09-01-2019, 03:17 PM
৮
পরের সোমবারে অফিসে একটা স্টাফ মিটিং ছিল। সোমবার এই ধরনের মিটিং আমার ভীষণ বাজে লাগে। একেতো সপ্তাহের শুরু বলে সোমবারে অনেক কাজ থাকে, তারপর স্টাফ মিটিংএ নিজের মার্কেটিং টিমের হয়ে একটা ছোটো খাট বক্তিতা দিতে হয়।কখনো দরকার হলে মান্থলি রিপোর্ট ও সাবমিট করতে হয়।সবচেয়ে বাজে লাগে অন্য সব মার্কেটিং টিমের বকর বকর শোনা।সাধারনত এই সব স্টাফ মিটিং শেষ হতে হতে প্রায় লাঞ্চ আওয়ার হয়ে যায়। তাছাড়া এরকম দিনে মিটিং শেষ হবার পর সাড়া দিনের কাজও শেষ করে বেরতে হয়। ফলে বেরতে বেরতে প্রায় রাত নটা হয়ে যায়। তবে একটা ব্যাপারই রক্ষে যে স্টাফ মিটিং হয় সাধারনত তিন মাসে একবার।
গত সপ্তাহে মনীষার সাথে সামান্য একটা ছোটোখাটো ব্যাপার নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ায় এমনিতেই মন মজাজ খারাপ ছিল আমার। অফিসে ঢুকেই যেই শুনলাম রবি আজকে জেনারেল স্টাফ মিটিং ডেকেছে, সঙ্গে সঙ্গে মেজাজটা আরো খিঁচরে গেল। কি আর কোরবো, তাড়াতাড়ি একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে কনফারেন্স রুমে গিয়ে বসলাম। একটু পরেই রবি ঢুকে পরলো কনফারেন্স রুমে আর মিটিং চালু করে দিল।“ফিউচার মিডিয়া আজ পর্যন্ত তার হিস্ট্রিতে সবচেয়ে বড় কনট্র্যাক্ট পেতে চলেছে শর্মা প্রোডাক্টের হাত ধরে। আমাদের সমস্ত মার্কেটিং টিমকে একযোগে হাতে হাত মিলিয়ে নেমে পরতে হবে এই প্রকল্পকে, এই কনট্র্যাক্টকে, সফল করতে”............ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে শুরু করলো।মিটিং প্রায় দশ মিনিট চলার পর হটাত আমাদের মার্কেটিং টিমের ঋতিকা এসে উপস্থিত হল। একটা কথা বলা হয়নি, এই ঋতিকা মেয়েটিকে আমিই ঢুকিয়েছি ফিউচার মিডিয়ায়। আমার কলিগ শেখরের রেফারেন্সে এসেছিল বলে ওকে একবারে ঢুকিয়ে নিয়েছি আমাদের টিমে।ওর স্বামী একটা জুটমিলে কাজ করতো।হটাত করে জুটমিলটা স্ট্রাইকে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওর চাকরি চলে যায়। ঋতিকা এখন ওর বর আর ওর পাঁচ বছরের একটা বাচ্ছাকে নিয়ে খুব মুস্কিলে পরেছে।ওর স্বামীটা নাকি অনেক চেষ্টা করেও আর কোন ভাল চাকরি জোগাড় করতে না পেরে ফ্রাসট্রেটেড হয়ে মদ খাওয়া শুরু করেছে।মেয়েটা কিন্তু ভীষণ স্মার্ট। কে বলবে এক বাচ্চার মা।আমাকে ভীষণ রেস্পেক্ট করে ও।ওর সাথে আমার একটা প্লেটোনিক সম্পর্ক আছে। চাইলে হয়তো শারীরিক সম্পর্কও হয়ে যেত বিশেষ করে ও এখন যেরকম অর্থনৈতিক কষ্টে আছে।কিন্তু আমি মনীষাকে ছাড়া আর কারো সাথে শোবার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা বলে আমাদের সম্পর্কটাকে অতি সাবধানে প্লেটোনিকই রেখেছি।
