাকব তাই হাতেও সময় আছে। আর মেয়েদের গ্রুপের সাথে মিশার কারণে জেলাসি থেকে সম্ভবত ক্লাসের ছেলেপেলেরা আমার সাথে কথা হলেই বলত তুই তো বান্ধবীদের সাথে থাকিস। ফলে সেখানেও খুব বন্ধুত্ব গড়ে উঠে নি। আমার অবশ্য ক্লাসের বাকিদের সাথে রাত বিরাতের আড্ডা হয় তবে সেটা নির্দিষ্ট কার সাথে বা কোন গ্রুপের সাথে না। যাদের সাথে কথা বলে ভাল লাগে তাদের কাছে যাই আড্ডা দেই। নো স্ট্রিং এটাচড। আর বাকি রইল বুয়েটের বন্ধুরা। থার্ড ইয়ারে এসে ওরাও আস্তে আস্তে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ফলে শুক্র, শনিবারের আড্ডা ছাড়া সাধারণত ওদের সাথে আলাপ হয় না তেমন। আমার কাছে তাই বহু সময়। তাই কেউ ডাকলে কাউকে না পাওয়া গেলেও আমাকে পাওয়া যাবে বেশির ভাগ সময়। বিনিয়োগে লাভ আসে। আমার এই সময় বিনিয়োগ আসলে গ্রুপের প্রত্যেকের সাথে আলাদা আলাদা ভাবেই আমার সম্পর্ক জোড়ালো করে তুলল। আর নিজেদের কথা শেয়ার করার জন্য আমাকেই বেশি পাওয়া যায় আর আমাকে বললে সেটা অন্য কেউ শুনবে না যদি না সে নিজে বলে তাই সবার কাছে আমার আস্থার জায়গাটা দৃঢ হল।
আবার আমার অভিজ্ঞতাও আমাকে পরিণত করছিল। আগে মেয়দের সাথে কথা বলতে ভয় পেতাম এখন সেখানে অবলীলায় ঘন্টার পর ঘন্টা অনেক বিব্রতকর বিষয় নিয়ে আলাপ চালানো যায়, তর্ক করা যায়। বাংলাদেশের এভারেজ পরিবারে যে কনজারভেটিভ শিক্ষা দেওয়া হয় আমার মনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে সে নীতি নৈতিকতাই আমার চিন্তার ছক তৈরি করে দিত। সমাজের তৈরি করা মেয়েদের জন্য আর্দশ নিয়মাবলী কে আমিও আদর্শ মানতাম। প্রচুর বই পড়তাম ঠিক তবে অনেক সময় অনেক পরিবর্তন খালি বই পড়ে হয় না। পাচ জন মেয়ে, পাচটা ভিন্ন ব্যক্তিত্ব, পাচটা ভিন্ন প্রেক্ষিত আমাকে মেয়েদের অন্য ভাবে দেখার সুযোগ দিল। যৌনতা জীবনের একটা অংশ। আমরা একে লুকিয়ে রাখি আর এই অবদমনে আমাদের ছেলেরা মেয়েদের আর মানুষ মনে করে না, তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্য দেয় না। বইয়ের এই কথাগুলো যেন ওদের সাথে মিশে আমি উপলদ্ধি করতে শিখলাম। ওদের জন্য আমিও এক নতুন অভিজ্ঞতা। সাদিয়া বাদে বাকিদের ফ্রেন্ড সার্কেলে কলেজ কলেজেই বা কোচিং এর সময় ছেলে থাকলেও আমি ওদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। আমি খালি আরেকটা ছেলে বন্ধু না হয়ে ওদের বন্ধু হলাম যার সাথে গোপন কথা শেয়ার করা যায়। যাকে ক্লাসের বাকিরা সবাই খালি মেয়েদের সাথে মিশছে বলে পচালেও অবলীলায় ওদের সাথে মিশচে ভ্রুক্ষেপ ছাড়া। আমাদের এই পরিবর্তন গুলো বুঝলেই দেখবেন পরবর্তিতে গল্পের আমাদের কর্মকান্ডের পিছনের মনস্তাত্তিক কারণ বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না।
