08-01-2019, 07:06 PM
পর্ব পাঁচ – অন-অর্থের হাতছানি (#1)
বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে, ইতিমধ্যে নিশ্চয় ইন্দ্রাণীর ছেলে মেয়েরা চলে এসেছে। সারাদিন ট্যাক্সি চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে কোনোরকমে দুটো মুখে গুঁজে তক্তপোষে সটান শুয়ে পরে। কানের কাছে মাছি মশা ভনভন করলেও সেই ভনভন আওয়াজ ওর কানে পৌঁছায় না। মাঝে মাঝেই ফেরার পথে মদনের দোকান থেকে চোলাই মদ কিনে বাড়ি ফেরে। এই এক দেড় মাস কি করে ইন্দ্রাণীকে ছেড়ে থাকবে সেই চিন্তা করে। তক্তপোষ যেন কাঁটার বিছানা, কোন কোনোদিন ঘুম তাড়াতাড়ি চলে আসে আর যেদিন ঘুম আসেনা, সেদিন মোবাইল খুলে ইন্দ্রাণীর ওই একটা হাসি হাসি মুখের ছবি দেখে সারা রাত কাটিয়ে দেয়।
সকাল হলেই সেই এক জীবন, রাস্তার ধারের কল থেকে স্নান সারা। ময়না পালিয়ে গেছে, পলা আর শশী, রুমার খুনের দায়ে জেলে, দেবু কোথায় পালিয়ে গেছে কেউ জানে না। কালী পাড়ার বস্তির লোকজন ওইসব ভুলে আবার নতুন করে নিজের জীবনে মেতে উঠেছে। দুঃখ শোক বিরহ বেদনা বেশি সময় টিকতে পারে না ওদের কালী পাড়ার বস্তিতে। আজাকাল বেশ কয়েকটা নতুন মুখ দেখা যায় বস্তিতে, দুর কোন গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা রঞ্জনা, অন্য কোন বস্তি থেকে আসা সুমনা আরো এমন অনেকে। ওদের দিকে আর দেখে না দানা। ওই অর্ধ নির্মিত ফ্লাটে আর যাওয়া হয়ে ওঠে না, ওই সুন্দরী রাজকন্যের খোঁজ নেওয়া হয় না। শুধু মাত্র ইন্দ্রাণী ছাড়া পৃথিবীর বাকি মানুষ মেকি সাজে সেজে রয়েছে বলে মনে হয়। ওই সুন্দরী রাজকন্যেকে কোনোদিন নিজের করে পাবে না তাই আর দেখে কি লাভ। ইন্দ্রাণীর অসীম ভালোবাসা বুকে এঁকে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবে।
সেদিন কয়লা ঘাটের কাছে ট্যাক্সি নিয়ে দাঁড়িয়ে, এমন সময়ে ওর কাছে একটা ফোন আসে। ওইপাশে একটা মেয়েলী কণ্ঠের স্বর শুনে অবাক হয়ে যায়।
মেয়েলী কণ্ঠ স্বর ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি বিশ্বজিৎ চিনতে পারছ না? আমি কঙ্কনা, সেই ইন্দ্রাণীদির বাড়িতে দেখা হয়েছিল?” হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে এই আরেক গোলগাল গঠনের নারী যার চোখের তারায় সবসময়ে কাম ক্ষুধা। তা হটাত কি মনে করে ওকে ফোন করেছে?
দানা হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে।”
কঙ্কনা ওকে বলে, “একদিন আমার বাড়িতে এস, একটু গল্প করা যাবে।”
হটাত এই আমন্ত্রনে ভড়কে যায় দানা, এইভাবে একটা ট্যাক্সি চালককে কি কেউ বাড়িতে নিমন্ত্রন করে নাকি? দানার ফোন নাম্বার পেল কোথা থেকে? ইন্দ্রাণী দিয়েছে নাকি? কঙ্কনার কাছে দানা অবশ্য একজন বড় ব্যাবসায়ি মানুষ। দানা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার বলুন ত, হটাত কি মনে করে? আর একটা কথা আমার ফোন নাম্বার আপনি পেলেন কোথায়?”
