06-08-2019, 11:38 PM
পার্টঃঃ২৬
তোর জন্য লাইট পাবো কোথায়।
অনাদিকে বল। ওতো পঞ্চায়েত।
শেষের কথাটা বাসুর কানে গেলো। বাসু ঘুরে একবার হাসলো। ম্যাডাম দেখছেন তো আমরা কিভাবে বেঁচে আছি।
দেখছি।
এই অন্ধকারে অনি কালকে একা শ্মশানে ছিলো।
ওরে বাবা।
কিহলো।
বাসু আবার থমকে দাঁড়ালো।
দেখ পায়ে কি ঢুকেছে।
আমি আবার ওর পায়ের কাছে বোসলাম। টর্চ জ্বালালাম। চোর কাঁটা। শাড়ির পারটা চোর কাঁটায় ভরে গেছে। ওকে কিছু বললাম না চল এসেগেছি মেলায় গিয়ে ব্যবস্থা করছি।
কি বলবিতো।
উঃ পা ঝারিস না। এগুলো বার করতে সময় লাগবে।
বলনা কি আছে।
চোর কাঁটা।
বাসু ফিক করে হাসলো। এই অন্ধকারেও মিত্রার মুখটা দেখতে পেলাম, পাকা আপেলের মতো রং।
মেলার মুখে ওরা সবাই দাঁড়িয়ে। আমরা যেতেই চিকনা বললো, নীপার হুকুম, ম্যাডামকে গ্রিনরুমে নিয়ে যেতে হবে।
আমি বললাম, তুই নিয়ে যা।
তুইও চল। মিত্রা বললো।
আমি ওই মহিলা মহলে গিয়ে কি করবো। তুই সেলিব্রিটি দেখনা ওখানে গিয়ে মালুম পাবি।
মিত্রা এমন ভাবে আমার দিকে তাকালো বাসু চিকনা পর্যন্ত হেসে ফেললো।
ঠিক আছে চল, হ্যাঁরে চিকনা আর কে কে আছে।
ওই সব মিউজিসিয়ান মেকআপ ম্যান আর পলা আছে।
ও কি করছে ওখানে।
ওইইতো সব।
বাবাঃ।
সাজানো-গোজানো ড্রেস পরানো।
কসটিউম ডিজাইনার। মিত্রা বললো।
ছাগল। দর্জি থেকে কসটিউম ডিজাইনার!
সবাই হেসে ফেললো। পলাকে একটু চাটতে হবে।
তুই পারবি অনি, আমরা বললে আজ সব্বনাশ। চিকনা বললো।
কেনো।
নীপা দিদিমনি।
মিত্রার ক্যামেরার ব্যাগ কোথায়।
ওখানে। নীপার জিম্মায়।
কয়েকটা পাঁপড় আর জিলিপি নিয়ে আয় না।
চল সব ব্যবস্থা আছে।
তুই কি রাক্ষস। মিত্রা বললো।
কেনো।
এইতো একপেট ভাত গিলে এলি।
ভাত নয় পান্তা। এতোটা যে হাঁটালি।
আমি হাঁটালাম কোথায়, তুইতো হাঁটালি।
তুই চিকনার বাইকের পেছনে বসলেই হাঁটতে হতো না। তার ওপর উপরি বোনাস, দুবার পা ধরালি।
বুবুন খুব খারপ হয়ে যাবে বলছি।
আমাদের দুজনের কথা-বার্তায় চিকনা বাসু হাঁসতে হাঁসতে প্রায় মাটিতে গড়িয়ে পরে।
