Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance স্বীকারোক্তি by Anangapal (Uncompleted)
#7
।। ৪ ।। কল্পনা




এমন অদ্ভুত পরিস্থিতিতে আগে কোনওদিন পড়িনি।


বৌভাতের অনুষ্ঠানে চারিদিকে আনন্দের ফোয়ারা ছুটছে। নতুন বৌদির প্রশংসায় গুরুজন স্থানীয়রা পঞ্চমুখ, স্নেহের বশে নয়তো নিতান্ত লৌকিকতার স্বার্থে। ছোটদেরও উৎসাহের অবধি নেই, একটা আস্ত অপরিচিত বাড়িময় দৌরাত্ম্য করে বেড়ানোর সুযোগ পেয়েছে, মারধর-বকুনির বালাই নেই, শাসন হলেও তাতে প্রশ্রয়ের ভাগটাই যে বেশি কচিকাঁচারা সেটা বিলক্ষণ বোঝে। সঙ্গে পরিবারের নবতম সংযোজনটির ব্যাপারে হাল্কা কৌতূহলও রয়েছে। ওদিকে মাঝবয়সীর দল সাংসারিক কূটকচালিতে ব্যস্ত, নিজ নিজ কর্তা বা গিন্নীকে ঠাট্টা ইয়ার্কির ছলে নির্দোষ তীরে বিদ্ধ করার এমন উপলক্ষ বড় একটা তো আসে না! মাঝেসাঝে উত্তেজনার বশে শ্লেষের পরিমাণ বেড়ে গেলে আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তখন নারদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে বাকিরা। মিঠেকড়া বাক্যালাপের আঁচ পোয়াচ্ছে কমবেশি সবাই। রোজকার বাঁধাধরা নিয়মের আগল খুলে গেছে, আদিরসাত্মক টিপ্পনীতেও কারও ভ্রূকুঞ্চন নেই। দুয়ারে বসন্ত আগতপ্রায়, সঙ্গতি রেখে সবার মন তাই উদার, কোনরকম মালিন্য রেখাপাত করতে পারছে না। আর সদ্য যৌবনের চৌকাঠ পেরোনো বা পেরোতে চলাদের তো কথাই নেই, তাদের আজ মেঘের ওপর দিয়ে হাঁটার পালা। সন্ধ্যায় দুদিন আগে পরিচয় হওয়া আগন্তুকদের কে কোন সাজে বরণ করবে সেই ভাবনায় মশগুল। আসরের কোণে দৈবাৎ কাউকে দেখা যায় জানলার বাইরে উদাস তাকিয়ে। নির্ঘাত বর অফিস থেকে ছুটি পায়নি, বিরহিনীর তাই প্রাণপণ চেষ্টা নিজের ম্লান মুখখানা সকলের চোখের আড়ালে রাখার। সে রসভঙ্গ অবশ্য কিছুক্ষণের জন্য। তারপরেই নিজেকে আবার ভাসিয়ে দিচ্ছে বাকিদের সাথে, সম্মিলিত আনন্দসাগরে।

কেবল একটিমাত্র যুবক শতচেষ্টা সত্ত্বেও পারছে না, পারছে না এই আনন্দযজ্ঞের অংশীদার হতে। তার মন পড়ে আছে 'অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে'।