কঙ্কনা হাসিতে ফেটে পরে, “আরে না না, আমাকে আপনি বলে ডাকতে হবে না, তুমি তুই আর যাই বল আপনি বলবে না একদম। কাল দুপুরের পরে কোন কাজ রেখ না। আমার বাড়িতে চলে এসো সব বলব।” বলে ওকে নিজের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দেয়।
দানার মানা করা সত্তেও কঙ্কনা নাছোড়বান্দা, ওকে আসতেই হবে। বড় দোটানায় পরে যায় দানা, বস্তির এক ট্যাক্সি চালককে এইভাবে কেউ নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রন জানায় না কেউ। সারাদিন সেই কথা মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করে ওকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়ায়। একবার কি ইন্দ্রাণীকে ফোন করে জানিয়ে দেবে যে কঙ্কনা ওকে বাড়িতে ডেকেছে, কিন্তু ইন্দ্রাণী ওকে বারন করেছে ফোন করতে। হয়ত এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে ব্যাস্ত ওর ফোন হয়ত উঠাবেই না।
পরেরদিন দানা অনেক দোনামনা করতে করতে কঙ্কনার বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। কি ভেবে এই মহিলা ওকে ফোন করেছে? ওর কাছে দানার পরিচয় একজন ব্যাবসায়ি তাই বস্তি থেকে বের হওয়ার আগে সুন্দর পরিস্কার জামা কাপড় পরে বের হয়। ঠিকানা খুঁজে বের করতে ওর একটুকু কষ্ট হয় না, এই মহানগর যে ওর হাতের তালু। গগনচুম্বী বহুতলের সামনে দাঁড়িয়ে শেষ বারের মতন ভাবে ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না। শেষ পর্যন্ত কপাল ঠুকে ভেতরে ঢুকে লিফটে উঠে দশ তলায় পৌঁছে যায়।
দশতলার কোনার ফ্লাটের কলিং বেল বাজাতেই কঙ্কনা হাসি মুখে দরজা খুলে ওকে দেখে বলে, “বাপ রে আমি ত ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত তুমি হয়ত আসেবেই না।”
কঙ্কনাকে মনে হয় যেন ওর আসার অপেক্ষায় নিজেকে তৈরি রেখেছিল। নধর গোলগাল গঠনের শরীরটাকে একটা ছোট গাউনে ঢেকে রেখেছে। সিল্কের গাউন ওর মোটা ঊরুর মাঝে এসে শেষ। কোমরে একটা বেল্ট দিয়ে বাঁধা, যার ফলে স্তন জোড়া ফুলে উঠেছে। যে ভাবে দুই স্তন জোড়া দুলছে তাতে কোন সন্দেহ নেই যে ভেতরে ব্রা পড়েনি। গাউনে কোন বোতাম নেই শুধু দুটি ফ্লাপ একের ওপরে রাখা আর কোমরে বেল্ট দিয়ে বাঁধা। প্যান্টি পড়েছে কিনা ঠিক বুঝতে পারল না দানা, তবে ওর চোখের তারা আর ঠোঁটের হাসি দেখে শরীরে কামোত্তেজনা ভর করে উঠল।
দানা মাথা নুইয়ে মৃদু হেসে ইন্দ্রাণীর শিখিয়ে দেওয়া মতন গালে গাল ঠেকিয়ে কুশল বিনিময় করে। দানা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার হটাত করে আমাকে ডাকা?”
ভেতরে ঢুকেই কঙ্কনার বসার ঘর দেখে থমকে গেল, ইন্দ্রাণীর বাড়ির চেয়ে অনেক অনেক বড় আর ইন্দ্রাণীর চেয়ে অনেক ধনী এই মহিলা। অতি সুন্দর সাজানো ফ্লাট। নিজেকে এই বাড়ির মধ্যে কেমন যেন বেমানান লাগে কিন্তু কঙ্কনা ওর হাত ধরে সোফার ওপরে বসতে অনুরোধ করে। এই বড়লোক ধনী মহিলাদের কথা কিছু বলা যায় না কার মতিগতি কখন কোনদিকে যায়। কঙ্কনার স্বভাব চরিত্রের ব্যাপারে অনেক আগেই ইন্দ্রাণী ওকে জানিয়ে দিয়েছিল তাই তীক্ষ্ণ চোখে কঙ্কনাকে জরিপ করে দানা। ওর গাড় বাদামি রঙ মাখা ঠোঁটে চটুল হাসি দেখে বুঝতে বাকি হয় না যে এই মহিলার মনের ভেতরে অনেক কিছু চলছে। বাড়িতে কি কঙ্কনা একা না অন্য কেউ আছে, মনে হয় কেউ আছে কেননা ভেতরের ঘরের মধ্যে পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। দানা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে তাহলে কঙ্কনা ওর সাথে কোন প্রকারের দুষ্টু খেলা হয়ত খেলবে না। কঙ্কনার তীক্ষ্ণ চোখ দানার আপাদমস্তক জরিপ করে ওর পাশের এক ছোট সোফার পায়ের ওপরে তুলে বসে। পায়ের ওপরে পা তলার ফলে পরনের ছোট গাউন স্থুলাকায় ঊরুর অনেকটা উঠে যায় আর গোলাকার পাছার বেশ কিছু অংশ অনাবৃত হয়ে যায়। চোখের সামনে এক কামোত্তেজক দৃশ্য দেখে দানার লিঙ্গের ছটফটানি একটু হলেও নড়ে ওঠে।
কঙ্কনা ওর চোখে চোখ রেখে বাঁকা ঠোঁটে হেসে প্রশ্ন করে, “সো হাউ আর ইউ বিশ্বজিৎ? (কেমন আছো বিশ্বজিৎ?)”
দানা সোফায় হেলান দিয়ে চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, “ভালো আছি। তা হটাত কি মনে করে?”