স্টেজের পাশে গ্রিনরুম। চিকনা পর্দা সরিয়ে নীপা বলে চেঁচাতেই নীপা ছুটে এলো। মিত্রাকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেলো। আরে থাম থাম, শাড়িতে পা জড়িয়ে উল্টে পরে যাবো। কে কার কথা শোনে। নীপা আজ হাতের চাঁদ পেয়েছে। আমি আমের আঁটি, আমে দুধে মিশে গেছে। আঁটি গড়াগড়ি খাচ্ছে। কি আর কোরবো। পকেট থেকে সিগারেট প্যাকেট বার করে চিকনাকে একটা দিলাম। বাসুকে একটা দিলাম। নিজে একটা ধরালাম। একটা ছেলে একটা স্প্রাইটের বোতল নিয়ে এসে হাজির। বাসুর দিকে তাকালাম, এটাকি।
ম্যাডামের জন্য।
তোরকি মাথাখারাপ।
কেনো।
ওকি একা খাবে নাকি।
তাহলে ।
এখুনি হুকুম করবে। আরনেই, ওদের জন্য নিয়ে আয়।
তাহলে।
আগে স্টক দেখ কত আছে। তারপর পাঠাবি।
ম্যাডাম বললো ঠান্ডা খাবে।
এমনি সাদা জল নিয়ে আয়।
তুই শালা একদম.......। বাসু বললো।
চিকনা খিল খিল করে হেসে ফেললো। বেশ জমেছে মাইরি।
বাসু অগত্যা ছেলেটিকে বললো, কটা বোতল আছে।
বড় বোতল গোটা কুড়ি হবে।
ঠান্ডা হবেতো।
বরফ দেওয়া আছে।
ছোটবোতল কি আছেরে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
থামস আপ, স্প্রাইট, পেপসি......।
একটা স্প্রাইটের ছোট বোতল নিয়ে আয়। খুলবি না।
ছেলেটি চলে গেলো।
এখান থেকেই বুঝতে পারছি মিত্রার প্রাণ ওষ্ঠাগত। সত্যি কথা বলতে গেলে আজ ও-ই এই মেলার সেলিব্রিটি। অনেক বড় বড় আর্টিস্ট আমাদের কাগজে স্থান পাওয়ার জন্য সম্পাদককে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যায়। আর আজ ও যেচে এই অজ পাড়াগাঁয়ের একটা মেলায় এসেছে। একটা ফোন করলেই কালকের কাগজের ফ্রন্ট পেজে একটা কলম লেখা হয়ে যাবে। কিন্ত কেউ জানেইনা ও এখন এখানে। আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলাম। ও বেশ সামলাচ্ছে, কেউ হাত মেলাচ্ছে ওর সঙ্গে, কেউ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছে। কেউ জড়িয়ে ধরছে। নীপা খুশিতে ডগমগ, ওর মাইলেজ আজ অনেক বেরেগেছে।
বাসুদা নিয়ে এসেছি। দেখলাম আর একটা ছেলে।
তুই।
ও গিয়ে বললো, অনেক লাগবে তাই জানতে এলাম।
ভাল করেছিস।
যা ওই ভদ্রমহিলাকে গিয়ে দিয়ে আয়। বাসু দেখিয়ে দিল।
ছেলেটি ভির ঠেলে ওর কাছে পৌঁছতেই মিত্রা গেটের দিকে তাকালো। বুঝলাম ও কিছু বলছে ওদের, তারপর এগিয়ে এলো।
বাসু, ঠেলাটা বোঝ এবার।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
মিত্রা এদিকেই এগিয়ে আসছে, আমি মিটি মিটি হাসছি। কেছে এসেই, ওর প্রথম কথা, তোর মতো বে-আক্কেলে ছেলে আর দেখি নি।
কেনো ? আমি কি দোষ করলাম!