মিলির সাথে আমার ক্লাসের ভিতর বৃষ্টি দিনের ঘটনা সেকেন্ড ইয়ারের মাঝামাঝি। মাঝখানে অনেকদিন ও আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ না রাখলেও এখন আবার আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে এসেছে। আসলে আমাদের ঘটনায় কেউ কাউকে জোর করে নি কিন্তু ওর কনজারভেটিভ পরিবেশে বড় হওয়া মানসিকতার জন্য ওটা একটা বড় সীমা অতিক্রম ছিল। তাই সব প্রসেস করতে ওর সময় লেগেছিল বেশি। এখন ও আবার আগের মত। ফাইজলামি করে, হাসি ঠাট্টা করে। আমাকে একা দেখলে পালিয়ে যায় না। মুভির ঘটনার এক সাপ্তাহ পরে একদিন আমার মনে হল আমার নিজের থেকে কিছু বলা উচিত। আমি একদিন ক্লাস শেষে নিচে নামার সময় মিলি কে বললাম শোন কথা আছে। মিলি বলল কি কথা? আমি বললাম আছে। অন্য সবাই যখন লাইব্রেরির দিকে গেল আমি আর মিলি তখন ফটোকপি করার কথা বলে শ্যাডোর দিকে গেলাম। মিলি সত্যি সত্যি কি একটা যেন ফটোকপিতে দিল। একটু সময় লাগবে। আমার কাছে এসে বলল কি বলবি বল। আমি বললাম দেখ, আমি বুঝছি ঐদিনের ঘটনা তুই ভাল ভাবে নিস নি, আমি স্যরি। মিলি চুপ করে থেকে একটু পরে বলল স্যরি বলার কিছু নাই। আমি জানতাম কি ঘটছে কিন্তু আমি বাধা দিই নি। সত্যি কথা হল আমার ঐ ঘটনার পর প্রচন্ড রাগ হয়েছিল। তোর উপর যতটা তার থেকে বেশি আমার উপর। নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলাম না কেন তাই। ব্রেকাপের পর আসলে আমি কিছু করে দেখাতে পারি এই জেদে তোর সাথে আসলে সব কিছুর শুরু। আর শুরু পর এই যে কিছু করার আকর্ষণ এটা কে ঠেকানো কঠিন ছিল। প্রতিবারের পর ভাবতাম এটাই শেষ আর কিছু না। নতুন কিছু তাও প্রতিবার আসত। শেষবারের পর মনে হল আসলে আমার তোর থেকে একটু দূরে থাকা দরকার না হলে আবার ঘটবে। আমি বললাম আমি বুজতে পারছি। মিলি একটু ক্ষেপে বলল ছাই বুঝতে পারছিস। আমার ব্রেকাপ হল কারণ আমি নাক ভ্যানিলা। কোন কিছু করতে চাই না। তাই ব্রেকাপের পর মনে আসলে কি করা উচিত? তুই ছাড়া কোন ছেলে ছিল না কাছে, পরিচিত, বিশ্বস্ত। বাসে যেদিন তুই গা ঘেষে দাড়িয়েছিলি সেদিন প্রথমে চমকে গেলাম পরে দেখি রাগ বা ঘৃণার বদলে কৌতুহল তৈরি হচ্ছে। এরপর কি হয়? যদি ভ্যানিলা না হই তাহলে কতদূর যেতে পারিস তুই। অন্যরাই বা কতদূর যায়। আমি পরিস্থিতি সামান্য হালকা করার জন্য বললাম কেন ছেলে আর মেয়ে মিলে কত দূর যেতে পারে তোর জানা ছিল না? মিলি বলল