09-01-2019, 07:21 AM
পর্ব ছয় – কাগজের সিঁড়ি (#2)
হোটেল ছেড়ে বেড়িয়ে আসতেই কঙ্কনার ফোন পায়, ওকে দাসুবাড়িতে আসতে বলে। আদেশ মতন দাসুবাড়ি গিয়ে ওই একড়ড গাড়ির চালকের সিটে বসে পরে।
পেছনে কঙ্কনা, ওকে দেখে হেসে ফেলে, “কি হল রাগিণীকে কেমন লাগলো?” ওর দিকে হাত বাড়িয়ে হলদে পেন নিয়ে নেয় আর একটা সবুজ পেন ধরিয়ে দেয়।
দানা কাষ্ঠ হেসে বলে, “কি আর বলব।”
কঙ্কনা খিলখিল করে হেসে ওকে বলে, “সবাই কি আর নাস্রিন ইন্দ্রাণী মৌমিতা? যাই হোক এইবারে একটা ভালো গ্রাহক যোগাড় করেছি তোমার জন্য। এর সাথে তোমার বেশ কয়েকদিন কেটে যাবে। আজ রাত আটটা নাগাদ “ময়ূরী” রেস্তোরাঁতে চলে যেও আর মহুয়ার সাথে দেখা কর। মহুয়া বাজপাই, খুদেবাজারের বেশ বড় ব্যাবসায়ি লোকেশ বাজপাইর ছোট বৌমা, ভীষণ মিষ্টি কচি মেয়ে। ওর সাথে তোমাকে একটু ধিরে সুস্থে, আদর করে সহবাস করতে হবে। ওর স্বামী রাজেশ বাজপাই ছয় মাস আগে একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে বুঝলে। মহুয়া অনেকদিন থেকেই শারীরিক সুখ থেকে বঞ্চিত তাই তোমার সহযোগিতা চায়। বাকি কথা মহুয়া তোমাকে বলে দেবে।”
কোন এক রাস্তায় দানাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি করে চলে যায় কঙ্কনা। দানা কি করবে কি করবে, সেই সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে, তারপরে পেটে কিছু পরেনি। হস্তিনী রাগিণীর সাথে সহবাস করে শরীরের প্রচুর শক্তি ক্ষয় হয়ে গেছে। একটা বড় রেস্তোরাঁতে ঢুকে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। সারাদিন কোন কাজ নেই, আবার সেই বস্তিতে ফিরে যেতে হবে। একদিনে পাঁচ হাজার টাকা আয়, গতকালের নাস্রিনের দেওয়া পাঁচ হাজার থেকে তিন হাজার আছে। পকেটে মোট আট হাজার, বাপরে দানা যে মুকুট হীন রাজা। টাকা হলেই কি সবাই রাজা হয়, ওকে যে কেউ চেনে না। এই মহানগরের বুকে নিশ্চয় ওর মতন অনেকে আছে যারা পুরুষ বেশ্যা, অনেকে আছে যারা ব্যাবসায়ি ওর চেয়েও ধনী কিন্তু কেউ তাঁদের নাম জানেনা।
বেলা বাড়তেই মাথার সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যায়। একবার নিজের গুমটি ফিরে গিয়ে স্নান সেরে পরিস্কার হয়ে নেওয়া ভালো। রাতে আবার দেখা করতে যেতে হবে তারপরে কি হবে সেটা যেমন ওর অজানা তেমনি কঙ্কনার অজানা। সকালে রাগিণীর সাথে সহবাস করে আর সারাদিন ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেছে। নিজের গুমটিতে ঢুকে বেশ কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে নেয়। ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে ফেলে, ভালো জামা প্যান্ট পরে, ছোট আয়নায় নিজেকে দেখে বেড়িয়ে পরে “ময়ূরী” রেস্তোরাঁর উদ্দেশ্যে। বেরনোর আগে পকেটে সবুজ পেন নিতে ভোলেনা।
রেস্তোরাঁতে ঢুকে এপাশ ওপাশ দেখে কোথায় মহুয়া। এক কোনার দিকে একাকী এক মহিলা বসে। দানা এগিয়ে যেতেই ওই মহিলা ওকে দেখে স্মিত হেসে নিজের কাছে ডাকে। এতদিন যত মেয়েদের দেখেছে, মহুয়া ওদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বয়স আন্দাজ পঁচিশ কি ছাব্বিশ তার বেশি কোন মতেই নয়। অবাঙ্গালী মহিলা, মার্জিত অসামান্য সুন্দরী, ডিম্বাকৃত মুখবয়াব, চোখে রিমলেস চশমা, চেহারায় এক আময়িক ভাব, খুব সামান্য প্রসাধনীতে সাজা, ঠোঁট জোড়া গোলাপি, ওই রঙ হয়ত ওর ঠোঁটের আসল রঙ। ঘিয়ে রঙের শাড়ির পরতে মহুয়ার সর্বাঙ্গ ঢাকা, তাও বোঝা যায় যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আকার অবয়াব ভারী সুগঠিত। চলনে বলনে এক ধনী ব্যাক্তিত্ব শালী মহিলা বলে মনে হয়। মহুয়াকে দেখে মনেই হয়না যে এই নারীর বুকে পরপুরুষের সাথে মিলনের চটুল চাহিদা থাকতে পারে। দানা নির্বাক হয়ে কিছুক্ষণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ঠিক যেন একটা রজনীগন্ধা কিন্তু কিছু অজানা কারনে ফুল খানি শুকনো দেখায়। দানা ওর দিকে হাত বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দেয় কিন্তু মহুয়া হাত না মিলিয়ে হাত জোর করে ছোট নমস্কার করে ওকে টেবিলের অন্যপাশে বসতে অনুরোধ করে। ওর হাত জোর করে নমস্কার দেখে দানা বড় বিবৃত বোধ করে। এহেন মার্জিত নারীর সাথে কি ভাবে সহবাস করা যায়।
অবাঙ্গালী হলেও বেশ ভালো বাংলা বলতে পারে মহুয়া, দানাকে প্রশ্ন করে, “আপনি কি কিছু খেয়েছেন?”
