Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 3.2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery প্রতিশোধ (সমাপ্ত) by Chotipriyo
#11
২। সেক্রেটারি
ছ।



বইটা খুলে বসে ছিলাম কিন্তু কিছুতেই পড়ায় মন বসছিল না। আর বসবেই বা কেন? এই ২-৩ দিনে কম ঘটনা তো ঘটলো না। সহেলিদি কে বলে বলে প্রায় ওপেন চ্যালেঞ্জ করে বিছানায় নিয়ে যাওয়া; আমার কাছে অবিশ্বাস্য ছিল। যখন বিশ্বাস হোল তখন এক নতুন চমক। যে সহেলিদির জন্য কলেজের বাঘা বাঘা ছেলেরা পাগল, হাত কেটে প্রেমপত্র লেখে, সেই সহেলিদিই সাহেবদাদার মতন এক লোফার ছেলেকে বিছানায় সন্তুষ্ট করতে পারলো না। সাহেবদার সিদ্ধান্ত নেওয়া আর কুমারী মেয়ে নয় এবার একটু অভিজ্ঞ নারীর সাথে ঘোড়া ছোটাবে। এসবই ভাবছিলাম, অদ্ভুত একটা প্রশ্ন; না প্রশ্ন না বলে সম্ভাবনা বলাই ভালো; মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। সহেলিদিকে একবার ট্রাই করার আইডিয়াটা আমার আর অভির হলেও এটা সত্যি যে সহেলিদির ওপর বহুদিন ধরেই সাহেবদার নজর ছিল। বহুবার জিজ্ঞেস করেছে ওর ব্যাপারে। কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।
‘আচ্ছা সাহেবদা সত্যিই সবকথা আমার আর অভির সাথে শেয়ার করে তো? বা এমন ও তো অনেক কথা আছে যা শুধু বাবুদা জানে, আমি বা অভি জানিনা’। নিজেরই মনে নিজেকে প্রশ্ন করে উঠলাম।
‘দেখ ভাই মেয়ে পটালেই হয়না। একটু গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়’। এটা সাহেবদার বিখ্যাত এক উক্তি। সাহেবদা কি সব কথা আমাদের বলে? মানে কখন কোন মেয়ের দিকে নজর দিচ্ছে, কাকে পটানোর জন্য ভেবে রেখেছে এইসব? আমি জানি সবকিছু বলেনা।
সাহেবদা আমার আর অভির গুরুর মতন। তবুও কেন জানিনা আজ একটু অবিশ্বাস হচ্ছে। হয়ত এতো ঘটনা একসাথে ঘটে যাওয়াই মুখ্য কারন। এইসব উল্টোপাল্টা চিন্তা করছি, হথাত বাইরের গ্রিলটা খোলার আওয়াজ পেলাম। বাইরের দিকে উঁকি মেরে দেখি মা হনহন করে ভেতরে হেঁটে আসছে।
আমার বেশ ভয়ভয় ই করল। মায়ের মুখটা দেখে বারবার মনে হচ্ছিল, কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু কি হয়েছে। আমি একদৃষ্টিতে বইয়ের পাতায় চোখ রাখলাম। কোনকিছু না বলে কয়ে মা ভেতরের ঘরটায় ঢুকে গেলো।
‘কি গো অফিস থেকে ফিরেছ না ফেরনি?’
বুঝলাম মা বাবাকে ফোন করেছে। ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই বাবাকে ফোন করার মানে হোল কিছু একটা হয়েছে। আজ ছিল পূজা কমিটির মিটিং। নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। আমি কানদুটোকে সজাগ করে রাখলাম।
‘তুমি জানো, মিতা ভেতরে ভেতরে যে এই তা একবারও ভাবিনি। আমায় সকলের সামনে অপদস্থ করল। বলে কিনা আগেরবার আমি ঠিক করে সামলাতে পারিনি। ওই নারী নির্যাতনের থিমটার জন্যই নাকি আমরা কোন পুরস্কার পাইনি’।
এরকম যে কিছু একটা হতে চলেছে তা আমি আগেই জানতাম। কিন্তু এতটা বাড়াবাড়ি হবে তা আমি জানতাম না।
‘পাড়ার মাতব্বরগুলোকে এভাবে যে মিতা কিকরে হাত করে ফেলল কি জানি’
‘ধৈর্য ধরব! কি বলছ তুমি। তুমি জানো মিটিং এ কি সিদ্ধান্ত হয়েছে? এবার আর পূজা কমিটি সেক্রেটারি বলে কোন পোস্ট থাকবে না। টার বদলে জয়েন্ট সেক্রেটারি। দুজন জয়েন্ট সেক্রেটারি হয়েছে; আমি আর মিতা। তুমি একবার ভাবতে পারো ওইরকম সাদামাটা একটা হাউসওয়াইফের সাথে আমি কিকরে কম্প্রমাইস করে চলব? উঠতে বসতে আমায় খোঁটা দেবে’।
দেখলাম মায়ের গলাটা বেশ ধরে এসেছে। রাজনীতি মোটামুটি সব জায়গাতেই হয়। কিন্তু তাই বলে এরকমভাবে প্ল্যানিং করে কারুর ক্ষমতা লোপ করলে তো মানুষ একটু কষ্ট পাবেই।
‘আরে কি মাথা ঠাণ্ডা করব! সব দোষ তো তোমার। কোন এক অজ গাঁয়ে এনে তুললে আমায়। কত ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম, ক্যারিয়ার ছিল; সব নষ্ট হয়ে গেলো’
বাবার গলাটাও অল্প অল্প পাচ্ছিলাম। ‘দেখো, বর্ণালী তুমি কেন বোঝনা, পাড়ার বউরা তোমায় হিংসা করে। তুমি তো একমাত্র মহিলা যে চাকরি করে। ওরা তোমায় সহ্য করতে পারেনা। তাই চেষ্টা করে তোমায় টেনে নীচে নামাতে। কিন্তু সকলেই জানে তোমার চেয়ে যোগ্য আর কেউ নেই’।
বাবা যে মাকে বোঝাতে অসম্ভব পরিশ্রম করে চলেছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু মায়ের মুখের অভিব্যাক্তি আর জোরে জোরে হাঁপানি দেখে মনে হচ্ছিল যে আজ স্বয়ং মা দুর্গার ও ক্ষমতা নেই মাকে শান্ত করার।
‘আমার কথা বলার ইচ্ছে নেই এখন। আমি ফোনটা রাখলাম’।
বাবা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মায়ের সামান্য কোন ইচ্ছা ছিলনা। ফোনটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা খাটের ওপর ছুঁড়ে ফেলে দিলো। দেখলাম মা সোফার ওপর বসে দুহাত মাথার পেছনে দিয়ে কিসব চিন্তা করছে।
আমারও খুব খারাপ লাগছিল। বারবার আগের বারের পুজার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। সেবার বাবার ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছিল। বাবা তখন মালদাতে পোস্টিং। পুজার আর ৭ দিন বাকি ছিল। যেহেতু মা পূজা কমিটির সেক্রেটারি তাই মা বাবাকে দেখতে পর্যন্ত যেতে পারেনি। আমি পিসি আর পিসেমশাই গেছিলাম বাবার কাছে। মায়ের ডেডিকেশন সত্যিই প্রশ্নাতীত। এবারে সত্যিই মিতা কাকিমার ওপর আমার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল। হ্যাঁ, মা একটু বদরাগী টাইপের কিন্তু মা পাড়ার পূজাটার জন্য করেওছে প্রচুর।
দেখলাম সাড়িটার আঁচল দিয়ে মা চোখের কোনগুলো মুছছে। আমার সত্যি খুব খারাপ লাগছিলো। ছেলে হিসেবে আমারও কিছু কর্তব্য আছে। আমি গুটি গুটি পায়ে মায়ের কাছে এগিয়ে গেলাম। মনে মনে ঠিক করে নিলাম ‘মা যদি চায় আমি অভি আর মিতা কাকিমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখবো না। ওদের বাড়িও যাবো না’।
কিছুটা ভয়ে ভয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে মা? মিটিং এ কি কোন ঝামেলা হয়েছে’।
মা বেশ কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, বাইরের গেটটা খোলার শব্দ এলো। আমি আর মা দুজনেই ওদিকে তাকালাম।
‘একি বর্ণালীদি আপনি এভাবে চলে এলেন কেন?’
মিতা কাকিমা! বুঝলাম মা আজ মিতা কাকিমার অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে।
‘দেখো মিতা সবকিছু আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। ওটা তো আর মিটিং নয়। মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যখন সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নেওয়া হয়ে গেছে...’
মায়ের কথার মধ্যে রাগ ছিলনা ছিল আক্ষেপ। সেই কারনেই হয়ত মাঝপথে মাকে থামিয়ে দিলো মিতা কাকিমা।
‘জানি আপনি বিশ্বাস করবেন না। তাও বলছি, আমার নাম যে জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে বিবেচনা করা হবে তা আমি জানতাম না। আমাকে ডেকেছিল ওরা আমি গেছিলাম। আমার মতন তো কতজন গেছেন। আমি একজন সাদামাটা গৃহবধূ। আমি সত্যিই এতকিছু জানিওনা বুঝিওনা। সত্যি আমার কোন দোষ নেই। আপনি আমায় খারাপ ভাববেন না’।
মা একবার মিতা কাকিমার দিকে তাকাল আর মুখে একটা মিষ্টি হাঁসি এনে ওর কাঁধে হাতটা রাখল।
‘আমি জানি যে তুমি আগে থেকে কিছুই জানতে না। সত্যি বলছি তোমার ওপর আমার কোন রাগ নেই। আমি সত্যিই খুব খুশি যে তুমি আমার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। তোমায় কতগুলো কথা বলতে চাই মিতা!’
মিতা কাকিমা কোন উত্তর না দিয়ে অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
‘মনে রেখো এবারের পূজাটা পূজা নয় আমার আর তোমার মান সম্মানের পরীক্ষা। দুজনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব’।
আমি জানি আমার মতন মিতা কাকিমাও প্রচণ্ড অবাক হয়ে গেলো।
এরপর মিতা কাকিমা আরও ৫-১০ মিনিট হয়ত ছিল, কিন্তু সেভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোন কথা হয়নি। পুজার চাঁদা ও অন্যান্য আয়জনের ব্যাপারেই টুকটাক কথা হোল।
কিছুক্ষন বাদে মিতা কাকিমা চলে যায়। আমিও পড়ার ঘরে চলে যাই।
মিনিট পাঁচেক পরে টুং টুং করে একটা শব্দ ভেসে আসে। বুঝতে পারি মা হরলিক্সের গ্লাসটা হাতে নিয়ে রোজকার মতন আমার রুমে আসছে।
‘সুমিত একটা কথা বলতে চাই তোকে’।
এতো শান্তভাবে মা কখনো আমার সাথে কথা বলেনি তাই একটু ভয়ই পেয়ে গেলাম। সত্যি এতো সিরিয়াস মাকে এর আগে কখনো লাগেনি। বাঁ হাতে হরলিক্সের গ্লাসটা নিয়ে মায়ের দিকে তাকালাম।
‘বাবা, মা কখনো ছেলের খারাপ চায়না। সাহেব, বাবু এদের সঙ্গ তুই আর অভি ছেড়ে দে। চেষ্টা কর দূরে দূরে থাকতে’।
আর একটাও কোন কথা মা বলেনা। আমিও কিছু জিজ্ঞেস করিনা। পুজার আগে বা পরে প্রতিবার বাবা ফেলুদা নয়ত কাকাবাবুর কোন বই গিফট করে। ছোট থেকেই ওইসব গিলে আসছি। তাই রহস্যের গন্ধ আমি বেড়ালের মাছ শোঁকার মতন করে শুঁকতে পারি।
এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা একটা রহস্য রয়েছে। গভীর জটিল একটা রহস্য।
[+] 1 user Likes manas's post
Reply


Messages In This Thread
RE: প্রতিশোধ (সমাপ্ত) by Chotipriyo - by manas - 29-08-2019, 08:15 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)