কঙ্কনা হাত উল্টে হেসে বলে, “জাস্ট লাইক দ্যাট। (এমনি আর কিছু না)”
কঙ্কনা কি ইচ্ছে করেই ইংরেজিতে ওর সাথে কথা বলছে, ওকি দানার আসল পরিচয় জানে তাই মাছ জালে ওঠানোর আগে যেমন খেলানো হয় তেমনি কি ওকে খেলাচ্ছে নিজের জালে? দানাও পিছপা হয় না, ইন্দ্রাণীর সাথে থেকে আর ওই ইংরেজি বই আর সিনেমা দেখে একটু ইংরেজি বলতে পারে।
দানা উত্তরে বলে, “আই এম ডুইং ফাইন মিসেস দেবনাথ (আমি ভালো আছি মিসেস দেবনাথ)।”
ওর মুখে ইংরেজি শুনে ক্ষণিকের জন্য থমকে যায় কঙ্কনা তারপরে খিলখিল করে হেসে উঠে বলে, “তাহলে কি নেবে, স্কচ ভদকা না রাম? সোডা না বরফ দিয়ে, যা চাইবে সব কিছু পেয়ে যাবে।”
বাঁকা ঠোঁটের হাসি দেখে দানার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, কঙ্কনাকে চাই এখুনি। যেমন ভাবে সামনে ঝুঁকে গাউনের ভেতর দিয়ে নরম স্তন প্রদর্শন করে চলেছে সেই দেখে নিজেকে ঠিক ভাবে আয়ত্তে রাখা সম্ভব নয়। দানা চোয়াল চেপে হেসে ফেলে কঙ্কনার তৃষ্ণার্ত অবস্থা দেখে। বুঝতে বাকি থাকে না যে ওকে ডাকার আসল উদ্দেশ্য সহবাস করার। ধনী মহিলা, মাসের পর মাস স্বামীর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে তাঁর যৌন ক্ষুধা বাড়তে বাধ্য আর সেই ক্ষুধা মেটানোর জন্য এই মহিলা অনেক কিছুই করে থাকে।
দানা জানায়, “স্কচ অন রক্স।”
কঙ্কনা চোখ বড় বড় করে বলে, “হুম ইন্টারেস্টিং, ইন্দ্রাণীদি তাহলে আগে থেকেই শিখিয়ে দিয়েছে দেখছি।” দানার সব সংশয় কাটিয়ে কঙ্কনা ওকে ফিসফিস করে বলে, “কিছু ভেব না বিশ্বজিৎ, আমি তোমার সব খবর জানি।”
কথাটা শুনেই দানার শরীর, চাপা উত্তেজনায় টানটান হয়ে যায়। কিছুতেই মেলাতে পারে না, কঙ্কনাকে ওর আসল পরিচয় কোথা থেকে জানতে পেরেছে। দানা গম্ভির কণ্ঠে কঙ্কনাকে প্রশ্ন করে, “এর অর্থ কি কঙ্কনা? আমি কোথায় থাকি, কি করি সেটা আলোচনা করার জন্য কি এখানে ডেকে আনা হয়েছে আমাকে?”
কঙ্কনা হেসে ওঠে, “আরে না না, এখুনি রেগে গেলে হবে কি করে। একটু শান্ত হও বিশ্বজিৎ।” তারপরে সামনে ঝুঁকে ওর হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “তুমি আর কি কি কর সেটাও আমি জানি বিশ্বজিৎ।” নিরুত্তর দানার শরীর হটাত অসাড় হয়ে যায়। ওকে চুপ থাকতে দেখে কঙ্কনা বলে, “দেখ বিশ্বজিৎ, আমার বিশ্বাস তুমি ইন্দ্রাণীদিকে ভালো করেই চেন। তার নাড়ি নক্ষত্রের সব খবর তোমার অবগত।” বারবার এই “বিশ্বজিৎ” নামটা ওর কেমন যেন মনে হয়। এইনামে কেউ ওকে ডাকেনি কোনোদিন। কঙ্কনা কিছুক্ষণ থেমে ওকে বলে, “কিন্তু ইন্দ্রাণীদি কে ঠিক কতটা চেনো?”
কঙ্কনার ইতর ইশারা দানার বুঝতে একটুকু সময় লাগে না। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ইন্দ্রাণীর নামে ইতর কথা শুনতে। চাপা গর্জন করে ওঠে কঙ্কনার দিকে, “এর মানে কি, কি বলতে চাও তুমি? একটু খুলে বল।”
অট্টহাসিতে ফেটে পরে কঙ্কনা, “বলছি বলছি, বিশ্বজিৎ। তোমার কাছ থেকে কি চাই, সব বলছি। ইন্দ্রাণীদি আমাদের যা যা বলেছে সেটাও বলছি। তুমি রাতের পর রাত ইন্দ্রাণীদিকে শারীরিক সুখ দিয়েছ, ঠিক কি না আর তার বদলে ইন্দ্রাণীদি শুধু ভালোবাসার ছল করেছে তোমার সাথে।”
