Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
#61
পর্ব সাত – সাহচর্যের হাত (#1)



একরাতেই দানার দেহ মন ভেঙ্গে যায়, এই পৃথিবীতে আর বেঁচে থেকে কি লাভ? ছলনাময়ীর কথায় ভুলে কাগজের সিঁড়ি চড়ে নিজের ভালবাসাকে নিজে হাতে হত্যা করেছে। ইন্দ্রাণী ওকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না, সেই যোগ্যতা হারিয়েছে। এই মহানগর ওর কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে, ওর মা, মনসা মাসি আর শেষ পর্যন্ত যাকে আঁকড়ে ধরে বাকি জীবন কাটাতে চেয়েছিল, সেই ইন্দ্রাণী। এই মহানগর ওকে সর্বস্বান্ত করে ছেড়ে দিয়েছে। ব্যাগে যত টাকা ছিল সব ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে দেয়, বাড়িতে থাকলে ওই টাকা গুলো ওকে বারেবারে ছোবল মারছিল। পাপ কর্মে আয় করা টাকা নিজের ওপরে খরচ করার ইচ্ছে ছিল না, না এই কালী পাড়ার বস্তির কারুর জন্য। একবার ভেবেছিল অধির বাবুর কাছে গিয়ে আবার ট্যাক্সি চালাবে, কয়েকদিন ট্যাক্সি চালিয়েই মন ভরে গেল। ট্যাক্সি চালানোতে আর মন বসে না তাই রোজ রাতে মদনার চায়ের দোকানে চুপচাপ বসে থাকে আর রাত বাড়লেই চোলাই গিলে নিজের গুমটিতে ফিরে কাঁদতে বসে। রাতের ঘুম একপ্রকার চলেই গেছে বলতে গেলে চলে। ইন্দ্রাণীর জল ভরা চোখ আর ওই টাকা ছুঁড়ে মারা ওকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়ায়। 

মাঝে মাঝেই দানার কাছে নাস্রিন অথবা কঙ্কনার ফোন আসে, কিন্তু দানা ফোন উঠাতে সাহস পায় না। যদি ওরা একবার জানতে পারে যে দানা এই শহরেই আছে তাহলে হয়ত লোক লাগিয়ে ওকে মেরে ফেলবে অথবা পুলিশে ধরিয়ে দেবে। শেষে একদিন দানা ওর ফোন নাম্বার বদলে ফেলে। ক্ষমতা থাকলে কঙ্কনা আর নাস্রিনকে খুন করত, কিন্তু ওরা অনেক ধনী আর ক্ষমতাশালী, ওদের সাথে সম্মুখ সমরে পেরে উঠবে না দানা। আর যুদ্ধ করতে গেলে যদি ইন্দ্রাণী অথবা ওর ছেলে মেয়েকে আঘাত করে তাহলে দানা মরেও শান্তি পাবে না। 

এই সব ভাবনা চিন্তা করে একদিন ঠিক করে এই মহানগর ছেড়ে চলে যাবে। অন্য কোন শহরে কিম্বা গ্রামে গিয়ে আবার নতুন করে নিজের জীবন শুরু করবে। সাতপাঁচ ভেবে একদিন নিজের ব্যাগ গুছিয়ে কালী পাড়ার বস্তি ছেড়ে রাতের অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে অনির্দিষ্টের পথে পাড়ি দেয়। কোথায় যাবে জানে না, কি ভাবে যাবে জানে না, শুধু জানে এই মহানগর ছেড়ে ওকে চলে যেতে হবে। যাবার আগে শেষ বারের মতন গোল বাগানে যায়, ইন্দ্রাণীর ফ্লাটের নিচে দাঁড়িয়ে ওর খালি বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকে, যদি একবার শেষ বারের মতন ওর দেখা পায়। বারান্দার আলো নেভান, শোয়ার ঘরে আলো জ্বলছে কিন্তু ইন্দ্রাণীর দেখা আর পায় না। 

