Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance স্বীকারোক্তি by Anangapal (Uncompleted)
#16
।। ১২ ।। গৌরচন্দ্রিকা



ছেলেবেলায় কলেজ থেকে একবার সায়েন্স সিটিতে নিয়ে গিয়েছিল। আন্দাজ ক্লাস ফোর বা ফাইভে। তখন বয়স অল্প, পৃথিবীটাকে অন্য চোখে দেখতাম। সর্ব বিষয়ে জানতে চাওয়ার অদম্য কৌতূহল কাজ করত মনের ভিতর। প্রশ্নগুলো কিছুতেই আর ফুরোতে চাইত না। অনন্ত জিজ্ঞাসার মাঝে জীবনের গতি ছিল সহজ-সরল, একরৈখিক, একমাত্রিক। অনর্থক জটিলতার স্থান ছিল না কোনও, বোধকরি জটিলতা শব্দের মানেটাও আটকে ছিল সিঁড়িভাঙা অঙ্কের ধাপে ধাপে। একদিকে সুপ্ত বাসনা ছিল ‘বড় হয়ে’ দুনিয়াটাকে মুঠোয় পোরার, তেমনই বিস্মিত হতাম অল্পেতেই। তৎকালীন বাইপাসের সুনসান জনহীন প্রান্তরে বিজ্ঞান-নগরীর সুবিশাল গম্বুজাকৃতি প্রেক্ষাগৃহে বসে অপার বিস্ময়ে দেখেছিলাম আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম ভয়ঙ্কর অরণ্য সেরেঙ্গিটির বুকে বিচিত্রদর্শন হরেকরকম জীবজন্তুর কাণ্ডকারখানা। জলে-ডাঙায়-অন্তরীক্ষে তাদের বর্ণময় জীবনযাত্রার ক্যামেরাধৃত অংশবিশেষ নিরীক্ষণ করে কৈশোরের পথে পা বাড়ানো বালকের সেদিন বাক্যি হরে গিয়েছিল। কি এক অদ্ভুত ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল সে। বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে সন্ধে-নামা অন্ধকারে বাড়ি ফেরার পরেও সেই ঘোর কাটেনি অনেকক্ষণ। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় চোখের পাতা জুড়ে ছিল সদ্য নাম-জানা বন্য প্রাণীদের দল; তাদের শিকার ধরার রকমারি পদ্ধতি, অলস গৃহস্থালীতে বেড়ে ওঠা শাবকদের প্রতি জান্তব অপত্যস্নেহ, তপ্তখরার ঊষর দিনে জলপান বিরতিতে খাদ্য-খাদকের অদ্ভুত সহাবস্থান। অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশের এক আকাশ আলোর নীচে অবিরাম বেজে চলা আদিবাসীদের ঢাকের দ্রিমিদ্রিমি শব্দের আড়ালে কখন যেন দু’চোখে জড়িয়ে এসেছিল ঘুমের চাদর।

তারপর কেটে গিয়েছে দেড় দশকেরও বেশি। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সেদিনের প্রায়-কিশোর আজ পরিণতবয়স্ক যুবা। একটার পর একটা ধাপ পেরোতে পেরোতে জীবন ক্রমে জটিল থেকে জটিলতর। মুঠোয় দুনিয়াটাকে নেওয়ার অলীক স্বপ্ন সে আর দেখে না, বরং এই গ্রহেরই মত গোলাকৃতি নরম কিছুর স্পর্শে উৎফুল্ল হয় হাতের স্নায়ু-পেশীরা। জনবিরল ই.এম. বাইপাসই বা আজ কোথায়? নিত্যনতুন রেস্তোঁরা, শপিং মল আর আবাসনের বিনির্মাণে মুখ ঢেকে ফেলা সড়ককে বর্তমানে চেনা দায়। পুরনো জগতটা চোখের সামনে খোলনলচে সমেত একটু একটু করে বদলেছে, বদলেছে ভিতর-বাইরের আমিটাও। সেরেঙ্গিটি শব্দটা এখন বহুলশ্রুত, তার সম্বন্ধে কোনও কিছু জানার প্রয়োজন হলে মাউসের কয়েকটা ক্লিকেই উইকিপিডিয়া, গুগল, ইউটিউব এনে হাজির করে রাশি রাশি তথ্যের ভাণ্ডার।

গতিময় জীবনে পরিবর্তনের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া সেই আফ্রিকান ঢাকের সহসা নিনাদে হৃদয় আজ তাই স্বভাবতই উদ্বেল। মিহি সুরেলা নারীকণ্ঠে বোমাবর্ষণ হচ্ছে একের পর এক, আর বুকের মাঝে প্রলয়ঙ্কর ভূকম্পনে টালমাটাল এত বছরের সম্পর্কের ভিত। যে শক্ত জমির ওপরে দাঁড়িয়ে দু’জনে রচেছিলাম ভালবাসার যৌথ ইমারত, তার মাটি আলগা ঝুরো ঝুরো হয়ে নড়িয়ে দিচ্ছে তাজমহলের প্রতিটি মিনার। কয়েকশ’ বছরের স্থাপত্য কীর্তি বুঝি কয়েক সেকেণ্ডের প্রলয়েই ধূলিসাৎ হবে। কি অদ্ভুত নিয়ম এই ভাঙাগড়ার খেলায়!