যাই হোক যে কথা বলছিলাম। এই ধরনের স্টাফ মিটিংএ আমরা কেউ দেরি করে আসিনা। ঋতিকা মিটিংএ দেরি করে ঢোকাতে সবাই ভাবলো রবি হয়তো কিছু বলবে ওকে দেরি করে আসার জন্য।সবাইকে আশ্চর্য করে রবি নিজের স্পিচ থামিয়ে বললো –“হাই ঋতিকা, এস এস, তোমাকে আজ দারুন লাগছে দেখতে”।
ঋতিকা লজ্জায় মাথা নিচু করে কাউর দিকে না তাকিয়ে বললো –“সরি স্যার আই এম লেট”। ব্যাপারটা দেখে আমার মনে হল অফিসে যে রিউমারটা উড়ে বেড়াচ্ছে সেটা একবারে সঠিক। মিটিং চলাকালীন থেকে থেকেই ওদের পরস্পরের দিকে তাকানো থেকে যে কেউ বলে দেবে ওদের মধ্যে নিশ্চই কিছু একটা চলছে। ঋতিকা আমার মার্কেটিং টিমের মেম্বার।আমি ঠিক করলাম ব্যাপারটা নিয়ে রবির সাথে কথা বলবো।একজন বিবাহিত স্টাফ কে জড়িয়ে অফিসে এরকম একটা রিউমার ছড়ানো ভাল কথা নয়। আর তাছাড়া এভাবে চললে ঋতিকা কে আমাদের টিমে রাখাও মুস্কিল হয়ে পরবে। কারন টিম মিটিংএ কেউ যদি কোন কারনে রবির সমালোচনা করে আর ও যদি রবিকে গিয়ে সব লাগিয়ে দেয় তাহলেতো খুবই মুস্কিল।
শেখরের দিকে চোখ পরলো আমার। ঋতিকা আর রবির থেকে থেকেই একে অপরের দিকে তাকানো দেখে ওর তো হাঁসি চাপাই দুস্কর হয়ে উঠেছে।যাই হোক আমি মিটিংএ মন দেবার চেষ্টা করলাম।শর্মা প্রোডাক্টের কনট্র্যাক্টটা রবি কিভাবে পেয়েছে আর কিরকম ব্লাইন্ডলি একসেপ্ট করেছে সেটা জানার পর, রবির মুখে লংটার্ম রিলেশনশিপ, উইন উইন সিচুয়েশন, কোম্পানি বিজনেস সিকিউরিটি ইত্যাদি বড় বড় কথা শোনা প্রায় অসহ্য হয়ে উঠছিল। যাই হোক অনেক কষ্টে কয়েক ঘণ্টা কাটানোর পর অবশেষে লাঞ্চ আওয়ার এলো আর আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।মিটিংএ ডিসিশন হয়ে গেল শর্মা প্রোডাক্টের সাথে কনট্র্যাক্টটা আমরা নিচ্ছি, ওদের সাথে ফাইনাল নেগসিয়েশন হবে বৃহস্পতি আর শুক্রবার, সোমবার কনট্র্যাক্ট সাইন হবে, আমাদের কয়েকজন সিনিয়র মার্কেটিং হেড কে নিয়ে বানানো টিম মুম্বাই উড়ে যাবে শর্মা প্রোডাক্টের হেড অফিসে ওদের সাথে কনট্র্যাক্ট সাইন করতে।
মিটিং শেষ হবার পর আমি সোজা বাথরুমের দিকে গেলাম।বাথ রুমের ইউরিনারে নিজেকে হালকা করে প্যান্টের জিপার টানছি এমন সময় আমার পাশে বেসিনের ওপর লাগানো আয়নাতে দেখতে পেলাম রবি ঢুকছে বাথরুমে।ওর হাতে একগাদা ফাইল ভর্তি। রবি ফাইলগুলো বেসিনের পাশে একটা জায়গায় রেখে মুখ ধুতে ধুতে আমাকে জিজ্ঞেস করলো –“আরে রাজীব, সব ঠিক ঠাক তো”?
–“হ্যাঁ রবি আমি ঠিক আছি”
–“আচ্ছা রাজীব একটা কথা বল” রবি রুমালে নিজের মুখ মুছতে মুছতে বললো।
-“কি”?
