09-01-2019, 02:58 PM
।। ১১ ।। কাপুরুষ ও পরপুরুষ
জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যখন সামান্য একটা ভুলের জন্য চারপাশটা ওলটপালট হয়ে যায়। ছোট্ট একটা কথা, চোখের সামান্য ইশারা, অবহেলায় মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া- বদলে দিতে পারে অনেক কিছু। ক্ষণিকের প্রভাব কি সুদূরপ্রসারী! অথচ ঘটনাটা যখন ঘটছে ঠিক সেইসময় কিন্তু আঁচও পাওয়া যায় না তার। বোঝা যায় না কি হতে চলেছে এর ফলশ্রুতি। আর পাঁচটা সাধারণ মুহূর্ত থেকে তাকে আলাদা করে চিনে নেওয়া দায়। ঘটমান বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে এক পা-এক পা করে যেতে যেতে যখন চারদিকের চেনা পৃথিবীটা ক্রমশ পালটে যেতে থাকে, পরিকল্পিত ছকের বাইরে অজানা সরণী বেয়ে হাঁটতে শুরু করে জীবন, মনকে তখন প্রশ্ন করি আমরা, 'কি করে এমন হল?' সদুত্তর পেতে মন অনুসন্ধান শুরু করে, ক্ষিপ্র গোয়েন্দার মত অতীতের সমস্ত ফাইল ধুলো ঝেড়ে বার করে খুঁজতে থাকে আতিপাঁতি। অণুবীক্ষণের নীচে ফেলে যাচিয়ে নেয় প্রতিটি খণ্ডমুহূর্ত। কম্পিউটার সায়েন্সের পরিভাষাতে যা 'ব্যাকট্র্যাকিং অ্যালগরিদম', কার্যকারণ পরম্পরার সেই সূত্র ধরে অবশেষে সে উপনীত হয় কঠোর নির্মম সত্যে। বিনা বাক্যব্যয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরে সেই মুহূর্ত, যেখান থেকে জীবন বেঁকে গিয়েছিল কোনও অচেনা মোড়ে। বইতে শুরু করেছিল অন্য এক খাতে যার ঢেউগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যেতে থাকে পরিচিত জীবনের নিশ্চিন্ত নিরাপদ গণ্ডির থেকে দূরে, আরও দূরে। দুর্নিবার স্রোতের মুখে ভেসে যাওয়ার মুহূর্তে আমরা অক্ষম প্রতিরোধের চেষ্টা করি খড়কুটো আঁকড়ে ধরে। হায়, সময় যে বহতা নদী! জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি একমুখী তার যাত্রা। উৎস থেকে মোহনার দিকে সে চঞ্চলা রমণী 'নেচে চলে যেন নটিনী', কোথায় কোন অববাহিকায় কে অবহেলায় পড়ে রইল দেখার তার ফুরসত কই?
আর যার চোখের সামনে একটু একটু করে ঘটে এই অনিবার্য পরিবর্তন, কি হয় তার পরিণতি? নিষ্ফলা বালির বাঁধে যখন বাধা মানে না নির্দয়া স্রোতস্বিনী, তখন? শূন্য দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়া দেখা ছাড়া আর কিই বা করার থাকে? সময়ের চাকা, সে তো উলটোদিকে ঘুরবে না কোনওদিন। টাইম মেশিনের অলীক প্রকৌশল বিদ্রূপভরে মুখ ভ্যাংচায় কল্পবিজ্ঞানের পাতা থেকে। কে সেই অপরাধী যার দোষে এমনটা ঘটল? মনকে চোখ ঠারা চলে না, সে জানে কার দোষে। হৃদয়ের আবছা আয়নাতে নিজেরই প্রতিফলনের দিকে চেয়ে থাকে মূক দৃষ্টি।
চোখের সমান্তরালে, ফুটকয়েক উঁচুতে স্থাবর সিলিঙ। খাট থেকে বোবা চোখ মেলে তাকিয়ে আছি সেদিকে। কয়েক ঘণ্টা আগে ঐ সিলিঙই নীরব সাক্ষী ছিল আমাদের উদ্দাম ভালবাসাবাসির। এখন সেখানে ক্যালেইডোস্কোপের খেলা। মেঘের আড়াল থেকে একটু একটু করে পরিস্ফুট হওয়া সকালের আলো জানলার গ্রিলের মধ্যে দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে কারওর অনুমতির তোয়াক্কা না করে। পেশাদার জাদুকরের মত নিজের ভোজবাজি দেখাতে ব্যস্ত, তার রঙ্গমঞ্চ ঘরের দেওয়াল বা মাথার ওপরের সিলিঙ। সিলিঙটাও বোধহয় স্বস্তি পেয়েছে এমন নির্দোষ সভ্যভব্য ‘আট থেকে আশি’-মার্কা চালচিত্র দেখে। স্বাভাবিক, ভোর ইস্তক একঘেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছবি চোখের সামনে চলছে, কাঁহাতক আর ভাল লাগে! স্বাদবদলের প্রয়োজন সবারই আছে, সে মানুষ হোক বা ঘরের সিলিঙ।
খাটে একা একা শুয়ে এসবই ভেবে চলেছি। অবান্তর, আবোল-তাবোল। কিছুই নয়, মনটাকে অন্যদিকে ঘোরানোর ব্যর্থ চেষ্টামাত্র। বিক্ষুব্ধ অবচেতন তোলপাড় হচ্ছে সেই মুহূর্তটার কথা ভেবে। যদি ফিরে যাওয়া যেত আবার, যদি ফিরিয়ে নেওয়া যেত প্রশ্নটা? যে প্রশ্ন প্রেমিকাকে করা অনুচিত, প্রেমশাস্ত্রের পাঠে যে প্রশ্ন ঘোরতর নিষিদ্ধ। আর... কে না জানে নিষিদ্ধের হাতছানি কি প্রবল। সে অদম্য আকর্ষণ উপেক্ষা করব এতটা বীতস্পৃহ আমি নই। কিন্তু এতবড় নির্বোধও তো নই যে অমন অন্তরঙ্গ সময়ে ওরকম একটা প্রশ্ন...
অনবধানে জ্যামুক্ত তীর ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ধনুর্ধরের থাকে না, তার কাজ তখন কম্পিতবক্ষে আগুয়ান শরকে লক্ষ্য করা। এ পর্যন্ত সকলেই জানে। প্রবাদবাক্য সাধারণত মিথ্যে হয় না। সাধারণত... কিন্তু তীর যদি লক্ষ্যভেদ করে? যদি অজ্ঞাত কারণে শরাহত হয় কোনও অজানা শত্রু যার অস্তিত্বই ছিল কার্মুকের অগোচর? ঠিক কেমন হয় তখন তার মনের অবস্থা? বিস্মিত? পুলকিত? চমৎকৃত? নাকি এ সবই মিলেমিশে থাকে অথবা... অথবা, এর বাইরে ব্যাখ্যাতীত কোনও অনুভূতি? যেমনটা আমার হয়েছিল স্নানঘরে...
...
কি করে ফেললাম? কেন জিজ্ঞেস করতে গেলাম এটা? অতি বড় মূর্খও এমন ভুল করবে না আর আমি কি না... ও ঠায় চেয়ে আছে আমার চোখের দিকে। নিষ্পলক দৃষ্টিতে মিশে অপার বিস্ময়, তার সাথে নীরব ভর্ৎসনা। এখনও আমাদের দেহ পরস্পরে সম্পৃক্ত, ঝিরিঝিরি বারিধারা শাওয়ার থেকে নেমে ভিজিয়ে দিচ্ছে একবিন্দুতে মিশে থাকা আলাদা দুটো শরীরকে। ওর নরম জমিতে দৃঢ়প্রোথিত হয়ে আমার উত্তুঙ্গ পৌরুষ, ছন্দোবদ্ধ মিলনের গতিতে যান্ত্রিকভাবে কেঁপে কেঁপে উঠছি দুজনেই। দাঁড়িয়ে থাকার দরুণ সম্ভব ছিল না স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মিলিত হওয়া, ওর কোমল তনু তাই ঢলে পড়েছে স্নানঘরের বাষ্পসিক্ত দেওয়ালে, সুগঠিত বাম জঙ্ঘা পরম আদরে বেষ্টন করে দয়িতের কোমর। ঈষৎ তির্যক দেহভঙ্গির কারণে উন্নত স্তনেরা কি মোহময়ী এক বিভঙ্গে আমার বক্ষলগ্না। কবোষ্ণ জলের মনোরম স্পর্শে জাগ্রত দুই বৃন্ত বারংবার আছড়ে পড়ছে প্রেমিকের বলিষ্ঠ বুকে। সুডৌল দুই হাত পেলব আলিঙ্গনে আলতো করে জড়িয়ে। নমনীয়, অথচ দৃঢ় সে আলিঙ্গন। পুরুষকে যা নিশ্চিতভাবে বেঁধে ফেলে নারীর চিরন্তন বাহুপাশে। রতিক্রীড়ার তালে তালে সঙ্গতি রেখে সুপুষ্ট নিতম্ব আঘাত হানছে ওয়ালপেপারের গায়ে, বিচিত্র শব্দ তুলে। সবই মুহূর্ত কয়েক আগের মত, শুধু... আবেশে বোজা চোখের পাতারা এখন উন্মীলিত। সপ্রশ্ন দৃষ্টি সরাসরি নিবদ্ধ আমার দৃষ্টিতে। মর্মভেদী চাহনি যেন আমার চামড়া-অস্থি-স্নায়ু বিদীর্ণ করে দেখে নিচ্ছে মনের অতল অবধি। একটাও কথা বলেনি ও, কিন্তু নিরুচ্চার জিজ্ঞাসায় প্রতিধ্বনিত বুকের ভিতরটা। ঐ চোখের চাওয়ার সামনে বেশিক্ষণ প্রতিরোধের ক্ষমতা নেই। অথচ... কি কৈফিয়ত দেব এই অমার্জনীয় অপরাধের?
"Just kidding", নিজের মুখ থেকে বেরোনো কথাগুলো নিজেরই কানে কি ভীষণ হাস্যকর শোনালো! ও কিছু বলছে না। তপ্ত শরীর এখনও নিয়মিত গতিতে পৌরুষের লাঞ্ছনা ধারণে ব্যস্ত, চোখজোড়া ঠায় চেয়ে আমার মুখের দিকে। আর ফেরবার পথ নেই, যা থাকে কপালে। মিথ্যেটাকে যে কোনও মূল্যে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে মরিয়া আমি, ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফোটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করি।
"তুই সত্যিই সিরিয়াসলি নিলি কথাটা? পারিসও বটে"
পরিস্থিতি লঘু করার এর থেকে ভাল উপায় মাথায় আসছে না। এই ঠুনকো আশ্বাসে কাজ হবে কোনও? দুরুদুরু বুকে প্রতীক্ষা করি, আমার কাঠিন্য তখনও ওকে অখণ্ড মনযোগে গেঁথে চলেছে। একটা হাত আপনা থেকে উঠে যায় পুরুষ্টু বোঁটায়, উদ্বেল বৃন্তকে পীড়ন করে। কোনও প্রত্যুত্তর আসে না ওর থেকে, আয়ত চোখদু'টি আবারও মুদে যায়, টানা টানা আঁখিপল্লবে ফের রতিসুখের প্রতিভাস। অজান্তেই স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে আমার। যাক, এখনকার মত ফাঁড়াটা কেটেছে। বেমক্কা প্রশ্নটার কথা ভেবে এবার নিজের ওপরে রাগ হচ্ছে। এসবই গত এক সপ্তাহব্যাপী অদ্ভুতুড়ে চিন্তাগুলোর বহিঃপ্রকাশ। কি যে ছেলেমানুষিতে পেয়ে বসেছে! আগের রবিবার দুপুরে আচমকা ভেসে ওঠা দৃশ্যকল্প থেকে শুরু, তারপরের কদিন নিয়মিতভাবে সেই চিন্তাকে প্রশ্রয় দিয়ে আজ এই দুরবস্থা। যতবার মনকে শাসন করতে গিয়েছি ফল হয়েছে উলটো। অসুস্থ ভাবনারা আরও বেশি করে ভিড় করেছে মনের ভিতর, চেতন-অবচেতনকে গ্রাস করেছে ধীরে ধীরে। বিশেষত সেদিন রাতে ওর আধখোলা বুকের চুড়োয় সঞ্জীবের দশনচিহ্ন দেখার পর... প্রতিবর্তেই বুঝি দৃষ্টি চলে গেল সেই বিশেষ স্থানটিতে। এতক্ষণে জলধারায় ভিজতে ভিজতে দু'জনেরই শরীরময় স্বচ্ছ আস্তরণ, ভাল ঠাহর হচ্ছে না। তাও এত কাছ থেকে তো ভুল হওয়ার কথা নয়। কোথায় সে দংশনের দাগ? নিষ্কলঙ্ক বিপুল বক্ষদেশ লুটিয়ে পড়ছে আমার বুকের ঘন জঙ্গলে। যেন জোড়া দুই পায়রা ছটফটিয়ে বেড়াচ্ছে থেকে থেকে। ওখানেই সঞ্জীব... আঃ আবারও সেই! বিকৃত চিন্তারা ফিরে আসছে, মস্তিষ্কের দখলদারি ধীরনিশ্চিত গতিতে তাদের অধিকারে। মাথার ভিতর অসংখ্য পোকা কিলবিলিয়ে উঠছে, কুরে কুরে খাচ্ছে আমার যুক্তি-বুদ্ধি-বোধ। রমণের মাঝেই চোখ বন্ধ করে ফেলি, ও যেন ঘুণাক্ষরেও বুঝতে না পারে আমার মনের অবস্থা। বন্ধ চোখের পাতায় আবার সেই দৃশ্যপট, সঞ্জীবের সাথে ও... আর ভাবতে পারি না। কে ঐ প্রেমিক, যে ওকে নির্দয়ভাবে আদর করে চলেছে? ওটা কি সঞ্জীব, না আমি? এখন কার সাথে ও কামকেলিতে মত্ত জলের অবিরাম বর্ষণের মাঝে? আমি, নাকি... ? মস্তিষ্কময় বিস্ফোরণ হতে থাকে ছোট-বড়, আর আমার বোধবুদ্ধি ঘুলিয়ে যায়। রমণের গতিবেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে ক্রমশ। ওর আতপ্ত যোনিপাত্রে আমূল বিদ্ধ লৌহশলাকা বাড়তে থাকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে-আয়তনে, বাড়তে থাকে তার তাপমাত্রা। লোহিত-তপ্ত... শ্বেততপ্ত। দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য পুরুষ উন্মাদের মত ছিন্নভিন্ন করে চলে নারীর কোমল অভ্যন্তর। ভীমগতিতে সে মন্থন করে আমার একান্ত আপন প্রেমিকাকে... কে ও? আমি? সঞ্জীব? মনের মধ্যে বিদ্যুচ্চমকের মত উদয় হয় মারাত্মক এক প্রশ্নেরঃ তবে কি আমিই এখন সঞ্জীব? সহস্র অচেনা কণ্ঠ সম্মিলিত সাড়া দেয়- "হ্যাঁ"। কে ওকে এমন তীব্রভাবে নিষ্পেষণ করছে? আবারও সমস্বরে জবাব আসে- "সঞ্জীব"। হৃদয়ের অচেনা গলিঘুঁজিতে অনুরণিত হতে থাকে সে উত্তর। হাজার ডেসিবেলের আর্তনাদে কানে তালা লেগে যায়। সহসা এই বধিরতায় আপাদমস্তক কেঁপে ওঠে আমার। উদ্ভ্রান্তের মত চোখ খুলি। দেখি সেই আগেরই মত রমণের ছন্দে স্পন্দিত হচ্ছে প্রিয়তমা, তালে তালে দুলে উঠছে ওর নগ্নদেহ। অবিশ্রান্ত বারিধারায়, প্রিয়মিলনের তৃপ্তিতে, যৌনসুখের বিহ্বলতায় সারা অঙ্গে তার রূপের মাধুরী ছড়িয়ে পড়েছে। ধন্দে পড়ে যাই, এ কি কোনও শাপগ্রস্তা কিন্নরী, না আমারই প্রেয়সী? আমার, নাকি... না আমার নয়, এই মুহূর্তে স্নানঘরের একান্ত ঘেরাটোপে কোথাও আমার অস্তিত্ব নেই। নামহীন এক বোধ জন্ম নেয় মনের গহিনে। এখন আমি সঞ্জীব। যার ওটা নাকি... "Bigger than yours", মধুক্ষরা সলজ্জ স্বর কানের মধ্যে বেজে ওঠে। তবে তো এই সামান্য রতিক্রীড়ায় কাজ হবে না! যে পৌরুষের দর্প যত বেশি তার আস্ফালনও ততোধিক হওয়া উচিত। আজই ওকে হাতেনাতে সে প্রমাণ দেব।
হঠাৎ কোথা থেকে এক দানব এসে ভর করে আমার শরীরে। না না আমার তো নয়... যাকগে এখন অতশত ভাবার সময় নেই। গোটা শরীরে রক্তকণিকারা ছুটে বেড়াচ্ছে, মাথার ভিতরে জান্তব হুঙ্কার। বহু বহু যুগ আগে আমার পূর্বপুরুষ এ পৃথিবীর বুকে দিনগুজরান করত হিংস্র প্রাণীদের সাথে দৈনিক সংগ্রাম করে। তখন মানুষে আর পশুতে প্রভেদ কতটুকুই বা ছিল? সেই আদিম মানবের রক্ত বইছে আমার শিরায়, ধমনীতে। প্রাণের ভিতর অনেক গভীরে এখনও বসত করে রক্তলোলুপ সে শ্বাপদ। সভ্যতা আর আধুনিকতার মোড়কে তাকে অনুক্ষণ ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়। কিন্তু আজ, এই মুহূর্তে মনের কোটরে বাসা বাঁধা বিকৃত জৈবিক তাড়নায় সে বেরিয়ে এল, বেরিয়ে এল নখ-দাঁত বার করে। আরক্ত চোখে একবার নিরীক্ষণ করল নিজের দুই কামলোলুপ থাবার অধিকারে এলিয়ে পড়া রিরংসায় বিবশ নারীটিকে। পলকের মধ্যে তাকে সজোরে ঠেসে ধরেছে স্নানঘরের দেওয়ালে। হ্যাঁচকা টানে নারীর ডান জঙ্ঘাও তার কোমরে উঠে এল, দুই সুডৌল রম্ভাসদৃশ উরু বেষ্টন করে আছে পুরুষ-পশুর শ্রোণীদেশ। শরীরের সবটুকু অংশ মাটি থেকে শূন্যে, নয়তো রমণকারীর অঙ্গে ভর দিয়ে। আচমকা এই পট-পরিবর্তনে রমণী বিস্মিতা, ভূপতনের আতঙ্কে আরও নিবিড় আলিঙ্গনে বেঁধেছে প্রেমিকের ঘাড়-গলা-পিঠ। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে আবেশে বন্ধ চোখ খুলে দয়িতকে অবাক দৃষ্টিতে দেখছে। সে চাহনিতে পুলক-ত্রাস-চমক-বিমুগ্ধতা মিলেমিশে বিচিত্র ভাবের ব্যঞ্জনা। তার দূরতম ধারণাতেও নেই কে এই পুরুষ। সে প্রেমিকপ্রবর নয়, বিকৃত কামের জ্বালায় উন্মাদ এক নররাক্ষস। প্রেয়সীকে অন্য প্রেমিকের সাথে কল্পনা করে যার পৌরুষ আজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠেছে। নির্মম গতিতে সমূলে বিদ্ধ করছে নারীকে, জরায়ুমুখে আঘাত হানছে একের পর এক। কর্কশ কাঠিন্যের প্রহারে ব্যথাতুরা রমণী আর্তনাদ করে উঠল। সে শব্দে যারপরনাই উল্লসিত পুরুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা জন্তু, নিষ্ঠুরতর রমণে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলছে পেলব নারীদেহ। বলিষ্ঠ দুই হাতের তালুতে প্রবলভাবে নিষ্পেষিত কমনীয় জঘনদেশে রক্তাভা, পরিচিত শরীরের প্রতিটি রোমকূপ আক্রোশে দলিত-মথিত করছে। অচেনা রমণ-পীড়নে অনভ্যস্ত কোমল তনু ক্রমশ সাবলীল, পাশবিক নিষ্পেষণের মাঝে প্রবল রতিসুখ খুঁজে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। বর্বর পুরুষকে সোহাগে-লাস্যে আরও নিবিড় করে বাহুডোরে টেনে আহ্বান জানাচ্ছে সবলতর মর্দনের। জান্তব পৌরুষ সে ডাকে সাড়া দিয়েছে। নারীর আর্দ্র যোনিদেশে ধাতব পিস্টনের মত বারংবার আছড়ে পড়ছে নির্দয় কাঠিন্যে, যেন প্রজ্বলিত কামাগ্নিতে শুষে নেবে তার কামনাঘন লাভার শেষ বিন্দুটুকু। প্রচণ্ড মৈথুনের তালে দ্রুতলয়ে ওঠানামা করছে স্ফুরিতাধর মানবী, চরম সঙ্গমসুখে তার অভ্যন্তর ভেসে যাচ্ছে, স্খলিত হচ্ছে। মিলনাবেশে বন্ধ দুই চোখের পাতায় সাতরঙা রামধনুর খেলা। শাওয়ারের কৃত্রিম বারিপাতে সিক্ত স্তনদু'টি প্রবল আবেগে আরও আরও স্ফীত, মরুদেশীয় দ্রাক্ষাফলের আকার নেওয়া উন্মুখ বৃন্তদ্বয় ভিতরের বাঁধভাঙা জোয়ারে যেন ফেটে পড়বার উপক্রম। আসন্ন রাগমোচনের উত্তেজনায় রোমাঞ্চিত নারীর সংযমের বাঁধ ভেঙে গেল, উথালপাথাল অট্ট-শীৎকারে ভরে যাচ্ছে স্নানঘর। ফ্ল্যাটের সীমানির্ধারক দেওয়ালের পুরু গাঁথনিকে উপেক্ষা করে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবেশী ঘরগুলিতে। বাঁধভাঙা দুকূলপ্লাবী নারীর লুপ্তপ্রায় চেতনা সে সব খেয়াল করার অবস্থায় নেই, অবসন্ন দেহে পুরুষের গায়ে এলিয়ে পড়ার প্রাকমুহূর্তে শুধু টের পেল নিজের গভীরে প্রমত্ত পৌরুষের উদ্দাম বিস্ফোরণ।
রমণের উত্তেজনা এখন স্তিমিত, রেতঃস্খলনের সাথে সাথেই উধাও প্রাণের কন্দরে লুকিয়ে থাকা বন্য পশু। ধীরে ধীরে জান্তব প্রবৃত্তিকে সরিয়ে ফিরে আসছে প্রেম, নিজস্ব নারীর প্রতি ভালবাসা পুনরায় জাগরূক হৃদয়ে। মানবীশরীরের প্রতিকোণে পরম যত্নে সাবান মাখিয়ে দিচ্ছে, জলের ঝাপটায় দূর করছে জমে থাকা ক্লেদ। তীব্রমৈথুনের উদ্দামতা মুছে গিয়ে শ্রান্ত প্রিয়তমা আবারও নিজেকে ফিরে পাচ্ছে, ফিরে পাচ্ছে প্রেমাস্পদের বাহুবন্ধনে। নীরবে পুরুষকে ঝরনাধারায় স্নান করাচ্ছে সেও। দু'জনের মুখে কোনও ভাষা নেই, শব্দের অনবরত যাতায়াত কেবল পরস্পরে নিবদ্ধ দু'জোড়া চোখের বাঙ্ময় দৃষ্টিপাতে।
যৌথস্নান শেষ, ঘরে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে এলিয়ে দিয়েছি বিছানার নরম আশ্রয়ে। সুদীর্ঘ মানসিক আর শারীরিক পরিশ্রমের পর কথা বলার সামান্যতম শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই। ও ব্যস্ত স্নান সমাপনান্তে ভিজে চুল শুকোতে। স্খলিতকেশ উন্নত বুকের ওপরে মেলে চালু করেছে হেয়ারড্রায়ার, একটু একটু করে শুষ্ক হচ্ছে মেঘবরণ কেশ। একটানা যান্ত্রিক শব্দের প্ররোচনায় অবসন্ন চোখের পাতা বুজে আসতে চায়। শিথিল দেহ নিদ্রাবেশে শিথিলতর।
সহসা অজানা প্রতিবর্তে তন্দ্রা ছুটে যায়। চোখ পড়ে ওয়ার্ড্রোবের মানুষপ্রমাণ দর্পণে। আলুলায়িতকেশ নারী আয়নার মধ্যে দিয়ে অনিমিখ তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। দুর্বোধ্য সে জটিল দৃষ্টিতে এক আকাশ জিজ্ঞাসা। ও কি তবে সবই বুঝতে পেরেছে?
শিরদাঁড়া বেয়ে হিমস্রোত নেমে যায়।
...
প্রশ্নোত্তরের পালা তবে অনিবার্য, মনে মনে ভাবি। অগত্যা... নিয়তিকে তো আর খণ্ডাতে পারব না। এত ভয় পাওয়ারই বা কি আছে? মনকে শক্ত করা বিশেষ দরকার। কি আর হবে বড়জোর, একটু বকাঝকা, খানিকটা রাগ-অভিমান। তার বেশি তো কিছু নয়। সে কি আর নিত্যদিনই হচ্ছে না, কারণে-অকারণে? হয়তো তিরস্কারের বহরটা একটু বেশি মাত্রায় হবে, সেটা আমার প্রাপ্যও বটে। কিন্তু স্নানের সময় যেমন নিজেকে ছেড়ে দিল আমার ওপর, ওরকম বন্য যৌনতায় সঙ্গ দিল অমন মারাত্মক প্রশ্ন করার পরেও তাতে দুর্ভাবনার তেমন কারণ নেই। খামোখাই এত ভেবে যাচ্ছি।
মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বিরুদ্ধ মন সাথে সাথে বাগড়া দেয়। এতটা আত্মপ্রত্যয়ের সত্যিই কি কোনও ভিত্তি আছে? শুধোয় সে। এমনও তো হতে পারে তখন আর ও প্রশ্নটা করেনি, মুলতুবি রেখেছিল। দুজনে মিলিত হচ্ছি এতদিন পরে, অপ্রিয় জিজ্ঞাসায় মৈথুনকালে ব্যাঘাত ঘটাতে কোন উপবাসী নারীই বা চায়! সেক্ষেত্রে অন্তিম জিজ্ঞাসা কিন্তু এখনও বাকি। দর্পণে প্রতিবিম্বিত নারীর মুখাবয়বে ফুটে ওঠা প্রশ্নের রেখারা অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। অতএব আসন্ন বিপর্যয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে আরম্ভ কর। সময় ঘনিয়ে এল বলে।
ক্লান্ত, অবসন্ন মনের প্রাঙ্গণে শুম্ভ-নিশুম্ভের লড়াই চলতে থাকে। বিরক্ত হয়ে উঠি, এই টানাপড়েন আর ভাল লাগে না। ব্যাপারটা চেপে গেলে কেমন হয়? আগের যে মিথ্যাচরণে তখনকার মত বিপদ কাটিয়ে উঠেছিলাম সেটারই যদি পুনরাবৃত্তি করি, ও কি আর বুঝতে পারবে? উঁহু, মেয়েদের সন্দেহ এত সহজে নিরসন করা গেলে পৃথিবীর অর্ধেক পুরুষ আজ কত সুখী হত! ওভাবে হবে না। তাছাড়া, তাছাড়া... স্নানের ঘরে যে শ্বাপদ আমার মধ্যে জেগে উঠেছিল তাকে নিবৃত্ত করব কোন উপায়ে? সে তো আবারও ফিরে ফিরে আসবে। প্রতিবার নবোদ্যমে, নতুন অস্ত্রসম্ভার সাজিয়ে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ অবচেতনে যা চলেছে তার প্রভাব কতদূর অবধি পড়বে আমাদের জীবনে? আজকে তার ছোট্ট একটা নমুনা ট্রেলারেই তো শিউরে উঠতে হয়!
তবে কি সব সত্যি স্বীকার করে নেব? ওর কাছে হাট করে খুলে দেব নিজের মনের জানলা? তারপর? তারপর যদি ওর মন ভেঙে যায়? ছেড়ে চলে যায় আমাকে... না না, এ কোনওমতেই হতে দেওয়া যায় না। একটা বিকল্প রাস্তা আমায় খুঁজে বের করতেই হবে। অশান্ত মন অস্থির পদচারণা করে চলে, চোখ চলে যায় অজান্তেই ওয়ার্ড্রোবের আয়নার দিকে। চুল শুকোনোর পর্ব শেষ, এখন যৎকিঞ্চিৎ প্রসাধনে ব্যস্ত ও। অপাঙ্গে লক্ষ্য করে আমায়। পরক্ষণেই অবহেলাভরে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, মনোযোগ দেয় শৃঙ্গারে।
"...চলে গেছি ইহাদের ছেড়ে;
ভালবেসে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
অবহেলা করে আমি দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
ঘৃণা করে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে;
আমারে সে ভালবাসিয়াছে, আসিয়াছে কাছে,
উপেক্ষা সে করেছে আমারে, ঘৃণা করে চলে গেছে,
যখন ডেকেছি বারেবারে, ভালবেসে তারে;
তবুও সাধনা ছিল একদিন, এই ভালবাসা;
আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা করে গেছি;"
হতাশ হয়ে আবার শুয়ে পড়ি। আনমনে দেখতে থাকি সিলিঙের ক্যানভাসে বহিরাগত আলোর ঝিকিমিকি তুলির টান। অবান্তর কথাদের ভিড়ে ক্লান্ত মন কখন যেন ঘুমে ঢলে পড়ে।
"অ্যাই সরে শো না একটু"
নিদ্রালু দু'চোখ পরিচিত গলার শব্দে জেগে ওঠে। তাকিয়ে দেখি, ও। ছুটির দিনগুলো এই ফ্ল্যাটে যাপনের সুবিধার্থে ওর কিছু ঘরে পরার জামা এখানে স্থায়ীভাবে রাখা থাকে। তারই মধ্যে সংক্ষিপ্তাকার একটা নাইটি নামেমাত্র গায়ে জড়িয়েছে, দেহের বেশিরভাগটাই অনাবৃত। আমাকে ঠেলে সরিয়ে দেয় দেওয়ালের দিকে। সামান্য একচিলতে জায়গা বার করে শরীর এলিয়ে দেয়। সারা সকাল ওর ওপর দিয়েও কম ধকল যায়নি। তাই বোধহয় এত চুপচাপ। সেটাই কারণ, না কি... জিজ্ঞেস করার মত সাহস আমার নেই, তার চেয়ে মুখ বুজে পড়ে থাকাই শ্রেয়। সিঙ্গলবেড খাট, দুজনের স্থান সংকুলান হতে গেলে কিছুটা দৈহিক ঘনিষ্ঠতা অনিবার্য। দু'জনেই খানিকক্ষণ নীরব, কেবল পাশাপাশি শায়িত দু'টি শরীরে নিরুচ্চারে উত্তাপ বিনিময় হতে থাকে। অভ্যাসমত অঙ্গে দেওয়া হাল্কা বিদেশি সুগন্ধির ছোঁয়া, তার মৃদু সৌরভে আবিষ্ট হয়ে পড়ছে আমার সমগ্র সত্তা। জানলার বাইরের কোনও গাছ থেকে বিরহী এক কোয়েলের কুহুতান ভেসে আসে, যেন ঋতুরাজের আগমন-নির্ঘোষ - 'বসন্ত জাগ্রত দ্বারে'। পর্দার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভিতরে অনধিকার প্রবেশকারী আলোর তীব্রতায় সহসা হেরফের, সিলিঙের ক্যালেইডোস্কোপের চালচিত্র সে অভিঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়, আবারও ভেসে ওঠে নতুন এক নকশা নিয়ে। কেমন মায়াবী, স্বপ্নালু পরিবেশ। আহা যদি সারা জীবনটাই এমনভাবে কাটত, দু'জনে পাশাপাশি শুয়ে, নির্ঝঞ্ঝাট...
আচমকাই আমার দিকে পাশ ফিরেছে। ওর পা আমার গায়ের ওপর, পেলব বাহু বেড়াজালে বেঁধেছে ডান কাঁধ। কোমল স্তনভার উন্মুক্ত পুরুষবুকের জঙ্গলে আলতো ভাবে পিষ্ট হচ্ছে, বাঁদিকের গালে ওর নি:শ্বাসের উষ্ণ পরশ, চোখেমুখে আলগোছে হানা দিচ্ছে দু'এক গাছি চূর্ণ কুন্তল। একেই কি স্বর্গসুখ বলে?
"তুই সত্যিই জানতে চাস?"
হঠাৎ মৌনতাভঙ্গের কারণে প্রথমটায় একটু অসুবিধে হল কথাটার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।
"যেটা তখন বললি... চানের সময়, সত্যি জানতে চাস?", গলায় সামান্য অসহিষ্ণুতার আভাস। এই রে! এত তাড়াতাড়ি জেরা আরম্ভ হয়ে গেল? যা থাকে কপালে... একবার গলাখাঁকারি দিলাম।
"মানে এক্স্যাক্টলি কিসের কথা বলছিস..."
"আহহ ন্যাকামো করিসনা", এবারে উষ্মাটা আর প্রচ্ছন্ন রইল না কণ্ঠস্বরে, "খুব ভাল করেই জানিস কিসের কথা বলছি"
কি উত্তর দেব এর? এতটা সোজাসুজি প্রশ্ন, সত্যি বলতে আশা করিনি। মনের মধ্যে ব্যাপারটাকে একটু গুছিয়ে নিতে থাকি। বেফাঁস কিছু না বেরিয়ে যায় মুখ দিয়ে! ও কিন্তু সামান্যতম সময়টুকুও দিতে রাজি নয়। সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলে নিজেই আবার জিজ্ঞেস করল,
"তুই জানতে চাস তো সঞ্জীবেরটা তোর থেকে বড় কিনা?"
এমন সরাসরি আঘাতের জন্য মন একেবারেই প্রস্তুত ছিল না, প্রশ্নের অভিঘাতে কেমন অসাড় হয়ে গেল। নির্জীবভাবে ঘাড়টা কোনওমতে নাড়িয়ে সম্মতিজ্ঞাপন করলাম।
"Are you absolutely sure? নিতে পারবি তো?"
নির্দয়া এই নারীকে কেমন অচেনা লাগে। এটা কি পাল্টা প্রতিশোধের পালা? স্নানের সময় উন্মত্ত পাগলামির বদলা নিচ্ছে এইভাবে? নাকি... আমার কৃতকর্মের ফল?
"By atleast two or three inches. "
কানের মধ্যে কে যেন গরম শলাকা ঢুকিয়ে দিয়েছে। বধির হয়ে গেছি, চারপাশের কোনও শব্দ আমায় আর স্পর্শ করতে পারছে না। কর্ণকুহরে একটানা ধ্বনিত হচ্ছে পরিমাপটা, " atleast two or three inches. " বোধহয় একটু মায়া হল ওর, বাহুপাশে আরও নিবিড়ভাবে টানল।
"Jelus?", নরম স্বরে প্রশ্ন ভেসে এল। কি জবাব দেব বুঝতে পারছি না। বাস্তবিকই উত্তরটা আমার অজানা। কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায় সেই অনুভূতি? 'ঈর্ষান্বিত' বললে যে সত্যের ঘোর অপলাপ হবে।
বোবার শত্রু নেই। মৌন থাকাই এখন শ্রেষ্ঠ পন্থা। ওর দিকে আর তাকাতে পারছি না, অস্বস্তি হচ্ছে ঐ ডাগর আয়ত চোখের তীব্র চাহনির সামনে। যেন মর্মস্থল ভেদ করে পড়ে নেবে আমার মনের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সমস্ত গূঢ়রহস্য। দৃষ্টি গিয়ে পড়ে নাইটির শাসন মানতে না চাওয়া ওর বেআব্রু বুকের মসৃণ চাতালে। নিটোল উদ্ধত স্তন সম্পূর্ণ নিদাগ, নিষ্কলুষ। গভীর বিভাজিকার বাঁ পাশে আবেদনমুখর তিল বাদে আর কিছুই দেখা যায় না। কোথায় হারিয়ে গেল সেই দশনচিহ্ন? সে কি তবে আমার দুঃস্বপ্নের একটা অংশমাত্র? আণুবীক্ষণিক তীক্ষ্নতায় খুঁজতে থাকি ওর বুকের প্রতিটি বিন্দু, প্রতিটি কোষ... উন্মাদ দৃষ্টির সামনে ফালাফালা হয়ে যায় গভীর চড়াই-উতরাই, উপত্যকাভূমি।
"কি খুঁজছিস?"
