25-09-2019, 12:43 PM
(This post was last modified: 25-09-2019, 12:45 PM by Henry. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
----- বাবা ওঠো।ন'টা বাজলো যে।
অনিরূদ্ধের ঘুম দেরীতে ভাঙল।হাতের কাছে মোবাইলটা নেড়ে দেখল ন'টা পাঁচ।
---মা কোথায় রে?
---মা তো সকালে হাঁটতে বেরিয়েছে।মলি আন্টি অর্ক আংকেলরাও গেছে।
---ও তুই গেলি না?
--মা বলল তোমার কাছে থাকতে।
অনিরুদ্ধ ব্রাশ করে বেরুলো।ভারী ঝড়ো হাওয়া বইছে।অয়নকে অনি বলল রেডি হয়ে পড়।আমরাও বেড়াতে যাবো।
অয়ন কেমন অবাক হয়ে তাকালো।আজ এমনিতেই বাবার জন্য তার ঘুরতে যাওয়া হল না।
চটপট রেডি হয়ে পড়ল অয়ন।তামাং অদূরে খৈনি ডলছিল।বলল---সাহাব ভাবিও নে ঔর দুসরা সাহাব নে নিচে পাহাড়ীপে গ্যায়া হ্যায়।
সেইমত এগোতে থাকল অনি।অয়ন আগে আগে এগোচ্ছে।পাহাড়ের দুটো ধাপ ভেঙে নিচে নামতেই প্রায় তিরিশ মিনিট লেগে গেল।
মুখমুখি সর্দারের সাথে দেখা।ট্রাক দাঁড় করিয়ে গাড়ীর কাজ করাচ্ছে।হেল্পার ছেলেটা গাড়ীর তলায় ঢুকে কাজ করতে ব্যস্ত।সর্দারের গায়ে কেবল সেই ময়লা ধুসর কুর্তা।লোকটার কি ঠান্ডা ফান্ডা লাগেনা নাকি? অনিরুদ্ধ যখন ভাবছে তখনই সর্দার বলে উঠল---কি হে বাঙ্গালী বাবু? দের সে নিন্দ ভাঙল নাকি?
অনিরুদ্ধর ইচ্ছে করছিল না লোকটার সাথে কথা বলতে।তবু একপ্রকার বাধ্য হয়ে সীমিত জবাব দিয়ে বলল---হুম্ম।
--এখুনো গোস্বায় আছেন?দেখেন মেয়েছেলে দেখলে মর্দের জোশ বাড়ে।আমি লরি চালাই বহুত দূর তক।একটু তো হাওয়াস হবেই।
অনিরুদ্ধ কিছু না বলে এগোতে গেলেই সর্দার আবার গায়ে পড়া ভাব নিয়ে বলল--আমি নিচে যাবো।ভাবিজী, আপনার দোস্ত, দোস্তের গরম মাসুকা মানে পত্নী সব নিচে গেছে।উঠে আসেন।
সত্যি অনিরূদ্ধের আর হাঁটতে ভালো লাগছে না।তবু সে বলল---না, থাক।
সর্দার এবার প্রায় অনিরূদ্ধের গায়ের কাছে এসে পড়ল।লোকটা সত্যিই পালোয়ান গোছের।যেমন লম্বা, তেমন স্বাস্থ্যবান।বলল--নিচে কিতনা দূর হাঁটবেন।আমি তো একটু আগে আপনার লোকদের নিচে পৌঁছে দিয়েসছি।
অনিরুদ্ধ চমকে গেল।তারমানে অর্ক, মলি সুজাতারা এই সর্দারের ট্রাকে করে গেছে।অর্ক কি খুব বোকা।বুঝতে পারে না এই লোকটা তার স্ত্রীয়ের সাথে নোংরা ব্যবহার করেছিল?মলিও কি বলেনি অর্ককে?