হতাশ হয়ে ভাঙ্গা বুক আর নিজের ব্যাগ নিয়ে নদীর ওইপারের বড় রেল স্টেসানে পৌঁছায়। টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ, আশে পাশের লোক সবাই ব্যাস্ত, সবার একটা গন্তব্যস্থল আছে, শুধু দানার নেই। অনেকেই ট্রেন থেকে নামছে, অনেকের চোখে আশার আলো, এই মহানগর ওদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। অনেকের চোখে হতাশা, অনেকেই হয়ত ওর মতন সব কিছু খুইয়ে এই মহানগর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। পেছনের লোক ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি দাদা কোথায় যাবেন?” দানা শুন্য চোখে ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “জানি না কোথায় যাবো।” কিছু লোক ওর শুন্য চোখ দেখে অবাক হয়ে যায়, কেউ কেউ হেসে বলে, “পাগল নাকি?” দানা উল্টে লোকটাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কোথায় যাচ্ছেন?” উত্তরে পেছনের লোক জানায়, “খয়রাসোল, সেখানে আমার বাড়ি। এই মহানগরে চাকরি করি। সপ্তাহের শেষে দুইদিনের ছুটি পাই তাই বাড়ি ফিরছি।” আচ্ছা, এইখানে যত লোক আছে সবার নিশ্চয় বাড়িতে কেউ আছে। সবার চেহারা দেখে মনে হল সবাই খুশি শুধু মাত্র দানা দুখি, নিঃস্ব। দানা কি ভেবে লাইন থেকে বেড়িয়ে এসে আবার এলোমেলো হাঁটতে শুরু করে দেয়। ট্রেনে যেতে হলে টিকিট কাটতে হবে সেটা ভুলে যায়। আপন মনে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় দেখে যে রেল স্টেসান থেকে বেড়িয়ে এসেছে। মাথার ঠিক নেই, পাশের একটা চায়ের দোকানে বসে চা খায় আর শুন্য চোখে নদীর ওপারে ঝলমলে মহানগরের দিকে তাকিয়ে থাকে।

এমন সময়ে ওর কাঁধে একটা শক্ত হাতের চাপড় পরে। দানা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে ওর পেছনে ফারহান দাঁড়িয়ে। ফারহান ওকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি রে ভাই, কোথাও যাচ্ছিস নাকি?”

দানা কাষ্ঠ হাসি টেনে বলে, “ভেবেছিলাম কোথাও একটা যাবো কিন্তু ঠিক করতে পারছি না কোথায় যাবো।”

ওর কথা শুনে ফারহানের সন্দেহ হয় তাই দানাকে পালটা জিজ্ঞেস করে, “মানে কি বলতে চাইছিস তুই? নিজেই জানিস না কোথায় যেতে চাস?” ওর ভাসা ভাসা চোখের দিকে তাকিয়ে ফারহান প্রশ্ন করে, “তোর কি শরীর খারাপ?”

দানা মাথা নাড়ায়, “না রে শরীর খারাপ নয়।” কিছুক্ষণ থেমে ম্লান হাসি দিয়ে বলে, “এই মহানগর আমার কাছ থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে তাই আমি চলে যাচ্ছি এই শহর ছেড়ে।”

ফারহান ওর পাশে বসে ওর দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে, হয়ত বুঝতে পেরেছে ওর অন্তরদ্বন্দ, “তোর কি হয়েছে একটু খুলে বলত আমাকে?”

দানা নিজের ভাঙ্গা পাঁজর অন্তত কারুর সামনে এই ভাবে মেলে ধরতে নারাজ। জীবনে তিনজনের সামনে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে মেলে ধরেছিল, আজ সেই তিনজনের মধ্যে কেউই ওর পাশে নেই। মা আর মনসা মাসি অনেকদিন আগেই গত হয়েছেন আর নিজেই ইন্দ্রাণীর ভালোবাসাকে খুন করেছে। ফারহানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ম্লান হেসে গল্প বানিয়ে বলে, ট্যাক্সি চালাতে আর চায় না তাই ভাবছে অন্য কোন শহরে গিয়ে কোন কাজ করবে। 

ফারহান খানিক্ষণ ভেবে ওকে বলে, “এই শহর ছেড়ে চলে কেন যাবি? এই মহানগরের বুকে অনেক কিছু করতে পারিস। আচ্ছা সেটা ছাড়, তুই আমার সাথে চল। একজনের কাছে নিয়ে যাবো তিনি নিশ্চয় তোর জন্য কিছু না কিছু একটা ব্যাবস্থা করে দেবেন।”