আমি কি একাএকা খাবো।
এখানে তোর জন্য অনেক কষ্টে একটা বোতল জোগাড় করা হয়েছে।
সবার জন্য পারলে আন নাহলে আমার চাই না।
কি বাসুবাবু, পালস বিটটা দেখেছো।
মিত্রা আমার দিকে কটকট করে তাকিয়ে আছে।
ঠিক আছে তুইখা, ওদের জন্য আনছে।
না। সবার জন্য আনুক তারপর খাবো।
তাহলে আমি খাই। বলে ছেলেটির হাত থেক বোতলটা নিলাম, মিত্রা ছোঁ মেরে আমার কাছ থেকে বোতলটা ছিনিয়ে নিল, তুইও খাবি না। এটা চিকনাকে দে।
চিকনা তুইখা। তোর ভাগ্য ভালো। আমার কোমরে চিমটি পরলো, আমি উ করে উঠলাম।
ছেলেটিকে বললাম, কটা বোতল আছেরে।
গোটা পঞ্চাশ হবে।
সব গুলো নিয়ে আয়। ঠান্ডাতো।
বরফের পেটিতে আছে।
যা বাবা, বাঁচা।
চিকনা, বোতলটা শেষ করে আমাদের টিমটাকে একটু খবর দে।
চিকনা হাসছে।
পলাকে দেখতে পাচ্ছিনা।
ভেতরে আছে।
মিত্রাকে মনেহয় দেখে নি।
লাইটিং নিয়ে বিজি।
তারপর ম্যাডাম, বলুন কেমন বুঝছেন।
জানিস বুবুন সত্যি এখানে না এলে খুব মিশ করতাম।
একটা ছোট্ট থ্যাঙ্কস যদি পোরাকপালে জুটত।
একটি থাপ্পর। দেখছো বাসু তোমার বন্ধুকে, খালি টিজ করবে।
এটা টিজ হলো।
তাহলে কি হলো, প্রেমহলো।
চিকনা হাসতে গিয়ে বিষম খেলো। মিত্রা ওর দিকে এগিয়ে গেলো। বাসু হাসছে। চিকনা মিত্রাকে খক খক করে কাশতে কাশতে কাছে আসতে বাধা দিচ্ছে। ইশারায় বলছে কিছু হয় নি। মিত্রা আমার দিকে তাকালো। ব্যাপারটা এরকম, তোর জন্য দেখ কি হচ্ছে।
চিকনার বিষম থামলো। ছেলেটি একটা আইস্ক্রীমের গাড়ি নিয়ে এসে হাজির।
এটা কিরে।
এর মধ্যেই আছে।
ভাল করেছিস। আমি খাবো না, চিকনা আমার জন্য পাঁপড় আর জিলিপির ব্যবস্থা কর।
আমিও খাবো। মিত্রা বললো।
এটাও কি সবার জন্য।
হলে ভালো হয়।
ঠিক আছে আগে জলখা।
ওদের ডাকি।
ডাক।
মিত্রা নীপা বলে ডাকতেই নীপা ছুটে এলো।
মিত্রা বললো, ওদের ডাক কোলড্রিংকস খাবে।
নীপা আমার দিকে তাকালো, সেতো অনেক লোক।
তোরা যারা পার্টিসিপেন্ট তাদের ডাক।
সেওতো তিরিশ জনের ওপর।
তোমায় পাকামো করতে হবে না, মিত্রাদি স্পনসর করছেন, পারলে মেলার সবাইকে খাওয়াতে পারেন।
অনিদা খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
তুই ওর কথায় কান দিস না, ও ওই রকম।
নীপা ছুটে ভেতরে চলে গেলো।
মেয়েগুলোকে ছুটে আসতে দেখে পলা এদিকে তাকালো, আমাদের দেখতে পেয়েই পরি কি মরি করে ছুটে এলো। কি গুরু কতোক্ষণ।
বাসু বললো অনেকক্ষণ। তুই কাজে ব্যস্ত।
আরে বলিসনা মেয়ে গুলো জালিয়ে পুরিয়ে মারলো।
কি বললে পলাদা। নীপা চেঁচালো।
একবারে কথা বলবি না। দেবো মুখে কালো ডিমার মেরে বুঝতে পারবি। তারপর এই ম্যাডাম এসে সব গুবলেট করে দিলো।
বাসু হাসছে। মিত্রা হাসছে। নীপা হাসছে।
হাসছিস কেনো।
চিকনা একটা ঠান্ডার বোতল এনে পলাকে দিল।
তুই খাওয়াচ্ছিস। আমার দিকে তাকিয়ে।
না ম্যাডাম। চিকনা বললো। আয় এদিকে।
পলা গেলো। চিকনা পলার কানে কানে কি কথা বললো।
পলা ছুটে এসে মিত্রার কাছে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে গেলো। ম্যাডাম আমায় ক্ষমা করেন আমি বুঝতে পারি নি। এখুনি কি ভুল করছিলাম।
মিত্রা হাসছে।
নীপাটা কি ছাগল বলতো। আগে বলবে তো।