অনিরূদ্ধের মনে হল এবার অর্ককে সব বলা দরকার।তা নাহলে মলি খুব বিপদে পড়তে পারে।এই সব গুন্ডা ট্রাক ড্রাইভাররা মলির সাথে যা কিছু করতে পারে।
অয়নকে নিয়ে পাহাড় ভেঙে নেমে এলো অনিরুদ্ধ।অয়ন মা বলে ডেকে উঠল।
দূর থেকে সুজাতাদের দেখা যাচ্ছে।অর্ক ঠিক ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলে যাচ্ছে।মলি আর সুজাতা আরেকটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
ঠিক সেইসময় সর্দারের ট্রাক পাশ করে গেল।যাবার সময় সর্দার বলে গেল---আ রাহা হু বাঙ্গালী বাবু।
সন্ধ্যের সময় অর্ক এসে বলল---অনি দা আজ কিন্তু বেশ ঠান্ডা।
---আরে বোলো না।দেখেছ তোমার সুজাতা দি কেমন সোয়েটার শাল গায়ে কুঁকড়ে আছে।
সুজাতা চোখের চশমাটা খুলে মুছে পরে নিল।বলল---অর্ক আসলে তোমার অনি দা' কাল থেকে বায়না করছে।তুমি নাকি কিসব ছাইপাঁশ খাবার প্রস্তাব রেখেছ?
---ছাই পাশ বলছ কেন বৌদি? ব্র্যান্ডি তুমিও খেয়ে দেখতে পারো।এই ঠান্ডায় টিকতে গেলে একটু আধটু খেতে হবে।
---না, বাবা ওসব তোমরা খাও।আমি বরং....
অনিরুদ্ধ অনুমতি পেয়ে বলল--তুমি বরং চামেলি জী কে বলে একটু পকোড়া ভেজে আনো।
সুজাতা মৃদু হাসল--মলি চলো।
অর্ক লাফিয়ে উঠল।বলল---মলি কোথায় যাবে? ও তো একটু আধটু খায়।কি মলি খাবে তো?
মলি সুজাতার দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে বলল---সুজাতা দি আমি...আমি...
----বুঝেছি....বুঝেছি বলে হাসল সুজাতা।অনিরূদ্ধের দিকে তাকিয়ে বলল---আবার বেহেড মাতাল হয়ে যেও না।
অয়নকে নিয়ে সুজাতা চলে গেল।দূর থেকে নীচের দিকে মনেস্ট্রির আলো মেঘের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে।অনিরুদ্ধ কানটা টুপিতে ভালো করে ঢেঁকে নিল।অর্ক তার কর্টেজে গেল বোতলটা আনতে।
মলি অনিরূদ্ধের মুখোমুখি বসে আছে।অনি বলল--মলি তোমাদের তো আর মাত্র হাতে তিনটে দিন।
---হ্যা অনি দা।আপনাদের?
---এখনো ন'দিন বাকি।
---পুরো পুজোর মাসটা কাটিয়ে যাবে দেখছি।
--পারলে তোমরাও যেও।
---ইচ্ছে করছে জানেন তো অনি দা।কিন্তু এবারই তো আমাদের কলকাতার শেষ পুজো।
----কেন?
---ও ফ্রেঞ্চ স্কলার পেয়েছে।ওখানে সেটল হয়ে যাবো।
---মানে? আর তুমি? মানে তোমার কাজ?
---আমি না হয় চাকরী ছেড়ে দিলাম।
---সে কি? কেন? তুমি কেন চাকরী ছাড়বে?
মলি হেসে বলল--আপনি এমন বলছেন যেন আপনি চান আমি কলকাতায় থেকে যাই।
অনিরুদ্ধর মনে হল সে ধরা পড়ে গেছে।কথা এড়িয়ে বলল---আমি মনে করি মেয়েদের সাবলম্বী হওয়া উচিত।এই দেখো তোমার সুজাতা দি, প্রাইমারী কলেজে পড়াচ্ছে বিয়ের আগে থেকেই।অয়ন জন্মাবার পর বলছিল চাকরী ছেড়ে দেবে।আমি না করলাম।আজ দেখ ছেলে কলেজে চলে গেলে, আমি অফিস চলে গেলে আর পাঁচটা বিবাহিত মেয়েদের মত ওর একা মনে হয়না।
অর্ক দুটো বোতল নিয়ে পৌঁছল।
অনিরুদ্ধ অবাক হয়ে বলল---এ যে হুইস্কি!
