Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance স্বীকারোক্তি by Anangapal (Uncompleted)
#11
।। ৭ ।। প্রত্যাবর্তন



নীল, তারপর সাদা, আবার নীল, আবার সাদা। পর্যায়ক্রমে নীল আর সাদার আধিপত্যের দৌড়, কার ভাগে শেষমেষ জিত আছে জানার চাইতে প্রতিযোগিতাটাই বুঝি মুখ্য। নীলের মধ্যে আবার রকমফের, কখনও গাঢ় নীল তো তারপরেই আকাশী, আবার কোথাও ধূসরবর্ণ গম্ভীর নীল। সাদার মাঝেও রয়েছে প্রভেদ, পুরোটাই একটানা ধবলশুভ্র নয়, জায়গায় জায়গায় খয়েরির ছিটে। স্বর্গলোকে যাওয়ার পথ কি এরকমই হয়? দুর এই কচি বয়সে স্বর্গারোহণের কোনওরকম বাসনা নেই। এটা মনে হয় মেঘের দেশ, চতুর্দিকে মেঘেদের রাজত্ব। নীল মেঘ, সাদা মেঘ, কয়েক জায়গাতে ভীষণদর্শন কালো মেঘেরও দেখা মিলল, রাগের চোটে এক্ষুণি যেন মাটিতে আছড়ে পড়বে। মেঘ থেকেই তো বৃষ্টি, ক্লাস থ্রি-তে ভূগোল বইতে দেখা সেই ছবি। তীরচিহ্ন দিয়ে কিভাবে জল থেকে বাষ্প, বাষ্প জমে মেঘ, তার থেকে বৃষ্টি সব একেবারে জটিল করে বোঝানো। বৃষ্টিপাতের কারণ না বলতে পারলেই বনানী ম্যাডাম বেঞ্চের ওপর গোটা পিরিয়ড দাঁড় করিয়ে রাখতেন। সে তবু মন্দের ভাল, শোভনা ম্যাডামের ক্লাসে ইতিহাসের উত্তর ভুল বলেছ কি পিঠে দমাদ্দম স্কেলের বাড়ি, তখন 'চোখে নামে বৃষ্টি'। আচ্ছা বৃষ্টিতে শেষ কবে ভিজতে হয়েছিল? নভেম্বর? হ্যাঁ, প্যাণ্টালুনসের কিসব সেল চলছিল, বাহাদুরি দেখিয়ে ছাতা নিয়ে যাইনি। হবি তো হ সেদিনই আকাশ ভেঙে অঝোরধারে বরিষণ। অনবরত গজগজ শুনতে শুনতে আর এক হাতে অ্যাপারেলস ভর্তি প্যাকেট, অন্যহাতে একচিলতে বাহারি লেডিজ ছাতা নিয়ে জলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে হাঁটার যৌথ খেলা। অনর্থক বীরত্বের তিরস্কার, সাথে হাত ধরাধরি করে জলের ছাঁট থেকে বাঁচাতে সোহাগভরে কাছে টেনে নেওয়া। খোলারাস্তায় জনসমুদ্রের মাঝে নৈকট্যের আতিশয্যে অতিরিক্ত দুষ্টুমি করে ফেললে, হোক না সে ছাতার আড়ালে, শাস্তি দেওয়া জলের তলায় পা মাড়িয়ে। উঃ, এত আলো কিসের?

প্রায়স্বচ্ছ কাঁচের আবরণ ভেদ করে আলোর রশ্মি সটান এসে পড়ছে মুখের ওপর। সারি দেওয়া মেঘেদের মাঝে একদল অনুপস্থিত, সেই ফাঁক গলে অর্কদেব উঁকি মারার সুযোগ পেয়ে গেছেন। যেটুকু তন্দ্রা দুচোখের পাতায় অবশিষ্ট ছিল, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে বিমানসেবিকার যান্ত্রিক ঘোষণার চোটে তাও উধাও। কাল রাতে শুতে এমনিতেই দেরি হয়েছে, সকালের ফ্লাইট ধরার তাড়ায় ভোর-ভোর ওঠা, ক্লান্তিতে সারা শরীর বিদ্রোহ করছে। আরেকটু ঘুমিয়ে নিলে হয়, কিন্তু এদিকে বিমানসেবিকার কথামত 'থোড়ি হি দের মে' ব্যাঙ্গালোরের 'হাওয়াই আড্ডায়' পৌঁছে যাব। অগত্যা নিরুপায় হয়ে নিজেকে সজাগ রাখা। নেমেই আবার অফিস ছুটতে হবে। যন্ত্রণা! একটা হাফ সিএল নিয়ে নেব? নাঃ এবারের ছুটিতে অনেকগুলো খরচ হয়ে গেছে, তার চেয়ে কোনওমতে দিনটা পার করে বিকেল-বিকেল বাড়ি ফিরে লম্বা ঘুম দিলেই চলবে। অবশ্য দিন খারাপ গেলে সন্ধ্যা নামার আগে পরিত্রাণ জুটবে না, মরুকগে এতশত ভেবে লাভ কি, নেমেই একটা কড়া করে ডাবল কফি নিয়ে নেব নাহয়।

ভাবনার মাঝেই অবতরণের প্রস্তুতি। প্লেনের চাকা প্রযুক্তিনগরীর মাটি ছোঁয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই চেনা ভিড়, ঠেলাঠেলি, গাদাগাদি করে যাত্রীবাহী বাসে চড়ে টার্মিনাস। নামেই এয়ারলাইন্স, যেন সকাল ন'টার আপ লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল! তাড়াহুড়ো করে কনভেয়র বেল্ট থেকে মালপত্র উদ্ধার পর্ব, ফাঁকে ফাঁকে বাড়িতে পৌঁছ-সংবাদ প্রেরণ। লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমান বাসগুলোর একটাতে বসে দম নেওয়ার সময় পেলাম। ওকেও কি জানাব? এখন বোধহয় অফিস যাওয়ার প্রস্তুতিতে মগ্ন, বিরক্ত করা ঠিক হবে না। নাঃ, কাল রাতে পইপই করে বলে দিয়েছিল সকালে নেমেই খবরটা জানাতে, এরপর এই ছুতোয় মান-অভিমানের পালা আরম্ভ হলে সন্ধেবেলাই ছুটতে হবে ঘুম-টুম ফেলে। মধ্যপন্থা অবলম্বন করা যাক। "Reached safely. Going straight to the office".

টিংটিং। সফল বার্তাপ্রেরণের আশ্বাসবাণী।

এবার গন্তব্যে পৌঁছনোর অপেক্ষা, অফিস আসতে ঢের দেরি, প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে নেওয়ার অবসর পাওয়া যাবে। তড়িঘড়ি কণ্ডাক্টরকে ডেকে দায়িত্ববান যাত্রীর মত টিকিটটা কেটে রাখছি যাতে পরে নিদ্রার ব্যাঘাত না ঘটে, পকেট থেকে পরিচিত বার্তাগমন ধ্বনি।

"That’s great. Getting ready, will call you on the way. Have something important to tell you. Hope you are not angry".

কে কার ওপর রাগ করে! মনটা ভারি হয়ে গেল।

"OK dear"

ভাগ্যিস মেসেজের মধ্যে মানুষের মনের পুরোটা প্রতিফলিত হয় না, ধরা পড়ে না মুখের অভিব্যক্তিও। জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম। বেলা খুব একটা কম হয়নি, তাও এ শহরের ইতিহাস আর ভূগোল বলে এখন আকাশ এমন মেঘলা থাকাটা অস্বাভাবিক নয় মোটেই। আমার মনের আকাশও মেঘাচ্ছন্ন গত রাত থেকে, তাই বোধহয় সূর্যালোকের অভাবটা আরও বেশি চোখে লাগছে। নিদ্রাহীনতার ক্লান্তি আর মানসিক দ্বন্দ্বের টানাপড়েনে কখন চোখ লেগে গেছে নিজেও টের পাইনি। ঘুম ভাঙল সহযাত্রীর ডাকে, মুঠোফোন বেজে চলেছে শব্দের জলতরঙ্গ ছড়িয়ে সে কথাই জানান দিতে। ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম, যাক অফিস আসতে এখনও কিছুটা দেরি আছে, পেরিয়ে গেলে আরেক কেলেংকারি হত। আশ্বস্ত হয়ে ফোনে চোখ বোলালাম, বাপরে, তিনটে ডাকছুট, একটা অপঠিত বার্তা। কলব্যাক করলাম, ওপারে অবন্তিকা।

"ঘুমিয়ে পড়েছিলিস?"
"ঐ একটু চোখ লেগে গেছিল। সরি কলগুলো শুনতে পাইনি"
"Its OK honey, জানি তুই খুব টায়ার্ড আছিস"
"হুম, তুই কি অফিস পৌঁছেছিস?"
"নোপ, Still on my way. Another ten to fifteen minutes"
"ঠিক আছে", কি বলব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, এমন তো কখনও হয়নি আগে ওর সাথে?
"তুই ঠিক আছিস তো? তোর গলাটা কেমন শোনাচ্ছে, Are you not well?"
"না না Everything is fine "
"Sure honey?"
"হ্যাঁ, জাস্ট একটু sleep deprived. বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে নেব বেশি করে তাহলেই..."
"তো এখনই চলে যা না, আজ নয় একটা লিভ নিলি"
"না রে অফিসে যেতেই হবে একবার"
"OK, as you wish ", ওর গলাটা কি ম্রিয়মাণ লাগছে?
"তুই কি আজ, মানে... সন্ধেবেলায়, You wanna catch up?"
"Actually about that, তোকে বলা হয়নি", খানিক থেমে, "... আমি বম্বের কনফারেন্সটায় যাচ্ছি"

এর জন্য একেবারেই তৈরী ছিলাম না, বহুদিন আগে থেকে শুনে আসছি ঊর্ধ্বতনদের পরোক্ষ চাপ সত্ত্বেও ও যেতে নারাজ। শুধু এটাই বা কেন, বেশিরভাগ কনফারেন্সই ও এড়িয়ে যায় নানা ছলছুতোয়। হাতেগোনা যে কবার গেছে তা শুধু মহিলা সহকর্মীরা সঙ্গে ছিল সেই ভরসায়, এবারে তো তারা কেউ যাচ্ছে না বলে জানি। হিসেবটা মিলছে না।

ও কি আমার মন পড়তে পারে? বহুবার প্রশ্নটা নিজেকে করেও সদুত্তর পাইনি, তবে আমার এখন নিশ্চিত ধারণা, পারে।

"You must be wondering কেন সাডেনলি ডিসিশানটা চেঞ্জ করলাম?"

প্রশ্নটা যখন আন্দাজ করেই নিয়েছেন, উত্তরটাও আপনিই দিন দেবী।

"The thinh is ", ও যেন কোনও কারণে ইতস্তত করছে, "প্রজেক্টটার কোর সেকশনের প্রেজেন্টেশনটার চাংক আমার বানানো, অন্য যে পার্টনার যাচ্ছে সে এটা ঠিকমত হ্যাণ্ডেল করতে পারবে না"
"I see! কিন্তু সেটা এরকম লাস্ট মোমেণ্টে জানানোর মানে কি? This is not professional "

ওপ্রান্ত মুহূর্তখানেক নীরব। তারপর...

"The other partner is সঞ্জীব, So... You know, how shy he is with me ", ভুলটা তৎক্ষণাৎ সংশোধন করল, "I mean, he used to be "

কাল রাতের কথোপকথনের পর এই সংশোধনটার সত্যিই প্রয়োজন। প্রসঙ্গটা এড়াতে অন্য প্রশ্নে যেতে হল, "কবে যাওয়া? টিকিট ম্যানেজ করতে পেরেছিস"
"ইয়া, আজ সকালেই অফিসের এজেণ্ট কনফার্ম করেছে, বাট ট্রেনে যেতে হবে, নো ফ্লাইট টিকিট available, not within their budget "
"Trust me, Trains are much better than Flights these days. তাছাড়া ডিসট্যান্সও এমন কিছু নয়... সো যাচ্ছিস কবে?"
"To Night 11:00 PM "
"Oh! Then no catching up till you return?"
"Know, Sorry Honey "
"So now its my turn to be alone in this city for a few days "
"For fewer days. ", নিজেকে যে বেশিদিন একা থাকতে হয়েছে এই সামান্য ব্যাপারটাও এরা মনে রাখবে এবং বারংবার মনে করিয়ে দেবে... "I will be back by Saturday evening "
"এতদিন? কদ্দিন ধরে কনফারেন্স চলবে?"
"Three days. Starts day after tomorrow, Wrap up by Friday. "
"বুঝলাম, তাহলে আজকে সি অফ করতে যাব স্টেশনে"
"No don’t ", মাঝপথেই প্রস্তাবটা মুলতুবি হয়ে গেল, "প্লিজ নো, অফিসের কলিগরা থাকবে"
"তারাও ট্রেনে যাচ্ছে?"
"হ্যাঁ, I mean...", যেন শ্বাসরোধ করে কথা বলছে এমন চাপা গলায় উত্তর এল, "আমি আর সঞ্জীব"
"ওঃ ওকে"
"আমার জন্যই ও ফ্লাইট টিকিট ক্যানসেল করে ট্রেনের বুকিং করাল, বলল একা মেয়েদের জন্য এসব জার্নি সেফ নয়"