তুমি বলার সময় দিয়েছো।
ওরা ঠান্ডা খাচ্ছে আর কথা বলছে।
ফোনটা বেজে উঠলো।
পকেট থেকে বার করতেই দেখি সন্দীপের ফোন। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি আসছি দাঁড়া। ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম। বাসুও আমার পেছন পেছন বেরিয়ে এলো। তুই রাখ আমি তোকে রিংব্যাক করছি।
মেলা থেকে একটু দূরে চলে এলাম, একটা কলোরোল কানে ভেসে আসছে, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, চারিদিকে আলোর চাদর বিছিয়ে রেখেছে। কে বলে অন্ধকার। খেতের আল ধরে সোজা চলে এলাম টেস্ট রিলিফের ছোটো বাঁধে। বাসু আছে। জায়গাটা মেলা থেকে প্রায় তিনশো মিটার দূরে। এখানে মেলার আওয়াজ ম্রিয়মান। বাসুকে বললাম, দেখতো আমার ফোনে রেকর্ডিংটা কোথায় আছে। বাসু বুঝতে পারলো, কিছু একটা হয়েছে। বললো দে দেখিয়ে দিচ্ছি। আমি ভয়েস মুড আর রেকর্ডিং মুড দেখে নিলাম। সন্দীপকে ফোন করলাম।
হ্যাঁ বল ।
তুই এখন কোথায়।
আমার বাড়িতে।
মেলায় ঘুরে মজমা নিচ্ছ।
তুই জানলি কিকরে।
এখানে ব্রড কাস্টিং হচ্ছে।
তাই নাকি।
তাহলে বলছি কিকরে তোকে। ম্যাডাম তোর সঙ্গে আছে। তুই একটা প্লেবয় ওদের ফ্যামিলির দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছিস।
ওদের ফ্যামিলিতে প্রবলেম আছে এখবর জানাজানি হল কি করে।
সুনিতদা রটাচ্ছে।
বাঃ ইনফর্মারটা বেশ গুছিয়ে খবর পাঠাচ্ছে বল।
হ্যাঁ। করিতকর্মা ছেলে। ওকে নাকি চিফ রিফোর্টার বানাবে সুনিতদা।
তাই।
অফিসের খবর বল।
আজ সনাতন বাবুর ঘরে তুমুল হট্টোগোল হয়েছে।
কারা করেছে।
চম্পকদা লিড করেছে। সুনিতদা আর ওর চেলুয়া গুলো ছিল।
পুরনো কারা কারা আছে।
এখন বোঝা মুস্কিল। সমুদ্রের ঢেউ-এর মতো সকলে সুনিতদার শিবিরে ভিরে গেছে।
তোর জন্য লাইট পাবো কোথায়।
অনাদিকে বল। ওতো পঞ্চায়েত।
শেষের কথাটা বাসুর কানে গেলো। বাসু ঘুরে একবার হাসলো। ম্যাডাম দেখছেন তো আমরা কিভাবে বেঁচে আছি।
দেখছি।
এই অন্ধকারে অনি কালকে একা শ্মশানে ছিলো।
ওরে বাবা।
কিহলো।
বাসু আবার থমকে দাঁড়ালো।
দেখ পায়ে কি ঢুকেছে।
আমি আবার ওর পায়ের কাছে বোসলাম। টর্চ জ্বালালাম। চোর কাঁটা। শাড়ির পারটা চোর কাঁটায় ভরে গেছে। ওকে কিছু বললাম না চল এসেগেছি মেলায় গিয়ে ব্যবস্থা করছি।
কি বলবিতো।
উঃ পা ঝারিস না। এগুলো বার করতে সময় লাগবে।
বলনা কি আছে।
চোর কাঁটা।
বাসু ফিক করে হাসলো। এই অন্ধকারেও মিত্রার মুখটা দেখতে পেলাম, পাকা আপেলের মতো রং।
মেলার মুখে ওরা সবাই দাঁড়িয়ে। আমরা যেতেই চিকনা বললো, নীপার হুকুম, ম্যাডামকে গ্রিনরুমে নিয়ে যেতে হবে।
আমি বললাম, তুই নিয়ে যা।
তুইও চল। মিত্রা বললো।
আমি ওই মহিলা মহলে গিয়ে কি করবো। তুই সেলিব্রিটি দেখনা ওখানে গিয়ে মালুম পাবি।
মিত্রা এমন ভাবে আমার দিকে তাকালো বাসু চিকনা পর্যন্ত হেসে ফেললো।
ঠিক আছে চল, হ্যাঁরে চিকনা আর কে কে আছে।
ওই সব মিউজিসিয়ান মেকআপ ম্যান আর পলা আছে।
ও কি করছে ওখানে।
ওইইতো সব।
বাবাঃ।
সাজানো-গোজানো ড্রেস পরানো।
কসটিউম ডিজাইনার। মিত্রা বললো।
ছাগল। দর্জি থেকে কসটিউম ডিজাইনার!