-“আমাদের এই শর্মা প্রোডাক্টের সাথে এগ্রিমেন্টের সময় যে প্রপোসালটা আমরা ওদের কে দেব, সেই পেপারগুলোর প্রেজেন্টেসানের ব্যাপারে তোমার কোন ভাল আইডিয়া আছে।
-“মানে”?
-“মানে আমাদের কোম্পানির প্রোফাইলের কথাটাই যদি ধর। ওগুলো প্রফেসনালি বানাতে পারলে তবেইনা আমাদের কম্পানির ইমপ্রেসানটা ভাল হবে ওদের কাছে, তুমি কি বল”?
-“হ্যাঁ রবি, তুমি ঠিক বলছো, তবে ও ব্যাপারে আমি এখনো সেরকম কিছু ভেবে উঠতে পারিনি”।
-“আমি ভাবছিলাম যদি কোন অ্যাডভার্টাইসমেন্ট ওয়ার্ল্ডের প্রফেশনাল লোককে দিয়ে আমাদের কোম্পানি প্রোফাইলটা বানাতে পারি”।
-“হ্যাঁ, সে তো ভালই হয়”
_”আমি এও ভাবছিলাম যদি কোন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার জোগাড় করে আমাদের সার্ভিস ওরিয়ন্টেড কিছু ফটোগ্রাফ অ্যাড করতে পারি আমাদের প্রোফাইলে তো ব্যাপারটা দারুন হয়।
-“বাঃ তোমার এই আইডিয়াটা বেশ ভাল রবি”।
-“রাজীব আমি চাইছি কভার পেজে যদি কোন সেক্সি একটা মহিলা মডেলের ছবি দিয়ে দেওয়া যায়, মানে আজকাল তো সুন্দরী মেয়েদের ছবি ছাড়া কোন অ্যাডভার্টাইসমেন্ট কমপ্লিটই হয়না”।
-হ্যাঁ, সে তো ঠিক।
-“চল রবি”। রাজীব নিজের প্যান্টের চেন টেনে বাথরুম থেকে বেরতে বেরতে বললো। আসলে আমার হয়ে যাবার পরও ওর জন্যে অপেক্ষা করছিলাম আমি।আমার পেছন পেছন লাঞ্চরুমের দিকে যেতে যেতে রবি বললো –“রাজীব তুমি আমার সাথে আজ লাঞ্চ করে নাও, তোমার সাথে দু একটা ব্যাপার একটু ডিশকাস করার আছে আমার।
একটু পরেই লাঞ্চরুমের টেবিলে ওর সাথে খেতে বসতে হল আমাকে।খেতে খেতে হটাত রবি খানিকটা ফিসফিস করে আমাকে একটা গোপন খবর দেয়ার মতো ভঙ্গি করে বললো –“রাজীব আমি ডিসিশান নিয়ে ফেলেছি আমাদের কোম্পানি প্রোফাইলের ফ্রন্টপেজে এবং ভেতরে মনীষা কে মডেল করে কয়েকটা ফটো দেওয়ার। আমি এর জন্য একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার ইউজ করতে চাই। মানে মনীষার ওই ফটোগুলো তোলার জন্য”।
ওর কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি। বলে কি ও?
-“মনীষা......হটাত.........?
-“দেখ রাজীব তোমার বউ মনীষা খুব সুন্দরী আর অ্যাট্রাকটিভ ।ওকে আমাদের কম্পানির প্রোফাইলের ফ্রন্টপেজে দারুন মানাবে। সেদিন পার্টিতে ওকে দেখেই আমার মাথায় এসে গিয়েছিল এই আইডিয়াটা”।
সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথার ব্রেন কাজ করতে শুরু করলো। ধান্দাটা যে ওর ভাল নয় সেতো বোঝাই যাচ্ছে।
-“রবি আমার মনে হয় মনীষা রাজী হবে না। দেখ ও তো একটা সাধারন গ্রহবধু, এসব কাজের সেরকম কোন অভিজ্ঞতা ওর আগে থেকে নেই।তাই আমার মনে হয় ও এসব পারবেনা।
-“রাজীব আমরা তো কোন নামি মডেল অ্যাফোর্ড করতে পারবোনা। আমি আসলে চাইছিলাম নতুন কাউকে যাতে করে আমাদের শুধু প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারের খরচাটা দিলেই হয়ে যায়। আমার একটা বন্ধু আছে যে একজন নামকরা প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। ওর নিজের একটা স্টুডিয়োও আছে। ওর সাথে মনীষার ব্যাপারে অলরেডি কথা বলে নিয়েছি আমি, ও একটু কমসম কোরে কোরেদেবে বোলেছে”।
-“কিন্তু রবি মনীষা কি রাজী হবে”?