আবারও আচমকা প্রশ্নে আমি স্থাণু। অব্যক্ত কথারা কিছুতেই আর ভাষা হয়ে বেরোতে পারছে না। মূক চাহনি তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। হিমস্বরে আপনা থেকেই উত্তর দিল,
"সেরে গেছে। বম্বে যাওয়ার পর সঞ্জীব অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়েছিল"
জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যখন সামান্য একটা ভুলের জন্য চারপাশটা ওলটপালট হয়ে যায়। ছোট্ট একটা কথা, চোখের সামান্য ইশারা, অবহেলায় মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া- বদলে দিতে পারে অনেক কিছু। ক্ষণিকের প্রভাব কি সুদূরপ্রসারী! অথচ ঘটনাটা যখন ঘটছে ঠিক সেইসময় কিন্তু আঁচও পাওয়া যায় না তার। বোঝা যায় না কি হতে চলেছে এর ফলশ্রুতি। আর পাঁচটা সাধারণ মুহূর্ত থেকে তাকে আলাদা করে চিনে নেওয়া দায়। ঘটমান বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে এক পা-এক পা করে যেতে যেতে যখন চারদিকের চেনা পৃথিবীটা ক্রমশ পালটে যেতে থাকে, পরিকল্পিত ছকের বাইরে অজানা সরণী বেয়ে হাঁটতে শুরু করে জীবন, মনকে তখন প্রশ্ন করি আমরা, 'কি করে এমন হল?' সদুত্তর পেতে মন অনুসন্ধান শুরু করে, ক্ষিপ্র গোয়েন্দার মত অতীতের সমস্ত ফাইল ধুলো ঝেড়ে বার করে খুঁজতে থাকে আতিপাঁতি। অণুবীক্ষণের নীচে ফেলে যাচিয়ে নেয় প্রতিটি খণ্ডমুহূর্ত। কম্পিউটার সায়েন্সের পরিভাষাতে যা 'ব্যাকট্র্যাকিং অ্যালগরিদম', কার্যকারণ পরম্পরার সেই সূত্র ধরে অবশেষে সে উপনীত হয় কঠোর নির্মম সত্যে। বিনা বাক্যব্যয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরে সেই মুহূর্ত, যেখান থেকে জীবন বেঁকে গিয়েছিল কোনও অচেনা মোড়ে। বইতে শুরু করেছিল অন্য এক খাতে যার ঢেউগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যেতে থাকে পরিচিত জীবনের নিশ্চিন্ত নিরাপদ গণ্ডির থেকে দূরে, আরও দূরে। দুর্নিবার স্রোতের মুখে ভেসে যাওয়ার মুহূর্তে আমরা অক্ষম প্রতিরোধের চেষ্টা করি খড়কুটো আঁকড়ে ধরে। হায়, সময় যে বহতা নদী! জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি একমুখী তার যাত্রা। উৎস থেকে মোহনার দিকে সে চঞ্চলা রমণী 'নেচে চলে যেন নটিনী', কোথায় কোন অববাহিকায় কে অবহেলায় পড়ে রইল দেখার তার ফুরসত কই?
আর যার চোখের সামনে একটু একটু করে ঘটে এই অনিবার্য পরিবর্তন, কি হয় তার পরিণতি? নিষ্ফলা বালির বাঁধে যখন বাধা মানে না নির্দয়া স্রোতস্বিনী, তখন? শূন্য দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়া দেখা ছাড়া আর কিই বা করার থাকে? সময়ের চাকা, সে তো উলটোদিকে ঘুরবে না কোনওদিন। টাইম মেশিনের অলীক প্রকৌশল বিদ্রূপভরে মুখ ভ্যাংচায় কল্পবিজ্ঞানের পাতা থেকে। কে সেই অপরাধী যার দোষে এমনটা ঘটল? মনকে চোখ ঠারা চলে না, সে জানে কার দোষে। হৃদয়ের আবছা আয়নাতে নিজেরই প্রতিফলনের দিকে চেয়ে থাকে মূক দৃষ্টি।
চোখের সমান্তরালে, ফুটকয়েক উঁচুতে স্থাবর সিলিঙ। খাট থেকে বোবা চোখ মেলে তাকিয়ে আছি সেদিকে। কয়েক ঘণ্টা আগে ঐ সিলিঙই নীরব সাক্ষী ছিল আমাদের উদ্দাম ভালবাসাবাসির। এখন সেখানে ক্যালেইডোস্কোপের খেলা। মেঘের আড়াল থেকে একটু একটু করে পরিস্ফুট হওয়া সকালের আলো জানলার গ্রিলের মধ্যে দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে কারওর অনুমতির তোয়াক্কা না করে। পেশাদার জাদুকরের মত নিজের ভোজবাজি দেখাতে ব্যস্ত, তার রঙ্গমঞ্চ ঘরের দেওয়াল বা মাথার ওপরের সিলিঙ। সিলিঙটাও বোধহয় স্বস্তি পেয়েছে এমন নির্দোষ সভ্যভব্য ‘আট থেকে আশি’-মার্কা চালচিত্র দেখে। স্বাভাবিক, ভোর ইস্তক একঘেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছবি চোখের সামনে চলছে, কাঁহাতক আর ভাল লাগে! স্বাদবদলের প্রয়োজন সবারই আছে, সে মানুষ হোক বা ঘরের সিলিঙ।
খাটে একা একা শুয়ে এসবই ভেবে চলেছি। অবান্তর, আবোল-তাবোল। কিছুই নয়, মনটাকে অন্যদিকে ঘোরানোর ব্যর্থ চেষ্টামাত্র। বিক্ষুব্ধ অবচেতন তোলপাড় হচ্ছে সেই মুহূর্তটার কথা ভেবে। যদি ফিরে যাওয়া যেত আবার, যদি ফিরিয়ে নেওয়া যেত প্রশ্নটা? যে প্রশ্ন প্রেমিকাকে করা অনুচিত, প্রেমশাস্ত্রের পাঠে যে প্রশ্ন ঘোরতর নিষিদ্ধ। আর... কে না জানে নিষিদ্ধের হাতছানি কি প্রবল। সে অদম্য আকর্ষণ উপেক্ষা করব এতটা বীতস্পৃহ আমি নই। কিন্তু এতবড় নির্বোধও তো নই যে অমন অন্তরঙ্গ সময়ে ওরকম একটা প্রশ্ন...
অনবধানে জ্যামুক্ত তীর ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ধনুর্ধরের থাকে না, তার কাজ তখন কম্পিতবক্ষে আগুয়ান শরকে লক্ষ্য করা। এ পর্যন্ত সকলেই জানে। প্রবাদবাক্য সাধারণত মিথ্যে হয় না। সাধারণত... কিন্তু তীর যদি লক্ষ্যভেদ করে? যদি অজ্ঞাত কারণে শরাহত হয় কোনও অজানা শত্রু যার অস্তিত্বই ছিল কার্মুকের অগোচর? ঠিক কেমন হয় তখন তার মনের অবস্থা? বিস্মিত? পুলকিত? চমৎকৃত? নাকি এ সবই মিলেমিশে থাকে অথবা... অথবা, এর বাইরে ব্যাখ্যাতীত কোনও অনুভূতি? যেমনটা আমার হয়েছিল স্নানঘরে...
...
কি করে ফেললাম? কেন জিজ্ঞেস করতে গেলাম এটা? অতি বড় মূর্খও এমন ভুল করবে না আর আমি কি না... ও ঠায় চেয়ে আছে আমার চোখের দিকে। নিষ্পলক দৃষ্টিতে মিশে অপার বিস্ময়, তার সাথে নীরব ভর্ৎসনা। এখনও আমাদের দেহ পরস্পরে সম্পৃক্ত, ঝিরিঝিরি বারিধারা শাওয়ার থেকে নেমে ভিজিয়ে দিচ্ছে একবিন্দুতে মিশে থাকা আলাদা দুটো শরীরকে। ওর নরম জমিতে দৃঢ়প্রোথিত হয়ে আমার উত্তুঙ্গ পৌরুষ, ছন্দোবদ্ধ মিলনের গতিতে যান্ত্রিকভাবে কেঁপে কেঁপে উঠছি দুজনেই। দাঁড়িয়ে থাকার দরুণ সম্ভব ছিল না স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মিলিত হওয়া, ওর কোমল তনু তাই ঢলে পড়েছে স্নানঘরের বাষ্পসিক্ত দেওয়ালে, সুগঠিত বাম জঙ্ঘা পরম আদরে বেষ্টন করে দয়িতের কোমর। ঈষৎ তির্যক দেহভঙ্গির কারণে উন্নত স্তনেরা কি মোহময়ী এক বিভঙ্গে আমার বক্ষলগ্না। কবোষ্ণ জলের মনোরম স্পর্শে জাগ্রত দুই বৃন্ত বারংবার আছড়ে পড়ছে প্রেমিকের বলিষ্ঠ বুকে। সুডৌল দুই হাত পেলব আলিঙ্গনে আলতো করে জড়িয়ে। নমনীয়, অথচ দৃঢ় সে আলিঙ্গন। পুরুষকে যা নিশ্চিতভাবে বেঁধে ফেলে নারীর চিরন্তন বাহুপাশে। রতিক্রীড়ার তালে তালে সঙ্গতি রেখে সুপুষ্ট নিতম্ব আঘাত হানছে ওয়ালপেপারের গায়ে, বিচিত্র শব্দ তুলে। সবই মুহূর্ত কয়েক আগের মত, শুধু... আবেশে বোজা চোখের পাতারা এখন উন্মীলিত। সপ্রশ্ন দৃষ্টি সরাসরি নিবদ্ধ আমার দৃষ্টিতে। মর্মভেদী চাহনি যেন আমার চামড়া-অস্থি-স্নায়ু বিদীর্ণ করে দেখে নিচ্ছে মনের অতল অবধি। একটাও কথা বলেনি ও, কিন্তু নিরুচ্চার জিজ্ঞাসায় প্রতিধ্বনিত বুকের ভিতরটা। ঐ চোখের চাওয়ার সামনে বেশিক্ষণ প্রতিরোধের ক্ষমতা নেই। অথচ... কি কৈফিয়ত দেব এই অমার্জনীয় অপরাধের?
