09-08-2019, 11:17 PM
পার্টঃ২৮
মিত্রার আশে পাশে কারা আছে আমাকে একটু জানা। দিবাকরেরও কিছু লোকজন এখানে আছে। ওরা আমাকে খুঁজে বেরাচ্ছে নিশ্চই।
ঠিক আছে তোরা এখানে বোস। আমি যাচ্ছি। চিকনা চলে গেলো।
খুব সাবধান।
তোকে ভাবতে হবে না।
শোন মিত্রা যদি খোঁজ করে বলবি আমার সঙ্গে তোর দেখা হয় নি।
আচ্ছা।
অনাদি ভীষণ খিদে পেয়েছে।
কি খাবি বল।
একটু ছোলা সেদ্ধ আর মুড়ি।
পাটালি। অনাদি হেসে বললো।
এখন ভালো লাগছে না।
বুঁচিকে ফোন করে দিচ্ছি দাঁড়া।
কে বুঁচি।
তুই চিনবি না পার্টি করতে গিয়ে অনেক কিছু রাখতে হয়, শিখতে হয়।
থাম দাঁড়া। তুই একটা কাজ করতে পারবি।
বল ।
তুই নিজে যা। ওদের নাচ কি শুরু হয়েছে।
হ্যাঁ প্রায় একঘন্টা হয়ে গেছে।
তার মানে এবার শেষের পথে।
হ্যাঁ।
মিত্রা নিশ্চই মেলা ঘুরতে চাইবে। তুই নীপা ওদের বন্ধুদের সঙ্গে ওকে ভিরিয়ে দে।
সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। বাসু বললো।
ঠিক আছে। শেষ হলে আমায় ফোন কর। আমি যাবো। আমার আর কিছু ভালো লাগছে না।
বুঁচিকে দিয়ে মুড়ি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি। বাসু তুই কিন্তু অনিকে ছেড়ে যাস না।
আচ্ছা।
বাসুর ফোনটা বেজে উঠলো।
চিকনা ফোন করেছে, তুই কথা বলবি।
দে।
হ্যাঁ।
হ্যালো।
বাসু।
না আমি অনি বলছি।
শোন সব ব্যবস্থা পাকা, শুয়োরের বাচ্চা ম্যাডামের সঙ্গে বসে জমিয়ে গল্প করছে।
ঠিক আছে। তুই ডিস্টার্ব করিস না। ওদের গল্প করতে দে। পরলে শোনার চেষ্টা কর। আমার ফোনে রিং কর আমি রেকর্ডিং করবো। মাথায় রাখবি এই কাজ যে করে সে খুব শেয়ানা ছেলে।
আচ্ছা।
বাসু আমার দিকে তাকালো, তোর মাথায় কতো চাপ। তুই চলিস কি করে।
চলতে হয় বাসু। না হলে চালাবো কি করে।
আমার তোর মাথাটা মাঝে মাঝে দেখতে ইচ্ছে করে। আমরা হলে এতোক্ষণে কোন অঘটন ঘটিয়ে দিতাম।
এই যে তুই কিছুক্ষণ আগে বললি হাতে নয় ভাতে মারবো।
বাসু মাথা নীচু করে হাসলো।
অনাদির ছেলেটা মুরি চা দিয়ে গেলো। দুজনে বসে বসে খেলাম। ভেতরে ভেতরে তোলপাড় চলছে। আমাকে মিত্রাকে নিয়ে কেচ্ছা, অন্য হাউস রসালো গল্প করবে। একদিন হয়তো উপন্যাসেও স্থান পাবো। ভাবতেই গাটা শিউরে উঠছে।
চিকনার ফোন।
বাসুকে দিলাম, ও ভয়েস মুডে দিয়ে রেকর্ডিং করছে।
............আপনার সঙ্গে অনির অনেক মিল আছে। মিত্রার গলা।
না না কি বলছেন আপনি। অনি আপনার হাউসের একজন স্টার রিপোর্টার। ওর সঙ্গে আমার তুলনা।
আচ্ছা অনির সঙ্গে আপনার পরিচয় কি ভাবে কাগজে কাজ করতে করতে।
না আমরা কলেজ লাইফ থেকে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত।