গত পাঁচ বছরে একটা ব্যাপারে কিছুতেই অবন্তিকা তার পুরুষসঙ্গীটিকে হার মানাতে পারেনি। ভারতীয় সমাজে পুরুষহৃদয়ের যে চিত্র অঙ্কিত রয়েছে, তার সর্বাঙ্গে সঙ্কীর্ণ পজেসিভনেসের গাঢ় দাগ। নারী তার কাছে কামনার বস্তু, আরাধ্যা দেবী, তাকে সে পেতে চায় বিভিন্ন রূপে। নারীস্বাধীনতার বুলি মুখে আউড়িয়ে আর প্রগতির ধ্বজা উড়িয়ে বিতর্কসভায় শোরগোল ফেলে দিয়ে যখন সে ঘরে ফিরে আসে, নিজস্ব রমণীটিকে তখন চলতে হয় তার অঙ্গুলিহেলনে। এমনকি সে কতটা (অ)শালীন পোষাক পরবে বা কোন কোন পরপুরুষের সাথে কতক্ষণ এবং কতখানি দূরত্ব রেখে কথা বলবে, সে বিষয়েও তার সিদ্ধান্তই শেষ কথা। অন্তত ভারতীয় নারীদের একটা বড় অংশের তেমনই অভিযোগ। কখনও দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কখনও নেহাত খেলাচ্ছলে। সত্যিমিথ্যে জানা নেই, বাস্তবে দু'রকম নজিরই মেলে। দুর্ভাগ্যের বিষয় অবন্তিকা এমন দোষারোপের সুযোগ আজ পর্যন্ত পায়নি।

কারণ আর সব ব্যাপারে যাই হই, এ প্রসঙ্গে আমি খুব একটা মাথা ঘামাই না। হয়তো তার জন্য ওর একনিষ্ঠতাই দায়ী। বিশদে ভেবে দেখিনি।

আজ্ঞে হ্যাঁ, অবন্তিকা, আমার 'ও'। আমার সর্বস্বও বলতে পারেন। যাকে একটু আগে রাগিয়ে দিয়ে প্রকারান্তরে বাধ্য করেছি ওর কলিগের বাড়িতে লাঞ্চের নিমন্ত্রণে যেতে। নির্জন ফ্ল্যাটে, কারণ সঞ্জীব একাই থাকে। এবং সর্বোপরি যার পরিচয় আমার 'ও'-র প্রেমে দ-হয়ে থাকা প্রেমিক। অন্য পুরুষের অধিকৃত জেনেও ওকে যে একান্তভাবে চায়।

কেন করলাম? কেন আবার, আমি একজন প্রগতিশীল, উদারমনস্ক, না-শভিনিস্ট প্রেমিক, তাই। আমার প্রেমিকার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ আমার রুচিবিরুদ্ধ, তাই। ওর একনিষ্ঠতায় আমার পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে, তাই। ওর দেহের শুচিতার চাইতে ওর হৃদয়ের ভালবাসা আমার পাথেয়, তাই।

নিজের মনকে প্রবোধ দেওয়ার সময় মানুষ এ-ই করে। বোঝেও না যে সবার কাছে ফাঁকি চলে, কেবল নিজের কাছে ছাড়া।

অশান্ত মন পড়ে আছে ঘড়ির কাঁটার দিকে। আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টা, দেড় ঘণ্টা, দুঘণ্টা, সোয়া দুঘণ্টা, আড়াই ঘণ্টা, দুঘণ্টা সাঁইত্রিশ মিনিট... ওহো ভুল বললাম। এ ঘড়ির কাঁটা নেই। শুধু ডিজিটাল ডিসপ্লেতে সংখ্যা দিয়ে সময়ের সূচক। তবে সময় দেখাটাই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বারংবার দেখতে হচ্ছে কোনও মিস্ড কল অ্যালার্ট আছে কিনা, বা মেসেজবক্সে অপঠিত কোনও বার্তা। এতবার মোবাইল পকেট থেকে বার করে শুধু সময় দেখলে যা হয়, অতি-উৎসাহী দর্শকের চোখে ধরা পড়তে বাধ্য। কোথাও কিছু নেই, বড়পিসি হঠাৎ বলে উঠল,

"কি ব্যাপার রে অন্তু, কোথাও যাবি নাকি?"
"অ্যাঁ, না তো, কেন?"
"এতবার মোবাইল বার করে দেখছিস তো তাই ভাবলাম..."