অর্ক বলল---শালা সর্দারের গলায় ঘা মারলাম।দুই বগলে দাবা করে কর্টেজে ঢুকছিল।একটা রাম আরেকটা হুইস্কি।বললাম--কি হে সর্দার আজ মনে হচ্ছে পার্টি হবে?
বলল---হামার তো প্রতিদিন পার্টি বাঙালি বাবু।
ব্র্যান্ড দেখেই বললাম---তাহলে চলো একসাথে বসা যাক।কি যেন ভাবল।তারপর কি বলল জানো অনিদা?
অনিরুদ্ধ জিজ্ঞেস করল----কি?
বলল---সে দুসরা বাঙ্গালী বাবু ভীষন গোস্বা করে।আমার মত ট্রাক ড্রাইভার কি আর তোমাদের সাথে দারু খেতে পারে।
অনিরুদ্ধ কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল---তারপর তুমি কি করলে?
বললাম---তবে আপনি এতগুলো মাল নিয়ে কি করবেন?বরং বাঙ্গালী বাবুর রাগ গলাতে...
এতবড় তাগড়া লোকটা কেমন কাঁচুমাচু মুখে হে হে করে বলল---ইয়ে হুইস্কিটা লিয়ে যান।হামার রাম হি সহি।
সকলে হেসে উঠল।সুজাতা একটা প্লেটে পকোড়া ভেজে আনলো।
অনিরুদ্ধ বলল--সুজাতা তুমি না খাও।বসে গল্পতো করতে পারো।অয়ন কোথায়?
---ও শুয়ে শুয়ে তোমার ফোনে গেম খেলছে।
টি টেবিলের উপর অর্ক সব সাজিয়ে রাখল।এক পাশে মলি আর অর্ক বসেছে।অন্য পাশে সুজাতা আর অনিরুদ্ধ।
মলি জিজ্ঞেস করল---চারটে গ্লাস কেন?
অর্ক সুজাতার দিকে তাকিয়ে বলল---সুজাতা দি'র জন্য।
---এই না।আমি খাবো না।
---সুজাতা দি এই ঠান্ডা একটু আধটু খেলে জাত যাবে না।তাছাড়া এই আমরা কেউ তো আর মাতাল নই।মলি তো দু পেগের বেশি ছোঁবে না।
মলিও বলল---সুজাতা দি আজকের দিনটাকে সেলিব্রেট করতে একটু খাও না?
কার্যত জোর করে সুজাতার হাতে অর্ক গ্লাস ধরিয়ে দিল।প্রথম চিয়ার্স করে চুমুক দিল অনিরুদ্ধ।
---অনি দা আমরা কিন্তু ডিসেম্বরে ফ্রান্স চলে যাচ্ছি।তাই কলকাতা গেলে নভেম্বরে একবার আমাদের ফ্ল্যাটে আসুন।
---হ্যা মলির কাছে শুনলাম।বায় দ্য ওয়ে সাক্ষাৎ যদি করতে হয় আমার বাড়ীতেই এসো।
---আচ্ছা হোক আপনার বাড়ীতে।সুজাতা দি'র হাতের রান্না খাবো।মলি তো আর ভালোমন্দ রান্না করে খাওয়ালো না।
মলি অর্ককে কুনুইয়ের গুঁতো মেরে বলল---বারে তোমাকে যে গত অ্যানিভার্সারিতে চাইনিজ রেঁধে খাওয়ালাম।
-----সে তো এক বছর আগের কথা।আবার অ্যানিভার্সারি এসে পড়ল।
খুনসুটির মাঝে কথাবার্তা চলতে থাকল।অর্ক দ্বিতীয় পেগ সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
মলি বলল---একি! সুজাতা দি? তোমার যে এক পেগই শেষ হল না।
সুজাতা নাক টিপে খেয়ে নিল।
মুখ প্যাঁচিয়ে বলল----ধ্যাৎ কি বাজে খেতে।আর খাবো না।
---আঃ সুজাতা দি আর এক পেগ।মলি এপ্রোচ করল।
দ্বিতীয় পেগ খাওয়ার পর।মলি অর্ককে বলল--এই আমার জন্য আরেকটা।
অর্ক অনিরূদ্ধের দিকে চোখ মেরে বলল---জল কম?