বাবা তার মানে প্রয় দশ বছর।
হবে।
অনিকি আপনার কাছে থাকে না অন্য কোথাও থেকে।
আমার কাছে থাকবে কেনো, ওর নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে।
আমি তো শুনলাম কলকাতয় ওর থাকার জায়গা নেই বলে আপনার বাড়িতে থাকে।
আপনি ভুল শুনেছেন।
সত্যি আপনাদের নিগূঢ় বন্ধুত্ব দেখলে হিংসে হয়।
কি করে দেখলেন।
মেলায় আসার পথে আপনাদের পেছন থেকে দেখলাম।
কলেজ লাইফেও আমাদের অনেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব আমাদের দেখে হিংসে করতো।
এখানকার সবাই কানা-ঘুসো করে আপনার সঙ্গে ওর একটা এ্যাফেয়ার আছে।
কারা বলে।
অনির বন্ধুরা।
আপনি বলছেন। না আর কেউ বলছে।
কেনো। অনাদি বাসু চিকনা কতজনের নাম বলবো।
হতেই পারে না। ওরা অনির খুব ভাল বন্ধু নার্সিংহোমে দেখলামতো।
আমি সেদিন ওর কাকার অপারেশনের দিন যেতে পারলাম না, খুব খারাপ লাগছে।
সেদিনতো আপনাকে দেখতে পাই নি।
আপনি নার্সিংহোমে এসেছিলেন।
আমি একা নয় অনির বড়মা ছোটমা......।
বাবা ওকানে গিয়ে এসব পাতিয়ে ফেলেছে।
পাতাবে কেনো। একজন আমার কাগজের এডিটরের স্ত্রী আরএকজন আমার কাগজের চিফ এডিটরের স্ত্রী।
অনি আসে নি ?
এসেছে। কোথায় ঘুরে বেরাচ্ছে। ও একটা ভবঘুরে।
পোষ মানাবার চেষ্টা করুন।
করছিতো পারছি কোথায়।
সত্যি ওর কোন রেসপনসিবিলিটি নেই। আপনার মতো একজন সেলিব্রিটিকে নিয়ে এরকম ছেলেখেলা করার।
কোথায় ও ছেলেখেলা করলো। আমিইতো এখানে আসতে চেয়েছি, ও না করেছিলো। তবু এলাম। সত্যি না এলে আমার অনেক কিছু অদেখা থেকে যেতো।
ফোনটা কেটে গেলো।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
আমার ফোনটা বেজে উঠলো, দেখলাম মিত্রার ফোন।
হ্যালো।
কিরে তুই কোথায়।
আমি শ্মশানে।
শ্মশানে মানে!
শ্মশানে।
আবার ওখানে গেছিস।
হ্যাঁ। জায়গাটা আমায় খুব টানেরে। তুই যেনো কাউকে বলিস না।
কি বলছিস তুই। এখুনি আসবি।
কেনো।
আমাকে একা একা ফেলে যেতে তোর লজ্জা করছে না।
কই তোকে একা ফেলে এলাম, নীপা আছে, ওর বন্ধুরা আছে, অনাদি বাসু চিকনা আর কতজনকে তোর চাই।
তোর গলাটা ভারি ভারি লাগছে কেন ?
ফাঁকে মাঠে বসে আছি কিনা একটু ঠান্ডা লেগেছে বোধ হয়।
তুই এখুনি আয়।
ফাংসন শেষ ?
আর একটু বাকি আছে।
ঠিক আছে আমি অনাদিকে বলে দিচ্ছি। তোকে সঙ্গ দেবে গিয়ে।
তোর এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ হলো।
কার সঙ্গে।
দিবাকর। দিবাকর মন্ডল।
কোথায় আলাপ হলো। এইতো আমার পাশে বসে আছে।
তাই।
দে ওকে।
দিচ্ছি।
হ্যালো।
বল।
তুই এখন কোথায়।
পুরীকুন্ডী শ্মশানে।
মিথ্যে কথা বলছিস।
তুই চলে আয়।
কোথায় ?
