11-01-2019, 08:21 AM
পর্ব আট – বন্দিনীর মুক্তি (#1)
ঠিক পুজোর আগে দানা ঠিক করে, বরুন, সুনিতা বৌদি, রজনী, বুড়ো দুলাল, দেবুর বাবা মা এদের জন্য নতুন জামা কাপড় কিনবে। ফারহান আর কেষ্টকে নিয়ে মধ্য মহানগরে যায় কেনা কাটা করার জন্য। পাল বাগানেও জামা কাপড়ের দোকান আছে, কিন্তু দানার ইচ্ছে সুনিতা বৌদি আর রজনীর জন্য বড় দোকান থেকে শাড়ি কিনবে। চারপাশে লোকে লোকারণ্য, কোথাও একফোঁটা পা ফেলার জায়গা নেই। রাস্তা ঘাটে পন্য বিক্রেতা নিজেদের পসরা মেলে জামা কাপড় বিক্রি করতে বসে পড়েছে। সারা শহর যেন ওই মধ্য মহানগরে জমে গেছে, আবাল বৃদ্ধ বনিতা পথে নেমেছে পুজোর খুশিতে নতুন জামা কাপড় কেনার জন্য। চিৎকার চেঁচামেচিতে কান পাতা দায়, পথে চলতে কখন কার গায়ে হাত পরে যায়, কার সাথে ধাক্কা লাগে সেইদিকে কারুর ভ্রূক্ষেপ নেই।
ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে হটাত এক মহিলাকে পেছন থেকে দেখে দানা থমকে দাঁড়িয়ে পরে। প্রায় চার, পাঁচ মাস আগে দেখা, মহুয়া বাজপাই তার ছোট মেয়ে রুহিকে নিয়ে বাজার করতে বেড়িয়েছে। যদিও ঠোঁটে হাসি মাখা কিন্তু ওর চেহারায় সেই পুরাতন জেল্লা আর নেই। পাতলা চশমার পেছনে নির্মল দুই চোখ, উজ্জ্বলতা হারিয়ে কোঠরাগত, চোখের কোল কালিমা লিপ্ত, চেহারা মনে হল রক্ত শুন্য। শুধু মনে হয় মেয়ের জন্য আজও ঠোঁটে হাসি মাখিয়ে কোন অনির্দিষ্টের দিকে এগিয়ে চলেছে। কাজের মেয়ের কোলে রুহি, মায়ের পাশে পাশে এগিয়ে চলে। কোন দোকানের কোন খেলনা পছন্দ হলেই চেঁচিয়ে আবদার করে। মহুয়া মৃদু বকুনি দেয়, বাড়িতে অনেক খেলনা আছে। ওই দৃশ্য দেখে দানা দাঁড়িয়ে পরে, চারপাশে হটাত করে শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে আসে। একবার ভাবে কাছে এগিয়ে যাবে, জিজ্ঞেস করবে কেমন আছে। কিন্তু মহুয়া কি ওকে চিনবে, হয়ত না চেনার ভান করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে। বেশ্যা বৃত্তি পেশায় এটাই নিয়ম, যার সাথে একাকী কোন হোটেলের কামরায় সহবাস করেছ, জন সমক্ষে দেখা হলে সেই মানুষ পরিচয় দিতে চায় না। দানাকে ওই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহান আর কেষ্ট প্রশ্ন করে, কিন্তু দানা ম্লান হেসে ওদের প্রশ্ন এড়িয়ে যায়।
হটাত মহুয়া কিছু দেখার জন্য পেছনে তাকাতেই দানার সাথে চোখাচুখি হয়ে যায়। মহুয়ার চোখের তারা দানার চেহারার ওপরে আটকে যায়, বহু পরে ফ্যাকাসে ঠোঁটে এক ম্লান হাসি ফুটে ওঠে। দানার বুক খুশিতে ভরে যায়। তাহলে মহুয়া ওকে চিনতে পেরেছে। দানা ভিড় ঠেলে মহুয়ার দিকে এগিয়ে যেতেই, মহুয়া আঙ্গুলের ইশারায় ওকে কাছে আসতে মানা করে দেয়। ইশারায় জানায় যে রাতের বেলা ফোন করবে। দানা ইতিমধ্যে নিজের ফোন নাম্বার বদলে নিয়েছে তাই মহুয়ার ফোনে একটা মেসেজ লিখে পাঠিয়ে নিজের নাম্বার দিয়ে দেয়।
মহুয়ার সাথে দেখা হওয়ার আগেই অবশ্য রজনী আর সুনিতা বৌদির জন্য শাড়ি কেনা হয়ে গেছিল। তাই মহুয়ার সাথে দেখা হওয়ার পরে দানার ওই ভিড়ের মধ্যে থাকতে আর ইচ্ছে করেনা। নিজের গুমটিতে ফিরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে মহুয়ার ফোনের অপেক্ষা করে। এক মিনিট যেন অনন্ত কাল বলে মনে হয় ওর কাছে, ঠিক এইরকম মনে হত, যখন দানা ইন্দ্রাণীর জন্য ওর দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে অপেক্ষা করত। এগারোটা বেজে গেল, বারোটা বেজে গেল, এমনকি একটা বেজে গেল কিন্তু দানার চোখে ঘুম নেই। বারেবারে ফোন দেখে, আর বিছানার ওপরে এপাশ ওপাশ করে। ঘণ্টা আর মিনিটের মাঝে যে দুই দাগ ফুটকি মনে হয় সেদিন যেন খুব আস্তে আস্তে চলছে। ঠিক আড়াইটে নাগাদ ওর ফোন বেজে ওঠে।
বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দানা ফোন তুলে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছেন আপনি?”