বাক্যটা উহ্য রইল তবে ইঙ্গিতটা নয়। হাওয়ায় ভাসমান সে ইঙ্গিত লুফে নিতে কয়েক মুহূর্তের দেরী, ফিল্ডার জেঠিমা।

"কোথায় আবার যাবে, কনেযাত্রীদের গাড়ি আসতে কতক্ষণ বাকি সেটাই দেখছে থেকে থেকে"
"সে তো এখনও অনেক বাকি, সাতটার আগে এসে পৌঁছবে বলে মনে হয়না", ওপাশ থেকে ছোটপিসির ফোড়ন।
"সাতটা কি বলছিস, আটটার আগে এসে উঠতে পারে কিনা দ্যাখ্। কিন্তু তাই নিয়ে তোর এত মাথাব্যথা কিসের?", বড়পিসির ধরতাই।
"সেকি দ্যাখোনি সেদিন দিদিভাই, সন্তুর বৌয়ের মাসতুতো বোন কেমন আমাদের অন্তুর খবরাখবর নিচ্ছিল, কোথায় থাকে, কি করে, মাস গেলে কত পায়!", কাকিমা সম্ভবত গুগলের করেস্পণ্ড্যাণ্ট, এই বিয়েটার কভারেজ ফ্রিল্যান্স করছে।

সন্তু ছোড়দার ডাকনাম। ছোটবৌদির মাসতুতো বোন দীপান্বিতা, বিয়ের দিন যে সাদা বাংলায় 'হেভি মাঞ্জা' দিয়েছিল, থেকে থেকে 'ঝাড়ি মারছিল' এবং শেষে ছলছুতোয় আলাপও করে গিয়েছিল। আর এইমাত্র হাসির হররা ওঠা ঘর থেকে যে বেরিয়ে এল, সেটা আমি।

এরা পারেও বটে। বিষের সঙ্গে খোঁজ নেই, কুলোপানা চক্কর! বাণপ্রস্থে যাওয়ার বয়সে প্রাণে এত রস আসে কোথা থেকে দেবা ন জানন্তি। নেহাত গুরুজন, তাই মনে মনেও গালাগালটা দিতে পারছি না। আপাতত এখান থেকে কেটে পড়াই শ্রেয়। ভাবতে না ভাবতেই সামনে রিংকুদি। ছোটপিসির মেয়ে। ঠিক এই মুহূর্তে আমার অবস্থাটা ওর চেয়ে ভাল এখানে কেউ বুঝবে না।

চাকরির পোস্টিং পাওয়ার পর প্রথমদিকে ভিনরাজ্যের শহরে রিংকুদিই ছিল আমার গাইড। এবং অন্যদিক থেকে দেখলে অস্বস্তির জায়গাও বটে। স্বাভাবিক কারণেই। বাঙালি মধ্যবিত্ত বাড়ি, প্রেম করা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার ভয় না থাকলেও জানতে পারলে অসংখ্য প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, উপরন্তু সারাক্ষণ উদ্বিগ্ন মাতৃদেবীর দুশ্চিন্তা সামলানোর গুরুভার। রিংকুদি অবশ্য একেবারেই পেটপাতলা স্বভাবের নয়, যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। তবু দ্বিধা কাটিয়ে ওকে আমার 'ও'-র কথাটা জানাতে পারিনি। দুজনের বাসস্থান শহরের দুইপ্রান্তে হওয়ায় এ নিয়ে তেমন ভাবনা ছিল না। কিন্তু ভবিতব্য খণ্ডাবে কে?

