Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 3.2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery প্রতিশোধ (সমাপ্ত) by Chotipriyo
#14
৩। রহস্য ও সমাধান
গ।


শেষ ২-৩ দিন ধরে মাকে একটু অন্যমনস্ক মনে হচ্ছিল। আমিও সেভাবে বাড়ির বাইরে বেরইনি। সাহেবদা যদিও অভিকে পাঠিয়েছিল আমায় ডাকতে, তাও মায়ের নিষেধের জন্য আমি বাইরে বেরয়নি। ড্রয়িং রুমে টিভিটা খুলে বসেছিলাম। পুজোর সময় টিভি দেখাটাও প্রচণ্ড বিরক্তিকর। যেন কোন কাজ নেই বলে রিমোটটা নাড়াচড়া করে যাওয়া। টেবিলের ওপর মায়ের ফোনটা বিকট জোরে বেজে উঠল। মা, বোধহয় তখন রান্নাঘরে। আমি জোরে একবার ডাকলাম,
‘মা, ফোন এসেছে। তাড়াতাড়ি আসো’।
ভেতর থেকে মায়ের আওয়াজ এলো
‘দেখ তো কার ফোন। এদিকে নিয়ে আয়’।
ফোনের স্ক্রিনে চোখ রেখে দেখি আননোন নাম্বার। রিসিভ করে নিলাম।
‘হ্যালো কে বলছেন?’
ওপাশ থেকে ভারী গলায় উত্তর ভেসে এলো
‘সরি এই নাম্বারটায় এমারজেন্সি কারনে ফোন করতে হোল। বরুণ কোথায়? বরুণকে অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি কিন্তু পাচ্ছিনা’।
আমি উত্তর দিতে যাচ্ছিলাম ‘বাবা তো অফিসে’। কিন্তু তার আগেই হন্তদন্ত করে মা চলে এলো। আমি আর কি করতাম, ‘আপনি হোল্ড করুণ, আমি মাকে দিচ্ছি’ বলে ফোনটা মাকে ধরিয়ে দিলাম।
চোখমুখের ইশারায় মা বোঝাতে চাইল, ‘কে ফোন করেছে রে?’ আমিও ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম যে আমি জানিনা। ঘরে দুটো মাত্র প্রাণী তাই পিনড্রপ সাইলেন্ট। ওপাশের কথা সম্পূর্ণভাবে শোনা যাচ্ছিল।
‘হ্যালো বৌদি বরুণকে একটু দেবেন? ফোন সুইচ অফ করে রেখেছে। একটা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পাচ্ছিনা। আমাদেরও তো পুজোর ছুটি দরকার। সেই এক সপ্তাহ আগে ছুটি নিয়ে বেরিয়েছে’।
আমার মাথার মধ্যে দিয়ে একটা কালবৈশাখীর ঝড় বয়ে গেলো। বাবা তো অনেক আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছে যে এবার পূজায় কোন ছুটি নেই। অফিসে অনেক রিকোয়েস্ট করার পরও ছুটি পায়নি। ‘বাবা কোথায়?’ আমি এটাও জানি আমার চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশী ঝড় মায়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। জানি মা এক্ষুনি হয়ত ঘাবড়ে গিয়ে বলবে
‘আরে ও তো বলল অফিস থেকে ছুটি পায়নি। আরে আপনারা দেখুন না ও কোথায় গেলো। কোন বিপদ হয়নি তো?’।
কিন্তু সেরকম কিছুই হোল না। মা চোখদুটো বন্ধ করে বেশ কিছুক্ষন নীরব থাকলো। আমিও মাকে একা ছেড়ে একটু পেছনে সরে গেলাম।
‘বৌদি, বরুণ বাড়িতে আছে তো?’।
‘হ্যাঁ, ও তো বাড়িতেই এসেছিলো, কিন্তু কয়েকদিনের জন্য একটু বেড়িয়েছে। গ্রামের বাড়ি গেছে’।
অদ্ভুত লাগলো এতো বড় মিথ্যে কথাটা মায়ের মুখ থেকে শুনে।
‘এই রে এবার কি করব। আমায় তো ফাইলটা জমা দিতে হবে’।
‘এককাজ করুণ না, আপনি দীপাকে একবার ফোন করুণ। দীপা জানলেও জানতে পারে’।
দীপা আমার মায়ের কলেজের সহপাঠিনী ছিল। শুনেছিলাম মায়ের সাথে বাবার পরিচয় কলেজে পড়াকালীন সময় থেকে। দীপা মাসি আর বাবা একি অফিসে চাকরি করে। দীপা মাসি আমাদের পারিবারিক বন্ধু। মায়ের চোখেমুখে অদ্ভুত একটা উদ্বেগ। যেন ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে কিছু একটা শোনার জন্য মা উদগ্রীব হয়ে বসে আছে।
‘আরে দীপাও তো বরুনের সাথেই বেরোল। দুজনেই এক সপ্তাহ আগে বেড়িয়েছে’।
দেখলাম মা জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস নিল। কিছুই বলল না। ওপাশ থেকে সেই ভদ্রলোকের কণ্ঠ ভেসে এলো...
‘ঠিক আছে বৌদি। শারদীয়ার আগাম শুভেচ্ছা। আপনি ভালো থাকুন সুখে থাকুন। আমি দীপাকেই ফোন করে দেখি’।
সামনেই একটা চেয়ার ছিল মা ওর ওপরে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বেশ কিছুক্ষন বসে থাকার পর মা কেমন কাঁপতে কাঁপতে ভেতরের ঘরে চলে গেলো। আমি যে কি করব তা কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমিও আমার পড়ার ঘরে ঢুকে গেলাম।
মনটা উসখুস করছিল। বারবার ইচ্ছে করছিল মা কি করছে তা দেখার। গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে এসে ভেতরের ঘরে উঁকি দিলাম।
ডায়েরী লেখার অভ্যাস মায়ের একসময় থাকলেও আমি জ্ঞান হওয়ার পর থেকে খুবই কম লিখতে দেখেছি। সাধারনত যখন মায়ের মন খুব খারাপ থাকে তখনই মা লেখালিখি করে। চেয়ারের ওপর বসে একমনে মা লিখে চলেছে। বহুবার ভেবেছি, মা কি লেখে একবার পড়ে দেখবো কিন্তু ড্রয়ারের ভেতর লক করে রাখায় সেরকমভাবে কখনো সুযোগ পাইনি।
হথাত কর্কশ স্বরে মায়ের মোবাইলটা বেজে উঠল। আমিও মুখটা লুকিয়ে নিলাম আর আমার ঘরে চলে গেলাম। ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে বাবার সেই পরিচিত কণ্ঠটা ভেসে এলো।
‘আরে বর্ণালী, তোমায় ভেবেছিলাম সারপ্রাইস দেবো। কিন্তু অর্ণবদা পুরো প্ল্যানটা ভেস্তে দিলো। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সোজা চলে গেছিলাম জলপাইগুড়ি। অফিসের ই একটা কাজ ছিল। তোমার জন্য দারুন দারুন সব গিফট নিয়ে আসছি। এখন হাওড়াতে। আর ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যেই ঘরে ঢুকে যাবো’।
বাবা একটু জোর করে হেঁসে হেঁসে কথাগুলো বলার চেষ্টা করলেও বাবার গলায় যে প্রচণ্ড একটা ভয় ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
দেখলাম মা একটা মুচকি হাসল। সেই হাঁসিতে অবজ্ঞা ছিল, প্রতিহিংসাও ছিল।
‘আমিও তোমার জন্য একটা সারপ্রাইস গিফট এনেছি। তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আমিও তোমাকে ওই গিফটটা না দেখালে নিস্তার পাবো না’।
মায়ের দুচোখে প্রতিশোধের আগুন জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল। অঙ্ক বইটা খুলে পড়তে বসার ভান করলাম। প্রচণ্ড একাগ্রতায় একদৃষ্টিতে বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বুঝতে পারিনি কখন মা পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
‘সুমিত, আমি একটু অফিস বেরচ্ছি। আধ ঘণ্টার মধ্যেই চলে আসবো’।
