29-08-2019, 08:14 PM
২। সেক্রেটারি
চ।
বাড়ির বাইরের সবুজ রঙের লোহার গ্রিলটার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দরজা খুলে ঢুকতে ভীষণ ভয় করছিল। মায়ের মেজাজটা এই মুহূর্তে ঠিক কেমন হবে তা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে। অত্যন্ত সন্তর্পণে গ্রিলটা খুলে ভেতরে ঢুকলাম।
ধীরে ধীরে কোলাপসেবেল গেটটার সামনে এলাম। ভেতর থেকে মায়ের গলা ভেসে আসছে। যেন কারুর সাথে ঝগড়া করছে বা কাউকে অভিযোগ জানাচ্ছে। কানটা একটু পাততেই বুঝলাম, মা ফোনে কথা বলছে। সম্ভবত বাবার সাথে। জুতোটা বাইরে খুলে ভেতরে ঢুকলাম। মায়ের পরনে তখন হাল্কা নীল রঙের একটা ম্যাক্সি। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া কাপড় চোপড়গুলো দড়িতে টাঙ্গানো। কানটা খাড়া রাখলাম।
‘তুমি কি ভেবেছ, তোমার কোন দায় দায়িত্ব নেই। ছেলে মানুষ করা একা আমার দায়িত্ব’।
বাবার গলাটাও স্পষ্টভাবে শোনা গেলো।
‘আরে, বর্ণালী, কি হয়েছে তা বলবে তো! কেন অকারনে চেঁচামিচি করছ’।
মা গলাটা আরও উঁচু করল।
‘কেন? তোমার ছেলে কতগুলো বখাটে ছেলের সাথে দিনরাত আড্ডা মারে। পড়াশুনার নামগন্ধ নেই’।
দেখলাম বাবা খুব শান্তভাবে বললেন, ‘আচ্ছা সুমিত আসুক, আমায় ফোন করতে বলবে’।
আর ঠিক সেইসময়েই মা পেছনঘুরে তাকাল।
‘নাও, এসে গেছে তোমার গুনধর পুত্র। নে বাবার সাথে কথা বল’,।
ভয়ে ভয়ে আমি মায়ের হাত থেকে মোবাইলটা নিলাম। মৃদুকণ্ঠে শুধু হ্যালো বললাম। ওপাশ থেকে বাবার ভারী গলা ভেসে আসে।
‘একি সুমিত এসব কি শুনছি আমি। তুমি পড়াশুনা করছ না। দেখো, আমায় যদি ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতে হয় শুধু তোমায় শাসন করতে তাহলে মনে রেখো ফল খুব খারাপ হবে’।
বাবার ওপর কথা বলার ক্ষমতা কোনকালেই ছিলনা। অনুগত হয়ে উত্তর দিলাম, ‘ভুল হয়ে গেছে বাবা’।
ফোনটা মাকে দিয়ে দিলাম। মাও বুঝেছে যে বাবা আমায় বকাবকি করেছে। মায়েরও মেজাজটা একটু ঠাণ্ডা হোল। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে সোজা পড়ার ঘরে চলে গেলাম।
জ্যামিতির বইটা চোখের সামনে খোলা ছিল। কিন্তু মাথায় গিজগিজ করছে অন্য একটা চিন্তা। ‘মায়ের রাগের কারন কি? শুধু আমি পড়া ছেড়ে পাড়ায় আড্ডা মারতে গেছিলাম নাকি সাহেবদার ওইভাবে মায়ের দিকে তাকানো’।
‘আমি মিতার সাথে কথা বলব’।
বুঝতে পারিনি মা কখন আমার ঘরে ঢুকেছে। আমি মায়ের দিকে তাকালাম। এক নিঃশ্বাসে মা বলতে শুরু করল।
‘তোর আর অভির সাহেবের সাথে এতো ওঠাবসা করার কি আছে। ও তোদের মত বাচ্চা নাকি! আমি আজই মিতার সাথে কথা বলব। এভাবে চলতে দেওয়া যায়না’।
আমি কোন উত্তর দিলাম না। বুঝলাম মা কিছুতেই আমায় আর অভিকে সাহেবদার সাথে মিশতে দেবে না। আর এইসময়ে কিছু প্রতিবাদ করাও বিপদ। রাগে গজগজ করতে করতে মা বেরিয়ে গেলো। অদ্ভুতভাবে আবার ভেতরে ফিরে এলো।
‘তখন কি বলছিল রে ছেলেটা?’
কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। মনে মনে বললাম, ‘মা কি তাহলে আমাদের কথাগুলো শুনতে পেয়েছিল’। ভ্রু কুঁচকে বিস্ময় প্রকাশ করলাম। কিছুই বলেনি এটা বোঝানোর ভান করলাম।
‘কালো রং...’ এরকম একটা কিছু বলল না। আমি ঠিক শুনতে পাইনি। আমায় সত্যি কথা বল, ওই ছেলেটা কি বলেছিল তখন।
এবার আমি সত্যিই কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। কি বলব, কি বলা উচিত হবে কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। নিজেরই অজান্তে মুখ ফসকে সত্যি কথাটা বেরিয়ে গেলো।
‘তুমি সবসময় কালো ব্লাউজ কেন পড়? অন্য কোন রঙের ব্লাউজ তোমার নেই?’
বলে তো ফেললাম কিন্তু প্রচণ্ড আফসোস হচ্ছিল।
মা কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার মুখের দিকে তাকাল আর তারপর একদৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে শুরু করল।
‘আরে এখনো রেডি হওনি। মিটিং এর তো টাইম হয়ে গেলো’।
খেয়াল করিনি কখন মিতা কাকিমা এসে গেছে। আজ সন্ধ্যেবেলা মিটিং আছে। বুঝলাম মাকে এক্ষুনি বেরোতে হবে। মনেমনে ভাবলাম ভালোই হয়েছে, মা এতক্ষন যা যা কথা হোল সব ভুলে যাবে।
‘মিতা আমার সাথে একটু ভেতরে এসো তো?’
মা যে অসম্ভব রকম জেদি তা আমি খুব ভালো করেই জানতাম। কানটা যতটা সম্ভব খাড়া করে রাখলাম। জানলাটা আগে থেকেই একটু ফাঁক করা ছিল। তাই অসুবিধা সেই অর্থে কিছু হোল না।
‘মিতা দেখো তো, এই কম্বিনেশনটা কি ঠিক নয়?’
আমি নিজের কৌতূহলটা আর নিয়ন্ত্রন করতে পারলাম না। ভেতরের দিকে উঁকি মারলাম। মায়ের হাতে সেই ভিজে কালো ব্লাউজটা আর সাদা ব্রাটা। বুঝলাম, মা সবই বুঝতে পেরেছে। অভির মায়ের গলা ভেসে এলো।
‘আহ, বর্ণালী দি আপনি একটু বেশীই ভাবেন’।
দেখলাম মা আলমারিটা খুলল। আমি আবার পড়াশুনায় মন দিলাম। মিনিট দশেক পর দরজাটা খুলে যাওয়ার শব্দ এলো। আমি চোখটা তুলে ওপরের দিকে তাকালাম। একটা কুচি দেওয়া হলুদ তাঁতের সাড়ি, কিন্তু............ কালো রঙের ব্লাউজ।
‘সুমিত তুই কিন্তু বাইরে বেরবি না। আমি ১ ঘণ্টার মধ্যেই চলে আসছি’।
মনেমনে বললাম, ‘মা, তুমি সত্যিই প্রচণ্ড জেদি’।
চ।
বাড়ির বাইরের সবুজ রঙের লোহার গ্রিলটার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দরজা খুলে ঢুকতে ভীষণ ভয় করছিল। মায়ের মেজাজটা এই মুহূর্তে ঠিক কেমন হবে তা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে। অত্যন্ত সন্তর্পণে গ্রিলটা খুলে ভেতরে ঢুকলাম।
ধীরে ধীরে কোলাপসেবেল গেটটার সামনে এলাম। ভেতর থেকে মায়ের গলা ভেসে আসছে। যেন কারুর সাথে ঝগড়া করছে বা কাউকে অভিযোগ জানাচ্ছে। কানটা একটু পাততেই বুঝলাম, মা ফোনে কথা বলছে। সম্ভবত বাবার সাথে। জুতোটা বাইরে খুলে ভেতরে ঢুকলাম। মায়ের পরনে তখন হাল্কা নীল রঙের একটা ম্যাক্সি। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া কাপড় চোপড়গুলো দড়িতে টাঙ্গানো। কানটা খাড়া রাখলাম।
‘তুমি কি ভেবেছ, তোমার কোন দায় দায়িত্ব নেই। ছেলে মানুষ করা একা আমার দায়িত্ব’।
বাবার গলাটাও স্পষ্টভাবে শোনা গেলো।
‘আরে, বর্ণালী, কি হয়েছে তা বলবে তো! কেন অকারনে চেঁচামিচি করছ’।
মা গলাটা আরও উঁচু করল।
‘কেন? তোমার ছেলে কতগুলো বখাটে ছেলের সাথে দিনরাত আড্ডা মারে। পড়াশুনার নামগন্ধ নেই’।
দেখলাম বাবা খুব শান্তভাবে বললেন, ‘আচ্ছা সুমিত আসুক, আমায় ফোন করতে বলবে’।
আর ঠিক সেইসময়েই মা পেছনঘুরে তাকাল।
‘নাও, এসে গেছে তোমার গুনধর পুত্র। নে বাবার সাথে কথা বল’,।
ভয়ে ভয়ে আমি মায়ের হাত থেকে মোবাইলটা নিলাম। মৃদুকণ্ঠে শুধু হ্যালো বললাম। ওপাশ থেকে বাবার ভারী গলা ভেসে আসে।
‘একি সুমিত এসব কি শুনছি আমি। তুমি পড়াশুনা করছ না। দেখো, আমায় যদি ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতে হয় শুধু তোমায় শাসন করতে তাহলে মনে রেখো ফল খুব খারাপ হবে’।
বাবার ওপর কথা বলার ক্ষমতা কোনকালেই ছিলনা। অনুগত হয়ে উত্তর দিলাম, ‘ভুল হয়ে গেছে বাবা’।
ফোনটা মাকে দিয়ে দিলাম। মাও বুঝেছে যে বাবা আমায় বকাবকি করেছে। মায়েরও মেজাজটা একটু ঠাণ্ডা হোল। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে সোজা পড়ার ঘরে চলে গেলাম।
জ্যামিতির বইটা চোখের সামনে খোলা ছিল। কিন্তু মাথায় গিজগিজ করছে অন্য একটা চিন্তা। ‘মায়ের রাগের কারন কি? শুধু আমি পড়া ছেড়ে পাড়ায় আড্ডা মারতে গেছিলাম নাকি সাহেবদার ওইভাবে মায়ের দিকে তাকানো’।
‘আমি মিতার সাথে কথা বলব’।
বুঝতে পারিনি মা কখন আমার ঘরে ঢুকেছে। আমি মায়ের দিকে তাকালাম। এক নিঃশ্বাসে মা বলতে শুরু করল।
‘তোর আর অভির সাহেবের সাথে এতো ওঠাবসা করার কি আছে। ও তোদের মত বাচ্চা নাকি! আমি আজই মিতার সাথে কথা বলব। এভাবে চলতে দেওয়া যায়না’।
আমি কোন উত্তর দিলাম না। বুঝলাম মা কিছুতেই আমায় আর অভিকে সাহেবদার সাথে মিশতে দেবে না। আর এইসময়ে কিছু প্রতিবাদ করাও বিপদ। রাগে গজগজ করতে করতে মা বেরিয়ে গেলো। অদ্ভুতভাবে আবার ভেতরে ফিরে এলো।
‘তখন কি বলছিল রে ছেলেটা?’
কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। মনে মনে বললাম, ‘মা কি তাহলে আমাদের কথাগুলো শুনতে পেয়েছিল’। ভ্রু কুঁচকে বিস্ময় প্রকাশ করলাম। কিছুই বলেনি এটা বোঝানোর ভান করলাম।
‘কালো রং...’ এরকম একটা কিছু বলল না। আমি ঠিক শুনতে পাইনি। আমায় সত্যি কথা বল, ওই ছেলেটা কি বলেছিল তখন।
এবার আমি সত্যিই কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। কি বলব, কি বলা উচিত হবে কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। নিজেরই অজান্তে মুখ ফসকে সত্যি কথাটা বেরিয়ে গেলো।
‘তুমি সবসময় কালো ব্লাউজ কেন পড়? অন্য কোন রঙের ব্লাউজ তোমার নেই?’
বলে তো ফেললাম কিন্তু প্রচণ্ড আফসোস হচ্ছিল।
মা কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার মুখের দিকে তাকাল আর তারপর একদৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে শুরু করল।
‘আরে এখনো রেডি হওনি। মিটিং এর তো টাইম হয়ে গেলো’।
খেয়াল করিনি কখন মিতা কাকিমা এসে গেছে। আজ সন্ধ্যেবেলা মিটিং আছে। বুঝলাম মাকে এক্ষুনি বেরোতে হবে। মনেমনে ভাবলাম ভালোই হয়েছে, মা এতক্ষন যা যা কথা হোল সব ভুলে যাবে।
‘মিতা আমার সাথে একটু ভেতরে এসো তো?’
মা যে অসম্ভব রকম জেদি তা আমি খুব ভালো করেই জানতাম। কানটা যতটা সম্ভব খাড়া করে রাখলাম। জানলাটা আগে থেকেই একটু ফাঁক করা ছিল। তাই অসুবিধা সেই অর্থে কিছু হোল না।
‘মিতা দেখো তো, এই কম্বিনেশনটা কি ঠিক নয়?’
আমি নিজের কৌতূহলটা আর নিয়ন্ত্রন করতে পারলাম না। ভেতরের দিকে উঁকি মারলাম। মায়ের হাতে সেই ভিজে কালো ব্লাউজটা আর সাদা ব্রাটা। বুঝলাম, মা সবই বুঝতে পেরেছে। অভির মায়ের গলা ভেসে এলো।
‘আহ, বর্ণালী দি আপনি একটু বেশীই ভাবেন’।
দেখলাম মা আলমারিটা খুলল। আমি আবার পড়াশুনায় মন দিলাম। মিনিট দশেক পর দরজাটা খুলে যাওয়ার শব্দ এলো। আমি চোখটা তুলে ওপরের দিকে তাকালাম। একটা কুচি দেওয়া হলুদ তাঁতের সাড়ি, কিন্তু............ কালো রঙের ব্লাউজ।
‘সুমিত তুই কিন্তু বাইরে বেরবি না। আমি ১ ঘণ্টার মধ্যেই চলে আসছি’।
মনেমনে বললাম, ‘মা, তুমি সত্যিই প্রচণ্ড জেদি’।