দানা স্মিত হেসে বলে, “রাতের খাবার খেতে দেরি আর বিকেলে চা খেয়েই বেড়িয়েছি।”
মহুয়া ওকে বলে, “রাতের খাবার বাইরে সেরে ফেলাই ভালো। তারপরে আমার কয়েকটা জিনিস কেনার আছে।”
দানা মাথা নাড়ায়, ঠিক আছে। এত তাড়াতাড়ি খাবার অভ্যেস নেই দানার, তাও যা পারে তাই একটু গিলে নেয়। নির্বাক মহুয়াকে দেখে ওর সাথে কি ভাবে কথা শুরু করবে সেটা ভেবে না পেয়ে চুপ করে থাকে সারাটা সময়। মহুয়ার পাতলা চশমার পেছনের দুই চোখ দেখে বোঝার চেষ্টা করে আসলে মহুয়া কি চায়। ওর সাথে সহবাস করতে চায় সেটা ঠিক কিন্তু মহুয়া এত কুঞ্চিত কেন, কেন মন খুলে কথা বলছে না বাকিদের মতন? খাওয়া শেষে ওরা মহুয়ার বড় গাড়িতে চেপে মধ্য মহানগরে চলে যায়। গাড়ির পেছনের সিটের এক কোনায় মহুয়া অন্য কোনায় দানা। দুইজনে চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে মহানগরের রাতের রাস্তা ঘাট দেখে।
দানা শেষ পর্যন্ত অন্তরদ্বন্দ কাটিয়ে মহুয়াকে জিজ্ঞেস করে, “আমরা কোথায় যাবো? মানে এখন ন’টা বাজে এরপরে কোথাও একটা রাত কাটানো ছাড়া উপায় নেই, তাই না?”
মহুয়া হাতের নখ খুঁটতে খুঁটতে ওকে নিচু কণ্ঠে বলে, “আমার বাড়িতে যাবো। আমাকে খুব খারাপ মেয়ে বলে মনে হচ্ছে আপনার, তাই না?”
দানা উত্তর দেয়, “না, সেই রকম কিছু নয়। আপনি যেমন আজকে রেস্তোরাঁতে খেলেন রোজ দিন ত কেউ আর রেস্তোরাঁতে খায় না, এই সহবাসের ব্যাপারটা ঠিক তেমনি। সব মানুষ মাঝে মাঝে নিজের স্বাদ বদলাতে চায়।”
মহুয়া মাথা না উঠিয়ে উত্তর দেয়, “না মানে, আমি খুব রক্ষণশীল রাজস্থানি পরিবারের মেয়ে। এই পর পুরুষের সাথে মেলামেশার কথা কোনোদিন মাথায় আসেনি। রাজেশ চলে যাবার পরেই আমার জীবন পুরোপুরি বদলে গেল, জানেন।” মহুয়া একটু থেমে কাতর কণ্ঠে বলে ওঠে, “দয়া করে আমাকে একদম ভুল বুঝবেন না।” রাজস্থানি মেয়ে হলেও মহুয়া পরিষ্কার বাংলা বলতে পারে।
দানা ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “একটু খুলে বলতে পারেন কি? মানে তাহলে একটু সুবিধে হয়।”
মহুয়া ওর দিকে না তাকিয়ে বলে, “কি বলব কি ভাবে বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আমাকে একটু সময় দিন।”
মহা ফাঁপরে পরে গেল দানা, এমন হিমশীতল নারীর সাথে কি করে সহবাস করা যায়। আড় চোখে ওকে জরিপ করে কিন্তু গলা আর দুই হাত ছাড়া কিছুই দেখা যায়না, সর্বাঙ্গ শাড়ির নিচে ঢাকা। ওই নারী যদি নিজে থেকে ওর কাছে উজাড় করে না আসে তাহলে দানা কি করে সেই নারীর সাথে সহবাসে মেতে উঠবে? এই নারী ইন্দ্রাণী নয় যে ওকে ইচ্ছে করেই উত্তেজিত করতে পারবে। মহুয়ার চেহারা আচার ব্যাবহারে এমন কিছু নেই যার ফলে দানার উত্তেজনা বেড়ে উঠবে অথবা মহুয়া ওকে কোন ভাবে অঙ্গ প্রদর্শন করে অথবা কথা বলে নিজের সাথে সহবাস করার জন্য প্ররোচিত করছে না।
মধ্য মহানগরে এসে গাড়ি থেকে নেমে পরে। মহুয়া ওর আগে আগে হাঁটতে শুরু করে আর দানা ওর বেশ কিছু তফাতে ওকে অনুসরন করে। দানা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে যে গাড়ির ড্রাইভার বেশ কিছু তফাতে ওদের অনুসরন করে চলেছে। মহুয়া হাঁটতে হাঁটতে একটা বড় মেয়েদের পোশাকের দোকানে ঢোকে। দানাকে দোকানের বাইরে দাঁড় করিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। মহুয়া ওই দোকান থেকে কিছু কিনে ওকে নিয়ে আবার বেড়িয়ে পরে। তারপরে একটা দোকান থেকে একটা পুতুল আর কিছু চকোলেট কিনে নেয়। সব কিছু কেনার পরে ওর দিকে তাকিয়ে এক নির্বাক ম্লান হাসি দেয়। ওর নির্বাক চেহারা দেখে দানা কি করবে ভেবে পায় না। কেনা কাটা শেষ করে গাড়ি চেপে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নির্বাক হিম শীতল সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে কি ভাবে সহবাস করা যায় সেই ভাবতে থাকে দানা। মহুয়া নিশ্চয় ওর সাথে রাত কাটাতে চায় না হলে এত রাতে ওকে নিয়ে নিজের বাড়িতে কেন যাবে।