---দাও তো।যেমন খুশি।মেয়ে বলে কি পিছিয়ে থাকব।এ ব্যাপারে অনি দা কিন্তু খুব সাপোর্টিভ।
সুজাতা এতক্ষনে বলল---তোমার অনি দা সব ব্যাপারেই সাপোর্টিভ।এই যে আমাকে জোর করে মদ গেলালো।
মলি হেসে হাল্কা নেশাগ্রস্ত হয়ে বলল---আরে সুজাতা দি, আমার স্বামীটিও কম না।হানিমুনে জোর করে গিলিয়ে ছিল।
তিন নম্বর পেগটা সকলেই খেল।সুজাতা এবার বলল---আমার কিন্তু মাথা ধরছে।আমি আর খাবো না।
----ওকে ওকে অর্ক সাপোর্ট করে বলল।
চারনম্বর পেগটা বানাতে গিয়েই অর্ক বলল---এই রে সর্দারকে বলেছিলাম পকোড়া ভাজা খাওয়াবো।বেচারার হুইস্কি ঝেড়ে আনলাম।
অনিরুদ্ধ বলল---এখনো তো বেশ আছে একটা আলাদা প্লেটে করে দিয়েলে হয়।
অর্ক মলিকে বলল---এই মলি যাও না।সর্দারকে দিয়েসো।
অনিরূদ্ধের যেন মনে পড়ে গেল সর্দারের অভিসন্ধি।মলি এখন ড্রাঙ্ক।সর্দার যদি এই সুযোগে মলির সাথে খারাপ কিছু করে।সঙ্গে সঙ্গে অনিরুদ্ধ বলল----না! না! মলি কেন যাবে? এই সুজাতা তুমি তো আর খাবে না।যাও না সর্দারের ঘরে পকোড়া ভাজা দিয়েস।
সুজাতা চলে গেল।মলি অর্কের গলা জড়িয়ে বলল---অর্ক সোনা একটা গান গাও না।
অনিরুদ্ধ ধরা গলায় বলল---অর্ক গান গায় নাকি?
---গায় মানে? ওর রবীন্দ্রসঙ্গীতে ডিগ্রি আছে।
---একি অর্ক? তুমি তো অনেক গুনী হে।আইটি ইঞ্জিনিয়ার, সঙ্গীত পারদর্শী, ফটোগ্রাফার।এজন্যই তো মলি তোমাকে চুজ করেছে।
শেষ কথাটা বোধ আটকে থেকে গেল গলায়।
অর্ক বলল---অনি দা, সেসব অনেক আগে।মাঝে মাঝে মলি জোর করলে গেয়ে থাকি।
---তা গাও না।
অর্ক গান ধরল---যেতে যেতে একলা পথে....
রাত বাড়তে বাড়তে নেশাও বাড়তে থাকল।একটা সময় শেষ হল।ঘড়িতে তখন ক'টা বাজে খেয়াল নেই অনিরূদ্ধের।
***********************
দেরী করে ঘুম ভাঙল অনির।কাল রাতের হ্যাং ওভার এখনো নামেনি।পাশ ফিরে দেখল সুজাতা তখনও ঘুমোচ্ছে।অয়ন বিরক্তিকর শব্দ করে মোবাইলটা নিয়ে গেম খেলছে।
(চলবে)
অনিরূদ্ধের ঘুম দেরীতে ভাঙল।হাতের কাছে মোবাইলটা নেড়ে দেখল ন'টা পাঁচ।
---মা কোথায় রে?
---মা তো সকালে হাঁটতে বেরিয়েছে।মলি আন্টি অর্ক আংকেলরাও গেছে।
---ও তুই গেলি না?
--মা বলল তোমার কাছে থাকতে।
অনিরুদ্ধ ব্রাশ করে বেরুলো।ভারী ঝড়ো হাওয়া বইছে।অয়নকে অনি বলল রেডি হয়ে পড়।আমরাও বেড়াতে যাবো।
অয়ন কেমন অবাক হয়ে তাকালো।আজ এমনিতেই বাবার জন্য তার ঘুরতে যাওয়া হল না।
চটপট রেডি হয়ে পড়ল অয়ন।তামাং অদূরে খৈনি ডলছিল।বলল---সাহাব ভাবিও নে ঔর দুসরা সাহাব নে নিচে পাহাড়ীপে গ্যায়া হ্যায়।
সেইমত এগোতে থাকল অনি।অয়ন আগে আগে এগোচ্ছে।পাহাড়ের দুটো ধাপ ভেঙে নিচে নামতেই প্রায় তিরিশ মিনিট লেগে গেল।
মুখমুখি সর্দারের সাথে দেখা।ট্রাক দাঁড় করিয়ে গাড়ীর কাজ করাচ্ছে।হেল্পার ছেলেটা গাড়ীর তলায় ঢুকে কাজ করতে ব্যস্ত।সর্দারের গায়ে কেবল সেই ময়লা ধুসর কুর্তা।লোকটার কি ঠান্ডা ফান্ডা লাগেনা নাকি? অনিরুদ্ধ যখন ভাবছে তখনই সর্দার বলে উঠল---কি হে বাঙ্গালী বাবু? দের সে নিন্দ ভাঙল নাকি?
অনিরুদ্ধর ইচ্ছে করছিল না লোকটার সাথে কথা বলতে।তবু একপ্রকার বাধ্য হয়ে সীমিত জবাব দিয়ে বলল---হুম্ম।
--এখুনো গোস্বায় আছেন?দেখেন মেয়েছেলে দেখলে মর্দের জোশ বাড়ে।আমি লরি চালাই বহুত দূর তক।একটু তো হাওয়াস হবেই।
অনিরুদ্ধ কিছু না বলে এগোতে গেলেই সর্দার আবার গায়ে পড়া ভাব নিয়ে বলল--আমি নিচে যাবো।ভাবিজী, আপনার দোস্ত, দোস্তের গরম মাসুকা মানে পত্নী সব নিচে গেছে।উঠে আসেন।
সত্যি অনিরূদ্ধের আর হাঁটতে ভালো লাগছে না।তবু সে বলল---না, থাক।
সর্দার এবার প্রায় অনিরূদ্ধের গায়ের কাছে এসে পড়ল।লোকটা সত্যিই পালোয়ান গোছের।যেমন লম্বা, তেমন স্বাস্থ্যবান।বলল--নিচে কিতনা দূর হাঁটবেন।আমি তো একটু আগে আপনার লোকদের নিচে পৌঁছে দিয়েসছি।
অনিরুদ্ধ চমকে গেল।তারমানে অর্ক, মলি সুজাতারা এই সর্দারের ট্রাকে করে গেছে।অর্ক কি খুব বোকা।বুঝতে পারে না এই লোকটা তার স্ত্রীয়ের সাথে নোংরা ব্যবহার করেছিল?মলিও কি বলেনি অর্ককে?