আমি যেখানকার কথা বললাম।
আমার এতো শখ নেই।
তাহলে আর সত্য মিথ্যার যাচাই করে লাভ।
আমি তোর মতো পাগল নই।
তুই পাগল নয়। শেয়ানা।
কেনো একথা বলছিস।
তুই সেদিন বললি তোর কাজ আছে তাই নার্সিং হোমে যেতে পারবি না।
সত্যি তুই বিশ্বাস কর অনি, একটা কাজ পরে গেছিল।
ইন্টারভিউ কেমন হলো।
তোকে কে বললো।
সাংবাদিকের কাজ খবর সংগ্রহ করা। আমি নিশ্চই মিথ্যে বলি নি।
না। এটা তুই সত্যি কথা বলেছিস।
কোন কাগজে ইন্টারভিউ দিলি।
এটাও কি জেনে ফেলেছিস।
না। জানতে পারি নি। দেখ সত্যি কথা বললাম।
মেলায় কখন আসছিস। তোর মিত্রাদেবিতো তোকে দেখার জন্য পাগল।
ওটা বড়লোকেদের খেয়াল।
কি বলছিস।
কেন বিশ্বাস হচ্ছে না।
একেবারে না।
তুইতো পাশে বসে আছিস, জিজ্ঞাসা কর।
এতটা ধৃষ্টতা দেখাতে পারবো না।
আমাদের কাগজে কার কাছে ইন্টারভিউ দিয়ে এলি।
কি পাগলের মতো বকছিস।
আরে আমিতো বদ্ধ পাগল।
সেটাই মনে হচ্ছে।
কেনো এটাও কি মিথ্যে বললাম।
পুরোটা।
মিত্রাকে ধর একটা হিল্লে হয়ে যাবে।
বলেছি।
বাঃ এইতো করিতকর্মা ছেলে। মেলায় থাক। আমি আসছি।
কতোক্ষণের মধ্যে আসবি।
এখান থেকে যেতে ঘন্টা খানেক তো লাগবে।
নারে আমি তাড়াতাড়ি ফিরে যাব। কাল সকালে একবার কলকাতা যেতে হবে।
হাসতে হাসতে বললাম, জয়েনিং।
বোকা বোকা কথা বলিস না।
ফোনটা কেটে দিলাম। বাসু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রেকর্ডিংটা সেভ করেই অনাদিকে ফোন করলাম। অনাদি ধরেই বললো কি হয়েছে বল।
তুই কোথায় ?
কাজ গোছাছি।
মানে ?
মেলার চারিদিকে নজরদারি বারালাম।
ঠিক আছে। চিকনা কোথায় ?
ও মেলার বাইরে আছে।
আচ্ছা। শোন তুই একবার মিত্রার কাছে যা, ওখানে দিবাকর আছে।
ওর পেছনে পাশে চার পাঁচজন আছে।
তুই গিয়ে মিত্রার সঙ্গে বোস ওর সঙ্গে খেজুরে গল্প কর। আমার সম্বন্ধে যাতা বল। কালকের শ্মশানের গল্প কর। আমি দিবাকরকে এইমাত্র শ্মশানের গল্প দিয়েছি। ওর মুখটা লক্ষ্য রাখবি তাহলে সব ধরতে পারবি। ও একঘন্টার মধ্যে মেলা থেকে বেরিয়ে যাবে বলছে। ওকে যে ভাবেই হোক তুলে আনবি আমার কাছে। মিত্রা যেন একটুও বুঝতে না পারে।
ঠিক আছে। তুই পাঁপড় ভাজা জিলিপি খাবি।
খাব। মিত্রার জন্য নিয়ে যা। চিকনা কোথায় এখন ?
বললাম তো মেলার বাইরেটা সামলাচ্ছে।
ওর ফোন বন্ধ, মনে হয় ব্যাটারি নেই।
ঠিক আছে দেখছি।
বাসু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তোকে কত চিন্তা করতে হয়। এখন মনে হচ্ছে তোর প্রেমকরা উচিত, বিয়ে করা উচিত নয়।
হেসে ফেললাম। কেনো।
বিয়ে করলে বউকে সময় দিবি কখন।
তোর বউ মেলায় এসেছে।
এসেছে।
দেখালি নাতো।
সময় পেলাম কোথায়। যা ঝড় চলছে।
মিত্রার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে পারতিস এক ফাঁকে।
গেছিলাম তখন। আলাপ করিয়ে দিয়েছি।
ভাল করেছিস।
ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রার ফোন।
এখন এলি না।
আসছি। এতটা পথ হেঁটে যেতে হবেতো।
অনাদি পাঁপড় আর জিলিপি নিয়ে এসেছে।
খা।
তুই না এলে খাব না।
পাগলামো করিস না, ওরা মন খারাপ করবে।
কালকে তোর শ্মশানে যাবার গল্প শুনছি।
হাসলাম।
আচ্ছা এই মেলা ছেরে তোর শ্মশানে যেতে ভালো লাগলো।
মা-বাবার কথা ভেবে মনটা খুব খারাপ লাগলো। তাই চলে এলাম।
সরি আমি না জেনে তোকে হার্ট করলাম। তুই আয়।
ফোনটা কেটে দিলাম। কিছু ভাললাগছে না। চল কলেজ ঘরের বারান্দায় গিয়ে বসি। আমি বাসু ইকলেজ ঘরের বারান্দায় বসলাম। এখান থেকে মেলেটাকে দেখা যাচ্ছে কিন্তু কি হচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। চিকনার ফোন। সরি গুরু। আমি ব্যবস্থা করেছি। তবে মনে হয় কাজ হবে না। নীপাদের নাচ শেষ হলো। ম্যাডাম গ্রীনরুমে যাচ্ছে। দিবাকর হেসে হেসে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলছে, শুয়োরের বাচ্চা আবার হাত মেলাচ্ছে। অনাদি ওর কাঁধে হাত রেখেছে। ঠিক আছে বস আর মিনিট দশেক। রাখি।
বাসু আমার দিকে তাকলো।
কিরে আমি কি বাইরে গিয়ে বসবো।
বোস। আমি এখানে আছি জানাবি না। তুই অনাদি আগে ফেস কর। তারপর ওকে এখানে নিয়ে আয়। আমি মোবাইল অফ করছি।
আচ্ছা।
সিগারেটের প্যাকেটটা দিয়ে যা।
বাসু সিগারেটের প্যাকেটটা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। মাথা গরম করলে চলবে না। যা হবার তা হয়ে গেছে এখন কাজ উদ্ধার করতে হবে। হঠাত চেঁচামিচির শব্দ। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম। এই জ্যোতস্না রাতেও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। দিবাকরের কলার ধরে হির হির করে টেনে আনছে ওরা। হয়তো দু’চারঘা দিয়েও দিয়েছে। দিবাকারের সঙ্গে জোর ধস্তা-ধস্তি চলছে। চিকনার গলা শুনতে পেলাম। বেশি বাড়াবাড়ি করবি না। আমার পরিচয় তোকে নতুন করে দেবার নেই। কেটে টুকরো টুকরো করে মালঞ্চের জলে ভাসিয়ে দেবো। মাছের খাবার হয়ে যাবি।
আমার বুকটা দুরু দুরু করে উঠলো। একি বলছে চিকনা।
অনাদি ঠান্ডা মাথায় খালি বলছে। তোকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে চল। সব বুঝতে পারবি।