গাড়ি একটা বড় গেটের মধ্যে দিয়ে এক বিশাল দুই তলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নামতেই চাকর এসে দরজা খুলে দেয়। বসার ঘরে পা রাখতেই বুঝতে পারে যে এই নারী অনেক ধনী। একটা ছোট কচি নিষ্পাপ ফুল, “মাম্মা মাম্মা তি এনেত? মাম্মা তি এনেত?” বলতে বলতে কোথা থেকে দৌড়ে এসে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে। এই দৃশ্য দেখে দানার বুক হটাত করে শুন্য হয়ে যায়। এহেন মাতৃ রূপ অনেকদিন দেখেনি, ছোট বেলায় মা যখন কাজে বেড়িয়ে যেত তখন মাকে জড়িয়ে ধরত। মহুয়া ওকে বসার ঘরে বসতে বলে মেয়েকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়।
বিশাল বসার ঘরে আরামদায়ক সোফার ওপরে বসে, দেয়ালে টাঙ্গানো বিশাল টিভি দেখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এপাশ ওপাশ তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে এই বাড়িতে কি আর কেউ আছে না শুধু মাত্র চাকর আর এই ছোট মেয়ে? বসার ঘরের একপাশে একটা ঘর, সেটা মনে হয় অতিথিদের জন্য কেননা সেটা একদম বড় পাঁচ তারা হোটেলের ঘরের মতন সাজানো। অন্য পাশে একটা লম্বা করিডোর, সেই করিডোরের শেষে একটা পর্দা দেওয়া ঘর থেকেও টিভির আওয়াজ ভেসে আসছে। দানার টিভিতে মন বসে না, ওর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে কি করতে চায় এই মহুয়া।
বেশ কিছুপরে মহুয়া বসার ঘরে ঢোকে, পেছনে একটা কাজের মেয়ে একটা ট্রেতে দুই গেলাস ঠাণ্ডা পানীয় আর বেশ কিছু ফল নিয়ে এসে কাঁচের টেবিলে রেখে চলে যায়। মহুয়া, ওই কাজের মেয়েকে কাজ সেরে ওই গেস্ট রুম ঠিকঠাক করে শুয়ে পড়তে নির্দেশ দেয়। মহুয়া শাড়ি ছেড়ে কোমরে বেল্ট দেওয়া একটা সিল্কের লম্বা ঢিলে গাউন পরে নিয়েছে। ঢিলে গাউনে মহুয়ার নধর দেহ পল্লব গলা থেকে গোড়ালি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ঢাকা। দেখে বোঝার যো নেই যে এই ঢিলে পোশাকের অন্তরালে এক মন্মোহক দেহ পল্লব লুকিয়ে আছে। মহুয়া ওকে গেস্টরুমের সংলগ্ন বাথরুমে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে জামা কাপড় ছেড়ে আরাম করে বসতে বলে। মহুয়ার কথামতন গেস্টরুমের বাথরুমে ঢুকে পরিষ্কার হয়ে নেয়, বিছানার ওপরে একটা সাদা স্লিপিং গাউন রাখা, নিজের জামা কাপড় খুলে শুধু জাঙ্গিয়া পরে তার ওপরে ওই সাদা স্লিপিং গাউন জড়িয়ে নেয়। এই সব অভ্যেস একদম নেই তাই কেমন কেমন মনে হয়, কিন্তু মহুয়ার আদেশ, মহুয়া ওকে টাকা দেবে ওর কথা মতন ওকে চলতে হবে।
গেস্ট রুম ছেড়ে বেড়িয়ে এসে লম্বা সোফার ওপরে আবার বসে পরে। মহুয়া টিভি বন্ধ করে ওর দিকে ঠাণ্ডা পানীয়ের গেলাস ধরিয়ে দিয়ে আময়িক হেসে বলে, “অনেকক্ষণ আপনাকে বসিয়ে রাখলাম তাই না। কি করব বলুন রুহি, মানে আমার মেয়ে কিছুতেই আমাকে ছাড়া ঘুমাতে চায় না।”