দানা জানে, রাজনৈতিক দলনেতা বাপ্পা নস্করের ড্রাইভার তাই ওকে বলে, “নারে ভাই, বাপ্পার কাছে যেতে রাজি নই আমি। অনেক পাপ করেছি এক নেতার সাথে মিশে সেই পাপের বোঝা আর বাড়াতে চাই না রে।”

ফারহান হেসে দেয়, “পাপ পুন্য জানি না, তবে যে মানুষের কাছে নিয়ে যাবো তিনি আমাদের এলাকার ভগবান। অদ্ভুত মানুষ এই মহেন্দ্র ঘোষ। চল চল, একবার ওনার আড্ডায় পা রাখলে বুঝতে পারবি।” 

দানা ফারহানকে বিশেষ চেনে না তাই প্রথমে ওর সাথে যেতে দ্বিধা বোধ করে। কিন্তু ফারহানের চাপাচাপির ফলে শেষ পর্যন্ত নিজের ব্যাগ উঠিয়ে ওর সাথে হাটা লাগায়। বুকের ভেতরে চাপা উৎকণ্ঠা জীবনের পথ আবার কোন দিকে মোড় নেবে এই অচেনা মানুষের হাত ধরে। হটাত কেন ফারহান ওর প্রতি এত সদয় হল, এমন সব প্রশ্ন ওকে ঘিরে ধরে। তবে আর কিছু হারাবার নেই তাই শেষ পর্যন্ত ফারহানের অনুরোধে গাড়িতে উঠে হিঙ্গলগঞ্জ ডক এলাকার দিকে পা বাড়ায়। পথে যেতে যেতে ফারহান ওকে জানায়, বাপ্পার ছেলে বৌ ট্রেনে চেপে কোথাও বেড়াতে গেছে তাই রেল স্টেসানে এসেছিল ওকে ছাড়তে। 

মহেন্দ্র ঘোষের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারে, ভদ্রলোক বছর কুড়ি আগে ওদের এলাকায় এসেছিলেন তারপর থেকে ওইখানের বাসিন্দা হয়ে গেছেন। কেউ জানেনা কোথা থেকে এসেছিলেন, কিন্তু তিনি হিঙ্গলগঞ্জ এলাকার মুকুটহীন রাজা। মহেন্দ্র বাবু প্রতি শনিবার বাড়িতে কালী পুজো করেন। মহেন্দ্র বাবু অদ্ভুত মানুষ, এই মানসিকতার মানুষ ফারহান আগে কোথাও দেখেনি। মহেন্দ্র বাবু বিয়ে থা করেন নি, এই এলাকা মানুষ ওর সংসার। মানুষ হিসাবে বড় অদ্ভুত, বিদ্বান জ্ঞানী গুনি ব্যাক্তি, বাড়িতে বইয়ে ঠাসা, কিন্তু কাজ করেন সব নীতি বিরুদ্ধ। ইলেক্ট্রনিক্স জিনিস পত্র, গাড়ির কল কব্জা ইত্যাদি থেকে সোনা দামী পাথর ইত্যাদি চোরাই করে আনা, বড় বড় প্রোমোটার বিল্ডারদের ধমক দিয়ে টাকা আদায় করা, কয়লা চুরি করা, বড় লোকেদের হুমকি দিয়ে টাকা তোলা ইত্যাদি। সেই টাকা উপার্জন করে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন, গরীব দুঃখীদের খাওয়ানো, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা, মন্দির মসজিদ গির্জায় টাকা দান, অনাথালয় নারী কল্যান কেন্দ্রে টাকা দান। এই দান ধ্যানের ব্যাপারে তিনি চুপচাপ থাকতে ভালোবাসেন। ওনার দাপটে ওই এলাকায় বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়। পুলিসের ডেপুটি কমিশনার, সাত্যকি চ্যাটারজি মহেন্দ্রবাবুর বন্ধু। তার চোখে অবশ্য ধুলো দেয় না, তবে সাত্যকি চ্যাটারজি ভালো ভাবেই জানেন মহেন্দ্র বাবু কি কি কাজ করেন। বয়স ষাটের কাছাকাছি কিন্তু মনে প্রানে প্রানবন্ত এক যুবক, মহেন্দ্র বাবুকে এলাকার সবাই “বড়দা” বলে ডাকে। ফারহান কাউকে ফোনে জানিয়ে দেয় ওর ব্যাপারে। 

হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায় এই মহানগরের ডক, জাহাজ বন্দর এলাকা। বড় ছোট মাঝারি অনেক ধরনের জাহাজ এসে এইখানে লঙ্গর করে। বড় রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে, অলিগলির মধ্যে দিয়ে দানাকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। খুব ঘিঞ্জি এলাকা, সরু সরু গলি, ঠিক যেন ভুল্ভুলাইয়া। যার পথ জানা নেই অনায়াসে সে এই অলিগলির জালে হারিয়ে যাবে। সারাদিন খুঁজেও এখান থেকে বের হবার পথ পাওয়া মুশকিল। দুই বাড়ির মাঝে শুধু মাত্র একটা রিক্সা যেতে পারার মতন পথ। পথের দুইদিকে কোথাও দোকান, কোথাও কারুর বাড়ির উঠান। মিষ্টির দোকান, থেকে সোনার দোকান থেকে লোহার দোকান থেকে খাবারের দোকান, সব রকমের দোকান আছে এই হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায়। কোথা থেকে ভুরভুর করে বিরিয়ানি কোর্মার গন্ধ ভেসে আসছে, কোথা থেকে মিষ্টি পাতার পান, কোথাও বেশ ভালো মাংস রান্না হচ্ছে। কেউ কেউ আবার ওই গলির মধ্যেই দড়ি টাঙ্গিয়ে কাপড় মেলে দিয়েছে। রাতের বেলায় বিজলী বাতির আলোতে এই এলাকা বিভীষিকায় সুন্দর দেখায়। ফারহানকে এই এলাকার অনেক লোকেই চেনে মনে হচ্ছে, কারুর সাথে দেখা হলেই, “কি ফারহান ভাই ক্যামনে আহেন?” ফারহান ডান হাত কপালে ঠেকিয়ে, “আদাব চাচা, ভালো আছি।” কোন মহিলা ওকে দেখে বলে ওঠে, “এই ফারহান, মালিশের তেল এনে দিলি না যে?” ফারহান হেসে সেই মহিলাকে উত্তর দেয়, “ইসস চাচী, এই বয়সে আবার মালিশের শখ, চাচা কি আর মালিশ করে না গো?” কোথা থেকে কয়েকটা ছোট ছেলে দৌড়ে এসে বায়না ধরে, “ফারহান ভাই ফারহান ভাই, কুড়ি টাকা দাও না, বিরিয়ানি খাবো।” ফারহান পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে বাচ্চাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “সেলিমের দোকানে যাস নে যেন, ওর দোকানের বিরিয়ানি খেলে পেট খারাপ হয়ে যাবে। তার চেয়ে ভালো, মেহেজবিনে চলে যাস আর আমার নাম নিস।” 

ফারহান ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “এই এলাকারা সবাই মোটামুটি সবাইকে চেনে। নাম না জানলেও মুখ চেনা। কিন্তু বড়দা আর তাঁর ছেলেদের সবাই চেনে।”

এমন সময় অন্ধকার ফুঁড়ে এক ব্যাক্তি ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। সেই সুঠাম ব্যাক্তিকে দেখে ফারহান জড়িয়ে ধরে। সেই ব্যাক্তি ফারহানের সাথে হাত মিলিয়ে বলে দানার দিকে দেখিয়ে বলে, “এই দানা নাকি?” তারপরে দানার দিকে হাত বাড়িয়ে হাত মিলিয়ে বলে, “আমি শঙ্কর।”

ফারহান শঙ্করের সাথে দানার পরিচয় করিয়ে দেয়, “শঙ্করদা, বড়দার ডান হাত। বাড়ি চল আরও অনেকের সাথে পরিচয় হবে।”