বছর দেড়-দুই আগে এক রবিবারের বিকেল, মিঞাবিবি শপিংয়ে বেরিয়েছি। প্রায় গোটা সকালটা বিছানায় আদর আর ভালবাসাবাসির পর দুজনেরই মেজাজ ফুরফুরে। আমার কনুই বাঁধা পড়েছে ওর কোমল বাহুপাশে, থেকে থেকে সুবর্তুল নারীস্তন পুরুষালি পেশীর সংস্পর্শে আসছে, তড়িৎস্পৃষ্ট হচ্ছে দুই মন। একদিকের কাঁধ ঢেকে রয়েছে ওর খুলে রাখা মেঘবরণ চুলে। দুজন দুজনাতে বিভোর। অকস্মাৎ ছন্দপতন। বিশালায়তন মলের প্রবেশদ্বারের সামনে রিংকুদি। এক্কেবারে সামনাসামনি। 'জাস্ট বান্ধবী' বলে উল্লেখ করার কোনওরকম অবকাশ নেই, এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে দুজনে দাঁড়িয়ে। রিংকুদিও জোর চমকেছিল, তবে সামলে নিয়ে একটা মুচকি হাসি ঠোঁটের কোণে রেখে ওর সাথে আলাপ-পরিচয় পর্ব শুরু করে দেয়। সহজাত নারীপ্রবৃত্তিতে ওরও মিশে যেতে তেমন অসুবিধে হয়নি। গোটা ব্যাপারটায় আমার ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের। পরে অবশ্য দুজনের কাছ থেকেই আলাদা ভাবে টিটকিরি হজম করতে হয়েছিল।

সেই থেকে পরিবারের একজন অবন্তিকার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। বাস্তবে ওর সাথেই রিংকুদির তুলনামূলকভাবে বেশি যোগাযোগ আছে। একদিক থেকে সেটা কিছুটা স্বস্তিদায়ক। তবে এর খেসারতস্বরূপ কালেভদ্রে রিংকুদির সাথে দেখা হলে কিছুটা টীকাটিপ্পনী সহ্য করতে হয়। আজও ওর মুখে ফুটে ওঠা কৌতুকচিহ্ন দেখে বুঝলাম তার ব্যতিক্রম হবে না। তাই সই, প্রবীণাদের খোরাকের বিষয়বস্তু হওয়ার চাইতে সে অনেক বেশি সহনীয়।

"কার কথা বলছে রে ছোটমাইমা?"

রিংকুদির প্রশ্নে বুঝলাম বাজে আলোচনার শেষাংশ ওরও কানে গেছে।

"ধুর, কেউ না, ছোড়দার এক শালি"
"কোনজন? ঢ্যাঙামত, ন্যাকা আধো-আধো স্বরে কথা বলে যে?"

ধন্য এদের পর্যবেক্ষণশক্তি।

"তুই চিনিস নাকি?"
"ঐ, একটা-দুটো কথা হয়েছে, বেশিক্ষণ পোষায়নি। তোকে তো সারাক্ষণ মাপছিল"
"প্লিজ এবার তুই আর শুরু করিস না"
"এবার না হয় বাড়িতে অবন্তিকার কথাটা বলেই দে"
"মাথা খারাপ!"
"এত ভয় পাচ্ছিস কেন? আর অবন্তিকাকে দেখলে কেউ তোকে ঐ নেকুর ব্যাপারে bother করবে না"
"যেচে বাঁশ নিতে পারছি না এখন, বিশ্বাস কর"
"ওকে বুঝলাম... কেমন আছে রে মেয়েটা, অনেকদিন কথা হয়নি ওর সাথে"
"হুমম্ ঠিকই আছে", প্রসঙ্গটা এড়ানোই ভাল।
"তুই তো এবারে প্রায় দু'সপ্তাহ আছিস, ও কি করছে ওখানে একা একা? বোর হচ্ছে নিশ্চয়ই"

জ্বালাতন। মেয়েরা নিজেদের বেডরুমের গল্প শেয়ার করতে এত পছন্দ করে, সময় সময় সেটা চূড়ান্ত বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উনি নির্ঘাত আমার দিদির সাথে বিছানাপ্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন, কারণ রিংকুদি কি ইঙ্গিত করছে বোঝা শক্ত নয়। ঐ আলোচনার দিকে কোনওমতেই যাওয়া চলবে না, তার চেয়ে সত্যিটা বললে যদি অব্যাহতি মেলে।

"নাঃ দিব্যি আছে, ইন ফ্যাক্ট আজ এক কলিগের বাড়ি গেছে লাঞ্চে"
"Good for her. ওর সেই আশিকও সেখানে গেছে নাকি?", রিংকুদির চোখেমুখে ঝিলিক দিচ্ছে দুষ্টুমি।

প্রবল ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। মানে???