দানা বোঝে এক মায়ের কষ্ট তাই অল্প হেসে বলে, “হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি সেটা। রুহি সত্যি খুব মিষ্টি মেয়ে।” ঠাণ্ডা পানীয়ের গেলাস হাতের মধ্যে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দানা, মহুয়ার মুখের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে বোঝার আপ্রান চেষ্টা চালায়, কি চলছে এই নারীর বুকে। মহুয়া চুপচাপ ঠাণ্ডা পানীয়ের গেলাস হাতে নিয়ে বসে থাকে। বেশ কিছুপরে মহুয়া লম্বা করিডোরের কোনার দিকে তাকায়। ওর চাহনি অনুসরন করে সেই ঘরে তাকায় দানা। সেই ঘর আগে পর্দায় ঢাকা ছিল এখন পর্দা একটু খানি সরে গিয়ে ভেতরে দেখা যাচ্ছে। ওই ঘরের মধ্যে একজন বয়স্ক পুরুষ বিছানায় আধাশোয়া, পিঠের দিকে বেশ কয়েকটা বালিশ রাখা। ঘরের ভেতর থেকে টিভির আওয়াজ ভেসে আসছে।
দানা ওই ঘরের দিকে তাকিয়ে মহুয়াকে প্রশ্ন করে, “ওই ভদ্রলোক যিনি শুয়ে আছেন তিনি কে?”
মহুয়া ওদিকে না তাকিয়ে চাপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, “আমার শ্বশুরজি, লোকেশ বাজপাই। আট মাস আগে ওনার শিরদাঁড়ার নিচের দিকে চোট লাগে আর সেই থেকে কোমরের নিচ থেকে প্যারালাইস। হাঁটা চলা করতে পারেন না, হুইল চেয়ারে ঘোরাফেরা করেন। ডাক্তার ওষুধ পত্র সব কিছু নিয়মিত করা হচ্ছে, রোজদিন ফিজিওথেরাপিস্ট আসে, এখন একটু পা নাড়াতে পারে।” তারপরে মহুয়া আবার চুপ করে যায়।
বারেবারে মহুয়াকে ঠাণ্ডা হয়ে যেতে দেখে শেষ পর্যন্ত দানার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় তাই আর থাকতে না পেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার কি হয়েছে একটু খুলে বলুন ত? খোলাখুলি জিজ্ঞেস করছি, আপনি যদি কিছু না করতে চান তাহলে আমি চলে যেতে পারি।”
মহুয়া মুখে হাত চেপে আঁতকে ওঠে, “না দয়া করে চলে যাবেন না। এর আগেও একজনের সাথে আমি দেখা করেছিলাম কিন্তু তার ব্যাবহার একদম ভালো ছিল না। আপনাকে দেখে মনে হল আপনার ওপরে নির্ভর করা যেতে পারে।” ওর দিকে করুন চোখে চেয়ে বলে, “আপনাকে অনেক কিছু বলার আছে কিন্তু কোথা থেকে শুরু করব, কি ভাবে শুরু করব ঠিক বুঝে পাচ্ছি না।”
মহুয়া পানীয়ের গেলাস হাতে নিয়ে হটাত নিজের সোফা ছেড়ে ওর পাশে এসে বসে পরে। পাশে বসতেই মহুয়ার শরীরের মিষ্টি মাদকতাময় সুবাস ওর নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করে ওর ধমনীতে রক্তের প্রবাহ হুহু করে বেড়ে ওঠে। মনে হয় এই সব বাধা ভেঙ্গে এই নির্বাক নারীর সাথে যৌন সঙ্গমে মেতে ওঠে। লালচে ফর্সা নরম গাল দেখে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করে কিন্তু মহুয়ার কম্পমান ঠোঁটের কাহিনী শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
হোটেল ছেড়ে বেড়িয়ে আসতেই কঙ্কনার ফোন পায়, ওকে দাসুবাড়িতে আসতে বলে। আদেশ মতন দাসুবাড়ি গিয়ে ওই একড়ড গাড়ির চালকের সিটে বসে পরে।
পেছনে কঙ্কনা, ওকে দেখে হেসে ফেলে, “কি হল রাগিণীকে কেমন লাগলো?” ওর দিকে হাত বাড়িয়ে হলদে পেন নিয়ে নেয় আর একটা সবুজ পেন ধরিয়ে দেয়।
দানা কাষ্ঠ হেসে বলে, “কি আর বলব।”
কঙ্কনা খিলখিল করে হেসে ওকে বলে, “সবাই কি আর নাস্রিন ইন্দ্রাণী মৌমিতা? যাই হোক এইবারে একটা ভালো গ্রাহক যোগাড় করেছি তোমার জন্য। এর সাথে তোমার বেশ কয়েকদিন কেটে যাবে। আজ রাত আটটা নাগাদ “ময়ূরী” রেস্তোরাঁতে চলে যেও আর মহুয়ার সাথে দেখা কর। মহুয়া বাজপাই, খুদেবাজারের বেশ বড় ব্যাবসায়ি লোকেশ বাজপাইর ছোট বৌমা, ভীষণ মিষ্টি কচি মেয়ে। ওর সাথে তোমাকে একটু ধিরে সুস্থে, আদর করে সহবাস করতে হবে। ওর স্বামী রাজেশ বাজপাই ছয় মাস আগে একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে বুঝলে। মহুয়া অনেকদিন থেকেই শারীরিক সুখ থেকে বঞ্চিত তাই তোমার সহযোগিতা চায়। বাকি কথা মহুয়া তোমাকে বলে দেবে।”