কথাটা কানে যেতেই দানার মাথায় তিড়িক করে আগুন জ্বলে ওঠে। প্রচন্ড রাগে মাথার রগ ছিঁড়ে ওঠার উপক্রম। কঙ্কনা কি সব উলটো পালটা বকছে, ওর “পাখী” এমন করতেই পারে না ওর সাথে। ইন্দ্রাণীর চোখে ভালোবাসা দেখেছিল দানা, সে সব কি মিথ্যে? দানা রেগে যায়, উঠে দাঁড়াতে যায় কিন্তু কঙ্কনা ওর হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বলে, “এত রেগে যাচ্ছ কেন বিশ্বজিৎ। মাথা ঠাণ্ডা করে ভাব, এইসব কথা যদি ইন্দ্রাণীদি আমাকে না জানাত তাহলে কি করে জানতাম বল? তুমি কোন বড় ব্যাবসায়ি নও মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল। তুমি একটা বুনো শক্তিশালী ষাঁড়। তুমি ইন্দ্রাণীদির সাথে রাতের পর রাত কাটিয়েছ আর ইন্দ্রাণীদি তোমাকে দিয়ে নিজের যৌন ক্ষুধা মিটিয়ে নিয়েছে, তাও আবার বিনা পয়সায়। এটাই ইন্দ্রাণীদির বিশেষত্ত, এখানেই ইন্দ্রাণীদি আমাদের চেয়ে আলাদা।”
ইন্দ্রাণী ওদের ভালোবাসার কথা, ওদের এই সহবাসের কথা অন্য কাউকে বলে দিয়েছে সেটা কিছুতেই দানা বিশ্বাস। কঙ্কনার প্রতি চাপা গর্জন করে ওঠে, “এই সব মিথ্যে। আমার পাখী আমার সাথে প্রতারনা করতেই পারে না। আমি বিশ্বাস করি না তোমার কথা।”
কঙ্কনা ওর হাতের ওপর থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সারা অঙ্গে, কোমরে ছন্দ তুলে বসার ঘরের এক কোনায় রাখা বারের দিকে হেঁটে যায়। দামী কাঁচের বোতল থেকে তিনটে গেলাসে মদ আর বরফ ঢেলে ওর পাশে এসে গা ঘেঁসে বসে। ওর কাছে বসতেই দানার নাকে ভেসে আসে এক মাদকতাময় আঘ্রান। এই মহিলার ছোঁয়ায় কোন সম্মোহিত জাদু আছে। দানার হাতে একটা গেলাস ধরিয়ে দেয় আর আঙ্গুলের সাথে আঙ্গুল মিলিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ওর চোখের দিকে চেয়ে মিটিমিটি করে হাসে।
কঙ্কনা ওর গা ঘেঁসে বসে বলে, “বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার বিশ্বজিৎ।”
দানা ওকে জিজ্ঞেস করে, “পাখী আমার ব্যাপারে কি বলেছে একটু শুনি।”
কঙ্কনা ওর ঊরুর ওপরে আলতো হাতের ছোঁয়া দিয়ে বলে, “হুম, পাখী, বেশ বেশ একেবারে প্রেমের বুলি। ইন্দ্রানীদি ভালোই ছলনার জালে জড়াতে পারে। দেখ বিশ্বজিৎ, আমি ইন্দ্রানীদিকে তোমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারলাম তুমি কোন ব্যাবসায়ি নও। তুমি, কালী পাড়ার বস্তির সামান্য একটা ট্যাক্সি চালক। রাতের পর রাত তুমি ইন্দ্রাণীদির সাথে সহবাস করে ওকে প্রচন্ড যৌন সুখ দিয়েছ। তুমি কি ভেবেছ, ইন্দ্রানীদি তোমাকে ভালোবাসে? ইসস বিশ্বজিৎ, কি করে ভাবলে এক সুন্দরী ছলনাময়ী মহিলা একটা ট্যাক্সি চালককে ভালবাসবে?” বলেই হেসে ফেলে।
ইন্দ্রাণী কি সত্যি সত্যি এই সব কথা কঙ্কনাকে বলে দিয়েছে? না না, সত্যি নয়, তাহলে ভালোবাসা কাকে বলে? সত্যি ত, দিনের আলোতে ইন্দ্রাণী আর দানা নিজের জীবনে ফিরে যায় ওদের মেলামেশা শুধু মাত্র রাতের অন্ধকারে। প্রচন্ড ক্রোধে দানার শরীর কেঁপে ওঠে। সারা শরীর গরম হয়ে যায়, হাতের কাছে ইন্দ্রাণীকে একবার পেলে ছিঁড়ে কুটিকুটি করে দেবে। দানা মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে কঙ্কনার চোখের দিকে তাকায়। হটাত মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠে, চোখের সামনে কেমন একটু ঝাপসা দেখায় সব কিছু। ঝাপসা ইন্দ্রাণী, ঝাপসা কঙ্কনা, ঝাপসা পৃথিবী। মাথা ঝাঁকিয়ে দৃষ্টি পরিস্কার করে কঙ্কনার দিকে তাকায়। তীব্র কামুকী চাহনি ওর কাছে নতুন নয়। কঙ্কনার চোখে মুখে জ্বলে ওঠে তীব্র কামনার আগুনে ঝলসানো চাহনি। মুনি ঋষি সাধু পুরুষ এমন কি দেবতার আসন টলিয়ে দিতে পারে এই চোখের তারার ভাষা, লাস্যময়ী ঠোঁটের হাসি আর নরম হাতের ছোঁয়া। কঙ্কনার হাত ধিরে ধিরে ওর হাঁটু ছাড়িয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। প্যান্টের ভেতরে ওর লিঙ্গ ক্রমে বেড়ে কঠিন ঋজু শাল গাছের আকার ধারন করে নিয়েছে। ওর বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে, রক্তের সাথে কড়া সুরা মিশে ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে তরল কামাগ্নি বইয়ে দেয়। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে সেই চিন্তা করার শক্তি দানার লোপ পায়। ইন্দ্রাণীর প্রতি ঘৃণায় শরীর জ্বলে ওঠে, এক ঢোঁকে মদের গেলাস শেষ করে দেয়।
ঠিক তখনি ভেতরের ঘর থেকে এক সুন্দরী লাস্যময়ী নারী মূর্তি বেড়িয়ে আসে।
বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে, ইতিমধ্যে নিশ্চয় ইন্দ্রাণীর ছেলে মেয়েরা চলে এসেছে। সারাদিন ট্যাক্সি চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে কোনোরকমে দুটো মুখে গুঁজে তক্তপোষে সটান শুয়ে পরে। কানের কাছে মাছি মশা ভনভন করলেও সেই ভনভন আওয়াজ ওর কানে পৌঁছায় না। মাঝে মাঝেই ফেরার পথে মদনের দোকান থেকে চোলাই মদ কিনে বাড়ি ফেরে। এই এক দেড় মাস কি করে ইন্দ্রাণীকে ছেড়ে থাকবে সেই চিন্তা করে। তক্তপোষ যেন কাঁটার বিছানা, কোন কোনোদিন ঘুম তাড়াতাড়ি চলে আসে আর যেদিন ঘুম আসেনা, সেদিন মোবাইল খুলে ইন্দ্রাণীর ওই একটা হাসি হাসি মুখের ছবি দেখে সারা রাত কাটিয়ে দেয়।
সকাল হলেই সেই এক জীবন, রাস্তার ধারের কল থেকে স্নান সারা। ময়না পালিয়ে গেছে, পলা আর শশী, রুমার খুনের দায়ে জেলে, দেবু কোথায় পালিয়ে গেছে কেউ জানে না। কালী পাড়ার বস্তির লোকজন ওইসব ভুলে আবার নতুন করে নিজের জীবনে মেতে উঠেছে। দুঃখ শোক বিরহ বেদনা বেশি সময় টিকতে পারে না ওদের কালী পাড়ার বস্তিতে। আজাকাল বেশ কয়েকটা নতুন মুখ দেখা যায় বস্তিতে, দুর কোন গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা রঞ্জনা, অন্য কোন বস্তি থেকে আসা সুমনা আরো এমন অনেকে। ওদের দিকে আর দেখে না দানা। ওই অর্ধ নির্মিত ফ্লাটে আর যাওয়া হয়ে ওঠে না, ওই সুন্দরী রাজকন্যের খোঁজ নেওয়া হয় না। শুধু মাত্র ইন্দ্রাণী ছাড়া পৃথিবীর বাকি মানুষ মেকি সাজে সেজে রয়েছে বলে মনে হয়। ওই সুন্দরী রাজকন্যেকে কোনোদিন নিজের করে পাবে না তাই আর দেখে কি লাভ। ইন্দ্রাণীর অসীম ভালোবাসা বুকে এঁকে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবে।
সেদিন কয়লা ঘাটের কাছে ট্যাক্সি নিয়ে দাঁড়িয়ে, এমন সময়ে ওর কাছে একটা ফোন আসে। ওইপাশে একটা মেয়েলী কণ্ঠের স্বর শুনে অবাক হয়ে যায়।
মেয়েলী কণ্ঠ স্বর ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি বিশ্বজিৎ চিনতে পারছ না? আমি কঙ্কনা, সেই ইন্দ্রাণীদির বাড়িতে দেখা হয়েছিল?” হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে এই আরেক গোলগাল গঠনের নারী যার চোখের তারায় সবসময়ে কাম ক্ষুধা। তা হটাত কি মনে করে ওকে ফোন করেছে?
দানা হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে।”
কঙ্কনা ওকে বলে, “একদিন আমার বাড়িতে এস, একটু গল্প করা যাবে।”
হটাত এই আমন্ত্রনে ভড়কে যায় দানা, এইভাবে একটা ট্যাক্সি চালককে কি কেউ বাড়িতে নিমন্ত্রন করে নাকি? দানার ফোন নাম্বার পেল কোথা থেকে? ইন্দ্রাণী দিয়েছে নাকি? কঙ্কনার কাছে দানা অবশ্য একজন বড় ব্যাবসায়ি মানুষ। দানা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার বলুন ত, হটাত কি মনে করে? আর একটা কথা আমার ফোন নাম্বার আপনি পেলেন কোথায়?”
কঙ্কনা হাসিতে ফেটে পরে, “আরে না না, আমাকে আপনি বলে ডাকতে হবে না, তুমি তুই আর যাই বল আপনি বলবে না একদম। কাল দুপুরের পরে কোন কাজ রেখ না। আমার বাড়িতে চলে এসো সব বলব।” বলে ওকে নিজের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দেয়।
দানার মানা করা সত্তেও কঙ্কনা নাছোড়বান্দা, ওকে আসতেই হবে। বড় দোটানায় পরে যায় দানা, বস্তির এক ট্যাক্সি চালককে এইভাবে কেউ নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রন জানায় না কেউ। সারাদিন সেই কথা মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করে ওকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়ায়। একবার কি ইন্দ্রাণীকে ফোন করে জানিয়ে দেবে যে কঙ্কনা ওকে বাড়িতে ডেকেছে, কিন্তু ইন্দ্রাণী ওকে বারন করেছে ফোন করতে। হয়ত এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে ব্যাস্ত ওর ফোন হয়ত উঠাবেই না।
পরেরদিন দানা অনেক দোনামনা করতে করতে কঙ্কনার বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। কি ভেবে এই মহিলা ওকে ফোন করেছে? ওর কাছে দানার পরিচয় একজন ব্যাবসায়ি তাই বস্তি থেকে বের হওয়ার আগে সুন্দর পরিস্কার জামা কাপড় পরে বের হয়। ঠিকানা খুঁজে বের করতে ওর একটুকু কষ্ট হয় না, এই মহানগর যে ওর হাতের তালু। গগনচুম্বী বহুতলের সামনে দাঁড়িয়ে শেষ বারের মতন ভাবে ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না। শেষ পর্যন্ত কপাল ঠুকে ভেতরে ঢুকে লিফটে উঠে দশ তলায় পৌঁছে যায়।
দশতলার কোনার ফ্লাটের কলিং বেল বাজাতেই কঙ্কনা হাসি মুখে দরজা খুলে ওকে দেখে বলে, “বাপ রে আমি ত ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত তুমি হয়ত আসেবেই না।”
কঙ্কনাকে মনে হয় যেন ওর আসার অপেক্ষায় নিজেকে তৈরি রেখেছিল। নধর গোলগাল গঠনের শরীরটাকে একটা ছোট গাউনে ঢেকে রেখেছে। সিল্কের গাউন ওর মোটা ঊরুর মাঝে এসে শেষ। কোমরে একটা বেল্ট দিয়ে বাঁধা, যার ফলে স্তন জোড়া ফুলে উঠেছে। যে ভাবে দুই স্তন জোড়া দুলছে তাতে কোন সন্দেহ নেই যে ভেতরে ব্রা পড়েনি। গাউনে কোন বোতাম নেই শুধু দুটি ফ্লাপ একের ওপরে রাখা আর কোমরে বেল্ট দিয়ে বাঁধা। প্যান্টি পড়েছে কিনা ঠিক বুঝতে পারল না দানা, তবে ওর চোখের তারা আর ঠোঁটের হাসি দেখে শরীরে কামোত্তেজনা ভর করে উঠল।
দানা মাথা নুইয়ে মৃদু হেসে ইন্দ্রাণীর শিখিয়ে দেওয়া মতন গালে গাল ঠেকিয়ে কুশল বিনিময় করে। দানা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার হটাত করে আমাকে ডাকা?”
ভেতরে ঢুকেই কঙ্কনার বসার ঘর দেখে থমকে গেল, ইন্দ্রাণীর বাড়ির চেয়ে অনেক অনেক বড় আর ইন্দ্রাণীর চেয়ে অনেক ধনী এই মহিলা। অতি সুন্দর সাজানো ফ্লাট। নিজেকে এই বাড়ির মধ্যে কেমন যেন বেমানান লাগে কিন্তু কঙ্কনা ওর হাত ধরে সোফার ওপরে বসতে অনুরোধ করে। এই বড়লোক ধনী মহিলাদের কথা কিছু বলা যায় না কার মতিগতি কখন কোনদিকে যায়। কঙ্কনার স্বভাব চরিত্রের ব্যাপারে অনেক আগেই ইন্দ্রাণী ওকে জানিয়ে দিয়েছিল তাই তীক্ষ্ণ চোখে কঙ্কনাকে জরিপ করে দানা। ওর গাড় বাদামি রঙ মাখা ঠোঁটে চটুল হাসি দেখে বুঝতে বাকি হয় না যে এই মহিলার মনের ভেতরে অনেক কিছু চলছে। বাড়িতে কি কঙ্কনা একা না অন্য কেউ আছে, মনে হয় কেউ আছে কেননা ভেতরের ঘরের মধ্যে পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। দানা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে তাহলে কঙ্কনা ওর সাথে কোন প্রকারের দুষ্টু খেলা হয়ত খেলবে না। কঙ্কনার তীক্ষ্ণ চোখ দানার আপাদমস্তক জরিপ করে ওর পাশের এক ছোট সোফার পায়ের ওপরে তুলে বসে। পায়ের ওপরে পা তলার ফলে পরনের ছোট গাউন স্থুলাকায় ঊরুর অনেকটা উঠে যায় আর গোলাকার পাছার বেশ কিছু অংশ অনাবৃত হয়ে যায়। চোখের সামনে এক কামোত্তেজক দৃশ্য দেখে দানার লিঙ্গের ছটফটানি একটু হলেও নড়ে ওঠে।
কঙ্কনা ওর চোখে চোখ রেখে বাঁকা ঠোঁটে হেসে প্রশ্ন করে, “সো হাউ আর ইউ বিশ্বজিৎ? (কেমন আছো বিশ্বজিৎ?)”
দানা সোফায় হেলান দিয়ে চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, “ভালো আছি। তা হটাত কি মনে করে?”
