Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কৃষ্ণকলি লেডিস পার্লার Written By Floran Red
#7
(#৩৭)নতুন দিন আসে।মাত্র একটা রাতেই আমার জীবনটা অনেকটা বদলে গেছে। রহস্যের পর রহস্য আমাকে মাকড়সার জালে ধরা পড়া শিকারের মতো বেঁধে ফেলেছে।অনেক প্রশ্নের কোনও উত্তর পাচ্ছিনা।তবে আমি এখনও বেচে আছি এটাই আশ্চর্য।যারা যারা আমার চরম অপমান করেছিল তারা কেউ বেচে নেই। অথচ আমি তো কাউকে কিছুই করিনি।তবে কে?সে আমার সব কথা জানে, আমার অসহয়তার কথাও।সে কি আমার ভালো চায়?কিন্তু কেন?দেবুর কাটা লিঙ্গ, ড্রাইভারের ডেডবডির পাশে দুধের প্যকেট, শেখের ছেড়া জিভ ... কি সাংঘাতিক। কোথায় যেন একটা সুত্র আছে।এমনসময় মিনুদি টিভিটা চালায়।সমস্ত চ্যানেলে একটাই খবর এবং তা আমাকে স্তম্ভিত বাকরুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট।মিনিস্টার আর নেই। আজ ভোরে বর্ধমান থেকে ফেরার পথে গাড়ী দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু। এটাই সেই খবরের নির্যাস।আমি টিভি অফ করে দিতে বলি মিনুদিকে।এটা কেবল দুর্ঘটনা, নাকি আবার খুন?না না, এ নিছক দুর্ঘটনা নয়।সাংঘাতিক কোনও রহস্য আছে কোনও এর ভিতরে। কে মারল মিনিস্টারটাকে?আচ্ছা মিনিস্টার যে বর্ধমান যাচ্ছে এটা মিতু জানত। তবে কি সেই সবাইকে মারছে।সর্বনাশ!!! তাহলে তো সে আমাকেও খুন করবে। নাকি আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে সব।কিন্তু আমি কি করব। কাকে জানাবো এই কথাগুলো। কে বিশ্বাস করবে আমায়।কোথায় বিচার পাবো আমি। পুলিশে তো আর যাওয়া যাবেনা। তাহলে? তাহলে?নাহ, আমি আর ভাবতে পারছিনা কিছু।এত তাড়াতাড়ি ঘটে যাছে ঘটনাগুলো সিনেমা মনে হচ্ছে।এমন সময় আবার ফোনটা বেজে ওঠে।
(#৩৮)ফোনটা ছিল মিতুর।সে আমাকে হুমকির বন্যা বইয়ে দিল। বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা- আমার সাথে কে কে আছে ও জানতে চায়। কে খুনগুলো করছে জানতে চায় সেটা।আমি যত বলি কিছু জানিনা কিছুতেই সে বিশ্বাস করবেনা।আমাকে এক দিন সময় দেয়, এর মধ্যে যদি সব কিছু না বলি আমাকে সে জ্যান্ত ছাড়বে না।আমি রেখে দি ফোনটা।আমার আর কোনও উপায় নেই। মেয়েকে নিয়ে পালাতেই হবে যে করে। আমার এক মাসী থাকে মালদায়, যদি কদিন ওখানে থাকতে পারি।চটপট ব্যাগ গোছাই। যা যা টাকা পয়সা আছে সব সঙ্গে নি।সন্ধ্যে নামতেই প্রথমে মিনুদিকে আমার একটা শাড়ি পরিয়ে, হাতে ব্যাগ ধরিয়ে বাজারের দিকে যেতে বলি। আমি জানি বাড়ীর সামনে গোপন পাহারা আছে। এই একটা উপায় হতে পারে।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে, আমি মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।সেয়ালদা স্টেশনে সন্ধ্যের দিকে মালদার একটা ট্রেন আছে, ওটা চড়াই উদ্দেশ্য।লম্বা লাইন পড়েছে। আমি টিকিট কাটতে দাড়িয়ে পড়ি। মেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে।রিজার্ভেশন না করে জেনারালেই টিকিট কাটি।এবার পাশ ফিরে মেয়ের হাত ধরতে গিয়ে দেখি ও নেই।