প্রকৃতি যখন প্রলয়ঙ্করী, মানুষ তার সামনে অসহায় শিশু। নির্বাক হয়ে দেখে চলে তাণ্ডবের উল্লাস, চোখে নামে আশঙ্কার ছায়া। সব হারানোর ভয়ে আচ্ছন্ন সত্তা হাঁটু গেড়ে করজোড়ে ভিক্ষা চায় নিঠুরা দেবীর কাছে। পুরুষ ও প্রকৃতির রসায়নও সেইরকমই অনিশ্চয়তায় ভরপুর। দৈহিক বলে বলীয়ান পুরুষ নারীকে ভাবে অবলা, নিজের হাতের ক্রীড়নক, শরীরখেলার সামগ্রী। আপন অধিকারবলে গ্রাস করতে চায় অসহায়া রমণীকে। সহসা কোনও এক বিশেষ মুহূর্তে সে মায়াবিনী নিজের জাল বিস্তার করে। তার আশ্চর্য ভোজবাজির সামনে দুর্দমনীয় পুরুষ তখন নীরব দর্শকমাত্র। নিঃসহায়, নিঃসম্বল। নতজানু হয়ে দেখে চলে স্বৈরিণীর মায়ামুকুরে নিজ প্রতিবিম্ব। সৃষ্টির আদিকাল থেকে প্রবহমান এ পরম্পরা... ‘সেই ট্র্যাাডিশন সমানে চলিতেছে’।

নিঃসহায় আমিও। নতজানু নই অবশ্য, আপন নারীর বাহুপাশে আবদ্ধ। নিস্পন্দ শুয়ে আছি ওর দেহের উত্তাপ গায়ে মেখে, কোমল স্তনের উষ্ণ স্পর্শে, লুটিয়ে পড়া বিস্রস্ত চুলের বেড়াজালে। শুধু বুকের ভিতর মাদলের আদিম শব্দ একটানা বেজে চলেছে। আপাতদুর্বোধ্য সে শব্দের ভাষা জানি আমি। আর জানে ও। এ ভাষার পাঠ নেই কোনও বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে, কোনও শিক্ষাপর্ষদ নিজেদের পাঠ্যক্রমে এ ভাষা অনুমোদন করেন না। তবুও আমরা তা শিখি, শিখে যাই... প্রকৃতির পাঠশালাতে। এ ভাষার নাম ঈর্ষা। বিস্তারিত অর্থে যৌনঈর্ষা। নারীর স্বেচ্ছাচারে ক্ষতবিক্ষত পুরুষের সাধ্য কি সে ভাষা ভুলে যাওয়ার!

...

“কাঁহা খো গ্যয়ে জনাব?”

জলতরঙ্গের আওয়াজে সম্বিৎ ফেরে। স্মৃতিরা একে একে ভিড় করে আসছিল... কলকাতার বাড়িতে স্নানঘরের নির্জনতা, অনুষ্ঠানবাড়ির একান্ত নিভৃতে পাওয়া বিকেলের অংশবিশেষ, চিলেকোঠার প্রায়ান্ধকারে স্কাইপ চ্যাট। কি বিচিত্র এই জীবন, কি বর্ণময় তার গতিপ্রকৃতি! মূর্খের মত কল্পনার জাল বুনে গিয়েছি একের পর এক, ঘুণাক্ষরেও যদি জানতে পারতাম বাস্তবে কি ঘটছে, ঘটতে চলেছে...

“তুই চেয়েছিলি? না ও নিজেই...”

বাক্যটা অসমাপ্ত থেকে যায়, ইঙ্গিতটা নয়। আবারও তীব্র চোখে দেখছে আমায়। যেন বোঝার চেষ্টা কেন আমার এই জিজ্ঞাসা।

“Why are you asking this?”
“মানে কিছু না, এমনিই...”, আমতা আমতা করতে থাকি। নিজের কাছেই যে স্পষ্ট নয় প্রশ্নটা!
“How does it matter to you?”

মনের গভীরে পুনরায় ডুব দিতে হয়। না, আত্মসমীক্ষার জন্য নয় একেবারেই। জুতসই কোনও জবাবের সন্ধানে।

“আসলে ভেবেছিলাম ফিরে এসে মলম লাগিয়ে দেব, তা সে সুযোগ আর হল কই”

স্ত্রীজাতিকে বশে আনার এই এক মোক্ষম অস্ত্র। আত্মসমর্পণ করো, সাথে কিছুটা স্তাবকতা। বুঝতে সে সবই পারবে, আবার সব বুঝে নির্লজ্জ তোষামোদে গলেও যাবে ঠিক। পদ্ধতিটা অবশ্য ন্যায়সঙ্গত নয়, তা প্রেমে আর রণে সেসব কে কবে মেনেছে?

যথারীতি কাজ হল। উদ্ধত ভাব প্রশমিত, আয়ত চোখের তারায় কৌতুকের আভাস। যেন জরিপ করতে চাইছে পুরুষের আর্তির গভীরতা।

“ওওও, অন্তুবাবুর রাগ হয়েছে অন্যকে দিয়ে কাজটা করিয়েছি বলে?”
“রাগ কেন হবে, তবে এটা এক্সপেক্ট করিনি”, এবারে আমি অকপট।
“কি এক্সপেক্ট করিসনি? পরপুরুষকে নিজের বুকে হাত দিতে দেব?”
“ঠিক তা নয়, তবে তোর যা ইমেজ...”, চোখ বড় বড় করছে দেখে পাদপূরণে ইচ্ছাকৃত খোঁচা দিই সামান্য, “হাজার হোক সতীরানী বলে কথা!”