সারকাজম করবি না, তোরা ছেলেরা বুঝবি না। আমরা মেয়েরা যে পরিবেশে বড় হই সেখানে বিয়ের আগে এসব জিনিস নিয়ে কৌতুহল যেন নিষিদ্ধ। কলেজ কলেজে আমি সব সময় নিয়ম মেনে এসেছি তাই কেউ এসব নিয়ে আলোচনা করলেও দূরে থাকতাম। তোর সাথে কৌতুহল দেখাতে গিয়ে টের পেলাম আমার নিজের কোন কন্ট্রোল থাকছে না নিজের উপর তাই তোর থেকে একটু সরে এসেছি। মাইন্ড করিস না। মেয়েরা চোখ ছল ছল করে তাকালে অনেক সময় সব কিছুই তুচ্ছ হয়ে যায়। দেবতারা যেখানে পরাজিত আমি তো সেখানে তুচ্ছ। আমি বললাম ঠিক আছে, মনে রাখিস আমি কিন্তু একা কিছু করি নি। আর পরের বার কিছু চাইলে আমাকে বলিস তাইলে হবে মনে মনে এত যুদ্ধ করার দরকার নেই। মিলি ঘুষি দিয়ে বলল খালি বাজে চিন্তা।
ঠিক এই সময়ের কাছাকাছি আরেকটা ঘটনা ঘটল। আগেই বলেছি সুনিতির সাথে বাসায় বাসায় ওর ব্যাগ নিয়ে কাড়াকাড়ির সময় হঠাত করে ওর বুকে হাত পড়ে গিয়েছিল। ব্যাপারটা অনিচ্ছাকৃত কিন্তু ঘটে গিয়েছিল। সুনিতি ঐঘটনার পর তাড়াহুড়া করে বাসা থেকে চলে গিয়েছিল। সুনিতি এটা নিয়ে আর কোন কথা বলে নি আর আমিও এমন ভাব করলাম যেন কিছু ঘটে নি। তবে এই ঘটনার অন্য ব্যাপারটা যেটা ঘটল সেটা হল সুনিতির সম্পর্কে আমার চিন্তার পরিবর্তন ঘটল। ক্লাসের ছেলেদের আড্ডায়, ফিসফিসানিতে সুনিতি মাঝেমাঝে আসত। শুরুতেই বলেছি ও গুরুনিতম্বনি। ওর পাছাটা ওর পাচ ফুট দুই ইঞ্চি শরীরের তুলনায় যথেষ্ট বড়। তবে সুনিতি সব সময় এমন ঢিলেঢোলা জামাকাপড় পড়ে থাকে যে সব সময় এটা ভাল করে বুঝা যায় না। কিন্তু ছেলেদের দল ঠিক এটা খেয়াল করেছে। এটা নিয়ে মাঝে মাঝে হাসাহাসি হয়। সুনিতি ঠিক শুকনা নয় আবার মোটাও নয়। যাকে বলা যায় একদম নরমাল। ওর চেহারায় ফারিয়ার মত ধার নেই আবার জুলিয়েটের মত ঝমকানো ব্যক্তিত্ব নেই যে চোখে পড়বে। আমাদের গ্রুপের সবচেয়ে মৃদুভাষী। সত্যিকার অর্থে একদম প্রথম বছর ঐ রাখি বেধে দিল আমার হতে। এইসব কারণে কখনো তেমন কিছু মনে হয় নি ওকে নিয়ে। তবে ঐদিনের ঐ ব্যাগ টানাটানির পর থেকে ব্যাপারটা চেঞ্জ হয়ে গেল। মাঝখানে একদিন খেচার সময় হঠাত করে ওর কথা মাথায় চলে আসল। একদম কোন পূর্বঘোষণা ছাড়া চোখ বন্ধ করে হাত মারার সময় সামনে সুনিতির চেহারা চলে আসল। চোখে বন্ধ করেই যেন হাতের মুঠোয় নরম কোমল স্পর্শ। চোখের সামনে উচু হয়ে থাকা পাছা। সুনিতি মাঝে মাঝেই শাড়ি পড়ে। শাড়ির পাড় ভেদ করে উকি দেওয়া নরম মসৃণ পেট। নতুন করে চোখ বন্ধ অবস্থায় যেন সুনিতি কে আবার পুনরায় আমি আবিষ্কার করলাম। আবার সুনিতির পরিবর্তন আসল। প্রথমে বুঝতে