কোন এক রাস্তায় দানাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি করে চলে যায় কঙ্কনা। দানা কি করবে কি করবে, সেই সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে, তারপরে পেটে কিছু পরেনি। হস্তিনী রাগিণীর সাথে সহবাস করে শরীরের প্রচুর শক্তি ক্ষয় হয়ে গেছে। একটা বড় রেস্তোরাঁতে ঢুকে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। সারাদিন কোন কাজ নেই, আবার সেই বস্তিতে ফিরে যেতে হবে। একদিনে পাঁচ হাজার টাকা আয়, গতকালের নাস্রিনের দেওয়া পাঁচ হাজার থেকে তিন হাজার আছে। পকেটে মোট আট হাজার, বাপরে দানা যে মুকুট হীন রাজা। টাকা হলেই কি সবাই রাজা হয়, ওকে যে কেউ চেনে না। এই মহানগরের বুকে নিশ্চয় ওর মতন অনেকে আছে যারা পুরুষ বেশ্যা, অনেকে আছে যারা ব্যাবসায়ি ওর চেয়েও ধনী কিন্তু কেউ তাঁদের নাম জানেনা।
বেলা বাড়তেই মাথার সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যায়। একবার নিজের গুমটি ফিরে গিয়ে স্নান সেরে পরিস্কার হয়ে নেওয়া ভালো। রাতে আবার দেখা করতে যেতে হবে তারপরে কি হবে সেটা যেমন ওর অজানা তেমনি কঙ্কনার অজানা। সকালে রাগিণীর সাথে সহবাস করে আর সারাদিন ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেছে। নিজের গুমটিতে ঢুকে বেশ কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে নেয়। ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে ফেলে, ভালো জামা প্যান্ট পরে, ছোট আয়নায় নিজেকে দেখে বেড়িয়ে পরে “ময়ূরী” রেস্তোরাঁর উদ্দেশ্যে। বেরনোর আগে পকেটে সবুজ পেন নিতে ভোলেনা।
রেস্তোরাঁতে ঢুকে এপাশ ওপাশ দেখে কোথায় মহুয়া। এক কোনার দিকে একাকী এক মহিলা বসে। দানা এগিয়ে যেতেই ওই মহিলা ওকে দেখে স্মিত হেসে নিজের কাছে ডাকে। এতদিন যত মেয়েদের দেখেছে, মহুয়া ওদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বয়স আন্দাজ পঁচিশ কি ছাব্বিশ তার বেশি কোন মতেই নয়। অবাঙ্গালী মহিলা, মার্জিত অসামান্য সুন্দরী, ডিম্বাকৃত মুখবয়াব, চোখে রিমলেস চশমা, চেহারায় এক আময়িক ভাব, খুব সামান্য প্রসাধনীতে সাজা, ঠোঁট জোড়া গোলাপি, ওই রঙ হয়ত ওর ঠোঁটের আসল রঙ। ঘিয়ে রঙের শাড়ির পরতে মহুয়ার সর্বাঙ্গ ঢাকা, তাও বোঝা যায় যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আকার অবয়াব ভারী সুগঠিত। চলনে বলনে এক ধনী ব্যাক্তিত্ব শালী মহিলা বলে মনে হয়। মহুয়াকে দেখে মনেই হয়না যে এই নারীর বুকে পরপুরুষের সাথে মিলনের চটুল চাহিদা থাকতে পারে। দানা নির্বাক হয়ে কিছুক্ষণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ঠিক যেন একটা রজনীগন্ধা কিন্তু কিছু অজানা কারনে ফুল খানি শুকনো দেখায়। দানা ওর দিকে হাত বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দেয় কিন্তু মহুয়া হাত না মিলিয়ে হাত জোর করে ছোট নমস্কার করে ওকে টেবিলের অন্যপাশে বসতে অনুরোধ করে। ওর হাত জোর করে নমস্কার দেখে দানা বড় বিবৃত বোধ করে। এহেন মার্জিত নারীর সাথে কি ভাবে সহবাস করা যায়।
অবাঙ্গালী হলেও বেশ ভালো বাংলা বলতে পারে মহুয়া, দানাকে প্রশ্ন করে, “আপনি কি কিছু খেয়েছেন?”