সাফাই দিচ্ছ প্রিয়তমা? কোনও প্রয়োজন নেই, আমার মনের মধ্যে কি চলছে তা যদি জানতে...

"Are you angry Honey?", ত্রস্ত স্বরে প্রশ্ন ভেসে এল।
"আরে না না, বরং এটা একদিক দিয়ে সেফ হয়েছে, আজকাল যা অবস্থা রাস্তাঘাটের..."
"Are you sure you are not..."
"Trust me, I really am "
"Are you angry about yesterday?"

হাসি পেয়ে গেল, আমি রাগ করব কালকের জন্য? নিজের মনের ভেতরটা যদি খুলে ওকে পড়াতে পারতাম। কি জবাব দেব একটু ভেবে নিই। মনশ্চক্ষে দেখতে পাচ্ছি ও এখন অভ্যাসবশত ডানদিকের নীচের ঠোঁটটা কামড়ে রয়েছে, উত্তরের অপেক্ষায়। নাঃ, অযথা হয়রানি করার মানে হয় না কোনও।

"Of course I am baby, sent percent "

পুরোপুরি যে নিশ্চিন্ত হতে পারিনি জানি, তবে ছোট্ট করে শ্বাস পড়ার শব্দে বুঝলাম বুকের ভার অনেকটাই লাঘব হয়েছে। আবারও হাসি পাচ্ছে, ঐ গুরুভার বক্ষের অধিকারিণীর সাথে কথাটা এক্কেবারে বেমানান। বলতে গিয়ে চেপে গেলাম, বাড়ি থেকে ফিরেই ঝাড় খাওয়াটা উচিত কাজ হবে না।

"OK Honey, I have reached there. Will call you latar, OK? Bye ", সেকেণ্ডের ভগ্নাংশের বিরতি, তারপর, "ম্মমুয়াহহ"

দূরভাষযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। মনের মধ্যেও মেঘের আঁধার সরিয়ে রোদ্দুরের উঁকিঝুঁকি। এইজন্যই কি এত চোখে হারাই ওকে? জানি না, জানতেও চাই না বোধহয়। আমার গন্তব্য এসে গেছে, মনটাকে সংযত করা দরকার। বহুদিন পরে অফিসে ঢুকছি, আজ কোনওক্রমেই কাজে ভুল কাম্য নয়।

বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে কসরত করে নামতে হল। এই গন্ধমাদনের বোঝা সারাদিন বইতে হবে? অন্তত ট্রলিব্যাগটা কেয়ারটেকারকে বিকেল পর্যন্ত গছানো যায় কিনা চেষ্টা করে দেখি, তারপর তো সুযোগ পেলে আমিই কাট মারব... কেজো ভাবনাদের মাঝে মোবাইলে দৃষ্টি যেতেই গলাটা শুকিয়ে কাঠ। সেই অপঠিত মেসেজ, বার্তাপ্রেরিকার নাম- দীপান্বিতা! নামটা কাল রাত থেকেই যেন বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছিল, অথচ তার কিছুক্ষণ আগে ছাদের ওপর... মনের ভেতরে পাপবোধটা ধীরে ধীরে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।

"Hope you have reached safely... I am feeling so lonely here, missing you tons... wish you could stay a bit longer "

শিরদাঁড়া বেয়ে হিমস্রোতের নেমে যাওয়াটা টের পেতে একটুও কষ্ট হল না। এমন আহাম্মক আমি, এরই মধ্যে ভুলে মেরে দিয়েছি যা যা হয়েছে... অবশ্য মনেরই বা দোষ কি? কাল ফিরে আসার পরে চ্যাটে ও যা বলল তারপর...

এমন অবিস্মরণীয় রাত কটাই বা আসে এক জীবনে?
Reply


Messages In This Thread
RE: স্বীকারোক্তি by Anangapal (Uncompleted) - by manas - 09-01-2019, 02:50 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)