একটু থমকাল। ‘সতীরানী’ সম্বোধনের চিরকালীন স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নেই, দূরমনস্ক চোখে কি যেন ভাবছে। ব্যাপারটা কি? রহস্যময়ী যে ক্রমশ আরও রহস্যের আবর্তে নিয়ে যাচ্ছে! নাঃ, এই উৎকণ্ঠা আর নেওয়া যায় না। উত্তরের আশায় অল্প ফোলা বাম স্তনের ওপর মৃদু চাপ দিই। আঙুলে লাগে কি এক অজানা উষ্ণতার ছোঁয়া।

“May be not any more”, যেন বহুদূর থেকে ভেসে আসে ওর কণ্ঠস্বর।
“মানে?”
“I think you may now stop calling me that.”
“Call you what, সতীরানী?”, নীরবে ঘাড়ের ঈষৎ সঞ্চালনে বুঝিয়ে দেয় সম্মতি। ওর দৃষ্টি এখনও নিবদ্ধ দূরে কোথাও।

এ যে ক্রমাগত বিষয়টা জটিল করে তুলছে! আর তো পারা যায় না, একটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার। বোঝাপড়ার অভিপ্রায়ে পাশ ফিরে শুই। আমার নিঃশ্বাস এখন সরাসরি ওর গালের লালচে আভায়। সদ্যস্নাত পবিত্র মুখটাতে কি এক দ্বন্দ্ব অবিরাম খেলা করে বেড়ায়। চোখের কোণে সংশয়ের পাণ্ডুরতা। বাঙ্ময় হয়ে উঠতে চাওয়া ঠোঁটগুলো তিরতির কাঁপছে। অবাধ্য চুলের ঊর্ণনাভে ঢেকে থাকা এই কুহকিনীর আকর্ষণ আজও ফিকে হল না এতটুকু। নিষ্পলক চেয়ে থাকি। বুকের ভিতর থেকে একদলা আবেগ এসে ধাক্কা মারে কণ্ঠনালীতে। গলার কাছটা শুকিয়ে গেছে, একটু জল খেতে পারলে ভাল হত। অদম্য পিপাসার বশেই কিনা কে জানে, ওর পূর্ণযুবতী স্তনের ওপর আরও দৃঢ় হয় আমার মুঠি। যেন প্রাণপণে ঘোষণা করতে চাইছে নিজ অধিকার। কি চায় মন? খানিক আগেই যাকে অন্য পুরুষ হয়ে রমণ করেছি উন্মাদের মত, তার শরীরে বিজাতীয় স্পর্শের সম্ভাবনায় আপাদমস্তক অস্থির হয়ে উঠছে কেন? ঈর্ষায় ছটফটিয়ে ওঠে হৃদয়, চেনা নারীদেহের উপত্যকায় পুনর্বার আক্রমণের ইচ্ছে চাগাড় দেয় ভিতর থেকে। কিন্তু... উপায় নেই যে!

অস্থিরতাটা বোধহয় সঞ্চারিত হয়েছে এক মন থেকে আরেক মনে। দৃষ্টি না ফিরিয়েই আবার ও কৈফিয়তের পাতা ওল্টালো।

“তুই চাইতিস তো আমি অন্যদের সাথে... That I interact with other men more openly. Well, perhaps, I have crossed the barrier by a few miles.”

হেঁয়ালির আবরণ ছাড়িয়ে একটা আপাত অসম্ভব সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে নাকি? অশান্ত হয়ে উঠতে থাকা মনকে কোনওমতে সামলাই, মুখের রেখায় অবশ্য তার প্রভাব পড়ে না তেমন। নির্নিমেষ চাহনিতে জিজ্ঞাসা ফুটে থাকে। ও-ও বুঝতে পেরেছে সেটা। আগের কথার খেই হারিয়ে কিঞ্চিৎ অসংলগ্নভাবেই বলে চলে...

“লাস্ট সানডের পরে আমার মেণ্টালিটি অনেকটা চেঞ্জ করেছে। সঞ্জীবের সাথে ওর বাড়িতে... I am not saying যে ওটা দারুণ এক্সপেরিয়েন্স ছিল….. But, but... I learned a lot from that. He is not at all a bad guy, rather I would say the opposite. And steal he ended up molesting me, even though... he, he loves me.”, যেন বহুযুগের ওপার থেকে এইমাত্র আমার দিকে চোখ মেলে তাকাল... পূর্ণদৃষ্টিতে, স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারিত পরবর্তী শব্দগুলো, “Yes I am most certain about it. The way he was touching me, so tender, so gentle... আমি তোকে ঠিক বোঝাতে পারব না বাট ট্রাস্ট মি, মেয়েরা এগুলো ঠিক বুঝতে পারে। ইভন যখন ও আমার... বুকে হাত রেখেছিল... পাগলের মত টিপছিল তখনও আমার একটুও ব্যথা লাগেনি বরং ওকে থামাবার বদলে ওর চোখে চোখ আটকে গেছিল। I could read his mind in his deep eyes... It was like he was begging me for something, something he knows himself can not be his... আর ও তারপর যেই আমার... ব্রেস্টগুলো চুষতে লাগল, I was totally cluless what to do. I can’t blame entirely, আমি নিজেই তো ওরকম সিডাকট্রেস এর মত সেজে ওর কাছে গেছি। I realised what telling effect my body can have on a decent chap like him. আর ওর কামড়ানোটা, it was just a moment of frenzy. He did not bite me like a rapist, it was more like a... a love bite from an excited lover.”