দানা স্মিত হেসে বলে, “রাতের খাবার খেতে দেরি আর বিকেলে চা খেয়েই বেড়িয়েছি।”
মহুয়া ওকে বলে, “রাতের খাবার বাইরে সেরে ফেলাই ভালো। তারপরে আমার কয়েকটা জিনিস কেনার আছে।”
দানা মাথা নাড়ায়, ঠিক আছে। এত তাড়াতাড়ি খাবার অভ্যেস নেই দানার, তাও যা পারে তাই একটু গিলে নেয়। নির্বাক মহুয়াকে দেখে ওর সাথে কি ভাবে কথা শুরু করবে সেটা ভেবে না পেয়ে চুপ করে থাকে সারাটা সময়। মহুয়ার পাতলা চশমার পেছনের দুই চোখ দেখে বোঝার চেষ্টা করে আসলে মহুয়া কি চায়। ওর সাথে সহবাস করতে চায় সেটা ঠিক কিন্তু মহুয়া এত কুঞ্চিত কেন, কেন মন খুলে কথা বলছে না বাকিদের মতন? খাওয়া শেষে ওরা মহুয়ার বড় গাড়িতে চেপে মধ্য মহানগরে চলে যায়। গাড়ির পেছনের সিটের এক কোনায় মহুয়া অন্য কোনায় দানা। দুইজনে চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে মহানগরের রাতের রাস্তা ঘাট দেখে।
দানা শেষ পর্যন্ত অন্তরদ্বন্দ কাটিয়ে মহুয়াকে জিজ্ঞেস করে, “আমরা কোথায় যাবো? মানে এখন ন’টা বাজে এরপরে কোথাও একটা রাত কাটানো ছাড়া উপায় নেই, তাই না?”
মহুয়া হাতের নখ খুঁটতে খুঁটতে ওকে নিচু কণ্ঠে বলে, “আমার বাড়িতে যাবো। আমাকে খুব খারাপ মেয়ে বলে মনে হচ্ছে আপনার, তাই না?”
দানা উত্তর দেয়, “না, সেই রকম কিছু নয়। আপনি যেমন আজকে রেস্তোরাঁতে খেলেন রোজ দিন ত কেউ আর রেস্তোরাঁতে খায় না, এই সহবাসের ব্যাপারটা ঠিক তেমনি। সব মানুষ মাঝে মাঝে নিজের স্বাদ বদলাতে চায়।”
মহুয়া মাথা না উঠিয়ে উত্তর দেয়, “না মানে, আমি খুব রক্ষণশীল রাজস্থানি পরিবারের মেয়ে। এই পর পুরুষের সাথে মেলামেশার কথা কোনোদিন মাথায় আসেনি। রাজেশ চলে যাবার পরেই আমার জীবন পুরোপুরি বদলে গেল, জানেন।” মহুয়া একটু থেমে কাতর কণ্ঠে বলে ওঠে, “দয়া করে আমাকে একদম ভুল বুঝবেন না।” রাজস্থানি মেয়ে হলেও মহুয়া পরিষ্কার বাংলা বলতে পারে।
দানা ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “একটু খুলে বলতে পারেন কি? মানে তাহলে একটু সুবিধে হয়।”
মহুয়া ওর দিকে না তাকিয়ে বলে, “কি বলব কি ভাবে বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আমাকে একটু সময় দিন।”
মহা ফাঁপরে পরে গেল দানা, এমন হিমশীতল নারীর সাথে কি করে সহবাস করা যায়। আড় চোখে ওকে জরিপ করে কিন্তু গলা আর দুই হাত ছাড়া কিছুই দেখা যায়না, সর্বাঙ্গ শাড়ির নিচে ঢাকা। ওই নারী যদি নিজে থেকে ওর কাছে উজাড় করে না আসে তাহলে দানা কি করে সেই নারীর সাথে সহবাসে মেতে উঠবে? এই নারী ইন্দ্রাণী নয় যে ওকে ইচ্ছে করেই উত্তেজিত করতে পারবে। মহুয়ার চেহারা আচার ব্যাবহারে এমন কিছু নেই যার ফলে দানার উত্তেজনা বেড়ে উঠবে অথবা মহুয়া ওকে কোন ভাবে অঙ্গ প্রদর্শন করে অথবা কথা বলে নিজের সাথে সহবাস করার জন্য প্ররোচিত করছে না।