"Just kidding", নিজের মুখ থেকে বেরোনো কথাগুলো নিজেরই কানে কি ভীষণ হাস্যকর শোনালো! ও কিছু বলছে না। তপ্ত শরীর এখনও নিয়মিত গতিতে পৌরুষের লাঞ্ছনা ধারণে ব্যস্ত, চোখজোড়া ঠায় চেয়ে আমার মুখের দিকে। আর ফেরবার পথ নেই, যা থাকে কপালে। মিথ্যেটাকে যে কোনও মূল্যে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে মরিয়া আমি, ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফোটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করি।
"তুই সত্যিই সিরিয়াসলি নিলি কথাটা? পারিসও বটে"
পরিস্থিতি লঘু করার এর থেকে ভাল উপায় মাথায় আসছে না। এই ঠুনকো আশ্বাসে কাজ হবে কোনও? দুরুদুরু বুকে প্রতীক্ষা করি, আমার কাঠিন্য তখনও ওকে অখণ্ড মনযোগে গেঁথে চলেছে। একটা হাত আপনা থেকে উঠে যায় পুরুষ্টু বোঁটায়, উদ্বেল বৃন্তকে পীড়ন করে। কোনও প্রত্যুত্তর আসে না ওর থেকে, আয়ত চোখদু'টি আবারও মুদে যায়, টানা টানা আঁখিপল্লবে ফের রতিসুখের প্রতিভাস। অজান্তেই স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে আমার। যাক, এখনকার মত ফাঁড়াটা কেটেছে। বেমক্কা প্রশ্নটার কথা ভেবে এবার নিজের ওপরে রাগ হচ্ছে। এসবই গত এক সপ্তাহব্যাপী অদ্ভুতুড়ে চিন্তাগুলোর বহিঃপ্রকাশ। কি যে ছেলেমানুষিতে পেয়ে বসেছে! আগের রবিবার দুপুরে আচমকা ভেসে ওঠা দৃশ্যকল্প থেকে শুরু, তারপরের কদিন নিয়মিতভাবে সেই চিন্তাকে প্রশ্রয় দিয়ে আজ এই দুরবস্থা। যতবার মনকে শাসন করতে গিয়েছি ফল হয়েছে উলটো। অসুস্থ ভাবনারা আরও বেশি করে ভিড় করেছে মনের ভিতর, চেতন-অবচেতনকে গ্রাস করেছে ধীরে ধীরে। বিশেষত সেদিন রাতে ওর আধখোলা বুকের চুড়োয় সঞ্জীবের দশনচিহ্ন দেখার পর... প্রতিবর্তেই বুঝি দৃষ্টি চলে গেল সেই বিশেষ স্থানটিতে। এতক্ষণে জলধারায় ভিজতে ভিজতে দু'জনেরই শরীরময় স্বচ্ছ আস্তরণ, ভাল ঠাহর হচ্ছে না। তাও এত কাছ থেকে তো ভুল হওয়ার কথা নয়। কোথায় সে দংশনের দাগ? নিষ্কলঙ্ক বিপুল বক্ষদেশ লুটিয়ে পড়ছে আমার বুকের ঘন জঙ্গলে। যেন জোড়া দুই পায়রা ছটফটিয়ে বেড়াচ্ছে থেকে থেকে। ওখানেই সঞ্জীব... আঃ আবারও সেই! বিকৃত চিন্তারা ফিরে আসছে, মস্তিষ্কের দখলদারি ধীরনিশ্চিত গতিতে তাদের অধিকারে। মাথার ভিতর অসংখ্য পোকা কিলবিলিয়ে উঠছে, কুরে কুরে খাচ্ছে আমার যুক্তি-বুদ্ধি-বোধ। রমণের মাঝেই চোখ বন্ধ করে ফেলি, ও যেন ঘুণাক্ষরেও বুঝতে না পারে আমার মনের অবস্থা। বন্ধ চোখের পাতায় আবার সেই দৃশ্যপট, সঞ্জীবের সাথে ও... আর ভাবতে পারি না। কে ঐ প্রেমিক, যে ওকে নির্দয়ভাবে আদর করে চলেছে? ওটা কি সঞ্জীব, না আমি? এখন কার সাথে ও কামকেলিতে মত্ত জলের অবিরাম বর্ষণের মাঝে? আমি, নাকি... ? মস্তিষ্কময় বিস্ফোরণ হতে থাকে ছোট-বড়, আর আমার বোধবুদ্ধি ঘুলিয়ে যায়। রমণের গতিবেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে ক্রমশ। ওর আতপ্ত যোনিপাত্রে আমূল বিদ্ধ লৌহশলাকা বাড়তে থাকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে-আয়তনে, বাড়তে থাকে তার তাপমাত্রা। লোহিত-তপ্ত... শ্বেততপ্ত। দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য পুরুষ উন্মাদের মত ছিন্নভিন্ন করে চলে নারীর কোমল অভ্যন্তর। ভীমগতিতে সে মন্থন করে আমার একান্ত আপন প্রেমিকাকে... কে ও? আমি? সঞ্জীব? মনের মধ্যে বিদ্যুচ্চমকের মত উদয় হয় মারাত্মক এক প্রশ্নেরঃ তবে কি আমিই এখন সঞ্জীব? সহস্র অচেনা কণ্ঠ সম্মিলিত সাড়া দেয়- "হ্যাঁ"। কে ওকে এমন তীব্রভাবে নিষ্পেষণ করছে? আবারও সমস্বরে জবাব আসে- "সঞ্জীব"। হৃদয়ের অচেনা গলিঘুঁজিতে অনুরণিত হতে থাকে সে উত্তর। হাজার ডেসিবেলের আর্তনাদে কানে তালা লেগে যায়। সহসা এই বধিরতায় আপাদমস্তক কেঁপে ওঠে আমার। উদ্ভ্রান্তের মত চোখ খুলি। দেখি সেই আগেরই মত রমণের ছন্দে স্পন্দিত হচ্ছে প্রিয়তমা, তালে তালে দুলে উঠছে ওর নগ্নদেহ। অবিশ্রান্ত বারিধারায়, প্রিয়মিলনের তৃপ্তিতে, যৌনসুখের বিহ্বলতায় সারা অঙ্গে তার রূপের মাধুরী ছড়িয়ে পড়েছে। ধন্দে পড়ে যাই, এ কি কোনও শাপগ্রস্তা কিন্নরী, না আমারই প্রেয়সী? আমার, নাকি... না আমার নয়, এই মুহূর্তে স্নানঘরের একান্ত ঘেরাটোপে কোথাও আমার অস্তিত্ব নেই। নামহীন এক বোধ জন্ম নেয় মনের গহিনে। এখন আমি সঞ্জীব। যার ওটা নাকি... "Bigger than yours", মধুক্ষরা সলজ্জ স্বর কানের মধ্যে বেজে ওঠে। তবে তো এই সামান্য রতিক্রীড়ায় কাজ হবে না! যে পৌরুষের দর্প যত বেশি তার আস্ফালনও ততোধিক হওয়া উচিত। আজই ওকে হাতেনাতে সে প্রমাণ দেব।
হঠাৎ কোথা থেকে এক দানব এসে ভর করে আমার শরীরে। না না আমার তো নয়... যাকগে এখন অতশত ভাবার সময় নেই। গোটা শরীরে রক্তকণিকারা ছুটে বেড়াচ্ছে, মাথার ভিতরে জান্তব হুঙ্কার। বহু বহু যুগ আগে আমার পূর্বপুরুষ এ পৃথিবীর বুকে দিনগুজরান করত হিংস্র প্রাণীদের সাথে দৈনিক সংগ্রাম করে। তখন মানুষে আর পশুতে প্রভেদ কতটুকুই বা ছিল? সেই আদিম মানবের রক্ত বইছে আমার শিরায়, ধমনীতে। প্রাণের ভিতর অনেক গভীরে এখনও বসত করে রক্তলোলুপ সে শ্বাপদ। সভ্যতা আর আধুনিকতার মোড়কে তাকে অনুক্ষণ ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়। কিন্তু আজ, এই মুহূর্তে মনের কোটরে বাসা বাঁধা বিকৃত জৈবিক তাড়নায় সে বেরিয়ে এল, বেরিয়ে এল নখ-দাঁত বার করে। আরক্ত চোখে একবার নিরীক্ষণ করল নিজের দুই কামলোলুপ থাবার অধিকারে এলিয়ে পড়া রিরংসায় বিবশ নারীটিকে। পলকের মধ্যে তাকে সজোরে ঠেসে ধরেছে স্নানঘরের দেওয়ালে। হ্যাঁচকা টানে নারীর ডান জঙ্ঘাও তার কোমরে উঠে এল, দুই সুডৌল রম্ভাসদৃশ উরু বেষ্টন করে আছে পুরুষ-পশুর শ্রোণীদেশ। শরীরের সবটুকু অংশ মাটি থেকে শূন্যে, নয়তো রমণকারীর অঙ্গে ভর দিয়ে। আচমকা এই পট-পরিবর্তনে রমণী বিস্মিতা, ভূপতনের আতঙ্কে আরও নিবিড় আলিঙ্গনে বেঁধেছে প্রেমিকের ঘাড়-গলা-পিঠ। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে আবেশে বন্ধ চোখ খুলে দয়িতকে অবাক দৃষ্টিতে দেখছে। সে চাহনিতে পুলক-ত্রাস-চমক-বিমুগ্ধতা মিলেমিশে বিচিত্র ভাবের ব্যঞ্জনা। তার দূরতম ধারণাতেও নেই কে এই পুরুষ। সে প্রেমিকপ্রবর নয়, বিকৃত কামের জ্বালায় উন্মাদ এক নররাক্ষস। প্রেয়সীকে অন্য প্রেমিকের সাথে কল্পনা করে যার পৌরুষ আজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠেছে। নির্মম গতিতে সমূলে বিদ্ধ করছে নারীকে, জরায়ুমুখে আঘাত হানছে একের পর এক। কর্কশ কাঠিন্যের প্রহারে ব্যথাতুরা রমণী আর্তনাদ করে উঠল। সে শব্দে যারপরনাই উল্লসিত পুরুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা জন্তু, নিষ্ঠুরতর রমণে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলছে পেলব নারীদেহ। বলিষ্ঠ দুই হাতের তালুতে প্রবলভাবে নিষ্পেষিত কমনীয় জঘনদেশে রক্তাভা, পরিচিত শরীরের প্রতিটি রোমকূপ আক্রোশে দলিত-মথিত করছে। অচেনা রমণ-পীড়নে অনভ্যস্ত কোমল তনু ক্রমশ সাবলীল, পাশবিক নিষ্পেষণের মাঝে প্রবল রতিসুখ খুঁজে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। বর্বর পুরুষকে সোহাগে-লাস্যে আরও নিবিড় করে বাহুডোরে টেনে আহ্বান জানাচ্ছে সবলতর মর্দনের। জান্তব পৌরুষ সে ডাকে সাড়া দিয়েছে। নারীর আর্দ্র যোনিদেশে ধাতব পিস্টনের মত বারংবার আছড়ে পড়ছে নির্দয় কাঠিন্যে, যেন প্রজ্বলিত কামাগ্নিতে শুষে নেবে তার কামনাঘন লাভার শেষ বিন্দুটুকু। প্রচণ্ড মৈথুনের তালে দ্রুতলয়ে ওঠানামা করছে স্ফুরিতাধর মানবী, চরম সঙ্গমসুখে তার অভ্যন্তর ভেসে যাচ্ছে, স্খলিত হচ্ছে। মিলনাবেশে বন্ধ দুই চোখের পাতায় সাতরঙা রামধনুর খেলা। শাওয়ারের কৃত্রিম বারিপাতে সিক্ত স্তনদু'টি প্রবল আবেগে আরও আরও স্ফীত, মরুদেশীয় দ্রাক্ষাফলের আকার নেওয়া উন্মুখ বৃন্তদ্বয় ভিতরের বাঁধভাঙা জোয়ারে যেন ফেটে পড়বার উপক্রম। আসন্ন রাগমোচনের উত্তেজনায় রোমাঞ্চিত নারীর সংযমের বাঁধ ভেঙে গেল, উথালপাথাল অট্ট-শীৎকারে ভরে যাচ্ছে স্নানঘর। ফ্ল্যাটের সীমানির্ধারক দেওয়ালের পুরু গাঁথনিকে উপেক্ষা করে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবেশী ঘরগুলিতে। বাঁধভাঙা দুকূলপ্লাবী নারীর লুপ্তপ্রায় চেতনা সে সব খেয়াল করার অবস্থায় নেই, অবসন্ন দেহে পুরুষের গায়ে এলিয়ে পড়ার প্রাকমুহূর্তে শুধু টের পেল নিজের গভীরে প্রমত্ত পৌরুষের উদ্দাম বিস্ফোরণ।
রমণের উত্তেজনা এখন স্তিমিত, রেতঃস্খলনের সাথে সাথেই উধাও প্রাণের কন্দরে লুকিয়ে থাকা বন্য পশু। ধীরে ধীরে জান্তব প্রবৃত্তিকে সরিয়ে ফিরে আসছে প্রেম, নিজস্ব নারীর প্রতি ভালবাসা পুনরায় জাগরূক হৃদয়ে। মানবীশরীরের প্রতিকোণে পরম যত্নে সাবান মাখিয়ে দিচ্ছে, জলের ঝাপটায় দূর করছে জমে থাকা ক্লেদ। তীব্রমৈথুনের উদ্দামতা মুছে গিয়ে শ্রান্ত প্রিয়তমা আবারও নিজেকে ফিরে পাচ্ছে, ফিরে পাচ্ছে প্রেমাস্পদের বাহুবন্ধনে। নীরবে পুরুষকে ঝরনাধারায় স্নান করাচ্ছে সেও। দু'জনের মুখে কোনও ভাষা নেই, শব্দের অনবরত যাতায়াত কেবল পরস্পরে নিবদ্ধ দু'জোড়া চোখের বাঙ্ময় দৃষ্টিপাতে।
যৌথস্নান শেষ, ঘরে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে এলিয়ে দিয়েছি বিছানার নরম আশ্রয়ে। সুদীর্ঘ মানসিক আর শারীরিক পরিশ্রমের পর কথা বলার সামান্যতম শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই। ও ব্যস্ত স্নান সমাপনান্তে ভিজে চুল শুকোতে। স্খলিতকেশ উন্নত বুকের ওপরে মেলে চালু করেছে হেয়ারড্রায়ার, একটু একটু করে শুষ্ক হচ্ছে মেঘবরণ কেশ। একটানা যান্ত্রিক শব্দের প্ররোচনায় অবসন্ন চোখের পাতা বুজে আসতে চায়। শিথিল দেহ নিদ্রাবেশে শিথিলতর।
সহসা অজানা প্রতিবর্তে তন্দ্রা ছুটে যায়। চোখ পড়ে ওয়ার্ড্রোবের মানুষপ্রমাণ দর্পণে। আলুলায়িতকেশ নারী আয়নার মধ্যে দিয়ে অনিমিখ তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। দুর্বোধ্য সে জটিল দৃষ্টিতে এক আকাশ জিজ্ঞাসা। ও কি তবে সবই বুঝতে পেরেছে?
শিরদাঁড়া বেয়ে হিমস্রোত নেমে যায়।
...
প্রশ্নোত্তরের পালা তবে অনিবার্য, মনে মনে ভাবি। অগত্যা... নিয়তিকে তো আর খণ্ডাতে পারব না। এত ভয় পাওয়ারই বা কি আছে? মনকে শক্ত করা বিশেষ দরকার। কি আর হবে বড়জোর, একটু বকাঝকা, খানিকটা রাগ-অভিমান। তার বেশি তো কিছু নয়। সে কি আর নিত্যদিনই হচ্ছে না, কারণে-অকারণে? হয়তো তিরস্কারের বহরটা একটু বেশি মাত্রায় হবে, সেটা আমার প্রাপ্যও বটে। কিন্তু স্নানের সময় যেমন নিজেকে ছেড়ে দিল আমার ওপর, ওরকম বন্য যৌনতায় সঙ্গ দিল অমন মারাত্মক প্রশ্ন করার পরেও তাতে দুর্ভাবনার তেমন কারণ নেই। খামোখাই এত ভেবে যাচ্ছি।
মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বিরুদ্ধ মন সাথে সাথে বাগড়া দেয়। এতটা আত্মপ্রত্যয়ের সত্যিই কি কোনও ভিত্তি আছে? শুধোয় সে। এমনও তো হতে পারে তখন আর ও প্রশ্নটা করেনি, মুলতুবি রেখেছিল। দুজনে মিলিত হচ্ছি এতদিন পরে, অপ্রিয় জিজ্ঞাসায় মৈথুনকালে ব্যাঘাত ঘটাতে কোন উপবাসী নারীই বা চায়! সেক্ষেত্রে অন্তিম জিজ্ঞাসা কিন্তু এখনও বাকি। দর্পণে প্রতিবিম্বিত নারীর মুখাবয়বে ফুটে ওঠা প্রশ্নের রেখারা অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। অতএব আসন্ন বিপর্যয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে আরম্ভ কর। সময় ঘনিয়ে এল বলে।
ক্লান্ত, অবসন্ন মনের প্রাঙ্গণে শুম্ভ-নিশুম্ভের লড়াই চলতে থাকে। বিরক্ত হয়ে উঠি, এই টানাপড়েন আর ভাল লাগে না। ব্যাপারটা চেপে গেলে কেমন হয়? আগের যে মিথ্যাচরণে তখনকার মত বিপদ কাটিয়ে উঠেছিলাম সেটারই যদি পুনরাবৃত্তি করি, ও কি আর বুঝতে পারবে? উঁহু, মেয়েদের সন্দেহ এত সহজে নিরসন করা গেলে পৃথিবীর অর্ধেক পুরুষ আজ কত সুখী হত! ওভাবে হবে না। তাছাড়া, তাছাড়া... স্নানের ঘরে যে শ্বাপদ আমার মধ্যে জেগে উঠেছিল তাকে নিবৃত্ত করব কোন উপায়ে? সে তো আবারও ফিরে ফিরে আসবে। প্রতিবার নবোদ্যমে, নতুন অস্ত্রসম্ভার সাজিয়ে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ অবচেতনে যা চলেছে তার প্রভাব কতদূর অবধি পড়বে আমাদের জীবনে? আজকে তার ছোট্ট একটা নমুনা ট্রেলারেই তো শিউরে উঠতে হয়!
