23-09-2019, 11:34 PM
মঙ্গলসূত্র
---------------
আজ পাহাড়ে রোদ ঝলমলে সকাল।বন বাংলোর বারান্দার সামনে রোদ এসে পড়ছে।অনিরুদ্ধ চায়ের কাপ নিয়ে বসে আছে।অয়ন ফুটবলে লাথি মেরে ছুঁড়ে দিল বলটা, সোজা গিয়ে ঢুকল পাইন গাছের জঙ্গলে।
সুজাতা স্নান করে বেরোল।রোদে তোয়ালেটা মেলে দিয়ে বলল---তুমি স্নান করবে না?
---এত ঠান্ডায় স্নান? মাথা খারাপ নাকি।অক্টোবরের এই সিজনে কালিম্পঙে টেম্পারেচার চার-পাঁচ ডিগ্রির আসেপাশে ঘোরে।তার ওপরে এই তিনদিনে একদিনও রোদের দেখা মেলেনি।
অয়ন বলটা কুড়িয়ে নিয়ে এসে বলল--মা যাবে না?
সুজাতা বলল--কি গো রেডি হয়ে নাও।ওদিকের পাহাড়ের ধাপে নাকি একটা মনেস্ট্রি আছে।
---তোমরা যাও।আমি বরং পুজো সংখ্যা গুলো বসে বসে পড়ি।
সুজাতা কোনো ব্যাপারে অনিরুদ্ধকে জোর করে না।অয়নকে রেডি করে বেরিয়ে গেল।সুজাতা সাবলম্বী।অনিরুদ্ধ কখনোই মনে করে না সুজাতার সঙ্গে সবসময় থাকার প্রয়োজন আছে।
অনি বই পড়ছিল।সমরেশ মজুমদারের দেশ পত্রিকার উপন্যাসটা এবার আধা পড়া হয়ে রেখে দিয়েছিল ট্রেনে।
দূরে পাহাড়ের তলার দিকে ছোট ছোট হোম স্টে গুলো দেখা যাচ্ছে।ওপাশ থেকে একটা মেঘ ভেসে আসছে।যদিও অনিরুদ্ধরা যেখানে আছে সেটাও বাংলো ফাংলো কিছু না; হোম স্টে।
অনিদের হোম স্টে থেকে সামান্য দূরে আরেকটা হোম স্টে।সেটা একটু নীচের দিকে।সেখান থেকে উঠে আসছে একটি বছর পঁয়ত্রিশ বছরের যুবক।গলায় ক্যামেরা, চেক শার্ট, জিন্স।
দূরে একটা পাখির ছবি ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে কয়েকটা শট মেরে তুলল।
--আপনারা কি কলকাতা থেকে? যুবকটি জিজ্ঞেস করল।মুখে সৌজন্যমূলক হাসি।
---হ্যা।আপনি?
--হ্যা আমরাও।
কয়েকদিন ধরে যুবকটিকে একা একা দেখছিল অনিরুদ্ধ।তাই ভেবেছিল নির্ঘাৎ একা।ফটোগ্রাফী-টাফি করে বোধ হয়।
--আসুন বসুন।চেয়ারটা টেনে দিল অনিরুদ্ধ।
যুবকটি বসে বলল---কদ্দিনের জন্য?
---যাতায়াতের দিন বাদ দিলে পনেরো দিন।তিনদিন কেটে গেছে।বাকি আর বারো দিন।বলেই অনিরুদ্ধ বলল--চা খাবেন?
---আছে? নাকি চামেলিজী কে বলতে হবে?
চামেলি শেরপা এই কাঠবাড়ি হোম স্টেগুলোর মালিক।বয়স্ক নেপালি মহিলা।ভারী কেয়ারেবল।
অনিরুদ্ধ বলল--না না।ফ্লাস্কে আছে।
দু'কাপ চা আনল অনিরুদ্ধ।বলল--আপনার সঙ্গে আর কে কে আছেন?
---আমার স্ত্রী মলি।
--ও আচ্ছা।আমি প্রথমে ভেবেছি আপনি বোধ হয় ব্যাচেলার।
হা হা হা করে হেসে উঠল যুবকটি বলল--সে সৌভাগ্য পাঁচ বছর আগে পেরিয়ে এসেছি।
---সৌভাগ্য বলছেন।আপনি আমার চেয়ে বয়সে ছোটই হবেন।মাত্র পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনেই টায়ার্ড? আর আমার ছেলেই এখন বারোতে পা দিল।
---ও, আপনার নাম..
---আমি অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী।এসবিআই, পিও।আপনি?
---আমি অর্ক সান্যাল।আইটিতে আছি।সল্টলেক বাড়ী।আমার স্ত্রীও আইটিতে।
--ও আচ্ছা।চাকুরিজীবি দম্পতি।সে অর্থে আমার স্ত্রীও।প্রাথমিক শিক্ষিকা।
--আচ্ছা।কি সিমিলারিটিজ।আপনাদের ঠিক কলকাতার কোন জায়গায় বাড়ী?
---শেক্সপিয়ার সরনী।আমাদের কলকাতা শহরের পুরোনো বাড়ী।অনিরুদ্ধ সিগারেটের বাক্স থেকে সিগারেট বের করল--চলে?
---না থ্যাংক্স।
---আমি কিন্তু জানি আইটি ইঞ্জিনিয়াররা সাংঘাতিক স্মোকার হয়।
---ওঃ তাই।তবে আমি ব্যতিক্রম।তবে এই ঠান্ডায় ওটা কিন্তু চলে।বলেই হাসল অর্ক।
অনি নিজেও অফিস পার্টি থাকলে একটু আধটু খায়।এরকম ঠান্ডায় একটু খেলে সুজাতা নিশ্চই বাধা দেবে না।
---ওকে আমি আপনাকে তবে অনিরুদ্ধ দা বলতে পারি।
অনিরুদ্ধ ধোঁয়া ছেড়ে বলল--আপনার এজ কত?