কঙ্কনা হাত উল্টে হেসে বলে, “জাস্ট লাইক দ্যাট। (এমনি আর কিছু না)”
কঙ্কনা কি ইচ্ছে করেই ইংরেজিতে ওর সাথে কথা বলছে, ওকি দানার আসল পরিচয় জানে তাই মাছ জালে ওঠানোর আগে যেমন খেলানো হয় তেমনি কি ওকে খেলাচ্ছে নিজের জালে? দানাও পিছপা হয় না, ইন্দ্রাণীর সাথে থেকে আর ওই ইংরেজি বই আর সিনেমা দেখে একটু ইংরেজি বলতে পারে।
দানা উত্তরে বলে, “আই এম ডুইং ফাইন মিসেস দেবনাথ (আমি ভালো আছি মিসেস দেবনাথ)।”
ওর মুখে ইংরেজি শুনে ক্ষণিকের জন্য থমকে যায় কঙ্কনা তারপরে খিলখিল করে হেসে উঠে বলে, “তাহলে কি নেবে, স্কচ ভদকা না রাম? সোডা না বরফ দিয়ে, যা চাইবে সব কিছু পেয়ে যাবে।”
বাঁকা ঠোঁটের হাসি দেখে দানার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, কঙ্কনাকে চাই এখুনি। যেমন ভাবে সামনে ঝুঁকে গাউনের ভেতর দিয়ে নরম স্তন প্রদর্শন করে চলেছে সেই দেখে নিজেকে ঠিক ভাবে আয়ত্তে রাখা সম্ভব নয়। দানা চোয়াল চেপে হেসে ফেলে কঙ্কনার তৃষ্ণার্ত অবস্থা দেখে। বুঝতে বাকি থাকে না যে ওকে ডাকার আসল উদ্দেশ্য সহবাস করার। ধনী মহিলা, মাসের পর মাস স্বামীর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে তাঁর যৌন ক্ষুধা বাড়তে বাধ্য আর সেই ক্ষুধা মেটানোর জন্য এই মহিলা অনেক কিছুই করে থাকে।
দানা জানায়, “স্কচ অন রক্স।”
কঙ্কনা চোখ বড় বড় করে বলে, “হুম ইন্টারেস্টিং, ইন্দ্রাণীদি তাহলে আগে থেকেই শিখিয়ে দিয়েছে দেখছি।” দানার সব সংশয় কাটিয়ে কঙ্কনা ওকে ফিসফিস করে বলে, “কিছু ভেব না বিশ্বজিৎ, আমি তোমার সব খবর জানি।”
কথাটা শুনেই দানার শরীর, চাপা উত্তেজনায় টানটান হয়ে যায়। কিছুতেই মেলাতে পারে না, কঙ্কনাকে ওর আসল পরিচয় কোথা থেকে জানতে পেরেছে। দানা গম্ভির কণ্ঠে কঙ্কনাকে প্রশ্ন করে, “এর অর্থ কি কঙ্কনা? আমি কোথায় থাকি, কি করি সেটা আলোচনা করার জন্য কি এখানে ডেকে আনা হয়েছে আমাকে?”
কঙ্কনা হেসে ওঠে, “আরে না না, এখুনি রেগে গেলে হবে কি করে। একটু শান্ত হও বিশ্বজিৎ।” তারপরে সামনে ঝুঁকে ওর হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “তুমি আর কি কি কর সেটাও আমি জানি বিশ্বজিৎ।” নিরুত্তর দানার শরীর হটাত অসাড় হয়ে যায়। ওকে চুপ থাকতে দেখে কঙ্কনা বলে, “দেখ বিশ্বজিৎ, আমার বিশ্বাস তুমি ইন্দ্রাণীদিকে ভালো করেই চেন। তার নাড়ি নক্ষত্রের সব খবর তোমার অবগত।” বারবার এই “বিশ্বজিৎ” নামটা ওর কেমন যেন মনে হয়। এইনামে কেউ ওকে ডাকেনি কোনোদিন। কঙ্কনা কিছুক্ষণ থেমে ওকে বলে, “কিন্তু ইন্দ্রাণীদি কে ঠিক কতটা চেনো?”
কঙ্কনার ইতর ইশারা দানার বুঝতে একটুকু সময় লাগে না। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ইন্দ্রাণীর নামে ইতর কথা শুনতে। চাপা গর্জন করে ওঠে কঙ্কনার দিকে, “এর মানে কি, কি বলতে চাও তুমি? একটু খুলে বল।”
অট্টহাসিতে ফেটে পরে কঙ্কনা, “বলছি বলছি, বিশ্বজিৎ। তোমার কাছ থেকে কি চাই, সব বলছি। ইন্দ্রাণীদি আমাদের যা যা বলেছে সেটাও বলছি। তুমি রাতের পর রাত ইন্দ্রাণীদিকে শারীরিক সুখ দিয়েছ, ঠিক কি না আর তার বদলে ইন্দ্রাণীদি শুধু ভালোবাসার ছল করেছে তোমার সাথে।”
কথাটা কানে যেতেই দানার মাথায় তিড়িক করে আগুন জ্বলে ওঠে। প্রচন্ড রাগে মাথার রগ ছিঁড়ে ওঠার উপক্রম। কঙ্কনা কি সব উলটো পালটা বকছে, ওর “পাখী” এমন করতেই পারে না ওর সাথে। ইন্দ্রাণীর চোখে ভালোবাসা দেখেছিল দানা, সে সব কি মিথ্যে? দানা রেগে যায়, উঠে দাঁড়াতে যায় কিন্তু কঙ্কনা ওর হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বলে, “এত রেগে যাচ্ছ কেন বিশ্বজিৎ। মাথা ঠাণ্ডা করে ভাব, এইসব কথা যদি ইন্দ্রাণীদি আমাকে না জানাত তাহলে কি করে জানতাম বল? তুমি কোন বড় ব্যাবসায়ি নও মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল। তুমি একটা বুনো শক্তিশালী ষাঁড়। তুমি ইন্দ্রাণীদির সাথে রাতের পর রাত কাটিয়েছ আর ইন্দ্রাণীদি তোমাকে দিয়ে নিজের যৌন ক্ষুধা মিটিয়ে নিয়েছে, তাও আবার বিনা পয়সায়। এটাই ইন্দ্রাণীদির বিশেষত্ত, এখানেই ইন্দ্রাণীদি আমাদের চেয়ে আলাদা।”
