Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
#32
পর্ব চার – বলাকার ডানা মেলে (#3)



দিন দুই পরে একদিন দুপুর বেলায় ইন্দ্রাণী, ফোনের অপাশ থেকে ঝাঁঝিয়ে উঠল, “কি হল তোমার, সেই তখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি, একবার ফোন উঠাতে কষ্ট হয়?”


দানা ট্যাক্সি চালাতে চালাতে ফোন তুলে বলে, “আরে বাবা আজ দুপুর থেকে খুব ব্যাস্ত আর ফোন সাইলেন্টে করা ছিল তাই শুনতে পাইনি।”

ইন্দ্রাণী অভিমান করে বলে, “হ্যাঁ, আমি মরে গেলেই শান্তি পাও তাই না?”

ইন্দ্রাণীর রাগ সপ্তমে দেখে দানা ওকে শান্ত করার জন্য বলে, “আচ্ছা কি হয়েছে বল।”

পেছনের সিটে বসা যাত্রী ওকে ফোনে কথা বলতে বারন করে। দানা নিরুপায় কি করে, ইন্দ্রাণীকে জানিয়ে দিল, পরে ফোন করবে। অন্যপাশে ইন্দ্রাণী সেই শুনে মুখ ফুলিয়ে বসে যায়। দানা গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবে এইত সকালেই কথা হল এরমধ্যে আবার কি কথা থাকতে পারে। গত দুইদিনে ওর বাড়িতে যাওয়া হয়নি, ওর বাড়িতে ওর বাবা মা ঘুরতে এসেছেন। যাত্রীকে রেল স্টেসানে নামিয়ে দিয়ে ইন্দ্রাণীকে একটা ফোন করে। ইন্দ্রাণী ওকে জানায় যে দানার নামে একটা ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলতে চায় আর তার জন্য ওর জন্মের সারটিফিকেট, ভোটের পরিচয়পত্র, দশ ক্লাসের মার্ক সিট আর প্যান কার্ড চাই। দানা জানায় যে ওর কাছে প্যান কার্ড ছাড়া বাকি সব আছে কিন্তু হটাত কেন ইন্দ্রাণী ওর জন্য ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলতে চায়। কারন জানতে চাইলে ইন্দ্রাণী জানায় সময় হলে সব জানাবে। ওর কথা শুনে দানার মনে হয় কেন চোদ্দ পনেরো বছর আগে জন্মাতে পারেনি তাহলে হয়ত ইন্দ্রাণীকে নিজের করে নিতে পারত। সত্যি কি সেটা সম্ভব হত? ভেবেই দানা নিজের মনে হেসে ফেলে, একটা গরীব ট্যাক্সি চালক একি স্বপ্ন দেখছে। ইন্দ্রাণীর সান্নিধ্য ওর কাছে এক অলীক স্বপ্নের মতন যেটা রোজ সকালে কালীপাড়ার নোংরা বস্তিতে পা রাখতেই বুঝতে পারে। ওইখানে ওর জন্ম হয়েছে আর একদিন ওইখানেই ওকে চোখ বুজতে হবে। 