শঙ্কর বয়স পঁয়ত্রিশ কি চল্লিশ, স্বাস্থ ভালো, বেশ লম্বা চওড়া। ফারহান আর শঙ্করদা আগে আগে চলে আর দানা নিজের ব্যাগ কাঁধে ওদেরকে অনুসরন করে। সরু অলিগলি পেরিয়ে নদীর তীরে একটা পাঁচিলে ঘেরা দুই তলা বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। ফারহান আর শঙ্কর ওকে ছোট দরজা দিয়ে একটা উঠানের মতন ফাঁকা জায়গায় এনে দাঁড় করায়। দুই তলা বাড়ি মাঝে উঠান, তিন পাশে সারি বাঁধা ঘর। 

আচমকা কেউ ওর মাথার পেছনে কিছু দিয়ে বাড়ি মারে, টাল সামলাতে না পেরে সামনের দিকে পড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিক থেকে আরো একজন এসে ওর চোয়াল লক্ষ্য করে একটা ঘুসি চালিয়ে দেয়। দানা থতমত খেয়ে যায়, হটাত ওকে এইখানে এনে মারছে কেন। মাথা ঝাঁকিয়ে খানিক ক্ষণ এদিক ওদিকে দেখে, চারজন লোক মিলে শঙ্কর আর ফারহানকে ধরে ফেলেছে, আর ওর চারপাশে আরও জনা আটেক লোক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে একজন এসে ওর হাঁটুর পেছনে কিছু একটা দিয়ে মারে আর দানা মাটির ওপরে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। দানা এই বিশাল শক্তিশালী শরীর নিয়ে মার খাবে? শাক্য নদীর তীরে ওর গায়ে শক্তি ছিল না কারন মদের সাথে কিছু মেশান ছিল কিন্তু আজকে ওর গায়ে শক্তি ভরপুর। মাথা ঝাঁকিয়ে চোয়াল মুছে দেখে যে রক্ত, নাকের থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সামনে থেকে একজন ওকে মারতে এগিয়ে আসে। ওর চুলের মুঠি ধরে চোয়াল লক্ষ্য করে এক ঘুসি মারতে যায়। দানা মাথা পেছনে করে সামনের লোকের ঊরুসন্ধি লক্ষ্য করে এক ধাক্কা মারে। সামনের লোক ঊরুসন্ধি ধরে মাটিতে বসে পরে। সঙ্গে সঙ্গে দানা উঠে দাঁড়ায়, পেছন থেকে একজন ওর ঘার লক্ষ্য করে মারতে আসলে দানা সতরক হয়ে যায় আর পেছনের লোকের হাত ধরে টেনে ওই সামনের লোকের ওপরে ছুঁড়ে মারে। সঙ্গে সঙ্গে দুই পাশ থেকে আরো দুইজনে দৌড়ে আসে। একজনের পেট লক্ষ্য করে এক লাথি কষিয়ে দেয় দানা, লোকটা পরে যেতেই ওর চোয়াল লক্ষ্য করে এক ঘুসি। দ্বিতীয় যে লোকটা ওকে অন্য পাশ থেকে মারতে এসেছিল সে একটু দাঁড়িয়ে যায়। তারপরে দানার পেট লক্ষ্য করে ঘুসি চালায়। দানা সরে গিয়ে ঘুসি বাঁচিয়ে দ্বিতীয় লোকটার ঊরুসন্ধি লক্ষ্য করে লাথি কষিয়ে দেয়। দ্বিতীয় লোক ঊরুসন্ধি ধরে বসে পড়তেই দানা ওর গলা হাতের মধ্যে চেপে ধরে গর্জে ওঠে, “এই শালা মাদারজাত, তোদের কে পাঠিয়েছে? কঙ্কনা না নাস্রিন?” 


সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ ছয় জন লোক মিলে ওর ওপরে একসাথে ঝাঁপিয়ে পরে। দুইজনে একসাথে ওর হাত ধরে ফেলে মাটিতে বসিয়ে দেয়, একজনে পেছন থেকে ওর গলা হাতের মধ্যে পেঁচিয়ে শ্বাস রুদ্ধ করে দেয়, সামনের একজন ওর চোয়াল লক্ষ্য করে ঘুসি উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, অন্য জনে ওর চুলের মুঠি ধরে ফেলে। পাচজনে একসাথে ওকে ধরে কাবু করে ফেলে। 
[+] 1 user Likes Nilpori's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Nilpori - 09-01-2019, 07:47 AM



Users browsing this thread: