Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance স্বীকারোক্তি by Anangapal (Uncompleted)
#12
।। ৮ ।। স্মৃতিচারণঃ মানভঞ্জন



"ওরে এবার তো তোরা বেরো, অনেক রাত হয়েছে, ওদেরকে আর জ্বালাতন করিস না"
"কেন গো বড়মাইমা, সবে সাড়ে এগারোটা বাজে, আমরা থাকলে কি ওদের গল্প করতে অসুবিধে হবে?"
"তোর না সামনে পার্ট ওয়ান ঝিল্লি? কাল কলেজ নেই? বেশি রাত করে শুলে সকালে উঠতে পারবি?"
"ও কাল কলেজ যাবে কি গো, আজ যে আমরা সারারাত নতুন বৌদির সাথে আলাপ করব"
"আলাপ করার সময় পরে অনেক পাবি তোরা, এখন চল তো বাপু, নতুন বৌমা কিছু পালিয়ে যাচ্ছে না"
"ছোড়দাও তো পালিয়ে যাচ্ছে না জেঠিমা"
"আর যদি পালায় তবে নতুনবৌদিকে নিয়েই পালাবে, চিন্তা কোরো না"
"হিহিহিহি"
"উফ এই ধিঙ্গি মেয়েগুলো বড় অবাধ্য হয়েছে, দাঁড়া তোর মাকে ডাকছি, সে এসে ব্যবস্থা করুক"

দোতলায় ছোড়দার ঘর থেকে ভেসে আসা তর্জন আর কলকাকলিতে গোটা বাড়ি মুখর। বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের ঝক্কি বড় কম নয়, একটা গোটা উৎসবের আয়োজন। আইবুড়োভাত থেকে শুরু হয়ে বিয়ের দিনের নানা আচার-উপচার, শতেক নিয়মের গেরো, বধূবরণ, কালরাত্রি, বৌভাতের অনুষ্ঠান- সমস্ত পার করে বৃত্ত এসে সম্পূর্ণ হয় পুষ্পাভরিত যৌথ শয্যায়। দুটি প্রাণের একসাথে জীবনের পথে চলার শুভ সূচনা এই মধুলগ্নে। তবে সে পথের শুরু কণ্টকাকীর্ণ। ফুলে যেমন রয়েছে কাঁটার জ্বালা, নবদম্পতির প্রথম (অন্তত সমাজস্বীকৃত) মিলন দুর্বিষহ করতে হাজির অনূঢ়া বা সদ্যবিবাহিত নবযৌবনার দল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে সে কল্পনায় তারা ভিতরে ভিতরে যারপরনাই উত্তেজিত; উচ্ছৃংখল, বল্গাহারা আদিম রসিকতার ইঙ্গিতে প্রায়শই তা প্রকট হয়ে পড়ছে। 'কলকল্লোলে লাজ দিল আজ নারীকণ্ঠের কাকলি'... বাড়ির প্রতিটি দেওয়াল রণিত হচ্ছে সে কলতানের ঝংকারে।

চিলেকোঠায় দশ ফুট বাই দশ ফুটের নিজস্ব কোটরে বসে থাকা আমার মনে অবশ্য এসব বিন্দুমাত্র রেখাপাত করতে পারছে না। করবেই বা কি করে? ঘণ্টা দেড়েক আগে আসা ফোনটার পর থেকেই ধীরে ধীরে সমস্ত বাহ্যচেতনা লোপ পেয়েছে। বিকেল থেকে জমানো উৎকণ্ঠা... বিকেলই বা বলি কেন, দুপুরে ও সঞ্জীবের সাথে লাঞ্চ ডেটে রওনা দেওয়ার পর থেকেই তো... একটু একটু করে জমে যা সন্ধে নাগাদ অভিমান, আর সবশেষে রাগের আকার নিয়েছিল, ফোনে ওর গলা শোনামাত্র সেসব কোথায় উধাও! না, ভুল হল, শুধু ঐ মাদকতাময়ীর স্বরের জন্য নয়, দূরভাষে ওর ঈষৎ কাঁপা-কাঁপা গলায় যা বলল তাতে যেন কি এক অজানা রহস্যের আভাস।

...