মহুয়া ম্লান হেসে ওকে প্রশ্ন করে, “আমি আর কেমন থাকতে পারি মিস্টার দানা। আপনি বলুন আপনি কেমন আছেন? আপনার কাজ কর্ম কেমন চলছে...” শেষের বাক্য মনে যেন একটু ঠেস দিয়ে বলা।
কথাটা দানার বুকে বড় বেজে ওঠে, যদিও মহুয়া ওকে ধিক্কার দিয়ে বলেনি তাও ওই ব্যাথা গিলে নিয়ে দানা বলে, “না ম্যাডাম আমি ওই কাজ ছেড়ে দিয়েছি।”
মহুয়া ওকে বলে, “হ্যাঁ ভালো করেছেন। এই পেশা আপনার মতন লোকের সাজে না। কি করে আপনি জড়িয়ে পরলেন সেটাই ভাবি। যাই হোক আজকাল তাহলে কি করছেন আপনি?”
দানা হেসে উত্তর দেয়, “আমাদের মতন মানুষের কাজ খোঁজা একটা বড় কাজ ম্যাডাম। আপনি কেমন আছেন সেটা বলেন। রুহিকে দেখলাম ভারী মিষ্টি হয়েছে দেখতে।”
ঠিক পুজোর আগে দানা ঠিক করে, বরুন, সুনিতা বৌদি, রজনী, বুড়ো দুলাল, দেবুর বাবা মা এদের জন্য নতুন জামা কাপড় কিনবে। ফারহান আর কেষ্টকে নিয়ে মধ্য মহানগরে যায় কেনা কাটা করার জন্য। পাল বাগানেও জামা কাপড়ের দোকান আছে, কিন্তু দানার ইচ্ছে সুনিতা বৌদি আর রজনীর জন্য বড় দোকান থেকে শাড়ি কিনবে। চারপাশে লোকে লোকারণ্য, কোথাও একফোঁটা পা ফেলার জায়গা নেই। রাস্তা ঘাটে পন্য বিক্রেতা নিজেদের পসরা মেলে জামা কাপড় বিক্রি করতে বসে পড়েছে। সারা শহর যেন ওই মধ্য মহানগরে জমে গেছে, আবাল বৃদ্ধ বনিতা পথে নেমেছে পুজোর খুশিতে নতুন জামা কাপড় কেনার জন্য। চিৎকার চেঁচামেচিতে কান পাতা দায়, পথে চলতে কখন কার গায়ে হাত পরে যায়, কার সাথে ধাক্কা লাগে সেইদিকে কারুর ভ্রূক্ষেপ নেই।
ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে হটাত এক মহিলাকে পেছন থেকে দেখে দানা থমকে দাঁড়িয়ে পরে। প্রায় চার, পাঁচ মাস আগে দেখা, মহুয়া বাজপাই তার ছোট মেয়ে রুহিকে নিয়ে বাজার করতে বেড়িয়েছে। যদিও ঠোঁটে হাসি মাখা কিন্তু ওর চেহারায় সেই পুরাতন জেল্লা আর নেই। পাতলা চশমার পেছনে নির্মল দুই চোখ, উজ্জ্বলতা হারিয়ে কোঠরাগত, চোখের কোল কালিমা লিপ্ত, চেহারা মনে হল রক্ত শুন্য। শুধু মনে হয় মেয়ের জন্য আজও ঠোঁটে হাসি মাখিয়ে কোন অনির্দিষ্টের দিকে এগিয়ে চলেছে। কাজের মেয়ের কোলে রুহি, মায়ের পাশে পাশে এগিয়ে চলে। কোন দোকানের কোন খেলনা পছন্দ হলেই চেঁচিয়ে আবদার করে। মহুয়া মৃদু বকুনি দেয়, বাড়িতে অনেক খেলনা আছে। ওই দৃশ্য দেখে দানা দাঁড়িয়ে পরে, চারপাশে হটাত করে শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে আসে। একবার ভাবে কাছে এগিয়ে যাবে, জিজ্ঞেস করবে কেমন আছে। কিন্তু মহুয়া কি ওকে চিনবে, হয়ত না চেনার ভান করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে। বেশ্যা বৃত্তি পেশায় এটাই নিয়ম, যার সাথে একাকী কোন হোটেলের কামরায় সহবাস করেছ, জন সমক্ষে দেখা হলে সেই মানুষ পরিচয় দিতে চায় না। দানাকে ওই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহান আর কেষ্ট প্রশ্ন করে, কিন্তু দানা ম্লান হেসে ওদের প্রশ্ন এড়িয়ে যায়।