তবে কি সব সত্যি স্বীকার করে নেব? ওর কাছে হাট করে খুলে দেব নিজের মনের জানলা? তারপর? তারপর যদি ওর মন ভেঙে যায়? ছেড়ে চলে যায় আমাকে... না না, এ কোনওমতেই হতে দেওয়া যায় না। একটা বিকল্প রাস্তা আমায় খুঁজে বের করতেই হবে। অশান্ত মন অস্থির পদচারণা করে চলে, চোখ চলে যায় অজান্তেই ওয়ার্ড্রোবের আয়নার দিকে। চুল শুকোনোর পর্ব শেষ, এখন যৎকিঞ্চিৎ প্রসাধনে ব্যস্ত ও। অপাঙ্গে লক্ষ্য করে আমায়। পরক্ষণেই অবহেলাভরে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, মনোযোগ দেয় শৃঙ্গারে।
"...চলে গেছি ইহাদের ছেড়ে;
ভালবেসে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
অবহেলা করে আমি দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
ঘৃণা করে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে;
আমারে সে ভালবাসিয়াছে, আসিয়াছে কাছে,
উপেক্ষা সে করেছে আমারে, ঘৃণা করে চলে গেছে,
যখন ডেকেছি বারেবারে, ভালবেসে তারে;
তবুও সাধনা ছিল একদিন, এই ভালবাসা;
আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা করে গেছি;"
হতাশ হয়ে আবার শুয়ে পড়ি। আনমনে দেখতে থাকি সিলিঙের ক্যানভাসে বহিরাগত আলোর ঝিকিমিকি তুলির টান। অবান্তর কথাদের ভিড়ে ক্লান্ত মন কখন যেন ঘুমে ঢলে পড়ে।
"অ্যাই সরে শো না একটু"
নিদ্রালু দু'চোখ পরিচিত গলার শব্দে জেগে ওঠে। তাকিয়ে দেখি, ও। ছুটির দিনগুলো এই ফ্ল্যাটে যাপনের সুবিধার্থে ওর কিছু ঘরে পরার জামা এখানে স্থায়ীভাবে রাখা থাকে। তারই মধ্যে সংক্ষিপ্তাকার একটা নাইটি নামেমাত্র গায়ে জড়িয়েছে, দেহের বেশিরভাগটাই অনাবৃত। আমাকে ঠেলে সরিয়ে দেয় দেওয়ালের দিকে। সামান্য একচিলতে জায়গা বার করে শরীর এলিয়ে দেয়। সারা সকাল ওর ওপর দিয়েও কম ধকল যায়নি। তাই বোধহয় এত চুপচাপ। সেটাই কারণ, না কি... জিজ্ঞেস করার মত সাহস আমার নেই, তার চেয়ে মুখ বুজে পড়ে থাকাই শ্রেয়। সিঙ্গলবেড খাট, দুজনের স্থান সংকুলান হতে গেলে কিছুটা দৈহিক ঘনিষ্ঠতা অনিবার্য। দু'জনেই খানিকক্ষণ নীরব, কেবল পাশাপাশি শায়িত দু'টি শরীরে নিরুচ্চারে উত্তাপ বিনিময় হতে থাকে। অভ্যাসমত অঙ্গে দেওয়া হাল্কা বিদেশি সুগন্ধির ছোঁয়া, তার মৃদু সৌরভে আবিষ্ট হয়ে পড়ছে আমার সমগ্র সত্তা। জানলার বাইরের কোনও গাছ থেকে বিরহী এক কোয়েলের কুহুতান ভেসে আসে, যেন ঋতুরাজের আগমন-নির্ঘোষ - 'বসন্ত জাগ্রত দ্বারে'। পর্দার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভিতরে অনধিকার প্রবেশকারী আলোর তীব্রতায় সহসা হেরফের, সিলিঙের ক্যালেইডোস্কোপের চালচিত্র সে অভিঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়, আবারও ভেসে ওঠে নতুন এক নকশা নিয়ে। কেমন মায়াবী, স্বপ্নালু পরিবেশ। আহা যদি সারা জীবনটাই এমনভাবে কাটত, দু'জনে পাশাপাশি শুয়ে, নির্ঝঞ্ঝাট...
আচমকাই আমার দিকে পাশ ফিরেছে। ওর পা আমার গায়ের ওপর, পেলব বাহু বেড়াজালে বেঁধেছে ডান কাঁধ। কোমল স্তনভার উন্মুক্ত পুরুষবুকের জঙ্গলে আলতো ভাবে পিষ্ট হচ্ছে, বাঁদিকের গালে ওর নি:শ্বাসের উষ্ণ পরশ, চোখেমুখে আলগোছে হানা দিচ্ছে দু'এক গাছি চূর্ণ কুন্তল। একেই কি স্বর্গসুখ বলে?
"তুই সত্যিই জানতে চাস?"
হঠাৎ মৌনতাভঙ্গের কারণে প্রথমটায় একটু অসুবিধে হল কথাটার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।
"যেটা তখন বললি... চানের সময়, সত্যি জানতে চাস?", গলায় সামান্য অসহিষ্ণুতার আভাস। এই রে! এত তাড়াতাড়ি জেরা আরম্ভ হয়ে গেল? যা থাকে কপালে... একবার গলাখাঁকারি দিলাম।
"মানে এক্স্যাক্টলি কিসের কথা বলছিস..."
"আহহ ন্যাকামো করিসনা", এবারে উষ্মাটা আর প্রচ্ছন্ন রইল না কণ্ঠস্বরে, "খুব ভাল করেই জানিস কিসের কথা বলছি"
কি উত্তর দেব এর? এতটা সোজাসুজি প্রশ্ন, সত্যি বলতে আশা করিনি। মনের মধ্যে ব্যাপারটাকে একটু গুছিয়ে নিতে থাকি। বেফাঁস কিছু না বেরিয়ে যায় মুখ দিয়ে! ও কিন্তু সামান্যতম সময়টুকুও দিতে রাজি নয়। সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলে নিজেই আবার জিজ্ঞেস করল,
"তুই জানতে চাস তো সঞ্জীবেরটা তোর থেকে বড় কিনা?"
এমন সরাসরি আঘাতের জন্য মন একেবারেই প্রস্তুত ছিল না, প্রশ্নের অভিঘাতে কেমন অসাড় হয়ে গেল। নির্জীবভাবে ঘাড়টা কোনওমতে নাড়িয়ে সম্মতিজ্ঞাপন করলাম।
"Are you absolutely sure? নিতে পারবি তো?"
নির্দয়া এই নারীকে কেমন অচেনা লাগে। এটা কি পাল্টা প্রতিশোধের পালা? স্নানের সময় উন্মত্ত পাগলামির বদলা নিচ্ছে এইভাবে? নাকি... আমার কৃতকর্মের ফল?
"By atleast two or three inches. "
কানের মধ্যে কে যেন গরম শলাকা ঢুকিয়ে দিয়েছে। বধির হয়ে গেছি, চারপাশের কোনও শব্দ আমায় আর স্পর্শ করতে পারছে না। কর্ণকুহরে একটানা ধ্বনিত হচ্ছে পরিমাপটা, " atleast two or three inches. " বোধহয় একটু মায়া হল ওর, বাহুপাশে আরও নিবিড়ভাবে টানল।
"Jelus?", নরম স্বরে প্রশ্ন ভেসে এল। কি জবাব দেব বুঝতে পারছি না। বাস্তবিকই উত্তরটা আমার অজানা। কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায় সেই অনুভূতি? 'ঈর্ষান্বিত' বললে যে সত্যের ঘোর অপলাপ হবে।
বোবার শত্রু নেই। মৌন থাকাই এখন শ্রেষ্ঠ পন্থা। ওর দিকে আর তাকাতে পারছি না, অস্বস্তি হচ্ছে ঐ ডাগর আয়ত চোখের তীব্র চাহনির সামনে। যেন মর্মস্থল ভেদ করে পড়ে নেবে আমার মনের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সমস্ত গূঢ়রহস্য। দৃষ্টি গিয়ে পড়ে নাইটির শাসন মানতে না চাওয়া ওর বেআব্রু বুকের মসৃণ চাতালে। নিটোল উদ্ধত স্তন সম্পূর্ণ নিদাগ, নিষ্কলুষ। গভীর বিভাজিকার বাঁ পাশে আবেদনমুখর তিল বাদে আর কিছুই দেখা যায় না। কোথায় হারিয়ে গেল সেই দশনচিহ্ন? সে কি তবে আমার দুঃস্বপ্নের একটা অংশমাত্র? আণুবীক্ষণিক তীক্ষ্নতায় খুঁজতে থাকি ওর বুকের প্রতিটি বিন্দু, প্রতিটি কোষ... উন্মাদ দৃষ্টির সামনে ফালাফালা হয়ে যায় গভীর চড়াই-উতরাই, উপত্যকাভূমি।
"কি খুঁজছিস?"
আবারও আচমকা প্রশ্নে আমি স্থাণু। অব্যক্ত কথারা কিছুতেই আর ভাষা হয়ে বেরোতে পারছে না। মূক চাহনি তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। হিমস্বরে আপনা থেকেই উত্তর দিল,
"সেরে গেছে। বম্বে যাওয়ার পর সঞ্জীব অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়েছিল"