অনিরূদ্ধের মনে হল এবার অর্ককে সব বলা দরকার।তা নাহলে মলি খুব বিপদে পড়তে পারে।এই সব গুন্ডা ট্রাক ড্রাইভাররা মলির সাথে যা কিছু করতে পারে।
অয়নকে নিয়ে পাহাড় ভেঙে নেমে এলো অনিরুদ্ধ।অয়ন মা বলে ডেকে উঠল।
দূর থেকে সুজাতাদের দেখা যাচ্ছে।অর্ক ঠিক ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলে যাচ্ছে।মলি আর সুজাতা আরেকটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
ঠিক সেইসময় সর্দারের ট্রাক পাশ করে গেল।যাবার সময় সর্দার বলে গেল---আ রাহা হু বাঙ্গালী বাবু।
সন্ধ্যের সময় অর্ক এসে বলল---অনি দা আজ কিন্তু বেশ ঠান্ডা।
---আরে বোলো না।দেখেছ তোমার সুজাতা দি কেমন সোয়েটার শাল গায়ে কুঁকড়ে আছে।
সুজাতা চোখের চশমাটা খুলে মুছে পরে নিল।বলল---অর্ক আসলে তোমার অনি দা' কাল থেকে বায়না করছে।তুমি নাকি কিসব ছাইপাঁশ খাবার প্রস্তাব রেখেছ?
---ছাই পাশ বলছ কেন বৌদি? ব্র্যান্ডি তুমিও খেয়ে দেখতে পারো।এই ঠান্ডায় টিকতে গেলে একটু আধটু খেতে হবে।
---না, বাবা ওসব তোমরা খাও।আমি বরং....
অনিরুদ্ধ অনুমতি পেয়ে বলল--তুমি বরং চামেলি জী কে বলে একটু পকোড়া ভেজে আনো।
সুজাতা মৃদু হাসল--মলি চলো।
অর্ক লাফিয়ে উঠল।বলল---মলি কোথায় যাবে? ও তো একটু আধটু খায়।কি মলি খাবে তো?
মলি সুজাতার দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে বলল---সুজাতা দি আমি...আমি...
----বুঝেছি....বুঝেছি বলে হাসল সুজাতা।অনিরূদ্ধের দিকে তাকিয়ে বলল---আবার বেহেড মাতাল হয়ে যেও না।
অয়নকে নিয়ে সুজাতা চলে গেল।দূর থেকে নীচের দিকে মনেস্ট্রির আলো মেঘের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে।অনিরুদ্ধ কানটা টুপিতে ভালো করে ঢেঁকে নিল।অর্ক তার কর্টেজে গেল বোতলটা আনতে।
মলি অনিরূদ্ধের মুখোমুখি বসে আছে।অনি বলল--মলি তোমাদের তো আর মাত্র হাতে তিনটে দিন।
---হ্যা অনি দা।আপনাদের?
---এখনো ন'দিন বাকি।
---পুরো পুজোর মাসটা কাটিয়ে যাবে দেখছি।
--পারলে তোমরাও যেও।
---ইচ্ছে করছে জানেন তো অনি দা।কিন্তু এবারই তো আমাদের কলকাতার শেষ পুজো।
----কেন?
---ও ফ্রেঞ্চ স্কলার পেয়েছে।ওখানে সেটল হয়ে যাবো।
---মানে? আর তুমি? মানে তোমার কাজ?
---আমি না হয় চাকরী ছেড়ে দিলাম।
---সে কি? কেন? তুমি কেন চাকরী ছাড়বে?
মলি হেসে বলল--আপনি এমন বলছেন যেন আপনি চান আমি কলকাতায় থেকে যাই।
অনিরুদ্ধর মনে হল সে ধরা পড়ে গেছে।কথা এড়িয়ে বলল---আমি মনে করি মেয়েদের সাবলম্বী হওয়া উচিত।এই দেখো তোমার সুজাতা দি, প্রাইমারী কলেজে পড়াচ্ছে বিয়ের আগে থেকেই।অয়ন জন্মাবার পর বলছিল চাকরী ছেড়ে দেবে।আমি না করলাম।আজ দেখ ছেলে কলেজে চলে গেলে, আমি অফিস চলে গেলে আর পাঁচটা বিবাহিত মেয়েদের মত ওর একা মনে হয়না।
অর্ক দুটো বোতল নিয়ে পৌঁছল।
অনিরুদ্ধ অবাক হয়ে বলল---এ যে হুইস্কি!