---থার্টি সেভেন।
---ও আপনি আমার ওয়াইফের বয়সী।আমি ফর্টি টু।
সেদিনের পরিচয়ের পর অর্কদের সাথে অনিরুদ্ধদের জমে গেল।সুজাতা আর মলিরও খুব ভাব হল।তাদের মেয়েলি আড্ডার মাঝে অনি আর অর্কও প্রাণ খুলে আড্ডা দিতে পারত।
--------
ভোর বেলা গাড়ী করে ভুটানের দিকে রওনা হল অনিরুদ্ধ অর্করা।
ড্রাইভারের পাশে বসল অনিরুদ্ধ।পরের সিটে অর্ক আর অয়ন।শেষ সিটে সুজাতা আর মলি।
ভুটানের পার্বত্য অরণ্য যেন আরো সুন্দর হয়ে রয়েছে।বেশ ঠান্ডায় জমে যাবার মত অবস্থা।ঘন ঘন চা খাচ্ছে অনি।সুজাতা আর মলি অয়নকে নিয়ে দূরের বৌদ্ধগুম্ফাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।অর্ক ছবি তুলতে ব্যস্ত।
অর্কের স্ত্রী মলির দিক থেকে চোখ ফেরানো যায়না।অনিরুদ্ধ মাঝে মধ্যে না চাইলেও দেখে ফেলে।কথায় আছে পরস্ত্রী সবসময়ে সুন্দরী।অবশ্য তা নয়।মলি সত্যিই সুন্দরী।মলি একটা হলদে সালোয়ার পরেছে।তার ওপর লম্বা ওভার কোট।বয়স খুব বেশি হলে সাতাশ আঠাশ হবে।গায়ের রঙ সুজাতার মত ফর্সা নয়।বরং শ্যামলার দিকে।টানা টানা চোখ।উচ্চতা পাঁচ ফুট চার হবে।বাঙালি মেয়ে হিসেবে লম্বা বলা চলে।অর্কও লম্বা।মানিয়েছে দুজনকে।মলির টানটান শিথিলতা হীন চেহারা, উদ্ধত বুক যেকোনো পুরুষকে আকর্ষন করবেই।
সেক্ষেত্রে সুজাতা যেন কেমন মলিন।মলির সাথে সুজাতার কোনো তুলনা চলে না।সুজাতার গায়ের রঙ তীব্র ফর্সা হলেও।কেমন যেন স্যাঁতস্যাঁতে।ছোটখাটো চেহারা।অনির মাঝারি উচ্চতার পাশেও সুজাতাকে ছোট দেখায়।ছিপছিপে শুটকির মত রোগাটে ধরনের।সুজাতার স্তনে শিথিলতা এসছে।অর্ককে আড়াই বছর পর্য্ন্ত ব্রেস্ট ফিড করিয়েছে।মলির মত পুষ্ট বা বড় নয়।বরং মাঝারি ধরনের। লাস্যময়ী মলির পাশে এক বাচ্চার মা দিদিমনিসুলভ চশমা চোখা ফ্যাকাসে ফর্সা সুজাতা কোনো দিন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারবে না।
সুজাতার পরণে ঘিয়ে রঙের শাড়ি, আর উলের কালো সোয়েটার।মলির ওভার কোটের উপর দিয়ে যে পুষ্ট বুকের আকার বোঝা যায় সুজাতার বাচ্চা খাওয়ানো মাঝারি স্তন সোয়েটারের আড়ালে হারিয়ে গেছে।
অয়নের ডাকে হুশ ফিরল অনিরূদ্ধের।
---বাবা, বাবা ওই দেখ একটা কি অদ্ভুত পাখি।
সত্যি একটা নাম না জানা বড় লেজ ঝোলা পাখি বসে আছে।কোনো পাহাড়ী পাখি হবে হয়ত।অর্ক দেখতে পেয়ে ঝপাৎ করে ছবি তুলে নিল দু-চারটে।পাখিটা বোধ হয় খেয়াল করতে পারল।ঝপ করে উড়ে গেল।
গাড়ীর ড্রাইভার তামাং রাস্তার ওপাশ থেকে চেঁচিয়ে বলল---ভাই সাহাব, ফুল সিলিং হোকার নিকলায়েঙ্গে।রাস্তেপে ফরেস্ট পড়েঙ্গে।বহুত বার্ড মিলেগা।
নেপালি ড্রাইভাররা ইংরেজিতে অনেক কথা বলতে পারে।তামাংও সেরকম।
বলতে বলতেই সুজাতা আর মলি এগিয়ে এলো।অর্ক বলল---চলো চা খাওয়া যাক।
রাস্তা ক্রস করে চায়ের দোকানে ঢুকল সবাই।সামনে দু-তিনজন ট্রাক ড্রাইভার বসে গল্প করছে।একটি নেপালি মেয়ে চা সার্ভ করছে।
অর্ককে দেখে একটি পাঞ্জাবি ট্রাক ড্রাইভার পরিষ্কার অথচ হিন্দি টানে বাংলায় বলল--কি বাঙালি বাবু? কেমোন লাগছে ইস পাহাড়ী জায়গা?
অর্ক হেসে বলল--ভালো।আপনি এখানে সর্দারজী?