বিকেলে বাড়ি ফিরে তক্তপোষের নিচ থেকে পুরানো বাক্স বের করে, হাতড়ে হাতড়ে কাগজ পত্র ঘেঁটে ঘেঁটে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র গুলো একটা ব্যাগ ভরে নেয়। ইন্দ্রাণীর বাড়ি যাওয়ার আগে ওই প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের জেরক্স করিয়ে নেয়। সন্ধ্যের সময়ে রাস্তা ভর্তি গাড়ি ঘোড়া, সেদিকে দানার খেয়াল নেই। আপন মনে গুনগুন করতে করতে নিজের খেয়ালে গাড়ি চালায়। “এই ট্যাক্সি যাবে নাকি?” অনেকে হাত দেখায়। দানা দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী গুলোকে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ফ্লাটের নিচে পৌঁছে ইন্দ্রাণীকে ফোনে জানায় যে এসে গেছে। বাড়িতে আর যায় না কারন বাড়িতে আত্মীয় সজ্জন এসেছেন। ইন্দ্রাণী ওর ফোন পেয়েই ত্রস্ত পায়ে নিচে নেমে আসে। আসেপাশের লোকের ভিড়, সর্ব সমক্ষে পাশে দাঁড়াতে দুইজনার দ্বিধা বোধ হয়, তাই একটু তফাতে দাঁড়িয়ে কথা সারে। ইন্দ্রাণী ওকে দুই হাজার টাকা দিয়ে বলে যে পরের দিন যেন মধ্য মহানগরের কোন বড় জামা কাপড়ের দোকান থেকে ভালো জামা প্যান্ট আর জুতো কিনে নেয় আর পাসপোর্ট ফটো যেন তোলে। দানা জিজ্ঞেস করে এইসবের কারন, ইন্দ্রাণী কোন উত্তর দেয় না। ওর কাছে কিছু নেই ইন্দ্রাণীকে দেওয়ার, উল্টে বরাবর ইন্দ্রাণীই ওকে নানান উপঢৌকন উপহার দিয়েছে। ট্যাক্সিতে না ওঠা পর্যন্ত সিঁড়ির কাছে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে ইন্দ্রাণী। 

ট্যাক্সি স্টার্ট করে এগোতে যাবে কি সামনে একটা সাদা গাড়ি এসে যায় আর প্রায় ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে যায়। দানার মাথা গরম হয়ে যায়, শালা বড় লোকের গাড়ি বলে কি রাস্তা কিনে নিয়েছে, আর উলটো দিক থেকে চালানোর ছাড়পত্র পেয়ে গেছে? ট্যাক্সি থেকে নামতেই সামনের গাড়ির চালক নিজের গাড়ি থেকে নেমে ওর দিকে তেড়ে আসে। ওকে দেখেই সামনের চালক থমকে দাঁড়িয়ে পরে, দানার সামনে ফারহান দাঁড়িয়ে। 

ফারহান ওকে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠে, “কি রে ভাই এইখানে কি করছিস তুই?”

দানা ফারহানকে আপাদ মস্তক একবার নিরীক্ষণ করে। ওকে দেখে গাড়ির ড্রাইভার বলে মনেই হয় না, মনে হয় যেন ফারহান গাড়ির মালিক। পোশাক আশাক দানার চেয়ে অনেক ভালো, হাতে ঘড়ি, গলায় সোনার চেন, পায়ে কালো জুতো, ওর মতন চটি পরে নয়। ইসসস, ইন্দ্রাণী কতবার বারন করেছে ওকে, এইবারে এই চটিটা না ফেলে দিলে ওকে মেরেই ফেলবে। ফারহানের সাথে হাত মিলিয়ে একবার আড় চোখে সিঁড়ির দিকে দেখে। ফারহান কি ইন্দ্রাণীকে দেখে ফেলেছে? ইন্দ্রাণী তখন সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে, দানা আড় চোখের ইশারায় ওকে চলে যেতে বলে।

দানা এপাশ ওপাশ দেখে ফারহানকে বলে, “না মানে এইখানে প্যাসেঞ্জার নিয়ে এসেছিলাম।”

ফারহান একবার সিঁড়ি কাছে দাঁড়ানো ওই সুন্দরী মহিলার দিকে দেখে ওকে বলে, “হুম, তোর কপালে সত্যি সব সুন্দরীরাই জোটে মনে হচ্ছে। যাই হোক, সেই যে টাকা শোধ করলি তারপরে আর দেখা সাক্ষাৎ নেই। কি ব্যাপার তোর, মাসির বাড়ির ছাদ ঠিক আছে ত?”