দেখলাম মায়ের চোখে মুখে ভয়ঙ্কর প্রতিশোধের স্পৃহা। বেশীক্ষন দাঁড়ালো না মা। আমিও বেশীকিছু বললাম না। কিছুক্ষনের মধ্যেই বাইরের গ্রিলটায় টং করে একটা শব্দ হোল। অর্থাৎ মা বেরিয়ে গেলো। আমার মনে তখন একটাই প্রশ্ন, ‘ডায়েরীটা কি বাইরে আছে না মা আবার ড্রয়ারে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে’।
দৌড়ে গেলাম ভেতরের ঘরে। হ্যাঁ, আজ মা ভুল করে ফেলেছে। ডায়েরীটা তখনও টেবিলের ওপর ই রাখা। বহুবার চেষ্টা করেছি মা কি লেখে তা জানার, কিন্তু পারিনি। আজ আমার হাতের সামনে সেই রহস্যের সমাধান। এক এক করে পাতা উল্টাতে থাকলাম।
‘বরুণ মনে হয় আমায় ঠকাচ্ছে। জানিনা এটা শুধুই আমার সন্দেহ কিনা। বরুনের ট্রান্সফার হয়ে গেলো। একমাসের মধ্যে সেই একি জায়গায় দীপারও কিকরে ট্রান্সফার হোল। দাদা, বহুবার বলেছিল বরুনের নাকি চরিত্র ভালো নয়। আমি তখন বিশ্বাস করিনি। কেন জানিনা আজ আমার বরুণকে প্রচণ্ড অবিশ্বাস হচ্ছে’।
‘আমি নিজের চোখে দেখেছি, পার্টিতে দীপার হাতের ওপর বরুণ ওর হাতটা রাখল। এটা মনের ভুল হতে পারেনা। বরুণ আর দীপার অবৈধ সম্পর্ক আছে। আমি কি করব, সুমিতকে নিয়ে কোথাও যেতেও পারছিনা। বাপের বাড়িতেও ঠাই হবেনা’।
‘আমি কক্ষনো ভাবতে পারিনি বরুণ আমায় এভাবে ঠকাবে। আজ আমি আর বরুণকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখলাম। আমি ওকে ক্ষমা করতে পারবো না। ওকে ছেড়ে যেতেও পারবো না। সুমিতকে নিয়ে একা যাবো কোথায়’
‘নিজের শরীরের ক্ষিদে প্রতিরোধ করে আমি রোজ ঠকে চলেছি। আমি কেন নিজেকে কষ্ট দিয়ে যাবো। সাহেব ছেলেটা আকারে ইঙ্গিতে আমার কাছে ঘেঁষতে চায়। ছেলেটা খারাপ ও নয়। আমি আর পারছিনা। আমার যৌবন কষ্টে জ্বলে পুড়ে ছাড় খার হয়ে যাচ্ছে’।
‘আমি বিশাল বড় অন্যায় করলাম। বরুণ যে ভুল করেছে আমিও সেই একি ভুল করে বসলাম। কাকে ঠকালাম আমি? নিজেকে। শুধু সুমিতের জন্য বেঁচে থাকা। নয়ত সত্যিই আর বাঁচতে ইচ্ছে ছিল না’।
‘বরুণ সব স্বীকার করেছে। জানি ওকে হয়ত ক্ষমা করতে পারবো না। কিন্তু তবুও... ভুল তো আমিও করেছি। যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে। বরুণ আমায় কথা দিয়েছে, ও দীপার সাথে দুরত্ব বজায় রেখে চলবে’।
আমার মাথাটা কেমন ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছিল। গেটে আবার টং করে একটা শব্দ হোল।
যাঃ আজ মা কি লিখেছে তা পড়া হোল না। সেটা পড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ডায়েরীটা বন্ধ করে দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলাম।
[+] 2 users Like manas's post
Reply


Messages In This Thread
RE: প্রতিশোধ (সমাপ্ত) by Chotipriyo - by manas - 29-08-2019, 08:16 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)