"তুই... তুই, মানে কার কথা বলছিস?"
"কেন ওর অফিসের সেই কলিগ, সঞ্জীব। অবন্তিকা যে বলেছিল তুই সব জানিস?"

আমি বাক্যহারা। কি জবাব দিই এর?

"হ্যাঁ তা জানি বটে, ইয়ে... মানে, সেই সঞ্জীবের বাড়িতেই গেছে", কোনওমতে বললাম। এবার অবাক হওয়ার পালা রিংকুদির।

"Are you serious? আমি কিন্তু ঠিক মেলাতে পারছি না"
"কি বল তো?"
"ওকে যতদূর চিনি, She avoids that guy. I mean, its not that big deal. আর অন্যদের সামনে its also safe I guess. "
"Actually, ও একাই গেছে"
"What???", বিস্ময়ে রিংকুদির চোখ ছানাবড়া।

নাঃ এ যে হিতে বিপরীত হল। একটা অপরাধবোধ চারিয়ে যাচ্ছে বুকের ভেতর, পুরো সত্যিটাই বলে দেওয়া দরকার।

"আসলে ও যেতে চাইছিল না ঠিক, আমিই কিছুটা জোর করে...", রিংকুদির হাঁ বুজতে চাইছে না, কোনওক্রমে শেষ করি নিজের বাক্যটা, "পাঠালাম"
"Have you gone crazy অন্তু?"
"কেন?"
"কেন? তুই জিজ্ঞেস করছিস কেন? কিছু একটা অঘটন ঘটে যায় যদি?"

রিংকুদির মুখে এখন আর কৌতুকের লেশমাত্র নেই। কপালে আর ভ্রূ-তে অনেকগুলো ভাঁজ। কয়েকটা দুশ্চিন্তার, বাকিগুলো সম্ভবত বিরক্তি থেকে। বিরক্তিটা কার ওপর সেটা অনুমান করাও দুরূহ নয়। মরিয়া হয়েই কিছুটা গাম্ভীর্য আনার চেষ্টা করলাম।

"দ্যাখ সবসময় ছেলেদের নীচুনজরে দেখিস না। ওর কাছে যা শুনেছি, সঞ্জীব যথেষ্ট ভদ্র ছেলে। মরাঠি ',, লেখাপড়াতেও উঁচুদরের। সব ছেলেকেই রেপিস্ট ভাবা আজকের দিনে একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে", একটানা কৈফিয়ত দিয়ে যেতে হল, জানি না বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে কিনা। রিংকুদি চুপ করে আছে, ঠোঁট কামড়ে নিজের মনে কি যেন ভাবছে। ফাঁড়াটা কি এযাত্রা কেটে গেল?

"May be you are right, after all ছেলেটাকে আমি চিনি না, So I should not be judgemental.", অবশেষে মুখ খুলেছে রিংকুদি, "But make sure, God forbid if anything bad happens, that you nstand right beside her."
"Anything bad মানে..."
"তুই যথেষ্ট বড় হয়েছিস, আমি কি বলেছি তার মানে না বোঝার মত কচি আর নোস... ছেলেটা যদি ফাঁকা ফ্ল্যাটে ওর সাথে অসভ্যতা করে তার দায় তুই এড়াতে পারিস না", ওঘর থেকে কারোর ডাকে সাড়া দিয়ে রিংকুদি উঠে গেল। ওর রাগত দৃষ্টি আর সশব্দ পদক্ষেপে বেশ বুঝলাম আমার ওপর ভালমত চটেছে।