ট্রাক ড্রাইভারটি বলল--আজ রাতে ভুটান যাবো।ওপাশে কাঠ যাবে।
অনিরুদ্ধ বলল--তুমি তো দেখছি অর্ক এখানে অনেক লোকের সাথে ভাব জমিয়েছ।
---কে? এই সর্দার? শালা ভারী পাজি লোক।আমাদের পাশের কর্টেজে উঠেছে।কোথা থেকে মেয়েছেলে ধরে আনে।আর রাতে উল্লাস চলে।
---ট্রাক ড্রাইভাররা এরকমই।
---আরে অনি দা।এই লোকটা শালা খতরনাক লোক।এ অঞ্চলে বেশ লোকেদের সাথে খাতির আছে।কি বিচ্ছিরি লোক বাঞ্চোদ শালা...বয়স ষাটের ওপর।এখনো কি সাংঘাতিক লিবিডো।
অর্কের ভদ্র সভ্য মুখে রাগ আর গালাগালি শুনে হেসে উঠল অনিরুদ্ধ।বলল---পাঞ্জাবিদের লিবিডো বেশি বুঝলে।
কথাটা বলেই অনিরুদ্ধ খাটিয়াতে বসা সর্দারের দিকে তাকালো।একদৃষ্টে লোকটা মলির দিকে তাকিয়ে আছে।লোকটার মাথায় গেরুয়া রঙা পাগড়ী।গায়ে পাঠানি ফুলহাতা কুর্তা।তামাটে বর্ণের, মুখে সাদা দাড়ি গোঁফ।সুঠাম ছ ফুট চার-পাঁচ লম্বা হবে।ষাট বাষট্টি বয়সেও পেশীবহুল চেহারা।হাতে বালা।চওড়া কাঁধ।
মলিকে যেন পা থেকে মাথা পর্য্ন্ত জরিপ করছে সর্দার।আসলে মলির আকর্ষণীয়তার কাছে ভদ্র সভ্য অনিরুদ্ধ হোক কিংবা ট্রাক ড্রাইভার সর্দার সকলকেই দুর্বল হতে হয়।অনিরুদ্ধ গাড়িতে বসাবার সময় দেখেছে বাইশ তেইশ বছরের নিরীহ ড্রাইভার তামাংও মলির দিকে ফিরে ফিরে তাকায়।মনে মনে অনি ভাবল অর্কের হেব্বি চাপ।এমন সুন্দরী বউ থাকলে চাপ তো নিতেই হবে।
মলির ডাকেই চমকে গেল অনিরুদ্ধ।
---অনি দা, চা রেডি।
অনিরুদ্ধ এগিয়ে গেল।অর্ক তখন অয়নকে ক্যামেরার কাজকর্ম বোঝাচ্ছে।
********
আজ আবার মেঘলা।সকলের জন্য ফ্লাস্ক ভরে চামেলিজি চা দিয়ে গেল।সকলে হই হই করে পাইনের জঙ্গল ধরে উঁচুর দিকে উঠতে লাগল।অর্কর চেহারা পেটানো, উঠতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।সুজাতার ছিপছিপে চেহারায় তো অসুবিধে হবার কথা নয়।অর্কর হাত ধরে অয়নও লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে।সুজাতা মাঝে মধ্যে অয়নকে সাবধান করে দিচ্ছে।সকলে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।কেবল অনিরুদ্ধ পিছিয়ে পড়ছে।
সুজাতা প্রায়ই বলে একটুতো জগিং করতে পারো।ভীষন কিছু ভুঁড়ি যে অনিরূদ্ধের তা নয়।তবু দেহের ভার বিয়াল্লিশ বছর বয়সে বেড়েছে বৈকি, কমেনি।তারওপর সিগারেটের প্রভাব তো আছেই।
মলি দাঁড়িয়ে পড়ে বলল---অনি দা, পিছিয়ে পড়লেন যে।
মলির মধ্যে যে চার্ম আছে তাতে অনিরুদ্ধকে যেন শক্তি জোগালো।মলির কাছে হেলাফেলা হওয়া যাবে না মিঃ অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী।কানের কাছে যেন কে বলল।
পাশাপাশি হাঁটছে মলি আর অনি।মলির গা থেকে একটা সুন্দর পারফিউমের গন্ধ আসছে।মলি আজ জিন্স আর কুর্তার ওপর ফুলস্লিপ জ্যাকেট পরেছে।পায়ে কেটস।মাথায় কান ঢাকা টুপি।
মলি বলল---অনি দা, এটা কি ফুল বলুন তো?
সুন্দর গোলাপি ছোট ছোট ফুল।একপাশে খাদের দিকে নেবে গেছে।
---নেবে?
--- না থাক।
অনিরুদ্ধ আলতো করে নেবে গেল।ডাঁটি সহ কয়েকগোছা ফুল তুলে আনলো।
---এই রে! অনি দা সাবধান।
কোনো রকমে উঠল অনিরুদ্ধ।পড়তে পড়তে বেঁচে গেছে।সামান্য হাত ছিঁড়েছে।রক্ত চুঁইয়ে যাচ্ছে।
---ইস! ফার্স্টএ্যাড বক্স নেওয়া উচিত ছিল।
---আরে না, থাক।
---না চলুন।আমরা নিচে যাই।
কার্যত জোর করে মলি অনিরুদ্ধকে নিচে নিয়ে গেল।
মলিদের কর্টেজটার পাশাপাশি আরেকটা কর্টেজ।সেদিনের সেই সর্দার ট্রাক ড্রাইভার বসে আছে।
ট্রাক ড্রাইভারটি মলিকে দেখেই বলল--ভাবিজি ঠান্ড কেমন আছে?
মলি মৃদু হেসে বলল--আপনি নিজেও তো বুঝতে পারছেন।
ষাটোর্ধ পারভার্ট শিখ ট্রাক ড্রাইভারটা বলে উঠল--আ যাইয়ে না।দোন মিলকে গর্মি উতরায়েঙ্গে।
সর্দারের অশ্লিল কথায় অনিরূদ্ধের মেজাজ খিচড়ে গেল।বলল---সর্দার ভাবিজি আপকা বেটিকি উমর কা হ্যায়।গর্মি নিকালনা হ্যায় তো আপনে বেটিকো বুলালাইয়ে।
লো-ক্লাস সর্দার তখনও নোংরা ভাবে বলল---অব বেটি তো হ্যায় হি নেহি।ইস লিয়ে ভাবিজিকো বেটি বানালেতে হ্যায়।
অনিরুদ্ধ ক্ষেপে গেল।মলি বলল---থাক না অনি দা।লো ক্লাস একটা ট্রাক ড্রাইভারের সাথে তর্ক করো কেন?