খাওয়া-দাওয়ার পাট তখন সবে চুকেছে, অতিরিক্ত গুরুভোজনের পর পৃথুলাতর হওয়া এক লতায়পাতায় আত্মীয়ার কাছে নিজের কর্মজীবন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কৈফিয়ত দাখিল করতে করতে বিরক্ত হচ্ছি; কিন্তু উপায় কিছু নেই, এগুলো না করলে 'অসামাজিক', 'উন্নাসিক', 'উন্মার্গগামী' ব্যাচেলরের তকমা জুটতে বেশি দেরি হবে না। খানিক আগে দীপান্বিতাও বিদায় নিয়েছে, অবশ্য সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে আজকের মত দ্বিতীয়বার চোখ মেরে, একটা ফ্লাইং কিস দেওয়ার পরে। হাতের বিচিত্র মুদ্রায় ফোনে যোগাযোগ রাখার ইশারা করতেও ভোলেনি। যান্ত্রিকভাবে একবার ঘাড় নাড়া, এছাড়া কোনও প্রতিক্রিয়া ছিল না আমার তরফ থেকে। সায়াহ্নকালীন ব্যভিচারের জন্য়ই হোক বা অন্য কোনও কারণে, একটা অবসাদ আস্তে আস্তে গ্রাস করছিল গোটা শরীর-মনকে। উপরন্তু কাল থেকে আবার সেই চেনা ছকের জীবন, অফিস-বাড়ি-কর্মব্যস্ততা-দৌড়ঝাঁপ, এসব ভেবে মনটা আরও বিস্বাদ হয়ে যাচ্ছে। নিমপাতা খাওয়া মুখে শুভানুধ্যায়ী মহিলার উপদেশ গিলছি, এমন সময় রাধিকার দূতী হয়ে মোবাইলে চেনা মেসেজবার্তার ধ্বনি। ভক্তকে তবে দেবীর মনে পড়েছে?

"I am free now. Call me whenever you are "

হৃৎপিণ্ডের অলিন্দ-নিলয়ে রক্তেরা সহসা দ্রুতগামী। 'অফিসের দরকারী ব্যাপার' বলে আত্মীয়াটিকে কাটালাম, তিনি অবশ্য এ অজুহাতে মোটেই প্রসন্ন হতে পারেননি, বাঁকা চোখে গতিবিধি লক্ষ্য করে যাচ্ছেন। তাতে আমার ছেঁড়া যায়। ভগ্ন আসরে ইতিউতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিড়ের মাঝেই একফাঁকে জায়গা করে ফোন লাগালাম। শ্যামের বাঁশি বিফলে গেল না, তিন সেকেণ্ডেই শ্রীমতীর সাড়া-

"কোথায় তুই?"
"রিসেপশানেই..."
"এখনও শেষ হয়নি?"
"তোর নিজের বিয়েতে দশটার মধ্যেই সবাইকে ভাগিয়ে দিবি বুঝি? পাবলিকে ক্যালাবে ধরে"
"উফফ Don’t be ridiculus! বাড়ি কখন ফিরবি?"
"তা তো বলতে পারছি না, আরও একটু দেরি তো হবেই... তুই বল না কি বলবি, এখানে আমি ফ্রিই আছি"
"না, বাড়ি গেলে give me a call"
"কি ব্যাপার বল তো? সিরিয়াস কিছু?"
"বললাম তো বাড়ি ফিরে কল করিস"
"আরে বেকার টেনশানে ফেলছিস কেন! খারাপ কিছু হয়েছে নাকি? তুই ঠিক আছিস? Anything wrong?"
"No, I am allright "
"তবে কি?"
"Do you trust me?"
"মানে???"
"বল না... Do you trust me?"
"আরে কি ব্যাপার কিচ্ছু না বলে..."
"Just answer this, Do you trust me? Yes or No?", ওপ্রান্ত থেকে অধৈর্যস্বরে ধমক এল।
"তুই নিজেই জানিস ভাল করে"
"Are you going to tell me or not?"
"Of course, এতে জিজ্ঞেস করার কি আছে?"
"পরে বলব"
"এখনই বল না, তুই কোথায়?"
"ঘরে ঢুকেছি জাস্ট, ডিনার প্যাক করে নিয়ে এলাম"
"আর লাঞ্চ কেমন হল?"
"বললাম তো Call me after reaching home "
"সাসপেন্স ক্রিয়েট করছিস কেন এত?"
"আহহ বলছি তো... call me when you are alone "
"কটা অবধি জেগে থাকবি?"
"I will be awake, don’t worry "
"কাল অফিস নেই?"
"সে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না"
"আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে"
"ডিনার হয়ে গেছে?"
"টেন কোর্স, বিয়েবাড়িতে যেমন খ্যাঁটন হয়"
"গ্রেট, আমি ততক্ষণ করে নিই, কেমন? বাই"

সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, রাজনন্দিনীর মতিগতি বোঝা ভার। এই শাসন তো এই আদর। এই মেঘ, এই রোদ্দুর। কিন্তু ব্যাপারটা কি? সঞ্জীবের সাথে কোনও ঝামেলা? লুকিয়ে গেল কি না কে জানে... উঁহু, একটু পরেই তো বলবে বলল। তবে? আচ্ছা, হঠাৎ ট্রাস্টের কথাই বা তুলল কেন? কিসের ট্রাস্ট?