পারিনি। এত সুক্ষ যে অন্যরা সম্ভবত খেয়াল করে নি। আমি লক্ষ্য করলাম। ও আজকাল কথা বলার সময় প্রায়ই আমাকে হাত দিয়ে ঠেলা দেয়, চিমটি কাটে। হঠাত করে ব্যাপারটা বেখাপ্পা লাগার মত। খেয়াল করে দেখলাম ও এই কাজগুলা করে যখন অন্য কেউ খেয়াল করছে না বা সাথে নাই। অতিরিক্ত কিছু না একদম সুক্ষ ব্যাপার। জুলিয়েট বা ফারিয়া কথা বলার সময় গা টাচ করে এটাতে সেক্সুয়াল কিছু আছে বলে মনে হয় না বরং বন্ধুদের সাথে বন্ধুদের নরমাল আচরণ। সুনিতির সাথে ব্যাপারটা চোখে পড়ল কারণ সুনিতি ওদের মত নয় আর পরিবর্তনের সময়টা আমার বাসার ওর সাথে ঘটনাটার পরপরই। একবার মনে হল হয়ত কিছু না ও বৃত্ত ভেংগে বের হয়ে আসতে চাইছে। ছেলে বন্ধু, মেয়ে বন্ধু সব সমান। তখন আবার খেয়াল করে দেখলাম ও গ্রুপের বাকিদের সাথে এটা করছে না। আমার সাথে করছে যখন অন্যরা সামনে নেই বা খেয়াল করছে না। তারমানে সচেতন ভাবেই ও এটা করছে। সচেতন ভাবে ও আমার সাথে এই আচরণের করছে বুঝার পর মনে হল ভিতরে তলিয়ে দেখতে হবে। এর কতটা ফ্রয়েডিয়ান আর কতটা প্লেটোনিক।
জুলিয়েটের সাথে সিনেমা হলের ঘটনার পর কয়েকদিন এই ব্যাপারে কথা হলো না। মিলির ব্যাপারটা থেকে আমার শিক্ষা ছিল এসব ব্যাপারে মেয়েরা যতক্ষণ নিজেরা কথা বলছে ততক্ষণ কথা না বলা ভাল। এর মধ্যে সেমিস্টার শেষের ব্যস্ততা। সবাই ব্যস্ত। আমাদের ভিডিও চ্যাট তাই আপাতত বন্ধ। জুলিয়েটের সাথে কথা হচ্ছে কিন্তু ও এই ব্যাপারে একদম স্পীকটি নট। তাই আমি অপেক্ষা উত্তম পন্থা বলে মেনে নিলাম। একদিন কথায় কথায় আমি জিজ্ঞেস করলাম সাদিয়া আজকাল এত মন মরা হয়ে থাকে কেন। মিলি বলল ও ওর বিয়ে নিয়ে চিন্তিত। সম্ভবত এই পরীক্ষার পর বাবা মা ওকে বিয়ে দিয়ে দিবে। ফারিয়া বলল হ্যা, বেচারার জন্য খারাপ লাগছে। আমাদের মধ্যে ও পড়াশুনায় সবচেয়ে ভাল আর ওর কিনা বিয়ে হয়ে যাবে সবার আগে। জুলিয়েট কিছু না বলে খাতার দিকে তাকিয়ে রইলো। ফারিয়া বলল আমাদের গ্রুপটাও ছোট হওয়া শুরু করল। আমি বললাম কেন? বিয়ে করলেই কি আর সাদিয়া আমাদের বন্ধু থাকবে না। ফারিয়া বলল না তা হয়ত না, কিন্তু দেখিস ও তখন আর সময় দিতে পারবে না। আর সময় না দিলে কি কিছুই আর আগের মত থাকে। জুলিয়েট বলল খালি এটা নিয়ে না সাদিয়া আর বেশ কিছু জিনিস নিয়ে চিন্তিত। আমি বললাম আর কি? জুলিয়েট বলল এত প্রশ্ন করিস না। সব কথা ছেলেদের শুনতে নাই। আমি পরিবেশ একটু হালকা করার জন্য মজা করে বললাম তোর মুখ দিয়ে এই ছেলে মেয়ের ভেদাভেদ আসল মানতে পারলাম না। জুলিয়েট সম্ভবত মজাটা বুঝতে পারল না। একটু রেগে বলল সেক্স, ও সেক্স নিয়ে চিন্তিত। এইবার খুশি গোপন কথা জানতে পেরে। জুলিয়েট এটা বলা মাত্র মিলি কাশি দিয়ে উঠল। আমার কান লাল। ফারিয়া অবশ্য তেমন কিছু হয় নি এমন ভাবে কাগজে কাটাকাটি করতে লাগল। এরপরে অবশ্য এ নিয়ে কথা তেমন আগালো না। আমরা আবার যারযার মত পড়াশুনায় ফেরত গেলাম।
লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে মিলি হলের দিকে চলে গেল। আমি, জুলিয়েট আর ফারিয়া হাটোতে হাটতে শাহবাগের দিকে চলতে থাকলাম। হাটার মাঝে আমি প্রশ্ন করলাম জুলিয়েট তুই মাঝে মাঝে এমন ক্ষেপে যাস কেন। জুলিয়েট এবার বলল আমি তোর উপর ক্ষেপি নাই আসলে সাদিয়ার কথা ভেবে মনটা খারাপ লাগছিল তাই ঐভাবে আউটবাস্ট করছি। ও বলল, সাদিয়া বেচারা আসলেই সেক্স নিয়ে খুব চিন্তিত। তুই যদি বলিস তুই কনজারভেটিভ পরিবেশ থেকে আসছিস ও তাহলে এর চারগুণ কনজারভেটিভ পরিবেশ থেকে আসছে। সেক্স বিষয়ে ওখানে কথা বলা নিষেধ। অনেকে আশেপাশের বন্ধু বান্ধব থেকে শিখে। ওকে তো চিনিস ও কখনো এর মধ্যে ঢুকে নি, এই ব্যাপারে কথা হলেই ও আস্তে উঠে যায়। বেচারার জ্ঞান এই ব্যাপারে আসলেই শূন্যের কোঠায়। আমি বললাম, আরে অত চিন্তা করতে মানা কর। সেক্স জিনিসটা আসলে মানুষের ন্যাচারাল। শিখাতে হয় না এমনি এমনি শিখে যায়। ফারিয়া এইবার কথা বলল, আসলে সেক্সের থেকে এখানে বড় ভয় অজানার ভয়। তুই চিন্তা কর তুই জানিস না এমন কোন কাজ করতে দিলে তুই কি ভয় পাবি না, সংশয়ে থাকবি না। আমি নিশ্চিত সাদিয়া কোন দিন মাস্টারবেট পর্যন্ত করে নি। আমি কিছু বললাম না। সাদিয়া বলল আমিও নিশ্চিত। শাহবাগের মোড়ে জাদুঘরের উলটা দিকে ফুটপাতে বসে বসে ফুচকা খেতে খেতে জুলিয়েট বলল বেচারা আসলেই আতংকিত। সেদিন কথা আর বেশি আগালো না। সবাই যার যার মত বাসায় চলে গেলাম।
অনেক সময় আমাদের চিন্তার উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ইচ্ছামত চিন্তা তার নিজের রাস্তা খুজে নেয়। বিকালে জুলিয়েট আর ফারিয়ার সাথে কথা বলার সময় একটা কথা সেই সময় থেকে মাথার ভিতর ঘুরছে। জুলিয়েট বলছিল সাদিয়া কখনো মাস্টারবেট করেনি। এরপর থেকে মেয়েদের মাস্টারবেটের কথাটা মাথায় ঘুরছিল। জুলিয়েট মাস্টারবেট করে জানি। ফারিয়া করে অনুমান করা যায়। মিলি কি করে? সুনিতি? সাদিয়া করে না বলে জুলিয়েট মত দিয়েছে। সত্য কি তাই? ওরা মাস্টারবেট করার সময় কি ভাবে? ছেলেদের মত ওরা কি ফ্যান্টাসি দিয়ে মাস্টারবেট করে? পর্নে মেয়েদের মাস্টারবেট থাকে। ওভাবে কখনো এটাতে আকর্ষণ বোধ করি নাই কিন্তু আজকের কথার পর থেকে মনে হচ্ছে ভালভাবে খেয়াল করা দরকার।