সবাই হেসে ফেললো। পলাকে একটু চাটতে হবে।
তুই পারবি অনি, আমরা বললে আজ সব্বনাশ। চিকনা বললো।
কেনো।
নীপা দিদিমনি।
মিত্রার ক্যামেরার ব্যাগ কোথায়।
ওখানে। নীপার জিম্মায়।
কয়েকটা পাঁপড় আর জিলিপি নিয়ে আয় না।
চল সব ব্যবস্থা আছে।
তুই কি রাক্ষস। মিত্রা বললো।
কেনো।
এইতো একপেট ভাত গিলে এলি।
ভাত নয় পান্তা। এতোটা যে হাঁটালি।
আমি হাঁটালাম কোথায়, তুইতো হাঁটালি।
তুই চিকনার বাইকের পেছনে বসলেই হাঁটতে হতো না। তার ওপর উপরি বোনাস, দুবার পা ধরালি।
বুবুন খুব খারপ হয়ে যাবে বলছি।
আমাদের দুজনের কথা-বার্তায় চিকনা বাসু হাঁসতে হাঁসতে প্রায় মাটিতে গড়িয়ে পরে।
স্টেজের পাশে গ্রিনরুম। চিকনা পর্দা সরিয়ে নীপা বলে চেঁচাতেই নীপা ছুটে এলো। মিত্রাকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেলো। আরে থাম থাম, শাড়িতে পা জড়িয়ে উল্টে পরে যাবো। কে কার কথা শোনে। নীপা আজ হাতের চাঁদ পেয়েছে। আমি আমের আঁটি, আমে দুধে মিশে গেছে। আঁটি গড়াগড়ি খাচ্ছে। কি আর কোরবো। পকেট থেকে সিগারেট প্যাকেট বার করে চিকনাকে একটা দিলাম। বাসুকে একটা দিলাম। নিজে একটা ধরালাম। একটা ছেলে একটা স্প্রাইটের বোতল নিয়ে এসে হাজির। বাসুর দিকে তাকালাম, এটাকি।
ম্যাডামের জন্য।
তোরকি মাথাখারাপ।
কেনো।
ওকি একা খাবে নাকি।
তাহলে ।
এখুনি হুকুম করবে। আরনেই, ওদের জন্য নিয়ে আয়।
তাহলে।
আগে স্টক দেখ কত আছে। তারপর পাঠাবি।
ম্যাডাম বললো ঠান্ডা খাবে।
এমনি সাদা জল নিয়ে আয়।
তুই শালা একদম.......। বাসু বললো।
চিকনা খিল খিল করে হেসে ফেললো। বেশ জমেছে মাইরি।
বাসু অগত্যা ছেলেটিকে বললো, কটা বোতল আছে।
বড় বোতল গোটা কুড়ি হবে।
ঠান্ডা হবেতো।
বরফ দেওয়া আছে।
ছোটবোতল কি আছেরে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
থামস আপ, স্প্রাইট, পেপসি......।
একটা স্প্রাইটের ছোট বোতল নিয়ে আয়। খুলবি না।
ছেলেটি চলে গেলো।
এখান থেকেই বুঝতে পারছি মিত্রার প্রাণ ওষ্ঠাগত। সত্যি কথা বলতে গেলে আজ ও-ই এই মেলার সেলিব্রিটি। অনেক বড় বড় আর্টিস্ট আমাদের কাগজে স্থান পাওয়ার জন্য সম্পাদককে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যায়। আর আজ ও যেচে এই অজ পাড়াগাঁয়ের একটা মেলায় এসেছে। একটা ফোন করলেই কালকের কাগজের ফ্রন্ট পেজে একটা কলম লেখা হয়ে যাবে। কিন্ত কেউ জানেইনা ও এখন এখানে। আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলাম। ও বেশ সামলাচ্ছে, কেউ হাত মেলাচ্ছে ওর সঙ্গে, কেউ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছে। কেউ জড়িয়ে ধরছে। নীপা খুশিতে ডগমগ, ওর মাইলেজ আজ অনেক বেরেগেছে।
বাসুদা নিয়ে এসেছি। দেখলাম আর একটা ছেলে।
তুই।
ও গিয়ে বললো, অনেক লাগবে তাই জানতে এলাম।
ভাল করেছিস।
যা ওই ভদ্রমহিলাকে গিয়ে দিয়ে আয়। বাসু দেখিয়ে দিল।
ছেলেটি ভির ঠেলে ওর কাছে পৌঁছতেই মিত্রা গেটের দিকে তাকালো। বুঝলাম ও কিছু বলছে ওদের, তারপর এগিয়ে এলো।
বাসু, ঠেলাটা বোঝ এবার।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
মিত্রা এদিকেই এগিয়ে আসছে, আমি মিটি মিটি হাসছি। কেছে এসেই, ওর প্রথম কথা, তোর মতো বে-আক্কেলে ছেলে আর দেখি নি।
কেনো ? আমি কি দোষ করলাম!