তবে কি... তবে কি...

দুপুরে স্নানঘরে মনের মধ্যে ফুটে ওঠা ছায়াছবিরা ভেসে উঠল। সত্যিই কি ওরকম কিছু হয়েছে? এ যে কল্পনারও অতীত! ওর মত মেয়ের পক্ষে... নাহ আর ভাবতে পারছি না। এক্ষুণি বাড়ি ফিরতে হবে যাহোক করে। জানি গালাগাল খাব তবু এখন ভিতরে গিয়ে জানতে হচ্ছে কারা শিগগিরি রওনা দেবে বাড়ির দিকে। 'কাল সকালের ফ্লাইট, ব্যাগ গোছানো হয়নি বলে এখন না গেলেই নয়, আবার ভোরে ওঠা'- এটাই সবচেয়ে মোক্ষম অজুহাত। এক দৌড়ে রিসেপশানের জটলার মাঝে, একে তাকে প্রশ্ন করে পেয়েও গেলাম সন্ধান, জেঠুর শালা-শালাজ রাতেই ফিরবেন, তাঁদের গাড়িটা আমাদের বাড়িতে রাখা অতএব ভাড়া করা গাড়িটা যাবে ওনাদেরকে বাড়ি অবধি নামিয়ে দিতে। হাতে চাঁদ পাওয়া আর কাকে বলে? অম্লানবদনে এক ঝুড়ি মিথ্যে বলে বাইরে যেতে পা বাড়িয়েছি, টনক নড়ল... ভাগ্যিস!

দে ছুট, দে ছুট, দোতলায় উঠে সোজা তত্ত্ব রাখা রয়েছে যেখানে সেই ঘরে গিয়ে হাজির। যথারীতি একদঙ্গল নিকটাত্মীয়া কৌতূহলী-অভিজ্ঞ চোখ মেলে পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত। কোন সামগ্রীর গুণাগুণ... অর্থাৎ দাম কেমন সে বিষয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার চলছে। মেঝেতে সার দিয়ে রাখা অনেক যত্নে সাজানো ট্রেগুলোর একটা টপ করে তুলে নিলাম। বিচারকমণ্ডলী ক্ষুব্ধ, ব্যথিত, কেউ কেউ সশব্দেই বিরক্তি জানান দিলেন।

"বাড়ি যাচ্ছি তো, একটা নিয়ে গেলাম যাতে পরে তোমাদের বেশি প্রবলেম না হয়"

ব্যাখ্যাটা সন্তোষজনক হয়েছে কিনা জানি না, ঘুরে তাকিয়ে ওনাদের মুখের অভিব্যক্তি থেকে সেটা আঁচ করার সময় বা ইচ্ছে কোনওটাই নেই। উর্ধ্বশ্বাসে নেমে সোজা অপেক্ষমান যাত্রীদের কাছে।

"স্যরি, একটু দেরি হয়ে গেল"

এনারাও কি বিরক্ত? হলে হবেন, কিছু করার নেই। এখান থেকে আমাদের বাড়ি কিছু না হোক দশ মিনিট লাগবে যেতে। আমার মনের মধ্যে নিষিদ্ধ উত্তেজনার যে ঝড় এখন বইছে, তার বহিঃপ্রকাশ থ্রি-পিস স্যুটের ট্রাউজারের ওপরে এরই মধ্যে ফুটে উঠেছে। সময় যত এগোবে, কল্পনারা ততই ডানা মেলবে ইচ্ছেমত, আর তার প্রভাব আরো বৃহৎ, আরো কঠিন হয়ে দেখা দেবে গাড়ির সিটে বসে থাকা আমার অধোবাসে। ঐ দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সে ভয়ানক দৃশ্য থেকে আড়াল করতে রক্ষাকবচ তত্ত্বের এই ট্রে।

ছোড়দাকে আজ ফুলশয্যার আবেগঘন মুহূর্তে তার মামা-মাইমার হার্টঅ্যাটাকের খবর শুনিয়ে আমার কি লাভ?
Reply


Messages In This Thread
RE: স্বীকারোক্তি by Anangapal (Uncompleted) - by manas - 09-01-2019, 02:51 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)