ওর একটানা বলে চলা কথাগুলো যেন এক কান দিয়ে প্রবেশ করে আরেক কানের দিকে প্রবাহিত হয়ে ঘরের বাতাসে ফের মিশে যাচ্ছে। কর্ণেন্দ্রিয়ের সাথে মস্তিষ্কের যোগাযোগ বুঝিবা এখন বিচ্ছিন্ন, কিংবা আমার বোধশক্তিটাই আকস্মিকতার মরচে পড়ে ভোঁতা হয়ে গেছে? অসাড় জিহ্বা তারইমধ্যে যান্ত্রিক প্রতিবর্তের তাড়নায় কোনওমতে সচল হল।

“তাহলে চড় মারলি কেন?”

বহুক্ষণ পরে বিচ্ছিন্ন হল দৃষ্টিসংযোগ। বিচ্ছিন্ন হল, নাকি বিচ্ছিন্ন করল? ওর মুখের ওপর দিয়ে চকিতে খেলে যাওয়া রক্তাভা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে, সে কি ওর লুকিয়ে রাখা অপরাধবোধ? না, দৃঢ়প্রত্যয়ে আবার আমার দিকে ফিরেছে, চোখের মধ্যে সংকল্প। যেন দাঁতে দাঁত চেপে স্বীকার করবে সত্যিটা। করলও তাই।

“অ্যাকচুয়ালি সেটার কারণ সঞ্জীব নয়, আমি নিজে”, প্রেমিকের বিস্মিত দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলে চলল, “জানি না এটা ওয়াইনের এফেক্ট ছিল নাকি ওর চোখের আকুতি, But I was slowly getting turned on. May be by the ambience, May be because of our close proximity, may be because of your long absence or may be... seeing his giant tool.”, গলাটা শেষদিকে কেমন কেঁপে গেল, সেইসঙ্গে টের পেলাম ওর শরীরে মৃদু কম্পন। অঝোরধারে বরিষণের মাঝে মাধবীলতার ফুলে যেমন থিরথির কাঁপন জাগে... সামান্য কিন্তু নিশ্চিত, একটানা লয়ে কাঁপতে থাকে... অনেকটা সেরকম। এ কাঁপা ভয়ের ততটা নয়, রোমাঞ্চের যতখানি। যেন কুমারীর অপাপবিদ্ধ দেহ সহসা স্পর্শ করে ফেলেছে কোনও অচেনা পুরুষের দীর্ঘ, সুকঠিন শিশ্ন। আচমকাই মাথার মধ্যে বিদ্যুচ্চমক, ওর শরীরও কি তবে সেই নিষিদ্ধ স্পর্শ স্মরণ করে রোমাঞ্চে পুলকিত হচ্ছে? ভাবনার মাঝেই অনুভব করলাম কোমরের নীচে, দুই উরুর সন্ধিস্থলে ক্রমশ জাগ্রত পৌরুষের অস্তিত্ব... আরেকটু উত্তেজনার ইন্ধন পেলেই যা ছুঁয়ে ফেলবে প্রেয়সীর উন্মুক্ত নিরাবরণ জঙ্ঘা। সন্তর্পণে নিজের দেহকাণ্ডকে কিছুটা সরিয়ে নিই, আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় চোখ চলে যায় ওর চোখের দিকে, দেখে ফেলেনি তো? নাঃ, সে নিজের স্মৃতিচারণে বিভোর...

“It was a completely new situation I never faced before. ও যেন একটা ট্রান্সের মধ্যে চলে গেছিল। গোটা মুখচোখ লাল, He was breathing so heavily, Like a drowning man gasping for air and... I didn’t tell you this before, he was continuously murmuring that... He loves me”, ও নিজেই বুঝি দম নেওয়ার জন্য একটু থামল, বুকভরা বাতাসের ভারে পেলব স্তনগুলো উত্থিত হল ইঞ্চিখানেক, “It has been a long long time since anyone but you uttered those words to me... I got আই গট... I was so horny that I can’t tell you Honey! ফাইন্যালি ও যখন আমার... বুবস নিয়ে খেলা করছিল, I suddenly felt my nipples were poking through my blouse, Oh God! You can’t imagine how embarrassing it was for me... And at the same time how exciting, how sexy... আমি প্লেজারের চোটে ওর মাথাটা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম for a moment, আর তখনই ও... He bit my breast, right there”, পলকের জন্য বিরতি। তারপর আবার মুখর রমণীকণ্ঠ, “I felt enormous pain and I also could feel the absolute pleasure through that pain. আমি... For a moment চাইছিলাম ওকে পেতে... may be ওকে নয়, ওর মধ্যে দিয়ে তোকেই পেতে চাইছিলাম... আমি জানি না কি চাইছিলাম এক্স্যাক্টলি... Don’t really know what was that. And then I came to my senses... আর আমার এত গিলটি ফিল হচ্ছিল! I was so so ashmed of myself, ... I was trying to get rid of his embrace, but I couldn’t... He is so strong, but I had to get out of that mess at any cost... so, I had no option but to slap him... বাকিটা তো তুই অলরেডি জানিস”