একটা ফাঁকা ঘর দেখে সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়লাম। এদিকটায় তেমন কেউ নেই, কিছু সময়ের জন্য আমার খোঁজ না করতে এলে বাঁচি। একটু একাকিত্বের প্রয়োজন এখন। বিমনাভাবে জানলা দিয়ে কর্মব্যস্ত শহরের একফালি ছবির দিকে তাকিয়ে আছি। মনে চিন্তারা আনাগোনা করছে। কি মনে হতে একবার মোবাইলটা বার করে দেখলাম। না কোনও ফোন, না টেক্সট। প্রায় চার ঘণ্টা হতে চলল শেষবার যোগাযোগ হয়েছে ওর সাথে। রিংকুদির শেষ কথা গুলো মাথা থেকে তাড়াতে পারছি না। সত্যি যদি তেমন কিছু ঘটে যায়? যদি ওকে একা পেয়ে ছেলেটা কিছু করে বসে? নাঃ আর ভাবতে পারছি না। চোখ বুজে এল আপনা থেকেই। মাথার ভেতর এক অজানা, অদেখা ফ্ল্যাটের দৃশ্যপট ভেসে উঠেছে।

শেষ বিকেলের মরা আলোয় ঘরটা আধো-অন্ধকার। উঁচু উঁচু জানলাগুলোর পর্দা পরিপাটিভাবে টানা, একপাশ দিয়ে কোনমতে চুরি করে গোধূলির আলো ঢুকছে। সেই আলোয় দৃশ্যমান একটা সিঙ্গল কট, ব্যাচেলরের জন্য পর্যাপ্ত হলেও দুজন মানুষের পক্ষে অপ্রতুল। তার উপর বসে নীল শাড়িপরিহিতা এক এলোকেশী সুন্দরী। চোখের পাতা বন্ধ, টানা টানা আঁখিপল্লব আরো মোহময়ী লাগছে। ঈষৎ পুরন্ত ঠোঁট কাঁপছে তিরতির। বুকের আঁচল খসে পরে আছে কোমরের নীচে। উন্মুক্ত সুগভীর নাভিদেশ, দ্রুত শ্বাসের তালে ওঠানামা করছে ভারী বুক। স্বল্পদৈর্ঘ্যের ব্লাউজ আর সংক্ষিপ্ততর কাঁচুলির শাসন অগ্রাহ্য করে স্বাধীন হতে চাইছে বর্ষার সুপক্ব তালকে লজ্জা দেওয়া স্তনজোড়া। নারীটি উদ্গত উত্তেজনাকে দমন করতেই বুঝি এলিয়ে পড়ল তার ঠিক পিছনে বসে থাকা সবল পুরুষটির গায়ে। আকার-আকৃতিতে সে আমার প্রায় সমান, তবুও একবারই কমন গ্যাদারিঙে আলাপ হওয়া ছেলেটাকে চিনতে এতটুকু ভুল হল না, সঞ্জীব। দুই বাহু দিয়ে বেষ্টন করে রয়েছে আমার প্রেয়সীকে, একটা হাত কোমরের কাছে খেলা করে বেড়াচ্ছে, অন্যটা ব্যস্ত ব্লাউজের উপরিভাগের লোভনীয় খাড়াই ঢাল বেয়ে নামতে। ওর মুখ হারিয়ে গেছে রূপসীর গভীর নেকলাইনে, তপ্ত শ্বাসের হল্কায় কেঁপে উঠছে রমণীশরীর। আলতো চুম্বনে তার কাঁধের অনাবৃত ডৌল সিক্ত, পুরুষের দাঁত নরম কানের লতিতে আক্রমণ শানাতেই হিসিয়ে উঠল ও। ধীরে ধীরে সে কানের লতি চুষছে সঞ্জীব, আর তার দুই হাত এখন ব্যস্ত আমার পছন্দের ডিজাইনে বানানো বক্ষাবরণীর হুকে। একটা একটা করে অর্গল খুলছে, একটু একটু করে উন্মুক্ত হচ্ছে আমার প্রেমিকার স্তন, আর সেই উদ্ভাসে গোটা ঘর যেন আলোয় ভরে উঠছে। ওর চোখ এখনও বন্ধ আবেশে, রক্তিম অধরে উপরের দাঁতের পাটির চাপ ক্রমবর্ধমান। লোভী পুরুষের জিভ লেহন করে নিচ্ছে গোলাপী আভাময় গালের সঞ্চিত সবটুকু মধু। কামনার প্রতিবর্তে ওর মুখ আস্তে আস্তে ঘুরে গেল সেদিকে। চোখ বন্ধ, তবু একপক্ষকাল উপোসী ঠোঁট খুঁজে নিল বহুদিনের তৃষ্ণার্ত ঠোঁটকে, মিশে গেল একবিন্দুতে। লেহন করছে, প্রবল আগ্রাসে তারা খেলা করছে পরস্পরের সাথে। সঞ্জীব এখন চুষে চলেছে প্রেয়সীর উষ্ণ বিম্বোষ্ঠ, আস্বাদ নিচ্ছে তার কামনাসিক্ত মিষ্টি লালার, যা আমার পরমপ্রিয়। দুই থাবার তৎপরতায় এতক্ষণে বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। শেষ হুকটিও তাদের মালকিনের আব্রুরক্ষার অসমযুদ্ধে পরাভূত। নতমস্তকে রণভূমি ত্যাগের সময়টুকু পেল না তারা, প্রবল এক টানে ঐ পরপুরুষ নির্মমভাবে ছুঁড়ে ফেলে দিল নীল স্লিভলেস ব্লাউজ। ধর্ষিতা রমণীর মত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে আমার প্রিয়ার বক্ষাবরণী। ধর্ষক তখন ব্যস্ত ওর কাঁচুলিবদ্ধ স্তনজোড়া দলিত মথিত করতে। প্রবল নিষ্পেষণে কামনাবিষ্ট কুচযুগ সমুন্নত, উত্তপ্ত বোঁটাগুলো শেষ লজ্জাবস্ত্রের আচ্ছাদন উপেক্ষা করে জেগে উঠেছে জ্বলন্ত ভিসুভিয়াসের ন্যায়, অচেনা আঙুলের ছোঁয়াতে তাদের ভিতর কাঁপন জাগছে আরো আরো। মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল।