আমি কি একাএকা খাবো।
এখানে তোর জন্য অনেক কষ্টে একটা বোতল জোগাড় করা হয়েছে।
সবার জন্য পারলে আন নাহলে আমার চাই না।
কি বাসুবাবু, পালস বিটটা দেখেছো।
মিত্রা আমার দিকে কটকট করে তাকিয়ে আছে।
ঠিক আছে তুইখা, ওদের জন্য আনছে।
না। সবার জন্য আনুক তারপর খাবো।
তাহলে আমি খাই। বলে ছেলেটির হাত থেক বোতলটা নিলাম, মিত্রা ছোঁ মেরে আমার কাছ থেকে বোতলটা ছিনিয়ে নিল, তুইও খাবি না। এটা চিকনাকে দে।
চিকনা তুইখা। তোর ভাগ্য ভালো। আমার কোমরে চিমটি পরলো, আমি উ করে উঠলাম।
ছেলেটিকে বললাম, কটা বোতল আছেরে।
গোটা পঞ্চাশ হবে।
সব গুলো নিয়ে আয়। ঠান্ডাতো।
বরফের পেটিতে আছে।
যা বাবা, বাঁচা।
চিকনা, বোতলটা শেষ করে আমাদের টিমটাকে একটু খবর দে।
চিকনা হাসছে।
পলাকে দেখতে পাচ্ছিনা।
ভেতরে আছে।
মিত্রাকে মনেহয় দেখে নি।
লাইটিং নিয়ে বিজি।
তারপর ম্যাডাম, বলুন কেমন বুঝছেন।
জানিস বুবুন সত্যি এখানে না এলে খুব মিশ করতাম।
একটা ছোট্ট থ্যাঙ্কস যদি পোরাকপালে জুটত।
একটি থাপ্পর। দেখছো বাসু তোমার বন্ধুকে, খালি টিজ করবে।
এটা টিজ হলো।
তাহলে কি হলো, প্রেমহলো।
চিকনা হাসতে গিয়ে বিষম খেলো। মিত্রা ওর দিকে এগিয়ে গেলো। বাসু হাসছে। চিকনা মিত্রাকে খক খক করে কাশতে কাশতে কাছে আসতে বাধা দিচ্ছে। ইশারায় বলছে কিছু হয় নি। মিত্রা আমার দিকে তাকালো। ব্যাপারটা এরকম, তোর জন্য দেখ কি হচ্ছে।
চিকনার বিষম থামলো। ছেলেটি একটা আইস্ক্রীমের গাড়ি নিয়ে এসে হাজির।
এটা কিরে।
এর মধ্যেই আছে।
ভাল করেছিস। আমি খাবো না, চিকনা আমার জন্য পাঁপড় আর জিলিপির ব্যবস্থা কর।
আমিও খাবো। মিত্রা বললো।
এটাও কি সবার জন্য।
হলে ভালো হয়।
ঠিক আছে আগে জলখা।
ওদের ডাকি।
ডাক।
মিত্রা নীপা বলে ডাকতেই নীপা ছুটে এলো।
মিত্রা বললো, ওদের ডাক কোলড্রিংকস খাবে।
নীপা আমার দিকে তাকালো, সেতো অনেক লোক।
তোরা যারা পার্টিসিপেন্ট তাদের ডাক।
সেওতো তিরিশ জনের ওপর।
তোমায় পাকামো করতে হবে না, মিত্রাদি স্পনসর করছেন, পারলে মেলার সবাইকে খাওয়াতে পারেন।
অনিদা খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
তুই ওর কথায় কান দিস না, ও ওই রকম।
নীপা ছুটে ভেতরে চলে গেলো।
মেয়েগুলোকে ছুটে আসতে দেখে পলা এদিকে তাকালো, আমাদের দেখতে পেয়েই পরি কি মরি করে ছুটে এলো। কি গুরু কতোক্ষণ।
বাসু বললো অনেকক্ষণ। তুই কাজে ব্যস্ত।
আরে বলিসনা মেয়ে গুলো জালিয়ে পুরিয়ে মারলো।