নারীর কথকতা স্তব্ধ হয়েছে, অন্তত সাময়িক। পরপুরুষের আলিঙ্গনে কাটানো মুহূর্তের রোমন্থন নিজ প্রেমিকের কাছে করার গ্লানিতে, অথবা রোমাঞ্চঘন সেই বিকেলের ক্ষণিক উত্তেজনার লীনতাপে, এখনও তার দেহ উষ্ণতা বিকিরণ করে চলেছে ক্রমাগত। স্মৃতিসঞ্জাত আবেগে অধর স্ফুরিত, শ্বাস পড়ছে ঘন ঘন, দয়িতের হাতের মুঠোয় ধরা পড়া স্তনের বৃন্ত জেগে উঠেছে আচমকা। ওর বুকের লাবডুব চতুর্গুণ হয়ে আছড়ে পড়ছে আমার করতলে। শ্রান্ত, উদ্বেল মানবী টেরও পায়নি তার অনাবৃত জঙ্ঘাদেশে কঠিন পৌরুষের আতপ্ত স্পর্শ। হঠাৎ মায়ায় ঘিরে ধরল আমাকে, নিজের সবটুকু সততা উজাড় করে প্রেমিকের কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিতে আজকের দিনেও ক’টা মেয়ে পারে? পারলেও তা করে কতজন? আমি নিজেই কি পেরেছি মনের দরজা ওর সামনে হাট করে খুলে ধরতে?

মুহূর্তেকের জন্য বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ার আগেই মাথাচাড়া দিয়েছে দুর্নিবার কৌতূহল... বম্বেতে কি ঘটেছিল সেটাই তো এখনও অজানা রয়ে গেল! স্তনের ওপরে মৃদু চাপ দিই মনোযোগ আকর্ষণের জন্য, কোনও সাড়া মেলে না। হয়তো ধরে নিয়েছে এতদিনের অদর্শনের পর হাতের খিদে মেটাচ্ছি এইভাবে... অগত্যা পেষণের মাত্রা বাড়াতে বাধ্য হই।

সকাল থেকে উপর্যুপরি দু’বার রমণের ক্লান্তি আর দ্বিতীয় পুরুষের লাঞ্ছনার স্মৃতির অবসাদ সারা দেহমনে মেখে শুয়ে থাকা নারী চোখ মেলে তাকায়। মিনতিভরা চাহনিতে নীরব আর্তি। সে সব অগ্রাহ্য করে স্বার্থপর আমি প্রশ্ন করে চলি...

“অয়েণ্টমেণ্ট লাগালো কখন?”

মৃন্ময়ী মূর্তি সচকিতে নড়েচড়ে ওঠে, “বললাম তো বম্বেতে যাওয়ার পর”, খানিক ভেবে নেয় কি যেন, “... এখনই শুনবি?”

শোনার জন্য যে কি অপরিসীম আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষমান এই হৃদয় তা তো আর প্রকাশ করতে পারি না! তাও মনের ভাব যথাসাধ্য গোপন করে চেষ্টা করি রাজি করানোর, “হ্যাঁ বল, শুনছি তো”

“উম্মম্ম পরে বলব”, সারা গা মুচড়ে অদ্ভুত মাদকতাময় এক দেহভঙ্গি করে আদরিণী, “এখন কিছু খাওয়া না প্লিজ! I am very hungry Honey, সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছি”

এমন কাতর অনুনয়ের কাছে পুরুষ চিরকাল অসহায়। উদগ্র কৌতূহল আপাতত নিবৃত্ত করে উঠে যাই কিচেনের দিকে। না শোনা অবধি আত্মজল্পনাই সম্বল। যাওয়ার আগে অবশ্য একটু আদিম রসিকতার লোভ সংবরণ করতে পারি না, “না খেয়ে আছিস বলছিস কেন, খাওয়ালাম যে এত কিছু?”

“কই কি আবার খাওয়ালি, I am literally starving!”, অকৃত্রিম জিজ্ঞাসা ওর চোখে।

ঠোঁটের অনুচ্চার সঞ্চালনে চ-কারান্ত তিন-অক্ষর শব্দের উল্লেখমাত্র রাঙিয়ে ওঠে দুই গাল, সলজ্জ কণ্ঠ বেজে ওঠে, “উফফ You are truly incorrigible... শেমলেস কাঁহিকা!” চোখ পাকিয়ে ছদ্ম কোপের আভাস ফুটিয়ে তুলে চকিতে গাত্রোত্থান, এলানো একঢাল চুলকে খোঁপার শাসনে বেঁধে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কয়েক সপ্তাহব্যাপী গিন্নীপনার বিরতিতে ছেদ টানতে। ট্রলিব্যাগের আচ্ছাদন খুলে বের করছে ভেতরের যাবতীয় সামগ্রী, একে একে গুছিয়ে রাখছে জায়গামত। খানিকপরেই মতপরিবর্তন, দৃষ্টি পড়েছে আসবাবপত্রের ওপর। অগোছালো টেবিল এক মিনিটের মধ্যেই তকতকে পরিষ্কার, বাতিল কাগজ আর অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিষের ঠাঁই হল ট্র্যাশবিনে। চোখ সরু করে নাক কুঁচকে গভীর অভিনিবেশে নিরীক্ষণ করছে চারদিক, ব্যাচেলর পুরুষের ঘরের পরিচ্ছন্নতার ছিদ্রান্বেষণে মগ্ন। ব্যস, শুরু হয়ে গেল নিরবচ্ছিন্ন ঘরকন্না, এখন চলবে ঘণ্টাখানেক।

এই হল শাশ্বত নারী। ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। কখনও মোহিনী, কখনও বা মানিনী, পরক্ষণেই ঘর-গেরস্থালিতে বুঁদ হয়ে থাকা অভিজ্ঞ গৃহিণী। হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও তার আবেদন একইরকম অমলিন!

প্যানকেক বানানোর উদযোগ করছি, বেডরুম থেকে রান্নাঘরের সংকীর্ণ পরিসরে ভেসে আসছে বিক্ষিপ্ত দু’-এক টুকরো অসন্তোষবার্তা। ঘর গোছানোর ফাঁকে আপনমনে গজগজ করে চলেছে। তার অধিকাংশ, বলাই বাহুল্য, আমায় এবং আমার পারিপাট্যের অভাবকে লক্ষ্য করে... কান না দিয়ে একাগ্রচিত্তে নিজের কাজ করে যাই। আর যাই হোক এ শর্মার রান্নার হাতকে উনি আজ অবধি অবজ্ঞা করতে পারেননি। জবরদস্ত একটা ব্রেকফাস্ট মুখের সামনে পেলে আপনা থেকেই এত তর্জন-গর্জন থেমে যাবে। তখন পটিয়ে পাটিয়ে বম্বের ঘটনাটা পেট থেকে বের করার আরেকটা চেষ্টা করব... অনবরত এ উৎকণ্ঠা আর সহ্য হয় না। আচ্ছা কি এমন ঘটেছিল যে পরে বলবে বলে ঝুলিয়ে রাখল? সঞ্জীবের ফ্ল্যাটের ঘটনার থেকেও বেশি সিরিয়াস কিছু? নাকি এমনিই ক্লান্ত হয়ে গিয়ে বিশ্রাম চাইল? অথবা প্রথম দিনের ঘটনাটা আরও একবার বলে আমার প্রতিক্রিয়াটা যাচিয়ে নিল, এখন বৃহত্তর সত্য উন্মোচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে... দুত্তোর, একা একা এই আত্মপীড়নের কোনও অর্থ হয়! তার চেয়ে বরং ডিম ফেটানোয় মন দিই।

এতাল বেতাল ভাবনার মাঝে সহসা যতিচিহ্ন, কিচেনের দ্বারে এসে উপস্থিত মহারানী। কণ্ঠস্বরে অসহিষ্ণুতার প্রবল ছোঁয়া। কি ব্যাপার, ভৃত্যের খিদমদগারিতায় ভুল ধরতে নাকি? না অন্য কোনও উপলক্ষ? সুতীক্ষ্ণ ভর্ৎসনায় দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে গেল।

“কি ব্যাপার, কানের মাথা খেয়েছিস নাকি? ডাকছি এত করে শুনতে পাচ্ছিস না???”
“ও আচ্ছা সরি... মানে বুঝতে পারিনি ঠিক”
“ওঘরে দয়া করে আয় একবার”
“এখন যেতে পারব না, কি হয়েছে বল না”
“আমি কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব ততক্ষণ, কি এমন রাজকার্য করছিস?”, বামাকণ্ঠ একপর্দা উঁচুতে ঝেঁঝে ওঠে।

আপনারই প্রাতরাশের বন্দোবস্ত করছি মালকিন, তবে সে কথা তো এখন মুখে আনার জো নেই। অগত্যা শান্তশিষ্ট পত্নীনিষ্ঠের মত লাঙ্গুল উঁচিয়ে সুড়সুড় করে ওনাকে অনুসরণ করি। শয্যাকক্ষে এসে চক্ষু চড়কগাছ। ট্রলিব্যাগ আর দেয়াল-লাগোয়া কাবার্ডের একটা জামাকাপড়ও বোধহয় স্বস্থানে নেই। স্তূপীকৃত বস্ত্রসম্ভার ডাঁই করে রাখা মেঝেতে। কয়েকটা খাটের ওপর বা এদিক সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যেন দক্ষযজ্ঞের আয়োজন হচ্ছে। সবকিছুর কেন্দ্রস্থলে উদ্ভ্রান্তের মত দাঁড়িয়ে দক্ষকন্যা... ওহো ঐ নামটা তো এখন নাকি আর প্রযোজ্য নয়! অসহায়ের মত পর্যায়ক্রমে আমার মুখ আর কাপড়ের রাশি দেখে চলেছে, একটু আগের দাপট কোথায় উধাও...

“কি করি বল তো, কোনটা কোথায় থাকবে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না”, ন্যাকামি মেশানো কাঁদো কাঁদো গলায় করুণ আর্তি। ঠেকায় পড়লে প্রায়শই এই স্বর বেরিয়ে আসে।
“তোকে এখন এসব হাঁটকাতে কে বলল? সবকিছু না গোছাতে পারলে কি পিছনে কামড়ায়?”
“চুপ কর, ওয়ান উইক হয়ে গেছে ফিরেছিস, এখনও ব্যাগ যে কে সেই পড়ে আছে... নিজে গোছাসনি কেন? কাবার্ডটার কি অবস্থা দেখেছিস? Everythinh is in dis-array এভরিথিং ইজ ইন ডিসঅ্যারে”, নাও ঠেলা... যত দোষ সব এখন এই শ্রীমান নন্দ ঘোষ মহাশয়ের।
“আচ্ছা ঠিক আছে আগে খেয়ে নে তারপরে না হয় এসব করিস”