-“হ্যাঁ ও তো রাজী, সেদিন পার্টিতেই তো ওকে বললাম আমার আইডিয়াটা”।
রবির কথা শুনে আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম। রবিও বোধহয় বুঝতে পারলো আমি অবাক হয়েছি।
-“কেন মনীষা তোমায় বলেনি রাজীব”?
-“না কই ও তো বলেনি”।
-“আশ্চর্য, ও যে আমাকে বললো ওর ছোটোবেলা থেকেই নাকি ফ্যাশান মডেল হবার খুব ইচ্ছে ছিল। মনীষাতো আমাকে একরকম প্রায় হ্যাঁ বলেই দিয়েছে, বলেছে আমি ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে নিলে ও শুধু তোমার পারমিশনটুকু নিয়ে নেবে”।
আমি এবার কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলামনা। মনীষার যে ছোটবেলা থেকে ফ্যাশন মডেল হবার ইচ্ছে ছিল তাই তো কোন দিন আমাকে খুলে বলেনি ও।
-“রাজীব তাহলে তুমি ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভেবে আমাকে তাড়াতাড়ি জানিয়ে দিও”।
-“ঠিক আছে”।
এই বলে রবি মুখ ধুতে চলে গেল।আমি মনে মনে ভাবছিলাম কি ভাবে মনীষা আমাকে না জানিয়েই ওকে হ্যাঁ বলে দিল।তার মানে মনীষা পার্টির পরের দিন ব্রেকফার্স্টের সময়ই কথাটা তুলতো। তাই সেদিন রবির প্রশংসা করে কথা শুরু করেছিল ও।কিন্তু রবির ব্যাপার নিয়ে আমার সাথে ওর খিটিমিটি লেগে যাওয়ায় ও আর আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।ভাবছিলাম রবি সত্যি কি স্মার্ট, সেদিন পার্টিতে আমি যখন বাথরুমে গিয়েছিলাম, তখন ওই অল্প সময়ের মধ্যেই ও মনীষাকে ইমপ্রেস করে ওকে রাজী করিয়ে নিয়েছে।আচ্ছা রবি কি তাহলে কোনভাবে মনীষার কাছে আসার চেষ্টা করছে? এমনিতে মনীষার সাথে দু একটা অফিস পার্টিফার্টি ছাড়া ওরতো দেখা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আর কোন মহিলার সাথে কথা বলা গেলে তবেই তো তাকে ইমপ্রেস করা যাবে।তার মানে মনে হয় এই মডেলিং এর ছুতোয় রবি কোন ভাবে মনীষার কাছে আসার চেষ্টা করছে ।
সেদিন রাতে গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি ফেরার সময় নানা রকমের উদ্ভট চিন্তা আমার মাথায় আসছিলো। এই রবি বোকাচোঁদাটা নিজেকে ভাবে কি? মনীষা আমার বিয়ে করা বউ। আমাকে আগে কোন কিছু না বলে ও কিভাবে মনীষাকে এই প্রস্তাব দিতে পারে। যত ভাবছিলাম তত মাথা গরম হচ্ছিল আমার। আমি যেন মানসচক্ষে দেখতে পাচ্ছিলাম মনীষা প্রায় অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় নানা রকম উত্তেজক পোজ দিচ্ছে আর রবি একটা ক্যামেরা নিয়ে নানা রকম অ্যাঙ্গেলে মনীষার প্রচুর ছবি নিচ্ছে। রাগে মাথাটা যেন ফেটে যাবে মনে হচ্ছিল আমার। যাই হোক কোনক্রমে মন থেকে ওই সব উদ্ভট চিন্তা সরিয়ে আমি বাড়ি পৌছলাম।
পরের সোমবারে অফিসে একটা স্টাফ মিটিং ছিল। সোমবার এই ধরনের মিটিং আমার ভীষণ বাজে লাগে। একেতো সপ্তাহের শুরু বলে সোমবারে অনেক কাজ থাকে, তারপর স্টাফ মিটিংএ নিজের মার্কেটিং টিমের হয়ে একটা ছোটো খাট বক্তিতা দিতে হয়।কখনো দরকার হলে মান্থলি রিপোর্ট ও সাবমিট করতে হয়।সবচেয়ে বাজে লাগে অন্য সব মার্কেটিং টিমের বকর বকর শোনা।সাধারনত এই সব স্টাফ মিটিং শেষ হতে হতে প্রায় লাঞ্চ আওয়ার হয়ে যায়। তাছাড়া এরকম দিনে মিটিং শেষ হবার পর সাড়া দিনের কাজও শেষ করে বেরতে হয়। ফলে বেরতে বেরতে প্রায় রাত নটা হয়ে যায়। তবে একটা ব্যাপারই রক্ষে যে স্টাফ মিটিং হয় সাধারনত তিন মাসে একবার।
গত সপ্তাহে মনীষার সাথে সামান্য একটা ছোটোখাটো ব্যাপার নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ায় এমনিতেই মন মজাজ খারাপ ছিল আমার। অফিসে ঢুকেই যেই শুনলাম রবি আজকে জেনারেল স্টাফ মিটিং ডেকেছে, সঙ্গে সঙ্গে মেজাজটা আরো খিঁচরে গেল। কি আর কোরবো, তাড়াতাড়ি একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে কনফারেন্স রুমে গিয়ে বসলাম। একটু পরেই রবি ঢুকে পরলো কনফারেন্স রুমে আর মিটিং চালু করে দিল।“ফিউচার মিডিয়া আজ পর্যন্ত তার হিস্ট্রিতে সবচেয়ে বড় কনট্র্যাক্ট পেতে চলেছে শর্মা প্রোডাক্টের হাত ধরে। আমাদের সমস্ত মার্কেটিং টিমকে একযোগে হাতে হাত মিলিয়ে নেমে পরতে হবে এই প্রকল্পকে, এই কনট্র্যাক্টকে, সফল করতে”............ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে শুরু করলো।মিটিং প্রায় দশ মিনিট চলার পর হটাত আমাদের মার্কেটিং টিমের ঋতিকা এসে উপস্থিত হল। একটা কথা বলা হয়নি, এই ঋতিকা মেয়েটিকে আমিই ঢুকিয়েছি ফিউচার মিডিয়ায়। আমার কলিগ শেখরের রেফারেন্সে এসেছিল বলে ওকে একবারে ঢুকিয়ে নিয়েছি আমাদের টিমে।ওর স্বামী একটা জুটমিলে কাজ করতো।হটাত করে জুটমিলটা স্ট্রাইকে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওর চাকরি চলে যায়। ঋতিকা এখন ওর বর আর ওর পাঁচ বছরের একটা বাচ্ছাকে নিয়ে খুব মুস্কিলে পরেছে।ওর স্বামীটা নাকি অনেক চেষ্টা করেও আর কোন ভাল চাকরি জোগাড় করতে না পেরে ফ্রাসট্রেটেড হয়ে মদ খাওয়া শুরু করেছে।মেয়েটা কিন্তু ভীষণ স্মার্ট। কে বলবে এক বাচ্চার মা।আমাকে ভীষণ রেস্পেক্ট করে ও।ওর সাথে আমার একটা প্লেটোনিক সম্পর্ক আছে। চাইলে হয়তো শারীরিক সম্পর্কও হয়ে যেত বিশেষ করে ও এখন যেরকম অর্থনৈতিক কষ্টে আছে।কিন্তু আমি মনীষাকে ছাড়া আর কারো সাথে শোবার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা বলে আমাদের সম্পর্কটাকে অতি সাবধানে প্লেটোনিকই রেখেছি।
যাই হোক যে কথা বলছিলাম। এই ধরনের স্টাফ মিটিংএ আমরা কেউ দেরি করে আসিনা। ঋতিকা মিটিংএ দেরি করে ঢোকাতে সবাই ভাবলো রবি হয়তো কিছু বলবে ওকে দেরি করে আসার জন্য।সবাইকে আশ্চর্য করে রবি নিজের স্পিচ থামিয়ে বললো –“হাই ঋতিকা, এস এস, তোমাকে আজ দারুন লাগছে দেখতে”।
ঋতিকা লজ্জায় মাথা নিচু করে কাউর দিকে না তাকিয়ে বললো –“সরি স্যার আই এম লেট”। ব্যাপারটা দেখে আমার মনে হল অফিসে যে রিউমারটা উড়ে বেড়াচ্ছে সেটা একবারে সঠিক। মিটিং চলাকালীন থেকে থেকেই ওদের পরস্পরের দিকে তাকানো থেকে যে কেউ বলে দেবে ওদের মধ্যে নিশ্চই কিছু একটা চলছে। ঋতিকা আমার মার্কেটিং টিমের মেম্বার।আমি ঠিক করলাম ব্যাপারটা নিয়ে রবির সাথে কথা বলবো।একজন বিবাহিত স্টাফ কে জড়িয়ে অফিসে এরকম একটা রিউমার ছড়ানো ভাল কথা নয়। আর তাছাড়া এভাবে চললে ঋতিকা কে আমাদের টিমে রাখাও মুস্কিল হয়ে পরবে। কারন টিম মিটিংএ কেউ যদি কোন কারনে রবির সমালোচনা করে আর ও যদি রবিকে গিয়ে সব লাগিয়ে দেয় তাহলেতো খুবই মুস্কিল।
শেখরের দিকে চোখ পরলো আমার। ঋতিকা আর রবির থেকে থেকেই একে অপরের দিকে তাকানো দেখে ওর তো হাঁসি চাপাই দুস্কর হয়ে উঠেছে।যাই হোক আমি মিটিংএ মন দেবার চেষ্টা করলাম।শর্মা প্রোডাক্টের কনট্র্যাক্টটা রবি কিভাবে পেয়েছে আর কিরকম ব্লাইন্ডলি একসেপ্ট করেছে সেটা জানার পর, রবির মুখে লংটার্ম রিলেশনশিপ, উইন উইন সিচুয়েশন, কোম্পানি বিজনেস সিকিউরিটি ইত্যাদি বড় বড় কথা শোনা প্রায় অসহ্য হয়ে উঠছিল। যাই হোক অনেক কষ্টে কয়েক ঘণ্টা কাটানোর পর অবশেষে লাঞ্চ আওয়ার এলো আর আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।মিটিংএ ডিসিশন হয়ে গেল শর্মা প্রোডাক্টের সাথে কনট্র্যাক্টটা আমরা নিচ্ছি, ওদের সাথে ফাইনাল নেগসিয়েশন হবে বৃহস্পতি আর শুক্রবার, সোমবার কনট্র্যাক্ট সাইন হবে, আমাদের কয়েকজন সিনিয়র মার্কেটিং হেড কে নিয়ে বানানো টিম মুম্বাই উড়ে যাবে শর্মা প্রোডাক্টের হেড অফিসে ওদের সাথে কনট্র্যাক্ট সাইন করতে।
মিটিং শেষ হবার পর আমি সোজা বাথরুমের দিকে গেলাম।বাথ রুমের ইউরিনারে নিজেকে হালকা করে প্যান্টের জিপার টানছি এমন সময় আমার পাশে বেসিনের ওপর লাগানো আয়নাতে দেখতে পেলাম রবি ঢুকছে বাথরুমে।ওর হাতে একগাদা ফাইল ভর্তি। রবি ফাইলগুলো বেসিনের পাশে একটা জায়গায় রেখে মুখ ধুতে ধুতে আমাকে জিজ্ঞেস করলো –“আরে রাজীব, সব ঠিক ঠাক তো”?
–“হ্যাঁ রবি আমি ঠিক আছি”
–“আচ্ছা রাজীব একটা কথা বল” রবি রুমালে নিজের মুখ মুছতে মুছতে বললো।
-“কি”?
-“আমাদের এই শর্মা প্রোডাক্টের সাথে এগ্রিমেন্টের সময় যে প্রপোসালটা আমরা ওদের কে দেব, সেই পেপারগুলোর প্রেজেন্টেসানের ব্যাপারে তোমার কোন ভাল আইডিয়া আছে।
-“মানে”?
-“মানে আমাদের কোম্পানির প্রোফাইলের কথাটাই যদি ধর। ওগুলো প্রফেসনালি বানাতে পারলে তবেইনা আমাদের কম্পানির ইমপ্রেসানটা ভাল হবে ওদের কাছে, তুমি কি বল”?
-“হ্যাঁ রবি, তুমি ঠিক বলছো, তবে ও ব্যাপারে আমি এখনো সেরকম কিছু ভেবে উঠতে পারিনি”।
-“আমি ভাবছিলাম যদি কোন অ্যাডভার্টাইসমেন্ট ওয়ার্ল্ডের প্রফেশনাল লোককে দিয়ে আমাদের কোম্পানি প্রোফাইলটা বানাতে পারি”।
-“হ্যাঁ, সে তো ভালই হয়”
_”আমি এও ভাবছিলাম যদি কোন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার জোগাড় করে আমাদের সার্ভিস ওরিয়ন্টেড কিছু ফটোগ্রাফ অ্যাড করতে পারি আমাদের প্রোফাইলে তো ব্যাপারটা দারুন হয়।
-“বাঃ তোমার এই আইডিয়াটা বেশ ভাল রবি”।
-“রাজীব আমি চাইছি কভার পেজে যদি কোন সেক্সি একটা মহিলা মডেলের ছবি দিয়ে দেওয়া যায়, মানে আজকাল তো সুন্দরী মেয়েদের ছবি ছাড়া কোন অ্যাডভার্টাইসমেন্ট কমপ্লিটই হয়না”।
-হ্যাঁ, সে তো ঠিক।
-“চল রবি”। রাজীব নিজের প্যান্টের চেন টেনে বাথরুম থেকে বেরতে বেরতে বললো। আসলে আমার হয়ে যাবার পরও ওর জন্যে অপেক্ষা করছিলাম আমি।আমার পেছন পেছন লাঞ্চরুমের দিকে যেতে যেতে রবি বললো –“রাজীব তুমি আমার সাথে আজ লাঞ্চ করে নাও, তোমার সাথে দু একটা ব্যাপার একটু ডিশকাস করার আছে আমার।
একটু পরেই লাঞ্চরুমের টেবিলে ওর সাথে খেতে বসতে হল আমাকে।খেতে খেতে হটাত রবি খানিকটা ফিসফিস করে আমাকে একটা গোপন খবর দেয়ার মতো ভঙ্গি করে বললো –“রাজীব আমি ডিসিশান নিয়ে ফেলেছি আমাদের কোম্পানি প্রোফাইলের ফ্রন্টপেজে এবং ভেতরে মনীষা কে মডেল করে কয়েকটা ফটো দেওয়ার। আমি এর জন্য একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার ইউজ করতে চাই। মানে মনীষার ওই ফটোগুলো তোলার জন্য”।
ওর কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি। বলে কি ও?
-“মনীষা......হটাত.........?
-“দেখ রাজীব তোমার বউ মনীষা খুব সুন্দরী আর অ্যাট্রাকটিভ ।ওকে আমাদের কম্পানির প্রোফাইলের ফ্রন্টপেজে দারুন মানাবে। সেদিন পার্টিতে ওকে দেখেই আমার মাথায় এসে গিয়েছিল এই আইডিয়াটা”।
সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথার ব্রেন কাজ করতে শুরু করলো। ধান্দাটা যে ওর ভাল নয় সেতো বোঝাই যাচ্ছে।
-“রবি আমার মনে হয় মনীষা রাজী হবে না। দেখ ও তো একটা সাধারন গ্রহবধু, এসব কাজের সেরকম কোন অভিজ্ঞতা ওর আগে থেকে নেই।তাই আমার মনে হয় ও এসব পারবেনা।
-“রাজীব আমরা তো কোন নামি মডেল অ্যাফোর্ড করতে পারবোনা। আমি আসলে চাইছিলাম নতুন কাউকে যাতে করে আমাদের শুধু প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারের খরচাটা দিলেই হয়ে যায়। আমার একটা বন্ধু আছে যে একজন নামকরা প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। ওর নিজের একটা স্টুডিয়োও আছে। ওর সাথে মনীষার ব্যাপারে অলরেডি কথা বলে নিয়েছি আমি, ও একটু কমসম কোরে কোরেদেবে বোলেছে”।
-“কিন্তু রবি মনীষা কি রাজী হবে”?