কাছাকাছি এসে অনাদি বাসুকে জিজ্ঞাসা করলো অনি কোথায়। আমি দেখতে পাচ্ছি বাসু অনাদিকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে সব বলছে। অনাদি ঘাড় নারছে। অনাদি একবার ইকলেজ বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো। তারপর ঘাড় নাড়লো।
মিত্রার আশে পাশে কারা আছে আমাকে একটু জানা। দিবাকরেরও কিছু লোকজন এখানে আছে। ওরা আমাকে খুঁজে বেরাচ্ছে নিশ্চই।
ঠিক আছে তোরা এখানে বোস। আমি যাচ্ছি। চিকনা চলে গেলো।
খুব সাবধান।
তোকে ভাবতে হবে না।
শোন মিত্রা যদি খোঁজ করে বলবি আমার সঙ্গে তোর দেখা হয় নি।
আচ্ছা।
অনাদি ভীষণ খিদে পেয়েছে।
কি খাবি বল।
একটু ছোলা সেদ্ধ আর মুড়ি।
পাটালি। অনাদি হেসে বললো।
এখন ভালো লাগছে না।
বুঁচিকে ফোন করে দিচ্ছি দাঁড়া।
কে বুঁচি।
তুই চিনবি না পার্টি করতে গিয়ে অনেক কিছু রাখতে হয়, শিখতে হয়।
থাম দাঁড়া। তুই একটা কাজ করতে পারবি।
বল ।
তুই নিজে যা। ওদের নাচ কি শুরু হয়েছে।
হ্যাঁ প্রায় একঘন্টা হয়ে গেছে।
তার মানে এবার শেষের পথে।
হ্যাঁ।
মিত্রা নিশ্চই মেলা ঘুরতে চাইবে। তুই নীপা ওদের বন্ধুদের সঙ্গে ওকে ভিরিয়ে দে।
সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। বাসু বললো।
ঠিক আছে। শেষ হলে আমায় ফোন কর। আমি যাবো। আমার আর কিছু ভালো লাগছে না।
বুঁচিকে দিয়ে মুড়ি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি। বাসু তুই কিন্তু অনিকে ছেড়ে যাস না।
আচ্ছা।
বাসুর ফোনটা বেজে উঠলো।
চিকনা ফোন করেছে, তুই কথা বলবি।
দে।
হ্যাঁ।
হ্যালো।
বাসু।
না আমি অনি বলছি।
শোন সব ব্যবস্থা পাকা, শুয়োরের বাচ্চা ম্যাডামের সঙ্গে বসে জমিয়ে গল্প করছে।
ঠিক আছে। তুই ডিস্টার্ব করিস না। ওদের গল্প করতে দে। পরলে শোনার চেষ্টা কর। আমার ফোনে রিং কর আমি রেকর্ডিং করবো। মাথায় রাখবি এই কাজ যে করে সে খুব শেয়ানা ছেলে।
আচ্ছা।
বাসু আমার দিকে তাকালো, তোর মাথায় কতো চাপ। তুই চলিস কি করে।
চলতে হয় বাসু। না হলে চালাবো কি করে।
আমার তোর মাথাটা মাঝে মাঝে দেখতে ইচ্ছে করে। আমরা হলে এতোক্ষণে কোন অঘটন ঘটিয়ে দিতাম।
এই যে তুই কিছুক্ষণ আগে বললি হাতে নয় ভাতে মারবো।
বাসু মাথা নীচু করে হাসলো।
অনাদির ছেলেটা মুরি চা দিয়ে গেলো। দুজনে বসে বসে খেলাম। ভেতরে ভেতরে তোলপাড় চলছে। আমাকে মিত্রাকে নিয়ে কেচ্ছা, অন্য হাউস রসালো গল্প করবে। একদিন হয়তো উপন্যাসেও স্থান পাবো। ভাবতেই গাটা শিউরে উঠছে।
চিকনার ফোন।
বাসুকে দিলাম, ও ভয়েস মুডে দিয়ে রেকর্ডিং করছে।
............আপনার সঙ্গে অনির অনেক মিল আছে। মিত্রার গলা।
না না কি বলছেন আপনি। অনি আপনার হাউসের একজন স্টার রিপোর্টার। ওর সঙ্গে আমার তুলনা।
আচ্ছা অনির সঙ্গে আপনার পরিচয় কি ভাবে কাগজে কাজ করতে করতে।
না আমরা কলেজ লাইফ থেকে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত।
বাবা তার মানে প্রয় দশ বছর।
হবে।
অনিকি আপনার কাছে থাকে না অন্য কোথাও থেকে।
আমার কাছে থাকবে কেনো, ওর নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে।
আমি তো শুনলাম কলকাতয় ওর থাকার জায়গা নেই বলে আপনার বাড়িতে থাকে।
আপনি ভুল শুনেছেন।
সত্যি আপনাদের নিগূঢ় বন্ধুত্ব দেখলে হিংসে হয়।
কি করে দেখলেন।
মেলায় আসার পথে আপনাদের পেছন থেকে দেখলাম।
কলেজ লাইফেও আমাদের অনেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব আমাদের দেখে হিংসে করতো।
এখানকার সবাই কানা-ঘুসো করে আপনার সঙ্গে ওর একটা এ্যাফেয়ার আছে।
কারা বলে।
অনির বন্ধুরা।
আপনি বলছেন। না আর কেউ বলছে।
কেনো। অনাদি বাসু চিকনা কতজনের নাম বলবো।
হতেই পারে না। ওরা অনির খুব ভাল বন্ধু নার্সিংহোমে দেখলামতো।
আমি সেদিন ওর কাকার অপারেশনের দিন যেতে পারলাম না, খুব খারাপ লাগছে।
সেদিনতো আপনাকে দেখতে পাই নি।
আপনি নার্সিংহোমে এসেছিলেন।
আমি একা নয় অনির বড়মা ছোটমা......।
বাবা ওকানে গিয়ে এসব পাতিয়ে ফেলেছে।
পাতাবে কেনো। একজন আমার কাগজের এডিটরের স্ত্রী আরএকজন আমার কাগজের চিফ এডিটরের স্ত্রী।
অনি আসে নি ?
এসেছে। কোথায় ঘুরে বেরাচ্ছে। ও একটা ভবঘুরে।
পোষ মানাবার চেষ্টা করুন।
করছিতো পারছি কোথায়।
সত্যি ওর কোন রেসপনসিবিলিটি নেই। আপনার মতো একজন সেলিব্রিটিকে নিয়ে এরকম ছেলেখেলা করার।
কোথায় ও ছেলেখেলা করলো। আমিইতো এখানে আসতে চেয়েছি, ও না করেছিলো। তবু এলাম। সত্যি না এলে আমার অনেক কিছু অদেখা থেকে যেতো।
ফোনটা কেটে গেলো।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
আমার ফোনটা বেজে উঠলো, দেখলাম মিত্রার ফোন।
হ্যালো।
কিরে তুই কোথায়।
আমি শ্মশানে।
শ্মশানে মানে!
শ্মশানে।
আবার ওখানে গেছিস।
হ্যাঁ। জায়গাটা আমায় খুব টানেরে। তুই যেনো কাউকে বলিস না।
কি বলছিস তুই। এখুনি আসবি।
কেনো।
আমাকে একা একা ফেলে যেতে তোর লজ্জা করছে না।
কই তোকে একা ফেলে এলাম, নীপা আছে, ওর বন্ধুরা আছে, অনাদি বাসু চিকনা আর কতজনকে তোর চাই।
তোর গলাটা ভারি ভারি লাগছে কেন ?
ফাঁকে মাঠে বসে আছি কিনা একটু ঠান্ডা লেগেছে বোধ হয়।
তুই এখুনি আয়।
ফাংসন শেষ ?
আর একটু বাকি আছে।
ঠিক আছে আমি অনাদিকে বলে দিচ্ছি। তোকে সঙ্গ দেবে গিয়ে।
তোর এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ হলো।
কার সঙ্গে।
দিবাকর। দিবাকর মন্ডল।
কোথায় আলাপ হলো। এইতো আমার পাশে বসে আছে।
তাই।
দে ওকে।
দিচ্ছি।
হ্যালো।
বল।
তুই এখন কোথায়।
পুরীকুন্ডী শ্মশানে।
মিথ্যে কথা বলছিস।
তুই চলে আয়।
কোথায় ?
আমি যেখানকার কথা বললাম।
আমার এতো শখ নেই।
তাহলে আর সত্য মিথ্যার যাচাই করে লাভ।
আমি তোর মতো পাগল নই।
তুই পাগল নয়। শেয়ানা।
কেনো একথা বলছিস।
তুই সেদিন বললি তোর কাজ আছে তাই নার্সিং হোমে যেতে পারবি না।
সত্যি তুই বিশ্বাস কর অনি, একটা কাজ পরে গেছিল।
ইন্টারভিউ কেমন হলো।
তোকে কে বললো।
সাংবাদিকের কাজ খবর সংগ্রহ করা। আমি নিশ্চই মিথ্যে বলি নি।
না। এটা তুই সত্যি কথা বলেছিস।
কোন কাগজে ইন্টারভিউ দিলি।
এটাও কি জেনে ফেলেছিস।
না। জানতে পারি নি। দেখ সত্যি কথা বললাম।
মেলায় কখন আসছিস। তোর মিত্রাদেবিতো তোকে দেখার জন্য পাগল।
ওটা বড়লোকেদের খেয়াল।
কি বলছিস।
কেন বিশ্বাস হচ্ছে না।
একেবারে না।
তুইতো পাশে বসে আছিস, জিজ্ঞাসা কর।
এতটা ধৃষ্টতা দেখাতে পারবো না।
আমাদের কাগজে কার কাছে ইন্টারভিউ দিয়ে এলি।
কি পাগলের মতো বকছিস।
আরে আমিতো বদ্ধ পাগল।
সেটাই মনে হচ্ছে।
কেনো এটাও কি মিথ্যে বললাম।
পুরোটা।
মিত্রাকে ধর একটা হিল্লে হয়ে যাবে।
বলেছি।
বাঃ এইতো করিতকর্মা ছেলে। মেলায় থাক। আমি আসছি।
কতোক্ষণের মধ্যে আসবি।
এখান থেকে যেতে ঘন্টা খানেক তো লাগবে।
নারে আমি তাড়াতাড়ি ফিরে যাব। কাল সকালে একবার কলকাতা যেতে হবে।
হাসতে হাসতে বললাম, জয়েনিং।
বোকা বোকা কথা বলিস না।
ফোনটা কেটে দিলাম। বাসু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রেকর্ডিংটা সেভ করেই অনাদিকে ফোন করলাম। অনাদি ধরেই বললো কি হয়েছে বল।
তুই কোথায় ?
কাজ গোছাছি।
মানে ?
মেলার চারিদিকে নজরদারি বারালাম।
ঠিক আছে। চিকনা কোথায় ?
ও মেলার বাইরে আছে।
আচ্ছা। শোন তুই একবার মিত্রার কাছে যা, ওখানে দিবাকর আছে।
ওর পেছনে পাশে চার পাঁচজন আছে।
তুই গিয়ে মিত্রার সঙ্গে বোস ওর সঙ্গে খেজুরে গল্প কর। আমার সম্বন্ধে যাতা বল। কালকের শ্মশানের গল্প কর। আমি দিবাকরকে এইমাত্র শ্মশানের গল্প দিয়েছি। ওর মুখটা লক্ষ্য রাখবি তাহলে সব ধরতে পারবি। ও একঘন্টার মধ্যে মেলা থেকে বেরিয়ে যাবে বলছে। ওকে যে ভাবেই হোক তুলে আনবি আমার কাছে। মিত্রা যেন একটুও বুঝতে না পারে।
ঠিক আছে। তুই পাঁপড় ভাজা জিলিপি খাবি।
খাব। মিত্রার জন্য নিয়ে যা। চিকনা কোথায় এখন ?
বললাম তো মেলার বাইরেটা সামলাচ্ছে।
ওর ফোন বন্ধ, মনে হয় ব্যাটারি নেই।
ঠিক আছে দেখছি।
বাসু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তোকে কত চিন্তা করতে হয়। এখন মনে হচ্ছে তোর প্রেমকরা উচিত, বিয়ে করা উচিত নয়।
হেসে ফেললাম। কেনো।
বিয়ে করলে বউকে সময় দিবি কখন।
তোর বউ মেলায় এসেছে।
এসেছে।
দেখালি নাতো।
সময় পেলাম কোথায়। যা ঝড় চলছে।
মিত্রার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে পারতিস এক ফাঁকে।
গেছিলাম তখন। আলাপ করিয়ে দিয়েছি।
ভাল করেছিস।
ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রার ফোন।
এখন এলি না।
আসছি। এতটা পথ হেঁটে যেতে হবেতো।
অনাদি পাঁপড় আর জিলিপি নিয়ে এসেছে।
খা।
তুই না এলে খাব না।
পাগলামো করিস না, ওরা মন খারাপ করবে।
কালকে তোর শ্মশানে যাবার গল্প শুনছি।
হাসলাম।
আচ্ছা এই মেলা ছেরে তোর শ্মশানে যেতে ভালো লাগলো।
মা-বাবার কথা ভেবে মনটা খুব খারাপ লাগলো। তাই চলে এলাম।
সরি আমি না জেনে তোকে হার্ট করলাম। তুই আয়।
ফোনটা কেটে দিলাম। কিছু ভাললাগছে না। চল কলেজ ঘরের বারান্দায় গিয়ে বসি। আমি বাসু ইকলেজ ঘরের বারান্দায় বসলাম। এখান থেকে মেলেটাকে দেখা যাচ্ছে কিন্তু কি হচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। চিকনার ফোন। সরি গুরু। আমি ব্যবস্থা করেছি। তবে মনে হয় কাজ হবে না। নীপাদের নাচ শেষ হলো। ম্যাডাম গ্রীনরুমে যাচ্ছে। দিবাকর হেসে হেসে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলছে, শুয়োরের বাচ্চা আবার হাত মেলাচ্ছে। অনাদি ওর কাঁধে হাত রেখেছে। ঠিক আছে বস আর মিনিট দশেক। রাখি।
বাসু আমার দিকে তাকলো।
কিরে আমি কি বাইরে গিয়ে বসবো।
বোস। আমি এখানে আছি জানাবি না। তুই অনাদি আগে ফেস কর। তারপর ওকে এখানে নিয়ে আয়। আমি মোবাইল অফ করছি।
আচ্ছা।
সিগারেটের প্যাকেটটা দিয়ে যা।
বাসু সিগারেটের প্যাকেটটা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। মাথা গরম করলে চলবে না। যা হবার তা হয়ে গেছে এখন কাজ উদ্ধার করতে হবে। হঠাত চেঁচামিচির শব্দ। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম। এই জ্যোতস্না রাতেও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। দিবাকরের কলার ধরে হির হির করে টেনে আনছে ওরা। হয়তো দু’চারঘা দিয়েও দিয়েছে। দিবাকারের সঙ্গে জোর ধস্তা-ধস্তি চলছে। চিকনার গলা শুনতে পেলাম। বেশি বাড়াবাড়ি করবি না। আমার পরিচয় তোকে নতুন করে দেবার নেই। কেটে টুকরো টুকরো করে মালঞ্চের জলে ভাসিয়ে দেবো। মাছের খাবার হয়ে যাবি।
আমার বুকটা দুরু দুরু করে উঠলো। একি বলছে চিকনা।
অনাদি ঠান্ডা মাথায় খালি বলছে। তোকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে চল। সব বুঝতে পারবি।
কাছাকাছি এসে অনাদি বাসুকে জিজ্ঞাসা করলো অনি কোথায়। আমি দেখতে পাচ্ছি বাসু অনাদিকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে সব বলছে। অনাদি ঘাড় নারছে। অনাদি একবার ইকলেজ বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো। তারপর ঘাড় নাড়লো।