মধ্য মহানগরে এসে গাড়ি থেকে নেমে পরে। মহুয়া ওর আগে আগে হাঁটতে শুরু করে আর দানা ওর বেশ কিছু তফাতে ওকে অনুসরন করে। দানা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে যে গাড়ির ড্রাইভার বেশ কিছু তফাতে ওদের অনুসরন করে চলেছে। মহুয়া হাঁটতে হাঁটতে একটা বড় মেয়েদের পোশাকের দোকানে ঢোকে। দানাকে দোকানের বাইরে দাঁড় করিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। মহুয়া ওই দোকান থেকে কিছু কিনে ওকে নিয়ে আবার বেড়িয়ে পরে। তারপরে একটা দোকান থেকে একটা পুতুল আর কিছু চকোলেট কিনে নেয়। সব কিছু কেনার পরে ওর দিকে তাকিয়ে এক নির্বাক ম্লান হাসি দেয়। ওর নির্বাক চেহারা দেখে দানা কি করবে ভেবে পায় না। কেনা কাটা শেষ করে গাড়ি চেপে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নির্বাক হিম শীতল সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে কি ভাবে সহবাস করা যায় সেই ভাবতে থাকে দানা। মহুয়া নিশ্চয় ওর সাথে রাত কাটাতে চায় না হলে এত রাতে ওকে নিয়ে নিজের বাড়িতে কেন যাবে।
গাড়ি একটা বড় গেটের মধ্যে দিয়ে এক বিশাল দুই তলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নামতেই চাকর এসে দরজা খুলে দেয়। বসার ঘরে পা রাখতেই বুঝতে পারে যে এই নারী অনেক ধনী। একটা ছোট কচি নিষ্পাপ ফুল, “মাম্মা মাম্মা তি এনেত? মাম্মা তি এনেত?” বলতে বলতে কোথা থেকে দৌড়ে এসে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে। এই দৃশ্য দেখে দানার বুক হটাত করে শুন্য হয়ে যায়। এহেন মাতৃ রূপ অনেকদিন দেখেনি, ছোট বেলায় মা যখন কাজে বেড়িয়ে যেত তখন মাকে জড়িয়ে ধরত। মহুয়া ওকে বসার ঘরে বসতে বলে মেয়েকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়।
বিশাল বসার ঘরে আরামদায়ক সোফার ওপরে বসে, দেয়ালে টাঙ্গানো বিশাল টিভি দেখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এপাশ ওপাশ তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে এই বাড়িতে কি আর কেউ আছে না শুধু মাত্র চাকর আর এই ছোট মেয়ে? বসার ঘরের একপাশে একটা ঘর, সেটা মনে হয় অতিথিদের জন্য কেননা সেটা একদম বড় পাঁচ তারা হোটেলের ঘরের মতন সাজানো। অন্য পাশে একটা লম্বা করিডোর, সেই করিডোরের শেষে একটা পর্দা দেওয়া ঘর থেকেও টিভির আওয়াজ ভেসে আসছে। দানার টিভিতে মন বসে না, ওর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে কি করতে চায় এই মহুয়া।
বেশ কিছুপরে মহুয়া বসার ঘরে ঢোকে, পেছনে একটা কাজের মেয়ে একটা ট্রেতে দুই গেলাস ঠাণ্ডা পানীয় আর বেশ কিছু ফল নিয়ে এসে কাঁচের টেবিলে রেখে চলে যায়। মহুয়া, ওই কাজের মেয়েকে কাজ সেরে ওই গেস্ট রুম ঠিকঠাক করে শুয়ে পড়তে নির্দেশ দেয়। মহুয়া শাড়ি ছেড়ে কোমরে বেল্ট দেওয়া একটা সিল্কের লম্বা ঢিলে গাউন পরে নিয়েছে। ঢিলে গাউনে মহুয়ার নধর দেহ পল্লব গলা থেকে গোড়ালি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ঢাকা। দেখে বোঝার যো নেই যে এই ঢিলে পোশাকের অন্তরালে এক মন্মোহক দেহ পল্লব লুকিয়ে আছে। মহুয়া ওকে গেস্টরুমের সংলগ্ন বাথরুমে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে জামা কাপড় ছেড়ে আরাম করে বসতে বলে। মহুয়ার কথামতন গেস্টরুমের বাথরুমে ঢুকে পরিষ্কার হয়ে নেয়, বিছানার ওপরে একটা সাদা স্লিপিং গাউন রাখা, নিজের জামা কাপড় খুলে শুধু জাঙ্গিয়া পরে তার ওপরে ওই সাদা স্লিপিং গাউন জড়িয়ে নেয়। এই সব অভ্যেস একদম নেই তাই কেমন কেমন মনে হয়, কিন্তু মহুয়ার আদেশ, মহুয়া ওকে টাকা দেবে ওর কথা মতন ওকে চলতে হবে।
গেস্ট রুম ছেড়ে বেড়িয়ে এসে লম্বা সোফার ওপরে আবার বসে পরে। মহুয়া টিভি বন্ধ করে ওর দিকে ঠাণ্ডা পানীয়ের গেলাস ধরিয়ে দিয়ে আময়িক হেসে বলে, “অনেকক্ষণ আপনাকে বসিয়ে রাখলাম তাই না। কি করব বলুন রুহি, মানে আমার মেয়ে কিছুতেই আমাকে ছাড়া ঘুমাতে চায় না।”
দানা বোঝে এক মায়ের কষ্ট তাই অল্প হেসে বলে, “হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি সেটা। রুহি সত্যি খুব মিষ্টি মেয়ে।” ঠাণ্ডা পানীয়ের গেলাস হাতের মধ্যে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দানা, মহুয়ার মুখের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে বোঝার আপ্রান চেষ্টা চালায়, কি চলছে এই নারীর বুকে। মহুয়া চুপচাপ ঠাণ্ডা পানীয়ের গেলাস হাতে নিয়ে বসে থাকে। বেশ কিছুপরে মহুয়া লম্বা করিডোরের কোনার দিকে তাকায়। ওর চাহনি অনুসরন করে সেই ঘরে তাকায় দানা। সেই ঘর আগে পর্দায় ঢাকা ছিল এখন পর্দা একটু খানি সরে গিয়ে ভেতরে দেখা যাচ্ছে। ওই ঘরের মধ্যে একজন বয়স্ক পুরুষ বিছানায় আধাশোয়া, পিঠের দিকে বেশ কয়েকটা বালিশ রাখা। ঘরের ভেতর থেকে টিভির আওয়াজ ভেসে আসছে।
দানা ওই ঘরের দিকে তাকিয়ে মহুয়াকে প্রশ্ন করে, “ওই ভদ্রলোক যিনি শুয়ে আছেন তিনি কে?”
মহুয়া ওদিকে না তাকিয়ে চাপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, “আমার শ্বশুরজি, লোকেশ বাজপাই। আট মাস আগে ওনার শিরদাঁড়ার নিচের দিকে চোট লাগে আর সেই থেকে কোমরের নিচ থেকে প্যারালাইস। হাঁটা চলা করতে পারেন না, হুইল চেয়ারে ঘোরাফেরা করেন। ডাক্তার ওষুধ পত্র সব কিছু নিয়মিত করা হচ্ছে, রোজদিন ফিজিওথেরাপিস্ট আসে, এখন একটু পা নাড়াতে পারে।” তারপরে মহুয়া আবার চুপ করে যায়।
বারেবারে মহুয়াকে ঠাণ্ডা হয়ে যেতে দেখে শেষ পর্যন্ত দানার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় তাই আর থাকতে না পেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার কি হয়েছে একটু খুলে বলুন ত? খোলাখুলি জিজ্ঞেস করছি, আপনি যদি কিছু না করতে চান তাহলে আমি চলে যেতে পারি।”
মহুয়া মুখে হাত চেপে আঁতকে ওঠে, “না দয়া করে চলে যাবেন না। এর আগেও একজনের সাথে আমি দেখা করেছিলাম কিন্তু তার ব্যাবহার একদম ভালো ছিল না। আপনাকে দেখে মনে হল আপনার ওপরে নির্ভর করা যেতে পারে।” ওর দিকে করুন চোখে চেয়ে বলে, “আপনাকে অনেক কিছু বলার আছে কিন্তু কোথা থেকে শুরু করব, কি ভাবে শুরু করব ঠিক বুঝে পাচ্ছি না।”
মহুয়া পানীয়ের গেলাস হাতে নিয়ে হটাত নিজের সোফা ছেড়ে ওর পাশে এসে বসে পরে। পাশে বসতেই মহুয়ার শরীরের মিষ্টি মাদকতাময় সুবাস ওর নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করে ওর ধমনীতে রক্তের প্রবাহ হুহু করে বেড়ে ওঠে। মনে হয় এই সব বাধা ভেঙ্গে এই নির্বাক নারীর সাথে যৌন সঙ্গমে মেতে ওঠে। লালচে ফর্সা নরম গাল দেখে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করে কিন্তু মহুয়ার কম্পমান ঠোঁটের কাহিনী শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।