সমাধানটা মনঃপূত হয়নি সেটা দৃশ্যতই বোঝা যাচ্ছে। গোঁজ হয়ে আবার ব্যাপৃত নিজের গৃহস্থালীতে, আমিও আরব্ধ রন্ধনকার্য সমাধা করতে পাকশালায়। প্রাতরাশ বানানো সমাপ্ত, একে একে ট্রে তে সাজিয়ে নিচ্ছি টোস্ট, প্যানকেক, মাখনের কৌটো, ধূমায়িত কফির পেয়ালা। এঘরে এসে আবারও চমৎকৃত, অল্প সময়ের মধ্যে কি তুরন্ত পট-পরিবর্তন! মেঝেতে পা ছড়িয়ে থেবড়ে বসে এই চার দেওয়ালের অঘোষিত সম্রাজ্ঞী, হাতে ধরা সদ্যকেনা নিভাঁজ ময়ূরকণ্ঠী বরণ কাঞ্জিভরম সিল্ক। থেকে থেকে আঘ্রাণ নিচ্ছে সন্তর্পণে, উজ্জ্বল চোখের তারায় হঠাৎ-পাওয়া ভাললাগার পরশ। আমায় আসতে দেখে সামলে নেওয়ার একটা ব্যর্থ প্রয়াস হল বটে, তবে গদগদ স্বরে পুরোপুরি লুকোনো গেল না...

“কার জন্য এটা?”

বলিহারি! ন্যাকামির কোনও সীমা-পরিসীমা নেই! তাও একঝলক স্বস্তি ছুঁয়ে গেল আমায়। ঝাড়া তিনটি ঘণ্টা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে, খ্যাতনামা বস্ত্রবিপণির বিক্রেতাদের ক্রমাগত উত্যক্ত করে খরিদ করা তবে বিফলে যায়নি!

“খুব স্পেশ্যাল একজনের জন্য”
“তাই? আমি কি চিনি তাকে? Any new girlfriend that I should be worried about?”
“নোপ, For the good old one”, পাশে বসে তেরছাভাবে জড়িয়ে নিয়েছি আলিঙ্গনে। মনের সুখে চটকাচ্ছি কমকান্তি তনু। ও যেন সোহাগে গলে যাচ্ছে আমার আলতো নিষ্পেষণে...
“উম্মম্মম্মম্ম”, মুগ্ধ আঙুল তারই মধ্যে বিচরণ করছে শাড়ির আঁচলের প্রান্তদেশে, মেপে নিচ্ছে শৈল্পিক কারুকাজের ঘনত্ব। পছন্দ যে হয়েছে সেটা জানলার কাঁচ ভেদ করে পর্দার আড়াল সরিয়ে জোর করে ঘরে ঢুকে পড়া দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। সানুনাসিক গলায় অনুযোগের ছদ্মবেশে প্রশস্তির সুর, “কি দরকার ছিল এত দাম দিয়ে কেনার?”

স্থির থাকা গেল না। মুহূর্তে রমণীকে আরও কাছে টেনে নিয়েছি, এত যত্নে কেনা বস্ত্রভূষণ দূরে সরে গেছে অবহেলায়। দুই শরীরের মধ্যে একচিলতে বাতাস গলারও জায়গা নেই আর। প্রবল আশ্লেষে বাঁধা পড়ল মানব-মানবী। উন্মত্ত, দিশেহারা চুমুতে ভরে যাচ্ছে দু’জনের গাল, গলা, চোখ, ঠোঁট। তৃষিত চকোরের মত পান করছি অধরসুধা, ছোট ছোট দংশনের যাতনায় শিউরে উঠছে ওর বিম্বোষ্ঠ। প্রথম ফাল্গুনের মৃদুমন্দ সকালেও নাকের শীর্ষবিন্দুতে জমা হয়েছে উদ্দীপনার স্বেদকণিকারা। সোহাগে অভিভূত কবরী বাঁধনহারা। এলো কেশ অশান্ত পাহাড়ি ঝরনার মত প্রবাহিত হল আধখোলা পিঠের বক্রতায়, পীনোন্নত বুকের তরঙ্গায়িত ভূমিতে। দু’-এক ফোঁটা অলকবিন্দু ছিটকে ঝরে পড়েছে আমার মুখেও, গালের উপর সযত্নে আদরের চিহ্ন এঁকে দিয়ে গেল। পেলব দুই বাহু আকর্ষণে বেঁধে নিতে গিয়েও হঠাৎ দূরে ঠেলে দিয়েছে। পুরুষের অবুঝ দাবীকে শাসন করছে কণ্ঠলগ্না নারী।

“উম্মম্ম হানি, এখন আর না”
“কি হল, এদিকে আয়”, বিচ্ছেদের আশঙ্কায় খামচে ধরি চন্দনের অদৃশ্য পত্রলেখা-শোভিত বাম পয়োধর।
“খেতে দিবি না? সকাল থেকে তো শুধু চটকেই যাচ্ছিস”

অতঃপর, মিলন-প্রচেষ্টায় ক্ষান্তি দিতে হয়। নীরব আহারে ব্যস্ত দু’জনেই, ওর মুগ্ধ দৃষ্টি ক্ষণে ক্ষণে ছুঁয়ে যাচ্ছে অদূরে বিছানো কাঞ্জিভরমের মনোলোভা দেহপট। এখনও জানে না এর থেকেও চমকপ্রদ উপহার অপেক্ষা করে আছে। মিষ্টি মুখের প্রতিটি রেখায় চুঁইয়ে পড়া গোপন তৃপ্তির আভাস তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি, সারপ্রাইজটা একটু পরে ভাঙলেও চলবে।

পোর্সেলিনের পেয়ালার কোণ থেকে উঁকি দেয় দুষ্টুমি মাখানো চোখ, “অ্যাই, সিনেমা দেখতে যাবি?”
“কি সিনেমা?”
“উম্ম সেটা তো পরে ডিসাইড করলেও চলবে”
“আজ আর বেরোনোর কি দরকার, সবে তো ফিরলি”, অনীহার সুরটা চাপা থাকে না আমার গলায়। আরও আদরের আকাঙ্ক্ষা বাকি রয়েছে, তিনটে অদেখা সপ্তাহের চাহিদা দু’বারের চরম স্খলনেও পূর্ণ হয়নি ঠিকমত।
“গতরটা একটু নাড়া না, এত কুঁড়ে কেন তুই, উফফ!”, অসহিষ্ণু রমণী এত সহজে হার মানতে নারাজ।

এহেন অভিযোগের পর নিতান্ত পুরুষত্বের খাতিরেই রাজি হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। অবশ্য একটা আউটিং হলে মন্দ হয় না, তাছাড়া... শত হোক বিবির খুশিতেই মিঞার খুশি।

“কখন যেতে চাস?”
“Now its almost ten thirty, এখনই রেডি হই, তাহলে সাড়ে বারোটার শো তে আরামসে পৌঁছে যাব”
“OK, as you wish”
“রেডি হচ্ছি তাহলে, তুই অনলাইনে দেখ কোন টিকিট বুক করবি”

অর্থাৎ ওনার নিজের আলাদা কোনও পছন্দ নেই। অর্থাৎ সিনেমা দেখাটা মুখ্য নয়, মুখ্য বেড়ু-বেড়ু করতে বেরোনো। অর্থাৎ এখন উনি ঘটা করে সাজতে বসবেন। মন্দ কি!

ইণ্টারনেটে প্রবেশের আগেই হঠাৎ মনে পড়েছে, ট্রলিব্যাগের ভিতরে সংগোপনে রক্ষিত লঁজারির প্যাকেটটা বের করে বাড়িয়ে ধরি। অপ্রত্যাশিত চমকে নিখুঁত-চর্চিত ভ্রূলতায় ভাঁজ।

“What’s this?”

নিরুচ্চারে হাতে তুলে দিই। প্যাকেটের গায়ে বড় বড় হরফে ছাপা নাম আর বিবরণী নজরে আসতেই পানপাতা মুখশ্রী লজ্জারাঙা। চোখে অপার বিস্ময়, প্রথম প্রভাতের অরুণিমার আভা দুই কমনীয় গালে। কে যেন সেখানে মুঠো মুঠো আবির ছুঁড়ে মেরেছে!

কিছুক্ষণ এই অপার্থিব দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে লিভিং রুমে চলে আসি। আন্তর্জালে সন্ধান করছি নিকটবর্তী প্রেক্ষাগৃহে মনোমত চলচ্চিত্রের। মাথার মধ্যে অবশ্য অন্য ছক ঘুরে চলেছে, এমন মুভি বাছতে হবে যাতে ওর কোমল হৃদয় সহজেই আর্দ্র হয়ে পড়ে। বম্বের পুরো ঘটনাটা জানা সেক্ষেত্রে সহজতর হবে, আবেগের তোড়ে সব বলে ফেলার প্রভূত সম্ভাবনা। আবার সিনেমা দেখে বেশি কান্নাকাটি করলেও মুশকিল, রোদনোন্মুখ নারীর উচ্চারণ বোঝাই তখন দায়। অনেক খুঁজেপেতে একটা হলিউডি রম-কম পাওয়া গেল, টিকিটও সহজলভ্য। এটাই এই মুহূর্তে প্রয়োজন, মুখ খোলানোর জন্য।

দক্ষ ষড়যন্ত্রকারীর মত নিপাট ভালমানুষ মুখ করে টিকিট বুক করলাম দু’জনের, কোণের ব্যালকনির আধো-অন্ধকারের নিভৃতে। চড়ামূল্যে ক্রয় করা একফালি নির্জনতা। বিশ্বায়নের যুগে এগুলোও এখন খরিদযোগ্য।

হঠাৎই নিঃশব্দচরণে পাশে এসে হাজির জেনানা, উল্টোদিকে মুখ করে রয়েছে। বাঁ হাতে ধরা বাহারি কঙ্কতিকা, দেখেই বোঝা যায় কেশসজ্জা মাঝপথে। ঈর্ষণীয় ভরাট দেহলতা সলাজে আবৃত করে রেখেছে শুধুমাত্র ওপর-নীচের অন্তর্বাস। সদ্য পাওয়া প্রণয়-উপচার। জলপ্রপাতের মত চুল আছড়ে পড়েছে সামনে বুকের উপত্যকায়, মসৃণ নির্লোম পিঠের পরিমিতি প্রায় সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। জলপাইবর্ণা ত্বকের চালচিত্রে ব্যতিক্রম কেবল আধুনিকতম কাঁচুলির দুই প্রান্ত। অনাবদ্ধ।

মেঘবরণ কেশের মধ্যে ব্যস্ত চিরুনি চালাতে চালাতেই নরম স্বরে অনুরোধ ভেসে এল,

“হুকটা লাগিয়ে দে না প্লিজ!”
Reply


Messages In This Thread
RE: স্বীকারোক্তি by Anangapal (Uncompleted) - by manas - 09-01-2019, 02:59 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)