রাতে জুলিয়েটের সাথে কথা বলার সময় জিজ্ঞেস করলাম, মাস্টারবেট নিয়ে। জুলিয়েট প্রশ্ন করল কিরে এত জেনে কি করবি? আমি বললাম বিকালে তোর কথা থেকে মাথায় আসল। আসলে মেয়েরা যে মাস্টারবেট করে এটা পর্নে দেখলেও সামনা সামনি তো কেউ স্বীকার করে না। জুলিয়েট বলল, হা হা তোর সামনে তাহলে আমি মাঝে মাঝে কি করি। আমি বললাম তোর কথা আলাদা। জুলিয়েট বলল কেন? আমি বললাম আরে তোর মত ফ্রাংক আমার পরিচিত কোন ছেলেও নাই। জুলিয়েট বলল আচ্ছা। আমি বললাম, এইবার আমার উত্তর দে। তোরা কি সবাই মাস্টারবেট করিস। সবাই কিনা জানি না তবে কেউ কেউ তো করে। আমি বললাম আমাদের গ্রুপের। জুলিয়েট বলল, সাদিয়া ছাড়া বাকিরা করে এটা জানি। আমি এইবার অবাক হয়ে বললাম, সুনিতিও? জুলিয়েট বলল হ্যা। একদিন কথায় কথায় বের হয়ে গেল। আমি বললাম কীভাবে? জুলিয়েট বলল, সে এক কাহিনি। আমাদের একদিন এইসব নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমি হেসে বললাম শালা তোরা এইসব নিয়ে কথা বলিস, আর বলিস ছেলেরা হচ্ছে খাচ্চড়। জুলিয়েট বলল, সবাই বলে। ছেলে মেয়ে সবাই। আমি এই জন্য ছেলেদের উপর ক্ষেপা না, কারণ হচ্ছে ছেলেরা ভাবে তারা যা চাইবে সব মেয়ে তাই দিতে বাধ্য। আমি বললাম, আচ্ছা রাখ এখন নীতিবাক্য। কি হইছিল সেটা বল। জুলিয়েট বলল কথা কিভাবে উঠছিল মনে নাই। তবে যেভাবেই হোক কথা এই মাস্টারবেট পর্যন্ত এসে ঠেকল। তুই তো আমাকে জানিস, সবাই এমন একটা ভাব করছিল যেন এটা কি জানেই না। আমি তখন ধরলাম সব গুলাকে। আমি বললাম, আরে শালীরা আমি মাস্টারবেট করি। সমস্যা কি এতে। সবার ভিতরে সুরসুরি উঠে আমারো উঠে। আমি স্বীকার করি আর তোরা করিস না। এরপর ফারিয়া বলল ও করে। মিলিও চাপাচাপির পরে স্বীকার করল। তবে আমরা আসলে অবাক হইছি সুনীতির সময়। ওরে বাকিরা সবাই মিলে ধরল। কারণ সবার থলের বিড়াল বের হয়ে গেছে তাই সুনিতি কে ধরা হলো ওর থলের বিড়ালের জন্য। আমরা ভাবছিলাম ওরে একটু ক্ষেপাই, তবে ক্ষেপাতে গিয়েই থলের বিড়াল বের হয়ে গেল। আমি বললাম কি বলে ক্ষেপাচ্ছিলি। আর আসফাক স্যার আছে না। আমি বললাম হ্যা। জুলিয়েট বলল ভুড়িওয়ালা, টাক। আমরা ওরে ক্ষেপানো শুরু করলাম, সুনিতি আসরাফ স্যার কে ভেবে খেচে। বেশ কিছুক্ষণ বলার পর ও রেগেমেগে বলল, মাস্টারবেট করলে ও আসরাফ স্যার কে ভেবে কেন করবে? আমি বললাম তাহলে কাকে ভেবে করিস? ও কথার তালে বলে ফেলল, আমাদের সিনিয়র ব্যাচের নির্ঝর ভাই আছে না ওনাকে ভেবে। আমি বললাম, শালী তুই মানুষের মুখ থেকে কথা বের করায় ওস্তাদ। জুলিয়েট বলল হ্যা।