ট্রাক ড্রাইভার বোধ হয় মলির কথা শুনতে পেল না।বাংলায় বলল--বাঙালি বাবু গোস্বা করছেন কেন? তামাশা করছি ইয়ার।
মলিদের কর্টেজের ভেতর ঢুকতে মলি বলল--বসুন।
ওদের বেডে বসল অনিরুদ্ধ।বিছানার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল এই বেডেই হয়তো কাল রাতে মলি আর অর্ক মিলিত হয়েছে।কল্পনায় মলিকে নগ্ন করে ফেলল অনিরুদ্ধ।মনে মনে ভাবল ইস তার মত ভদ্র লোক আর ওই সর্দার ট্রাক ড্রাইভারের কোনো পার্থক্য নেই।দুজনেই পারভার্ট।
মলি ততক্ষনে তুলোতে ওষুধ লাগিয়ে ক্ষতস্থানে প্রলেপ দিতে শুরু করেছে।অনিরুদ্ধ মলির অনেক কাছে।স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মলির গায়ের জ্যাকেটের চেন বুকের কাছে অনেকটা নেমে এসেছে।বুকের কাছে সালোয়ারের কাটা অংশে স্তনবিভাজিকা স্পষ্ট।পুষ্ট স্তনের ওপর ছোট্ট লকেটটায় 'A' লেখা।কিছুক্ষনের জন্য অনিরূদ্ধের মনে হচ্ছিল ওটা তার নামের প্রথম অক্ষর।যদিও ওটা যে অর্কের সৌজন্যে ভালবাসার প্রতীক তা বিলক্ষণ জানে অনি।
---কি হল তোমরা এতক্ষণ কোথায় ছিলে? সুজাতা জিজ্ঞেস করল।
অনিরুদ্ধ কিছু বলবার আগেই মলি বলল--দেখো না সুজাতা দি অনি দা আমার জন্য ফুল তুলতে গিয়ে কি অবস্থা হল।
সুজাতা অনিরূদ্ধের ব্যান্ডেড লাগানো অংশের দিকে তাকিয়ে বলল--- একি! কি করে?
---আরে অমন কিছু না।সামান্য।
অর্ক হেসে ঠাট্টা করে বলল---সুজাতা দি, দেখছেন আপনার অনিরুদ্ধ বাবু কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছেন।
অনিরূদ্ধ হেসে বলল---তোমার সুন্দরী বউয়ের সাথে প্রেম করতে গেলে তোমার পারমিশন নিতে হবে দেখছি।
---সে নাহলেও চলবে।মলির অনুমতি হলেই চলবে।
সকলের রসিকতা চলতে থাকল।সুজাতা অবশ্য এসব মাথায় নেয়না অনিরুদ্ধ জানে।তবু তার মনে হচ্ছিল ইস সুজাতাকে লুকিয়ে সত্যিই সে মলির প্রেমে পড়ে গেছে।
ওরা যখন ফিরল দুপুর তিনটে।অয়ন আর অর্ক ফুটবল টা নিয়ে বেদম খেলছে।সুজাতা খাবার টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।মলি হেল্প করছে।
সর্দার এসে পৌঁছল।এই শীতেও খালি গা।তামাটে বুকে সাদা কাঁচাপাকা চুল।লম্বা মজবুত সাড়ে ছ ফিটের এই পাঞ্জাবি লোকটাকে দেখলে দৈত্যও বলা চলে।ট্রাক চালিয়ে চালিয়ে হাতের পাঞ্জাগুলোও বিশাল।ইচ্ছে করেই যেন সর্দার খালি গা।যেন সে তার পেশী প্রদর্শন করছে।
মলির দিকে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সর্দার বলল---বাঙালি বাবুরা কিতনা দিন থাকবেন।অর্ক তার দিকে না তাকিয়েই বলল--সর্দার তুমি কদ্দিন আছো?
---আমি কাঠ লোড-আনলোড হবে যদ্দিন।সে এক মাহিনা ধরো।
---তারপর কি সোজা পাঞ্জাব?
---না, কলকাত্তা।ওখানে আমার থাকবার জায়গা আছে।
----ও আপনি তাহলে বাঙালি পাঞ্জাবি?
---সে বোলতে পারেন।
---কয় ছেলে-মেয়ে আপনার?
---শাদি করেছিলাম।বিবি বাঁজ ছিল।এখন পাঞ্জাবে থাকে।নির্দ্ধিধায় বলল সর্দার।
---ও তাই বুঝি আপনার রাত রঙিন হয়?অর্কও পাল্টা জিজ্ঞেস করল।
সর্দার একবার মলি আর সুজাতার তার থেকে দূরত্ব মেপে নিল চোখ দিয়ে।তারপর বলল----নেপালি রেন্ডি চুদে কি মজা আছে?
অনিরুদ্ধ মনে মনে ভাবল এই লোকটার সাথে অর্কের এত কথা বলার কি দরকার আছে।অর্ক সেদিনতো এই সর্দার সম্পর্কে বাজে কথা বলেছিল।
সর্দার চলে যেতে অর্ককে অনিরুদ্ধ বলল---এই ড্রাইভারটার সাথে এত কথা বলো কেন?
অর্ক হেসে বলল--লোকটা ভারী মজার বুঝলে অনি দা।এ বয়সে প্রচন্ড লিবিডো।কোত্থেকে নেপালি মেয়ে নিয়ে আসে।।ওই তামাং ওর কাছে শুনলাম ও নাকি এখানকার নেপালি মজদুর মেয়েগুলোকে পয়সা দিয়ে পটিয়েপাটিয়ে ভোগ করে।ওই ড্রাইভার মহলে নাকি চ্যালেঞ্জ হয়েছে একটা টুরিস্ট মহিলাকে নাকি পটাতে হবে।বেচারা ট্রাক ড্রাইভার এখন আদাজল খেয়ে লেগে পড়েছে।
অনিরুদ্ধ মনে মনে ভাবল তবে কি মলিই সর্দারের সেই টার্গেট! অর্ক কি বোঝে না।সর্দার কিভাবে খারাপ ইঙ্গিত করে মলিকে দেখে।
(চলবে)
---------------
আজ পাহাড়ে রোদ ঝলমলে সকাল।বন বাংলোর বারান্দার সামনে রোদ এসে পড়ছে।অনিরুদ্ধ চায়ের কাপ নিয়ে বসে আছে।অয়ন ফুটবলে লাথি মেরে ছুঁড়ে দিল বলটা, সোজা গিয়ে ঢুকল পাইন গাছের জঙ্গলে।
সুজাতা স্নান করে বেরোল।রোদে তোয়ালেটা মেলে দিয়ে বলল---তুমি স্নান করবে না?