অর্ক বলল---শালা সর্দারের গলায় ঘা মারলাম।দুই বগলে দাবা করে কর্টেজে ঢুকছিল।একটা রাম আরেকটা হুইস্কি।বললাম--কি হে সর্দার আজ মনে হচ্ছে পার্টি হবে?
বলল---হামার তো প্রতিদিন পার্টি বাঙালি বাবু।
ব্র্যান্ড দেখেই বললাম---তাহলে চলো একসাথে বসা যাক।কি যেন ভাবল।তারপর কি বলল জানো অনিদা?
অনিরুদ্ধ জিজ্ঞেস করল----কি?
বলল---সে দুসরা বাঙ্গালী বাবু ভীষন গোস্বা করে।আমার মত ট্রাক ড্রাইভার কি আর তোমাদের সাথে দারু খেতে পারে।
অনিরুদ্ধ কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল---তারপর তুমি কি করলে?
বললাম---তবে আপনি এতগুলো মাল নিয়ে কি করবেন?বরং বাঙ্গালী বাবুর রাগ গলাতে...
এতবড় তাগড়া লোকটা কেমন কাঁচুমাচু মুখে হে হে করে বলল---ইয়ে হুইস্কিটা লিয়ে যান।হামার রাম হি সহি।
সকলে হেসে উঠল।সুজাতা একটা প্লেটে পকোড়া ভেজে আনলো।
অনিরুদ্ধ বলল--সুজাতা তুমি না খাও।বসে গল্পতো করতে পারো।অয়ন কোথায়?
---ও শুয়ে শুয়ে তোমার ফোনে গেম খেলছে।
টি টেবিলের উপর অর্ক সব সাজিয়ে রাখল।এক পাশে মলি আর অর্ক বসেছে।অন্য পাশে সুজাতা আর অনিরুদ্ধ।
মলি জিজ্ঞেস করল---চারটে গ্লাস কেন?
অর্ক সুজাতার দিকে তাকিয়ে বলল---সুজাতা দি'র জন্য।
---এই না।আমি খাবো না।
---সুজাতা দি এই ঠান্ডা একটু আধটু খেলে জাত যাবে না।তাছাড়া এই আমরা কেউ তো আর মাতাল নই।মলি তো দু পেগের বেশি ছোঁবে না।
মলিও বলল---সুজাতা দি আজকের দিনটাকে সেলিব্রেট করতে একটু খাও না?
কার্যত জোর করে সুজাতার হাতে অর্ক গ্লাস ধরিয়ে দিল।প্রথম চিয়ার্স করে চুমুক দিল অনিরুদ্ধ।
---অনি দা আমরা কিন্তু ডিসেম্বরে ফ্রান্স চলে যাচ্ছি।তাই কলকাতা গেলে নভেম্বরে একবার আমাদের ফ্ল্যাটে আসুন।
---হ্যা মলির কাছে শুনলাম।বায় দ্য ওয়ে সাক্ষাৎ যদি করতে হয় আমার বাড়ীতেই এসো।
---আচ্ছা হোক আপনার বাড়ীতে।সুজাতা দি'র হাতের রান্না খাবো।মলি তো আর ভালোমন্দ রান্না করে খাওয়ালো না।
মলি অর্ককে কুনুইয়ের গুঁতো মেরে বলল---বারে তোমাকে যে গত অ্যানিভার্সারিতে চাইনিজ রেঁধে খাওয়ালাম।
-----সে তো এক বছর আগের কথা।আবার অ্যানিভার্সারি এসে পড়ল।
খুনসুটির মাঝে কথাবার্তা চলতে থাকল।অর্ক দ্বিতীয় পেগ সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
মলি বলল---একি! সুজাতা দি? তোমার যে এক পেগই শেষ হল না।
সুজাতা নাক টিপে খেয়ে নিল।
মুখ প্যাঁচিয়ে বলল----ধ্যাৎ কি বাজে খেতে।আর খাবো না।
---আঃ সুজাতা দি আর এক পেগ।মলি এপ্রোচ করল।
দ্বিতীয় পেগ খাওয়ার পর।মলি অর্ককে বলল--এই আমার জন্য আরেকটা।
অর্ক অনিরূদ্ধের দিকে চোখ মেরে বলল---জল কম?
---দাও তো।যেমন খুশি।মেয়ে বলে কি পিছিয়ে থাকব।এ ব্যাপারে অনি দা কিন্তু খুব সাপোর্টিভ।
সুজাতা এতক্ষনে বলল---তোমার অনি দা সব ব্যাপারেই সাপোর্টিভ।এই যে আমাকে জোর করে মদ গেলালো।
মলি হেসে হাল্কা নেশাগ্রস্ত হয়ে বলল---আরে সুজাতা দি, আমার স্বামীটিও কম না।হানিমুনে জোর করে গিলিয়ে ছিল।
তিন নম্বর পেগটা সকলেই খেল।সুজাতা এবার বলল---আমার কিন্তু মাথা ধরছে।আমি আর খাবো না।
----ওকে ওকে অর্ক সাপোর্ট করে বলল।
চারনম্বর পেগটা বানাতে গিয়েই অর্ক বলল---এই রে সর্দারকে বলেছিলাম পকোড়া ভাজা খাওয়াবো।বেচারার হুইস্কি ঝেড়ে আনলাম।
অনিরুদ্ধ বলল---এখনো তো বেশ আছে একটা আলাদা প্লেটে করে দিয়েলে হয়।
অর্ক মলিকে বলল---এই মলি যাও না।সর্দারকে দিয়েসো।
অনিরূদ্ধের যেন মনে পড়ে গেল সর্দারের অভিসন্ধি।মলি এখন ড্রাঙ্ক।সর্দার যদি এই সুযোগে মলির সাথে খারাপ কিছু করে।সঙ্গে সঙ্গে অনিরুদ্ধ বলল----না! না! মলি কেন যাবে? এই সুজাতা তুমি তো আর খাবে না।যাও না সর্দারের ঘরে পকোড়া ভাজা দিয়েস।
সুজাতা চলে গেল।মলি অর্কের গলা জড়িয়ে বলল---অর্ক সোনা একটা গান গাও না।
অনিরুদ্ধ ধরা গলায় বলল---অর্ক গান গায় নাকি?
---গায় মানে? ওর রবীন্দ্রসঙ্গীতে ডিগ্রি আছে।
---একি অর্ক? তুমি তো অনেক গুনী হে।আইটি ইঞ্জিনিয়ার, সঙ্গীত পারদর্শী, ফটোগ্রাফার।এজন্যই তো মলি তোমাকে চুজ করেছে।
শেষ কথাটা বোধ আটকে থেকে গেল গলায়।
অর্ক বলল---অনি দা, সেসব অনেক আগে।মাঝে মাঝে মলি জোর করলে গেয়ে থাকি।
---তা গাও না।
অর্ক গান ধরল---যেতে যেতে একলা পথে....
রাত বাড়তে বাড়তে নেশাও বাড়তে থাকল।একটা সময় শেষ হল।ঘড়িতে তখন ক'টা বাজে খেয়াল নেই অনিরূদ্ধের।
***********************
দেরী করে ঘুম ভাঙল অনির।কাল রাতের হ্যাং ওভার এখনো নামেনি।পাশ ফিরে দেখল সুজাতা তখনও ঘুমোচ্ছে।অয়ন বিরক্তিকর শব্দ করে মোবাইলটা নিয়ে গেম খেলছে।
(চলবে)