আমি এদিক ওদিক দেখছি, পাশে একটা লোক বলে ওঠে ওই যে আপনার মেয়ে একজনের সাথে চলে গেল। লোকটা আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে সরে পড়ে।দেখি, লেখা আছে স্টেশনের বাইরে পারকিংএ একটা সাদা বোলেরো দাঁড়িয়ে আছে ওটাতে উঠতে।আমি পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে ওখানে যাই।স্টিয়ারিং-এ মিতু, মেয়েও আছে ওর পাশে। কিন্তু ও ঘুমাচ্ছে কেন? হায় হায় কি হয়েছে মেয়ের?আমাকে গাড়ীতে উঠতে বলে সে।আমি আদেশ পালন করি।কোলে নিই মেয়েকে।কিন্তু একি, মেয়ে কথা বলছে না।আমি বার বার ডাকি।এদিকে মিতু গাড়ী চালাচ্ছে।কি হয়েছে আমার মেয়ের? কি করেছে ওকে?"বলুন বলুন আমার মেয়ে বেচে আছে তো?""কিছু না, একটা ওষুধ দিয়েছি।" মিতু বলে।"তুই সব বলে দিলেই ওকে ঠিক করে দেব।""আপনি আগে ওকে ঠিক করুন... দ্য়া করুন আমাকে।""খুনগুলো কে করছে?""আমি খুন করিনি বিশ্বাস করুন।""সে আমি জানি তুই করিসনি। আমি জানতে চাইছি খুনগুলো কে করছে?""আমি জানিনা।""খুনগুলো কে করছে?" আবার ঠাণ্ডা গলায় বলে মিতু।আমি চেচিয়ে উঠি... "সত্যি বলছি আমি কিছু জানিনা। আমি কিছু জানিনা।"আর কিছু না বলে গাড়ী চালাতে থাকে ও।"আমার মেয়েকে ছেড়ে দিন, আমায় যা করার করুন। বাচ্চাটা কি দোষ করেছে?"মিতু নিরুত্তর।সেকেন্ড হুগলী সেতু টপকে গাড়ী চলতে থাকে। আরো অনেকটা চলার পর একটা নির্জন জায়গায় গাড়ী থামে। একটু দূরে রেললাইন।মিতু মেয়েকে কোলে নিয়ে যেতে লাগে লাইনের দিকে।আমি পিছন পিছন ছুটি। "একি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? প্লিস প্লিস আমাকে যা করার করুন মেয়েটাকে ছেড়ে দিন, দোহাই আপনার।"কিছু বলেনা মিতু।এবার রেললাইনে শুইয়ে দেয় মেয়েকে।বলে, "আর একটু পরে এখান দিয়ে একটা মেলট্রেন যাবে। এই তোর শেষ সুযোগ, যদি সত্যি না বলিস তোর মেয়ের কিন্তু...."আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি। আমি সত্যি কিছু জানিনা।আমি দূর থেকে দেখতে পাই ট্রেনের আলো।পাগলের মতো ছুটে যেতে চাই মেয়ের কাছে, মিতু আমার হাত ধরে টেনে রাখে। "খুনগুলো কে করছে????""ওকে ছেড়ে দিন, আমি কিছু জানিনা... না না আমি মেরেছি আমি আমি.... আমি সবাইকে মেরেছি, মেয়েকে বাঁচান....."যমদূতের মত ট্রেনটা চলে আসে কাছে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি আমি। সারা জগত তোলপাড় করে একটা দলা পাকানো কষ্ট আমাকে গিলে নিতে আসছে। সব কিছু অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।
(#৩৯)এরপরে যা ঘটনা ঘটে তার কোনও ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে।একটা প্রচন্ড শক্তি, ধাক্কা আমি ছিটকে পড়ি দূরে। চোখে অন্ধকার দেখি আমি। মনে হয় আমি কোন অতলে তলিয়ে যাচ্ছি।ট্রেন যায় লাইনের উপর দিয়ে। একটা তীব্র আর্তনাদ। জ্ঞান হারাই আমি।কয়েক মুহূর্ত নাকি অনেকক্ষণ?? জানিনা।একটা আবছা অবয়ব, মেয়েকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আমার সামনে। আস্তে করে মেয়েকে শুইয়ে দেয়, মেয়ে হালকা হালকা নড়ছে মনে হচ্ছে। মানে মেয়ে বেচে আছে.....