ইন্দ্রাণী ওদের ভালোবাসার কথা, ওদের এই সহবাসের কথা অন্য কাউকে বলে দিয়েছে সেটা কিছুতেই দানা বিশ্বাস। কঙ্কনার প্রতি চাপা গর্জন করে ওঠে, “এই সব মিথ্যে। আমার পাখী আমার সাথে প্রতারনা করতেই পারে না। আমি বিশ্বাস করি না তোমার কথা।”
কঙ্কনা ওর হাতের ওপর থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সারা অঙ্গে, কোমরে ছন্দ তুলে বসার ঘরের এক কোনায় রাখা বারের দিকে হেঁটে যায়। দামী কাঁচের বোতল থেকে তিনটে গেলাসে মদ আর বরফ ঢেলে ওর পাশে এসে গা ঘেঁসে বসে। ওর কাছে বসতেই দানার নাকে ভেসে আসে এক মাদকতাময় আঘ্রান। এই মহিলার ছোঁয়ায় কোন সম্মোহিত জাদু আছে। দানার হাতে একটা গেলাস ধরিয়ে দেয় আর আঙ্গুলের সাথে আঙ্গুল মিলিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ওর চোখের দিকে চেয়ে মিটিমিটি করে হাসে।
কঙ্কনা ওর গা ঘেঁসে বসে বলে, “বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার বিশ্বজিৎ।”
দানা ওকে জিজ্ঞেস করে, “পাখী আমার ব্যাপারে কি বলেছে একটু শুনি।”
কঙ্কনা ওর ঊরুর ওপরে আলতো হাতের ছোঁয়া দিয়ে বলে, “হুম, পাখী, বেশ বেশ একেবারে প্রেমের বুলি। ইন্দ্রানীদি ভালোই ছলনার জালে জড়াতে পারে। দেখ বিশ্বজিৎ, আমি ইন্দ্রানীদিকে তোমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারলাম তুমি কোন ব্যাবসায়ি নও। তুমি, কালী পাড়ার বস্তির সামান্য একটা ট্যাক্সি চালক। রাতের পর রাত তুমি ইন্দ্রাণীদির সাথে সহবাস করে ওকে প্রচন্ড যৌন সুখ দিয়েছ। তুমি কি ভেবেছ, ইন্দ্রানীদি তোমাকে ভালোবাসে? ইসস বিশ্বজিৎ, কি করে ভাবলে এক সুন্দরী ছলনাময়ী মহিলা একটা ট্যাক্সি চালককে ভালবাসবে?” বলেই হেসে ফেলে।
ইন্দ্রাণী কি সত্যি সত্যি এই সব কথা কঙ্কনাকে বলে দিয়েছে? না না, সত্যি নয়, তাহলে ভালোবাসা কাকে বলে? সত্যি ত, দিনের আলোতে ইন্দ্রাণী আর দানা নিজের জীবনে ফিরে যায় ওদের মেলামেশা শুধু মাত্র রাতের অন্ধকারে। প্রচন্ড ক্রোধে দানার শরীর কেঁপে ওঠে। সারা শরীর গরম হয়ে যায়, হাতের কাছে ইন্দ্রাণীকে একবার পেলে ছিঁড়ে কুটিকুটি করে দেবে। দানা মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে কঙ্কনার চোখের দিকে তাকায়। হটাত মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠে, চোখের সামনে কেমন একটু ঝাপসা দেখায় সব কিছু। ঝাপসা ইন্দ্রাণী, ঝাপসা কঙ্কনা, ঝাপসা পৃথিবী। মাথা ঝাঁকিয়ে দৃষ্টি পরিস্কার করে কঙ্কনার দিকে তাকায়। তীব্র কামুকী চাহনি ওর কাছে নতুন নয়। কঙ্কনার চোখে মুখে জ্বলে ওঠে তীব্র কামনার আগুনে ঝলসানো চাহনি। মুনি ঋষি সাধু পুরুষ এমন কি দেবতার আসন টলিয়ে দিতে পারে এই চোখের তারার ভাষা, লাস্যময়ী ঠোঁটের হাসি আর নরম হাতের ছোঁয়া। কঙ্কনার হাত ধিরে ধিরে ওর হাঁটু ছাড়িয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। প্যান্টের ভেতরে ওর লিঙ্গ ক্রমে বেড়ে কঠিন ঋজু শাল গাছের আকার ধারন করে নিয়েছে। ওর বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে, রক্তের সাথে কড়া সুরা মিশে ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে তরল কামাগ্নি বইয়ে দেয়। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে সেই চিন্তা করার শক্তি দানার লোপ পায়। ইন্দ্রাণীর প্রতি ঘৃণায় শরীর জ্বলে ওঠে, এক ঢোঁকে মদের গেলাস শেষ করে দেয়।
ঠিক তখনি ভেতরের ঘর থেকে এক সুন্দরী লাস্যময়ী নারী মূর্তি বেড়িয়ে আসে।