---এত ঠান্ডায় স্নান? মাথা খারাপ নাকি।অক্টোবরের এই সিজনে কালিম্পঙে টেম্পারেচার চার-পাঁচ ডিগ্রির আসেপাশে ঘোরে।তার ওপরে এই তিনদিনে একদিনও রোদের দেখা মেলেনি।
অয়ন বলটা কুড়িয়ে নিয়ে এসে বলল--মা যাবে না?
সুজাতা বলল--কি গো রেডি হয়ে নাও।ওদিকের পাহাড়ের ধাপে নাকি একটা মনেস্ট্রি আছে।
---তোমরা যাও।আমি বরং পুজো সংখ্যা গুলো বসে বসে পড়ি।
সুজাতা কোনো ব্যাপারে অনিরুদ্ধকে জোর করে না।অয়নকে রেডি করে বেরিয়ে গেল।সুজাতা সাবলম্বী।অনিরুদ্ধ কখনোই মনে করে না সুজাতার সঙ্গে সবসময় থাকার প্রয়োজন আছে।
অনি বই পড়ছিল।সমরেশ মজুমদারের দেশ পত্রিকার উপন্যাসটা এবার আধা পড়া হয়ে রেখে দিয়েছিল ট্রেনে।
দূরে পাহাড়ের তলার দিকে ছোট ছোট হোম স্টে গুলো দেখা যাচ্ছে।ওপাশ থেকে একটা মেঘ ভেসে আসছে।যদিও অনিরুদ্ধরা যেখানে আছে সেটাও বাংলো ফাংলো কিছু না; হোম স্টে।
অনিদের হোম স্টে থেকে সামান্য দূরে আরেকটা হোম স্টে।সেটা একটু নীচের দিকে।সেখান থেকে উঠে আসছে একটি বছর পঁয়ত্রিশ বছরের যুবক।গলায় ক্যামেরা, চেক শার্ট, জিন্স।
দূরে একটা পাখির ছবি ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে কয়েকটা শট মেরে তুলল।
--আপনারা কি কলকাতা থেকে? যুবকটি জিজ্ঞেস করল।মুখে সৌজন্যমূলক হাসি।
---হ্যা।আপনি?
--হ্যা আমরাও।
কয়েকদিন ধরে যুবকটিকে একা একা দেখছিল অনিরুদ্ধ।তাই ভেবেছিল নির্ঘাৎ একা।ফটোগ্রাফী-টাফি করে বোধ হয়।
--আসুন বসুন।চেয়ারটা টেনে দিল অনিরুদ্ধ।
যুবকটি বসে বলল---কদ্দিনের জন্য?
---যাতায়াতের দিন বাদ দিলে পনেরো দিন।তিনদিন কেটে গেছে।বাকি আর বারো দিন।বলেই অনিরুদ্ধ বলল--চা খাবেন?
---আছে? নাকি চামেলিজী কে বলতে হবে?
চামেলি শেরপা এই কাঠবাড়ি হোম স্টেগুলোর মালিক।বয়স্ক নেপালি মহিলা।ভারী কেয়ারেবল।
অনিরুদ্ধ বলল--না না।ফ্লাস্কে আছে।
দু'কাপ চা আনল অনিরুদ্ধ।বলল--আপনার সঙ্গে আর কে কে আছেন?
---আমার স্ত্রী মলি।
--ও আচ্ছা।আমি প্রথমে ভেবেছি আপনি বোধ হয় ব্যাচেলার।
হা হা হা করে হেসে উঠল যুবকটি বলল--সে সৌভাগ্য পাঁচ বছর আগে পেরিয়ে এসেছি।
---সৌভাগ্য বলছেন।আপনি আমার চেয়ে বয়সে ছোটই হবেন।মাত্র পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনেই টায়ার্ড? আর আমার ছেলেই এখন বারোতে পা দিল।
---ও, আপনার নাম..
---আমি অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী।এসবিআই, পিও।আপনি?
---আমি অর্ক সান্যাল।আইটিতে আছি।সল্টলেক বাড়ী।আমার স্ত্রীও আইটিতে।
--ও আচ্ছা।চাকুরিজীবি দম্পতি।সে অর্থে আমার স্ত্রীও।প্রাথমিক শিক্ষিকা।
--আচ্ছা।কি সিমিলারিটিজ।আপনাদের ঠিক কলকাতার কোন জায়গায় বাড়ী?
---শেক্সপিয়ার সরনী।আমাদের কলকাতা শহরের পুরোনো বাড়ী।অনিরুদ্ধ সিগারেটের বাক্স থেকে সিগারেট বের করল--চলে?
---না থ্যাংক্স।
---আমি কিন্তু জানি আইটি ইঞ্জিনিয়াররা সাংঘাতিক স্মোকার হয়।
---ওঃ তাই।তবে আমি ব্যতিক্রম।তবে এই ঠান্ডায় ওটা কিন্তু চলে।বলেই হাসল অর্ক।
অনি নিজেও অফিস পার্টি থাকলে একটু আধটু খায়।এরকম ঠান্ডায় একটু খেলে সুজাতা নিশ্চই বাধা দেবে না।
---ওকে আমি আপনাকে তবে অনিরুদ্ধ দা বলতে পারি।
অনিরুদ্ধ ধোঁয়া ছেড়ে বলল--আপনার এজ কত?
---থার্টি সেভেন।
---ও আপনি আমার ওয়াইফের বয়সী।আমি ফর্টি টু।
সেদিনের পরিচয়ের পর অর্কদের সাথে অনিরুদ্ধদের জমে গেল।সুজাতা আর মলিরও খুব ভাব হল।তাদের মেয়েলি আড্ডার মাঝে অনি আর অর্কও প্রাণ খুলে আড্ডা দিতে পারত।
--------
ভোর বেলা গাড়ী করে ভুটানের দিকে রওনা হল অনিরুদ্ধ অর্করা।
ড্রাইভারের পাশে বসল অনিরুদ্ধ।পরের সিটে অর্ক আর অয়ন।শেষ সিটে সুজাতা আর মলি।
ভুটানের পার্বত্য অরণ্য যেন আরো সুন্দর হয়ে রয়েছে।বেশ ঠান্ডায় জমে যাবার মত অবস্থা।ঘন ঘন চা খাচ্ছে অনি।সুজাতা আর মলি অয়নকে নিয়ে দূরের বৌদ্ধগুম্ফাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।অর্ক ছবি তুলতে ব্যস্ত।
অর্কের স্ত্রী মলির দিক থেকে চোখ ফেরানো যায়না।অনিরুদ্ধ মাঝে মধ্যে না চাইলেও দেখে ফেলে।কথায় আছে পরস্ত্রী সবসময়ে সুন্দরী।অবশ্য তা নয়।মলি সত্যিই সুন্দরী।মলি একটা হলদে সালোয়ার পরেছে।তার ওপর লম্বা ওভার কোট।বয়স খুব বেশি হলে সাতাশ আঠাশ হবে।গায়ের রঙ সুজাতার মত ফর্সা নয়।বরং শ্যামলার দিকে।টানা টানা চোখ।উচ্চতা পাঁচ ফুট চার হবে।বাঙালি মেয়ে হিসেবে লম্বা বলা চলে।অর্কও লম্বা।মানিয়েছে দুজনকে।মলির টানটান শিথিলতা হীন চেহারা, উদ্ধত বুক যেকোনো পুরুষকে আকর্ষন করবেই।
সেক্ষেত্রে সুজাতা যেন কেমন মলিন।মলির সাথে সুজাতার কোনো তুলনা চলে না।সুজাতার গায়ের রঙ তীব্র ফর্সা হলেও।কেমন যেন স্যাঁতস্যাঁতে।ছোটখাটো চেহারা।অনির মাঝারি উচ্চতার পাশেও সুজাতাকে ছোট দেখায়।ছিপছিপে শুটকির মত রোগাটে ধরনের।সুজাতার স্তনে শিথিলতা এসছে।অর্ককে আড়াই বছর পর্য্ন্ত ব্রেস্ট ফিড করিয়েছে।মলির মত পুষ্ট বা বড় নয়।বরং মাঝারি ধরনের। লাস্যময়ী মলির পাশে এক বাচ্চার মা দিদিমনিসুলভ চশমা চোখা ফ্যাকাসে ফর্সা সুজাতা কোনো দিন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারবে না।
সুজাতার পরণে ঘিয়ে রঙের শাড়ি, আর উলের কালো সোয়েটার।মলির ওভার কোটের উপর দিয়ে যে পুষ্ট বুকের আকার বোঝা যায় সুজাতার বাচ্চা খাওয়ানো মাঝারি স্তন সোয়েটারের আড়ালে হারিয়ে গেছে।
অয়নের ডাকে হুশ ফিরল অনিরূদ্ধের।
---বাবা, বাবা ওই দেখ একটা কি অদ্ভুত পাখি।
সত্যি একটা নাম না জানা বড় লেজ ঝোলা পাখি বসে আছে।কোনো পাহাড়ী পাখি হবে হয়ত।অর্ক দেখতে পেয়ে ঝপাৎ করে ছবি তুলে নিল দু-চারটে।পাখিটা বোধ হয় খেয়াল করতে পারল।ঝপ করে উড়ে গেল।
গাড়ীর ড্রাইভার তামাং রাস্তার ওপাশ থেকে চেঁচিয়ে বলল---ভাই সাহাব, ফুল সিলিং হোকার নিকলায়েঙ্গে।রাস্তেপে ফরেস্ট পড়েঙ্গে।বহুত বার্ড মিলেগা।
নেপালি ড্রাইভাররা ইংরেজিতে অনেক কথা বলতে পারে।তামাংও সেরকম।
বলতে বলতেই সুজাতা আর মলি এগিয়ে এলো।অর্ক বলল---চলো চা খাওয়া যাক।
রাস্তা ক্রস করে চায়ের দোকানে ঢুকল সবাই।সামনে দু-তিনজন ট্রাক ড্রাইভার বসে গল্প করছে।একটি নেপালি মেয়ে চা সার্ভ করছে।
অর্ককে দেখে একটি পাঞ্জাবি ট্রাক ড্রাইভার পরিষ্কার অথচ হিন্দি টানে বাংলায় বলল--কি বাঙালি বাবু? কেমোন লাগছে ইস পাহাড়ী জায়গা?
অর্ক হেসে বলল--ভালো।আপনি এখানে সর্দারজী?
ট্রাক ড্রাইভারটি বলল--আজ রাতে ভুটান যাবো।ওপাশে কাঠ যাবে।
অনিরুদ্ধ বলল--তুমি তো দেখছি অর্ক এখানে অনেক লোকের সাথে ভাব জমিয়েছ।
---কে? এই সর্দার? শালা ভারী পাজি লোক।আমাদের পাশের কর্টেজে উঠেছে।কোথা থেকে মেয়েছেলে ধরে আনে।আর রাতে উল্লাস চলে।
---ট্রাক ড্রাইভাররা এরকমই।
---আরে অনি দা।এই লোকটা শালা খতরনাক লোক।এ অঞ্চলে বেশ লোকেদের সাথে খাতির আছে।কি বিচ্ছিরি লোক বাঞ্চোদ শালা...বয়স ষাটের ওপর।এখনো কি সাংঘাতিক লিবিডো।
অর্কের ভদ্র সভ্য মুখে রাগ আর গালাগালি শুনে হেসে উঠল অনিরুদ্ধ।বলল---পাঞ্জাবিদের লিবিডো বেশি বুঝলে।
কথাটা বলেই অনিরুদ্ধ খাটিয়াতে বসা সর্দারের দিকে তাকালো।একদৃষ্টে লোকটা মলির দিকে তাকিয়ে আছে।লোকটার মাথায় গেরুয়া রঙা পাগড়ী।গায়ে পাঠানি ফুলহাতা কুর্তা।তামাটে বর্ণের, মুখে সাদা দাড়ি গোঁফ।সুঠাম ছ ফুট চার-পাঁচ লম্বা হবে।ষাট বাষট্টি বয়সেও পেশীবহুল চেহারা।হাতে বালা।চওড়া কাঁধ।
মলিকে যেন পা থেকে মাথা পর্য্ন্ত জরিপ করছে সর্দার।আসলে মলির আকর্ষণীয়তার কাছে ভদ্র সভ্য অনিরুদ্ধ হোক কিংবা ট্রাক ড্রাইভার সর্দার সকলকেই দুর্বল হতে হয়।অনিরুদ্ধ গাড়িতে বসাবার সময় দেখেছে বাইশ তেইশ বছরের নিরীহ ড্রাইভার তামাংও মলির দিকে ফিরে ফিরে তাকায়।মনে মনে অনি ভাবল অর্কের হেব্বি চাপ।এমন সুন্দরী বউ থাকলে চাপ তো নিতেই হবে।
মলির ডাকেই চমকে গেল অনিরুদ্ধ।
---অনি দা, চা রেডি।
অনিরুদ্ধ এগিয়ে গেল।অর্ক তখন অয়নকে ক্যামেরার কাজকর্ম বোঝাচ্ছে।
********
আজ আবার মেঘলা।সকলের জন্য ফ্লাস্ক ভরে চামেলিজি চা দিয়ে গেল।সকলে হই হই করে পাইনের জঙ্গল ধরে উঁচুর দিকে উঠতে লাগল।অর্কর চেহারা পেটানো, উঠতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।সুজাতার ছিপছিপে চেহারায় তো অসুবিধে হবার কথা নয়।অর্কর হাত ধরে অয়নও লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে।সুজাতা মাঝে মধ্যে অয়নকে সাবধান করে দিচ্ছে।সকলে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।কেবল অনিরুদ্ধ পিছিয়ে পড়ছে।
সুজাতা প্রায়ই বলে একটুতো জগিং করতে পারো।ভীষন কিছু ভুঁড়ি যে অনিরূদ্ধের তা নয়।তবু দেহের ভার বিয়াল্লিশ বছর বয়সে বেড়েছে বৈকি, কমেনি।তারওপর সিগারেটের প্রভাব তো আছেই।
মলি দাঁড়িয়ে পড়ে বলল---অনি দা, পিছিয়ে পড়লেন যে।
মলির মধ্যে যে চার্ম আছে তাতে অনিরুদ্ধকে যেন শক্তি জোগালো।মলির কাছে হেলাফেলা হওয়া যাবে না মিঃ অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী।কানের কাছে যেন কে বলল।
পাশাপাশি হাঁটছে মলি আর অনি।মলির গা থেকে একটা সুন্দর পারফিউমের গন্ধ আসছে।মলি আজ জিন্স আর কুর্তার ওপর ফুলস্লিপ জ্যাকেট পরেছে।পায়ে কেটস।মাথায় কান ঢাকা টুপি।
মলি বলল---অনি দা, এটা কি ফুল বলুন তো?
সুন্দর গোলাপি ছোট ছোট ফুল।একপাশে খাদের দিকে নেবে গেছে।
---নেবে?
--- না থাক।
অনিরুদ্ধ আলতো করে নেবে গেল।ডাঁটি সহ কয়েকগোছা ফুল তুলে আনলো।
---এই রে! অনি দা সাবধান।
কোনো রকমে উঠল অনিরুদ্ধ।পড়তে পড়তে বেঁচে গেছে।সামান্য হাত ছিঁড়েছে।রক্ত চুঁইয়ে যাচ্ছে।
---ইস! ফার্স্টএ্যাড বক্স নেওয়া উচিত ছিল।
---আরে না, থাক।
---না চলুন।আমরা নিচে যাই।
কার্যত জোর করে মলি অনিরুদ্ধকে নিচে নিয়ে গেল।
মলিদের কর্টেজটার পাশাপাশি আরেকটা কর্টেজ।সেদিনের সেই সর্দার ট্রাক ড্রাইভার বসে আছে।
ট্রাক ড্রাইভারটি মলিকে দেখেই বলল--ভাবিজি ঠান্ড কেমন আছে?
মলি মৃদু হেসে বলল--আপনি নিজেও তো বুঝতে পারছেন।
ষাটোর্ধ পারভার্ট শিখ ট্রাক ড্রাইভারটা বলে উঠল--আ যাইয়ে না।দোন মিলকে গর্মি উতরায়েঙ্গে।
সর্দারের অশ্লিল কথায় অনিরূদ্ধের মেজাজ খিচড়ে গেল।বলল---সর্দার ভাবিজি আপকা বেটিকি উমর কা হ্যায়।গর্মি নিকালনা হ্যায় তো আপনে বেটিকো বুলালাইয়ে।
লো-ক্লাস সর্দার তখনও নোংরা ভাবে বলল---অব বেটি তো হ্যায় হি নেহি।ইস লিয়ে ভাবিজিকো বেটি বানালেতে হ্যায়।
অনিরুদ্ধ ক্ষেপে গেল।মলি বলল---থাক না অনি দা।লো ক্লাস একটা ট্রাক ড্রাইভারের সাথে তর্ক করো কেন?
ট্রাক ড্রাইভার বোধ হয় মলির কথা শুনতে পেল না।বাংলায় বলল--বাঙালি বাবু গোস্বা করছেন কেন? তামাশা করছি ইয়ার।
মলিদের কর্টেজের ভেতর ঢুকতে মলি বলল--বসুন।
ওদের বেডে বসল অনিরুদ্ধ।বিছানার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল এই বেডেই হয়তো কাল রাতে মলি আর অর্ক মিলিত হয়েছে।কল্পনায় মলিকে নগ্ন করে ফেলল অনিরুদ্ধ।মনে মনে ভাবল ইস তার মত ভদ্র লোক আর ওই সর্দার ট্রাক ড্রাইভারের কোনো পার্থক্য নেই।দুজনেই পারভার্ট।
মলি ততক্ষনে তুলোতে ওষুধ লাগিয়ে ক্ষতস্থানে প্রলেপ দিতে শুরু করেছে।অনিরুদ্ধ মলির অনেক কাছে।স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মলির গায়ের জ্যাকেটের চেন বুকের কাছে অনেকটা নেমে এসেছে।বুকের কাছে সালোয়ারের কাটা অংশে স্তনবিভাজিকা স্পষ্ট।পুষ্ট স্তনের ওপর ছোট্ট লকেটটায় 'A' লেখা।কিছুক্ষনের জন্য অনিরূদ্ধের মনে হচ্ছিল ওটা তার নামের প্রথম অক্ষর।যদিও ওটা যে অর্কের সৌজন্যে ভালবাসার প্রতীক তা বিলক্ষণ জানে অনি।
---কি হল তোমরা এতক্ষণ কোথায় ছিলে? সুজাতা জিজ্ঞেস করল।
অনিরুদ্ধ কিছু বলবার আগেই মলি বলল--দেখো না সুজাতা দি অনি দা আমার জন্য ফুল তুলতে গিয়ে কি অবস্থা হল।
সুজাতা অনিরূদ্ধের ব্যান্ডেড লাগানো অংশের দিকে তাকিয়ে বলল--- একি! কি করে?
---আরে অমন কিছু না।সামান্য।
অর্ক হেসে ঠাট্টা করে বলল---সুজাতা দি, দেখছেন আপনার অনিরুদ্ধ বাবু কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছেন।
অনিরূদ্ধ হেসে বলল---তোমার সুন্দরী বউয়ের সাথে প্রেম করতে গেলে তোমার পারমিশন নিতে হবে দেখছি।
---সে নাহলেও চলবে।মলির অনুমতি হলেই চলবে।
সকলের রসিকতা চলতে থাকল।সুজাতা অবশ্য এসব মাথায় নেয়না অনিরুদ্ধ জানে।তবু তার মনে হচ্ছিল ইস সুজাতাকে লুকিয়ে সত্যিই সে মলির প্রেমে পড়ে গেছে।
ওরা যখন ফিরল দুপুর তিনটে।অয়ন আর অর্ক ফুটবল টা নিয়ে বেদম খেলছে।সুজাতা খাবার টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।মলি হেল্প করছে।
সর্দার এসে পৌঁছল।এই শীতেও খালি গা।তামাটে বুকে সাদা কাঁচাপাকা চুল।লম্বা মজবুত সাড়ে ছ ফিটের এই পাঞ্জাবি লোকটাকে দেখলে দৈত্যও বলা চলে।ট্রাক চালিয়ে চালিয়ে হাতের পাঞ্জাগুলোও বিশাল।ইচ্ছে করেই যেন সর্দার খালি গা।যেন সে তার পেশী প্রদর্শন করছে।
মলির দিকে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সর্দার বলল---বাঙালি বাবুরা কিতনা দিন থাকবেন।অর্ক তার দিকে না তাকিয়েই বলল--সর্দার তুমি কদ্দিন আছো?
---আমি কাঠ লোড-আনলোড হবে যদ্দিন।সে এক মাহিনা ধরো।
---তারপর কি সোজা পাঞ্জাব?
---না, কলকাত্তা।ওখানে আমার থাকবার জায়গা আছে।
----ও আপনি তাহলে বাঙালি পাঞ্জাবি?
---সে বোলতে পারেন।
---কয় ছেলে-মেয়ে আপনার?
---শাদি করেছিলাম।বিবি বাঁজ ছিল।এখন পাঞ্জাবে থাকে।নির্দ্ধিধায় বলল সর্দার।
---ও তাই বুঝি আপনার রাত রঙিন হয়?অর্কও পাল্টা জিজ্ঞেস করল।
সর্দার একবার মলি আর সুজাতার তার থেকে দূরত্ব মেপে নিল চোখ দিয়ে।তারপর বলল----নেপালি রেন্ডি চুদে কি মজা আছে?
অনিরুদ্ধ মনে মনে ভাবল এই লোকটার সাথে অর্কের এত কথা বলার কি দরকার আছে।অর্ক সেদিনতো এই সর্দার সম্পর্কে বাজে কথা বলেছিল।
সর্দার চলে যেতে অর্ককে অনিরুদ্ধ বলল---এই ড্রাইভারটার সাথে এত কথা বলো কেন?
অর্ক হেসে বলল--লোকটা ভারী মজার বুঝলে অনি দা।এ বয়সে প্রচন্ড লিবিডো।কোত্থেকে নেপালি মেয়ে নিয়ে আসে।।ওই তামাং ওর কাছে শুনলাম ও নাকি এখানকার নেপালি মজদুর মেয়েগুলোকে পয়সা দিয়ে পটিয়েপাটিয়ে ভোগ করে।ওই ড্রাইভার মহলে নাকি চ্যালেঞ্জ হয়েছে একটা টুরিস্ট মহিলাকে নাকি পটাতে হবে।বেচারা ট্রাক ড্রাইভার এখন আদাজল খেয়ে লেগে পড়েছে।
অনিরুদ্ধ মনে মনে ভাবল তবে কি মলিই সর্দারের সেই টার্গেট! অর্ক কি বোঝে না।সর্দার কিভাবে খারাপ ইঙ্গিত করে মলিকে দেখে।
(চলবে)