হটাত মহুয়া কিছু দেখার জন্য পেছনে তাকাতেই দানার সাথে চোখাচুখি হয়ে যায়। মহুয়ার চোখের তারা দানার চেহারার ওপরে আটকে যায়, বহু পরে ফ্যাকাসে ঠোঁটে এক ম্লান হাসি ফুটে ওঠে। দানার বুক খুশিতে ভরে যায়। তাহলে মহুয়া ওকে চিনতে পেরেছে। দানা ভিড় ঠেলে মহুয়ার দিকে এগিয়ে যেতেই, মহুয়া আঙ্গুলের ইশারায় ওকে কাছে আসতে মানা করে দেয়। ইশারায় জানায় যে রাতের বেলা ফোন করবে। দানা ইতিমধ্যে নিজের ফোন নাম্বার বদলে নিয়েছে তাই মহুয়ার ফোনে একটা মেসেজ লিখে পাঠিয়ে নিজের নাম্বার দিয়ে দেয়।
মহুয়ার সাথে দেখা হওয়ার আগেই অবশ্য রজনী আর সুনিতা বৌদির জন্য শাড়ি কেনা হয়ে গেছিল। তাই মহুয়ার সাথে দেখা হওয়ার পরে দানার ওই ভিড়ের মধ্যে থাকতে আর ইচ্ছে করেনা। নিজের গুমটিতে ফিরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে মহুয়ার ফোনের অপেক্ষা করে। এক মিনিট যেন অনন্ত কাল বলে মনে হয় ওর কাছে, ঠিক এইরকম মনে হত, যখন দানা ইন্দ্রাণীর জন্য ওর দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে অপেক্ষা করত। এগারোটা বেজে গেল, বারোটা বেজে গেল, এমনকি একটা বেজে গেল কিন্তু দানার চোখে ঘুম নেই। বারেবারে ফোন দেখে, আর বিছানার ওপরে এপাশ ওপাশ করে। ঘণ্টা আর মিনিটের মাঝে যে দুই দাগ ফুটকি মনে হয় সেদিন যেন খুব আস্তে আস্তে চলছে। ঠিক আড়াইটে নাগাদ ওর ফোন বেজে ওঠে।
বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দানা ফোন তুলে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছেন আপনি?”
মহুয়া ম্লান হেসে ওকে প্রশ্ন করে, “আমি আর কেমন থাকতে পারি মিস্টার দানা। আপনি বলুন আপনি কেমন আছেন? আপনার কাজ কর্ম কেমন চলছে...” শেষের বাক্য মনে যেন একটু ঠেস দিয়ে বলা।
কথাটা দানার বুকে বড় বেজে ওঠে, যদিও মহুয়া ওকে ধিক্কার দিয়ে বলেনি তাও ওই ব্যাথা গিলে নিয়ে দানা বলে, “না ম্যাডাম আমি ওই কাজ ছেড়ে দিয়েছি।”
মহুয়া ওকে বলে, “হ্যাঁ ভালো করেছেন। এই পেশা আপনার মতন লোকের সাজে না। কি করে আপনি জড়িয়ে পরলেন সেটাই ভাবি। যাই হোক আজকাল তাহলে কি করছেন আপনি?”
দানা হেসে উত্তর দেয়, “আমাদের মতন মানুষের কাজ খোঁজা একটা বড় কাজ ম্যাডাম। আপনি কেমন আছেন সেটা বলেন। রুহিকে দেখলাম ভারী মিষ্টি হয়েছে দেখতে।”