কি বললে পলাদা। নীপা চেঁচালো।
একবারে কথা বলবি না। দেবো মুখে কালো ডিমার মেরে বুঝতে পারবি। তারপর এই ম্যাডাম এসে সব গুবলেট করে দিলো।
বাসু হাসছে। মিত্রা হাসছে। নীপা হাসছে।
হাসছিস কেনো।
চিকনা একটা ঠান্ডার বোতল এনে পলাকে দিল।
তুই খাওয়াচ্ছিস। আমার দিকে তাকিয়ে।
না ম্যাডাম। চিকনা বললো। আয় এদিকে।
পলা গেলো। চিকনা পলার কানে কানে কি কথা বললো।
পলা ছুটে এসে মিত্রার কাছে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে গেলো। ম্যাডাম আমায় ক্ষমা করেন আমি বুঝতে পারি নি। এখুনি কি ভুল করছিলাম।
মিত্রা হাসছে।
নীপাটা কি ছাগল বলতো। আগে বলবে তো।
তুমি বলার সময় দিয়েছো।
ওরা ঠান্ডা খাচ্ছে আর কথা বলছে।
ফোনটা বেজে উঠলো।
পকেট থেকে বার করতেই দেখি সন্দীপের ফোন। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি আসছি দাঁড়া। ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম। বাসুও আমার পেছন পেছন বেরিয়ে এলো। তুই রাখ আমি তোকে রিংব্যাক করছি।
মেলা থেকে একটু দূরে চলে এলাম, একটা কলোরোল কানে ভেসে আসছে, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, চারিদিকে আলোর চাদর বিছিয়ে রেখেছে। কে বলে অন্ধকার। খেতের আল ধরে সোজা চলে এলাম টেস্ট রিলিফের ছোটো বাঁধে। বাসু আছে। জায়গাটা মেলা থেকে প্রায় তিনশো মিটার দূরে। এখানে মেলার আওয়াজ ম্রিয়মান। বাসুকে বললাম, দেখতো আমার ফোনে রেকর্ডিংটা কোথায় আছে। বাসু বুঝতে পারলো, কিছু একটা হয়েছে। বললো দে দেখিয়ে দিচ্ছি। আমি ভয়েস মুড আর রেকর্ডিং মুড দেখে নিলাম। সন্দীপকে ফোন করলাম।
হ্যাঁ বল ।
তুই এখন কোথায়।
আমার বাড়িতে।
মেলায় ঘুরে মজমা নিচ্ছ।
তুই জানলি কিকরে।
এখানে ব্রড কাস্টিং হচ্ছে।
তাই নাকি।
তাহলে বলছি কিকরে তোকে। ম্যাডাম তোর সঙ্গে আছে। তুই একটা প্লেবয় ওদের ফ্যামিলির দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছিস।
ওদের ফ্যামিলিতে প্রবলেম আছে এখবর জানাজানি হল কি করে।
সুনিতদা রটাচ্ছে।
বাঃ ইনফর্মারটা বেশ গুছিয়ে খবর পাঠাচ্ছে বল।
হ্যাঁ। করিতকর্মা ছেলে। ওকে নাকি চিফ রিফোর্টার বানাবে সুনিতদা।
তাই।
অফিসের খবর বল।
আজ সনাতন বাবুর ঘরে তুমুল হট্টোগোল হয়েছে।
কারা করেছে।
চম্পকদা লিড করেছে। সুনিতদা আর ওর চেলুয়া গুলো ছিল।
পুরনো কারা কারা আছে।
এখন বোঝা মুস্কিল। সমুদ্রের ঢেউ-এর মতো সকলে সুনিতদার শিবিরে ভিরে গেছে।