দানার মনে পরে যায় ওর কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছিল সেটা মাসির বাড়ির ছাদ ঠিক করার আছিলায় নিয়েছিল। দানা জানায় ওর মাসির বাড়ির ছাদ একদম ঠিক আছে আর আগামী বর্ষায় কেন আগামী চার পাঁচ বর্ষায় ছাদের কিছু হবে না। দানা বিড়ি বের করে, ফারহান হেসে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ওকে একটা দেয়। দানা ওর দিকে হেসে আরো একটা সিগারেট চায়, একটা কানে গুঁজে নেয় অন্যটা ধরায়। ফারহান জানায় যে সোনারডাঙ্গা এলাকায় সিনেমা জগতের নাম করা অভিনেত্রী নয়না বোস থাকে, তাকে বাড়িতে ছেড়ে ফিরছে, ফিরে যাওয়ার সময়ে দানাকে দেখে দাঁড়িয়ে পরে। বাপ্পা নস্করের ড্রাইভার, নায়িকা নয়না বোসকে বাড়িতে ছাড়তে এসেছে শুনে ব্যাপারটা দানার মনে খটকা লাগে। বড়লোকেদের বড় বড় ব্যাপার, ওকে আর সেই বিষয়ে বিশেষ কিছু জিজ্ঞেস করল না, কিন্তু ফারহানের কথা শুনে এইটুকু বুঝতে পারল যে নয়না বোসকে মাঝে মাঝেই ফারহান বাড়িতে ছাড়তে আসে। দুইজনে ওইখানে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে, যেহেতু পরস্পরকে বিশেষ একটা চেনে না তাই ওদের কথা বলার মতন বিশেষ কিছু ছিল না। ফারহান ওকে একদিন নিজের বাড়িতে নেমতন্ন করে চলে যায়। দানা মনে মনে হেসে ফেলে, কোথায় আদার কারবারি করা সামান্য ট্যাক্সি চালক আর কোথায় ফারহান, বিধায়ক বাপ্পা নস্করের ড্রাইভার, কাকতালীয়ে ভাবে দেখা হয়ে গেছে তাই কথা বলেছে না হলে হয়ত কথাই বলত না। 

গুনগুন গান গাইতে গাইতে দানা আবার ট্যাক্সি নিয়ে বেড়িয়ে পরে যাত্রী উঠাতে। রাতের বেলা অধির বাবুর টাকা মিটিয়ে কানে গোঁজা ফারহানের দেওয়া সিগারেট ধরিয়ে বস্তির দিকে পা বাড়ায়। বস্তিতে পা রাখতেই থমকে গেল দানা, পুলিস এ্যাম্বুলেন্স লোকজন হইহুল্লুড় বিশাল হুলুস্থুলুস কান্ড। কি হয়েছে, কি হয়েছে, চেঁচামেচিতে ঠিক ভাবে খবর পাওয়া যায় না। পলাদের বাড়ির সামনে পুলিশ, পুলিসের ভ্যানের মধ্যে বসে শশী জুবুথুবু হয়ে বসে। ওইদিকে এম্বুলেন্সে উঁকি মেরে দেখে সাদা কাপড়ে ঢাকা একটা লাশ। 

এরতার কাছে জানতে পারল যে শশী নাকি রুমাকে খুন করেছে। শশী আর দেবু বিকেলে সিনেমা দেখতে যাবে বলে বেড়িয়েছিল, কিন্তু ওদের আসল উদ্দেশ্য ছিল অন্য কিছু। শ্যামা পাগলী এদিক ওদিক পাগলের মতন ঘুরে বেড়ায়, এক সময়ে কালী মন্দিরের পেছনের একটা গুমটিতে পলা, দেবু আর শশীর কামকেলি দেখে ফেলে আর রুমাকে এসে বলে দেয়। প্রথমে রুমা বিশ্বাস করতে পারেনি ওর কথা, কারন শ্যামা পাগলামি করে বেড়ায়। কিন্তু বারেবারে ওর হাত ধরে টেনে এক কথা বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত রুমা শ্যামার পেছনে ওই ভাঙ্গা কালী মন্দিরের পেছনের ঘুমটিতে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে যে পলা, শশী আর দেবু চরম কামকেলিতে মগ্ন। রুমা সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে ওঠে ওদের দেখে, তরিঘরি করে দেবু উলঙ্গ অবস্থায় ওইখান থেকে পালিয়ে যায়। রুমা ওই দৃশ্য দেখে ক্রোধে উন্মাদ হয়ে যায়, পলার চুলের মুঠি ধরে উত্তম মধ্যম মারতে শুরু করে। শশী ওকে ধরতে আসলে শশীকেও মারতে শুরু করে দেয়। নিরুপায় শশী নিজেকে বাঁচাতে ওর গলা টিপে ধরে আর সেই সময়ে পলা একটা ইট দিয়ে রুমার মাথায় আঘাত করে। ওই ইটের ঘা খেয়ে রুমা সঙ্গে সঙ্গে প্রান হারায়। শ্যামা পাগলী এই সব কান্ড কারখানা দেখে চেঁচাতে চেঁচাতে বস্তিতে এসে খবর দেয়। সঙ্গে সঙ্গে লোকজন জড় হয়ে যায় আর ওদের ধরে ফেলে। সব ঘটনার বিবরন শুনে দাঁতে দাঁত পিষে মনে মনে হেসে ফেলে দানা। মহিলা পুলিস ততক্ষণে পলার হাতে হাতকড়া পড়িয়ে গাড়িতে উঠায়। পুলিসের গাড়িতে ওঠার সময়ে দানার সাথে ওর চখাচুখি হয়ে যায়। দানা ওর দিকে ক্রুর হেসে ইশারায় জানিয়ে দেয় ওর মতন পাপীর এই শাস্তি হওয়া উচিত। 

পুলিস ওদের নিয়ে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত বস্তির হইচই কম হয় না, লোকজনের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায় ওদের অবৈধ কামকেলির কথা। এই বাড়ির বউ পাশের বাড়ির ছেলের সাথে সঙ্গম করছে, কোন বৌদি তার দেবরের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে, ওই মেয়েছেলে কোন বাড়ির বাবুর সাথে অবৈধ যৌনলীলায় মত্ত, বাকিদের জন্য যা কিছু অবৈধ এই কালী পাড়ার বস্তিতে সব কিছু বৈধ হয়ে যায়। কেষ্টর বাড়ির পাশের লোক সে নাকি বেশ কয়েকটা খুন করে এইখানে এসে লুকিয়ে রয়েছে। ওই কোনার দিকের সমু, সে ড্রাগসের কারবার করে। একসময়ে মিনতি বৌদি এই কালী পাড়ার বস্তির এক গুমটি থেকে বেশ্যা বৃত্তি চালাত, এই রকম অনেক কেচ্ছা এই কালী পাড়ার বস্তির আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে। নিজের ঘরে ঢুকে মনে হয় কবে এই কালী পাড়ার বস্তি ছেড়ে একটু স্বস্তির শ্বাস নিতে পারবে। একমাত্র ইন্দ্রাণী ছাড়া আর কেউ নেই যাকে নিজের মনের কথা বলতে পারে, কিন্তু ওর বাড়িতে আত্মীয় সজ্জন এসেছে না হলে রাতটা ওইখানে কাটানো যেত। 

টাকা পকেটে থাকলে কি না হয়, মানুষের চলন বলন সবকিছু পাল্টে যায়। পরেরদিন দুপুর নাগাদ মধ্য মহানগরে পৌঁছে এদিক ওদিক তাকিয়ে সার বেঁধে দাঁড়ানো দোকান গুলো দেখে। বহুবার বহু যাত্রীকে এই বড় বড় দোকানের সামনে নামিয়ে দিয়েছে, কিন্তু নিজে কোনোদিন নামেনি, নামলেও কোনোদিন দোকানে ঢোকেনি। ট্যাক্সিটা, স্টান্ডে দাঁড় করিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে একটা বিশাল কাঁচের দরজা দেওয়া জামা কাপড়ের দোকানের সামনে দাঁড়ায়। ওর মতন অনেক নর নারী ওই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুকি মেরে জামা কাপড় দেখে চলে যায়। আশে পাশের লোকের পোশাক পরিচ্ছদ ওর চেয়ে অনেক ভালো, কিন্তু অনেকেই ঢুকতে সাহস পায় না। সেই দেখে দানা মনে মনে হেসে ফেলে, এযে মেকি সাজ, পকেটে পয়সা নেই কিন্তু কেতাদুরস্ত সাজের বহর। 
দানা একবার নিজের দিকে দেখে, জিন্সের প্যান্টের নিচের দিক ঘষে ঘষে সুতো বেড়িয়ে গেছে, জামাটা একটু ভাল কারন এই জামা ইন্দ্রাণীর দেওয়া, পায়ের স্যান্ডেলটার রঙ ওঠা, নিজেকে দেখেই লজ্জা পেয়ে যায়। দরজার সামনে যেতেই উর্দি পরা একজন কাঁচের দরজা ঠেলে খুলে দিল। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত দোকান, লম্বা টেবিলের ওপারে সার বেঁধে দোকানি দাঁড়িয়ে, সবার চোখ ওর দিকে। একজন বিক্রেতা কাছে এসে জিজ্ঞেস করে কি চায়? ইন্দ্রাণী বলে দিয়েছিল যে নীল রঙের সরু স্ট্রাইপ দেওয়া সাদা জামা কিনতে আর যেকোনো গাড় রঙের প্যান্ট কিনতে। দানা সেটাই জানাল, বিক্রেতা ওকে আপাদ মস্তক একবার নিরীক্ষণ করে ওকে জিজ্ঞেস করল, কেনার মতন পয়সা আছে ত? জামা প্যান্ট মিলিয়ে এক থেকে দেড় হাজারের মতন টাকা লাগবে। দানা হেসে জানিয়ে দিল যে ওর কাছে সেই টাকা আছে। শুনেই বিক্রেতার ভোল পালটে গেল, স্যার স্যার করে জামা দেখাতে প্যান্ট দেখাতে শুরু করে দিল। বিক্রেতা প্রশ্ন করে কি ধরনের জামা চায় দানা, বিকেলের পার্টির জন্য না অফিসের জন্য না বেড়াতে যাওয়ার জন্য, কি রঙ, চেক কাটা না স্ট্রাইপ দেওয়া না ফুল কাটা, বড় কলার না ছোট কলার, দুই পকেট না এক পকেট, ছোট জামা না বড় জামা, ফুল হাতা হবে না হাফ হাতা হবে ইত্যাদি। প্রশ্ন বানে জর্জরিত হয়ে দানা খানিক এদিক ওদিক দেখে। বিক্রেতা ওকে নানান জামা দেখায় কিন্তু ইন্দ্রাণীর বলে দেওয়া জামা ওকে নিতে হবে, শেষ পর্যন্ত সেই জামা কাপড় কিনে দোকান থেকে বেড়িয়ে আসে। এরপরে একটা জুতো কিনতে হবে। একটা সাদা রঙের জুতো ছিল কিন্তু তার তলা ক্ষয় হয়ে গেছে, ইন্দ্রাণী বলে দিয়েছে যে কালো চৌক মাথা ওয়ালা চামড়ার জুতো কিনতে। জুতোর দোকানে ঢুকে সেই ধরনের জুতো কিনল। ওর জীবন কি পাল্টাতে চলেছে ইন্দ্রাণীর হাত ধরে? এই পোশাক এক ট্যাক্সিচালকের জন্য একেবারেই নয়, এই পোশাকে বড় লোকেরা বিমান বন্দর থেকে বেড়িয়ে ওর গাড়িতে চেপে সোজা কোন বহুতল অফিসে ঢোকে না হয় কোন পাঁচ তারা হোটেলে। ট্যাক্সির আসনে কি এই পোশাকে বসা যায়? 


রাতে ইন্দ্রাণীকে ফোনে জানায় যে ওর কথা মতন পোশাক পরিচ্ছদ কেনা হয়ে গেছে, ফোনে দীর্ঘ এক চুম্বন এঁকে শুভ রাত্রি জানিয়ে দেয়। 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Nilpori - 08-01-2019, 02:49 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)