আচমকাই উধাও দৃশ্যপট, অদেখা ঘরের আশ্লেষদৃশ্য মুছে গিয়ে ফিরে এসেছে পরিচিত রাস্তা। আমি এখনও জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে, পকেটের মুঠোফোন জানান দিচ্ছে কারওর বার্তালাপের ইচ্ছা। আর, আর... এ কি সত্যি? বাস্তব? কখন নিজের অজান্তে হল এমন? ডানহাতের মুঠোয় দৃঢ়ভাবে ধরা আমার জাগ্রত পৌরুষ। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-বেধ নিয়ে কখনওই হীনম্মন্যতার কারণ ঘটেনি, বরং ওর চোখে বরাবর মুগ্ধ বিস্ময় দেখে শ্লাঘা অনুভব করেছি; কিন্তু আজকের উত্থান অতীতের সব রেকর্ডকে ধুয়েমুছে দিয়েছে!

ফোনটা বেজেই চলেছে, ওর নয়তো? তড়িঘড়ি পকেট থেকে বের করে নামটা দেখে নিরাশ হলাম। আমার উৎকণ্ঠিতা নয়, রিংকুদির 'নেকু'। এ কেন এখন রসভঙ্গ করে? যা হোক কুটুমবাড়ি বলে কথা, ফোনটা ধরা কর্তব্য, জেঠুর দুপুরবেলার উপদেশাবলী মনে পড়ে গেল।

"বলো দীপান্বিতা"
Reply


Messages In This Thread
RE: স্বীকারোক্তি by Anangapal (Uncompleted) - by manas - 07-01-2019, 12:41 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)