-“হ্যাঁ ও তো রাজী, সেদিন পার্টিতেই তো ওকে বললাম আমার আইডিয়াটা”।
রবির কথা শুনে আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম। রবিও বোধহয় বুঝতে পারলো আমি অবাক হয়েছি।
-“কেন মনীষা তোমায় বলেনি রাজীব”?
-“না কই ও তো বলেনি”।
-“আশ্চর্য, ও যে আমাকে বললো ওর ছোটোবেলা থেকেই নাকি ফ্যাশান মডেল হবার খুব ইচ্ছে ছিল। মনীষাতো আমাকে একরকম প্রায় হ্যাঁ বলেই দিয়েছে, বলেছে আমি ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে নিলে ও শুধু তোমার পারমিশনটুকু নিয়ে নেবে”।
আমি এবার কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলামনা। মনীষার যে ছোটবেলা থেকে ফ্যাশন মডেল হবার ইচ্ছে ছিল তাই তো কোন দিন আমাকে খুলে বলেনি ও।
-“রাজীব তাহলে তুমি ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভেবে আমাকে তাড়াতাড়ি জানিয়ে দিও”।
-“ঠিক আছে”।
এই বলে রবি মুখ ধুতে চলে গেল।আমি মনে মনে ভাবছিলাম কি ভাবে মনীষা আমাকে না জানিয়েই ওকে হ্যাঁ বলে দিল।তার মানে মনীষা পার্টির পরের দিন ব্রেকফার্স্টের সময়ই কথাটা তুলতো। তাই সেদিন রবির প্রশংসা করে কথা শুরু করেছিল ও।কিন্তু রবির ব্যাপার নিয়ে আমার সাথে ওর খিটিমিটি লেগে যাওয়ায় ও আর আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।ভাবছিলাম রবি সত্যি কি স্মার্ট, সেদিন পার্টিতে আমি যখন বাথরুমে গিয়েছিলাম, তখন ওই অল্প সময়ের মধ্যেই ও মনীষাকে ইমপ্রেস করে ওকে রাজী করিয়ে নিয়েছে।আচ্ছা রবি কি তাহলে কোনভাবে মনীষার কাছে আসার চেষ্টা করছে? এমনিতে মনীষার সাথে দু একটা অফিস পার্টিফার্টি ছাড়া ওরতো দেখা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আর কোন মহিলার সাথে কথা বলা গেলে তবেই তো তাকে ইমপ্রেস করা যাবে।তার মানে মনে হয় এই মডেলিং এর ছুতোয় রবি কোন ভাবে মনীষার কাছে আসার চেষ্টা করছে ।
সেদিন রাতে গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি ফেরার সময় নানা রকমের উদ্ভট চিন্তা আমার মাথায় আসছিলো। এই রবি বোকাচোঁদাটা নিজেকে ভাবে কি? মনীষা আমার বিয়ে করা বউ। আমাকে আগে কোন কিছু না বলে ও কিভাবে মনীষাকে এই প্রস্তাব দিতে পারে। যত ভাবছিলাম তত মাথা গরম হচ্ছিল আমার। আমি যেন মানসচক্ষে দেখতে পাচ্ছিলাম মনীষা প্রায় অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় নানা রকম উত্তেজক পোজ দিচ্ছে আর রবি একটা ক্যামেরা নিয়ে নানা রকম অ্যাঙ্গেলে মনীষার প্রচুর ছবি নিচ্ছে। রাগে মাথাটা যেন ফেটে যাবে মনে হচ্ছিল আমার। যাই হোক কোনক্রমে মন থেকে ওই সব উদ্ভট চিন্তা সরিয়ে আমি বাড়ি পৌছলাম।