আমি কি বেচে আছি??!! না কি... সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।হালকা করে একটা হাত বোলায় আমার কপালে, হিমশীতল সেই স্পর্শ।যেন কোণও দেবদূত... চোখ মেলে দেখার চেষ্টা করি তাকে।আলো আঁধারী ধোয়াশায় মুখটা আবছা ফুটে ওঠে।এতো বনি.....না না একি সুতনু???আবার জ্ঞান হারাই আমি।(#৪০)এরপর বছর ঘুরে গেছে।এই ঘটনার কোনও ব্যখ্যা আমি আজও পাইনি। কি সেই রহস্য। না কি মায়ার খেলা।সেদিন রাতে মেয়ের ডাকে জ্ঞান আসে আমার। আমরা দুজনে হাটতে হাটতে সামনের এক প্লাটফর্মে যাই। মালদা যাইনি, আমরা বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। পরের দিন টিভিতে দেখি বলছে, রেলে কাটা পড়ে রহস্যজনক ভাবে মিতুর মৃত্যুর খবর। না এবার আর ভয় নয়, পেয়েছিলাম চরম শান্তি।কোনও অজ্ঞাত কারনে এই কেসটা চাপা পড়ে গেছে। আমাকেও কেউ কোনোদিন জিজ্ঞাসাবাদ করেনি কেউ। এটাও আমার কাছে রহস্য।তবে আমি নিশ্চিত অন্তত একজন আছে যে আমাদের রক্ষাকর্তা।সেদিন রাতে কাকে দেখেছিলাম, সেকি বনি না কি আমার বর?সুতনুকে আমি কি ভাবে দেখলাম? এ কি সুতনুর বিদেহী আত্মা, যে তার প্রিয়জনকে বাঁচাবার জন্য ফিরে আসে বারবার, প্রতিশোধ নেয়। কিন্তু এই বিজ্ঞানের যুগে এ কি করে সম্ভব? তাহলে কি ও বেঁচে। কিন্তু এ কি করে হয়। দলা পাকানো ডেডবডি-র আঙ্গুলে ছিল আমাদের বিয়ের আংটি। সুতনু কোনোদিন ওটা খুলে রাখেনি। ও তো চলে গেছে চিরতরে। তবে?উত্তর নেই।আমি বনির অনেক খোঁজ করেছি, পাইনি। জানিনা, বনি কে? কোথা থেকে এসেছিল। সেদিন রাতে কেন ওকে দেখেছিলাম বলে মনে হয়েছিল। ও কোথায় হারিয়ে গেল।কেন?কেন?এরও কোনও উত্তর নেই।আর উত্তরের খোঁজও করতেও চাইনা আমি।এখন মেয়েই আমার বেচে থাকার তাগিদ, একমাত্র স্বপ্ন। পরম মমতায় মেয়েকে নিয়ে বেচে আছি আমি, ওকে অনেক অনেক বড় করতে হবে।এই হল আমার, বনলতা মিত্র'র একান্ত নিজস্ব এক কাহিনী...বিশ্বাস করুন বা না করুন, ভালো বা মন্দ কেমন লাগলো জানার অপেক্ষায় রইলাম.....[সমাপ্ত]
পুনশ্চঃ আমাদের বাড়ির বাথরুমের পিছনে একটা পুরানো টিভির বাক্সে, খারাপ হওয়া এক টিভি সেটের মধ্যে এক বুধবারের দুপুরে অনেক অনেক টাকা খুঁজে পাই আমি। এর জন্যই বোধহয় খুন হতে হয়েছিল আমার বরটাকে। আমি সুতনুকে যা চিনেছি এতদিনে, এ টাকা পাপের নয়, হতে পারেনা। আমি ওই টাকা দিয়ে আমাদের ওখানে কিছু গরীব দুঃস্থ ছেলেমেয়ের পড়াশুনার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। দিব্যি সময় কাটে ওদের সাথে। আর বাকী সময়টা? কেন ভুলে গেলেন নাকি কৃষ্ণকলি লেডিস পার্লারের কথা। রমরমিয়ে চলছে, একটা নতুন জেন্টস সেকশানও খুলবো শীঘ্রই। পারলে একবার ঘুরে যাবেন। সবার আমন্ত্রণ রইলো
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কৃষ্ণকলি লেডিস পার্লার Written By Floran Red - by pagolsona - 09-08-2019, 01:28 PM



Users browsing this thread: